নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৬: কত সুখের সংসার আমাদের ভাবতেই ভাগ্যবতী মনে হয় নিজেকে কিন্তু একটি অপূর্ণতা আছে আমাদের জীবনে আর তা হল সন্তান। বাচ্চা প্রিয় স্বামীকে অসহায় করে রেখেছি মনে হচ্ছে। কি করব আমি কিছু বুঝতে পারছি না।
স্বামীর বিয়ের ভাবনা
আমি সকালেই বাসার সবাইকে বলে দেবো তোমার জন্য মেয়ে দেখতে।
ইমনঃ মগের মুল্লুক পেয়েছো নাকি? তুমি বলবে আর আমি বিয়ে করে নিবো, তাইনা?
মাহিঃ তাহলে কি ধরে নিবো আমার চাওয়ার কোন দাম নেই তোমার কাছে?
ইমনঃ আছে, তবে এমন কোন চাওয়া আমি তোমার পূরণ করতে পারবোনা যে চাওয়ায় আমার আর তোমার মাঝে দূরত্ব সৃষ্টি হবে।
মাহিঃ কিন্তু আমি যে তোমায় কোনোদিন সন্তান দিতে পারবোনা, কলিজা। আমার ভুলের কারণে তুমি কেন সারাজীবন বাবা ডাক শোনা থেকে বঞ্চিত থাকবে?
ইমনঃ পৃথিবীতে অনেক দম্পতী আছে যাদের কোন সন্তান নেই। তাই বলে কি তারা এক সাথে থাকেনা? বা কেউ কাউকে ছেড়ে চলে গেছে? আচ্ছা বলোতো, ওই এক্সিডেন্টটা কি তুমি নিজে নিজেই করেছিলে? নাকি ভুলবশত হয়ে গেছে? আচ্ছা ওই ঘটনার পর সব থেকে বেশি সাফার কে করেছিলো বলো তো? তুমি করেছিলে, তুমি। আমরা সবাই একটা সন্তানের অপেক্ষায় ছিলাম মাত্র। আর তুমি তো ওকে নিজের গর্ভে রেখেছিলে। আমাদের থেকে তোমার কষ্ট টা শত ভাগ বেশি। মানলাম আমি বাবা হতে চাই।
এটা আমার স্বপ্ন, শুধু মাত্র আমার না, সব পুরুষেরই স্বপ্ন থাকে বাবা হবার। তাই বলে কি তোমার কোন স্বপ্ন নেই? তুমি কি চাওনা মা হতে? চাও। অবশ্যই চাও। আর আল্লাহ্ তায়ালা একদিন আমাদের স্বপ্নটা ঠিক পূরণ করবেন। আমি চাইনা অন্য কারো দ্বারা আমার স্বপ্ন পূরণ করতে। যেখানে তুমি নেই। যেই সুখ তুমি অনুভব করতে পারবেনা, সেই সুখের প্রয়োজন নেই আমার।
আমার তুমি হলেই হবে। ৫ বছর কেন, সারাজীবন আমি সন্তানহীন থাকতে রাজি। কিন্তু তোমাকে হারাতে রাজি না। চাইনা আমার ওমন সন্তান, যার জন্য আমাকে আমার প্রিয়তমাকে হারাতে হবে। আমি তোমাকে নিয়ে, তোমার সাথে বাকি জীবনটা কাটিয়ে দিতে চাই। থাকবেনা আমার সাথে? রাখবেনা আমাকে সারাজীবন তোমার ওই বুকে?
আমি ইমনর কথাগুলো শুনে ইমনকে আমার বুকে জড়িয়ে ধরলাম।
কাঁদতে কাঁদতে বললাম,
মাহিঃ ভালবাসি কলিজা, খুব ভালবাসি। সত্যি আমি ভাগ্যবতী। তোমাকে পেয়ে, তোমার মত স্বামী পেয়ে এ জীবন ধন্য আমার।
বাসার সবাই আমাকে আর ইমনকে শুভেচ্ছা জানালো।
ইমন সেই প্রথম বারের মত এবারো সন্ধ্যায় একটা ফ্যামিলি পার্টি রাখলো।
ওকে না করলাম, এসব করার জন্য। তবুও শুনলোনা।
সত্যিকারে ভালোবাসা
মনে পড়ে যাচ্ছে, সেদিনের কথা। যেদিন প্রথম বার আমি জানতে পেরেছিলাম আমি মা হতে চলেছি। আর ইমন বাবা।
ইশ কতই না খুশি হয়েছিলাম আমরা সবাই।
কিন্তু হঠাৎ কি থেকে কি হয়ে গেলো।
ইমনের মাঃ কিরে, কি ভাবছিস?
ইমনঃ না, কিছুনা মা।
ইমনের মাঃ প্রথম বছরের কথা মনে নাড়া দিচ্ছে না?
আমি মাকে জড়িয়ে ধরে বললাম,
ইমনঃ হুম মা।
ইমনের মাঃ কাঁদিস না। আল্লাহ্ চাইলে একদিন আবার সব হবে। তাছাড়া তোর বড় ভাইয়ার আর মেঝো ভাইয়ার সন্তানরা কি তোদের সন্তান না? কেন এভাবে ভেঙে পড়ছিস? ইমন তোর মুখে হাসি দেখতে এত সব প্ল্যানিং করেছে। ওর খুশিটা তোর চোখের জল দিয়ে মাটি করে দিস না। যা রেডি হয়ে আয়। কেক কাটবি।
ইমনঃ মা, এবার না কাটি? ভালো লাগছেনা।
ইমনের মাঃ চুপ। কোন কথা না। যা রেডি হয়ে আয়।
আয়নায় আজ নিজেকে দেখছি।
৫ বছরে আমার মাঝে কতটা পরিবর্তন।
চোখ দুটো যেন শুকিয়ে গেছে, চোখের নিচে কালি পড়ে গেছে।
মুখটা যেন মলিনতায় গ্রাস করেছে। হাসিটা যেন কত শত দিন যাবত গায়েব।
কি এক অদ্ভুত আমি আজ আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে।
নিজেকে নিজেরই চিনতে ভীষণ কষ্ট হচ্ছে।
মা হওয়ার আনন্দ
হঠাৎ পেছন থেকে ইমন এসে জড়িয়ে ধরলো।
ইমনঃ কি হয়েছে আমার বউটার? আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজের রুপ মাহি নিজেই দেখছে?
মাহিঃ হা হা, রুপ। কি বিচ্ছিরি হয়ে গেছি দেখতে আমি। কখনো তো বলোনি, মাহি তুমি আর আগের সেই তুমি নেই।
ইমনঃ কেন বলবো? আমার কাছে তুমি আমার আগের সেই তুমিই আছো। শুধু একটা জিনিস মিসিং মুখটাতে।
মাহিঃ কি?
ইমনঃ এক মিনিট, দেখাচ্ছি।
ইমন আমার পেটে সুড়সুড়ি দেয়। আর আমি হাসতে থাকি, আর বলতে থাকি প্লিজ ইমন আর সুড়সুড়ি দিওনা। হাসতে হাসতে মরে যাবো তো।
ইমনঃ মরতে দিলে তো।
মাহিঃ পাগল একটা।
ইমনঃ এই হাসিটাই মিসিং ছিলো, বুঝলে?
মাহিঃ চলো চলো কেক কাটবে, চলো।
ইমনঃ আর হ্যাঁ, তোমাকে দারুণ লাগছে আজ।
মাহিঃ হুম হুম বুঝলাম, বুঝলাম। চলুন এবার।
ইমন আর আমি কেক কাটবো এখন।
আম্মু আব্বু বেলাও এসেছে। সবাই দাঁড়িয়ে আছে।
আমি আর ইমন দুজন মিলে কেক কাটলাম।
যেই আমি ইমনের মুখে কেক তুলে দিতে যাবো তখনই আমি ইমনের উপর ঢলে পড়ে যাই।
মাথাটা একটা চক্কর দিয়ে উঠে। চোখ মুখ ঝাপসা হয়ে যায়।
ইমন তাড়াতাড়ি করে আমাকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। ডাক্তারকে ফোন করে আসতে বলে।
ডাক্তার এসে কিছুক্ষণ পর বলেন,
ডাক্তারঃ মিঃ ইমন।
আপনার ওয়াইফ প্রেগন্যান্ট। কংগ্রাচুলেশনস! চিন্তার কোন কারণ নেই।
বাসায় খুশির ঢল নামে।
এত বছর পর আল্লাহ্ আবার আমাদের দিকে মুখ তুলে চান।
এবার আমি খুব সাবধানে থাকি।
সুখী পরিবারের যত্ন
ইমন আমাকে ছাদে উঠা বারণ করে দিয়েছে।
বেশির ভাগ বেড রেস্টেই থাকা হচ্ছে আমার।
মা, ভাবীরা সবাই নানান রকম খাবার তৈরি করে এনে আমাকে খাওয়াচ্ছেন।
দেখতে দেখতে এখন আমার নয় মাস।
ইমন আমার পেটে কান দিয়ে ওর সন্তানের সাথে কথা বলে।
ইমনঃ আম্মু, তুমি কেমন আছো হুম? এই তো আর কয়েকটা দিন। তারপরই তুমি আমার কোলে চলে আসবে আম্মু। মন খারাপ করেনা। বাবা তোমার জন্য অপেক্ষা করছে।
তারপর আমার পেটে আর কপালে চুমু দিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করে,
ইমনঃ আমাদের মেয়ের নাম কি হবে বলো তো?
মাহিঃ নামটা এখন ঠিক না করি? ও আসুক আগে তারপর না হয় নাম রাখা যাবে।
ইমনঃ উঁহু! নামটা এখনই রাখতে হবে।
মাহিঃ পরে যদি ওই বারের মত নামটা..
কথা সম্পূর্ণ করতে না দিয়েই ইমন আমার মুখটা হাত দিয়ে আটকে ধরে।
ইমনঃ চুপ। কিচ্ছু হবেনা।
মাহিঃ হুম।
ইমনঃ আমাদের মেয়ের নাম হবে নীরা।
মাহিঃ নীরা?
ইমনঃ হুম, নীরা।
মাহিঃ আচ্ছা।
গর্ভবতী বউয়ের পাশে স্বামী
কয়েক দিন পর…
মাহিঃ ইমন, এই ইমন। উঠো তো।
ইমনঃ কি হয়েছে?
মাহিঃ আমার খুব খারাপ লাগছে। ব্যথা হচ্ছে খুব। আমাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলো।
ইমন আমাকে দ্রুত হসপিটালে নিয়ে যায়।
ডাক্তার বলেন, এটা ডেলিভারি পেইন। আমাদের এক্ষুণি ওনাকে নিয়ে যেতে হবে। আপনি বাইরে থাকুন মিঃ ইমন।
মাহিঃ ইমন আমার খুব ভয় করছে। আমি যদি মারা যাই? আমি তোমাকে ছেড়ে যেতে চাইনা, ইমন। আমি তোমার সাথে অনেক বছর বাঁচতে চাই।
ইমনঃ কিচ্ছু হবেনা কলিজা, আল্লাহ্ ভরসা। ভয় পেওনা।
ডাক্তার আমাকে ইমনের কাছ থেকে নিয়ে যায়।
ইমন আমার কপালে একটা চুমু দিয়ে আমাকে বিদায় জানায়।
এক দিকে ব্যথা, আর অন্য দিকে ভয়, আমার ইমনকে ছেড়ে চিরতরে চলে যেতে হবে না তো?
চলবে…
পরের পর্ব- নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – শেষ পর্ব