দজ্জাল বউ – বউয়ের অবহেলা অতঃপর ভালোবাসা: আম্মু তুমি ওকে বলে দাও ও যদি এ বাসায় থাকতে না চায় তবে যেন চলে যায়। তবুও এমন করে এ বাসায় থাকা যাবে না। আমার এমন বউ চাই না। আমার সেই দজ্জাল বউ চাই।
১ম পর্ব
বিয়েটা করার কোনো ইচ্ছাই ছিলো না। কিন্তু আম্মু যেভাবে চাপ দেওয়া শুরু করেছিলো যে না করে পারলাম না। যাই হোক আম্মুর পছন্দের মেয়েকেই বিয়ে করলাম। মেয়েকে এখনো আমি দেখি নি। তবে শুনেছি অনেক ভালো নাকি।
এখন দাড়িয়ে আছি বাসর ঘরের সামনে। ভিতরে যাবো কি না তাই ভাবছি। বন্ধু রা যে যার মতো করে উপদেশ দিয়ে যাচ্ছে কিন্তু আমার মাথায় কিছুই ঢুকছে না। আমি ভাবছি এতো বড় খাট টায় আমি যখন একা ছিলাম তখনই তো ছোট ছোট লাগতো এখন সেই খাটে দুই জন কিভাবে থাকবো। শুনেছি বউ নাকি খুব লক্ষী। তাহলে বউয়ের অল্প জায়গা হলেই হবে।
সব ভাবনার অবশান দিয়ে অবশেষে প্রবেশ করিলাম সেই জমালয়ে। আরে না আম্মু বলছে আমার বউ ভালো। আমার বউ এখন আমায় সালাম করবে তাই নিচের দিকে তাকিয়ে খাটের সামনে গেলাম। ২ মিনিট দাড়িয়ে আছি কই কেউ তো সালাম করলো না। বুঝছি বউ অনেক লজ্জাবতী। তাই হয়তো ঘোমটাই খোলে নি। তাই মাথা তুললাম। মাথা তুলে যা দেখলাম তাতে আমি রীতিমত অবাক বউ আমার কম্বল গায়ে জড়িয়ে ঘুমাইছে। বাহ মেয়েটাকে তো অনেক সুন্দর লাগছে। আমি তো ওর মায়ায় পরে গেলাম।
কি করবো ডাকবো না কি না? ঘুমাইছে যখন তখন আর না ডাকি। আমি ওর পাশে বসে পরলাম। কেন জানি খুব ইচ্ছে মেয়েটার মাথায় হাত বুলাতে। তাই কিছু না ভেবেই ওর মাথায় হাত রাখলাম। এমন সময় মেয়েটা জেগে গেল। এবং আমিও নির্দিষ্ট দূরত্ব বজায় রাখলাম।
মেয়েটা উঠে ফ্রেশ হয়ে এলো। মেয়েটা এখন আমার সামনে বসে আছে। আমি যেই কিছু বলতে যাবো ঠিক তখনই মেয়েটা বলল
- কোনো উনি আছে?
- উনি মানে
- gf
- কেন?
- আছে কি না তা আগে বল
- একি আপনি আমার সাথে এভাবে কথা বলছেন কেন?
- বল আছে কি না?
- যদি থাকে তবে কি আপনি তার সাথে আমায় মিলিয়ে দিবেন না কি?
- আমি আমার বিয়ের পর বরের সাথে প্রেম করবো বলে একটাও প্রেম করি নি। আর তুই প্রেম করবি আমি আবার তোকে তার হাতে তুলে দিবো এটা তুই ভাবলি
- আসলে আমার তেমন কেউ নাই।
- থাকলেও করার কিছু ছিলো না। যাই হোক রুমে আসতে এতো দেরি হলো কেন?
- আসলে বাইরে বন্ধুরা……
- বাহ বাহ ভালো তো আমি এখানে ওনার জন্য অপেক্ষা করছি আর উনি বাইরে আড্ডা দিচ্ছেন।
- আসলে তা নয়।
- তুই চুপ কর। বাসর রাত নিয়ে আমার কতো স্বপ্ন ছিল। কিন্তু তুই সব মাটি করে দিলি।
- আমি তো আপনাকে কিছু করি নি।
- ঐ আমি কি তোর ছোট ভাইয়ের বউ?
- না।
- তাহলে কার বউ?
- আমার ।
- তবে আপনি বলিস কেন? আর একবার বললে শুই দিয়ে মুখ শেলাই করে দিবো।
- আচ্ছা।
- যা তুই এখন মেঝেতে পড়ে ঘুমা।
- মানে?
- মানে বোঝোনা সোনা। তুমি মেঝেতে ঘুমাও
- কিন্তু কেন?
- আমার বাসর রাত নিয়ে করা প্লান গুলো সব ভেজতে দেওয়ার জন্য।
কি আর করার একটা বালিশ নিয়ে মেঝেতে শুয়ে পরলাম। - একটা কথা বলবো?
- কি?
- না মানে কোলবালিশ টা কি দেওয়া যাবে?
- কেন?
- আসলে ঐটা ছাড়া ঘুম আসে না।
- তাহলে দেওয়া যাবে না।
- কেন?
- আমি তোরে নিচে শুতে বলছি শাস্তির জন্য। আরামের জন্য নয়।
- মেঝে তো অনেক ঠান্ডা
- কিছু করার নাই। আর বেশি কথা বললে রুম থেকে বের করে দিবো
- না থাক আমার কিছু লাগবে না।
- আর শোনো।
- হুম।
- বলছি কি? (হেসে হেসে)
- বলো।
- যদি এসব বাইরে কেউ জানে বাথরুমে আটকে রাখবো (রাগী লুক নিয়ে)
- না না কেউ জানবে না। আমার একটা পেজটিস আছে না।
- তাই?
- না মানে আছে তো।
- ঘুমাও।
এটা কি দেখলো আম্মু আমার জন্য। আমি কি ভাবলাম আর কি হলো। এটা বউ নাকি জল্লাদ? এতো আমায় মাডার খাওয়াবে। এসব বলে কি হবে সবই তো আমার কপাল। দুর ভালো লাগে না। জীবনেও মেঝেতে ঘুমাই নি। এপাশ ওপাশ করতে করতে কখন যে ঘুমাইছি বুঝতেই পারি নি।
২য় পর্ব
সকাল বেলা কে যেন ডাকছে
- এই ওঠো।
- কি হলো ওঠো
-……(আমি ঘুমের রাজ্যে) - ঐ তুই উঠবি নাকি পানি ঢালবো।
- এই না না। আমি উটছি তো।
- ভালো কথায় কাজ হয় না তাই না।
- না মানে ঘুমিয়ে ছিলাম তো তাই শুনতে পারি নি।
- যাও খাটে গিয়ে ঘুমাও।
- না আমি এখানেই ভালো আছি।
- তোরে যেটা বলছি সেটা কর।
- যাচ্ছি।
কি বউরে মাইরি? যাই হোক খাটে গিয়ে শুয়ে পরলাম। আরামের খাটটাতে শোয়ার সাথে সাথে কেমন জানি ঘুম এসে গেল। সারা রাত কি কষ্ট ই না হলো। এখন একটু ঘুমাই। একটু পরে কে যেন ডাকলো।
- এই শুনছো।
- হুম।
- আর কতো ঘুমাবা এখন ওঠো?
- আর একটু ঘুমাই প্লিজ আম্মু।
- আমি তোমার আম্মু না। চোখ খুলে দেখ চোখ খুলে দেখি একটা পরী না মনে আমার বউ। আমি কি সত্যি দেখছি নাকি স্বপ্নে আছি
- আমি কি স্বপ্ন দেখছি নাকি বাস্তব?
- আরে বাবা বাস্তব। এবার ওঠো। আপনার ছেলে কি রোজ এমন দেরী করে ঘুম থেকে উঠে আম্মু।
- হ্যা রে মা। খুব অলস। এই বাদরটাকে একটু মানুষ করিও।
- আপনি চিন্তা করবেন না আম্মু আমি ওকে শুধু মানুষ না মহামানব করবো।
- আচ্ছা আমি গেলাম মা। তোরা তাড়াতাড়ি আয়।
- আচ্ছা আম্মু।
আমি বউয়ের দিকে তাকিয়ে আছি। মজার কথা জানেন বউ আমার কিন্তু আমি ওর নামটাও জানি না।
- এমন হা করে কি দেখো?
- পরী।
- এখানে আবার পরী আসলো কোথায় থেকে?
- এই তো আমার সামনে বসে।
- বেশি কথা না বলে তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নে নয়তো
- একটু আগেও তো ঠিক ছিলো এখন আবার কি হলো
- একটু আগে রুমে আম্মু ছিলো তাই অভিনয় করতে হইছে।
- ওহ আচ্ছা।
- আবার সং সাজতে হবে। ভালো লাগে না।
- কেন?
- তুই নাকি তোর বন্ধুদের ডাকছিস আমায় দেখার জন্য।
- হুম।
- কেন ডাকছিস হুম কেন ডাকছিস? আমি কি চিড়িয়াখানার বাঘ নাকি হরিণ?
- ঠিক তা না। তুমি আমার বউ তাই তোমায় দেখতে আসছে। আচ্ছা তোমার নাম কি?
- কি? তুই আমার নাম জানিস না?
- আসলে শোনা হয়ে ওঠে নি।
- তোরে যে কি করবো।
- না থাক নাম বলা লাগবে না।
- অদ্রিতা।
- শুধুই অদ্রিতা
- এটা যে বলছি এটাই অনেক।
- ওকে। অদ্রিতা বাহ কি সুন্দর নাম। সুন্দরী মেয়ের নাম সুন্দর তো হবেই। অদ্রিতা ছোট করে অদ্রি।
- এই কি ফিশফিশ করছিস?
- তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। আমি শাড়ি পরতে পারি না।
- আম্মু কে ডাকি।
- আম্মু কেন?
- তেমায় শাড়ি পড়াই দিবে।
- আমি আম্মুর বউ নাকি তোর বউ?
- হেহেহে আমার।
- হাসলে দাঁত ভেঙে দিবো। তাহলে শাড়ি আম্মু পড়াবে কেন?
- তাই তো।
- শাড়ি পড়াতে পারিস?
- কি? কাকে কাকে শাড়ি পড়িয়েছিস সত্যি করে বলবি। নয়তো তোকে আজ ক্ষুণ করে ফেলবো
- আরে বাবা কাউকে পড়াই নি। এমনি আম্মুর কাছে শিখছিলাম।
- তাই বল। তাড়াতাড়ি আয়।
- এই শোন তুমি আমার সাথে এই ভাষা বলবে না।
- কেন?
- আমার ভালো লাগে না।
- তাহলে আমিও বলবো।
- শুধু একবার বলে দেখ তো তোর কি হাল করি?
- না থাক এটাই ভালো আছে।
এরপর ফ্রেশ হয়ে এসে অদ্রিতা কে শাড়ি পড়াতে লাগলাম। - এতো নড়লে কিভাবে শাড়ি পড়াবো?
- কি করবো আগে তো কোনো ছেলে আমায় টাস করে নি।
- আচ্ছা আম্মু কে ডাকছি দাড়াও।
- এই না। তুমি পড়াও।
- নড়াচড়া করা যাবে না।
- আচ্ছা।
অবশেষে শাড়ি পড়াতে সক্ষম হলাম। মনে হচ্ছে তৃতীয় বিশ্ব যুদ্ধে জয় লাভ করলাম।
এরপর আমি নিজেও রেডি হচ্ছি। অনেক দিন পর আমার বন্ধুরা আসছে ওদের সাথে দেখা হবে মজাটাই আলাদা।
- এই কি করছো?
- রেডি হচ্ছি।
- ওহ। তুমি এই ড্রেসটা পরো তাহলে তোমায় অনেক ভালো লাগবে।
- আচ্ছা।
- তোমার কোন কোন বন্ধু আসবে মনে নাম কি কি?
- হাবীব, মারুফ, রাকিব, সাকিব, কনক, লাকী, মিম, মনি, আল্পনা, কলি।
- তুই ওটা খোল।
- মানে?
- তোকে ঐ ড্রেসটা খুলতে বলছি।
- কেন?
- খুলবি কি না?
- আচ্ছা খুলছি।
- এটা পড়।
- এটা পড়লে আমায় অনেক বাজে দেখায়।
- সত্যি
- হু।
- তাহলে তুই এটাই পড়বি।
- কেন
- বান্ধবীদের সামনে খুব হিরো সেজে ঘুরবি তাই না। এটাই পড়ে বের হবি। নয়তো রাতে রুম থেকে বের করে দিবো।
কি আর করার বাসার হোম মিনিস্টার এর কথা তো আর অমান্য করা যায় না। তাছাড়া এই শীতের রাতে বাইরে থাকা বেসম্ভব না মানে অসম্ভব।
কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা। শুধু নাম শুনেই এতো রিয়েক্ট। না জানি পরে আরো কি কি করবে।
৩য় পর্ব
এরপর অদ্রিতা যেটা ড্রেস ঠিক করে দিলো সেটাই পড়লাম। ভাবতেই অনেক আনন্দ লাগছে। কতদিন পর আবার বন্ধুদের সাথে দেখা হবে।
ওদের কথা ভাবতে ভাবতে ওরা চলে এসেছে।
- সুমন তোর বন্ধুরা আসছে।
- বসতে বলো আমি আসছি।
এরপর আমি তাড়াতাড়ি করে ওদের সামনে গেলাম। তবে যাওয়ার আগেই অদ্রিতা আমার সামনে
- বান্ধবীর সামনে যাওয়ার জন্য কি তাড়াহুড়ো। আর কাল আমি ঘরে একা বসে ছিলাম ওনার আসার কোনো নামেই নাই।
- আরে ওরা আমার অনেক ভালো বন্ধু। অনেক দিন থেকে দেখা হয় না।
- তাই বুঝি আচ্ছা যাও।
এরপর আমি চলে আসি। - কিরে সবাই কেমন আছিস? (আমি)
- এই তো ভালো। একা একাই তো বিয়ে করে ফেললি? (হাবীব)
- তো কি তোদের সাথে করে নিয়ে কি বিয়ে করবো?
- দাড়িয়ে কথা বলবি নাকি? (রাকিব)
- এই তোরা সর সুমন আমার পাশে বসবে (মনি)
- সেটা তো আমরা জানি। ও না বসলেও তুই টেনে বসাবি (মারুফ)
- তুই চুপ থাক। সুমন এই খানে বস। (মনি)
- ওকে।
- তারপর তোর বউয়ের সম্পর্কে কিছু বল (লামিয়া)
- কি আর বলবো? যা বলবো সব কম পরে যাবে।
- এক রাতেই এতো কিছু জেনে গেলি। (রাকিব)
- আব্বে সালে চোপ।
- ঐ তো ওর বউ আসছে। (মীম)
- ভাবি কেমন আছেন? (আলপনা)
- আলহামদুলিল্লাহ। আপনারা?
- ভালোই। কি বুঝলেন আপনার বর কেমন? (হাবীব)
- ভালো। (মাথা নাড়িয়ে)
- জানেন ভাবি ও না অনেক দুষ্টু। (মনি)
- দোস্ত তুই একটু থাম।
- তুই চুপ থাক।
এরপর মনি আমার সব মহামানব এর গুণ গুলো এক এক করে খুব নিখুঁত ভাবে উপস্থাপন করলো। শুধু তাই নয় শালীর পুরানো অভ্যাস, সরি বদ অভ্যাস যাওয়ার আগে একটা ফ্লায়িং কিস ও করলো।
আজ আমার কপালে শনি রাঘু কেতু সব আছে। না জানি আজ কোন মহা যুদ্ধ শুরু হবে। তবে এটা সিয়র আজ রাত ঘরের বাইরে কাটাতে হবে।
সবাই চলে যাবার পর আমি ও একটু বাইরে গেলাম। একবারে রাতে বাসায় ফিরি। ফিরে দেখি বাসা একদম নিরব।
কি ব্যাপার সবাই ঘুমালো নাকি? না। এতো তাড়াতাড়ি কেউ ঘুমায় না তো। বেশি কিছু না ভেবে রুমে গেলাম।
দরজা তো ভিতর থেকে লক করা। এবার আমি ফিনিশ। ধীরে ধীরে দরজা নক করলাম।
- কে?
- আমি।
- আমি কে?
- তোমার স্বামী।
- কি?
- না মানে আমার মায়ের বড় ছেলে।
একটু পরে দরজা খুলে দিল। চুপচাপ ভিতরে গেলাম। আমি ভিতরে যাওয়ার পর দরজা লক করলো। আমি সিয়র আজ আমার ব্যান্ড বাজাবে। আমি মনে মনে মনিকে ঝাড়ছি।
এটা কি হলো? আমার মনে হয় অদ্রিতা আমায় কিস করলো? এটা কি কল্পনা? একটা চিমটি কাটি তো। উহহ। এটা তো বাস্তব। যাই হোক তারমানে কপাল মন্দ নয়। চুপচাপ খাটে শুতে যাবো
- এই নাম .
- মানে?
- তুই খাট থেকে নাম।
- কেন?
- তুই নামবি নাকি? আজ কিন্ত ঝাড়ু নিয়ে আসছি।
- এই না না। নামছি আমি।
- তাড়াতাড়ি নাম। নিজের বউ রেখে অন্য মেয়ের সাথে কথা বলা। অন্য মেয়ের পাশে বসা।
- ওহহ বুঝছি সিংহা
- কি?
- না মানে হিংসা।
- হিংসা হবে কেন? স্বামী টা কি ওর নাকি আমার?
- স্বামী তোমার কিন্তু বন্ধু তো ওর।
- কি বললি তুই? বের হ রুম থেকে।
- এই না না আমি কিছু বলি নি।
- তুই কোনো কথা বলবি না। চুপচাপ রুম থেকে বের হয়ে যা।
- আমি না তোমার স্বামী
- কিসের স্বামী? আমি তোরে চিনি না। তুই বের হ।
কি করবো কিছু ভেবে পাচ্ছি না। এমন সময় ফোন বেজে উঠলো। ওমা এতো মনি - কি রে শালী? ফোন দিছস কেন?
- কেন রে বউ কি তোরে ঝাড়ছে নাকি।
- ফোন রাখ।
- ওকে।
মনি ফোন কেটে দেয়। এরপর ও আমি কথা থামাই নি এবার আরো জোরে জোরে বলতে লাগলাম। - কি বললি তোর বাসায় কেউ নাই? তোরে খুব ভয় লাগছে? আগে বলবি না আমি এখনি আসছি।
এবার আমিও ফোন কাটলাম। - কই যাবে তুমি?
- না মানে ।
- সরাসরি বলো?
- না মানে মনির বাসায় নাকি কেউ নাই।
- তো?
- ওকে নাকি খুব ভয় পাচ্ছে। তাই ওর বাসায় যাচ্ছি।
- ঘরের বাইরে একটা পা রাখলে পা ভেঙে হাতে ধরিয়ে দিবো।
- কিন্তু?
- চুপচাপ রুমের ভিতরে ঘুমা।
- তাহলে আমার একটা শর্ত আছে
- কি?
- আমি নিচে শুতে পারবো না।
- কি বললি?
- চলে যাবো কিন্তু।
- ব্লাকমেইল করছো?
- আমার কিসের দরকার। আমি গেলাম।
- ওকে খাটে শোও।
- ওকে।
যাই হোক আজকের মতো বাঁচলাম।
- কি হলো জড়িয়ে ধরছো কেন?
- আসলে মনি ভূতের ভয় দেখালো তো তাই ভয় পাচ্ছে।
- কি? তুমি একটা পুরুষ হয়ে ভয় পাও। কই আমি তো পাই না।
- এই কাথার উপর ঐটা কি?
- কোনটা?
- ওহহ একটা আরশোলা
- কি? সরাও ওটাকে
- এই তুমি আমায় জড়িয়ে ধরছো কেন?
- আমার স্বামী। আমি যা খুশি তাই করবো। তুমি ঐটা সরাও।
- পারবো না।
- প্লিজ
- শর্ত আছে
- সব শর্তে রাজি
- হুম। চলে গেছে।
- সত্যি।
- চোখ খুলে দেখ।
- যাক বাবা বাঁচা গেল।
- হুম। স্বামী তোমার আর বউ আমার না তাই না?
- কেন? বউও তোমার তাবে বউয়ের কথা মতো চলতে হবে।
- পারিবো না।
- কি?
- বাদ দাও এখন আমার শর্ত পূরণ করো
- পূরণ করতেই হবে?
- অবশ্যই
- ওকে। কিন্তু উল্টো পাল্টে কোনো শর্ত দিতে পারবে না।
- আমার শর্ত আমি ইচ্ছে মত দিবো
- মানে?
- উল্টো পাল্টে বেশি থাকবে
- কি? তুই বের হ রুম থেকে।
- আরশোলা আছে কিন্তু?
- ভয় পাই না। তুই বের হ।
- এই তোমার পায়ে আরশোলা ।
- আহহহহহহ।
- আবার জড়িয়ে ধরলে কেন?
- ভয় পাইয়ে দাও কেন?
- বল শর্ত মানতে রাজি।
- ওকে বলো আগে শুনি
- মানতে হবে কিন্তু
- ওকে। তুমি আগে বলো…?
৪র্থ পর্ব
- আমি সারা রাত তোমায় জড়িয়ে থাকবো।
- ও এই টা। ওকে।
- একটু উল্টো পাল্টে করবো।
- ঝাড়ু দিয়ে ভূত তাড়াবো।
- শর্ত আছে। মানতে হবে।
- কি?
- হ্যা ম্যাডাম।
- চুপচাপ ঘুমাও। খাটে ঘুমাতে দিছি এটাই অনেক।
- ওহহ তাই। ওকে লাগবে না। আমি মনির বাসায় গেলাম।
- বাসার বাইরে শুধু পা রাখো তারপর দেখো কি হয়
- ওকে রাখলাম না পা। সমস্যা কি? আমি কি তোমায় ভয় পাই।
- এখন ঘুমাও।
এরপর শুয়ে পরলাম।
- তোমার হাত যেন এই অর্ধেক এর এদিক না আসে।
- আমি সত্যিই তোমার স্বামী তো?
- মানে?
- না মানে আমার মনে হচ্ছে আমার অন্য কোনো মেয়ের সাথে বিয়ে হইছে আর সে কবুল বলার পর পালিয়ে গেছে আর ওর জায়গায় তোমায় পাঠাইছে।
- অনেক বক বক বক করছো এখন ঘুমাও।
শালা কি বউ পেলাম রে ভাই? এর থেকে তো বিয়ে না করাই ভালো ছিলো। যাই হোক ভুল তো করেই ফেলছি।
অনেক কিছু ভাবতে ভাবতে কখন যে ঘুমাই গেছি। হঠাৎ মাঝ রাতে ঘুম ভেঙে যাবার পর দেখলাম মাঝে কোলবালিশ নাই। আর অদ্রিতা আমার বুকে মাথা রেখে আমায় জড়িয়ে ধরে ঘুমাইছে। কি অপরুপ দেখতে। ইচ্ছে করছে ওর চুল গুলো আলতো করে ছুয়ে দিই। না থাক যদি আবার ঘুম ভেঙে যায় তবে আর দেখতে পারবো না। এতো মিষ্টি একটা মেয়ে যার ঘুমন্ত দেহে তার নিষ্পাপ মনের প্রতিবিম্ব পাওয়া যাচ্ছে সে কি বাস্তবে আমার সাথে যা করছে এটা কি তার স্বভাব নাকি সাজানো কোন ড্রামা? আমি এতো কিছু ভাবছি কেন? ওর যা খুশি তাই করুক না? আমি তো ইনজয় করছি।
অদ্রিতার দিকে তাকিয়ে থাকতে কখন যেন আবার ঘুমিয়ে গেছি। বরাবরই আমার দেরি করে ঘুম থেকে উঠার একটা ভালো অভ্যাস আছে। যদিও আম্মু এটাকে বদঅভ্যাস বলে। কিন্তু দেরি করে উঠলে কেমন জানি একটা জমিদার জমিদার ভাব আসে মনের মাঝে।
খুব সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখছি। একটা মেয়ে আর আমি কোনো এক সুন্দর জায়গায় ঘুরতে গেছি। মেয়েটা হয়তো অদ্রিতাই হবে। ঘুরতে যাওয়ার পর মেয়েটা আমার সামনে মরিচিকা হয়ে গেল। এই দেখি সামনে আবার দেখি নাই। এমন সময় হঠাৎ বৃষ্টি। বৃষ্টি তো স্বপ্নে হচ্ছে তাহলে আমি ভিজছি কেন? আজিব তো?
চোখ খুলে দেখি বউ বালতি হাতে দাড়িয়ে আছে।
- তুমি? তুমি কোথায় থেকে আসলে?
- তার মানে অন্য মেয়ে আসলে খুশি হতি?
- আরে না। একটা সুন্দর স্বপ্ন দেখছিলাম
- তারমানে তুই অন্য মেয়েকে নিয়ে স্বপ্নও দেখিস?
- এই না না।
- তুই চুপ থাক। আজ ভাবছিলাম আমি ঘরের প্রথম কাজ করবো কিন্তু না আজ তুই সব কাজ করবি।
- মানে?
- বাথরুমে কাপড় রাখা আছে। সুন্দর করে কেঁচে দাও সোনা।
- আমি পারবো না।
- আমি কিন্তু আব্বুকে বলে দিবো তুমি আমায় পিটাইছো
- কিন্তু এটা তো মিথ্যে।
- সেটা তুই জানিস আর আমি জানি আব্বু তো জানে না।
কি আর করার আমি আবার আব্বুকে অনেক ভয় পাই। আর আব্বু ওর সব কথা বিশ্বাস করে। আমি হাজার সত্য কথা বলে লাভ নাই। ও মিথ্যে বললেও ওটাই সত্য। দুই দিন হলো বাড়িতে আসছে এর মাঝেই সবাইকে বস করছে।
কোনো উপায় না পেয়ে বাথরুমে গিয়ে কাপড় গুলো কেঁচে দিলাম। অভ্যাস ছিলো তাই বেশি কষ্ট হলো না। - এই কই যাও?
- কাপড় গুলো শুকাতে দিতে
- হইছে অনেক করছো? বাইরে দেখাতে যাচ্ছো যে বউ তোমার কাছে কাজ করায়?
- এই না।
- আমায় দাও।
- ওকে।
কাপড় গুলো অদ্রিতা কে দিয়ে ওর পিছনে পিছনে বের হলাম।
- কি মা ওগুলো? (আব্বু)
- কাপড় কাচলাম আব্বু। (কি মিথ্যে কথা রে ভাই)
- নতুন বউ কাপড় কাচলো এটা কেমন দেখায় না। সুমন তুই সাহায্য করিস নি?
আমি কিছু বলতে যাবো তার আগেই
- ও তো আব্বু ঘুম থেকে উঠলো এখনি।
- তোর কোনো কমন সেন্স নাই। নতুন একটা মেয়ে। ভালো করে কাজ জানে না কতো মিষ্টি একটা মেয়ে তাকে তুই তোর কাপড় কাচতে দিছিস
- আসলে আব্বু
- তুই চুপ থাক। যাও মা তুমি রুমে যাও। আর এই যে নবাব জাদা যা কাপড় গুলো শুকাতে দিয়ে আয়।
- আচ্ছা।
কাপড় শুকাতে দিতে ছাদে গেলাম। পাশের বাসার ভাবি ও দেখি কাপড় শুকাতে আসছে
- কি সুমন বউ কেমন?
- যার উপর আর ভালো হয় না।
- তাই। ভালো হওয়াই ভালো।
পিছনে দেখি অদ্রিতা আসছে। - তোমার কপাল অনেক ভালো সুমনের মতো স্বামী পাইছো।
- হ্যা ভাবি।
- সুমন কে কতো বার বললাম আমার ছোট বোনকে বিয়ে করো কিন্তু সুমন কোনো পাত্তাই দিলো না।
- এই তুমি চলো। আচ্ছা ভাবি আমরা গেলাম।
আমার হাত ধরে টেনে নিচে নিয়ে এলো। - কি?
- কি মানে কি?
- কি মানে কি বুঝো না? পাশের বাসার ভাবি দেখলে গল্প করতে মন চায়?
- আরে আজিব তো? আমি আবার গল্প করলাম কখন?
- এতোই যখন গল্প করার শখ তখন ওনার বোনকে বিয়ে করলেই পারতি
- সেটাই ভাবছি।
- কি বললি?
- না মানে কিছু না।
- আজ তোরে যে কি করবো দারা। আব্বু আব্বু ও আব্বু (চিৎকার করে আব্বু কে ডাকছে)
- আব্বুকে ডাকছো কেন?
- ভাবির বোনকে বিয়ে করার খুব শখ না তোর? শখ বের করছি।
এমন সময় আব্বু আসলো - কি হইছে রে মা?
- আব্বু জানেন আপনার ছেলে আমায় কি বলছে?
- এই আমি আবার কি বললাম?
- কি বলছে মা এই গাধাটা?
- আমায় বাথরুম পরিস্কার করতে বলছে
- কিহ? কখন? আব্বু এটা মিথ্যে কথা।
- তুই চুপ থাক। এতো মিষ্টি একটা মেয়ে মিথ্যে বলবে?
- মিষ্টির মাঝে তো পিঁপড়া বেশি থাকে।
- দেখছেন আব্বু আপনার সামনে আমায় কি বললো?
- তোর আক্কেল দাত কবে গজাবে বলতো?
- কেন আব্বু?
- নতুন বউকে কেউ এসব বলে?
- আমি বলি নি আব্বু
- আবার মিথ্যে বলিস? আজ তুই বাথরুম পরিস্কার করবি আর এটা তোর শাস্তি।
- আব্বু জীবনেও করিনি
- আজ করবি। মা তুই আয়তো আমায় কফি বানিয়ে দিবি।
- চলেন আব্বু।
আমি সত্য কথা বললাম তার কোনো দামই নাই? কি আর করার এখন তো বাথরুম পরিস্কার করতেই হবে। রুমের দরজা লাগিয়ে বাথরুম পরিস্কার করে গোসল দিয়ে দিলাম এক ঘুম। বাইরে থেকে যেন কারো আওয়াজ কানে না আসে তাই কানে তুলা দিয়ে ঘুমালাম।
ঘুম থেকে উঠে দেখি সন্ধ্যা হয়ে গেছে। বাইরে বের হলাম।
- কি রে এতো দেরি করে ঘুম থেকে উঠলি কেন?
- এমনি।
- জানিস আজ বউমা রান্না করছে
(সারাদিন আজ অনেক ষড়যন্ত্র করছে হয়তো এটা নতুন কোনো পদ্ধতি) - আমি কিছু খাবো না।
বলেই বাইরে চলে আসলাম।
এখন রাত দশটা বাজে। সাধারণত আমি এতো রাতে বাইরে থাকি না। শরীরে প্রচন্ড ব্যাথা হচ্ছে। এমন সময় আম্মুর ফোন - হ্যালো।
- কই তুই?
- মামার দোকানে
- আরও কখন বাসায় ফিরবি
- দেরি হবে
- তাড়াতাড়ি বাসায় চলে আয়। অদ্রিতা না খেয়ে বসে আছে।
- ওকে খেয়ে নিতে বলো। আমার আসতে দেরি হবে।
- আমি কিছু জানিনা। মেয়েটা দুপুরেও খায় নি। তাড়াতাড়ি আয়।
- আচ্ছা।
বাহ ভালোই তো সবার সামনে অভিনয় করতে পারে। বেশি দেরী না করে বাসায় গেলাম। গিয়ে দেখি ও বাইরে বসে আছে। ওর সাথে কথা না বলেই রুমে আসলাম। এসে শুয়ে পড়লাম।
- এই ওঠো খেয়ে নাও
- আমি খাবো না। তুমি খাও।
- আমি খাইছি এখন তুমি খাও।
- আমার ক্ষিধে পায় নি।
- এখানে খাবার রাখলাম খেয়ে নিও।
অদ্রিতা শুয়ে পরলো। আজ কেন জানি বললো না নিচে শুতে? যাই হোক ভালোই হইছে। মাথা তুলে দেখি দুইটা প্লেট। তারমানে অদ্রিতা ও খায় নি। - অদ্রিতা ওঠো
- কেন?
- তোমায় খাওয়াই দেই
- আমার লাগবে না। নিজেই আগে খাও।
- একসাথে খাই।
- তোরে বলছি না তুই খা।
- হুম একসাথেই খাই।
ভাবলাম বউ বোধ হয় আমায় ভালোবাসতে শুরু করছে কিন্তু না। খাবার খাওয়ার সময় যা বুঝলাম আমার ধারণা পুরাই ভুল।।
৫ম পর্ব
দু’জনই একসাথে খাওয়া শুরু করলাম। তবে প্লেট টা ও নিজেই বেছে দিয়েছিলো।
- কি ব্যাপার কি হলো?
- পানি পানি
- এই নাও
- এতো মরিচ কেউ দেয়?
- কই সব তো ঠিকই আছে।
- কি সব ঠিক আছে? আমার জীব পুড়ে যাচ্ছে।
- তাহলে বেশি করে পানি খাও।
আচ্ছা আমি এতো পানি খাচ্ছি কিন্তু ও তো সুন্দর করে খেয়ে যাচ্ছে। ওকে কি ঝাল ধরছে না? - আমায় একবার খাওয়াই দিবে?
- কেন?
- দাও না?
- ওকে।
- আমার প্লেট থেকে না।
- তো?
- তোমার টা থেকে দাও
- কেন?
- দাও না।
- ওকে এই নাও
- কি ব্যাপার তোমার প্লেটের খাবারে কোনো ঝাল নাই কেন? সব কিছু তে ঠিক আছে?
- হুম।
- তাহলে আমার টায় এতো মরিচ বেশি কেন?
- ওটা আমার উপর রাগ করে থাকার ফল।
- কি? তুমি ইচ্ছে করে মরিচ মিশাইছো?
- হুম।
- তুমি কি আমায় মারার প্লান করছো নাকি?
- আরে না তোমায় মারবো কেন? একটু একটু করে রক্ত চুষে নিবো
- ঐ একই হলো বেলা শেষে আমি তো মৃতই।
- কি আজেবাজে কথা বলো এসব? এখন ঘুমাও।
- আমি নিচে ঘুমাবো
- না। উপরে।
- না নিচে।
- ওকে আমি কাল আব্বুকে বলে দিবো।
- আবার ব্লাকমেইল? ওকে উপরে।
চাইছিলাম পরীর মতো মিষ্টি একটা বউ। পরীর মতো পাইছি কিন্তু মিষ্টি পাইলাম না। এটা তো মরিচের থেকেও বেশি ঝাল। কথায় কথায় শুধু ব্লাকমেইল করে।
পরের দিন সকাল বেলা সবাই মিলে নাস্তা করছি এমন সময় - আম্মু আপনি নাকি খুব বকবক করেন?
- কে বলছে?
- আপনার ছেলে।
- মানে? আমি আবার এই কথা কখন বললাম?
- তুমি তো বললা সকাল বেলা
- কি বলছি?
- আম্মুর মতো কানের কাছে বকবক করো নাতো ঘুমাতে দাও।
- আরে ওটা তো আমি তোমায় বলছি
- আব্বু দেখছেন আমি নাকি বকবক করি?
- আমি বকবক করি বউ মা বকবক করে ‘ সবাই বকবক করে তাই না
- না আম্মু। তুমি কতো ভালো।
- হুম। তোর আজ খাওয়া বন্ধ। যা ভাগ।
- আরে কি বলো?
- ঠিক করছেন আম্মু।
- ওকে পড়ে যেন আর কেউ খাইতে ডাকো না বলে দিলাম কিন্তু হুম।
- তাড়াতাড়ি ভাগ।
কি বউ রে ভাই? কোথায় স্বামীকে সাপোর্ট করবে তা না উনি নিজেই আমার পিছনে লেগে আছে। কোন কথা কিভাবে ঘুড়িয়ে কিভাবে আম্মুর কানে তুলে দিলো? যার ফল স্বরূপ আমার সকালের খাবার বন্ধ।
রুমে এসে শুয়ে পড়লাম। জানি একটু পরে আম্মু নিজেই খাবার নিয়ে আসবে। কিন্তু না দুপুর হয়ে গেল কেউ তো খাবার নিয়ে আসলো না। এদিকে তো পেটের ভিতর হাডুডু খেলা শুরু হইছে। না, একবার বাইরে গিয়ে দেখা উচিত।
- আমি সকাল থেকে না খেয়ে রুমে শুয়ে আছি আর তোমরা সবাই মিলে বসে কেরাম খেলছো?
- তোর খাবার আজ বন্ধ।
- কিন্তু কেন?
- আজ আমাদের বকবক শুনতে হবে তোকে সারাদিন। আর বকবক শুনে পেট ভরাতে হবে।
- বকবক শুনে কি আর পেট ভরে?
- ভরাতে হবে তোকে।
- আম্মু আপনিও চলেন না আমাদের সাথে?
- না মা, তোরাই যা।
- কোথায় যাবে আম্মু?
- তুই জানিস না? অদ্রিতা তুমি ওকে বলো নি?
- কাল রাতেই তো বললাম মনে নাই তোমার?
- কি বলছো?
- বললাম না যে আজ আমার একটা বান্ধবীর বাসায় যাবো? এখন তো এটা বলবে যে আমি তোমায় বলি নি।
- কখন বললে
- দেখছেন আম্মু বললাম না আমি ও এটা ঠিক বলবে
- তোর কি হইছে বলতো? তুই তো কোনো কথা এতো তাড়াতাড়ি ভুলে যাস না।
- সেটাই তো ভাবার বিষয় আম্মু।
- তুমি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নাও।
- আমি যাবো না।
- আম্মু দেখছেন কি বললো?
- তুমি চিন্তা করো না মা। ও যাবে না ওর বাপ যাবে।
- ভালো তো। আব্বু যাবে সাথে তুমিও যাও।
- চুপ থাক হারামজাদা।
- ওকে।
- কি হলো রেডি হবে চলো
- কি রে কথা বলিস না কেন?
- তুমি তো চুপ থাকতে বললা।
- তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয়।
কি আর করার সকাল থেকে না খাইয়ে রাখছে তার উপর আবার এখন কোন যেন পেত্নীর বাসায় নিয়ে যাবে কে জানে। আগে যদি জানতাম এমন বউ আমার কপালে জুটবে তবে জীবনেও বিয়ে করতাম না। কি আর করবো পইরা গেছি মাইনকা চিপায়। এখন যাওয়াই লাগবে।
আম্মুর সামনে থেকে রুমে আসলাম। আমার পিছনে পিছনে অদ্রিতা ও রুমে আসলো। আমি রুমে এসেই শুয়ে পড়লাম। - কি ব্যাপার শুয়ে পড়লে যে?
- ঘুম পাচ্ছে।
- আম্মু কি বললো মনে নাই?
- কি বলছে? কিছুই বলে নি।
- তাই। আম্মু আম্মু
- আম্মুকে ডাকছো কেন?
- আম্মু তো কিছুই বলে নি তো ডাকলে সমস্যা কি?
- ওকে বাবা আমি রেডি হচ্ছি।
- তাড়াতাড়ি। আমায় আবার শাড়ি পরিয়ে দিতে হবে।
- মামার বাড়ির আবদার। পারবো না আমি।
- এবার কিন্তু নতুন করে আব্বুর কাছে বকা খাওয়াবো।
- এই তুমি এতো মিথ্যে বলো কেন?
- কে মিথ্যে বলে? আমি?
- তাছাড়া কে আমি?
- ইম্পসিবল। আমি মিথ্যা কথা বলি না।
- একটু আগেই তে আম্মুর সামনে বললা?
- ওটা নিজেকে সেফ করার জন্য। এখন যাও তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আমায় শাড়ি পড়াবে।
কি আজব জ্বালায় পড়লাম। তবে বউকে শাড়ি পড়িয়ে দেয়ার মাঝে আনন্দ আছে। এরপর আমি রেডি হয়ে অদ্রিতা কে শাড়ি পড়াতে লাগলাম। - তোমার সমস্যা কি?
- আমার আবার কি সমস্যা হবে?
- এভাবে সাপের মতো নাচছো কেন?
- কি করবো বলো কাতুকুতু পায়।
- ওহহ। তাহলে নিজে পরে নাও।
- পাই না তো।
- আমি টাস করলে যদি তোমার কাতুকুতু পায় তবে আম্মুকে ডাকি
- না থাক। তুমি পড়াও।
- এমন ঢং করে নাচা যাবে না।
- ওকে।
অনেক কষ্ট করে শাড়িটা পরিয়ে দিলাম। শাড়ি পরা শেষ হতেই আমায় ধাক্কা দিয়ে খাটে ফালাই দিলো। এরপর ও আমার উপর - আরে কি করছো এসব?
- আমি ঢং করি?
- কে বললো?
- কে বললো? তুমি নিজেই তো শাড়ি পড়ালোর সময় বললে?
- যে হারে নাগিন ডান্স দিচ্ছিলা তো কি বলবো?
- তার জন্য তুমি আমায় ঢংগী বলবা?
- তো কি বলা উচিত ছিলো
- তুমি জানো না আগে কোনো ছেলে আমায় টাস করে নি। তাই সমস্যা হয়।
- মুখে তো বলো কেউ টাস করে নি কিন্তু বাস্তবে কতো গুলোর সাথে যে ঘুরছো কে জানে?
- কি বললি তুই?
- কিছু না কিছু না।
- সবাই কে নিজের মতো মনে করিস
- না। তবে নিজের থেকে ভালো ও মনে করি না।
- আজ কোথাও যাবো না। এখানেই বসে থাকবো
- সত্যি? কাল থেকে অফিসে যেতে হবে। আজ একটু বাইরে টা ঘুরে নেই।
- কই যাচ্ছো সোনা চাঁদ। চলো আজ আমার সব বান্ধবী আসবে ওখানে।
- ওহহ আচ্ছা সবগুলোর কি বিয়ে হইছে?
- নিজের বউকে চোখে পড়ে না? অন্য মেয়ের দিকে নজর কেন তোর?
- আরে না শুধু জানতে চাইলাম।
- ওখানে গিয়ে বেশি কথা বললে মুখ সেলাই করে দিবো।
- কেন?
- আর হ্যা নেহা নামের যে মেয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দিবো ওর থেকে দূরে থাকবি
- কেন কেন?
- ও তোমার পিক দেখে আমায় বলেছিলো দোস্ত তুই বিয়েটা করিস না আমি করবো। কি সাহস।
- কে সেই মেয়ে তাকে তো দেখতেই হবে।
- চোখ তুলে নিব।
- না থাক কাউকে দেখবো না।
- হুম এখন চলো।
- ওকে।
বাসায় শুধু মেয়ে দেখতে চেয়ে যা ট্রেইলার দেখলাম না জানি বাসায় ফিরে কোন মুভি দেখতে হবে?
৬ষ্ঠ পর্ব
এরপর অদ্রিতা আর আমি আম্মুকে বলে বাসা থেকে বের হলাম। অনেক টা সময় জার্নি করার পর অদ্রিতার বান্ধবীর বাড়ি এসে পৌঁছে গেলাম। ওমা একি? এখানে তো দেখি পরীর মেলা বসেছে। আগে জানলে বিয়েই করতাম না। আগে এখানে আসতাম। কি আবোল তাবোল ভাবছি? বিয়ে না করলে আমায় এখানে কে নিয়ে আসতো? ভূতের দাদী?
- আরে অদ্রিতা তোরা এতো দেরী করলি কেন?
- একটু দেরী হয়ে গেল রে। কই তুমি আসো ভিতরে যাই।
- তুই ভিতরে যা না। আমরা নিয়ে আসছি তোর বরকে।
- নিজেরা আগে বিয়ে কর তারপর নিজের বরকে যেখানে খুশি সেখান থেকে নিয়ে যাস।
- যখন বিয়ে করবো ওটা তখন দেখা যাবে।
এরপর সবাই মিলে রুমে আসলাম। রুমে এসে অদ্রিতা সবার সাথে পরিচয় করিয়ে দিলো।
- সুমন এই হচ্ছে আমার বান্ধবী নেহা।
যখন অদ্রিতা নেহার নাম বললো তখন নেহা আমার দিকে তাকিয়ে চোখ মারলো। জানিনা অদ্রিতা দেখছে কি না। যদি দেখে তাহলে আজ আমার বারোটা বাজিয়ে দিবে যদিও আমার কোনো দোষ নাই। - তোরা আসতে এতো দেরী করলি যে প্রিয়া আর নীলার স্বামী একটু আগে চলে গেল।
- ওহ আচ্ছা।
- জানিস আজ নেহা টা ওদের সাথে যা ফাজলামি করছে।
- নেহা শোন আমার স্বামীর ধারের কাছেও যেন তোকে না আসতে দেখি।
- তুমি যতই বলো কোনো লাভ নাই।
আমি ভদ্র ছেলের মতো বসে বসে শুধু ওদের কথা শুনছি।
এমন সময় নেহা আমার কাছে এসে বসলো। মনে মনে ভাবলাম আজ আমি গেছি। যে মেয়ের থেকে দূরে থাকতে বলছে সেই মেয়েই এতো কাছে এলো
- কি খবর ভাইয়া? কেমন লাগলো আমাদের বান্ধবীকে?
- অনেক ভালো।
- আমি অবশ্য ওর থেকে বেশি ভালো। কিন্তু আপনি মিস করছেন।
- হয়তো।
এমন সময় অদ্রিতা সামনে আসলো - নেহা কি ফুটুর ফুটুর করছিস?
- তোর বরের চুল গুলো অনেক সুন্দর রে দোস্ত
- জানি আমি। তোরে চুলে হাত দিতে হবে না।
- আরে একটু ধরলে ক্ষয়ে যাবে না।
- যেতেও তো পারে।
- তুই আগের মতোই আছিস নিজের জিনিস কাউকে ধরতে দিবি না আর নিজেও অন্যের টা ধরবি না। আচ্ছা আপনি কোন স্যাম্পু ইউজ করেন।
- ওটা বয়েজ তোর জেনে লাভ নাই।
- ওকে।
নেহা চলে গেল। - আজ তোমার চুলের হচ্ছে ।
- ভুলেও চুলের দিকে নজর দিও না।
- বাসায় চলো না আগে।
এরপর অদ্রিতা ও কই যেন হাওয়া হয়ে গেল।
আমি তো এতো গুলো মেয়ের মাঝে পুরাই ছাগলের তিন নম্বর বাচ্চা হয়ে গেছি। না পারছি কিছু বলতে। শুধু বসে বসে ওদের কথা শুনছি।
আমি আর বসে না থেকে একটু উঠে দাড়ালাম। কোথায় থেকে যেন একটা মেয়ে আসলো। এসে কতো সব আজগুবি গল্প শুরু করে দিলো। কি আর করবো চুপচাপ হাসি মুখে গল্প গুলো গিলছি। এদিকে আমার কানের পোকা বের হয়ে যেতে লাগলো কিন্তু মেয়ের থামার কোনো নামই নাই।
কে কোথায় কখন কি করছে? কে কয়টা প্রেম করছে? আমার বউয়ের সাথে কেকে লাইন মারতে চেষ্টা করছে সব। আমি বাধ্য ছেলের মত কথা গুলো হজম করছি হাসি মুখে। আর মাঝে ও আচ্ছা, ভালো তো, হুম এসব যুক্তি হীন শব্দ বলছি। কিন্তু মুখে সেই মুচকি হাসি ঠিকই আছে।
- কি ব্যাপার কি কথা হচ্ছে এতো হেসে হেসে?
- কই কিছু না তোমার বন্ধুূদের সম্পর্কে বলছিলো আর কি
- রিয়া তুই ভিতরে যা তোকে ডাকছে।
- আচ্ছা। পরে আপনাকে আরও বলবো
- এ্যাঁ আরও আছে? এখনো শেষ হয় নি?
- কেবল তো শুরু
- কিহহ? কবে বলবে আগেই একটু বলে দিও পিপারেশন নিয়ে শুনতে হবে।
- আচ্ছা।
- তুই এখন যা।
- যাচ্ছি যাচ্ছি।
- আজ বাসায় চলো তোমার হচ্ছে?
- কি হবে গো?
- চলো আগে বাসায়
এরপর সবার কাছে বিদায় নিয়ে বাসার পথে রওনা দিলাম। - কি কোনো কথা বলছো না কেন?
- এমনি তুমি চুপচাপ বাইক চালাও।
- ওকে।
একটু পরে বাসায় ফিরলাম। ফেরার সাথে সাথেই আম্মু কে দেখে অদ্রিতা কান্না শুরু করে দিলো। আমি তো কিছুই বুঝলাম না। কেন কাঁদছে? - কি হয়েছে রে মা কাঁদছিস কেন?
- (কিছু বলছে না)
- সুমন তুই ওকে কিছু বলেছিস?
- কই না তো
- আরে এভাবে কাঁদলে হবে কিছু তো বল। কি হইছে আর কেনই বা কান্না করছিস?
- আপনার ছেলে
- এই যা আমি আবার কি করলাম?
- আমি জানতাম তুই কোনো না কোনো ঘটনা ঘটাইছিস
- সত্যি বলছি আম্মু আমি কিছুই করি নি?
- তুই চুপ থাক। বল মা কি হইছে?
- আপনার ছেলে আজ আমার বান্ধবীদের সামনে আমায় অপমান করছে।
(তারমানে রাস্তায় চুপচাপ থেকে এই প্লান করছে। এখন তা বুঝতে পারলাম) - কিহ? কখন? আম্মু এটা মিথ্যে কথা।
- তুই চুপ থাক। অদ্রিতা কেন মিথ্যে বলবে?
- এটা যদি তোমরা বুঝতে তবে তো হতোই।
- দেখছেন আম্মু আমায় মিথ্যেবাদী বলছে।
- ঐ হারামজাদার কথায় কান দিও না।
- জানেন আম্মু আজ ওখানে গিয়ে ও আমার সাথে কোনো কথা বলে নি। আমার বান্ধবীদের সাথে হেসে হেসে হাত ধরে কথা বলেছে।
- কিহহ? সুমন তোর এতো সাহস?
- আম্মু আমি এসব কিছুই করিনি।
- তুই চুপ থাক। অদ্রিতা তার পর বলতো মা।
- শুধু তাই নয় ও আমার বান্ধবী কে চোখ ও মারছে।
- কি বলিস মা? সুমনের আব্বু এই সুমনের আব্বু শুনে যাও তোমার ছেলের কান্ড শুনে যাও।
- আম্মু এর মাঝে আব্বুকে ডাকার কি দরকার?
- কেন ভয় লাগে? বল মা তুই কি শাস্তি দিতে চাস ওকে?
- ওকে শাস্তি দিলে তো আমারই কষ্ট হবে আম্মু।
- দেখ তোকে কতো ভালবাসে। তাহলে কি করবো অদ্রিতা?
- তুমি একটু আগে বললে না সুমনের আব্বু
- হুম।
- ঐটা অদ্রিতার আব্বু করে দাও।
- না, এটা কখনোই সম্ভব নয়। আম্মু তুমি এটা করতে পারো না।
- আমি কিন্তু আবার কান্না করবো?
- না মা আর কাঁদিস না। তোর টাই হবে।
- আমার মিষ্টি আম্মু।
- হুম আর আমার তেতো আম্মু।
- কি বললি তুই
- কিছু না। আমি রুমে গেলাম।
এরপর রুমে চলে আসলাম। এমন মেয়ে বাপের জন্মে দেখি নি। কতো সুন্দর করে বানিয়ে মিথ্যে বলে আমার নামের জায়গায় নিজের নাম বসিয়ে দিলো। আমিও ছাড়বো না। কিন্তু আমি কি করবো? এ মেয়ের সাথে পেরে ওঠা এতো সহজ হবে না। তার উপর কাল থেকে অফিস আছে। দূর কিছু ভালো লাগে না। জীবনটা বেদনা।।।
এমন অসময়ে আবার কে ফোন করে
- হ্যালো।
- দোস্ত কি করিস?
- ঘোড়ার ঘাস কাটি। কাটবি?
- না ভাই। আমার শশুড় এর কোনো ঘোড়া নাই।
-কি বলবি - কি বলবি মানে
- আরে ভাই ফোন কেন করছিস সেটা বল।
- ওহ। এমনি। তোরা কেমন আছিস?
- অনেক ভালো। তুই এখন ফোন কাট। অনেক টায়ার্ড।
- কেন রে কিছু করছিস নাকি?
- মানে?
- নতুন বিয়ে হইছে ভাই কোনো বিশ্বাস নাই।
- খুব না। শালা ফোন রাখ।
- মামা জ্বলে? আমার যখন বিয়ে হইছিলো তখন তোরা কি করছিস মনে নাই।
- আপাতত মনে নাই। পড়ে মনে করে বলবো। এখন ফোন কাট নয়তো তোর বাসায় যাবো এখনি।
- না ভাই আমি ফোন কাটছি। তোরে বিশ্বাস নাই আসতেও পারিস।
- তোরে সামনে পাইলে বাবা হওয়ার পার্সেন্টেন্স কমাই দিবো।
- সমস্যা নেই আগামী এক মাস আমাদের কারো দেখা হবে না। বাই।
ফোন কেটে শুয়ে শুয়ে ভাবতে লাগলাম কি করা যায়। কিন্তু মোটা মাথায় কোনো আইডিয়া আসছে না। - কি ব্যাপার কি করো?
- কে? ওহ তুমি?
- কেন অন্য কেউ আসার কথা ছিলো
- আসলে তো ভালোই হতো।
- কি বললি?
- তুমি এতো মায়া কান্না শিখছো কোথায়?
- মানে?
- এখন আবার মানে মানে করা হচ্ছে। আম্মু কে মিথ্যে বললে কেন?
- আমার সেফটির জন্য।
- তোমার সাথে আর কোথাও যাবো না।
- হিহিহি
- পেত্নীর মতো হেসো না তো।
- ঐ আমি পেত্নী
- বিশ্বাস না হলে আয়নায় গিয়ে দেখো
- কি আমি পেত্নীর মতো দেখতে? আজ তো তোরে
- কি করবে?
- তুই শুধু কিছুক্ষণ রুমে থাক আমি আসছি।
- যাও যাও যেখানে খুশি সেখান যাও আমি কি ভয় পাই নাকি?
অদ্রিতা রুম থেকে চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পরে আম্মুর রুম থেকে শব্দ আসতে লাগলো - সুমন এই সুমন
- হ্যা আম্মু।
- তুই এখনি আমার রুমে আয় তো।
না জানি আবার কি মিথ্যে কথা বলছে। গিয়ে দেখি কি হয়? এক দিনে এতোবার বিচার তো কোনো ফাঁসির আসামীর ও হয় না। খোদা হয় তুমি আমায় তুলে নাও নয়তো মই নামাই দাও আমি নিজে উঠে আসছি।
৭ম পর্ব
এরপর তাড়াতাড়ি করে আম্মুর রুমে গেলাম। নয়তো আবার দেরি করে আসছি বলে বিচার আরো কড়াকড়ি ভাবে হবে।
- হ্যা আম্মু ডাকছো?
- তোর এতো সাহস হয় কি করে?
- আমি আবার কি করলাম?
- খুব তো নাটক করতে পারিস।
- কি? আমি নাটক করছি?
- এমন ভাব নিচ্ছিস যেন কিছুই জানিস না?
- কি জানবো আমি? আমি আসলেই কিছু জানি না
- অদ্রিতার গায়ে হাত তুলছে কে?
- আমি কি জানি?
- দেখছেন আম্মু কতো বড় মিথ্যে কথা।
- তুই মিথ্যে বলা শিখলি কবে?
- মানে? আমি আবার কখন মিথ্যা বললাম?
- শোন মেজাজ কিন্তু অনেক খারাপ হচ্ছে
- কেন?
- তুই যদি ওর গায়ে হাত না তুলিস তবে ওর গালে লাল হয়ে আছে কেন?
- আমি কি করে জানবো?
- শোন আমাদের পরিবারের কেউ কখনো স্ত্রী র গায়ে হাত তুলে নি। পরবর্তীতে যেন আর না দেখি।
- আচ্ছা এটা তো বুঝলাম। কিন্তু আমি ওর গায়ে হাত তুলতে যাবো কেন? তার তো একটা কারণ থাকতে হবে তাই না?
- কারণ আছে তো আম্মু।
- কি কারণ হ্যা? কি কারণ?
- বলবো?
- বলো। আমি কি ভয় পাই না কি।
- আমি তখন রুমে যাওয়ার পর ও আমায় বললো ওসব আম্মু কে বলার কি দরকার ছিল। তখন আমি বললাম উনারাই তো আমার সব তাই তো উনাদেরকেই সব বিচার দিবো। তারপর ও বললো আমি যা করবো তার সব বিচার দিবে তুমি। আমি বললাম হ্যা ঠিক তখনি……. হু হু হু হু
-তোমার মায়া কান্না বন্ধ করবে - তুই ওকে ধমকাচ্ছিস কেন ভালো ভাবে কথা বলতে পারিস না?
- সরি। আচ্ছা আম্মু একটা কথা বলো তো
- কি?
- আমি সত্যি তোমার ছেলে তো নাকি কোনো হাসপাতাল থেকে নিয়ে আসছো
- তোরে রাস্তায় পাইছি এখন চুপচাপ রুমে যা। আর ওর দিকে যদি কখনো রাগী লুক নিয়ে তাকাস না তো তোরে বাসা থেকে বের করে দিবো
- কিহহ?
- হুম। যা মা রুমে যা।
এরপর অদ্রিতা আর আমি রুমে আসলাম। রাগে আমার শরীর গিজগিজ করছে। কি যে করতে ইচ্ছা হচ্ছে কিছুই বুঝছি না।
- কি হলো মহাশয়? কেমন দিলাম
- আচ্ছা আমি তোমার গায়ে কখন হাত তুললাম?
- কেন?
- আর এই গাল লাল হলো কিভাবে?
- এটা তো বলা যাবে না।
- খুব মজা লাগে তাই না আম্মুর কাছে আমায় ছোট করতে
- তুমি তো আম্মুর কাছে ছোটই
- মানে
- আরে আম্মুই তো ঐদিন বললো সুমন সারাজীবন আমার কাছে ছোটই থাকবে
- আরে গাধা এই ছোট আর ঐ ছোট এক নয়
- এই শোনো আমি গাধা না আমি গাধী
- এই গাধী টা আবার কি?
- কেন? গাধার স্ত্রী বাচক।
- তোমার সাথে কথা বলে লাভ নাই। আমি ঘুমালাম।
রাগ করে ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়লাম। একটু পরে অদ্রিতা ও শুয়ে পড়লো। - কি হলো
- কি আবার হবে?
- জড়িয়ে ধরা হচ্ছে কেন?
- আমার ভয় করে যে
- তো আমি কি করবো?
- তুমি আমার স্বামী।
- এটা তখন মনে রাখা উচিত ছিলো।
- তে কি হইছে এখন তো মনে আছে।
- এই যে এটা বালিস নয় ওকে . আপনার বালিস ওদিকে।
- বালিশে মাথা রাখার জন্য কি তোমায় বিয়ে করছি না কি
- বুকের উপর মনে হচ্ছে দুই মণ চালের বস্তা চাপাই দিছে।
- কিছু বললা তুমি?
- কই কখন? কিছু না। তুমি ঘুমাও।
কি করবো আব্বু আম্মু সবাইকে নিজের দলে করে নিয়েছে। কিন্তু এটা কিভাবে সম্ভব এতো তাড়াতাড়ি? এতো ভাবা যাবে না। ঘুমাতে হবে। কাল আবার অফিস আছে।
এরপর কখন যে ঘুমাই গেছি। সকাল বেলা - এই ওঠো আর কতো ঘুমাবা
- আম্মু আর ৫ মিনিট।
- আমি তোমার আম্মু না তোমার বাচ্চার আম্মু।
- ওহ তুমি।
- হুম আমি। অফিসে যাবে না।
- হুম।
- তাড়াতাড়ি আসো নাস্তা করবে।
তাড়াতাড়ি উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করতে গেলাম। কিন্ত একটা খটকা লাগছে আজ হঠাৎ এতো ভালো হওয়ার পিছনে কোনো প্লান নাই তো? কি বলছি এসব? আমার বউ আমায় ভালোবাসবে নাতো কাকে ভালোবাসবে?
এরপর অফিসে গেলাম। কলিগ রা অনেক মজা করছে আমায় নিয়ে
- এতো তাড়াতাড়ি অফিসে আসার কি দরকার বাসায় নতুন বউ
- রাতে কি ঘুম হয়?
- বউ কেমন?
ইত্যাদি আরো কতো কি যে শুনতে হলো। আগে জানলে অফিসে জয়েন করার আগেই বিয়ে করতাম।
- সুমন আজ মিটিং আছে বসের রুমে তাড়াতাড়ি আসবে
- ওকে আপনি যান আমি আসছি।
বসের রুমে গেলাম আমি ও আমার কিছু কলিগ। মিটিং চলা কালে হঠাৎ করেই ফোন বেজে উঠলো। এই যা ফোন তো সাইলেন্ট করতে ভুলেই গেছি। - কে ফোন দিছে? (বস)
- বাসা থেকে
- ওহহ আজও বিয়ের ঘোর কাটে নি
সবাই হেসে উঠলো।
বাহ সবাই আমায় নিয়ে তো ভালোই মজা নিচ্ছে।
মিটিং শেষ করে বাইরে এসে ফোন দিলাম। - হ্যালো।
- হুম। ফোন দিছলে কেন?
- দরকার ছিল। কোন মেয়ের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত ছিলে যে আমার ফোন ধরতে পারো নাই?
- ও হ্যালো আমি না অফিসে আসছি ওকে? কোনো ডেটিং প্লেসে নয়।
- অফিসে কি যে করো সেটা তো তুমিই ভালো জানো।
- ওকে বাই।
- তাড়াতাড়ি আসবে।
- পারবো না।
- আম্মু এই দেখেন আপনার ছেলে আমায় ধমকাচ্ছে।
(এই যা আম্মু আবার পাশে আছে নাকি?) - এই আমি রাখলাম। বাই।
তাড়াতাড়ি ফোন কেটে দিলাম।
অফিস শেষে বাসায় আসলাম। এসেই সোজা আমার রুমে। একটু পরে অদ্রিতা রুমে আসলো।
- এই তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে নাও।
- কেন?
- আব্বু আসছে
- আব্বু আবার কই গেছলো?
- আরে বাবা আমার আব্বু আসছে।
- ওহ আংকেল আসছে
- আমার আব্বু তোমার আংকেল হয়
-তো কি? ওকে তুমি যাও আমি আসছি। - তাড়াতাড়ি।
- এটা কি হলো?
(অদ্রিতা আমায় কিস করলো)
- ঘুস দিলাম।
- কিশের
- যাতে উল্টো পাল্টে কিছু না করো তাই
- পাগলী একটা। যাও আসছি।
ফ্রেশ হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে আংকেল সরি শশুড় আব্বার সাথে দেখা করলাম।
গিয়ে সালাম দিলাম। কিছুক্ষণ কথা বলার পর হঠাৎ আম্মু বললো
- সুমন উনি অদ্রিতাকে সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছে
(শুনে তো আমার খুশি আর ধরেই না। অনেক কষ্টে আনন্দ সংযত রাখতে হলো। মায়াবী চেহারা নিয়ে অদ্রিতার মুখের দিকে তাকিয়ে বললাম) - আজকেই নিয়ে জাবেন?
- হ্যা উনি তো তাই বললো, (আরে না! খুশিতে লুঙ্গি ডান্স করতে ইচ্ছা করছে)
- অদ্রিতা কি বললো?
- ও কি বলবে? তুই যা বলবি তাই।
(খুশি আর আটকে রাখতে পারলাম না। জোরে বলে উঠলাম) - ওকে তুমি এখনি যাও।
- কিহহ (আম্মু অবাক হয়ে)
(সবাই অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে)
- না ইয়ে মানে আমার তো অফিস আছে নয়তো আমিও যেতাম।
- ওহ আচ্ছা।
(যাক বাবা এই যাত্রায় বাঁচলাম) - ঠিক আছে আব্বু তুমি আজ যাও আমি আর ও মিলে না হয় পড়ে একদিন যবো।
(এই যা কেচ খেয়ে গেলাম মনে হয়) - এই না না। তুমি যাও আমি দেখি স্যারকে বলে চলে আসবো।
- হ্যা মা তুই যা। ও দুই একদিনের মধ্যে চলে যাবে।
- আচ্ছা আম্মু।
(হাফ ছেড়ে বাঁচলাম। দুই এক দিন কি দুই এক সপ্তাহেও যাবো না)
কিছুক্ষণ পরে অদ্রিতারা চলে গেল। যাবার আগে অনেক বার করে বলে গেল যাতে আমি তাড়াতাড়ি আসি। আমি ও হাসিটা কন্ট্রোল করে শুধু মাথা নাড়িয়ে গেলাম।
যাক বাবা আপদ বিদায়। কিছু দিন আরামে কাটাতে পারবো।
- আম্মু খাইতে দাও।
- টেবিলে রাখা আছে নিয়ে খা।
- সমস্যা নেই মন ভালো আছে ওটাও পারবো।
- কি বললি?
- কিছু না।
খাওয়া করে রুমে গিয়ে জোড়ে লুঙ্গি ডান্স গানটা ছেড়ে একটা লুঙ্গি পড়ে নাচতে শুরু করলাম। যদিও আমি নাচতেও পারিনা আর লুঙ্গি ও পড়তে পারি না।
চোখ বন্ধ করে নাচ শুরু।
- ঐ হারামজাদা
- এই কে রে?
- কি বললি?
- ওহহ আম্মু তুমি।
- মানুষ হবি কবে?
- কেন আম্মু কোন এঙ্গেল থেকে মানুষ মনে হয় না।
- সব এঙ্গেল থেকে।
- কিহহ।
- বউটা যাওয়ার দুই ঘন্টা ও হয় নাই আর ঘরের অবস্থা দেখে মনে হচ্ছে কোনো একটা গরুর ঘর।
- আম্মু গরুর ঘর জীবনেও এমন দেখছো?
- ঠিক বলেছিস। গরুর ঘর ও এর থেকে ভালো আছে।
(এই যা নিজে থেকেই বাশটা খাইলাম।) - গান বন্ধ করে চুপচাপ ঘুমিয়ে প। তোর বউ নাই যে সকালে তোরে ডেকে দিবে।
- আগে তো তুমি ডাকতে
- আগে তোর বউ ছিলো না তাই ডাকছি এখন তোর বউ আছে
- বউ তো বাপের বাড়ি
- তো আমি কি করবো
আম্মু চলে গেল।
শালা আমায় আসলে রাস্তায় কুড়িয়ে পাইছে। এখন কি করবো? আমায় যদি কেউ না ডাকে তাহলে তো ১২ টার সময়ও আমার ভোর মনে হবে।
অদ্রিতা কে কি ফোন করে বলবো যাতে সকাল বেলা ফোন করে ডেকে দেয়? না থাক আপদ আর নেওয়া যাবে না।।
কিন্তু সকালে তো উঠতে পারবো না। ফোন করি আমারই তো বউ। কিন্তু ফোন করে কি বলবো সকালে আমায় ডেকে দিও? এটা কি ভালো দেখায়? কি হবে হবে চাকরি বাঁচাতে হবে। ফোন দিলাম।
- হ্যালো
- আমি ফোন হাতে নিয়ে ওয়েট করছি তোমার ফোনের জন্য?
(এই কি আগেই জানতো আমি ফোন দিবো সকালে ডাকার জন্য) - কেন? তুমি কি করে জানলে আমি ফোন করবো?
- আমি জানতাম আমায় ছাড়া তোমার এক লাগবে সেটাই হলো
(অনেক ভালো জানে) - হুম। অনেক একা লাগছে (ইচ্ছে করছে চিৎকার করে হাসি কিন্তু এখন না) কখন পৌঁছে গেছ?
- একটু আগে।
- ওহ। এখন ঘুমাবে?
- হুম।
- কাল সকালে আমায় একটু ডেকে দিবে?
- তুমি না বললেও আমি ডাকতাম।
- আমার।
- কি?
- না থাক বাই।
- বলো না
- অন্য দিন। বাই।
ফোন কাটলাম। দেখি কাল সকালে কি হয়
শেষ পর্ব
এরপর আমি ঘুমিয়ে গেলাম।
সকাল বেলা কেউ আমার উপর পানি ঢেলে দিলো
- এই কে বে?
- তোর জম।
- কি হইছে আম্মু
- কয়টা বাজে?
- আমি কি জানি?
- নয়টা বাজে
- তো আমি কি করবো?
- অফিসে যাবি না?
- আজ বন্ধ।
- হারামজাদা ঘুমের ঘোরে কি তুই তোর স্কুল জীবনে চলে গেছিস
- কি বলো এসব
- অফিস যাবি না?
- ও মোর খোদা তাই তো। অফিস যেতে হবে।
- তুই কি এখন ও স্কুলে পড়িস? যে আজ বন্ধ বলছিস?
- আমি তো ওটাই ভাবছিলাম।
- রেডি হয়ে আয় নাস্তা দিচ্ছি।
- প্যাক করে দাও পরে খাবো।
- আচ্ছা।
আম্মু চলে গেল। খুব তাড়াতাড়ি রেডি হলাম।।
- আম্মু আমি গেলাম।
- সব নিয়েছিস তো
- হুম।
- সাবধানে যাস বাবা।
- আচ্ছা।
বউটাকে বললাম সকাল সকাল ডেকে দিতে। একবারও ফোন করলো না। ফোন করে কি একবার ঝাড়ি দিবো? না থাক অফিসে যাই আগে।
মাঝ রাস্তায় আবার কে ফোন দেয়?
- হ্যালো
- সকাল থেকে কতো বার ফোন করছি জানো?
- চুপ থাক। সকাল থেকে ফোন দিছে? আমি কি মারা গেছিলাম যে শুনতে পাইনি?
- এসব কি বলছো?
- চুপচাপ ফোন কাট।
আরও অনেক বাজে বিহেব করলাম। তারপর ফোন কেটে দিলাম।
মনে হয় অদ্রিতা কান্না করছে। কথা শুনে তো এমনই মনে হলো।
হঠাৎ আমি এতো বাজে ভাবে কথা বললাম কেন? এমন তো আগে কখনো করি নি? আজ যে কি হইছে আমার? আসলেই কি ও ফোন দিছলো? দেখি তো।
ফোন বের করে দেখি ৫২ টা মিস কল আর ৩৭ টা মেসেজ।
এটা দেখার পর নিজেকে কেমন জানি খারাপ লাগছে। এটা কি করার খুব দরকার ছিল? এমন টা না করলেও পারতাম। এখন কি ফোন দিবো ওকে?
না থাক পরে দিবো। না না মেয়েটা হয়তো কাঁদছে। ফোন করে সরি বলি।
বাইক রানিং অবস্থায় অদ্রিতা কে ফোন করার জন্য নাম্বার বের করছি সামনে একটা ট্রাক আসছিলো সেটা লক্ষ করি নি।
এরপর যখন আমার ঙ্গান ফিরলো তখন দেখলাম আমি হাসপাতালের বেড়ে শুয়ে আছি। পাশে অদ্রিতা কান্না করছে আর আব্বু ওকে বলছে আরে পাগলী মেয়ে তোর বর ঠিক আছে ডাক্তার বললো শুনলি না?
অদ্রিতার হাতটা আমার হাতের কাছেই ছিলো তাই আমার হাতটা ওর হাতের উপর তুলে দিলাম। তখন ও আমার দিকে তাকালো।
- তুমি ঠিক আছো তো?
- হুম (মাথা নাড়লাম)
- আসলে আমারই ভুল ছিলো। আমায় ক্ষমা করে দিও। তখন ওকে কিছুই বলতে পারলাম না। কারণ কথা বলার মত শক্তি আমার ছিলো না। কিন্তু আমি অবাক হয়ে চেয়ে ছিলাম অদ্রিতার দিকে। এতো কান্না করছে কেন ও?
শুধু ভাবছি কাউকে কতোটা ভালবাসলে তাকে হারনোর ভয়ে এতোটা কান্না করা যায়? কাউকে কি পরিমাণ ভালোবাসলে তার জন্য চোখ দিয়ে এতো গভীর ঝর্ণা ঝড়তে পারে?
যে মেয়েটা আমায় এতো ভালোবাসে তাকে কি না আমি আপদ ভাবতাম? তার সাথেই কি না আমি এই ধরনের বাজে ব্যবহার করলাম? হয়তো তাই জন্য এই শাস্তি পাচ্ছি। তবে মেয়েটার চোখ দুটো লাল হয়ে গেছে।
আমার সুস্থ হতে বেশ কিছু দিন সময় লাগলো। এই কয় দিন অদ্রিতা সব সময় আমার সাথে ছিলো। কখনো আমার রেখে কোথাও যায় নি। সব সময় রুমে।
মনে মনে ভাবি মেয়েটা এতো পাগলী কেন? এতো ভালো একটা মেয়ে আমার কপালে জুটবে এটা আগে যদি জানতাম তবে অনেক আগেই বিয়ে করতাম।
সেই রাগী লুকটা এখন কেন জানি নাই। মুখ টা সব সময় মলিন হয়ে থাকে যেটা আমার অনেক বাজে লাগে।
সব থেকে বেশি বাজে লাগে ওর হাসি টা দেখতে না পেয়ে। ও হাসে না জন্য পরিবারের সবার হাসির সিন্ধু বন্ধ হয়ে গেছে। আম্মু এজন্য ওকে একদিন বকাও দিছে
- সব সময় এমন গোমড়া মুখ করে থাকো কেন?
- ওর এমন হইছে আমার জন্য আম্মু।
- আরে পাগলী মেয়ে ও তো ঠিক আছে।
- হুম।
- তো এখন ও কান্না করিস কেন? চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে। আর যদি কাদিস তো তোকে তোর বাবার বাসায় পাঠাবো।
- না ঠিক আছে আর কাদবো না।
- হুম।
এখন আমি অনেকটা সুস্থ। এখন অফিসে যেতে পারি। তবে এখন সেই আগের মতো হাসিটা আর দেখতে পারি না। কেন জানিনা অদ্রিতা অনেক শান্ত হয়ে গেছে। এমন আমার একদম ভালো লাগছে না। আজ অফিস শেষে বাসা গিয়ে এর একটা দফারফা করতেই হবে।
অফিস শেষে বাসায় আসলাম। - আম্মু আব্বু অদ্রিতা (চিৎকার করে সবাই কে ডাকলাম)
(সবাই আসলো) - কি হইছে? (আম্মু)
- তোমার সমস্যা কি? (অদ্রিতা কে বললাম)
- (হয়তো ভয় পেয়েছে) কই আমার তো কোনল সমস্যা নাই।
- শোনো এমন করে চলতে থাকলে আমি কিন্তু তোমায় টলারেট করতে পারবো না?
- মানে?
- মানে কিছু না এমন করে চলতে থাকলে আমি তোমায় তোমার বাবার বাসায় পাঠাবো।
- আমি কি করছি (কান্না করে)
- কি বলছিস এসব (আব্বু অনেক টা অবাক হয়ে)
- আমার দোষ কি? (কান্না করেই যাচ্ছে)
- ঠাসসসসসসসসসসসস (খুব জোড়ে অদ্রিতার গালে একটা থাপ্পড় দিলাম)
- সুমন এটা তুই কি করলি? তুই ওকে মারলি কেন?
- কি করবো আম্মু? কি করবো আমি? এই মেয়েটা কি এমন ছিলো? তাহলে এখন এমন হলো কেন? ঠিক ভাবে কথা বলে না, হাসে না মিথ্যে বলে আমায় আর ফাসায় না। আমার যে এসব আর একদম ভালো লাগে না। আমি যে অফিসে গিয়ে শান্তিতে কাজ করতে পারি না, কোথায় যেন শূন্যতা লাগে।
(কেউ কোনো কথা বলছে না। আমি আবার শুরু করলাম) - তুমি নিজে হাসবে না ভালো কথা। কিন্তু ও কি জানে ওর হাসির সাথে সাথে বাসার সবাই হাসতে ভুলে যাচ্ছে? বাসাটা একটা মরুভূমি হয়ে যাচ্ছে।
(এবার কেন জানি আম্মু ও কান্না করছে) - আম্মু তুমি ওকে বলে দাও ও যদি এ বাসায় থাকতে না চায় তবে যেন চলে যায়। তবুও এমন করে এ বাসায় থাকা যাবে না। আমার এমন বউ চাই না। আমার সেই দজ্জাল বউ চাই। আর আমি গিয়ে দরজা লক করে ঘুমাবো কেউ যদি দরজা নক করে তাহলে কিন্তু খুব খারাপ হবে।
- তাহলে অদ্রিতা কোথায় থাকবে?
- আমি জানি না। বললাম না আমার এমন বউ দরকার নেই।
কথা গুলো বলে এসে দরজা লক করে শুইলাম। কিন্তু ঘুম তো আসে না। মাঝ রাতে উঠে দরজা খুলে দিয়ে আবার শুয়ে পড়লাম। কিন্তু ও আসলো না। হয়তো আম্মুর সাথে শুইছে। কখন জানি আমিও ঘুমাই গেছি।
সকাল বেলা কে যেন আমার বিছানায় পানি ঢেলে দিলো।
- কোন শালা বে?
- এই ভাষা ঠিক করো আমি তোমার শালা নই ওকে। শালার বোন।
- কি চাই? সকাল সকাল। রুম থেকে বের হও।
- আমার রুমে আমি আসছি আর আমাকেই প্রশ্ন আবার বের হতে বলছো সাহস তো কম না তোমার?
- এটা তোমার রুম?
- হুম
- বাবার ঘরের কথা
- তাই দাঁড়াও আব্বু আব্বু (আব্বু কে ডাকলো)
- কি হইছে?
- এই বাড়িটা কার?
- আমার
- কি?
- না মানে তোর।
- তাহলে এই রুম কার
- তোর।
- আমার রুম থেকে আমাকেই বের হয়ে যেতে বলছে কি শাস্তি দেওয়া যায় বলতো
- তুই বল
- আজ শুক্রবার তোমার অফিস নাই সো তুমি বাথরুম পরিস্কার করবে
- কি? পারবো না।
- তুই পারবি না তোর বাপ পারবে। (আব্বু)
- তো যাও না তুমি গিয়ে পরিস্কার করো।
- এই তুমি আব্বুর সাথে এভাবে কথা বলছো কেন? জানোনা ওটা আমার আব্বু।
- তাই?
- তোমার শাস্তি আরও বেড়ে গেল কাপড় ও কাচতে হবে।
- সব করবো তবে যদি এবং কেবল যদি আমার বউ আমায় হেল্প করে।
- উমমম, ওকে বউ হেল্প করবে। আব্বু তুমি যাও।
- এই হাসিটাই তো সারাজীবন দেখতে চাই। (জড়িয়ে নিলাম বুকে)
ফিরে পেলাম আবার সেই দজ্জাল বউ। তবে দজ্জাল বউ এর সাথে রোমান্টিকও পেয়ে গেছি। যা হারাইলাম তার সুদে আসলে ফিরে পেলাম।
লেখা- সুমন আল ফারাবি
সমাপ্ত
আরো পড়ুন – আবারো – ভালোবাসার কষ্টের নতুন গল্প