নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৩: আমার জীবনে আনন্দের শেষ নেই, সব কিছুর পূর্ণতা যেন বিয়ের পর পাচ্ছি। তবে সুখ কতদিন কপালে সইবে তা জানি না। এখন উপভোগ করি, পরে কি হবে দেখা যাবে।
স্বামীর বাবা হওয়ার আনন্দ
ইমন আর আমি ছুড়ি ধরেছি, মাত্রই কেক কাটবো।
আর সেই মুহূর্তে আমার মাথাটা একটা চক্কর দিয়ে উঠে। আর আমার চোখ মুখ ঝাপসা হয়ে যায়। সাথে সাথেই আমি ইমনের উপর ঢলে পড়ি।
বাসার সবাই ভয় পেয়ে যায়। সবার মুখে আমার জন্য চিন্তার রেশ। ইমন দ্রুত আমাকে হসপিটালে নিয়ে যায়। ডাক্তার বলেন ভয়ের কিছু নেই।
আর সেদিনই আমরা জানতে পারি। আমি প্রেগন্যান্ট এবং আমি আর ইমন মা এবং বাবা হতে চলেছি।
ইমন বাসায় সবাইকে ফোন করে জানিয়ে দেয়। সবার চিন্তার রেশ কেটে গিয়ে আনন্দ দ্বিগুণ হয়ে যায়।
ইমন খুশিতে আত্মহারা। আমাকে বুকের মাঝে জাপ্টে ধরে বলে,
ইমনঃ থ্যাংক ইউ সো মাচ, কলিজা। থ্যাংক ইউ সো মাচ, আমাকে বাবা হবার খুশিটা অনুভব করানোর জন্য।
মাহিঃ লাভ ইউ ইমন, আমাকে পূর্ণতা দেয়ার জন্য।
বাসায় আসার পর সবাই আমাদের জড়িয়ে ধরে এবং শুভেচ্ছা জানায়। খুশির যেন সীমা নেই আজ। বাসার সবাই আমার যত্ন নেয়া শুরু করেন।
এদিকে ইমন আমার এক্সট্রা খেয়াল রাখা শুরু করে।
অফিস থেকে সারাদিনে কয়েক বার ফোন দিয়ে আমার খবর নেয়। আমি খেতে না চাইলে জোর করে নিজেই প্লেটে খাবার নিয়ে আমাকে খাইয়ে দেয়। আমি ঘুমানোর জন্য চোখ বন্ধ করলে মাথায় হাত বুলাতে থাকে, যতক্ষণ না আমি ঘুমাই।
কখনো বা আমার পেটে হাত রেখে ছলছল চোখে মিষ্টি হাসি দিয়ে বলে,
ইমনঃ মাহিরে! আমি বাবা হবো। বাবা হবো আমি।
মাহিঃ হুম কলিজা, তুমি বাবা হবে।
স্বামী ও সংসার
ইমন একটু ভেবে বলে- আচ্ছা, আমাদের মেয়ের নাম কি রাখবে?
মাহিঃ মেয়ে? আমাদের যে মেয়ে হবে কে বলেছে?
ইমনঃ কে বলবে? আমিই বলি।
মাহিঃ যদি ছেলে হয়?
ইমনঃ না, আমাদের মেয়েই হবে।
মাহিঃ আচ্ছা, মেয়ের বাবা আচ্ছা। আমাদের মেয়েই হবে।
ইমনঃ তো বলো তো আমাদের মেয়ের নাম কি রাখা যায়?
মাহিঃ সবে তো ৪ মাস মাত্র এখনই নাম?
ইমনঃ আর মাত্র ৫ মাস বাকি আমার মেয়ে আমার কোলে আসার। আর তুমি বলছো এখনই নাম। তাড়াতাড়ি নাম সিলেক্ট করো।
মাহিঃ বাচ্চার জন্য এত পাগল বাবা আমি আর দুনিয়ায় একটাও দেখিনি।
ইমনঃ আরো কত কিছু দেখবে। আগে আমার মেয়েটাতো পৃথিবীতে আসুক।
মাহিঃ আচ্ছা এখন ঘুমাই চলো। শরীরটা ভালো লাগছেনা।
ইমনঃ ঠিক আছে। তবে নাম ভেবে রাখবে কাল। আমি অফিস থেকে ফিরে এসেই নাম জিজ্ঞেস করবো।
মাহিঃ আচ্ছা গো, আচ্ছা।
ইমনঃ হুম, এবার আসো ঘুম পাড়িয়ে দেই।
এতটা কেয়ার এই ছেলেটা করতে পারবে বা করবে আমি কোন দিন কল্পনাও করিনি। ছেলেটা কতই না জেদি ছিলো, রাগী ছিলো। এক রোখা ছিলো। কিন্তু আমার ভালবাসায় যেন পুরোটাই বদলে গেছে। এখন রাগ কি জিনিস, জেদ কি জিনিস, তা ওকে দেখলে মনে হয় ও বোঝেই না।
তবে মাঝে মাঝে অভিমান করে।
আর চায়, আমি যেন খুব আদরে খুব যতনে ওর অভিমান ভাঙাই।
স্বামীর মন
ইমন খুবই বাচ্চা প্রেমী।
ওর, বাচ্চা দেখলে হুস থাকেনা। কোলে ও নিবেই। তা যে করেই হোক। বাচ্চাদের সাথে ও যেন নিজেই বাচ্চা হয়ে যায়।
ও যখন দেশের বাইরে ছিলো তখন ওর সাথে কাজ করতো একটা মামা ছিলেন, মামা তার পরিবার নিয়েই থাকেন ওখানে। আর ইমন আর মামা মামী এক ফ্ল্যাটেই থাকতেন। তাদের ফুটফুটে একটা মেয়ে বাচ্চা ছিলো।
মেয়েটাকে যে, ও কত আদর করতো তা বলার বাইরে।
মেয়েটাকে নিয়ে পিক তুলে তুলে আমাকে সেন্ড করতো। বাচ্চাটার বয়স তখন ৮ কি ৯ মাস হবে।
ওকে নিয়ে ভিডিও কলে আসতো। যদিও আমি আমার সাইডের ক্যামেরা অফ করে রাখতাম। তবে ওদের দেখে অনেক বেশি খুশি হতাম, চিল্লায় চিল্লায় বলতাম, ইশ দুইটা বাচ্চা। কত্ত কিউট বাচ্চা দুইটা।
ইমন যখন বাচ্চাদের সাথে মিশে তখন পুরো বাচ্চাদের মত হয়ে যায়।
ইমন এমন প্রকৃতির মানুষ যে কিনা সহজেই যে কারো সাথে এক নিমিষেই মিশে যেতে পারে।
যে কাউকে আপন করে নিতে পারে। আর ইমন যে, কাউকে সহজেই বিশ্বাস করে নেয়।
যদিও এটা একদিকে ভালো। আবার অন্য দিকে খারাপও। কাইমন, যে কাউকে চোখ বুজে বিশ্বাস করা উচিৎ না।
কিন্তু ও সবাইকে এক চাপা বিশ্বাস করে।
জীবন সংসারে উপদেশ
একদিন ফেসবুকিং করছিলাম, হঠাৎ আমার লিস্টে থাকা এক ভাইয়া আমাকে নক দেয়।
তার নক দেখে আমি অতি আশ্চর্য।
কারণ, এই ভাইয়া নক দিবে আমাকে, আমি ভাবতেই পারিনি। কারণ, উনি প্রায় ১ বছরের বেশি আমার লিস্টে ছিলেন। কখনো আমাকে নক দেন নি।
তার লিখা গুলো খুব সুন্দর ছিলো। তার লিখা দেখেই তাকে আমি ফ্রেন্ড লিস্টে জায়গা দিয়েছিলাম। খুব ভালো লিখেন তিনি। আর বলতে গেলে খুবই সোজা শান্ত একটা ছেলে।
ফেসবুক লাইফে তার কোন হেটার্স নেই। এটা আমি লিখে দিতে পারি।
তার লিখায়,কেউ বাজে মন্তব্য করলেও তিনি তা সুন্দরভাবে এড়িয়ে যেতেন।
আমি তা পোস্টের মন্তব্য গুলো পড়তাম আর অবাক হতাম। এত ধৈর্য্য সে পায় কই।
কিন্তু, এখন আমি টুকটাক লিখালিখি করে বুঝি, লেখকদের কত কিছুই হাসি মুখে হজম করে নিতে হয়। কখনো কখনো মন্তব্য পড়, চোখে জল এলেও চোখের জল মুছে হাসি দিয়ে ধন্যবাদ জানিয়ে চলে আসতে হয়।
আমার আম্মু সব সময় বলেন, যে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করবে, তোমাকে কটু কথা শোনাবে, তোমাকে আঘাত করবে তুমি তার সাথে খুব সুন্দর ব্যবহার করবে।
আম্মুকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, কেন এমন করবো আম্মু?
যে আমাকে কষ্ট দিবে আমি কেন তার সাথে ভালো ব্যবহার করবো?
আম্মু উত্তর দিলেন,
কারণ,তুমি তোমার জায়গায় ঠিক থাকলে, সে এক সময় খারাপ ব্যবহার, তাচ্ছিল্য করতে করতে ঠিক বুঝতে পারবে যে ভুল তার ছিলো, তোমার নয়। আর সে যদি, সত্যিই ভালো মনের মানুষ হয় তাহলে সে ঠিক বুঝতে পারবে। আমি মানুষটার সাথে এমন জঘন্য আচরণ করি, অথচ সে তো আমার সাথে এমন করেনা।
আর সেই থেকে তার মন পরিবর্তন হয়ে যাবে। যদি সে মানুষের মত মানুষ হয়।
আর কখনো তুমি কেন, অন্য কাউকে কষ্ট দিয়ে কিছু বলার আগে অন্তত তিন বার ভাবে। আমি যে এই কথাটা বলবো, মানুষটা কষ্ট পাবে কিনা।
আর এরপরও যদি তারা চেঞ্জ না হয় তবে তাদের ইগ্নোর করবে।
আর সেই থেকে আম্মুর কথা গুলো মাথায় গেঁথে নিয়েছি আমি।
আর সেই ভাইয়াটার ধৈর্য্য আর আচরণ দেখেও শিখেছি কিছু।
ফেসবুক ফ্রেন্ডের কথা
আমার জানা মতে, আমি নিজে থেকে আজ পর্যন্ত কাউকে হার্ট করে ইন্সাল্ট করে কথা বলিনি। কারো সমালোচনা করা তো দূরে থাক, কাউকে উপদেশ দিলেও সুন্দর ভাবে বলেছি। কারণ ওই যে আম্মু বলেছেন, প্রকৃত ভালো মনের মানুষরা কাউকে কিছু বলার আগে অন্তত কয়েকবার ভাবেন।
আমি যে এই কথা বলবো, আমার কথায় সে কষ্ট পাবে কিনা।
আর আম্মু এ ও বলেন,
তুমি যদি কাউকে কষ্ট দাও, তাহলে যেই পর্যন্ত সে মানুষ তোমাকে ক্ষমা না করবে সেই পর্যন্ত আল্লাহও তোমায় ক্ষমা করবেনা।
যাকে কষ্ট দিবে তার থেকে ক্ষমা পেতে হবে আগে।
কারো উপর রাগ উঠে গেলেও এখন আম্মুর মুখটা চোখের সামনে ভেসে উঠে, আর আম্মুর কথা গুলো মনে পড়ে যায়।
আর আমি নিজেকে কন্ট্রোল করি। আর এভয়েড করি পরিস্থিতি।
তো সেই ভাইয়া আমাকে নক দিয়ে বল্লো,
ভাইয়াঃ আপু আছো?
আমিঃ জ্বী ভাইয়া, আছি।
ভাইয়াঃ কেমন আছো তুমি?
আমিঃ জ্বী ভাইয়া আলহামদুলিল্লাহ্। আপনি কেমন আছেন?
ভাইয়াঃ এই তো আছি আপু।
আসলে ভাইয়া তোমাকে নক দিয়েছিলো একটা দরকারে।
আমিঃ জ্বী ভাইয়া, বলুন।
ভাইয়াঃ আসলে কথাটা যে কি ভাবে বলবো, বুঝতে পারছিনা।
আমিঃ সমস্যা নেই, ভাইয়া আপনি নিঃসংকোচে বলুন।
ভাইয়াঃ আপু আমার না কিছু টাকার খুব প্রয়োজন।
আমার বাবা খুবই অসুস্থ। এদিকে আমার টিউশনির অবস্থাও বেশি ভালোনা। মেডিসিন আর ডাক্তার দেখাতে অনেকগুলো টাকা দরকার।
দেখেছো তো আমি যে একটা পোস্ট দিয়েছি আমার বাবার অসুস্থতা নিয়ে।
আমিঃ জ্বী ভাইয়া, দেখেছি।
ভাইয়াঃ জানো, আমি পরিচিত অনেককেই নক দিয়েছি। কিন্তু কেউ আমাকে সাহায্য করলোনা। তুমি যদি কিছু মনে না করো তাহলে কি ভাইয়াকে কিছু টাকা দিতে পারবে? আমি কিছু দিন পরই আবার তোমায় দিয়ে দিবো।
কিন্তু, আমার এখনই টাকাগুলো দরকার। বাবার চিকিৎসার জন্য।
ভাইয়াটা বাবা মায়ের এক মাত্র ছেলেই। আর তার একটা ছোট বোন আছে।
মধ্যবিত্ত পরিবার তারা। আর কথায় আছে না, মধ্যবিত্তরাই দুনিয়ায় সব থেকে অসহায়। কারণ, না পারে তারা সব রকম কাজ করতে, না পারে তারা কারো কাছে হাত পাততে।
তো আমি ভাইয়াকে বললাম, ভাইয়া আমি আপনাকে পরে জানাচ্ছি।
ভাইয়া বল্লো আচ্ছা সমস্যা নেই। তুমি যদি আমাকে দিতে পারো দিও। আমি বিকাশ নাম্বার পাঠিয়ে দিবো। আর যদি না পারো তাহলেও কোন সমস্যা নেই। দোয়া করো আমার বাবার জন্য।
বিশ্বাসী স্বামী ও বন্ধু
এখন ভাবতেছি কি করবো আমি। আমার কাছে তো এখন টাকা নেই। কয়দিন আগেই কলেজের বেতন দিয়েছি আর ফ্রেন্ডদের সাথে টুকটাক শপিং করেছি।
তাছাড়া বুঝতে পারছিনা টাকাটা দেয়া তাকে ঠিক হবে কিনা, বা সে সত্যিই বলছে কিনা যে তার বাবা অসুস্থ।
কারণ, ফেসবুক মানেই তো আজকাল ছলচাতুরী। আর শুনেছি, অনেকেই এভাবে অনেকের কাছ থেকে টাকা চেয়ে নেয় মিথ্যা কথা বলে।
তাছাড়া তাকে চিনি না জানিনা। অন্য এক জেলার মানুষ।
আবার ভাবি, হোক না অন্য জেলার। কিন্তু আমার ফেসবুক ফ্রেন্ড তো। আর ইনবক্সে কখনো কথা না হলে কি হবে, কমেন্টে কমেন্টে তো কথা হয়েছে। আর তার ব্যবহারেই বোঝা যায় সে ওমন হবেনা।
তো ভাবতেছি কি করবো এখন?
আম্মুর কাছে চাইবো, যে আব্বু দুই মাস আগেই সংসার খরচ পাঠিয়ে দিয়েছেন। স্বর্ণ আর প্রয়োজনীয় জিনিস কিনবেন বলে।
এখন তো আম্মুর হাতেও টাকা নেই। আর আব্বুর কাছেই বা চাইবো কি বলে।
যদি জিজ্ঞেস করে তখন কি করবো?
নানান চিন্তা করছি। আর তখনই ইমন ফোন দেয় আমায়।
ইমনঃ হ্যাঁ বলো।
মাহিঃ কি করো? খেয়েছো?
ইমনঃ হুম। তুমি?
মাহিঃ হুম।
ইমনঃ কি হয়েছে? মন খারাপ নাকি?
মাহিঃ নাতো কেন?
ইমনঃ ভয়েজ শোনে যেন কেমন মনে হচ্ছে। কি হয়েছে বলো আমায়?
মাহিঃ আরে তেমন কিছুনা। চিন্তা করছি একটু তাই আরকি।
ইমনঃ কিসের চিন্তা বলো তো।
তারপর, ইমনকে আমি সব কিছু খুলে বলি। ভাইয়ার নক দেয়া থেকে শুরু করে।
ইমনঃ এই কথা? শোনো। এত চিন্তা করতে হবেনা। তুমি তার বিকাশ নং টা দাও। আমি তাকে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেই।
মাহিঃ তুমি দিবা?
ইমনঃ হুম আমি দিবো। তুমি দেয়া আর আমি দেয়া তো একই কথা তাইনা?
মাহিঃ কিন্তু শোনো, তুমি যখন দেশে আসবা তখন এই টাকাটা আমি তোমায় দিয়ে দিবো ওকে? ইমন রেগে যায়।
ইমনঃ আমি কি চাইছি তোমার কাছে?
মাহিঃ না মানে, যেহেতু আমার কাছে চেয়েছে তাই বলেছি আরকি।
ইমনঃ তুমি মানে আমি আর আমি মানে তুমি ওকে?
মাহিঃ হুম।
ইমনঃ আর কখনো যেন না শুনি এই টাকার কথা।
মাহিঃ আচ্ছা।
স্বামী স্ত্রীর সাহায্য
পরে আমি একটা মেসেঞ্জার গ্রুপ খুলে ভাইয়াটাকে আর ইমনকে এড করি।
তারপর ভাইয়াটা বিকাশ নং দেয় আর ইমন ভাইয়াকে কিছু টাকা পাঠিয়ে দেয়।
আমি ওকে বললাম, তুমি তাকে চেনোনা জানোনা, তবুও তাকে বিশ্বাস করে টাকাগুলো দিয়ে দিলে?
ও আমাকে উত্তর দিলো, কত টাকাই তো কতভাবে খরচ করি। কত দিক দিয়েই তো কত টাকা যায়। আর এই কয় টাকায় যদি কারো উপকার হয় তাহলে এর চেয়ে ভালো আর কি হতে পারে?
আমি সেদিন বুঝেছিলাম ইমন শুধু আমাকে মন দিয়ে ভালই বাসেনা।
ও একটা ভালো মানুষও বটে।
ও এই ভার্চুয়ালে কত মানুষকে যে এই ভাবে হেল্প করেছে হিসেব নেই।
তবে, আমাকে কিন্তু ও এক টাকাও দেয়নি বা কোন কিছুই দেয়নি। অনেকে আবার ভাবতে পারেন, অচেনা মানুষদের এত করেছে, না জানি ভালবাসার মানুষকে কত টাকা পয়সা আর এটা সেটা দিয়েছে।
ঈদের আগে আমাকে বলেছিলো,
ইমনঃ বিকাশ নং আছে তোমার? তোমার বিকাশ নং দাও, কেন?
ইমনঃ টাকা পাঠাবো, আর তুমি ঈদে ড্রেস কিনে নিবা। এখন তো আমি দেশে নেই যে আমি কিনে দিবো।
মাহিঃ প্লিজ কলিজা, কিছু মনে করোনা। আমি তোমার দেয়া টাকা এখন নিতে পারবোনা।
ইমনঃ কেন পারবেনা?
মাহিঃ প্লিজ রাগ করোনা, তুমি দেশে আসার পর আমাদের বিয়ে হলে তারপর আমাকে যা খুশি দিও আমি নিবো। কিন্তু এখন না। প্লিজ প্লিজ রাগ করোনা।
ইমনঃ আচ্ছা, দেশে এসেই আমি তোমায় কিনে দিবো। নীল শাড়ী, নীল চুড়ি, চলবে?
মাহিঃ চলবে না, দৌড়াবে।
ইমনঃ ভালবাসি।
মাহিঃ লাভ ইউ।
স্মৃতি গুলো মনে পড়ে গেলো।
সংসার জীবনে কালো মেঘ
তারপর রাতে ইমন অফিস থেকে বাসায় ফিরে আমাকে জিজ্ঞেস করে,
ইমনঃ নাম ঠিক করেছো?
ও হ্যাঁ, ইমন দেশে ফিরে আমাকে বিয়ে করার পর আর বিদেশের মাটিতে পা রাখেনি।
ও এখন দেশেই একটা জব করে।
মাহিঃ দুজন মিলে ঠিক করবো বলে করিনি।
ইমনঃ আচ্ছা ভাবো কি নাম রাখা যায়।
দুজন অনেকক্ষণ পর্যন্ত নাম ভাবতে ভাবতে অবশেষে আমিই নাম ঠিক করলাম।
ছেলে হোক আর মেয়ে হোক, নাম হবে মিষ্টি।
ইমনও নাম শুনে খুশি।
দেখতে দেখতে আমার এখন সাড়ে চার মাস। দু চোখ ভরা কত স্বপ্ন।
ইমনঃ জানো মাহি, আমি না আমার বাচ্চাটাকে আমার বুকে নিয়ে ঘুম আনাবো। ওর ছোট ছোট আঙুল ধরে ওকে হাঁটতে শিখাবো।
কখনো আমি ওকে আর তোমাকে ছেড়ে দূরে যাবোনা।
মাহিঃ পাগল ছেলে। এত ইমোশনাল হতে হবেনা। ভালবাসি।
খুব আনন্দেই কাটছিলো আমাদের দিন গুলো।
একদিন বাসায় কেউ ছিলোনা আমার শাশুড়ি মা ছাড়া।
আর চারিদিক অন্ধকার হয়ে যায়। যেকোন মুহূর্তে বৃষ্টি নেমে যেতে পারে তাই আমি ছাদ থেকে সবার কাপড় চোপড় গুলো আনতে যাই।
আর নিয়ে আসার সময় হঠাৎ কিভাবে যেন আমার পা স্লিপ করে আর আমি সিঁড়ি থেকে পড়ে যাই। চলবে….
পরের পর্ব- নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৪