ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৩: সব মেয়ে চায় একটা ভালো মনের ছেলে, ধার্মিক ছেলে। কিন্তু সাইমা এমন একজনকে বিয়ে করল যে কিনা মহল্লায় অন্যতম সেরা বখাটে হিসেবে পরিচিত। সাইমা কি পারবে এই বখাটে ছেলেটাকে একজন আদর্শ স্বামী ও ভালো মানুষে পরিণত করতে? সে কি পারবে নতুন এক সজীবের জন্ম দিতে? আমাদের দেখার পালা শুধু।
অতৃপ্ত বাসর রাত
শাড়ির আঁচল মাথা থেকে ফেলে দেওয়াতে সাইমা ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে। গলায় কিছু অনুভব করে, পরক্ষণেই চোখ মেলে দেখে একটা S চিহ্নিত লকেট সহ চেইন সাইমার গলায় পরিয়ে দেয় সজীব।
সাইমা কতো কিছুই না ভেবেছিলো অথচ নিজেই বোকা বনে গেলো। কারণ লকেটটা পরিয়ে দিয়েই সজীব বিছানায় নিজেকে এলিয়ে দিয়েছে।
সাইমা লকেট এ হাত দিয়ে সজীব এর ঘুমন্ত মুখের দিকে অপলক তাকিয়ে আছে। ও যদি খারাপ ছেলেই হয় তাহলে কিভাবে সুন্দরী বউ কে রেখে ঘুমাতে পারে।
তারপর সাইমা ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়, নিজেকেই প্রশ্ন করে, “সত্যিই তুই সুন্দর তো!”
পরক্ষণেই আপনমনে বলে উঠে,
“আমিতো এটাই চেয়েছিলাম। আমি কিভাবে খারাপ ছেলের কাছে নিজেকে বিলিয়ে দিবো! আল্লাহ আমাকে রক্ষা করেছে হয়তো এভাবেই। কিন্তু ঘুমাবোটা কোথায়! ওর সাথে বেড শেয়ার করার প্রশ্নই আসে না৷”
সোফার উপর বসে থাকে, কিছুক্ষণ পর নিজের অজান্তেই ঘুমিয়ে পড়ে সাইমা।
সজীব এতক্ষণ ঘুমের ভান করে পড়ে ছিলো। মুচকি হেসে বললো,
সজীবঃ আমি হয়তো সমাজের চোখে খারাপ। তবে আমি সজ্ঞানে কোনো পাপ করিনি, করতেও চাইনা! তুমি বুঝবে, সময় হলেই সব কিছু বুঝতে পারবে। নিজের ভুলও বুঝতে পারবে। তখন না হয় ভালোবেসো।
সাইমাকে ঘুমের মাঝে একদম পরীর মতো লাগছে। ঠিক যেনো পুতুলের মতো। সজীব অন্যদিকে ফিরে তাকায়। এই মেয়ের দিকে বেশিক্ষণ তাকিয়ে থাকলে নিজেকে কন্ট্রোল করা সম্ভব না।
ফজরের ওয়াক্তে সাইমার ঘুম ভাঙে। সোফায় বাঁকা হয়ে ঘুমিয়ে থেকে ঘাড়টা ব্যথা করছে। কোনো রকম উঠে ওজু করে নামাজটা পড়ে নেয়।
সজীবের ঘুম ভাঙে মিষ্টি কণ্ঠের কোরআন শরিফ এর আওয়াজ শুনে। সজীব উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
বউয়ের কড়া শাসন
ঘরে ফিরে আসে বেলা ১২ টাই।
এসে দেখে সাইমা ওর মায়ের সাথে কাজ করছে। সজীবকে দেখেই মায়ের প্রশ্ন,
সজীবের মাঃ ঘরে নতুন বউ রেখে কোথা থেকে রাত কাটিয়ে আসলি?
সজীবঃ রাতে তো ঘরেই ছিলাম, বের হয়েছি সকাল বেলায়। কেনো সাইমা কিছুই বলেনি!
সাইমা অবাক হয়ে তাকায়, আবার চোখ নামিয়ে নেয় । শাশুড়ির দিকে ফিরে বললো,
সাইমাঃ জ্বি, সকালেই উনি বের হয়েছিলো।
সাইমার শাশুড়িঃ ছেলেটা ভুল পথে পা বাড়িয়েছে মা। তুমিই পারবে ওকে সৎ পথে ফিরিয়ে আনতে।
সাইমা কিছুই বললো না। সজীব চুপচাপ ঘরে চলে যায়।
আয়েশা সুলতানা ছেলের বউ এর উদ্দেশ্যে বললেন, গিয়ে দেখো তো মা, ওর কিছু লাগবে কিনা!
সাইমা মাথা ঝুকিয়ে ঘরের দিকে আসে। ভালোই লাগছেনা কিছুই, কিভাবে মিলবে মুক্তি!
ঘরে এসে দেখলো সজীব সিগারেট টানছে। সিগারেটের গন্ধে সাইমার বমি আসার মতো অবস্থা। একটু রেগে বললো,
সাইমাঃ বাজে নেশা করার হলে বাইরে থেকে করে আসবেন। ঘরে এসে এসব খাওয়া চলবেনা।
সজীব সিগারেটটা ফেলে দিয়ে সাইমার খুব কাছাকাছি এসে বললো,
সজীবঃ কোথায় খেতে নিষেধ করবে, তা না! বলছো, বাইরে থেকে খেয়ে আসতে।
সাইমা এক রাশ বিরক্তি নিয়ে সজীবের থেকে সরে যায়।
স্বামীর কষ্টের গল্প
দুপুরে খাবার পর সাইমা ডায়েরিটা খুলে, কেনো খুললো নিজেই জানেনা। শুধু জানে কিছু একটা আছে। গতকালই ডায়েরিটা হাতে পায়। একটা মাত্র কবিতা পড়ার পর আর সময়ই হয়ে ওঠে নি ডায়েরিটা পড়ার। তাও মাঝ বরাবর খুলে কবিতাটা পড়ে, জায়গাটা মার্ক করেই রেখেছিলো, পৃষ্ঠা ওপেন করে পরের পাতায় যায়। আরোও একটা কষ্টের কবিতা লিখা।
অনেক কষ্ট বুকে চাপা দিয়ে রেখেছি। জানি, আর কখনোই হাসতে পারবোনা। চাপা কষ্ট গুলো শুধুই যন্ত্রণা দিবে। মৃত্যু ছাড়া হয়তো আর রেহাই পাবোনা।
মরীচিকার পিছনে ছুটতে গিয়ে জীবনের মানেই হারিয়ে ফেলেছি। আজ বড়ই অস্তিত্বহীন অসহায় জীবন সংগ্রামে পুরোপুরি হেরে গেছি। বুকের মাঝে যন্ত্রণা গুলো না পারি লুকাতে না পারি ছুড়ে ফেলে স্বস্তির নিঃশ্বাস নিতে। বুক ফাটানো চিৎকার আসে, সহ্যশক্তি পার হয়ে যাওয়া যন্ত্রণা।
না পারি কাউকে বলতে, না পারি যন্ত্রণা ভুলে নতুন করে এগিয়ে যেতে। মানসিক কষ্ট গুলো শুধুই একার। যা বহন করার শক্তি ও হারিয়ে গেছে। শুধু আল্লাহর দরবারে প্রার্থনা একটাই যেনো আমায় মুক্তি দেয় অবশেষে। নাই কোনো আক্ষেপ কোনো অভিযোগ। তোর নতুন করে পথ চলার শুভসূচনা হোক।
“উফফ আল্লাহ, না জানি মানুষটা কতটা কষ্ট পেয়েছে তার জীবনে।”
এবার প্রথম পৃষ্টা খুলে দেখলাম, খুব সুন্দর করে তারিখ দিয়ে লিখা, ০১. ০৩. ২০১২
“আজ খুবই আনন্দ লাগছে, আমার স্বপ্ন অষ্ট্রেলিয়াতে পড়ার সুযোগ পেয়ে। এখানে লাইফটা গুছিয়ে নিবো।”
সাইমা হাসলো, কি আশ্চর্য! যে কিনা এতো ট্যালেন্ট সে কিনা ডায়েরি লিখে! যাই হোক, লিখলে আমার কি!
পরের পাতায় যায়, ০৪.০৩.২০১২
“পড়তে এলাম নাকি প্রেম করতে! মেয়েটা যে হৃদয় কেড়ে নিয়েছে। বাংলাদেশী ফ্যামিলি, তবে জন্ম এখানেই। ও আমার প্রেমে পড়লো নাকি আমি তার প্রেমে পড়লাম, বুঝলাম না! হটাৎ করে ছোট্ট এক্সিডেন্ট করলাম মেয়েটির গাড়িতে। মেয়েটি দ্রুত বেরিয়ে এসে আমায় উঠালো। বললো,
মেয়েটিঃ আই এম সরি।
আমিঃ ইটস ওকে, আই এম ফাইন।
মেয়েটিঃ হয়ার আর ইউ ফ্রম?
আমিঃ আ’ম কামিং ফ্রম বাংলাদেশ এন্ড ইউ?
মেয়েটিঃ তাহলে বাংলাতেই কথা বলি। আমার মা বাবা দু’জনেই বাংলাদেশী। আমার জন্ম এখানেই।
আমিঃ বিদেশের মাটিতে দেশী মেয়ে! ভাবা যায় এগুলা!
মেয়েটিঃ কি যে বলনা! যাই হোক তুমি তো আমার ক্লাসমেট। বলতে গেলে ফার্স্ট ক্লাসেই ছোট খাট ক্রাশ খেয়েছি।
আমিঃ তাই বুঝি দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য এই এক্সিডেন্টটা করিয়ে দিলে!
মেয়েটা লাজুক ভঙ্গিতে হাসে, বললো, এক্সিডেন্ট তো এক্সিডেন্টই, এটা কি ইচ্ছাকৃত করা যায়!
কি মায়াবী তার হাসি, বিশেষ করে গোলাপি ঠোঁটগুলো খুব টানছিলো আমায়! প্রেম নাকি আকর্ষণ কিছুই জানিনা!
পরের পাতায় গেলো সাইমা, ০৯.০৩.২০১২
“প্রপোজ কেমন করে করতে হয় কিছুই বুঝতাম না! তবে ওর জন্য অপেক্ষা করছিলাম অনেকক্ষণ। রোশনি আমার জীবনে আলো নিয়েই যেনো এসেছে। লং স্কার্ট এর সাথে ফুল হাতা গেঞ্জি পড়ে মাথায় হিজাব পেচিয়ে এসেছিলো সেদিন।
ওকে এতোটা মায়াবতী লাগছিলো, মনে হচ্ছিলো ওকে আমার চাইই চাই। পকেটে চকলেটই ছিলো, সেটা বের করে ওর দিকে এগিয়ে দিয়ে বললাম,
আমিঃ তুমি কি আমার চকলেট এর অর্ধেক ভাগ সারাজীবন এর জন্য নিতে চাও! যদি চাও, হাত দুটো বাড়িয়ে দাও। প্রেমে পড়ে গেছি তোমার।
রোশনি চকলেট এর সাথে আমার হাত প্রথম ধরে। একটা মেয়ের হাত এতো কোমল কিভাবে হয়!
স্বামী স্ত্রীর অভিমান
সাইমা পরের পৃষ্ঠা উল্টাতে যাবে এমন সময় খেয়াল করল, সজীব এসে দাঁড়িয়ে আছে বারান্দায়। সাইমা দ্রুত ডায়েরিটাকে লুকিয়ে ফেলে। সজীবকে দেখে কেনো লুকালো সে নিজেও জানেনা। তবে ডায়েরির প্রতি তার নেশা লেগে গেছে। এক অদ্ভুত নেশা, এক অজানাকে জানার নেশা। যতক্ষণ না শেষ করতে পারবে ততক্ষণ শান্তি আসবেনা।
এরই মাঝে আয়েশা সুলতানা এসে বললেন,
সাইমার শাশুড়ীঃ সজীব আর তুমি কোথাও থেকে ঘুরে আসো, দুজন দুজনের সাথে পরিচিত হও। দেখবে ভালো লাগবে।
সাইমাঃ আম্মা, আমি যাবো না।
বারান্দা থেকে এসে সজীবের সোজা সাপটা জবাব।
সাইমা উঠে গিয়ে বললো,
সাইমাঃ আমারও কোথাও যাওয়ার ইচ্ছে নেই আম্মু।
সাইমার মুখে আম্মু শুনে আবেগ এ আপ্লূত হয়ে যায় আয়েশা সুলতানা। সাইমাকে অনেক আদর করে বেরিয়ে যায়।
সজীব দরজাটা লাগিয়ে দেয় সাথে সাথে।
সোফায় সাইমা বসে ছিলো। ঠিক তখন সজীব একেবারে সাইমার সামনাসামনি এসে বসে।
সজীবঃ তোমার যদি আমাকে বিরক্ত লাগে, তো তুমি চলে যেতে পারো!
সাইমা কিছুই না বলে উঠে দাঁড়ায়। এরপর বলে,
সাইমাঃ আমাকে যদি তাড়িয়ে দিতে হয়! তাহলে মুক্তি দিয়ে দিন।
কথাটা বলে সাইমা বাইরে বেরিয়ে যায়।
পরিবারের সাথে বিনোদন
এমন সময় সাগরকে দেখে আনন্দের সীমা থাকে না। গতকালই ভাইয়ের পাশে ছিলো, আর আজ, একদিন এর ব্যবধান মাত্র তবুও মনে হচ্ছে অনেক দিন পর দেখছে তার ভাইকে। ভাইকে দেখেই প্রতিশোধ নেশা জেগে উঠলো সাইমার।
সাগরকে দ্রুত শরবত বানিয়ে দিলো। সাগরকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সাইমা বললো,
সাইমাঃ নে ভাইয়া, এতো গরমে তুই খুব ক্লান্ত, শরবত খা।
সাগর বোনের ভালোবাসা দেখে মুচকি হেসে ঢকঢক করে শরবত খাওয়া শুরু করে। খেতে খেতেই ঝাল সহ্য করতে না পেরে হাঁপাতে শুরু করে। সাথে পানি পানি করে চিৎকার করে ওঠে।
সাইমা সাগরের কীর্তি দেখে হাসতে হাসতে পাগল হবার দশা। দ্রুত গিয়ে পানি এনে দেয় ভাইকে। সাগর তাড়াতাড়ি পানি শেষ করে আরোও চায়। কয়েক গ্লাস পানি পানের পর সাগর তৃপ্তি না পেয়ে চকলেট বের করে খেয়ে নেয়।
শান্তি পেয়ে এবার বোনকে বললো,
সাগরঃ চকলেটটা তোর জন্যই এনেছিলাম, এখন কচু খা ।
সাইমা হাসি মুখ নিয়ে বললো,
সাইমাঃ তোর চকলেট তুইই খা।
উপর থেকে সাইমার খুনসুটি খেয়াল করলো সজীব। একটা প্রাণবন্ত মেয়েকে এভাবে কষ্ট দেওয়ার কি কোনো মানে হয়। ও যদি মুক্তি চায় তাহলে মুক্তি দিয়ে দেওয়া উচিৎ নয় কি! চলবে….
পরের পর্ব- ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৪
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প