অবশেষে তুমি আমি – বাসর রাত রোমান্টিক গল্প: বাসর রাত কতই না অপেক্ষার রাত! সবাই এই ফুলশয্যার রাতের জন্য অপেক্ষায় থাকে। চলুন এরকম একটি রোমান্টিক বাসর রাতের গল্প পড়ি।
বাসর রাত রোমান্টিক গল্প
পর্ব ( ১)
“রুমটা অনেক সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো, বিছানায় বসে চারপাশ’টা ভালো করে দেখছে সারিকা। পলাশের কথা মনে পড়তেই মনটা খারাপ হয়ে যায়।
এ রুম এখন থেকে আমারও, কিন্তু পলাশ এ অধিকার কোনোদিনও দেবে না।
সবকিছু জেনেই এ বাড়িতে আসা।
বাসর সুন্দর করে সাজানো হলেও, বরের ভালোবাসা কোনোদিনও পাওয়া হবে না আমার।
সবকিছু জেনেও কেন এতটা খারাপ লাগছে আমার। মনে হচ্ছে আমি যদি পলাশের সত্যিকারের বউ হতে পারতাম।
পলাশ কে ভালো না লাগার কোনো কারণ নেই। দেখতে অনেক সুন্দর, শান্ত স্বভাবের। কথাগুলোও সুন্দরভাবে গুছিয়ে বলে।
একটাই দোষ হাসতে জানেনা গোমড়ামুখো একটা। জন্ম, মৃত্যু, বিয়ে এই তিন আল্লাহর হাতে, কারও কিছু করার নেই। তাই পলাশ বলার পরও বিয়েটা ভেঙে দিতে পারিনি।
(এখন নিশ্চয়ই আপনাদের জানতে ইচ্ছ করছে বিয়েটা, কেনো? আর কিভাবে হলো?)
একমাস আগে…
“অনেকক্ষণ হলো বাবার সামনে বসে আছি। কি বলবেন বলে ডাকলেন অথচ কিছুই বলছেন না।
আজ কি হলো বাবার! এত চুপচাপ কেন! বাবা তো সবকিছু আমার সাথে শেয়ার করেন তাহলে। বাবার কথা শুনে চোখ তুলে তাকালাম।
- সারিকা এখন আমি তোকে যা বলবো মন দিয়ে শুনবি লজ্জার কিছু নেই। তোর মা বেঁচে থাকলে কথাগুলো সেই বলতো, যেহেতু তোর মা নেই, তাই কথাগুলো আমিই বলছি।
- বাবা তুমিই তো আমার মা, তুমিই তো আমার বাবা। তাহলে এভাবে কেনো বলছো যা বলবে মন দিয়ে শুনব।
- তুই আমার একমাত্র সন্তান, আমি যতটুকু পেরেছি লেখাপড়া শিখিয়ে মানুষ করেছি। আজ তুই বড় হয়েছিস ভালো মন্দ বুঝতে শিখেছিস। বাবা মা যে সবসময় সন্তানের ভালো চায় আশাকরি তা তুই জানিস?
- বাবা আমি না সত্যিই কিছু বুঝতে পারছিনা, তুমি আজ এভাবে কথা বলছো কেন? কি হয়েছে বাবা?
- সিয়াম ছেলেটা ভালো। তোর সাথে অনেক বার বাসায় আসলো দেখলাম।
- বাবা সিয়াম আমার বন্ধু তাই মাঝেমধ্যে আমার খোঁজ নিতে বাসায় আসে।
- শুধুই বন্ধু?
- তুমি কি আমাকে অবিশ্বাস করছো বাবা?
- নারে মা, তোর প্রতি আমার সে বিশ্বাস আছে আমি শুধু জানতে চাইলাম। তুই শুধু আমার মেয়ে না, আমরা তো ভালো বন্ধুও তাই না।
- হুম তাইতো বলছি সিয়াম শুধুই আমার ভালো বন্ধু আর কিছুনা বাবা।
- তাহলে শুন তোর ইয়াসিন আংকেল একটা প্রস্তাব এনেছেন। সবকিছু শুনে আমার খুব ভালো লেগেছে। ছবি দেখেছি ছেলে দেখতে মাশআল্লাহ রাজপুত্রের মতো। লেখাপড়া শেষ করে নিজের বিজনেস দেখাশুনা করছে। বাবা নেই মা আর ছোট দু’টো ভাইবোন আছে।
তোর যদি অমত না থাকে তাহলে ওদেরকে আসতে বলি।
- ( ওহ এই জন্য এত কথা ) বাবা তুমি যা ভলো মনে করো তাই করো।
- বেশ তাহলে কাল উনাদের আসতে বলছি
- আচ্ছা বাবা উনারা তো বড়লোক, তাহলে আমাদের সাথে কেন আত্মিয়তা করতে চাইছেন?
- তো আমার মেয়ে কোনো অংশে কম নাকি। ইয়াসিন তোকে ছোটবেলা থেকে চিনে, খুব আদর করে নিজের মেয়ের মতো। সবদিক থেকে ভালো বলে প্রস্তাবটা এনেছে। উনারাও ভালো ঘরের ভদ্র একটা মেয়ে বউ করে নিতে চান। কোনো বড়লোকের মেয়ে নয়।
- ওহ, বাবা আমি কি এখন যেতে পারি?
- হুম যাও, কাল ওদের আসতে বলবো তৈরী থেকো। ওদের সামনে কোনোরকম দুষ্টুমি করবে না বুঝলে।
- শুনো বাবা আমি দুষ্টমেয়ে না।
- তা আমি ভালো জানি মা।
“আর কিছু না বলে নিজের রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়ায় সারিকা। কোনো হিসেব’ই যেন মিলছে না আজ।
আচ্ছা আমি কি সত্যিই সুন্দরী, নাকি খুব ভাগ্যবতী। উনারা এত বড়লোক হয়ে কেন আমার মত মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়েকে বউ করে নিতে চাইছেন?
হতেও তো পারে তাদের ছেলের মধ্যে কোনো সমস্যা। ধুর কাল ছেলে আসলে ভালো করে দেখে নেব। এখনই তো আর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না, ওসব পরে ভাবা যাবে এখন
ভালো করে একটু ঘুমিয়ে নেই।
“বিকেলে রেডি হয়ে বসে রইলাম আজকের দিনটা আমার কাছে অন্যরকম লাগছে। কিছুটা ভয়, দুশ্চিন্তা সবমিলিয়ে অদ্ভুত এক অনুভুতি হচ্ছে।
ওনাদের সামনে গিয়ে কি, কি করতে হবে।
আল্লাহ জানেন, তবুও যেতে হবে এটাই নাকি নিয়ম।
আন্টি এসে নিয়ে গেলেন ওনাদের সামনে।
সকালেই ইয়াসিন আংকেল আন্টিকে নিয়ে চলে এসেছেন আমাদের বাসায়।
মাথা নিচু করে একটা সোফায় চুপচাপ বসে বড়দের কথা শুনছি। বুঝতে পারলাম ছেলের মা আর বোন এসেছে। তারমানে ছেলে আসেনি তাহলে কি সত্যিই ছেলের মধ্যে সমস্যা আছে।
আল্লাহ এখন আমি কি করে জানবো সত্যিটা।
“হঠাৎ ভদ্রমহিলার কথা শুনে চমকে উঠলাম তাকিয়ে দেখি উনি আমার পাশে এসে বসেছেন।
- তোমার নাম কি মা?
- সারিকা জান্নাত।
- খুব সুন্দর নাম। মেয়ে আমার পছন্দ হয়েছে। সবকিছু যখন জেনেই এসেছি আর কিছুই জিজ্ঞেস করবো না। আপনাদের অমত না থাকলে আমি মেয়েকে আংটি পরাতে চাই।
- না, না আমার কোনো অমত নেই, তবে ছেলে সামনে থাকলে ভালো হতো।
- ভয় পাবেন না আমি ছেলের মত নিয়ে এসেছি। আমার ছেলে এক কথার মানুষ, যেখানে বিয়ে ঠিক করবো সেখানেই বিয়ে করবে বলে দিয়েছে।
- ঠিক আছে আংটি পরিয়ে দিন তাহলে।
- দেখি’তো মা তোমার হাতটা।
“উনি হাতে আনেক দামি একটা আংটি পরিয়ে দিলেন।
- রোদেলা তোমার কি কিছু জিজ্ঞেস করার আছে?
- হুম আমি ভাবির সাথে কথা বলতে চাই মা।
- বেশ তো কথা বলো, সারিকা তুই ওকে রুমে নিয়ে যা।
“ওকে নিয়ে রুমে এসে বসলাম। মেয়েটা হা করে তাকিয়ে আছে আমার খুব লজ্জা করছে।
- এই যে ভাবি আমার নাম তো শুনেছেন, এখন আমি অপরিচিত হলেও, কয়েকদিন পর আপনার একমাত্র ননদ হবো, আমি কিন্তু এখন থেকেই ভাবি ডাকবো।
- ( নিশ্চুপ )
- ভাবি আপনি না সত্যিই অনেক সুন্দর। আমার দাদাভাই ও দেখতে হিরোদের মতো, আপনাদের দুজনকে খুব মানাবে। আচ্ছা ভাবি, আমি কি আপনার নাম্বারটা পেতে পারি? মাঝেমাঝে কথা বলতাম আপনার সাথে, যদি আপনার আপত্তি না থাকে?
- আপত্তির কি আছে।
- তাহলে দিন প্লিজ।
- 01734
- thank you ভাবি। আজ আমার দাদাভাই আসেনি বলে, ভাব্বেন না সে খারাপ। পৃথিবীর সব থেকে ভালো ভাই হচ্ছে আমার দাদাভাই। জরুরি একটা কাজে আটকে যাওয়ায় আসতে পারেনি।
- ( নিশ্চুপ )
- কি হলো কিছুতো বলুন! এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে। একেবারে যখন নিয়ে যাবো, তখন এভাবে চুপ থাকতে দেবনা। মন খারাপ করবেন না। দেখা হয়নি তো কি হয়েছে কথা হবে প্রতিদিন আপনাদের, আমি আছি না।
“বাবার ডাকে আর কিছু না বলে বাইরে আসলাম দুজনেই। বিয়ের তারিখ ঠিক করে উনারা বিদায় নিলেন।
“রাতে ঘুম আসছেনা বিকেলের ঘটে যাওয়া ঘটনা মনে পড়ছে বারবার। হাতের আংটির দিকে চোখ পড়তেই মনে হলো। সত্যিই তাহলে বিয়ে ঠিক গেছে আমার। যার নামে এই আংটি পড়লাম। তার সাথে দেখাও হলোনা, কথাও হলো না।
মানুষ হিসেবে কেমন তাও জানিনা। সুখী হতে পারবো তো আমরা বাবা আজ অনেক খুশি, এত খুশি আগে কখনো হতে দেখিনি। বাবার খুশির জন্য হলেও পৃথিবীর সব কষ্ট দূরে সরিয়ে আমি সুখী হবো।
ফোনের রিংটোন শুনে ঘোর কাটলো সারিকার। ফোন হাতে নিয়ে দেখে অপরিচিত নাম্বার থেকে কল এসেছে,
- হ্যালো
- হ্যালো
- কে বলছেন?
- আপনি কি সারিকা? আমি পলাশ বলছি।
- জ্বি, আপনাকে তো ঠিক চিনলাম না।
- আমি রোদেলার দাদাভাই।
- আ,আ,আপনি।
- আপনার সাথে একবার কথা বলতে চাই?
- জ্বি বলুন।
- আপনি কি কাল একবার দেখা করতে পারবেন?
- জ্বি পারবো, বলুন কোথায় আসতে হবে।
- ধন্যবাদ, ঠিকানা জানিয়ে দেব। ঠিক সময়ে চলে আসবেন প্লিজ, এখন রাখছি।
“আজ আসলেন না, হঠাৎ ফোন দিয়ে দেখা করতে চাইছেন। কি এমন কথা যা ফোনে বলা গেল না। কাল গিয়েই নাহয় শুনবো কি বলেন উনি। দেখাও হবে কথাও হবে।
পর্ব ( ২ )
“রেষ্টুরেন্টে বসে সারিকার জন্য অপেক্ষা করছে পলাশ। 20 মিনিট পর সারিকা আসলো।
ফোন দিতে যাবে, তখনই দেখে একজন তাকে হাতের ইশারায় কাছে ডাকছে।
সারিকা কাছে যেতেই পলাশ অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে। কোনো রকম সাজগুজ ছাড়াই কিউট লাগছে ওকে। ছবির থেকেও বেশি সুন্দর লাগছে। তার মনে হলো সবাই যেমন বলেছিল মেয়েটা সত্যিই অনেক সুন্দরী।
“সারিকাকে বসতে বললো,
- আপনার এতো দেরি হলো কেনো?
- sorry
- it’s okay
- আপনি আমাকে চিনলেন কিভাবে?
- ছবি দেখেছি।
- ওহ আচ্ছা।
- কি খাবেন বলুন?
- শুধু কফি।
- শুধু কফি কেনো?
- বাসায় lunch করে এসেছি শুধু কফি হলে ভালো হয়।
- ok
“কফির অর্ডার দিয়ে পলাশ সারিকার দিকে তাকালো। সারিকা মাথা নিচু করে বসে আছে।
- আমরা কি কথা শুরু করতে পারি?
- জ্বি বলুন ( মাথা উঁচু করে )
- যা বলার জন্য আপনাকে এখানে ডেকেছি। শুনে হয়ত আপনার কাছে আমাকে খারাপই মনে হবে।
- কেনো ( অবাক হয়ে )
- বলছি, আগে বলুন আপনি কি আমার সম্পর্কে সবকিছু জানেন?
- তেমন কিছু না, বাবা যা যা বলেছেন ততটুকু।
- আপনার কি এই বিয়েতে মত আছে?
- বাবার মতই আমার মত।
- আপনি আপনার বাবাকে খুব ভালোবাসেন, তাই নাহ?
- জ্বি আমার বাবাই আমার পৃথিবী।
- আপনার কোনো পছন্দ নেই?
- নিশ্চুপ ( অবাক হয়ে তাকালো )
- কিছু মনে করবেন না, আজকাল তো সবারই থাকে তাই,
- আমার নেই ( এই সব জানার জন্য জরুরী তলব )
- ওহ, আপনি কি জানেন আমার বাবা, মা নেই।
- মানে?
- মানে কাল যিনি আপনার বাসায় গিয়ে আংটি পড়িয়ে এসেছেন তিনি আমার ছোটমা, আই মিন সৎমা।
“সারিকা চুপ করে বসে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে পলাশের দিকে। কি বলবে বুঝতে পারছেনা।
- বুঝতে পারছি আপনি এসব জানেন না, কিন্তু সবকিছু জানা ভালো নয় কি!
আমার ছোট দুটি ভাইবোন আছে রুশান আর রোদেলা। ওদের কে আমি আপন ভাইবোন মানি ওরাও আমাকে ভালোবাসে।
রুশান বিদেশে থেকে লেখাপড়া করছে, রোদেলা এভার কলেজ এ ভর্তি হলো। আপনিতো ও কে দেখেছেন ও আমাকে আপনার নাম্বার দিয়েছে।
সৎমা হলেও ছোটমাই আমার মা। ছোটবেলায় মা মারা যাবার পর থেকে, ছোটমা আমাকে আদর যত্ন দিয়ে মানুষ করেছেন। বাবা মারা যাবার পর বিজনেস আর পরিবার দুটোই এক হাতে সামলেছেন।
আমি পড়ালেখা শেষ করে বিজনেসে, ছোট মাকে সাহায্য করছি বলতে পারেন। ওরা যেমন আমাকে ভালোবাসে আমিও অনেক ভালোবাসি তাদের।
- ধন্যবাদ, সবকিছু বলার জন্য।
- আমার আরও কিছু বলার আছে আপনাকে।
- জ্বি বলুন।
- আপনি এই বিয়েটা ভেঙে দিন।
- মানে কি? আমি কেনো বিয়ে ভাঙবো? আমারতো আপনার পরিবার নিয়ে কোনো প্রবলেম নেই।
- বুঝতে পারছি আপনার এসবে কোনো প্রবলেম নেই। বাট আমি চাইনা এ বিয়ে হোক।
- কেন? আর আপনার যদি মত না থাকে আপনি বিয়েটা ভাঙছেন না কেন?
- আমার পক্ষে বিয়ে ভাঙা সম্ভব নয় বলেই, আমি আপনাকে এখানে ডেকেছি।
- আপনিতো আর মেয়ে নয়, যে জোর করে বিয়ে দিচ্ছে।
- ছেলে হলে বুঝি সবকিছু করা যায়?
- সেটা আমার জানা নেই। তবে বিয়ে ভাঙার মতো ছোট কাজ করতে পারে ছেলেরা। কারণ ছেলেদের মতের যতেষ্ট গুরুত্ব দেয় পরিবার।
- নিশ্চুপ ( ও গড এই মেয়েতো দেখছি সাংঘাতিক, কিভাবে বুঝাবো ওকে)
- কি হয়েছে আপনার?
- কই কিছু হয়নিতো ( চমকে উঠে )
সারিকা : বিয়ে করতে চাইছেন না কেন, পছন্দ হয়নি নাকি অন্য কারণ?
- দেখুন পছন্দ, অপছন্দের ব্যাপার নয়। আমি কোনোদিন বিয়ে করবনা বলেই ঠিক করেছি।
- বাপরে অনেক বড় সিদ্ধান্ত। হালকা হেসে মিন মিন করে।
- হাসছেন কেন?
- কই হাসছি নাতো। কেন কোনোদিন কারও হাসি মুখ দেখবেন না, বলেও ঠিক করেছিলেন নাকি?
- ( আরে এই মেয়েতো খুব চালাক আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছে )
- অনেকক্ষণ হলো এসেছি বাবা টেনশন করবেন। আমাদের এখন উঠা উচিত।
- আমি কি আপনাকে মজা করার জন্য ডেকেছিলাম এখানে।
- sorry বুঝলাম না?
- আপনি কিন্তু খুব চালাক, এতক্ষণ কথা বলে আমি ভালোই বুঝতে পেরেছি এটা।
- আপনি কি আমার কথায় রাগ করেছেন?
- যদি এ বিয়ে হয় তাহলে আমি আপনাকে কোনোদিনও স্ত্রী হিসেবে মেনে নিতে পারবোনা। আমি চাইনা কেউ আমার জন্য সারাজীবন কষ্ট পাক। চাপে পড়ে ছোটমাকে কথা দিয়েছিলাম বিয়ে করবো।
- আমাকে সবকিছু খুলে বলা যায়না? একদিনের জন্য বন্ধু ভেবে না হয়।
- ( কিছুক্ষণ ভেবে )
আমি নীলা নামের একজন কে ভালোবাসতাম। চার বছরের সম্পর্ক ছিলো আমাদের। নীলার সব আবদার আমি হাসি মুখে পূরণ করতাম।
আমার সব স্বপ্ন ছিল নীলাকে ঘিরে। আমার ভালোবাসায় বোধহয় কোনো কমতি ছিলো, নিজের সুখের জন্য আমাকে ছেড়ে যেতে একবারও ভাবেনি সে।
এখন বুঝতে পারি ভালোবাসা বলতে কিছু নেই ওসব শুধুই টাইমপাস। নিজের স্বার্থের জন্য মেয়েরা সব করতে পারে। এখন আমার মনে মেয়েদের প্রতি ঘৃণা ছাড়া আর কিছু নেই।
- সবাই তো আর এক নয়।
- সব মেয়েই একরকম। আমি চাইনা আর কোনো মেয়ে আমার জীবনে আসুক। আমার মন কোনো ব্লাকবোর্ড নয়। কয়েকদিন পর পর একেক জনের নাম লিখবো আর মুছবো।
এখন সবটা আপনার হাতে, এখনও সময় আছে বিয়েটা ভেঙে দিন। যে কোনো অযুহাতে। দয়াকরে আমার অনুরোধটা রাখবেন। সবকিছু জানার পরও যদি আপনি এই বিয়েটা করেন তাহলে আমার সত্যিই কিছু বলার নেই। - ( নিশ্চুপ )
- আপনি সুন্দরী,শিক্ষিতা, সাহসী একজন মেয়ে। অনেক ভালো একজন মানুষ বর হিসেবে আপনার পাশে মানায়। আমাকে বিয়ে করলে কোনোদিনও ভালোবাসা পাবেননা। আশাকরি কথাগুলো ভালো করে ভেবে দেখবেন। চলুন উঠা যাক।
পর্ব ( ৩)
“সারিকা বাড়িতে এসে দেখে তার বাবা কি যেন লিখছেন। মুখ দেখে বুঝতে পারে বাবা আজ খুব খুশি। এ খুশির কারণটা সারিকার অজানা নয়। বাবার পাশে গিয়ে বসে সে,
- কি করছো বাবা?
- একটা হিসেব মিলাচ্ছিরে মা।
- কিসের হিসাব বাবা?
- তুইতো জানিস মা, আমি একটু একটু করে টাকা জমিয়ে ছিলাম তোর বিয়ের জন্য। সেই টাকায় বিয়ের সব খরচ চালিয়ে নিতে চাই। তাই হিসেবটা করে নিচ্ছি।
- বাবা তোমার যা সামর্থ্য আছে সে অনুযায়ী আয়োজন করবে। ওনারা’তো জানেন আমরা ওনাদের মত এত বড়লোক নই।
- নারে মা ওনাদের কোনো চাহিদা নেই। আমি নিজের ইচ্ছেতেই সব আয়োজন করছি।
আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ে। আমি কোনো কমতি রাখতে চাইনা।
- বাবা হাতে এখনও একমাস সময় আছে। এত তাড়াহুড়ো কেন করছো। আমাকে বিদায় করতে পারলেই বুঝি বাঁচ।
- বোকা মেয়ে আজহোক কালহোক বিয়েতো একদিন দিতেই হতো। ভালো ঘরের ভদ্র একটা ছেলে পেয়েছি তাই হাতছাড়া করতে চাইনা। পরিবারের মানুষগুলোও ভালো তুই ওখানে খুব ভালো থাকবি মা, অনেক সুখী হবি।
- বাবা তুমি আজ খুব খুশি তাই না?
- আমার মেয়ের বিয়ে আমি খুশি হবো না।
- আচ্ছা বাবা এই বিয়েটা ভেঙে দিলে তুমি কি খুব কষ্ট পাবে?( মাথা নিচু করে)
- কি বলছিস এসব? বিয়ে ভাঙবে কেন? বিয়ের তারিখ ঠিক হয়ে গেছে। আত্মিয়স্বজন সবাই জেনে গেছেন। অামার অফিসে আজ বলে এসেছি। এখন যদি বিয়েটা ভেঙে দেই সবার কাছে আমি কতটা লজ্জা পাবো তুই জানিস?
- বাবা আমিতো এমনি,
- সারিকা আমি আর কিছু শুনতে চাইনা। তোর মত নিয়ে বিয়ে ঠিক করেছি। খোঁজ নিয়ে দেখেছি ছেলে হিরের টুকরো, কথা দিয়েছি ওদের। এই বিয়ে ভাঙা আর আমার পক্ষে সম্ভব নয় মা। আশাকরি ওদের কাছে আমাকে ছোট করবিনা। আমি জানি আমি কষ্ট পাই এমন কাজ আমার মেয়ে কখনো করবেনা।
- sorry বাবা, আমি এত কিছু না বুঝেই বলে ফেলেছি কথাটা।
- শুন মা, বাবা- মা কি কারও সারাজীবন বেঁচে থাকে? একজন ভালো মানুষের হাতে মেয়ে তুলে দিতে পারলে সব বাবা মা’ই শান্তিতে মরতে পারে।
- বাবা এসব কথা একদম বলবেনা।
- আচ্ছা বলবোনা।
- হুম মনে থাকে যেন। চা খাবে?
- হুম খাওয়া যেতে পারে।
- নিয়ে আসছি।
“রাতের খাওয়া শেষ করে রুমে গিয়ে শুয়ে পড়ে সারিকা। ফোনের রিংটোন শুনে চোখ খুলে দেখে পরিচিত নাম্বার থেকেই কল এসেছে,
- কি ব্যাপার সিয়াম এত রাতে ফোন দিলি যে?
- তোর খোঁজ নেয়ার জন্য। কেমন আছিস তুই?
- খুব একটা ভালো নেই। তুই কেমন আছিস?
- আমি ভালো আছি, কি হয়েছে তোর?
- তেমন কিছুনা, দেখা হলে বলবো।
- তাহলে দেখা কর।
- বাইরে যেতে পারবোনা, তুই বসায় আয়।
- কেন আসতে পারবিনা?
- বাবা মানা করেছেন, আমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাই।
- কি বলছিস কখন হলো? কিছুই’তো জানলাম না।
- বলিনি তাই জানতে পারিসনি।
- কয়েকদিন আগেও তো আমাদের দেখা হলো। কই কিছু বললি নাতো। এতো তাড়াহুড়ো করে বিয়ে, কিছু করেছিস নাকি তুই?
- সিয়াম এ ধরনের ফাজলামো আমার একদম পছন্দ না আমাকে কি বাজে মেয়ে মনে হয় তোর?
- (হে হে হে) আরে না তুইতো লক্ষী একটা মেয়ে, মজা করছি রাগ করছিস কেন।
- এখন কথা বলতে ভালো লাগছেনা, বাসায় আসিস সবকিছু বলবো।
- হুম বুঝতে পারছি সখী।
- কি বুঝেছিস শুনি?
- এখন’তো শুধু একজনের সাথেই কথা বলতে ভালো লাগে, আমাদের সাথে না।
- কচু বুঝেছিস তুই, একটু বেশিই বুঝিস। এবার ফোন রাখ আমি ঘুমাবো।
- ঠিক আছে রাখছি কাল দেখা হবে।
- হুমম
“বিয়ে না ছাই এ কেমন পরীক্ষায় পড়লাম আমি। বুঝতেই পারছিনা কি করা উচিত। বাবার কথা রাখবো নাকি পলাশের কথা। কোন কাজটা ঠিক হবে, বিয়ে করা নাকি ভেঙে দেয়া।
মেয়েদের ঘৃণা করে বলে বিয়ে করতে চাইছেনা। আর তো কোনো প্রবলেম নেই। ছেলে হিসেবেও সবদিক থেকেই ভালো। বাবা’তো এই বিয়ে নিয়ে অনেক খুশি। বাবার এ খুশি আমি কিভাবে নষ্ট করবো। আমি কি পারবোনা, পলাশের মন থেকে ভুল ধারণা দূর করতে। ওকে বলবো ওর অতীত নিয়ে আমার কোনো প্রবলেম নেই।
কাছে গিয়ে একটু একটু করে বুঝাব সব মেয়ে একরকম নয়। নতুন করে নিজের জায়গা তৈরী করবো। একসাথে থাকতে থাকতে হয়তো পলাশ ও একদিন অতীত ভুলে নিজেকে পাল্টাবে। বাবা আর পলাশের মধ্যে যে কোনোও একজনের কথা আমাকে রাখতে হবে। ভালো করে ভেবে নিজের মন যা বলবে আমি সেই সিদ্ধান্ত নেবো।
ফোন বাঝার শব্দ শুনে ঘোর কাটলো সারিকার।
আবার কে ফোন দিল,
- হ্যালো
- হ্যালো
- কে বলছেন?
- আমি পলাশ বলছি।
- ওহ,
- কথা বলা যাবে দু’মিনিট?
- জ্বি বলুন
- কেমন আছেন?
- ভালো আছি।
“আর কিছু না বলে পলাশ চুপ করে আছে।
- আর কিছু বলবেন?
- হুমম
- তাহলে বলুন
- না মানে, আপনার বাবার সাথে কথা হয়েছে?
- কি কথা?
- কেন আমাদের বিয়ে নিয়ে।
- দেখুন বিষয়টা যখন আমার উপর ছেড়ে দিয়েছেন। তখন আমাকে ভালোভাবে ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে দিন।
- বিয়ের তারিখ তো ঠিক হয়ে গেছে। পরে যদি কথা বলার সুযোগ না পান।
- আপনাকে এ নিয়ে ভাবতে হবেনা। আপনার যা বলার আপনি বলে দিয়েছেন। এখন আমি বুঝে নিব আমার কি করা উচিত।
- আপনি কি আমার কথায় রাগ করেছেন?
- কই নাতো।
- যাই করেন, আশাকরি নিজের ভালোটা বুঝে সঠিক সিদ্ধান্ত নিবেন।
- সব সময় নিজের ভালো বুঝলেই হয়না। অনেক সময় অন্যর খুশির মূল্যায়নও করতে হয়।
- মানে?
- কিছুনা রাত অনেক হয়েছে। আমি ঘুমাবো আপনিও ঘুমান পরে কথা হবে।
- ok bye
পর্ব (৪)
“সারিকা জানে পলাশ এ বিয়ে ভাঙবেনা। মাকে দেয়া কথা রাখতে। নিজের ইচ্ছের বিরুদ্ধে গিয়েও বিয়ে করবে সারিকাকে। সারিকাও চায় এ বিয়ে হোক। সে ও তার বাবাকে কথা দিয়েছে, সে কথা তাকে রাখতেই হবে। সারিকা চায় না তার জন্য তার বাবা কারও কাছে ছোট হোক। তার উপর বাবার অনেক বিশ্বাস, সে বিশ্বাস তাকে রাখতেই হবে।
কথা না রাখার জন্য পলাশ হয়তো তাকে ঘৃণা করবে। তাতে কি সময়ের সাথে সাথে সব ঠিক হয়ে যাবে। এজন্য পলাশ তাকে যত কষ্ট দিবে সব কষ্ট সে হাসিমুখে মেনে নেবে। সবকিছু ভেবেই বিয়েটা করবে বলে ঠিক করে সারিকা।
“আস্তে আস্তে বিয়ের দিন চলে আসে। আর কোনো বাধা ছাড়াই বিয়ে হয়ে যায় পলাশ সারিকার। পলাশ অনেকবার চেষ্টা করেছে সারিকাকে দিয়ে বিয়ে ভাঙানোর। কোনো কাজ হয়নি। ফোন দিলে অল্প কথা বলে নানা অজুহাতে ফোন রেখে দেয় সারিকা। মনের মধ্যে আশা থাকে একদিন পলাশের মন জয় করে ভালোবাসা আদায় করে নিবে। সারিকা জানেনা পলাশের মনে কোনোদিনও জায়গা পাবে কি না।
হয়তো কোনো একদিন পলাশ তাকে ভালোবেসে আপন করে নিবে। সে দিনের অপেক্ষায় সংসার করে যাবে সে।
“বাসর ঘরে পলাশের জন্য অপেক্ষা করছে আর ভাবছে। হঠাৎ কারও রুমে আসার শব্দ পেয়ে মুখ তুলে তাকালো। পলাশ কিছু না বলেই ফ্রেশ হতে চলে যায়। ফ্রেশ হয়ে সারিকার পাশে এসে বসে।
চেহারা দেখে বুঝতে পারছে পলাশ রেগে আছে।
- তুমি এ কাজটা কেন করলে সারিকা?
- কি করেছি আমি ( কিছুটা ভয় পেয়ে )
- সত্যিই বুঝতে পারছোনা? কি করেছ? নাকি না বুঝার অভিনয় করছো?
- কি বলছেন এসব?
- তোমাকে সবকিছু বলার পরও কেন বিয়েটা ভাঙলেনা? তুমি চেয়েছিলে এই বিয়ে হোক তাই না? তাইতো আমি ফোন দিলে নানা বাহানায় ফোন রেখে দিতে?
- বুঝতে পেরেছিলেন যখন, আপনি ভাঙেননি কেন?
- হ্যা আমিই ভাঙতাম যদি ছোটমাকে কথা না দিতাম। ছোটমা আমার কাছে কখনই কিছু চাননি তাই আমিও এত কিছু না ভেবেই কথা দিই। ঠিক করেছিলাম তোমাকে দিয়েই কিছু করব। আর তুমি কি করলে।
- আমিও আমার বাবাকে কথা দিয়েছিলাম। বাবা যেখানে বিয়ে দিবেন আমি সেখানেই বিয়ে করব। আমি কি বলতাম বাবাকে? আপনি একটা মেয়েকে ভালোবাসতেন, বিয়ে হলে আমাকে কখনো ভালোবাসতে পারবেনা এসব?
- আমাকে জানাতে পারতে, তুমি কিছু করতে পারবেনা।
- (নিশ্চুপ) (মাথা নিচু করে নিচের দিকে তাকিয়ে আছে )
- বেশ সবকিছু জেনেশুনে যখন বিয়েটা করেছ।
আমি আর কিছু বলবোনা। তুমি তোমার মতো করে থাকবে। আমার কাছে কখনো কিছু আশা করবেনা,মনে থাকে যেন।
- হুমম থাকবে ( গোমড়ামুখো রাক্ষস একটা )
- মনে মনে গালি দেয়া শেষ হলে জায়গা দাও ঘুমাব। আমার খুব টায়ার্ড লাগছে।
- মিনমিন করে ( এইরে মনের কথাও শুনে ফেলে রাক্ষসটা, সারিকা সাবধান সামনে গালি দেয়া যাবেনা )
- এই যে কি বলছি শুনতে পাচ্ছোনা?
- বলুন কি বলছিলেন।
- আমি ঘুমাবো জায়গা দাও। ( রেগে গিয়ে )
- আমি কোথায় ঘুমাব? ( সরে গিয়ে )
- কেন বিছানায় না হলে সোফায়, আর না হলে অন্য রুমে। পুরোটা তোমার ইচ্ছে।
“পলাশ আর কিছু না বলে শুয়ে পড়ে। সারিকা ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমে চলে যায়। মুখের মেকআপ তুলে বিয়ের শাড়ি পাল্টে নেয়। আয়নার সামনে বসে চিরুনি করছে আর ভাবছে,
“আজ পলাশ যতটা রাগ করবে ভেবেছিলাম, ততটা রাগ করেনি। তারমানে আমাদের বিয়েটা মন থেকে মেনে না নিলেও স্বাভাবিক ভাবেই নিয়েছে। তাইতো বিছানায় তার পাশে জায়গাও দিয়েছে। পলাশের কি দোষ তার জীবনে আসা প্রথম নারী নীলা। যে তাকে কষ্ট দিয়ে চলে গেছে অন্য কারও হাত ধরে।
নীলার কাছ থেকে পাওয়া কষ্টে। মেয়েদের প্রতি ঘৃণা মনে জমতে জমতে, কিভাবে ভালোবাসতে হয় পলাশ আজ তা ভুলে গেছে। ও আমায় যতই অবহেলা করুক। আমি ওর কাছে থেকে একটু একটু করে ওর মন থেকে সব কষ্ট দূর করে দেব।
ওকে বুঝিয়ে দেব ভালোবাসায় শুধু কষ্ট নয়, সত্যিকারের ভালোবাসায় আছে সুখ আর সুখ। সারাজীবন পাশে থেকে গোমড়ামুখোর সব দুঃখ- কষ্ট ভাগ করে নেব। দেখে নিও খুব ভালোবাসবো তোমায়।
এখন দিক না একটু কষ্ট বর’টা তো আমারই। এতক্ষণ ভাবনার জগতে ডুবে থাকায় বুঝতে পারেনি, তার খুব ক্ষিদে পেয়েছে। ইশশ কিছু খেতে পারলে ভালো হতো। দিনে ভালো করে খাওয়া হয়নি। এত রাতে খাবার কোথায় পাবো? ধুর ঘুমিয়ে পড়ি সকালে না হয় খাবো।
“সারিকা উঠে বিছানায় পলাশের পাশে শুয়ে পড়ে।
“সকালে ঘুম থেকে উঠে চোখ খুলে পলাশ দেখে। সারিকা আয়নার সামনে বসে চিরুনি করছে। ভেজা চুলে কালো শাড়ীতে সারিকাকে অপরূপ লাগছে। ইচ্ছে করছে পেছন থেকে সারিকার কোমরটা আলতো করে জরিয়ে ধরে, ভেজা চুলে নাক ডুবিয়ে দিতে। এই মুহূর্তে খুব ইচ্ছে করছে সারিকাকে আপন করে নিতে।
‘এসব কি ভাবছি আমি’তো নতুন করে কারো মায়ায় নিজেকে জড়াতে চাইনা।
“পলাশকে এভাবে তার দিকে হা করে তাকিয়ে থাকতে দেখে সারিকা জিজ্ঞেস করে,
- কি ব্যাপার? এভাবে হা করে তাকিয়ে কি দেখছেন?
- কি,কি, কিছুনা ( তুতলিয়ে )
- সত্যি তো।
- মিথ্যা বলবো কেন?
- তাহলে যান ফ্রেশ হয়ে আসুন, আমার খুব ক্ষিদে পেয়েছে।
- তো আমি কি করব? তুমি যাও গিয়ে খেয়ে নাও।
- না এক সাথে যাব। রাত থেকে ক্ষুদার জ্বালায় মরছি, আপনিতো নাক ডেকে ভালোই ঘুম দিয়েছেন।
- ও হ্যালো, আমি নাক ডাকিনা ওকে। ক্ষিদে পেলে খাওনি কেন?
- নতুন বাড়িতে এত রাতে আমি খাবার কোথায় পাবো? দিনে লজ্জায় খেতে পারিনি, তাই ক্ষিদে পেয়েছিল।
- হুম বুঝলাম, বিয়ের পর নতুন নতুন লজ্জা পেয়ে কম খাওয়া ভালো। (হালকা হেসে )
- আপনার ও’তো বিয়ে হয়েছে, আপনারও কম খাওয়া উচিত।
- কেন?
- কেন আবার লজ্জায়।
- ছেলেদের লজ্জা থাকেনা।
- ও আচ্ছা, ছেলেরা তাহলে নির্লজ্জ?
- কি বললে?
- বললাম তাড়াতাড়ি ফ্রেশ হয়ে আসুন।
“কিছুটা রেগে আর কিছু না বলে, ফ্রেশ হতে চলে যায় পলাশ।
‘রাগ করে লাভ নেই মিস্টার পলাশ মাহমুদ। এখন থেকে ঘুম থেকে উঠে, না চাইলেও প্রতিদিন আমার মুখটা আপনাকে দেখতে হবে। আমার সাথে কথা বলতে হবে, আমার সাথে থাকতে হবে। মাঝেমাঝে আমার কথাও আপনাকে শুনতে হবে, এখন যেমন শুনলেন।
“মনে মনে কথাগুলো বলছে, আর মিটি মিটি হাসছে সারিকা। কারও ডাকার শব্দ শুনে দরজার দিকে তাকায়,
- আসতে পারি?
- হুমম এসো।
- বাহ্ কালো শাড়ীতে আমার ভাবিকে তো ধারুন লাগছে।
- নিশ্চুপ (লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে সারিকা )
- দাদাভাই আজ চোখ ফেরাতে পারবেনা। মাথা ঘুরে পড়ে যাবে। এত সুন্দরী বউ থাকলে কি কারও মাথা ঠিক থাকে।
“সারিকা লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে।
- হয়েছে আর লজ্জা পেতে হবেনা, খাবার টেবিলে বসে মা সবার জন্য অপেক্ষা করছেন। চলো আমরা যাই।
- তোমার দাদাভাই?
- আরে বাহ্ একদিনেই এত ভালোবাসা। দাদাভাই তো খুব ভাগ্যবান।
- কি বলছো এসব, তুমি সত্যিই খুব দুষ্ট।
- দুষ্টুমির কি দেখলে, দুষ্টুমিতো এখনও শুরুই করিনি।
- তুমি যাও আমি আসছি। ( মাথ নিচু করে )
- ঠিক আছে মাকে গিয়ে বলছি, ভাইয়া- ভাবির রোমান্স শেষ হলে, তারা ব্রেকফাস্ট করতে আসবে।
- এই না না, আমি আসছি। ( হাত ধরে )
- ( হি হি হি ) তাহলে চলুন।
- হুমম চলো (কি ফাজিল মেয়েরে বাবা)
পর্ব ( ৫)
“পলাশ নিচে এসে দেখে খাবার টেবিলে বসে সবাই তার জন্য অপেক্ষা করছে। পলাশ চেয়ার টেনে বসে, সামনের চেয়ারে বসা সারিকার দিকে তাকায়। খাবার সময় কেন বার বার, সারিকার দিকে চোখ যাচ্ছে বুঝতে পারছেনা সে। পলাশকে ঘন ঘন তাকাতে দেখে রোদেলা বলে,
- দাদাভাই আগে খেয়ে নাও, তারপর নাহয় দু’চোখ ভরে ভাবিকে দেখবে।
- কি বললি? ( রাগি চোখে তাকিয়ে )
- বললাম কাল রাত থেকেই তো ভাবিকে দেখছো। তারপরও খাবার সময় হা করে তাকিয়ে আছো, নজর লেগে যাবে’তো।
“রোদেলার কথা শুনে পলাশের গলায় খাবার আটকে যায়। তাড়াতাড়ি পানি এগিয়ে দেয় সারিকা।
- রোদেলা কি হচ্ছে এসব? বড় ভাইয়ের সাথে কেউ এভাবে কথা বলে।
- মা আমি’তো সত্যি’টা বলেছি দাদাভাই”তো,
- চুপ করো তুমি। পলাশ তুমি এদিক’টা একটু দেখো, আমাকে একবার অফিসে যেতে হবে।
- একা যাবে কেনো? আমিও আসছি তোমার সাথে।
- না, না তুমি বাসায় থাকো, আমি যাবো আর আসবো। মেহমানরা আসার আগেই চলে আসবো। রোদেলা সারিকাকে রেডি করার দ্বায়িত্ব তোমার।
- No problem আমি ভাবিকে সুন্দর করে সাজিয়ে দেব। দাদাভাই দু’চোখ ভরে দেখবে।
- ছোট’মা দেখছো?
- রোদেলা আবার।
- sorry মা
- সারিকা কোনো কিছুর প্রয়োজন হলে আমাদের বলবে, লজ্জা পাবেনা। এখন থেকে এটা তোমারও বাড়ি। আজ থেকে তুমি এই পরিবারের একজন সদস্য। রোদেলার মতো তুমিও আমার আর একটা মেয়ে, তুমি আমাকে মা বলে ডাকবে।
- জ্বি মা, আপনি যা বলবেন।
- পলাশ তুমি এ’দিকটা একটু সামলে নিও, আমি আসার আগ পর্যন্ত।
- বাসা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবেনা মা তুমি তাড়াতাড়ি এসো।
- ঠিক আছে। বাই দ্যা ওয়ে তোমার সব বন্ধুদের দাওয়াত করেছিলে’তো?
- হুমম করেছি।
- ok তোমার কি কোনো কারণে মন খারাপ পলাশ?
- কই না’তো।
- তাহলে মুখটা এত শুকনো লাগছে কেন? বড় হয়েছ নতুন বিয়ে করেছ এবার’তো একটু হাসতে শিখো বাবা।
- মা আর ভাবতে হবেনা, দাদাভাই’কে সবকিছু শিখানোর মানুষ এ’বাড়িতে চলে এসেছে।
- চুপ করবি তুই
- ( হা হা হা ) এটা রোদেলা ঠিক বলেছে। সারিকা আমার ছেলেটা একটু বেশিই লাজুক। আজ থেকে ওর সব দ্বায়িত্ব তোমার। সবকিছু ভালো করে শিখিয়ে- পড়িয়ে নেবে।
“সারিকা মিষ্টি হেসে মাথা নিচু করে নেয়।
- ঠিক আছে তোমরা খাওয়া শেষ করো আমি আসছি।
“আর কিছু না বলে খাওয়া শেষ করে যে যার রুমে চলে যায়। সারিকা রুমে এসে দেখে পলাশ ল্যাপটপ নিয়ে কি যেন করছে। নিজের কাপড়গুলো আলমারিতে গুছিয়ে রাখতে যায় সে। পলাশ তাকিয়ে দেখে তার আলমারিতে কাপড় রাখছে সারিকা।
- এই যে কি হচ্ছে এসব? ( কাছে এসে দাঁড়িয়ে )
- কাপড় গুছিয়ে রাখছি। ( ঘুরে দাঁড়িয়ে )
- তা”তো দেখতেই পাচ্ছি। বাট আমার আলমারিতে কেন সেটা’ই জানতে চাইছি।
- তাহলে আর কোথায় রাখবো?
- আমি কি জানি, যেখানে ইচ্ছা সেখানে রাখো শুধু আমার এখানে ছাড়া।
- তাহলে এখানেই রাখবো।
- কেন?
- আমার ইচ্ছে তাই। বললেন না যেখানে ইচ্ছা সেখানে রাখতে।
- ( ও গড এই মেয়েতো রোদেলার থেকেও ফাজিল ) শুনো আমার এখানে জায়গা পাবেনা, রোদেলার রুমে নিয়ে যাও।
- কি বললেন থাকবো এই রুমে আর কাপড় রাখবো রোদেলার রুমে। আপনার মাথা ঠিক আছে’তো?
- আমার মাথা ঠিকই আছে। শুধু কাপড় নয় তুমি নিজেও চাইলে রোদেলার রুমে গিয়ে থাকতে পারো।
- জ্বি না আমি এই রুমে থাকবো, আমার কাপড়ও এই রুমে’ই থাকবে বুঝলেন।
- সবকিছুতে জেদ ধরো কেনো তুমি। এটা আমার রুম সো আমি যা চাই তাই হবে।
- এটা এখন থেকে আমারও রুম। একটু হলেও আমারও অধিকার আছে এ রুমে।
- কে দিল তোমাকে অধিকার?
- মা দিয়েছেন, শুনতে পাননি মা সকালে কি বললেন।
- কি বলেছেন?
- বলেছেন এখন থেকে আমি এই পরিবারের একজন সদস্য। এটা আমারও বাড়ি। আর এই রুমটা আমার বরের, এই রুমে আমার সম্পূর্ণ অধিকার আছে। শুধু রুমে কেন আস্তে, আস্তে বরের উপরও অধিকার হবে। এই লাজুক গোমড়ামুখো বর’টা যে আমার’ই।
“শেষের কথাগুলো পলাশের কানের কাছে মুখ নিয়ে, মিষ্টি হেসে ফিসফিসিয়ে বলে সারিকা ৷
পলাশ লজ্জা পেয়ে বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়।
‘কি বলল ও এসব? তার কথাগুলো শুনে রাগ না ওঠে আমার ভালো লাগছে কেন? সারিকাকে দেখলে ওর কাছে কেনো যেতে ইচ্ছে করে? কাল থেকে আমার চোখ শুধু সারিকাকে কেন খুঁজে?
আমি কি সারিকার প্রেমে পড়ে গেছি? প্রেমে পড়লে সমস্যা কি বউটা”তো আমারি৷
না, না সারিকাও যদি নীলার মত আমাকে ছেড়ে চলে যায়। তখন আমি কিভাবে থাকবো।
“হঠাৎ রুমে সারিকার চিৎকার শুনে দৌড়ে যায় পলাশ।
কাছে গিয়ে দেখে সারিকা হাত দিয়ে চোখ ধরে, দেয়ালে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে,,
- কি হয়েছে সারিকা? ( কাছে গিয়ে )
- চোখে কি যেনো একটা পরেছে।
- দেখি আমাকে দেখতে দাও।
- না না একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।
- বেশি বুঝো তুমি, হাতটা সরাও তো।
“হাত সরিয়ে নিয়ে চোখে আস্তে আস্তে ফু দিতে থাকে পলাশ। সারিকা তাকিয়ে দেখে দুজনের মুখ খুব কাছে এসে গেছে,
পলাশের প্রতিটা গরম নিশ্বাস তার মুখের উপর পড়ছে। পলাশ এই প্রথম এতো কাছে এসেছে। তার বুকের ভেতর ধুকধুক বেড়ে’ই যাচ্ছে।
পলাশ দুহাত দিয়ে মুখটা ধরে ফু দিয়েই যাচ্ছে। নিজের জন্য পলাশের চোখে ভয় দেখতে পাচ্ছে সারিকা। পলাশ তাকিয়ে দেখে তার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সারিকা। সারিকার মায়াবী দৃষ্টি যেন তাকে আরও কাছে ডাকছে। অদৃশ্য এক শক্তি তাকে সারিকার কাছে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
পলাশ কিছুতেই নিজেকে আটকাতে পারছেনা।
মুখ থেকে হাত নামিয়ে সারিকার কোমরটা শক্ত করে ধরে নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে।
একটু একটু করে নিজের মুখটা সারিকার মুখের কাছে নিয়ে যায়। সারিকা যেন নিজের সব শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। হাত দিয়ে শক্ত করে পলাশের র্শাট ঝাপটে ধরে, চোখ বন্ধ করে নেয়।
সারিকার মনে হচ্ছে এই বুঝি ধম বন্ধ হয়ে মারা যাবে। মুখ খুব কাছে এনে সারিকার দিকে তাকায় পলাশ। সারিকার ঠোঁট দুটি কাপছে। পলাশের মন এখন ওই গোলাপী ঠোঁটের মিষ্টি স্বাদ পেতে পাগল হয়ে যাচ্ছে। পলাশ যতই কাছে যাচ্ছে সারিকা ততই শক্ত করে ধরছে।
“হঠাৎ দরজায় কারোও নক করার শব্দ শুনে, দুজন- দুজনকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে দাঁড়ায়।
পর্ব (৬)
“লজ্জায় দুজন- দুজনের দিকে তাকাতে পারছেনা। সারিকা নিচের দিকে তাকিয়ে চোখ বন্ধ করে ঘন ঘন নিশ্বাস নিচ্ছে। একটু আগে যা হলো এখনো তার বিশ্বাস হচ্ছেনা। সত্যিই কি পলাশ এত কাছে এসেছিলো। দরজায় আবারও নক করার শব্দ পেয়ে চোখ খুলে তাকায়,
- ভাবি আসবো?
- হুমম এসো।
“রোদেলা ভেতরে এসে দেখে নিচের দিকে তাকিয়ে, দুজন দু’জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে।
- ভাইয়া সময় শেষ।
- কি,কি,কিসের সময়। ( পলাশ সারিকা দুজনেই চমকে উঠে )
- ভাবিকে দেখার।
- চুপ কর, তুই বেশি পেকে গেছিস।
- বারে আমি বড় হয়েছি না।
- আচ্ছা তাহলে তোর বিয়ের একটা ব্যবস্থা করতে হয়।
- কেনো তোমাদের distrub করছি বলে।
- চুপ করবি ফাজিল।
- হুমম করলাম। আপাতত তুমি এই রুম থেকে যাও।
- কেন?
- একটু পর মেহমানরা চলে আসবে। ভাবিকে রেডি করবো।
- এত সাজগুজ করার কি আছে?
- জানি তোমার বউ বিরাট সুন্দরী। তারপরও আজ সাজতে হবে। আমার সব ফ্রেন্ডরা আসবে, ওরা দেখবেনা আমার ভাবি কতটা সুন্দর।
- ও তোর সেই বাদর বাহিনী।
- একদম উল্টাপাল্টা কথা বলবেনা। এখানে ভাবিকে দেখার জন্য যে, এখনো দাঁড়িয়ে আছো ভাবি তা বুঝতে পারছে।
- কি বললি ফাজিল,next time তোকে দেখে নেবো। ( যেতে যেতে )
- যাও যাও আমি ভয় পাইনা, ভাবি আছেনা।
“মেহমানরা সবাই চলে এসেছেন। সিয়াম এসেছে দেখে সারিকা খুশি হয়। সারিকা তার বাবাকে পেয়ে জড়িয়ে ধরে কান্না করছে। মনে হচ্ছে অনেকদিন পর সে তার বাবাকে কাছে পেয়েছে।
রোদেলার সব ফ্রেন্ডরা সারিকার রূপের প্রশংসা করছে। পলাশের বন্ধুরাও সারিকার প্রশংসা করছে। শুনে পলাশের মন যেন অন্যরকম এক ভালো লাগায় ভরে যাচ্ছে। সারিকাকে আজ পরীর মত লাগছে। পলাশ চোখ সরাতে পারছেনা। বিয়ের পর থেকে লক্ষ করছে, সারিকার উপর থেকে চোখ সরিয়ে রাখতে অনেক কষ্ট করতে হচ্ছে। সিয়াম সারিকাকে একা দেখে কাছে গিয়ে বসে ফিসফিসিয়ে বলে,
- কিরে শাকচুন্নি, বিয়ের পর এত সুন্দর হয়ে গেলি কিভাবে?
- আমি বিয়ের আগেও সুন্দরী ছিলাম বুঝলি গাদা।
- শাকচুন্নি আবার সুন্দরী ছিলি জানতাম না’তো।
- তোকে জানতে হবেনা, বাজে বকা বন্ধ কর।
- তোর husband কিন্তু খুব handsome!
- হুমম দেখতে হবেনা বরটা কার। ( মিষ্টি হেসে)
- তাইতো বলছি বাদরের গলায় মুক্তর মালা।
- ওই কি বললি তুই?
- বললাম তোদের দু’জনকে খুব সুন্দর মানিয়েছে।
অবশ্য আমার সাথে আরও ভালো মানাতো।
- হাহ্ নিজেকে আয়নায় দেখেছিস কখনো। ও হিরো আর তুই জিরো।
- আল্লাহ এত অপমান কি নেয়া যায়।
- চুপ কর ফাজিল, সবার সাথে কথা হয়েছে তোর?
- এ’বাড়ির সবাইকে বিয়ের দিন থেকে ভালো করে চিনি। তুমি কোনো চিন্তা করোনা সখী।
“দূরে দাঁড়িয়ে পলাশ দেখছে। সারিকা অনেকক্ষণ ধরে সিয়ামের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে।
কেন জানি এই দৃশ্য দেখতে তার মোটেই ভালো লাগছেনা। ইচ্ছে করছে সারিকাকে ওই জায়গা থেকে টেনে সরিয়ে আনতে। সারিকার হাসি এতটা মিষ্টি তার জানা ছিল না। দূরে দাঁড়িয়ে ওই হাসি দেখতে এই মুহূর্তে খুব বিরক্ত লাগছে। কারও ডাক শুনে পলাশের ঘোর কাটে। তাকিয়ে দেখে তার বেস্টফ্রেন্ড ইমরান তাকে ডাকছে।
- কিরে এতক্ষণ ধরে ডাকছি শুনতে পাচ্ছিস না।
- sorry দোস্ত আমি শুনতে পাইনি।
- হুমম জানি’তো হা করে দাঁড়িয়ে। যেভাবে ভাবিকে দেখছিলি না শুনার’ই কথা।
- ধুর কে বললো তোকে, আমি ওকে দেখছিলাম।
- আর লজ্জা পেতে হবেনা। নিজের বউকে দূর থেকে দেখছিস কেন? কাছে যাওয়ার সাহস নেই?
- কি আজেবাজে বকছিস।
- আচ্ছা বাদ’দে তুই যে অতীত ভুলে। নতুন করে জীবন শুরু করেছিস, এতেই আমি খুশি।
- অতীত আমি অনেক আগেই ভুলে গেছি’রে।
- তা আমি জানি দোস্ত। সারাজীবন একা না থেকে যে, বিয়ে করেছিস সঠিক কাজ করেছিস।
- পারিনি পরিবারের মানুষগুলোর জন্য। ওদের কথা রাখতে বিয়েটা করতে হলো।
- একদম ঠিক করেছেন, না হলে এত মিষ্টি একটা ভাবি পাওয়া হত’না। সুন্দরী বউ পেয়ে তুইতো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস দোস্ত।
- ( হালকা হেসে ) এটা শুধুই ভালোলাগা নাকি ভালোবাসা, সেটাই’তো বুঝতে পারছিনা।
- পারবি- পারবি সময় দে, মন সব বলে দেবে।
- হুমম তাই যেন হয়। ওদিকে চল আরিফদের সাথে কথা বলি।
সিয়ামকে দেখে, রোদেলা সিয়ামের সাথে কথা বলতে এগিয়ে আসে।
- কেমন আছেন মিস্টার সিয়াম?
- ভালো, আমি তোমাকে’ই খুঁজছিলাম।
- Really
- Yeah
- How I am looking !
- you are looking smart in this dress
- পাম দিচ্ছেন?
- তুমি কি টায়ার, যে পাম দেবো।
- ( হা হা হা ) চলুন খাওয়া দাওয়া সেরে নেই।
- হুম চলো।
“অনুষ্ঠান শেষে মেহমানরা সবাই চলে গেছেন। সারিকার বাবার জন্য মনটা কেমন জানি করছে।
রুমে এসে ফ্রেশ হয়ে সিয়ামকে ফোন দেয়। পলাশ রুমে এসে দেখে সারিকা হেসে হেসে ফোনে কথা বলছে। কথা শুনে বুঝতে পারে সিয়ামের সাথে কথা বলছে। ফ্রেশ হয়ে এসে সারিকাকে জিজ্ঞেস করে,
- কে ফোন করেছিল?
- সিয়াম, বাবাকে বাসায় পৌঁছে দেওয়ার কথা বলেছিলাম। দিয়েছে কিনা সেটা জানলাম।
- ও আচ্ছা।
- শুনেছি আপনি ঘুমানোর আগে কফি খান। কফি দেব আপনাকে?
- না থাক, আমার এত সেবাযত্ন করতে হবেনা।
“”যাহ বাবা দিনেও’তো ভালো ছিল। হঠাৎ কি এমন হলো, এতটা রেগে গেলেন যে। কি করলাম আমি। সকালে দেখা যাবে। আর কিছু না বলে পলাশের পাশে শুয়ে পড়ে সারিকা।
“”সকালে ঘুম থেকে উঠে পলাশ দেখে, সারিকা তার খুব কাছে এসে ঘুমিয়েছে। ঘুমিয়ে থাকা সারিকাকে দেখে, তার সব রাগ চলে যায়। ঘুমন্ত সারিকার মুখটা নিষ্পাপ শিশুদের মতো লাগছে। জরিয়ে ধরে আদর করতে ইচ্ছে করছে খুব।
আস্তে আস্তে সারিকার কাছে যায়। হাত দিয়ে আলতো করে মুখের উপর পরে থাকা চুলগুলো সরিয়ে দেয়। এক পলক তাকিয়ে সারিকার খুব কাছে মুখ নিয়ে যায়। সারিকার কপালে আলতো করে ভালোবাসার ছোঁয়া দেয়।
ঘুমের মধ্যে কেপে উঠে সারিকা। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে পলাশের হাত। পলাশ বুঝতে পারেনা তার কি হচ্ছে, সারিকার আরও কাছে চলে যায়। বুঝতে পারে এই মুহূর্তে নিজেকে দূরে রাখা সম্ভব নয়। তার মন এখন সারিকা’তে হারাতে চায়।
একটু একটু করে সারিকার ঠোঁটের কাছে মুখ নিয়ে যায়। আজ সে গোলাপী ঠোঁটের মিষ্টি স্বাদ নিবেই। তার খুব কাছে কারো অস্তিত্ব অনুভব করে চোখ খুলে সারিকা। ঘুম জড়ানো চোখে তাকিয়ে দেখে পলাশ তার খুব কাছে এসেছে।
দুজন- দুজনের দিকে মায়ভরা চোখে তাকিয়ে আছে।
পর্ব (৭)
“দুজন- দুজনের দিকে মায়াভরা চোখে তাকিয়ে আছে। কেউ মুখ দিয়ে কোনো কথাই বলতে পারছেনা। দুজনের চোখ যেন নাবলা হাজারো কথা বলে দিচ্ছে। সারিকা দেখছে পলাশ হাত দিয়ে তার দু’হাত শক্ত করে চেপে ধরে আছে।
সারিকা বুঝতে পারছেনা পলাশ এই মুহূর্তে কি চাইছে। পলাশের নিশ্বাস তার মুখের উপর পরছে। সারিকা ভাবছে তার বুকের ভেতরের ধুকধুক পলাশ হয়তো শুনতে পাচ্ছে। অনেকক্ষণ ধরে পলাশকে একই ভাবে তাকিয়ে আছে দেখে। সারিকা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
- “এই যে এতক্ষণ ধরে কি দেখছেন এভাবে তাকিয়ে?
- “আমার মিষ্টি বউটাকে।
- “মন থেকে বিয়ে মেনে না নিয়েই, অধিকার খাটাতে এসেছেন?
- “হুমম প্রেমে পড়ে গেছি যে।
- “কি বললেন? ( কিছুটা জুরে চিৎকার করে )
“”চিৎকার শুনে পলাশ নিজের মাঝে ফিরে আসে। লজ্জা পেয়ে সারিকাকে ছেড়ে দিয়ে দূরে সরে। সারিকা সবকিছু দেখেছে তার বলা কথাগুলো শুনেছে। মনে হতেই লজ্জায় সারিকার দিকে তাকাতে পারছেনা।
তাড়াহুড়ো করে ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়। সারিকা শুয়ে শুয়ে ভাবছে ‘কি বলল ও, সত্যিই কি ও মন থেকে বিয়েটা মেনে নিয়েছে। হয়ত ওর মনের কথা জেনে গেছি বলেই লজ্জা পেয়ে পালিয়ে গেল। তাতে কি একদিন তোমাকে মন থেকে বলতেই হবে, ভালোবাসি কথাটা। আমিও সেই দিনের অপেক্ষায় থাকবো, মিস্টার পলাশ মাহমুদ। “সারিকা নিচে এসে দেখে, খাবার টেবিলে রোদেলা আর মা তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। পলাশ এসে রোদেলার পাশে বসলে। রোদেলা পলাশের মুখের দিকে তাকিয়ে বলে,
- “দেখেছ মা বলেছিলাম না ভাইয়া সবকিছু শিখে যাবে। একদিনেই হাসতে শিখে গেছে, কেমন মিটিমিটি হাসছে দেখো।
- “চুপ থাক, না হলে দেব একটা।
- “তাহলে আমি ভাবিকে বলে দেবো। কাল যে তুমি দূর থেকে লুকিয়ে লুকিয়ে ভাবিকে দেখছিলে।
- নিশ্চুপ (আল্লাহ এই ফাজিল মেয়েটাকে এড়িয়ে যাওয়াই ভালো )
“”তাকিয়ে দেখে সারিকা তার দিকে আড়চোখে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে।
- “রোদেলা তুমি বড্ড বেশি কথা বলো। চুপ করো খাওয়া শেষ করো। পলাশ লন্ডন থেকে রুশান ফোন দিয়েছে।
- “কি হয়েছে মা? কেমন আছে ও?
- “চিন্তা করোনা ও ভালো আছে। আমাকে কয়েকদিনের জন্য ওর কাছে যেতে হবে। সবকিছু বলেনি গেলে বুঝতে পারবো।
- “আমি কি একবার কথা বলে দেখব?
- না থাক, আমি চাই এই কয়দিন তুমি অফিসের পুরো দায়িত্ব নাও। সবাই’কে বলে দিয়েছি তোমাকে সবকিছু ভালো করে বুঝিয়ে দেবে। সারিকা আর রোদেলার দায়িত্বও তোমার, বাসা অফিস দুটোই তোমাকে সামলাতে হবে।
- “এসব নিয়ে ভেবো’না মা, আমি পারবো। তুমি কবে যাচ্ছো?
- কাল, যতো তাড়াতাড়ি পারি যেতে বললো।
- ঠিক আছে তাই হবে।
- মা ভাইয়া কি আর নিয়মিত অফিসে যাবে। ভাবিকে রেখে অফিসে যেতে ইচ্ছে করবে তোমার ছেলের?
- রোদেলা আবার শুরু করেছ?
- ঠিক আছে আর কথাই বলবো’না তোমাদের সাথে।
“খাওয়া শেষ করে সারিকা রুমে গিয়ে দেখে পলাশ কি যেন খোঁজছে। সারিকাকে দেখে অন্য দিকে ঘুরে দাঁড়ায়।
- কি খোঁজছেন আপনি?
- কিছুনা।
- কিছু’তো একটা খোঁজছেন। আমাকে বলুন আমি হেল্প করছি।
- No thanks
- নিশ্চুপ ( ধুর এই গোমড়ামুখো রাক্ষসটা’র সাথে কথা না বলাই ভালো )
- দাঁড়িয়ে থেকে মনে মনে গালি দিতে হবেনা। আমি নিজের কাজ নিজে করতে পছন্দ করি।
- মনে মনে গালি দিলে শুনতে পান ঠিক’ই। মনের আর কোনো কথা শুনতে পান না। ( মিন মিন করে )
- কি বললে?
- কিছুনা, আপনি খোঁজেন।
“ফোনের রিংটোন শুনে হাতে নিয়ে দেখে সিয়াম ফোন দিয়েছে। সিয়ামের ফোন দেখে বেলকনিতে চলে যায় সারিকা। পলাশ বুঝতে পারেনা সিয়াম ফোন দিলে কেন তার মেজাজ খারাপ হয়। তখন কেন সারিকার উপর এত রাগ উঠে। ইচ্ছে করে হাত থেকে কেড়ে নিয়ে ফোনটা ভেঙে ফেলতে। বেলকনি থেকে সারিকার হাসির শব্দ আসছে। রেগে বেড়িয়ে যায় রুম থেকে।
“পরেরদিন মাকে এয়ারপোর্টে নামিয়ে দিয়ে। সন্ধ্যার পর বাসায় ফিরে পলাশ। সারিকাকে খুঁজে রোদেলার রুমের সামনে গিয়ে শুনতে পায়। সারিকা রোদেলা সিয়ামের সাথে আড্ডা দিচ্ছে। সিয়ামের মজার মজার কথা শুনে দুজনেই এক সাথে হাসছে। এসব শুনে পলাশের মেজাজ খারাপ হয়ে যায়। নিজের রুমে চলে আসবে তখনই শুনে সিয়াম বলছে,
- কাউকে সত্যিকারের ভালোবাসলে, তাকে না পেলেও মন তাকে ভালোবেসে যায়।
- আহারে বেচারা। (সারিকা)
“পলাশ আর দাঁড়িয়ে না থেকে নিজের রুমে চলে আসে। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় শুয়ে শুয়ে ভাবে,
“সিয়াম কি সারিকাকে ভালোবাসে। ওদের মধ্যে কি কোনো সম্পর্ক ছিলো। তাহলে সারিকা এই বিয়ে কেনো করলো।
শুধুই কি ওর বাবার কথা রাখার জন্য। ভালো না বাসলে সিয়াম আজ এই কথা কেন বলল। এই বাড়িতে কি সিয়াম শুধু সারিকাকে দেখতে আসে। আমি আবারও ঠকে গেলাম।
নীলার পর সারিকাকে ভালোবেসে আবারও ভুল করলাম। আজ মনে হচ্ছে নীলার কোনো দোষ ছিলো না, পৃথিবীর সব মেয়েই একরকম।
নীলাকে হারানোর পর আমার এতটা কষ্ট হয়নি। তাহলে সারিকাকে হাড়ানোর ভয়ে কেন আমার বুকের ভেতরটা তছনছ হয়ে যাচ্ছে।
আমি কি সারিকাকে অনেক বেশি ভালোবেসে ফেলেছি। সারিকার চোখে”তো আমি আমার জন্য ভালোবাসা দেখতে পাই।
সিয়াম যদি সারিকাকে সত্যিকারের ভালোবেসে থাকে। আমি সারিকাকে এই বন্ধন থেকে মুক্ত করে দেবো।
সারিকার খুশির জন্য সব করবো আমি। মা ফিরে আসার আগেই এই কাজ করতে হবে। আবেগের বশে কোনো ভুল করছিনা তো আমি। ভালো করে জানতে হবে কি চায় আমার মায়াবিনী।
কেন আমার সাথেই এমন হয়। আমি যাকে ভালোবেসে আপন করে পেতে চাই। সেই অন্য কারও আপন হতে চায়। আর ভাবতে পারেনা।
ঘুম এসে ভর করে পলাশের দুচোখের পাতায়।
“ঘুমের মধ্যে পলাশ স্বপ্ন দেখছে নদীর ধারে পরন্তু বিকেলে সে তার মায়াবিনীকে পরম ভালোবেসে বুকের মাঝে জরিয়ে ধরে আছে। হঠাৎ একটি ছায়ামানব এসে হাত ধরে। একটু একটু করে দূরে সরিয়ে নিয়ে যাচ্ছে তার মায়াবিনীকে। পলাশ নিজের সবটুকু শক্তি দিয়েও ধরে রাখতে পারছেনা।
“লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে সে। স্বপ্ন দেখে ভয় পেয়ে যায় পলাশ। মাথা নিচু করে বিছানায় বসে থাকে। সারিকা রুমে এসে দেখে পলাশ ঘুম থেকে উঠে বসে আছে। সারিকা কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,
- কি হয়েছে আপনার? কখন উঠলেন ঘুম থেকে।
- ( নিশ্চুপ )
- কথা বলছেন না কেন? শরীর খারাপ লাগছে?
“কাছে গিয়ে কাদে হাত রেখে।
“পলাশ মাথা তুলে দুহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে সারিকার কমোড়। সারিকার পেটের সাথে মুখ ঘুজে কাঁদতে থাকে। সারিকার সমস্ত শরীরে শিহরণ বয়ে যাচ্ছে। পলাশকে জড়িয়ে ধরার শক্তিটুকু হারিয়ে ফেলেছে। সারিকা খেয়াল করে পলাশ কাঁদছে। অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
- কি হয়েছে আপনার, কাঁদছেন কেন?
- (কান্না জড়ানো কন্ঠে ) সারিকা আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। আমি এত কষ্ট নিতে পারছিনা। কেন আমার সাথে এমন করলে। আমি বারবার পরাজয় মেনে নিতে পারবোনা। আমি এতটাও ভালো নই সারিকা।
- কি বলেছেন এসব? কি করেছি আমি?
“পলাশের মনে পড়ে সিয়ামের কথা, ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দেয় সারিকাকে। সারিকা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে পলাশের দিকে। এই পলাশকে তার অচেনা মনে হচ্ছে।
- সারিকা প্লিজ আমাকে কোনো মায়া দেখাতে এসো না। আমি একা ছিলাম, সারাজীবন একাই”তো থাকবো। কারও মিথ্যা মায়ায় নিজেকে আর জড়াতে চাইনা।
“সারিকাকে আর কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই, পলাশ রুম থেকে বেরিয়ে যায়।
পর্ব (৮)
“সারিকা বিছানায় বসে পড়ে।
‘পলাশ কেন এমন ব্যবহার করল। কি জন্য এসব বলে গেল কিছুই বুঝতে পারছিনা। আমিতো কিছু করনি তাহলে কি সিয়াম বাসায় এসেছে বলে পলাশ রাগ করেছে।
তা হবে কেন পলাশ তো সিয়ামকে ভালো করে চিনে। ধুর আর ভাবতে পারবোনা মাথায় কিছুই আসছেনা। গোমড়ামুখো নিজেই জানেনা কখন কি করে। এই রাক্ষসটা আমাকে ভালোবাসার কথা বলবে।
হাহ্ পৃথিবীতে আর মানুষ খোঁজে পাসনি সারিকা।
রোদেলার ডাক শুনে ভাবনার জগত থেকে ফিরে আসে সারিকা।
- এই যে আজ কি dinner করা হবেনা আমাদের?
- sorry আসলে,
- থাক থাক আর বলতে হবেনা। যাকে নিয়ে ভাবছো সে খাবার টেবিলে বসে অপেক্ষা করছে।
- মানে?
- মানে সহজ খাবার টেবিলে আপনার প্রিয়তম অপেক্ষা করছেন। dinner শেষ করে যত ইচ্ছে romance করবেন কেউ distrub করবেনা আপনাদের।
- যাহ তোমার মুখে কি কিছুই আটকায় না।
- আরে বাহ্ লজ্জা পাচ্ছেন তাও আবার আমার সামনে। লাভ নেই আমি এভাবেই লজ্জা দিয়ে যাব সারাজীবন।
- তাই বুঝি আমারও দিন আসবে। তখন তোমাকে দেখে নেব।
- হুমম অপেক্ষায় থাকলাম।
- অনেক দুষ্টুমি হয়েছে এখন চলো।
“সারিকা লক্ষ করছে খাবার টেবিলে বসে পলাশ আজ কোন কথা বলছেনা। রোদেলার কোন কথার জবাবও দিচ্ছেনা। সারিকা বুঝতে পারছে পলাশ কোনকিছু নিয়ে টেনশন করছে। রোদেলা সারিকার সাথে দুষ্টুমি করে যাচ্ছে। রোদেলার সাথে মজা করতে সারিকারও ভালো লাগে।
- আচ্ছা ভাবি তোমাদের মান অভিমান চলছে নাকি?
- মা,মা,মানে?
- মানে তোমরা কি ঝগড়া করেছ? ভাইয়ার মুখটা এমন লাগছে কেন। মনে হচ্ছে এই বুঝি কেঁদে ফেলবে।
- বড্ড বেশি কথা বলিস তুই, চুপ করে খেতে পারিসনা।
- বারে কথা বলবোনা কেন, আমার’তো আর মান অভিমান চলছেনা।
- চুপ কর ফাজিল। সব সময় বড়দের মত কথা।
- আমি কি আর ছোট আছি নাকি। ঠিক আছে যখন আমি টুনটুন পাখির ফুপি হয়ে যাব তখন’তো আমাকে বড় ভাব্বে।
“রোদেলার কথা শুনে লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয় সারিকা। আড়চোখে তাকিয়ে দেখে পলাশের মুখটা কালো হয়ে গেছে। রোদেলার কথা শুনে পলাশের মুখ কালো হয়ে গেলো কেন। ও কি চায়না আমাদের সম্পর্ক স্বাভাবিক হোক। পলাশ কোন কথা না বলে রুমে চলে যায়।
“সারিকা কফি নিয়ে রুমে এসে দেখে পলাশ ল্যাপটপে কাজ করছে। হাত বাড়িয়ে পলাশকে কফির মগটা এগিয়ে দেয়।
- আমি কি কফি চেয়েছিলাম?
- না।
- তাহলে কফি নিয়ে এসেছ কেন।
- আপনি ঘুমানোর আগে কফি খান তাই। খেয়ে দেখুন ভালো লাগবে।
- আমার ভালো লাগার খবরও রাখো নাকি তুমি?
- আপনি এভাবে কথা বলছেন কেন। কি করেছি আমি?
- কিছুনা, কফি নিয়ে যাও আমি খাবনা।
- আপনি কি কোনকিছু নিয়ে টেনশন করছেন?
- সকালে আমার অফিস আছে আমি এখন ঘুমাবো। আর যতটা পারো আমার চোখের সামনে থেকে দূরে থাকবে। খুব প্রয়োজন ছাড়া আমার সাথে কথা বলবেনা। আশাকরি মনে রাখবে।
“কথাগুলো বলেই পলাশ শুয়ে পড়ে। সারিকা বুঝতে পারে তার চোখের কোণে জল জমে গেছে। চোখের জল লুকাতে তাড়াতাড়ি বেলকনিতে চলে যায়।
‘পলাশকে চোখের জল দেখিয়ে বুঝাতে চাইনা। তার প্রতি কতটা দুর্বল।
হৃদয়হীনের কাছে হৃদয়ের কথা বলে কি লাভ।
হয়ত এই জীবনে পলাশকে বুঝা হয়ে ওঠবেনা আমার। একি ছাদের নিচে থেকেও পলাশের সাথে কথা না বলে কিভাবে থাকব।
“সারিকা বুঝতে পারছেনা পলাশের বলা সহজ কথাগুলো শুনে কেন তার এতো কষ্ট হচ্ছে। দুহাত দিয়ে বার বার চোখের জল মুছেও থামাতে পারছেনা।
“সকালে breakfast না করেই অফিসে চলে যায় পলাশ। রোদেলা কলেজে চলে যাওয়ার পর সারিকার নিজেকে খুব একা লাগে। রুমে এসে ঘুমিয়ে পড়ে। অফিসে গিয়েও পলাশ কাজে মন দিতে পারছেনা। তার বার বার মনে পড়ছে সারিকার কথা, কেন এমন ব্যবহার করলাম সারিকার সাথে। আমার কথাগুলো শুনে কষ্ট পেয়েছে ও। হয়ত লুকিয়ে কান্না করেছে আমার মায়াবিনী। তাইতো সকালে চোখগুলো লাল দেখলাম। বাসায় গিয়ে সরি বলে নেব। আমিতো সত্যিটা এখনো জানিনা। সারিকার মনের কথা আমাকে জানতে হবে। সিয়ামকে নিয়ে সারিকার সাথে কথা বলতে হবে।
“রাতের খাওয়া শেষ করে সারিকা দেখে বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টি তার খুব পছন্দের। ইচ্ছে করছে বৃষ্টিতে গা ভিজিয়ে মনের সব কষ্ট দুয়ে দিতে। আকাশের আজ তার মতো মন খারাপ। তাইতো চোখের জল দিয়ে ভিজিয়ে দিচ্ছে পৃথিবী। পলাশ ঘুমিয়ে যাওয়ার আগে রুমে যেতে চায়না সারিকা। পলাশ অনেকক্ষণ ধরে অপেক্ষা করে। সারিকা আসছেনা দেখে রোদেলার রুমের দিকে যায়। রোদেলা বলে সারিকা তার রুমে যায়নি। পুরো বাসা খুঁজে সারিকাকে পায়নি সে। ভয় পেয়ে যায় পলাশ এত রাতে কোথায় গেল।
হঠাৎ মনে পড়ে ছাদের কথা দৌড়ে ছাদে যায়। ছাদে গিয়ে থমকে দাঁড়ায়, তার চোখ যেন আজ নতুন করে কাউকে দেখছে। সারিকা চোখ বন্ধ করে ছাদের এক কোণে দাঁড়িয়ে দু’হাত মেলে বৃষ্টিতে ভিজছে। কালো শাড়ী পরে মেঘে ভেঁজা সারিকাকে মেঘপরী লাগছে। বৃষ্টি যেন ভিজিয়ে তার মায়াবিনীর সৌন্দর্য হাজার গুন বাড়িয়ে দিয়েছে।
পলাশ আস্তে আস্তে সারিকার কাছে গিয়ে দাঁড়ায়। বৃষ্টির পানি সারিকার মুখ ভিঁজিয়ে দিলেও। পলাশের চোখে পড়ে তার মায়াবিনীর চোখের জল। নিজের মাঝে নিজেকে আর ধরে রাখতে পারেনা। বুঝতে পারে তার দেয়া আঘাতে সারিকা কষ্ট পেয়েছে।
আলত করে দুহাত দিয়ে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে সারিকাকে। কারো ছোঁয়া পেয়ে সারিকা কেঁপে উঠে। বুঝতে পারে পলাশ এসেছে। পলাশ তার কাছে আসলেই তার বুক ধুকধুক করে। সারিকার ভেঁজা চুলে নাক গুজে দেয় পলাশ। একটু একটু করে সারিকার ঘাড়ে চুমু খায় পলাশ। পলাশের ঠোঁটের ছোঁয়া পেয়ে সারিকার শরীরে শিহরণ বয়ে যায়।
সারিকা বুঝতে পারে পলাশ নিজের মাঝে নেই। সারিকাও নিজের শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। পলাশ সারিকাকে তার দিকে ঘুরিয়ে নেয়। সারিকার মায়াবী মুখের দিকে পলকহীন দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকে। সারিকা কাঁপা কাঁপা কন্ঠে জিজ্ঞেস করে,
- আ, আপনি এখানে কেন?
- তোমাকে খুঁজতে খুঁজতে এসেছি।
- আরোও কিছু বলার বাকি রয়েছে বুঝি।
- হুমম অনেক কিছু।
- বলুন।
- এভাবে বলা যাবেনা।
- কিভাবে বলবেন?
- আমার বউটা যদি কাছে আসে তো। (টান দিয়ে কাছে আনে )
- কি করছেন এসব।
“সারিকার ঠোঁটে হাত রেখে থামিয়ে দেয়। দুহাত দিয়ে সারিকার মুখটা ধরে আরো কাছে নিয়ে আসে। চোখ বন্ধ করে নেয় সারিকা। পলাশকে বাধা দেবার ইচ্ছে বা শক্তি কোনোটাই তার নেই
বৃষ্টির মাঝে দাঁড়িয়েও পলাশের গরম নিশ্বাস অনুভব করতে পারছে। পলাশ আরো কাছে যায়। সারিকা শক্ত করে ঝাপটে ধরে পলাশের র্শাট। বুঝতে পারে তার ঠোঁট অন্যর দখলে চলে গেছে। অন্যরকম এক ভালোলাগার আবেশ ঘিরে ধরেছে তাকে। দুজন হারিয়ে যায় ভালোবাসার জগতে।
বৃষ্টি তার ইচ্ছেমত দুজনকে ভিজিয়ে যাচ্ছে। বেশ কিছু সময় পর পলাশের হাত একটু একটু করে মুখ থেকে নিচের দিকে নামছে দেখে সারিকা ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। লজ্জায় পলাশের দিকে না তাকিয়ে দৌড়ে নিচে চলে যায় সারিকা।
ধাক্কা খেয়ে পলাশের ঘোর কাটে। অবাক হয়,, সারিকা এভাবে কেন ধাক্কা দিয়ে চলে গেল। ওর ভালো লাগেনি নাকি, অন্য কাউকে আশা করেছিলো? আমি কি আবারও সারিকার মনে কষ্ট দিলাম। সামনে গেলে ও যদি আমাকে প্রশ্ন করে। আমি কিভাবে ওর চোখের দিকে তাকাবো।
হাজারো প্রশ্ন মাথায় নিয়ে রুমের দিকে পা বাড়ায় পলাশ।
পর্ব (৯)
“পলাশ রুমে এসে দেখে সারিকা শুয়ে আছে। ফ্রেশ হয়ে এসে সারিকার পাশে শুয়ে পড়ে। কিছুতেই পলাশের চোখে ঘুম আসছেনা। সারিকা জেগে আছে দেখে জিজ্ঞেস করে,
- তুমি কি জেগে আছো?
- হুমম।
- একটা কথা বলার ছিলো?
- জ্বি বলুন।
- sorry সারিকা।
- কেন?
- তোমার মনের খবর না নিয়েই অধিকার খাটানোর জন্য।
- sorry বলতে হবেনা। আপনিতো জোর করেননি, এসব না ভেবে ঘুমিয়ে পড়ুন।
“পলাশ আর কিছু না বলে চোখ বন্ধ করে নেয়।
হঠাৎ মাঝরাতে কারো গোঙানির আওয়াজ শুনে ঘুম ভাঙে তার। লাফ দিয়ে বিছানায় উঠে বসে।
তাকিয়ে দেখে সারিকা ঘুমের মধ্যে কেপে কেপে উঠছে।
মাথায় হাত দিয়ে দেখে জ্বরে ঘা পুড়ে যাচ্ছে। পানি এনে সারিকার মাথায় জলপট্টি দিতে থাকে। ঘন্টা খানেক পর দেখে জ্বর একটু কমেছে।
বিছানায় গিয়ে সারিকার মাথা আস্তে করে নিজের বুকের উপর নিয়ে আসে। দুহাত দিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। কপালে চুমু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে ঘুম থেকে উঠে সারিকা দেখে পলাশ তাকে বুকের মাঝে জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে আছে। আস্তে করে মাথা তুলে পলাশের মুখের দিকে তাকায়। পলাশ বাচ্চাদের মত করে ঘুমুচ্ছে।
কপালে এলোমেলো চুল এসে পড়েছে। ঘুমন্ত পলাশকে দেখে সারিকার মাথায় দুষ্টুমি ভর করে। আঙুল দিয়ে একটা একটা করে কপাল থেকে চুল সরিয়ে দেয়। নাকের উপর জমে থাকা বিন্দু বিন্দু ঘাম যত্ন করে হাত দিয়ে মুছে দেয়।
চোখ বন্ধ করে হালকা করে চুমু খায় পলাশের ঠোঁটে। সারিকা অবাক হয় এখন আর রাতের মত লজ্জা করছেনা। হয়ত পলাশ ঘুমিয়ে আছে বলে।
মনে পড়ে রাতের কথা,, ছিঃ কি লজ্জাটাই না পেয়েছিলাম। জানি ভুল বুঝেছো, কেন বুঝোনা জীবনের প্রথম কারো এত কাছে যাওয়া।
লজ্জায় তাকাতে পারিনি, ভয়ে আর লজ্জায় পালিয়ে এসেছিলাম। বলতে পারিনি আমারও ভালো লেগেছে, তোমার গভীর ভালোবাসায় মিশ্রিত মিষ্টি ছোঁয়া। মনের খবর নিতে চাওনা তাইতো জানোনা। আমি শুধু ভালোবাসি, আমার গোমড়ামুখো বরটা কে।
“পলাশ জেগে যাচ্ছে দেখে সারিকা পলাশের বুকে মাথা রেখে চোখ বন্ধ করে নেয়। সারিকা ঘুমিয়ে আছে দেখে বালিশে মাথা রেখে, কপালে হাত দিয়ে জ্বর কমেছে কিনা দেখে নেয় পলাশ।
“তিনদিন পর পুরোপুরি সুস্থ হয়ে উঠে সারিকা।
সকালে রোদেলা সারিকার জন্য খাবার নিয়ে আসে।
- এখন কেমন লাগছে।
- আজ ভালো আছি।
- যাক বাবা, আমাদের ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে।
- ভয় পেয়েছিলে কেন? ( মিষ্টি হেসে )
- মরে গেলে আমি ভাবি কাকে ডাকবো তাই।
- নতুন কাউকে নিয়ে আসতে।
- বাজে কথা বললে আমি মাকে ফোন করে বলবো।
- আচ্ছা স্যরি, আর বলবোনা।
- মনে থাকবে।
- হুমম থাকবে।
- তাহলে লক্ষী মেয়ের মতো, খেয়ে নাও।
- এখানে কেন এক সাথে খাবো চলো।
- জ্বি না এখানে খেতে হবে। এটা আপনার প্রিয়তমের আদেশ।
- তোমার ভাইয়া কোথায়?
- অফিসে গেছে জরুরি একটা কাজ আছে বললো। আমাকে দায়িত্ব দিয়ে গেছে। সো কোনো কথা হবেনা, আমি যা বলবো তা শুনতে হবে।
- যদি না শুনি?
- তাহলে শাস্তি পেতে হবে। আমি না ভাইয়া দেবে। ভয় পেয়োনা শাস্তিটাও রোমান্টিক হবে।
- তোমার মাথায় কি সারাক্ষণ দুষ্টুমি খেলা করে?
- বারে ননদের জ্বালা যদি না পাও, তাহলে কিভাবে বুঝবে শশুর বাড়িতে এসেছ।
- ওহ তাই।
- জ্বি তাই।
- তাহলে তোমারও যেন এরকম একটা দুষ্ট ননদ থাকে, তখন বুঝবে মজা।
- জ্বি না আমি আপনার মত লাজুক নই, আমাকে জ্বালাতে আসলে আমি তাকে ডাবল জ্বালাবো।
- ( হা হা হা) তাহলে বিদায় করে দেবে।
- কিইইইই রোদেলার সাথে পাঙ্গা নেয়ার সাহস, কারোও হবেনা বুঝলে।
- আচ্ছা দেখা যাবে।
- হুমম, হঠাৎ এরকম জ্বর উঠলো কেন?
- না মানে,,
- বলতে হবেনা বুঝেছি। ( দুষ্টুমি হাসি দিয়ে)
- কি বুঝেছ?
- বলবোনা খেয়ে নাও, আমি আসছি।
“পরদিন সকালে সারিকা রুমে এসে দেখে, পলাশ অফিসে যাওয়ার জন্য রেডি হচ্ছে। কাছে এসে বলে,
- একটা কথা বলবো আপনাকে?
- হুমম বলো।
- বাবা ফোন দিয়েছিলেন যেতে বললেন আমাকে। বাবাকে অনেকদিন দেখিনি, আমি কি একবার যেতে পারি?
- তুমিতো পুরোপুরি সুস্থ হওনি, রোদেলাকে সাথে নিয়ে যাও।
- রোদেলা কলেজে, আমি একা যেতে পারবো।
- ঠিক আছে গাড়ি নিয়ে যাও। সাবধানে যেও।
- হুমম।
“অফিসের কাজ শেষ করে রেস্টুরেন্ট এ তার এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে যায় পলাশ। গাড়ি থেকে নামতে যাবে তখনই দেখে রেস্টুরেন্ট থেকে সিয়ামের সাথে হেসে হেসে কথা বলে বের হচ্ছে সারিকা।
দিনের আলোতেও পলাশ কিছু দেখতে পাচ্ছেনা। পৃথিবীটা অন্ধকার মনে হচ্ছে।
গাড়ীর ভেতর বসে থেকে চোখ বন্ধ করে নেয়,
‘কেন সারিকা লুকিয়ে সিয়ামের সাথে দেখা করতে এলো। কেন আমাকে মিথ্যে বললো। আমাকে সত্যিটা বললে কি হত? আমার কাছে যে ওর খুশিটাই সব থেকে বড়। কেন বুঝলোনা ও।
“পলাশের চোখ থেকে জল গড়িয়ে পড়ছে। ওর বুকের ভেতর ঝড় বয়ে যাচ্ছে।
“রাতে বাসায় ফিরে পলাশ রুমে গিয়ে দেখে। সারিকা মোবাইলে কি যেন করছে। টান দিয়ে সারিকাকে দেয়ালের সাথে চেপে ধরে। পলাশের লাল চোখ দেখে ভয় পেয়ে যায় সারিকা।
- মিথ্যা বলার কি খুব প্রয়োজন ছিলো সারিকা?
- কি,কি, বলছেন আপনি।
- চুপ একদম চুপ একটা কথাও বলবে না। চুরের আবার বড় গলা। সাহস হয় কি করে আমাকে মিথ্যে বলার?
- আহ আমার লাগছে, ছাড়ুন আমাকে। (চোখ থেকে জল পড়ছে )
- লাগুক তাতে আমার কি। কে দিয়েছে আমার জীবন নিয়ে খেলা করার অধিকার? ( ধাক্কা দিয়ে নিচে ফেলে দেয়)
“সারিকা করুণ চোখে তাকিয়ে কান্না করে যাচ্ছে।
- ছিঃ তোমার মতো মেয়ের দিকে তাকাতেই আমার ঘেন্না করছে। লজ্জা করলোনা মিথ্যে বলে লুকিয়ে, পুরনো বয়ফ্রেন্ড এর সাথে দেখা করতে। আবার নেকামো করা হচ্ছে।
- বিশ্বাস করুন ও আমার বয়ফ্রেন্ড নয়। আমি শুধু,
- চুপ করো আর কতো মিথ্যে বলবে। তোমার আসল রূপ আমার দেখা হয়ে গেছে। কি ভেবেছিলে সংসার করবে আমার সাথে। আর প্রেম করবে পুরনো বয়ফ্রেন্ডের সাথে। তোমার মতো মেয়েদের”তো একজনে হয়না।
- পলাশ কি বলছেন আপনি এসব। (চিৎকার করে )
- ঠিক বলেছি আমি আগেই বুঝেছিলাম। আজ নিজের চোখে দেখে বিশ্বাস হলো। ছি সারিকা এতটা নিচে কেনো নামতে গেলে।
আমাকে বললেই পারতে। আমি তোমাকে জোর করে আটকে রাখতাম না। তোমার সাথে কথা বলতেই আমার রুচিতে বাঁধছে। আজকের পর তোমার ওই মুখটা আমি দেখতে চাইনা।
“কথাগুলো বলে পলাশ রেগে রুম থেকে বেরিয়ে যায়। সারিকা হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে কান্নায় ভেঙে পড়ে।
“কেন আমার সব কথা শুনলেনা পলাশ। আমার উপর কি একটুও বিশ্বাস ছিলোনা তোমার। সব সত্যি না জেনে, আমাকে এতো বাজে বাজে কথা বলতে পারলে পলাশ। আমাকে কিছু বলারও সুযোগ দিলেনা।
যেখানে বিশ্বাস নেই ভালোবাসা নেই, সেখানে আমিও থাকতে চাইনা। শুধু একবার বলে যেতে ইচ্ছে করছে “আমি বাজে মেয়ে নই। আমিও চাইনা এই মুখ আর তোমাকে দেখাতে।
“হঠাৎ কানে আসে রোদেলা আর পলাশের জোরে জোরে বলা কথা। বুঝতে পারে তাকে নিয়ে রোদেলার সাথে চিৎকার চেঁচামেচি করছে পলাশ। উঠে গিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দেয় সারিকা।
রোদেলা দৌড়ে এসে সারিকার দরজায় ধাক্কা দিতে থাকে। খুলছেনা দেখে ভয় পেয়ে কাঁদতে কাঁদতে ধাক্কা দিতে থাকে সারিকার দরজায়। অনেকক্ষণ ডাকার পরও দরজা খুলছেনা সারিকা।
(পর্ব- ১০) অন্তিম পর্ব
“সারিকা দরজা খুলছেনা দেখে ভয় পেয়ে যায় রোদেলা। কাঁদতে কাঁদতে সারিকাকে ডাকতে থাকে।
- ভাবি দরজা খুলো আমার কথা শুনবেনা তুমি। ভাইয়ার উপর রাগ করে উল্টাপাল্টা কিছু করোনা প্লিজ। ভাইয়া ভুল বুঝেছে, সবঠিক হয়ে যাবে দেখ। আমি বুঝি তোমাকে ভালোবাসি না? আমাকে কি একটুও ভালোবাসোনি তুমি? তাই বুঝি আমার কথা শুনছো না। দরজাটা খুলোনা ভাবি।
- রোদেলার কথা শুনে সারিকা দৌড়ে এসে দরজা খুলে। রোদেলাকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে।
- তুমি দরজা খুলছিলেনা কেন? জানো আমি কত ভয় পেয়েছিলাম। আর কেঁদো না, দেখবে সব ঠিক হয়ে যাবে। আমি আছি না।
- আমি আর এ বাড়িতে থাকবনা রোদেলা। আমাকে বাবার কাছে নিয়ে চলো প্লিজ।
- কেনো তুমি থাকবেনা, এটা তোমারও বাড়ি।
- তোমার ভাইয়া এ’বাড়িতে থাকার অধিকার কেড়ে নিয়েছে।
- রাগ করে বলেছে, রাগ কমে গেলে দেখবে সবঠিক হয়ে গেছে।
- আমাকে এত বাজেকথা কেউ কোনদিন বলেনি। এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে রোদেলা।
- ভাইয়া রেগে গেলে কি করে নিজেও জানেনা। তুমি কোথাও যাবেনা, বললাম না সব ঠিক হয়ে যাবে। কান্না থামাও প্লিজ।
“”রোদেলা অনেকক্ষণ বুঝিয়ে সারিকাকে নিজের রুমে নিয়ে যায়। মাঝরাতে বাসায় ফিরে পলাশ।
রুমে এসে দেখে সারিকা রুমে নেই, ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে।
“”সকালে ঘুম থেকে উঠে অফিসে চলে যায় পলাশ। ইচ্ছে করেই নিজেকে কাজের মধ্যে ডুবিয়ে রাখে। তার মন ঘুরেফিরে বারবার সারিকার কাছে যাচ্ছে। দরজায় কেউ নক করছে দেখে ভেতরে আসতে বললো।
- স্যার একজন ভদ্রলোক, আপনার সাথে দেখা করতে আসছেন।
- আমার সাথে?
- জ্বি
- ঠিক আছে পাঠিয়ে দাও।
- আসতে পারি?
“পলাশ তাকিয়ে দেখে সিয়াম তার অফিসে এসেছে, সিয়ামকে দেখেই রেগে যায়।
- কে পাঠিয়েছে তোমাকে?
- আমি নিজেই এসেছি। জরুরি কয়েকটা কথা বলেই চলে যাব, খুব বেশি সময় নষ্ট করবোনা আপনার।
- গার্লফ্রেন্ডের হয়ে সাফাই গাইতে এসেছ। সাহস হলো কি করে আমার অফিসে আসার?
- দেখুন ভাইয়া আপনি যা ভাবছেন সব ভুল।
- তাই নাকি আমি ভুল তোমারা দুজন ঠিক, রাইট
- আপনি রেগে আছেন। একবার মাথা ঠান্ডা করে আমার সব কথা শুনন প্লিজ।
- কি শুনব অন্যের বউয়ের সাথে লুকিয়ে প্রেম প্রেম খেলা করতে কতটা মজা লাগে এইসব?
- ভাইয়া প্লিজ আমি আপনাকে অনেক সম্মান করি। এমন কোন কথা বলবেন না, যাতে আপনার প্রতি সেই শ্রদ্ধাবোধ চলে যায়।
- তোমার কাছে এসব আশাও করিনা আমি।
- সারিকার কাছে’তো আশা করেন?
- সারিকাকে নিয়ে তোমার সাথে কোনো কথা বলতে চাইছিনা আমি, ওকে।
- সারিকা আপনাকে অনেক ভালোবাসে। কেন ওকে ভুল বুঝে এত কষ্ট দিচ্ছেন?
- মানে?
- মানে আমাদের একটাই সম্পর্ক। তা হলো শুধুই বন্ধুতের, এর বাইরে না কোনো সম্পর্ক ছিলো, না আছে।
“পলাশ চুপ করে অবাক চোখে তাকিয়ে আছে সিয়ামের দিকে।
- আমি কখনো ভাবিনি, আমাকে নিয়ে আপনাদের লাইফে এত প্রবলেম হবে।
- সারিকা তোমাকে ভালোবাসে না?
- ( হা হা হা ) যদি আমাকে ভালোবাসতো তাহলে আপনাকে বিয়ে করলো কেন?
- তা আমারও অজানা। হয়ত ওর বাবার কথা রাখতে গিয়ে চাপে পড়ে বিয়েটা করেছে।
- চাপে পড়ে ওকে কেন বিয়ে করতে হবে। বিয়ের আগেই আপনি ওকে বিয়ে ভাঙার কথা বলেছিলেন। নিজের ইচ্ছে বিয়ে না করলে ওই সুযোগটা ও কাজে লাগাতে পারতো।
- ( নিশ্চুপ )
- সারিকা আর আমার মধ্যে যদি কোনো সম্পর্ক থাকতো তাহলে আপনাকে বিয়ে করার প্রশ্নই ওঠেনা, ওর বাবা ওর সব থেকে ভালো বন্ধু ওর মতের যতেষ্ট গুরুত্ব দিতেন।
“পলাশ কোনো কথা বলছেনা দেখে সিয়াম আবার বলে।
- সারিকা আপনাকে পছন্দ করেছিলো বলেই বিয়েটা করেছে। ও নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসে আপনাকে। একসাথে থেকেও ওর মনের কথা জানতে পারলেন না। আমাদের নিয়ে সন্দেহ করছেন বলেই, আপনার চোখ সব সময় ভুল দেখে এসেছে।
কাল আমি সারিকাকে রেস্টুরেন্টে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওর কাছ থেকে একটা সাহায্য নেওয়ার জন্য, প্রেম করার জন্য নয়। এবার আপনি ভেবে সিদ্ধান্ত নিন, আসি তাহলে।
“”দরজার সামনে থেকে আবার ঘুরে দাঁড়ায় সিয়াম,
- যাবার আগে একটা কথা বলে যাই। যে অপরাধ সারিকা করেনি তার শাস্তি আপনি ওকে দিচ্ছেন। এখনো সময় আছে ভালোবাসার মানুষটিকে একবার বিশ্বাস করে দেখুন। আপনার মন’ই আপনাকে বলে দিবে কোনটা ভুল আর কোনটা ঠিক।
ও অনেক ভালো একটা মেয়ে, ভালোবাসতে না পারেন ওকে কোনদিন কষ্ট দিবেন না ভাইয়া। বন্ধু হিসেবে আপনার কাছে এটা আমার রিকোয়েস্ট। সারিকা আমাকে এসব জানায়নি কোনদিন বলতও না। এটুকু বিশ্বাস রাখবেন, আসছি।
“বিকেলের দিকে পলাশ বাসায় আসে। সারিকাকে না পেয়ে কাজের মেয়ের কাছে জিজ্ঞেস করে জানতে পারে রোদেলার সাথে সারিকা বাইরে গেছে।
“সন্ধ্যার পর সারিকা রুমে এসে দেখে রুমটা অনেক সুন্দর করে ফুল দিয়ে সাজানো। বুঝতে পারেনা কে করলো এসব। পেছন থেকে পলাশ সারিকাকে জড়িয়ে ধরে। চমকে উঠে সারিকা। জড়িয়ে ধরে বলে,
- সরি সারিকা আমার না সত্যি ভুল হয়ে গেছে। আমি না বুঝে তোমাকে অনেক কষ্ট দিয়েছি।
“সারিকা কোনো কথা না বলে পলাশের হাত ছাড়িয়ে বেলকনিতে চলে যায়। পলাশ বুঝতে পারে সারিকা এত সহজে মানবেনা। বেলকনিতে গিয়ে আবার জড়িয়ে ধরে সারিকার চুলে নাক ঘুজে দিয়ে বলে,
- আমি জানি তুমি অনেক কষ্ট পেয়েছ, হয়ত আমাকে কোনোদিন ক্ষমা করতে পারবেনা। বিশ্বাস করো কষ্ট দিতে চাইনি, তোমাকে হারানোর ভয়ে আমার মাথা ঠিক ছিলোনা। আমি বুঝিনি সারিকা।
- আপনি ঠিক কাজই করেছেন আমি’তো এসবের’ই যোগ্য। আমার কাছে কেন এসেছেন ঘেন্না করছেনা আপনার? এখন আমার সাথে কথা বলতে রুচিতে বাঁধছেনা?
- সারিকা প্লিজ বললাম তো ভুল হয়ে গেছে। যা শাস্তি দেবে মাথা পেতে নেব।
- আমি আপনাকে শাস্তি দেবো, আমার মতো খারাপ একটা মেয়ে, হাসালেন।
- কি করলে তুমি আমাকে ক্ষমা করবে বলো। যা বলবে আমি তাই করবো।
- তাহলে দয়া করে এখান থেকে যান, আমাকে একা থাকতে দিন।
- না যাবোনা তোমার রাগ ভাঙিয়ে, তোমার মনের সব কষ্ট দূর করতে এসেছি।
- নিশ্চুপ ( নিজেই কষ্ট দিয়ে এসেছে কষ্ট দূর করতে রাক্ষস একটা )
- মনে মনে গালি দিচ্ছ কেনো? আজ’তো শুনিয়ে গালি দিতে পারো।
“পলাশ সারিকার ঘাড়ে মুখ নিয়ে এসে চুমু দিতে থাকে। সারিকা ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে চলে যেতে চাইলে। পলাশ হাত ধরে টান দিয়ে নিজের বুকের কাছে আনে।
- কি করছেন ছাড়ুন আমাকে আমি ঘুমাবো।
- আমার যে খুব মিষ্টি খেতে ইচ্ছে করছে।
- যান গিয়ে খান, আমি না করেছি নাকি।
- ওই মিষ্টি না, পৃথিবীর সব মিষ্টি যে মিষ্টির কাছে তুচ্ছ। আমি সেই মিষ্টি খাবো। ( ঠোঁটে আঙুল রেখে )
- ঢং করবেনা, আমার এসব ঢং ভালো লাগছেনা।
- কে বললো ঢং করছি আমি সত্যিই বলছি।
- অনেক হয়েছে এবার ছাড়ুন আমাকে।
“পলাশ দুহাত দিয়ে সারিকার মুখ ধরে নিজের কাছে নিয়ে আসে। সারিকা কথা বলার মতো শক্তি হারিয়ে ফেলেছে। তার মন চায়না পলাশকে বাধা দিতে, সেও মনে মনে পলাশকে কাছে পেতে চায়।
পলাশ নিজের ঠোঁট দুটি সারিকার ঠোঁটে ডুবিয়ে দেয়। চোখ বন্ধ করে সারিকা পলাশের হাত শক্ত ধরে। পলাশ হাত নামিয়ে সারিকার কমড়ে নিয়ে যায়। টান দিয়ে আরো কাছে নিয়ে আসে। গোলাপী ঠোঁটের মিষ্টি স্বাদ নিতে পলাশ মগ্ন। সারিকার যেন দম বন্ধ হয়ে আসছে। অনেকক্ষণ পর ছেড়ে দেয় পলাশ। মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ঘন ঘন শ্বাস নিতে থাকে সারিকা। পলাশ সারিকার হাত ধরে দামি একটা আংটি পরিয়ে দিয়ে সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
- মায়াবিনী থাকবে কি সারাজীবন এমনি করে আমার পাশে। জানিনা কখন তোমার প্রেমে পড়েছি, ভালো না বাসো সারাজীবন ভালোবাসতে দেবে কি আমায়? কথা দিচ্ছি আর কখনো জল আসতে দিবো না।
আমার মায়াবিনীর চোখে। আমি তোমায় অনেক ভালোবাসি মায়াবিনী।
“সারিকা চোখে জল নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে পলাশের বুকে, জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে। সারিকার মুখ তুলে চোখ মুছে দিয়ে পলাশ বলে,
- মায়াবিনী তোমাতে হারাতে দেবে কি আমায়?
- সারিকা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে নেয়।
- নীরবতা সম্মতির লক্ষণ। ( মিষ্টি হেসে )
“পলাশ সারিকাকে কোলে করে বিছানার দিকে নিয়ে যাচ্ছে। দুজনের চোখেই অজস্র ভালোবাসা, এই রাত তাদের মধুর মিলনের রাত।
এই রাত ভালোবাসার সাগরে সাঁতার কাটার রাত। এই রাত শুধুই ভালোবাসার রাত।
“আর নাইবা জানলেন। ভালো থাকুক ভালোবাসার মানুষগুলো।
(সমাপ্ত)
অবশেষে তুমি আমি
রামিশা আয়াত
আরও পড়ুন – সংসারে সংশয় – শিক্ষামূলক গল্প