ভয়ংকর বাসর রাত – তাই চিৎকার করিনি: আমি কিছু বুঝতে পারছি না আর হাত দিয়ে ওকে সরানোর চেষ্টা করি। আর চিৎকার করি হিমেলললল ছাছাড়ড়ড়!
পর্ব ১
আজকে আমার বিয়ের প্রথমদিন, মানে বাসর রাত আসলেই লজ্জা হচ্ছে আবার একটা আআত্মহারা আনন্দ হচ্ছে। কেনই বা হব না ছোটবেলা থেকে আমি হিমেলকে ভালবাসি। ও কি বাসে কি না জানি না। কিন্তু মন বলে ও আমাকে ভালবাসে তাই তো বাবা বিয়ের প্রস্তাব দিতেই ও রাজি হয়েছে।
কত বাসর ঘর দেখেছি কিন্তু আজকে আমার বাসর ঘর যেটা কম ফুল দিয়ে সাজানো সেটাই বেশি ভালো লাগছে।
গোলাপ ফুলের পাপড়ির এলোমেলোভাবে আমার বিছানায় পড়ে থাকা যেন মনে হচ্ছে আমাকেই স্বাগতম করছে বলছে আমাদের লাল রং তোমার গালের লজ্জার আগে কোন রং ই নয়। বিছানার পাশের টেবিলে একটি ফুলদানিতে কিছু রজনীগন্ধার ফুল যেন সারা ঘরে তার সুগন্ধের ছোয়ার ভরিয়ে বলছে আমার এই সুঘ্রাণ যেনো কোন ঘ্রাণই নয় তোমার নববধুর সুঘ্রানের কাছে। জানালার গ্রিল বেয়ে যেনো চাদের আলো ঘরিয়ে বলছে এই রাত তোমার আর তোমার ভালোবাসার মানুষের তাই তো এত আলোকিত। ছোট ননদ আমাকে এই ঘরে রেখে গেছে প্রায় ১ঘন্টা হতে আসল।
কিন্তু হিমেল এখোনো আসে নেই। বরং আমার গায়ের এত ভারি গহনা আর শাড়িতে আমি হাফিয়ে উঠেছি। কিন্তু নিজে খুলতে চাচ্ছি না। আমি চাই সিনেমার মত যখন ভালোবাসার মানুষ পেয়েছি তাহলে সিনেমার মত চাই ও আমার গহনা খুলুক ভাবতেই লজ্জা লাগছে। তখনি পায়ের শব্দ শুনতে পেলাম মে বি হিমেল আসছে। জলদি নিজেত ঘোমটা আবার পড়ে নিলাম। ওর পায়ের শব্দের সাথে যেন বুকের ধুকধুকানি বেড়েই চলেছে। যেই ও রুমে ঢুকল আমি ঘোমটার নিচেই চোখ বন্ধ করে ফেললাম। তখনি হিমেলের কন্ঠ,
- লাবনী।
- জি।
- বালিশ নাও আর বিছানার চাঁদর নাও।
আমি চোখ খুললাম আরেকটু অবাক হলাম। - জ্বি।
- যা বলেছি সেটা কর।
আমি চটজলদি বালিশ আর চাঁদর নিয়ে ওর সামনে গেলাম তখনো ঘোমটা পড়েছিলাম।
- যাও ব্যাল্কুনিতে। ১টা বাজার আগে।
আমি কিছুই ভাবতে পারছি না ও কি বলছে। - জ্বি কি বলছ? হিমেল বুঝছি না।
- আচ্ছা বুঝিয়ে বলছি।
হিমেল এই কথা বলে আমার ঘোমটা উঠিয়ে দিল। - কান খুলে শুন এই বিয়ে আমার অমতে হয়েছে। তোমাকে আমি পছন্দ করি না তাই আমি তোমার সাথে এক ঘরে থাকতে পারব না। বালিশ আর চাঁদর নিয়ে ব্যাল্কুনিতেই ঘুমাও।
ওর কথাগুলো শোনার পর চোখের কাজল যেন অশ্রু হয়ে পড়ছে। কি ভেবেছিলাম কি হয়েছে? তাও সাহস করে আমি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, - কেন হিমেল? অন্য কাউকে পছন্দ কর? হিমেল ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বলল,
- এখনো এখানে দাঁড়িয়ে আছ? বেহাইয়া মেয়ে।
এই কথা বলে হিমেল আমার হাত শক্ত করে ধরে ব্যাল্কুনিতে নিয়ে যাচ্ছে। আমি ওর দিকে উত্তরহীন পথিকের মত ওর দিকে তাকিয়ে আছি। হাতে অনেক কাচের চুরি পড়েছি। ও ছোটবেলায় আমাকে বলত আমার হাতে নাকি কাচের চুড়ি ভালো লাগে। ও এই রকম শক্ত করে ধরেছে যে চুরিগুলো হাত থেকে ভেঙে যাচ্ছে। আর হাত থেকে রক্ত পড়ছে। কিন্তু হিমেলের সেই দিকে কোন নজর নেই। ও আমাকে ব্যাল্কুনিতে রেখে দিয়ে ব্যাল্কুনির দরজা বন্ধ করে দিল।
- এখানেই ঘুমাও। এখন হতে এখানেই ঘুমাবে।
দরজা বন্ধ করে দেয়ার পর আমি মাটিতে বসে পড়লাম। ১মিনিটে সব আশা শেষ কত সপ্ন ছিল ওকে আমার মনের কথা বলব সব শেষ। আমার চিৎকার করে কাদতে ইচ্ছে হচ্ছিল কিন্তু তাও পারি নেই। ব্যাল্কুনির জানালা দিয়ে দেখছি হিমেল বিছানার পাশে পানি খাচ্ছে। হঠাৎ লাইট অফ হয়ে গেল। আমি একটু অবাক হলাম কারন লাইটের সুইচ দরজার পাশে। তাই ও কিভাবে করল।
মনে হয় লোড শেডিং হয়েছে। কিন্তু আমি কি করব? আমার এই কষ্ট কাকে বলব। যেই চাদকে ভেবেছিলাম আমার শুভাকাঙ্ক্ষী আজ তার আলো এই ব্যাল্কুনিতে আমার গায়ে পড়ার পর মনে হচ্ছে ও হাসছে আমাকে দেখে। হাত অনেক কেটে গেছে কিন্তু তাও হিমেলের মনে একটু মায়া হল না। মানুষ পশুপাখির এই অবস্থা দেখে একটু হলেও মায়া করে কিন্তু হিমেলের কি এক্টুও আমার জন্য মায়া হয় নেই। এইসব ভাবছি আর চোখের জলে কাজল ধুয়ে যাচ্ছে এক পর্যায়ে ঘুমিয়ে গেলাম।
হঠাৎ মনে হল কেউ আমার শরীর অবশ করে আমার কানে কানে বলছে,
- হিমেল আমার ওকে কেড়ে নেওয়ায় তোর শাস্তি হল মৃত্যু। আমার গলা চেপে ধরেছে।
আমি সাহস করে চোখ খুলতে চেষ্টা করলাম। কিন্তু পারছিলাম না। তাও সাহস জুটিয়ে চিৎকার করলাম।
- হিমেল বাচাও আমাকে।
এরপর কিছু মনে নেই।
সকালে ঘুম, থেকে উঠে দেখলাম আমি বিছানায় হিমেল পাশে শুয়ে নেই। হিমেল বাথরুম থেকে বের হয়ে বলল, - এখন সবাই আসবে তাই এখানে নিয়ে এসেছি আশা করি এতটুকু বুদ্ধি আছে যে কাউকে কিছু বলবে না।
আমি মাথা নাড়িয়ে – - হুম।
- যাও ফ্রেশ হয়ে নাও।
- আচ্ছা।
যেই বাথরুম এ ঢুকলাম দেখি আমার গলায় কালো দাগ হয়ে গেছে যেনো কেউ আমাকে সত্যি গলা চেপেছে তার মানে কি? কালকে ওইটা সপ্ন ছিল না
এই ভেবেই যেই বেসিনে মুখ ধুতে গেলাম দেখি বেসিনের আয়নায় এক বিকৃতি আকার চেহারা আমি ভয়ে চেচিয়ে উঠলাম।
- মা…গো….
পর্ব ২
আমার চিৎকার শুনে হিমেল দরজায় নক দিলো।
- কি হয়েছে? সকাল সকাল চিৎকার করছ কেন, লাবনী?
আমি দরজার নক খুলে গিয়েই ওকে জড়িয়ে ধরলাম। - হিমেল বেসিনের আয়নায় আমি কিছু একটা দেখেছি খুব ভয়ংকর চেহারা।
হিমেল আমাকে একটানে ওর শরীর থেকে ছুড়ে মারল আর আমি ফ্লোরে পড়ে গেলাম। হাতে খুব ব্যাথা পেয়েছি। আমি ফ্লোরে বসেই ওর দিকে অশ্রুতে টলমল দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলাম
- এটা কিছু না হয়ত নিজের চেহারাই দেখেছ। আর আমাকে জড়িয়ে ধরেছ কেন? নিজেও মরবে আমাকেও মারবে নাকি যতসব। তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করতে আসো।
আমি শুধুই তাকিয়ে ছিলাম।
আমার সপ্ন ওকে বিয়ে করা ছিল ঠিকই কিন্তু এইরকম ব্যবহার ওর থেকে আশা কখনো করি নেই। কাল হাত কেটে গেল আর আজ হাতে ব্যাথা পেলাম। কিন্তু ও কোন মহানুভবতার পরিচয় দেয় নেই। ও কি হিমেল? ছোটবেলায় খেলতে গিয়ে এক কুকুরে ইট লেগেছিল তাকে হিমেল খুব যত্ন করে ওর বাসায় নিয়ে গেছিল যতদিন সেটা ভাল হয় নেই নিজের কাছেই রেখেছিল। আর সে আজ আমার সাথে!
আমি এই কথা বাদ দিয়ে উঠে ফ্রেশ হয়ে নিলাম। বাম হাতটা প্রচুর ব্যাথা করছে কালকে ওই হাতটাই কেটেছে আর আজ! এক্টু পর আমার ননদ রোদেলা এসে আমাকে খাবার টেবিলে নিয়ে গেল। সবাই খেতে বসেছে আর হিমেল নাস্তা করে বাহিরে চলে গিয়েছে। আমিও নাস্তা করলাম আর শাশুড়িকে টেবিল ক্লিয়ার করতে সাহায্য করছি আমি আর রোদেলা।
হঠাৎ রোদেলাকে মা ঘরে পাঠিয়ে দিলেন। আমাকে জিজ্ঞেস করলেন,
- সব ঠিক আছে তো মা?
- জি
- মানে তোমার সাথে হিমেল কোন খারাপ ব্যবহার করে নেই তো?
মায়ের এই কথাটা শুনে চোখ ছলছল করতে লাগল তাও নিজেকে সামলিয়ে বললাম, - না মা।
- আচ্ছা এখন যেয়ে রেস্ট নাও। সন্ধ্যায় বৌভাত এরপর তো আর নিতে পারবে না রেস্ট।
- আচ্ছা মা।
আমি ঘরে গিয়ে দেখি হিমেল ফিরে এসেছে আর ঘুমিয়ে আছে। ওকে ঘুমন্ত অবস্থায় এই প্রথম দেখলাম। একটা বাচ্চা যেন ঘুমিয়ে আছে। কিন্তু ওর যে এত রাগ কেউ এই ঘুমন্ত চেহারাটা দেখলে বিশ্বাস করবে না। কি সুন্দর লাগছে! “
সুর্যের আলো ওর মুখে পরছে আর যেন ওর সৌন্দর্য আরো বাড়িয়ে দিয়েছে ফ্যানের বাতাসে ছোট ছোট চুলের ঢেউয়ের মত খেলা যেন ওকে আরো আকর্ষনীয় করে তুলছে। ওর শররীরের হাল্কা খয়েরী রং এর টি- শার্ট সব মিলিয়ে ও হিরোর মত লাগছে আমার হিরোর মত। নিজেকে সাম্লাতে না পেরে ওর কপালে আলতো করে আমার ঠোটের স্পর্শ দিলাম। ও টের পায় নি।
আসলে আমার কেমন ভাগ্য যেই অধিকার আমার ওর জাগন্ত অবস্থায় আছে সেটা আজ ওর ঘুমন্ত অবস্থায় চোরের মত! কপাল!
আসলে ও দেখতে খুব সুন্দর ওর মায়ের মত হয়েছে নাকি ও। শুনেছি ওর মা নাকি খুব সুন্দর ছিলেন। ওনার মত হিমেল হয়েছে। কিন্তু ওর সৎমা অনেক ভাল। হিমেল আর রোদেলার জন্য নিজে বাচ্চা নেয় নেই পর্যন্ত। হিমেলের মা হিমেলের বাবাকে ছেড়ে নাকি চলে গিয়েছে কিন্তু কেন গিয়েছেন? এইসব ভাবতে ভাবতেই হিমেল ঘুম থেকে উঠে আমার দিকে এক পলক তাকিয়ে বাহিরে চলে গেল। এইদিকে রোদেলা আমার জন্য আপেল কেটে নিয়ে এসেছে।
- ভাবী নাও খাও।
- ধন্যবাদ।
আমি যেই আপেলে কামড় দিলাম মনে হল আমার নিজের দাত আমার আয়ত্তের বাহিরে গিয়ে দাত আমার ঠোটে কামড় দিয়েছে এমন জোড়ে কামড়টা পড়েছে আমি চিৎকার দিয়ে উঠলাম।
আর সাথে রোদেলাও…
- ভাবি, ভাবি তোমার তো ঠোট কেটে গেছে অনেক রক্ত পড়ছে।
আমি ব্যথায় কিছু আর শুনতে পারছিলাম। মা পাশের ঘর থেকে দৌড়ে আসলেন আর আমার ঠোটে মেডিসিন লাগিয়ে দিলেন। মা বললেন,
- নিজের ঠোটে নিজে এতজোড়ে কামড় দেয় কেউ পাগলি কতখানি কেটে গিয়েছে।
আস্তে আস্তে বিকেল হল হিমেল বিকেল বেলা বাড়ি ফিরল। ঘরে ঢুকেই আমার দিকে নজর দিল। একটু তাকিয়ে ছিল হয়ত ঠোটের কেটে যাওয়া দেখল কিন্তু কোন কথা না বলে চলে গেল। আবার
রোদেলা বিকেলে পার্লারে নিয়ে গেল আমাকে সন্ধ্যায় বৌভাত।
পার্লারের মেয়েরা আমাকে যতবার সাজাচ্ছে ততবার সাজ নষ্ট হচ্ছে। পার্লারের মেয়েটি বলল,
- এটা কি হচ্ছে? আগে তো কখনো হয় নেই।
রোদেলাও এদিকে বলল, - এখনো বউ রেডি করেন নেই কেন কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে যাবে।
রোদেলার কথা শুনে আমিও ভয় পেয়ে গেলাম দোয়া দুরুদ পড়া শুরু করলাম।
এরপর ঠিকমত সাজ কম্পলিট হল গাড়িও এসে পড়েছে গাড়িতে বসে আমরা একেবারে বৌভাতের স্থানে গেলাম। যেয়ে অনেকক্ষণ বসে ছিলাম অন্যরা এসে আমার সাথে ছবি তুলছে আর আমি মুর্তি হয়ে ছিলাম। হিমেল আমার কাছে একবারেও আসে নেই দূরে দূরে ছিল গেস্টদের রিসিভ করছিল।
কিছুক্ষন পর আমার বড় বোন আর আমার পরিবার আসলো। আমি তখন আর হিমেলের কথা মনে ছিল না।
আমার বড় বোন আমার কাছে বেস্ট ফ্রেন্ড ওর সাথে সব শেয়ার করি।
সবার আড়ালে আমাকে জিজ্ঞেস করল,
- লাবনী হিমেল কী তোকে ভালোবাসে?
- জানি না আপি।
- এটার মানে কি?
- ও আমার সাথে মে বি রাগ কথা বলে না।
- এটা আবার কেমন কথা?
আচ্ছা শুন আজকে ঘরে গেলে জড়িয়ে ধরে বলবি সরি আই লাভ ইউ দেখবি মন গলে যাবে।
আপুর বুদ্ধিটা আসলে ভালো তাই মনকে ঠিক করলাম এইটাই করব।
কিছুক্ষন পর খাবার খেতে বসলাম আমার পাশে হিমেল বসল।
খেতে যাবার সময় সবাই বলল মানে আপিই কথাটি উঠাল যে,
- নতুন বউ বরকে খাইয়ে দাও আমরা দেখি।
সবাই জোর করতে শুরু করল পরে আমি ওকে চামচ করে পোলা খাইয়ে নিতে গেলাম।
তখনি ও উঠে দাড়াল।
- আচ্ছা, ওয়েট আমি একটু ওয়াশরুম থেকে আসছি।
আমি আপুর দিকে চাইলাম। আপু ব্যাপারটা বুঝে ওর সাথে কথা বলতে ওর পিছন পিছন গেল।
আর এদিকে আমি বর ছাড়া কিভাবে একা খাই তাই বসে সবার খাওয়া দেখছি। মা রোদেলাকে খাইয়ে দিচ্ছে। কিছুক্ষনের মধ্যে আপু এসে আমার কানে কানে বলল,
- শুন লাবনী হিমেল কি মানসিক সমস্যা আছে ওয়াশরুমের বাহিরে একা একা কথা বলছে,
আপুর কথা শুনে আমি রাগ ও আশ্চার্য দুটোই হলাম। - যাও আপু এইটা আবার কেমন কথা।
এই প্রথম আপুর সাথে রাগ হয়েছি আমি।
খাওয়া দাওয়া অনুষ্টান শেষে আমাকে আর হিমেলকে আমাদের বাসায় নিয়ে আসা হল। আমার রুমটাও খুব সুন্দর করে ফুল দিয়ে শাজানো।
হিমেলকে আর আমাকে রুমের ভিতর আমার বান্ধবীরা ধাক্কা দিয়ে ঢুকিয়ে দিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল। হিমেল রাগে ফুলছে চেহারা দেখলেই বুঝা যাচ্ছে।
আমি মিন মিন করে বললাম,
- এই ঘরের সাথে ব্যাল্কুনি নেই কোথাও ঘুমাব?
- নিচে কিন্তু খাটের থেকে দূরে ঘুমাও।
আমিও আর কোন কথা না বাড়িয়ে বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লাম। আর এমনি আজ শরীরটা অসুস্থ। তাই শুতেই ঘুম আসল।
কিন্তু হঠাৎ গভীর রাতে ঘুমটা ভেঙে গেল চোখ খুলতেই দেখি হিমেল যেখানে শুয়ে।
পর্ব ৩
আমি কি করব বুঝতে পারছিলাম না। তাও মনে মনে দোয়াওদুরুদ পড়া শুরু করলাম। আস্তে আস্তে কথা বলার অবস্থায় ফিরে আসছিলাম তখনি চিৎকার করে কান্না, করতে শুরু করলাম। হিমেলের ঘুম ভেঙে গেল। লাইট অন করল।
ওকে জড়িয়ে ধরতে ইচ্ছা করছিল কিন্তু আগেরবারের ঘটনার পর আর সেটা করতে পারলাম না। আমি ফ্লোরে বসে কান্না করতে শুরু করলাম। হিমেল বারবার জিজ্ঞেস করছিল
- রাত্রে কি হয়েছে? কান্না করছো কেন? আরে কথা বল, আজিব মেয়ে। হুর রাত্রে ঘুম ভেঙে এখন কান্না করছে।
হিমেল কটু কথা বলেই যাচ্ছে তাও আমি ফ্লোরে বসে কান্না করছি। চোখ দিয়ে টুপটুপ করে পানি পড়ছে। আর সেই সব কথা মনে পড়ছে। আমি এমনিতেও ভীতু না এমন না কিন্তু ভয় পাই।
কিছুক্ষণ পর দেখলাম আমার দিকে হাত বাড়িয়ে দিয়েছে।
আমি মাথাটা উপরে উঠিয়ে দেখি হিমেল।
- ন্যাকামি রেখে হাতটা ধর।
আমি যেন ওর এই কথা শুনে ওইসব ঘটনা ভুলে গিয়েছি বলে না – ছোট একটা কথা অনেক কিছু।
আমি হাত ধরে দাড়ালাম পরে ও আমার হাত ধরে বিছানায় বসাল ও আমার পাশে বসল।
- কি হয়েছে আমাকে বল? ছোটবেলা হতে চিনি তোমাকে হয়ত মাঝে ১০বছর দেখি নেই তোমার ব্যবহারে চেঞ্জ এসেছে। কিন্তু এতটা আসার কথা না যে এইভাবে কান্না করবে!
আমি ওর দিকে চেয়েছিলাম। এইটাই তো হিমেল যাকে ভালোবাসি যাকে বিয়ে করতে চেয়েছি। আমি মাথা নিচু করে। - ভয় পেয়েছি। অদ্ভুত কিছু একটা ঘটেছে অনুভব করলাম।
ও আমার কথা শুনে অট্টহাসি দিয়ে। - হাহা, হা তুমি ভীতুর ডিম।
- মোটেই না।
- হু হু বুঝেছি তুমি বিছানায় ঘুমাও। আমি নিচে ঘুমাচ্ছি।
- থাক আমি ঘুমাই।
- না যা বলছি তাই হবে।
- এখানেই ঘুমাও। আমি তো আর বাঘ না খেয়ে ফেলব সমস্যা হলে বালিশ দিয়ে নাও মাঝে এমনি আমার অনেক ভয় করছে।
ও আমার কথা শুনে আর কিছু বলল না লাইট অন করে শুয়ে পড়ল। ও ঘুমাচ্ছে আর আমি তাকিয়ে ছিলাম যেন আস্তে আস্তে ওকে আমি জয় করছি। পাস পাল্টাতে গিয়ে হিমেলের ডান হাত আমার হাতে পড়ল আমিও দুই হাত দিয়ে ওর হাত ধরে ঘুমানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু ঘুমাতে যেয়েই ভয়ংকর সপ্ন দেখছি যেন কেউ আমাকে মেরে ফেলছে। তাই আর ঘুমানোর চেষ্টা করলাম না।
সকাল হয়ে গেল আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে মায়ের কাছে গেলাম। বিকেলে হিমেলের বাসায় চলে যাব। তাই মাকে জড়িয়ে ধরে আছি রান্নাঘরে। কিছুক্ষন পর আপু আসল। আমি আপুর উপর রাগ তাই অন্যদিকে ফিরে রইলাম। যেই আপু আমার দিকে আসতে নিল আমি অন্যদিকে যেতে নিলাম আমার চুল বেশ বড় আপু আমার বেনী ধরে ফেরল।
- হুম এখন রাগ করে থাক আগে তো মাসে একবার দেখা হত এখন বছরেও দেখা হবে না।
- হুম করব না। যা,
- আচ্ছা সরি।
- বেনী ছাড়।
- না আগে বল ইটস ওকে পরে না হলে রান্নাঘরের বটি দিয়ে চুল কেটে দিব।
- কি!
- ইটস ওকে তোর সাথে এমনি রাগ করে থাকতে পারি না।
- এখন বিয়ে হয়েছে চুল কেটেই ফেল এত বড় চুল হিমেলকে দেখাবি বলে রেখেছিলি ওতো দেখেছি।
- হুম।
একটু চোখ ফিরাতেই দেখি হিমেল দূরে দাঁড়িয়ে আমাদের কথা শুনছে। আম্মু পরে আমার হাতে চা দিয়ে। - যা জামাইকে দিয়ে আয়।
- হুম।
ঘরে যেতেই চা ওর হাতে দিয়ে রুম থেকে বের হতেই হিমেল মিন মিন করে জানি কি বলল।
আমি শুনলাম না। তাই ওর দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলাম।
- কিছু বলেছ হিমেল।
- তোমার চুল মাশাল্লা অনেক বড় এইভাবেই ভালো লাগে।
ওর কথা শুনে বুঝলাম চুল কাটতে মানা করছে আমার যে কি খুশি লাগছিল। আমি আমার হাসি চাপা দিয়ে, - হুম জানি।
দুপুরে প্রচণ্ড ঝড়, বৃষ্টি শুরু হল। যা অবস্থা আজ আর হিমেলের বাসায় যাওয়া হল না। হিমেল রুমে বসে ফোন টিপছে। আর আমি আম্মু আপুর সাথে গল্প করছি। আম্মু রান্না করার জন্য রান্নাঘরে চলে গেল। আমি আর আপু গল্প করছি আর কাজের খালা ঘর গুচাচ্ছে। তখনি আপুকে সব বললাম কাজের খালাও শুনল।
- লাবনী তুই দেখি বিয়ের পর ভীতু হয়ে গেছিস।
- না আপু আমি সত্যি কিছু একটা অনুভব করি।
- ধুর ভীতু। এইসব কিছু না।
ওই সময়েই খালা বলে উঠল। - আফা এডি কি কোন? এইগুলান তো ভালা লক্ষন না আপনে কোন হুজুররে দেখান।
তখনি আপু এক ধমক। - আরে খালা তুমি আর ওকে ভয় দেখিও না এমনিতেই ভিতু হইছে।
খালার কথা একটু হলেও আমার মনে ঠেলা দিয়েছে আবার পরক্ষন মনে হল কুসংস্কার। এইভাবেই রাত হয়ে গেল। রাতের খাবার খেয়ে দেয়ে আমি আর হিমেল ঘরে চলে আসলাম। আমি বিছানার একপাশে বসা আর অন্য পাশে হিমেল শুয়ে পড়েছে। কিন্তু আমি এক ধ্যানে আয়নার দিকে তাকিয়ে ছিলাম কালকে রাত্রে কথা ভুলতে পারছি না। এদিকে রাত ১২টা বেজে গেছে হিমেল গভীর ঘুম। হঠাৎ কার যেন নুপুর পড়ে হাটছে আমি ভয়ে কুচকে হাটু ভাজ করে বসে পড়লাম। পরে মনে পড়ল আপু নুপুর পড়ে। পরে জানলায় কার ছায়া দেখলাম।
আমি ভয়ে গ্লাস থেকে পানি খেয়ে নিলাম। পরে মনে পড়ল অলস মস্তিষ্ক শয়তানের বাসা। তাই ফোন নিয়ে টিপাটিপি শুরু করলাম। ফেইসবুক ওপেন করে নিউজফিডে গল্প পড়তে লাগলাম। কিছুক্ষন পর মনে হল আমার পিছনে বসে অন্য কেউ আমার সাথে গল্প পড়ছে। আমি এটা অনুভব করতে পারছি তাই পিছনে ফিরে তাকাতেই অদৃশ্য কালো ভয়ংকর কিছু দেখলাম ভয়ে আমি অজ্ঞান হয়েছি নাকি ঘুমিয়ে পড়েছি জানি না। সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হলাম ঘুম চোখেই হিমেল ঘুমাচ্ছে। আমি ঘর থেকে বের হয়ে মায়ের কাছে রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে দেখলাম মা আমার ফেভারিট স্যান্ডুইচ বানাচ্ছে আমার দিকে না তাকিয়ে কথা বলছে আর কাজের খালা মশলা বাটছে তার আমার দিকে খেয়াল নেই। মা জিজ্ঞেস করল,
- মায়োনিজ নেই না দিলে হবে?
- না, না না।
মা আমার কথা শুনেই আমার দিকে ফিরতেই চিৎকার দিল লাবনী!
সাথে কাজের খালাও আমাকে দেখে আফা! এডি কি করছেন চুলের! আমি মাথায় হাত দিয়ে অনুভব করলাম চুল ছোট ছোট লাগছে দৌড় দিয়ে আমার ঘরের ওয়াশরুমে ঢুকলাম। হিমেল আওয়াজে ঘুম থেকে উঠে বসল।
আর ওয়াশ রুমে নক করে জিজ্ঞেস করছে,
- – কি হয়েছে লাবনী?
আমি আয়নায় যেয়ে দেখি আমার চুল বয় কাটিং এর মত ছোট হয়ে গেছে। আর কে জানি চুল কাটেও নেই পুড়িয়ে ফেলেছে। আমি দেখেই কান্না করে দিলাম শখের চুল ছোটবেলা থেকে বড় করেছি। মা আর খালাও পিছনে এসে দরজায় নক করছে। - লাবনী, মা বের হ।
- আফা বাইর হন।
- লাবনী বের হো।
আমি কান্নাকাটি ১ঘন্টা করে বের হলাম ওয়াশ রুম থেকে। কাজের খালা ঘরেই সাথে আপু আর হিমেলেও। আমি বের হয়েই আপুকে জড়িয়ে ধরলাম। - আপু দেখ না আমার চুল।
- কাটছিস কেন তাইলে?
- না কাটি নাই আমি। (রাগে)
- তাহলে কে করছে?
- জানি না তো সকালে উঠে এই অবস্থা।
- ছোট আফা আপনি না কাটলে….
পর্ব ৪
আমি, আপু, খালা, আম্মু সবাই হিমেলের এই কন্ঠ শুনে হতবাক। এটা কে ছিল? সবার মনেই এই প্রশ্ন।
কিছুক্ষণ পর হিমেল বলল,
- আল্লাহ আমাদের মাফ করুক এগুলো করা তো শিরক। তুমি কান্না কর না লাবনী তোমাকে এখনো সুন্দর লাগছে। ইনশাল্লাহ আগের চেয়ে আরো বড় ও ঝলমলে চুল হবে। আচ্ছা, বাসায় যাব যাও রেডি হও।
- হুম আমি রেডি হচ্ছি।
এরপর দুপুরের খাবার দাবার শেষ করে আমি আর হিমেল বাসায় রওনা দিলাম। হিমেলের বাসায় যেতে প্রায় ৩০মিনিট লাগে রাস্তায় খুব বড় জ্যাম পড়ল। আর আমার খুব পানির পিপাশা পেল। তাইকে বললাম,
- আমার পিপাসা পেয়েছে পানি হবে গাড়িতে।
- পানি তো ছিল কিন্তু আমি তো খেয়ে ফেলেছি। আচ্ছা আমি নিয়ে আসছি।
হিমেল এরপর চলে গেল। হিমেল যেতে না যেতেই এক বৃদ্ধা গাড়ির কাচে টোক্কা দিল। আমি তাকে পার্স থেকে ৫০টাকার নোট বেড় করে দিতে যাওয়ার সময় মাথার কাপড় পড়ে গেল। মাথার কাপড় পড়তেই লোকটা আমার চুল দেখে বলল, - মা রে, তোর তো বিপদ।
- জি নানু! কিছু বুঝলাম না।
- তোর চুল কে কেটেছে জানিস কিছু?
আমি হতবাক উনি বুঝলেন কিভাবে আসার সময় আপু আবার সুন্দর করে চুল কেটে দিয়েছে। তাই সত্য না লুকিয়ে বললাম, - না নানু।
- তোর স্বামিকে জিজ্ঞেস করিস। আর সেই ঘরেই জিজ্ঞেস করিস যেখানে নামায আদায় করিস।
পরে হিমেল আসতেই উনি টাকা না নিয়েই চলে গেল। - কে ছিল?
- ভিক্ষুক।
- ওহ। নাও পানি।
- হুম।
এরপর সারা রাস্তায় ওই ভিক্ষুক নানুর কথাই মনে করছিলাম। উনি কিভাবে জানলেন হিমেলদের আলাদা নামাযঘর আছে! হ্যা হিমেলের বাবা মহিলাদের নামাযের জন্য আলাদা রুম রেখেছে।
এরপর বাড়ি পৌছালাম। মা মাইশা আমার চুলের অবস্থা দেখে হতবাক। মাকে দেখলাম আমার এই অবস্থা দেখে চোখ ছলমল করছে। মায়ের কাছে গিয়ে আমি দাড়ালাম।
- মা কেন কান্না করছেন?
- আরে পাগলি কোথাও না তো।
এরপর মা নিজের ঘরে চলে গেল। আমিও হাল ছাড়ার মেয়ে না মায়ের পিছনে ঘরে গেলাম। হিমেল নিজের ঘরে চলে গিয়েছে।
মার ঘরে যেয়ে দেখলাম মা চোখের জল ফেলছে। আমি মায়ের পাশে বসে বসলাম। - মা কি হয়েছে? কান্না কেন করছেন? বউয়ের বড় চুল নেই ভেবে কান্না করছেন? নাকি এখন আমি কুৎসিত হয়ে গিয়েছি কাউকে বলতে পারবেন না আমি আপনার বউ তাই কান্না করছেন?
- একটা মাইর দিব। আমাকে তোমার এমন মনে হয়!
- না, মা। তাহলে বলেন কেন কান্না করছেন? প্লিজ। আপনার ছেলের কথা ভেবেই বলুন,
- কি বলব রে? তুমি তো জানোই আমি হিমেল আর মাইশার সৎ মা। কিন্তু কখনোই ওদের সৎ ভাবি নেই। ওদের কথা ভেবেই বাচ্চা নেওয়ার কথা ভাবি নাই। কিন্তু হিমেলের বয়স যখন ১২তখন আমি বিয়ে করে এই বাসায় আসি এর দুই বছর পর তো তোমাদের এলাকা ছেড়ে এইখানে আসি হিমেলের বাবার বদলির জন্য।
কিন্তু হিমেল কখনো আমাকে মেনে নিতে পারলো না। তোমাদের এলাকা ছেড়ে আসার পর হিমেল জানি কেমন হয়ে গিয়েছিল একা হাসত কান্না করত কারো সাথে কথা বলত না। অনেক ডাক্তার দেখিয়েছি কিন্তু ও ঠিক হয় নাই। শেষে আমার আম্মা আমাকে বুদ্ধি দিল হুজুর দেখানোর। এরপর যা শুনেছি শুধু ভয়ে থাকি কখন ও কি করে ফেলে।
- মানে? মা কি বলেছে?
- আহ অনেক ভয়ংকর কথা। সেটা তোমাকে বিয়ের আগে না জানিয়ে অনেক বড় ভুল করেছি আমি আর হিমেলের বাবা।
- কি মা?
- হুজুর বলেছে ওর সাথে খুব খারাপ শক্তিশালী একটা পরী আছে মানে মেয়ে জ্বিন। সেই হিমেলকে কন্ট্রোল করে
- এসবের মানে কি?
- এর মানে ওই পরী ওকে পছন্দ করে। ওর প্রাপ্ত বয়স্ক হওয়ার পর ওকে নিয়ে যাবে। কত হুজুর দেখিয়েছি কিছু লাভ হয় নাই কিছুদিন পর আবার আসে। হুজুররা বলে হিমেল ওকে পছন্দ করে ওই ওকে ছাড়তে চায় না। যদি ও না চায় তাহলে কিছু সম্ভব না। তাই তো তোমার সাথে ওর বিয়ে দিয়েছি কিন্তু হয়তো ওই পরীই তোমাকে ক্ষতি করার চেষ্টা করছে।
- মা, এগুলো, কি, কি বলেছেন? এটা কি সত্যি?
- হুম রে মা। তুই বল নাহয়! তোর চুল এইরকম আগুনে পোড়ানোর শক্তি বা সাহস কি আর কারো থাকার কথা আর বাসার কেউ জানে না কে করছে!
আমি মায়ের কথা শুনেই দৌড়ে হিমেলের রুমে চলে গেলাম। হিমেল ঘুমিয়ে পড়েছে হয়তো জার্নিতে ও টায়ার্ড। ওর চেহারার দিকে শুধু তাকিয়ে আছি এটাও কি সম্ভব?!
এরপর আমার ওই ভিক্ষুক নানুর কথা টা মনে পড়ছিল। ওনার কথামত কাজ করব।
হিমেল খাটে শুয়ে আছে আর আমি ফ্লোরের এক কোনায় বসে ওর দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি আর মায়ের কথাগুলো ভাবছি।
কিছুক্ষণ পর মাগরিবেত আজান দিল অযু করে নামায পড়ে আসলাম নামাযের রুম থেকে আমার সাথে মায়ের নামায পড়া শেষ। এখন ওই রুমে কেউ নেই। যদি ও না আসে তাহলে কি করব! ? কিভাবে ওকে আনব ভাবছি।
এই সময় হিমেলের কন্ঠ শুনি।
- মাইশা, মাইশা আবার বই কোথায়?
তখনি আমার মাথায় বুদ্ধি আসল ওকে নিয়ে আসার।
আমি মাইশার আগে গেলাম হিমেলের কাছে দেখে মাইশা হিমেলের পিছনে আমি মাইশাকে ইশারা করলাম চলে যাওয়ার। ও বুঝতে পেরে চলে গেল।
- কি ব্যাপার লাবনী তুমি এমন দৌড়াদোড়ি করছো কেন? দৌড় প্রতিযোগিতা চলছে নাকি?
- হ্যা চলছে।
- কিসের?
- তোমাকে পাওয়ার।
- মানে?
- কিছু না জোক করলাম তুমি কি কিছু খুজছ?
- হ্যা আমার গল্প পড়ার একটা বই পাচ্ছি না মাইশার কাছে। ও কোথায়?
- ওহ ওই বই ও তো বাহিরে গেছে যাওয়ার আগে বলে গেছে ওই বই ওই রুমে।
- আচ্ছা।
ও আমার কথা শুনে নামায রুমে চলে গেল। আমিও পিছন পিছন তালা চাবি নিয়ে গেলাম।
ও ঢুকা মাত্র আমি তালা মারলাম রুমে। ও পিছন ফিরে তালা দেখে।
- এটা কি ধরনের অসভ্যতামি?
- একটা কথা জিজ্ঞেস করব উত্তর দিলেই চাবি পাবে নাহলে নয়।
- কি কথা?
- আগে বল উত্তর দিবে।
- আচ্ছা দিব।
- সত্য বলবা কিন্তু।
- আচ্ছা।
- আমার চুল কে কেটেছে?
ও পিছনে ফিরে বলল। - জানি না।
আমি যেয়ে পিছন থেকে জড়িয়ে ধরলাম।
ও আমার হাত ছাড়িয়ে একটা আস্তে ধাক্কা দিল। - মরার সখ জাগছে নাকি?
- হ্যা জাগছে।
আবার জড়িয়ে ধরলাম। ও আবার ধাক্কা দিল।
- যদি উত্তর না দাও আমার কথার তোমাকে কিন্তু একটা কিস দিয়ে দিব।
- ইয়ার্কি পেয়েছ নাকি?
- হ্যা বল।
আমি ওর দিকে পা বাড়াতেই ও বলে উঠল। - তুমি আমাকে টাচ করলে তোমাকে এত শাস্তি দেয়। আর এই কাজ করলে শাইনফা তোমাকে মেরে ফেলবে।
- মানে শাইনফা কে? তোমার গার্লফ্রেন্ড?
- ধরে নাও এমনি।
- আচ্ছা ও তো আর এখানে আসতে পারবে না।
আমি আবার পা বাড়ালাম ও তখনি…
- ও সব জায়গায় আসতে পারবে চাইলে এখানেও।
আমি হাসতে হাসতে বললাম, - কেন? ও কি পরী নাকি।
- হ্যা, হ্যা ও পরী খ্রিষ্টান পরী। সেই আমার ১৪বছর।
পর্ব ৫
আমি হিমেলের কথায় আশ্চার্য না হয় পারলাম না। ও এগুলো কি বলছে?
- এগুলো কি বলছো হিমেল? মাথা ঠিক আছে?
- হুম আছে। কেন? বিশ্বাস হচ্ছে না?
- না বিশ্বাস তো পরের কথা আমি তোমার কথাই বুঝছি না।
- সব কথা সব সময় বলতে হয় না।
- মানে?
- তোমার জানার দরকার নেই।
- প্লিজ প্লিজ হিমেল বল আমি জানতে চাই।
- না।
- যদি ছোটবেলার বন্ধু ভেবে থাক একবার হলেও তাহলে বল…
হিমেল কিছুক্ষন চুপ করে। - আচ্ছা শুন লাবনী। আমি পরী ও মানুষের সন্তান। মাইশাও। কিন্তু ও তা জানে না। আর তুমিও ছোট মাকে বল না।
- মানে কি? তুমি জানো অথচ মাইশা জানে না।
- কারন আমাকে শাইনফা(পরী) বলেছে।
- মানে টা কি? ও তো ভুল বলতে পারে মিথ্যা বলতে পারে।
- আমিও প্রথম তাই ভেবেছিলাম তাই বাবাকে জিজ্ঞেস করি বাবা আমাকে সত্যি কথা বলেছে।
- কি বলেছেন?
- যেভাবে আমার মায়ের সাথে দেখা হল যেভাবে চলে গেল সব।
- আমার জানামতে তোমরা ছোটবেলায় আংকেলের বদলির কারনে এই এলাকায় এসেছ। আর আমাদের এলাকার অনেককেই বলে তোমার আম্মু মারা গেছে। তুমিও তো বলেছিলে তোমার মা মারা গেছে। আবার অনেকেই বলে তোমার মা তোমাদের ছেড়ে চলে গেছে।
- তখন আমি ছোট ছিলাম। বাবা যা বলেছে তাই শুনেছি।
- কিন্তু পরী আমাকে বলার পর আমি সত্যটা জানতে পেরেছি। জানো লাবনী আমি আমার মাকে একবার দেখতে চাই।
হিমেলের চোখ ছলমল করছে। - তোমার মা কোথায়? হিমেল।
- জ্বিনদের দেশে।
- জ্বিনদের দেশ মানে? তাহলে সেখানে গিয়ে দেখে আসো।
- তুমি কিছু বুঝ না লাবনী। বুঝলে এই কথা বলতে না।
- মানে? তোমার মা কেন তোমাদের ছেড়ে চলে গেছে?
- বাবার জন্য।
এই কথা বলার পর মনে হচ্ছিল যেন চোখ দিয়ে হিমেলের রাগে আগুন ঝরছে। সেই সুন্দর চেহার যেন হিমেলের নিমিষেই লাল হয়ে গেছে। - কেন? তোমার বাবা কি করেছে?
- তাড়িয়ে দিয়েছে। পরীর মত বউ থাকতে ওই মহিলাকে বিয়ে করেছে। উনাদের কখনো ক্ষমা করব না।
আমার হিমেলের কথা বিশ্বাস হচ্ছে না। মা কত ভাল আমি তা কিছুদিনেই বুঝেছি। - তোমার মাকে তাড়িয়ে দিয়েছে এই কথা কে বলেছে? বাবা?
- না, উনি একটা মিথ্যাবাদি।
আমাকে পরী বলেছে। শাইনফা বলেছে। - হতে পারে ওই পরী মিথ্যা বলেছে,
- একদম চুপ একটা বাজে কথা ওর সম্পর্কে না।
হিমেলের এইরকম চেহারার অবস্থা হয়েছিল যেন আরেকটা কথা ওই খারাপ পরী সম্পর্কে বললে ও আমাকে মেরে ফেলবে। - হিমেল শোন,
- চাবি দাও লাবনী।
- না আগে উত্তর।
- চাবি দিতে বলছি।
- না
হিমেল আমার কাছে এসে জোড় করে চাবি কেড়ে নিল।
দরজার তালা খুলতে নিল চাবি থেকে। আমি তখনি ওকে জিজ্ঞেস করলাম, - একটা প্রশ্ন উত্তর দিয়ে যাও।
- কি প্রশ্ন?
- তুমি কি ও মেয়ে জ্বিনকে ভালোবাস?
হিমেল ১মিনিটের মত সাইল্যান্ট থেকে বলল, - হ্যা।
ওর ওই ছোট একটা শব্দে আমার দুনিয়ায় যেন ঝড় এসে গেল। আমি ওই ঘরে নিস্তেজ এর মত দাঁড়িয়ে ছিলাম। সব এলোমেলো হয়ে গেল। যদি হিমেল একবার বলত শুধু একবার যে- – “লাবনী আমি তোমাকে ভালোবাসি আমাকে ওর থেকে বাচাও” আমি নিজের জীবন দিয়ে দিতাম কোন কষ্ট ওকে স্পর্শ করতে দিতাম না। কিন্তু ও তাকে ভালোবাসে আমি কি করব? আরো মনে হচ্ছে আমি ওদের মাঝে আসছি। এইসব ভাবতে ভাবতে আমি নামাযের ঘর থেকে বের হয়ে আসলাম।
তখনি কলিং বেল বাজল আমি যেয়ে দরজা খুলে দিতেই দেখি হিমেলের বাবা নামায পড়ে এসেছে। উনাকে দেখে হিমেলের কথা মনে পড়ছে। সত্যি কি হিমেলের মাকে উনি তাড়িয়ে দিয়েছে। আমি উনার চেহারার দিকে তাকিয়ে ছিলাম আর ভাবছি। তখনি বাবা জিজ্ঞেস করলেন,
- কি হয়েছে মা? কিছু বলবে?
- জি না বাবা।
এই বলে আমি হিমেলের ঘরের দিকে যেতে নিলাম। তখনি মনে পড়ল হিমেলের সেই কথা যেন কানে বাজছে যে ওর বাবা ওর মাকে তাড়িয়ে দিয়েছে। আমার কেন জানি এই কথা গুলো জানতে ইচ্ছা করছে। আমার জীবন কেমন জানি একটা গল্পের বই হয়ে গেছে।
আমি বাবার কাছে গেলাম। বাবা ড্রয়িং রুমে বসে টিভি দেখছে। আমি যেয়ে বাবার কাছে দাঁড়িয়ে থাকলাম।
বাবা একটু পর আমার দিকে তাকিয়ে বলল,
- কিছু বলবে?
আমি মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললাম। বাবা টিভিটা অফ করল আর বলল - তাহলে বল..
- বাবা একটা কথা জিজ্ঞেস করতে চাই যদি আপনি অনুমতি দেন নামাযঘরে যেয়ে বলি
- আচ্ছা চল..
আমি একটু আশ্চার্য হলাম বাবা কিভাবে একবার ও জিজ্ঞেস করল না যে কেন নামাযঘরে কেন?
বাবা নামাযঘরের দিকে গেল। মা রান্না করছে আর মাইশা পড়ছে। তাই সহজ এ কারো নজর এদিকে পড়বে না। আমিও বাবার পিছন পিছন নামায ঘরে গেলাম।
- হ্যা এখন বল।
- বাবা একটা কথা জিজ্ঞেস করব সত্যি করে বলবেন, প্লিজ।
- কি? জিজ্ঞেস কর।
- হিমেলের মা কোথায়?
- ও তো রান্নাঘরে রান্না করছে।
- না বাবা ওর আসল মা। আপনি আমাকে সব খুলে বলুন। ওর মা যে মেয়ে জ্বিন ছিল আমি তা জানি।
- আচ্ছা তাহলে শুন। ওর মাকে আমি এক বৃষ্টির রাতে প্রথমে দেখেছি। প্রথম দেখায় কেমন জানি ভালো লাগল। তখন জানতাম না ও যে পরী। প্রায় তখন দেখা হত ওর সাথে কথা বলতাম ভালোবেসে ফেলেছিলাম। তাই একদিন বিয়ের প্রস্তাব দেই। ও রাজি হয়। বিয়ের প্রথম রাতে আমি জানতে পারি ও যে পরী। ও আমাকে সেই রাতেই বলেছিল,
- আমি আপনাকে স্ত্রীর সুখ দিব সন্তান দিব কিন্তু আজীবন আমি আপনার সাথে থাকতে পারব না। আমারা চলে যাওয়ার পর আপনি বিয়ে করবেন আর কখনো ওদের আমার কথা বলবেন না। আর আমাকে খোজার চেষ্টা করবেন না।
আমি ওর সব কথা মেনে নিয়েছিলাম। আমাদের বিয়ের যখন ৭বছর মাইশা ৩বছরের সময় ও চলে যেতে নিল। আমি বাধা দেওয়ার আমার মুখে এই দাগ দেখছ মাথায় কেটে যাওয়ার ও আমাকে আঘাত করে চলে গিয়েছিল। আর বলেছে যদি কখনো রাস্তায় আমাকে দেখতে পায় আর ওকে চিনে কথা বলতে যাই যেই চোখ দিয়ে ওকে দেখব সেই চোখ ভৎস্য করে দিবে।
- এগুলো কি বলছেন বাবা?
হিমেল আমাকে বলল আপনি নাকি তাড়িয়ে দিয়েছেন?
- আমার আল্লাহ সাক্ষী। এই নামাযঘর আমার কাছে অনেক মুল্যবান সেখানে বসে মিথ্যা বলব না।
- কিন্তু হিমেলের সাথে যে পরী আছে তা কি আপনি জানেন?
- হ্যা জানি। ওর ব্যবহারেও বুঝি কিন্তু সেটা ভাল পরী না ওকে সেটা আজো বুঝাতে পারি নেই। ওর মা দুষ্টু পরী ছিল। তাই সংসার না করে পালিয়েছে। ওকে পারলে ওই পরীর হাত থেকে বাচাও মা।
- আল্লাহ সহায়ক হন।
এরপর আমরা সবাই রাত্রের খাবার খেয়ে দেয়ে যে যার রুমে গেলাম।
আমি যথারীতি ব্যাল্কুনিতে চলে গেলাম। কিন্তু একবার ওই পরীর সাথে কথা বলতে চাই। তাই ব্যাল্কুনিতে বিছানা করে আমি হিমেলের কাছে গেলাম। হিমেল দাঁড়িয়ে ফোনে কথা বলছে।
৬ষ্ঠ পর্ব (অন্তিম)
আমি যেন নিজেই খাল কেটে কুমীর এনেছি। অই মেয়ে জ্বিন আমার সামনে বসে আছে। আমি মনে মনে দোয়া দুরুদ পড়ছি। আর ওকে জিজ্ঞেস করছি আমার না জানা সব কথা
- – পরী হিমেলকে কবে প্রথম দেখেছ?
- তোকে কেন বলব?
- না বললে তোমাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য অন্য দোয়া পড়ব।
- আচ্ছা বলছি।
সত্যি বলতে আমি জানতাম না অন্য দোয়া ওকে মিথ্যা বলেছি শুধু জানতাম।
আমি মানুষ আর আমি জ্বিনদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ। এদিকে হিমেল ঘরে ঘুমাচ্ছে। আর আমার বুক ভয়ে ছটফট করছে। কিন্তু মুখে তা দেখাচ্ছি না। এরপর ও আমাকে সব বলতে শুরু করল,
- আমি হিমেলকে প্রথম ওর যখন বয়স ১৫ তখন দেখেছি। প্রথম দেখায় ওকে আমার ভালোলাগে।
- হিমেলেও কি তোমাকে কবে দেখেছে?
- আমি যেদিন রাতে দেখা দেই।
এর মধ্যে আমার গলা শুকিয়ে যাচ্ছে। আমি যদি মনে মনে দোয়া পড়া একবার থামাই ও আমার ক্ষতি করে দিবে। কি করব বুঝতে পারছি না ফজরের ওয়াক্ত হয়ে আসছে। আমার চোখে ঘুম। তাও কোন মতে দোয়া পড়ছি। এদিকে আমাকে ভয় দেখাচ্ছে। আমি তাই বুদ্ধি করলাম ফোন দিয়ে হিমেলের বাবাকে মেসেজ দেই উনি কিছু একটা করতে পারবে। আমি যে পানি খাব এটাও কি করে?! যদি খাই ১মিনিটের জন্য আমার জীবন চলে যেতে পারি।
আমি অন্যমনস্ক হয়ে ফোন টিপছি। কোনদিকে হুশ নেই হিমেল কোথায়, পরী কোথায়, ইত্যাদি। কথায় বলে না বিপদে পড়লে আগে নিজেকে বাচাই ইয়া নাফসী সেই অবস্থায় ছিলাম। মুখে আল্লাহ্র নাম আর হাতে ফোন। যেই সেন্ড এ টাচ করতে যাব কে যেন কাধে হাত দিল আমি লাফ দিয়ে উঠলাম আর হাত থেকে ফোনটা পড়ে গেল।
হিমেলের বাবার কাছে মেসেজটাও পাঠানোর আগেই। পিছনে ফিরে দেখি হিমেল।
আমি হিমেলকে জড়িয়ে ধরে কাদতে শুরু করলাম যেন এটা আমার সবচেয়ে পবিত্র জায়গা এখানেই আমি নিরাপদ। দোয়া দুরুদ পড়াও বন্ধ করে দিলাম।
হিমেল আমার গাল ধরে বলল,
- লাবনী, তুমি দেখতে কি সুন্দর!
আমি ১মিনিটের জন্য নিশ্চুপ এটা কি বলছে?
ওর দুই হাত দিয়ে আমার দুই গাল ধরা আস্তে আস্তে ওর দুইটা হাত আমার গলার কাছে আসল। আর আমি কিছু বুঝার আগে চেপে ধরল। আমি কিছু বুঝতে পারছি না আর হাত দিয়ে ওকে সরানোর চেষ্টা করি। আর চিৎকার করি হিমেলললল ছাছাড়ড়ড়!
এরপর যখনি নি:শ্বাস নিতে পারছি না এপাশ ওপাশ তাকাচ্ছি দেখি হিমেল বিছানায় ঘুমিয়ে আছে। আমি আশ্চার্য হলাম পরে যখন সামনে তাকাই দেখি এটাও হিমেল। এর মানে আমার মুখে দোয়া বন্ধ করার জন্য হিমেলের রুপ নিয়েছে এই খারাপ পরী।
আমার এখন কিছু করার নেই আমার চোখ বন্ধ হয়ে আসছে মনে হচ্ছে আজকেই শেষ দিন আমার জীবনের। যেই চোখে ঘুমের লাইয়ের মত বন্ধ হয়ে আসছে শরীরে শক্তি শেষ হয়ে আসছে। সেই মুহুর্তে দরজার খোলা আওয়াজ পেলাম আর ধপাস করে পড়ে গেলাম মেঝেতে। এরপর যখন চোখ খুলি হিমেলের বাবাকে দেখি। আর সামনে আমাদের পাশের বাড়ির আংকেল। দেখলাম উনি পরীকে বেধে রেখেছে।
শরীরের শক্তি অত্যন্ত কম। মাইশা অনেক কষ্টে আমাকে বিছানায় বালিশ রেখে বসায়।
বাবা বলেন,
- মারে, তোর ম্যাসেজ পেয়ে জলদি উনাকে ডেকে উনি উনি মসজিদের ইমাম আর জ্বীন দের শায়েস্তা করতে পারেন ভাগ্যিস আজকেই বিদেশ থেকে এসেছে পাশের বাড়িতেই থাকেন।
তার মানে ফোন পড়ে যাওয়ার আগে মনে হয় হাতের চাপ লেগে ম্যাসেজ টা গেছিল। আসলেই সব আল্লাহর ইচ্ছা আজ উনার জন্য বেচে আছি। আর খাটের একপ্রান্তে হিমেল ঘুমাচ্ছে আমি আশ্চার্য হয়ে গেলাম এত কিছু হয়ে গেল কিন্তু ও ঘুমাচ্ছে কিভাবে? অনেক কষ্টে কথা বলতে পারছিলাম না তাও বাবাকে জিজ্ঞেস করলাম, - বাবা হিমেললল।
- মা রে ওকে এই শয়তান পরী জানি কি করে রেখেছে উঠছে না।
এরপর হুজুর আংকেল আমার সামনে ওই শাইনফাকে প্রশ্ন করা শুরু করল। আর উনার হাতে কিসের পানি জানি ছিটা দেওয়ায় চিৎকার করে উঠছিল। পরীটা আর সব প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল।
- তোর নাম কি?
- শাইনফা।
- তোর ধর্ম কি?
- খ্রিষ্টান।
- হিমেল ঘুমাচ্ছে কেন?
- আমি ওকে ঘুম পাড়িয়ে রেখেছি।
- ওকে ঘুম থেকে উঠা।
এরপর হিমেলের ঘুম ভাঙল।
হিমেল শাইনফার এইরকম অবস্থা দেখে চিৎকার করে উঠল। - ওকে ছেড়ে দাও।
তারপর আংকেল হিমেলকে ধরে রাখতে বলল তাই বাবা ওকে ধরে রাখল।
আংকেল আবার পরীকে জিজ্ঞেস করল তুই কবে হতে আসিস হিমেলের কাছে কখন আসিস?
- ওর ১৪বছর বয়স থেকে রোজ রাতে আসি ওর সাথে সময় কাটাই। (১৮+ কথা)
- ওর মা সম্পর্কে কি বলেছিস?
এরপর পরীটা বারবার হিমেলের দিকে তাকায় আর কিছু বলে না পরে আংকেল যেই পানি ছিটা দিল বলে উঠল,
- ওকে মিথ্যা বলেছি ওর মা দুষ্টু পরী তাই ওর বাবাকে ছেড়ে চলে গেছে যাকে বলে গাইরান। হিমেল আমাকে ছেড়ে চলে গেলে তাই ওকে বলেছি আমার সাথে শহর গেলে ওর মাকে দেখবে।
পরীর এই কথা শুনে হিমেল রাগে চিৎকার দিয়ে উঠল। - তোকে এত্ত ভালোবাসতো যে তাকে ধোকা দিলি তোর জন্য আমি আব্বুর সাথে কথা বলতাম না। তুই চলে যা আর আসবি না।
তারপর হুজুর বল্ - যেহেতু এখন হিমেল চায় না তাহলে এই পরী ওর সাথে থাকতে পারবে না। কি কি দুয়া পড়ে হুজুর আংকেল শাইনফাকে বলল,
- তোকে ছেড়ে দিচ্ছি যাওয়ার আগে কথা দে হিমেলকে ছেড়ে দিবি।
- হুম।
যেই আংকেল। ছাড়ল সেই পরী বলল, - না হিমেলকে ছাড়ব না আমি আসব আর যদি আসতে পারি লাবনী গলা কেটে নিব। এই বলে গায়েব। সবাই খুব ভয় পেয়ে গেল। এমন কি হুজুর আংকেল যাওয়ার আগে আলাদাভাবে আমাকে বলল
- ও খারাপ পরী। আজ আমি ছিলাম আর কাল থাকব না তোমার ক্ষতি হতে পারে তুমি হিমেল কে ছেড়ে চলে যাও। হিমেল কিন্তু ওই পরীর সাথে মিশে গেছে (১৮+) তাই ওকে যদি না ভুলে বিপদ তোমার হবে।
- না যদি হিমেল যদি আমাকে ভালোবাসে আমার সাথে থাকতে চায় তাহলে ওর জন্য হলে মরব তাও ছাড়তে পারব না আংকেল।
আংকেল আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল আসলে হিমেল লাকি। হিমেল দরজার কনায় দাঁড়িয়ে আমার কথা শুনছিল। এরপর আমার জন্য স্যুপ নিয়ে আসল। আমাকে স্যুপ খাইয়ে দিচ্ছে। - লাবনী।
- হুম।
মনে মনে ভয় করছিল যদি বলে চলে যেতে।
- তুমি তো ইংলিশ সং পছন্দ কর ঠিক না।
- হুম
- তোমার টেইলার সুইফটের অই সংটা কেমন লাগে “You belong with me”
- হুম ভালোই।
- ওই গানের ওই লাইন আজ তোমাকে ডিডিকেট করলাম সাথে আমার জীবন টাও।
হিমেলের কথা শুনে চোখের পানি ঝড়ঝড় করে পড়তে শুরু করল। - স্যুপের বাটিটা পাশে রাখ।
- কেন?
- রাখ।
এরপর রাখল বাটিটা হিমেল যেই বাটিটা রাখল সেই সাথেই ওকে জড়িয়ে ধরলাম। আজ ও ধাক্কা দেয় নেই বরং জড়িয়ে ধরেছে।
এই প্রথম মনে হলো আমার হিমেল কে আমি পেয়েছি।
লেখা – আদিলা সুলতানা
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “ভয়ংকর বাসর রাত” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – রাগী মেয়ে – মিষ্টি প্রেমের ছোট গল্প