নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৪

নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৪: আমাদের সংসার জীবনে কোন সুখের কমতি নাই। নিজেকে অনেক ভাগ্যবতী মনে হয় এজন্য। কিন্তু একটা কষ্টের কালো মেঘ যেন আমাদের চারপাশে ঘুরঘুর করছে। জানি না কি হবে?
বরের সান্তনা ও পাশে থাকা
যেকোন মুহূর্তে বৃষ্টি নেমে যেতে পারে। তাই আমি ছাদ থেকে সবার কাপড় চোপড়গুলো আনতে যাই। আর নিয়ে আসার সময় হঠাৎ কিভাবে যেন আমার পা স্লিপ করে আর আমি সিঁড়ি থেকে পড়ে যাই।
সাথে সাথে চিৎকার দিয়ে উঠি, এরপর আর আমার কিছু মনে নেই।
যখন আমার জ্ঞান ফিরে তখন আমি নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করি।
আর আমার মাথার কাছে বসে আছে ইমন।
আমি চোখ খোলা মাত্রই ইমন বলে ওঠে,
ইমনঃ কলিজা, ঠিক আছো তুমি?
মাহিঃ হ্যাঁ, ঠিক আছি। ইমন আমার বাচ্চা ঠিক আছে তো? আমার বাচ্চার কিছু হয়নিতো? আমাদের বাচ্চা ঠিক আছে তো?
ইমনঃ হ্যাঁ, কলিজা। ও ঠিক আছে। তুমি কোন চিন্তা করোনা। একটু চুপ করে রেস্ট নাও।
মাহিঃ ইমন, আমার যেন কেমন লাগছে!
ইমনঃ আরে পাগলী চিন্তা করোনাতো। কিছু হয়নি আমাদের বাচ্চার।
মাহিঃ জানো, আমি যখন ৩য় সিঁড়িতে তখন আমি পা স্লিপ করে ৫নং সিঁড়িতে পড়ে যাই। আর কিভাবে যে আমার বাচ্চাটাকে বাঁচানোর জন্য আমি রেলিংটা ধরে ফেলি তা শুধু আমি জানি। তারপর আর কি হয়েছে আমার মনে নেই। কিন্তু আমার পেটটা এইভাবে চাপ ধরে আছে কেন?
ইমনঃ ও কিছু না। ব্যথা পেয়েছো যে সেই জন্য ঠিক হয়ে যাবে।
তারপর বাইরে থেকে আমার বাসার আর ইমনের বাসার সবাই ভেতরে এসে আমার সাথে কথা বলে।
ডাক্তার আমাকে দুই দিন হসপিটালে রেখে দেন।
ইমন আর আমার শাশুড়ি মা আমার সাথে থাকেন। আম্মুও থাকতে চায়। কিন্তু ইমন বলে,
ইমনঃ সমস্যা নেই আম্মু। আমি আছি তো। আমি ওকে দেখে রাখবো। বাসায় বেলা একা না? আপনি বাসায় চলে যান।
তাই আম্মু চলে যায়।
এদিকে আমার শুধু একটাই চিন্তা, আমার বাচ্চা ঠিক আছেতো?
সন্তানের জন্য মায়া
দু দিন পর ডাক্তার আমাদের একটা আল্ট্রাসনোগ্রাফি করতে বলেন। ওটা দেখেই নিশ্চিত হওয়া যাবে আমার বাচ্চাটা এখন কেমন আছে!
আল্ট্রাসনোগ্রাফি করে এসে, ডাক্তারের কেবিনে বসে আছি।
আজকের মত, ভয় আমার আর কোন দিন লাগেনি। বার বার দোয়া দরুদ পড়ছি। যাতে আমার বাচ্চাটা ঠিক থাকে।
ডাক্তারঃ আমি আপনাদের যা বলছি আপনারা খুব মনোযোগ সহকারে শুনুন।
ইমনঃ জ্বী, ডাক্তার।
ডাক্তারঃ আমার যতটুকু সম্ভব, আমি চেষ্টা করেছি বাচ্চাটাকে ঠিক রাখার। ইনজেকশনও পুশ করেছি। মেডিসিনও দিয়েছি। আজ দুইদিন পর। আল্ট্রাসনোগ্রাফির রিপোর্ট দেখে আমার খুবই দুঃখের সাথে আপনাদের জানানো লাগছে যে, আপনাদের বাচ্চাটার পজিশন খুব একটা ভালোনা। ওর দুনিয়াতে আসার এবং দুনিয়া থেকে চলে যাবার চান্স ফিফটি ফিফটি। তবে বাচ্চাটাকে রাখলে বাচ্চার মায়ের জীবন সঙ্কায় পড়ে যেতে পারে। তাই আমার মতে, আপনাদের উচিৎ এখন বাচ্চাটাকে এভয়েড করা, এ্যাবরশন করে ফেলা। এখন আপনারা সিদ্ধান্ত নিন, কি করতে চান আপনারা। বাচ্চাটাকে কি রাখতে চান, নাকি!
কথাটা শোনার সাথে সাথে পায়ের নিচ থেকে যেন মাটি সরে যাচ্ছিলো। বুকের ভেতর টাতে রক্ত ক্ষরণ হচ্ছিলো।
আমি যেন, বাক শক্তি হারিয়ে ফেলে ছিলাম।
কেবিন থেকে বেরিয়ে গেলো।
গিয়েই হসপিটালের বারান্দায় বসেই দু হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্নার শব্দ লুকোনোর বৃথা চেষ্টা করতে লাগলো।
তারপর মিনিট সাতেক পর এসে আমার হাত ধরে বল্লো,
ইমনঃ ডাক্তার, বাচ্চাটাকে এভয়েড করার ব্যবস্থা করুন।
মাহিঃ না ইমন, এ কি বলছো তুমি? আমি আমার বাচ্চাটাকে মেরে ফেলবো? তাও আবার নিজ হাতে? না না, কখনোই না। কোন দিন না।
ইমনঃ মাহি, বোঝার চেষ্টা করো। ও থাকলে তোমার জীবন রিস্কে থাকবে। আর ওর বেঁচে থাকার ৬০% ও চান্স নেই। কেন বুঝতে পারছোনা?
মাহিঃ তাই বলে আমি মা হয়ে নিজের জীবনের ঝুঁকি এড়াতে, আমার সন্তানকে মেরে ফেলবো? এটা কি বলছো তুমি ইমন?
ইমনঃ তুমি সুস্থ হলে আমাদের আবার বাচ্চা আসবে মাহি। আর যদি তুমিই না থাকো। তবে আমি বাচ্চা দিয়ে কি করবো? যে আসেনি এখনো দুনিয়ায়, তার জন্য আমি আমার ভালবাসার জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে পারবোনা। পারবোনা আমি আমার ওয়াইফের জীবন ঝুঁকিতে ফেলতে।
ইমনঃ ডাক্তার, আপনি ব্যবস্থা করুন।
ডাক্তারঃ আচ্ছা, ঠিক আছে। আপনি এখন একটু পেসেন্টকে রেখে বাইরে যান।
ইমনঃ আমি যাচ্ছি, আর আপনি বাচ্চাটাকে এভয়েড করার ব্যবস্থা করুন।
স্বামী স্ত্রীর কষ্টের কান্না
ইমন বাইরে চলে যায়।
আর আমি ডাক্তারকে বলি,
ডাক্তারঃ আমার পক্ষে বাচ্চাটাকে মেরে ফেলা সম্ভব না, ডাক্তার। এই বাচ্চাটাকে নিয়ে আমার হাজবেন্ডের অনেক স্বপ্ন। ও অনেক স্বপ্ন দেখেছে এই বাচ্চাটাকে নিয়ে। আমি পারবোনা। ডাক্তার আমার জীবন বাঁচানোর জন্য ওর স্বপ্নটা ভেঙে ফেলতে।
ডাক্তারঃ তো কি চাচ্ছেন, আপনি এখন?
মাহিঃ আমি চাচ্ছি, আমার বাচ্চাটা থাকবে আমার পেটে। আর এই কথা আপনি আমার হাজবেন্ডকে জানাবেন না। ও আমাকে অনেক ভালবাসে, ও কখনোই চাইবেনা। আমার জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কোন প্রাণ এই পৃথিবীতে আনতে।
ডাক্তারঃ কিন্তু আপনি কি ভেবে দেখেছেন এর পরিণাম কি হতে পারে?
মাহিঃ হয়তো মরে যেতে পারি, যত দিন হায়াত আছে ততদিনই তো বাঁচবো বলুন? তাই আমি আমার বাচ্চাটাকে রাখতে চাই।
ডাক্তারঃ আপনার যেমন ইচ্ছে। কিন্তু কোন রকম খারাপ লাগলেই আপনি কিন্তু দ্রুত আমার এখানে চলে আসবেন।
কোন রকম হেলা করবেন না।
মাহিঃ জ্বী, আচ্ছা।
অনেকক্ষণ পর ডাক্তার ইমনকে বলেন,
ডাক্তারঃ আপনার স্ত্রীকে বেডে দেয়া হয়েছে। আপনি এখন যেতে পারেন।
ইমনঃ ডাক্তার, সব ঠিক আছেতো? এখন আর ওর কোন ক্ষতি হবার সম্ভবনা নেই তো?
ডাক্তারঃ সব ঠিক আছে।
ইমন দৌড়ে আমার কাছে আসে। আমার মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,
ইমনঃ কিচ্ছু হবেনা কলিজা। সব ঠিক হয়ে যাবে। কিছু দিন পরই, আবার তোমার গর্ভে আমাদের বাচ্চা আসবে। চিন্তা করোনা তুমি।
আমি ইমনের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকি।
ইমন ভাবে, আমি হয়তো বাচ্চাটা হারানোর দুঃখে কাঁদছি।
কিন্তু, আমিতো কাঁদতেছি ইমনের কাছ থেকে এত বড় সত্যটা লুকোনোর কারণে আর ইমন আমাকে এতটা ভালবাসে, এই ভেবে।
এরপরের দিন আমাকে রিলিজ দিয়ে দেয়। আর আমরা বাসায় চলে আসি।
মায়ের আকুতি
বাসার সবাই আমাকে সান্ত্বনা দেয়। বলে কিচ্ছু হবেনা। আবার সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে।
আমি চুপ করে থাকি, কোন কথা বলিনা।
দেখতে দেখতে এক সপ্তাহ কেটে যায়।
হঠাৎ খেয়াল করি আমার প্রেগন্যান্সির লক্ষণগুলো এক এক করে গায়েব হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ এমন কেন হচ্ছে?
আগে মাথা ঘুরতো প্রায়ই। এখন ঘুরেনা, আগে বমি বমি লাগতো, এখন লাগেনা। আগে পেটে এক রকম অনুভূতি অনুভব করতাম। কিন্তু এখন আর তা হচ্ছেনা। এমন কেন হচ্ছে?
সকাল থেকে এমন অনুভব করছি।
সারাদিন এমন গেলো। ভাবলাম, আজকের দিনটা দেখি, আগামীকাল ডাক্তারের কাছে যাওয়া যাবে।
কিন্তু সন্ধ্যা থেকে হঠাৎ করে শুরু হলো তল পেটে ব্যথা।
আর সেই ব্যথা প্রচণ্ড আকার ধারণ করলো।
আমি চিৎকার করে ভাবীদের ডাকলাম আর মাকে ডাকলাম।
মা আর ভাবীরা আমার কাছে আসলো, জিজ্ঞেস করলো কি হয়েছে?
আমি তাদের সত্যিটা খুলে বললাম,
মাহিঃ আর বললাম আমাকে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে চলুন। নয়তো আমি আমার বাচ্চাটাকে বাঁচাতে পারবোনা।
মা কেঁদে কেঁদে বলতে লাগলেন,
মাঃ তুই তোর বাচ্চাটার চিন্তা করছিস। আর আমি তো, এখন তোকে নিয়ে চিন্তা করছিরে মা।
এদিকে হঠাৎই আমার ব্লিডিং শুরু হয়ে গেলো। আর বড় ভাবী ইমনকে ফোন দিয়ে বলতে লাগলো,
ভাবীঃ ইমনরে, মাহির অবস্থা খুব খারাপ। আমরা ওকে নিয়ে হসপিটালে আসতেছি। তুইও তাড়াতাড়ি হসপিটালে আয়। চলবে…
পরের পর্ব- নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৫