নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ২: আমার রোমান্টিক বর একটু বেশি ঘুরঘুর করে আমার পিছে, অনেক কেয়ারিং একটা মানুষ। বিয়ের শুরুটা বেশ আনন্দের যাচ্ছে আমাদের। জানি না এই সুখ কতদিন সইবে আমার?
অভিমানী ভালোবাসা
ইমনঃ মাহিইইই, কলিজা আমার দরজাটা খোলো, প্লিজ। আজ না আমাদের ২য় বাসর?
মাহিঃ তুই বারান্দায় বসে বসে বাসর কর, বান্দর ছেলে। আমি ঘুমালাম।
ইমনঃ না প্লিজ, এমন করেনা সোনা। কি হয়েছে আমাকে বলবে তো? বউ আমার, এত ক্ষেপলো কেন আমার উপর?
আমি কোন কথা না বলে চুপচাপ শুয়ে আছি। হঠাৎ আমার চোখ লেগে গেলো। যখন ঘুমের মধ্যে আমার ইমনর কথা মনে হলো আমি তড়িঘড়ি করে যেন লাফিয়ে উঠে বসে পড়লাম। মোবাইলে টাইম দেখি রাত তিনটা।
ও আল্লাহ্। রাত তিনটা বাজে আর আমি ইমনকে এতক্ষণ পর্যন্ত বাইরে দাঁড় করিয়ে রেখেছি। কিন্তু ইমনর তো কোন সারা শব্দ নেই। ও কি আমাকে ডাকে নি আর। তাড়াতাড়ি করে দরজা খুললাম। খুলে দেখি ইমন গ্রিল ধরে দাঁড়িয়ে আছে। আমি কোন কথা বললাম না।
কি বলবো বুঝতেও পারছিলাম না!
ইমন প্রচন্ড রাগী একটা ছেলে। জেদ উঠলে খবর আছে। কিন্তু আজ এত চুপচাপ কেন। কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমি দরজা খুলে দিয়ে রুমে ঢুকে গেলাম। যাতে ও একাই রুমে আসে। কিন্তু ও তো আসছেনা। আমারো কেমন যেন নিজেকে অপরাধী মনে হচ্ছে!
আবার গেলাম বারান্দায়, গিয়ে হাত ধরে টেনে নিয়ে আসলাম রুমে। ও এলো ঠিকই, কিন্তু কোন কথা না বলেই একটা বালিশ নিয়ে ও পাশ ফিরে শুয়ে পড়লো।
কি ভাবলাম আর কি হলো আল্লাহ্। ভেবেছি আমি নিজেই দুই তিন দিন রাগ করে ফুলে থাকবো ইমনের সাথে আর ইমন আমাকে আদর করে রাগ ভাঙাবে। এক্সট্রা ভালবাসা পাওয়া যাবে। কিন্তু এ কি হয়ে গেলো। এখন তো দেখছি আমারই আমার বরের রাগ ভাঙাতে হবে।
আমিও পাশ ফিরে শুয়ে আছি। ভাবলাম, কিছুক্ষণ চুপ থাকি। দেখি, কি করে ও। মোবাইলে টাইম দেখি, বাজে রাত তিনটা ত্রিশ।
ও মারাত্মক রাগ করেছে, তা আমার বুঝা শেষ। আমি ওর অনেকটা কাছে গিয়ে বললাম,
মাহিঃ ও কলিজা! জান পাখি, ও আমার সোনা পাখি। সরি তো।
তার কোন সাড়াশব্দ নেই। চুল গুলায় হাত বুলিয়ে আদর করতে করতে বললাম,
মাহিঃ বাবুই, ও বাবুই, চুপ কেন তুমি? কথা বলো।
না মানে, আজ না আমাদের ২য় বাসর?
তবুও তার মুখে কোন কথা নেই। কি করবো যে এখন আমি। ওকে টান দিয়ে এ পাশে ঘুরালাম। কিন্তু সে আমার পাশে ঘুরলো না। ফ্যানের দিকে তাকিয়ে শুয়ে রইলো।
আর আমি সঙ্গে সঙ্গে ওর বুকের বাঁ পাশটায় মাথা রাখলাম।
শক্ত করে জড়িয়ে ধরলাম। তবুও তার কোন রিয়েকশন নেই। কি আর করার, কপালে চুমু দিয়ে বললাম, সরি সোনা।
এত্ত গুলো সরি তো। ভুল হয়ে গেছে বউটার। ক্ষমা করে দাওনা প্লিজ।
ইমন তবুও কথা বলছেনা আমার সাথে। শেষমেস এমন বদ রাগীই জুটলো আমার কপালে। যার সাথে কিনা প্রতিটা স্টেপ শান্ত ভাবে চলতে হবে। কোন ভাবেই রাগানো যাবেনা। রাগলেই খবর হয়ে যাবে। তবুও কথা বলছেনা দেখে ওর বুক থেকে সরে গিয়ে খাটে বসে পড়লাম। বসেই দিলাম কান্না শুরু করে।
স্বামীর ভালোবাসা
আর আমার ইমন লাফিয়ে বসে পড়েছে।
ইমনঃ কলিজা, কলিজারে কাঁদছিস কেন তুই? তুই জানিস না তুই কাঁদলে আমার বুকের ভেতর ব্যথা করে? কাঁদিস না, প্লিজ। এই যে আমি কানে ধরেছি। সরি, বউ রে কাঁদিস না প্লিজ। তোর কান্না আমার সহ্য হয়না।
আমি আরো জোরেশোরে কাঁদতে লাগলাম। ইমন আমাকে ওর বুকের সাথে লেপ্টে জড়িয়ে নিলো। আমার চোখের জলে ওর বুক ভিজে যাচ্ছে।
হঠাৎ ই ও আমাকে ছেড়ে দিলো।
মনে মনে ভাবলাম, আমার চোখের জলে ওর সমস্যা? টিশার্ট ভিজে যাচ্ছে বলে আমাকে সরিয়ে দিলো।
কান্না এদিকে আরো বেড়ে গেলো।
এখন দেখি ও খাট থেকে নেমে গেলো। নেমেই ড্রেসিংটেবিলের ড্রয়ার খুলে কি যেন করে আবার আমার কাছে চলে এলো।
ইমনঃ কান্না বন্ধ করে চোখ বন্ধ করো।
মাহিঃ না, করবোনা।
ইমনঃ করোনা, প্লিজ।
মাহিঃ উঁহু করবোনা।
ইমনঃ আচ্ছা, চোখ বন্ধ করতে হবেনা। এই নাও।
মাহিঃ কি এটা?
ইমনঃ খুলেই দেখো।
মাহিঃ না, খুলবোনা।
ইমনঃ আরে বাবা খুলে দেখোইনা।
মাহিঃ পারবোনা।
ইমনঃ আচ্ছা, আমিই খুলছি।
ইমন বক্স খুলেই আমার হাতটা ধরলো।
আর আমার আঙুলে একটা আংটি পরিয়ে দিলো।
ইমনঃ আসলে এটা তোমার বাসর রাতের গিফট। শুনেছি বাসর রাতে নাকি নতুন বউকে কিছু দেয়া লাগে। তাই আরকি।
দিতে চেয়েছিলাম কাল রাতেই কিন্তু তোমাকে পেয়ে আমি সব ভুলে গেছি। এত কষ্টে পাওয়া বউ আমার। বউটাকে পেয়ে আমি দুনিয়া সহ গিফটের কথাও ভুলে গেছি। সরি ফর লেইট কলিজা।
আমি ইমনকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলাম। আরো কাঁদতে লাগলাম।
মিষ্টি প্রেম
আহারে আমার বরটা আমাকে কত ভালবাসে। আর আমি কিনা ওকে কত ভুল বুঝেছিলাম। আসলে ভাবীদের কথা আর বান্ধবী গুলার কথা আমার শোনাই উচিৎ ছিলোনা। কতই না কষ্ট দিলাম আমি আমার ইমনকে।
ইমনঃ হয়েছে তো। আর কত কাঁদবে রে আমার বউ। থামনারে এখন কলিজা।
ইমন আমার কপালে গালে নাকে চুমু দিলো আর আমি চুপ হয়ে গেলাম। লজ্জাটা তো সারাদিন ছিলোনা। এখন কেন আবার লজ্জারা উঁকি দিচ্ছে। আমি লজ্জায় ইমনর বুকে মুখ লুকিয়ে নিলাম। আর ইমন জড়িয়ে নিলো আমায় ওর বাহু ডোরে।
এখন আমার সকাল শুরু হয় ওকে ভেজা চুলের ঝাপটায় ঘুম ভাঙিয়ে।
আর দিন শেষ হয় ও ঘুমিয়ে গেলে ওর কপালে একটা চুমু এঁকে দিয়ে নিজেও ঘুমিয়ে পড়ে।
এখন আমি টুকটাক রান্না শিখছি ভাবীদের কাছ থেকে মায়ের কাছ থেকে ইমনকে রান্না করে সারপ্রাইজ দিবো বলে।
কিন্তু রান্না পারে এমন বরের সাথে সংসার করা শুনেছি অনেক কষ্টকর।
কাইমন তারা নাকি বউদের রান্নায় অনেক ভুল ধরে। অথচ আমার ইমন খুব ভালো রান্না জানা সত্ত্বেও, কোন দিন আমার রান্নার ভুল ধরেনা।
ও এখন প্রায়ই অফিস থেকে ফেরার সময় আমার জন্য গোলাপ ফুল, চকোলেট, আইসক্রিম নিয়ে আসে।
আমি ওকে বলি,
মাহিঃ তুমি প্রায়ই কেন আমার জন্য এগুলো নিয়ে আসো, বলো তো?
উত্তরে ইমন বলল,
ইমনঃ আমার বউ এর মুখে এই অদ্ভুত রকমের সুন্দর মিষ্টি হাসিটা দেখার জন্য।
ইমন প্রায়ই সুযোগ পেলে যখন তখন আমাকে এসে জড়িয়ে ধরে।
মাহিঃ আচ্ছা, বউ তে যার এ্যালার্জি, সেই ছেলেটা এখন এত রোমান্টিক হলো কি করে শুনি? আর কিভাবে, এত সে তার বউকে ভালবাসে?
ইমনঃ এ আবার কঠিন কিছু নাকি, তোমার ভালবাসায় মাটি পানি হয়ে যাবে, আর আমি তো মানুষ।
মাহিঃ থাক থাক হয়েছে হয়েছে।
আমি আর ইমন মিলে সাজিয়ে নিয়েছি আমাদের ভালবাসার ঘর। গুছিয়ে নিয়েছি আমাদের সংসার।
প্রথম বিবাহ বার্ষিকী
দেখতে দেখতে আমাদের দুষ্টু মিষ্টি সংসারের এক বছর হয়ে যাচ্ছে আজ রাত ১২টা বাজতেই। তাই আমি অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছি রাত ১২ টার জন্য।
কিন্তু ইমন দেখি আজ তাড়াতাড়ি শুয়ে পড়ছে।
ইমনঃ ঘুম পাচ্ছে রে বউটা। ঘুমালাম আমি।
মাহিঃ এখনি?
ইমনঃ রাত ১১.৩০। সকালে অফিস আছে না? তুমিও ঘুমিয়ে পড়ো। উম্মাহ, ঘুমালাম আমি।
আমিও পাশ ফিরে শুয়ে পড়লাম। মনে মনে বলতে লাগলাম, ভালবেসেছো, আমাকে পেয়েছো। পাওয়া হয়ে গেছে। তাই এখন সব শেষ।
ম্যারেজ ডের কথাটাও মনে নাই।
অথচ বিয়ের আগে রোজ ডে থেকে শুরু করে আমার বার্থ ডে পর্যন্ত মনে থাকতো। উইশ করতো।
আর আজ, প্রথম বিবাহ বার্ষিকীটার কথা মনে নেই। কাঁদতে কাঁদতে চোখ বন্ধ করে ফেললাম।
আর একটু পরেই অনুভব করি,কপালে আমার বরের ঠোঁটের স্পর্শ।
ইমনঃ হ্যাপী ম্যারেজ এ্যানিভার্সারি, বউটা।
আমি ইমনকে জড়িয়ে ধরলাম। একটা চুমু দিয়ে জিজ্ঞেস করলাম,
মাহিঃ তোমার মনে ছিলো?
ইমনঃ এটা কি বললে তুমি? এত সাধনার পর,আজকের দিনটায় আমি আমার কলিজাটাকে পেয়েছি। আজকের দিনটাকে কি আমি কোন দিন ভুলতে পারি?
মাহিঃ আই লাভ ইউ ইমন।
ইমনঃ আই লাভ ইউ টু বউটা।
ইমন একটা প্যাকেট খুলে একটা নীল রঙের শাড়ী খুলে আমার মাথায় পরিয়ে দিয়ে বল্লো।
ইমনঃ নীল শাড়ীতে আমার বউকে দারুণ লাগছে। দিনে এটা পরে নিও।
মাহিঃ থ্যাংক ইউ সো মাচ ইমন।
ইমনঃ উম্মাহ, লাভ ইউ।
সন্ধ্যা বেলা ইমনর বাসায় আমাদের বিবাহ বার্ষিকী উপলক্ষে। ছোট একটা পারিবারিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। আমাদের বাসার লোকজনকেও আমন্ত্ইমন করা হয়।
আব্বু আম্মু আর বেলাও (ছোট বোন) এসেছে।
সবাই মিলে আমাকে আর ইমনকে কেক কাটতে বলছে। আমি ইমনর দেয়া নীল শাড়ীটা পরেছি আজ।
ইমনকে পাঞ্জাবিতে দারুণ লাগছে। নজর না লাগে কারো আমার বরটার উপর।
ইমন আর আমি কেক কাটার জন্য সামনে গেলাম। আর সবাই চারিদিক থেকে আমাদের ঘিরে দাঁড়িয়েছে।
ইমন আর আমি ছুড়ি ধরেছি,
মাত্রই কেক কাটবো। আর সেই মুহূর্তে আমার মাথাটা একটা চক্কর দিয়ে উঠে আর আমার চোখ মুখ ঝাপসা হয়ে যায় আর আমি ইমনর উপর ঢলে পড়ি। চলবে….
পরের পর্ব- নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ৩