কথা বলাটা আর হল না – মনের বেদনার গল্প

কথা বলাটা আর হল না – মনের বেদনার গল্প: ভাবতে ভাবতে যে কখন এই ব্যস্ত দুনিয়া ছেড়ে নিদ্রা রাজ্যে পা রেখেছি তা ঠাওর করতে পারলাম না। সহসা একটা তিড়িং বিরিং আওয়াজে ঘুম ভাঙল।


মূলগল্প

আম্মুঃ এই মিষ্টি, ওঠ না, আজ তো তোর গ্রামে যাওয়ার কথা ছিল, কি হল? ওঠ, এখন না উথলে ট্রেন টা তো মিস করবি।
আমিঃ আম্মু, এই আর একটু, তারপর উঠছি, তুমি এক কাজ কর, আমাকে ৩০ মিনিট আগে ডেকে দিও, লক্ষ্মী আম্মু আমার।

(কিছুক্ষণ পর)

আম্মুঃ দেখ, ৭.৩০ কিন্তু বেজে গিয়েছে, বাকিটা তুই দেখ
আমি এক লাফে উঠে বসে পড়লাম
আমিঃ এত দেরিতে ডাকলে কেন? (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে) কি বল আম্মু,এখন তো মাত্র ৬.০০ টা বাজে, এত সকালে না ডাকলে ও তো পারতে, ইসস… বেচারা আমার ঘুম।
আম্মুঃ আজ তোর তো গ্রাম যেতে হবে, এখন উউঠ নাহলে যাওয়ার কথা ভুলে যা, হুহ… কাল রাতে এত না বললে আমি তোকে উঠাতাম নাকি?

আমিঃ আচ্ছা বাবা, সরি, মা ;এখন আমি যাচ্ছি। আর রাগ দেখাতে হবে না, টিভি টে কোন সিরিয়াল দেখেও তো এত জোরে চিৎকার করনি কখনো।
আম্মুঃ কি বললি?
ততক্ষনে আমাকে আর খাটে পায় কে? আমি দৌড়ে ফ্রেস হতে চলে গেলাম।
রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে বাড়ির বাইরে এশে দাঁড়ালাম, কারণ এখন আগামী ১৫ মিনিটের জন্য আম্মু আমাকে উপদেশ দিতে চলেছেন, র সেটা আজ ১৫+মিনিট ও হতে পারে।
আম্মুঃ সাবধানে যাবি, এমনিই একা একা যাচ্ছিস, এদিক অদিক দেখে চলবি, খাবার ঠিক মত খাবি, গ্রামে যাচ্ছিস বলে সাপের পাচ পা দেখে ফেলবি এমনটা না কিন্তু, আমি সব খবর নেব…
আমিঃ আচ্ছা বাবা, সরি, মা, ঠিক আছে, বাবাকে বলে দিও, আর আমি পারব, গ্রাম এ গিয়ে যদি একটু না ঘুরি তাহলে কি দাদুর সাথে মুঘল সাম্রাজের পতন নিয়ে আলোচনা করব? না কি শাজাহানের তাজমহল নিয়ে? অবশ্য পরেরটা নিয়ে আলোচনা করাও যায়, টপিকটা ভালো।
আম্মুঃ কি বললি?

আমিঃ আচ্ছা আমি এখন বের হচ্ছি। বাই
আম্মুঃ আরে মিষ্টি, সাবধানে যাস,
আমিঃ ওকে

বাড়ির সামনে থেকেই বাবার পাঠানো সিএনজি টে উঠে পড়লাম। সেখান থেকে সোজা স্টেশন এ যাবো। কিন্তু একটা বাস স্ট্যান্ড এর সামনে এসে পড়লাম জ্যামে। এই পুরো দুনিয়ায় এই জ্যাম জিনিসটা আমার ‘ওয়ান অফ দা শত্রু’ বলা যায়, কেন জানি পছন্দ না। তাকিয়ে আছি সামনে দিকে, কখনো আশেপাশে। এদিকওদিক তাকাতে তাকাতে চোখ পড়ল যাত্রী ছাউনির দিকে আর সেখনেই থেমে গেল। না, ছাউনির বাজে অবস্থা টা দেখে নয়, ৬ ফুটের খাম্বা দেখে। এক ধ্যানে অপেক্ষা করে যাচ্ছিল বাসের। খাম্বা বলার কারণ যে ১০ মিনিট ধরে আমি ওর দিকে তাকিয়ে আছি এতক্ষণে এক চুল ও নড়ে নি, মাঝেমধ্যে হাওয়া এসে এলোমেলো করে দিচ্ছে তার চুলগুলো। সেই চুলগুলো ঠিক করছেও না সে, একপলকে তাকিয়ে থাকা আমার অবাধ্য চোখ আজ পলক ফেলতেও নারাজ।

কিছুক্ষন ধরে মনের সাথে যুদ্ধ করে চলেছি যে তাকে ডাকব কি না সেই নিয়ে, শেষ পর্যন্ত তাকে ডাকার সিদ্ধান্তই নিলাম, কিন্তু যেই না ডাকব ততক্ষনে রাস্তায় অবস্থিত লাল বাতি সবুজে পরিনত হয়েছে, আমার সিএনজি দিলো এক টান। সে ওখানে ছিল না, বাসে উঠে চলে গেল। মনের মধ্যে ভাবনায় ডুব দিলাম, আর কি দেখা হবে?
রেল স্টেশন এ পৌঁছে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করছিলাম, চোখ পড়ল আবার, তখনি মুখের কোণে ফুতে উঠল হাসি, কারণ আমার পাশেই সে ৬ ফুটের খাম্বা দাঁড়িয়েছিলো, আবার সেই যুদ্ধ শুরু হল, কথা কি বলব? না কি না?

টানা ৩ মিনিট যুদ্ধের পড় ইতি টানলাম। কারণ এবার যদি বেশি ভাবি তাহলে র কথা বলা হবে না, হাত বাড়ালাম দাকাল জন্য, কিন্তু দাক্তে যখন ই যাবো, তখনি ত্রেন আসার আওয়াজ পেলাম। তারপর এক বার ট্রেনের দিকে তাকিয়ে আবার পাশে তাকাতেই খাম্বা উধাও। অগত্যা ট্রেনে উঠে পড়লাম, খাম্বা টাকে মিস করলেও ট্রেন মিস কড়া যাবে না।

উঠেই সিট খুজে বসে পড়লাম, জানালার পাশে। ভালোই হল। নাহলে আমার পাশে যে বসত তার ভাগ্যে মঙ্গল গ্রহের অভাব দেখা দিত। বলা তো যায় না, আগে কখন না হলেও যদি এই যাত্রায় উলটি প্রসেস চালু হলে যায় বসার পড় থেকে জানালায় মন ছিল, জানালা থেকে চোখ টা ১৩০ ডিগ্রী বাকাতেই আব্র দেখলাম সেই খাম্বা। বেহায়া চোখটা সেদিকেই আটকে গেল। ব্রেন তো থেমেই আছে, মনটা বারবার বলছে ও যেন আমার কাছেই কোথাও বসে। অবশেষে আমার মনের জয় হল। ও বসে পড়ল আমার সামনের সিটে। মনে ফুটল লাড্ডু।

ট্রেন ছুটে চলল। আগেই বলেছিলাম, আমার চোখটা আজ বড্ড বেহায়া হয়ে গিয়েছে। আটকে আছে সামনের সিটে। ভাগ্য ভালো, কারণ সামনে ৬ ফুটের খাম্বা ভাজ হয়ে বশার পড় সেই যে কানে এয়ারফোন দিয়ে চোখ বন্ধ করে বসেছে তার পর আর চোখ খোলে নি। এবার আরও ভালো মতো দেখলাম তাকে। জানালার পাশে বসায় বাতাসের ঝাপটায় চুলগুলো কপালে এসে আছড়ে পড়ছে। তাতে হয়তো তার কিছুটা অসহ্য লাগছে।

তাই সময়ের ব্যবধানে ভ্রুযুগল কুঁচকে আসছে। পরনে কাল টি শার্ট, তার উপর স্কাই ব্লু শার্ট, হাতা দুটো ফোল্‌ড করা, ব্ল্যাক জিন্স। সানগ্লাস টা গলায় ঝোলানো। ব্যাস, এতেই হৃদয় ঘায়েল করা লুক, এখন একটাই আবেদন, প্লিজ, যাই হয়ে যাক না কেন, হাসবেন না, তাহলে আমার প্রানপাখিকে খাচায় আটকে রাখা অসম্ভব হয়ে পড়বে।

মনের সাথে যুদ্ধ করে আমি ক্লান্ত, জখনি ভাবছি যে তার সাথে কথা বলব, তার কয়েক ন্যানো সেকেনড এর মধ্যে সেই ‘হ্যা’ টা ‘না’ টে পরিণত হচ্ছে। তাই যুদ্ধতে বিরতি ঘোষণা করে আপাতত প্রকৃতি বিলাসে মগ্ন আমি। যদিও মাথায় সেই জদ্ধ নিয়ে গবেষণা করছি যে, বিরতি শেষ হলে কোন পক্ষ জোরালো হবে।

ভাবতে ভাবতে যে কখন এই ব্যস্ত দুনিয়া ছেড়ে নিদ্রা রাজ্যে পা রেখেছি তা ঠাওর করতে পারলাম না। সহসা একটা তিড়িং বিরিং আওয়াজে ঘুম ভাঙল। আওয়াজ টা যে আমার ফোন থেকেই আসেছে তাতে কোন সন্দেহ নেই। আম্মুর কল। আম্মুর সাথে কথা বলা শেষ হতেই ট্রেন থামল। আমার সামনের সিট হতে খাম্বাটা আবার ভাজ ভেঙ্গে উঠে দাঁড়ালো, আর চলে গেল নিজ গন্তব্যে। এই ঘটনাটা বুঝতে আমার কিছুক্ষণ লাগলো, যখন বুঝলাম, তখন নিজেও উঠে গেলাম।
স্টেশন এ দেখা হল আমার মামাতো বনের সাথে। তার সাথে ভ্যানে করে বাড়ির উদ্দেশ্যে বের হলাম। সকাল থেকে ঘটা সব ঘটনা, আমার অনুভুতি, সব একে একে বললাম তাকে।
আপুঃ আচ্ছা, তাহলে আর কি কি হল,সুইট?

আমিঃ আমি সুইট না, মিষ্টি।
আপুঃ আরে বল না
আমিঃ আর কি কি হবে?সব তো বললাম ই
আপুঃ কথা বলিস নি তার সাথে?
আমিঃ কথা বলব না মানে, তাকে তো আমি ইখতিয়ার উদ্দিন মহাম্মদ বখতিয়ার খলজির জীবনী শুনিয়ে এসেছি
আপুঃ মানে?

আমিঃ এতক্ষণ তো বললাম ই, তাও বুঝ নি যে তার সাথে আমার কথাবলাটাআরহলনা।

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – এক পড়ন্ত বিকেলে (শেষ খণ্ড) – ভালোবাসার গোলাপ খাট এ

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *