ইসলামিক রোমান্টিক গল্প পর্ব ৮

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৮

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৮: দুজনের ভালোবাসায় ব্যস্ততা দেয়াল তৈরি করছে। স্ত্রীর মন খারাপ থাকে স্বামীকে কাছে না পেয়ে। অফিসের কাজে স্বামীও অনেক ব্যস্ত থাকে, তাই মধুর সময় আর কাটানো হয় না। ভয় হয় এই পবিত্র সম্পর্কটা নষ্ট হবে না তো?

সংসারে সহযোগিতা

দিনশেষে পরিশ্রম বশত ক্লান্তি আসে ঘুম আসে কিন্তু মুখ মলিন হবার কথা নয়। প্রায়ই ১৫ টা দিন এভাবেই কেটে যায়। দুটো মানুষ একসাথে থাকলেও একে অপরের অচেনা। প্রয়োজনীয় কথা ছাড়া আজকাল সময় ই হয় না দুটো কথা বলার, মন খুলে হাসার।

ডিনারে সাইমা গম্ভীরমুখে জিজ্ঞেস করেই ফেললো,

সাইমাঃ আমার প্রয়োজন কী ফুরিয়ে এসেছে?

খেতে খেতে একপলক তাকালো সজীব। গম্ভীরমুখেই বললো,

সজীবঃ তুমি কি জানো না, নতুন প্রেজেন্টেশন এর কাজে ব্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাছাড়া বাবার বিজনেস এর যতটুকু সম্ভব অনলাইনে সাহায্য করি। বাবার বয়স ও হয়েছে সাইমা। সব দিক খেয়াল করে তোমাকে ঠিক ভাবে সময় দিতে পারছিনা বলে ভেবোনা ভালবাসিনা।

সাইমাঃ মুখ ভার করে থাকো যে!

সজীবঃ তোমার দিকেই খেয়াল করো, ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়েই নাস্তা রেডি করতে লেগে যাও। আমাকে ঘুম থেকে তুলে দিয়ে একসাথে ব্রেকফাস্ট করো, ক্লাস, প্রেজেন্টেশন, ঘর গুছানো, আবার রান্নাবান্না, রাতের খাওয়া, সব কিছু মেইনটেইন করতে গিয়ে তুমি কতটা হ্যাপি থাকো বলো তো! তুমি সারাদিন কাজ করে নিজের খেয়াল টাও ঠিক মতো রাখতে পারোনা৷ একটু পরিপাটি করে নিজেকে গুছিয়ে রাখার পর্যন্ত সময় পাওনা৷ তাহলে দূরত্বের দোষ কি শুধু আমার একার?

সাইমার চোখ দিয়ে দুই ফোটা জল গড়িয়ে পড়লো, সজীব খেয়াল করেও আটকালো না৷ সজীব আবার বলতে শুরু করে,

সজীবঃ আমি এখানে আমার সংসারের কাজ করার জন্য বুয়া দিতে পারি না, এটা আমার ব্যর্থতা। কি করবো বলো, এখানে সব কিছুই কস্টলি। তাছাড়া বাবার বিজনেস এ হাত দিয়ে কিছুটা হলেও উন্নতি হয়েছে, এক্সট্রা আয় আসে ওখান থেকেই । বুঝতেই তো পারছো, এখানে সব কিছুর খরচ কেমন?

সাইমার মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। আর বলে,

সজীবঃ উঁহু আর কেঁদো না তো। এখানে সারাজীবন থাকবোনা। সব কিছু ঠিক হয়ে যাবে আবার।

এতটুকু স্পর্শ সাইমার জন্য সুখ বয়ে আনে। কাঁধে মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়ে সাইমা। বাধ্য হয়ে সজীব সাইমাকে ঘরে শুইয়ে দিয়ে এসে বাসনকোসন পরিষ্কার করে। ফ্রেশ হয়ে এসে শুয়ে পড়ে সাইমার পাশে।

সংসারে কতো ঝামেলা হবে, টুকটাক ঝামেলার সমাধান না করলে সেটা অনেক বড় আকার ধারণ করে। ভুল বুঝাবুঝি থেকে সম্পর্কের ইতি পর্যন্ত হয়ে যায় অনেক সংসারে। যার জন্য এতো কিছু সেই মানুষ টাই এককালে অচেনা অজানা হয়ে যায়।

স্ত্রীর প্রত্যাশা

প্রেজেন্টেশন সম্পর্কে আলোচনা করতে করতে মাহমুদ বললো,

মাহমুদঃ তথ্য নিতে বাইরে যাওয়া লাগবে। মাঠে কাজ না করলে কখনো সঠিক ভাবে অথ্য দিয়ে প্রেজেন্টেশন সম্পূর্ণ করতে পারবোনা। ( বাংলায় দিলাম কথাগুলো বোঝার জন্য)

সজীবঃ ঠিক বলেছো, চুরির কোনো ক্ষেত্রই নাই এখানে। তথ্য আগের কারো থেকে মিথ্যে বসিয়ে দেওয়া যায়, এতে না কিছু শেখা হয়, না কাজ টা ভালো হয়৷ কাজটা ভালো হয়৷ ভালো কিছু অর্জন করা যায়।

মাহমুদঃ তাহলে কবে থেকে যাবে?

সজীবঃ যত দ্রুতই সম্ভব, কারণ এটা শেষ করে থিসিস এর কাজ শুরু করতে হবে।

মাহমুদঃ হ্যাঁ, প্রেজেন্টেশন বলে দুজন করে গ্রুপ ভাগ করে দিয়েছে। থিসিস তো একা একাই করা লাগবে৷

কথার পাশাপাশি কাজ চালিয়ে যায় দুজনে, সিদ্ধান্ত নেয় আগামীকাল ই যাবে ডাটা কালেকশন করতে।

পরের দিন….

সাইমা কে বাসায় ড্রপ করে বিকেলে ডাটা কালেকশন করতে যায় ওরা। কাজ শেষ করতে বাজে প্রায় 09:30 pm ৷ মাহমুদ এমন সময় বললো,

মাহমুদঃ রোদে গরমে প্রচণ্ড ক্ষুধা লেগেছে। কাছেই আমার বাসা। চলো, নাস্তা করে নিই।

সজীব কি মনে করে বললো,

সজীবঃ না থাক, তুমি যাও। বাসায় আমার স্ত্রী একাই আছে।

মাহমুদঃ বেশী সময় লাগবেনা, দুই মিনিটের পথ। সজীব বারবার না করতে পারলো না৷ মাহমুদ কে ফলো করে।

মাহমুদ বাসায় কলিংবেল দিলে একজন বয়স্কা মহিলা দরজা খুলে দেয়। মাহমুদ পরিচয় করিয়ে দেয় আম্মা বলে৷ সজীব সালাম দিলে মহিলা ভ্রু কুঁচকে তাকায়৷ সজীবের মনেই ছিলো না ওরা নাম মাত্র মুসলিম। মনে মনে নিজেকে ধিক্কার দিতে শুরু করে, ইশ কি বোকামি টা-ই না করলাম৷

নাস্তা করে গল্প জুড়ে দেয় সজীব। ভদ্রমহিলা প্রথমে সজীব কে খুব ইজিলি না মানলেও পরে ভালোই গল্প জমিয়ে দেয়। সজীবের বিদেশে আসা, দেশে ফেরা, বউ নিয়ে স্বপ্ন পূরণ করার জন্য আবার বিদেশে আসা সব গল্পই করে ফেলে। মহিলা ও গল্পের মাঝে বলে ফেলে, তার হাজবেন্ড দুইটা বিয়ে করেছে, এরপর থেকে মাহমুদ কে একটু কষ্ট করেই বড় করেছেন৷ এখন একটু আশার আলো দেখলেও ছেলের ভবিষ্যৎ নিয়ে খুব ভাবতে হয়।

সজীব ও জিজ্ঞেস করে, মাহমুদের বাবা খোঁজ করে কিনা এখন। এতে মহিলা জবাব দেন, “আগে আসতো না, তবে এখন প্রায়ই আসে। কারণ ওর ব্যবসায় লস হয়ে গেছে। দ্বিতীয় পক্ষের মেয়েটার বিয়ে দেওয়া লাগবে, টাকার প্রয়োজন আছে হয়তো।”

সজীব ফেরা মাত্র সাইমা ওর গলা জড়িয়ে ধরে। আর আস্তে করে ভয়ার্ত স্বরে বলে,

সাইমাঃ আজ হটাৎ লোডশেডিং হলো, খুব ভয় পেয়েছিলাম।

সজীবঃ তোমার ও তো প্রেজেন্টেশন করা লাগবে, সেগুলো কবে শুরু করবে?

সাইমার কি প্রশ্ন করলো আর কি উত্তর পেলো। মেজাজ টা বিগড়ে গেলেও শান্ত হয়ে বললো,

সাইমাঃ ফ্রেশ হয়ে এসো, ডিনার করতে হবে।

সজীব কথা না বাড়িয়ে কাজ গুলো সেরে ফেলে, কথা বাড়ালে ঘুমের ক্ষতি হবে। না ঘুমালে পরেরদিন পরিশ্রম করতে পারবেনা।

রাতে ঘুমানোর সময় সজীব দেখলো সাইমা অন্যদিকে ফিরে শুয়ে আছে। সাইমার মাথায় হাত রেখে বললো,

সাইমাঃ সেদিন স্টেশন এ একটা মেয়েকে দেখলাম, কোলে ফুটফুটে একটা বাচ্চা নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। খুব ইচ্ছে করে আমাদের ঘরেও এমন একটা মেয়ে আসুক। কিন্তু কি আর করবো বলো! আগে ফিরে যায়, সব স্বপ্ন পূরণ করে দিবো৷

সাইমা অভিমানী কণ্ঠে বললো,

সাইমাঃ ফিরে তো না ও যেতে পারি!

সজীবঃ আল্লাহ ভরসা। যাই হোক, আজ মাহমুদ ওর বাসায় নিয়ে গিয়েছিলো। ভাবছি নেক্সট সানডে ওদের ইনভাইট করবো।

সাইমাঃ ঠিক আছে, একা থাকতে থাকতে বোরিং লাগে। যাক, তাও কাউকে পাওয়া গেলো গল্প করার জন্য।

সাইমার ঘুম আসার পর পরই সজীব ফেসবুকে ঢুকে। Adorable Roshni নামে একটা আইডি মাহমুদের পোস্ট এ কমেন্ট করে প্রতিনিয়ত। ও কে, সেটা জানার জন্য খুব আগ্রহ জাগে সজীবের মনে৷

চলবে….

পরের পর্ব- ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৯

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *