অবন্তির খুন (শেষ খণ্ড) – লোমহার্ষক মার্ডার থ্রিলিং স্টোরি

অবন্তির খুন – লোমহার্ষক মার্ডার থ্রিলিং স্টোরি: রিফাতের কথা শুনে আমি ওইদিনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলাম। রিফাতের গলায় ওইদিন ও চেইন ছিলো। এটার মানে হচ্ছে কেউ রিফাতের চেইন চুরি করে ওটা অবন্তির ড্রেসের সাথে লাগিয়ে গাড়িতে রেখে দিয়েছে, যাতে দোষটা রিফাতের উপর আসে।


পর্ব ৫

শাকিল এবং আসাদ দু’জনেই একসাথে রিয়ার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।
রিয়ার বাবা তখন অসুস্থ।
শেষ ইচ্ছা ছিলো ভালো একটা ছেলে দেখে রিয়াকে বিয়ে দেওয়া। স্বাভাবিক ভাবে রিয়ার বাবা আসাদকে পছন্দ করলেন। কারণ আসাদের কাছে আছে বড় চাকরি। ভালো ইনকাম।
অসুস্থ বাবার ইচ্ছা রাখার জন্য আসাদকে বিয়ে করে রিয়া।

এখানেও আসাদের কাছে শাকিল হেরে যায়।
আর তারপর~
পলাশ থামলো। আমি হুড়মুড় করে চেয়ার থেকে দাঁড়িয়ে বললাম~
~ তারপর? তারপর কি হলো?”
~ তারপর শাকিল আর বিয়ে করেনি স্যার। কেনো করেনি জানিনা। হয়তো রিয়াকে ভালোবেসে অন্য কাউকে জীবনসঙ্গী করতে চায়নি।

তারপর কেটে যায় প্রায় দেড় বছর। ব্যাবসায় শাকিলের তখন ভালো একটা অবস্থান। এমন সময় আসাদের কোম্পানিতে কিছু একটা ঝামেলা হওয়ার কারণে আসাদ সহ ঐ কোম্পানির অনেকের চাকরি চলে যায়।
কিছুদিন বেকার থাকে আসাদ। তারপর শাকিলকে ফলো করে ব্যাবসা শুরু করে।
আসাদ ব্যাবসা শুরু করার পর আস্তে আস্তে শাকিলের ব্যাবসা ডাউন হয়ে যায়। জীবনের আরো একটা ক্ষেত্রে আসাদের কাছে হেরে যায় শাকিল।
আর এখন তো আপনি জানেন আসাদ এই শহরের কতো বড় ব্যাবসায়ী।

একবার ভাবুন স্যার, শাকিলের জায়গায় আপনি থাকলে কি করতেন?
ইচ্ছা হতোনা প্রতিশোধ নিতে? আমার মনে হয় শাকিল ঠিকই প্রতিশোধ নিয়েছে, অবন্তিকে খুন করে।
কিছুদিন আগে রিয়া আমাকে বললো~
“জানো পলাশ, মাঝেমাঝে আমার শাকিলের জন্য ভীষণ খারাপ লাগে।

আসাদের কাছে জীবনের প্রত্যেকটা জায়গায় হেরে গেছে। নিজের ভালোবাসাটাও হারিয়েছে।
বিয়ে অবধি করেনি আমার জন্য। কষ্ট লাগে খুব।
ওইদিন শাকিলকে বললাম~
“তোমার রাগ হয়না শাকিল?

ইচ্ছা করেনা আসাদকে খুন করে ফেলতে? তোমার জায়গায় আমি হলে তো ঠিকই আসাদকে খুন করে ফেলতাম।”
শাকিল হেসে বললো~
“রাগ হবেনা কেনো? রাগ হয়।
বহু বছরের রাগটা জমিয়ে রেখেছি। একদিন হিসাব করে সব মিটিয়ে দিবো। আসাদকেও আমার মতো কষ্ট পেতে হবে।”
আমার মনে হচ্ছে শাকিল তার প্রতিশোধ নিয়েছে স্যার। আসাদকে অনেক বড় কষ্ট দিয়েছে অবন্তিকে খুন করে।”

পলাশের কথা শুনে রিতীমত হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম।
পলাশের কথাটা অসম্ভব না।
আসাদের উপর শাকিলের তীব্র একটা রাগ থাকবে এটাই স্বাভাবিক। আর মানুষ রাগ থেকে যেকোনো কিছু করে ফেলতে পারে

মোবাইল বের করে আসাদ সাহেবকে কল দিলাম। ধরলেন। আমি বললাম~
~ শাকিলের কথা আমাকে আগে বলেননি কেনো?”
আসাদ সাহেব বললেন~
~ মেহরাব স্যার, শাকিল আমার কখনোই শত্রু ছিলোনা। ও আমার বন্ধু।
আমি শাকিলকে বহু বছর ধরে চিনি। শাকিল অবন্তিকে খুন করতেই পারেনা। এটা অসম্ভব।”

আসাদ সাহেবের কথা শুনে ইচ্ছা করছিলো মোবাইলটা হাত থেকে আছাড় দিয়ে ভেঙে ফেলি। এই মানুষটা এতো বোকা কেনো?
সবাইকে এতো বিশ্বাস করে কেনো? এখনকার এই নির্মম যুগে এসেও সবাইকে বিশ্বাস করা মানুষটা কতোটা বোকা হতে পারে আমার কোনো ধারণা নেই।
রেগে গিয়ে বললাম~
“হ্যা আপনার কাছে পৃথিবীর কেউই খুন করতে পারেনা। সবাই অনেক ভালো।
কেউ’ই খুনি না। অবন্তিকে কি তাহলে ভূত এসে খুন করেছে?”

রাগ করে ফোনটা কেটে দিলাম। কন্সটেবল আসিফকে বললাম~
“শাকিলকে ধরে থানায় নিয়ে আসতে হবে। আর শাকিলের বাসাটাও একটু ভালোভাবে সার্চ করতে হবে। বিন্দুমাত্র কিছু যাতে বাদ না পড়ে।”

শাকিলকে ধরে থানায় নিয়ে আসলাম। দেখে কোনোদিক থেকেই মনে হচ্ছেনা এই মানুষটা এরকম জঘন্য খুন করতে পারে।
নীল একটা শার্ট ইন করে পড়ে আছেন। চোখে বড় ফ্রেমের একটা চশমা।
দেখে বেশ গুছানো মানুষ মনে হলো। আমি বললাম~
~ প্রতিশোধ নিবে ভালো কথা, কিন্তু তাই’বলে নিষ্পাপ একটা বাচ্চা মেয়েকে এভাবে পশুর মতো খুন করতে হাত কাপলোনা? এত্ত রাগ আসাদের উপর?”

আমার কথা শুনে শাকিল বড় একটা নিশ্বাস নিলো।
চোখ থেকে চশমাটা হাতে নিয়ে মুছতে মুছতে বললো~
~ আমি অবন্তিকে খুন করেছি এটার কোনো প্রমাণ আছে আপনার কাছে?”
~ প্রমাণ নেই এটা ঠিক। কিন্তু অবন্তিকে খুন করার জন্য তোমার কাছে যথেষ্ট কারণ আছে। পড়াশুনা, চাকরি, নিজের ভালোবাসা, বিয়ে, তোমার বিজনেস, প্রত্যেকটা জায়গায় আসাদ তোমার ক্ষতি করেছে। কোনো মানুষ একজনের কাছে এতো কিছু হারানোর পরেও প্রতিশোধ নিবেনা এটা কিভাবে সম্ভব? অনেক রাগ তো থাকবেই।”

আমার কথা শুনে শাকিল ফিক করে হাসলো।
বললো~
~ রাগ? আসাদের উপর?
স্যার আমার মা আমাকে ছোট রেখে মারা যান। ছোটবেলায় চারপাশে তাকিয়ে যখন মায়েদের ভালোবাসা দেখতাম, খুব কান্না পেতো।
আমার কেনো মা নেই?
মায়ের ভালোবাসা ছাড়া স্কুল লাইফ কাটিয়েছি।

কিন্তু আসাদের সাথে ফ্রেন্ডশিপ হওয়ার পর আমি নতুন একটা মা পেয়েছিলাম। আসাদের মা। আমি কখনোই তাকে মা ছাড়া অন্য কিছু বলে ডাকিনি। আর তিনিও আমাকে এবং আসাদকে কখনো আলাদা ভাবতেন না। আমাকে নিজের ছেলের মতো ভালোবাসা দিয়েছিলেন।
আমি ঠিক তখন থেকেই আসাদকে নিজের ভাই ভাবতাম। কখনো কল্পনাও করিনি আসাদের কোনো ক্ষতি আমি করবো।
বাকি রইলো আমার ক্ষতিগুলোর কথা।

ওটা আসাদ নয়, আমি নিজেই করেছি আসাদের হাসি দেখার জন্য। তাকে স্পেশাল ফিল করানোর জন্য। জয়ের আনন্দ দেওয়ার জন্য।
এক্সামে সবসময় ইচ্ছা করেই কিছু মার্কস ছেড়ে আসতাম, যাতে আমার চাইতে আসাদের রেজাল্ট ভালো হয়।
আর রিয়ার বিষয়টা? হ্যা এটা ঠিক যে আমি রিয়াকে ভালোবাসতাম। কিন্তু রিয়া কখনোই আমাকে ওইভাবে দেখেনি। শুধুই ফ্রেন্ড ভাবতো। আমি যখন জানলাম আসাদ রিয়াকে পছন্দ করে, তখন আমি আসাদের সামনে অভিনয় করলেও রিয়াকে আড়ালে বলেছিলাম আসাদকে যেনো এক্সেপ্ট করে নেয়। রিয়ার বাবার কাছে গিয়েও অনুরোধ করেছিলাম আসাদের সাথে রিয়ার বিয়েটা দেওয়ার জন্য।

চাকরির ইন্টারভিউটা ইচ্ছা করেই খারাপ করেছি।
খুব করে চেয়েছিলাম যাতে আসাদ চাকরিটা পেয়ে যায়।
আসাদ চাকরিটা পেলো।
আমিও অনেক খুশি হলাম।

কিন্তু বছর দু’য়েক পর আসাদের কোম্পানিতে ঝামেলা হওয়ার জন্য যখন আসাদের চাকরিটা চলে যায়, আসাদের চাইতেও আমার মনটা বেশি খারাপ হলো।
তারপর আমি নিজেই আসাদকে ব্যাবসায় নিয়ে আসি। আসাদকে শুরু থেকে শিখাই ব্যাবসা কিভাবে করতে হয়। আর আপনি এখন ওইসবের জন্য বলছেন আমি অবন্তির মতো নিষ্পাপ একটা বাচ্চাকে খুন করেছি? ছিঃ।”

শাকিলের কথা শুনে চুপ করে বসে রইলাম।
কি বলবো বুঝতে পারছিনা।
শাকিলের কথাগুলো সত্যি হলে শাকিল অবন্তিকে খুন করার কোনো প্রশ্নই আসেনা।
তাহলে খুনিটা কে?

খানিকক্ষণ পর আমি বললাম~
~ তোমার কথাগুলো যে সত্যি এটার কোনো প্রমাণ আছে?”
শাকিল হাসলো। হাসতে হাসতে বললো~
~ স্যার এসবের প্রমান তো স্বয়ং রিয়া, আসাদ, ওরা নিজেই। আসাদকে গিয়ে জিজ্ঞাস করুন তাকে ব্যাবসায় এনেছিলো কে। রিয়াকে গিয়ে জিজ্ঞাস করুন আসদকে এক্সেপ্ট করার জন্য তাকে অনুরোধ করেছিলাম কি’না।
স্যার আমি জানিনা আপনারা কেনো জোর করে আমাকে আর আসাদকে শত্রু বানিয়ে দিচ্ছেন। আমরা কখনোই শত্রু ছিলাম না। আসাদ আমার ভাই। আমার বন্ধু। শত্রু না।”

আমি বড় একটা দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বসে রইলাম। চুপচাপ। নিঃশব্দ। আমার মাথা কাজ করছেনা।
রিফাত, পলাশ, রিয়া, শাকিল, আমি নিশ্চিত এই ৪জনের ভিতর কেউ একজন তো খুনি। কেউ একজন তো নিশ্চিত আমার সাথে গেম খেলছে।
কিন্তু কে?

কপালে হাত দিয়ে বসে রইলাম। মনে মনে ঠিক করলাম “আবার প্রথম থেকে শুরু কর‍তে হবে।”
শাকিলকে বললাম~
~ তুমি এখন যেতে পারো।
কিন্তু শহরের বাইরে পারমিশন ছাড়া একদম যেতে পারবে না। যেকোনো প্রয়োজনে আবার তোমাকে ডাক দিতে পারি। আমি খোঁজ নিয়ে দেখি তোমার কথার সত্যতা কতোটুকু।”

শাকিল মুচকি একটা হাসি দিয়ে চেয়ার থেকে উঠে হাঁটা শুরু করলো।
ঠিক এমন সময় আমার কাছে একটা কল আসলো।

কন্সটেবল আসিফের কল। ধরলাম। আসিফ বললো~
~ স্যার শাকিলের গাড়ির ডিকি’তে একটা রক্তাক্ত স্কুল ড্রেস পাওয়া গেছে।”
কথাটা শুনামাত্র আমি হুড়মুড় করে দাঁড়ালাম। বললাম~
“তুমি ওইখানে থাকো, আমি আসছি।”

আমি নিশ্চিত ছিলাম এটা অবন্তির স্কুল ড্রেস হবে।
কারণ অবন্তির শরীরে আমরা সুতো পরিমাণ ও কোনো কাপড় পাইনি।
শাকিলকে দেখলাম হাসিমুখে হেঁটে থানা থেকে বের হয়ে যাচ্ছে। ডাক দিলাম~
~ শাকিল সাহেব একটু দাঁড়ান।”

শাকিল থামলো। আমি শাকিলের কাছে গেলাম।
ইচ্ছা করছিলো ওর গালে ঠাসসস করে একটা থাপ্পড় মারি। কিন্তু নিজের রাগটা কন্ট্রোল করলাম।
শাকিল বললো~
~ আবার কি হলো স্যার? ডাকলেন কেনো?”

আমি বললাম~
~ আমার আম্মা আমাকে বারবার একটা কথা বলতেন “পৃথিবীর সবচাইতে বোকা ঐ মানুষ, যে অন্য মানুষের সহজ সরল চেহারা দেখে তাকে ভালো মানুষ ভাবে’।
আমিও সেই বোকাদের কাতারে পড়ে গেলাম।
মানুষ আসলে এমন একটা জাতি, যে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়া বিষাক্ত সাপকেও কখনো কখনো সেবা করে করে বাঁচিয়ে তুলে। আবার কখনো কখনো ৬মাসের গর্ভবতী নিষ্পাপ হাতিকেও ভীষণ বাজেভাবে খুন করে। মানুষের দ্বারা সবকিছুই সম্ভব। মানুষ জাতিকে চিনতে পারা, বুঝতে পারা, হয়তো এই পৃথিবীর সবচাইতে কঠিন কাজ।”

শাকিল আমার কথা শুনে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে রইলো। আমাকে বললো~
~ আমি ঠিক বুঝিনি স্যার। কি বুঝাতে চাইলেন?”
আমি হেসে বললাম~
~ চলো একসাথেই তোমার বাসায় যাওয়া যাক।”

শাকিলের বাসায় পৌছালাম।
ভীত পায়ে শাকিল আস্তে আস্তে হাটছে। কন্সটেবল আসিফ শাকিলের গাড়ির ঠিক সামনেই দাঁড়িয়ে আছে।
আমাকে দেখামাত্র গাড়ির ডিকি খুলে আসিফ বললো~
~ স্যার গাড়ির ডিকিতে এই ড্রেসটা ছিলো। সাথে একটা হাতঘড়িও আছে।”

আমি কিছু বলার আগেই শাকিল চিল্লায়া উঠলো~
~ এগুলো আমার গাড়িতে আসলো কিভাবে?”
আমি ফিক করে হাসলাম।
বললাম~
~ হিহিহি। আবার শুরু হয়েছে নাটক। সব বুঝা হয়ে গেছে শাকিল। তুমি ফেসে গেছো।

এবার দেখো তোমাকে আমি কি করি। এবার তো লাশের সাথে তোমার হাতঘড়িও আছে। হয়তো অবন্তির লাশটা ডিকি থেকে কিছু করার সময় ঘড়িটা ভুল করে পড়ে গেছে।”
শাকিল আরো জোরে চিল্লায়া বললো~
~ মেহরাব স্যার আমি ঘড়ি ইউজ করিনা। আমি জানিনা এই ড্রেসটা কিভাবে আমার গাড়িতে আসলো। আমি যদি খুন করতাম তাহলে আমি এতোটাও বোকা না যে খুনের প্রমাণ আমি আমার গাড়িতে রাখবো। ওয়েইটঘড়িটা একটু দেখান তো আমাকে।”

শাকিলের কথাটা শুনে চিন্তায় পড়ে গেলাম। কথায় লজিক আছে। কেউ খুন করে নিজের গাড়িতে প্রুভ রাখবেনা।
ডিকি থেকে ঘড়িটা হাতে নিয়ে শাকিলের দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললাম~
~ এই ঘড়িটা তোমার না?”
শাকিল কোনো উত্তর দিলোনা। ঘড়িটার দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।

খানিকক্ষণ পর বললো~
~ মেহরাব স্যার এই ঘড়িটা আমি চিনেছি। এটা রাজুর ঘড়ি।”
আমি আরো একটা নতুন নাম শুনলাম। রাজু। আমার রাগে ইচ্ছা করছিলো নিজের চুলগুলো নিজে ছিড়ে ফেলি।
আমি বললাম~
~ রাজু? এই রাজুটা আবার কে?”

~ স্যার রাজু ছিলো আমাদের ভার্সিটির ১বছরের সিনিয়র।
কিছুদিন আগেই আমার কাছে একবার এসেছিলো। ওর আম্মুর না’কি অপারেশন করাবে তাই কিছু টাকা ধার চাইছিলো। আমি তখন ওর হাতে এই ঘড়িটা দেখি।
আরেকটা গোপন কথা স্যার।
রাজু ছিলো রিয়ার প্রেমিক। এটা আমি ছাড়া কেউই জানেনা। আসাদ ও না।”

ওহ মাই গড। কি হচ্ছে এগুলো? আমার মাথা ঘুরাচ্ছে। একের পর এক আর নিতে পারছিনা।
শাকিলকে বললাম~
~ রিয়া রাজুর সাথে প্রেম করতো এটা তুমি ছাড়া কেউ জানেনা, এমনকি আসাদ ও না। এটার মানে কি?”

শাকিল বললো~
~ স্যার ভার্সিটিতে মাঝেমধ্যে রিয়াকে দেখতাম রাজুর সাথে। যখন আমি আর আসাদ রাজুর ব্যাপারে রিয়াকে জিজ্ঞাস করতাম, রিয়া বলতো~
“আরে ভার্সিটির বড় ভাই। অন্য কিছুনা।”

রিয়া সবসময় কেমন জানি এই বিষয়টা এড়িয়ে যেতো।
কেনো লুকাতো জানিনা।
একদিন রাজু এবং রিয়াকে একটু অন্যরকম অবস্থায় রিক্সায় যেতে দেখলাম। আমার ভিতর তখন সন্দেহ জাগলো যে ওরা প্রেম করছে।

তখন ভার্সিটি শেষ করে মাত্রই আমরা ক্যারিয়ার শুরু করেছি। একদিন সন্ধ্যায় দেখলাম একটা রেস্টুরেন্ট থেকে বের হয়ে রিয়া এবং রাজু একে অপরের গালে কিস দিয়ে, জড়িয়ে ধরে, বিদায় নিচ্ছে। আমি তখন নিশ্চিত হই ওরা রিলেশনে আছে। আমার মুহুর্তেই আসাদের কথা মনে হলো।

আসাদ রিয়াকে অনেক বেশি ভালোবাসে। রিয়া অন্য কারো হলে আসাদ সহ্য করতে পারতোনা। ওইদিন রাতেই আমি আসাদের কাছে গিয়ে বলি~
~ দোস্ত, জীবনের সবক্ষেত্রে তুই আমাকে হারিয়ে দিলেও রিয়ার ক্ষেত্রে আমি জয়ী হবো। ভাবছি আগামীকাল রিয়ার বাবার কাছে বিয়ের প্রস্তাব পাঠাবো।”
আসাদ বললো~
~ তাহলে আগামীকাল আমিও প্রস্তাব পাঠাবো। দেখি ভাগ্য কার দিকে রিয়াকে নেয়। আমার ভালোবাসার শক্তি বেশি, না’কি তোর। দেখা যাবে।”
তারপর তো আর আপনি সব জানেন মেহরাব স্যার।

শাকিলের কথা শুনে মাথাটা ভীষণ ঝিমঝিম করছে।
এখন আবার রিয়ার বিয়ের আগের প্রেমিক রাজুকে ধরতে হবে। উফফফ।”

আস্তে আস্তে ডিকি থেকে ড্রেসটা হাতে নিলাম।
ড্রেসটা খুলতেই আমার চোখগুলো বড়বড় হয়ে গেলো। ড্রেসের বোতামের সাথে একটা চেইন আটকানো। এটা কি রাজুর চেইন? চেইনটা হাতে নিয়ে শাকিলকে দেখিয়ে বললাম~
~ একটু ভালো করে দেখো’তো এটাও কি রাজুর চেইন?”

শাকিল বললো~
~ স্যার এটা রাজুর চেইন না।
রাজু গলায় চেইন পড়েনা।
আমার স্পষ্ট মনে আছে ওইদিন ও রাজুর গলায় কোনো চেইন ছিলোনা।”

আমি অবাক হয়ে এক দৃষ্টিতে চেইনটার দিকে তাকিয়ে রইলাম।

এই চেইনটা তাহলে কার?”

ড্রেস, হাতঘড়ি, এবং চেইনটা নিয়ে আসাদ সাহেবের বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম।
ড্রেসটা অবন্তির কি’না ভেরিফাই করে নেওয়াটা জরুরী।

আসাদ সাহেবের বাসায় পৌছালাম। দরজা খুললো রিয়া। রিয়াকে দেখা’মাত্রই রাগে মাথাটা গরম হয়ে গেলো। আমি ভালো করেই বুঝে গেছি অবন্তির খুনের জন্য রিয়ার এই সুন্দর চেহারাটাই দায়ী।
রাগটা কন্ট্রোল করলাম। বললাম~
~ আসাদ সাহেব কোথায়?”
~ জানিনা। বাসায় নেই।আপনি ভিতরে আসুন।”

আমি ভিতরে ঢুকলাম।
খেয়াল করলাম টেবিলের উপর কয়েকটা মেডিসিন রাখা।
আমি বললাম~
~ এই মেডিসিন কিসের?

আপনি কি অসুস্থ?”
রিয়া বললো~
~ না আমি ঠিক আছি।
এগুলো আসাদের মেডিসিন।
কি’জন্য খায় আমি জানিনা।”

আমি বিষয়টা ইগনোর করলাম। ব্যাগ থেকে স্কুল ড্রেসটা বের করে বললাম~
~ একটু ভালো করে দেখুন তো এটা অবন্তির ড্রেস?”
রিয়া ড্রেসটা দেখামাত্র হাউমাউ করে কেঁদে উঠলো।

মুহুর্তেই চোখের পানিগুলো গাল বেয়ে টুপ টুপ করে পড়ছে। রিয়া কান্না করতে বললো~
~ এটা আমার অবন্তির ড্রেস।
এই বোতামগুলো আমি নিজের হাতে লাগিয়ে দিয়েছি। অবন্তি মা আমার, তুই কোথায়? একটাবার মায়ের বুকে আয়।”

চিৎকার করে কান্না করতে করতে বিড়বিড় করছে রিয়া।
আর যাইহোক, এই আর্তনাদ মিথ্যা নয়।
আমি জানিনা এই মুহুর্তে রিয়াকে আর কিছু জিজ্ঞাস করাটা উচিত হবে কি’না। তারপরেও চেইনটা বের করে বললাম~
~ কান্না থামাও। অবন্তির খুনির অবশ্যই বিচার হবে। এখন এই চেইনটা একটু ভালো করে দেখে বলো চিনতে পারো কি’না?

এটা ড্রেসের বোতামে আটকানো ছিলো।”
রিয়া পানিতে টলমল করা চোখে চেইনটার দিকে তাকালো। তাকানো মাত্রই কান্না জড়িত কন্ঠে চিৎকার করে বললো~
“স্যার এটা রিফাতের চেইন।
এই চেইনটা আসাদ রিফাতের জন্মদিনে গিফট করেছিলো।

আমি বলেছিলাম শুরুতে, আপনি শুনেননি।
আমি চিৎকার করে বলেছি এই ড্রাগ নেওয়া লম্পট রিফাত~ ই খুনি।
আমার অবন্তিকে রিফাত ই মেরেছে। আমার অবন্তি না জানি কতোটা কান্না করেছে। কতোটা চিৎকার করেছে।
অবন্তি মা আমার, কোথায় তুই? মায়ের কাছে আয়।

মা’কে মাফ করে দে।
মা তোকে ওই রিফাতের হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি।”
মা’কে ক্ষমা করে দে।
ক্ষমা করে দে।”
ড্রেসটা জড়িয়ে ধরে অবিরাম কান্না করে যাচ্ছে রিয়া।


পর্ব ৬ (অন্তিম)

রিয়া পানিতে টলমল করা চোখে চেইনটার দিকে তাকালো। তাকানো মাত্রই কান্না জড়িত কন্ঠে চিৎকার করে বললো~
“স্যার এটা রিফাতের চেইন।
এই চেইনটা আসাদ রিফাতের জন্মদিনে গিফট করেছিলো।

আমি বলেছিলাম শুরুতে, আপনি শুনেননি।
আমি চিৎকার করে বলেছি এই ড্রাগ নেওয়া লম্পট রিফাত~ ই খুনি। আমার অবন্তিকে রিফাত ই মেরেছে। আমার অবন্তি না জানি কতোটা কান্না করেছে। কতোটা চিৎকার করেছে।
অবন্তি মা আমার, কোথায় তুই? মায়ের কাছে আয়।

মা’কে মাফ করে দে।
আমি তোকে ওই রিফাতের হাত থেকে বাঁচাতে পারিনি।”
মা’কে ক্ষমা করে দে।
ক্ষমা করে দে।”
ড্রেসটা জড়িয়ে ধরে অবিরাম কান্না করে যাচ্ছে রিয়া।

কথা বলার মতো অবস্থায় নেই বুঝতে পারছি।
এই মুহুর্তে রিয়ার সাথে কথা বাড়ানোটা উচিত মনে করলাম না।

প্রমাণগুলো ব্যাগে ঢুকিয়ে রুম থেকে বের হবো ঠিক এমন সময় আমার নজর পড়লো দেয়ালে রাখা একটা ফ্রেমের উপর। আসাদ এবং রিয়ার বিবাহ স্মরণিকা। বিয়ের তারিখটা নজরে পড়তেই প্রচন্ড হাই ভোল্টেজের শকড খেলাম। ১৫এপ্রিল।
আবার একিই বছরের ২০ নভেম্বর অবন্তির জন্ম।

অর্থাৎ বিয়ের তারিখ থেকে অবন্তির জন্ম অবধি তফাৎটা ৭মাসের। কিন্তু আমার যতোদূর মনে পড়ে রায়গড় হসপিটালে যখন অবন্তির জন্মের খোঁজ নেই, তখন ডেলিভারি ফাইলে দেখেছিলাম অবন্তি প্রিম্যাচিউর বেবি না। পুরো ৯মাস পরেই অবন্তির জন্ম হয়েছে।
হিসাবটা মিলাতে পারছিনা।
তাহলে কি অবন্তি আসাদের সন্তান নয়? না’কি আমি ভুল দেখেছি ফাইলে’?”

আসাদ সাহেবের বাসা থেকে তাড়াতাড়ি থানায় আসলাম।
রায়গড় হসপিটাল থেকে নিয়ে আসা ফাইলটা হুড়মুড় করে বের করে আবারো চেক করলাম।
আমি ঠিকই দেখেছি।

অবন্তি যখন নয় মাসে জন্ম নেয়, তখন রিয়া এবং আসাদের বিয়ের বয়স সাত মাস। হিসাব পরিষ্কার।
নিশ্চিত হলাম অবন্তি আসাদের মেয়ে না।
অবন্তি তাহলে কার মেয়ে?

এসব নাটকের পিছনে ভালো মানুষ সেজে থাকা আসাদ দায়ী নয়’তো?
হয়তো কোনোভাবে জেনে গেছিলো অবন্তি ওর নিজের সন্তান না। প্রচন্ড রাগ থেকে হয়তো অবন্তিকে খুন করে ফেলছে।
কিন্তু অবন্তির ড্রেসের সাথে রিফাতের চেইন, রাজুর হাতঘড়ি, এগুলো কেনো?
আসাদ কি ওদের ফাসাতে চাইছিলো? অসম্ভব না।

মুহুর্তেই আমার সন্দেহটা সবার উপর থেকে সরে আসাদ সাহেবের উপর আসলো।
থানা থেকে তাড়াতাড়ি বের হলাম। উদ্দেশ্য রায়গড় হসপিটাল। আমি নিশ্চিত ওইখান থেকে আরো কিছু তথ্য পাওয়া যাবে।

রায়গড় হসপিটালে পৌছালাম। আমার সামনে বসে আছেন রায়গড় হসপিটালের হেড ডাক্তার তাসলিমা। সাত বছর আগে তিনিই রিয়ার ডেলিভারি করেছেন।
আমি সরাসরি বললাম~
~ সাত বছর আগে রিয়া নামের একটা মেয়ের ডেলিভারি করেছিলেন। যার স্বামীর নাম ছিলো আসাদ। মনে আছে?”

ডা: তাসলিমা বললেন~
~ না মনে নেই। কতো শত ডেলিভারি করেছি, আমি কি সবার নাম মনে রাখবো?”
উনার কথা শুনে বুঝতে পারলাম কিছু লুকাতে চাচ্ছেন। আমি বললাম~
~ সবাইকে মনে না রাখলেও রিয়ার নামটা তো আপনার মনে থাকার কথা। রিয়ার নাম্বার যখন আমরা ট্রেক করি, তখন দেখেছি আপনি প্রায় কিছুদিন পর পর রিয়াকে কল দিতেন। অনেক লং টাইম কথা হতো আপনাদের। শুধু এটাই না, রিয়ার ব্যাংক একাউন্ট থেকে মাঝেমধ্যেই আপনার একাউন্টে টাকা ট্রান্সফার হতো। এবার বলুন, চিনেছেন রিয়াকে?”

ডা: তাসলিমা কিছুটা ইতস্তত হয়ে বললেন~
~ ওহ আচ্ছা রিয়া? হ্যা মনে পড়েছে৷ আমিই ওর ডেলিভারি করেছিলাম। তো কি হয়েছে এখন?”
~ দেখুন ডাক্তার ম্যাডাম, একটা নিষ্পাপ বাচ্চা মেয়ে মারা গেছে। রিয়ার মেয়ে। জঘন্য ভাবে তাকে খুন করা হয়েছে। রেপ করা হয়েছে।
আমি জানি আপনার কাছে অনেক তথ্য আছে যেগুলো আমাদের অনেক কাজে আসবে। প্লিজ হেল্প করুন আমাদের। অন্যথায় এই কেসটায় আপনি ফেঁসে যাবেন।”
আমার কথা শুনে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন ডা: তাসলিমা।

মুখে স্পষ্ট বড় রকমের শকড খাওয়ার ছাপ দেখা যাচ্ছে।
আমাকে বললেন~
~ কি বললেন আপনি? অবন্তি মারা গেছে?”

~ হ্যা। কয়েকদিন হলো। এখন আপনার কাছে এসেছি কিছু তথ্য জানার জন্য। আমাকে দয়া করে এটা বলুন ঠিক কি হয়েছিলো ওইদিন।”
ডা: তাসলিমা চশমাটা খুললেন। ছোট একটা নিশ্বাস ছেড়ে বললেন~
~ ওইদিন রিয়ার ডেলিভারি হওয়ার পর রিয়া এবং রিয়ার আম্মু আমার কাছে এসে অনুরোধ করেছিলেন আসাদকে যেনো বলি বাচ্চাটা ৭মাসে হয়েছে। প্রিম্যাচিউর বেবি। অন্যথায় আসাদ সত্যিটা জানলে খারাপ কিছু একটা হয়ে যাবে।
আমি প্রথমে রাজি হইনি।

পরে উনারা অনেকগুলো টাকা দিলেন আমাকে।
আমি লোভ সামলাতে পারিনি। টাকাটা নিয়ে নিলাম।
ব্যাস তারপর থেকে মাঝেমধ্যেই রিয়াকে ব্ল্যাকমেইল করে টাকা আনতাম।”
~ তারমানে আসাদকে অবন্তির বিষয়ে আপনি কিছুই বলেন নি?”
~ না স্যার, আমি কিছু বলিনি।

আসাদ ওইটা নিজ থেকেই বুঝে গেছিলো।
মাস তিনে’ক আগে আসাদ একবার এসেছিলো আমার কাছে। আমাকে বললো~
”আমি জানি অবন্তি আমার সন্তান না। অবন্তি প্রিম্যাচিউর বেবিও না। প্রিম্যাচিউর বাচ্চাগুলোর সাধারণত ওজন অনেক কম হয়। আকারে ছোট হয়। দেখলেই বুঝা যায়। আমি যেদিন প্রথমবার অবন্তিকে কোলে নিয়েছিলাম সেদিন ই সন্দেহ হয়েছিলো।

তারপর একদিন ফোনে রিয়া এবং আপনার সব কথা শুনে আমি নিশ্চিত হয়েছি অবন্তি আমার মেয়ে না৷
একটা রিকুয়েস্ট করি আপনাকে? রিয়াকে প্লিজ আর ব্ল্যাকমেইল করিয়েন না। ওরে ভালো থাকতে দিন।”

ডা: তাসলিমার কথা শুনে আমি থ হয়ে বসে রইলাম।
তারমানে আসাদ সব জানতো। সব জেনেও এতোদিন রিয়ার সাথে খারাপ ব্যাবহার বা অবন্তির সাথে খারাপ ব্যাবহার করেনি।
রিয়াকে ডিভোর্স ও দেয়নি।

বুঝতে পারছিনা অবন্তিকে আসাদ খুন করেছে? না’কি অন্যকেউ? আসাদ সবকিছু জানার পরেও রিয়াকে ডিভোর্স দিলোনা কেনো?
আমি বললাম~
~ আসাদের কাছের কেউ কি আপনাকে এই বিষয়ে কখনো কিছু জিজ্ঞাস করেছিলো? বা আসাদের কাছের কেউ কি অবন্তির বিষয়টা জানতো?”
ডা: তাসলিমা চুপ করে রইলেন। কোনো কথা বললেন না।

আমি আবার বললাম~
~ আমি নিশ্চিত আপনি এখনো কিছু লুকাতে চাচ্ছেন। বলুন?”
ডা: তাসলিমা ঢোক গিলে বললেন~
~ ওইদিন আসাদ সাহেব আমার কাছ থেকে চলে যাওয়ার পর উনার ছোট ভাই রিফাত এসেছিলো। রিফাত আড়াল থেকে আমার আর আসাদ সাহেবের সব কথা শুনে নিয়েছিলো।

আমার সাথে এসে প্রচন্ড বাজে ব্যাবহার করছিলো স্যার। দেখে বুঝাই যাচ্ছিলো নেশা করে এসেছে।
আমাকে বললো~
“রিয়ার কাছ থেকে ব্ল্যাকমেইল করে যে টাকাগুলো নিয়েছিস ওগুলো এখন ই দে।”
আমি ওর চেহারা দেখে প্রচন্ড ভয় পেয়ে যাই। নেশাখোরদের মতো লাল লাল চোখ। আমি ভয় পেয়ে আমার কাছে যা টাকা ছিলো দিয়ে দেই। তারপর রিফাত আমাকে বলে “ও এখনে এসেছিলো এই কথাটা যেনো কাউকে না বলি। অন্যথায় আমার ফ্যামিলির ক্ষতি করবে।”

ডা: তাসলিমার কথা শুনে আমি এটা নিশ্চিত হলাম, আসাদ এবং রিফাত দুজনেই জানতো অবন্তি তাদের নিজেদের রক্তের কেউ না।
একদিকে ধোঁকা খাওয়া আসাদ, অন্যদিকে ড্রাগে আসক্র রিফাত, যে কেউ খুন করতে পারে অবন্তিকে।
আমি রায়গড় হসপিটাল থেকে থানায় চলে আসলাম।

রিফাতকে কল দিয়ে থানায় আসতে বললাম। রিফাত আসলো। আমি বললাম~
~ ইদানিং ড্রাগ নেওয়া ভালোভাবে চলছে তো?”
রিফাত আমার কথার কোনো উত্তর দিলো না। মাথা নিচু করে বসে আছে।
আমি আবার বললাম~
~ তোমার গলার চেইনটা কোথায়?”

~ স্যার ওইটা চুরি হয়ে গেছে।”
রিফাতের কথা শুনে আমি খিক খিক করে হেসে উঠলাম। বললাম~
~ মানে তুমি যা আমাকে বলবে আমি সেটাই বিশ্বাস করবো? তোমার চেইনটা অবন্তির রক্তাক্ত ড্রেসের বোতামে আটকানো অবস্থায় পাওয়া গেছে। বুঝতে পারছো তুমি? অবন্তির রক্তাক্ত ড্রেস, এটা ছোট কোনো কথা না।”

রিফাত অবাক হয়ে বললো~
~ কিই? স্যার আমাকে কেনো ফাসাচ্ছেন বারবার? আপনি তো জানেন আমি কক্সবাজার ছিলাম বন্ধুদের সাথে।তাছাড়া ওই চেইনটাও অবন্তির মৃত্যুর পরে চুরি হয়েছে। আপনি যেদিন আমাকে প্রথম নিয়ে আসছিলেন থানায়, ওইদিন ও এটা আমার গলায় ছিলো।
থানা থেকে বের হওয়ার পর এটা চুরি হয়ে যায়। আপনার থানায় সিসিটিভি থাকলে চেক করুন। কেউ আমাকে বাজেভাবে ফাসাচ্ছে স্যার।”

রিফাতের কথা শুনে আমি ওইদিনের সিসিটিভি ফুটেজ দেখলাম। রিফাতের গলায় ওইদিন ও চেইন ছিলো। এটার মানে হচ্ছে কেউ রিফাতের চেইন চুরি করে ওটা অবন্তির ড্রেসের সাথে লাগিয়ে গাড়িতে রেখে দিয়েছে, যাতে দোষটা রিফাতের উপর আসে।
কিন্তু কে করবে এমন?

আমার কাছে এখন স্রেফ দুইজন মানুষ আছে।
এক, রিয়ার স্বামী আসাদ।
দুই, রিয়ার আগের প্রেমিক রাজু।
আমি নিশ্চিত এই দুইজনের ভিতর কেউ একজন খুনি।

আসাদ এবং রিয়াকে থানায় ডেকে আনলাম। দুজনেই আমার সামনে বসে আছে। চুপচাপ।
আসাদ সাহেবকে বললাম~
~ আপনি কি অসুস্থ? ওইদিন কিছু মেডিসিন দেখলাম আপনার বাসায়। এগুলো কিসের মেডিসিন?”
আসাদ সাহেব বললেন~
~ অবন্তির মৃত্যুর পর থেকে রাতে ঘুমাতে পারছিলাম না।

শরীরটাও ঠিক যাচ্ছিলো না। এজন্য মেডিসিনগুলো নিচ্ছি।”
উনার কথা শুনে আমি খিক করে হেসে বললাম~
~ এমন ভাব নিচ্ছেন যেনো অবন্তি আপনার নিজের ই সন্তান। ভালো চেহারার ভিতর কতো যে নোংরামি লুকিয়ে থাকে, সেটা আপনাকে না দেখলে বুঝতে পারতাম না।”

আমার কথা শুনে আসাদ সাহেব কিছু বললেন না। মাথা নিচু করে বসে রইলেন। কিন্তু রিয়া বড়বড় চোখে আমার দিকে তাকিয়ে রইলো।
আমি রিয়াকে বললাম~
~ এভাবে তাকিয়ে কোনো লাভ নাই। কি মনে হচ্ছে তোমার? আসাদ কিছু জানেনা?

আসাদ অনেক আগে থেকেই জানতো যে অবন্তি তার সন্তান না। এখন আর কোনো অভিনয় করিওনা রিয়া।
কোনোকিছু করেই আর সত্যিটা লুকাতে পারবেনা।
এখন সত্যি করে বলো অবন্তি আসলে কার সন্তান?”

রিয়া কোনো কথা বলছেনা।
হাত দিয়ে মুখ ঢেকে চুপচাপ বসে আছে।
আমি একটু ধমক দিয়ে বললাম~
~ ব্যাসসস, অনেক নাটক করেছো। আর নতুন কোনো নাটক না। তাড়াতাড়ি বলো অবন্তি কার সন্তান?”

রিয়া জোরে চিল্লায়া উঠলো~
~ হ্যায়ায়া অবন্তি আসাদের মেয়ে না। অবন্তি রাজুর মেয়ে। বিয়ের আগে আমার রাজুর সাথে রিলেশন ছিলো।
আমরা অনেক গভীর রিলেশন অবধি চলে গেছিলাম৷ কিন্তু একদিন হুট করেই আসাদ বিয়ের প্রস্তাব পাঠায়।
আমার বাবা তখন অসুস্থ।

জীবনে আমার বাবা আমার কাছে কিচ্ছু চাননি। ওইদিন অনুরোধ করে আমাকে বলেছিলেন~
“আসাদকে বিয়ে করে নে মা। এটা তোর কাছে আমার প্রথম এবং শেষ চাওয়া।
তুই অনেক সুখে থাকবি।

আমি মরার পর দূর থেকে তোর সুখ দেখে শান্তি পাবো।”
আমি কি করতাম তখন?
কি করার ছিলো আমার?
তাও আমি তখন বুঝতে পারিনি আমি প্রেগন্যান্ট।

বাবার ইচ্ছা রাখার জন্য বিয়েতে রাজি হয়ে যাই৷ আসাদকে বিয়ে করি।
যখন বুঝতে পারি আমার পেটে রাজুর সন্তান, আমি তখন আসাদকে কিভাবে বলতাম যে আমার পেটে অন্য কারো সন্তান নিয়ে তোমাকে বিয়ে করেছি। কিভাবে বলতাম?”

রিয়া কান্না করছে।
আসাদের চোখগুলোও টলমল করছে।
আমি রিয়াকে বললাম~
~ রাজুর সাথে আর কোনো যোগাযোগ হয়নি?”

~ না মেহরাব স্যার, বিয়ের কয়েকদিন আগে থেকেই রাজুর সবকিছু ব্লক করে দেই। তারপর রাজুর আর কোনো খোঁজ আমি জানতাম না। কিন্তু কয়েক’মাস আগে আমার নাম্বারে একটা কল আসে। আননোন নাম্বার।
কল ধরে বুঝতে পারি এটা রাজু। ওইদিনের পর আমাকে অনেকবার কল মেসেজ করতো। আমি রিপ্লাই দিতাম না। একবার তো আমার বাসায় ও চলে এসেছিলো।

পাগলের মতো আচরণ করছিলো। ওকে দেখেই বুঝা যাচ্ছিলো ড্রাগ নেওয়া শুরু করেছে। আমাকে বললো~
“তুমি স্বামী আর বাচ্চা রেখে আমার সাথে চলো। আমি তোমায় অনেক ভালোবাসবো। অনেক সুখে রাখবো।”
পাগলের মতো আরো অনেক কথা বলছিলো স্যার।”

আমি রিয়াকে আর কিছু বলার আগে কান্না জড়িত কন্ঠে আসাদ সাহেব রিয়াকে বললেন~
“আমাকে তো একটাবার বলতে পারতে রিয়া।
এই পৃথিবীতে ভালোবাসার পাওয়ার জন্য মানুষ কতোকিছু করে, আমি না’হয় ছোট এই সেক্রিফাইসটা করতাম। অবন্তিকে সেই প্রথম দিন থেকে একটাবারের জন্যেও মনে হয়নি অবন্তি আমার মেয়ে না।

সবসময় নিজেকে বাবা মনে হতো। অবন্তির বাবা।
অবন্তি আমার মেয়ে না এটা জানার পরেও আমি এতোটাদিন কিচ্ছু বলিনি তোমায়, অপেক্ষা করছিলাম কখন তুমি নিজ থেকে আমাকে সব বলবে। কখন আমার ভালোবাসা বুঝবে। আমাকে বিশ্বাস করবে।
এতোদিন অপেক্ষার পরেও তুমি একটাবার বলোনি।

কখনো বুঝতেই চাওনি কতোটা ভালোবাসতাম সেই কলেজ লাইফ থেকে।
বিয়ের পরেও আমাকে রেখে তুমি পরকীয়া করলে, পলাশের সাথে। তারপরেও আমার মাথায় একটাবারের জন্য আসেনি ‘ডিভোর্সের কথা’। তোমাকে ছাড়ার কথা কখনো ভাবতেও পারিনা।
কিভাবে পারবো? ভালোবেসেছি তোমায়, ভালোবাসি তোমায়। আর আমার বিশ্বাস একদিন তুমি সেটা বুঝবে।”

কথাগুলো বলার পর আসাদ সাহেব নিজের চোখ মুছলেন।
চোখের পানিগুলো আটকানোর বৃথা চেষ্টা।
রিয়ার চোখ থেকেও অবিরাম পানি পড়ছে। কাঁদতে কাঁদতে আসাদের দিকে তাকিয়ে রিয়া বললো~
“আমাকে ক্ষমা করে দাও।”

আসাদ সাহেব চোখটা মুছে রিয়ার হাতটা আবারো ধরলেন।
আমাকে বললেন~
~ মেহরাব স্যার, আমি আমার মেয়ের খুনির ফাসি চাই।
যত দ্রুত সম্ভব বিচার চাই।”

আসাদ সাহেবের কথা শুনে বুঝলাম উনার মনটা আসলেই অনেক ভালো। হয়তো এরকম মানুষ এই পৃথিবীতে হাতেগুনা কয়েকজন আছে।
হয়তো রিয়ার মতো ভাগ্যবতীও এই দুনিয়ায় খুব কম।
কিন্তু অবন্তির খুনটা তাহলে কে করলো?
আমার হাতে আছে এখন স্রেফ একজন। রাজু।”

রাজু সম্পর্কে একটু ঘাটাঘাটি করার পর জানতে পারলাম রিয়ার বিয়ে হয়ে যাওয়ার পর রাজুর মানসিক অবস্থা দিন দিন খারাপ হতে থাকে।
সময় যতো যাচ্ছিলো রাজুর অবস্থা ভীষণভাবে খারাপ হওয়া শুরু করলো।
সারাদিন দেয়ালে রিয়ার নাম সহ অনেক কিছু লিখতো।

যেকোনো মেয়েকে দেখলেই রিয়া ভেবে জড়িয়ে ধরতো, কিস করতে চাইতো, মাঝেমধ্যে গলা টিপে খুন ও কর‍তে চাইতো।
এই অবস্থা দেখে রাজুর বোন শীলা রাজুকে লন্ডনে নিয়ে যান চিকিৎসার জন্য।
এবং খোঁজ নিয়ে জানলাম রাজু লন্ডনেই ছিলো প্রায় ৬বছর। গতবছর রাজু দেশে আসে।”

রাজুর সম্পর্কে আরো খোঁজ নিতে আমি লন্ডন হসপিটালের হেড ডাক্তার রিচার্ডসের নাম্বার বের করে তাকে কল দেই।
উনাকে রাজুর কথা জিজ্ঞাস করতেই উনি বলেন~
“রাজু? ওই বাংলাদেশি ছেলেটা? আমি তো ওর বোনকে বলেছিলাম রাজুকে ওই এলাকায় না নিতে যেখানে ওই মেয়েটা থাকে।

ওই মেয়ের চেহারা যেনো রাজু না দেখে।
যদি ওই মেয়ের সাথে জড়িত কোনো স্মৃতি রাজুর মনে পড়ে, তখন আবারো ওর মাইন্ডে মানসিক রোগটা এট্যাক করতে পারে। আর এই রোগটা এখন এট্যাক করলে যেকোনো কিছু হয়ে যেতে পারে। যে কাউকে জঘন্যভাবে খুন ও করতে পারে।”

ডাক্তার রিচার্ডসের কথা শুনে আমি নিশ্চিত হলাম অবন্তির খুনটা রাজু ই করেছে।
এখন রাজুকে খুঁজে বের করাটা জরুরী।”

অনেক কষ্টে রাজুকে খুঁজে বের করে থানায় নিয়ে আসলাম। আসাদ সাহেব এবং রিয়াকে কল দিয়ে বললাম উনারাও যেনো থানায় আসে।”

আমার সামনে বসে আছে রাজু। রাজুকে দেখামাত্র রাগে ইচ্ছা করছিলো পিস্তলের প্রত্যেকটা গুলি ওর মাথায় ঢুকিয়ে দেই। নিজের রাগটা কন্ট্রোল করলাম।
খানিকক্ষণ পর রিয়া এবং আসাদ থানায় ঢুকলো।
রিয়াকে দেখামাত্র রাজুকে দেখলাম রাগে ফুসফুস করছে।

আমি বললাম~
~ এই রাগটার জন্যই এখন ফাসিতে ঝুলতে হবে।
অথবা সারাজীবন জ্বেলের ভিতর।
আমার কথা শুনে রাজু চিল্লায়া বললো~
~ কে দায়ীইইই এটার জন্য?

কে? একজনের সাথে প্রেম করবে, স্বপ্ন দেখাবে, ভালোবাসা শিখাবে, আর শেষে কিছু না বলে অন্য জনকে বিয়ে করে সুখে শান্তিতে সংসার করবে?
আমি এটা কক্ষনোই হতে দিবো না।
ওইদিন গাড়িতে যখন রিয়াকে দেখি, আমার মাথাটা চিনচিন শুরু করে।

আমার সব মনে পড়ে।
কিভাবে আমাকে ধোঁকা দিয়েছিলো। কিভাবে আমাকে ঠকিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করে নিছিলো। আমি রিয়াকে শেষ একটা সুযোগ দিয়েছিলাম, বলছি ‘চলে আসো আমার সাথে’। আসেনি।

এবার বুঝুক।
কি ভেবেছিলো? সুখে থাকবে? শান্তিতে থাকবে?
আমি মেরে দিয়েছি ওদের মেয়েকে। এখন আজীবন কান্না করবে ওরা দু’জন।
ওদের জীবনে আর সুখ পাবেনা।”

কথাটা বলে পৈশাচিক হাসি হাসতে থাকে রাজু।
আমি অবাক হয়ে রাজুকে দেখছি। অবন্তি যে তার নিজের সন্তান এটা সে জানেওনা।

আমি বললাম~
~ অবন্তিকে কি বলে গাড়িতে তুলছিলি? আর রিফাতকেই বা ফাসাতে চাচ্ছিলি কেনো?
তোর হাতঘড়িটাও বা ওইখানে ছিলো কিভাবে?”

রাজু হেসে হেসে বললো~
~ ওই বাচ্চা মেয়েটা বোকা ছিলো। আমি আমার আর রিয়ার একটা ছবি দেখিয়ে বলেছিলাম আমি তার মায়ের বন্ধু। তাকে নেওয়ার জন্য রিয়া আমাকে পাঠিয়েছে।
ব্যাস ও উঠে গেলো গাড়িতে।

মেয়েটা দেখতে হুবহু রিয়ার মতো ছিলো।
গাল, নাক, চোখ, ঠোঁট, সবকিছু যেনো রিয়ার কপি।

আমার একবারের জন্যেও মনে হয়নি মেয়েটা রিয়া না।
রিয়া মনে করে ওর সাথে যা যা করার দরকার আমি করেছি।

ওর হাত পায়ের আঙুলগুলো কেটে দিছি। রেপ করেছি।
লজ্জাস্থান সহ শরীরের প্রত্যেকটা জায়গায় অসংখ্য বার ছুরি দিয়ে আঘাত করেছি। বাচ্চাটা অনেক চিৎকার করছিলো।

কিন্তু বাচ্চারা ব্যাথা পেলে তো আম্মুকে ডাকে, এই মেয়েটা বারবার “পাপা পাপা” করছিলো। মৃত্যুর আগ মুহুর্তেও বললো “পাপায়ায়া আমাকে বাঁচাও।”
ওর চিৎকার শুনে আমার ভিতরে শান্তি লাগছিলো, মনে হচ্ছিলো রিয়া চিৎকার করছে।
রাজুর কথাগুলো শুনে হু হু কেদে উঠলো রিয়া।
পাশে থাকা আসাদ সাহেব ও অনেক জোরে কান্না করে উঠলেন। এই প্রথম আমি আসাদ সাহেবের কান্নার আওয়াজ শুনলাম।

অদ্ভুতভাবে আমার নিজের চোখ থেকেও কয়েকফোঁটা পানি বের হলো।
আমি অবন্তির শেষ কথাটা অনুভব করলাম।
“পাপা আমাকে বাঁচাও।”
অথচ অবন্তির চিৎকার শুনা একমাত্র মানুষটা জানেইনা এই পাপা’টা সে নিজেই।

রাজু বলতে থাকলো~
~ মেয়েটাকে খুন করে ওর ড্রেসসহ কোনো প্রমাণ ওইখানে রাখিনি। নিজের কাছে এনে লুকিয়ে রেখেছি।
তারপর যখন দেখলাম তোমরা পুলিশরা অতিরিক্ত পিছে পড়ে গেছো, তখন ভাবলাম আরো একটা প্রতিশোধ নিয়ে নেই। রিফাতের উপর।
রিফাতের সাথে ড্রাগের লেনদেন নিয়ে আমার ঝামেলা হয়েছিলো। আমরা একিই জায়গা থেকে ড্রাগ নিতাম।

শালা একবার আমার কলারটাও ধরেছিলো।
তাই ওর চেইনটা চুরি করে ওই বাচ্চার ড্রেসের সাথে শাকিলের গাড়িতে রেখে আসি। কিন্তু ভুল করে আমার ঘড়িটাও ওইখানে পড়ে যায়।
শিট। ভাবছিলাম রিফাতকে খুনি বানিয়ে পরিস্থিতি শান্ত হলে এই রিয়াকেও খুন করে ফেলবো। অবশ্য ভালোই হয়েছে। মরলেই তো সব শেষ হয়ে যেতো। এখন মেয়ে হারানোর যন্ত্রণা নিয়ে সারাজীবন বেঁচে থাকুক।
হাহাহাহা।”

পৈশাচিক হাসি হাসতে থাকে রাজু। আমি চোখটা মুছে চেয়ার থেকে উঠে রাজুর কাছে গেলাম। ওকে মারলাম না। ছোট করে বললাম~
“অবন্তি তোর নিজের ই সন্তান ছিলো।”
কথাটা শুনামাত্র রাজুর হাসি মুহুর্তেই থেমে গেলো।

জোরে চিল্লায়া উঠলো~
“আপনি মিথ্যায়ায়ায়া বলছেন। এটা হতে পারেনা।”
পাশ থেকে হু হু করে কান্না করে যাচ্ছে রিয়া।

রাজু এবার রিয়ার কাছে গিয়ে বললো~
“ওই রিয়া উনি মিথ্যা বলছেন তাইনা? বলনা উনি মিথ্যা বলছেন।”

রিয়া কোনো উত্তর না দিয়ে অবিরাম কান্না করে যাচ্ছে।”
রাজুর চোখজোড়া মুহুর্তেই ঝাপসা হয়ে আসে।

বিড়বিড় করে বলে~
“তোমরা মিথ্যা বলছো, মিথ্যা বলছো।”
আমি কন্সটেবল আসিফকে ডেকে বললাম~
“রাজুকে জ্বেলের ভিতরে নিয়া যাও।”

কন্সটেবল আসিফ রাজুর হাত ধরে নিয়ে যেতে লাগলো। রাজু অচেতন হয়ে হাটতে হাটতে বলছে~
“এটা হতে পারেনা, ওরা মিথ্যা বলছে, সবাই মিথ্যা বলছে।”
আসাদ সাহেবকে দেখলাম রিয়াকে বুকে জড়িয়ে মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছেন।

উনার চোখ থেকে পানি পড়ছে। আসাদ সাহেবের বুকে মুখ রেখে হাউমাউ করে কান্না করে যাচ্ছে রিয়া।
আমি জানিনা তাদের এই কান্না কোনোদিন থামবে কি’না।

আমি জানিনা এই কষ্টের দাগটা কখনো মুছা যাবে কি’না। তবুও আশায় রইলাম
“কোনো একদিন তারা আবারো হাসবেকোনো একদিনহয়তো।

লেখা ~ মেহরাব নয়ন

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “অবন্তির খুন – লোমহার্ষক মার্ডার থ্রিলিং স্টোরি” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – অবন্তির খুন (১ম খন্ড) – লোমহার্ষক মার্ডার থ্রিলিং স্টোরি

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *