অন্ধকার বাসর রাত

অন্ধকার বাসর রাত গল্প – শান্তির ব্যথা ও চরম সুখ

অন্ধকার বাসর রাত – শান্তির ব্যথা ও চরম সুখ: এখন মোটামুটি মাঝরাত। বাসর ঘরে একা বসে আছি। কারন আমার বরকে খুজে পাওয়া যাচ্ছে না। পুরো ঘরটা ফুল দিয়ে সাজানো হয়েছে যেমনটা আমি চেয়েছিলাম। আমার টিউলিপ আর অর্কিড ফুল খুব ভালো লাগে তাই এই ফুলগুলো দিয়ে খাট সাজানো হয়েছে। আমি নিজেও আমার বরের মনের মতো করে সেজেছি কিন্তু কিছু মানুষের কপালে সুখ সহ্য হয় না।

আমি রিয়া। আমার বর আবরার চৌধুরী। আবরার সম্পর্কে আমার বাবার বন্ধুর ছেলে। প্রায় দুই বছরের সম্পর্ক আমাদের। দুই বছর ধরে ভালোবাসাগুলো একটু একটু করে জমিয়েছি। দুই বছরের স্বপ্নগুলো যখন সত্যি হয়ে গেলো তখন হটাৎ করেই সব কিছু এলো মেলো হয়ে গেলো। কারনটা না হয় পরে বলি।

আবরার দুই বছর আগে যখন প্রথম গ্রামে এলো। মনে হয়েছিলো যেনো রূপকথার রাজ্যের রাজপুত্র। প্রথম দেখায় আবরারকে যে কারো ভালো লাগবে। তখন আমি সবে এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছি। বয়সটাও খুব একটা বেশি নয়। আমারও লেগেছিলো। বোধয় প্রেমেও পরেছিলাম। আবরাররা বেশ বড়লোক সবার ধারনা টাকার জন্য কেউ বোধয় ওকে আটকে রেখেছে। বা অন্য কোনো বিষয়। সারা বাড়িতে এনিয়ে কানা ঘুষাও চলছে।

অনেকের ধারনা আবরারর হয়তো আমাকে পছন্দ হয়নি তাই কোথাও চলে গেছে। কিন্তু সত্যিটা কেবল আমি জানি। জানা সত্তেও কিছুই করতে পারবো না। আবরার আমাদের গ্রামে এসেছিলো গ্রাম দেখতে। ওদের পৈত্রিক বাসস্থান ও একই গ্রামে। কিন্তু আমার শ্বশুড় বিয়ের পরপরই গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে যায়। তারপর বিদেশ।

আমি গ্রামেই জন্মেছি। কিন্তু পড়াশুনার সূত্রে শহরেই বেশির ভাগ সময় কাটলেও আমি সহজ সরল সাদা মাটা থাকতে পছন্দ করি। গ্রামে আমাদের বাড়িটা বেশ বড়। আবরারর থাকার জায়গাও সেখানে করা হয়েছিলো। আমাদের বাড়িতে। বেশ ভালোয় কাটছিলো দিনগুলো। আমি বাবা মা আর আবরার।

রোজ সকালে আবার সন্ধ্যায় ওকে ঘুরতে নিয়ে যেতাম। মেঠো পথ ধরে ছুটে যেতাম অচেনা ঠিকানায়। গ্রামের মাঝ বরাবর একটা নদী আছে সেই নদীর তীরে বসো দুজন কত সময় কাটিয়েছি তার হিসেব নেই। হটাৎ এক গোধূলী লগ্নে আবরার আমার হাতে হাত রেখে বলেছিলো ভালোবাসি তোমায়। বিয়ে করবে আমায়।

সবই যনো স্বপ্ন বলে মনে হয়েছিলো। লজ্জায় লাল হয়ে শুধু একবার মাথা নেড়ে সায় দিয়েছিলাম। তার আবরার আবার বিদেশ চলে গেলো। দূরে থেকেও ভালোবাসা একটুও কমেনি কখনো। এই বিয়েতে তেমন কারোরই মত ছিলো না কেবল আমার শ্বশুড় ছাড়া। শ্বাশুড়ি মা তো আমি বাড়ি আসার পর থেকে ঘরে দরজা দিয়ে বসে আছেন। তিনি নাকি আমার মুখও দেখতে চান না। তার মতে আমি চাঁদ ছুয়ে ফেলেছি। ননদ জা কেউ একটিবার আমাকে দেখতেও আসেন নি।

আমার দুই ননদ। বড়টা তো আমাকে সহ্য করতে পারে না ছোটটা অবশ্য ভারি মিষ্টি। এবাড়িতে সবার ধারনা আমি আবরারর পাশে বেশ বেমানান। মাঝে শুধু আবরারর চাচী মা এসেছিলেন। খাবার দিতে। আমার সাথে কোনো কথাও বলে নি। তবে বেশ কয়েক বার মায়া নিয়ে পেছন ফিরে তাকিয়েছিলো। তাতেই আমি খুশি।

এই অবস্তায় খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই বললেই চলে। বার বার চোখের সামনে অতীতের সেই দিনগুলো ভাসছে। চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে পানি পরছে। হয়তো কান্নার সবে শুরু। এখনো অনেক পথ বাকি আছে। সারা রাত এক ভাবে বসে ছিলাম। আবরার আসেনি। আশায় ছিলাম একটিবার অন্তত আসবে কিন্তু আসেনি। প্রায় ভোরের দিকে চোখ লেগে গেছিলো
দরজা খোলার শব্দে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। আবছা আলোয় দেখতে পেলাম আবরার এসেছে। মাথা নিচু করে দারিয়ে আছে। আমার সামনে।

চোখমুখ লাল হয়ে আছে। আমার মতো সেও বোধয় সারারাত ঘুময়নি। ভালোভাবে তাকিয়ে দেখি আবরাররও চোখ দিয়ে পানি পরছে। বোধয় কোনো এক অপরাধবোধ ওকে কুরে কুরে খাচ্ছে। কিছু বলার আগেয় অচমকায় আমাকে জড়িয়ে ধরে বাচ্চাদের মতো কেদে দেয়। আমিও আবরারকে জড়িয়ে ধরে কাদতে কাদতে অগ্ঞান হয়ে যাই। তার পরে কিছু মনে নেই।


পর্ব: ২

কতোক্ষন পর জ্ঞান ফিরেছে জানিনা।

চোখ খুলেই দেখি আবরার শক্ত করে হাতটা ধরে মাথা নিচু করে পাশে বসে আছে।

আমি উঠতে নিলেই জড়িয়ে ধরে।

:প্লীজ রিয়া আমাকে ক্ষমা করে দেও।

:ছাড়ো সেসব।

:কাল মা।

কথার মাঝখানে থামিয়ে দিয়ে উঠে পড়লাম।

কেনো যনো কথাগুলো শুনতে ইচ্ছে হচ্ছে না।

আবরারও পিছন পিছন চলে এলো।

বাহিরে এসে সবার জন্য চা করে শ্বাশুড়ির ঘরের দিকে যাচ্ছিলাম।

বাহিরে থেকে শ্বশুড়ের বেশ চেচামেচি শুনতে পেলাম।

শ্বশুড় বার বার শ্বাশুড়িকে শাসাচ্ছিলো।

:কাজটা তুমি ঠিক করলে।

তোমার ছেলেই রিয়াকে পছন্দ করে বিয়ে করেছে আর বিয়ের দিনই তুমি কিনা ছেলেকে বউয়ের থেকে আলাদা করলে?

:যা করেছি বেশ করেছি।

ঐ মেয়ের কোনো যোগ্যতা নেই আমার ছেলের বউ হওয়ার।

মেয়েটাকে যদি বাড়ি থেকে না তাড়িয়েছি আমার নাম বদলে রেখো।

:চুপ করো। একটা কথাও বলবে না।

সেখানে আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে সোজা চা দিয়ে ঘরে চলে এলাম।

আমাকে দেখে আবরার দাড়িয়ে গেলো বোধয় কিছু বলবে।

আমি আবরারর দিকে না তাকিয়ে জানতে চাইলাম

:কিছু বলবে?

:হুম্ম

:বল

:রিয়া

:শুনছি বল!

:আমাকে ভুল বোঝ না।

আমার থেকে স্বামীর আধিকার কখনো দাবি করো না। আমি দিতে পারবো না।

যেদিন তুমি সেটার যোগ্য হবে আমি নিজে থেকেই তোমায় কাছে টেনে নিবো।

তার আগে আমার কাছে কখনো স্ত্রীর দাবি নিয়ে দাড়িয়ো না দিতে পারবো না।

আবরারকে অনেক প্রশ্ন করার ছিলো।

খুব যানতে ইচ্ছে হচ্ছিলো আমার অপরাধটা কি?

আমার ভালোবাসায় কি কমতি ছিলো। তবে আমার ভালোবাসা নিয়ে কেনই বা এইভাবে খেললো!

কিন্তু……

তার আগেই আবরার বলে দিলো।

:রিয়া আমাকে কোনো প্রশ্ন করো না। শুধু জেনে রেখো তোমাকে যোগ্য হতে হবে, হবেই।

আবরার বেশ জোড় দিয়ে কথাটা বলল।

তবে সেই কথাটার কোনো মূল্য আপাততো নেই।

আর কথা বাড়ালাম না কথা বাড়িয়ে লাভও হবে না।

আবরার বরাবরি এক কথার মানুষ একবার যা বলবে তাই করবে।

আজ বৌ ভাত নিয়ম অনুযায়ী নতুন বৌকে সব রান্না বান্না করতে হবে।

রান্না বান্না বরাবরি ভালোই পারতাম তাই খুব একটা সমস্যা হয় নি।

তবুও শ্বাশুড়ির কথার শেষ নেই।

শ্বাশুড়ি মায়ের কথা মত সব রান্না বান্না করে। খাবার টেবিলে সবাইকে খেতে দিয়ে দিলাম।

সবাইকে খাবর বেরে দেওয়া শেষে যেই আবরারকে দিতে যাবো শ্বশুড়ি মা এসে হাত আটকে দিলো।

তার কথা মতে আবরার এইসব খায় না।

তবে আমার জানা মতে আবরার যখন গ্রামে গেছিলো এর মধ্যে বেশ কিছু পদ রান্না করে খাইয়েছি।

শ্বাশুড়ি মা নিজে আবরারর জন্য স্যুপ বানিয়ে এনেছে।

আবরার লক্ষী ছেলের মতো খেয়ে নিলো।

একটিবার আমার দিকে তাকিয়েও দেখলো না।

আমার শ্বশুড় একবার আমার দিকে অসহায় ভবে তাকিয়েছিলো।

কিন্তু কিছু বলেনি।

চোখ দুটো আবার জ্বলে ভিজে এলো।

এক রাতে মানুষ কি করে এতোটা পরিবর্তন হতে পারে তা আবরারকে না দেখলে জানতে পারতাম না।

শ্বাশুড়ি আমার দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।

বোধয় বেশ মজা পেয়েছে।

কেউ কিছু বলল না খাওয়া দাওয়া শেষে যে যার ঘরে চলে গেলো।

বাকি রইলাম আমি।

আমার কথা করো মনে আছে বলে আমার মনে হয় না।

আগে আবরার দিনে দুই বার ফোন দিয়ে যানতে চাইতো খেয়েছি কিনা।

আজ এতো কাছে থেকে এতো আবহেলা ঠিক নিতে পারছি না।

খাওয়ার কোনো ইচ্ছে নেই বল্লেই চলে।

তাই না খেয়ে আমিও ঘরে চলে গেলাম।

ঘরে গিয়ে আবরারকে কোথায়ও দেখতে পেলাম না।

খুজলাম ও না কারন জানি মায়ের কাছে গেছে।

যেহেতু বিয়েটা ঘরোয়া ভাবে হয়েছে তাই এতোশত ঝামেলাও নেই।

বিয়েটা মূলত আমার শ্বশুড়ের জোড়েই হয়েছে।

একটা সময় মনে হতো বিয়েই বোধয় পূর্নতা পাওয়ার একমাত্র মাধ্যম।

আবরারর ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই চাইনি।

তবে বিয়েই যে সব নয় তা এখন একটু একটু করে বুঝতে পারছি।

সারাদিন টুকটাক কাজকর্ম করছিলাম।

বাড়িতে অনেক কাজের লোক তবিও আমি বেশ কিছু কাজে হাত লাগালাম।

হাজার হোক সংসারটা তো আমার।

এরই মধ্যে ছোট ননদ নীলার সাথে বেশ ভাব হয়েছে।

সে প্রায় আমার সমবয়সি।

কিন্তু বড় ননদের কাছে আমি তার চোখের বালি।

সারাদিন আবরারর সাথে তেমন কথা হয়নি।

বোধয় আমাকে এড়িয়ে চলছে কারনটা এখনো আজানা।

সন্ধ্যায় আবরার এলো।

এসেই আমাকে বললো।

:রিয়া একটু পানি এনে দিবে।

আমিও মিষ্টি হেসে ছুটতে নিলে দরজায় তাকিয়ে দেখি বড় ননদ দারিয়ে আছে।

আপুকে দেখে আবরার হাসি মুখটা নিমিষেই কালো হয়ে গেলো।

রাতে সবাইকে খেতে দিলাম।

হটাৎ কলিংবেলটা বেজে উঠলো।

শ্বাশুড়ি মা আমার দিকে তাকিয়ে রহস্যময় একটা হাসি দিয়ে বললেন,

:যাওতো গিয়ে দরজাটা খুলে দাও কে এসছে দেখে এসো।

বড় ননদও বেশ মিটিমিটি হাসছে।

আসার পর থেকে শ্বাশুড়ি মা আমার দিকে তাকিয়েও দেখেনি।

হটাৎ এমন ভালো ব্যবহার বেশ গায়ে লাগছে।

আবার বেল বাজতেই ,

আমিও ছুটে গিয়ে দরজা খুলে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছি।

এতো সিনথিয়া।

সিনথিয়াকে দেখে মানের ভেতর এক নুতুন ভায় কাজ করতে লাগলো।

তবে কি আমি হারিয়ে ফেলবো সব কিছু।


পর্ব: ৩

সিনথিয়াকে দেখে আমি একরকম চমকে উঠলাম।

সিনথিয়া হল আবরারর খালামুনির মেয়ে।

গ্রামে দিত্বীয়বার যখন আবরার গিয়েছিলো তখন সিনথি আপুও গ্রামে গিয়েছিলো।

তবে তার হাব ভাব আমার একদম ভালো লাগে নি।

আবরারর কাছে পরে শুনেছিলাম সিনথি আপু আবরারকে ভালোবাসে। বিয়েও করতে চায়েছিল।

মা ও না কি আবরারর সাথে সিনথি আপুর বিয়েটা দিতে চায়েছিল।

কিন্তু আবরারতো আমাকে ভালোবাসে।

তাই সিনথি আপুকে সরাসরি না করে দেয়।

তবুও নানা রকম ভাবনা মনে চলে এলো।

ভাবনায় ছেদ ঘটিয়ে সিনথিয়া বলে উঠলো,

:কি ব্যপার রিয়া এমন করে তাকিয়ে আছো কেনো?

:না কিছু না সিনথি আপু ভেতরে এসো।

:তা তো আসবোই।

সিনথি আপুকে দেখে সবাই বেশ খুশি।

সবচেয়ে বেশি খুশি আমার শ্বাশুড়ি।

পারলে একরকম ছুটে গিয়েই সিনথি আপুকে জড়িয়ে ধরলো।

তবে আবরার সিনথি আপুর আগমনে বেশ বিরক্ত হয়েছে সেটা আবরারর মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে।

খাওয়া দাওয়ার পর্ব শেষে সবাই গল্পের আসর জমালো তবে আমাকে ছাড়া আমি তখন কাজে ব্যস্ত।

দু একবার গেয়েছিলাম তাদের টুকটাক আবদার মেটাতে তবে সেখানে থাকার প্রয়োজন পরেনি তাই চলে এসেছি।

রাতে খাবার খাওয়া হয়নি খেতে ইচ্ছে করেনি।

আয়নার সামনে দাড়িয়ে নিজেকে দেখছি।

সিনথি আপু পাশে আমাকে বড়ই বেমানান।

সিনথি আপু শহুরে পড়াশোনা জানা মেয়ে।

বেশ স্মার্ট তার কাছে আমি কিছুই নই।

দেখতেও বেশ সুন্দর তবে আমি যে একেবারে অসুন্দর তা নয়।

আয়নায় নিজেই নিজেকে প্রশ্ন করলাম তুৃমি পারোটা কি? কেনই বা ভালোবাসবে তোমায় আবরার চৌধুরী।

পেছন থেকে উত্তর এলো,

:তুমি গান গাইতে পারো,মিষ্টি করে হাসতে পারো।

আর আমায় ভালোবাসতে পারো।

পেছনে তাকিয়ে দেখি আবরার।

:আমার ভালোবাসা পাওয়ার জন্য এই তুমিই যথেষ্ট। কিন্তু অধিকার পেতে হলে মা দিদি সবার কাছে যোগ্য হতে হবে। সবার মন জয় করতে হবে। কথাগুলো বলতে বলতে আবরার আমার কাছে এগিয়ে এলো।

হাতে খাবার,
:এগুলো কেনো এনেছো?

:তুমি খাওনি কেন রিয়া?

আমার উপর রেগে আছো?

:কই না তো খেতে ইচ্ছে করছিলো না, তাই।

:মুখটা খোলো আমি খাইয়ে দিই।

আবরার খাইয়ে দিয়ে। এসে একবার আমার দিকে তাকিয়ে বিছানা থেকে বালিস নিয়ে যেতে নিলে হাতটা ধরলাম।

আবরার শক্ত করে আমায় জড়িয়ে ধরে কপালে একটা চুমু দিয়ে চলে গেলো।

:বলেছিনা রিয়া সময় হলে তুমি সব পাবে। তোমাকে যে যোগ্য হতে হবে।

আমি ও কথা বারালাম না খাটের উপর চুপটি করে শুয়ে পরলাম।

আবরার যত যাই করুকনা কেন আমাকে ভালোবাসে এর থেকে বেশি কি চাই।

পরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে চা করে সবাইকে দিয়ে আবরারকে ডাকতে গিয়ে দেখি সিনথি আপু আবরারর সামনে হাটু গেড়ে বসে হা করে আবরারর দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি গিয়ে সিনথি আপুকে ডাকতেই একরকম চমকে উঠলো।

:ও রিয়া তোমাকেয় খুজতে এসেছিলাম।

:হ্যা বলো কি বলবে।

:আচ্ছা পরে বলবো খালামুনি ডাকছে।

একরকম পালিয়েই গেলো।

আমার চোখ থেকে একটু কাজল তুলে আবরার কপালে লাগিয়ে দিলাম বলাতো যায়না কখন কার লজর লেগে যায়।
কি নিস্পাপ লাগছে আবরার মুখটা।

দুষ্টুমি করার জন্য আবরারর হাতের আঙ্গুলটা গরম চায়ে ডুবিয়ে দিলা অমনি লাফ দিয়ে ওঠে বকতে শুরু করলো।

:রিয়া কি বাচ্চামু করছো।

:না মানে কিছু না।

(আবরার কপালে একটা চুমু দিয়ে চায়ের কাপটা হাতে নিলো)

:রিয়া শোনো আজ বিকেলে তোমাকে নিয়ে এক জায়গায় যাবো তুমি তৈরী হয়ে থেকো।

আবরারর খাবার দাবার সব আমার শ্বশুড়ি নিজেই রান্না করে।

কিন্তু আজ আবরার জন্য সকালের খাবার সিনথি আপু বানিয়েছে।

আমার শ্বাশুড়ি নিজে শিখিয়েছে।

ব্যপারটা একটু হলেও আন্দাজ করতে পারছি।

শ্বাশুড়ি মা চাইছে তা আমি বেশ বুঝতে পারছি।

সিনথিয়ার হাব ভাব কিছুই ভালো লাগে না।

বেশ গায়ে পরা মেয়ে সিনথিয়া।

আমার শ্বাশুড়ি একরকম সিনথিয়া বলতে ভক্ত।

কিন্তু সারাদিন আমি আসে পাশে থাকলেও একটিবার ফিরেও তাকান না তিনি।

দুপুরে রান্নায় একটু লবন বেশি হওয়ায় যাচ্ছে তাই বললেন সেসব গায়ে লাগে না।

হাজার হোক মা তো মাই হয়।

বিকেলে তৈরী হয়ে বসে আছি কিন্তু আবরারর কোনো খবর নেই।

হটাৎ কলিং বেল বাজতেই ছুটে গিয়ে দড়জা খুলতেই চমকে যায়। বুকের ভেতরটা ধুক করে উঠলো।


পর্ব:৪

দরজা খুলে দেখলাম সিনথিয়া আপু আর আবরার দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে সিনথি আপুর হাতে অনেক গুলো সপিং ব্যাগ আবরার অপরাধীর মতো মাথা নিচু করে আছে।

সিনথি আপু বেশ হাসি হাসি মুখ করে বলছে কি হলো রিয়া ভেতরে আসতে দেবে না?

আমি কিছু না বলে ঘরে চলে গেলাম।

আমার শ্বাশুরি ননদকে দেখে বোঝায় যাচ্ছে বেশ মজা পেয়েছে।

ঘরে এসে বেশ কিছু ক্ষন কান্না করলাম।

তবে কি সব শেষ।

আবরার বেশ কয়েকবার কথা বলার চেষ্টা করেছে তবে বলিনি।

নিজেকে কেমন পাগল পাগল লাগছে কি করছি না করছি কিছু ই মাথায় ঢুকছে না।

ছোট খাট অনেক অবহেলা অনাদরের মধ্যে দিয়ে কাটছিলো আমার দিন। আমার সংসার।

একদিন রান্না বেশি করায় শ্বাশুড়ি বলে উঠলো তুমি কি খাবার তোমার বাপের বাড়ি নিয়ে যাবে?

উত্তর দেইনি শুধু আবরারর দিকে তাকিয়ে ছিলাম। সেও নিরব থেকেছে।

এই বাড়িতে থাকার কোনে মানে ই খুজে পাচ্ছি না আমি।

আবরার বাড়ি নেই। ব্যবসার কাজে বাহিরে গেছে এক সপ্তাহের জন্য বাড়িতে আমি আর আমার দুই ননদ আছি।

শ্বাশুড়ি বোনের বাড়ি গেছে।

বড় ননদ বাড়িতে একজন ছেলেকে এনেছে।

লোকটাকে দেখতে কেমন একটা লাগছে

বড় আপুর ডিভোর্স হয়েছে প্রায় বছর খানিক হলো।

লোকটার নজর ভলো না। কেমন করে দেখছিল।

আমাকে লোকটাকে চা দিতে বলে আপু লোকটাকে নিয়ে ঘরে গেলো

চা দিতে গিয়ে তাদের বেশ আপত্তিকর অবস্থায় দেখে ফেল্লাম।

তারপর তাকে যখন বারন করতে গেলাম নানা রকম বাজে কথা বলল। যা মানতে কষ্ট হলো।

নিরবে চোখের পানি ফেলেছি।

আপু নিজেকে বাচাতে শ্বাশুড়ি মা কে গিয়ে বলেই ফেলল আমি না কি লোকটাকে এ বাড়িতে এনেছি।

বার বার বলা সত্তেও কেউ কথা শুনলো না।

ছোট ননদ ও চুপ ছিলো।

শ্বশুড় বাজারে গেছিলো।

তাই আজ আর আমার পক্ষে এ বাড়িতে থাকা সম্ভব নয়।

আজ আমার শ্বাশুড়ি মা রিতীমত আমার আর আমার মায়ের চরিত্র নিয়ে কথা বলেছে।

বাবাকে অসন্মান করেছে।

যেটা সনন্তান হিসেবে মানতে পারছি না।

এই বাড়িতে একমুহুর্ত থাকা আমার কাছে অসম্ভব।

তবে দুঃখ একটাই যেই ভলোবাসার জন্য এবাড়িতে এসেছিলাম তা কখনো পাওয়া হলো না।

কারন একটাই আমি অযোগ্য।

কথাগুলো একটা ছোট্ট চিঠিতে লিখে।

এক কাপড়ে বাড়ি থেকে বার হয়ে গেলাম।

বাবার সামনে দরাতেই বাবা ও কেদে উঠলো।

হাজার হোক বাবা তো।

বাবা চায় নি আমাকে কষ্ট দিতে গ্রামের লোকজন না না কথা বলতো তাই।

সেই রাতেই বাবা আর মেয়ে চলে এলাম এক নতুন ঠিকানায়।

আমার এক ফুপির বাড়িতে।

নতুন করে এখান কার একটা কলেজে ভার্তি হলাম।

সব মিলিয়ে ভালোই চলছিলো।

তবে মনের কোথাও আশা ছিলো আবরার এসে বলবে রিয়া আমি এসেছি।

প্রথম বর্ষের পরীক্ষা শেষে এখন দিত্বীয় বর্ষে উঠেছি।

কলেজে প্রথম হয়েছি।

সাবাইকে জবাব দিতে চাই।

নিজের যোগ্যতা প্রমান করতে চাই।

বাবা মাঝে মাঝে গ্রামে যায়।

জমিজমা সব মোটামোটি বিক্রি করে দিয়েছে।

থাকার বলতে বাড়িটা আছে বাড়িটা মায়ের স্মৃতি।

এভাবে আরও একটা বছর কেটে গেলো।

আজ HSc পরীক্ষা দিতে যাবো।

বাবা আর ফুপ্পীকে সালাম করে পরীক্ষা দিতে গেলাম।

মা কে খুব মনে পরছে।

মা থাকলে খুব আনন্দ পেতো।

একটানা পরীক্ষা দিয়ে।

অ্যাডমজশানের জন্য রেডি হচ্ছি।

মার খুব ইচ্ছে ছিলো আমি ডাক্তার হবো। গ্রামের লোকের সেবা করবো। তখন আবরারর প্রেমে এতোটাই পাগলাছিলাম বাবা মা কারো দিকে তাকানোর সময় হয়ে ওঠেনি।

তবে অবাক লাগছে এটা ভেবে যে এতোগুলো বছরে আবরার একবার ও খবর নিতে আসেনি।

শহরটা খুব একটা বড় নয় আবরার চাইলেই খুজে পতো কিন্তু চায় নি।

হয়তে এতো দিনে সিনথি আপুকে বিয়েও করে ফেলেছে।

কি জানি।

হটাৎ ফুপু আম্মু মাথায় হাত রেখে আদর করে দিলো।

এই পৃথিবীতে সবাই পর হলেও রক্তের সম্পর্ক কখনো পর হয় না।

দেখতে দেখতে অ্যাডমিশানও চলে এলো পরীক্ষা দিতে যাবো খুব টেনশান হচ্ছে কি হবে কে জানে।

নিজের যোগ্যতা নিজেকেই প্র্রমান করতে হবে শ্বাশুড়ি মায়ের কথাগুলো আজও কানে বাজে।

বাবা মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন।

পরীক্ষা মোটামোটি ভালোই হয়েছে।

রেসাল্ট নিয়ে খুব চিন্তাই আছি কি হবে কে জানে।

এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠলো।

ছুটে গিয়ে দড়জা খুলতেই থমকে গেলাম।


পর্ব: ৫

বাবা মাথায় হাত রেখে দোয়া করলেন।

পরীক্ষা মোটামোটি ভালোই হয়েছে।

রেসাল্ট নিয়ে খুব চিন্তাই আছি কি হবে কে জানে।

এমন সময় কলিং বেলটা বেজে উঠলো।

ছুটে গিয়ে দড়জা খুলতেই থমকে গেলাম।

আমার সামনে আমার শ্বশুড় দাড়িয়ে আছে শ্বশুড় বললে ভুল হবে তিনি তো আমার আরেক বাবা।

ঐ বাড়িতে তিনি একমাএ ছিলেন যিনি আমাকে আগলে রাখতেন।

আমাকে চুপ থাকতে দেখে বাবা নিজেই বলে উঠলো কিরে মিষ্টি মা তো এই শ্বশুড় বাবাকে তো ভুলেই গেছিস।

কিন্তু তোর শ্বশুড় বাবা কিন্তু তোকে ভুলে নি।

অমনি ছুটে গিয়ে বাবা ধরে কেদে দিলাম পিছনে তাকিয়ে দেখি বাবা ও কাদছে।

পরে জানতে পারলাম আমাদের রাতারাতি জায়গা বদল সব হয়েছে এই শ্বশুড় বাবার দৌলতে।

এমন কি কলেজে ভর্তি রেজিস্ট্রেশন বদল সব আমার শ্বশুড় নিজে করেছে।

তিনি ও চান আমি যেনো যোগ্য হয়ে ওঠি।

তখনই এক বান্ধবি ফোন দিয়ে জানায় মেডিকেলের রেসাল্ট দিয়েছে।

খুব ভয় লাগছে ভয়ে ভয়ে রেসাল্ট দেখতে গিয়ে হাত কাপছে কি জানি কি হয়।

পাশ থেকে শ্বশুড় আব্বাকে লাফিয়ে উঠতে দেখে অবাক হলাম।

বাবার দিকে তাকিয়ে দেখি চোখ দিয়ে পানি পরছে।

কারন জানতে চাওয়ার আগেই ফুপু আম্মু বলে উঠলো।

-তুই পেরেছিস রিয়া।

নিজেকে প্রমান করতে।

তুই চান্স পেয়ে গেছি।

কথা গুলো যেনো স্বপ্ন স্বপ্ন লাগছে।

সবার হাসি মাখা মুখগুলো দেখে নিজেকে মনে হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে সুখি মানুষ।

মূহুর্তেই অতিতের কালো ছায়া যেনো কেটে গেলো।

বাবা ফুপ্পি সবাইকে নিয়ে খুব ভালো আছি মাঝে মাঝে শ্বশুর আব্বু আসেন দেখা করতে কখনো কখনো থেকেও যান বাড়িট কথা তেমন কিছুই বলেন না আমি ও জানতে চাই না।

বেশ ভালোই কাটছিলো পড়াশোনা বন্ধুবান্ধব সবাইকে নিয়ে।

দেখতে দেখতে সব পরীক্ষায় পাশ করে গেছি।

বাবা ফুপ্পি সবাই খুব খুশি।

ইনটার্নি করার জন্য আমাকে রাজশাহী পাঠানো হয়।

সেখানে আমি একাই থাকি।

একবারে পার্মানেন্ট হয়ে গেলে বাবা আর ফুপ্পিকে নিয়ে আসবো।

এতো বছরে আবরারর প্রতি জমানো অভিমান গুলো কখন রাগে পরিনত হয়েছে বুঝতেই পারিনি।

একদিন খুব সকাল সকাল হাসপাতাল থেকে ফোন এলো।

৭ মাসের গর্ভবতি মহিলা পরে গিয়ে নাকি পেটে চাপ লেগেছে।

অবস্তা নাকি খুব ভালো না।

আমাকে তারা তারি হাসপাতালে যেতে হবে।

আমি ও দেরী করলাম না পারলে একরকম ছুটেই হাসপাতালে গেলাম।

গিয়ে নার্সদের বলতেই তারা আমাকে রোগীর কাছে নিয়ে গেলো রোগীর মুখটা দেখে রীতি মতো চমকে গেলাম।

এ আমি কাকে দেখছি।

এতো লায়লা আপু আমার বড় ননদ।

প্রায় অজ্ঞান অবস্থায় হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে আছে। মুখটা প্রায় শুকিয়ে গেছে।

কাছে গিয়ে দেখলা বেশ ভালো ব্যাথ্যা পেয়েছে।

পাশ ফিরে আপুকে চেক আপ করছিলাম তখনি একজন মহিলা কাঁদতে কাঁদতে পায়ে ধরনে।

-দয়া করে আমার মেয়েকে বাচান আপা

পাশ ফির তাকাতেই দুজনের চোখাচোখু হয়ে গেলো।

আমি যতটা না অবাক হলাম তার চেয়ে বেশি অবাক বোধয় তিনি হয়েছেন।

মহিলাটি অন্য কেউ নয় বরন আমার শ্বাশুড়ি।

আমাকে দেখা মাত্র তিনি থমকে গেলেন আমি ও কথা বারালাম না শুধু।

এইটুকু বললাম,

  • চিন্তা করবেন না আমি দেখছি।

আল্লাহকে ডাকুন তিনি সবকিছুর মালিক।

আসতে নিলে দড়জার দিকে তাকাতেই দেখি একজন মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে।

আমি সে দিকে না তাকিয়ে সোজা চলে এলাম। সেদিকে আর ফিরে তাকাতে চাই না।

সব ভুলতে চাই।

একজন নার্স ছুটে এসে বললো ম্যাডাম,

  • পেশেন্ট হটাৎ করেই খুব ডেসপারেট হয়ে গেছে তাকে সামলানে যাচ্ছে না আপনি তারা তারি চলুন।

পর্ব: ৬

একজন নার্স ছুটে এসে বললো ম্যাডাম,

  • পেশেন্ট হটাৎ করেই খুব ডেসপারেট হয়ে গেছে তাকে সামলানে যাচ্ছে না আপনি তাড়াতাড়ি চলুন।

ছুটে গিয়ে দেখি লায়লা আপুকে কয়েকজন নার্স ধরে রেখেছে।

আপুর হাতে ক্যানেলা করা ছিলো বোধয় ছোটা ছোটি করতে গিয়ে বেকে গেছে সেটা দিয়ে চুইয়ে চুইয়ে রক্ত পরছে।

স্যালাইন নিচে পড়ে আছে।

আপু কাহিল অবস্থা।

ঘোরের মধ্যেও বার বার বলছে,

-আমি বাচতে চাই না। আমি মরতে চাই।

দেখে বোঝায় যাচ্ছে জগতে সব ক্লান্তির ছাপ যেনো লায়লা আপুর মুখে পরেছে।

আমি কাছে গিয়ে আপুকে ঘুমের ঔষুধ দিয়ে দিলাম।

কিন্তু আপু বার বার কেন মরার কথা বলছিলো ঠিক বুঝে উঠতে পারছি না।

এমন সময় পেছন থেকে কারো ডাকে ভাবনার জগৎ থেকে ফিরে এলাম।

-রিয়া তুমি।

-পেশেন্টের ঘরে ভির করবেনা ওনি এখন ঘুমোচ্ছে দয়া করে বাহিরে যান।

আবরার আর এক মুহূর্ত দাড়ালো না সোজা বাহিরে চলে গেলো।

আমি ও বাহিরে আসতেই আমার শ্বাশুড়ি এসে আকুতি মিনতি করলো মেয়ের জন্য।

আমিও সান্তনা দিলাম।

কিন্তু আপুর এই অবস্থার কারন আমাকে জানতে হবে।

রোগীর মনের অবস্থাও জানতে হবে।

পাশ থেকে আবরার বলে উঠলো।

-রিয়া আমি বলছি তোমায় সবকিছু।

-আপনি আমার চেম্বারে আসুন।

আবরার মাথা নিচু করে আমার পেছন পেছন এসলো।

ঘরে এসেই আসেই আমার দুই হাত ধরে বলতে লাগলো

-রিয়া কেমন আছো? কোথায় চলে গেছিলে?

-প্রথমত খুব ভালো আছি।

আর কোনো ব্যক্তিগত প্রশ্নের উত্তর দিতে বাধ্য নয়।

-রিয়া এভাবে কতা বলছো কেন।

আমিত

কথার মাঝে থামিয়ে দিয়ে বললাম,

-বার বার আমার না নেবেন না আর অপরিচিত কাউকে আপনি বলে সম্মধন করতে হয়।

আবরার আর কোনো কথা বলল না।

দুজন কিছুক্ষন চুপ থাকার পর আমিই বললাম।

-দেখুন আপনাকে এখানে বসে থাকার জন্য ডাকি নাই। আপনার বোনের সমস্যার কথা জানতে ডাকছি। যদি খুলে বলতে পারেন তো বলন না হলে আসতে পারেন। বাহিরে আরো রোগীরা আছে অপেক্ষা করছে।

আবরার আর কোনো ভনিতা না করে বলতে শুরু করলো।

-লায়লা আপু ছোটবেলা থেকেই বেশ উশৃঙ্খল ছিলো।

পড়াশোনায় খুব একটা মনযোগ ছিলনা।

তাই কলেজ পাশ কারার পর পরই বাবা বিয়ে দেয় এক বন্ধুর ছেলের সাথে।

একটু দম নিয়ে আবার বলতে শুরু করলো,

আপুর এক লোকের সাথে সম্পর্ক ছিলো।

বিয়ের পরও। ভাইয়াকে আপুর কখনো তেমন ভালো লাগানি।

আপুর শ্বাশুড়ির সাথেও সম্পর্ক বেশ তিক্ত ছুলো।

আপু আমাদেরকে এসে বলতো আপুর শ্বাশুড়ি নাকি আপুকে খুব নির্যাতন করতো। ভাইয়া ও না কি আপুকে মার ধোর করতো। কিন্তু ঘটনাটা ছিলো সম্পূর্ন আলাদা।

আপুই ভাইকে সহ্য করতে পারতো না।

একসময় আপুর সম্পর্কের কথা আপুর শ্বশুড় বাড়িতে জানা জানি হলে আপু নিজে থেকেই শ্বশুড় বাড়ি থেকে চলে আসে।

ভাইয়ার সাথে আমাদের কাউকে কোনো যোগাযোগ করতে দেয় না।

(কথাগুলো মাঝে একটু দম নিয়ে আবরার আবার বলতে থাকে)

সব কিছু ভালোই চলছিলো আপুকে মা খুব ভালোবাসে। আপুর সব দায়িত্ব আমি নিজে থেকেই নিয়েছিলাম। মার ধারনা ছিলো বিয়ে করলে আমি বদলে যাবো।

তাই মা নিজে পছন্দ করে আমার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন। কিন্তু আমি অন্য কাওকে ভালোবাসতাম। তাই আমি সেই মেয়েকেই বিয়ে করি।

-আমি আপনার ব্যক্তিগত জীবনের কোনো কথা শুনতে চাইনি আমি রোগীর কথা শুনতে চেয়েছি।

আবরার ভেতর থেকে শুধু একটা দীর্ঘ শ্বাস বেড়িয়ে এলো।

আবরার আবার বলতে শুরু করলো।

-এবাড়িতে এসে আপু লোকটার সাথে সম্পর্ক রাখে। তবে লোকটা আমাদের টাকা ছাড়া আর কিছুই চাই তো। আমরা বাড়িতে না থাকতে লোকটা বেশ কয়েকবার এবাড়িতে এসেও ছিলো। তা নিয়ে আমার জীবনে বেশ বড় ঝড়ও বয়ে গেছে।

(কথা গুলো বলার সময় আবরার বার বার আড় চোখে আমার দিকে দেখছিলো)

সে সব তো আপনার জানাই আছে।

এভাবে আপুও লোকটার সাথে বেশ আষ্টে পষ্টে জরিয়ে যায়। ভাইয়া আপুকে নিতে এসেছিলো কিন্তু আপু বার বার ভাইয়াকে ফিরিয়ে দিয়েছে।

একটা সময় লোকটা আপুর কাছে টাকা পয়সা নিতে থাকে। আপুও সরল বিশ্বাসে সব দিয়ে দেয় এমন কি নিজেকেও।

কয়েক মাস আগে আপু জানতে পারে সে প্রেগনেন্ট। কথাগুলো লোকটাকে বললে লোকটা আপুকে খারাপ বলে তাড়িয়ে দেয়। বাড়িতে কথাগুলো বললে বাবা মা সবাই আপুকে মার ধর ও করে।

কিন্তু তখন অনেকটা দেরী হয়ে যায়।

আপু বার বার আত্নহত্যা করার চেষ্টাও করে।

আবরারকে মাঝে থামিয়ে দিয়ে জানতে চাইলাম।

-এতো মাস পর কেনো ওনি আবার এমন করছেন। প্রেগনেন্সির তো বেশ কিছু সময় চলে গেছে।

আবরার আবার বলতে শুরু করলো।

-আপুকে নিয়ে বেশ চিন্তায় ছুলো বাব মা আপুও কেমন একটা হয়ে গেছিলো।

কোনো ভাবে ভাইয়া সবটা জানতে পারে। জানার পর বাবার কাছে আবার আপুকে চায়। ভাইয়া যে আপুকে বড্ড ভালোবাসতো।

আপু প্রথমে না যেতে চাইলেও ভাইয়ার ভালোবাসার কাছে হার মানতে হয়।

সব কিছু ভালোই চলছিলো। আপুও মায়ের কাছে সব অন্যায় শিকার করেছিলো। মাকে আপুই না না ভাবে ওসকাতো আমার স্ত্রীর বিরুদ্ধে।

ভাইয়া আপুর বেবিটাকে ও মেনে নিয়েছিলো আপুও বেশ খুশিই ছিলো কিন্তু আজ সকালে।

কথাটা বলেই আবরার কেঁদে দিলো।

আমি কিছু বুঝতে পারছিলাম না। এখানে কান্নার কি আছে।

কিন্তু আবরার যা বলল তা শুনার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।

আজ ভোরে ভাইয়া না কি সিলেট থেকে ফিরছিলো। অফসের কাজেই সিলেট গেছিলেন তিনি কিন্তু ফিরার পথে একটা ট্রাকের সাথে আক্সিসেন্ট করে ঘটনা স্থলেই ভাইয়া মারা যান।

কথাটা শোনার পর থেকেই আপুর এ অবস্থা।

কথা গুলো শেষ হতেই আবরার চলে গেলো।

আবরারর কথাগুলে শুনে আমি থমকে গেলাম। পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে গেল।

বার বার কানে শুধু একটা কথাই বাজছিলো।

শেষ যেদিন অপমানিত হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে এসেছিলাম সেদিন আপুকে শুধু একটা কথাই বলেছিলাম।

‘যে শুখ থেকে তুমি আমাকে আজ বন্ঞ্চিত করলে আমার আল্লাহ তোমাকেও কেনো দিন সে সুখ দিবে না।

কথাগুলো কেন বলেছিলাম নিজের কাছে নিজেকেই অপরাধী মনে হচ্ছে।

তবে কথাগুলো খুব কষ্ট পেয়ে বলেছিলাম এইটুকু মনে আছে।

কিন্তু আমি তো আপুর এত বড় ক্ষতি চাই নি।

নিজের মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলা না।

অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম লায়লা আপু ও তার সন্তানের সব দায়িত্ব আমি নিবো।

তখনই নার্স ছুটে এসে বলল,

ম্যাম পেশেন্ট অক্সিজেন নিচ্ছে না।

কথা শুনেই বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।

একরকম ছুটে গিয়ে দেখি।


পর্ব: ৭

তবে কথাগুলো খুব কষ্ট পেয়ে বলেছিলাম এইটুকু মনে আছে।

কিন্তু আমি তো আপুর এত বড় ক্ষতি চাই নি।

নিজের মনকে কিছুতেই শান্ত করতে পারছিলা না।

অবশেষে সিদ্ধান্ত নিলাম লায়লা আপু ও তার সন্তানের সব দায়িত্ব আমি নিবো।

তখনই নার্স ছুটে এসে বলল,

ম্যাম পেশেন্ট অক্সিজেন নিচ্ছে না।

কথা শুনেই বুকের ভেতর ধক করে উঠলো।

একরকম ছুটে গিয়ে দেখি।

লায়লা আপুর নিঃশ্বাস নিতে বেশ কষ্ট হচ্ছে।

আমি কাছে যেতেই বেশ ছটপট করছিলো।

বোধয় কিছু বলতে চাইছিলো কিন্তু বলতে পারছিলো না।

কাছে গিয়ে ঘুমের ঔষুধ দিতেই একটু শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে গেল।

বাহিরে যেতে দেখলাম আবরার দাড়িয়ে আছে।

আবরার আমাকে দেখে এগিয়ে আসছিলো। আবরার কাছে আসতেই হুট করে মেহেদি কোথা থেকে ছুটে এসে জড়িয়ে ধরল।

ও মেহেদির পরিচয়টাই তো দেওয়া হয়নি।

মেহেদি হলো আমার ফুপাতো ভাই।

(বাকি পরিচয়টা পরে দিবো)

মেহেদি এতো দিন বিদেশে ছিলো সেখানে একটা হসপিটালে ডাক্তারি করতো এখন দেশে এসেছে। ফুপ্পু আম্মুর ইচ্ছে ছিলো মেহেদির সাথে আমার বিয়ে দেওয়ার কিন্তু কোনো এক কারনে সেটা সম্ভব হয় নি।

মেহেদি দেশে এসেছে তার পিছনে এক বিশেষ কারন আছে।

মেহেদিকে দেখে আমি রিতিমতো চমকে গেছি।

মেহেদিই এই পৃথিবীতে একমাএ মানুষ যাকে আমি মায়ের মত করে ভালোবাসতাম।

আনন্দে আত্যহারা হয়ে পাশে যে মুখ কালো করে দাড়িয়ে আছে তা ভুলেই গেছিলাম।

এইবার পরিচয়ে আসা যাক।

মেহেদি হলো আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। জন্মের পর থেকেই এক সাথে বড় হওয়া। ছোটবেলায় স্কুল লাইফের শুরুটা ও হয়েছিলো একসাথে।

দুজনে একসাথে সারা গ্রাম দাপিয়ে বেরাতাম তখন ফুপ্পা ও বেচে ছিলো। ফুপ্পা ফুপ্পি সবাই এক বাসাতেই থাকতাম। একসাথে খাওয়া থেকে শুরু করে সব।

তবে মারামারি খুনশুরি যে কম ছিলো তা কিন্তু নয় তবে দুজন ছিলাম মানিক জোড় যাকে বলে।

ছোটবেলা থেকে কেউ কাউকে ছাড়া এক মুহুর্ত থাকতাম না।

তবে এটা শুধুই বন্ধুত্ব। নিখাদ একটা সম্পর্ক।

আমাদের সম্পর্কে কোনো চাওয়া পাওয়া ছিলো না। না ছিলো কোনো জটিল হিসাব নিকাষ।

ছেলে মেয়ের পার্থক্য কোনো দিন ও আমাদের সম্পর্কে বাধা হয়ে দাড়াই নি। পরিবার ও কোনো দিনও বাধা দেয় নি কারন আমরা কখন সম্পর্কের জটিলতায় নিজেদের বন্ধুত্বটাকে ভাসিয়ে দেইনি।

আমরা আমাদের সম্পর্কটাকে সন্মান করতাম।

সব কিছু ভালোই চলছিলো হটাৎই হার্ট অ্যাট্যাকে ফুপ্পা মারা যায়।

তখন পরিবেশটাও থমথমে।

ফুপ্পা নিজের পরিবারের জন্য বেশি কিছু রেখে যায় নি।

পরিবারের সবাই সিদ্ধন্ত নেয় আমাকে আর মেহেদিকে বিয়ে দেবে।

বাবার ছেলে ছিলো না বাবা ও ছেলে পাবে আর মেহেদি ও পড়াশোনার পাশা পাশি বাবাকে সাহায্য করবে।

বিয়ের কথা শুনেই আমরা দুজনই চমকে গেছিলাম। তখন আমি সবে ক্লাস নাইনে আর মেহেদি এইচএসসি দিয়েছে।

অনেক ভাবার পর আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম আমাদের সম্পর্ক নিস্বার্থ এই সম্পর্কে ভালেবাসা ছাড়া আর কিছুই চাওয়ার থাকতে পারে না।

বিয়ে আমরা করবো না। বাড়ি থেকে খুব চাপ দিচ্ছিলো বিয়ের জন্য কিন্তু আমরা নিজেদের সিদ্ধান্তে অনড়।

একটা সময় ফুপ্পি রাগ করে মেহেদিকে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। তবে শর্ত ছিলো হয় আমাকে বিয়ে করবে না হয় বিদেশ যাবে। মেহেদি চলে গেছিলো।

আমাদের আলাদা থাকতে খুব কষ্ট হতো কিন্তু কথায় ঐ যে আমরা জটিলতা চাইনি সম্পর্কে।

মনে এই জোড় ছিলো আমরা তো বেস্ট ফ্রেন্ড।

মেহেদি এর পর অনেক বার দেশে এসেছিলো কিন্তু সামনা সামনি কথা হয়নি আর কারন এটাও শর্তের মধ্যেও পরে।

তবে লুকিয়ে ফোনে কথা হতো।

পরিবারের ধারনা ছিলো আমরা এই চাপে বিয়ে টা করবো কিন্তু না আমরা বন্ধু শুধুই বন্ধু।

তবে মেহেদি বলেছিলো একদিন আবার আমাদের সম্পর্ক সেই আগের মতো হয়ে যাবে।

বোধয় সময়টা চলে এসেছে।

এতো বছর পরও আমাদের মাঝে কোনো জড়তা নেই। নেই কোনো বাধা।

(মেহেদি আর রিয়া বন্ধুত্বের এইটুকু কাহিনী সম্পূর্ন বাস্তব)

মেহেদি আমাকে মিষ্টি বলে ডাকে।

সব মিলিয়ে এতো ব্যস্ত ছিলাম যে পাশের লোকটার দিকে তাকানোর কথাও মনে ছিলো না।

আবরার রেগে মেগে কখন সেখান থেকে চলে গেছে খেয়ালই করিনি।

তবে সবচেয়ে আন্দের কথা হচ্ছে মেহেদি ও এই একই হাসপাতালে চাকুরি পেয়েছে।

আবরারর বাড়িতে।

আবরারর খুব রাগ হচ্ছিলো। তবে রাগটা কষ্টে পরিনত হলো। যখন রিয়ার মুখটা মেহেদিকে দেখে আনন্দে উজ্জল হয়ে উঠলো।

কষ্টে চোখ দিয়ে পানি পরছিলো নিজেকে সামলাতে না পেরে বাড়ি চলে আসে।

-আজ আমি এতোটাই পর রিয়া যে একটি বার আমার দিকে ফিরেও তাকালে না।

নিজের জীবনটাকে তো বেশ গুছিয়ে নিয়েছো। কিন্তু আমি পারি নি কোনো দিন পারবো ও না।

ভালোই হয়েছে আমিও চাই না আমার এই অভিশপ্ত জীবনে তোমাকে জড়িয়ে কষ্ট দিতে। আমাকে ঘিরে তোমার জীবনে অনেক না পাওয়া থাকতো যা আমি চাইনি।

চাইনি এই অভিশাপের ভাগিদার তোমাকে করতে।

আমি চাই তুমি ভালো থাকো রিয়া। আমার দেওয়া ঐ ক্ষনিকের কষ্ট আজ তোমাই এতো সুখ দিয়েছে।

আমি তখনও তোমার সুখ চেয়েছি আজও চাই সারা জীবন চাইবো।

আমি বেশ আছি তোমার দেওয়া ঘৃনা গুলোকে নিয়ে।

রিয়ার আর আবরারর বিয়ের ছবিটা বুকে জড়িয়ে কথা গুলো বলছিলো আবরার।

এদিকে রিয়া ও বেশ খুশি এতো দিন পর সে তার হুতুম পেঁচাকে পেয়েছে একটু তো আনন্দ করতেই হবে।

সারা দিন হই হুল্লর করবে সাথে অবশ্য ছোটবেলারও কিছু বন্ধুবান্ধব ও আছে।

এতো আনন্দের মধ্যে রিয়া একটুও আচ করতে পারছে না কতোবড় সত্য সে আজও জানি না।


পর্ব: ৮

এদিকে রিয়া ও বেশ খুশি এতো দিন পর সে তার হুতুম পেঁচাকে পেয়েছে একটু তো আনন্দ করতেই হবে।

সারা দিন হই হুল্লর করবে সাথে অবশ্য ছোটবেলারও কিছু বন্ধুবান্ধব ও আছে।

এতো আনন্দের মধ্যে রিয়া একটুও আচ করতে পারছে না কতোবড় সত্য সে আজও জানি না।

রিয়া আর মেহেদি সারা দিন ঘোরা ঘুরি করে বেশ ক্লান্ত।

প্রথমে সবাই মিলে মুভি দেখেছে পরে একটা রেস্ট্রুরেন্টে খাওয়া দাওয়া করে সবে বাড়ি এসেছে।

বাড়িতে ও আজ বেশ রমরমা কান্ড।

এতো দিন পর ছেলে এসেছে তার আদর যত্নের কোনে অভাব যেনো না হয়।

রাতে খাওয়া দাওয়া শেষে রিয়া আর মেহেদি সবে শুতে যাবে।

তখনই হাসপাতাল থেকে ইমারজেন্সি কল।

একটা অ্যাক্সিডেন্ট কেস। রিয়াকে ইমার্জেন্সিতে ডাকা হয়েছে।

এতো রাতে রিয়াকে একা যেতে দেবে না বাড়ির কেউ তাই রিয়াকে নিয়ে মেহেদি বাইকে নিয়ে সরাসরি হাসপাতালে যায়। যাওয়া পথে এক জোড়া চোখ যে বার বার তাদের দেখছিলো তা রিয়া খেয়ালই করেনি।

চোখ জোড়া আর কারো না আবরারর ছিলো।

আবরার বোনের সাথে দেখা করে ফিরছিলো তখনই বাইকে রিয়া আর মেহেদিকে দেখতে পায়।

রিয়া আর মেহেদি হাসপাতালে এসে রোগী দেখে রোগীর অবস্থা খুব একটা ভালো না।

বেশ শোচনীয়।

লোকটির বাড়িতে খবর দেওয়া হয়েছে বাড়ির লোকজন আসছে।

ট্রিটমেন্ট শুরু হয়ে গেছে।

যেহেতু মেহেদি এখনো হাসপাতালে জয়েন করেনি তাই সে বাহিরে অপেক্ষা করছিলো।

হাসপাতালে ঘোরাঘুরি করার এক পর্যায়ে মেহেদির চোখ যায়। পাশের কেবিনে একজন প্রেগনেন্ট মহিলা শুয়ে আছে। আর তার ঠিক পাশে একটি মেয়ে গুটিশুটি মেয়ে সোফায় হেলান দিয়েই ঘুমোচ্ছে।

মেয়েটি বই পরছিলো। বইরা এখনো বুকের উপর আছে।

চুলগুলো এলোমেলো হয়ে মুখে পরছে।

চোখে এখনো চশমা পরায় আছে।

মেহেদির খুব ইচ্ছে হচ্ছিলো মেয়েটির কাছে গিয়ে মুখের উপর থেকে চুল গুলো সরি দিতে।

এমন সময় পেছন থেকে রিয়া ডেকে উঠে।

-কি রে কি করছিসটা কি।

চল অনেক দেরী হয়ে গেছে।

-হ্যা চল। লোকটার অবস্তা কেমন দেখলি?

-ভালো না।

-বাড়ির লোক খবর পেয়েছে?

-হুম্ম লোকটার বউয়ের সাথে কথা হয়েছে কাল সকালের মধ্যে চলে আসবে কিন্তু লোকটা কাল অবদি বাচে থাকবে কি না কে জানে!

-হুম্ম very sad।

-btw বাড়ি চল ফুপ্পু আম্মু অপেক্ষা করছে।

অন্য দিকে,

আবরার বাড়ি এসে প্রায় জিনিস পত্র ভেঙ্গেচুরে ছারখার করে ফেলছে।

আবরারর বাবা আবরারর কাছে গিয়ে

-কি করছোটা কি এইসব?

-বাবা রিয়া

-তুমি তো তাই চেয়েছিলে!

-(চুপ)

-চাওনি?

-হুম্ম

-তাহলে এখন কেন কষ্ট পাচ্ছ?

-(চুপ)

-তোমাকে বার বার বলেছিলাম রিয়াকে সবটা বল। রিয়াকে জানাও কিন্তু তুমি নিজেও কিছু বললে না আমাকেও বলতে দিলে না।

-সব জেনে যদি রিয়া আমাকে অবহেলা করতো তখন।

-রিয়া এমন মেয়ে না আবরার।

-সে সব মিথ্যা সন্ত্ববনা ছাড়া আর কিছুই না। বাবা রিয়া সব জেনে যদি আমাকে অবহেলা করতো। সেটা আমি মেনে নিতে পারতাম না। তার থেকে বরং যা হয়েছে বেশ হয়েছে।
রিয়া ভালো আছে এটাই অনেক।

-তাহলে এসব কেনো করছো এই সব নাটক বন্ধ কর।

কথা গুলো বলে কবির সাহেব আবরারর বাবা চলে গেলেন।

দড়জার পাশে দাড়িয়ে আবরারর মা সব শুনলেও তার কিছু করার নেই। তার হাতে এখন আর কিছুই নেই। একটা সময় তিনিই দিন রাত এক করে আল্লাহকে ডাকতেন, যাতে রিয়াকে বাড়ি থেকে বের করে দেয়।

এখন তিনিই চান আল্লাহ যেন রিয়াকে আবরারর জীবনে ফিটিয়ে দেন।

ছেলের মুখের দিকে তাকাতেও তার ভয় করে।

তিনি এমন মা যে ছেলের ফুলশয্যার রাতে নিজের নামে কসম দিয়ে ছেলেকে বউয়ের থেকে দূরে পাঠিয়ে ছিলো।

কিন্তু কি থেকে কি হয়ে গেলো।

সিনথিয়া যাকে কিনা তিনি হিরা ভেবেছিলেন সে কাঁচ টুকরা ছাড়া আর কিছুই না। তার প্রমান তিনি সেদিনই পেয়েছিলেন যেদিন আবরার সবার সামনে ওর রিপোর্ট গুলো দেখিয়ে ছিলো।

মেয়েটা চলে গেছে।

পাপ তো তিনি করেছেন তবে শাস্তি কেন তার একমাএ কলিজার টুকরা পাচ্ছে।

রাহেলা বেগমের বড় জানতে ইচ্ছে করে রিয়া যদি আবরারর সব কথা জানতো তবে কি রিয়া ও আবরারকে ছেড়ে চলে যেতো?

কী জানি।

তার খুব ইচ্ছে করে রিয়াকে সরাসরি সব জিগ্ঞেস করতে কিন্তু ছেলের দেওয়া কসম ফিরাতে পারেন না।

আবরার হাতে গিটার নিয় যাবে। সোজা ছাদে চলে যায়।

এই গানই আজ আবরারর একমাএ সঙ্গী।

যে তাকে ছেড়ে কখনো মাঝরাতে ছাদে বসে গলা ছেড়ে গান শুরু করে আবরার।

আমার প্রাণের মানুষ প্রাণে।

তাই হেরি তায় সকল খানে।

আছে সে নয়নতারায় আলোকধারায়, তাই না হারায়– আছে

ওগো তাই দেখি তায় যেথায় সেথায়

তাকাই আমি যে দিক-পানে॥

আমি তার মুখের কথা শুনব ব’লে গেলাম কোথা,

শোনা হল না, হল না

আজ ফিরে এসে নিজের দেশে এই-যে শুনি

শুনি তাহার বাণী আপন গানে॥

কে তোরা খুঁজিস তারে কাঙাল-বেশে দ্বারে দ্বারে,

দেখা মেলে না মেলে না,

ও তোরা আয় রে ধেয়ে দেখ্ রে চেয়ে আমার বুকে

ওরে দেখ্ রে আমার দুই নয়ানে॥


পর্ব: ৯

আজ সকাল থেকেই রিয়াদের বাড়িতে বেশ উৎসবের আমেজ।

এতো বছর পর ছেলে বিয়ে করতে রাজি হয়েছে এর চেয়ে আনন্দের আর কি হতে পারে।

মেহেদির মা তো বেশ খুশি।

সকাল সকাল রিয়া আর মেহেদি হাসপাতালে বেরিয়েছে।

আজ মেহেদির জয়নিং আর যে আক্সিডেন্ট করেছিলো। লোকটা আজ সকালেই মারা গেছে। লোকটার বাড়ির লোক এসেছে রিয়াকেই সকল ফোরমালিটি করতে হবে।

লোকটার পায়ের কাছে বসে বসে একজন মহিলা কাদছে।

বোধয় তার স্ত্রী। মেয়েটা নাকি কাল রাত থেকে ঠায় ওভাবেই বসে আছে। আর বার বার বলছে আমাকে ক্ষমা করে দিও।

মেয়েটার ঠিক পাশে একজন মহিলা বসে আছে বোধয় মেয়েটা বোন।

আমি কৌতুহল ধরে রাখতে না পেরে মেয়েটির বোনে কাছে গিয়ে জানতে চাইলাম।

  • ওনি এভাবে কি বলছে?

ডাক্তার আপা ওনেক বড় ভুলবোঝা বোঝি হয়ছে।

আমার বোন জামায় আর বোনের বিয়ে হয়েছিল প্রেম করে ছয় মাস আগে ওরা দুইজন বেশ সুখেয় ছিলো। দুই মাস আগে হটাৎই বোন জামায় আমার বোনকে মার ধোর করে বাড়ি থেকে বার করে দেয়।

দুই দিন আগে আমরা জানতে পারি জামায়ের ক্যান্সার হয়ছিলো। আজই আমার বোন জামায়ের কাছে যেতো জামায়কে বড্ড ভালোবাসে। কিন্তু সেই সুযোগ টায় পেলো না।
কথাগুলো বলেই হু হু করে কেদে দিলো।

আর মেয়েটি তো কাদতে কাদতে বার বার অজ্ঞান হয়ে যাচ্ছে।

আমার ও চোখ দিয়ে টুপ টুপ করে পানি পারছে।

হায় রে ভালোবাসা।

ভালোবাসার মানুষকে ভালো রাখার জন্য নিজেই শেষ হয়ে গেল।

হটাৎই আবরারর কথা মাথায় আসতেই একটা খটকা লগলো।

পেছন থেকে কেউ ঘারে হাত রাখতেই চমকে উঠলাম।

-কি রে মিষ্টি ভয় পেলি?

-আরে না।

-গুড

-আচ্ছা চল বাড়ি যাই ফুপ্পি আম্মু অপেক্ষা করছে।

আর তাছাড়া সপিং আছে আবার বিকালে বিয়ের কার্ডটা ছাপাতে যেতে হবে। অনেক কাজ চল বাড়িতে যাই।

হাসপাতালে কাজ শেষ করে রিয়া আর মেহেদি বাড়ি চলে আসে।

ঘরোয়া ভাবেই বিয়েটা হবে।

বিয়ের ডেট ও করা হয়েছে ঠিক তিনদিন পর।

হাতে একদম সময় নেই।

তিন দিনের মধ্যে বিয়েটা হবে।

বিকেলে কার্ডেট অর্ডার দিয়ে সরাসরি সপিংয়ে চলে যায় রিয়া আর মেহেদি।

ভাগ্য চক্রে আবরারও একটা কাজে এসে দেখে রিয়া আর মেহেদি বিয়ের কেনাকাটা করছে।

সেখানে এক মুহূর্ত না দাড়িয়ে সোজা বাড়ি চলে আসে আবরার।

বাড়ি এসেই দেখতে পায় টেবিলের উপর একটা বিয়ের কার্ড।

কার্ডটা হাতে নিতেই আবরারর বাবা বলে উঠে।

-রিয়াকে মুক্তিটা দিচ্ছো কবে?

-কার্ডটা কি রিয়ার বিয়ের?

-তা নয় তে কি!

আবরার আর কিছু না বলে সোজা নিজে ঘড়ে গিয়ে দরজা লাগিয়ে দেয়।

সারা সন্ধ্যা আবরার ঘরেই ছিলো।

মা এসেছিলো দুই একবার তবে দড়জা খুলে নি শুধু সারা দিয়েছে।

আবরার প্রায় এগারোটা নাগাত ছাদে চলে যায়।

শেষ বারের মতো রাতটাকে উপভোগ করে চায় আবরার।

ছাদের বেশির ভাগ গাছগুলো রিয়ার হাতের আবরারর বেশ লাগে গাছগুলোকে।

এটাই বোধয় শেষবার।

এই ছাদ এই গাছ এই রাত কিছুই আর দেখা হবে না।

রিয়াকে ফুলের বিছানাও আর উপহার দেওয়া হবে না।


পর্ব: ১০

রাতের বেশির ভাগ সময় আবরারর ছাদেই কেটে যায়।

রিয়া মুক্তি চায় তাকে মুক্তি দিতে হবে যেকোনো ভাবে।

জীবন যে কতো রকম ভাবে মানুষকে নিয়ে পরিহাস করে তা সত্যি ভাবনার বাহিরে।

আবরার নিজের ঘরে এসে রিয়াকে ছোট্ট একটা চিঠি লিখতে বসে।

চিঠিটা লিখে গয়নার বাক্স সহ প্যাক করে নিজের ব্যাগে ভরে নেয় আবরার।

রাত প্রায় শেষ।

গয়না আবরার রিয়াকে ফুলশয্যায় দিবে বলে কিনেছিলো।

কিন্তু…

বাহিরে আজানের ধ্বনি শোনা যাচ্ছে।

মন ভালো করতে নামাজের বিকল্প কিছুই নেই।

সোজা ওযু করে নামাজ পরে নেয় আবরার।

এখন তার অনেক কাজ।

গোটা পরিবারটা যে এখন তার উপর নির্ভরশীল। সমস্ত ব্যবস্থা করেই তাকে যেতে হবে যাতে বাবা মা ভাই বোন কারো কোনো অসুবিধা না হয়।

এই পরিবারে আর একজন নতুন অতিথি আসছে তার ভবিষ্যতের কথাও তো ভাবতে হবে।

সমস্ত কিছু গোছিয়ে নিয়ে সোজা কোটে চলে যায় রিয়ার প্রাপ্য তো রিয়াকে বুঝিয়ে দিতে হবে।

আজ মেহেদির গায়ে হলুদ।

সারা বাড়ি উৎসবে মেতে উঠেছে।

রিয়া আর মেহেদির ছোটবেলার সব বন্ধু বান্ধবরাও এসেছে।

এতো কিছুর পরও রিয়ার মানটা কেমন খচখচ করছে।

বার বার মনে হচ্ছে কোনো না কোনো বিপদ আসতে চলেছে।

সন্ধ্যায় হটাৎ কলিং বেলটা বেজে ওঠলো।

দড়জা খুলেই রিয়ার ডাক পরলো।

কুরিয়ার সার্ভিসের লো এসেছে রিয়ার নামে পার্সেল আসে।

বিয়ে বাড়িতে পার্সেল ব্যপারটা বেশ অসাব্ভাবিক।

রিয়া পার্সেলটা নিয়ে ঘরে চলে যায়।

পার্সেলটা সাদা কাগজে মোরানো।

এটা আবরার পাঠিয়েছে।

সাদা কাগজটা খুলতেই ভেতরে আর একটা কাগজে মোরানো তার গায়ে লিখা।

তোমার কাছে আমার শেষ অনুরোধ তুমি এটা রাতে খুলবে।

যখন কেউ থাকবে না।

এবার রিয়ার বেশ অবাক লাগে সেই সাথে কৌতু হল ও হয় কি আছেটা কি এই বাক্স।

ঐ দিকে গায়ে হলুদতো শুরু হয়ে গেছে সেই সাথে সবাই বেশ হৈ হুল্লুর ও করছে।

পার্সেলের কথা একরকম ভুলেই গেছে রিয়া।

তখন প্রায় রাত তিনটা বাজতে চলেছে।

রিয়া ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই চোখে রাজ্যের ঘুম চলে আসে।

হটাৎই পার্সেলের কথা মনে পরতেই চট করে উঠে বের করে কাগজ সরাতেই অবাক হয়ে যায়।

সেখানে রিয়ার পায়ের একটা নুপুর যেটা গ্রামে হারিয়ে গেছিলো।

আমরা বিভিন্নরকমভাবে ছবি তুলেছিলাম।

গ্রামে যখন আবরার গেছিলো তখন সারাদিন ক্যামেরা নিয়ে ঘুরেছে আবরার। তবে রিয়ার ধারনা আবরার একটা ছবিও তোলেনি।

কিন্তু আবরার যে কখন এতোগুলো ছবি তুলেছে তা রিয়া বুঝতেও পারে নি।

আর শেষ বাক্সে একটা হিরার হার।

সাথে একটা চিঠি।

কৌতুহলী হয়ে চিঠিটা খুলে পরতে শুরু করে।

রিয়া

তোমাকে কি বলে সম্মধন করবো জানা নেই। সেই অধিকার তো আমি নিজে থেকেই হারিয়েছি। তবে দুঃখ নেই কারন তুৃমি ভালো আছো। কতো স্বপ্নই না ছিল তোমাকে নিয়ে ঘর বাধবো।

কতো কষ্টে মা কে রাজি করিয়ে ছিলাম বিয়েতে শুধু তোমাকে হারানার ভয়ে। কিন্তু মা বিয়েটা মন থেকে মানতে পারে নি তা তো বিয়ের দিনই জানতে পেরেছিলাম। সব বাধা বিপত্তি ছেড়ে যখন তোমার কাছে যাচ্ছিলাম তখন হটাৎই পেছন থেকে আপু ডাক দেয়। আপুর ডাকে। মার ঘরে গিয়ে দেখি মা মুখ ফিরে দাড়িয়ে আছে। সেদিন মা আমাকে কসম দিয়েছিলো যদি তোমার কাছে যাই তবে মায়ের মরা মুখ দেখতে হবে। এতোটা নিষ্ঠুর সেদিন হতে পারিনি। নিজের জন্মধাত্রি মায়ের মরা মুখ দেখবো। ওমন ছেলে আমি কোনোদিনও ছিলাম না। সারা রাত ছাদে বসে কেদেছি। কারন একটায় তোমাকে হারাতে চাইনি।

তবে বিশ্বাস ছিলো তুমি বুঝবে। মনকে বুঝিয়েছি আমার রিয়া ঠিকই একদিন না একদিন মায়ের মন জয় করে নিবে। আপু আর মা বার বার তোমার যোগ্যতার কথা বলতো। আমি চেয়েছিলাম তুমি যোগ্য হও। তার পর তোমায় সন্মান দিয়ে ঘরে তুলবো নতুন বেশে সাজিয়ে। সব কিছু অন্যরকম ও হতে পারতো। মনের মতো। কিন্তু হয় নি। কারন আমি। আমার ভাগ্য। তোমার মনে আছে সেদিন ডাক্তার একটা রিপোর্ট দিয়েছিলো রিপোর্টটা তোমায় দেখতে দেই নি। কারন রিপোর্টে আমার সবচেয়ে বড় অপারগতার কথা লিখা ছিল যেটা আমি নিজেই কোনো দিন ও জানতাম না এখনো মানতেও পারি নি। কিন্তু না মানলেও এটাই সত্যি। আমি কোনো দিনও বাবা হতে পারবো না। হ্যা সত্যি পারবো না।

আমি পারতাম না তোমায় সন্তান সুখ দিতে যা তুমি সবসময় চেয়েছো। আমি চাইলে তোমাকে কথা গুলো সে দিন ও বলতে পারতাম কিন্তু কেন বলিনি জানো! কারন আমি চাই নি তুমি আমাকে দয়া কর। আমি জানি তুমি আমাকে ছেড়ে যেতে না তবুও আমার নিজেকে সারা জীবন অপরাধী মনে হতো। মনে হতো একজন মেয়ের সারা জীবনের স্বপ্ন আমার কারনে শেষ হয়ে গেলো। তাই তোমাকে বার বার দুরে ঠেলেছি।

চাইনি তোমাকে এই অভিশপ্ত জীবনে জরিয়ে রাখতে। আজ আমি সফল। তুমি সত্যি অনেক দুরে চলে গেছো, রিয়া। তোমার বিয়ে দেখার মতো সাহস বা ক্ষমতা কোনোটাই নেই তুমি ভালো থেকো। তোমার জ্যোতির আলোয় আলোকিত করে তুলো তোমার নতুন সংসার। আর হ্যা আমাকে মনে রেখো কিন্তু। আমি তোমাকে রোজ দেখবো ঐ আকাশ থেকে। তোমাকে মুক্তি দিলাম। আর এই গয়নাটা তোমার বিয়ের উপহার ভেবেছিলাম তোমায় নিজ হাতে পড়িয়ে দিবো কিন্তু হলো না।

ইতি
আবরার


চিঠিটা পড়ে রিয়া যেনো পাথরের মূর্তি হয়ে গেছে।

যে মানুষটা তাকে এতো ভালোবাসে সেই মানুষকে না জানি কতোটা কষ্ট দিয়েছে।

যাকে এতো ভালোবাসলা তাকে এইটুকু বিশ্বাস করতে পারলাম না আমি।

রিয়া নিজেই নিজেকে কথাগুলো বলছে আর কান্না করছে।

কিন্তু আবরার কি করতে চাইছে টাকি।

রিয়া দ্রুত ফোন বের করতে যাবে তখন রিয়ার ফোনটা বেজে ওঠে।

রিয়ার ছোট ননদ ফোন করেছে।

লাবন্য

  • কি হয়েছে লাবন্য কাদছো কেন আবরার কোথায়?? ওকে ফোনটা দাও।

আমি কথা বলবো।
– কি হয়েছে বলবে তো। চুপ করে আছো কেন?

-ভাবি ভাইয়া, আর…..


পর্ব: ১১

:ভাবি ভাইয়া।

:অনা বলো বলছি তোমার ভাইয়া কোই।

:ভাবি ভাইয়া আজকে রাতে বাবার সব ঘুমের ঔষুধ খেয়ে ফেলেছে।

আমরা যখন ভাইয়ার ঘরে যাই তখন ভাইয়ার কোনো সেন্সই ছিলো না।

ভাইয়াকে হাসপাতালে আনা হয়েছে। ডাক্তার বলেছে ভাইয়া নাকি আর বাজবে না।

তুমি প্লিজ তারাতারি এসো।

রিয়ার পায়ের নীচ থেকে যেন মাটি সরে গেল।

একি করলো আবরার একবার তো আমাকে বলতে পারতো।

একবারো কি আমার কথা মনে পরলো না।

কিছু না বলে কাদতে কাদতে রিয়া সোজা হাসপাতালে চলে যায়।

ডাক্তাররা আবরারকে ওয়াশ করেছে কিন্তু বেশী দেরী হয়ে যাওয়ায় আশা রাখতে পারছেনা।

রিয়া নিজেও আবরারকে দেখেছে ৪৮ ঘন্টা না যাওয়া পর্যন্ত কিছুই বলা যাচ্ছে না।

সেহেতু অনেক হায়ার ডোজ খেয়ে ফেলেছে সেহেতু ১৬ ঘন্টার মধ্যে গ্ঞান না ফিরলে বাচানো অসম্ভব।

শরীর যেন ধীরে ধীরে কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে। আবরারর।

পাল্স রেট ও ক্ষীন হয়ে আসছে।

যতো সময় যাচ্ছে ততোই যেন আবরার নিসতেজ হয়ে যাচ্ছে।

দেখতে দেখতে প্রায় ১২ ঘন্টা চলে গেছে কিন্তু কোনো রেস্পোন্স করছে না।

আবরারর পাশ থেকে উঠে রিয়া বাহিরে যেতেই রিয়ার শ্বাশুড়ি রিয়াকে চেপে ধরে।

:যতো দোষ তো আমি করেছিলাম তার জন্য শাস্তি আমাকে দাও মা। কিন্তু আমার আবরার কে বাচায়ে দাও। তোমার দুটা পায়ে পরি।

:এসব কি বলছেন।

পাশ থেকে রিয়ার বাবা বলে ওঠে,

-দোষ কি শুধু আপনার একার না কি! আপনার ছেলে তো কম অত্যাচার করেনি রিয়ার ওপর।

এখন এসছে নাটক করতে।

তখনই আবরারর বাবা বলে,

:হ্যা আমার ছেলে তো অত্যাচার করেছে।

রিয়াকে ভালোবেসে অত্যাচার করেছে।

এক রাতে আপনাদের সমস্ত সম্পতি ডাবল দামে কিনে সাহায্য করে রিয়ার উপর অত্যাচার করেছে। রিয়াকে ছায়ার মতো আগলে রেখে অত্যাচার করেছে।

রিয়ার কলেজে ভর্তির ব্যবস্থা করে আবরার অন্যায় করেছে অত্যাচার করেছে।

ওহ রিয়ার তো মেডিকেল আডমিশানে ২ মার্ক কম ছিলো।

শুধু রিয়ার স্বপ্ন পুরোনের জন্য নিজে রেপোটেশান খারাপ করে ঘুষ দিয়ে রিয়ার ভর্তি করিয়েছে।

আরও শুনতে চাও রিয়া?

রিয়া মাথা নিচু করে আছে। চোখ দিয়ে শুধু পানি পরছে মুখে কোনো কথা নেই।

গলা আটকে আসছে।

তাহলে শোনো।

:তোমার কলেজের রকিকে মনে আছে যে তোমাকে উঠতে বসতে অসন্মান করতো হটাৎ কেন বদলে গেলো জানো।

না জান মা জানবেই বা কি করে তুমি তো শুধু আবরারর বাহিরেটা দেখেছো মানটা দেখো নি।

এটাই তোমার ভালোবাসা।

আর ছেলেটা আমার তোমার সুখের জন্য নিজের জীবন বিসর্জন দিল এটাই আবরারর ভালোবাসা।

রিয়ার শ্বশুড় আর এক মুহুর্ত না দাড়িয়ে চলে গেলো।

পাশে রিয়া আর রিয়ার বাবা দাড়িয়ে আছে।

মুখে কোনো কথা নেই।

শ্বশুড়ের বলা প্রতেকটা কথাই রিয়ার বুকে গিয়ে লেগেছে।

কিন্তু কিছু বলার বা করার নেই।

সত্যিইতো রিয়া কতোবারই না আবরারকে মনমরা হয়ে থাকতে দেখেছে কিন্তু কখনো জানতে চায়নি তার কারন।

আবরার ভেতরটাই তো কখনো দেখতে পারে নি।

এই ভালোবাসার বরাই করেছে এতো দিন।

এই ভালোবাসতো রিয়া আবরারকে।

নিজের কাছে নিজেকেই ছোট মনে হচ্ছে।

আবরারর কিছু হয়ে গেলে রিয়ার কি হবে।

ভাবতেও বুকটা ধক করে উঠছে।

তবে কি সব এভাবেই শেষ হয়ে যাবে।

পাশ থেকে একজন নার্স মুখ কালো করে দাড়িয়ে আছে।

কিছু বলতে চেয়েও বলতে পারছে না।

সাথে মেহেদি ও দাড়িয়ে আছে।

রিয়া স্থির চোখে মেহেদির দিকে তাকাতেই।

মেহেদি বলে উঠলো।

:সরিরে মিষ্টি।

আবরারকে বোধয় আর বাচানো গেলো না।

রিয়া এখনো স্থির হয়ে আছে মাথা কাজ করছে না।

পায়ের নিচে তো মাটি নেই।

:রিয়া এই রিয়া শুনছিস!

কিছু বলার আগেই রিয়ার চোখের সামনে ঝাপসা হয়ে আসে।

গা গুলিয়ে আসছে।

কিছু না ভেবেই সোজা আবরারর কাছে ছুট দেয়।

ঘরে গিয়ে দড়জা বন্ধ করে দেয়।

আবরার পায়ে কাছে গিয়ে চুপটি করে বসে পরে।

আবরারর সেন্স আছে কিন্তু কাজ করছে না।

এখনো সময় আছে তার আবরার তাকে ছেড়ে যেতেই পারে না।

ওঠে দাড়েতই মাথাটা ঘুরে আসে।

সোজা গিয়ে আবরারর মাথার কাছে কেবিনের রডের সাথে বারি খেয়ে নিচে পরে যায়।

সব কিছু ঝাপসা হয়ে আসে।

সেই ঝাপসা চোখে তাকিয়ে শুধু একবার আবরারর মুখ দেখতে পায়।

রিয়ার মনে হয় আবরার বোধয় হাত বারিয়ে দিয়েছে। তার পর আর কিছু মনে নেই।

কতোক্ষন পর চোখ খুলেছে মনে নেই চোখ খুলেতেই দেখে রিয়া একটা বেডে শুয়ে আছে সবাই তাকে ঘিরে দাড়িয়ে আছে।

আবরারর কথা মনে পরতেই রিয়া ডুকরে কেদে উঠলো।

তখনই রিয়ার মনে হলো কেউ একজন পাশ থেকে রিয়ার মাথায় হাত রেখেছে।

পাশ ফিরে তাকাতেই রিয়া চমকে গেল।

এ কাকে দেখছে সে?


পর্ব: ১২

আবরারর কথা মনে পরতেই ডুকরে কেদে উঠলো।

তখনই রিয়ার মনে হলো কেউ একজন পাশ থেকে রিয়ার মাথায় হাত রেখেছে।

পাশ ফিরে তাকাতেই রিয়া চমকে গেল।

এ কাকে দেখছে সে?

রিয়া চোখ যেন জলে ভিজে এলো।

রিয়া পাশে আবরার বসে ছিলো কিন্তু রিয়া খেয়ালই করে নি।

রিয়া কোনো কিছু না ভেবেই সোজা আবরারকে জড়িয়ে ধরে।

:তুমি ওমন করলে কেন?

আমি কি এতোটাই খারাপ?

:কি করছো কি সবাই দেখছে তো।

:দেখলে দেখুক তাতে আমার কি।

তুমি খুব খারাপ একে বারে পচা। কথা নেই তোমার সাথে।

এবার সবাই একসাথে হেসে উঠে।

এইবার রিয়া আবরার বেশ লজ্জা পেয়ে যায়।

-চলুন ভাই আমাদের এখানে কোনো দরকার নেই।

-হ্যা চলুন।

সবাই চলে যায় একজন ছাড়া।

মেহেদি এখনো দাড়িয়ে আছে।

আবরার মেহেদির দিকে তাকাতেই মুখ কালো হয়ে যায়।

মেহেদি গম্ভীর মুখে রিয়া কে বলে,

-মিষ্টি কাজটা কিন্তু ঠিক করলি না।

রিয়া মেহেদির দিকে অবাক দৃষ্টুতে তাকিয়ে বলে,

-কোন কাজ?

আবরারর দিকে

-মামা তুমি আমার রোমান্সের বারোটা বাজিয়ে নিজে রোমান্স করছো, হ্যা!

বিয়ে করে বউকে শ্বশুর বাড়িতেই রেখে হাসপাতালে এসেছি বউ আমার কেদে কেদে একসা।

শ্বাশুড়ি আম্মা বলে দিয়েছে কিছুতেই নাকি বউ দেবে না।

আমার কি হবে?

আবরার হা করে মেহেদির কথা শুনছে কথার আগা মাথা কিছুই মাথায় ঠুকছে না।

জিগ্ঞাস্য দৃষ্টিতে রিয়ার দিকে তাকাতেই,

রিয়া খুব জোরে হেসে উঠে।

এবার মেহেদি খুব রেগে গেছে রেগে গিয়ে মেঝেতে পাছড়িয়ে বসে পড়ে।

আবরারর দিকে তাকিয়ে,

:এই আমি বসলাম যতোক্ষন বউ এনে না দিবে আমি উঠবো ও না যাবো না।

এইবার রিয়া মুখ খোলে।

-আসলে বেচারা সাত বছর ধরে প্রেম করছে নিশির সাথে মূলত বিয়ে করতেই দেশে আশা। এতো দিন ফুপ্পু মানছিল না বলে কেউ কিছু করতে পারেনি কিন্তু শেষ মেষ মেনে নিলো, বিয়েটাও হলো। কিন্তু তুমি এমন কান্ড ঘটালে যে উল্লুকটার সাধের ফুলশয্যাটা আর হলো না।

: আমার বউ চাই চাই চাই।

এবার আবরার বেশ লজ্জা পেয়ে গেল না জানি কি না কি ভেবেছে রিয়া আর মেহেদিকে নিয়ে।

:সরি ভাই তবে মন খারাপ করো না। আমি কথা দিচ্ছি নিশি মানে আমার মধ্যম শালিকাকে তোমার কাছে নিয়ে আসার দায়িত্ব আমি নিলাম।

(আসলে নিশি রিয়ার খালাতো বোন একবার রিয়া মেহেদিকে নিয়ি যায় রিয়ার নানি বাড়ি দেখাতে সেখানেই প্রথম দেখা।

আর ঐ যা হয় চোখে চোখে প্রেম একটু একটু করে এই আরকি। যেহেতু মেহেদির মায়ের একমাএ ইচ্ছে রিয়াকে বউ করা। সেহেতু অন্য কাউকে মেনে নেওয়া সম্ভব নয়। অবশেষ রিয়াই ফুপ্পু আম্মুকে রাজি করায়)

তার পর তো সবই জানা।

তখন মেহেদির ফোনটা বেজে উঠে।

বউ ফোন করছে।

:বউ আমার একমাএ বউ ওমন করে না।

:মা বলে দিয়েছে যেই ছেলে বিয়ের দিন বউকে রেখে চলে যায় তার হাতে মেয়ে দিবে মা ডিভোর্স। হুম্ম টাটা বায় বায়।

:নে হি নেহি নে হি সেন্সলেস।

আবরার: কি হলো?

মেহেদি: বউ দিবে না।

রিয়া:…

আবরার:চলো।

রিয়া: কোথায়?

আবরার:একটা প্লান আছে।

মেহেদি আর রিয়া একসাথে

:কি।

আবরার: আগে চলোই তো শালিকার কাছে।

রিয়া আবরার আর মেহেদি একসাথে।

বেরিয়ে যায়।

গাড়ি গিয়ে সোজা নিশিদের বাড়ির সামনে দাড়ায়।

বাড়ি এখনো সুন্দর করে সাজানো।

বাড়ির সামনে গাড়ি দাড় করানো হয়েছে।

আবরার: এইবার আমার শালিকা কে ফোন দাও।

মেহেদি: আমি?

আবরার: তা নয় তো কি আমি, দাও।

মেহেদি: দিয়ে কি বলবো?

আবরার:দিয়ে বলো যে আমরা বড় রাস্তার সামনে দাড়িয়ে আছি তারাতারি চলে আসতে।

মেহেদি ফোন করে বলে দিলো কিন্তু কোনো উত্তর এলো না।

মেহেদি বেশ ছটপট করছে একবার এপাশ তো একবার ওপাশ।

রিয়া আর আবরার তো হেসেই শেষ।

:হাসো হাসো আমার মতো অবস্তা হলে বুঝতে। শেষ মেষ কিনা বিয়ে করা বউ নিয়ে পালাতে হবে কি কোপাল আমার।

বেশ কিছু সময় কেটে গেলো নিশির কোনো খবরই নেই বোধয় বেশ অভিমান করেছে।

পেছন ফিরে তাকাতেই মেহেদি দেখতে পায় লাল শাড়ি পরে একটা মেয়ে ছুটে আসছে।

নিশি এসে গেছে।

মেহেদির খুশি দেখে কে।

নিশি আর মেহেদি কে নিয়ে আবরার রিয়া বাড়ি চলে আসে বেশ জমকালো ব্যবস্থা হচ্ছে।

এবার বিদায়ের পালা।

রিয়ার শ্বশুড় রিয়াকে আর এখানে রাখতে চায় না।

একমাত্র ছেলের বউ বলে কথা।

আবরারও চায় না রিয়াকে দুরে রাখতে।

না চাইতেও রিয়াকে অনেক কষ্ট দিয়েছে আর না।

রিয়ার বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিয়াকে নিয়ে বেরুতে যাবে তখনই আবরারর মা বলে ওঠে।

:দাড়াও রিয়া আমাদের সাথে যাবে না।

শ্বাশুড়ির কথায় সবায় থমকে যায়।

এখনো কি রিয়া আর আবরার এক হতে পারবে না।

কি জানি কি আছে কপালে।


পর্ব: ১৩

রিয়ার বাবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে রিয়াকে নিয়ে বেরুতে যাবে তখনই আবরারর মা বলে ওঠে।

:দাড়াও রিয়া আমাদের সাথে যাবে না।

শ্বাশুড়ির কথায় সবায় থমকে যায়।

রিয়ার মুখটা মুহূর্তেই যেন অন্ধকার হয়ে গেল।

ঝলমলে মুখটা মেঘের আড়ালে লুকিয়ে গেল।

আবরার মনে মনে প্রস্তুতি নিচ্ছে আজও যদি মা রিয়াকে মেনে না নেয় তবে আবরার ও আর যাবে না অনেক হয়েছে আর না।

আবরার রিয়ার হাত শক্ত করে ধরে আছে।

রিয়ার চোখে পানি চলে এসেছে।

রিয়ার শ্বাশুড়ি রিয়া আর আবরারর কাছে এগিয়ে গিয়ে রিয়ার হাত আবরারর হাত থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে।

রিয়াকে আবরার থেকে দূরে সরিয়ে নেয়।

সবার দিকে তাকিয়ে রিয়ার শ্বাশুড়ি আবরারর দিকে প্রশ্ন ছুড়ে মারে।

:কোন পরিচয়ে নিয়ে যাবে ওকে ও বাড়িতে।

সবাই তো অবাক। চোখে তাকিয়ে আছে সত্যিই তো।

:হুট করে ডিভোর্স দেওয়ার সময় মনে ছিলো না।

যেমন কর্ম তেমন ফল।

বেচারা আবরারর মুখ দেখার মতো হয়েছে।

রিয়ার শ্বশুড় বলে ওঠে।

:যেহেতু ডিভোর্স হয়ে গেছে সেহেতু তোর রিয়ার উপর কোনো অধিকার নেই।

তাই রিয়া ঐ বাড়িতে যাবে না।

বেচারা আবরার একবার রিয়ার দিকে তাকাচ্ছে একবার মা আর বাবার দিকে।

নাহ এভাবে হবে না।

লাজ লজ্জার মাথা খেয়ে এবার আবরার বলেই,

: ওঠে তোমাদের কে বলেছে যে আমি রিয়াকে ডিভোর্স দিয়েছি মোটেও না।

রিয়া আমার বিয়ে কার বৌ তাই আমি ওকে নিয়ে যাবো।

আবরার রিয়ার হাত ধরে টেনে নিয়ে যেতে নিলে কোথা থেকে নিশি এসে রিয়ার হাত টেনে ধরে।

:ওম্ম হুম্ম কোথাও যেতে দিবো না।

আবরার চোখ বড় বড় করে।

:দেখো শালিকা এমন করো না আল্লাহ পাপ দিবে।

:জিজু বিয়েতে কিন্তু কিছু দাও নি এবার দিতে হবে।

:যা চাও পাবে আপাততো যেতে দাও।

:তিন সত্যি!

:সত্যি সত্যি সত্যি।

এরপর কোনো কথা না বলেই সোজা রিয়ার হাত ধরে বাড়ি থেকে বেরিয়ে নিয়ে চলে আসে। রিয়ার তো লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। বাড়িতে এতো গুরুজনের সামনে ছি ছি।

আবরার রিয়াকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে রিয়া জানে না।

শুধু এইটুকু জানে সে তার ভালোবাসার মানুষের সাথে নতুন এক অধ্যায় শুরু করতে যাচ্ছে।

আবরারর গাড়ি এসে থামে এক বাড়ির সামনে।

ভেতরটা সম্পূর্ন অন্ধকার রিয়া কৌতুহল নিয়ে আবরারর দিকে তাকায়।

:কি হলো এভাবে দেখছো কেন?

:এটা কি।

:এটা চিড়িয়াখানা কেন দেখতে পাচ্ছ না।

:ধুর কি যে বলো না। এটা তো বাড়ি।

:জ্বী

:কিন্তু কার?

:আমাদের।

:কই আগে তো কখনো আসিনি।

: নিয়ে এলে তো আসবে।

:হুম্ম

:আচ্ছা ভেতরে তো চলো।

:কিন্তু।

আবরার কোনো কথা না বাড়িয়ে সোজা রিয়ারকে কোলে তুলে নেয় তারপর ভেতরে হাটতে থাকে।

অন্ধকাের রিয়া কিছুই দেখতে পাচ্ছে না।

ভয় ও করছে। ভয়ে ভয়ে আবরারকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে চোখ বন্ধ করে বুকের মধ্যে মুখ লুকিয়ে আছে।

আবরার রিয়াকে একটা ঘরে নামিয়ে দিয়ে হাতে একটা প্যাকেট ধরীয়ে দেয়।

:এটা কি?

:নিজেই দেখে নাও।

:এটা তো হুৃম্ম। তারাতারি পরে চলে এসো আমি অপেক্ষা করছি।

প্যাকেটে রিয়ার বিয়ের শাড়ি ছিলো।

রিয়া শাড়িটা পরে বাহিরে বের হতেই দেখে আর একটা বাক্স সেখানে বেশ কিছু গয়না।

আর সাথে আর একটা চিরকুট।

চিরকুটে লেখা।

:এগুলো পড়ে তারাতারি ছাদে চলে এসো।

রিয়াও নতুন বউয়ের মতো সেজেগুজে।

ছাদে চলে এসে দেখে সম্পূর্ন ছাদ যেনো ফুলের বাগান হয়ে গেছে।

সম্পূন ছাদ ফুল দিয়ে সাজানো আর ছাদের ঠিক মাঝখানে একটা খাট সাজানো।

পুরো খাটই ফুল দিয়ে সাজানো এমন মনে হচ্ছে যেনো বিছানাটা ফুলেরই বিছানা।

রিয়া আশেপাশে কোথাও আবরারকে দেখতে পায় না।

রিয়া কিছু না ভেবে সোজা খাটের মাঝবরাবর বসে পরে ঠিক যেমন নতুন বউরা বসে থাকে তেমন করে।

সাথে ইয়া লম্বা ঘোমটা তো আছেই।

একটু পর দড়জা খোলার শব্দে রিয়া নরেচরে বসে।

আবরার এসেছে পরনে ধবধবে সাদা পান্জাবী।

রিয়ার স্বপ্নের রাজপুএ।

রিয়াকে ডেকে আবরার বলে ওঠে।

:এই যে রানীসাহেবা বাসর ঘরে বরকে সালাম করতে হয় জানো না।

রিয়া কিছু না বলে চুপচাপ উঠে গিয়ে সালাম করতে নিলে।

আবরার রিয়াকে বুকে টেনে নেয়।

:রানীসাহেবা তোমার জায়গা আমার মাথায়।

বুঝলা।

:হুম্ম এতোক্ষন কোথায় ছিলা?

:বাবা তোমার তো দেখছি তর সইছে না।

এবার রিয়া আর আবরার দুজনেই ফক করে হেসে দেয়।

আকাশে পূর্ণ চন্দ্র আজ পূর্ণিমা নয় তবুও সব পরিপূর্ন।

পূর্ণতার সাধকে না পেতে চায়।

আবরার রিয়ার কপালে গভীর ভালোবাসার চিহ্ন একে দেয়।

আবরার রিয়াকে কোলে তুলে নেয়।

পরেরটা না হয় অজানায় থাক।

দুই মাস পর।

দেখতে দেখতে দুই মাস কেটে গেছে।

রিয়ার সংসার বেশ ভালোই কাটছে।

লায়লা তো রিতিমতো রিয়ার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে।

আজ সকাল থেকেই লায়লার অবস্তা খুব একটা ভালো না।

লায়লাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।


পর্ব: ১৪

দেখতে দেখতে দুই মাস কেটে গেছে।

রিয়ার সংসার বেশ ভালোই কাটছে।

লায়লা তো রিতিমতো রিয়ার পায়ে ধরে ক্ষমা চেয়েছে।

আজ সকাল থেকেই লায়লার অবস্তা খুব একটা ভালো না।

লায়লাকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

রিয়াও লায়লাকে নিয়ে বেশ চিন্তিত।

অবস্হা খুব খারাপ কি জানি কি হয়।

বাচ্চা বা মা যেকোনো একজনকে বাচাতে হবে।

সিন্ধান্ত নেওয়াটা বেশ কঠিন।

বাচ্চার প্রতি লোভ থাকাটাই রিয়ার জন্য স্বাভাবিক কিন্তু ননদ ও তো ফেলনা নয়।

এদিকে শ্বশুড় শ্বাশুড়িও জমে গেছে মেয়ের এরকম অবস্থা কেই বা মানতে পারে।

বাচাতে পারবেতো আপুকে।

এরকম সময়ে আবরার পাশে নেই একটা ট্রিপ এ গেছে সিলেটে।

খবর পেয়ে ছুটো আসছে।

কিন্তু আবরারর জন্য অপেক্ষা করার মতো সময় নেই।

ফোনেও পাওয়া যাচ্ছে না।

রিয়ার জীবনে আবরারর প্রয়োজনটা হারে হারে টের পাচ্ছে।

প্রায় সন্ধ্যে নাগাত আবরার ছুটে হাসপাতালে।

জানতে পারে ভেতরে অপারেশান শুরু হয়ে গেছে।

বাহিরে বাবা মা বসে আছে মা তো কান্না করেছে।

ছুটকি মায়ের পাশে বসে আছে।

রিয়া বোধয় ভেতরে আছে একটু কথাও বলতে পারবো না।

বেশ কিছুক্ষন পর রিয়া ভেতর থেকে একটা ফুটফুটে মেয়েকে কোলে করে বাহিরে নিয়ে এলো।

ঠিক যেন একটুকরু মেঘ না না।

সাদা ধবধবে তোয়ালে দিয়ে পেচানো।

লাল টুকটুকে ঠোট।

আবরার ভয়ে ভয়ে মেয়েটাকে কোলে নিলো কি মিষ্টি মেয়েটার মুখ ঠিক যেন রিয়ার কার্বন কপি।

লায়লা আপু সেই প্রথম থেকেই বলতো আমার মেয়ে চাই রিয়ার মতো তাই হয়েছে।

সেই নাক সেই ঠোট তবে মুখের আদলটা কিছুটা লায়লার মতো হয়েছে।

কিন্তু আফসোস বোনটা তার মেয়েটাকে একবারের জন্য দেখে যেতে পারলো না।

লায়লা আপু নেই এতে যতোটা কষ্ট হচ্ছে তার থেকে বেশী কষ্ট হচ্ছে ছোট্ট মেয়েটার প্রতি।

আবরারর গাল বেয়ে ফোটায় ফোটায় পানি গড়িয়ে পরছে।

নার্স সব ফর্মালিটি করার জন্য এসেছে এবার মেয়েটার বার্থ কার্ড করতে হবে।

আবরার সবচেয়ে বেশি অবাক হলো তখন যখন নার্স প্রশ্ন করলো মেয়েটির বাবা মায়ের নাম কি?

রিয়া পাশ থেকে উওর দিয়েছিলো।

মা:সানজিদা রিয়া চৌধুরী

বাবা:ইরফান আবরার চৌধুরী

আর ওর নাম হবে পূর্নতা।

সন্তান ছাড়া কোনো দম্পতি কখনো পূর্নতা পায় না।

বৈবাহিক জীবনে একটি সন্তান হলো আল্লাহর দেওয়া সবচেয়ে বড় উপহার যা সবার কপালে থাকে না।

রিয়াও ভেবেছিলো হয়তো তার কপালে মাতৃত্ব নেই কিন্তু নেক মনে আল্লাহর কাছে কিছু চাইলে আল্লাহ কখনো ফেরান রিয়াও চেয়ে ছিল সন্তান সুখ পেয়েও গেছে।
আল্লাহ তাদের পূর্নতা দান করেছে।

লায়লা চলে গেলেও তার অংশ আছে।

আবরার আর রিয়ার জীবনকে আলোময় করতে।

পূর্নতার বয়স এখন পাঁচ বছর।

:মাম্মা তোমার পেট এরক ফোলা ফোলা কেন?

(রিয়ার পেটের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে)

আবরার হেসে বলে,

:মিষ্টু তোমার মাম্মামের পেটে একটা পুচকি বোন আছে।

:না না পাপা আমার ভাই চাই ভাই!

মাম্মাম তুমি আমাকে ভাই দেবে। আমি শুধু একা পাপায়ের মিষ্টি হব আর কেউ না তুমি ভাই দেবে ভাই।

এবার রিয়া আর আবরার হেসে দেয়।

রিয়ার ছেলে হোক বা মেয়ে পূর্নতার সাথে তার কোনো তুলনায় হয় না পূর্নতা যে শুধুই পূর্নতা।

যে তাদের প্রথম বাবা মা হওয়ার সুযোগ দিয়েছে।

পূর্নতা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে মেয়েটা বড্ড হিংসুটে।

আবরার পূর্তার কাছে গিয়ে কোলে তুলে নিয়ে বলে,

:মিষ্টু সোনা তুমি জানো তুমি আমাদের কাছে কতোটা স্পেশাল তোমার সাথে কারো তুলনা হতেই পারে না।

পূর্নতা ও একগাল হেসে দিয়ে পাপাকে আদর দিয়ে দেয় করন এই কথাটা সে অনেকবার শুনেছে।

বাহিরে অনেকেই বলাবলি করে পূর্ন তোর এরা তোর আসল বাবা মা নয়।

কিন্তু পূর্ণ জানে বাবা তো বাবা মায় হয় এর আবার আসল নকল কি আছে।

মন থেকে চাইলে সব পাওয়া যায়।

শুধু ধর্য্য ধরতে হয় আর সৃষ্টিকর্তার কাছে চাইতে হয়।

সমাপ্ত

ফুলশয্যা
লেখিকাঃ তানিয়া

আরো পড়ুন – অবুঝ ভালোবাসার গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *