ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৭

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৭: স্বামী স্ত্রীর জীবনে একটা গতি এসেছে। তারা একে অপরকে বুঝতে শিখছে, ভালোবাসতে শিখছে। দুষ্টু মিষ্টি অভিমান আর রাগ তাদের এই পবিত্র সম্পর্কটাকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে। দেখা যাক কি হয়?
আদর ও শাসনের সম্পর্ক
একটা মেয়ে এতো বেহায়া কিভাবে হয়? পড়ে গিয়ে পায়ের অনেকটা ছিঁড়ে গেছে, হাতেও কয়েকটা আঁচড় লেগে রক্ত বের হচ্ছে। তারপরও কেমন খিলখিলিয়ে হাসছে মেয়েটা। সেটা দেখেই সজীবের মেজাজ বিগড়ে গিয়ে উপরের কথাটা বললো ।
সাইমা তবুও কিছু না বলে হাসছে, যেনো এক রকম পাগল হয়ে গেছে মেয়েটা। পাগল বললে ভুল হবে, পাগলী বলা চলে। সজীব সাইমা কে কোলে নিয়ে সিড়ি বেয়ে উপরে উঠে। আস্তে করে নামিয়ে দিয়ে গাড়ির ড্রাইভার কে ফোন করে ডাকে। গাড়িতে উঠে বসার পর ও সাইমা হাসছে। সজীব গম্ভীর হয়ে অন্য দিকে তাকিয়ে বললো,
সজীবঃ ফাজলামোর একটা সীমা থাকে, তুমি সেটা ক্রশ করে গেছো।
সাইমাঃ তুমি কি ভাবছো, আমি ইচ্ছে করে লাফ দিয়েছি?
সজীবঃ ভাবাটা কি অস্বাভাবিক?
সাইমাঃ অজান্তেই পিছলে পড়ে গিয়েছি, পড়তে পড়তে খেয়াল করলাম তুমি অনেকটা ঘাবড়ে গেছো। তাই হাসি দিয়ে পরিস্থিতি স্বাভাবিক করলাম মাত্র। এতেও রেগে গেলে তুমি! (সাইমা খুব শান্ত ভঙ্গিতে কথাগুলো বলে)
সজীব কি বলবে বুঝছে না! কিছুটা সময় চুপ থেকে ড্রাইভার কে তাড়াতাড়ি গাড়ি চালাতে বললো। সাইমাকে ড্রেসিং করিয়ে দেওয়া টা খুব দরকার। কয়েক মিনিট পরে সাইমার দিকে চোখ পড়তেই সাইমা আঁধার কালো মুখ দেখলো। সাইমার মতো হাসিখুশি মেয়েকে মন খারাপ করে থাকাটা একদম মানায় না। সাইমার গাল দুটো টেনে বললো,
সজীবঃ কিসের এতো রাগ?
সাইমা সজীবের হাত সরিয়ে দেয়। অভিযোগের সাথে বললো,
সাইমাঃ এমনিতেই পা হাত দুটোই জ্বলছে, গাল টাকেও জ্বলিয়ে দিলো।
সজীব যেনো পুরোপুরি বোকা বনে যায়। রাগ করলেও দোষ, আদর করলেও দোষ! সজীবকে চুপ হয়ে যেতে দেখে সাইমা বললো,
সাইমাঃ খুব ভালো লেগেছে যখন এতোগুলো সিড়ি কোলে করে উঠিয়েছো।
সজীবঃ তারপরও নাকি তোমাকে ভালোবাসি না, শুধু দোষ খুঁজে বেড়াও। কণ্ঠে আক্ষেপ অনেক
সাইমাঃ একবার ভাবো, রোশনির রূপের বর্ণনা দিয়েছো। ওকে হারিয়ে বিরহের কবিতা লিখেছো, কিন্তু আমার জন্য কিছুই লিখোনি।
সজীবঃ শুধু নাম জেনে আর চোখ দেখে কি স্বপ্ন সাজানো যায়? যেদিন ছবি দেখেছি তখন মনের ভাব প্রকাশ করবো ভেবে ডায়েরি খুঁজতে গিয়ে দেখি সেটা নেই। এটা কি আমার দোষ?জানতাম মেয়েরা সবকিছুতে জেতার জন্য তর্ক করে। এখন দেখছি ভুল জানি। নিজের পক্ষে কথা বলা কি তর্ক করা । জানতাম না মহারাণী।
অভিযোগ আর অভিমান
দুজনেই মুচকি মুচকি হাসছে। কিছুক্ষণ পর সাইমা হাসতে হাসতে বলে,
সাইমাঃ এক্সিডেন্ট না হলে দিনটা ভালোই যেতো। এতো উঁচু থেকে পড়ে গেলে, ভয়ে আত্মা শুকিয়ে গেছিলো। ভাগ্যিস ঢালু বেয়ে পড়েছি, নইলে নির্ঘাত কোমর ভাঙতাম৷ আল্লাহ বাঁচিয়ে দিয়েছে আল্লাহর রহমতে সুস্থ ভাবে ফিরতে পারলেই হলো।
সারাদিন বেড়ানো, ডক্টর দেখানো, ওষুধ কেনা, রেস্টুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে ওষুধ খাওয়া, বিকেলে একটু হাটা। সব করতে করতে বাসায় আসতে একদম সন্ধ্যা। দুজনেই ফ্রেশ হয়ে সোফায় বসে, সজীব বললো,
সজীবঃ সব ঠিক আছে, কিন্তু খোঁড়া পায়ে হাটার শখ কেন হলো, সেটাই বুঝলাম না। প্রাকটিস করলাম, জীবনে ঝড় আসলেও যেনো থেমে না গিয়ে হাটতে পারি। যতসব উদ্ভট চিন্তা।
এরপর কয়েকটা দিন কেটে যায়।
দুজন আলাদা আলাদা ভাবে ক্লাস শুরু করে। সারাদিন পড়াশোনা, সংসারের কাজ, রাতের ঘুম। দিনগুলো যেনো দ্রুতই কেটে যাচ্ছে। একদিন রাতে সাইমা সুযোগ বুঝে বলেই ফেললো,
সাইমাঃ কি দরকার ছিলো এতো কষ্ট করার? ভালোই তো ছিলাম দেশে।
সজীবঃ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছো নাকি?
সাইমাঃ ঠিক তা না, ক্লান্ত লাগছে আরকি! মনে হচ্ছে, ব্যস্ত জীবনটাকে মাঝেমধ্যে ছাড় দেওয়া উচিৎ। নইলে সব কিছুই বোরিং লাগে।
সজীবঃ কোথাও ঘুরতে যেতে চাচ্ছো?
সাইমাঃ তা নয়! কেমন যেনো অস্থিরতা কাজ করছে। বাসায় থাকলে, মন খারাপ হলে মায়ের কোলে মাথা রেখে শুয়ে থাকতাম। বন্ধু ছিলো না, বান্ধবী দের সাথে মজা করতাম। বোন ছিলো না, ভাইয়ার সাথে দুষ্টুমি করে আনন্দ করতাম। এখানে দেখো, তুমি আর আমি। যত কিছুই হোক ঘুরেফিরে তোমার কাছে। মা নেই, বাবা নেই, ভাইয়া নেই, কেমন যেনো লাগছে। মনে হয়, ওদের কাছে কখনো যেতে পারবোনা।
মন খারাপ করে সাইমা কথাগুলো বলে ফেলে।
সজীব ওকে আশ্বাস দিয়ে বললো,
সজীবঃ সবই তো বুঝি, তোমার এখানে আসার ইচ্ছে ছিলো না জানি। সেইজন্যই এতো খারাপ লাগছে। তাছাড়া সবার সাথে ভিডিও কলে কথা তো বলছোই।
সাইমাঃ তুমিও ইদানীং আমাকে খুব একটা সময় দাও না৷
সজীবঃ সারাদিনের ক্লান্তিতে কখন ঘুমিয়ে পড়ি বুঝতেই পারিনা। অভিযোগ যখন করেছো, তোমাকেও সময় দিবো এখন থেকে। কাল দুজনের ক্লাস শেষ করে হাটতে বের হবো। শহর টা এমনিতেই সুন্দর, হাটলে তোমার মন ভালো হয়ে যাবে।
সাইমা একটু হাসে, তবে মন থেকে নয়। সজীবের বুকেই মাথা রেখে ঘুমিয়ে যায়। সারাদিনের ক্লান্তি শেষে এটাই তার শান্তির ঠিকানা।
ব্যস্ত সময়ে ভালোবাসা মলিন
ফুটপাত ধরে এক কিলোমিটার মতো হাটার পর দাঁড়ায়। স্টেশন একটা, উপরের দিকে ইস্পাতের ডিজাইন। নিচ দিয়ে অনেক মানুষ হেটে যাওয়া আসা করছে। প্লাটফর্ম আর ফুটপাতের মাঝে একটুখানি বসার জায়গা করা আছে।
ওখানে গিয়েই ওরা বসে গল্প করছে আর আশেপাশের মানুষ গুলোকে দেখছে। কেউ বা গেঞ্জি প্যান্ট, কেউ গেঞ্জি স্কার্ট, বেশিরভাগই স্যান্ডো গেঞ্জি পড়া মেয়ে। আর ট্রাওজার পরা মেয়ে গুলোর পুরো শরীরটাই বুঝা যাচ্ছে। সাইমার খুব রাগ হয় ওদের কে দেখলে। নিজেকে কেমন যেনো জংলী মনে হয় ওদের মাঝে। বাংলাদেশে একটা বিদেশী মেয়ে ঘুরলে দেশী রা যেমন ঘুরে ঘুরে দেখে। ঠিক তেমন টাই মনে হচ্ছে সাইমার। ওকেই সবাই ঘুরে ঘুরে দেখছে৷ যেনো পুরো শরীর ঢেকে রেখে অন্যায় করে ফেলেছে।
বিরক্তি নিয়ে সজীব কে বললো,
সাইমাঃ তুমি কি উঠবে? নাকি এখানেই বসে থাকবে?
সজীবঃ রেগে গেলে যে হটাৎ।
সাইমাঃ নিজেকে সার্কাসের বস্তু মনে হচ্ছে। সবাই দেখো কিভাবে দেখছে?
সাইমাঃ বাদ দাও, তুমি খোলামেলা ভাবে আসলে এমন হতো না। এখানে ওরা পর্দা করা মেয়েদের বাঁকা চোখে দেখে। তাও তো বোরখা পড়োনি, তাহলে তোমাকে গিলে খেতো এরা।
হটাৎ একটা মেয়ের দিকে সজীবের চোখ আটকিয়ে যায়। পরক্ষণেই চোখ ফিরিয়ে নিয়ে সাইমাকে বললো,
সজীবঃ চলো উঠি, প্রেজেন্টেশন রেডি করতে হবে। তাছাড়া আরোও অনেক কাজ বাকি আছে।
সাইমাঃ কি কাজ?
সজীবঃ নতুন একটা টপিক দিয়েছে, থিসিস করতে হবে। তবে এই টপিকটা ভালো করে স্টাডি করলে জীবনে শুধু সাফল্যই ধরা দিবে।
সাইমাঃ কি সেটা?
সজীবঃ পরে বলবো। এখন যাওয়া যাক।
সংসারে অশান্তির আগমন
এরপর ওরা রেস্টুরেন্টে ঢুকে নাস্তা করে নেয়। পরে একটা কার ভাড়া করে বাসায় ফিরে আসে।
বাসায় আসার পর সাইমা ডিনারের ব্যবস্থা করতে যায়। আর সজীব ফেসবুকে ঢুকে সময় পাস করার জন্য। ফেসবুকে ঢুকেই খেয়াল করে নতুন ক্লাসমেট এর ফেসবুক আইডি রিকুয়েষ্ট এসেছে। প্রেজেন্টেশন এর কাজ একসাথে করার সময় ছেলেটার সাথে পরিচয় হয় সজীবের।
কাজের ফাঁকে পরিচয় হয়, ওর নামে মাহমুদ সালেহ। অস্ট্রেলিয়ান মুসলিম পরিবারে জন্ম কিন্তু মুসলিম ভাবধারার ছিটেফোঁটা ও নেই। হয়তো বংশের টানে খৃষ্টান ধর্ম গ্রহণ করেনি কিন্তু ওদের সব কালচারই মনে প্রাণে গ্রহণ করেছে।
রিকুয়েষ্ট এক্সেপ্ট করবে কিনা ভাবতে ভাবতে এক্সেপ্ট করেই ফেলে। এক্সেপ্ট করার পর আফসোস করতে থাকে, যদি না করতো তাহলেই ভালো হতো। চোখে একফোঁটা পানিও চলে আসে। এরই মাঝে সাইমা এসে ডাকে সজীব কে। সজীব ফেসবুকে লগ আউট করে ডাইনিং এ গিয়ে বসে। ভাত, মুরগী, সাথে সালাদ তৈরি করেছে সাইমা৷
সাইমাঃ সবজি করার সময় পাইনি, আজ এগুলো দিয়ে খেয়ে নাওনা।
ছেলেটা সবজি, আমিষ ছাড়া খেতে পারেনা। তবুও ক্লান্তিতে সাইমা আজ সবজি করতে পারেনি৷ সাইমার কথার উত্তর না দিয়েই সুন্দর করে খেয়ে উঠে যায়। সাইমা নিজেও খেয়ে নেয়, কিন্তু সন্দেহ মনের মাঝে বাসা বাঁধে৷ রান্নার জন্য কি ওর মন খারাপ নাকি অন্য কোনো কারণ আছে! ও তো রান্না ঠিক মতো না হলে একরকম ঝগড়া বাধায় ফেলে। অথচ আজ কি হলো তার! চলবে….
পরের পর্ব- ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৮
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প