ইসলামিক রোমান্টিক গল্প পর্ব ২

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ২

ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ২: একটি ছেলে যেকিনা খারাপের শেষ প্রান্ত পর্যন্ত চলে গেছে, সেও পরিবর্তিত হয়ে অকল্পনীয় ভালো ছেলে হতে পারে। কার কখন কিভাবে পরিবর্তন আসবে তা বলা যায় না। তবে আদর, স্নেহ, মায়া, মমতা এবং ভালোবাসা যে কাউকে শয়তান থেকে মানুষে পরিণত করতে পারে। এগুলো এতই শক্তিশালী যে, পাথর মনকে গলাতে পারে।

কিছু বেদনা কিছু স্মৃতি

অন্যদিকে…


“খুব কি দরকার ছিলো আমাকে কাঁদানোর?
কি ক্ষতি করেছিলাম বল আমি তোর।
একটুখানি ভালোবাসতেই তো চেয়েছিলাম।
বিনিময়ে বেদনার নীল রঙে জীবন সাজালাম।
খুব কি প্রয়োজন ছিলো স্বপ্ন দেখানোর?
কেনো স্বপ্ন দেখিয়ে করলি আমায় বিভোর!
কষ্ট কি আমার হয় না! নাকি আমি মানুষ নই!
কেনো দুঃখকে বানিয়ে দিলি আমার সই?
কিছুই বলবোনা তোকে আমি, রবে শুধু হাহাকার।
প্রকৃতি নিশ্চয়ই বুঝাবে, পরিণাম অন্যকে দেওয়া ধোঁকার।”


সাইমা ডায়েরিটা আবার বন্ধ করে দেয়। ডায়েরি লেখক হয়তো খুব কষ্ট থেকে লিখেছে, নয়তো আশেপাশের পরিস্থিতি বুঝে লিখেছে। এমনটাই ভেবে নেয় সে।

মনে মনে ভাবে, মানুষ বিয়ের আগে প্রেম করে, বা বিয়ের পর পরকিয়া করে। যার জন্য অপর মানুষের জীবনটা দূর্বিষহ হয়ে যায়। কি দরকার বিয়ের আগে প্রেম করার! প্রেম করবো তো একেবারেই বিয়ের পর করবো।

নিজের বিয়ের কথা ভাবতেই মনে পড়ে, “আমার আবার প্রেম! আমার কপালে তো ভালো ছেলেই জুটলো না। জুটলো একটা বাজে ছেলে। কিভাবে সম্ভব ওর সাথে সংসার করা! আমার পক্ষে তো সম্ভবই না। কিন্তু না করার কোনো উপায় আছে কি!”

গভীর চিন্তা করতে করতে ঘুমিয়ে পড়ে সাইমা।

এদিকে, ঘুম থেকে উঠে চোখ কচলাতে কচলাতে একটা ছবিতে চোখ আটকিয়ে যায় সজীবের । দেয়ালে স্কচটেপ দিয়ে লাগিয়ে রেখেছে কেউ। সেই চিরচেনা চোখ দুটো। ঠোঁটে বাঁকা হাসি, সরু ঠোঁটে হাসিটা খুব মানিয়েছে ও। কাজল কালো চোখের কালো মনি দুটো যেনো চুম্বকের মতো টানছে মেয়েটাকে। বারবার মনে হচ্ছে ওকে যেভাবেই হোক আপন করে নিতেই হবে।

একটু পর চিৎকার করে মা কে ডাকা শুরু করে। আয়েশা সুলতানা ঘরে ঢুকতেই বললো,

সজীবঃ তোমার পছন্দ আছে বৈকি। এই মেয়েকেই আমি বিয়ে করবো।

সজীবের মাঃ আমি জানতাম! তুই ওকে সামনাসামনি দেখলে জ্ঞান হারাবি। ও এতোই সুন্দরী।

সজীবঃ তাহলে ওর দেখা কবে পাচ্ছি?

সজীবের মাঃ তুই চাইলে আজই সম্ভব। আমার বান্ধবীর মেয়ে ও।

সজীবঃ সব ঠিক করেই রেখেছো তাহলে!

খুশিতে নাচতে নাচতে উঠে মায়ের হাতে চুমু দিয়ে বলে,

সজীবঃ আমি তোমার উপর অনেক হ্যাপি মাই ডিয়ার মম।

হাতটা সরিয়ে নিয়ে আয়েশা বললো,

সজীবের মাঃ যা দূর হ, আগে ফ্রেশ হয়ে আয়। তোর মুখ থেকে গন্ধ বের হচ্ছে।

এরপর সজীব হাসতে হাসতে ওয়াশরুমে চলে যায়।

ধার্মিক মেয়ের কথা

আয়েশা সুলতানা খুশিতে মারুফা আহমেদকে ফোন দেয়। ওপাশ থেকে ফোন রিসিভ করে বললো,

আয়েশা সুলতানাঃ আসসালামু আলাইকুম। কেমন আছিস তুই?

মারুফা আহমেদঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি। তুই কেমন আছিস?

আয়েশা সুলতানাঃ আলহামদুলিল্লাহ, আজ কি সাইমার সময় হবে?

মারুফা আহমেদঃ ও তো বেরিয়ে গেছে। ঠিক আছে, ওকে বাসায় চলে আসতে বলছি। দুপুরে তাহলে এখানেই লাঞ্চ করিস।

আয়েশা সুলতানাঃ ইনশাআল্লাহ, আচ্ছা এখন রাখছি।

এদিকে মারুফা আহমেদ তাড়াতাড়ি মেয়েকে ফোন করে ডাকলেন।

সাইমা ঘন্টা খানিক পরে ফিরে আসলো।

সাইমাঃ এতো জরুরী কি দরকার আম্মু?

সাইমার মা (মারুফা আহমেদ): ওরা আজ তোকে দেখতে আসবে।

সাইমাঃ আমি বিয়ের আগে কোনো ছেলেকে মুখ দেখাবোনা।

সাইমার মাঃ একবার মুখ দেখাতে হয় মা। এই ব্যাপারে অনেক হাদিস আছে।

হযরত মুগিরা বিন শো’বা রা. বলেন, আমি জনৈক নারীকে বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। এটা শুনে রাসূলূল্লাহ্ সা. আমাকে জিজ্ঞাস করলেন, তুমি কি তাকে দেখেছ? আমি বললাম, না দেখিনি। তখন তিনি নির্দেশ দিলেন যে, তুমি তাকে দেখে নাও। তোমার এই দর্শন তোমাদের মাঝে দাম্পত্য জীবনের প্রণয়-ভালোবাসা গভীর হবার বড় সহায়ক হবে। [তিরমিযী: ১/২০৭]”

সাইমাঃ কিন্তু আমি বিয়ের আগে কাউকেই মুখ দেখাবোনা। কারণ বিয়েটা না হলেও সেই ছেলে যদি তার কল্পনায় আমাকে আনে তাহলে আমার পাপ হবে।

সাইমার মাঃ তুই ঘরে যা, পরে ওদের কে বুঝিয়ে বলবো।

বিয়ের গল্প কথা

সাইমা ঘরে এসে পায়চারি করতে থাকে। এই ছেলেকে তার পছন্দ কোনো কালেই ছিলো না। অথচ কিনা ওকেই বিয়ে করতে হবে। বিয়েটা কি কোনো ভাবেই আটকানো যায় না!
ভাবতে ভাবতে ভাইয়ের টোকা খেয়ে সম্বিত ফিরে পায়।

সাগরঃ কিরে বিয়ে ভাঙার প্লান করছিস?

সাইমাঃ বিয়েটা কি কিছুতেই ভাঙা যায় না!

সাগরঃ তুই কি অন্য কাউকে পছন্দ করিস?

সাইমাঃ না, তুই কি জানিস না ভাইয়া, ইসলামে বিয়ের আগে প্রেম হারাম।

সাগরঃ প্রেমিক থাকলে বলতাম পালিয়ে যা, যখন নেই তখন বিয়ে করেই নে।

সাইমাঃ তুই কি আমার ভাই নাকি শত্রু?

সাগরঃ বাবা যা করেছে, বিয়ে তুই কিছুতেই ভাঙতে পারবিনা। বরং তুই যদি মানিয়ে নিতে পারিস তাহলে হয়তো পাপমুক্ত হবি।

সাইমাঃ তাহলে আজই আমাকে বিদায় করে দে। ওই অসভ্যটার সাথেই যখন আল্লাহ আমার বাঁধন লিখে রেখেছে! তখন এই অশুভ কাজটাকেই শুভ করে দে আজই।

সাগরঃ বাব্বাহ! বিয়ে করতে বোনের দেখি এতো তাড়া!

সাইমাঃ চুপ থাক ভাইয়া, বিয়ে করতে তাড়া না৷ বাবার পাপকে মুক্তি দেওয়ার তাড়া।

বিয়েটা অবশেষে হয়েই গিয়েছিলো, সাগর আর ওর মায়ের জোরাজোরি তে। বিয়েতে অবশ্য সাইমার বাবা আসেনি, বড় ভাই হিসেবে সাগরই সাক্ষ্য দিয়েছিলো অভিভাবক হিসেবে। কোনো সাজ সজ্জা নেই, সাদামাটা লাল রঙের সুতি শাড়ি পড়ে সাইমা বসে আছে সজীবের ঘরে। শাশুড়ি নিজেই বসিয়ে রেখে গেছেন। বাধ্য বউ এর মতো সাইমা কিছুক্ষণ বসে থাকে। এরপর ওয়াশরুমে গিয়ে অযু করে আসে। জায়নামাজ বিছিয়ে এশার নামাজ আদায় করে। কিছুক্ষণ বসে থাকে, পরে দুই হাত তুলে করুণ কণ্ঠে আল্লাহর কাছে বিচার দেয়,

সাইমাঃ “এটা কোন পাপের শাস্তি আল্লাহ, নাকি পরীক্ষা! বোঝার ক্ষমতা নেই আমার। তুমি আমাকে ধৈর্য দাও। যেনো এই বিপদ থেকে রক্ষা পেতে পারি।”

সাইমা জায়নামাজ তুলে দাঁড়াতেই সজীবের সাথে ধাক্কা খায়। কখন যে সজীব ওর পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে খেয়ালই করেনি। তবে ধাক্কা খাওয়ার পরে সাইমার ভিতরে অসহনীয় তোলপাড় শুরু হয়। হৃদকম্পন বেড়ে গেছে বহুগুণে। কিছুটা সামলে নেয় নিজেকে, নিরাপদ দূরত্বে সরে যায় তাড়াতাড়ি। খেয়াল করে সজীব ওর দিকে অপলক তাকিয়ে আছে।

ইসলামিক বাসর রাত

সাইমা চোখ কটমট করে হাতের জায়নামাজ ওয়ারড্রব এ রেখে দেয়।

সজীব ততক্ষণে সাইমার খুব কাছাকাছি এসে দাঁড়ায়। সাইমা আচমকা ভয় পেয়ে সজীবকে ধাক্কা দেয়।

সাইমাঃ খবরদার আমার কাছে আসবেন না৷ কোনো পাপীর বউ নয়।

সজীব সাইমার রূপে যত না বিমোহিত ছিলো ব্যবহারে ততটাই বিরক্ত হয়ে যায়। কণ্ঠটাও চিনতে দেরি হয় না। এই সেই মেয়ে যাকে সে অসংখ্য বার দেখেছে তবে চিনতে পারেনি।
অপরিচিতা কে বউ হিসেবে পেয়েও রাগী গলায় বললো,

সজীবঃ তাহলে বিয়ে করলে কেনো?

সাইমাঃ এটাকে বিয়ে বলে না। এক প্রকার হুমকিই বলা চলে। তাছাড়া আপনার মতো নারী লোভীর সাথে কি আমার মতো খোদা ভীরু মেয়েকে মানায়!

সজীবঃ তাই বুঝি! তাহলে তো ইসলামে স্বামীর খেদমত করতে বলা আছে। তা অস্বীকার করবে কিভাবে! নাকি আল্লাহ কে অস্বীকার করবে এখন! রাসুল ( সাঃ) বলেছেন, ‘‘যদি কোন পুরুষ তার স্ত্রীকে বিছানায় আহবান করে আর স্ত্রী অস্বীকার করার ফলে স্বামী রাগান্বিত অবস্থায় রাত্রিযাপন করে তখন ঐ স্ত্রীর উপর ফেরেশতারা অভিশাপ করতে থাকে।’’ (বুখারী:২৯৯৮) ”

সাইমা চুপসে যায়, সজীব মুচকি হেসে সাইমার দিকে এগিয়ে আসে। মনে মনে প্রার্থনা শুরু করে আল্লাহ এই অসভ্যের হাত থেকে মুক্তি দাও আমায়।

চলবে…

পরের পর্ব- ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ৩

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *