বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ২: গত পর্বে আপনারা আমার স্বামীর বিয়ে দেখেছেন, আমার পারিবারিক জীবন সম্পর্কে বেশ কিছু বলেছি। সবার আদর ও ভালবাসা পাওয়া এই আমি কখন চিন্তা করে নি এরকম জীবন হবে। দেখি কি আছে আমার ভাগ্যে? কি হয়?
ভাইয়ার নতুন সংসার
ভাইয়া এসে বললো,
ভাইয়াঃ নতুন ভাবিকে পেয়ে আমাকে ভুলে গেলি সবাই।
আমাকে ছাড়াই মজা করছিস তোরা।
আমিঃ তোমাকে এখনেই আসতে হলো। আমরা একটু আনন্দ করছিলাম তোমার বউয়ের সাথে। তোমার সহ্য হলো না।
ভাইয়াঃ আচ্ছা, তোমরা মজা করো। আমি চলে যাচ্ছি।
আমিঃ থাক ভাইয়া, আমরাই চলে যাচ্ছি। ভাবি তোমার সাথে কাল দেখা হবে। আচ্ছা, আমরা আসছি। এখন শুভ রাত্রি।
সবাই চলে আসলাম আমার রুমে। কাল বধু বরনের অনুষ্ঠান আছে। তাই সবাই ঘুমিয়ে পড়লাম।
সকালে উঠেই কাজে ব্যস্ত সবাই, নতুন বউকে দেখতে আসছে।
এভাবেই অনুষ্ঠান শেষ হলো।
দেখতে দেখতে অনেক দিন কেটে গেলো।
আমিও H.S.C পরীক্ষা দিলাম। ভালোই কাটছে দিনগুলো।
ভাইয়ারও প্রমোশন হয়েছে, কোম্পানি থেকে বিদেশ পাঠাবে ৫ বছরের জন্য। কিন্তু ভাইয়া যেতে রাজি না। আমাদের সবার জোরাজোরিতে যাচ্ছে। তবে সাথে ভাবিও যাবে ৬ মাসের মধ্যে।
আমার রেজাল্টও দিল। ভালোই রেজাল্ট হয়েছে। কিছুদিন পর ভর্তিও হয়ে গেলাম ভার্সিটিতে।
ডাক্তার বাবুর সাথে প্রথম পরিচয়
হঠাৎ একদিন কলেজ থেকে আসার পথে এক্সিডেন্ট হয়। সবাই হাসপাতালে নিয়ে যায়। তাদেরই কেউ বাড়িতে খবর দেয়। বাড়ি থেকে সবাই আসে।
পরে যাওয়ার কারণে বুকে খুব বেশি আঘাত লেগেছে। এরপর কয়েক দিন থাকতে হবে হাসপাতালে।
আমি রিক্সায় আসছিলাম পেছন থেকে একটা পিকাপ ধাক্কা দেয়। পরে যাওয়ার সাথে সাথে জ্ঞান হারিয়ে ফেলি।
সবাই আসছে আমাকে দেখতে। কিছুক্ষণ পর একটা ছেলে এসে বললো,
ছেলেটাঃ আপনারা এখন বাহিরে যান, আমি রুগীকে চেক-আপ করবো!
(উপস্থিত সবাই বুঝলাম উনি ডাক্তার। সবাই বাহিরে গেল)
ডাক্তারঃ এখন কেমন লাগছে আপনার?
আমিঃ জি, একটু ভালো। কিন্তু বুকের ব্যথাটা একটুও কমেনি।
ডাক্তারঃ ঠিক হয়ে যাবে। তবে একটু টাইম লাগবে। ঔষধ ঠিকমতো খেলেই তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবেন।
(এতক্ষণ উনি আমার দিকে একবারও তাকায়নি ভালো করে। কথা বলতে বলতে একটা ইনজেকশন পুশ করলেন আমার হাতে। হাতটা গরম। তাই কপালে হাত দিয়ে দেখলেন জ্বর আছে কিনা!)
ডাক্তারঃ আপনার গায়ে তো অনেক জ্বর। শরীরটাও দূর্বল লাগছে আপনার।
(আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে প্রেসক্রিপশন লিখতে শুরু করলেন)
ডাক্তারঃ এগুলো ঔষধ নিয়ম মতো খেতে হবে আপনাকে।
(বিড়বিড়িয়ে বললাম ঔষধ তো খেতেই ইচ্ছে করে না। যা উনি এভাবে আরচোখে তাকাচ্ছেন কেন শুনতে পেলেন নাকি)
ডাক্তারঃ ভালো না লাগলেও খেতে হবে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে চাইলে।
প্রথম ভাল লাগা
আপনি তো আমাকে চেনেন না। আমি কাব্য চৌধুরী। এই হাসপাতালের একজন হার্ট বিশেষজ্ঞ ডক্টর। আমি ভিজিটিং খুব কম করি। চেম্বারে বেশি রুগী দেখি।
কিন্তু আপনাকে রোজ দেখতে আসবো।
আমিঃ কেন, আপনি তো রোজ রুগি দেখেন না বেশি? তাহলে আমাকে রোজ দেখতে আসবেন? আমি কি খুব বেশি অসুস্থ?
ডাক্তারঃ বেশি কথা না বলে এখন ঘুমাতে চেষ্টা করুন। এখন আপনার রেস্ট দরকার।
(নার্সকে কি যেন বললেন। এরপর প্রেসক্রিপশনটা ওনার হাতে দিয়ে চলে গেলেন)
উনি যাওয়ার সাথে সাথে সবাই ভিতরে আসলো।
ভাইয়া বললো,
ভাইয়াঃ তুই খুব তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবি। ডাক্তার বাবু ঔষধগুলো ঠিকমতো খেতে বললেন।
আমিঃ ভাইয়া, তুমি তো জানোই আমি ঔষধ খেতে পারি না। তোমার ঔষধ ওই ডাক্তারকে খাওয়াও।
ভাইয়াঃ পাগলি একটা। ঔষধ না খেলে তো সুস্থ হবি না। বাড়ি যেতে চাইলে তাড়াতাড়ি সুস্থ হতে হবে।
আমিঃ হুম। আমি তো এখন সুস্থ আছি। তোমারা এখন বাড়ি যাও। অনেক ধকল গেছে আজ তোমাদের উপর।
ভাইয়াঃ আমি আমার বোনকে রেখে কোথাও যাবো না। নীলাসা তুমি মা বাবাকে নিয়ে বাড়ি যাও। আজ রাতটা আমি নীলিমার কাছে আছি। তুই রেস্ট কর আমি ওদের আগায় দিয়ে আসি।
( আমার নাম নীলিমা, আমার ভাই নীল ও ডাক্তার বাবুর নাম কাব্য)
এদিকে কাব্য নীলিমার কথাই ভাবছে। একটা ভালোলাগা কাজ করছে নীলিমার উপর। অনেক মায়াবী একটা মেয়ে।
প্রথম দেখায় ওকে এত ভালো লেগে যাবে ভাবতেই পারিনি।
মা অনেক চাপ দিচ্ছে বিয়ের জন্য। কিন্তু মনের মতো কাউকে বলতে পারিনা।
নীলিমা দেখতে তো সুন্দর। তার পরিবারকে দেখে মনে হলো খুব ভালো ফ্যামিলির মেয়ে নীলিমা।
আগে ওর সম্পর্কে জানার চেষ্টা করি। তারপর না হয় পরেরটা ভাবা যাবে।
কেয়ারিং ভালবাসা
পরের দিন কাব্য এসেই নীলিমাকে দেখতে গেলো। দরজায় নক করতেই নীল দরজা খুলে দিলো।
(কাব্য কিছুটা ভয় পেলো। উনি যদি নীলিমার স্বামী হন)
নীল বললো,
নীলঃ আরে ডক্টর আপনি ভেতরে আসুন?
কাব্যঃ (ভেতরে যেতে যেতে) আপনি রুগীর কি হন?
নীলঃ আমি নীলিমার একমাত্র বড় ভাই। আর ও আমার একমাত্র আদরের ছোট্ট বোন। (হাফ ছেড়ে যেন বাচলো কাব্য)
কাব্য বললো,
কাব্যঃ ওহ। আপনি এখন কেমন আছেন মিস নীলিমা, শরীর কেমন এখন?
আমিঃ ভালো আছি। দাঁড়িয়ে কেন, বসুন?
কাব্যঃ না, আমি আপনাকে দেখতেই আসলাম। এখন বসবো না। পরে আবার আসবো।
আমিঃ ও আচ্ছা।
এই বলে কাব্য চৌধুরী চলে গেলেন।
কাজে যেন মন বসছেই না। কেন এমন অস্থির লাগছে আমার! সময় যেন থমকে আছে কিছুই ভালো লাগছে না।
কিছু না ভেবেই চলে গেলাম ১০৪ নং রুমের সামনে। নক দিব, না দিব করে নক দিয়েই দিলাম।
নার্স এসে দরজা খুললো,
নার্সঃ স্যার আপনি অসময়?
কাব্যঃ কেবিনে আমার ব্যাগটা আছে। ওটা নিয়ে আসো।
নার্স চলে গেল।
কাব্য বললো,
কাব্যঃ তোমার ভাইয়াকে দেখছিনা কোথায় তিনি?
আমিঃ ভাইয়াকে নিচে পাঠালাম সকাল থেকে কিছুই খায়নি।
কাব্যঃ ওহ। বাড়িতে কে কে আছে আপনার?
আমিঃ মা-বাবা, ভাইয়া-ভাবি আর আমি।
কাব্যঃ খুব ভালো। সুখী পরিবার। এখন আপনার শরীর কেমন?
আমিঃ জি ভালো। আপনার পরিবারে কে কে আছে?
কাব্যঃ মা-বাবা আর আমি। এই আমাদের ছোট সংসার।
আমিঃ ওহ! Happy family.
নার্স আসলো। সাথে ভাইয়াও চলে আসলো।
ভাইয়া বললো,
নীলঃ ডাক্তার সাহেব, এখন নীলিমা কেমন আছে? ওকে কবে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবো।
কাব্যঃ উনি এখন অনেকটাই সুস্থ। আপনারা কালকেই ওনাকে বাড়িতে নিয়ে যেতে পারবেন। কিন্তু মেডিসিনগুলো ঠিকমতো খেতে হবে। আর ফুল রেস্ট এ থাকতে হবে। এক সপ্তাহ পর ওনাকে একবার নিয়ে আসবেন। চেক-আপ আর কিছু টেস্ট করাতে হবে।
নীলঃ ওকে। আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। নিজ দায়িত্বে রোগীকে দেখতে আসছেন, খোজ নিচ্ছেন।
কাব্যঃ আরে এটা আমার দায়িত্ব ও কর্তব্য। আপনার সাথে কথা বলে অনেক ভালো লাগলো।
নীলঃ আমারও অনেক ভালো লাগেছে।
কাব্যঃ আচ্ছা, এখন আমি আসি।
নীলঃ জি, আচ্ছা।
কাব্য চৌধুরী চলে গেলেন। বাবারাও সবাই চলে আসলো আমাকে দেখতে।
কালকেই আমাকে বাড়ি নিয়ে যাবে। তাই সবাই খুশি।
পরেরদিন হাসপাতালের সব ফর্মালিটি শেষ করে বাড়ি ফিরে আসলাম।
এদিকে কাব্য এসেই খোঁজ নিয়ে জানলো নীলিমাকে নিয়ে গেছে ওর পরিবার। একবার দেখা করে যেতে পারতো ওরা। চলবে…
পরের পর্ব- বউয়ের ভালোবাসা – স্বামীর বিয়ে – পর্ব ৩