তোমার আমার বাসর রাত – ঈস! আর একটু থাকো না: ওই? আপনারা এখনো কি শুনছেন? আর কিছু বলব না, লজ্জা করছে। চার ঠোট এক হয়ে গেলো। এরপর…
অনেকক্ষন ধরে বাসর ঘরে বসে আছে নিতু। আজ রাজের সাথে তার বিয়ে হলো। এখনো রাজকে দেখেনি। হটাৎ করে বিয়েটা হয়ে গেল। নিতু এখন অনার্স ২য় বর্ষের ছাত্রী। আগে কখনো প্রেম করে নি তাই বিয়েতে অমত ছিলো না। সে তার সব ভালবাসাই জমিয়ে রেখেছে তার বরের জন্য। নিতুকে ঘরে রেখে যাওয়ার সময় রাজের আপু বলছিলো, ”আমার ভাইটা কিন্তু একটু দুষ্টু, সাবধানে রেখো। “না জানি কেমন দুষ্টু হবে? রাত ১০৩০ এর দিকে রাজ রুমে আসলো। নিতু উঠে গিয়ে সালাম করলো। তখনই…
- অই হারামজাদি, ওঠ। সর আমার সামনে থেকে। (রাজ)
~ কি? কি বলছেন আপনি? (নিতু)
- যা বলছি ঠিক বলছি। আমার মত ছাড়া বিয়েটা হইছে। তোকে বউ হিসেবে মানি না। (রাজ)
[এখন রাজের দিকে তাকালো নিতু। চুল গুলো হাল্কা পাকা, দাঁত গুল হলুদ। যেন জংলি। দেখতে কালো। নিতুর এখন ভেবেই রাগ হচ্ছে কি দেখে এই পরিবারে ওর বিয়ে দিলো?]
- কি হলো? কি দেখছিস ওভাবে? সর সামনে থেকে। (রাজ)
রাজ আলমারির কাছে গেলো আর ভিতর থেকে মদ বের করল। ওটা নিয়ে বারান্দায় চলে গেলো। বারান্দা থেকে মদ খাচ্ছে আর গান গাচ্ছে।
আমার রাজ্যে আমি রাজা নাইরে আমার রানী।
তাই আমি খাই শুধু মদ আর পানি।
কিছুকক্ষণ পর মাতাল হয়ে এসে।
- কিরে? ওই? তুই খাটে কি করিস? নাম খাট থেকে, এখানে শুধু আমি ঘুমাব। (রাজ)
নিতু কোনো কথা বলল না, নিচে চলে গেলো আর শুধু কাদছে। রাত যত গভির হচ্ছে কান্না ততই বাড়ছে। রাত ১টার দিকে,
- ওই হারামজাদি? কাদছিস কেন? তোর কান্নার আওয়াজে আমার ঘুম হচ্ছে না। (রাজ)
~ স্যরি। আপনি ঘুমান। (নিতু)
- ওহ! আমি তো ভুলেই গেছলাম। তোকে বিয়ে করছি তো ভোগ করার জন্যে। শাড়ি খোল, তোকে ভোগ করবো। (রাজ)
~ ক্কক্কক্কি? না, প্লিজ। দোহায় লাগি আমার এতো বড় সর্বনাশ করবেন না। (নিতু)
- কিসের সর্বনাশ রে? তুই আমার বউ, আমি তোর স্বামি। তোকে ভোগ করবো এতে কি সর্বনাশ হবে? কিচ্ছু হবে না, শাড়ি খোল। (রাজ)
~ না, প্লিজ এরকম করবেন না। (নিতু)
ধিরে ধিরে নিতুর দিকে এগোতে থাকে। মাতাল অবস্থায় ছিল তাই খাট থেকে নামার সময় উলটে পরে যায়। হয়তো অজ্ঞান হয়ে যায়। ওহ! নিতু বাঁচল, এখন ওর মনে পরছে সেই ডাইরির কথা যেটা ৩ বছর ধরে লিখেছে। ডাইরির প্রত্যেক পাতায় লেখা ছিল তার বর কে নিয়ে নিয়ে সপ্ন। তার বর তাকে খাওয়াই দেবে, মাঝে মাঝে কলে নেবে, একসাথে বাইকে ঘুরবে, কিভাবে তার শ্বশুর বাড়ির লোককে আপন করে নেবে এগুলো নিয়ে লেখা ছিল ডাইরিটা। এই ডাইরিটা হারিয়ে গেছে প্রায় ৩ মাস আগে। বাস স্ট্যান্ডে। কি আর হবে এখন? নিতুর ইচ্ছা করছে একবার যদি ডাইরিটা পায় তাহলে পুরিয়ে ফেলবে।
ভাবতে ভাবতে রাজ আবার উঠে পরে। নিতু ভয়ে কেপে উঠলো। না জানি কি হবে?
রাজ সোজা বাথ্রুমে চলে গেলো। কিছুক্ষন পর বের হয়ে আসলো। এ কি দেখছে নিতু? ঢুকলো কে আর বের হলো কে? ছেলেটা এতো Handsome and Smart? ঘন কালো বর চুল। দাঁত গুলোও তো একদম ফর্সা। দেহের রংটাও আকর্ষনিও। দেখেই তো নিতু ক্রাস খাইলো। এ কি দেখছে? এটাই কি ওর সেই বরটা? বিশ্বাস হচ্ছে না। এবার এসে আলমারি খুললো আর একটা সুতি শাড়ি নিতুর হাতে দিল। কিছুক্ষণ পরেই শুরু হবে তোমার আমার বাসর রাত।
- এই নাও, এটা পরে নাও। আমি একটু আসছি। (রাজ)
কি হচ্ছে নিতু কিছুই বুঝছে না। আর গেলই বা কই? যাই হোক, নিতু শাড়িটা পরে নিলো। একটু পর রাজ এলো। হাতে খাবার নিয়ে। ১টা প্লেটে। নিতু ভাবছে, “এবার একাই খাবে? আমারো যে খিদা লাগছে।”
রাজ এসে খাবার টা নিয়ে নিতুর কাছে আসলো। নিজ হাতে নিতুকে খাইয়ে দিলো। নিতু কিছু বুঝছে না কি হচ্ছে এসব? তখনই প্রশ্ন করল-
~ কি হচ্ছে এসব? আমি কিছুই বুঝছি না? আপনি হঠাৎ এরকম চেঞ্জ হয়ে গেলেন কিভাবে? (নিতু)
- বুঝছো না? Wait বুঝাচ্ছি। (রাজ)
রাজ আলমারি থেকে নিতুর ডাইরিটা বের করল। যেটা সে বাস-স্ট্যান্ডে হারিয়ে ফেলছিলো। সেইটা নিতুর হাতে দিলো।
~ এটা আপনার কাছে? (নিতু)
- হমম। এটা যখন পাই তখন আগ্রহে পরি। পড়তে পড়তে যে তোমার প্রেমে পরে যাই। তাই এই ডাইরি থেকে ঠিকানা নিয়ে সোজা বিয়ের প্রস্তাব দিলাম। কারন তুমি ডাইরি তে লিখছো যে কোনোদিন প্রেম করবা না, যা হবে বিয়ের পর। (রাজ)
~ বুঝলাম। কিন্তু এতক্ষন এটা কি হলো? আমি কত কষ্ট পাইছি জানো?? (নিতু)
- ওহ! স্যরি। তোমার ডাইরির ১২ নং পেজে লেখা ছিলো বাসর ঘরে তোমার বরের সাথে দুষ্টুমি করবা। তাই আমি এটা করলাম। এতক্ষন যা ছিলো সব মেকাপের কাজ। আর এখন আমি natural look-এ বুঝলা? (রাজ)
~ হমমআর কখনো এরকম করে আমাকে কষ্ট দিবা না। (নিতু)
- ওকে জানপাখি, আর কখনো না। এবার চলো। (রাজ)
~ কোথায়? (নিতু)
- কেন? ছাদে, চাঁদ দেখতে যাবা না, আজ পুর্ণিমা? (রাজ)
~ হমম, যাব তো, কিন্তু শর্ত কি ছিল মনে আছে? (নিতু)
- হমম, আছে। (রাজ)
[নিতুকে কোলে তুলে নিলাম। এভাবে নিয়ে ৪টা ফ্লোর পার করে ছাদে গেলাম]
- উহ! কোমর টা মনে হয় ভেঙ্গেই গেলো। (রাজ)
~ খুব ভালো হইছে, আমাকে কষ্ট দেওয়ার শাস্তিহিহিহিহি। (নিতু)
- হমম, ফিজিক্স বলে, সিঁড়ি দিয়ে উঠতে বেশি শক্তি লাগে, আমি তো আবার ২ জনের ভর নিলাম। (রাজ)
~ আরে রাখো তোমার ফিজিক্স, এখানে রোমাঞ্চ করতে আসছি? ফিজিক্স শিখতে না। (নিতু)
- হমম, তাই তো। (রাজ)
~ কি সুন্দর তাই না? (নিতু, চাঁদের দিকে তাকিয়ে)
- হমম, খুব সুন্দর (রাজ, নিতুর দিকে তাকিয়ে)
~ আমি চাঁদের কথা বলছি (নিতু)
- আমি আমার চাঁদের চেয়ে সুন্দর বউটার কথা বলছি? (রাজ)
~ পাগল একটা। (নিতু)
- তোমার জন্য পাগল হলেও সমস্যা নাই। (রাজ)
[অনেক্ষন ধরে গল্প করলাম। রাত প্রায় ৩৩০ বেজে গেছে]
~ চলো, রুমে যাই। (নিতু)
- ওকে। (রাজ)
~ কোলে নাও? (নিতু)
- হমম, নিচ্ছিএবার কোলে না, বাংলা সিনেমার ভিলেনের মতো ঘাড়ে তুলবো। (রাজ)
~ Wow! Interesting, ঠিক আছে, ওভাবেই নাও। (নিতু)
[আসলে কথা হলো প্রথমে কোলে নিয়ে কোমর ব্যাথা করছে তাই এভাবে নিলাম]
সিঁড়ি থেকে নামার সময়,
- হাহাহাহা সুন্দরি, এবার তোর মুখে চুন কালি মাখাবো, কেউ আমাকে আটকাতে পারবে নাহাহাহাহা। (রাজ)
আমার সাথে তাল মিলিয়ে-
~ ছেড়ে দে শয়তান, ছেড়ে দে। তুই আমার দেহ পাবি কিন্তু মন পাবি না। (নিতু)
[বউ তো দেখি আমার মতই]
- দুটোই নেবো, দেখি কে আটকায়? (রাজ)
অতঃপর বিছানায় এসে রাখলাম।
ওই? আপনারা এখনো কি শুনছেন? আর কিছু বলব না, লজ্জা করছে। চার ঠোট এক হয়ে গেলো। বাকিটা ইতিহাস।
লেখা – সাবরিন দিশা
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “তোমার আমার বাসর রাত – ঈস! আর একটু থাকো না” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – চরিত্র – জীবনের কিছু অজানা সত্য কথা
কালো মানুষ গুলি বাস্তবে কখনো বাথ্রুম থেকে সুন্দরি হয়ে আসতে পারেনা