নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ১: ভালোবাসা, বিয়ে আর সংসার নিয়ে মানুষের বেঁচে থাকার সময়টাকে পূর্ণতা দেয়। আমার জীবনেও প্রেম হয়েছে আবার সেই পছন্দের মানুষটির সাথে বিয়েও হয়েছে। নানা চড়াই উতরাই হাসি কান্না পেরিয়ে সংসার জীবন চলছে আমার। আজ আমাদের স্বামী স্ত্রীর কষ্ট মিষ্টির ভালোবাসার গল্প আপনাদের শোনাব। চলুন তবে শুরু করা যাক বিয়ে থেকেই।
ভালোবাসার বাসর রাত
আজ আমার বাসর রাত। অনেক ঝড় তুফানের পর ইমন আর আমি এক হলাম। পৃথিবীর সব সুখ যেন আমার আঁচলে। বউ সেজে বসে আছি আমি। বাসর ঘরটা ঠিক আমার মন মত সাজানো হয়েছে।
রজনীগন্ধা গাঁদা গোলাপ কোন কিছুরই কমতি নেই।
ইমন, ধীর পায়ে রুমে প্রবেশ করতেই আমার সারা গায়ে যেন কাঁটা দিয়ে উঠলো।
অবশেষে ভালবাসার মানুষটাকে স্বামী রুপে পাওয়ার কি যে আনন্দ তা ভাষায় প্রকাশ করার মত ক্ষমতা আমার নেই। বিছানায় আমি চুপ করে বসে আছি মাথা নিচু করে।
ইমনঃ উহুম উহুম। আমার কলিজাটা চুপ কেন? হাসি কই আমার বউটার মুখে? নাকি আমাকে পেয়ে সে খুশি না?
আমিঃ কি যে বলোনা! পৃথিবীর সব থেকে সুখী ব্যক্তিটি আজ আমি। ভালবাসি, এত্ত গুলা ভালবাসি।
ইমন আমার কপালে ওর ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে আমাকে শক্ত করে ওর বুকে জড়িয়ে নেয়। পূর্ণতা পায় দুটো আত্মা।
সকাল হতেই আমি গোসল করে এসে ইমনর মাথার কাছে বসে আছি। ইমন ঘুমাচ্ছে। কি মাসুম আমার ইমন। ওর মুখটা আমি ছুঁয়ে দিচ্ছি , আর এক হাতে চুলে হাত বুলিয়ে দিচ্ছি। কপালে চুমু আঁকার সাথে সাথেই ইমন চোখ খুলে ফেলে।
লজ্জায় আমি চলে যেতে থাকি, আর তখনই ওর কলিজা জুড়ানো হাসিটা দিয়ে ও আমার হাতটা টান দিয়ে ওর বুকে টেনে নেয়।
ইমনঃ কি হলো? আমার বউটা চলে যাচ্ছে যে? লজ্জা পাচ্ছে নাকি আমার বউটা?
আমিঃ ছাড়োনা, যাই দেখি মা কি করছেন।
ইমনঃ মাকে হেল্প ভাবীরা করবেনে, তুমি আমার সেবা করো।
আমিঃ কি সেবা করবো?
ইমনঃ এইতো যেমন কপালে, গালে, নাকে আদর।
আমিঃ যাও তো, লজ্জা লাগেনা বুঝি?
ইমনঃ ওই মাইয়া, আমি তোমার স্বামী, পরপুরুষ নাকি যে লজ্জা লাগবে?
আমিঃ আচ্ছা হাতটা ছাড়ো, আর চোখ বন্ধ করো, দিচ্ছি।
ইমন হাতটা ছেড়ে চোখ বন্ধ করার সাথে সাথে আমি ওকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে শাশুড়ি মায়ের কাছে রান্নাঘরে চলে যাই। মা নাস্তা বানাচ্ছেন।
আমিঃ মা আমি হেল্প করি?
শাশুড়িঃ না মা, তুমি ইমনর কাছে যাও, এখনি রান্না ঘরে আসতে হবেনা। সবে মাত্র বিয়ে হলো, ঘুরোফেরো। তারপর রান্না বান্না আরো কত কি সব করা যাবে।
স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক মিলনের গল্প
মা আমাকে ইমনর কাছে পাঠাচ্ছেন। আমি তো লজ্জায় ইমনর সামনে যাবার কথাই ভাবতে পারছিনা। আর সামনে যাবো কি করে। এমনিতেই আমি লাজুক। কিন্তু ইমনকে যে এতটা লজ্জা পাবো কোন দিন তা আমি। কখনো ভাবিই নি। আমি দাঁড়িয়ে আছি মায়ের সামনে।
শাশুড়িঃ কি হলো? যাও ইমনর কাছে।
আর দেখি ইমন এসে হাজির। আমি ইমনকে দেখা মাত্রই দৌড়।
ইমনর মাঃ কিরে কিছু লাগবে তোর? কিছু বলবি?
ইমনঃ না মা কিছু না।
এদিকে ইমনও আমার পিছু পিছু চলে আসে।
ইমনঃ ওই ছেমড়ি, আমার কাছ থেকে দূরে পালাচ্ছো কেন বার বার?
আমিঃ যাও তো, আমার সামনে এসোনা এত।
ইমনঃ কি? আমার বউ এর সামনে আমি আসবোনা?
আমিঃ না, আসবেনা।
ইমনঃ কেন আসবোনা?
আমিঃ লজ্জা পাই আমি।
এ কথা বলেই আমি দু হাত দিয়ে আমার মুখ আটকে ফেললাম।
ইমনঃ ওরে আমার লাজুকলতারে। তাকাও এদিকে, আমার চোখের দিকে তাকাও, হাত সরাও।
আমিঃ না, আমি পারবোনা। আমার লজ্জা লাগে সত্যি।
ইমনঃ বিয়ের আগে এই লজ্জা কই ছিলো শুনি?
আমিঃ জানিনা।
ইমনকে রেখেই আমি আবারো চলে এলাম রুম থেকে বাইরে। ইমন আর আমি সবার সাথে নাস্তা করে নিলাম।
দুষ্টু মিষ্টি কথা
হঠাৎ করে তাকিয়ে দেখি ইমন আমার দিকে চেয়ে আছে। আর আমি মাথাটা নিচু করে ফেলি। বুঝিনা কেন এত লজ্জা পাচ্ছি আমি আজ ওকে দেখে। নাস্তা করে ও বাসার বাইরে চলে যায়। আর এদিকে ভাবীরা আমাকে জিজ্ঞেস করেন, বাসর রাত কেমন কাটলো শুনি?
আমিঃ ধুর, জানিনা ভাবী।
আরেক ভাবী বললেন, দেখোনা ভাবী লজ্জায় লাল হয়ে গেছে আমাদের নতুন বউ।
আমি চুপ করে আছি, কোন কথা বলছিনা।
ভাবিঃ মাহি।
মাহিঃ হুম ভাবী?
ভাবিঃ ইমন তোমাকে বাসর ঘরে কি গিফট দিয়েছে দেখি।
মাহিঃ গিফট?
ভাবিঃ হুম গিফট?
মাহিঃ কিছুই দেয়নি।
ভাবিঃ ওমা, সে কি। কিছুই দেয়নি?
মাহিঃ নাতো।
ভাবিঃ বাসর ঘরে সব বর রাই তো তার বউকে কিছু না কিছু গিফট দেয়। সেটা যাই হোক। মাকেও তো বাবা দিয়েছেন। তোমার দুই ভাইয়াও আমাদের দুজনকে দিয়েছেন। আর ইমন তোমাকে কিছুই দেয়নি?
মাহিঃ না, ভাবী।
ভাবিঃ এ কেমন প্রেম তোমাদের?
আমার মুখটা চুপসে গেলো। সত্যিই তো, ইমন আমাকে কেমন ভালবাসে, যে একটা গিফট ও দিলোনা বাসর রাতে। আর এটা নাকি সব বর রাই দিয়ে থাকেন। কিছুক্ষণ পর বান্ধবীরা ফোন দিলো।
বান্ধবীঃ কিরে, কেমন কাটলো বাসর? হুম হুম? বিড়ালটা কে মেরেছিলো? জিজু নাকি তুই?
মাহিঃ যাহ! মুখে কিছু আটকায় না তাইনা?
বান্ধবীঃ আচ্ছা, এত লজ্জা পেতে হবেনা। এবার বল, ইমন জিজু বাসর ঘরে কি দিলো তোকে?
মাহিঃ কিছু না।
বান্ধবীঃ কিইইই? কিচ্ছু না? এ কি করে সম্ভব? জানিস, তপন আমাকে কত কিছু দিয়েছিলো? এই দিয়েছিলো সেই দিয়েছিলো। আর তমার বরও তো দিয়েছে, রিয়ার বর দিয়েছে। আর ইমন তোকে কিচ্ছু দিলোনা। ভাবা যায় এগুলা?
মাহিঃ আচ্ছা আমি এখন রাখছি।
নতুন বিয়ের গল্প কথা
কিছুক্ষণ পর ইমন আসে বাসায়। আমি ইমনকে এড়িয়ে চলি। বাসায় মেহমান এসেছে তাই আর ইমনও আমার কাছে আসার সুযোগ পায়নি।
রাতে যখন খাওয়া দাওয়া শেষে দুজনই ফ্রি। আমি ফ্রি হয়ে রুমে আসি শুতে। বিছানা ঠিক করে আমি খাটে বসে আছি।
ইমনঃ কি করে আমার বউটা? আমার ভালবাসাটা।
মাহিঃ ওই একদম বউ বলবিনা আমায়, কিসের ভালবাসা আমি তোর? এহ আসছে আমার বউ। আসছে আমার ভালবাসা। তুমি আমায় ভালই বাসোনা। বাসলে কি আর..
ইমনঃ বাসলে কি আর কি?
মাহিঃ কিচ্ছুনা, যাও এখান থেকে। যাও বলছি।
ইমনঃ উঁহু! কি হয়েছে না শুনে আমি যাবোনা।
মাহিঃ বলছি ওয়েট। আসো আমার সাথে।
আমি ইমনকে হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বারান্দায় দাঁড় করালাম। আর আমি রুমে এসে দিলাম দরজা বন্ধ করে। থাক এবার সারা রাত বারান্দায়। এটা তোর শাস্তি। আর আমি শান্তিতে ঘুমাই।
ইমনঃ মাহিউউউ, কলিজা আমার দরজাটা খোলো প্লিজ। আজ না আমাদের ২য় বাসর?
মাহিঃ তুই বারান্দায় বসে বসে বাসর কর বান্দর ছেলে। আমি ঘুমালাম। চলবে….
পরের পর্ব – নতুন বিয়ের গল্প – স্বামী স্ত্রীর রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – পর্ব ২