ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ১: একটা বিষয় খেয়াল করছেন? বেশির ভাগ বিয়ে স্বামী স্ত্রী একেবারে উল্টো। স্বামী ভালো তো স্ত্রীর অনেক সমস্যা আবার স্ত্রী সংসারী তো স্বামী ভিলেন টাইপের। তারপরেও কেমন করে জানি সংসার হয়, দুজনে বিপরীত মেরুতে থেকেও কেমন করে জানি এক হয়ে যায়। এক মন, এক আত্মা, এক সংসার আর এক জীবন। চলুন এমনি একটি সিনেমাটিক কিন্তু বাস্তবিক জীবনের গল্প শুনি।
অইসলামিক উদাসিন জীবন
তোর লজ্জা লাগে না, বাজে মেয়েদের সাথে তুই রাত কাটাস!
ও যদি বাজে মেয়ে হয়, তাহলে আমিও বাজে ছেলে। বাই দ্যা ওয়ে, বাজে মেয়েকে ঘরে না তুললে হৃদয়ের ক্ষুধা মেটাবে কে?
আমার সঙ্গে বেয়াদবি করছিস তুই?
সজীব শুনেও না শুনার ভান করে মেয়েটার হাত ধরে টানতে টানতে বাইরে বেরিয়ে যায়। ওর মা সোফার উপর বসে উপরের দিকে তাকিয়ে বললো,
হায় আল্লাহ, আমার একটা মাত্র ছেলে। ওকে সৎ পথে ফিরিয়ে দাও তুমি। ওকে হেদায়াত দাও তুমি। আমি সহ্য করতে করতে ক্লান্ত হয়ে গেছি।
এই বলে কান্নায় ভেঙে পড়ে সজীবের মা আয়েশা সুলতানা।
সজীব তার বাবা মায়ের একটা মাত্র ছেলে। ধনী বাবার বখাটে ছেলেও বলা যেতে পারে। বাবার অগাধ সম্পত্তি আর ক্ষমতার জোরে ছোট থেকেই মনের ভিতর অহংকার নিয়েই বেড়ে উঠে সজীব। যত দিন যায় ততই পাপের পরিমাণ বাড়িয়ে ফেলে। প্রতিদিন রাত কাটে ভিন্ন ভিন্ন মেয়ের সাথে। বাজে নেশা তো আছেই। তবে এতদিন যা করতো বাইরে করতো।
আজ প্রথম সাহস হয়েছে বাসায় মেয়ে নিয়ে আসার। অভদ্রতার চূড়ান্ত পর্যায়ে চলে গেছে সে। মা খুব কষ্ট পাচ্ছে ছেলের অধঃপতন এ, ছেলের সেদিকে কোনো তোয়াক্কা নেই। শুধু জীবনকে কিভাবে উপভোগ করতে হবে সেদিকেই মনোযোগ তার। পড়াশোনা শেষ করেছে কিন্তু বখাটেপনা করতে প্রতিদিনই তার ক্যাম্পাসে যেতেই হবে। নতুন বেডমেট খোঁজার জন্য আজও ভার্সিটিতে এসেছে।
দেখতে ফর্সা, ক্লিন সেভ দাড়ি, খাড়া নাক, চোখের মনি ঈষৎ নীলাভ। দেখতে আকর্ষণীয় বলে কোনো মেয়েকে প্রপোজ করলে মেয়েও না করেনা। স্যুট পড়ে সানগ্লাস মাথায় দিয়ে গাড়ি থেকে নামে সজীব।
হটাৎ একটা মেয়ের দিকে চোখ পড়ে তার। প্রতিদিন এর মতো আজও মেয়েটা সজীবকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে যায়। কি আশ্চর্য, যেখানে সব মেয়ে একবার হলেও ওর দিকে তাকায়, সেখানে এই মেয়েটা ভুলেও ওকে দেখেনা। মেয়েটা কি আমার থেকেও অহংকারী নাকি!
সজীবের মনে প্রশ্নের উঁকি দেয়। কিন্তু সেটাকে পাত্তা না দিয়ে একটা মেয়েকে হাত ইশারা করে। মেয়েটাও খুশি হয়ে লাফাতে লাফাতে চলে আসে সজীবের কাছে।
মেয়েটাঃ হায়, কতো দিন থেকে তোমাকে ফলো করি, জানো তুমি!
সজীব শয়তানি হাসি দিয়ে বললো,
সজীবঃ তা তো জানিই।
মেয়েটাঃ চলো, কোথাও বসে কথা বলি।
সজীবঃ বসে বলবে নাকি শুয়ে!
মেয়েটাঃ কি যে বলো না!
সজীবঃ যাই হোক, তোমার নামটা যেনো কি?
মেয়েটাঃ রাইসা, আর তুমি তো সজীব।
সজীব রাইসার হাতটা কোমল করে ধরে বললো,
সজীবঃ কি কোমল হাত! তুমি না জানি কতটা কোমল!
রাইসা লজ্জা মাখা হাসি দেয়। কিছুক্ষণ পর বলে,
রাইসাঃ তোমার চোখ দুটো যা কিউট না! ওই চোখের মায়ায় হারাতে ইচ্ছে করে। বারবার প্রেমে পড়তে ইচ্ছে করে।
সজীবঃ তা কে আটকিয়ে রাখছে তোমায়!
দুজনের এক কথা দুই কথা বলতে বলতে অনেক ভাব জমিয়ে ফেলে। যেনো সজীব যা বলবে সব করতেই প্রস্তুত রাইসা। দুজনে রেস্টুরেন্টে লাঞ্চ করে, সারাটা বিকেল ঘুরাঘুরি করে। অতঃপর রাইসাকে বাসায় ড্রপ করে দিয়ে পতিতালয় এর উদ্দেশ্য পা বাড়ায় সজীব। আজ আর বাসায় যাবেনা, বাইরেই রাতটা কাটাবে।
স্বপ্নঘেরা পরিকল্পিত জীবন
অন্যদিকে…
আম্মুউউউউউউ” বলে চেঁচিয়ে উঠলো সাইমা।
মা দৌড়ে আসে মেয়ের চিৎকার শুনে। এসে দেখে সাইমার পুরো কপাল ডিমে ভেজা। কিছু বুঝে উঠার আগেই সাইমা বললো,
সাইমাঃ বাসায় ঢুকতে না ঢুকতেই তোমার ছেলে আমার কপালে ডিম ফাটিয়েছে।
মিথ্যে কথা, ডিমটা দরজায় আগে থেকেই ঝুলছিলো। ও না দেখে ওটাতে ক্লিক করেছে। এটা কি আমার দোষ বলো! সাগর (সাইমার বড় ভাই) কথাটা বললো তাড়াতাড়ি করে, যেনো মা কিছুই বলতে না পারে।
সাইমার আম্মু মারুফা আহমেদ খুব রেগে গিয়ে বললো,
মারুফা আহমেদঃ তোরা দু’ভাইবোন যাচ্ছে তাই। তোরা নিজেরা বুঝে নে কি করবি।
এই বলে রাগে হনহন করে হেটে চলে যায় ঘরে।
সাইমা রেগে গিয়ে সাগরের দিকে তাকালো। সাগর সাথে সাথে বললো,
সাগরঃ আরে ডিম লেগেছে তো কি হয়েছে, তোর একটু ফেসিয়াল হয়ে গেলো। সারাদিন তো রূপচর্চা করার সময় পাসনা। তাই একটু করিয়ে দিলাম।
এই কথা বলে – সাইমা কি বলে শুনার অপেক্ষা না করে দাঁত কেলিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে পড়ে সাগর। সাইমা বাধ্য বোনের মতো ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আসে।
খুব খিদে পেয়েছে সাইমার, সন্ধ্যা হয়ে গেছে। সারাদিন ক্লাস, টিউশনি করে একদম ক্লান্ত মেয়েটা। খেতে বসা মাত্র সাগর আবার এসে বললো,
সাগরঃ খেয়ে নে, খেয়ে নে। আর তো মাত্র কয়টা দিন। তারপর তো শ্বশুর বাড়ি চলেই যাবি তুই।
সাইমা একটা রাগী লুক দেয়। এরপর বলে,
সাইমাঃ সামনে ফাইনাল পরীক্ষা, পাশ করবো। জব নিবো এরপর যাবো।
সাগরঃ তোর শ্বাশুড়ি তোকে নিয়ে যাবে বলেছে।
সাইমাঃ আমার আবার বিয়ে কবে হলো!
সাগরঃ হবে তো!
সাইমাঃ ওই ছেলেকে বিয়ে কখনোই করবোনা, বলে দিলাম।
সাগরঃ আচ্ছা, দেখা যাবে। এখন গিলে আমায় উদ্ধার কর। সারাদিন তো কিছুই খাস নি।
সাইমাঃ খেতে দিচ্ছিস কোথায়?
সাগরঃ খাবার তোর হাতে, তোর মুখ তোর কাছে। আমি কিভাবে আটকালাম!
সাইমাঃ এতো বকবক করলে খাবো কিভাবে!
সাগরঃ দূর হ ফকিন্নি।
বলেই সাগর চলে যায়।
ওদের মা ওদের কথা শুনে হাসে, সারাদিন খুনসুটি লেগেই থাকে। মিষ্টি একটা সম্পর্ক ওদের।
বিয়ের গল্প
অন্যদিকে সজীব অনেক রাত করে বাড়ি ফেরে, মা আয়েশা সুলতানা তখনও ছেলের অপেক্ষায় বসে আছে না খেয়ে। সজীব গলা খাঁকারি দিয়ে বললো,
সজীবঃ এতো রাত পর্যন্ত অপেক্ষা করছো কেনো? আমি খেয়ে এসেছি বাইরে থেকে।
সজীবের মাঃ তোকে একটা কথা জানানোর ছিলো, তাই অপেক্ষা করছি।
সজীবঃ তাড়াতাড়ি বলো।
সজীবের মাঃ আমি চাই তোকে বিয়ে দিতে…
কথা শেষ না হতেই সজীব বলে,
সজীবঃ আমি বিয়ে করবোনা।
এ কথা বলে সে নিজের ঘরে চলে যায়।
রিলাক্সে কিছুক্ষণ বসে থাকে, তখন তার প্রিয় বন্ধুকে দেখতে পায়। বন্ধু বললো,
সজীবের বন্ধুঃ খবরদার বিয়ে করিস না। তুই বিয়ে করলে এক মেয়েতেই থাকতে হবে তোকে। আর বিয়ে না করলে অনেক হুরের সাথে রাত কাটাতে পারবি। বিয়ের মাঝে কোনো সুখ নেই, বুঝলি।
সজীবঃ সে আর বলতে, একেকদিন একেকটা, আহহ জোসস…!
সজীবের বন্ধুঃ আজকের মেয়েটাকে ছেড়ে দিলি যে। ওকে না করে পুরনো মালের কাছে কেনো গিয়েছিলি?
সজীবঃ ওইটার অনেক পরীক্ষা নিবো, তাই অপেক্ষা করছি।
সজীবের বন্ধুঃ কি করবি তুই ওকে?
সজীবঃ তুই আমার আগেই জানতে পারবি।
তারপর দুজনেই হাসতে থাকে। একটা সময় সজীব ঘুমিয়ে পড়ে, আর বন্ধু অদৃশ্য হয়ে যায়।
চলবে…
পরের পর্ব- ইসলামিক রোমান্টিক গল্প – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – পর্ব ২
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প