স্বামীর পরকিয়া প্রেম অতঃপর ব্রেকআপ হওয়ার গল্প: লাজ- লজ্জা ,বিবেক- বিবেচনা বলতে কিছু নেই তোর? দুই সন্তানের বাপের সাথে প্রেম করে বেড়াস? তোর মত নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে মানুষ দ্বিতীয়টা আছে কিনা সন্দেহ। প্লীজ এবার অন্তত উনার পিছু ছাড়।’
মূলগল্প
- ‘লাস্টে 254 এই ফোন নম্বরটা কার?’
ছাদে কাপড় রোদে দিতে দিতে নরম কন্ঠে কথাটা জিজ্ঞেস করল রিপা।
প্রত্যুত্তরে ক্ষীপ্ত কন্ঠে হিমেল বলল,
- ‘তোমায় কত দিন না বলছি আমার ফোন হাতাবা না। এটা কার নম্বর ওটা কার নম্বর তা দিয়ে তোমার কি দরকার?’
- ‘জানি তুমি এটাই বলবা। আমি তোমার স্ত্রী তোমার ফোন ধরার অধিকার আমার আছে।’
- ‘প্রতিদিন অফিস থেকে এসে তোমার এই প্যাঁচাল অসহ্য লাগে। প্লীজ মাথা গরম করো না।’
লম্বা শ্বাস ফেলে রিপা বলল,
- ‘তোমার সেই কলিগ লাবনীর নিউ নম্বর তাই না। কালকে সে অফিসে আসে নি তাই ফোন দিয়ে দুই ঘন্টা কথা বলেছো তাই তো?’
এ পর্যায়ে অবাক হয়ে যায় হিমেল। মনে মনে ভাবছে রিপা এত সব জানে কিভাবে?
হিমেল বলল,
- ‘তুমি আমায় সন্দেহ করো?’
- ‘যে বিষয়টা আমার কাছে স্বচ্ছ কাঁচের মত সেটা নিয়ে সন্দেহ করার আর আছে?’
- ‘দেখো তোমায় আমি আগেও বলছি আর এখনও বলি লাবনীর সাথে আমার কোন সম্পর্ক নেই। ওর সাথে যাস্ট ভালো বন্ধুর মত সম্পর্ক। প্রতিদিন একটা উটকো বিষয় নিয়ে কথা বলতে লজ্জা করে না?’
রিপা চেঁচিয়ে বলল, - ‘তোমার লজ্জা করে না বউ থাকা সত্ত্বেও অন্য মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়াতে?’
হিমেল রিপার গলা চেপে ধরে বলল,
- ‘চুপ কর নয়ত ভালো হবে না। চেঁচিয়ে মানুষকে শুনাচ্ছিস?’
- ‘মিথ্যা তো আর কিছু বলছি না।’
হিমেল ছাদ থেকে নেমে চলে গেলো। রিপা ছাদের রেলিং ঘেঁষে আনমনে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে জল গড়াচ্ছে। হিমেল আর রিপার বিয়ে হয়েছে তিন বছর। ভালোই চলছিল সংসার। রিপার এক ছেলে এক মেয়ে। ছেলে মেয়ে দুটোর বয়স ছয় মাস। যেদিন রিপার টুইন ব্যাবি হয় হিমেল কি খুশি টাই না হয়েছিল। খুশিতে নিজের অজান্তে চোখ থেকে দুই- এক ফোঁটা জলও পড়ছিলো। কিন্তু গত দুই মাস ধরে সেই মানুষটা পুরোই চেঞ্জ। চেঞ্জ হওয়ার পিছনে কারন হচ্ছে লাবনী। হিমেলের কলিগ লাবনী। কিন্তু হিমেল কিছুতেই এটা স্বীকার করে না যে লাবনীর সাথে ওর সম্পর্ক রয়েছে।
সম্পর্ক নেই তো ঘন্টার পর ঘন্টা ফোনে কথা বলার কি আছে? অফিস শেষে ঘুরতে যাওয়ার কি আছে? লাবনীর বার্থডে স্বর্নের রিং গিফ্ট করার কি আছে? রিপা যখন এসব প্রশ্ন করবে তখনই বাঘের মত গর্জে উঠে হিমেল। ছেলে – মেয়ে দুটোর মুখের দিকে তাকিয়ে সব সহ্য করে রিপা।
রাত 1টা এখনও বাসায় ফিরে নি হিমেল। ছেলে- মেয়ে দুটো ঘুমাচ্ছে। রিপা জেগে আছে। টেনশন হচ্ছে হিমেল কেন এখনও আসছে না? ফোন টা কয়েক বার রিং হওয়ার পর এখন অফ। হয়ত ফোন দেয় বলে হিমেল অফ করে রেখেছে। আজকের মত অপেক্ষার অবসান ঘটেছে রিপার। কলিং বেলের শব্দ পেয়ে দরজা খুলে দেয়। বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে খাটে গা এলিয়ে দিলো হিমেল। রিপা বলল,
- ‘এত লেট হয়েছে কেন বাসায় ফিরতে?’
বিরক্তির সুরে হিমেল বলল,
- ‘কাজ ছিলো অফিসে।’
- ‘ভাত খাবে না?
- ‘খেয়ে এসেছি।’
লাইট অফ করে শুয়ে পরে রিপা। হিমেলের লেট হওয়ার কারন রিপা জানে। এত রাতে চেঁচিয়ে লাভ নেই তাই কথা বাড়ালো না।
অভ্যাস এখনও পরিবর্তন করতে পারে নি রিপা। হিমেলের বাসায় ফিরতে যতই লেট হোক না কেন হিমেল কে ছাড়া কখনো খেতো না। অবশ্য হিমেল সব সময় চেষ্টা করত তাড়াতাড়ি বাসায় ফেরার। অফিস থেকে ফিরেই ছেলে- মেয়েদের নিয়ে ব্যস্ত হয়ে যেত। আর এখন ওদের একটু কোলে নেওয়ার সময় নেই এসব ভাবতেই বুক চিড়ে দীর্ঘ নিঃশ্বাস বেড়িয়ে আছে রিপার। রান্না ঘরে বসে লুকিয়ে চোখের জল ফেলছে আর রান্না করছে।
পার্কের বেঞ্চে বসে আসে লাবনী। হিমেলের জন্য অপেক্ষা করছে। এখন প্রতি ফ্রাইডে তেই হিমেলের সাথে সময় কাটায়। হিমেল এখনো আসছে না। অপেক্ষা করতে করতে বিরক্ত হয়ে যাচ্ছে। হিমেল বাসায় থাকাকালীন ফোন দিতে নিষেধ করেছে। অত সব না ভেবে ফোন দিলে লাবনী। সকাল দশ টা বাজে এখনো ঘুমাচ্ছে হিমেল। অনেকক্ষন যাবৎ ফোন টা বেজে চলেছে। অবশেষে রিপা ফোন রিসিভ করল। ফোন রিসিভ করতেই ওপাশ থেকে বলল,
- ‘আর কতক্ষন ওয়েট করব? তুমি কোথায়? এখনও আসছো না কেন?’
রিপা বলল,
- ‘কোথায় ওয়েট করছেন আপনি?’
রিপার কন্ঠে পেয়ে থমকে যায় লাবনী। রিপা আবার বলল,
- ‘লাজ- লজ্জা ,বিবেক- বিবেচনা বলতে কিছু নেই তোর? দুই সন্তানের বাপের সাথে প্রেম করে বেড়াস? তোর মত নির্লজ্জ বেহায়া মেয়ে মানুষ দ্বিতীয়টা আছে কিনা সন্দেহ। প্লীজ এবার অন্তত উনার পিছু ছাড়।’
এ পর্যায়ে সজাগ হয়ে যায় হিমেল। রিপার কাছ থেকে ফোন টেনে নিয়ে ঠাস করে একটা চড় মারে গালে।’থ’ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে রিপা। অনেক ক্ষন পর বলল,
- ‘এই সন্তান দু’টোর কথা চিন্তা করে হলেও এবার ওই মেয়ের সাথে সম্পর্ক রেখো না।’
- ‘তোর প্রোবলেম টা কি বল তো? কতবার বলছি আমার ফোন ধরবি না। এত নির্লজ্জ কেন তুই?’
- ‘আমি নির্লজ্জ? নির্লজ্জ তো তুমি দুই সন্তানের বাপ হয়েও প্রেম করে বেড়াও।’
- ‘আমার যা ইচ্ছা তাই করবো তোর কি?’
- ‘আজকে যদি ওই মেয়ের সাথে দেখা করতে যাও তাহলে ভালো হবে না।’
- ‘তুই কি খারাপ করবি আমার? আজকে ওর সাথে দেখা করতে যাবো না। আজকে তোকে ডিবোর্স দেওয়ার ব্যবস্থা করব। তারপর ওকে বিয়ে করব।’
কথাটা বুকের মাঝখানে বিঁধে রিপার। হতবম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। হিমেল বাসা থেকে বেরিয়ে পরেছে। হিমেল কি সত্যি ডিবোর্স দিয়ে দিবে?
- ‘তোমায় না বলেছি বাসায় থাকলে ফোন দিবে না।’
লাবনীর উদ্দেশ্য কথা টা বলে হিমেল। লাবনী বলল,
- ‘দিয়েছি তো কি হয়েছে? তুমি এত লেট করলে কেন? আমায় আসতে বলে নিজে শান্তিতে ঘুমাচ্ছে। আগে বলো রিপা কে ডিবোর্স দিচ্ছো কবে?’
- ‘ডিবোর্স দেওয়া কি মুখের কথা? আমি তো চেষ্টা করছি। ওকে বাসা ছেড়ে যেতে বাধ্য করব।’
- ‘যা করার তাড়াতাড়ি করো।’
সারা দিন ঘোরা শেষে রাতে বাসায় ফিরলো হিমেল।
রিপা শুয়ে আছে। বাচ্চা দুটো কান্না করছে। সেদিকে খেয়াল নেই রিপার। হিমেল কিছু বলতে গিয়েও বলল না।
আজকে অফিস থেকে ট্যুরে যাবে হিমেল। সকালে উঠে ব্যাগ গুছাচ্ছে। রিপা বলল,
- ‘আসবা কখন?’
- ‘জানিনা।’
আর কিছু না বলে বাসা থেকেব বেড়িয়ে পরলো। বিকেলে হিমেলের অফিসের ম্যানেজারের সাথে দেখা রিপার। রিপা কে দেখেই ম্যানেজার ডাক দিলো। বলল,
- ‘ভাবি যদি কিছু না মনে করেন একটা কথা বলব।’
রিপা হাসার চেষ্টা করে বলল,
- ‘বলেন।’
- ‘আসলে অফিসের অনেকেই বলে লাবনীর সাথে নাকি হিমেল ভাইয়ের সম্পর্ক আছে আজকে নাকি উনারা ঘুরতে গেছে।’
একটা দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে ওখান থেকে চলে আসে রিপা।
আজ তিন দিন হিমেল এখনও আসে নি। ফোন অফ। রিপা ব্যাগ গুছাচ্ছে। বাবার বাড়ি চলে যাবে ছেলে- মেয়েদের নিয়ে।
পাঁচ দিন পর বাসায় ফিরে আসছে হিমেল। বাসায় তালা দেওয়া। গেটের সামনে দাঁড়িয়ে আছে হিমেল। পাশের বাসার ভাবি হিমেলের হাতে চাবি দিয়ে বলল,
- ‘রিপা ভাবি তো কালকে উনার বাবার বাসায় গেল।’
হাঁফ ছেড়ে যেন বাঁচলো হিমেল। কাঙ্ক্ষিত মুক্তি মিলল। রিপা বাসায় না থাকায় সারা রাত লাবনীর সাথে কথা বলে কাটিয়েছে। সকালে ঘুম থেকে উঠে যা ঘটলো তার জন্য প্রস্তুত ছিলো না হিমেল। রিপা ডিবোর্স পেপার পাঠিয়েছে! ভাবতেই পারছে না হিমেল রিপা এমন সিদ্ধান্ত নিবে।
কেন জানি একটু একটু খারাপ লাগছে হিমেলের। সন্তান দুটোর কথাও মনে পড়ছে। লাবনী কে নিজের করে পাবে এই আনন্দে সব খারাপ লাগা উপেক্ষা করল।
লাবনী আর হিমেলের বিয়ের আজ এক মাস। রিপা একটা কোম্পানি তে জব নিয়েছে। ছেলে- মেয়ে নিয়ে ভিন্ন বাসায় উঠেছে। ওদের টেইক কেয়ারের জন্য একটা কাজের মেয়েও রেখেছে। ওরকম একটা অমানুষের সাথে সংসার করার চেয়ে এখন শত গুন ভালো আছে রিপা।
আস্তে আস্তে সব ক্ষত মুছে ফেলার চেষ্টা করছে রিপা। নিজেকে নতুন করে সাজানোর প্রচেষ্টা। আবেগের জোয়ারে ভেসে হিমেলের কথা ভেবে চোখের জল করতে চায় না। আজকে এক বছর হিমেলের সাথে ডিবোর্স হয়েছে। ছেলে- মেয়ের বয়স দুই বছর।
অফিসের উদ্দেশ্য রওয়ানা হচ্ছে রিপা।
- ‘আপা ড্রয়িং রুমে এক ভদ্র লোক বসে আছে আপনার সাথে দেখা করবে।’
কাজের মেয়ের কথা শুনে ড্রয়িং রুমে যায় রিপা। যা দেখে তার জন্য একদম প্রস্তুত ছিলো না। হিমেল আসছে দেখা করার জন্য।
রিপা কে দেখেই বলল,
- ‘রিপা’
- ‘আপনি এখানে? তা কি মনে করে?’
- ‘রিপা আমি জানি, আমি তোমাদের সাথে অনেক বড় অপরাধ করেছি। আমায় মাফ করে দেওয়া যায় না।’
- ‘শুনেছি গত মাসে নাকি আপনার প্রেয়সি লাবনী অন্য পুরুষের হাত ধরে চলে গেছে। সেই শোকে পাগল হয়ে আবল- তাবল বকছেন নাকি?’
- ‘আমি ঠিক আছি। আমায় আর একটা সুযোগ দেও। আমি একটু ওদের দেখবো। ওরা কোথায়?’
এক নাগাড়ে কথা গুলো বলে যাচ্ছে হিমেল। - ‘আপনি স্ব- ইচ্ছায় বের হবেন নাকি দাড়োয়ান ডাকব? নাকি লোকজন ডেকে অপমান করব?’
আজকে সত্যিই নিজেকে ধন্য মনে হচ্ছে রিপার হিমেল কে ফিরিয়ে দিতে পেরেছে। মনের ভেতর প্রশান্তির জোয়ার বয়ে যাচ্ছে। আজকে আর অফিসে যাওয়া হলো না। ছেলে- মেয়েদের সময় দিবে সে।
লেখা – রোকসানা মিমি
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “স্বামীর পরকিয়া প্রেম অতঃপর ব্রেকআপ হওয়ার গল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – বউ শাশুড়ীর ভালোবাসা এমনই হওয়া উচিত