নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – শেষ পর্ব: স্বামী স্ত্রীর মাঝে সবচেয়ে বড় ভয়ের সৃষ্টি হয় কখন জানেন? বাচ্চা পেটে আসা থেকে প্রসব পর্যন্ত। যদিও সন্তান সারা জীবন একটা ভয়ে রাখে, ভালো থাকা, বিপদ মুক্ত থাকার। আজ ইমন এর সাথে ঠিক এই ভয়টাই হচ্ছে আমার, পৃথিবীর সমস্ত চিন্তা যেন আমার মাথায় এসে পড়েছে।
সংসারে নতুন অতিথির আগমন
এক দিকে ব্যথা, আর অন্য দিকে ভয়,
আমার ইমন কে ছেড়ে চিরতরে চলে যেতে হবে না তো?
ইমনঃ বিধাতা, তুমি আমার স্ত্রী সন্তানকে ভালো রেখো। প্লিজ ভালো রেখো।
কিছুক্ষণ পর ডাক্তার বেড়িয়ে এসে ইমনকে জানান,
ডাক্তারঃ কংগ্রাচুলেশনস! আপনাদের একটি ফুটফুটে মেয়ে হয়েছে।
ইমনঃ আলহামদুলিল্লাহ্! আর আমার ওয়াইফ? ও কেমন আছে? ও ঠিক আছে তো?
ডাক্তারঃ ভয় নেই, আপনার ওয়াইফও ভালো আছে। কিছুক্ষণ পরই তাকে বেডে দেয়া হবে।
একজন নার্স এসে আমাদের মেয়েকে ইমনের কোলে দেয়। ইমনের চোখ ভিজে যাচ্ছে।
ইমনের মাঃ কিরে আজ তো খুশির দিন। তুই কাঁদছিস কেন?
ইমনঃ এ যে খুশির কান্না, মা। এ যে খুশির কান্না।
আমাকে বেডে দেয়া হয়। ইমন আমাদের মেয়েকে নিয়ে রুমে ঢুকে।
আমি ইমনকে দেখে, অল্প একটু হাসি। ইমন আমার কপালে চুমু এঁকে দেয়।
ইমনঃ লাভ ইউ সো মাচ কলিজা। লাভ ইউ সো মাচ।
মাহিঃ লাভ ইউ টু নীরার বাবা।
ইমনঃ বলেছিলাম না, আমাদের মেয়ে হবে? দেখেছো, আমাদের নীরা হয়েছে। আল্লাহ্ আমাদের নীরা দিয়েছেন।
মাহিঃ হুম। আল্লাহ্ তোমার ইচ্ছে পূরণ করেছেন।
ইমনের মাঃ যাক বাবা, এখন তো তোদের কান্নাকাটির পালা শেষ হলো। সব সময় মন মরা মুখ দেখতে দেখতে ভুলেই গেছি তোদের হাসি ভরা মুখ কেমন। এখন তো অন্তত তোদের হাসি ভরা মুখ দেখতে পাবো। নাকি তাও পাবোনা?
ইমনঃ কি যে বলোনা, মা!
মাঃ কিরে, তোর শরীর কেমন লাগছে, মাহি? খারাপ লাগছে?
মাহিঃ না মা, ঠিক আছি।
আমাদের স্বামী স্ত্রীর সুখের সংসার
বাসার সবাই খুশি নীরা আসাতে। বেলাতো আসলে আর যেতেই চায়না এখন নীরাকে ছেড়ে।
নীরা, ধীরে ধীরে বড় হচ্ছে। আজ নীরার ৫ বছর পূর্ণ হলো। মেয়ে তার বাবার চোখ পেয়েছে।
চুলগুলোও বাবার মত স্ট্রেইট। নাকটাও বাবার মত। হাসিটাও বাবার মত মাশাআল্লাহ্! হাসি দেখলেই প্রাণ জুড়িয়ে যায়।
মাহিঃ ইমন, দেখোতো এত দিন পেটে রাখলাম আমি। জন্ম দিলাম আমি। লালনপালন করছি আমি। আর মেয়ে কিনা হলো তোমার মত। তার বাবার মত। বাবার মেয়ে বাবার মত হইছে। আমার মত কেন হলোনা? আমার সাথে তো কিছুই মিলেনা।
ইমনঃ কে বলেছে মিলেনা? মেয়ের গায়ের রঙ যে তার মায়ের মত, সেটা কি চোখে পড়ে না? আর ঠোঁট, ঠোঁটের নিচের তিল। মায়ের মত না তো কার মত? আমার কি ঠোঁটের নিচে তিল আছে ম্যাডাম? তিলটা তো আপনারই পেয়েছে। আর হাতের আঙুল, পায়ের আঙুলও তার মায়ের আঙুলের মত পিচ্চি পিচ্চি। কে বলেছে মেয়ে তোমার মত হয়নি? আমার আর তোমার দুজনের মত হয়েছে আমাদের নীরা। আ
র তখনই নীরা এসে আমাকে আর ইমনকে জড়িয়ে ধরলো। আগে ইমনকে একটা চুমু দিলো। তারপর আমাকে।
মাহিঃ দেখেছো দেখেছো? চুমুটাও আগে তোমাকে দিলো। আমাকে কেউ ভালই বাসেনা।
ইমনঃ আম্মু, তুমি সব চেয়ে বেশি কাকে ভালবাসো?
নীরাঃ কেন বাবা, তোমাকে।
মাহিঃ দেখেছো? আমাকে ভালই বাসেনা কেউ।
নীরাঃ আম্মু তুমি খুব পঁচা, মিথ্যে বলো কেন?
মাহিঃ আমি মিথ্যে বললাম?
নীরাঃ বল্লেইতো। বাবা তোমাকে ভালবাসেনা? বাবা তোমাকে ভালবাসে আর আমি ভালবাসি বাবাকে। তাই না বাবা?
ইমনঃ হুম, মা।
নীরাঃ লাভ ইউ বাবা।
ইমনঃ লাভ ইউ টু মা।
নীরাঃ আমি দাদুর কাছে যাচ্ছি।
ইমনঃ আচ্ছা, যাও।
ইমনঃ বলছিলাম কি, এত ফুলতে হবেনা। এখনই তো মনে হচ্ছে ব্লাস্ট হয়ে যাবে।
মাহিঃ চুপ করো।
ইমনঃ উঁহু, চুপ তো করবোনা। বলছি যে, যে তোমাকে বেশি ভালবাসবে তাকে আনলেই তো হয় এখন। আমার মেয়ে আমাকে ভালবাসবে আর সে তোমাকে।
মাহিঃ কে আর কাকে?
ইমনঃ কাকে আবার, নীরার ভাইকে। নীরা তো এখন বড়ই হয়েছে। এখন তো ওর ভাই কে আনাই যায় তাইনা?
মাহিঃ যাও দুষ্টু। আমিও মায়ের কাছে গেলাম থাকো তুমি।
ইমনঃ এই কই যাও কই যাও, দাঁড়াও দাঁড়াও।
মাহিঃ হুম বলো।
ইমনঃ ভালবাসি বউটা। আমার ভালবাসার ঘরটাকে ভালবাসা দিয়ে পরিপূর্ণ করে তুলার জন্য ধন্যবাদ।
মাহিঃ আর আমাকে, এই বুকের মাঝে সকল বাধা বিপদ বিপত্তি থেকে আগলে রাখার জন্য ভালবাসা।
ইমন আর আমি খুব ভালো আছি আমাদের মেয়ে নীরাকে নিয়ে।
এখন আল্লাহ্র কাছে একটাই প্রার্থনা জীবনের বাকি দিন গুলোও যেন ইমনের বুকে মাথা রেখে নিশ্চিন্তে কাটিয়ে দিতে পারি। আমাদের ভালবাসার ঘর যেন মৃত্যুর আগে পর্যন্ত ভালবাসায় ভর পুড় থাকে।
~সমাপ্ত~
লেখা: মাহি মালিনী
আরো পড়ুন- নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ১
I love you so much