তুমি হলেই চলবে (শেষ খণ্ড) – ভালোবাসার কথা sms

তুমি হলেই চলবে – ভালোবাসার কথা sms: মালিহার গলায় কেন ঝুলতে যাবো। আর আমার কি হাতপা নেই নাকি যে ওর গলায় ঝুলতে হবে আর আল্লাহ না করুক এমন কিছু হলে আমি নিজেই তোমার গলায় ঝুলে পরবো। তোমাকে এত ভাবতে হবে না।


পর্ব ১৩

আমি এখনো হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। উনাকে এখনো হাত দিয়ে জড়িয়ে ধরি নি। কিছু সময় নিরবতা ছেয়ে গেছে। উনি এবার আমাকে ছেড়ে হাত গুলো ধরে বলে উঠে,

আমি কি দেড়িতে এসেছি তুমি কি বিয়েটা করে নিয়েছ? করলেও তা হবে না যানো ত প্রথম বিয়ে থাকা অবস্থায় দ্বিতীয় বিয়ে জায়েজ না। তাই আমিও অত সত মানি না। তোমরা এভাবে ধোঁকা দিতে পারো না। আর তুমি কিভাবে পারলে ওই ছেলের সাথে বসে থাকতে ওকে তো আমি।

আমি এখনো হতভম্ব। কার বিয়ের কথা বলছে। উনি এবার কপাট রাগ নিয়ে মৌ মানে নতুন ভাবির ভাইয়ের কলার ধরে চিৎকার করে বলতে শুরু করে,

তোর সাহস ত কম না তুই আমার কলিজায় হাত দেস। তোকে খুন করে দিব। কিভাবে সাহস হল ওর পাশে বসার? আবার বিয়েও করবি? করাচ্ছি তোকে বিয়ে?

হায় আল্লাহ কি হচ্ছে। উনাকে কেউই প্রায় থামতে পারছেনা। দুই তিনটা ঘুষিও উনি দিয়ে দিয়েছে। আমি এবার একটু রুডলি তার হাত টেনে ধরাতে উনি চকিতে আমার দিকে তাকয়া। তার তাকানো দেখে মনে হয় আমি বলছি আমার জামাই ও ওকে ছেড়ে দেন প্লিজজআমি এবার একপ্রকার চেঁচিয়ে বলে উঠি

কিসের বিয়ে আর ওনাকে কেন মারছেন? আমি তো বুঝতেই পারছিনা আপনি কার বিয়ের কথা বলছেন?

কেন তোমার? (অবাক হয়ে তাকিয়ে)

এই পাগল হলেন নাকি কিসের বিয়ে উনি রেদোয়ান ভাইয়ার হবু শালা।

কিন্তু সারফারাজ যে বললো আর ছবিও দিল।

উনি এবার সারফারাজ ভাইয়ার দিকে তাকাতে সে কাচুমাচু করে বলে উঠে,

ভাই তুই আমার বোনের জন্যে পাগল জানতাম কিন্তু পাগলা সিংহ হবি আমি কেমনে যানবো। তোকে চেতাচে একটু মজা করে এসব বলেছিলাম। আর তুই বেচারা সব্বির ভাইয়ার কি অবস্থা করলিউনি এমনেই ওর পাশে বসে ছিল। তুইও কল করে ছিলি তাই মজা করে তোকে একটু বাজিয়ে দেখতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই যে শুধু নিজে বাজবি না সাথে আমাদেরও বারোটা বাজাবি কিভাবে জানবো বল?

শালা তুই মজা করে এসব বললি আর দেখ আমার কি অবস্থা। আর সরি মিসব্বির আমি বুঝতে পারিনিপুরাই মিস আন্ডারস্ট্যান্ডিং সরি এগ্যানআর তুই তোকে পরে দেখছি। সবাইকে সরি। আসলে ওর ব্যাপারে আমি একটু সিরিয়াস তাই এমনটা করে ফেলেছি।

উনার মাথা চুলকিয়ে সরি বলা দেখে আমি প্রচণ্ড বিরক্ত। কিভাবে এত পাগলের মত বিহেব করতে পারে? আর এখন ভাব খানা এমন যে কিছুই হয় নাই। সবাই তাকে নিয়ে একবেলা হাসলকিন্তু ওই পোলার মুখ ফেকাশে হয়ে আছে। বোদ হয় মাইরটা জড়েই পড়েছে। আমি আযমান ভাইয়ার কাছ ঘেঁষে বলে উঠি।

এসব পাগলামি তো বুঝলাম কিন্তু আপনার এমন ছিঁড়াবিড়া অবস্থা কেন? কিভাবে এত রক্ত ঝাড়ালেন?

উনি মাথায় হাত দিয়ে বলে উঠে, আর বল না আয়ুজান কি যে ব্যাথা হচ্ছে আহ্দেখ দেখ হাত ছিঁড়েছে পা টাও ছিঁড়েছে আর কপালও ফেটেছেতোমার কি একটু মায়া লাগছে না তোমার হ্যাজবেন্ড এভাবে ব্যথা পেল?

তাইত আপনার ব্যথার হিস্ট্রিইত জানতে চাই বলেন কিভাবে ব্যথা পেলেন?

সে এক ভয়ঙ্কর ঘটনা।

আবার কিং কিং মানে কেউ কলিং বেল চাপছে। কাজের মেয়েটা দরজা খুলে দিলএবার সবার চোখই দরজার দিকে সবার মনে হচ্ছে একটা ঘূর্ণিঝড় এসেছে যেহেতু আবার আসবে সত্যিই এবার ভূমিকম্প এসে হাজির সবাইকে একবেলা ফের অবাক করে একছেলে পুলিশকে নিয়ে হাজির সে আযমান ভাইয়াকে দেখিয়ে চেঁচিয়ে বলে উঠে,

এই সে চোর। যে আমার বাইক চুরি করে রাস্তা থেকে নিয়ে এসেছে।

এই ছেলের কথা শুনে বসা থেকে আবার সবাই দাঁড়িয়ে পড়ল। সাথে আমিও। আজকে মনে হয় রেদোয়ান ভাইয়ার বিয়ে ভেঙেই পরিবেশ ঠাণ্ডা হবে। তা না হলে এমন ঘূর্ণিঝড় ভূমিকম্প, সুনামি আসতেই থাকবে। উনি আরাম করে সোফার গায়ে শরীর এলিয়ে দিলেন। সবার চোখ তার দিকে।

তার ভাবলেশহীন কাজকারবার আমার শরীরে জ্বালা ধরাচ্ছে। এসিপির চোখ আকাশে প্রায়। সে ভয়ঙ্কর ভাবে একবার আযমান ভাইয়ার দিকে তো একবার তার সাথের ছেলেটার দিকে তাকাচ্ছে। ছেলেটা বলে উঠে,

আরে স্যার এভাবে তাকিয়ে না থেকে চোরকে ধরেন।

চুপ ফাইজলামি পাইছউনি আযমান শেখখুব ভালো ইঞ্জিনিয়ার। আমাদের নতুন থানার মেপ উনিই ডিজাইন করেছে আর ফ্রীতে আমাদের মসজিদের ডিজাইনও করেছে। আরে ওনার নিজেরই টাকার অভাব নেই আর তুমি বলছ তোমার বাইক উনি চুরি করেছে। পাগল নাকি?

ও ঠিকই বলছে আমি আসলেই ওর বাইক নিয়ে এসেছি কিন্তু চুরি করিনি। ব্যাপারটা হল কি সারফারাজ বলেছে আয়ুর নাকি বিয়ে প্রথমে বিশ্বাস করিনি কিন্তু ও ছবিও দিল। আর আমি তখন রাস্তায় হাটঁছিলাম তাই গাড়ি নিয়ে বের হই নি।

শুনেই মাথা পাগলের মত হয়েগেছে তাই সামনে এর বাইক পড়ায় আমি নিয়ে চলে এসেছিমাঝ পথে এক্সিডেন্ট ও হয়েছে তাই এই এমন অবস্থা আমার যাই হোকফিরিয়ে দিব যাওয়ার সময় কিন্তু আগেই এসে হাজির হল তাই নিয়ে যাও তোমার চাবি। (চাবি এগিয়ে দিতে দিতে বলে উঠল)

সবাই হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি মাথায় চাপড় দিয়ে বসে পরলাম তার পাশে। শেষে কিনা চোরও হল উনিএই ছেলে যে পাগল তা তো আগেই জানতাম কিন্তু এ যে এত এত পাগলামি করবে এটা কেউই বুঝতে পাড়েনি সাথে আমিও না। আমি এবার তার দিকে আহত চোখে তাকাতেই উনি দাতঁ কেলিয়ে হেসেঁ উঠেরাগে আমার শরীর জ্বলে যাচ্ছে

রাত এগারোটা বাজে মাএ রুমে এসেছি ঘুমাবো বলে। ঠিক তখনই ফোনটা কিরিং কিরিং করে উঠেফোন হাতে নিতেই ফোনের স্কিনে আযমান ভাইয়ার নাম আর সাদা কালো ভ্রু কুঁচকানো ছবি ফুটে উঠেছে। ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই উনি বলে উঠে,

ছাদে আসো

তারপর ফোন কাটাএই লোক নিজের সাথে সাথে আমাকেও পাগল বানাবে বলে মনে হয়। জামাই পাগল বউ না হলে কি হয়?

দোলনার উপড়ে আযমান ভাইয়া পা ঝুলিয়ে বসে আছে। আর আমি যত্নের সাথে তার মাথায় স্যাভলন লাগাচ্ছি। উনি মাঝে মাঝেই চোখমুখ কুঁচকে উঠছেন আর আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। চোখের পাতাও নড়ছেনা। আমার ভয় হচ্ছে যদি উনি ব্যথা পায় তাই ফু দিয়ে দিচ্ছি।

উনি প্রতিটি ফু তে হালকা নড়ে উঠে চোখ বুজছেন। আবার তাকিয়ে থাকে উনি এত রাতে এখানে এসেছে মাথা ব্যান্ডেজ করতে অবাক করা ব্যাপারসাথে কষ্ট ও লাগছে। উনার ব্যথায় স্যাভলন লাগাতে গিয়ে মনে হচ্ছে আমার নিজেরই ব্যথা লাগছে। ভালোবাসলে বুঝি এমনই হয়? তার ব্যথাকে নিজের মনে হয়? তার কষ্টে নিজেরও কষ্ট হয়? হয় তউনি গভীর গলায় বলে উঠে,

তুমি কি রাগ করেছ? আমার উপড়? আমি কিন্তু ইচ্ছে করে এমন করিনি সব সারফারাজের দোষ আর তুমি তো জানো আমি তোমার ব্যাপারে প্রচণ্ড ভিরু তোমাকে হারানোর ভয় আমাকে ক্রমশ তারা করে বেড়ায়। আমি নিজেও জানি না কেন এমন মনে হয়।

সব সময় ভয়ে থাকি এই বুঝি তুমি হারিয়ে যাবে। তোমাকে ভালোবাসি এটা বলার আগে থেকেই এই ভয়। তখন মনে হত তোমাকে বলে দিলে বা তুমি ভালেবাসলে এই ভয় কেটেঁ যাবে কিন্তু এখন মনে হয় ভয়টা আরো বেড়ে গেছে। তোমাকে ছাড়া আমি নিঃশ্বনিশ্বাস নিতে কষ্ট হয়। দম আটকে আসে। তোমাকে হারানোর কথা ভাবতেই আমার নিজেকে বড্ড পাগল পাগল লাগে।

এত ভয় কেন পান। আমি তো আপনারই আছিআপনার বউ তোয়ালে বউ। (বলেই হেসেঁ দিলাম)

তোমার খিলখিল হাসিতে আমি পাগলে হয়ে যাইদেখো চাঁদও তোমাকে দেখে হাসছে। তবে তার চাইতে তোমার হাসিই বেশি সুন্দর।

উনি হুট করেই আমাকে টেনে তার কোলে বসিয়ে ঘাড়ে মুখগোঁজে বলে উঠে,

তোমার চুলে মাতাল করা ঘ্রাণ আছে যানো কি? যা ক্রমশ ঘায়েল করে আমাকে।

কাল আমরা চাঁদপুর যাবো। যানেন আপনি?

উনি আগের মতই মুখগোঁজ অবস্থায় বলে উঠে, হুম।

আপনার সাথে অনেক দিন দেখা হবে না।

মন খারাপ করে বলে ছিলাম। জবাবে উনি মুখ তুলে হাসতে শুরু করে। চাঁদের আলো তার মুখে এক মায়াবী নেশার সৃষ্টি করছে। উনি হাসি মুখে বলে উঠে,

আমার প্রেমে তুমি ঘায়েল হয়েছ আয়ুজান গভীর ভাবে।


পর্ব ১৪

লঞ্চ স্টেশনে দাড়িয়ে আছি। সাথে আমার পুরো পরিবার। সবাই মিলে এই প্রথম গ্রামে যাচ্ছি। ব্যাপারটা ভাবতেই মনে মাঝে খুশির ঘন্টি বাজছে। এত খুশির মাঝেও বিষন্নতা ঘিড়ে রেখেছে মনকে উনাকে খুব মিস করছি। আচ্ছা উনি কি আমাকে মিস করবে? নতুন ভাবিও আমাদের সাথে যাচ্ছে। নানু তাকে দেখতে চায়। আজ সকালেই তাদের মোটামুটি কোর্ট ম্যারেজ হয়েগেছে। তার কারন তা না হলে তাকে আমাদের সাথে নিয়ে যাওয়া উচিত হবে না। নতুন ভাবি ভালো হলেও তার বাবা মা প্রচণ্ড ভেজাইলা টাইপের ব্যক্তিবর্গ।

বিকাল ৪টার লঞ্চ এখনো আসে নি তাই অপেক্ষা করছিহঠাৎ আযমান ভাইয়াকে দেখে আমি চকিতেই তাকালাম। ভাবলাম হয়ত আমাকে বিদায় দিতে এসেছে কিন্তু আমার ভাবনায় পানি ডেলে দিয়ে উনার সাথে সাথে বাবা মা আর মালিহা আপুকে দেখে মাথা প্রায় ঘুড়তে শুরু করেছে। উনি হাসিহাসি মুখে তাদের ড্রাইভারকে গাড়ি নিয়ে ফেড়িতে উঠতে বলে নিজের গিটার কাধে নিতে নিতে আমার সামনে দাড়িয়ে অবাক হওয়ার ভান করে বলে উঠে,

তোমরা এখনে? মানে এখনো যাওনি? লঞ্চ কয়টায়?

কেন আপনি যানেন না? আমি তো আপনাকে বলে ছিলাম ৪টা বাজে লঞ্চ। কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন? তাও পুরো পরিবার সহ?

কেন আমরা কি লঞ্চে করে যেতে পাড়িনা?

তা কেন হবে। কিন্তু যাবেন কোথায়?

ভুলেগেলে নাকি আমাদের গ্রাম একি জায়গায়। আমরাও গ্রামে যাবো। বুঝলে

আমি হা করে তাকিয়ে আছি। তবে উনার দিকে না আমার পরিবারের দিকে তাদের ভাব দেখেই বুঝা যায় তারা সবাই জানতো। আযমান ভাইয়ার পরিবারও যাবে। সব বুঝলাম কিন্তু এই মালিহা আপুকে না নিয়ে এলে হত না। নিশ্চিত আমাকে কথা শুনাতে শুনাতেই মাথা খাবে। দুর ভালোলাগেনা

আমি আশাতে খুশি হওনি আয়ুজান

উনার এমন কথায় আমি তার দিকে তাকাই সে এক করুন হাসি দিচ্ছে। আশ্চর্য এমন করুনতার কারন কি? আমি তার দিক থেকে মাথা ঘুড়িয়ে বলে উঠি

হয়েছি। কিন্তু আপনি বলেননিত আসবেন?

এটাইত সারপ্রাইজ আর তোমাকে না দেখে একদিন কাটাঁনো আমার জন্যে ভয়ঙ্কর ব্যাপার তাই আমিও চলে আসলাম তুমি যেখানে আমি সেখানে

লঞ্চ নিজ গতিতে চলছে। সবাই যে যার কেবিনে কিন্তু আমি প্রকৃতি আর লঞ্চের নিচে পানির ঝুম পাকানো শব্দ শুনছি। গোধূলিবেলার রেশ এখনো কাটেনি। তবে শো শো বাতাস বইছে। আমি লঞ্চের রেলিং ধরে একবার নিচের শীতল পানির ঝুমঝুম আওয়াজ শুনছি তো একবার চারপাশের সবুজ কচুরিপানা ভাসমান অবস্থা দেখছি কি সুন্দর সব।

ঠান্ডা ঠান্ডা বাতাস সাথে রোদের মিষ্টি কিরন এ যেন এক অপূর্ব দৃশ্য। এত সুন্দর দৃশ্য দেখে মনটা ভালো হয়ে গেলেও প্রচণ্ড বিরক্তিকতায় ভুগছি আর এই সব কিছুর জন্য ওতপ্রোত ভাবে উনি দায়িআমি যে দিকে যাচ্ছি আমার পিছনে পিছনে হাটছে আর মোবাইল গুতাচ্ছে। আমি তাকতাই ভাবখানা এমন যে সে আমাকে চিনেই না। আমি এবার বিরক্তি নিয়ে পিছনে তাকাতেই দেখি ওনি লঞ্চের কেবিনের দেয়াল ঘেঁষে দাড়িয়ে আছে। চোখ তার মোবাইলের স্কিনের দিকে। রাগে আমার মাথা ধপধপ করছে। বিকট রাগ নিয়ে চোখ রাগিয়ে বলে উঠি

এই আপনার সমস্যাটা কি এভাবে পিছনে পড়ে আছেন কেন? যান তো নিজের কাজ করেন। আমার পিছনে পিছনে ঘুড়বেন না

আমি তোমার পিছনে কই আমি তো তোমার সামনে।। (আমার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে বলে উঠে)

রাগাছেন কেন? যাননা। দরকার হলে আপনার ফুফির মেয়ে মালিহার গলায় ঝুলেন। তবুও সামনে থেকে যান।

মালিহার গলায় কেন ঝুলতে যাবো। আর আমার কি হাতপা নেই নাকি যে ওর গলায় ঝুলতে হবে আর আল্লাহ না করুক এমন কিছু হলে আমি নিজেই তোমার গলায় ঝুলে পরবো। তোমাকে এত ভাবতে হবে না। তা কি করছ তুমি একা একা?

একা কোথায় থাকতে দিলেন আপনি নিজেইত সাথে সাথে ঘুড়ে দোকা হয়ে আছেন। একা থাকতে দিবেন প্লিজজ

না তা সম্ভব না। তুমি সাঁতার পাড়?

মানে?

সুইমিং পাড় কিনা জিগ্যেস করছি?

না তপারি না। কিন্তু কেন বলেন তো?

সুইমিং পাড় না। আর এভাবে বেশামাল ভাবে ঘুড়ে বেড়াচ্ছ। যদি একবার পড়ে যাও কি হবে যানো? ডুবে হওয়া হয়ে যাবে। আর আমি এত অল্প বয়সে সংসার না করে বাচ্চাদের বাবা না হয়ে বিধবা হতে পারবো না। আন্ডারস্ট্যান্ডবাচ্চা বউএবার তোমার যত খুশি ঘুড়ঘুড় করো সাথে আমাকে নিয়ে। ইফতারে চা খাবে?

না খাবো না। আমি চা খাইনা।

রেগে যাচ্ছ কেন? চল এক সাথে ঘুড়ে দেখি সব। তোমার সাথে সূর্য ডুবা দেখ হল না এখন পর্যন্ত চল আজ দেখবো।

বলেই সামনে ঘুড়িয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে বলে উঠে,

দেখ কত সুন্দর পরিবেশ। সূর্য ডুবছে তার লাল রশ্মিতে পানির রংই পরিবর্ত হয়ে গেছে। আর বাতাসটা কত সুন্দর। এমন একটা পরিবেশে তোমাকে জড়িয়ে দাড়াঁতে পেরে তো আমার সত্যেই সব অসাধারণ লাগছে। তুমি সারাটা জীবন আমার সাথে এভাবেই থাকবে প্লিজজ।

সত্যেই পরিবেশটা এখন আগের চাইতেও সুন্দর লাগছে।

তা আর কতক্ষণ রোম্যান্স করবি ভাই এবার ছাড় আমার বোনরে আর চল ইফতার করতে।

সারফারাজ ভাইয়ার কথায় উনি আমাকে ছেড়ে হাত ধরে হাটা দিলেন। সবার সাথে টুকটাক ইফতার করে আবার লঞ্চ ঘুড়ে দেখছি। দিলও যাচ্ছে আমাদের সাথে। তারও গ্রাম দেখার সখ। লঞ্চে উঠেই সে এক ঘুম দিয়েছে।

বেচাড়ি রোজা রেখে কাহিলরোজা রাখলেই তার এমন হয়। কিন্তু আল্লাহর অশেষ রহমতে সে সব রোজাই রাখে। আমি আর দিল রেলিং ঘেঁষে গল্পে মেতেছি। কিছুক্ষণের মধ্যেই আমাদের মাঝে ঝুলন্ত ডোঙ্গি এসে হাজির মানে মালিহা আপু এসেই কড়লার মত মুখদিয়ে তিতা কথা শুরু

তো তোমরা এখানে? তোমাদের খুঁজতে খুঁজতে আমি প্রায় টায়ার্ড

ওও তাই নাকি তো এত যখন টায়ার্ড যান ঘুমাম। আমাদের সাথে থেকে আপনার কোন লাভ হবে না মিসসঝুলন্ত ডোঙ্গি

কি?

শেষ এই দিলেরও মুখদিয়ে কথা এভাবে পুস করে বেরিয়ে যাচ্ছে কেন এখনতো এই চিৎকারে লঞ্চ কাঁপাকাঁপা করবে। ওওপসসসস। আমি দিলের হাত ধরে কেটেঁ পরার আগেই আযমান ভাইয়া আর সারফারাজ ভাইয়া হাজির মালিহা আপু তো এবার নেকা নেকা করে বলে উঠে,

দেখ আযমান এরা আমাকে ঝুলন্ত ডোঙ্গি বলে ডাকছে। কিছু বল এদের তা না হলে মাকে বলে দিব তুমি আমার একদম দেখা শুনা করনিহুম

আল্লাহ এই মেয়ের ডং দেখে আমার তো মরে যাই মরে যাই টাইপের অবস্থা। আযমান ভাইয়া বিড়বিড় করে বলে উঠে,

তুই ত আসলেই ঝুলন্ত ডোঙ্গি।

তার এমন কথা শুনে আমি নিজের হাসি কন্ট্রোল করতে পাড়লাম না হু হা করে হেসেঁ উঠলাম। উনি চোখ বাঁকিয়ে চুপ করতে বললেন। যেহেতু বিড়বিড় করে বলেছে আমি পাশে থাকায় শুনতে পেয়েছি কিন্তু মালিহা আপু শুনতে পায় নি। তাই একটু হা করেই তাকিয়ে ছিল। কথা ঘুড়াতে আযমান ভাইয়া বলে উঠে,

তা শালা সারফারাজ কবে বিয়ে করছিসস?

আগে তোরটা হবে তারপর

কিন্তু ওর তো বউ ঠিককরা নেই তোমার তো আছে। আগে তোমারই বিয়ে করা উচিত সারফারাজ ভাই

মালিহা আপুর এমন কথায় চোখ বাঁকিয়ে আবার পিড়িয়ে নিয়ে উনি বলে উঠে,

তোকে কে বলেছে আমার বউ ঠিক করা নেই? শুধু বউ ঠিক না বিয়েও করা শেষ। আর অনুষ্ঠান না হয় কিছু দিন পরেই করবো। শালা তুই আগে বিয়া কর। বুঝলি

হুম বুঝলাম

মালিহা আপুর মুখ দেখার মত ভয়ঙ্কর রক্তিম হয়ে আছে। এখান থেকে যাওয়াই মঙ্গল।

চাদঁ রাত চাঁদের কিরণ আমার চোখে মুখে আছড়ে পড়ছে। আমি দাঁড়িয়ে আছি লঞ্চের মাথায়। লঞ্চটা খুব বড় দেখতে জাহাজের মতই। আমার তো নিজেকে রোজ মনে হচ্ছে। টাইটানিকের রোজ যেমন দাড়িয়ে থাকে হাত গুলো জাহাজের ঘিরিলের উপড় রেখে আমি একুই ভাবে দাড়িয়ে আছি। লঞ্চে তেমন ভিড় নেই। আর রাত বেশি হওয়া সবাই ঘুমে তলিয়ে গেছে।

রাত বারোটা প্রায় বাজে। আযমনা ভাইয়া কিছুসময় থেকে লাপাতা। তাকে খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না। মানে আমার চোখে সে পড়ছেনা বেশ কিছু সময় থেকে। এখন কোন কোলাহল নেই শুধু পানির সো সো শব্দ। আর ইঞ্জিনের আওয়াজ। বাতাসটা শরীর জুড়ানো টাইপের। মজার ব্যাপার হল মালিহা আপু রেগে মেগে আগুন হয়ে আছে।

আর নেকামি করে বাবা মার কাছেও বিচার দিয়েছে কিন্তু তাদের ভাব ক্ষানা এমন যে উনি আসলেই ঝুলন্ত ডোঙ্গি আমি এক দৃষ্টিতে চাঁদ দেখছি। এখন হয়ত উনাকে পাশে দেখতে চাচ্ছি কিন্তু সেত গায়েব। প্রথম থেকেই কত কেয়ারি কেয়ারি ভাব দেখাচ্ছিল আর এখন পুরাই গায়েব আরে এখনোত পড়ে যাওয়ার ভয় আছে নাকি? ঠান্ডা দু জোড়া হাত পিছন থেকে জড়িয়ে নিয়েছে আমায়। বুঝতে পেরেছি উনি। উনি একটু আদুরে গলায় বলে উঠে,

এখানে কি করছ আয়ুসোনা?

নাচানাচি করছি। আপনি চাইলে করতে পারেন। কি করবেন?

আরে এত সুন্দর মুমেন্টে আর যাই হোক নাচানাচি বেমানান। এখন তো অন্যকিছু মানানসোই কি বল?

তা কি মানানসই বলেন শুনি?

ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,

রোম্যান্স

এই আপনার মুখে অল টাইম লুচু টাইপের কথাবার্তা কেন শুনি? দিনে দিনে ইমরান হাসমির মত হয়ে যাচ্ছেন। দূরে যান

তাই নাকি যেহেতু ইমরান হাসমি বলেছ তা হলে তো তার একটু মান সম্মান রাখার মত কাজ করি কি বলচুমাচুমি দিমু নাকি?

ছিইইই

এমন ভাবে ছিই বলছ মনে হয় আমি ড্রেন থেকে উঠে আসা আবর্জনা। একটা ইন্টেরেস্টিং জিনিস দেখবা?

কি?

হাতগুলো প্রজাপতির ডানার মত প্রশারিত কর। টাইটানিক দেখেছ?

হুম

ঠিক একুই ভাবে। মানে রোজ যেভাবে হাত মেলে দাড়িয়ে ছিল। (আমি তার দিকে ঘুড়ে তাকাতেই বলে উঠে)আরে বাবা আমি জেকের মত অত লুচুও না পাবলিক প্লেসে আর যাই করি ওর মত চুমু খাবো না। তুমি হাত প্রশারিত করোআর চোখ বুজে থাকো দেখবে খুব সুন্দর একটা মিষ্টি ঘ্রাণ নাকে আসবে আর কানে মুধুর কলকলানি পানির সাউন্ড। দুটো মিশে এক অদ্ভুত নেশা লাগানো অনুভতির জানান দিবে। মনে হবে দুজনেই পানিতে ভাসছি

তার কথায় আমি নিঃশব্দে হাসলাম। তারপরে হাত প্রশারিত করে বাড়িয়ে দিলাম। সে আমার কোমড় জড়িয়ে হেজাবে মুখগোঁজে দাড়িয়েছে। উনার গরম নিশ্বাস হেজাব ভেদ করে আমার ঘাড়ে আছড়ে পড়ছে। দুজনেই চোখ বুজে আছি। সত্যিই এক অদ্ভুত অদৃশ্য নেশার বসবাস এই পানির গন্ধে। আমি চোখ খুলে হালকা ঘাড় ঘুড়িয়ে দেখি উনি এখনো চোখ বুজে আছে। কোমড়টা আরো জড়িয়ে বলে উঠে,

ডিস্টার্ব করছ কেন? আমাকে দেখা হলে সামনে দেখো। দিনদিন তুমিও আমি পাগলি হয়ে যাচ্ছ আয়ুজান

উনার এমন কথা শুনে আমি লজ্জায় মুখ ফিড়িয়ে চাঁদ দেখায় মনযোগ দিলাম। চাদঁটাও আজ মেঘে ডেকে আছে অর্ধেক। চাঁদের উপড় কালো মেঘের আনাগোনা। ঠিক মালিহা আপুর চাহনির মত।

যেমন করে সে কেবিনের পাশে দাড়িয়ে লাল চোখে দেখছে। চাদঁ আবার সব মেঘ কাটিয়ে নিজের উজ্জ্বল রং দিয়ে পানির উপড়ে আলো ফেলছে। সে আলোয় আমাদের প্রতিচ্ছবি দেখা যাচ্ছে। একজন ছেলে কোমড় জড়িয়ে কাধে মাথা দিয়ে তার প্রিয়সিকে জড়িয়ে দাড়িয়ে আছে। থেকে থেকে প্রতিবিম্ব পানির কাপনি আর লঞ্চের গতিতে নড়ে চড়ে উঠছে। আমি আবার চোখবুজে বড় করে দুই তিন বার দীর্ঘশ্বাস টেনে নিলাম। অসাধারণ মুগ্ধতায় প্রকৃতি ছেয়ে গেছে।

লঞ্চ থেকে ক্লান্ত শরীরে নেমে পড়েছিচারিদিকে সূর্যের আলো উঠি উঠি অবস্থা। আযমান ভাইয়ারাও আমাদের নানু বাড়ি যাবে। নানাজান ফোনে বাবাকে তার সাথে দেখা করার জন্যে স্পেশাল ধমকি দিয়ে বলে দিয়েছে। তাই তারাও যাবে। সাদা রং এর গাড়ির সাথে কালো শার্ট পরিহিত একজন ছেলে দাড়িয়ে আছে। দেখে আর যাই হোক ড্রাইভার মনে হচ্ছে না। হাতে সানগ্লাস ঝুলাতে ঝুলাতে আমাদের সামনে দাড়াতেই মামা পিঠে চাপড় মেড়ে বলে উঠে,

হেই ইয়াং ম্যান কেমন আছ?

ছেলেটা সালাম দিয়ে মুচকি হেসেঁ বলে উঠে, ভালো মামা

মামা তার সাথে আমাদের পরিচায় পালা শুরু করেছেলেটার নাম সাগড়। আম্মুদের নাকি কোন চাচার ছেলে। দেখতে তো মাসআল্লাহ্ইঞ্জিনিয়ার নাকিগ্রামে বেড়াতে এসেছে। ডাকায় থাকে। ছেলেটার সাথে আমাকে পরিচায় করানোর সময় আযমান ভাইয়া তার গাড়ি নিয়ে হাজির গাড়ি থেকে নেমেই আমার কাছে এসে বলে উঠে,

যেহেতু আমরা একসাথে যাবো তবে আয়ু আর দিলের জন্যে আমার গাড়িতেই জায়গা হবে। ওদের বরং আমার গাড়িতেই নিয়ে যাইআর তুমি তো একটুও ঘুমাও নি চল গাড়িতে বস

উনি কথা বলতে বলতেই সামনে তাকিয়ে ভয়ঙ্কর কিছু দেখেছে টাইপের চোখ করে তাকিয়ে আছে। আর ওই সাগড় নামের ছেলেটাও একটা ঝাটকা খেয়েছে টাইপের অবস্থা। দুজনেই দুজনের দিকে তাকিয়ে আছে। তাদের দেখে মনে হচ্ছে ধিংতানানা টুনটা দিলে মনে হয় এখন সেই হইত


পর্ব ১৫

ধিংতানানা টুনের ইতি টেনেছে ওই সাগর নামের ছেলেটা। সে এগিয়ে এসে আযমান ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,

দোস্ত কেমন আছস?

ভালো। তুই এখানে কেন?

আরে ওনারা আমাদের আত্নিয় তাই তাদের নিতে এসেছি। কিন্তু তুই এখানে কেন? তোকেত বুয়েটের ক্যাম্পাসে আর দেখাই যায় না। এখন নাকি আইবিএতে কোর্স করছিস? তা কেমন চলছে সব?

বাহ তুই দেখি আমার সব খবরই রাখস। ভালো আমিও উনাদের আত্নিয় তাই গ্রামে বেড়াতে এসেছি। সব ঠিকঠাকি আছে।

তোর খবর রাখাটাই সাভাবিক নয় কি ক্লাসের টপাদের খবর রাখাই সাভাবিক

আমি টপার হলে তুইও তো কম না আমার কুরসি নিয়া তো প্রাই টানাটানি করতিভুলে গেলি নাকি?

না তা ভুলি নি তবে টানাটানি করলেও তুই কখনোই ছাড়িসনি। আরে সারফারাজওতো আছে দেখছি

সারফারাজ ভাইয়ার সাথে কোলাকুলি করে বকবক শুরু করলো। সব শেষ আমি মানে আমার সাথে ভাইয়া সাগর নামের ছেলেটাকে পরিচয় করিয়ে দিতে এগিয়ে এলো

ওও হল আমাদের লিটেল পরী মানে ছয় ভাই চম্পা। একমাএ বোন আমাদের

ছেলেটা এবার সবার চোখ এড়িয়ে আমার দিকে তাকায়। আমি মুচকি হাসি দিয়ে ভাইয়ার দিকে তাকাই উনি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার সামনে এসে বলে উঠে,

হাই লিটেল পরীদেখতে কিন্তু পরীর মতই। আমার নামতো জানা হয়েগেছে আরো জানার সুযোগ আছেতো বল কেমন আছ?

তার কথা শুনে আমি যতটাই সাভাবিক ছিলাম কিন্তু আযমান ভাইয়া আমার হাত চেপে ধরায় আমি প্রচণ্ড ভাবে অবাক হলাম। উনার চেহারা দেখার মত এত রেগে যাওয়ার মত কি হয়েছে বুঝতে পারছিনা। আজবউনি খুব শক্ত করে আমার হাত ধরে আছে মনে হচ্ছে ছেড়ে দিলেই আমি পালিয়ে যাবো। আমি ছোট করে জবাব দিলাম

ভালো

আযমান ভাইয়া আর কথা বারাতে না দিয়ে বলে উঠে,

সবাই খুব টায়ার্ড তাই যাওয়া উচিত আয়ু আমার সাথেই যাবে। চল

উনি একপ্রকার হাত টেনে সবার সামনে থেকে আমাকে নিয়ে হাটা দিল গাড়ির কাছে এসে দরজা খুলে বসিয়ে দিল আর বলে উঠে,

বসে থাক।

মেয়েরা হিংসুটে হয় যানি কিন্তু এই আযমান ভাইয়ারে না দেখলে তো যান হত না ছেলেরা এর চাইতেও ভয়ঙ্কর হিংসায় মাতে। বাড়ির সামনে বিশাল গেট। দুইপাশেই লাল টকটকে কৃষ্ণচূড়ার গাছ। গাছের নিচটাও লাল হয়ে গেছে কৃষ্ণচূড়ার লাল পাপড়ির কারনে। গেটের ভিতরে ডুকেই বুঝতে পারছি কত সুন্দর বাড়িটা। সামনে উঁচু দেয়াল বিশিষ্ট একটি বিল্ডি আছে সামনে বড় উঠান। ইশশ্ কি সুন্দর সব আমি তো এখানেই থেকে যাবো।

নানুজান ঘরের সামনেই বসে ছিল এই বৃদ্ধ বয়সেও দারুন সুন্দর সে। আম্মু তার মতই হয়েছে। কিন্তু আমি আব্বুর মত দেখতে হয়েছি সবাই তাই বলেআম্মুত আবার কান্নাজুড়ে দিয়েছে সে কি কান্না সবাই কান্নাকাটির পর্ব চালু করেছে। আমার কথা এখন কেউই মনে রাখবে না। আযমান ভাইয়ার কি হয়েছে আমার হাতটা শক্ত করে আঁকড়ে আছে।

নানাজানের বিল্ডিংয়ের অপর পাশে বিশাল বাগান দেখা যাচ্ছে। খুব সুন্দর বাগান মনে হয়। এখানে নানা নানু, দুইটা কাজের লোক আর দাড়োয়ান থাকে। কাজের লোক হবে না দুজনেই মহিলা। আমরা ভিতরে গিয়ে একটু অবাক হলাম পুরাতন আমলের ডুপ্লেক্স বাড়ি। বেশ সুন্দর বাড়িআমার সাথে প্রথমেই নানার পরিচয় হল উনি এগিয়ে এসে বলে

তা এই মেয়েকে তোমরা কোথায় কুড়িয়ে পেলে?

কথাটা শুনার সাথে সাথে ঠোঁটগুলো উল্টে কান্না চলে এল। আমার নানাজান এমন হবে ভাবতেই পারিনি। উনি আমাকে চিনতেই পাড়লো না। আমার চোখে পানি চিকচিক করছে। কান আর নাক লাল হয়ে এসেছে। আমি প্রায় কেঁদেই বলে উঠলাম,

এভাবে বলতে পারলেন নানাজান আমি তো আপনার নতুন বউ

আমার চেহারা দেখে আর কথা শুনে সবাই হু হা করে হেসেঁ উঠলেন সাথে নানাজানও হাসতে হাসতে জড়িয়ে ধরে বলে উঠে,

এত দিনে একটা বিউটিফুল বউ পেলাম। তাহেরা তোমার চাইতেও হাজার গুনে সুন্দর বুঝলে। আর দেখ কত সুন্দর পুতুল পুতুলআমার তো এখন একটা কবিতা শুনাতে ইচ্ছে করছে বলি
আমার নাতিন রূপ সুন্দরী রাস্তা দিয়ে যায় রোদে করে ঝিলিকমিলিক আমার নাতনিকে অপ্সরীর মত দেখা যায়।

সবাই হেসেঁ উঠল আবার সাথে আমিও। আল্লাহ পৃথিবীতে অনেক কিছু সৃষ্টি করেছে তার সৃষ্টি সবকিছু সুন্দর এত সুন্দর সৃষ্টির মাঝে সবচাইতে সুন্দর হল পরিবার। এনাদের না পেলেত আমার জানাই হত না এই মহান বাক্যটি।

নানাজান আর আম্মুর কান্না থামছেই না আর আব্বুতো নানাজানের পায়ের কাছেই বসে আছে। হয়ত তার নিজেরও মেয়ে আছে তাই সেও বাবার কষ্ট বুঝতে পারছে। পরিবারের সবাইকে একসাথে দেখে আপনাআপনি চোখে পানি চলে এসেছে। আযমান ভাইয়া আমার কানের কাছে এসে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,

কি পাষান তুমিকিভাবে পারলে আমার সতীন বানাতে? বল কিভাবে? সন্ধ্যার পরে ছাদে দেখতে চাই এই আপরাধের বিরাট শাস্তি হবে

আবার হেসেঁ দিলাম তার কথায় উনি চোখ মেড়ে সামনে গিয়ে নানাজানের সামনে গিয়ে বলে উঠে,

এই যে বুড়া নানাজান এবার সাইডদেন তো কখন থেকেই দেখছি বসে আছে আর কান্না করছেন। এই বয়সে এসে এত সুন্দর বউ পেয়েছেন কোথায় একটু খুশিতে নাচানাচি করবেন তা না কেঁদে চলেছেন। সরেন তো

বলেই নানাজানের গা ঘেঁষে বসে পড়েন আমি একটু অবাক হয়েই তাকিয়ে আছি। নানাজান হতভম্ভ চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,

তুমি ওর ছেলে। (বাবাকে ইশারা দিয়ে দেখিয়ে)

কেন আপনার সন্দেহ হচ্ছে নাকি? এই এখন এই বুড়া বয়সে এসে বলবেন না যে ডিএনে টেস্ট করাতে। কেমন লাগবে না? (ভ্রু তুলে বলে উঠে)

এত বড় হয়ে গেছ। একদম বাবার মতই হয়েছ? (জড়িয়ে ধরে বলে উঠে)

তা আপনি কি বলতে চান ছোটই থাকবো নাকি? আরে বিয়ে সাদি করতে তো বড় হওয়া লাগেই আর আমি তো ছোট থেকেই বড়। (আমার দিকে তাকিয়ে)আমি হলাম বাপকা বেটা তাই বাবার মতই হয়েছি

নানাজানও হেসেঁ দিলেন। সবার মুখেই হাসি হাসি ভাব। আমিও মুচকি হেসেঁ পাশে তাকাতেই সাগর নামের ছেলেটাকে দেয়াল ঘেঁষে আমার দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে আবার চোখ ফিড়িয়ে নিলাম। উনি আমার পাশে দাড়িয়ে বলে উঠে,

পরিবারের সবাই একসাথে খুব সুন্দর লাগছে না?

হুম খুব

লিটেল পরী কিসে পড়?

আইবিএতে আর আপনি?

আমি একটা কোম্পানিতে আর্কিটেক্ট হিসেবে আছিকোন সেমিস্টারে আছ?

ফার্স্ট এয়ারে

আরে বাস তুমিতো একদম পিচ্ছি

এই মোটেও পিচ্চি বলবেন না। ১৮+কিন্তু আমিযাকে দেখি সেই পিচ্চি পিচ্চি বলে এমন কি আমার বেস্টুও আমারে পিচ্চি বাচ্চা বলে কেমন ডা লাগে শুনতে বলেন? আমাকে কি দেখতে বাচ্চাদের মত নাকি?

মোটেও না ভুল হয়েগেছে সরিআর ভুলেও পিচ্চি বলবো না বুড়ি

তার কথায় চোখ বাঁকিয়ে তাকাতেই সে হাসতে হাসতে বাহিরে চলেগেলেন।

ঝগড়া হচ্ছে। আমি কিন্তু করছিনা করছে ভাইয়ারা। আর তাদের ঝগড়ার করন কিন্তু আমি আমি কোন রুমে ঘুমালে ভালো হবে তারা এটা নিয়েই ঝগড়া করছে। ভাবা যায়? না মোটেও ভাবা যায় না অবশেষে সবার ঝগড়াকে এড়িয়ে আমার জায়গা হয়েছে ছাদে সিঁড়ির পাশের দুই রুম আগের একটা রুমে। রুম আগেই পরিষ্কার করা ছিল। রুমের সাথে বিস্তর বারান্দা।

যেখান থেকে খুব সুন্দর প্রকৃতির দৃশ্য দেখা যায়। কিন্তু একটাই সমস্যা আমার বারান্দার সাথে পাশের রুমের বারান্দা এটাচ করা। যদিও সবাই পরিবারের লোক তবুও কেমন যানি লাগছে। ভাইয়ারাও বারান্দায় আসবে আমিও কেমন জানি লজ্জা লজ্জা লাগে। শত হোক তারা তো বড়। আমি শাওয়ার নিয়ে একটু বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমেরা হানা দিয়ে এসে হাজির। আমি ঘুমে তলিয়ে গেলাম।

পা টিপে টিপে ছাদের সিঁড়ি বেয়ে উপড়ে উঠছি। বুকের ভিতর ধুকপুকানি বেড়েই চলেছে। বুঝিনা উনার কাছে গেলেই এমন অবস্থা হয়। ছাদের দরজাটা ভিড়ানো ছিল। হালকা ঠেলে ভিতরে ডুকতেই সামনের দৃশ্য দেখে বুকের মাঝে চিনচিন ব্যাথা হচ্ছে। চোখ জোড়াও বড্ড জ্বালা করছে। মনে হচ্ছে এখনই একরাশ বৃষ্টি অঝড়ে ঝড়ে পড়বে। কিছু শব্দ কানে আসতেই গাটা জ্বলে পুড়ে যাচ্ছে

আমি তোমাকে ভালোবাসি আযমান

শালি এ জীবনে কি আমার জামাই ছাড়া তোদের ভালোবাসার আর মানুষ নাই। সবার নজরই আমার জামাইয়ের দিকে। আর কচুর জামাই কি দুঃখী ভঙ্গি নিয়ে কাধে হাত দিয়ে শান্তনা দিচ্ছে। আর ওই শাঁকচুন্নি মালিহা কেঁদে কেটেঁ সাগর মহাসাগর বানিয়ে ফেলেছে। আশ্চর্য

দেখ এভাবে কাদার কিছু নেই

কিভাবে বলতে পারো তুমি এটা আযমান? আমি তোমাকে সেই ছোটবেলা থেকে ভালোবাসিতুমি একবারো বুঝার চেষ্টা করছনা

কেন রে তোরে বুঝার ঠেকা নিয়ে রেখেছে বুঝি আমার জামাই? এত বুঝে কি করবে। আর আযমাননা তোরে তো পরে দেখমুতোর এত কিসের দরদরে। এই মেয়ে কেঁদে কেটেঁ ফালাফালা হয়ে যাক দরকার হলে সাগর বানাক মহাসাগরে ভাসুক তোর কিরে শালাএমন ভাব যেন জীবন আটকে আছেআবার হাত বুলিয়ে শান্তনাও দিচ্ছে দেখ মন তো চাচ্ছে এই হাতটাই ভেঙে গুড়ো গুড়ো করে কফির সাথে মিশিয়ে চিনি ছাড়াই গিলে ফেলিখাচ্চোর একটা।

দেখ মালিহা আমি অনেক আগে থেকে আর একজনের হয়ে গেছি। সে ছাড়া আমার জীবনে আর কিছুই নেই। আমি শুধু তাকেই চাইওই আমার প্রথম দেখা ভালোবাসা। ওকে ছাড়া তো আমি কিছুই ভাবতে পাড়ি না।

আমি ও তো তোমাকে ছাড়া কিছুই ভাবতে পারি না। তুমি ওত আমার প্রথম ভালোবাসা। তবে কেন আমারটা কেন হবে না বল প্লিজজ বল

হায় আল্লাহ আমি তো শেষ। আমার জামাইয়ের গলায় এই ঝুলন্ত ডোঙি সত্যিই ঝুলে পড়বে আমি ভাবতেও পারি নি। আর খাটাস কেরেক্টারলেস হাজবেন্ড ওরে এই ভাবে জড়িয়ে ধরার কি আছে।

খাটাসটারে লাথি দিয়ে উখান্ডা পাঠাতে মন চাইতাছে। বিরক্তির লিমিট থাকে আমার তো সব লিমিট ক্রশ হয়ে গেছে মাথা ধাপধাপ করে গরম হচ্ছে সাথে যন্ত্রনার আগমন। মাথা ছিড়ে যাচ্ছে। এদের নেকামি দেখে নিজের চুলনিজেরই ছিঁড়তে ইচ্ছে করছে। কিন্তু নিজেরটা কেন ছিঁড়বো ছিড়লে এদের গুলো ছিঁড়ব

দেখ মালিহা গায়ের উপড় এভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ার মানে হয় না। দুরে যা একটু তারপর বল। দেখ তোকে বুঝাতে বুঝাতে আমি প্রায় টায়ার্ড আমি এই জীবনে একজনকেই ভালোবাসি আর সে হল আয়ু। ও ছাড়া কেউ ছিলনা আর কিউ আসবেও না। ওকে ছাড়া আমার বাচা মশকিল। এবার বল আমি কিভাবে নিজের জীবন ঝুঁকিতে ফেলি

ঠিক আছে তবে আমিও তোমাকে ছাড়া বাচবো না। এবার বল আমি নিজের জীবন কিভাবে ঝুঁকিতে ফেলবো? আমি কি করবো? এই ছাঁদ থেকে লাফিয়ে জীবন দিব? বলল এটাই ঠিক হবে তুমিও জীবনে হ্যাপি হবে আমিও আর কষ্টে থাকবনা

ইয়া আল্লাহ এই মেয়ে দেখি ইমোশনালি ব্লাকমেইল করছে। একি এখান থেকে লাফি পরবে হতেও পারে। উনি এবার আপুকে ঝাঁকিয়ে ধমকের সুরে বলে উঠে,

মাথা খারাপ হল নাকি? এগুলো কেমন কথা। আর এসব পাগলামি ছাড়চল নিচে যাই। এসব মোটেও ঠিক না তোর মাথা গরম এখন। সামান্য কথায় ভেঙে পড়ে এমন জঘন্য কাজের কথা মাথায় আনার মানে কি?

ভেঙে পড়েছেনেকা আরে এই মেয়ে ভেঙে যাক মোচকাই যাক দরকার হলে গুড়ি গুড়ি টুকরাটাকরা হয়ে যাক আপনার কি? হুম নেকা। মালিহা আপু এবার কান্নার মাএা আরো বাড়িয়ে রেলিংয়ের কাছে গিয়ে লাফানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে। আর উনি বারবার ঝাঁকিয়ে সরিয়ে আনছে। আমি এবার তাদের কাছে গিয়ে বলে উঠি

আপু এত ছোট জায়গা থেকে লাফিয়ে লাভ নেই তুমি মরবেনা। তার চাইতে বরং ওই বিল্ডিং বেশি উঁচা। (সামনে ইশারা করে)ওটা একটা শপিং মল সাথে হোটেলও মানে এগারো তালা বিশিষ্ট। তুমি বরং ওই খান থেকে লাফিয়ে পর। তবেই কিছু একটা হবে। তা না হলে এখান থেকে পড়ে সর্বচ্চ হাত পা ভাঙবে।

এর বেশি আর কিছুই হবে না। তাই বলছিলাম শুধু শুধু এক্সট্রা এনার্জি নষ্ট করে কি লাভ বল। একবারেই কাজ হবে এমন কিছু করা উচিত ঠিকনা। তাই বলছিলাম জাস্ট একটু কষ্ট করে লিফটে উঠবেন আর ছাদ থেকে টপ করে লাফাবেন কাজ খাতাম

একটু অভিনয় করে দেখিয়েছি। সবটুকু মনযোগ দিয়ে অভিনয় করেছি তাই তাদের রিয়েকশন দেখা হয় নি। এবার তাদের দিকে তাকাতেই দেখি দুজনেই আমার দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। আশ্চর্য আইডিয়াটা কি খারাপ ছিল নাকি?

পর্ব ১৬

মগেরমুলুক পাইছেন নাকি? এভাবে জাপটাজাপটি করবেন আর আমি তাকিয়ে তাকিয়ে দেখবো? কখনোই না আপনারা রং লিলা করছেন তো আমাকে ওত একটু ভাগ বসাতে হয় বলেন? আপনারা প্রেমলিলা করবেন আর আমি এটা হতে দিব ভাবলেন কিভাবে। কখনোই হতে দিব না। হুমহ

আমি মোটেও জাপটাজাপটি করছিলাম না আয়ু। ও নিজেই কেঁদে কেটেঁ গায়ের উপর পরছিল। তাই আজে বাজে কথা রাখ

মোটেও রাখা রাখি হবে না। আর উনি জাপটে পরলেই আপনাকেও বুঝি জাপটে নিতে হবে? হাত বুলাতে হবে? তা ছাড়া শান্তনাও দিতে হবে না? নেকামি যত সব।

দেখ ইচ্ছে করে মোটেও ওকে জড়িয়ে ধরিনি। ও নেজেই বারবার এমন ভাবে জাপ্টে পরছিল আমি সামলাতে না পেরেই এমনটা করতাম।

তাই নাকি? কিন্তু আমি তো দেখেছি আপনি শান্তনা পুরুষ্কার দিচ্ছিলেন। নিজের ছোঁয়া দিয়ে? মনে হচ্ছে শিশুকে ললীপপ দিচ্ছেন কান্না থামানর জন্যে?

মাইড ইউর ল্যাঙ্গুয়েজ আয়ু। এগুলো কেমন কথা ছিহহতুমি ছাড়া কাউকেই আমি ওভাবে ছুঁয়েও দেখিনা বাই দ্যা ওয়ে আর ইউ জেলাস আয়ুজান?

অবশ্যই জেলাস। এমনকি এই জেলাসির অগুনে আমি জ্বলে পুরে যাচ্ছি। জেলাসিটাই কি সাভাবিক নয়? অবশ্যই এটা সাভাবিক। আপনি একেত আমার হাজবেন্ড তার উপড় প্রথম ক্রাশ সাথে এখন ভালোবাসাটাও উড়ে এসে জুড়ে বসেছে। এখন বলেন আমার কি জেলাস হওয়া উচিত নয়? অবশ্যই উচিত হান্ডেট পার্সেন উচিতমেয়েরা আর যাই হোক হাজবেন্ডের ভাগ কখনো দিতে চায় না। আর এখানেত জড়াজড়ি হচ্ছে

উনি এবার কোমড়ে হাত দিয়ে হেসেঁ উঠে। তার হাসি দেখে আমার রাগ আরো শত গুনে বেড়ে গেছে বিরক্তি আর রাগ নিয়ে এবার হাটা দিলাম। পিছনে ঘুড়তেই উনি হাত চেপে ধরে বলে উঠে,

ওর বাবা নাই। ওর কিছু হলে ফুফির কি হবে? আর ফুফি ওর দায়িত্ব আসার সময় আমার কাছে দিয়েছে। একজন মামাত ভাই হিসেবে ওর দেখা শুনা করা আমার দায়িত্ব। আর ওকে বুঝানের ইচ্ছা আমার কখনোই ছিল না কিন্তু কিছু করার নেই। দায়িত্ব নিয়েছি বলেই এত বুঝানো। ওর কিছু হলে ফুফিকে কি জবাব দিব বল? তাই একটু বুঝিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছিলাম।

কিন্তু এই মেয়ে যা গায়ে পড়া টাইপের ওওওহহহ্। তবে তুমি আসাতে আমাকে একপ্রকার বাঁচালে। কি ভয়ঙ্কর মেয়ে ও আমি দূরেদূরেই থাকতে চাই। বাপরে কেমন চিপকু টাইপের।। (বলেই উনি একটা নিশ্বাস নিল)যাই হোক তোমার এভাবে বলা উচিত হয়নি। এভাবে না বললেও পারতে।

ও তাই নাকি। থাকেন আপনি আপনার মালিহা নিয়ে। আমি যাই। খুঁজলে আপনার চাইতেও বেস্ট পোলা পামু। হুম হ্

হাত ঝাড়ি দিয়ে সামনে হাঁটা দিলাম। এসব নেকামি মোটেও ভালো লাগছে না। কি এমন বলেছি। ভালো একটা আইডিয়া দিয়েছিলাম। আইডিয়া শুনেই মালিহার বাচ্চা ডালিহা ভ্যা ভ্যা করে চলে গেছে আর উনি পেনপেনানি শুরু করেছে। আবার বলছে আমি জেলাস নাকি। জেলাসি মিশন শুরু। আপনি এবার দেখেন জেলাসি কাকে বলে কত প্রকার ও কি কি

ডাইনিং টেবিলে সবাই বসে আছে উদ্দেশ্য খাওয়াদাওয়া। আমি টেবিলের সামনে গিয়ে দাড়াঁতেই দেখলাম দুটো চেয়ার খালি আছে একটা আযমান ভাইয়ার পাশে আর অপরটা ওই সাগরের পাশে। কিন্তু এই সাগর যে রাতে আমাদের বাসায় আসবে এটা আমার জানা ছিল না। আমি আযমান ভাইয়ার পাশে আসবো বলেই এগিয়ে যাচ্ছিলাম কিন্তু কথা থেকে ওই মালিহা চলে এসেছে।

মালিহা আপু উনার পাশে বসে পড়েছে। সাথে সাথে আযমান ভাইয়া উঠেও গেল। মালিহা আপুও দাড়িয়ে কানে কানে ফিসফিস করে কি যেন বলে উঠে,। আবার সে বসেও পড়ে। যাই বলুক আমি সাগর ভাইয়ার পাশে বসে পড়ি। আমি পাশে বসাতে উনি নিশ্চুই খুশি হয়েছে। হেসেঁ হেসেঁ দাতঁ কেলিয়ে বলে উঠে,

লিটেল পরী দেখি আমার পাশে

কেন কোন অসুবিধা হলে বলেন আমি বরং সোফায় বসি?

আরে না তেমন কিছু না। বস।

আমি হেসেঁ হেসেঁ ইচ্ছে করেই সাগর ভাইয়ার সাথে কথা বলছি। আমার সামনে বসেছে উনি। রাগে ফুঁসফুঁস করছে। একবার আড়চোখ তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলাম। তার চোখগুলো কেমন লাল লাল হয়ে আছে। কাটাঁ চামুচ দিয়ে প্লেটে টুংটাং শব্দ করছে কিন্তু খাবার মুখেই দিচ্ছে না।

না দিক আমার কি? যা খুশি করুক আই ডোন্ট কেয়ারআমি নিজেও কেন যেন তেমন খাওয়া দাওয়া করতে পারলাম না। হয়ত উনি খায়নি বলে। এই বাঙালি মেয়েদের আজাইরা প্রবলেম আমার মাঝেও যে তা কাজ করছে ব্যাপারটা সত্য

সাগর ভাইয়া ভালো ছেলে। দেখতে যেমন সুন্দর কথা বলাও সুন্দর। খুব গুছিয়ে কথা বলে। আমি এখন উনার সাথেই বাগান দেখছি ঘুড়ে ঘুড়ে। সে হেঁসে হেঁসেই কথা বলে। শুধু আমি হাসলেই এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। ব্যাপারটায় প্রথমে ব্যাপক আনইজি লাগত। এখনো লাগে তবে তেমন একটা না। এখন তার সাথে আমার দারুন সখ্যতা তৈরি হচ্ছে। উনি খুব মজার মজার কথা বলে যা শুনে আমি মাঝে মাঝে হেঁসে মাটিতে গড়াগড়ি খাওয়ার মত অবস্থা।

তার এখন কার কথা হচ্ছে গার্লফ্রেন্ড নিয়ে। তার জীবনে গার্লফ্রেন্ডের বহু অনাগোনা ছিল তবে বেশি টিকতো না। উনি নাকি খুব কিপটুস ছিল তাই গার্লফ্রেন্ডরা ভাগত। আসল কথা হচ্ছে উনি সত্যি কারে কোন মেয়ের প্রেমে তেমন পড়েনি। ওরাই প্রপোজাল দিত ওরাই আবার ব্রেকাপ করতো। আযমান ভাইয়া আজ বেপক রেগে আছে। থাকুক রেগে আমার কি? হুমহ্

ছাদে গল্পের আসর জমেছে। আমি তো ঘুমঘুম চোখে ডুলে পড়ছি দিল পাশে বসে কি যেন পেঁনপেঁন করছে। তাতে আমার বিন্দু মাএ ইন্টেরেস্ট নেই। আমি তো তার কাদেঁ মাথা দিয়ে ঝিমাছি। দিল এবার আমাকে ছাড়ি দিয়ে বলে উঠে,

ভাই তুই কি আমার দুঃখের কথা শুনতে পাচ্ছিস?

আমি চোখ ডোলে হাই তুলতে তুলতে বলে উঠিবল কি বলবি? আর তোর মত এত সুখি সুখি মেয়ের আবার কি দুঃখের কথা থাকতে পারে? নেকামি ছাড় আর বল?

আব্বু আম্মু আর কিছুদিন পরেই বিয়েটা দিয়ে দিতে চায়। আয়ুরে আমার কি হবে? কিভাবে পালাবো বল?

কি হবে মানে কি? আর পালাবি কেন? পাগলের মত প্রলেপ বন্ধ কর বুঝলি। আর এই সব হাঁপাহাঁপি ছাড়। এখনো তোর মাথায় পালানো ঘুড়ছে ভাবতেই এক গ্লাস পানিতে ডুব দিতে মন চাচ্ছে। ফাউল মাইয়া। বিয়ে তো একটা খুবি ইজি ব্যাপার। টপাটপ তিনবার কবুল বলবি শেষ কেল্লা ফাতেএত কষ্ট নেসকা বুঝলাম না?

এমন ভাবে বলছিস যেন কত কত বিয়ে করে ফেলেছস। শালি তোর তো আর কষ্টও নিতে হয় নি বাচ্চা কালে বিয়ে হয়ে গেছে।

তো বাচ্চা কালে হলেওত হয়েছে। বাদ দে তুই এত টেনশন নিস না? আমার মামনি কিন্তু সেই শাশুড়ি। খুব ভালো। এত টেনশন নিশনা টপাটপ বিয়া করে বাসর করে ফেলবি তারপর জমজের কারখানা।

আহাহা কেয়া বাত হে। ছোট ছোট একগাদা বাচ্চা তাদের আবার পিচ্চি পিচ্চি হাত কি কিউট ব্যাপার না। আমি তাদের নিয়ে খেলাধুলা করবো। আমারে কি ডাকবে ফুফসস নাকি খালামনি বুঝতে পারছিনা। এত চাপ নিস না। এবার তোর কাধ দে আমি ঘুমামু

দিলবার হা করে তাকিয়ে আছে। ও হয়ত ভাবতে পারেনি আমি এমন কিছু বলতে পারি। কেউই এদানিং ভাবতে পাড়ছেনা আমি কি বলব। এমন কি আমি নিজেই জানিনা পরের কথা আমি কি বলব। আসলে নিজের মাথাই আওলাঝাওলা হয়ে আছে।

বুকের মধ্যে ভাড়ি কিছু অনুভব হতেই আমার ঘুমটা হালকা হয়েগেছে। টিপটিপ করে চোখ খুলতেই ঘরময় অন্ধকারের ছড়াছড়ি। আমি তো ছাদে ছিলাম। এখানে কিভাবে এলাম। আর এটা কার রুম তাও দেখার কোন অপশান নেই। কেউ একজন খুব যত্নের সাথে আমাকে যাপটে ঘুমিয়ে আছে। আমি এবার নড়েচড়ে উঠতেই আর একটু জোড়ে চেপে ধরে সে বলে উঠে,

ঘুমাও না নিজেও ঘুমাও আমাকেও ঘুমাতে দেও

আপনি আমার রুমে কি করছেন? আর আমি তো ছাদে ছিলাম এখানে কিভাবে এলাম? এই সরেন তা নাহলে কিন্তু ভালো হবে না। সরেন

আমি উনাকে ঠেলছি আর উনার সে দিকে খবরই নেই। সে আরামের ঘুম দিচ্ছে। তার ভাড়ি নিশ্বাস আমার গলায় আছড়ে পড়ছে। বুকের মাঝে এক আজানা শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। হাতপাও কাপঁছে। আশ্চর্য উনি এখনো উঠছেনা কেন কে যানে। আমি এবার প্রচণ্ড অসস্থিতিতে ভুগছি।

তাই নিজের সব শক্তি দিয়ে তাকে ঠেলে উঠে বসে পড়লাম। আচমকা এমন ধাকা খেয়ে উঠে নিজেও উঠে বসেছে। আমি বিছানা থেকে নেমে লাইট জ্বালাতেই উনার লাল লাল চোখ দেখে ভয়ে চুপসে গেলাম। যে সাহস নিয়ে আমি তাকে ধাক্কা দিয়েছি তা এখন শূন্যের কোটায়। এবার সারা রুমের দিকে একবার চোখ বুলালাম বুঝতে পারলাম এটা আমারই রুম। কিন্তু উনি এখানে কেন বুঝলাম না। আমি তার দিকে এগিয়ে গিয়ে তাকাতেই উনি রাগী গলায় ফুঁসফুঁস করতে করতে বলে উঠে,

ওর সাথে যেন আর কথা বলতে না দেখি

কার সাথে?

কেন তুমি যানো না করার সাথে? আজ সারা দিন যার সাথে হিহি হুহা করেছ তার সাথে। আমি সাগরের কথা বলছি। ওর সাথে যাতে তোমাকে সেকেন্ড টাইম আর না দেখি।

আপনি যদি মালিহা আপুর সাথে জড়াজড়ি করতে পাররেন আমি কেন পারবো না। আর এটা আমার পার্সনাল ব্যাপার ভাইয়য়য়য়া আমার যার সাথে খুশি তার সাথে কথা বলবো। আর সাগর ভাইয়া তো ভালোই কত কিউট

জাস্ট শেট আপ আয়ু মাজাজ খারাপ করবে না আর কি বললে ভাইয়া আমি তোমার কোন জন্মের ভাই হে? ফাইজলামি কর? এগুলো বন্ধ কর। আর ওই সাগরের আশেপাশে যাতে তোমাকে না দেখি? মাইন্ড ইট।

সরি ভাইয়া মাইন্ডে রাখা যাবে না কিন্তু সাগর ভাইয়ার সাথে আপনার কিসের এত শত্রুতা বলবেন?

দেখ আয়ু আমাকে রাগাবে না। এমনেতেই মাথা রাগে ফেটে যাচ্ছে আর যদি একবার ভাইয়া টাইয়া ডাক তো আমি কি করব যানিনা আর আমি একবার বলেছি সাগর থেকে দূরে থাকবে মানে থাকবে। তা না হলে আমার ভয়ঙ্কর রূপ দেখবে বলে দিলাম। এখন ঘুমাও।

সরি ভায়া আমি আপনার কথা রাখতে পারমু না। আপনি হলেন আমার ভায়া আর আমার বাচ্চার মামা হিহি।

উনি রাগে লাল হয়ে গেছে ভাগাই অতি উত্তম। আগে থেকেই দরজা খুলে রেখেছি তাই দিলাম এক ভৌ দোড়।

পর্ব ১৭

সূর্যের লাল অভা যখন তোমার মুখে পড়েছে আর তোমার মুখ লাল টুকটুকে হয়েছে ঠিক তখনই এই চোখের দৃষ্টি কেড়েছ তুমিঠিক তখনই প্রথম কারো চোখের মায়ায় আটকা পড়েছি আমি। ভালোবাসি তোমাকে। এত কম সময়েও ভালোবাসা যায় তুমি হয়ত বিশ্বাস করবে না কিন্তু কি করব বল আমি তোমাকে ভালোবেসে ফেলেছি। বিয়ে করতে চাই। তুমি কি রাজি আছ?

আমি সপ্তম আকাশ বেধ করে জমিনে পরেছি মনে হয়। কি কয় এই পোলা। আরে আমার তো বিয়া পিচ্চি কালেই শেষ হয়েছে। এই পোলা কয় কি? এই জন্যেই আযমান ভাইয়া আমাকে বলেছে এর সাথে তেমন কথা বলতে না। কেন যে ডিঙ্গির মত কথা বলতে গেলাম এবার বুঝ ঠেলা। সিঁড়ি দিয়ে উপড় থেকে নামতেই দেখলাম সাগর ভাইয়া এসে হাজির সাথে তার বাবা মাকেও নিয়ে এসেছে। সেখানে আমার সম্পূর্ন পরিবারও আছে।

সাথে বাবা মা আর আযমান ভাইয়াও আছে। আমি নিচে নেমে আসতেই সাগর ভাইয়ার মা আমার হাত ধরে নিয়ে গিয়ে বলে উঠে, তার নাকি আমাকে খুব পছন্দ হয়েছে। আজব পছন্দের মানে কি? তখনো ভালো করে বুঝে উঠতে পারলাম না কিন্তু এখন তা বেশ ভালো করেই বুঝতে পারছি। সাগর ভাইয়ার এভাবে হাটুগেড়ে বসে হাতে আংটি নিয়ে বলার ধরনে বেশ বুঝতে পারছি। আমি আযমান ভাইয়ার দিকে করুন চোখে তাকিয়ে আছি। আর উনি মনের মাধুড়ি মিশিয়ে ফোন গুতাচ্ছে। আরে শালা আবুল তোর বউরে বিয়ের জন্যে টানা টানি কতাছে আর তুই মাধুড়ি মিশাইয়া ফোন গুতাচ্ছস।

তোরেত এই ফোনে চুবিয়েই মাড়বো। আমি আম্মুরদিকে তাকিয়ে দেখি সে এখনো শক্ট হয়ে দাড়িয়ে আছে। সবাই প্রায় অবাক কিন্তু সবার মাঝে দুইজনের চোখমুখ চকচক করছে খুশিতে। এক আমার নানাজান আর এক মালিহা আপু। আমার তো এবার কান্না পাছে এটা কোনো সাধারন কান্না না হাত পা ছড়িয়েছিটিয়ে চিৎকার চেঁচামিচি করে কাদঁতে ইচ্ছে করছে। উনার গলাটা চেপে ধরতে ইচ্ছে করছে। উনার বউ নিয়া টানা টানি চলছে আর উনি মোবাইলে আটকে আছে।

আমি তো মনে মনে রাগ আর অভিমানের কারনে রিংটা পোড়েই নি ভাবছি। মেজাজ টাই বিগড়ে আছে। আমি বিড়বিড় করে উনাকে অনেক বকে দিলাম। এবার একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে। তাকাতেই আযমান বেটা হাজির। আর সাগর ভাইয়ার হাত থেকে ঝড়ের গতিতে আংটিটা নিয়ে বলে উঠে,

তুই এবারও লেইট বেটা

মানে? (সাগর ভাইয়া অবাক হয়ে বলে উঠে)

মানে তুই এবার ভুল সময়ে এন্ট্রি নিয়েছস। এবার তো তুই আমার জানে হাত দিছিসরেরর। যাই হোক একদিক দিয়ে ভালোই করেছিস। আমি বরং আংটি বদলের কাজ আজই শেষ করে দি। তাহলে বিয়ে করতে বেশি টাইম লস হবে না। বিয়েটাও তাড়াতাড়ি করা হয়ে যাবে। আমার বউ নিয়ে যেভাবে টানাটানি হচ্ছে এতে বউকে দূরে রাখা কত ঝুঁকিপূর্ন বলা দুষ্কর। আর আমি অতও আহাম্মক স্বামী না তাই নিজের জিনিস নিজের কাছে রাখাই অতি উত্তম

সারগ ভাইয়া এবার বিস্ময় নিয়ে বলে উঠে,
আয়ানার সাথে কি তোর রিলেশন আছে?

আরে ওর সাথে ওর জন্মের পরে থেকেই রিলেশন যাকে বলে পবিএ রিলেশন আরে আমার পিচ্চি কালের পিচ্চি বউ ও। দেখি হাতটা দেও আমি পড়িয় দি। আর তুই সাগর তোর এই আংটিটার প্রাইজ বলে দিস। টাকা দিয়া দিমু। আবার বলবি আমি তোর টাকায় এনগেইজমেন্ট করেছি। তা বউ হাতটা দিবা নাকি এটাও আমি বাড়িয়ে নিব?

আমি এখন বিস্ময়ের চরম পর্যায়ে আছি। বড়বড় চোখ করে তাকিয়ে থাকা ছাড়া মনে হয়না আমার দাড়া কিছু হবে। উনি এবার হাটুগেড়ে বসে বলে উঠে,

প্রিয়তমা প্রিয়লি লতাতোমায় যে নামে বলি সবই কম কথা। বুকের পাঁজরটা মিসিং যথাতথা। তবে তা আর বেশিদিন হবে না। বুঝলে? অনেক তো হল এবার আমার হও। যদি অনেক আগে থেকেই তুমি আমার। তবুও হেই নানাজান আপনার হয়ত জানা নেই ও আমার বউ। তাইত মুখটা এত খুশিতে চকচক করেছে। তা আমি কি সাগরের থেকে খারাপ নাকি?

নানাজান মুচকি হেসেঁ সামনে এগিয়ে এসে বলে উঠে,
মোটেও না। তুমি তো বেস্ট।

উনি হেসেঁ উঠে আবার আমার দিকে তাকিয়ে বলে উঠে,
ভালোবাসা এক অপ্রকাশিত কথা। এটা প্রকাশ করার ভাষা থাকে না। আমি প্রকাশ করতেও চাই না। তবে বলতে চাই কতটা চাই তোমাকে আমি নিজের করে। তোমার জন্যে চাদঁ আনা প্রসিবল না হলেও এই কলিজায় আটকে রাখতে আমি সর্বদা প্রস্তুত। আমার এই এক পৃথিবীর তুমি ছাড়া অন্যকাউকেই জীবনসঙ্গী হিসেবে চাইনা। তুমি হলেই চলবে আমার।

উনি আমার হাতটা টেনে আংটি পরিয়ে দিল। আমি তো এখনো হা। চোখগুলো জ্বলজ্বল করছে। হতে পারে খুশিতেই অশ্রুরা সামিল হতে চাচ্ছে। উনি বলে উঠে,
ওই শালা সাগর তুই কি একটাই আংটি এনেছিস?

সাগর ভাইয়ার তো কাঁদোকাঁদো অবস্থা। তবুও নিজেকে সামলিয়ে পকেট থেকে আর একটা আংটি বেড় করে বলে উঠে,

নে এটা দিয়ে সম্পূর্ন কর তোর এনগেইজমেন্ট। শালা তুই সবসময়ের মত আজও হারিয়ে দিলি। কেন রে তোর কি আমি ছাড়া এই পৃথিবীতে আর কাউকেই চোখে পড়েনা? বল? বাটপার একটা। আয়ানা শুন এই ছেলে ভার্সিটি লাইফ থেকে আমার পিছনে হাত ধুয়ে পড়ে আছে।

প্রথমেত ফার্স্ট হওয়া নিয়ে তারপর গার্লফ্রেন্ড। শালার কুত্তা স্টাইলের কপাল তা নাহলে আমার গার্লফ্রেন্ড ওকে দেখার দুই দিন পড়ে এসে নেকা নেকা করে ডুলতে ডুলতে এসে বলে কিনা
শুন আমি না তোমার ওই বন্ধু আছেনা আযমান ওকে ভালোবেসে ফেলেছি। তাই তোমার সাথে ব্রেকাপ করতে চাই। শালি এতটুকুতেই খামত হয়নি আবার বলে কিনা আমার হয়ে একটু ওকে বলে দিবে।

মন চেয়েছে মেরে দি। কিন্তু শালি নিজে নিজেই সুইসাইড করে বসেছিল তাও আযমান বিবাহিত শুনে। আমি তো ভেবেছি এই শালা তো বাচ্চা কালেই বিয়ে করে ফেলেছে তাই এই বার আমার প্রথম দেখায় ভালোবাসা মনে হয় টিকে যাবে।

কিন্তু হারামিটা এবার বড় ভাবে জিতে গেল। আর আমি বলদ তারই বউরে বিয়া করতে নাচতে নাচতে হাজির হলাম। শালা এই জীবনে আর যাই করি তোর সাথে দেখা করমু না। দরকার হলে আমি বনবাস যাবো। তাও তোর সামনে পরমু না। পরে দেখা যাবে আমার বউও বলবে ওগো আমি তোমার বন্ধু আযমানের প্রেমে পড়েছি ওকেই বিয়ে করব। তুমি একটু কষ্ট করে ডিভোর্স দিয়ে দিবা। তখন হবে আর এক জ্বালা। এই ভাই রিং নে

সবাই মুখ টিপে হাসছে কিন্তু আমার না বড্ড কষ্ট লাগছে বেঁচারা সাগর ভাইয়া। তার দুঃখগুলোও সাগরের পানির মত বেশি বেশি তাইতো শেষই হচ্ছে না। আহারেআযমান ভাইয়া রিং এগিয়ে দিয়ে বলে উঠে,

পরিয়ে দেও। তা না হলে অবার কে এসে পড়ে বলা যায় না।

আমি উনাকে রিংটা পরিয়ে দিলাম। উনি এবার সবার উদ্দেশ্য ঘোষনা ভর্তা দিচ্ছে টাইপের করে বলে উঠে,

উপস্থিত সকলকে উদ্দেশ্য করে বলছি আমি আমার বউকে আবার বিয়ে করতে চাই কারো কি আপত্তি আছে? আর থাকলেও কিছু যায় আসে না।

সবাই একবেলা হেসেঁ উঠেছে আর লজ্জায় আমার মাথা কাটাঁ যায় টাইপের অবস্থা। উনি এবার নিজের বাবা মায়ের কাছে গিয়ে দাড়িয়ে বলে উঠে,

দেখ পরে বলবে ছেলে নিজের বিয়ে নিজে করে ফেলেছে। তাই বলছি আমি আয়ানা হায়াতকে বিয়ে করতে চাই তোমরা কি রাজি আছ? আর না থাকলেও সমস্যা নেই বুঝলা

দুজনে হেঁসে উনার দুই কান ধরে বলে উঠে,

অবশ্যই রাজি

রাত প্রায় ১২টা ছুঁই ছুঁই ঘুম আসছেনা। ঘুমেরা মনে হচ্ছে লুকুচুরি খেলছে। আমি কম কিসের তাই উঠে পড়েছি। আমি পা টিপে টিপে ছাদের হাওয়া খেতে সিঁড়ির দিকে যাচ্ছি। ছাদের দরজাটা খোলা। হাওয়া আসছে হুহু করে। শীতল হাওয়া। আমি লাস্ট সিঁড়িতে আসতেই কানে এল সাগর ভাইয়ার গলা

এবারো জিতে গেলি

জিতার কিছু নেই। আয়ুকে নিয়ে আমি কখন কোন খেলায় নামি নি ও আমার ছিল আছে ইনশাআল্লাহ্ থাকবে। ওকে নিয়ে আর যাই হোক হার জিত টাইপের প্রশ্নই উঠেনা।

তুই খুব লাকি ইয়ার। মেয়েটা সত্যই অতুলনীয় ভালো।

হুম। জানি। তোর কি কষ্ট হচ্ছে?

হুমরে অনেক। আমি বুঝতেও পারিনি এতটাও কাউকে মন থেকে চাইতে পারি। কেউ এতটাও আপন মনে হতে পারে। আর সবচাইতে বড় কথা এত কম সময়ে আমি কাউকে এভাবে ভালোবেসে ফেলব ভাবতে পারিনি। কিন্তু আজ যখন ওর হাত তোর হাতে দেখেছি তখন সত্যই ভালোবাসায় হারালে যে এত কষ্ট হয় এটা বুঝতে পেরেছি। গোলাপে যে কাটাঁও হয় এটা এত দিনে আজ টের পেয়েছি। কেমন যেন দম বন্ধ দম বন্ধ লাগছে।

মন চাচ্ছে ওকে তোর থেকে কেড়ে নিয়ে নি। ওকে নিজের করি। আর নিজের মনের জেলে চিরদিনের জন্যে বন্ধি করি। ভাই সত্যই আমি ওই একমুঠো মেয়ের প্রেমে না ভালোবাসায় পাগল হয়েছি। তোর সাথে হারা এটাই বেস্ট হার হল আমার। যা জীবনের সব ক্ষেএে মনে থাকবে। আচ্ছা তুই কি ওকে দিয়ে এবারের মত আমাকে জিতিয়ে দিবি প্লিজজজ। আমি সারা জীবন কৃতজ্ঞ থাকব। দিবি

আমি এবার চোকাট পেরিয়ে ছাঁদে পা রাখলাম। ছাদ জুড়ে চাঁদের আলোর ছড়াছড়ি। কি সুন্দর পরিবেশে। আযমান ভাইয়াকে চাঁদে আলোয় বেশ মায়াবি লাগছে। সে সাগর ভাইয়ার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আর সাগর ভাইয়া উৎসাহ ভড়া চোখে তার দিকে তাকিয়ে আছে। আযমান ভাইয়া এবার চাঁদের দিকে মুখ করে বলা শুরু করে

তুই ওকে ভালোবেসে ফেলেছস। আর আমাকে বলতে চাচ্ছিস আমি ওকে তোর করে দিতাম? আচ্ছা তুই ওকে কত দিন চিনিস এই তিন কি চারদিন তাইনা। এই তিন চারদিনে যদি তুই ওকে ভালোবেসে দম বন্ধ অবস্থা হয় তাহলে আমি যে কিনা ১৯টা বছর ওকে ভালোবেসেছি তার ওকে ছাড়া কি অবস্থা হবে বল ত? তুই যদি বলতে পারিস তবে আমার কলিজা তোকে দিয়ে দিব। যা বল।

সাগর ভাইয়া এবার চুপ করে আছে।

পারবি না বলতে। আরে ও নিজেইত বলতে পারবে না। ওকে ছাড়া তো আমি মারাই যাবো। ওতো অক্সিজেন ইয়ার। তুই ওর সাথে তিন~ চারদিন কথা বলেই ওর ভালোবাসায় নিজেকে হারিয়েছিস আর আমি যে কিনা ওর এত কাছে থেকেও ওর জন্যেই নিজেকে দুরে রেখেছি আমার কি হবে বল?

তুই তিন~ চারদিনই ওকে ভালোবেসে বিয়ে করতে চলে এলি আর আমি বিয়ে করে ১৭ বছর পরেও ওকে হারানোর ভয়ে ঘুমাতে পাড়িনা। ওর হাজবেন্ড কম বডিগার্ড বেশি থেকেছি। এই হাতে ওকে খাইয়েছি, ও কত কত কামড় দিয়েছে যানিস? আমি নিজে ওত তখন ছোট ছিলাম তবুও সেগুলো আমার কাছে ভালোই লাগতো।

যে ছেলে একটা বল পছন্দ হলে তা কিনার জন্যে চিৎকার চেঁচামিচি করে বাড়ি ঘর মাথায় নিত। সে নিজের টাকা জমিয়ে ওই মেয়েটার জন্যে চকলেট আইসক্রিম কিনেছে। আর সেই মেয়েটাকেই তোকে দিয়ে দিতে বলছিস। ওর দিকে কোন ছেলে খারাপ নজরে তাকালে তার অবস্থা কেমন হত যানিস তো। ও তুই এটা যানিস আমি ওই ছেলেটাকে মেড়েছি কিন্তু কেন তা যানিস না হ্যাঁ ওর জন্যেই মেরেছি। ওর জন্যেই তো আমি সব করতে পারি। আমার তো ও হলেই~চলবে আর তুইত ওকেই চাইছিস। তাই এটা ইম্পসিবল। সরি রে।

সাগর ভাইয়া কি বুঝে উনাকে যাপটে ধরে। তারপর আবার বলে উঠে,

তোর মত প্রেমিক ওওপসস সরি হাজবেন্ড হওয়া মশকিল। ৬বছরের প্রেমি বলে কথা। ভালো থাকিস আর ওকেও ভালো রাখিস। কিন্তু যাই করিনা কেন আমার বউকে তোর সামনে আনমু না যদি বিয়ে সাদি করি আরকি। তবে মনে হয়না করতে পারব।। (বলেই হেঁসে দিল)

দুজনেই হাসছে আমি একটু সাইডে চলে এসেছি সাগর ভাইয়ার চোখে পড়তে চাইনা। ওনি আরো কিছুক্ষণ কথা বলে চলে গেল। আমিও ধীর পায়ে যাওয়ার জন্যে পা বারাতেই টান পরল। কেউ একজন আমার হাত টেনে ধরেছে। এই কেউ যে উনি তা যানা হয়েগেছে। উনি হেচকা টান দিয়ে আমাকে দেওয়ালের সাথে চেপে আমার হাতগুলো নিজের দখলে নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। আমি একটু চোখমুখ খিঁচে বলে উঠি

সমস্যাটা কি এভাবে ধরে রেখেছন কেন?

ভালোবাসি তাই

পর্ব ১৮

সবার বিয়ে কেন্সেল। মানে সবার আগে আমাদের বিয়েটাই হবে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। আযমান ভাইয়ার ফারাফারিতে সবাই প্রায় বিরক্ত। তার একটাই কথা যত তাড়াতাড়ি অনুষ্ঠান সম্পূর্ণ করতে তা নাহলে সে এমনে আমাকে নিয়ে যাবে। সে নাকি রিক্স নিতে চায় না। আশ্চর্য এখানে রিক্সের কি আছে? আমি তো তারই বউ। যানি না তার এত রিক্স কোথা থেকে আসে। কথাগুলো ভাবছি আর সিঁড়ি দিয়ে নামছি। ওও আমাদের নানু বাড়ি থাকার সময় ফুঁড়িয়েছে।

আমরা ঢাকা বেক করছি আজ। এই সবও উনার ক্রিয়া ধাড়া। উনি সবই তারাতাড়ি করতে চায়। নানাজান আর নানুজানও আমাদের সাথে যাচ্ছে। সবকিছু এত তারাতাড়ি হচ্ছে সব আমার মাথার উপড় দিয়ে যাচ্ছে। গাড়িতে আযমান ভাইয়ার পাশে বসেছি। যাওয়ার সময় আর লঞ্চে যাওয়া হল না। আমি গম্ভীর হয়ে বসে আছি দেখে উনি বলে উঠে,
~ তোমার কি মন খারাপ?

আমি তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নিলাম। কত সখ ছিল আমি অনেক দিন থাকব। আর উনি সব কিছুতে পানি ফেলে বিয়ে করার জন্যে লাফালাফি করছে। বিরক্তকর। আমি মুখ ফুলিয়ে জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে আছি। উনি আর একটু ঘেঁষে বলে উঠে,
~ কি হল আয়ুজান কথা বলছনা কেন?

~ আমার ইচ্ছে করছে না।। (জানালার দিকে তাকিয়ে)
~ এটা কেমন কথা ইচ্ছে করছেনা? এদিকে তাকাও। আচ্ছা তুমি আরো থাকতে চেয়েছ? যাও আমরা আবার আসব। চিল বেবী চিল
~ এত চিল আসছে না আমার। বিয়েটা কি আপনাকেই করতে হবে? (উনার দিকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টি দিয়ে বলে উঠলাম)

উনি অবাক চোখে আমাকে দেখছে। আমার সেদিকে তেমন পাত্তা নেই এই আজগোবি লোকটাকে বিয়ে করে এর সাথে থাকতে হবে ভাবা যায়? উনি এবার গম্ভীর হয়ে বলে উঠে,
~ তাহলে তুমি কি করতে চাও? আমাকে বিয়ে করবে না?
~ না। (সোজা হয়ে বলে উঠলাম)

মুহূর্তেই উনি চোয়াল শক্ত করে বলে উঠে,
~ তাহলে কি আমি মালিহাকে বিয়ে করে নিব?

শালা কয় কি? রাগতো আগে থেকে আছে তার মধ্যে এই লোকের আজাইরা কথা। আমি রেগে উনার কলার ধরে বলে উঠে,
~ করামু তোরে বিয়া। জীবনের তরে। এমন বিয়া করামু তখন বুজবি বিয়া কি?

উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে হয় ত এমন কথা আমার কাছ থেকে আসা করে নি। তাতে কি আমিও কি আসা করেছি নাকি উনি এমন কথা বলবে? আজব! আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে উনার কলার ছাড়তে যাবো উনি হাত টেনে কোমড় জড়িয়ে ফিসফিসে বলে উঠে,
~ বিয়েত করবই তাও তোমাকেই আয়ুজান। এবার আমিও দেখি তুমি কেমন বিয়ে করাও আমায়। যেহেতু বলেছ আমায় বিয়ে করাবে।

ঢাকায় বেক করেছি একদিন হয়েগেছে। এই একদিনে উনাকে আর দেখলাম। সেও আসলনা। আজ আমরা তাদের বাসায় যাবো। বাবা মা এসে ইনভাইট করে গেছে। তাই আমরা সবাই মিলে তাদের বাসায় যাওয়ার জন্যে তৈরি হচ্ছি। আম্মু চায় আমি শাড়ি পরি। যদিও ইচ্ছে নেই।

শাড়ি সামলানো একটা মহান ব্যাপার। এটা যদি ছেলেদের সামলাতে দেওয়া হত তবে তাদেরত মনে হয় জীবনটাই শেষ হয়ে যেত। আমি শাড়ি পড়ব না বলে ঠিক করেছি কিন্তু আম্মু মানল না। তাই একটা নীল জামদানি গায়ে জড়িয়েছি। আম্মু মুখে গাম্ভীর্য রেখে বলে উঠে,
~ খারাপ না। মাসআল্লাহ্ সুন্দর লাগছে।

~ সুন্দর লাগছে নাকি ছাই লাগছে আমার থেকে জিগ্যেস কর বুঝলি তা না হলে তো তো বাচ্চা জামাই তোরে পেত্নী ভেবেই দৌড়ে পালাবে।

ভাইয়া পিছন থেকে বলে উঠে, ছে। রাগী চোখে তাকিয়ে বলে উঠি
~ পেত্নী হবে তোমার বউ। আর আম্মু তোমার ছেলেত কম বড় হয়নি আমার তো মনে হয় ও বুড়া হয়েগেছে। কয়দিন পরে দেখবে ওর জন্যে বিয়ে বাজারে পাত্রীই নেই। যদিও আমাদের দেশে বিসিএস ক্যাডারদের সাথে সাদা চামড়ার বিয়ে হয় তবুও তুমি বউ পাবে না ভাইয়া দেখে নিয়।

~ আমার বউ নিয়ে চিন্তা ছাড় আর নিজের জামায় নিয়া ভাব। বুঝলি

বাড়িতে ডুকেই এদিক ওদিক তাকালাম কিন্তু আশ্চর্য উনাকে খুঁজেই পেলাম না। তেমন কোন মেহমান নেই। আমরা আর উনাদের কিছু আত্নিয়। বাবা মারা আম্মু আব্বুর সাথে স্পেশাল কথা বলবে তাই আমাকে তাদের সঙ্গ ত্যাগ করতে হল। আমি চারপাশে শুধু উনাকেই খুঁজে বেড়ালাম। লাস্টে আর খুঁজে না পেয়ে ছাঁদে যাওয়ার জন্যে হাটাঁ দিলাম। তখনই কাজের মেয়ে রূপালীর সাথে দেখা। একে নাকি নতুন রাখা হয়েছে। আমাকে দেখেই একবিকট চিৎকার দিয়ে বলে উঠে,
~ ওও মা ভাবি গো আপনি তো ছবির চাইতেও বহুত সুন্দর।

আমি অবাক হয়ে বললাম
~ তুমি আমাকে চিন?
~ আরে কি যে কন আপনারে না চিনার কি আছে? ভাইজানের রুমে গেলেই আপনারে চিনা যায়। উনারে যখন বলছিলাম আপনি সুন্দর উনি কিডা কইছে যানেন?

~ না বললে জানবো কিভাবে?
~ আপনি নাকি বাস্তবে আরো বেশি সুন্দর। (বলে হাঁসি দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে চলেগেল। আমি কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে সিঁড়ি বেয়ে উঠা ধরলাম। আজ অনেক বছর পড়ে তাদের বাসায় আসা। কিন্তু আমার জীবনে আমি কখন উনার রুমে ডুকতে পারিনি। কি আছে ওই রুমে কে যানে? মনে তো হয় খাজানা আছে। তা না হলে আমাকে কেন ডুকতে দেয় না?

উনার রুমের সামনে এসেই বুঝতে পাড়লাম দরজা আটকানো হয়নি। ভিড়িয়ে রেখেছে। আমারত মনে হয় উনি রুমেই নাই। তার এই রুমে ডুকার প্রবল আগ্রহ আছে আমার তাই পা টিপে টিপে ভিতরে ডুকতেই ঘুটঘুটে অন্ধকারের সাথে আলাপ। চারিদিক এত অন্ধকার যে কিছুই দেখা যাচ্ছে না। আমি চারপাশে লাইটের সুইচ খুঁজে চলেছি। তাদের বাসা আমার কাছে পূর্ব পরিচিত হলেও তার রুমটা নতুন। অনেক খুঁজে লাইটের সুইচ পাওয়া গেল।

লাইট জ্বালাতেই আমি অবাক হয়ে রুম দেখছি। সব কি সুন্দর গোছানো। কাঁচের গ্লাসে তৈরি সব। আলমারির কাঁচের ভিতর দিয়ে উনার জামা কাপড় দেখা যাচ্ছে। সাথে মেয়েদের জামা কাপড়ও। আজব উনিকি মেয়েদের ড্রেসস পড়ে নাকি? আমি এবার সামনে তাকিয়ে আরো অবাক হলাম। বিছানার পিছনে এক বিশাল ছবি। একটা ছোট ছেলে লাল পাঞ্জাবি পড়ে লাল টুপি পড়ে বসে আছে আর তার কোলে লাল জামা পড়া একটা বাচ্চা মেয়ে। কি কিউট ছবিআমি কিছুক্ষণ পর্যবেক্ষণ করে বুঝতে পাড়লাম এটা আমার আর উনার ছবি। এমন আরো অনেক ছবি আছে।

কোনটাতে আমি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদছি আর উনি কান্না থামানোর চেস্টায় আছে। এই সব ছবিকে ছাড়িয়ে সুন্দর যের চূড়ায় আছে হসপিটালে একটা ছবি। উনি একটা তোয়ালে পেছানো বাচ্চাকে কোলে নিয়ে তার কপালে চুমু খাচ্ছে। ছবিটা দেখেই আমার চোখ দিয়ে অনায়াসে কিছু পানি গড়িয়ে পরছে। কি সুন্দর করে নিজের সাথে জড়িয়ে রেখেছে। ইশশ্ আমি তো ফিদাআর সেদিনের শাড়ি পড়া ছবিও আছে।

এত এত ছবি কখন তুলেন বুঝতেই পারছিনা? বেড টেবিলে আমার একটা ঘুমন্ত ছবি আছে উনাকে জড়িয়ে ঘুমিয়ে আছি। এটাত সেই দিনের যে দিন বৃষ্টিতে ভিজেঁ আইসক্রিম খেয়েছি। এই ছবি কখন তুলেছে? সারা রুমে সাদার ছড়াছড়ি। বিছানা থেকে শুরু করে বুকশেলফও সাদা। রুমের একসাইডে কিছু বিল্ডিং এর ডিজাইনের ছবি আঁকা আছে। আমি ঘুড়ে ঘুড়ে সব দেখছি। হুট করে ওয়াসরুমের দরজা খোলার সাউন্ডে আমি সে দিকে তাকিয়েই এক চিৎকার উনি শুধু একটা টাউজার পড়ে দাড়িয়ে আছে। তার শরীর বেয়ে এখনো পানি ঝড়ছে। মনে হয় শাওয়ার নিয়েছে।

খোলা বুকে বিন্ধু বিন্ধু পানির ছিটাছিটি। চুলগুলো দিয়েও পানি টপটপ করে পড়ছে। সামনের চুলগুলো লেপ্টে আছে কপালে। গলায় সাদা তোয়ালে ঝুলানো। আমার কানে হাত দিয়ে চিৎকার দেওয়া দেখে উনি ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। আমি এবার সামনে থেকে পিছন ফিড়ে দৌড় লাগামু বলে পিপারেশন নিচ্ছি। যেই না দৌড়টা লাগাবো উনি খপ করে হাত ধরে তার সামনে ঘুড়িয়ে বলে উঠে,
~ যাচ্ছটা কোথায়? প্রথম বার আমার রুমে এসেছ একটু তো খাতিল দাড়ি করাই লাগে। তাই না বউ?

উনার এমন সাধারন কথাও আমার কাছে কেমন যেন লাগছে। লজ্জায় আমি চোখবুজে দাঁড়িয়ে আছি। প্রথম কোন পুুরুষকে এভাবে খালি গায়ে দেখে তো আমার হৃদস্পন্দনই বন্ধ হয়ে গেছে। বুকের ভিতর হার্টবিড ধাকাধাক সাউন্ড করছে। আমি জোড়ে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে চোখ বুজেই বলে উঠি
~ আমি বরং যাই আপনি ড্রেস পরে আসেন

~ তুমি বলতে চাও আমি এখন ড্রেস ছাড়া দাঁড়িয়ে আছি? এটা কিভাবে বলতে পারলে বলত? চোখ খুলে দেখ আমি কিন্তু টাউজার পরা অবস্থায় আছি বুঝলে? এমন ভাবে বলছ যেন কিছুই পড়ি নি? বাই দ্যা ওয়ে তোমাকে নীল শাড়িতে নীল পরী লাগছে।

কথাটা শুনেই আমি হকচোটিয়ে গেলাম। চোখ খুলে হাত ছাড়িয়ে পালানোর জায়গা খুঁজতে লাগলাম। এখন মনে হচ্ছে পালাতে পারলেই বাঁচি। কোন দুঃখের যে উনার রুম পর্যবেক্ষণে এসেছি আল্লাহ মালুম উনি এবার আমার আর একটু কাছে এসে কোমড় জড়িয়ে নিজের দৃশ্যমান বুকের সাথে লেপ্টে দিয়েছে। আমি নিজের দু হাত তার বুকে রাখতেই কেমন যানি শিহরণ দিয়ে যাচ্ছে গায়ে।

দম বন্ধ হয়ে আসছে। শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে। আমি এবার একটু চেঁচিয়ে বলে উঠি
~ এই এই দূরে যান আমি নিঃশ্বাস নিতে পারছিনা। দম আটকে আসছে। আমারত মনে হয় আমি দম আটকেই মারা যাবো। প্লিজজজ এত তাড়াতাড়ি মরতে চাইনা। এখনো বিয়েও হয় নি বাচ্চাও হয় নাই ওদের বিয়ে দেখাও হল না আর নাতিনাতনি ওদের কি হবে বলেন কে গল্প শুনাবে। ছাড়েন প্লিজজজ

আমি এবার চোখ খুলে দেখি উনার মুখ হালকা হা করে রেখেছে। আমি বুঝতে পেরেছি উনি অবাক হয়েছে। আর এই সুযোগের আমি সৎ ব্যবহার করে এক ঝাটকায় উনার থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে দিলাম এক দৌড়। আর একটুর জন্যে জীবন যায় যায় অবস্থা। রুম থেকে বাহিরে আসতেই রূপালির সাথে বেসামাল ভাবে ধাক্কা খেলামওকে সরি বলতেই সে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
~ ভাবি জান আপনার কিতা হয়ছে? ভাইজান কি গলা টিপ্পা ধরছে নাকি?

ওর এমন আজগোবি কথায় আমি ভ্রুকুঁচকে তাকাতেই সে জিহ্বায় কামড় দিয়ে বলে উঠে,
~ সারি ভাবিজানআমার মনে হইল আর কি আপনে হাপাইতে ছেন ত তাই। আইচ্ছা আপনার কি হাপানির রোগ আছে?
~ প্রথমত ওটা সারি না সরি আর কেউ আমাকে গলাও টিপে ধরে নি আর আমার হাপাঁনিও নেই।

বলে হাঁটা দিলাম। কি অদ্ভুত সব কথা।

খাওয়াদাওয়া শেষে আমি আবার উনার রুমের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলাম ঠিক তখনই কেউ হঠাৎ কোলে তুলে নিল আমি তো ভয়ে চিৎকার করতে যাবো। তখনই কেউ কানের কাছে ফিসফিসিয়ে বলে উঠে,
~ একদম নেকা মেয়েদের মত চিৎকার করবে না। আমাকে এভাবে ধোকা দিয়ে রুম থেকে আসার শাস্তি কিন্তু নিচে ধাড়াম করে ফেলে দিয়ে দেখিয়ে দিব। চুপচাপ থাক

উনি সিঁড়ি বেয়ে ছাঁদে উঠছে। সম্পূর্ণ ছাঁদ চাঁদের আলোয় আলোকিত হয়ে আছে। উনি আমাকে নিয়ে সোজা সুইমিংপুলের পাশে বসিয়ে দিয়ে নিজে আমার কোলে মাথা দিয়ে কোমড় জড়িয়ে শুয়ে পড়েছে। তার এমন ছোঁয়ায় সারা শরীরে কাঁপনি দিচ্ছে। আমি চাদঁ দেখছি আর পানিতে পা ভিজেঁ বসে আছি। শাড়িটা হাটু পর্যন্ত ভিজেঁ গেছে। মৃদু বাতাস হচ্ছে। শরীরে দোল খেলনো টাইপের আর উনি মনের সুখে ঘুম দিচ্ছে। এত কম সময়েও কারো এত গভীর ঘুম হতে পারে এটা আমার জানা ছিলনা। উনাকে না দেখলেত বিশ্বাসই করতাম না

পর্ব ১৯

বিছানায় উপুত হয়ে শুয়ে আছি। পশ্চিমের জানালা দিয়ে কড়া রোদ আসছে। এত রোদের মাঝেও শীতলা বিরাজমান। হুহু করে যে বাতাস বইছে তার কারনেই এই শীতলতা। কটা বাজে খবর নেই আমার। মাথাটা কাত করে দেখতেই ঘড়িতে ১টা ছুঁই ছুই অবস্থা। কিন্তু কেউ রুমে এলনা। না আম্মু না ভাইয়া। আব্বুর অবশ্য আমার ঘুম নিয়ে তেমন মাথা ব্যাথা নেই। কিন্তু আম্মু আর ভাইয়ার সব সময় আমার ঘুম নিয়ে মহা সমস্যা। যাদের এত এত সমস্যা তাদের দেখতে না পেয়ে অবাক হওয়াটাই স্বাভাবিক। ভাড়ি কিছু পিঠে পড়ায় আমার ভাবনার ছেদ ঘটল।

আমি ত অবাক হয়ে ভাবছি এত ভাড়ি জিনিসটা কি হতে পারে। আমি নড়েচড়ে উঠতেই দম যেন বন্ধ হয়ে যায় যায়। আমি অনেক কষ্টে ওপাশ ফিড়ে নিজেকে এই মহান জিনিসের ভার থেকে রক্ষা করে জোড়ে জোড়ে নিঃশ্বাস নিচ্ছি। চোখ তুলে তাকাতেই দেখলাম দিল দাঁত কেলিয়ে পা গুটিয়ে বিছানায় বসে আছে। আমি চরম বিরক্তি সাথে অসহনীয় রাগ নিয়ে বলে উঠলাম,
~ এই তোর সমস্যা কি? এভাবে গায়ের উপড় ধাড়াম করে পড়ার কোন মানে হয়? কি ভারি তুই ইয়ার। আমার কোমড় গেল বলে। আহ্

দিল এবার হাসি বন্ধ করে বলে উঠে,
~ বিয়ের কনে যদি এমন হাতির মত ঘুমায় তাহলে তাদের জাগানোর স্টাইলটাও হাতির মত হওয়া চাইঠিক করেছি যা করেছি। হুহ
~ বিয়ের কনে মানে কি? আর কার বিয়ে? কোথাকার বিয়ে? কেমন বিয়ে? পাগল নাকি?

দিল এবার অবাক হয়ে বলে উঠে,
~ তোর অবস্থাটা কি জানোস? যার বিয়ে তার খবর নাই পাড়াপড়শির ঘুম নাই টাইপের। আমার তো মনে হয় বাসর ঘরে তুই আযমান ভাইয়ারে জিগ্যেস করবি কার বাসর? কিসের বাসর? কেমন বাসর? আবাল একটা। তোর জন্যে আমি কাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি তোর বিয়েতে কি পড়ব ভাবতে ভাবতে আর তুই কিনা আরামের ঘুম দিচ্ছিস। আজব মাইরি তুই।

দিলের এমন কথা শুনে আমি চট করে বিছানা ছেড়ে উঠে দাঁড়ালাম। রুম ত্যাগ করে বাহিরে আসতেই আমি হতবম্ভ বিস্ময়ত সাথে আবার শিহরিত সারা বাড়ি সাজানো হয়ে গেছে। ভাইয়া কিছু ফুল আর পর্দা একটা স্টাফকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। আমি প্রচণ্ড আগ্রহের সাথে ভাইয়ার সামনে গিয়ে বলে উঠি
~ এত সাজ কেন ভাইয়া?
~ আমার বিয়া তাই?

আমি বিরক্তি নিয়ে চোখ কুঁচকে বলে উঠি
~ মজা করবি না ভাইয়া? বল না এগুলো কেন হচ্ছে?
~ আজ তোর গায়ে হলুদ কাল তোর বিয়ে তাই হচ্ছে। আর তুই এদিক ওদিক ঘুড়াঘুড়ি না করে যা রুমে যা।

এই প্রথম ভাইয়ার সাথে তর্ক না করে আমি আবার আমার রুমে হাটা দিলাম। সত্যি আমার বিয়ে কাল? কিন্তু কই তেমন কিছু ফেল হচ্ছে না কেন? শুনেছি বিয়ের আগে মেয়েদের অন্য রকম অনুভতি হয় কিন্তু আমার হচ্ছে না কেন?

কে যানে। রুমে এসে পা ঝুলিয়ে দিলবারের পাশে বসতেই সে চেঁচিয়ে বলে উঠে,
~ যা তুই শাওয়ার নে? আর তাড়াতাড়ি কর এখন থেকেই রেডি হতে হবে। সব জিনিস পাঠিয়ে দিয়েছে আযমান ভাইয়া।
~ এত তাড়া কিসের অনেক সময় আছে। বিরক্ত করিস নাত।

কে শুনে কার কথা এই মেয়ে শুনবে আমার কথা তাহলেত এই পৃথিবীর যে কি হবে। দিল ধাক্কা দিয়ে ওয়াসরুম ডুকিয়ে দিলআমিও শাওয়ার অন করে নিচে দাড়িয়ে ভাবছি সত্যিই আমার আর উনার বিয়ে কাল?

শাওয়ার নিয়ে আয়নার সামনে চুল শুকানোর চেষ্টা করছি। হঠাৎ ফোনের শব্দে বিছানার দিকে তাকিয়ে অবাক হলাম। দিল হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে। মেয়েটা যে সত্যিই ঘুমায় নি তার প্রমান হল এটি। ফোন কানে দিতেই উনার কন্ঠ ভেসে এসেছে কানে
~ তোমাকে প্রথম হলুদ আমি লাগাবো। মনে থাকে যেন। আর তুমি কিন্তু আটা ময়দা মাখবেনা। মানে মেকাপ করবেনা। তোমাকে এমনেই সুন্দর লাগে। আর সব ফুলের গহনা হবে। ঠিক আছে।
~ কেন?
~ এত কেনর জবাব দিতে পারবো না। আমি এখন প্লানিং করছি কিভাবে তোমার কাছে আসা যায়। তাই এখন রাখি

আমি হা করে আছি এই লোক যে কত আজগোবি তা আমার জানা হয়ে গেছে। কিন্তু আমাদের বাড়ি আসতে উনার এত কিসের প্লানিং করতে হচ্ছে কে যানে। ঠোঁট উল্টে একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে আবার চুল শুকাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লাম।

কাঁচা হলুদ শাড়ি পড়ানো হয়েছে আমাকে। গায়ে সাদা ফুলের গহনা। হাত ভর্তি কাঁচের চুড়ির ঝমঝম শব্দে মোহনিয় হচ্ছি আমি। চুড়ির ভাঁজে সাদা ফুলের তৈরি মালা। আর সেই মালার সাথে জড়িয়ে আছে বিশাল ঝুমকা। একটু নড়তেই ঝুমুড়ঝুমড় শব্দ করছে। বাড়িময় আলোর ছড়াছড়ি। মেহমানরাও চলে এসেছে। বাড়িতে একটা হৈচৈ পরে গেছে।

নানাজান আর নানুজানের সাথেও সবাই চলে এসেছে। ভাইয়ারা এসে আমার সাথে কথা বলে গেছে। এক কথায় সবাই হৈচৈ করে আনন্দ করছে। আমি এখন ড্রেসিন টেবিলের সামনে বসে আছি। সাজ তেমন দেওয়া হল না। আমিই দিতে নিষেধ করেছি উনে বলেছে বলে কথা। দিল অনেক আগে গেছে কি একটা কাজে কিন্তু তার এখনো আসার নাম নেই। আমি ভাবছি উনি কি আসবে? মনে হয় না। অনেক রাত হয়েগেছে। এত সময়ে আসার হলে চলে আসত কিন্তু যেহেতু আসলনা তবে মনে হয় আর আসবেনা।

আমি উঠে দরজার পাশ দিয়ে উঁকি দিলাম। সবাইকে ব্যস্ত দেখা যাচ্ছে। সবচাইতে ব্যস্ত ভাইয়া। সে তার সর্বচ্চ উজার করে কাজ করছে। বড় ভাইয়েরা বুঝি এমনই হয়। হঠাৎ কেউ মুখে হাত দিয়ে চেপে টেনে এনে একহাতে দরজা লাগিয়ে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। আমি গোলগোল চোখে তাকিয়ে দেখি উনি দাড়িয়ে আছে। ঠোঁটে তার মিষ্টি হাসি। গায়ে সাদা পাঞ্জাবী। আমি ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছি। উনি হাত সরিয়ে ঠোঁট প্রশারিত করে বলে উঠে,
~ কি বলে ছিলাম? আমিই আগে হলুদ লাগাবো। তাই হলুদ লাগাতে এসেছি।
~ কিভাবে? মানে কিভাবে এসেছেন?
~ কেন? দেয়াল টপকিয়ে বারান্দা দিয়ে এসেছি।
~ এই আপনার লাগে নিত? কোথাও কেটেঁ ফেলেন নিত? আর এত কষ্টে করার কি আছে বুঝলাম না। দরজা দিয়ে আসলেইত হত। আজব লোক তো আপনি?
~ হত না। আমার এখানে আসা নিষেধ বুঝলে আয়ু জান। সব আমার আজাইরা শালিকার কাছ। যাই হোক। তোমাকে এখন নিতে আসবে আর আমাকেও যেতে হবে।
~ ত হলুদ কথায়?

উনি কিছুদূর হেঁটে হাতের পিছনে কি যেন নিয়ে সামনে এসে দাঁড়ালেন। তারপর হাত বাড়িয়ে দুগালে দুপাশে হলুদ মাখা হাত দিয়ে হলুদ লাগিয়ে দিলেন। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে বলে উঠি
~ আপনার হলুদ হবে না?
~ কে বলেছে হবে না? এখনই হবে। ওয়েট এন্ড সি

বলেই মাথার পিছনে হাত গুঁজে আমাকে তার দিকে ঝুকিয়ে একবার ডান গালের সাথে নিজের বাম গাল ঘোঁষলেন আবার বাম গালের সাথে নিজের ডান গাল ঘোঁষলেন। আমি শক্ট হয়ে দাঁড়িয়ে আছি। আমাকে দেখলে যে কেউ বলে উঠবে, এস্টেচুর অপ লিভার্টি। উনি একবার আমার দিকে তাকিয়ে টপ করে কপালে একটা চুমু একে কানের কাছে এসে ফিসফিসে বলে উঠে,
~ কাল থেকে তুমি আমার কাছে থাকবে। সারা জীবনের জন্যে নিয়ে যেতে আসবো।

কানের কাছে একটা চুমু খেয়ে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে উঠে,
~ আমার চাঁদে যাতে কারো নজর না লাগে।

বলেই হেঁটে বারান্দা দিয়ে লাফিয়ে কিভাবে কিভাবে নিচে নেমে গেল আমি এখন হা করে আছি। উনি নামার সময় মনে হচ্ছিল আমার প্রানটা যায় যায়। আমি একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দরজা খুলতেই দিল সহ আরো কিছু মেয়ে ভিতরে ডুকে পরে। আর বলতে থাকে
~ চল তোকে নিয়ে যাই। সবাই বলেছে তোকে নিয়ে যেতে।
বলেই আমার মুখের দিকে তাকিয়ে দিল তো মহা অবাক সে প্রায় চেঁচিয়ে বলে উঠে,
~ অনুষ্ঠান শুরুই হল না আর তোর হলুদ হয়ে গেল?

আমি মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছি। কি বলব বুঝতে পারছিনা। ও আবার বলে উঠে,
~ এই আয়ু তোর দুগাল ভর্তি হলুদ এল কোথা থেকে? এই সত্যি কথা বলত? তুই হলুদ পেলি কথায়? আর এই হলুদের রং তো ভিন্ন এটা আমাদের হলুদ না। কে এসেছিল রুমে বলত? দরজা লাগিয়ে কি করছিলি?
~ এই তুই বেশি প্রশ্ন করছিস? দেখ ভাইয়া চেঁচাচ্ছে যাওয়া উচিত। তুই ত আমাকে নিতে এসেছিস না? তাহলে দাড়িয়ে আছিস কেন চল।

হলুদ শেষ করে রুমে এসে সোজা ওয়াসরুমে ডুকে গেলাম। হলুদ দিয়ে সারা শরীর মাখা মাখা হয়ে আছে। এই হলুদ অনুষ্ঠানে সবচাইতে মহান প্রশ্ন হলুদের অনুষ্ঠানের আগে আমার মুখে হলুদ কোথা থেকে এসেছে? যদিওএই মহান প্রশ্নের কোন উত্তর আমার জানা নেই তবুও কত কিছু দিয়ে কথা ডাকার চেষ্টা করেছি। কিন্তু সর্বশেষ দিলবার ডোল পিটিয়ে বলে দিয়েছে আযমান ভাইয়া আয়ানার গাল হলুদে রাঙ্গিয়েছে। আব্বু আম্মু বাব মা সবার সামনে লজ্জাই আমার অবস্থা খারাপ হয়ে গেছে।

ওয়াসরুম থেকে লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে বারান্দা দাঁড়ালাম। আকাশ ভর্তি তারা। আর তাদের কোন ঘেঁষে একটা মাএ চাঁদের অবস্থান। মাঝে মাঝে মেঘেদের অনাগোনা। মনের মাঝেও এমন হাজার মেঘের অনাগোনা হচ্ছে। একদিকে যেমন প্রাপ্তি অন্যদিকে প্রিয় জনদের ছেড়ে যাওয়ার কষ্ট। বিয়ে মানে একটা মেয়ের নতুন পরিবেশের সাথেই শুধু আলাপ হওয়া না। পুরানো পরিবেশ থেকে নতুন পরিবেশে মানিয়ে নেওয়াও। মেয়েদের অবস্থাটা সত্যই খুব করুন। উনি তো আমার ছোট থেকেই পরিচিত কিন্তু যাদের সাথে একদম অপরিচিত ব্যক্তির বিয়ে হয় তাদের অবস্থা হয়ত আরো করুন।

আম্মু আব্বু ভাইয়া সকলকে খুব মনে পড়ছে। তাদের ছাড়া একা কোথাও থাকা হয়নি। এখন কিভাবে থাকব ভাবছি। মাথায় কারো হাতের কোমল স্পর্শে পাশে তাকিয়ে দেখি আব্বু। আর অপর পাশে আম্মু আর ভাইয়া। আব্বু আদুরে গালায় বলে উঠে,
~ কি হল আমার প্রন্সেসের? এখনো জেগে আছ কেন? রাত অনেক হয়েছে। না গেলে ত কাল শরীর খারাপ করবে। ঘুমাও চল

আমি আর কথা বলতে পারলাম না। ঝাঁপিয়ে পড়ে আব্বুকে জড়িয়ে ধরে গগন কাঁপানো কান্নায় ভেঙে পড়েছি। সাথে সাথে আম্মু আর ভাইয়াও জড়িয়ে নিয়েছে। সবাই কাঁদছে। কিন্তু নিঃশব্দে। যাতে আমি বুঝতে না পরি। ভাইয়া বলেই চলেছে
~ কাঁদিস না। এত কান্নার কি আছে বলত? তোকে বিয়ে দিচ্ছি বিক্রি করে দিচ্ছি না। তাই কান্না থামা। কথায় কথায় ভেবলাকান্তের মত ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদা ছাড়া তোর আর কোন কাজ নেই না। সব সময় কান্না।

কাঁদুনি একটা। আব্বু দেখিও একদিনও ও বাড়িতে থাকবেন আবার কাঁদতে কাঁদতে চলে আসবে। দেখ বইন কান্নার জন্যে বিদায়ের টাইম ত আছে তবে এখন কেন কাঁদছিস। তখন আবার চোখে পানি থাকবেনা শুধু টিশু দিয়ে এক্টিন করতে হবে। যদিও তোর চোখে এক সাগর পানি আছে তবুও আমার মনে হচ্ছে সে টাইমে পানির অভাব পরতে পারে।

আমি কান্নাজড়িত চোখে একবার তার দিকে তাকালাম। যার নিজের চোখে পানির ছড়াছড়ি সে কিনা বলছে আমাকে চুপ করতে। আমি আবার একবার আব্বুকে চেঁচিয়ে বলে উঠলাম,
~ আব্বু কিছু বল তোমার ছেলেকে।

আব্বুও সাথে সাথে আজিম বলে চেঁচিয়ে উঠে। সাথে সাথে ভাইয়া আমাকে জড়িয়ে চিৎকার করে কেঁদে উঠে। আমি প্রচণ্ড রূপে অবাক হয়ে নিজের কান্না ভুলে তাকে জড়িয়ে রেখেছি। আমি কখনো ভাবতেও পারিনি ভাইয়ার মত শক্ত মনের ছেলে এভাবে কান্নাও করতে পারে। ভাইয়েদের ভালোবাসা আসলে এটাই। একটা মেয়ে মনে হয় নিজের আপন জনের ভালোবাসার গভীরতা তার বিয়ের সময় বুঝতে পারে। আমারও তাই মনে হচ্ছে

কান্না করে গলা ভেঙে গেছে। আমরা সবাই আজ এক ঘরে ঘুমাচ্ছি। আমি আম্মুর কোলে মাথা দিয়ে আর আব্বু, ভাইয়া দুজনের কোলে আমার দুহাত। মাথাটা প্রচণ্ড ব্যাথা হয়ে আছে। ভার ভার লাগছে। কাঁদলে আসলেই ঘুম আসে তাড়াতাড়ি। আমারো এখন প্রচণ্ড ঘুম পাচ্ছে। রাজ্যের ঘুম যাকে বলে আর কি।

পর্ব ২০

ঘনা লাল লেহেঙ্গায় আমি মুড়িয়ে আছি। সাথে সবুজ ডাইমন্ডের জুয়েলারি। সবই উনার পছন্দের জিনিস। লাল দোঁপাট্টা মাথা জড়িয়ে মুখ ডেকে দেওয়া হয়েছে। চোখে কাজল আর হালকা মেকাপে সাজানো হয়েছে আমাকে। হাত ভর্তি চুড়ি। যাদের মাঝে বিশাল ঝুমকা ঝুঁলে আছে। ভারি লেহেঙ্গার ভারে আমি নুয়ে নুয়ে যাচ্ছি। আয়নার সামনে নিজের প্রতিবিম্ব দেখে ভালোই লাগছে।

আমি উঠে দাঁড়ালাম। নিজের রুমটা আরো একবার দেখে নিলাম। আজ এই রুম ত্যাগ করে নতুন রুমে প্রবেশ করতে হবে আমাকে। নতুন জীবন। সবই নতুন শুধু মানুষ গুলো পরিচিত। এত চিন্তার মাঝেও আমার ঘুম পাচ্ছে ভাবতেই আমার অবাক লাগে। বিয়ে সবার জন্য মজার হলেও বউদের যে বারোটা বাজে এটা হারে হারে বুঝতে পারছি আমি।

আমাকে উনার বিপরিত পাশে বসানো হয়েছে। মাঝে ফুলের লম্বা লাইন যার ফাঁকপকর দিয়ে তাকে একটু আকটু দেখা যাচ্ছে। কালো শেরওয়ানীতে দারুন মানিয়েছে। কালো শেরওয়ানীর সাথে লাল পাগড়ী। হাতের ভাঁজে বিশাল উড়না জড়িয়ে ডান সাইডে ফেলে রেখেছে।

রজনীগন্ধার সুবাস চারদিকে। ফুলের পর্দাটা রজনীগন্ধা ফুলের। এক সুখ মিশ্রিত কষ্টে আঁকড়ে ধরে আছে আমাকে। দমটা কেমন যেন আটকে আছে। বিয়ের লাস্ট ধাপের আগের ধাপ কবুল বলা। এই ধাপটা পৃথিবীর সবচাইতে ভয়ঙ্কর ধাপ। যা পার করতেই বুকটা প্রচণ্ড ভার ভার লাগে। মনে হয় কেউ দম আটকে দিয়েছে। চারিদিক দিয়ে সবার একটাই কথা কবুল বলকিন্তু এই শব্দটা তিনটে শব্দের হলেও এটা গলা পর্যন্ত আটকে আসছে। চোখের পানিগুলো ডানা ছাপটে গড়িয়ে পড়ছে।

এই মুহূর্তে উঠে দৌড়ে পালাতে ইচ্ছে করছে। মনে হচ্ছে এই জনসমাগম থেকে উঠতে পারলেই আমি দম নিতে পারব। আম্মু এবার আমার পাশে গুটি মেরে বসে বলে উঠে,
~ কি হল। বলেদে কবুল। প্রকৃতির নিয়ম এটা মা। সব মেয়েকেই বিয়ে করে স্বামীর সংসার করতে হয় তোকেও হবে মা। কবুল বলেদে।

আম্মুকে জড়িয়ে বলে দিলাম কবুল। সাথে সাথে একটা হৈচৈ পড়ে গেল। চারপাশে। আমি আম্মুকে আর ছাড়লাম না তাকে জড়িয়েই বসে রইলাম। কাঁদতে কাঁদতে আমার হিচঁকি উঠে গেছে। আমাকে আর উনাকে একুই আয়নায় মুখ দেখতে দেওয়া হল। উনি আমার দোঁপাট্টার মাঝে নিজের মাথা গুঁজে দিলেন। ডান হাত দিয়ে আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে ফিসফিসিয়ে বলে উঠলেন,

~ বোকা মেয়ের মত কাঁদছ কেন আয়ু জান? আমি তোমাকে তোমার বাড়িতে আর আসতে দিবনা নাকি? তুমি না হয় দিনের বেলায় যখন আমি অফিসে থাকব তখন এখানে এসে থাকবে আর আমি এসে নিয়ে যাবো। তাও কেঁদনা প্লিজজ। তুমি কাঁদলে আমারও কষ্ট হয়। আর আমি তো আছি নাকি। আমি থাকতে তোমার এত কিসের কষ্ট জান। আর কান্না না। প্লিজজজ।

বিয়ে মানেই মহান ঝামেলা। আমার এখন তাই মনে হচ্ছে। এদিক থেকে ছবি তুলতে বলে ওইদিক থেকে তুলতে বলে। একদম ভালো লাগছেনা। মাথাটা কেমন যেন করছে। আমি এদিক ওদিন দেখছি নিজের প্রিয় বাড়ি ছেড়ে যেতে আমার মোটেও ইচ্ছে করছেনা। এই বাড়িতেইত আমি বড় হয়েছি। আম্মুর বকা আব্বুর ভালোবাসা আর ভাইয়ার সাথে খুনসুটি করে দিনগুলো কত আনন্দের সাথে পার করে দিলাম। কত কত ভালোবাসায় গড়া এই সম্পর্ক গুলো।

আর এত ভালোবাসার মানুষদের ছেড়ে এক নতুন পরিবেশে নিজেকে মানিয়ে নিতে হবে। কিন্তু কেন এমন হয়? এমনটা নাহলে হয় না? না হয়না। এই নিষ্ঠুর পৃথিবীর শেষ উত্তর এটাই। যা যতই অপ্রিয় হোক না কেন এটা আমাদের শুনতেই হবে। পৃথিবীতে নারীদের সবচাইতে অপ্রিয় সময় হল বিদায় বেলা। কান্নাজুড়ে দিয়েও মেয়েরা এই বেলায় জিততে পারেনা। আমার বেলাও তাই হয়েছে।

উনি এক হাতে আমার হাত ধরে রেখেছে। আমি হাঁটতে পারছিনা মাথাটা কেমন ঘুড়ছে। চোখ ফুলে গেছে তাই সব ঝাপসা লাগছে। আব্বু আর ভাইয়াও প্রচুর কেঁদেছে। আমি গাড়িতে বসে আছি। মাথাটা উনি বুকে চেপে রেখেছে। চোখের পানি উনার শেরওয়ানী ভিজেঁ একাকার। উনি বার বার থামতে বলছে কিন্তু কান্নারা আমার সঙ্গ ত্যাগ করতে চায় না। এ বেলায় কান্নারাই সঙ্গী। উনি আমার হাতগুলো নিজের বুকের সাথে চেপে নরম গলায় বলে উঠে,
~ এভাবে কাদেঁ না আয়ু।

আমি কি তোমাকে বিক্রি করে দিচ্ছি নাকি? শুধুত নিজের গাছের ফুল নিজের কাছে রাখতে চাচ্ছি। এত কান্না কোথায় পাচ্ছ বলত? এভাবে বাচ্চাদের মত কাঁদবেনা? কষ্ট হয় তো। ভীষণ ভাবে। তোমার চোখের প্রতিটি ফোটা পানি আমার কলিজায় তীরের মত লাগে। বুঝনা তুমি? এভাবে কাদেঁ না। আমার মিসিং পাঁজর তুমি তোমার কিছু হলে এই খানে তিব্র ব্যাথা লাগে। একদম বাঁ পাশে।

উনি যত্নের সাথে আমার চোখ মুছে দিলেন। হাতের আঙ্গুল গুলোর ভাঁজে নিজের আঙ্গুল গুলো নিয়ে আমাকে জড়িয়ে নানা কথা বলে আমাকে হাসাতে চাচ্ছে। গাড়ি উনাদের বিশাল গেট ত্যাগ করে বাড়ির সামনে প্রবেশ করেছে। সবাই আগে থেকেই অপেক্ষায় ছিল। মা বরন করে আমাকে।

আমি উনাদের বাড়ির চোকাটে দাঁড়িয়ে আছি। এবাড়ির নিয়ম অনুযায়ী উনি আমাকে কোলে নিয়ে ঘরে ডুকবে। উনি আমার ভারী লেহেঙ্গা সহ আমাকে কোলে নিতেই সবাই একবেলা হেঁসে চেঁচিয়ে উঠল। বড়দের সামনে বেশ লজ্জা লাগছে। আমি মাথা কাত করে উনার শেরওয়ানী খামছে আছি। উনি আমাকে সোফায় বসিয়ে দিয়েছে।

মালিহা আপুকে আমি এত ভিড়ের মাঝে এখনই দেখছি। উনি আমার পাশে এসে বসে পরে। আমি অবাক হোই। উনি যে আমাকে মোটেও পছন্দ করেনা এটা আমার জানা আছে। উনি আমার হাতগুলো নিজের হাতে নিতেই যেন আমি আকাশ থেকে পড়েছি এমন অবস্থা হল। উনি যেমন ব্যক্তিত্ব বহন করে তাতে এটা অস্বাভাবিক কাজ।

উনি বলে উঠে,
~ শেষ মেষ তুমিই আযমানের বউ হলে। ভালো। ওর বউ হওয়া ভাগ্যের ব্যাপার। যাই হোক আসল কথা তোমার সাথে আমি মাঝে মাঝেই খারাপ ব্যবহার করতাম তাই স্যরি।

বলেই উঠেগেলেন আমি তো শিহরিত তার কথা শুনে এই মেয়ের মাঝে এত পরিবর্ত কিভাবে? মালিহা আপু উঠে আমার হাত ধরে আমাকে উপড়ে নিয়ে যাচ্ছে। আশ্চর্য ব্যাপার। মালিহা আপুকে নিয়ে আমার ভাবনার ইতি টেনে উনার রুমে যাওয়া নিয়ে চিন্তায় এখন আমার মাথা ঘুড়ছে।

ভয়, লজ্জা মিশিয়ে এক অদ্ভুত অনুভুতি হচ্ছে। বুকটা ক্রমশ ধাকধাক ধুকপুক করছে। উনার রুমে আমাকে রেখে মালিহা আপু একটা মলিন হাসি দিয়ে চলে গেলেন। আমি ঘুড়ে ঘুড়ে দেখছি। রুম জুড়ে ফুলের ঘ্রাণের ছড়াছড়ি। একেই বলে ফুলসজ্জা। সাদা পর্দার ভাঁজে ভাঁজে ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে। সাথে ক্যান্ডেল দিয়ে সাজানো হয়েছে ফ্লোরের চার কোণা। আমি ঘুড়ে ঘুড়ে সব দেখছি।

হঠাৎ দরজার শব্দে পিছনে ঘুড়ে তাকিয়ে উনাকে দরজার সাথে ঠেস দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। সাদা একটা পাঞ্জাবী গায়ে। ঠোঁটে তার মিষ্টি হাসি। উনি এক পা একপা করে আমার সামনে এসে দাড়াঁতে আমি উনাকে সালাম করলাম। পা ছুঁয়ে সালাম করতে যাব উনি আমার দু’বাহু চেপে দাঁড় করিয়ে বলে উঠে,
~ ওই জায়গাটা তো তোমার নয় আয়ুজান। তোমার জায়গা তো আমার এই বুকের বা পাশে। তোমাকে আমি ঠিক আমার হৃদপিন্ডের মত যত্নে রাখতে চাই বুঝলে।

বলে উনি আমাকে কোলে তুলে নিলেন। তারপর হেঁটে ব্যালকুনিতে নিয়ে দাঁড় করিয়ে দিয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে বলে উঠে,
~ দেখো তোমার জন্যে এই সাদা গোলাপের গাছ লাগিয়েছি।

গাছগুলো ব্যালকুনি বেয়ে উঠে গেছে। কত ফুলফুটেছে দেখছ। এগুলো সব তোমার। সবাই তো প্রিয়তমাকে ফুল দেয় আমি না হয় গাছ দিলাম। আমার ভালোবাসাটা না হয় অন্যরকম। ফুল তো শুকিয়ে যায় সাথে সাথে নিজের রূপ রং সৌন্দর্য সব হারায়। কিন্তু গাছ যত দিন থাকবে তত দিন তোমাকে ফুলদিবে। আমি তোমাকে একগুচ্ছ গোলাপ না একগুচ্ছ গাছ দিলাম। এদের মাঝে তুমি তোমার নিজের আবেগ অনুভুতি আর ভালোবাসা ডেলে দিয়ে যত্ন করবে।

আর সে যত্নের ফল হিসেবে তুমি একগুচ্ছ গোলাপ পাবে। দোকানের গোলাপ কখনো এই গোলাপের মত ভালোবাসায় মিক্সিত হয় না। যেহেতু এগুলো যত্ন করে আমি আমার ভালোবাসা দিয়ে ফুটিয়েছি সেহেতু এগুলো আমি তোমাকে দিলাম। আমার একগুচ্ছো ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য আয়ুজান। এখনও কাঁদবে নাকি? তুমি কাঁদলে কলিজায় কেউ ছুড়ির আঘাত করে এমন লাগে। বুঝলে আয়ুজান।

বলেই ঘাড়ে ঠোঁট বুলাতে শুরু করে। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি ফুলগুলোর দিকে। কি সুন্দর ফুল। ব্যালকুনিটাকে নিজেদের সৌন্দর্যে আরো সুন্দর করে তুলেছে। আমি পিছনে ঘুড়ে তাকে দু হাতে জড়িয়ে নিলাম। উনিও আমার কোমড় জরিয়ে মায়াবী কন্ঠে বলে উঠে,
~ ভালোবাসি আয়ুজান।

আমি তার দিকে ফিড়তেই উনি নিজের পকেট থেকে কি যেন বের করলেন। ভালোভাবে তাকিয়ে বুঝতে পারলাম একটা বক্স। উনি বক্স থেকে একটা লকেট সহ চেইন বের করে আমাকে আবার ঘুড়িয়ে গলায় পড়িয়ে দিলেন সাথে ঘাড়ে একটা চুমু খেলেন। আমার সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল। মুহূর্তে আমি চোখ বুজে নিলাম। উনি এবার আমার পায়ের কাছে বসে পড়লেন। আমি অবাক হয়ে দু’কদম পিছনে চলে গেলাম। উনি আবার সামনে এসে। লেহেঙ্গার নিচ থেকে আমার একটা পা নিয়ে নিজের হাটুভাঁজে রাখলেন।

আর খুব যত্নে এক এক করে আমার দু’পায়েএকজোড়া নুপুর পরিয়ে দিলেন। আমার দিকে একবার চোখতুলে তাকিয়ে আমার পায়ের পাতায় চুমু খেলেন। সাথে সাথে আমার সারা শরীর কেঁপে উঠল। তারপর দাড়িয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে বলে উঠে,
~ আমার প্রতিটি সকাল হবে তোমার নুপুরের রিমিঝিমি শব্দে। আমার চোখ খুলবে তোমার ভিজাঁ চুলের ছাপ্টানিতে। আমার ঠোঁটে হাসি ফুটবে তোমার এই মায়াবী মুখের খিলখিল হাঁসিতে।

আমার দুপুর হবে তোমার মিষ্টি সুরের আপনি ডাকে। আমার বিকেল হবে তোমার হাসি মুখে নিজেকে হারিয়ে। আমার সন্ধ্যা হবে তোমার সাথে সন্ধ্যা তারা দেখে। আমার রাত হবে তোমার সাথে চাদঁ দেখে আর মধ্যরাতে তোমাতে বিলিন হয়ে। আমি চাই তোমার মুখ দেখে প্রতিটি সকাল উপভোগ করতে। তোমার অস্তিত্বে নিজেকে হারাতে। চাই পড়ন্ত বিকেলে তোমার হাত ধরে কৃষ্ণচূড়া গাছের নিচে হাঁটতে। চাই বহু পথ তোমার হাতে হাত রেখে চলতে। চাই শিশির ভেজা সবুজ ঘাসের বুকে তোমার পায়ে পা মিলিয়ে চলতে। চাই গোধূলি বেলায় তোমার মুখে রোদের লাল কিরণের মিক্সরনে দেখতে।

তোমার ভালোবাসাময় মায়াবী আঁচলে নিজেকে লুকাতে। আমি শিউলিতে ডাকা সাদা মাঠে তোমার কোল ঘেঁষে ঘুমাতে চাই। চাই প্রতিটি রাতে তোমার চুলের সাথে খেলে চাঁদের আলোয় আমাদের রাঙ্গাতে। চাই তোমাতে মিশে নদীর পাড়ের বালির সাথে তাল মিলিয়ে চলতে। তোমার ঘামে ভেজাঁ আঁচলে আমি আমার কপালের ঘাম মুছতে চাই। আমার এমন হাজারও চাওয়ার মাঝে আমি শুধু তোমাকে চাই। আমার সব জুড়ে শুধু তুমি হলেই~চলবে। শুধু তুমি।

কথাগুলো বলে উনি আমার ঘাড়ে মুখ গুঁজেছে। দুই একটা টুপ টাপ চুমু খেয়ে আবার মাথা তুলে বলে
~ আমি তোমার সাথে ওই চাঁদের সৌন্দর্য ভাগ করে দেখতে চাই। কি সুন্দর আলো না? ঠিক তোমার মত। আমি তোমাকে চাই। শুনতে পাচ্ছ তুমি। শুধু তোমাকে।

কথাটা বলেই উনি কোলে তুলে নিলেন। আমি লজ্জায় তার গলা জড়িয়ে বুকে মুখ গুঁজলাম। শুরু হল নতুন পথ চলা। এক ভালোবাসায় ভরা জীবন। যার শুরু উনার কোমল ঠোঁটের সুপ্ত অনুভুতির ছোঁয়ায়।

পর্ব ২১

কেঁটে গেছে তিনটি বছর। এই তিনটি বছরে আমি আযমানের ভালোবাসায় ভেসেছি। তবে এই তিনটে বছরে সবচাইতে যদি কার জীবনে বেশি পরিবর্ত আসে সে হল দিল। দিলের মনে হয় সত্যিই জমজের কারখানা হবে। তার দুটি কিউট জমজ বাচ্চা আছে। দুজনেই ছেলে।

বলে ছিলাম একটা বেবি দিয়ে দিতে বলে কিনা আমার মেয়েকে সে তার ঘরের বউ করবে। এটা আধো সম্ভব কিনা কাল পর্যন্ত আমি জানতাম না কিন্তু একটা রিপোর্ট আজ সব পরিবর্তন করে দিয়েছে। আযমান আমাকে এতটাই ভালোবেসেছে এতটাই যত্ন দিয়েছে, কিন্তু বিনিময়ে আমি তাকে কিছুই দিতে পাড়লাম না। কিন্তু তিন বছর তিন তিনটে বছর পরে তাকে কিছু দেওয়ার মত সৌভাগ্য হয়েছে।

অনেক লোক এই তিনটে বছর অনেক কথা শুনিয়েছে সব কিছুকে উপেক্ষা করে সে আমার হাত আঁকড়ে ধরেছে। কিছু মুহূর্তের জন্যেও ছাড়েনি। সবার এত এত প্রশ্নের জবার সে নিজে দিয়েছে। সব আঙ্গুলগুলো নিজের দিকে ফিড়িয়ে নিয়েছে। আমার সাথে ডাল হয়ে ছিল। আসলেই হাজ্যাবেন্ড মানেইত এটা। আমি তো তারই অর্ধাঙ্গিনী। এটা সে হারে হারে এই তিন বছরে বুঝিয়েছে।

আমি অপেক্ষায় আছি উনি কখন বাসায় আসবে। আর দিন আগেই আসে তবে আজ কেন এত দেড়ি করছে কে জানে। সোফায় বসে পা দুলাচ্ছি। দুলাতে দুলাতেই কখন যে ঘুমিয়ে গেছি বুঝতেই পাড়লাম না।

হঠাৎ কারো হালকা ছোঁয়ায় আমার ঘুম ভেঙে গেল। আমি টিপটিপ করে চোখ খুলে দেখলাম উনি আমার মাথায় হাত দিয়ে টেম্পারেচার চেক করছে। আমি একটু নড়ে উঠতেই উনি বলে উঠে,
~ তোমার কি হয়েছে? এখানে কেন ঘুমালে? এত সুন্দর বেড কি আমি তুলে রাখার জন্যে কিনেছি নাকি। তুমি ওখানে না ঘুমালে ওটা আমার আর দরকার নেই। ফেলে দিব কাল।

আমি তাকে দেখেই লাফিয়ে উঠেছি। উনি আমার পাশে বসে ল্যাপটপ নিয়ে কি যেন করছে। তবে সে দিকে আমার আগ্রহ নেই বললেই চলে। আমার সব আগ্রহ হচ্ছে তাকে কথাটা বলার মাঝে। আমি উনার দিকে ঘুড়ে বসলাম। হাঁসি হাঁসি মুখে তার দিকে তাকালাম। উনি আমাকে এভাবে তাকাতে দেখে ভ্রু কুঁচকাল। ভ্রু নাচিয়ে বলে উঠে,
~ এভাবে দাঁত কেলানোর মানে কি? নতুন কোন ফালতু কথা বলার হলে আগেই চুপ করে যাও। মাথা ব্যাথা করছে। তোমার ওই সব বকবক শুনতে আমি ইচ্ছুক নই আয়ুজান।

আমি হাঁসি বন্ধ করলাম না। আরো হাঁসির গতি বাড়িয়ে দিলাম। উনি হয়ত ভেবেছে আমি তাকে প্রতি দিনের মত আবার বিয়ের কথা বলব। দু’বছর উনার কান আমি খেয়ে ফেলেছি বিয়ে করেন বিয়ে করেন বলে।

যবে থেকে বুঝতে পাড়লাম মা হওয়ার সৌভাগ্য হবে না তবে থেকে তাকে বাবা হওয়ার প্রাপ্তি দিতে চেয়েছি তাই বিয়ে করতে বলেছি। কথাটা বলতে আমার যে কষ্ট হয়নি তা কিন্তু নয় তবে কাউকে তার অধিকার থেকে বঞ্চিত করতে চাই নি। ডাক্তার বলেছে আমার প্রবলেম উনার না তাই তাকে বিয়ে করতে বলা।

এটা শুনে বলে আমি সবার আগে মার বকা খাই তারপর উনার আর বাবার। তবুও মাঝে মাঝেই তাকে বুঝাতে চাইতাম যাতে নিজের ভালোর কথা ভেবে বিয়েটা করে। প্রতিবারই তার জবাব তুমি হলেই~চলবে। তাই আজও ভাবছে আমি তেমন কিছু বলব। আমি উনার গা ঘেঁষে বসলাম। উনি অবাক হওয়ার মত তাকিয়ে আছে।

তাকিয়ে থেকে বলে উঠে,
~ তোমার মাথায় আবার কোন ভূত উঠেছে? দেখ ভূত গুলো তাড়িয়ে দেও। তা না হলে কিন্তু মাথা আগে থেকেই গরম আরো গরম হয়ে যাবে বলে দিলাম। আমার মাথা প্রচণ্ড ব্যাথা আয়ুজান বুঝার চেষ্টা কর। প্লিজজজ

আমি উনার এই সব কথায় তোয়াক্কাই করলাম না। একটা ভাব দিয়ে উনার কোল থেকে ল্যাপটপ সরিয়ে ধাম করে তার কোলে বসে পড়লাম। উনি এবার আকাশ থেকে পরেছে এমন ভাব করে তাকিয়ে আছে। আমি তার চাপা দাঁড়ি গুলোতে হাত বুলাচ্ছি। উনার চোখ যেন কোটার থেকে বেড়িয়ে আসবে এমন একটা ভাব করে উনি বলে উঠে,

~ লিসেন আই নো তোমার মাথায় বড় কোন ধান্ধা ঘুড়ছে। আমাকে এই সব লতুরপুতুর দিয়ে একদম ভুলাতে আসবেনা। তুমি যানো তুমি আমার উইক পয়েন্ট তাই সব সময় ব্লাকমেইল করার ধান্ধা রাখ। প্রতিপক্ষকে কখন উইক পয়েন্ট দেখাতে নেই কথাটা সত্য।

কিন্তু তুমি আমার প্রতিপক্ষ না হয়েও এই জিনিসটা বেশ ভালোভাবে করছ আমি বুঝতে পারছি। সো বি ক্যায়ার ফুল আয়ুজান। এবার যদি একটাও আজেবাজে কথা শুনি তবে কিন্তু ভাল হবে না।

আমি এবার রেগে গেলাম। রেগে মেগে বলে উঠলাম,
~ এই আপনার কি মনে হয় আমি সব সময় ধান্ধা নিয়ে আপনার কাছে আসি নাকি? এমনে আসিনা? এভাবে বলতে পাড়লেন? পারবেনইত বউত পুরানো হয়ে গেছে তাই আর ভালো লাগছেনা। আমি সব বুঝি বুঝলেন? কত ইম্পরট্যান্ট কথা বলতে এলাম আর উনি আমাকে মতলববাজ মনে করে। আগে যানলে আপনার কাছেই আসতাম না।

বলেই উঠে যাচ্ছিলাম। উনি কোমড় চেপে বসিয়ে রাখে কোলে। ঘাড়ে মুখগুঁজে বলে উঠে,
~ ওকে সরি। আমি কি করবো বল? তুমি নিজেইত এমন। যখনই ফাউল কথা বলার হয় এভাবে সোহাগ দেখিয়ে বল। কিন্তু কখনো ভালোবেসে তো কাছে আসনা। আমার নিজেকেই টেনে টেনে কাছে আনতে হয়। তাই এমনটা বললাম। কিন্তু তুমি ভুল বললে আমি কিন্তু একবারও তোমাকে মতলববাজ বলিনি। এভাবে কথায় কথায় এমন কথা বলা ছেড়ে দেও আর কি বলতে এত ভালোবাসা উপচিয়ে উপচিয়ে পড়ছে বলশুনি?

আমি এবার উনার দিকে মুখ করলাম। ঠোঁট প্রশারিত করে বলে উঠলাম,
~ দলির বাচ্চাগুলো কি কিউট না?

উনি আমার কথায় যেন হা হয়ে গেলেন। আমার দিকে অবাক চোখে তাকিয়ে বলে উঠলেন,
~ এই সামান্য কথা বলবে বলে এত মেল ড্রামা?

আমি মাথা ঝাঁকিয়ে বলে উঠলাম,
~ আরে না ত। ওর বাচ্চাগুলোর হাত পা কি কিউট। ছোট ছোট আঙ্গুল লাল ঠোঁট ভাসা ভাসা চোখ সব কিউট সব সব সব। আপনার কাছে কিউট লাগেনা।
~ লাগে। কিন্তু হঠাৎ এই কথা কেন? (একটু গম্ভীর হয়ে বলে উঠে)
~ না আসলে আমাদের যদি একটা এমন কিউট মেয়ে হয় কেমন হবে?

আমি চকচক চোখে তাকিয়ে আছি। উনি এবার নড়েচড়ে উঠলেন মুখে একরাশ করুনতা নিয়ে বলে উঠলেন,
~ তুমি কি বেবি এডপ্ট করতে চাও? ওকে ব্যাপার না আমরা কালই যাবো। আমার আয়ুজানের জন্য কিউট একটা মামনি নিয়ে আসব। তুমি খেয়েছ কিনা জিগ্যেস করতেই ভুলে গেলাম। এই ফার্স্ট এমন হয়েছে তাও তোমার এই সব কথার কারনে। খেয়েছ তুমি?

~ আরে আমি বাচ্চা দত্তক নিতে চাইনা। আমি চাই আমাদের বেবী হবে বুঝতে পারলেন?
~ দেখ তুমি কিন্তু আবার শুরু করলে। উল্টাপাল্টা কথায় চলে যাবে এখন এটা আমার মোটেও পছন্দ না। শুরু কর ভালো কথা দিয়ে আর চলে যাও আজেবাজে কথায়। ফালতু

আমি রাগ হলাম। তিন বছরে আজই উনি আমাকে এভাবে কথা শোনালেন। আমি এবার রাগ করে উনাকে ছাড়িয়ে উঠে দাঁড়ালাম। উনি আবার বিরক্তি কাটিয়ে আমাকে পিছন থেকে জড়িয়ে বলে উঠে,

~ সরি সরি এগেন। আমি বুঝতে পারছিনা এভাবে রাগ কেন উঠছে। অফিসে একটা ভেজাল চলছে জান তাই আমি প্রচন্ড টেনশনে আছি। তার উপড় তুমি এমন এমন কথা বল কি আর বলব। তুমি তো জানো আমার সকল ক্লান্তির অবসান তোমাতেই তাহলে কেন এমন করছ বলত?

বাবা মা হওয়া পৃথিবীর সবচাইতে সৌভাগ্যের ব্যাপার। আল্লাহ চাইলে আমরাও হব। কিন্তু এখন যেহেতু তোমার বেবি চাই তাইলে আমরা এডপ্ট করেনি। তাহলেই হবে তবুও তোমাকে ছাড়া এমন কোন কথা আমি শুনতে চাই না। কত বার বলব আমার তুমি হলেই চলবে।

আমি শান্ত দৃষ্টিতে উনার দিকে তাকিয়ে আছি। আয়নায় উনার আর আমার প্রতিবিম্ব দেখা যাচ্ছে। উনার চোখে মুখে এক অদ্ভুত হতাশা আছে। তা বুঝতে পারছি। ছোটবেলায় শুনেছি সকল ছেলেদের মাঝেই এক বাবা লুকিয়ে থাকে যা আমি উনার মাঝেও দেখেছি যখন উনি দিলের বাচ্চাদের নিজের কোলে খেলায়। আদরের আদরের ভরিয়ে দেয় তাদের নরম গাল।

তখনই বুঝেছি উনি বাবা হতে চায়। হয়ত আমাকে বেশি ভালোবাসে বলেই ছাড়তে চায় না। আমি ঘুড়ে তাকে জড়িয়ে নিলাম। উনি আমার কোমড় জড়িয়ে নিজের মাঝে ডুবিয়ে নিল। কিছুক্ষণ পরে তাকে ছাড়িয়ে বেড সাইড টেবিল থেকে একটা পেপারের পেকেট দিলাম তার হাতে। উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আমি ইশারায় খুলতে বললাম।

উনার মাঝে কেমন যানি ভয় কাজ করছে হয়ত ভাবছে আমি তার কাছ থেকে দূরে যেতে হয় এমন কিছু দিচ্ছি। উনি কাঁপা হাতে পেকেট খুলে কাগজটা হাতে নিয়ে কিছুক্ষণ মনোযোগ দিয়ে দেখলেন। তার পরমুহূর্তেই উনার চোখে আমি পানি দেখতে পেলাম। সে কাঁদছে। এই কান্না খুশির। উনি হুট করেই আমাকে কোলে তুলে নিলেন। চিৎকার করে বলে উঠলেন,

~ এটা সত্যি
~ হুম। (উনার বুকে মুখ লুকিয়ে। লজ্জিত ভঙ্গিতে বলে উঠলাম)
~ আরো আগে কেন বলনি? আয়ুজান আয়ুজান এটা পৃথিবীর সবচাইতে বেস্ট উপহার যা তুমি আজ দিলে। আমি বিশ্বাসই করতে পারছিনা আমাকেও কেউ সারফারাজের মত বাবা বলে ডাকবে। আই কান্ট বিলিভ দিস। সবাইকে বলেছ?
~ আগেই বলেছি আর আপনাকে তখন থেকে বলতে চাচ্ছি আপনি শুনতেই চাইছেন না। তাই রিপোর্ট ধরিয়ে দিলাম। এবার নিচে নামান।

~ না তোমাকে নিচে নামানো যাবেনা। তুমি আমার কোলে কোলেই থাকবে। এখন বল কি খেয়েছ? তোমার খাবারের ছিরি আমার জানা আছে। আচ্ছা তুমি বরং খাটে বস আমি নিয়ে আসছি।
~ এই না না মা এত এত খাইয়েছে কি বলব। এখন ঘুম পাচ্ছে আপনার জন্যে ওয়েট করতে করতে আমার ঘুম শেষ। এবার নামান আমি ঘুমাব।

উনি যত্নের সাথে আমাকে বিছানায় রাখে। উনার চোখে মুখে এক সুখ মিক্সিত ভাব ফুটে উঠেছে। থেকে থেকে আবার পানিও পরছে। মাঝে মাঝে আবার ঠোঁট কামড়ে হাসছে। উনি নিজের কাজ ফেলে আমার পাশে শুয়ে আমাকে তার বুকের সাথে লেপ্টে নিলেন। আমি গুটিশুটি মেরে শুয়ে আছি। তার এই সুখের জন্য আমি সব করতে পারি দরকার হলে জীবনটাও বাজি রাখতে পারি। ভালোবাসা মানেই ভালো থাকা আর ভালোবাসার মানুষকে ভালো রাখতে পারলেই ভালো থাকা যায়। তাই আপনাকে ভালো রাখাও আমার কাজ।

আজ ঘরে ছোট একটা পার্টি রাখা হয়েছে। সব পরিবারের লোকরা আসবে। রান্নায় আমি পাক্কা কাঁচা। আসলে পারিনা তা নয় আযমান আমাকে রান্না ঘরে ডুকতে স্পেশাল ভাবে নিষেধ করেছে। মাও রান্না করতে দেয়না। ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার এই তিন বছরে আমি একবারও রান্না করার মহা সুযোগটা পেলাম না। এখন এটা আরো মশকিল। আমি রান্নাঘরে দাঁড়িয়ে আছি।

তবে রান্না সব মা করছে। আমি শুধু দেখছি। কোথা থেকে হুট করে আযমান এসে হাজির। দাঁতে দাঁত চেপে কড়া গলায় বলে উঠে,
~ আয়ুজান এখানে কি? তোমাকে নিচে কে নামালো?
~ কেন আপনি কি আমার দুটো পা দেখেন না? এই যে দেখে নিন। (শাড়ির নিচ দিয়ে পা দেখিয়ে)
~ দেখ আমি মজা করছিনা। ফাইজলামি করবে না। আর রান্নাঘরে কত তাপ। তুমি ঘেমে গেছ। চল উপড়ে?
~ না এখন যাব না। আপনি জান।

মা এবার ছেলের সাথে তালে তাল মিলিয়ে বলে উঠে,
~ ওকে নিয়ে যাত রেডি করে দে। কিছুক্ষণ পরে মেহমান সব চলে আসবে। আর ও এখনো রেডি হল না।
~ চল
~ চল চল বললে ও শুনবে বলে তোর মনে হয়? তোর এই বডি কেন বানালি? হুম? কোলে তুলে নে।

আমি এবং উনি দুজনেই হা করে তাকিয়ে আছি মার মুখের দিকে। বলে কি উনি? ছেলেকে বলছে বউকে কোলে নিয়ে যেতে। আজব। তবে মা এমন অনেক আজব কাজই করেছে এই তিন বছরে। যেমন সবার সামনে উনাকে বলে উঠে,
~ বিয়ে করেছে কেন তোকে আয়ু? নিজের হাতে খেতে নাকি? নিজের হাতে খাওয়ার হলে তোকে তো লাগবে না। তুই আউট।

উনি তখন মায়ের দিকে করুন চোখে তাকিয়ে বলে
~ মাম্মাম এগুলো কেমন কথা? আর তুমি সব সময় আয়ুর হয়ে কথা বল। ইটস্ নট ফের। কই কখনো বললেনা তো যে আমাকে খাইয়ে দিতে? সব সময় আমাকে বল।

মা উনাকে রাগী চোখে বলে উঠে,
~ তুই ওকে আজীবন খাইয়ে দিবি বুঝলি।

বেশ মজা লাগে তখন। উনি রাগি রাগি ভাবে আমাকে খাইয়ে দেয় আর আমি ছোট ছোট কামড়দিহিহিআমাদেরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে মা আবার বলে উঠে,
~ তাকিয়ে থাকতে বলিনি। ওর কষ্ট হচ্ছে কোলে তুলে নে
~ আরে মা বাইরে অনেক মহিলা আছে। তারা দেখলে কি বলবে। আমি নিজেই যাই।

পা বারাতেই মা বলে উঠে,
~ আযমান তুই নিবি কি না?
~ অবশ্যই। মায়ের আদেশ শিরোধার্য।

বলেই উনার সামনে আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি তাকিয়ে আছি মা ছেলের দিকে। এদের এই বন্ডিংই এত ভালো লাগে আমার।

~ দেখেন এবার আমার কিন্তু বিরক্ত লাগছে। আর একটা ফল যদি দেন আমি বমি করে আপনার গা ভাসাব।। (রাগি গলায় বলে উঠি)
~ তাই নাকি? ভাসাও। এমনেতেই দিনে অনেক জামা কাপড় ভিজাতে হয় তোমার জন্য। না হয় আর একটা ভিজাব। তবুও খেতেই হবে।

আমি কাঁদো কাঁদো মুখে। এবার বলে উঠলাম,
~ প্লিজজজ আর না। রেডি হই চলেন।
~ না এগুলো আগে কম্পিলিট কর। তারপর আমি তোমাকে রেডি করে দিব।
~ আপনি করবেন রেডি? আর রেডি হতে হবে না। আমি বরং একটু ঘুমাই।

উনি নিচ থেকে আনার পর ফলের থালা নিয়ে বসেছে। আর আমার মুখে একটার পর একটা দিয়েই চলেছে। পৃথিবীর ভয়ঙ্কর একটা শাস্তি হল খাবার খাওয়া আর তা যদি হয় ফল ইয়াকক্। ফল খাওয়া আর ঘাস খাওয়া আমার কাছে এক জিনিস লাগে। আর এই লাগার মধ্যেই বিগত মাস খানেক এত এত খেতে হয়েছে কি বলব। আমি শহিদ হয়ে যাব খেতে খেতে। কি যে মোটা হয়ে গেছি কি বলব। একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল।

উনি আমাকে শাড়ি পড়াচ্ছে। কালো জামদানি শাড়ি। এর মাঝে লাল সুতার কাজ। আর উনি পড়েছে কালো পাঞ্জাবী যার বাম সাইডে লাল সুতার কাজ করা। হাত ভাজঁ করে আমার কুচি ঠিক করছে।

উনার এই কাজটা আমার অনেক কিউট লাগে। মনোযোগ দিয়ে এই কাজটা করে উনি। তখন উনাকে দেখে মনে হয় এটা পৃথিবীর সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ কাজ। ভ্রুকুঁচকে প্রতিটি কুচি সে মনোযোগ দিয়ে এক সাথে করছে। কুচি ঠিক করে আমার আঁচল ঠিক করে দিলেন। পিছন থেকে জড়িয়ে বলে উঠে,
~ আজ তোমাকে কাজল লাগিয়ে দিব।
~ না না লাগবে না।
~ লাগবে না মানে কি? অবশ্যই লাগবে। আমি লাগাব মানে লাগাব।

আমি এবার কেঁদে দিব টাইপের অবস্থা। উনার এই কাজল লাগানোর ব্যাপারটা আমার মোটেও পছন্দ না। উনি যখনই আমার চোখে কাজল লাগাতে চায় তখনই উনার চোখ দিয়ে যমুনা নদী প্রবাহিত হয়। চোখের কাছে কাজল নিয়ে একবার দিতে যায় তো আবার সরিয়ে নেয়।

চোখের কাছে লাগাতেই উনার নিজের চোখ দিয়ে পানি পড়ে। আজব লোক। কাজল লাগাবে আমাকে আর চোখের পানিতে বুক ভাসাবে উনি। উনি আমাকে ড্রেসিন টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলেন। আমিও বসে পড়লাম। কাজলটা হাতে নিতেই উনার কাঁপাকাঁপি শুরু। এবার পাক্কা দুই তিন ঘন্টা এই কাঁপাকাঁপি অব্বাহত থাকবে। আমি মহা বিরক্ত তার এই কাজে। জাস্ট অসজ্জকর একটা কাজ। উনি কাঁপা হতে আমার চোখের নিচে লাগাতেই ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে শুরু। যদিও উনি ভ্যাঁ ভ্যাঁ করে কাঁদেনা। ছেলেদের কান্না নিঃশব্দে। উনার টাও তাই। আমি একটু বিরক্তি নিয়ে বলে উঠলাম,
~ আপনি সামান্য কাজল লাগাতে এভাবে কাঁদছেন। আমি মারা গেলে কি করবেন।

উনি চকিতেই অশ্রুসিক্ত চোখে তাকালেন। তার চোখে ভয়ের প্রকাশ দেখা যাচ্ছে। উনি হুট করে কাজল রেখে আমাকে জড়িয়ে নিলেন। তার এমন কাজে আমি মোটেও বিচলিত হইনি। এটা উনি সব সময় করে আর এখন উনি কি বলবে তাও আমার যানা। উনি বলে উঠে,
~ তোমার কিছু হলে তো আমিও শেষ। মরে যাব। আয়ুজান।

কথাটা শুনে সবসময় একই রিয়েকশন থাকলেও আজ আমি বলে উঠলাম,
~ আরে আমার কিছু হলে আপনার বাঁচার জন্য একটা মানে রেখে যাব। আমাদের প্রিন্সেস।
~ আমার তুমি ছাড়া থাকতেই দম বন্ধ হয়ে আশে। প্রিন্সেসও তখন কাজে লাগবে না। তুমি নেই তো আমিও নেই। এখন এসব কথা শুনতে ভাল লাগছে না। কাজল লাগই।

উনি এবার গম্ভীর হয়ে গেলেন। আমার বুক ছিঁড়ে একটা দীর্ঘশ্বাস বেড়িয়ে এল। আমার কিছু হলেও যাতে উনি ঠিক থাকে মহান আল্লাহর কাছে এটাই দোয়া করি। এই তিনবছরে একটা রাত উনি আমাকে ছাড়া থাকে নি। আমাকে একদিনও আমাদের বাসায় থাকতে দেয় নি। এই লোক আমাকে ছাড়া থাকবে কিভাবে কে যানে।

পাক্কা একঘণ্টা পরে উনি কাজল লাগাতে সক্ষম হলেন। আমাকে কোলে তুলে সিঁড়ি দিয়ে নামছে। সবার চোখ আমাদের দিকেই। মনে হচ্ছে সেই বিয়ের দিন যেমন কোলে নিয়ে এই বাড়িতে ডুকেছিল এখনও তাই। উনি নিচে নামিয়ে সোফায় বসিয়ে দিল। রেদোয়ান ভাইয়ারও একটা ছেলে হয়েছে।

আযমান আমার পাশে বসে বাচ্চাগুলো নিয়ে খেলছে। কত কত ভঙ্গিতে কথা বলছে। তাকে দেখেই মনে হচ্ছে উনিও একটা বাচ্চা। আমি শুধু তাকিয়ে দেখছি আর দিলের হাজারো কথা শুনছি। তবে সব কথা কানে ডুকলেও আমার চোখে শুধু উনি ভাসছে।

পর্ব ২২

সময় প্রবাহ মান। সময় যেমন নিজ গতিতে চলে মানুষও তা মেনে চলে। আজ চার মাসে পা দিয়েছি। এই মাসগুলোতে যদি কাউকে জ্বালিয়ে শেষ করেছি তবে সে হল আযমান। নানা সময় নানা বায়না। কখনো বমি করে গাঁ ভাসানো কখনো রাত জেগে গল্পের বই পড়ে শুনানো সব উনি কত হেঁসে হেঁসে অনায়াসে করে ফেলছে তার মাঝে নূন্যতম বিরক্তি নেই।

সকালে কোলে করে নিচে নামানো। আবার নিয়ে আসা। সবই সে করে। উনি এখন অফিস করে হাফ টাইম। বেশিরভাগ সময় বাসায় থাকে। উনাকে বিরক্ত করতে চাই খুব করে কিন্তু উনি বিরক্তই হয়না। আজব লোক। রাত কটা বাজে জানা নেই আমি ঘুমঘুম চোখে উঠে বসলাম। আমার সামান্য নড়াতেই উনার ঘুম ভেঙে যায়। আজও তাই হয়েছে। উনি ঘুম চোখে বলে উঠে,
~ তোমার কি কিছু লাগবে?

আমি মাথা দুলিয়ে বলে উঠলাম,
~ হুমম

উনি উত্তেজিত হয়ে বলে উঠে,
~ কি লাগবে? আমাকে বল? ক্ষুধা লেগেছে? নাকি ওয়াসরুমে যাবে?
~ না আমি এখন আইসক্রিম খাব।

উনি করুন চোখে তাকিয়ে বলে উঠে,
~ যদি তোমার ঠান্ডা লাগে?
~ লাগবে না। চলেন?
~ তোমাকে যেতে হবে না আমি নিয়ে আসি। ফ্রিজ থেকে। তুমি শুয়ে থাক।
~ আরে আমি ফ্রিজের টা খাব না।
~ তবে?

~ আইসক্রিম পার্লারে যাব। এখন মাএ ১২টা বাজে। চলেন।
~ এত রাতে?। তুমি বুঝতে পারছনা আয়ুজান এত রাতে যাওয়া ভালো হবে না। তোমার জন্য তো একদম না। প্লিজজজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।
~ না না কোন আন্ডারস্ট্যান্ড টান্ডারস্ট্যান্ড হবে না। যাব মানে যাব।

উনি করুন চোখে তাকালেন। অসহায়ের মত আমাকে কোলে তুলে নিলেন। আমি চট করে বলে উঠলাম,
~ এই এই নামান আমি হেঁটেই যাব।

~ না আমি তোমার কথা শুনছি তার বিনিময়ে তোমাকেও আমার কথা শুনতে হবে।
~ ওকে তবে আমরা রিক্সায় দিয়ে ঘুড়ব। ঢাকা শহরে রাতে রিক্সায় করে ঘুড়তে সেই মজা। প্লিজজ প্লিজজ
~ নো নেভার। আমরা গাড়িতে যাব। আর গাড়িতেই ব্যাক করব। তোমাকে নিয়ে মাঝ রাস্তায় একগাদা রিক্স নিয়ে চলাফেরা করতে পারব না।

উনার এমন ধমকানো টাইপের কথা শুনে আমি চুপ মেরে গেলাম। উনি সিঁড়ি দিয়ে হেঁটে আমাকে নামিয়ে দিলেন। দরজাটা আস্তে খুলে আবার কোলে তুলে নিলেন। আমাকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলেন। আমি আশেপাশের পরিবেশ দেখছি। নিরিবিলি পরিবেশ। মানুষ জনের আনাগোনা কম। হালকা বাতাস বইছে। উনি হুট করে গাড়ির গ্লাস উঠিয়ে দিলেন। আমি বিরক্তি নিয়ে তার দিকে তাকিয়ে বলে উঠলাম,

~ এই গ্লাস কেন বন্ধ করলেন? আমি বাতাস খাচ্ছি দেখতে পাচ্ছেন না?
~ এদানিং তুমি বড্ড বাচ্চাদের মত বিহেভ করছ আয়ুজান। নিজে বাচ্চার মা হবে কিছুদিন পরে আর এখনো বাচ্চাই রয়েগেলে। এগুলো কেমন কথা বাতাস খাব? বাতাস খাওয়া যায় নাকি? আর বেশি হওয়া লাগলে তোমার সমস্যা হবে। তুমি অনেক দিন পরে এভাবে বের হয়েছ তাই হুট করে এমন আবহাওয়া গায়ে মাখতে নেই। চুপ করে বসে থাক।
~ আপনি কেমন খিটখিটে হয়ে যাচ্ছেন। বুঝতে পারছি এখন আর পুরাতন বউ ভালো লাগেনা। তাই না?

উনি হু হা করে হেঁসে উঠে। আমি মুখ ফুলিয়ে বসে আছি। উনি সামনে তাকিয়ে আমার এক হাত টেনে তার কিছুটা কাছে নিয়ে আসে। সামনে থেকে চোখ সরিয়ে আমার ঠোঁটে আলত করে ঠোঁট ছুঁয়ে আবার সামনে তাকিয়ে বলে উঠে,
~ আমার বউ তো ১৭ বছরেও নতুন ছিল তিন বছরে কিভাবে পুরাতন হবে। তাই এই কথাগুলো বলা বাদ দেও। অনেক বলা হয়েছে। এবার এই টেকনিক চেঞ্জ করো আয়ুজান।

আমি গাড়ির ডিকিতে বসে আছি। উনি আইসক্রিম পার্লার থেকে আইসক্রিম আনতে গেছে। রাতের আকাশটা যেমন সুন্দর পরিবেশটাও তেমন সুন্দর। গাছ পালা দাঁড়িয়ে আছে নিরিবিলি। মানুষের আনাগোনা নেই। দেখে কেউ বলবে? এই রাস্তাটাই সকাল হতে না হতে মানুষের আগমনে সতেজ হয়ে উঠবে। মানুষ ছাড়া সবই কেমন ছমছমে। আমি পা ঝুঁলাচ্ছি। বাতাসে শাড়ির আঁচল দুলছে। উনি এখনো কেন যে আসছে না কে যানে।

এত সময় লাগে নাকি। রাগ লাগছে। সাথে ভয়ও। এতবার বলেছি নিয়ে যেতে না সে বলে আমাকে গাড়িতে বসে থাকতে। গাড়িতে বসে থাকতে কেমন যানি দম বন্ধ দম বন্ধ লাগে তাই বাইরে এসে ডিকিতে বসে গেছি। আমি এবার পা গুটিয়ে নিলাম। সামনে তাকিয়ে গলা শুকিয়ে আসছে। কিছু ছেলে ডুলে ডালে এদিকে আসছে। আমি একটু অবাক হলাম। সাথে ভয়ও পাচ্ছি। দেখেই লাফাঙ্গা মনে হচ্ছে। ছেলেগুলো এদিকেই আসছে। আমি এবার ধীর পায়ে গাড়ি থেকে নেমে পড়লাম। পিছনে বসেছিলাম উনাকে ভয় দেখাব বলে। এখন তো আমি নিজেই ভয় পেয়ে সামনে চলে আসতে হল।

আমি গাড়ির সামনে দাড়িয়ে দরজা খুলতে যাব তার আগেই ছেলেগুলো আমার অনেকটা কাছে চলে এসেছে। আমি একটু ভীতূ নজরে ঘুড়ে তাকিয়ে দেখি লাল লাল চোখ করে মাতাল ছেলেগুলো আমাকে চোখ মেলে মেলে দেখতে চাচ্ছে। আমি ভয়ে আবার দরজা খোলায় মন দিতে যাব তার আগেই ছেলেগুলোর মাঝে একজন বলে উঠে,
~ কি হইল মেডাম সাহায্য লাগব নাকি?

আমি জাবাব দিলাম না দরজা খুলে ভিতরে বসতেই একটা ছেলে দরজা আঁকড়ে ধরে। ভয়ে আমার হাত পা কাঁপাকাঁপি করছে। ঘাম দিচ্ছে খুব করে। প্রেগন্যান্ট হওয়ার পর থেকে আমি প্রচণ্ড দূর্বল হয়ে পরেছি। এটা হওয়ারই ছিল। এ নিয়ে উনার কত কত টেনশন। ডাক্তার লিজার অবস্থাই খারাপ করে দিয়েছে। এটা ওটা জিগেস করতে করতে।

উনাদের হসপিটালে কাজ করে বলেই এত প্রশ্নে আর এত কিছু সজ্জ করেছে তা না হলে আরো আগে উনি পালাতো। এখন কেন যেন আরো ভয় লাগছে। ভয় লাগাটা এই টাইমে মোটেও উঁচিত না। আমি নিজেকে যথা সম্ভব উত্তেজিত করতে চাচ্ছি না। কিন্তু ভয়ে বার বার বুক কাঁপছে। মনে মনে আল্লাহকে বলছি উনাকে তাড়াতাড়ি এখানে পাঠিয়ে দিতে। ছেলেগুলো বিশ্রী হেঁসে দাতঁ বের করে একজন আর একজনকে বলছে
~ ভাই মাইয়া তো নয় যেন আগুনের গোলা। এরে দিয়ে আজকা কাম হইব না। এরে তো সারা জীবন নিজের কাছে রাখলেই কাম হইব।

কি কস তোরা?
~ হোরে। তা এই ফুলডারে তো নাম দেওয়া লাগে। কি নাম দিবি ক?
~ এইডা একে বারে গোলাপের লাহান। তাই লাল গোলাপ দিমু নাম। কি কস তোরা?
~ হো। এই লাল গোলাপ নিজে নিজেই চইল্লা আয়। যানি আইবা না। তোমাগোরে ভালা কথা কইলে হয় না। বুইঝলা। ওই হাত ধর লাল গোলাপের।

আমি এবার ভয়ে ফুঁফিয়ে উঠলাম। কেঁদেই দিলাম। আমার বুক ধুকধুক করছে। মনে মনে শুধু আল্লাহ বাঁচাও বলে চলেছি। আর চারদিকে চোখ বুলিয়ে উনাকে খুজছি। কোথাই আপনি? আমি হাত পা গুটিয়ে সিটে বসে পড়লাম। একটা ছেলে আমার হাত ধরতে আসায় এক লাথি দিয়ে বেড়িয়ে এলাম। আমি কিছুদূর যেতেই আবার ঘিড়ে নিয়েছে আমাকে। আমি ভয়ে এবার চুপসে গেছি। ছেলেগুলো বলাবলি করছে
~ ওই লাল গোলাপরে যতটা সহজ ভাবলি ওতটাও না বুঝলি। হাত ধরে কাধে উঠাই নে।

বলেই এক হাত বাড়িয়ে দিল আমি ভয়ে চোখ বুঝে নিলাম। হঠাৎ কানে কারো আহহহহহ্ চিৎকার ভেসে আসায় চোখ খুলে তাকালাম। সামনে তাকিয়ে দেখি উনি এক হাতে আইসক্রিমের বক্স আর ঝালমুড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছেন আর এক হাতে ছেলেটার হাত মুড়ে দিয়েছে। উনাকে দেখেই আমার জান ফিড়ে এসেছে। এক লাফে ঝাঁপিয়ে তার বুকে পড়লাম।

উনি মনে হয় ছেলেটার হাতটা আবার মোচড় দিয়েছে সাথে সাথে চিৎকার ভেসে এসেছে কানে। আমি অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে তাকালাম। উনার চোখ লাল হয়ে আছে। কপালের রগ গুলো ফুলে উঠেছে। চোয়াল শক্ত হয়ে গেছে। ছেলেটার সাথের বাকি ছেলে গুলো মাতাল হওয়ায় এদিক ওদিক তাকিয়ে ডুলছে। ছেলেটাকে ছুড়ে দিয়ে হাতের জিনিস গুলো আমার হাতে দিয়ে ছেলেটাকে আবার তুলে দাঁড় করালেন। চিৎকার করে বলে উঠে,
~ গোলাপে হাত দিতে হলে ত আগে কাটাঁ খেতে হয়। তাই না? তা তোকে কোন স্টেপে কাটাঁর সাথে পরিচয় করাব বল?

~ দেখ আমরা তোর লগে লাগতে আসিনাই। মাইয়াটারে দে আর যা এখান থেকে।। (পাশের ছেলেগুলো এগিয়ে এসে বলে উঠে)
~ তাই নাকি? তা আমার জানে হাত দিবি আর আমি শুধু দেখব? আবার বললি তোদের দিয়ে দিতাম? শালা আমি যার পায়ে ব্যথা হবে বলে কোলে নিয়ে ঘুড়ি, বালিশকে সেফ মনে হয়না বলে বুকে ঘুমপাড়ায়, পড়ে যাবে দেখে জড়িয়ে রাখি তাকে তোকে দিয়ে দিমুশালা হাসালি

বলেই উড়াধুনা শুরু। এক একটাকে ধরে এমন এমন কেলানি দিয়েছে যে আমার অশ্রুসিক্ত চোখেও হাসি পেয়ে গেল। হাতের জিনিস গুলো গাড়ির উপড় রেখে তালিও দিলাম। উনি একবার ভ্রুকুঁচকে তাকিয়ে আবার মারা শুরু করে। আমি তো অবাক হয়ে দেখছি। উনি যে এত মাইর পারে আমার জানা ছিলনা। একদম বক্সিং খেলছে মনে হচ্ছে। ছেলেগুলো দৌড়ে পালাল। উনি রাগী চোখে আমার সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ল। ঝাঁঝালো কন্ঠে বলে উঠল

~ ডাকতে পাড়লে না? আমি কি বেশি দূরে ছিলাম নাকি? একটু চিৎকার দিয়ে ডাকলেইত আর এভাবে কাদঁতে হত না। কি অবস্থা করেছে কেঁদে কেটেঁ।। (চোখমুখ মুছে দিতে দিতে)
~ বা রে চিৎকার করলে যদি আমার জানের কিছু হয়। এই সময় চিৎকার করা মোটেও উঁচিত না যানেন না? (পেটে হাত দিয়ে ডুলে ডুলে)

উনি আমাকে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে নিজেও বসে পরে। আর আইসক্রিম এগিয়ে দিতে দিতে বলে উঠে,
~ আমাকে তো এক বারও জান বলে ডাকো না। সব ভালোবাস শুধু তোর বুঝলি মাই প্রিন্সেস। তোর মা আমার বেলায়ই যত কিপটামি করে। সবার বেলায় ডালা ডালা ভালোবাসা।

পেটে একটা চুমু খেয়ে। আবার বলে উঠে,
~ কি পরিস্থিতিতে ফেললে দেখছ? নিজের প্রন্সেসকেও আমার হিংসে হচ্ছে। ভাবা যায়? আল্লাহ বাঁচাও?

আমি হেঁসে দিলাম। আইসক্রিম খাচ্ছি আর উনাকে দেখছি। উনি একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি চোখ নাচিয়ে বলে উঠলাম,
~ এভাবে কি দেখছেন? আপনার খেতে ইচ্ছে করলে খান।

উনি এবার আমার দিকে ঝুঁকে ঠোঁটে ঠোঁট ডুবিয়ে দিলেন। আমি চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছি। হাতের আইসক্রিম চুয়ে চুয়ে পড়ছে উনার টিশার্টে। সেদিকে তার তেমন খেয়াল নেই। সে আপন কাজ আপন গতিতে করছে। কিছুক্ষণ পরে ছেড়ে দিয়ে বলে উঠে,
~ এখন চেঁচাবেনা। আমি কিন্তু আগেই অনুমতি নিয়ে নিয়েছি। তাই চিৎকার চেঁচামেচি নট এলাউ। আইসক্রিমে মননিবেশ কর আয়ুজান।

উনার বাঁকা হাসি দেখে আমি বিরক্ত হলাম। আবার আইসক্রিম খাওয়ায় মনযোগ দিলাম। খাওয়ার এক পর্যায়ে আমার মাথা ঘুড়ে উঠল। গড়গড় করে বমি করে তার গা ভাসিয়ে দিলাম। উনি আমার মাথা চেপে আছে। আর চিন্তিত স্বরে বলে উঠে,
~ কি হল আবার? শান্ত হও।

আমি বমি করে তার টিশার্ট ভড়িয়ে দিয়েছি। সিটের সাথে হেলান দিতে যাব উনি বলে উঠে,
~ এক মিনিট

বলেই নিজের টিশার্ট খুলে বাইরে ছুড়ে দিলেন। আমার সাইডে এসে আমাকে কোলে নিয়ে আবার তার পাশে বসে পড়ে। উনার উমুক্ত বুকে আমার মাথাটা চেপে ধরে। আমার ক্রমশ নিস্তেজ লাগছে নিজেকে।

আমি উনার মুখের দিকে একবার তাকালাম। আমার চাইতেও তাকে বেশি অসুস্থ লাগছে। করুন সুরে বলে উঠে,
~ জাস্ট টেইন মিনিট আয়ুজান। আমরা বাসায় চলে যাব এখনই। আগেই বলেছি আবহাওয়া ভালো না তুমি অদ্ভুত অদ্ভুত বয়না কেন ধর কে যানে। বাই দ্যা ওয়ে আমাদের আগে হসপিটালে যাওয়া উঁচিত

তার শেষ কথাটা শুনেই আমার মাথা ঘুড়ে উঠেছে। হঠাৎ চোখ ঝাপসা হয়ে এল। ধীরে ধীরে উনার কাধে থাকা আমার হাতগুলো আলগা হয়ে এল। আমি নিস্তেজ হয়ে তার বুকে ডুলে পড়লাম।

পর্ব ২৩

কাঁচের টেবিলটা উপড়ে তুলে ধাম করে নিচে ছুড়ে দিতেই এক বিকট শব্দে সম্পূর্ন্য হসপিটাল কেঁপে উঠেছে। আমি চোখ দিয়ে সম্পূর্ন্য রুম একবার চোখ বুলিয়েই আমার প্রান আত্না উঠে গেছে। গলা শুকিয়ে আসছে। যে সত্য চার মাস নিজের মাঝে ধারন করে রেখেছি তা কি তাহলে আযমান যেনে গেছে? সেন্সলেস হওয়ার পরে আর কিছু মনে নেই।

চোখখুলে নিজেকে হসপিটালের বেডে আবিষ্কার করেছি। তখন কানে শুধু উনার চিৎকার এসেছে খুব রেগে ডাক্তারের কলার ধরে বলছে
~ ডাক্তার লিজা কোথায়? আমার সামনে নিয়ে আসুন। খুন করে দিব বলে দিলাম। এত বড় কথা কিভাবে লুকাতে পারলো? আর আপনারা কিসের ডাক্তার? রোগীর গার্ডিয়ান আমি আমাকে না জানিয়ে কি করে এত বড় সিদ্ধান্ত নিলেন? বলেন? (বলেই ধাড়াম। মানে কেবিনের কাঁচের টেবিল ছুড়ে দিয়েছে)

রুমের কিছুই ঠিক নেই সব ভেঙে গুঁড়িয়ে দিয়েছে। আমি নিঃশব্দে কাদঁছি। উনাকে দেখেই ভয়ে আমার সারা শরীর কাপঁছে। উনি সত্যিটা জানলে এতটা ভয়ঙ্কর হবে আমি ভাবীনি। কিন্তু আমার কাছেও সেকেন্ড অপশান ছিল না। তাই আমি এটা করেছি। আযমান নিজের মাথার চুল গুলো নিজের দুহাতে টানছে আর চেঁচিয়ে উঠছে। তার চোখগুলো অসম্ভব লাল হয়ে আছে। হাত দিয়ে গড়গড়িয়ে রক্ত পড়ছে। যেটা আমার মোটেও সজ্জ হচ্ছে না। আমার দুই হাতে এক হাতে স্যালাইনের নল আর অপর হাতে রক্তের নল।

আমি চোখ বুলিয়ে মা বাব আম্মু আব্বু ভাইয়াকে খুঁজেই চলেছি তারা কোথায় আর কেনোইবা উনাকে আটকাচ্ছে না। ডাক্তার নার্স সবাই কাচুমাচু হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সবার মাঝেই ভয়েরা হানা দিয়েছে। ভয়েই কেউ কথা বলছে না। আমি এবার নিজের ভয়কে দমিয়ে বলে উঠলাম,
~ আপনি এমন কেন করছেন? কি হয়েছে বলেন আমাকে?

আমার কন্ঠ শুনে উনি চকিতেই আমার দিকে ভয়ঙ্কর ভাবে তাকিয়ে আছে। ভয়ে ত আমার কলিজা শুকিয়ে গেছে। তার এই অস্বাভাবিক লাল চোখ আমি আমার জীবনে এই প্রথম দেখছি। ঘামে সারা শরীর একাকার হয়ে আছে। এসি চলছে তবুও উনাকে এমন ঘামাচ্ছে কেন।

ইশশ্ হাত থেকে কত রক্তেইনা ঝড়ছে। আমি ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নিলাম। উনি এবার ডুলডুল পায়ে আমার সামনে এগিয়ে আসছে। আর ভয়ে আমার বুক ক্রমশ ধাকধাক শব্দ করছে। উনার চুলগুলো এলোমেলো হয়ে আছে। লাল লাল চোখ পানিতে ভাসছে মনে হচ্ছে। নাক কান গাল লাল হয়ে আছে। উনি ধীর পায়ে এবার আমার পাশে দাঁড়িয়ে পড়লেন। আটকে আসা গলায় বলে উঠে,
~ তুমি ধোঁকা দিলে আমায় আয়ুজান?

বুকটা কেঁপে উঠল তার কথায়। আমি কিছু বলতে পারছিনা। চোখ নামিয়ে নিলাম। কি বলব তাকে? সেটাই মনে মনে খুঁজছি। কি বলা উচিত? কি বললে উনি ঠান্ডা হবে তাই ভাবছি। উনি আবার ঠান্ডা মিনমিনে গলায় বলে উঠে,
~ কিছু জিগ্যেস করেছি তোমাকে। তুমি আমাকে ধোঁকা দিয়েছ আয়ানা? আর কেন দিলে তাও বল? ফার্স্ট। জাস্ট ওয়ান মিনিট টাইম দিলাম। বল?

আমি এবার হাত কচলাতে শুরু করলাম। ভয়ে আমার হিঁচকি উঠছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। ভয়ে দুই তিনটা শুকনো ঢোক গিললাম। আমি ভয় মিশ্রিত চোখে তার দিকে তাকাতেই আবার চোখ নামিয়ে নিলাম। কি ভয়ঙ্কর লাল হয়ে আছে চোখ গুলো। মনে হচ্ছে সব ভস্ম করে দিবে চোখের আগুনে। আমার কোন শব্দ বের হচ্ছে না দেখে উনি চেঁচিয়ে বলে উঠে,
~ বলবে তুমি?

বলেই পাশে থাকা টেবিলটা ছুড়ে মাড়লেন। সাথে সাথে বিকট এক শব্দে সারা শরীর কেঁপে উঠেছে। আমি ভয়ে কানে দু হাত গুঁজে গুটি মেড়ে বসে পড়লাম। উনার এই ভয়ঙ্কর রূপ আমি প্রথম দেখছি। এই আযমানকে আমার সম্পূর্ন্য অপরিচিত মানুষ লাগছে। উনি এবার আমার দুই বাহু ধরে কাছে টেনে নিলেন আমাকে তার মুখোমুখি করে বলে উঠে,

~ কেনো করলে এমন বল? আমার চোখের দিকে তাকাও আয়ানা? কেনো এখন চোরের মত চোখ লুকাচ্ছ আয়ানা? কেনো? কেনো বলনি আমাকে এত বড় কথা? কেনো?
~ কি হচ্ছে এখানে? আর মিআযমান কি হয়েছে?

ডালিজাকে দেখে ভয়ে আমার হাত পা ধীগুণ গতিতে কাঁপা কাঁপি করছে। উনিত আগেই রেগে আছে। লিজাকে দেখে না যানি কি করে? উনি আমার থেকে চোখ সরিয়ে লিজার সামনে দাঁড়ালেন। একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বলে
~ তা আপনি এতক্ষণ কোথাই ছিলেন?

~ ওটি ছিল। কিন্তু কেবিনের এমন অবস্থা কে করেছে? আমি তো কিছুই বুঝতে পারছি না? আর আয়ানার কখন জ্ঞান ফেরেছে? ও এখন ভালো আছে ডানিশা?

ডানিশা একবার আমার দিকে একবার উনার দিকে তাকালেন। কিন্তু কিছু বললেন না। চোখ নিচে নামিয়ে নিলেন। আযমান এবার সরু হয়ে লিজার দিকে তাকিয়ে বলে
~ আয়ানা প্রেগন্যান্ট এটা যানেন আপনি ডালিজা?

~ অবশ্যই যানি উনি তো আমার কাছেই টেস্ট করিয়েছে। কিন্তু এটা আপনিও যানেন। হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন? আর আয়ানা আমার রেগুলার পেসেন্ট। আপনি নিজেইত নিয়ে আসতেন তাহলে এমন প্রশ্নের মানে কি? সব তো আপনি যানেন।
~ ওও সব আমি যানি? এটাই আপনার মনে হয় তাই না? তাহলে আমি এটা কেন যানিনা আয়ানার প্রেগন্যানসিতে কম্পিলিকেসন আছে? তাও নরমাল না? কেন যানি না এটা বলেন?

উনার চিৎকারে উপস্থিত সবার কাপাঁ কাঁপি শুরু। লিজা আমার দিকে অবাক হয়ে তাকায়। আমি অসহায়ের মত তাকিয়ে আছি তার দিকে। মাথা নেড়ে বুঝাতে চাইছি উনি যেনে গেছে। লিজা নিরাশ হয়ে নিচের দিকে তাকায়। আযমান এবার আরো রেগে চিৎকার করে বলে উঠে,

~ আপনার সাহসত কম না আপনি আমার হসপিটালে থেকে আমাকেই ধোঁকা দিলেন? আপনি যানেন আমি আপনার লাইসেন্স এখন এই মুহূর্তে ক্যান্সেল করতে পারি? ইউ নো দ্যাট? আর আমি সেটাই করব। আপনার মত ডাক্তারের প্রয়োজন নেই আমার। আপনার সাহস বড্ড বেশি। তা না হলে এত বড় কথা কিভাবে লুকাতে পাড়লেন। কিভাবে আমাকে যানানো প্রয়োজন মনে করলেন না? আমি বাচ্চার বাবা। ওকে আমার প্রয়োজন কি না সেটা পরের কথা কিন্তু হাজবেন্ড নিসেবে আমার ওয়াইফকে সম্পূর্ন্য নিরাপদ রাখা আমার দায়িত্ব। আপনার এই একটা কথা লুকানোর জন্যে ওর লাইফ রিক্স কত বেশি আপনি যানেন? মাএ ১০%। মাএ ১০% ওর সেফটি লাইন। ৯০% রিক্স নিয়ে কিভাবে আপনি ওকে বাচ্চাটা রাখার অনুমতি দিলেন ডালিজা ট্যাল মি? হাউ? কেন করলেন বলেন? আর বলতে হবে না আপনার লাইসেন্স ক্যান্সেল করার ব্যবস্থা করছি।

বলেই মোবাইলটা পকেট থেকে বের করে। লিজা আমার দিকে অসহায়ের মত তাকিয়ে আছে। আসলেইত তার কোন দোষ নেই সব আমি নিজে করেছি। আমি তাকে এটা বলতে নিষেধ করেছি। এখন আমার কি করা উচিত? আমি চারপাশে চোখবুলিয়ে সাহস নিয়ে একটা শ্বাস নিলাম। এবার আমি চিৎকার করে বলে উঠলাম,
~ ডালিজার কোন দোষ নেই?
~ তুমি সবার জন্য দিল দরদী আমি জানি এসব বলে কাজ হবে না।। (বলে মোবাইলটা কানে দিলেন)
~ আমি সব যানতাম। আমি আমিই উনাকে বলতেনা নিষেধ করেছি। শুধু নিষেধ না ফোর্স করেছি।

চোখ বুজে এক নিশ্বাসে বলে দিলাম। সাথে সাথে ঠাসসস করে শব্দ হল। আমি চোখ খুলে তাকিয়ে দেখি উনি লাল লাল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। হাতের মোবাইলটা খন্ডে খন্ডে বিভাজিত হয়ে ফ্লোরে পড়ে আছে। আমি ভয়ে চাদুরটা টেনে নিলাম। চারপাশে পিনপিনে নিরবতা কেউ কোনো কথা বলছেনা। সবাই এতসময়ে এটা বুঝে গেছে উনার রাগ কতটা ভয়ঙ্কর। আমি চোখ নামিয়ে নিলাম। ফ্যাসফ্যাস করে নিশ্বাসের গতি বেড়েই চলেছে।

আমি নিজেকে শান্ত রাখতে চাচ্ছি কিন্তু পারছিনা। উনি এবার ভাবলেশহীন ভাবে আমার সামনে দাঁড়ালেন। হাটুগেড়ে বেডের পাশে বসে পরলেন। রক্তাক্ত হাত এগিয়ে দিলেন আমার দিকে। আমি তাকিয়ে আছি তার হাতের দিকে। উনি এবার আমার ডান হাত নিজের রক্তে ভেঁজা হাতে নিলেন। আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি। হাতটা তার গালে ছুঁয়ে বলে উঠে,
~ আমার ভালোবাসায় তুমি কি ত্রুটি খুঁজে পেয়েছ আয়ুজান?

আমি মাথা দুপাশে ঝাঁকালাম যার অর্থ না। উনি এবার করুন চোখে আমার দিকে তাকালেন। তাকিয়ে বলে উঠে,
~ তা হলে কেন এমন করলে?

কেন করলে আয়ুজান? যানো তোমাকে আয়ুজান কেন ডাকি? কারন একটাই তোমাতেই আমার জান। তাহলে কেনো এমন করে আমাকে মারতে চাও বল? কেনো বুঝলেনা আমাকে? কেনো এত যন্ত্রনা দিচ্ছ আমার বুকে? কেনো তুমি আমার বেলায় এত নিষ্ঠুর? এত ভালোবেসেও কি নিষ্ঠুরতাই আমার প্রাপ্য বল? বলছো না কেনো তুমি?

উনার এমন হৃদয় কাপাঁনো চিৎকারে আমি কেঁপে উঠলাম। উনি এবার উত্তেজিত হয়ে প্রথম থেকে বলতে বলছে। ভয়ে আমার অবস্থা খারাপ। উনার ধমকানিতে বলতে শুরু করলাম
~ রিপোর্ট পাওয়ার পরের দিন ডালিজা আমাকে কল করে বলেছে এই বাচ্চা নিলে লাইফ রিক্স ৯০%। তাই না নেওয়াই বেটার হবে। কিন্তু আমিই তাকে বলেছি আমি নিতে চাই। এতেও উনি রাজি হল না আপনাকে বলতে চেয়েছে তাই আমি বলেছি উনাকে চাকরি থেকে বেড় করে দিব। তাই নিজের চাকরি বাঁচাতে উনি এটা করেছে। এতে উনার কোন দোষ নেই। আমি মা হতে চাই আযমান।

এতে লাইফ রিক্স হলে হবে। কিন্তু পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর জিনিসটার ভাগিদার আমিও হতে চাই। আমিও চাই আমার কোল আলো করে আমাদের প্রিন্সেস আসবে। সরি আমার আপনাকে বলা উচিত ছিল। তাই আমি সরি বলছি। তবুও এমন পাগলামি ছাড়েন প্লিজজজ।

একদমে কথা গুলো বলে তার দিকে তাকিয়েই আমি অতৎঁকে উঠলাম। চোয়াল শক্ত করে লাল লাল চোখে আমার দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ভয়ে আমি আবার চোখ নামিয়ে নিলাম। উনি কঠিন কন্ঠে বলে উঠে,
~ আজ আমি সত্যেই বুঝতে পারছি তুমি আমাকে বিন্দু মাএও ভালোবাস না। আমিই কাঙ্গালের মত তোমাকে ভালোবেসে নিজেকে শেষ করে দিচ্ছি। আমারো তোমার মত নিষ্ঠুর হয়ে নিজের প্রিন্সেসকে নিয়ে ভাবা উচিত তাই না? তুমি থাকলেই কি না থাকলেই কি? রাইট?

আমি অশ্রুসিক্ত চোখে তার দিকে তাকালাম। উনি এবার শব্দ করে কেঁদে উঠলেন। আমি অবাক নয়নে তার কান্না দেখছি। একটা লোক এতটা ভালোবাসতে কি করে পারে? উনি হঠাৎ আমাকে জাপ্টে জড়িয় ধরে। তার চোখের প্রতিটি ফোটা জানান দিচ্ছে কতটা ভালোবাসে আমাকে। এই লোকটাকে ছেড়ে আমিও যেতে চাইনা। কিন্তু কিছু করার নেই। উনি কান্নার গতি বাড়িয়ে দিল। সবাই তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। এতক্ষণে বাসার সবাইও চলে এসেছে।

সবাই অবাক হয়ে সব দেখছে। উনি কান্নায় জড়িয়ে আসা কন্ঠে চিৎকার করে বলে উঠে,
~ তাহলে আমি কেনো এটা মানতে পারচ্ছি না? কেনো আমার কলিজা ছিঁড়ে যাচ্ছে? কেনো আমার দম আটকে আসছে? কেনো নিঃশ্বাস নিতে পারছি না? কেনো এই যন্ত্রনা হচ্ছে? কেনো ভয়ে আমার হৃদপিন্ড চলা বন্ধ করে দিচ্ছে? কেনো আমার দম খিঁচে আর্তনাদ আসছে? কেনো আমি জীবিত থেকে মৃত্যুর সাদ পাচ্ছি? কেনো আমার সব বিষাক্ত লাগছে?

কেনো আমার নিজের রক্ত নিজের প্রিন্সেস নিজের অনাগত সন্তানের প্রতি নারাজি কাজ করছে? কেনো তাকে শত্রু মনে হচ্ছে? কেনো শুধু মনে হচ্ছে তোকে আমি চাই না? কেনো তোমার বিনিময়ে আমি নিজের জীবনটাকেও মেনে নিতে পারব না? কেনো সব অন্ধকার লাগছে? কেনো? কেনো? এত কেনোর কোনো আন্সার আছে তোমার কাছে? থাকলে বল প্লিজজজ? আমার এত কষ্টের ঔষুধ আছে বল? তাহলে দেও না প্লিজজজ।

আমি তাকে এখনো জড়িয়ে আছি। চোখে বাধ ছাড়া কান্নার ঝড় বইছে। মনের মাঝে উত্তাপ বইছে। সবার চোখে পানি দেখে আমি অবাক হলাম। ভাবছি সবাই উনার কষ্ট এতটা ফিল করতে পারছে? কিন্তু আমার কেন ফিল হচ্ছে না? আমি বাবুকে বেশি ভালোবাসি তাই? এটা তো সার্থপরের মত হল? হ্যাঁ নিজেকে আমার বড্ড সারথ্যপর মনে হচ্ছে।

আমি সারথ্য পরের মত তার সাথে এটা করতে পারলাম? মা হওয়ার তৃপ্তির জন্য আমি নিজের স্বামীকে এভাবে দুঃখ দিব আমি আসলেই ভাবতে পারিনি। ভেবেছি আমি ছাড়াও কেউ তাকে ভালোবাসার মত রেখে যেতে পারব। কিন্তু উনি এতটা অসুখী হবে আমি বুঝতে কেনো পাড়লাম না? কেনো তুমি~হলেই~চলবে কথার মানে বুঝলাম না? এত কেনোর জবাব একটাই আমি মা হতে চাই। সবার কথা উপেক্ষা করে আমি মা হতে চাই। আমি উনার পিঠে হাত বুলালাম। উনি আবার ক্ষীণ কন্ঠে বলে উঠে,

~ উত্তর দিলে না যে? নেই উত্তর? প্রতিবারের মত আমি এবারও তোমার হাত ধরে রাখতে চেয়েছি আয়ুজান। এবারও তোমাকে করা প্রশ্নের উত্তর আমি নিজে দিতে চেয়েছি। অনেক খুঁজে কি আন্সার পেয়েছি যানো? না তুমি যানো না। যানবে কি করে বোকা তো তুমি। আমি বলি?

শুনবে? ভালোবাসি তোমাকে আমি। শুনতে পাচ্ছো আমি ভালোবাসি তোমাকে। তাই এত এত কেনোর সৃষ্টি। বুঝতে পারচ্ছ? আর আমার ভালোবাসার বদলে তুমি কি দিলে? কিছু না। এবারও নিজের জন্য চেয়ে নিলে। নিজে মা হতে চাও তাই এমন করলে? না কি আমাকে বেস্ট গিফট দিতে চাও বলে এমন করলে?

কিন্তু তুমি কি যানো আমাকে বেস্ট গিফট দিতে গিয়ে আমাকেই হারিয়ে ফেললে। আমাকে তুমি নিঃশ্ব করেছ অনেক আগেই এখন নিঃশেষ করতে চাও? ঠিক আছে আমি নিঃশেষ হতে চাই তোমার হাতে। তোমার মা হওয়ার বিনিময়ে আমি নিজেকে নিঃশেষ করতে চাই। তুমিও থাকবে না আমিও না। তবে প্রিন্সেস থাকবে। সবাই আয়ানার মেয়ে বলে জানবে। সব কিছুর বিনিময়ে ভালোবাসি তোমাকে। আমিতো বলেছিলাম তুমি হলেই~চলবে তবুও কেন করলে?

উনি থেমে থেমে কাদঁছে। আমি বুঝতেই পাড়ছিনা কি করব। উনার কার্য দেখে মনে হচ্ছে আমি সত্যিই মারা গেছি। তার প্রতিটি কথায় আমি অপরাধী। উনি এবার মাথা তুলে আমার মুখের সামনে নিজের মুখ নিয়ে আসে। করুন চোখে তাকিয়ে রক্তাক্ত হাত দিয়ে দুইগাল আঁকড়ে ধরে। চোখমুখ ফুলে একাকার অবস্থা তার। আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে বলে উঠে,

~ ডালিজা বেস্ট ডাক্তারদের আমি হসপিটালে দেখতে চাই। তোমার ১% কেও আমি কাজে লাগাতে চাই। আল্লাহর উপড় বিশ্বাস বরাবরের মত আছে। তবে তোমাকে ক্ষমা করতে পারবো না আয়ুজান। সরি। সরিটা তোমাকে না আমার নিজেকে দিলাম। ভুলটা তো আমিই করেছি।

নিজের ভালোবাসার সঠিক যত্ন নিতে পাড়লাম না। তা না হলে এত বড় কথা লুকাতে পারতে না। দোষী আমি। ব্যর্থ আমার ভালোবাসা। তবুও বলব ভালোবাসি। তোমাকে ছাড়া বাঁচা মশকিল হলেও আমি বাঁচতে চাই না। ধুকে ধুকে মরব না। তুমি নেই তো আমিও নেই।

কথাটা বলে আমার বুকে ডুলে পড়লেন। আমি সহ সবাই অবাক। আমি কিছুক্ষণ ডাকলাম। কিন্তু শারা পেলাম না। ডাক্তার এগিয়ে দেখে বলে উঠে,
~ অতিরিক্ত মানুষীক চাপে সেন্সলেস হয়ে গেছে। আর হাত থেকেও বেশ রক্ত ঝড়েছে। তাই সব মিলিয়ে এমনটা হয়েছে। ইনজেকশন দিয়ে দিব আপনি টেনশন নেবেন না একদম। তাহলে আপনার জন্যও

আমার কানে কথাই আসছেনা। কেমন যেন ঘুড়ছে সব। ঝাপসা হয়ে যাচ্ছে সব। সব অন্ধকার লাগছে। সাথে অপরাধীর ভার আমাকে আরো চেপে ধরছে। আমি কি সত্যিই অপরাধী? কিন্তু আমিও যে আপনাকে খুব ভালোবাসি। সত্যিই ভালোবাসি।

পর্ব ২৪

সাফা ভিড় ঠেলে রিভলভার হাতের মানুষদের পিছনে ফেলে নিভ্রনীলের সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে। তাকে এভাবে ভিতরে ডুকতে দেখে উপস্থিত সবার চোখ কোটর থেকে বেড়িয়ে আসছে প্রায়। নিভ্রনীল আজও মাক্স পড়েছে। সাফার হাতে হকিস্টিক স্টিকটা সে এবার ক্রমাগত ঘুড়াতে শুরু করে।

রাগে তার মুখশ্রী লাল আভায় ফুটে উঠেছে। প্রচন্ড রাগ নিয়ে সে তার হাতের স্টিকটা দিয়ে নিভ্রনীলের মাথায় আঘাত করে। নিভ্র নিজের জায়গা থেকে দুই পা পিছিয়ে পড়ে তার মাথাটা হালকা কাত হয়ে পড়ায় সানগ্লাসটি একটু ঝুঁকে পড়ে। বারি দেওয়ার সাথে সাথে সাফার মাথায় দশ বারোটা রিভলভার অনায়াসে উঠে গেছে। সাফা একবার উপড়ের দিকে তাকিয়ে আবার নিভ্রের বরাবর মুখ করে তাকিয়ে থাকে।

মা বলেছিল ভয়কে জয় করতে সাহস লাগে। রাতে ভূতের মুভি দেখে সে ভয়ে বাবা মায়ের মাঝে গুটিশুটি মেড়ে ঘুমানোর সময় মা বলত। ভয় পেলে পিছনে তাকাতে নেই। তাহলে বিপক্ষ দল দূর্বল ভাবে। তাই সেও তাকাবেনা। তাই নিভ্রের দিকে তাকিয়ে আছে। নিভ্রের মাথার একসাইডে রক্তের গড়াগড়ি হচ্ছে। তবুও সে এস্ট্রং ডান হাত তুলে ইশারায় রিভলভার গুলো নিচে নামাতে বলে তারা গান নামাতেই সাফা এক বিস্তর হাসি দিয়ে বলে উঠে,

এবার হল ইকোল ইকোলট্রিট ফর ট্রেট। (নিভ্রর হাত টেনে তাতে কিছু টাকা দিয়ে বলে উঠে)দশহাজার আছে। এর বেশি আর লাগবে না। আপনি নিজের ট্রিকমেন্ট করিয়ে নিয়েন। মিভিলেলললনবাবা বলেছে অন্যায় যে করে এবং যে সহে সকলেই সমান অপরাধি তাই আমি আপনার পাওনা দিয়ে নিজেকে অপরাধ মুক্ত করলাম।

আমাকে মেড়েছেন এবার আমিও মেড়েছিসোধ বোধআর হ্যা হ্যা এতই যখন নিজেকে শক্তি শালী মনে হয় তবে এই সব চেলা পেলা রাখার কি আছে বলেন ত। আমার তো মনে হয় আপনি নিজে কিছুই করতে পারেন না। শুধু এদের কে দিয়ে করান। আসল বীর সেই যে বডিগার্ড নিয়ে ঘুড়ে না। বুঝলেন? ফ্রীতে জ্ঞান দিলাম কাজে লাগাতে পারেন টা টা

কথাটা বলে স্ট্রিকটা ফেলে দিয়ে নিজের গায়ের উড়নাটা উড়িয়ে দিতেই নিভ্রের চোখে মুখে রেশম পালকের মত তা আছঁড়ে পড়ে। ঝাপসা চোখে নিভ্র সাফার দাতঁ কেলানো হাসিই দেখতে পেল। তারপরই সাফা ভিড় ডেলে আবার চলে গেল। এত এত লোকের ভিড় থেকে বেড়িয়ে সে এক বিস্তর হাসি হাসল। মনটা কেমন নেচে নেচে উঠছে। ফুরফুরে মেজাজের লাগছে তাকে। মনে মনে ঠিক করেছে ঝুমা, মুক্তা, শিরিন, সাব্বির, আর অভি ভাইয়াকে ট্রিট দিবে

নিভ্র এখনো দাড়িয়ে আছে। তার মত প্রভাবশালী ছেলেকে একটা পুচকি মেয়ে এভাবে মেড়ে যাবে ব্যাপারটা তার লোকেরা স্বপ্নেও ভাবে নি। তাদের এটা ভেবেই ভয় লাগছে। না যানি এ রগ চটা ছেলে তাদের কি হাল করে।

পর্ব ২৪। (অন্তিম পাতা)

টিপটিপ করে চোখ মেলে তাকালাম। চারপাশে একবার দেখে নিয়ে মনে হচ্ছে আমি নিজের রুমেই আছি। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি আমাকে বাসায় নিয়ে আসার লোক আর যেই হোক আযমান না। তাহলে এত তাড়াতাড়ি আমি কি করে এলাম? আমি পাশে পিড়ে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি উনি আমার হাত ধরে বসে আছে। দেখেই প্রচুর ক্লান্ত লাগছে। আমি উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম

~ বাসায় নিয়ে এলেন কখন? আমি তো বুঝতেই পাড়লাম না। আর আপনি এখন কেমন আছেন? এত হাইপার কেন হন বলেন তো? এভাবে রিয়েকশন দিচ্ছেন মনে হচ্ছে আমি ম
~ তোমার কি মনে হচ্ছে আমি শুনতে চাই না আয়ুজান। কথা কম বলবে এখন থেকে। কোথাও যেতে হলে আমাকে বলবে। হাঁটতে ইচ্ছে হলে আমাকে বলবে।
~ মিশেখ আমরা চেকআপ করে নি?

দরজার দিকে তাকিয়ে এত এত ডাক্তার নার্স দেখে আমি অবাক হলাম। তার চাইতে অবাক করা ব্যাপার রুমটাতে বেস পরিবর্ত এসেছে। অনেক কিছু উল্টাপাল্টা যেমন দরজার রং, আলমারি মিসিং, রুমের রংটাও কেমন যানি নতুন নতুন। বারান্দা জানালাও কেমন যেন নিজের জায়গায় নাই।

এত পরিবর্ত কেনো রুমের? আমি একটু উঠে বসলাম। উনি আমাকে ধরে পিছনে বালিশ দিয়ে তাতে ঠেস দিয়ে বসিয়ে দিলেন। ডাক্তারা চেকআপ করে কি কি জানি বললেন উনাকে উনার মুখটা শুকিয়ে ছিল আগে থেকেই আরো শুকিয়ে গেল। চিন্তিত ভঙ্গিতে আমার পাশে বসে পড়লেন। আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে।

আছে তো আছেই চোখই আর সরাচ্ছে না। আমি অবাক হলাম। উনি এভাবে তাকিয়ে থাকার মানুষ না। তবে এভাবে তাকিয়ে আছে কেনো? আমি কিছু বলতে যাব তার আগেই উনি আমার কোলে মাথা দিয়ে দিলেন। কোমড় জড়িয়ে কি যেন বিড়বিড় করলেন। তারপর কয়েকটা চুমু খেলেন। উনার ভারী নিশ্বাস গুলো আমার পেটে পড়ছে। মানে সে ঘুমিয়ে গেছে। উনি এত তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে গেলেন।

হঠাৎ দরজায় একজন নার্স এসে দাঁড়ালেন। আমাদের এভাবে দেখে মুখ ঘুড়িয়ে চলে যেতে নেয়। আমি কাছে ডাকলাম। উনি ধীর পায়ে আমার সামনে এসে দাঁড়ালেন। আমি প্রশ্ন করলাম
~ আপনাকে কি বাসায় নিয়ে এসেছে? আমার দেখা শুনার জন্যে?
~ না ম্যাম। এটা আপনাদের বাসা না এটা হসপিটাল।

আমি অবাক হয়ে চারপাশ দেখছি। এত কিছু কিভাবে হসপিটালে এলো? আর কখনইবা এগুলো সেট করেছে। আমি আবার অবাক হয়ে প্রশ্ন করলাম
~ কিন্তু এটাকেত আমার নিজের বেডরুমের মত লাগছে। কি ভাবে এগুলো হলো?
~ স্যার করেছে। রাতেই সব ঠিক করে ফেলেছে। আপনাকে বাকি মাস গুলো এখানেই থাকতে হবে। তাই আপনার যাতে কষ্ট না হয় তাই স্যার এগুলো করেছে। ম্যাম খাবার গুলো রেখে যাচ্ছি খেয়ে নিবেন। আমি আসি।

খাবার রেখে নার্স চলে গেছে। আমি শুধু তাকে দেখছি। এত ভালোবাসা হয় নাকি? হুম হয়। পৃথিবীর বিভিন্ন প্রান্তে আল্লাহ এমন ভালোবাসা রাখে। হাজবেন্ড ওয়াইফের ভালোবাসায় আল্লাহর রহমত থাকে। তাই এমন ভালোবাসাও হয়।

আমি উনার মাথায় বিলি কাটছি। আর উনি ক্লান্ত মানুষের মত ঘুমাচ্ছে। আসলেই উনি খুব ক্লান্ত। ভালোবেসে ক্লান্ত উনি। আমাকে ভালোবাসতে বাসতেই ক্লান্ত হয়ে গেছে। আচ্ছা ভালোবাসায় ক্লান্তি আছে? উনি উঠলেই যানতে চাইব।

~ এই দেখেন না আমি কেমন মটকা হয়ে গেছি। আর পেটাও ফুলে গেছে অনেক। এত মোটা হলেত আমি বেলুনের মত ঠুসসস করে ফুটে যাবো। আর এই সবই হয়েছে আপনার জন্যে। এত খাওয়াতে কে বলেছে? আমি আর খাবো না। যান এখান থেকে।

মুখ ফুলিয়ে বলে উঠলাম,। কেমন লাগে? কত কত খাইতে পারে একটা মানুষ? আমার তো নিজেকে মানুষই মনে হচ্ছে না। এত খাওয়ালে তো এমনেই মারা যাবো। থাক এগুলো বলা যাবে না। থাপ্পড় একটাও মাটিতে সরি ফ্লোরে পরবে না সব গালে পরবে। আমি চুপ করে মুখ ঘুড়িয়ে বসে আছি। উনি শার্টের হাতা ভাজ করতে করতে বলে

~ তুমি মোটা হয়েছ এই কথাটা কোন আহাম্মক বলেছে? আমাকে বল? সেই আহাম্মকের কি দৃষ্টি শক্তি নাই নাকি? তোমাকে মোটা বললে মোটাকে কি বলবে? এগুলো জাস্ট ননসেন্স টাইপের কথা বুঝলে আয়ুজান। এগুলো তুমি কানে নেও কেন বলত?

~ তাহলে আপনার মনে হয় আমি আন্ধা?
~ ছিছিছি এটা কেন মনে হবে? এত সুন্দর চোখ তোমার আমি শুধু শুধু এমন কথা কেন মনে করবো বল তো?
~ আমি নিজেইত দেখছি আমাকে কত মোটা লাগে। গাল গুলো দেখেন কেমন ফুলে ফুলে গেছে। মনে হচ্ছে রসগোল্লা। এহহহহহহ্

~ এই না না একদম কাঁদবে না। তুমি মোটা না তো বাবু। তুমি একটু নাদুসনুদুস হয়েগেছ। আর তোমাকে এখন কতটা সুন্দর লাগে আমি বলেও বুঝাতে পারবো না। নতুন করে প্রতি সকালে তোমার প্রেমে পড়ি। হাবুডুবু খেয়ে মরি। আর গাল গুলো আসলেই রসগোল্লা। মন তো চায় টুপ করে খেয়ে নি। আর তুমি কি না শুধু শুধু এমন করছ? বাবু আমার খাওয়া কম্পিলিট কর। প্লিজজজ সোনা বউ আমার। পাখি একটা।

~ এই একদম এই সব আদুরী কথা বলে আমাকে পাম দিবেন না। বুঝলেন। আপনার চালাকি বুঝিনা ভেবেছেন নাকি? আমাকে খাওয়াতে খাওয়াতে মোটা বানাবেন পরে বলবেন বউ পছন্দ না চেঞ্জ করতে চাই।

~ আবার ফাউল কথা। কবে বাদ দিবে এগুলো জান? আমার তো তুমি ছাড়া কাউকে দেখতেই ভালো লাগে না। আর এখনতো অফিসেও যেতে ইচ্ছে করেনা। তুমি দিন দিন এত এত কিউট হয়ে যাচ্ছ শুধু তোমাকেই দেখতে ইচ্ছে করে। সারা দিন তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করে। তোমার বিশ্বাস হচ্ছে না যে তুমি আগের থেকে সুন্দর, কিউট, গোলগাপ্পার মত হয়ে গেছ?

মাথা নাড়িয়ে আমি না বললাম। উনি রুমে থাকা নার্সকে ডেকে বলে উঠে,
~ মিসসফাতেমা আপনিই বলেন আমার বউ আয়ুজান আগের থেকে শতশত গুন সুন্দর হয়ে গেছে না?

~ অবশ্যই স্যার। আমি কেন সব নার্সরাই ওনাকে দেখতে আসে। সবার একই কথা ম্যাম কত কত কিউট আর সুইট, মিষ্টি হয়ে গেছে আগের থেকেও বেশি।
~ কি এবার বিশ্বাস হল তো? তা না হলে সবাইকে ডেকে ডেকে জিজ্ঞেস করবো। খুশি এবার খাও। প্লিজজজ প্রিন্সেসটা কত কষ্ট পাচ্ছে। খাও।

উনি আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। দিনে তিনবার আমি উনার সাথে এভাবে ঝগড়া করি। আর উনি ঠিক এই ভাবে আমাকে মানায়। আমার এমনটা করতে ভালোই লাগে। এই সাপ্তাহে আমার অপারেশন। নরমাল ডেলিভারি করা যাবে না। সিরিয়েস কেইস তাই ডেটের আগেই অপারেশন করাতে হবে। তা না হলে রিক্স আরো বেড়ে যাবে। যানি না উনার সাথে বাকি জীবন কাটাতে পাড়বো কি না। তবে আমি চাই কাটাতে। উনার হাত ধরে আমার চলার ইচ্ছা প্রবল। আল্লাহই ভালো বুঝেন। উনার ইচ্ছাই শেষ ইচ্ছে।

রাত ১২টা ছুঁই ছুঁই আমি বিছানার উপড় একটা ছোট টেবিল তুলে তাতে কাগজ রেখে একটা চিঠি লিখতে বসেছি। মিনি প্লাস্টিকের টেবিল হওয়াই লাভ হয়েছে। এটা এখানেই থাকে আমার খাবার খাওয়ানো হয় এই টেবিলে রেখে। আযমানকে একদিন বড় আপুদের দেওয়া লাভলেটার দিয়েছিলাম উনি সে গুলো পুড়িয়ে দিয়ে বলেছে আমার বউ আছে। পিচ্চি বউ যখন বড় হবে তখন তার হাতের লেখা চিঠিই আমি পড়বো। বউ থাকতে কেনো আমি আলাদা মেয়েদের চিঠি পড়ব? পাপ হবে।

আমি শুধু আমার বউয়েরটাই পড়বো। তাই আজ তার জন্যে চিঠি লিখতে বসেছি। এই তিন বছরে কখনো এটা লিখার ইচ্ছে ছিল না তবুও এই নয় মাস আমাকে অনেক কিছু শিখিয়েছে। তাই মনে হয়েছে এই চিঠিটা লেখা প্রয়োজন তাই লিখতে বসেছি। তবে চিঠিটা অপারেশন থিয়েটারে যাওয়ার আগেই দিব বলে ভেবে নিয়েছি। সাদা ঝকঝকে কাগজে লিখতে বসেছি আমি।

প্রিয় আসাবা
ছোট বেলা থেকেই এত এত কড়া ভাবে আমাকে রেখেছেন যে কি করে আর আপনাকে ভালো নাম দি বলেন। তাই এই আসাবা নাম দিলাম। নামের সম্পূর্ন্য না বললেও আপনি বুঝবেন। তবুও বলি আযমান সাদা বান্দর। যানি এখন হাসবেন তবে আমি নিষেধ করছি হাসবেন না।

আপনি যানেনও না কত কত বকা দিয়েছেন আমাকে। কত কাঁদিয়েছেন। আপনার মনে আছে ছোট বেলায় আমি পাশের বাসার আকাশ নামের এক ছেলের সাথে খেলেছি দেখে আপনি আমাকে একটা থাপ্পড় দিয়েছিলেন। আর আমার লড়লড় দাতঁটা ফেলে দিয়েছিলেন। হা হা। যদিও সেদিন আপনার উপড় খুব রাগ হয়েছে কিন্তু আমি মনে মনে খুব খুশিও হয়েছি দাঁতটা যা ব্যাথা করত আপনাকে কি আর বলবো।

আম্মু তো আমার চিৎকারের জন্য ধরতেই পারতো না। আর আপনি এক থাপ্পড়ে চিৎপটাং করে দিলেন। মনে মনে আমি কিন্তু আপনার আর একটা নাম দিয়েছি আর সেটা হল thorও কিন্তু আমার প্রিয় avengerতাই আপনি এবার একটা ঠোঁট বাকিয়ে হাসি দিবেন প্লিজজ। আমার দাড়ুন লাগে আপনার বাকা ঠোঁটের হাসি। ছোট বেলায় এত প্যারা কেনো দিলেন বলেন তো? তবে সব প্যারা আমি শোধ করে দিয়েছি। এই তিন বছরে। আপনার মনে আছে আমাকে ক্লাসে দিয়ে আসলে আমার বান্ধুবিরা আপনাকে গিলে খেত। আমার কিন্তু তখন ওত রাগ হতো না।

কিন্তু আপনি যখন হাতে কামড়ে দিয়েছেন তখন থেকে মনে এক অন্য রকম শিহরণ শুরু হলো। আপনার বুকে মাথা রেখে যখন ঘুমিয়ে ছিলাম তখন সত্যিই এক অদ্ভুত প্রশান্তি কাজ করেছে। আর বৃষ্টিতে ভিজেঁ আমার মনে হয়েছে আমি বৃষ্টিতে না এক সুখ মিশ্রিত অনুভুতিতে ভেঁজেছি। আপনার সাথে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত আমার জীবনে বেস্ট ছিল। আপনার সাথে রাতের আকাশে চাদঁ দেখাটাও ছিল বেস্ট। আর কৃষ্ণচূড়াগুলো এখনো আমার কাছে আছে। শুকিয়ে গেছে কিন্তু তাতে এখনো আপনার প্রথম প্রকাশিত ভালোবাসার গন্ধ আছে।

মন কাড়া সেই গন্ধ। পাগল করা ঘ্রাণে মাতাল করে। আমি মাঝে মাঝেই সেগুলো দেখি আর আপনার প্রথম প্রকাশিত ভালোবাসার ঘ্রাণ নি। আপনার মনে আছে মাঝে মাঝেই আমি টুপ করে আপনার গালে চুমু খেতাম আর আপনি হাবার মত তাকিয়ে থাকতেন। ঠিক সেই সময় গুলোতেই আমি কৃষ্ণচূড়ার ঘ্রাণে মাতাল হয়ে থাকতাম। তাই তো আপনাকে কেবলাকান্ত বানিয়ে চুমু খেতাম।

আমার কিন্তু খুব হাসি পেত আপনার মুখ দেখে। আপনার নদীর বুকে লঞ্চের কথা মনে আছে? রাতে আমরা পানির ঘ্রান নিয়েছিলাম। যানি আছে তবুও বলছি। সেই শিহরণের কথা আমি আজও ভুলিনি। চোখ বুজলেই দেখি সেই চাঁদ সেই পানির কল কলানির শব্দ আর নাকে আসে সেই ঘ্রাণ।
প্রেম কি আমি বুঝিনি। কেমন যানি না। কিভাবে হয় তাও বলতে পারবো না। তবে আমিও প্রেমে পড়েছি। আমি প্রেমে পড়েছি সেই ছেলেটার যে আমাকে শিখিয়েছে বৃষ্টির নতুন ঘ্রান নিতে।

যে শিখিয়েছে কৃষ্ণচূড়ার রংয়ে নিজেকে রাঙ্গাতে। যে বুঝিয়েছে সবাই এক না। কেউ কেউ আপনার মত কৃষ্ণচূড়াও হয়। যে নিজের রংয়ে আমাকে রাঙ্গিয়েছে। হ্যাঁ প্রেমে পড়েছি সেই ছেলেটার যে হাত বাড়িয়ে বাতাসকে নিজের মুঠোয় নিতে শিখিয়েছে। নদীর পানিরও যে আলাদা ঘ্রান হয় এটা যে শিখেছে আমি তার প্রেমে পড়েছি। আমার নিশ্বাসে যার বসবাস আমি তারই প্রেমে পড়েছি। সবাইকে উপেক্ষা কারি আমার সেই আপনিটার প্রেমে পড়েছি। হ্যাঁ আমি আপনাকে ভালোবাসি। আপনার মত কোরে না কিন্তু আমার মত করেই ভালোবাসি।
সরি আপনাকে ছেড়ে যেতে চাই না কিন্তু আপনাকেও আমি প্রাপ্তির সন্ধান দিতে চাই। যদি ওনি চায় আবার দেখা হবে। হয় এই জন্মেই আপনার বউ হয়ে আপনার প্রিন্সেসের মা হয়ে পিরিয়ে দিবে। তা না হলে আমি আপনাকে পরকালেও চাইবো। আল্লাহর কাছে চাইবো আপনিই আমার স্বামী রূপে সব কালে থাকেন। ভালোবাসার শেষ হয়না। জীবন ইতি টানে কিন্তু ভালোবাসায় ইতি সমাপ্তি নেই। ভালোবাসার কোনো জীবন হয় না। এটাতো একটা অনুভুতি। মানুষের মৃত্যু হয় কিন্তু মনের হয় না। আত্নার মৃত্যু নেই। আর ভালোবাসা আত্নার ব্যাপার। অন্তরের অন্তরস্থ হতে এই ভালোবাসার আবিষ্কার।

ভালোবাসা আপনাকে ভালো রাখে। ভালোবাসা এক রহস্যময় অনুভুতি। নিজে থেকে প্রকাশিত না হলে এটা প্রকাশ করা যায় না। আপনার ভালোবাসায় কোনো অভাব ছিল না। এত ভালোবাসা পাওয়ার পরে আমি একটু না অনেকটুকু লোভী হয়েগেছি। তাই বলছি আপনি আমার পরে দ্বিতীয় কোনো নারীকে আমার বাম পাশ দিতে পারবে না। এমন কি প্রিন্সেস কেও না। ওকে ডানটা দিবেন। বামটা শুধু আমার। এটা যেন মাথায় থাকে। আচ্ছা চলেন এবার প্রপোজ করি। আপনি তো অনেক বার করেছেন। এবার না হয় আমি করি।

প্রপোজালের নাম হবে চিঠি প্রপোজ। চিঠিতে করছি বলে কথা। আচ্ছা শুরু করি,

হে প্রিয়
ভালোবাসা কি যানেন? আমার কাছে এটা একটা সুপ্ত অনুভুতি। যে অনুভুতির নাম জানা নেই। তবে এর একটা আলাদা ঘ্রান আছে। যেমন আপনার গায়ের গন্ধ। ঘামে ভেঁজা আপনি। আপনার বুকের উষ্ণতার ঘ্রান। সবই মাতাল করা। প্রথম দেখার প্রেম নয়। কিশোরী বয়সে প্রেমে পরেছি বুঝলেন? এই প্রেম আঠারোতে নয় আট হাজারে বিশ্বাসি। আমি আপনার প্রেমিকা হতে চাইনা।

শুধু পথ চলার সঙ্গী হতে চাই। চাই ধোয়াঁশার চাদরে নয় অদৃশ্যমান হাওয়াতে ভেসে থাকতে। যে হাওয়াকে প্রতি মুহূর্তে আপনি অনুভব করবেন। নাক টেনে যে হাওয়ার ঘ্রাণ গায়ে মাখাবেন। আমি সেই হাওয়াই হতে চাই। হোতে দিবেন কি আমাকে সেই হাওয়া? ভাসাবেন কি আপনার মনের মোহোনায়? রাঙ্গাবেন কি আপনার কৃষ্ণচূড়ায়? অপেক্ষায় থাকবো। আপনার উত্তরের আসায়। তবে আমার আপনি হলেই চলবে না আপনার ভালোবাসা হলেই চলবে।

ইতি
আপনার আয়ুজান

চিঠিটা ভাজ করে রেখে দিয়েছি। উনার একটা হাত আমার বালিশে রাখা। কিছুদিন থেকে তার ঘুম হয় না। আজ অনেক দিন পরে ঘুম হয়েছে। আমি অবাক হোই একটা লোক কিভাবে সুস্থ হয়েও হসপিটালে রাত কাটাতে পারে। কিন্তু উনাকে দেখে এটা বিশ্বাস হয়ে গেছে। আমি গুটি মেরে উনার বুকে মাথা রাখতেই উনি দু হাতে আমাকে জড়িয়ে নিলেন। যেন সে যানতো আমার শেষ আশ্রয় স্থান উনার বুকের বা পাশটা।

সকাল থেকে দিল মাথা খাচ্ছে। আজ সকাল সকালই এর আগমন। এসেই বলে উঠে, ছে
~ আয়ু তোর যদি যমজ মেয়ে হয় তবে সেই হবে।
~ কিভাবে সেই হবে? যানান মহারানী।
~ কিভাবে হবে মানে কি। আরে দিহান আর সাফ্রানের বউ করবো দুজনকে।
~ কিন্তু আমার তো যমজ হবে না। বলে দিয়েছে ডাক্তার এখন কি হবে বল?
~ ভাই আল্লাহরে বল না তোর যাতে যমজ হয় তা না হলে আমার ছেলেগুলোর কি হবে? (কাঁদোকাঁদো হয়ে)

~ কি হবে মানে কি? ওদেরও বিয়ে হবে। বাচ্চা হবে। এতে এত প্যারার কি আছে। আমার বাবু বাদে কি আর মেয়ে থাকবে না নাকি পৃথিবীতে? পৃথিবীতে মেয়ের অভাব হবে না। তুই বরং যাদের যমজ মেয়ে আছে তাদের কাছে যা।
~ দেখ আয়ু ফাইজলামি করবি না। আমার তোর মেয়েই চাই। আমি নিশ্চিত কিউটের ডিব্বা হবে। আর ওই কিউটের ডিব্বা নিয়া কি যে টানা টানি হবে আল্লাহ মালুম।
~ টানা টানি কেনো হবে? (ভ্রুকুঁচকে বলে উঠলাম)
~ আরে কেনো বুঝসনা আমার দুই পোলাই ওর পিছনে ঘুড়বে আরো তো কত কত ঘুড়বে কি আর বলবো।
~ আগে থেকেই তোর ছেলেদেরকে সামলা। আমার বাবুকে তোর বাড়িতে বউ করে দিব? ইম্পসিবল।
~ কেনো কেনো? কম কোন দিন দিয়ে আমরা।
~ এই যে ঝগড়া করবি ওর সাথে। আবার তো তুই মারামারি পারস। তখন দেখা যাবে আমার কিউটি কিউটি বাবুটারে তুই নাক মুখ ফাটিয়ে দিবি।
~ সত্যি আয়ু মারবোনা। প্রমিস।

তবুও তোর মেয়েকেই চাই।
~ একজনের জন্যে নিবি ভালো আর এক জনের কি হবে?
~ তুই আর একটা বাচ্চা নিস। ওটা মেয়ে হলেই হবে।
~ তা আর এই জনমে সম্ভব না। এজনের জন্যেই উনার জীবন ঝুলে আছে আর একজনের ব্যাপার হলে তো উনি শেষ।

আমি আর দিল হাসছি। দিলের বেবিগুলো দৌড়ে এসে আমার কোল নিয়ে ঝগড়া করছে। ছেলেরা আসলে তেমন ঝগড়া পারেনা। তবে ওরা এত এত করতে পারে বলার বাহিরে। আমি আর দিল হাসছি। দিল তার এক হাত আমার পেটে দিয়ে রেখেছে যাতে ওরা লাফিয়ে না পড়ে। দুজনের একজনকেও আমি চিনতে পারছি না। এদের চিনা মশকিল। একদম অবিকল এক দেখতে। একজন চোখ মুখ খিঁচে বলে উঠে,
~ তুই সল সল
~ না আমি বোলবো ফুফির কুলে

কথাগুলো এত কিউট কি আর বলবো। এখনো অত ক্লিয়ার না কথা। একজন এবার জিতে গেল। তার নাম সাফ্রান। আমার কোলে বসে তার কত কত কথা। দিহান কেঁদে দিল। তাই দুইজকে দুই হাটুতে নিলাম। আযমান এসে চোখ রাঙ্গিয়ে ওদের নামাতে বলেছে। কিন্তু আমি নামালাম না দেখে দুজনকেই কোলে তুলে নিলেন। বাবা হিসেবে পারফেক্ট একজন লোক উনি।

আজ অপারেশন। ভয়ে বুক কাপঁছে। হয়তো এটাই শেষ দেখা। আম্মু কাদঁতে কাদঁতে বেহুশ। আমার সামনে না আসলেও আমি যানি। সবার অবস্থাই খারাপ তবে সবচাইতে উনার অবস্থা খারাপ। উনার চোখ মুখ ফুলে লাল হয়ে আছে যদিও প্রতি সকালেই এমন থাকে তবুও আজ বেশি। রাত জেগে নামাজের বিছানায় কান্না করা তার প্রতিদিনের কাজ। তার সকল দোয়ায় আমি। সকল মুনাজাতে আমাকে চায়। তার সকল চাহিদা জুড়ে শুধু আমি।

ইনজেকশন দেওয়া হয়ে গেছে। আমি কাঁপা হাতে তার হাত টেনে নিয়েছি হাতের ভাজে চিঠিটা দিলাম। উনি অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। চোখের পানি যেন বাধ মানছেনা। আমার কপালে শেষ চুমুটা দিতেই আর কিছু মনে নেই। ধীরে ধীরে সব শান্ত আর নিস্তেজ হয়ে এলো। ঝাপসা চোখে তাকিয়ে শেষ বার দেখতে পেলাম না। কেমন যেনো চোখগুলো ঘোলাটে হয়ে এলো।

সে যাএায় আল্লাহ উনার কথা শুনেছে। বাঁচিয়ে দিয়েছে আমাকে। জ্ঞান আসার পরে যানতে পেরেছি আমার প্রিন্সেসের বয়স দুই দিন হয়ে গেছে। আর আমার স্বামী দুই দিন সেন্সলেস ছিল। তখন খুব হাসি পেয়েছে এটা শুনে। বউয়ের বাচ্চা হবে স্বামী সেন্সলেস হয়েগেছে। উনি খালি পায়ে দৌড়ে এসে যখন জড়িয়ে ধরেছে তখন মনে হয়েছে সেন্সলেস না এই লোকের আরো অনেক কিছু হয়ে যেতে পাড়তো। সেন্সলেস তো কম কিছুই ছিল।

আমার চিঠি পড়েই নাকি উনি সেন্সলেস হয়েগেছে। তখন যদি সামনে থাকতাম থাপড়াইয়া বলতাম শালা প্রপোজ করলে মানুষ সেন্সলেস হয় নাকি? কিন্তু তা আর কারা হল না। ওই চিঠি বাধিয়ে বেড রুমে লাগিয়ে রেখেছে। অফিসে যাওয়ার আগে একবার জোড়ে জোড়ে পড়ে আবার রাতে এসে একবার পড়ে। আমার বাচ্চা মেয়েটার মনে হয় মুখস্থ হয়েগেছে। মাঝে মাঝেই সে চিঠির এক দুই লাইন বিড়বিড় করে বলে। তখন রাগে আমার মাথা ফেটে যায় আর উনি হেঁসে কুটিকুটি হয়।

আমার মেয়ের আজ তিন বছর হবে। তাই বাড়িতে বিশাল আয়োজন করা হয়েছে। অনেক কাজ। আমি আম্মু মা দিল অনেকে মিলে কাজ করছি। কাজের লোকগুলোও করছে তবুও শেষ হচ্ছে না। তবে রান্না আম্মু আর মা মিলে করছে। আমি এখনো ভালো রান্না পাড়িনা। আমি মনযোগ দিয়ে সব দেখছি আর শিখছি। কিন্তু উনার তো আমাকে শান্তি না দেওয়ার প্রতিজ্ঞা আছে তাই। ডেকেই চলেছে। বিরক্ত কর লোক একটা। বউ জ্বালানোই এর কাজ।

~ কি হয়েছে ষাঁড়ের মত চিৎকার করছেন কেন?
~ আমি ষাঁড়? তুমি এই কথাটা বলতে পারলে? নিষ্ঠুর বউ আমার আয়ুজান।
~ ভালো। আপনি আয়াতকে রেডি করিয়ে ফেলেছেন? গুড গুড।

উনি একটা হাসি দিলেন। আয়াত আমার মেয়ের নাম। ওকে আজ লাল রং এর জামা পড়িয়েছে উনি। মাথায় চাঁদও একেছে। কিন্তু ভয়ঙ্কর আশ্চর্য ব্যাপার হল উনিতো অর্ধেক চাদঁ আঁকতে পাড়েনা। তবে এত সুন্দর হুবহু কিভাবে আঁকলো। আমি অবাক হলাম। এতে গাফলা তো আছেই।

আমি এদিক ওদিক তাকাচ্ছি কিন্তু কিছু দেখছিনা। আমি এবার সন্দেহ নিয়ে উনার দিকে তাকাতেই উনি আয়ানাকে বাম থেকে ডান কোলে এনে আমাকে বাম সাইডে এনে কোমড় জড়িয়ে কাছে নিয়ে এসে বলে উঠে,
~ এত সন্দেহ ভাব দেখানোর মানে কি? তুমি কি মনে করেছ আমি এভাবে টিপ লাগাতে পাড়িনা নাকি? আরে আমার প্রিন্সেসর জন্য তো আমি সব করতে পারি। এটা তো শুধু একটা টিপ আঁকা।

~ কাজল দিয়ে এত সুন্দর টিপ আপনি দিয়েছেন? এটাও বিশ্বাস করার মত কথা? যেখানে কাজল ছোঁয়াতেই কেঁপেকেঁপে উঠেন সেখানে এত সুন্দর বাঁকা চাঁদ? অবিশ্বাস কথা নয় কি?

উনি কিছু বলতে নিবে তার আগেই দিলের ছেলেগুলো দৌড়ে আসে। তাদের আবার দুইজন যমজ বোনও আছে। দিলের মনে হয় যমজের কারখানা হবে। দিহান আর সাফ্রান এসে বলে উঠে,
~ আয়ুকে দেও ওর সাথে খেলবো। (দিহান)
~ ওই তুই না আমি খেলবো আয়ু আমার।। (সাফ্রান)
~ না চাচ্চু আয়ু আমার। (দিহান)

দুজনে শুরু করে দিয়েছে ঝগড়া। এদের একটা ইন্টেরেস্টিং ব্যাপার হল আমাকে ফুফি ডাকে আর উনাকে চাচ্চু। অনেকে অবাক হয় এদের কথা শুনে। নিষেধ করা হলেও বলে। আয়াত এবার বাবার চুল টেনে বলে উঠে,
~ নামাল নামাল
~ নামাবো আম্মু আগে তো তোমাকে কামড়া কামড়ি থেকে বাচাই। এই যে বাবারা এবাবে ঝগড়া করলে আমি আমার প্রিন্সেসকে দিব না। পরে যদি ব্যাথা পায় তখন? নো রিক্স। আমি কোনো রিক্স নিতে পারবোনা। সরি।

দুজন এবার একজন আর একজনের দিকে তাকিয়ে আয়াতের দিকে তাকায়। তারপর বলে
~ আচ্ছা আমরা ওকে ভাগ করে খেলবো। একসাথে। আয়ু অর্ধেক সাফ্রানের আর অর্ধেক আমার। ঠিক আছে। এবার দেও।

উনি আয়ুকে নামিয়ে দিলেন। আয়াত ওদের মাঝে দাড়াতেই দুজনে ওর দু হাত ধরে। আবার হাত ছেড়ে দুই ঝুটি আলত করে ধরে হাটা দেয়। আমি হাঁসতে হাঁসতে পাশে তাকিয়েই ড্রেসিন টেবিলের নিচে কাটাঁ চাঁদের টিপের পাতা দেখে আবার হেঁসে উঠলাম। এটাই তাহলে মূল রহস্য। এমন ভাবে টিপের উপড় পাউডার দিয়েছে কেউই বুঝতে পারবে না।

বুদ্ধি আছে জামাইয়ের। উনি আমার দিকে এগিয়ে এসে কোমড় জড়িয়ে ধরতেই বলে উঠলাম,
~ আপনার তো এখন প্রিন্সেস আছে। আমাকে কি আর লাগে?
~ সারা পৃথিবী হলেও আমার শুধু তুমি হলেই চলবে বুঝলে। ভালোবাসি আয়ুজান।
~ আমিও ভালোবাসি আপনাকে।

লেখা – হাফসা আলম

সমাপ্তি

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “তুমি হলেই চলবে – ভালোবাসার কথা sms” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – তুমি হলেই চলবে (১ম খণ্ড) – ভালোবাসার কথা sms

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *