অভিনয় – অসহায় ভালোবাসার গল্প

অভিনয় – অসহায় ভালোবাসার গল্প: এই একদম মারবো। টেনে একচর। এইটুকু বয়সে প্রেম। আর এতো বেশি বুঝো কেনো? আর শুনো আমি কারো জন্য তোমার কাছে আসিনি। তোমার কাছে এসেছি কিছু খোঁজ খবর নিতে।


পর্ব ১

এই লিপা দেখছিস ছেলেটা কত কিউট। (লিমা)
লিপাঃ দেখ লিমা আমার বয়ফ্রেন্ড আছে আর আমি আমার বয়ফ্রেন্ডকেই ভালোবাসি এখন কোন ছেলে কিউট কোন ছেলে স্মার্ট সেটা দেখার আমার কোনো সময় নেই।
লিমাঃ আরে এতো রাগছিস কেনো ছেলেটা সত্যিই অনেক কিউট একটু তাকিয়ে দেখনা?

আরে তোর নাহিদের থেকে বেশি কিউট।
লিমার কথায় লিপা অনেকটা বিরক্ত নিয়েই ছেলেটার দিকে তাকালো।

লিপাঃ হ্যাঁ কিউট তাতে আমার কি? আর শোন তুই আমার নাহিদ কে একদম টানবি না বলে দিলাম।
আমার নাহিদও অনেক কিউট শুধু আমি নাহিদকে বেশি ভাব ধরতে দেই না। তাই নাহিদকে একটু ক্ষেত ক্ষেত লাগে কিন্তু ও এই ছেলের থেকে বেশি কিউট।
লিমাঃ শোন তোর নাহিদ যদি ভাবের ভাব ও নেয় না তাও এই ছেলের ধারের কাছেও যেতে পারবে না।

লিপাঃ আচ্ছা যেতে পারবে না সেটা মানলাম কিন্তু তুই হঠাৎ এই ছেলেকে নিয়ে পড়লি কেনো?

লিমাঃ সেটা জানিনা কেনো পড়লাম কিন্তু এই ছেলেকে নিয়ে যতবেশি বলছি ততই আমার ভালো লাগছে।
লিপাঃ আমার তো মনে হচ্ছে তুই ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেছিস।

লিমাঃ আরে সেইসব কিছুই নারে। দেখ না ছেলেটার গাল দুটো কি গুলু গুলু মনে চাচ্ছে একটু টেনে দেই।
আর ঠোঁট দুটো দেখ একদম স্টবেরি।
লিপাঃ আরে বাহ এতো কিছু যা না যা একটু টেস্ট করে আয়।

লিমাঃ চুপ। কি বলছিস এইসব বেয়াদবের মতো।
তবে আমার মনে হচ্ছে আমার লাইফে ভালোবাসার আগমন ঘটতে চলেছে।
লিপাঃ আচ্ছা তাহলে চল যাই ছেলেটাকে গিয়ে প্রপোজ করে আসি।

লিমাঃ ধুর সেটা কিভাবে হয়? প্রথম দেখাই প্রপোজ আগে ছেলেটার সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হবে। আর এতো কিউট ছেলের গার্লফ্রেন্ড থাকতে পারে। তাই আজ প্রপোজ করলে যদি রিজেক্ট করে দেয় তাহলে তো আমি ছ্যাকা খাবো। তাই আজ প্রপোজ করবো না। কিন্তু এইই ছেলের নাম আর ঠিকানা আমাকে নিতেই হবে।
লিপাঃ তার মানে কি তুই এখন ছেলেটার কাছে যাবি নাকি কথা বলার জন্য?

লিমাঃ হ্যাঁ যাবো তুই আসলে আসতে পাড়িস। আর যদি না আসিস তাহলে আমি একাই যাবো।
লিপাঃ আরে না আমি যাবো তো তোর সাথে তোর কিউট বালক কি বলে। দেখতে হবে না।
লিমা আর লিপা ছেলেটার কাছে চলে গেলো।

দূর থেকে ছেলেটা দেখতে যত না কিউট কাছ থেকে তার থেকে বেশি কিউট।
লিমা আর লিপা ছেলেটার পাশে দাঁড়ালো

তাদের দেখে ছেলেটা একটু সরে গেলো।
লিপাঃ কিরে লিমা কিছু বল।

লিমাঃ কি বলবো কিভাবে শুরু করবো কিছুই তো ভেবে পাচ্ছি না।
লিপাঃ আরে ছেলেটার সামনে যাবি চুল গুলো ঠিক করবি। তারপর হাত বাড়িয়ে বলবি হাই আমি লিমা তুমি দেখতে অনেক কিউট একদম কমলালেবুর মত।
লিমাঃ ধুর এটা আবার কেমন প্রশংসা হলো?

লিপাঃ তাহলে বলবি আমি লিমা তোমাকে আমার মনের মধ্যে রাখতে চাই থাকবে।
লিমাঃ আরে এটাও কেমন জানি লাগে আমার কাছে।

লিপাঃ তাহলে বলবি এই ছেলে তোকে আমার ভালো লাগছে আমার সাথে প্রেম করবি?
লিমাঃ আরে রাখতো তোর আজাইরা প্যাঁচাল আমি আমার মতে করে বলবো। তুই শুধু আমার সাথে থাকবি।
লিপাঃ আরে তুই আমার প্রেমের সময় আমাকে সাহায্য করেছিলি। আমিও করবো। আমি আছি তোর সাথে।
লিমা ছেলেটার সামনে দাঁড়ালো।

তারপর….

লিমাঃ কিছু মনে না করলে তোমার নাম জানতে পারি?
ছেলেটা কোনো উত্তর দিলো না।
লিমাঃ এই শুনতে পাচ্ছ আমি কি তোমার নাম জানতে পারি?
ছেলেটা কোনো উত্তর না দিয়ে একটু সাইডে চলে গেলো।

লিমাঃ আরে আমি জানি তুমি কিউট তোমার গার্লফ্রেন্ড আছে। আমি সেটাও জানি কিন্তু এতো ভাব দেখানোর কি আছে? আমি জাস্ট শুধু তোমার নাম জানতে চাচ্ছি আর কিছু না।
ছেলেটা এর পরেও আর কোনো উত্তর দিলো না।

কতক্ষণ পর তাদের মাঝে আরো একটি মেয়ে আসলো।
এসে বললো।
এই ভাইয়া আমার হয়ে গেছে চল আমরা বাসায় যাবো।

এই বলে মেয়েটা ছেলেটাকে নিয়ে গাড়িতে করে চলে গেলো।
লিমা শুধু রাগে ফুঁসছে এইভাবে লিপার সামলে অপমানিত হতে হলো। তবে ব্যাপার না এইই রকম ছেলেরা এমনি হয়।
লিমা লক্ষ্য করলো লিপা কিছু একটা ভাবছে।
লিমাঃ কিরে লিপা এতো কি ভাবছিস।
লিপাঃ ভাবছি মেয়েটাকে আমি কোথায় যেনো দেখেছি।

লিমাঃ এই বল বল কোথায় দেখেছিস যদি আবার দেখা পাই। তাহলে ওর থেকেই ওর ভাইয়ার সব খবর নিতে পারবো।
লিপাঃ হ্যাঁ মনে পড়েছে। একবার আমি নাহিদের সাথে ওর ছোট ভাইয়ার কলেজে গেছিলাম। সেখানে ওর ভাইয়ার সাথে ওকে দেখেছি।
লিমাঃ তাহলে তো হয়েই গেলো। আমরা কালেকেই অই কলেজে যাচ্ছি। আর সব খবর বের করছি।
লিপাঃ সেটা না হয় গেলাম। কিন্তু জানিস লিমা ছেলেটাকে আমার স্বাভাবিক মনে হলো না।
লিমাঃ সে যেমনি হোক অবিবাহিত হলেই আমার চলবে।

পরদিন লিমা আর লিপা মিলে নাহিদের ছোট ভাইয়ের কলেজে গেলো।
তারপর অনেক খুঁজে কালকেই সেই মেয়েটাকে বের করলো।
লিমাঃ এই আপু শুনছো।
মেয়েঃ হ্যাঁ আপু আমাকে বলছেন?
লিমাঃ হ্যাঁ তোমাকে বলছি।

মেয়েটা লিমার কাছে আসলো।
মেয়েঃ হ্যাঁ আপু বলুন?

লিমাঃ তোমার নাম কি?
মেয়েঃ জ্বি আমার নাম শম্পা। আর আমার বয়ফ্রেন্ড আছে তাই যে আপনাদের পাঠিয়েছে তাকে গিয়ে বলুন আমার কথা ভুলে যেতে।
লিমাঃ এই একদম মারবো। টেনে একচর। এইটুকু বয়সে প্রেম। আর এতো বেশি বুঝো কেনো? আর শুনো আমি কারো জন্য তোমার কাছে আসিনি। তোমার কাছে এসেছি কিছু খোঁজ খবর নিতে।
শম্পাঃ হ্যাঁ বলুন কি।

লিমাঃ কালকে অই ফটো স্টুডিও থেকে যে একটা ছেলের সাথে গাড়ি করে চলে গেলে ছেলেটা তোমার ভাইয়া তাই না?
শম্পাঃ হ্যাঁ আমার ভাইয়া কিন্তু সেটা জেনে আপনি কি করবেন?
লিমাঃ তোমার ভাইয়ার নাম কি?

শম্পাঃ আরিফুল ইসলাম রোহান।
লিমাঃ আচ্ছা শম্পা একটা পারসোনাল কথা জিজ্ঞাস করবো।
শম্পাঃ কি?
লিমাঃ তোমার ভাইয়া কি বিয়ে করেছে?

শম্পাঃ নাহ
শম্পার কথা শুনে লিমা আনন্দে আত্নহারা হয়ে গেলো।
লিমাঃ আচ্ছা আমি যদি তোমার ভাইয়ার বউ হই তবে ভাবি হিসেবে আমি কেমন হবো।
লিমার কথা শুনে শম্পার মুখ কেমন জানি ফ্যাঁকাসে হয়ে গেলো।
লিমাঃ কি হলো শম্পা তুমি কিছু ভাবছো?

শম্পাঃ আসলে আপু আমার ভাইয়া কথা বলতে পারে না।
শম্পার কথা শুনে এইবার লিমার মুখ ফ্যাঁকাসে হয়ে গেলো।
কিন্তু কিছুক্ষণ পর আবার হেসে বললো।

লিমাঃ কথা বলতে পারে না তো কি হয়েছে আমি তোমার ভাবি হতে চাই তোমাদের বাসার ঠিকানা দিবে আমাকে?
শম্পাঃ কিন্তু তাতেও কোনো কাজ হবে না আমার ভাইয়া বিয়ে করবে না।
লিমাঃ কেনো বিয়ে করবে না কেনো?

শম্পাঃ আসলে আমার ভাইয়ার জীবনে কিছু ভয়াবহ অতীত আছে সেটা কিছুতেই ভাইয়া ভুলতে পারছে না।
লিমাঃ আচ্ছা আমাকে বলবে কি এমন অতীত?
শম্পাঃ আমার বলতে কোনো অসুবিধা নেই কিন্তু সব জেনে তুমি কি করবে?
লিমাঃ সেই সব পরে বলবো আগে তুমি বলো।

তারপর শম্পা বলতে শুরু করলো।
শম্পাঃ আসলে আমার ভাইয়াকে যেমন দেখছো তেমন না। একজন স্বাভাবিক মানুষ ছিলো আমার ভাইয়া কথা বলতো হাসতো কিন্তু হঠাৎ সব এলোমেলো হয়ে গেলো।
আসলে আমার ভাইয়া একটা মেয়েকে খুব ভালোবাসতো?
নাম ছিলো সালমা আক্তার জুলি।
জুলি আপুটা আমার ভাইয়াকে অনেক ভালোবাসতো। ৫বছরের রিলেশন ছিলো তাদের এই ৫বছরে ঝগড়া করেও কেও ১মিনিটের জন্য আলাদা হয়নি। কেও কাওকে ছাড়া থাকতে পাড়তো না।

সব সময় কথা বলতো ঘুরতে যেতো আরো অনেক কিছুই করতো ছোটখাটো একটা সংসার বলতে পারো তুমি। বেশি কিছু বলবো না আমার ভাইয়ার এই অবস্থা কি করে হলো সেটা বলছি বরাবরের মতো ভাইয়া আর জুলি আপু ঘুরতে বের হয়েছিলো। জুলি আপু জেদ করেছিলো পাহাড়ি রাস্তায় ঘুরতে যাবে ভাইয়া না করেছিলো কিন্তু আপু শুনেনি।
তাড়া ঘুরতে গেলো। যেহেতু ভাইয়া পাহাড়ি রাস্তা সম্পর্কে তেমন অবগত ছিলো না তাদের গাড়ি এক্সিডেন্ট করে।।

হ্যাঁ সেদিন আমার ভাইয়া ভাগ্যক্রমে বেঁচে গেলেও জুলি আপুর মৃত্যু ভাইয়া নিজের চোখে দেখেছিলো
অনেক চেষ্টা করেও জুলি আপুকে বাঁচাতে পারেনি
জুলি আপুর মৃত্যুর পর ভাইয়া কেমন জানি হয়ে যেতে থাকে একদম।

একা হয়ে যায় কারো সাথে কথা বলতো না সময়মত খেত না সারাক্ষণ ফোন নিয়ে বসে থাকতো।
প্রথমে ভাইয়া খুব কম কথা বলতো।
আব্বু আম্মু ভাবছিলো জুলি আপুর রেখে যাওয়া স্মৃতি গুলোর কারণে ভাইয়া কিছু ভুলতে পাড়ছে না।
তাই একদিন সব কিছু মানে জুলি আপুর দেওয়া গিফট তাদের সব ছবি পুড়িয়ে ফেলছিলো যখন ভাইয়া সেটা দেখলো ততক্ষণে অনেক কিছুই পুড়ে গেছিলো কিন্তু প্রায় জিনিস আধা পোড়া ছিলো।

সেই সব গুলো ভাইয়া যত্ন করে রেখে দিছে আর ভাইয়া কেনো জানিনা সেদিন থেকে কোনো কথা বলেনা।
আর মজার ব্যাপার কি জানো ভাইয়াকে বিয়ে দেবার জন্য অনেক চেষ্টা করা হয়েছে কিন্তু ভাইয়া কোনো মেয়ের দিকে ফিরেও তাকায়নি। !
যখনি বিয়ের কথা বলা হয় তখন জুলি আপুর ছবি বের করে কি কি যেনো করে আর মনে হয় ছবির সাথে অনেক কথা বলছে।
হঠাৎ করে শম্পা লিমার মুখের দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে বলল।
শম্পাঃ আরে আরে আপু তুমি এমন ভাবে কাঁদছো কেনো?
শম্পার কাছ থেকে সব কিছু শুনে লিমা কান্না করে দিয়েছে।


পর্ব ২

শম্পার কাছে সব কিছু শুনে লিমা নিজেও কান্না করে দিছে।
শম্পাঃ আরে আপু তুমি কাঁদছো কেনো?
লিমাঃ আমাকে একদম আপু বলবে না ভাবি বলবে ভাবি।
শম্পাঃ কিন্তু ভাইয়া।

লিমাঃ তোমার ভাইয়া রাজি হোক আর না হোক আমি তোমার ভাবি হতে চলেছি সেটা তুমি জেনে রাখো।
শম্পাঃ আপু তুমি আমার ভাইয়াকে চিনো না ও কাওকে বিয়ে করবে না।
লিমাঃ আবার আপু? বলছি না আমাকে ভাবি বলবে।
আর শোন তোমাদের বাসার ঠিকানাটা দাও আমি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমার আব্বু আম্মুকে নিয়ে তোমাদের বাসায় যাচ্ছি।
শম্পা ওদের বাসায় ঠিকানা দিয়ে দিলো।
লিমাঃ শোন শম্পা এইসব কিছুই এখন কাওকে বলবে না। আমি সব বলবো হ্যাঁ জানি তোমার ভাইয়াকে মানাতে কষ্ট হবে তবে ব্যাপার না তোমার ভাইয়া ঠিক মেনে যাবে।
এই কথা বলে লিমা চলে আসলো।

লিমা ওদের বাসায় এসে ওর আব্বু আম্মুকে ডাকতে শুরু করলো।
লিমার আম্মুঃ কিরে মা এমনভাবে চেঁচাচ্ছিস কেনো?
লিমাঃ আম্মু আমি বিয়ে করবো।
লিমার আম্মুঃ সেটা তো খুব ভালো কথা।

আমি তোর আব্বুকে এখনি বলছি রকির আব্বুর সাথে কথা বলতে।
লিমার আম্মুর কথা শুনে লিমা রেগে একদম আগুন।
লিমাঃ আম্মু আমি কি একবারো বলেছি আমি অই রকি বদমাইশকে বিয়ে করবো। পুরো কথা না জেনে না শুনে কেনো অন্যটা ভেবে বস বল তো?
লিমার আম্মুঃ তাহলে কি তোর আব্বুকে বলবো তোর জন্য ছেলে দেখতে।
লিমাঃ নাহ আম্মু ছেলে আমার দেখাই আছে আমরা সবাই ছেলের বাসায় যাবো।

লিমার আম্মুঃ সে কিরে কোন ছেলে? ছেলের বাসা কোথায়? ছেলে কি করে?
লিমাঃ এতো সব কিছু তোমার এখন না জানলেও চলবে আপাতত চলো আমরা ছেলের বাসা থেকে ঘুরে আসি। আর আম্মু শোনো তোমার আর আব্বুর ছেলে পছন্দ হোক আর না হোক আমি কিন্তু অই ছেলেকেই বিয়ে করবো।।
লিমার আম্মুঃ তাহলে আমাদের যাওয়ার দরকার কি? আর ছেলে দেখারই বা কি দরকার তুই নিজেই তো সব ঠিক করে ফেলেছিস এখন বিয়ে টা তুই নিজেই করে নে।
লিমাঃ আরে আম্মু তুমি রাগ করছো কেনো?

আমি তোমাদের একমাত্র মেয়ে আমার জামাইকে তোমরা দেখবে না সেটা হয়। আব্বু কে বলো কাল আমরা ছেলের বাসায় যাচ্ছি।
মেয়ের জেদ সম্পর্কে লিমার আম্মু ভালো করেই জানে। তবে সে এই বিষয়ে কিছুতেই সায় দিতে পারছে না.
তার কেনো জানি মনে হচ্ছে তার মেয়ে ভুল করতে যাচ্ছে? তবে একবার ছেলেকে দেখতে গেলো তো আর বিয়ে হয়ে যাবে না। তাই লিমার আম্মু বললো। লিমার আম্মুঃ আচ্ছা ঠিক আছে কালকে আমরা সবাই যাচ্ছি?

লিমা তার আম্মুকে জড়িয়ে ধরে একটা কিস দিয়ে ওর রুমে চলে গেলো। এখন বারবার শুধু রোহানের কথায় মনে পড়ছে। একদিনের দেখাতেই লিমা রোহানকে অনেক ভালোবেসে ফেলেছে।
সেদিন রাতে লিমা আর ঘুমাতে পারলো না।
পরদিন দুপুরবেলা লিমা ও ওর আব্বুআম্মু রোহানদের বাসায় গেলো।
কলিংবেল চাপতেই শম্পা এসে দরজা খুলে দিলো।

শম্পাঃ আরে আপু তোমরা? আমি তো ভাবতেই পারছি না তুমি সত্যি সত্যি আমাদের বাসায় আসবে।
আমি তো ভেবেছিলাম তুমি আমার ভাইয়াকে নিয়ে মজা করছো।
লিমাঃ এখন তোমার ভাবনা পাল্টেছে তো?
শম্পাঃ হ্যাঁ আাা না না ভাবি।

লিমাঃ এই তো আমার লক্ষি ননদের মত কথা।
যাও গিয়ে তোমার আব্বু আম্মুকে ডেকে নিয়ে আসো।
শম্পা লিমাদের বসতে দিয়ে রোহানের আব্বু আম্মুকে ডাকতে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর।
রোহানের আব্বু আম্মু আসলো।
লিমা গিয়ে তাদের সালাম করলো।
আব্বু আম্মুঃ আরে থাক থাক মা সালাম লাগবে না।

লিমার আব্বু বললো।
লিমার আব্বুঃ হ্যাঁ তা যার জন্য আসা
আপনার ছেলে আর আমার মেয়ের চার হাত এক করে দিতে চাই। আসলে আমরা আপনার ছেলেকে দেখিনি। আমাদের মেয়েই আপনার ছেলেকে দেখে পছন্দ করেছে।
আব্বুঃ আপনারা কি আমার ছেলের সম্পর্কে সব কিছু বিস্তারিত জানেন?

লিমাঃ আব্বু ওনারা না জানলেও চলবে আমি আপনার ছেলেকে নিয়ে সংসার করবো ওনারা না।
মেয়ের এমন কথা শুনে লিমার আব্বু আম্মু আর কিছু বলতে চেয়ে আর কিছু বলতে পারলো না।
আব্বুঃ কিন্তু সব কিছু জেনে একটা ডিসিশন নেওয়া দরকার যাতে করে পরে কোনো ফ্যামিলি বলতে না পারে আমরা কিছু লুকিয়েছি।
লিমার আব্বুঃ হ্যাঁ সেটাই ভালো হবে বলুন আপনার ছেলের সম্পর্কে।

আব্বুঃ আসলে আমার ছেলে কথা বলতে পারে না। এমনিতে সব ঠিক আছে শুধু চুপচাপ থাকে।।
আব্বুর কাছে এমন কথা শুনে লিমার আব্বু আম্মু কাশি দিয়ে উঠলো।
লিমার আম্মুঃ আচ্ছা আমরা তাহলে আজকে যাই
বাসায় গিয়ে আমাদের সিদ্ধান্তের কথা আপনাদের জানিয়ে দিবো।
তারা আর বেশিক্ষণ দেড়ি না করে চলে গেলো।

আব্বুঃ ধুর শুধু শুধু অপমানিত হওয়া। আর শম্পা তোর কি আক্কেল জ্ঞান কিছুই নেই কোথাকার কোন মেয়ে এসে তোকে কি বললো আর তুই ধুর।
শোন শম্পা এরপর থেকে কেও কিছু জিজ্ঞাস করলে
বলবি রোহান বিবাহিত আর ওর সংসার আছে ও নিজের মত করে ওর সংসার সাজিয়ে নিয়েছে।
আর রোহান এখন কোথায় রে?

শম্পাঃ ভাইয়া তো একটু আগে বাইরে চলে গেছে।
আব্বুঃ আচ্ছা ওকে এই বিষয়ে কিছু বলিস না
বললে আবার মন খারাপ করে বসে থাকবে।
অন্যদিকে লিমাদের বাসায়।

লিমার আব্বুঃ লিমা তুই কি আর কোনো ছেলে খুঁজে পেলি না বিয়ে করার মতো?
এমন একটা ছেলেকে তুই পছন্দ করলি যে কিনা কথাই বলতে পারে না।
লিমাঃ আমি এতো কিছু শুনতে চাই না আমি রোহানকে বিয়ে করবো এটাই আমার শেষ কথা।
লিমার আম্মুঃ কিন্তু মা অই ছেলেকে বিয়ে করলে তোর জীবন বরবাদ হয়ে যাবে।
লিমাঃ বরবাদ নয় আমার জীবন সুন্দর হয়ে উঠবে।

লিমার আব্বুঃ কিন্তু আমরা তো ছেলেটাকে দেখলামইই না।
লিমাঃ আমার কাছে ছবি আছে আমি দেখাচ্ছি।
সেদিন লিমা যখন রোহানকে দেখেছিলো তখন কয়েকটা ছবি তুলে রেখেছিলো।
এই দেখো রোহান।

লিমার আব্বু আম্মু ছবি দেখে বললো।
এমনিতে তো সব ঠিক আছে কিন্তু কথা হলো।
লিমাঃ উফফ আব্বু আম্মু এই কথার বিষয়টা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে দাও তো।
ও কথা বলতে পারেনা এতে তো
আমারই ভালো হলো আব্বু।

লিমার আব্বুঃ সেটা কিভাবে?
লিমাঃ জানোই তো সংসারে একটু আটকু ঝগড়া লাগে সেটা লাগবে না,একদম শান্তিতে সংসার করতে পারবো। তোমরা প্লিজ আর না করো না। পারলে আমাদের বিয়েটা তাড়াতাড়ি করে দিয়ে দাও।

লিমার আব্বুঃ পরে কিন্তু এটা বলতে পারবি না যে আমরা কেনো তোকে আটকায়নি তোর জীবন আমাদের জন্য নষ্ট হয়ে গেছে।
লিমাঃ নাহ আব্বু এই কথা কোনো দিন তোমাদের শুনতে হবে না সেটা আমি তোমাদের বলছি।
লিমার আব্বুঃ তাহলে আমার কোনো আপত্তি নেই। ছেলে দেখতে শুনতে ভালো। ফ্যামিলি টাও ভালো।
পরদিন আবার লিমা ও ওর আব্বু আম্মু রোহানদের বাড়িতে।
আজ রোহান বাসায় ছিলো।

যখন বিয়ে নিয়ে কথা হচ্ছে রোহান চুপচাপ সব শুনছে।
লিমার আব্বুঃ অনেক ভেবে দেখলাম আর আমরা সিধান্ত নিলাম ওদের চার হাত এক করেই দেওয়া যাক।
আব্বুঃ হ্যাঁ আমরাও তাই ভাবছি আপনার মেয়েও অনেক লক্ষি। আর আমাদের মেয়ে আছে আর কয়েকদিন পর তো শশুড় বাড়ি চলে যাবে।
শম্পাঃ আব্বু তুমি আমাকে পর করে দিতে চাচ্ছ।

আব্বুঃ ব্যাপার সেটা না মেয়েদের আসল ঠিকানা তার শশুড় বাড়ি বাবা মা যতই আগলে রাখুক একদিন শশুড় বাড়ি যেতেই হয়।
লিমাঃ আমি রোহানের সাথে আলাদা করে একটু কথা বলতে চাই।
লিমা রোহানকে নিয়ে চলে গেলো রোহানও মনে হয় এটাই চাচ্ছিলো।
তাই লিমার সাথে চলে গেলো আর ছাঁদে গেলো দুজন।
লিমাঃ আচ্ছা আমাকে তোমার কেমন লেগেছে?
রোহান কোনো উত্তর দিচ্ছে না।

লিমাঃ অহহ তুমি তো আবার কথা বলতে পারো না।
আমি বলছি শোন জুলি তো আর বেঁচে নেই জুলির স্মৃতি নিয়ে আর কতদিন বাঁচবে বলো।
তার থেকে ভালো তুমি জুলিকে ভুলে যাও জুলির জায়গাটা আমাকে দাও তোমাকে অনেক সুখে রাখবো।
ঠাসসস ঠাসসস।

রোহান লিমার দুই গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিলো।
কিছু বলতে চাচ্ছে রোহান কিন্তু বলতে পারছে না
তবে চোখ মুখ দেখে মনে হচ্ছে অনেক রেগে আছে।
লিমা ভয় পেয়ে

কি করবে সেটা বুঝতে পারছে না।
কিন্তু কি হলো লিমার মাথায় একটা দুষ্টু বুদ্ধি ভর করলো।
রোহানের গালে একটা কিস করে দৌঁড়ে পালিয়ে গেলো।
রোহানের কেমন জানি একটা অনুভূতি হলো যেমনটা জুলির ছোঁয়ায় হতো ঠিক তেমন টাই।
লিমা নিচে চলে আসছে কিছুক্ষণ পর রোহান আসলো।
ওর আব্বু ওকে জিজ্ঞাস করলো।
আব্বুঃ রোহান তুই বিয়ে করবি?

রোহান হ্যাঁ না কিছুই বলছে না।
রোহানের নিরবতাকে সবাই হ্যাঁ হিসেবে ধরে নিলো।
রোহান একটা ঘোরের মধ্যে আছে।
লিমার ছোঁয়ার জুলিকে অনুভব করতে পারছিলো তখন।


পর্ব ৩

আজ অনেক দিন পর লিমার ছোঁয়ায় জুলিকে অনুভব করতে পারলো যার ফলে রোহান একটা ঘোরের মধ্যে চলে গেছে।
আব্বুঃ কিরে তোর কি হলো কিছু বলছিস না কেনো?

রোহান কিছু বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।
রোহানের নিরবতাকে সবাই হ্যাঁ ধরে নিয়েছে।
লিমা রোহানের দিকে তাকানোর সাহস পাচ্ছে না কারণ লিমা রোহানের রাগি চেহারা দেখেছে আর অনেক ভয় পেয়েছে।
লিমা চুপ করে বসে আছে।

লিমার আব্বুঃ হ্যাঁ তাহলে পাকা কথা সেরে ফেলাই ভালো।
আব্বুঃ হুম দেড়ি করতে চাই না। কারণ ছেলের মন পরিবর্তন হয়ে গেলে নতুন করে সমস্যার মধ্যে পড়তে হবে। তাই আমি চাচ্ছি আজ কালের মধ্যে বিয়ে দিয়ে দিতে।
লিমার আব্বুঃ কিন্তু আমার একমাত্র মেয়ের বিয়ে

একটু অনুষ্টান না করলে কেমন দেখাবে।
আব্বুঃ হ্যাঁ সেটা আমিও বুঝি কিন্তু কিছু করার নেই
আমি অতি তাড়াতাড়ি বিয়ে দিতে চাচ্ছি।
লিমাঃ আব্বু তুমি এতো কথা বলছো কেনো?

আমিও চাই তাড়াতাড়ি বিয়ে করে রোহানকে সুস্থ জীবন দিতে।। আমি জানি ও একাকীত্বে ভুগছে।
ওর দরকার এমন একজনকে যে ওকে সময় দিবে ওর সব কিছু বুঝবে। আর আমি চাই ওর সাথে সাথে থাকতে যদি পারো আজকেই বিয়ে দিয়ে দাও।
আব্বুঃ নাহ মা সেটা হয় না একেবারে যে অনুষ্ঠান করবো না সেটা না। এই একদিনে যতটুকু পারি ততটুকু করবো।
লিমাঃ আব্বু কোনো কিছুরই দরকার নেই। আজকেই বিয়ে দিয়ে দিন। আমি কথা দিচ্ছি খুব তাড়াতাড়ি রোহানকে আমি সুস্থ করে তুলবো। তখন না হয় বড় করে সব আয়োজন করে বিয়ে দিবেন এখন এইসব থাক।

আব্বুঃ এতে আমার কোনো আপত্তি নেই। আমি চাই আমার ছেলেটা যেনো সুস্থ জীবনে যাপন করতে পারে এখন যদি তোমার আব্বু আম্মু এটা চাই তাহলে আজকেই বিয়ের সব কাজ সেরে ফেলবো।
লিমার আব্বুঃ আমারো কোনো আপত্তি নেই। আমার মেয়ে যেখানে রাজি সেখানে আপত্তি করে লাভ নেই।
তাহলে সব ব্যাবস্থা করা যাক। উকিল এসেছে।
লিমা সাইন করে দিলো।
কিন্তু…

রোহান কলম হাতে করে বসে আছে।
আব্বুঃ কি হলো রোহান সাইন করো।
আম্মুঃ দেখ রোহান পুরোনো কথা এখন মনে না করাই ভালো।
রোহান তবুও চুপ করে বসে আছে।
লিমা এতোক্ষন চুপ করে সব দেখছিলো

কিন্তু এইভাবে আর কতক্ষণ চুপ করে থাকা যায়।
তাই লিমা উঠে গিয়ে রোহানের হাত চেপে ধরলো।

রোহান আবার ঘোরের মধ্যে চলে গেছে।
লিমাঃ কি হলো এমনভাবে চুপ করে বসে আছ কেনো
সাইন করে দাও।
লিমা কয়েকবার বলতেই রোহান সাইন করে দিলো।
রোহান লিমার কথায় সাইন করে দিলো এটা দেখে আব্বু আম্মু একটু অবাক হলো।
রাতে লিমা গিয়ে ঘরে বসে আছে।
রোহান কোথায় আছে সেটা কেউ জানেনা।

হয়তো বাসার কোনো এক কোনে দাঁড়িয়ে কান্না করছে।
অনেক রাত হয়ে গেছে কিন্তু এখনো রোহান ঘরে আসছে না।
রাত অনুমানিক প্রায় ১টার সময় রোহান রুমে আসলো
লিমা বসেই আছে।
রোহান রুমে আসতেই লিমা রোহানের কাছে চলে গেলো।

লিমা লক্ষ্য করলো রোহানের চোখ দুটো ফুলে আছে আর লাল হয়ে আছে।
লিমার বুঝতে বাকি রইলো না রোহান এতোক্ষন কান্না করেছে।
লিমাঃ এই তুমি এতোক্ষন কান্না করেছে?
রোহান মাথা নেড়ে উত্তর দিলো। হ্যাঁ
লিমাঃ কেনো কান্না কেনো করেছ?
রোহান এইবারর আর কিছু বলছে না চুপ করে দাঁড়িয়ে আছে।

লিমাঃ কি হলো আমি কিছু জিজ্ঞাস করছি তো নাকি? বলো কান্না কেনো করেছ?
রোহান এইবার একটা খাতা আর কলম নিলো। তারপর কিছু একটা খাতায় লিখে সেটা লিমাকে দিলো।
লিমা সেটা পড়তে লাগলো।
আমি জুলিকে খুব ভালোবাসি আমি জুলিকে কথা দিয়েছিলাম জুলি ছাড়া আর কাওকে কোনো দিন বিয়ে করবো না।
কিন্তু আজ আমি আমার কথা রাখতে পারলাম না।

আমি আমার জুলিকে ঠকিয়েছি।
লিমাঃ দেখো রোহান যে চলে গেছে তার কাছে দেওয়া কথা কেনো এখনো মনে রেখেছো বলো তুমি।
রোহান আবার লেখা শুরু করলো আর লেখা শেষ হলে খাতাটা লিমার হাতে দিল।

কে বলেছে আমার জুলি আমাকে ছেড়ে চলে গেছে জুলি সব সময় আমার সাথে থাকে।
লিমাঃ রোহান তুমি কতদিন আর কল্পনার রাজ্যে বসবাস করবে বলতে পারো? হ্যাঁ মানছি তুমি জুলিকে ভালোবাস।
কিন্তু জুলি কি এই পৃথিবীতে আছে সে তো নেই
তোমাকে একা করে চলে গেছে।
আচ্ছা আমাকে বলতে পারবে আল্লাহ না করুক যদি জুলির যায়গায় তোমার কিছু হয়ে যেত
জুলি কি তোমার জন্য অপেক্ষা করতো?

সে কি তোমার মত একা জীবন যাপন করতো।
হ্যাঁ সে চাইতো তোমার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকতে কিন্তু কতদিন? পরিবারের চাপে পড়ে একসময় না ইচ্ছা না থাকা শর্তেও অন্য কাওকে বিয়ে করে ফেলতো।
রোহান আবার কিছু লিখে খাতাটা লিমার দিলো।
তাহলে তো আমাকে মরে দেখতে হয় যে জুলি সত্যি অন্য কাওকে বিয়ে করে কিনা?
এটা পরেই লিমা রেগে রোহানকে একটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো।
লিমাঃ নেক্সট টাইম যেনো এই কথা আর না শুনি।
রোহান আবারো কিছু একটা লিখে দিলো।

এই জানেন আমার জুলিও ঠিক এমনভাবে আমাকে মারতো। আচ্ছা আমার কেনো এমন মনে হচ্ছে যে আপনিই আমার জুলি।
লিমাঃ কারন জুলি তোমাকে ভালোবাসতো আর আমিও তোমাকে ভালোবাসি।
রোহান আবারো কিছু একটা লিখে দিলো।
কিন্তু আমি শুধু আমার জুলিকেই ভালোবাসি

আমাদের দুজনের মধ্যে আর কেও আসতে পারবে না।
লিমাঃ আর অই তুমি কথা বলো না কেনো?
রোহানঃ কারণ আমার কথার বলার সমস্ত শক্তি আমি হারিয়ে ফেলেছি,জানেন আমি চেষ্টা করলেও এখন আর কথা বলতে পারি না। (খাতায় লিখে)
লিমাঃ তুমি আমাকে আপনি করে বলছো কেনো?
রোহানঃ কারণ তুমি করে শুধু জুলিকেই বলেছি।

আর তুমি ডাকটা শুধু জুলির জন্য। (খাতায় লিখে)
লিমাঃ উফফ সেই কখন থেকে জুলি, জুলি, আর জুলি পেয়েছো টা কি তুমি? যে মানুষ টা কয়েক বছর আগেই মারা গেছে তাকে নিয়ে কেনো এখনো পড়ে আছ ভালো লাগে না।
লিমা এক প্রকার রাগ করেই সেখান থেকে রুমের বাইরে চলে আসলো।
ছাঁদে চলে গেলো আর ভাবতে লাগলো
কিভাবে জুলিকে রোহানের মন থেকে দূর করা যায়

কিন্তু সেটার জন্য কি করবে লিমা কিছুতেই তা বুঝতে পারছিলো না। এমন সময় ছাঁদে অন্য কারো উপস্থিতি টের পেলো।
কেউ একজন ফিস ফিস করে কথা বলছে
লিমা কথার শব্দ শুনে এগুতে লাগলো
গিয়ে দেখে ছাঁদের এক কিনারায় দাঁড়িয়ে আছে শম্পা।
লিমা পেছন থেকে শম্পার কাঁধে হাত রাখলো।

শম্পা রীতিমত ভয় পেয়ে গেলো।
লিমাঃ আরে ভয় পাবার কিছু নেই। এতো রাতে এখানে দাঁড়িয়ে কার সাথে কথা বলছো?
শম্পাঃ ক ক কই কারো সাথে না তো।

লিমাঃ দেখ আমার কাছ থেকে কিছু লুকিয়ো না।। আমি শুনেছি তুমি একটু আগে কারো সাথে ফিস ফিস করে কথা বলছিলে।। আর সেদিন এটাও বলেছ তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে। তাই আর লুকিয়ে লাভ নেই।
শম্পাঃ হ্যাঁ না মানে রানার সাথে কথা বলছিলাম।

লিমাঃ এই রানাটা আবার কে?
শম্পাঃ আমার বয়ফ্রেন্ড। কিন্তু ভাবি তুমি এতো রাতে এখানে কেনো? জানতাম ভাইয়া তোমাকে মেনে নিবে না। কিন্তু ঘর থেকে বের করে দিবে এটা আমার জানা ছিলো না।
লিমাঃ উফফ শম্পা তুমি সব সময় একটু বেশি বুঝো। আসলে তোমার ভাইয়া জুলিকে কিছুতেই ভুলতে পারছে না সব কিছুতেই জুলি। বোন আমার তুমি তো প্রেম করো আমাকে কিছু একটা আইডিয়া দাও না যাতে করে তোমার ভাইয়াকে লাইনে আনতে পারি।

শম্পাঃ দেখো ভাবি ভাইয়াকে লাইনে আনা এত সহজ না যতটা তুমি ভাবছো। তবে তুমি চাইলে আমি তোমাকে পুরো সাহায্য করতে পারি।
লিমাঃ তাহলে তো অনেক ভালোই হয়।
শম্পাঃ দেখো ভাইয়া যেহেতু জুলিকে ভুলতে পারছে না তাহলে তুমি এক কাজ করতে পারো।
লিমাঃ কি কাজ বলো।

শম্পাঃ তুমি জুলির মত চলতে শুরু করো।
ভাইয়া জুলির কি পছন্দ করতো কি করতো না।
জুলি কি পছন্দ করতো কি করতো না। এই সব কিছু তুমি করবে দেখবে ভাইয়া তোমার মাঝে জুলিকে খুঁজতে শুরু করবে আর এক সময় জুলিকে ভুলে গিয়ে তোমাকে ভালোবাসবে।

লিমাঃ কিন্তু আমি কিভাবে জানবো জুলি কি করতো আর না করতো।
শম্পাঃ সেসব কিছু ভাইয়ার কাছে আছে।
লিমাঃ ভাইয়ার কাছে আছে মানে?
শম্পাঃ ভাইয়া সব কিছু একটা ডাইরিতে লিখে রেখেছে।

লিমাঃ তাহলে প্লিজ বোন আমার ওটা আমাকে এনে দাও।
শম্পাঃ কিন্তু একটা সমস্যা আছে।
লিমাঃ আবার কিসের সমস্যা?
শম্পাঃ ডাইরির অনেকটা অংশ পুরে গেছে।
লিমাঃ আরে ব্যাপার না যেটুকু পুরে গেছে সেই টুকু আমি আমার নিজের মত করে সাজিয়ে নিবো আশা করি তোমার ভাইয়ার ভালো লাগবে।


পর্ব ৪

আরে ব্যাপার না ডাইরীর যেটুকু পুরে গেছে সেই টুকু আমি আমার নিজের মত করে সাজিয়ে নিবো আশা করি তোমার ভাইয়ার ভালো লাগবে।
শম্পাঃ তাহলে যাও গিয়ে ডাইরি নিয়ে কাজ শুরু করে দাও।

লিমাঃ আরে আমি কি জানি নাকি তোমার ভাইয়া ডাইরি কোথায় রেখেছে। তুমি আমাকে ডাইরি এনে দিবে।
শম্পাঃ আমি পারবো না ভাইয়া জানতে পারলে আমাকে খুব মারবে।
লিমাঃ তুমি যে রকির সাথে প্রেম করো সেটা বাসায় জানে?
শম্পাঃ নাহ কেও জানেনা।
লিমাঃ যদি আমি জানিয়ে দেই তাহলে কেমন হবে?

শম্পাঃ প্লিজ ভাবি আমার সাথে এমন করো না।
লিমাঃ তাহলে চুপচাপ আমাকে ডাইরিটা এনে দাও।
শম্পাঃ আচ্ছা এনে দিবো কিন্তু এর জন্য কিন্তু আমাকে পরে সাহায্য করতে হবে।
লিমাঃ হ্যা বুনু তোমাকে সাহায্য করবো। তুমি যাও গিয়ে তাড়াতাড়ি ডাইরি নিয়ে আস।
শম্পা ডাইরি আনতে চলে গেলো।
লিমা চুপ করে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে এটা ওটা ভাবছে।

কিছুক্ষণ পর শম্পা চলে এসেছে।
শম্পাঃ এই নাও তোমার ডাইরি।
লিমা ডাইরিটা নিয়ে বললো।
লিমাঃ যাও অনেক রাত হয়ে গেছে এখন রুমে গিয়ে ঘুমাও।
শম্পাঃ আর তুমি কি করবে?

লিমাঃ এখন গিয়ে তোমার ভাইয়াকে ইচ্ছা মত পিটানি দিবো।
লিমা শম্পাকে রুমে পাঠিয়ে দিয়ে নিজেও রুমে চলে গেল।
রুমে গিয়ে দেখে রোহান ঘুমিয়ে গেছে।

ঘুমন্ত অবস্থায় রোহানকে কেমন লাগে সেটা আমি জানিনা তাই বলতে পারলাম না।
লিমা অনেকক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলো। তারপর লিমার চোখেও ঘুম ভর করলো।
কিন্তু ঘুমালে চলবে না জুলিকে প্রথম রোহান কি অবস্থায় দেখেছিলো সেটা জানতে হবে আর কাল সেই মত কাজ করতে হবে।
লিমা ডাইরিটা খুলে পড়তে শুরু করলো।

তবে বেশি পড়লো না কারণ তাহলে সব গুলিয়ে ফেলতে পারে।
কিছুটা পরে ডাইরিটা নিজের ব্যাগের মধ্যে রেখে রোহানের দিকে মুখ করে লিমা শুয়ে পড়লো।
অনেকক্ষণ রোহানের দিকে তাকিয়ে ছিলো।
তাকিয়ে থাকতে থাকতে কখন লিমা
ঘুমিয়ে গিয়েছিলো সেটা লিমা নিজেও জানেনা

ফজরের আজান শুনে লিমার ঘুম ভাঙল।
লিমা উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হয়ে নিলো।
আর অপেক্ষা করছে রোহান কখন ঘুম থেকে উঠবে।
রোহানের ঘুম ভাঙল উঠে প্রথমে ফ্রেশ হয়ে নিলো
আজ বাসা কেমন জেনো চুপ হয়ে আছে

ফ্রেশ হয়ে নিচে আসলো কাওকে পাচ্ছে না সারা বাসা খুঁজলো কিন্তু বাসায় কেও নেই।
রোহান ভাবলো হয়তো ছাঁদে আছে তাই রোহান ছাঁদে চলে গেলো কিন্তু সেখানেও কেও ছিলো না। !তারপর নিচে চলে আসলো বাসায় ছোট একটা বাগান আছে
রোহান নিচে এসে দেখে কেও একজন কালো শাড়ি পরে বসে আছে।
রোহান অনেকটাই অবাক হয়ে গেছে।

কারণ রোহান যেদিন প্রথম জুলিকে দেখেছিলো সেদিন জুলিও ঠিক একই রকমভাবে কালো শাড়ি পরে বাগানে বসে ছিলো।
রোহানের মধ্যে এক প্রকার ঝড় শুরু হয়ে গেছে
রোহান আস্তে আস্তে এগুতে লাগলো কে সেটা দেখার জন্য।
কাছে গিয়ে পেছন থেকে কাঁপা কাঁপা হাতে কাঁধে হাত দিলো।

সে পিছনে ফিরে তাকালো সাথে সাথে রিয়ুন কাধ থেকে হাত নামিয়ে নিলো।
লিমাঃ কি হলো কাধ থেকে হাত নামিয়ে নিলে কেনো? আর দেখো তো আমাকে কেমন লাগছে?
রোহান কিছু বলছে না চুপটি করে দাঁড়িয়ে আছে।
লিমাঃ কি হলো কিছু তো একটা বলো।
ভালো লাগছে আমাকে?
রোহান মাথা নাড়িয়ে না উত্তর দিলো।
রোহান এমন উত্তর দিবে লিমা সেটা আশা করেনি।

লিমা মন খারাপ করে বললো।
লিমাঃ তুমি একটা পচা হুহ তোমার সাথে কথা নেই।।
এই কথা বলে লিমা চলে আসলো।
লিমার পেছন পেছন রোহান আসলো।
এসে দেখে আব্বু আম্মু শম্পা সবাই আছে।

লিমা আম্মুর পাশে বসে কান্না করছে একদম বাচ্চাদের মত।
লিমাঃ জানো আম্মু তোমার ছেলে বলেছে আমাকে নাকি ভালো লাগছে না।
আম্মুঃ কে বলেছে ভালো লাগছে না তোকে অনেক ভালো লাগছে একদম লক্ষি একটা বউ।
লিমাঃ আম্মু আমাকে আর বলতে হবে না আমি জানি আমাকে দেখতে খারাপ লাগছে। ভালো লাগলে তো তোমার ছেলে বলতই হনুমান একটা।
আম্মুঃ আরে আর কাদিস না চল খাবার বানাবো চল।

লিমাঃ আজকে আমি সবার জন্য রান্না করবো তোমরা যাও গল্প করো আমি রান্নাঘরে যাচ্ছি।
আম্মুঃ নাহ সবে তো বউ হয়ে এসেছিস এখনো তেমন কিছুই জানিস না তাই আমি থাকবো তোর সাথে সব শিখিয়ে দিয়ে আমার ছুটি।
আম্মু আর লিমা মিলে খাবার রান্না করতে চলে গেলো।

রোহানের আজ আরো বেশি করে জুলির কথা মনে পড়ছে আর যতবার জুলির কথা মনে পড়ছে ততবারই কোনো না কোনো ভাবে লিমাকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছে।
পেছন থেকে দেখলে লিমা আর জুলির মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। কিন্তু সামনে থেকে দেখলেই সব এলোমেলো হয়ে যাচ্ছে। তাই লিমা যখন অন্যদিকে ঘুরে কাজ করছে রোহান উকি দিয়ে দেখছে। আর এটা তখন শম্পার নজরে পড়লো।
শম্পাঃ কিরে ভাইয়া ভাবির প্রেমে পড়ে গেলি নাকি?

বউ তো তোর চুরি করে দেখার কিছু নেই যা সামনে থেকে গিয়ে দেখে আয়।
শম্পার কথায় অনেক টা লজ্জায় পড়ে গেলো রোহান।
শম্পাকে একটা চড় দেখিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো।
এসে জুলির ছবি দেখছে।
আর নিরবে কান্না করে যাচ্ছে।
এইভাবে কতক্ষণ গেলো।

তারপর আবার নিচে চলে এলো।
এসে খাবার টেবিলে বসে পড়লো।
তার কিছুক্ষণ পর সবাই খাবার টেবিলে চলে আসলো। সবাই খেতে বসেছে।
খাবার মধ্যে হঠাৎ লিমা চিৎকার করে বললো।
লিমাঃ ঝাল ঝাল পানি পানি।

রোহান নিজের অজান্তেই গ্লাসে পানি ভরে লিমাকে খাইয়ে দিলো।
জুলিও একদম ঝাল সহ্য করতে পাড়তো না।
একদিন ফুসকা খেতে গিয়ে
এইরকম এক কান্ড হয়েছিলো

ঝাল একটু বেশি হয়ে গেছিলো
জুলি সেটা খাবার পর চিৎকার করতে শুরু করে আর রোহান তখন ঠিক এইভাবেই পানি খাইয়ে দিয়েছিলো।
অনেকদিন পর ঠিক একইরকম ঘটনায় রোহান কিছুই বুঝে উঠতে পারছিলো না।

যখন এটা বুঝতে পারলো সে জুলিকে নয় লিমাকে পানি খাইয়ে দিয়েছে তখন না খেয়েই উঠে গেলো।
ছেলের এমন কান্ড দেখে ওর আব্বুআম্মু আবারো অবাক আর কিছুটা খুশিও হয়েছে।
আব্বুঃ তুই পারবি মা তুই পারবি আমার
ছেলেকে ঠিক করতে তুই পারবি।
লিমাঃ তোমরা দোয়া করো আমি যেনো আমার স্বামীকে সুস্থ জীবন দিতে পারি।

কয়েকদিন পর।
লিমাঃ এই শুনো না একটু।

রোহান ফোন টিপছিলো এমন সময় লিমা ডাক দিয়ে বললো।
রোহান ফোন ছেড়ে লিমার দিকে তাকালো।
লিমাঃ চলো না আজ কোথাও ঘুরে আসি প্লিজ প্লিজ প্লিজ।
রোহান মাথা নেড়ে উত্তর দিলো সে যাবে না।

লিমাঃ কেনো যাবে না প্লিজ আমার সাথে চলো সেই লেকের ধারে যাবো দুজন একসাথে হাটবো সন্ধ্যায় ফুসকা খাবো আসার সময় রিক্সায় আইসক্রিম খাবো চলো না চলো।
লিমা যা যা বললো এইই সব কিছু জুলি বলতো।
লিমাঃ কি হলো বলো যাবে বলো।
রোহান এইবার আর না করতে পারলো না

মাথা নেড়ে উত্তর দিলো সে যাবে।
লিমাঃ এইতো আমার লক্ষি বর উম্মাহ।
হাম্মি দিয়েই লিমা উধাও।
বিকেল বেলা লিমা একটা নীল শাড়ি পড়েছে আর রোহানের জন্য নীল পাঞ্জাবী।।

নীল রঙ রোহানের পছন্দ আর ওরা আগে যখন কোথাও ঘুরতে বের হতো বেশিরভাগ সময় নীল রঙের জামা পড়েই বের হতো।
লিমাকে নীল রাঙের শাড়িতে অনেক সুন্দর লাগছিলো রোহান একবার তাকিয়ে আর চোখ ফেরাতে পারছিলো না। ঠিক যেনো জুলির প্রতিচ্ছবি।
শুধু ফেস কাটিংয়ে কোনো মিল নেই তাছাড়া পুরো জুলি।
লিমাঃ এই আর কতক্ষণ অমন হা করে তাকিয়ে থাকবে?
আমাদের বের হতে হবে তো।

লিমার এই কথা শুনে রোহান বাস্তবে ফিরে আসে।
লিমা রোহানকে পাঞ্জাবিটা দিয়ে বললো তাড়াতাড়ি পরে নাও দেড়ি হয়ে যাচ্ছে তো। রোহান অল্প একটু সময়ের মধ্যেই রেডি হয়ে নিলো।
তারপর বাসা থেকে বের হলো। লিমা যখন রিক্সা ডাকছিলো তখন রোহান লিমারায় বুঝিয়ে দিচ্ছিলো গাড়ি থাকতে রিক্সাতে কেনো যাবে।
লিমাঃ কারণ রিক্সাতে ঘুরতে বেশি ভালো লাগে তাই।

এই দেখো রিক্সাতে আমরা পাশাপাশি বসতে পারছি কিন্তু গাড়িতে সেটা সম্ভব হতো বলো?
তুমি গাড়ি চালাতে আর আমাকে দূরে বসে থাকতে হতো যেটা আমার একদমই ভালো লাগে না।
তাই আমি রিক্সাতেই যাবো।
দুজন মিলে রিক্সাতে উঠলো।

লিমা যখন রোহানের হাত টা শক্ত করে ধরলো তখন রোহানের কাছে মনে হলো জুলিই ওর পাশে বসে আছে। সেই চিরোচেনা একটা ঘটনা দুজন রিক্সাতে যাচ্ছে জুলি রোহানের হাত ধরে বসে আছে আর দুজন নানান রকম গল্প করছে।


পর্ব ৫

রোহানের মধ্যে শুধু একটাই কথা ঘুরছে লিমার ছোঁয়ায় কেনো এমন মনে হচ্ছে যে জুলি তার সাথেই আছে এমনটা কেনো মনে হচ্ছে
সব কিছু ভাবতে ভাবতে তারা তাদের গন্তব্য এসে গেছে। রোহান রিক্সা থেকে নেমে ভাড়াটা দিয়ে হাটা শুরু করলো। আজ কয়েকবছর পর রোহান এই লেকের ধারে আসলো। রোহান আনমনে হাটছে।
লিমা পেছন পেছন হাটছে।

লিমাঃ এই তোমার হলো কি। এখন একদম চুপ হয়ে গেছো যে? কিছু মনে পড়ছে নাকি?
রোহান কোনো উত্তর না দিয়ে এগুতে লাগলো।।
লিমাঃ আচ্ছা আমি কি তোমার হাত ধরে হাটতে পারি?
রোহান কোনো উত্তর দিলো না।

লিমা রোহানের হাত ধরে নিলো।
আজ কয়েকবছর পর সেই আগের ফিলিংস আসছে।
লিমা হাত আরো শক্ত করে চেপে ধরলো।
তারপর হাটতে শুরু করলো

জানো আজ অনেক দিন পর আমি আমার জুলিকে অনেক বেশি অনুভব করতে পারছি।
হঠাৎ রোহান এই কথা বলে উঠলো।
রোহান কথা বলছে সেটা ভেবেই লিমা খুশিতে আত্নহারা হয়ে গেছে।
লিমাঃ রোহান তুমি কথা বলতে পারো?

রোহানঃ আমি কথা বলতে পাড়তাম না কবে?
আমি তো সারাক্ষণ আমার জুলির সাথে কথা বলতাম। এখন মনে হচ্ছে তুমি জুলি তাই কথা একটা বেড়িয়েই গেলো।
লিমাঃ জানো আজ আমি কতখুশি?
রোহানঃ এতো খুশি হবার কারণ কি?

লিমাঃ এই যে তুমি কথা বলতে পারছো।
রোহানঃ জানো আমি আর জুলি এখানে প্রায়ই আসতাম ও আমাকে ছেড়ে চলে যাবার পর এখানে আর আসা হয়নি। আজ ওর কথা খুব মনে পড়ছে কতইই না পাগলি টাইপের ছিলো আমাকে কত ভালোবাসত। সব সময় পাগলামি করতো।
লিমাঃ ওর পাগলামিতে তুমি খুব বিরক্ত হতে?

রোহানঃ কোনো দিন বিরক্ত হয়নি বরং ও পাগলামি ছেড়ে দিলে আমার খারাপ লাগতো।
আল্লাহ ওকে তো নিয়ে নিলো কিন্তু আমাকে।
রোহানকে পুরো কথা শেষ করতে না দিয়ে লিমা বলে উঠলো।
লিমাঃ চুপপপ একদম অই কথা বলবে না।

রোহানঃ কি করবো আমার ভালো লাগে না। সবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিয়েছি কেনো জানো যাতে করে কারো কোনো কথার উত্তর দিতে না হয়।
লিমাঃ তাহলে আজ কথা বলছ যে?
রোহানঃ কি করবো আজ জুলিকে আরো বেশি করে মনে পড়ছিলো কিছুতেই আর চুপ থাকতে পারছিলাম না। মনে হলো কথা বললে হালকা লাগবে।।
লিমাঃ আচ্ছা আমরা কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকবো নাকি কোথাও বসবো।
রোহানঃ হ্যাঁ চলো বসে কথা বলি।
লিমাঃ হুম্ম চলো।

রোহান আর লিমা একটা বেঞ্চে বসলো।
রোহানঃ জানো আমরা যখন এখানে ঘুরতে আসতাম এই বেঞ্চেই বেশি বসা হতো। আমাদের আসা যাওয়া ছিলো একটু বেশি সবাই আমাদের চিনতো।
এমন অনেক দিন হয়েছে অন্য কাপল গুলো এই বেঞ্চে বসলে আমাদের দেখে এই যায়গা ছেড়ে দিয়েছে।
রোহান যখন কথা বলছিলো তখন রোহান লক্ষ্য করলো লিমা পায়ের আঙুল দিয়ে চেপে ঘাস ছিড়ছিলো।
যেটা জুলি সব সময় করতো।

রোহানঃ আরে কতবার বলেছি পায়ের আঙুল দিয়ে ঘাস ছিঁড়বে না পোকা মাকড় থাকতে পারে।
লিমাঃ মানে তুমি আমাকে আবার কবে বললে আমি তো আজই তোমার সাথে এখানে ঘুরতে আসলাম।
রোহানঃ সরি আসলে জুলিও ঠিক এমনভাবে আঙুল দিয়ে চেপে ঘাস ছিঁড়তো তাই মনে পড়ে গেলো। আর কিছুক্ষনের জন্য আমার এটা মনে হলো জুলিই ঘাস ছিঁড়ছিল।
লিমাঃ রোহান তুমি একটা সত্যি কথা বলবে?
রোহানঃ হ্যাঁ বলবো?
লিমাঃ তোমরা তো একা ঘুরতে বের হয়েছিলে তাই না?

রোহানঃ হ্যাঁ আমি আর জুলি ঘুরতে বের হয়েছিলাম।
লিমাঃ কোথাও এমন না তো যে তুমি জুলিকে খুন করেছো?
রোহানঃ কিহ খুন আরে আমি তো আমার জুলিকে কোনো দিন একটা থাপ্পড় পর্যন্ত দেইনি।
যতই দোষ করুক অনেক বকা দিতাম কিন্তু কোনো দিন আঘাত করেনি আর তাকে আমি খুন করবো!!
লিমাঃ তাহলে বলো না সেদিন আসলে কি ঘটেছিলো?

রোহানঃ সেদিন আমাদের শহরের বাইরে ঘুরতে যাবার কথা ছিলো। যখন শহরের বাইরে ঘুরতে গেলাম জুলি বললো ওর নাকি পাহাড়ি রাস্তায় ভ্রমণ করার খুব শখ।
আমি বলেছিলাম অন্য একদিন ওকে নিয়ে ঘুরতে যাবো। কিন্তু জুলি কিছুতেই সেটা মানছিলো না তাই ওকে নিয়ে চলে গেলাম।
তবে একটা কিছু আমি লক্ষ্য করেছিলাম যে আমার চেনা জুলি আর সেদিনের জুলির মাঝে

একটু চেঞ্জ ছিলো। গালটা ফোলা ছিলো আর জুলি কখনো কপালে টিপ দিতো না কিন্তু সেদিন দিয়েছিলো। আমি জিজ্ঞাস করতেই জুলি সেটা এড়িয়ে গিয়েছিলো।
পাহাড়ি রাস্তা ছিলো আর সেদিন বৃষ্টি হয়েছিলো গাড়ি চালাতে আমার খুব সমস্যা হচ্ছিলো একটু গিয়েই আমি ফিরে আসতে চেয়েছিলাম কিন্তু জুলি বললো আরও যাবে।
গাড়ি চালাতে চালাতে যখন রাস্তায় বাক আসে যখন মোড় ঘুরতে যাই সামনে থেকে আরো একটা গাড়ি চলে আসে আর আমি সেটাকে সাইড দিতে গিয়ে নিচে পড়ে যাই আর এইটুকু বলেই রোহান কান্না করে দিলো।

লিমা রোহানের চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো।
লিমাঃ ধুর পাগল ছেলেরা এইভাবে কান্না করতে পারে তোমাকে না দেখলে জানতাম অই না। ছেলেরা এইভাবে কান্না করে? একদম কান্না করবে না বলে দিলাম।
রোহানঃ কিন্তু আমার জন্যই তো সব কিছু হয়েছে আমি দোষী।

লিমাঃ নাহ এখানে তোমার কোনো দোষ নেই আল্লাহ চেয়েছে তাই ওকে তোমার কাছ থেকে নিয়ে নিয়েছে।
রোহান আবারো চুপ হয়ে গেলো।
লিমাঃ চলো এখানে বসে থাকতে আর ভালো লাগছে না চলো ফুসকা খাবো।
রোহান লিমাকে নিয়ে ফুসকার দোকানে চলে গেলো।

লিমাঃ মামা দুই প্লেট ফুসকা দাও একটায় বেশি টক দিবে আর একটায় একদম টক দিবে না?
রোহানঃ এই তুমি জানলে কিভাবে আমি টক খাই না। এটা তো শুধু জুলি জানতো।
লিমাঃ আমিও জানি যাকে ভালোবাসি তার সম্পর্কে না জানলে কিভাবে হবে?
এর মধ্যে ফুসকা চলে এসেছে।
লিমাঃ কি হলো মামা ওর দিকে এমন করে কি দেখছো?

ফুসকাওয়ালাঃ না সেদিনের পর থেকে আর দেখতে পায়নি। দুজন আসতো কত মজা করতো খেয়ে দেয়ে চলে যেত। কিন্তু হঠাৎ কি যে হলো দুজনের কেও আর আসতো না। আজ অনেক দিন পর একজন আসছে কিন্তু অন্যজন আসেনি।
লিমাঃ আরে মামা দুজনই আসছে আমি আর ও একসাথে আসছি দেখছো না। এখন তুমি যাও তো আমাদের একটু খেতে দাও।
রোহান প্লেট হাতে নিয়ে বসে আছে।
লিমাঃ কি হলো খাচ্ছ না কেনো।

রোহানঃ না এমনি।
লিমাঃ এই তোমার জিব্বায় কি যেনো দেখলাম একটু হা করো।
রোহান হা করার সাথে সাথে লিমা রোহানকে একটা ফুসকা খাইয়ে দিলো।
রোহানঃ হ্যাঁ এটা শুধু জুলি করতো। না এটা ডাইরিতে লেখা হয়েছিলো না অন্য কাওকে বলা হয়েছিলো। (মনে মনে)
রোহানঃ এই তুমি কে সত্যি করে বলবে?

লিমাঃ আমি কে মানে আমি তোমার স্ত্রী।
রোহানঃ তোমার আসল পরিচয় কি?
লিমাঃ আমি লিমা।

রোহানঃ তুমি কি করে জানলে জুলি যতক্ষণ পর্যন্ত আমাকে খাইয়ে না দিতো আমি খেতাম না।
লিমাঃ ধুর সেটা আমি কি করে জানবো আমার ইচ্ছা হলো তোমাকে খাইয়ে দিতে তাই দিলাম।
রোহানঃ অহহহহ(অনেকটা হতাশ হয়ে)
তারপর রোহান আর লিমা খেয়ে বিল দিয়ে সেখান থেকে চলে আসলো।
রোহানঃ একটা কথা বলি?
লিমাঃ হুম বলো।

রোহানঃ জানো আজ আমার একমুহূর্তের জন্য মনে হয়েছিলো তুমি আমার সেই জুলি।
লিমাঃ ধুর আমি জুলি হতে যাবো কেনো? আমি তোমার লিমা।
রোহানঃ সরি জুলি ছাড়া অন্য কাওকে আমি মেনে নিতে পারবো না।
লিমাঃ মানতে তোমাকে হবেই আজ না হয় কাল।
রোহান আর কিছু বললো না কথায় কথা বাড়বে।

লিমাঃ এখন আমরা হেটে হেটে বাসায় যাবো।
রোহানঃ মানে হেটে যেতে গেলে তো রাত হয়ে যাবে।
লিমাঃ হলে হোক তাতে কোনো সমস্যা নেই।
রাতে ভালোবাসার মানুষকে নিয়ে হাটার মজাই আলাদা।

রোহানঃ কেনো এর আগে কোনো দিন কাওকে নিয়ে হেটেছো বুঝি?
লিমাঃ না তা নয় তবে অনুভব করতে পারি ভালোবাসার মানুষ পাশে থাকলে অন্য কোনো সুখ প্রয়োজন হয়না। ! তাই আজ তোমাকে আমার সাথে হাটতেই হবে।
রোহান ভাবলো এতোদিন পর যখন ঘুরতে বের হয়েছে একটু না হয় হাটা যাক।
হেটে হেটে বাসায় দিকে রওনা দিয়েছে।
লিমাঃ আচ্ছা তুমি আব্বু আম্মুর সাথে কথা বলো না কেনো?

রোহানঃ কি করবো বলো তাড়া আমার আপন হয়েও পরের মতো কাজ করেছে তাই তাদের সাথে কথা বলার সমস্ত ইচ্ছা আমার হারিয়ে গেছে।
লিমাঃ কি এমন করেছে যে তাদের সাথে কথা বলা যাবে না।
রোহানঃ জুলির সমস্ত কিছু তাড়া পুড়িয়ে দিতে চাইছিলো জানো ওতে কত স্মৃতি মিশে ছিলো এখন সব আধা পোড়া।
লিমাঃ তারা তো তোমার ভালোর জন্যই করেছে এমনটা।

রোহানঃ ভালো না ছাই আমার ভালো কাওকে দেখতে বলেছিলাম আমি।
লিমাঃ এই তুমি রেগে যাচ্ছ কেনো? স্বভাবটা কি আর পাল্টাবেনা তোমার। অল্প একটুতেই রেগে যাওয়াটা।
রোহানঃ রাগার মত কথা বললে রাগবো না তো কি করবো?
লিমাঃ আচ্ছা বাবা রাগ করে থাকতে হবে না।

তারপর নানান কথা বলতে বলতে তাড়া বাসায় চলে আসলো।।
নিচে কারো সাথে কোনো কথা না বলে রোহান উপরে ওর রুমে চলে গেলো।
লিমা যখন রুমে আসলো।
রোহানঃ তোমাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ।

লিমাঃ কেনো ধন্যবাদ কেনো?
রোহানঃ আজ অনেক দিন পর আগের সেই দিনগুলো উপহার দেওয়ার জন্য।
লিমাঃ আরে এটা তো মাত্র শুরু(মনে মনে)


পর্ব ৬

লিমাঃ আরে রোহান এটা তো মাত্র শুরু সামনে দেখো আরও কত কিছু হয়।
রোহান আবার নিচে চলে গেলো।

অনেকদিন কাছের মানুষ গুলোর সাথে ভালো করে কথা হয় না।
রোহান নিচে গিয়ে ওর আব্বু আম্মুকে ডাকতে শুরু করলো।
আব্বু আম্মু একটু এইদিকে আসো।

ছেলের ডাক শুনে আম্মু তো দৌঁড়ে চলে এসেছে।
আম্মুঃ আমার ছেলে কথা বলছে হ্যাঁ আমার ছেলে কথা বলছে আজ অনেকদিন পর আমার ছেলে আমাকে আম্মু বলে ডেকেছে।
শম্পাঃ ভাইয়া তুই কথা বলতে পারছিস আমি জানতাম ভাইয়া ভাবি পারবে তোকে ঠিক করতে।
রোহানঃ ও কিছুই করেনি আমার এখন ইচ্ছা হচ্ছে তাই কথা বলছি।
শম্পাঃ ভাইয়া তুই যতই বলিস তুই তো এতোদিন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলি ভাবি সেটা দূর করে দিয়েছে।
ভাবি কোথায় রে?

রোহানঃ আমি কি করে বলবো তোর ভাবি কোথায় যা গিয়ে নিজেই খুঁজে নে।
শম্পাঃ ভাইয়া এইভাবে বলছিস কেনো?
রোহানঃ আমার ভালো লাগছে না তোদের কথা তাই।
আমি তো আমার ইচ্ছাতেই কথা বলেছি কিন্তু তার ক্রেডিট তোরা বারবার ওকে কেনো দিচ্ছিলি?
শম্পাঃ সরি ভাইয়া।

রোহানঃ সরি বলতে হবে না। আম্মু আব্বু কোথায় গেছে?
আম্মুঃ তোর আব্বু একটু বাইরে গেছে একটু পরেই চলে আসবে।
রোহানঃ আচ্ছা আম্মু আমার ক্ষুধা লেগেছে কিছু খেতে দাও।
আম্মুঃ একা কেনো খাবি যা বউমাকে ডেকে নিয়ে আয়।
রোহানঃ আমি ডেকে আনতে পারবো না।
আমাকে ডাকতে হবে না আমি চলে এসেছি আম্মু। (লিমা)

আম্মুঃ আমি তো রান্না করছি রোহানের নাকি ক্ষুধা লেগেছে তুই একটু বেড়ে দে।
লিমাঃ আচ্ছা আম্মু তুমি চিন্তা করো না আমি ওকে খাবার বেড়ে দিচ্ছি।
রোহান একটা জিনিস কিছুতেই বুঝতে পারছে না
লিমা সামনে আসলে ও রাগ করতে পারে না কেনো?

এমনিতে তো ওর কথা শুনলেই প্রচুর রাগ হয় কিন্তু এখন কেনো রাগ হচ্ছে না।
লিমা খাবার বেড়ে দিলো রোহান প্লেটে শুধু হাত দিয়ে খাবার গুলো নেড়ে যাচ্ছে কিছু খাচ্ছে না।
লিমাঃ কি হলো তুমি খাবে? নাকি শুধু

শুধু এমনভাবে খাবার নেড়ে যাবি নাকি তোমাকে খাইয়ে দিতে হবে।
শম্পাঃ ভাবি তুমি কেনো বুঝো না ভাইয়া তোমার হাতে খাবে বলে নিজে কিছু খাচ্ছে না। দাও ভাবি ভাইয়াকে খাইয়ে দাও।
লিমাঃ কিন্তু তোমার ভাইয়া তো সেটাও বলছে না ও আমার হাতে খাবে

.শম্পাঃ ভাবি আমার ভাইয়া তো একটু লাজুক স্বভাবের তাই নিজের মুখে কিছু বলছে না তুমি খাইয়ে দাও দেখবে ভাইয়া কোনো কিছু না বলে চুপচাপ খেতেই থাকবে।
শম্পার কথা শুনে লিমা রোহানকে খাইয়ে দিতে যাবে।
তখন রোহান বললো।
রোহানঃ এই আমি কি তোমাকে একবারো বলেছি আমি তোমার হাতে খাব?
লিমাঃ না বলোনি।

রোহানঃ তাহলে আমাকে খাইয়ে দিতে আসছো কেনো?
লিমাঃ আমি ভাবলাম তুমি সত্যি আমার হাতে খাবে তাই নিজের হাতে কিছু খাচ্ছিলে না।
রোহানঃ তুমি এটা কিভাবে ভাবলে শুনি? শুনো আমি শুধু জুলির হাতেই খেয়েছি অন্য কোনো মেয়ের হাতে কিছু খাওয়ার আমার কোনো ইচ্ছা নেই। আর ভুলেও আমাকে খাইয়ে দেওয়ার কথা ভাববে না বলে দিলাম।
আর তুমি কি ভেবেছ তুমি জুলির মত আচরণ করবে আর আমি সেটা দেখে তোমাকে ভালোবেসে ফেলবো।
যদি এটা ভেবে থাকো তাহলে তুমি ভুল ভাবছো।
আমি কেনো না খেয়ে বসে ছিলাম জানো?

কারণ এটা আমার অভ্যাস আগে যখন জুলি ছিলো ওর সাথে আমার কথা হতো তখন
আমি খাবার নিয়ে বসে থাকতাম কারণ আমি না বললে ও কখনো খেত না।
আর আমি বলার পর ও খাবার খেতে বসে আমাকে এসএমএস করতো তাই এটা আমার অভ্যাস হয়ে গেছে খাবার প্লেট সামনে নিয়ে বসে থাকা।
লিমাঃ শম্পা তুমি এই ব্যাপারে কিছু জানতে?
শম্পাঃ ইয়ে না মানে ভাবি হ্যাঁ জানতাম।

লিমাঃ সব কিছু জেনেও কেনো আমাকে তুমি মিথ্যা বললে? তুমি এতো কথা না বললে আমাকে এতো কথা শুনতে হতো না।
ভালো লাগে না আর আমার এইসব একটা মানুষ মরে গেছে তার দেহ পঁচে গলে গেছে আর তোমার এই সাইকো ভাই তাকে নিয়েই পড়ে আছে
ঘুম থেকে উঠে আর ঘুমাতে যাবার আগ পর্যন্ত

জুলি জুলি আর জুলি। কেনো এখনো একটা মরা মানুষকে নিয়ে পড়ে আছে।
রোহানঃ শম্পা ওকে আমার পারসোনাল ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে না কর।
লিমাঃ তোমার পারসোনাল ব্যাপার মানে
আমি তোমার স্ত্রী সেটা ভুলে গেছো নাকি?
আর স্বামী স্ত্রীর মাঝে পারসোনাল ব্যাপার বলে কিছু থাকে না।

রোহান এইবার রেগে গেলো খাবার প্লেট ছুড়ে ফেলে দিয়ে বললো খাবোই না,
এই কথা বলে উঠে চলে গেলো।
রোহান চলে যাবার পর লিমা শম্পাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিলো।
শম্পাঃ কান্না করো না ভাবি।

লিমাঃ কি করবো আমি তুমি বলতে পারো।
আমিও তো একটা মানুষ বিয়ের এতোদিন হয়ে গেলো আজ পর্যন্ত আমার সাথে ভালোভাবে কথা বলেনি।
একটু সময় একসাথে কাটায়নি।
সব সময় দূরত্ব বজায় রাখে কেনো রাখে?

কেনো রাখে মরা একটা মানুষের জন্য রাখে।
আর জুলির মাঝে তোমার ভাই কি এমন দেখেছিলো যা আমার মধ্যে দেখতে পায় না।
আমি কি দেখতে খারাপ নাকি তোমার ভাইয়ার সাথে আমার যায়না কোনটা?
শম্পাঃ ভাবি তুমি ভেঙে পরো না।

আসলে ভাইয়া জুলি আপুকে অনেক ভালোবাসতো তো তাই এমন হচ্ছে
কিন্তু ভাইয়া একটু একটু করে সেখান থেকে বের হয়ে আসছে। আজ কথা বলছে কাল অফিস জয়েন করবে পরশু ভাইয়া নিজেকে গুছিয়ে নিবে।
এইভাবে দেখবে ভাইয়া জুলির সব কিছু ভুলে তোমাকে ভালোবাসবে।

লিমাঃ আর কত আশা দিবে ভালোবাসবে? যে কিনা এতোদিন আগের কথা ভুলতে পারছে না সে কি করে আমাকে ভালোবাসবে?
শম্পাঃ আমি বলতে পারছি না কিছু তবে ভালোবাসবে খুব ভালোবাসবে এটা আমি সিউর দিয়ে বলতে পারছি।
লিমাঃ আচ্ছা আমি রুমে গিয়ে দেখি তোমার সাইকো ভাইয়া কি করছে?
শম্পাঃ এখন ভাইয়ার কাছে যাওয়া কি ঠিক হবে?
লিমাঃ হুম ঠিক হবে
কারন ও যতক্ষণ একা থাকবে ওর রাগ ততবেশি বাড়বে তাই গিয়ে ওর সাথে একটু কথা বলি।
শম্পাঃ আচ্ছা ভাবি যাও তবে দেখো ভাইয়াকে আবার বেশি রাগিয়ে দিও না।
লিমাঃ আরে সেটা নিয়ে তোমাকে ভাবতে হবে না।
লিমা রুমে চলে গেলো গিয়ে দেখতে পেলো রোহান জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে আছে।
লিমাঃ কি দেখছো অমন ভাবে?

রোহান কোনো উত্তর না দিয়ে বাইরের দিকেই তাকিয়ে আছে।
লিমাঃ আমি সরি বাবু আমার তখন অমন ভাবে বলা ঠিক হয়নি।
রোহানঃ আমাকে কোন দিক থেকে দেখে মনে হয় আমি বাবু?
লিমাঃ এই তো আমার বাবু কথা বলেছে।

রোহানঃ উহু আমি বাবু না আমি বড় হয়ে গেছি?
লিমাঃ ধুর তুমি না একটুও রোমান্টিক না। আমি তো তোমাকে ভালোবেসে বাবু বলে ডাকছি।
রোহানঃ আমার এত ভালোবাসার দরকার নেই।
লিমাঃ রেগে আছো বাবু?

রোহানঃ আমাকে বাবু বলবে না বলে দিলাম। ডাকবে ঠিক আছে ডাকো তবে অমন ন্যাকামি করে ডাকার কি আছে?
লিমাঃ আমার অমন ভাবে ডাকতে ভালো
লাগে বললিমা কিছু একটা বলতে গিয়েও বললো না।।
রোহানঃ এই তুমি কিছু একটা বলতে চাইছিলে?

লিমাঃ না মানে আমি তো বাবু বলতে যাচ্ছিলাম কিন্তু তুমি তো রাগ করো তাই বললাম না।
রোহানঃ না তুমি বাবু বলতে চাচ্ছিলে না।
লিমাঃ রোহান দেখো তোমার পেছনে তেলাপোকা।

রোহান লাফ দিয়ে সেখানে থেকে চলে আসলো।
লিমাঃ তেলাপোকা তোমার পেছনেই আসছে দেখো?
রোহান দৌঁড়াচ্ছিলো সময় সুযোগ বুঝে লিমা রোহানকে ধাক্কা দিলো রোহান পরে যাচ্ছিলো বলে লিমাকে ধরলো আর লিমাকে ধরেই বিছানার উপর পড়ে গেলো।
রোহান নিচে আর লিমা রোহানের উপরে।

রোহান আর নিজের মধ্যে নেই।
লিমার চোখ গেলো রোহানের ঠোঁটের দিকে যেটা অনেক দিন থেকেই লক্ষ্য করে আসছে।
আজ আর সুযোগ হাত ছাড়া করবে না।


পর্ব ৭

লিমা আজ যে সুযোগ পেয়েছে সেই সুযোগ হাত ছাড়া করবে না।
রোহান বেচারা নিচে পড়ে আছে আর লিমা শক্ত করে রোহানকে চেপে ধরে রেখেছে।
আস্তে আস্তে লিমা মুখ সামনে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।
তারপর কি হলো?

নাহ্ থাক কমু না শুধু এইটুকু বলি লিমার ঠোঁটে যে লিপস্টিক ছিলো সেটা রোহানকে খাইয়ে দিয়েছে।
লিমা তখনো রোহানের বুকের উপর শুয়ে আছে।

এমন সময় শম্পা রুমে এসে এমন দৃশ্য দেখে বললো।
শম্পাঃ অহহ সরি সরি ভুল সময় আমি ভুল যায়গাতে চলে এসেছি।
লিমাঃ ব্যাপার না তুমি যাও আর যাবার আগে দরজা আটকিয়ে দিয়ে যাবে যাতে করে আর কেও এসে না পড়ে।
শম্পাঃ আর কে আসবে আম্মু তো রান্নায় করছে। আর আব্বু বাইরে। আমিও যাচ্ছি তোমরা চালিয়ে যাও।
শম্পা চলে গেলো।

রোহানঃ লিমা এইসব কি হচ্ছে?
লিমাঃ কি হচ্ছে তুমি বুঝতে পারছো না। আমি আমার জামাইকে আদর করে দিচ্ছি।
রোহানঃ তাই বলে অমন পচা মার্কা লিপস্টিক তুমি আমাকে খাইয়ে দিবে।। এর আগে না আমি তোমাকে বলেছিলাম তুমি লিপস্টিক এর ফ্লেবার চেঞ্জ করো
কিন্তু

রোহান লিমাকে ধাক্কা দিয়ে সড়িয়ে বললো।
রোহানঃ এই তুমি এই লিপস্টিক কবে থেকে নাও?
লিমাঃ কেনো এটা তো আমি সেই প্রথম থেকেই নিয়ে থাকি।
রোহানের কেমন জানি খটকা লাগলো।
কারণ জুলিও এই ফ্লেবার খুব বেশি পছন্দ করতো

এর আগে একদিন রোহান খুব বেশি রাগ করে ছিলো।
জুলি কোনো উপায় না পেয়ে এমনভাবে জোর করেই লিপস্টিক খাইয়ে দিছিলো।
আজ যখন লিমাও সেম কাজটা করছিলো রোহান তখন সেই দিনের ঘটনাকে অনুভব করছিলো তাইতো আর বাঁধা দিতে পারেনি।
লিমাঃ কি হলো অমন করে তুমি কি ভাবছো?

রোহানঃ কিছু না তবে এটা ভাবছি বিয়ের পর তো শশুড় বাড়ি গেলাম না তাই এবার আমি আমার শশুর বাড়ি যাবো।
লিমাঃ শ শ শশুড় বাড়ি হঠাৎ?
রোহানঃ তুমি অমনভাবে তোতলাচ্ছ কেনো?
লিমাঃ কই কিছু না আজ না গেলে হয়না?
রোহানঃ না হয়না আমরা আজ এক্ষুনী যাবো।

লিমাঃ তাহলে কাল
সকালে যাই। আজ তো অনেক রাত হয়ে গেছে।
রোহানঃ এইই আমি এতো কিছু শুনতে চাই না আমি আজই যাবো।
রোহানের সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো।
রোহানঃ যদি আজ না যাও তাহলে কিন্তু আমি তোমাকে ছেড়ে চলে যাবো।
লিমা রোহানের কাছে গিয়ে বললো।

লিমাঃ অই একবার যেতে দিয়েছি বলে তুমি কি ভাবছো বারবার যেতে দিবো?
রোহানঃ ঠিক বুঝলাম না। একবার মানে কবে আবার আমাকে যেতে দিছিলা?
লিমাঃ কই আমি এইকথা কখন বলছি?

রোহানঃ আমি এতো কথা শুনতে চাই না আমি আজ তোমাদের বাসায় যাবো।
লিমাঃ আচ্ছা আমরা আজকেই যাবো। তবে তুমি এখানে একটু দাড়াও আমি আব্বু আম্মুকে একটু ফোন করে নেই।
লিমা ফোন করতে বাইরে চলে গেলো।
কতক্ষণ পর এসে বললো।
লিমাঃ আব্বু আম্মু তো বাসায় নেই।

রোহানঃ তাহলে কোথায় গেছে?
লিমাঃ আব্বু আম্মু নাকি আমার নানু বাড়ি গেছে বাসায় মামা আর মামিকে রেখে গেছে।
রোহানঃ আচ্ছা চলো তাও আমি তোমাদের বাসায় যাবো।
লিমা জামা কাপড় গুছিয়ে রোহানের জামা কাপড় গুছিয়ে নিলো।
তারপর সেই রাতেই তাড়া বেড়িয়ে গেল।

লিমা নিজেই গাড়ি ড্রাইভ করছে।
রোহানঃ এই লিমা তুমি এইদিকে কই যাচ্ছো। তোমাদের বাসা তো অন্যরাস্তায়।
লিমাঃ আরে না ওটা তো ভাড়া করা বাসা ছিলো আমাদের নিজেদের বাসায় এই রাস্তা দিয়েই যেতে হয়।
গাড়ি যত এগুচ্ছে রোহানের বুকে ধুকপুকানি ততবেশি বৃদ্ধি পাচ্ছিলো।

কারণ এই রাস্তাটাই জুলিদের বাসায় যাওয়ার রাস্তা তাহলে কি রোহান যেটা ভাবছে সেটাই।
একসময় সেই চিরোচেনা বাসার সামনে গাড়ি এসে থামলো।
রোহানঃ এটা কাদের বাসা?
লিমাঃ আগে আমার মামার ছিলো কিন্তু মামা সব কিছু আমাদের কাছে বিক্রি করে লন্ডন চলে গিয়েছিলো। আবার কিছুদিনের জন্য আসছে কিছুদিন পর আবার চলে যাবে।
রোহানঃ অহহহ (অনেকটা নিরাশ হয়ে)। তবে লিমা জুলির আত্নীয় এটা কখনো লিমা বললো না কেনো আমায়? (মনে মনে)
লিমা আগে আগে যাচ্ছে রোহান পেছনে পেছনে যাচ্ছে। সবাই যেহেতু

ওদের ব্যাপারে জানতো সেহেতু এই বাসায় অনেকবার আসা হয়েছে। বাসাটা আগের মতই আছে।
লিমা কলিংবেল চাপ দিলো কিছুক্ষণ পর দরজা খুলে দিলো।
লিমা ভিতরে চলে গেলো। কিন্তু রোহানের জুতার ফিতা যে খুলে গেছে আর রোহান সেটা বাঁধায় ব্যাস্ত লিমা সেটা খেয়াল করলো না।
হঠাৎ ভেতর থেকে আওয়াজ এলো।
জুলি তোরা এসে গেছিস।

অই কথা শুনেই রোহান দৌঁড়ে ভেতরে চলে গেলো যাবার পর আরেক দফায় অবাক হবার পালা।
রোহানঃ জুলির আম্মু এখানে কেনো। (মনে মনে)
জুলির আম্মুঃ আরে রোহান তুমি কেমন আছো বাবা?

রোহানঃ আমি কেমন আছি সেটা পরে বলছি আগে বলুন এখানে একটু আগে জুলির নাম ধরে ডাকা হয়েছিলো কেনো?
লিমাঃ আরে হ্যাঁ আসলে আম্মি আমাকে জুলি বলেই ডাকে ওনার মেয়ে গাড়ি একসিডেন্টে মারা যায়।
রোহানঃ আন্টি আমাকে মাফ করে দিবেন আমার জন্যই। আর বলতে না পেরে রোহান কান্নায় ভেঙে পরে।
জুলির আম্মু তখন রোহানের কাছে গিয়ে বললো। জুলির আম্মুঃ কাঁদছো কেন। আর আগে তো আমাকে আম্মু বলতে। এখন আন্টি বলে আমাকে পর করে দিচ্ছো?
রোহানঃ আগে যার জন্য আম্মু বলতাম সেই তো আর নেই।

জুলির আম্মুঃ তো কি হয়েছে আমার এই মেয়েকে তো বিয়ে করেছো আর তাই তুমি এখনো আমাকে আম্মু বলেই ডাকবে। ডাকো আম্মু বলে ডাকো।
রোহানঃ আম্মু আমি না সত্যি সেদিন বুঝতে পারি নাই এতো কিছু হয়ে যাবে। আপনাদের সাথে যে কথা বলবো সেই সুযোগ টাও আমি পাইনি। হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবার পর আমি আপনাদের বাসায় আসি কিন্তু জানতে পারি সবাই নাকি দেশ ছেড়ে চলে গেছেন কোথায় গেছেন সেটাও জানিনা।।
জুলির আম্মুঃ আরে এমনভাবে বাচ্চাদের মত কাঁদছো কেনো? আল্লাহ যা করেন ভালোর জন্যই করেন। এমনিও আমার মেয়ে।। এই বলেই থেমে গেলো।
রোহানঃ আপনার মেয়ে কি আম্মু?

জুলির আম্মুঃ কিছু না যাও উপরে যাও অনেক রাত হয়ে গেছে আজ আর কথা নয় কাল কথা হবে।
আর লিমা তুই ওখানে দাড়িয়ে আছিস কেনো যা রোহানকে নিয়ে উপরে যা।
লিমা রোহানের হাত ধরে রোহানকে উপরে নিয়ে গেলো।
লিমাঃ এই তুমি সব সময় এতো বেশি কান্না করো কেন?
রোহানঃ কাওকে কখনো ভালোবেসেছ?
লিমাঃ হুম বেসেছি তো।

রোহানঃ তাকে ছাড়া থাকা কত কষ্টের সেটা তো বুঝতে পারো।
লিমাঃ তাকে ছাড়া থাকা কষ্টের কিন্তু আমি তো তাকে ছাড়া থাকবো না এই যে তোমাকে সব সময় আমার কাছেই বেঁধে রাখবো।
রোহানঃ আচ্ছা তুমি যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আমাকে একটু একা থাকতে দাও।
লিমাঃ আচ্ছা তুমি এখনে বসো আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।

লিমা যখন যাচ্ছিলো তখন রোহান খেয়াল করে দেখলো লিমার পিঠে একটা তিল আর তিল টা অন্যান্য তিলের থেকে একটু বড় যেটা জুলির পিঠেও ছিলো এইবার রোহানের পুরোপুরি সন্দেহ হলো এটাই জুলি।
কোনো ভাবে শুধু মুখের গঠন চেঞ্জ করেছে।

আজ একটা সমাধানে আসা যাক আর একেবারে সিউর হবার জন্য রোহান একটা প্ল্যান বানালো।
লিমা ফ্রেশ হয়ে বের হবার পর বললো।
রোহানঃ লিমা তোমাকে একটা রিকুয়েস্ট করবো রাখবে?
লিমাঃ অবশ্যই রাখবো বলো কি রিকুয়েস্ট।

রোহানঃ হাতা ছাড়া তোমার কোনো জামা আছে?
লিমাঃ হ্যাঁ আছে কিন্তু কেনো?
রোহানঃ সেটা পরে এখন আমার সামনে একটু আসবে প্লিজ।
লিমাঃ মনে হচ্ছে আজ আমার বরটার রোমান্স করার শখ জাগছে ওকে তুমি একটু অপেক্ষা করো আমি এক্ষুনি পড়ে আসছি।
কিছুক্ষণ পর।

লিমা হাতা ছাড়া জামা পরে রোহানের সামনে এসে দাঁড়ালো।
লিমাঃ এই যে আমি চলে এসেছি।
রোহান লিমার বা হাতে লক্ষ্য করলো আর যেটা ভেবেছিলো সেটাই সুন্দর করে লেখা আছে J+R।
রোহান লিমাকে জড়িয়ে ধরে বললো।
রোহানঃ তুমি আমার জুলি হ্যাঁ তুমিই আমার জুলি।
লিমাঃ আরে তুমি কি পাগল হয়ে গেলে নাকি?

আমি কেনো তোমার জুলি হতে যাবো আমি লিমা।
রোহানঃ মিথ্যা বলবে না তুমি? জুলির সাথে ঝগড়া হবার পর জুলি এমনভাবে ওর বাম হাত কেটে লিখেছিলো J+R আর তোমার পিঠে যেখানে তিল। ঠিক সেখানেই জুলিরও তিল ছিলো।
লিমাঃ তো কি হয়েছে?
রোহানঃ তুমিই আমার জুলি।

লিমাঃ দেখো রোহান এতো পাগলামি ভালো লাগে না।
হ্যাঁ হয়তো কাকতালীয় ভাবে
মিলে গেছে তার মানে এটা নয় যে আমি তোমার জুলি। আর আমি হাত কেটে J+R লিখেছিলাম ফ্রেন্ডের সাথে বাজি ধরে।
রোহান এইবার লিমাকে ঝাকি দিয়ে বলতে লাগলো।
রোহানঃ আমি মানি না এইসব। তুমিই আমার জুলি।
ঠাসসস ঠাসসস

লিমা রোহানের গালে দুইটা চড় বসিয়ে দিয়ে বললো।
লিমাঃ আর কতবার বলবো আমি তোমার জুলি নই। এতোই যদি জুলিকে ভালোবাস তাহলে সেদিন জুলির সাথে মরে কেনো গেলে না।
লিমার কাছে এমন কথা শুনে রোহান একদম চুপ হয়ে গেলো।


পর্ব ৮

উফফ আর কতবার বলবো আমি জুলি নই। এতোই যদি জুলিকে ভালোবাসতে তাহলে সেদিন জুলির সাথে মরে গেলে না কেনো?
লিমার কাছ থেকে এমন কথা শুনে রোহান একদম চুপ হয়ে গেলো। লিমাও চুপ হয়ে গেছে।
দুজন দুজনের দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে ছিলো। তারপর।
রোহান সেখান থেকে চলে আসতে লাগলো।
লিমাঃ এই তুমি এতো রাতে কোথায় যাচ্ছ?

রোহান কোনো প্রতি উত্তর না দিয়ে বাসা থেকে বেড়িয়ে হাটা ধরলো।
পেছন পেছন লিমাও আসছে আর বলছে।
লিমাঃ রোহান এই রোহান এইভাবে যাচ্ছ কোথায়?
আমার কথা শোনো দাড়াও।

কিন্তু রোহানের দাঁড়াবার কোনো লক্ষণ নেই।
রোহান হাটছে আর লিমা দৌঁড়াচ্ছে তবুও লিমা রোহানের সাথে পেড়ে উঠছে না।
রোহানের চোখ দিয়ে অনবরত পানি পড়ছে আর ভাবছে হ্যাঁ এটা জুলি না কারণ জুলি হলে এমন কথা কোনো দিন বলতো না।
লিমা ভাবছে না এটা আমি কি করেছি? রাগের মাথায় একটু বেশি করে ফেলেছি।
হাটতে হাটতে রোহান সেই লেকের ধারে চলে গেছে।

লেকের পাশে সরকার লাইটের ব্যবস্থা করে দিলেও চোরেরা অনেক গুলো লাইট চুরি করে নিয়ে গিয়েছে।
তাই অনেক যায়গাতেই অন্ধকার
রোহান গিয়ে অন্ধকারে একটা যায়গায় বসলো।
লিমাও রোহানের পাশে বসলো।
রোহান লিমার দিকে না তাকিয়ে আনমনে সামনের দিকে তাকিয়ে আছে।
অনেকক্ষণ নিরবতা।

লিমাই নিরবতা ভেঙ্গে বললো।
লিমাঃ আর কতক্ষণ এইখানে এইভাবে বসে থাকবে চলো বাসায় চলো রাত হয়ে যাচ্ছে।
রোহানঃ (চুপ)
লিমাঃ কি হলো আমি কিছু বলছি তো
বাসায় চলো রাত বাড়ছে।

রোহানঃ আমি যাবো না।।
লিমাঃ যাবে না মানে কি এইখানে এমনভাবে বসে থাকবে নাকি?
রোহানঃ হ্যাঁ থাকবো।
লিমাঃ বাসায় চলো বলছি।
রোহানঃ আমার সময় হলে আমি চলে যাবো।

লিমাঃ সময় না তোমাকে এখুনি আমার সাথে বাসায় যেতে হবে।
রোহানঃ বলছি তো আমি যাবো না কান দিয়ে যাচ্ছেনা নাকি?
লিমাঃ হ্যাঁ যাচ্ছে না তুমি এখানে বসে কেনো থাকবে?
রোহানঃ আমার এখানে বসে থাকতে ভালো লাগছে তাই থাকবো যাও তো আমাকে একটু একা
থাকতে দাও আমার ভালো লাগছে না।
লিমাঃ রাগ করেছো?

রোহানঃ রাগ? কার উপর রাগ করবো?
লিমাঃ কার উপর মানে? আমার উপর রাগ করেছো তুমি?
রোহানঃ নাহ একটুও রাগ করেনি তোমার উপর। উল্টো আমি তোমার কথায় অনেক খুশি হয়েছি জানো?
লিমাঃ খুশি হয়েছো মানে?

রোহানঃ অই যে তুমি বললে না আমি এতো জুলি, জুলি করি আর জুলিকে এতোই যদি ভালোবাসি ওর সাথে মরে গেলাম না কেনো?
হ্যাঁ সত্যি সেদিন আল্লাহ কেনো যে আমাকে নিয়ে নিলো না। আমি এখন সবার কাছে একটা বোঝা হয়ে গেছি।। সত্যি এখন আর বেঁচে থাকতে ভালো লাগে না। আত্নহত্যা পাপ। যদি পাপ না হতো নিজেকে শেষ করে দিতাম আমি।
লিমাঃ এই তুমি এইসব কি বলছো?

রোহানঃ কেনো ভুল কিছু বলেছি আমি? তুমি না একটু আগে এই কথা বললে।
লিমাঃ আমি তো রাগের মাথায় বলে ফেলেছি তার জন্য কি তোমার মন খারাপ করে বসে থাকতে হবে?
রোহানঃ আমি কই মন খারাপ করে বসে আছি।

লিমাঃ তুমি না বললেও আমি বুঝতে পারছি।
রোহানঃ বেশি বোঝা ভালো না আমি মোটেও মন খারাপ করে নেই।
লিমাঃ আমি জানি তোমার মন খারাপ
চলো না বাসায় চলো।

রোহানঃ তুমি চলে যাও আমি আজ বাসায় যাবো না।
লিমাঃ আমি এতো রাতে বাসায় একা কিভাবে যাবো? সাথে তো গাড়ি আনিনি।
রোহানঃ তুমি কি করে যাবে সেটা তোমার ব্যাপার।
লিমাঃ এমনভাবে কেনো বলছ? রাস্তায় যদি আমার কিছু হয়ে যায় তখন কি করবে?
রোহান কিছুক্ষণ কিছু একটা ভেবে বললো।
রোহানঃ আচ্ছা চলো।

রোহান লিমাকে বাসায় দিয়ে আবার বেড়িয়ে যায় তবে লিমা এইবার সেটা জানতে পারেনি।
পরদিন সকালে লিমা ঘুম থেকে উঠে দেখে রোহান বাসায় নেই।
ফোন দেয় রোহানের নাম্বারে।
রোহানঃ হ্যালো বলো।
লিমাঃ তুমি কোথায় বাসায় নেই কেনো?
রোহানঃ আমি তো একটু বেড়াতে এসেছি।

লিমাঃ বেড়াতে গেছো মানে? কাদের বাসায় বেড়াতে গেছো তুমি?

রোহানঃ তুমি চিনবে না আমার এক কলেজ ফ্রেন্ডের বাসায় এসেছি।
লিমাঃ তুমি বলবে তো নাকি আমাকে না বলে
তুমি কার বাসায় গেছো?
রোহানঃ আরোহীদের বাসায় এসেছি।
লিমাঃ মানে কি! অই তোরে না বলছিলাম অই বাসায় না যাইতে।

রোহানঃ সরি তুই তুকারি করছো কেনো? আর তুমি আরোহীকে চিনো নাকি? আর তুমি কবে আমাকে না করলে?
লিমাঃ তুই একটা মেয়ের বাসায় কেনো গেছিস সেটা বল। আর তোর মেয়ে ফ্রেন্ড কেনো থাকবে।
রোহানঃ তোমার সাথে আমি পরে কথা বলছি আরোহী খাওয়ার জন্য আমাকে ডাকছে আমি খেয়ে আসছি।
এইবলেই রোহান ফোন কেটে দিলো।

আর এইদিকে লিমা রাগে ফুঁসছে।
লিমাঃ না এইভাবে বসে থাকলে চলবে না আজকে ওর একদিন কি আমার একদিন সাহস কত আমাকে না বলে দাড়া দেখাচ্ছি মজা। (মনে মনে)
লিমা গাড়ি নিয়ে বের হয়ে গেলো।

কতক্ষণ পর আরোহীদের বাসায় কলিংবেলের চাপ পড়লো।
আরোহী এসে দরজা খুলে দিলো।
আরোহীঃ কি ব্যাপার আপনি কে?
লিমা কোনো উত্তর না দিয়ে ভেতরে চলে গেল।
আরোহীঃ আরে বলবেন তো নাকি আপনি কে?
লিমাঃ রোহান কোথায়?

আরোহীঃ ভেতরে বসে খাচ্ছে কিন্তু আপনি কে?
লিমাঃ আমি ওর স্ত্রী।
লিমা ভেতরে গিয়ে দেখে রোহান খাচ্ছে।
রোহানের কাছে গিয়ে।
লিমাঃ অই

তোরে এর আগে বলছিলাম না এই বাসায় আর না আসতে?
রোহানঃ কবে না করছিলে। আর তোমার সাথে কথা পরে বলছি আগে আমাকে খেতে দাও।
লিমাঃ আরে রাখ তোর খাওয়া আজকে বাসায় চল তোর খবর আছে এই বলেই রোহানের কলার ধরে উঠিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।।
রোহান আরোহীকে উদেশ্যে করে বলছে।

রোহানঃ দোস্ত আজকে চলে যাচ্ছি কিন্তু আমি আবার আসবো আর হ্যাঁ তোর হাতের রান্নাটা অনেক ভালো ছিলো। আর আংকেল আন্টিকে আমার সালাম জানিও।।
লিমা আরো রেগে গিয়ে দ্রুত গতিতে সেখান থেকে রোহানকে নিয়ে চলে আসলো। এসে রোহানকে গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি চালাতে শুরু করলো।
রাগে লিমার চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।
রোহানঃ আচ্ছা তুমি কি আরোহীকে আগে থেকে চিনতে?
লিমাঃ আমি কিভাবে আগে থেকে চিনবো?

রোহানঃ তাহলে জানলে কিভাবে এখানে আরোহীদের বাসা?
এমন প্রশ্ন শুনে লিমা একটু
ঘাবড়ে গেল। কেনো আমার কি কোনো ফ্রেন্ড নাই আমি তাদের মাধ্যেমে জেনে নিয়েছি।
রোহানঃ অহহ তাই বলো।

লিমাঃ এখন আর একটাও কথা হবে না। তোর সাথে আমার বোঝাপড়া হবে বাসায় গিয়ে।
রোহানঃ সে বাসায় গিয়েই বোঝাপড়া করো আর যাই বলো আরোহীর হাতের রান্নাটা সেইই লাগছে আমার কাছে। একদম সেই আগের মতই আছে।
উফফ আরোহীর নাকি এখনো বিয়ে হয়নি।
লিমাঃ বিয়ে হয়নি তো কি হয়েছে?
রোহানঃ আরোহীকেই বিয়ে করা দরকার ছিলো

তাহলে অন্তত প্রতিদিন এতো ভালো ভালো রান্না খেতে পাড়তাম।
লিমা এইবার গাড়ি থামিয়ে রোহানের গলা চেপে ধরে বললো।
লিমাঃ আর একবার যদি ওই মেয়ের নাম উচ্চারণ করিস তোকে মেরে আমি জেলে যাবো এই আমি বলে দিলাম।
রোহানঃ আরে আমার লাগছে তো আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে ছেড়ে দাও আমাকে।
লিমাঃ তাহলে বল আর অই মেয়ের নাম মুখে আনবি?

রোহানঃ নাহ নাহ আর আনবো না ছাড়ো আমায়?
লিমা রোহানের গলা ছেড়ে দিলো।
রোহানঃ আমি বুঝলাম না তুমি আরোহীর নাম শুনে এতো রেগে যাও কেনো?
লিমাঃ তুই আবারো ওর নাম নিলি?

রোহানঃ সরি সরি আর নিবো না ওর নাম।
সারা রাস্তা রোহান চুপ করে বসে ছিলো।
লিমাঃ এই আমরা চলে এসেছি এখনো কেনো বসে আছিস?
রোহানঃ নাহ আমি নামবো না আমাকে মারবে তুমি?
লিমাঃ সেটা এখানে না রুমে নিয়ে গিয়ে মারবো।

রোহানঃ কিন্তু আমার দোষ কি?
লিমাঃ সেটাও রুমে গিয়ে বলব এই বলে রোহানকে গাড়ি থেকে নামিয়ে জোর করে ধরে রুমে নিয়ে গেলো।
তারপর রুমের দরজা বন্ধ করে দিলো।
রোহানঃ এই দরজা আটকালে কেনো?

লিমাঃ যাতে করে তুই পালিয়ে যেতে না পারিস হারামি।
রোহানকে ধাক্কা দিয়ে বিছানার উপর ফেলে দিয়ে বললো।
লিমাঃ তোকে বলছিলাম আমি অই বাসায় না যেতে?

রোহানঃ নাহ তুমি বলোনি জুলি বলছিলো।
লিমাঃ সে যেই বলুক তবুও তুই গেলি কেনো?
রোহানঃ জুলি কষ্ট পাবে বলে আমি যেতাম না
কিন্তু এখন তো জুলি নেই তাই।

লিমাঃ জুলি কষ্ট পায় না সেটা ঠিক আছে কিন্তু
অন্য একজন ঠিক কষ্ট পাচ্ছে।
এই বলেই বুকের উপর কিল ঘুষি শুরু হয়ে গেছে।
রোহানঃ আরে আমার লাগছে ব্যাথা পাচ্ছি তো?
লিমাঃ ব্যাথা পাবার জন্যই তো দিচ্ছি।

আমাকে কষ্ট দিলি কেন তুই?
রোহানঃ আমি কিভাবে তোমাকে কষ্ট দিলাম।
লিমাঃ তুই জানিস না আমি আরোহীকে সহ্য করতে পারি না।
রোহানঃ আমি জানতাম জুলি সহ্য করতে পারে না

কিন্তু তুমিও যে পারবে না সেটা জানতাম না। আর কেনোই বা পারো না?
লিমাঃ কারন অই ডাইনি তোকে প্রপোজ করেছিলো।
রোহানঃ তুমি সেটা জানলে কিভাবে?
লিমাঃ আমাকে শম্পা বলেছে।

রোহানঃ একদম মিথ্যা বলবা না।
এটা আমি আর জুলি ছাড়া কেও জানেনা।
তাহলে তুমি আমার জুলি বলো।

রোহানের কথা শুনে।
লিমা রোহানকে ছেড়ে দিয়ে বললো আমার কাজ আছে আমি গেলাম।


পর্ব ৯

রোহানের কথা শুনে লিমা রোহানকে ছেড়ে দিয়ে রুম থেকে বের হয়ে চলে গেলো।
লিমার এমন ব্যবহারে রোহানের সন্দেহ আরো বেড়ে গেলো।

আর জুলি আর রোহান যেইই কথা জানতো সেই কথা লিমা জানলো কিভাবে সেটা ভাবার বিষয়।
এটাই জুলি হ্যাঁ এটাই জুলি তবে আমার কাছ থেকে লুকিয়ে থাকছে নাকি লুকিয়ে থাকার পেছনে অন্য কোনো কারণ আছে?।
নাহ এইবার আমাকে আরো বড় প্লান করতে হবে যদি এটা জুলি হয় তাহলে ও নিজেই স্বীকার করবে ও জুলি। .
রোহান নিচে চলে গেলো।

দেখে লিমা জুলির আম্মুর সাথে বসে কি জানি গল্প করছে।
রোহানকে দেখে জুলির আম্মু বললো।

জুলির আম্মুঃ রোহান তুমি কিন্তু আমার মেয়ের সাথে এটা একদম ঠিক করোনি।
রোহানঃ আপনার মেয়ে মানে কার সাথে?
জুলির আম্মুঃ লিমা আমার মেয়েই তো তুমি ওকে কাঁদিয়ে ঠিক করোনি।
রোহানঃ আমি কি ভাবে ওকে কাঁদালাম?
জুলির আম্মুঃ তুমি আরোহীর বাসায় কেনো গিয়েছিলে?

রোহানঃ আম্মু জুলি আমাকে বলেছিলো আল্লাহ না করুক যদি জুলির কোন দিন কিছু হয়ে যায়
তখন তো আমি একা হয়ে যাবো।
কিন্তু আমি যদি এমন কাওকে খুঁজে পাই যে আমাকে জুলির মত করেই ভালোবাসে তার সাথে রিলেশন করতে। !
লিমাঃ নাহ আম্মু আমি কোনো দিন ওকে এই।। .

রোহানঃ কি হলো থেমে গেলে কেনো? আর হুম আমি এমন কাওকে খুঁজে পেয়েছি তাই আমি তার সাথেই রিলেশন করবো জুলিকে দেওয়া কথা আমি ফেলতে পারবো না।
জুলির আম্মুঃ তার মানে কি? রোহান তুমি কি এখন লিমাকে ছেড়ে অন্য কারো সাথে রিলেশন করবে নাকি?
রোহানঃ দেখুন আম্মু জুলিকে আমি নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসতাম ও চলে যাবার পর আমি অন্য কাওকে খুঁজে দেখিনি।
কিন্তু কাল যখন আরোহীর বাসায় গেলাম তখন আমি বুঝতে পারলাম আরোহী আমাকে জুলির মতই ভালোবাসে তাই আমি আরোহীর সাথে রিলেশন করে জুলিকে দেওয়া কথা রাখতে চাই।

খেয়াল করে দেখলাম লিমা আমার দিকে কেমন করে যেনো তাকিয়ে আছে।
চলে আসলাম রুমে। কতক্ষণ পর লিমা আসলো।

লিমাঃ রোহান তুমি একটু আগে যা বলছিলে সব কি সত্যি? (নাক টানতে টানতে)
আমি অন্যদিকে তাকিয়ে ছিলাম।। তবে বুঝতে পারছিলাম লিমা কান্না করছে।
রোহানঃ হ্যাঁ যা বলেছি সব সত্যি।
লিমাঃ তাহলে সেটা আমাকে আগে বলতে।

রোহানঃ আমাকে বলার সুযোগ দিলে তো বলবো।
লিমাঃ তুমি আরোহীর সাথে রিলেশন করতে পারবে না।
রোহানঃ তাহলে তুমি স্বীকার করো তুমিই আমার জুলি। !
লিমাঃ রোহান আমি যে নই সেটা কেনো স্বীকার করবো?
রোহানঃ আমি জানি তুমিই আমার জুলি।
লিমাঃ তুমি ভুল জানো।

রোহানঃ তার মানে তুমি আমার জুলি না তাই তো?
লিমাঃ হ্যাঁ ঠিক তাইই আমি লিমা।
রোহানঃ তাহলে তোমার কথা রাখতে পারলাম না সরি।
লিমাঃ কেনো রাখতে পারবে না?

রোহানঃ কারণ আমি জুলিকে কথা দিয়েছিলাম যে।
লিমাঃ মিথ্যা বলবা না তুমি এই রকম কোনো কথা দাওনি।
রোহানঃ সেটা তুমি জানবে কিভাবে? আমি জুলির কাছে কোনো কথা দিয়েছিলাম কিনা?
লিমাঃ কারণ আমিই।

রোহানঃ তুমি কি?
লিমাঃ আমি তোমার বউ।
রোহানঃ হুম বউ তো কি হয়েছে?
লিমাঃ তাই তুমি আরোহীর সাথে কোনো প্রকার রিলেশন করতে পারবে না।
রোহানঃ সেটা আমি বুঝে নিবো।

লিমাঃ অই আমি যেটা বলছি কান দিয়ে যাচ্ছে না নাকি? ভালো ভাবে বলছি তাই হজম হচ্ছে না আমি থাকতে আবার অন্য মেয়ের সাথে রিলেশন একদম মেরে ফেলবো।
রোহানঃ হুম মেরে ফেলো তাও আমি জুলির কাছে তাড়াতাড়ি যেতে পারবো।
লিমাঃ নাহ মারবো না ওটাও একটা ডাইনি ওর জন্য এখনো আমি আমার স্বামীর ভালোবাসা পায়নি।
রোহানঃ এই বেলা অনেক হয়ে গেছে আমার ক্ষুধা লাগছে।
লিমাঃ তুমি না ওখান থেকে খেয়ে আসলে?

রোহানঃ খেতে দিলে তো খাবো। মাত্র তো খেতে বসেছিলাম আর তুমি আমাকে নিয়ে আসলে।
লিমাঃ বেশ করেছি আমি থাকতে কেনো তুমি ওর হাতের রান্না খাবে?
রোহানঃ আমার ইচ্ছা হয়েছে তাই খেয়েছি।
লিমাঃ গুল্লি মারি তোর ইচ্ছার নিচে চল খেতে
দিচ্ছি।

আমি একটা ভিলেনি হাসি দিয়ে আবার।
রোহানঃ এহহ এমনভাবে বললে আমি যাবো না। জানো আরোহী আমাকে কত সুন্দর ভাবে খেতে ডাকছিলো।
লিমাঃ কিভাবে ডাকছিলো?

রোহানঃ আমি ঘুমে ছিলাম আরোহী আসলো এসে আমাকে ডাকলো এই শুনছো তোমার জন্য কত কিছু রান্না করেছি খাবে চলো।
আমার কথা শুনে লিমা ডুম করে আমার নাকে একটা ঘুষি দিলো।
রোহানঃ আওওওওও
লিমাঃ সরি সরি আমি তোমাকে মারতে চাইনি। তোমার কথা শুনে আমার আরোহীর উপর রাগ হয়েছিলো তাই ভাবছিলাম তুমি আরোহী।
রোহানঃ উহহ কি ব্যাথা।

লিমাঃ চলো চলো নাকে বরফ ধরবো।
রোহানঃ লাগবে না আমার মেরে এখন আসছে আদর করতে?
লিমাঃ সরি বাবু আমি ইচ্ছা করে দেইনি চলো না।
এই চল। বলেই জোর করে নিয়ে গেলো।

তারপর যখন বরফ ধরছিলো তখন জুলির আম্মু এসে বললো।
জুলির আম্মুঃ কিরে ওর নাকে কি হয়েছে?
লিমাঃ আর বলো না জামাই আদর করতে গিয়ে একটু বেশি হয়ে গেছে তো তাই এখন বরফ ধরতে হচ্ছে। !
তোমার জামাই এতো দুষ্টু যে আদর বেশি পেতে চাইছিলো যার ফলে এখন এই অবস্থা।
তারপর লিমা আমাকে উদ্দেশ্যে করে বলল।

লিমাঃ এই চলো আর নাক ধরে বসে থাকতে হবে না খাবে চলো।
রোহানঃ নাহ আমি খাবো না আমাকে মারলে কেনো?
লিমাঃ তুমি অই কথাটা আমাকে বললে কেনো?
রোহানঃ আমি তো সত্যি বলছি।
লিমাঃ তাই মেরেছি চলো খাবে চলো এখন।

রোহানঃ তোমার জন্য একটা শাস্তি আছে যদি সেটা মাথা পেতে নাও তাহলে খেতে পারি।
লিমাঃ হুম বলো কি শাস্তি?
রোহানঃ আমাকে খাইয়ে দিতে হবে বলো দিবে?
লিমাঃ এটা কোনো শাস্তি হলো এটা তো আমার জন্য খুশির বিষয়?
চলো তোমাকে আজ আমি নিজের হাতে খাইয়ে দিবো।

কয়েকদিন পর।
রোহান অনেক ভাবে চেষ্টা করেছে কিন্তু কোনো ভাবেই লিমার মুখ দিয়ে এটা বলাতে পারছে না যে ওই জুলি।
তবে রোহানও হাল ছেড়ে দেওয়ার পাত্র নয়।
বাইরে থেকে ঘুরে এসে রোহান রুমে প্রবেশ করলো। তবে আসার আগে সিগারেট আর মদের বোতল নিয়ে এসেছে জুলি একদম এইগুলো সহ্য করতে পারে না।
লিমা রুমেই ছিলো।
রোহানের হাতে এইসব কিছু দেখে।

লিমাঃ এই তুই এইসব বাসায় কেনো এনেছিস?
রোহানঃ জানো জুলি এইগুলো খুব পছন্দ করতো আমি আর জুলি একসাথে বসে খুব খেতাম।
জুলি তো ফুর ফুর করে সিগারেট টানতো?
লিমাঃ দাও আমিও টানবো।

লিমার কথা শুনে এই প্রথম রোহান কিছুটা অবাক হয়ে গেলো আর মনে হলো এটা জুলি না।
কারণ জুলি সিগারেটের ধোঁয়াই সহ্য করতে পারতো না সেখানে নাকি সিগারেট টানবে।
রোহানঃ মানে তুমি সিগারেট খাবে?

লিমাঃ হুম খাবো আমি। দাও ফুর ফুর করে টানবো।
রোহানঃ এই নাও।
লিমাঃ দাও অই মদের বোতল টাও আমার হাতে দাও।
রোহানঃ কেনো মদের বোতল দিয়ে তুমি কি করবে?
লিমাঃ ঢক ঢক করে গিলবো দাও আমাকে আমি খেয়ে আবার তোমাকে দিয়ে দিচ্ছি।

রোহানঃ এই নাও বেশি খাবে না কিন্তু আমার জন্য রেখে দিবে এই বলে রোহান লিমার হাতে মদের বোতল আর সিগারেটের প্যাকেট ধরিয়ে দিলো।
মদের বোতল হাতে নিয়েই লিমা দিলো সেটাকে ফ্লোরে ছুড়ে। সাথে সাথে সেটা ভেঙে চুরমার হয়ে গেলো।
লিমাঃ কি ভেবেছিলে চান্দু আমি তোমাকে মদ খেতে দিবো। আর আমি নিজেও খাবো নাও এখন ফ্লোর থেকে উঠিয়ে নিয়ে খেয়ে নাও।

আর এই সিগারেটের প্যাকেট এখন আমি জানালা দিয়ে ফেলে দিবো। এই বলেই লিমা জানালার দিকে যেতে লাগলো রোহান লিমাকে ধরতে যাবে ঠিক সেই সময় ভাঙা কাচের টুকরা রোহানের পায়ে বিঁধে গেল।
আর সাথে সাথে রোহান চিৎকার দিয়ে বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো।
লিমাঃ পেছন ফিরে দেখে রোহানের পা দিয়ে সমানে রক্ত বের হয়েই যাচ্ছে।

লিমা সিগারেটের প্যাকেট ফেলে দিয়ে রোহানের কাছে এসেই প্রথমে কাছের টুকরাটাকে বের করে নিলো তারপর চেপে ধরলো যাতে করে আর রক্ত বের না হয়।
রোহানঃ এই তুমি আমার পা ধরেছো কেনো?
লিমাঃ কোনো কথা বলবা না। (কান্না করতে করতে)
রোহানঃ আরে বাচ্চাদের মত কাঁদছো কেনো?

লিমাঃ কথা বলতে না করছি তো নাকি।
রোহানঃ প্লিজ কাঁদবে না।
লিমাঃ কেনো কাঁদবো না কেনো?
আর জুলি কাঁদলে তোমার কষ্ট হতো।
আমি কাঁদছি তাতে তোমার কি?
রোহানঃ কেনো জানি আমার এখনো কষ্ট হচ্ছে।
লিমাঃ সরি বাবু সব আমার জন্য।

রোহানঃ তোমার কোনো দোষ নেই। আমিই তো মদের বোতল এনেছিলাম।
লিমাঃ তবুও আমি যদি না ভেঙে কোথাও রেখে দিতাম।
রোহানঃ আমার দিকে একটু তাকাও তো?
লিমা রোহানের দিকে তাকালো।

হ্যাঁ ঠিক ধরেছে রোহান। জুলি অল্প একটু কান্না করলে যেমন চোখ লাল হয়ে যেতো লিমারো সেটাই হয়েছে।
রোহানঃ এই দেখেছো কেঁদে চোখ লাল করে ফেলেছো।
কান্না থামাও প্লিজ।


পর্ব ১০ (সর্বশেষ)

এই কান্না করতে করতে তো চোখ লাল করে ফেলেছো এইবার কান্না থামাও প্লিজ।
লিমাঃ না থামাবো না আমি কান্না করবো।
রোহানঃ কেনো কান্না কেনো করবে?

লিমাঃ তুমি আমার জন্য ব্যাথা পেলে তাই কান্না করবো।
রোহানঃ আচ্ছা তুমি কান্না করলে কি আমার ব্যাথা কমে যাবে।
লিমাঃ অহহ হ্যাঁ তাইতো আমি সেই কখন থেকে কান্না করে যাচ্ছি তোমার পা কেটে গেছে মলম দিতে হবে তো। আচ্ছা তুমি একটু বসো একদম উঠবে না আমি মলম নিয়ে আসছি।

লিমা মলম আনতে চলে গেলো।
আর রোহান ভাবছে একটা মানুষের সাথে অন্য একটা মানুষের এতো মিল কিভাবে হয়?
লিমা মলম নিয়ে এসে রোহানের পায়ে লাগিয়ে দিলো।

তারপর ফ্লোরে পরে থাকা কাঁচের টুকরো গুলো পরিষ্কার করে নিলো।
রাতে খাওয়া দাওয়া শেষ করে যে যার যার মত ঘুমাতে চলে গেলো।
রোহান আর লিমা পাশাপাশি ঘুমালেও রোহান কখনো লিমাকে স্পর্শ করেনি।।
ঘুমের ঘোরেই হঠাৎ রোহান কি যেনো বলছে শুনে লিমার ঘুম ভেঙে যায়।
লিমাঃ রোহান তুমি এইসব কি বলছো?

রোহান কোনো উত্তর না দিয়ে আবোল তাবোল বলেই যাচ্ছে।
লিমাঃ কি হলো রোহান তুমি আমার কথা শুনতে পাচ্ছ না এমনভাবে আবোল তাবোল কেনো বকছো?
এই বলে যখন লিমা রোহানকে ধাক্কা দিলো।
রোহানের শরীর অনেক গরম লিমা সেটা বুঝতো পেরে রোহানের মাথায় হাত দিয়ে দেখে শরীরে অনেক জ্বর।
লিমাঃ রোহান এই রোহান।

রোহানঃ ওম্মম(আস্তে করে)
লিমাঃ তোমার কি খুব বেশি খারাপ লাগছে?
রোহানঃ হুম্ম।
লিমাঃ মাথায় পানি নিবে নাকি জল পট্রি নিবে?
রোহান কোনো উত্তর দিলো না।

তবে শরীরে যে পরিমাণ জ্বর তাতে করে মাথায় পানি দিয়ে সারা শরীর মুছে দিলেই ভালো হবে। লিমা উঠে পানি আনতে চলে গেলো।
কিছুক্ষণ পর এসে বালিশের নিচে একটা বড় পলিথিন দিয়ে মাথায় পানি ঢালতে লাগলো।
বেশ কিছুক্ষণ পানি দেবার পর লিমা রোহানকে জিজ্ঞাস করলো।
লিমাঃ এখন কেমন লাগছে?

রোহানঃ হুম অনেক ভালো লাগছে। তবে আমার পা টা খুব ব্যাথা করছে।
লিমাঃ তোমাকে আমি ব্যাথার ওষুধ খেতে বলছিলাম তুমি তখন খেলে না কেনো? দাড়াও আমার ব্যাগে জ্বরের ওষুধ আছে কিনা দেখি।
লিমা নিজের ব্যাগ খুঁজে ওষুধ বের করলো.
সেটা রোহানকে খাইয়ে দিলো।
সারারাত লিমা ঘুমাতে পারেনি।

কতক্ষণ পর পর মাথায় পানি ঢেলেছে আর জল পট্রি তো দিয়েই গেছে।
রাতের থেকে সকালের দিকে জ্বর অনেক কম।
রোহান ঘুমিয়ে ছিলো লিমা উঠে রোহানের জন্য সুপ করতে গেছে।
সুপ করে নিয়ে এসে রোহানকে ডেকে তুললো।

রোহানঃ আমি উঠে বসতে পারবো না আমার ভালো লাগছে না।
লিমাঃ একটু কষ্ট করে উঠে বসো। সুপ টুকু খেয়েই আবার শুয়ে থেকো।
রোহান উঠে বসলো আর লিমা রোহানকে সুপ খাইয়ে দিচ্ছিলো।
রোহানঃ এই তোমার চোখ এতো ফুলছে কিভাবে?
লিমাঃ মনে হয় সারারাত ঘুমাইনি তাই এতো ফুলেছে।
রোহানঃ তুমি কিছু খেয়েছো?

লিমাঃ নাহ তোমাকে খাইয়ে দিয়ে তারপর খাবো
আর তারপর তোমাকে নিয়ে ডাক্তারের কাছে যাবো।
রোহানকে সুপ খাইয়ে দিয়ে লিমা নিজেও কিছু খেয়ে নিলো কিন্তু খেতে একদম ইচ্ছা করছিলো না। তাই অল্প কিছু খেয়ে রেডি হয়ে রোহানকে নিয়ে বের হলো।
ডাক্তারকে দেখিয়ে ওরা বের হলো।
রোহানঃ এই আমার না ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে!

লিমাঃ কি বলো এই শরীর নিয়ে তুমি ঘুরতে যাবে?
রোহানঃ হ্যাঁ চলো না আমরা ঘুরতে যাবো চলো চলো।
লিমাঃ আচ্ছা বাবা যাবো কিন্তু কোথায় যেতে হবে বলো?
রোহানঃ আমরা পাহাড় দেখতে যাবো।

লিমাঃ এই তুমি কি বলো এই শরীর নিয়ে এতোদূর জার্নি করে যেতে পারবে?
রোহানঃ যেতে তো আমাকে হবেই চলো।
লিমা আর কোনো উপায় না পেয়ে যেতে লাগলো।

কিন্তু পাহাড়ি রাস্তায় ঢোকার আগ মুহূর্তে রোহান বললো।
রোহানঃ আমি পানি খাবো গাড়িতে পানি আছে?
লিমাঃ নাহ পানি নেই আচ্ছা তুমি একটু বসো আমি ওই দোকান থেকে পানি নিয়ে আসছি।
লিমা পানি আনতে গেলো।।
পানি কেনা শেষে যখন ফিরে তাকিয়েছে তখন দেখে গাড়ি নেই সাথে
রোহানও নেই।

লিমা তো অস্থির হয়ে গেলো। রোহান গেলো কোথায়?
কোনো উপায় না পেয়ে লিমা রোহানের নাম্বার এ কল দিলো।
রোহানঃ হ্যালো।
লিমাঃ তুমি কোথায়?
রোহানঃ আমি তো পাহাড়ি রাস্তায় ঢুকে গেছি।
লিমাঃ মানে কি তুমি গাড়ি ড্রাইভ করছো?

রোহানঃ হ্যাঁ করছি জানো একটুর জন্য ট্রাকের সাথে ধাক্কা লাগায়নি।
লিমাঃ রোহান তুমি কোথায়? আর যেখানে আছো সেখানেই ব্রেক করো সামনে আর একটুও যাবে না।
রোহানঃ সেটা বললে হয়? আজ আমি জুলির কাছে চলে যাবো।
লিমাঃ চুপ শয়তান এইসব কি বলছো।
হঠাৎ বিকট একটা শব্দ আসলো।।
লিমাঃ এই রোহান কি হলো তুমি ঠিক আছো তো?

রোহানঃ আরে হ্যাঁ শুধু গাড়িটাকে গাছের সাথে লাগিয়ে দিছিলাম।
লিমাঃ দেখো রোহান তুমি কিন্তু বেশি বাড়াবাড়ি করছো?
রোহানঃ সেটা তুমি করছো। তুমি জুলি হওয়া সত্ত্বেও দিনের পর দিন লিমার অভিনয় করে যাচ্ছো।
লিমাঃ আমি জুলি না।

রোহানঃ হ্যাঁ মেনে নিয়েছি তুমি জুলি না তাই তো আমি আমার জুলির কাছে চলে যাবো। গাড়ির স্পিড এখন ৮০+
লিমাঃ এই স্পিড কমাও এমন রাস্তায় কেও এতো স্পিডে গাড়ি চালায়। কিছু হয়ে যাবে তো।
রোহানঃ হবার জন্যই তো চালাচ্ছি আমি জুলিকে ছাড়া আর থাকতে পারবো না। আর শুনো তোমার সাথে আমি অনেক অন্যায় করে ফেলেছি আমাকে মাফ করে দিও।
লিমাঃ মাফ? কিসের মাফ আর কত কষ্ট দিবি তুই আমাকে। হ্যাঁ আমি তোর জুলি। সেদিন আমি মরিনি মরে ছিলো আমার ছোট বোন অধরা।
রোহানঃ সত্যি তুমি আমার জুলি তো?

লিমাঃ হ্যাঁ আমিই জুলি।
রোহানঃ আমি বিশ্বাস করিনা। তুমি যদি জুলি হও তাহলে তুমি আমাদের মাঝে ঘটে যাওয়া একটা ঘটনা বলো যেটা আমি আর তুমি ছাড়া কেও জানেনা।
লিমাঃ তুই আর আমি একবার ঘুরতে গেছিলাম সেখানে অই এলাকার মুরুব্বিরা আমাদের নানান ভাবে অপমান করেছিলো।
রোহানঃ হ্যাঁ তুমি আমার জুলি। ওকে আমি আসছি।

রোহান ফিরে আসলো জুলি এতোক্ষন নানান চিন্তার মধ্যে ছিলো।
রোহান ফিরেছে সেটা দেখে অনেক সস্থি পেলো।
কিন্তু গাড়ির অবস্থা খুব খারাপ হয়ে গেছে।

লিমাঃ এই তুমি ঠিক আছো তো? তোমার কোনো ক্ষতি হয়নি তো?
রোহানঃ আমি একদম ঠিক আছি। এখন সব আমাকে বলো কেনো এই নাটক করলে।
জুলিঃ বলবো। সব বলবো বাসায় গিয়ে।
তারপর জুলি গাড়ি ড্রাইভ করে বাসায় আসলো?

ওরা সোজা রুমে চলে গেলো।
রোহানঃ হ্যাঁ বলো এতোদিন কেনো এতো নাটক? আর তোমার জমজ বোন ছিলো সেটা আমাকে বলোনি কেনো?
জুলিঃ হ্যাঁ ও অনেক ছোট থেকেই নানুর বাসায় থাকে।

আর সেদিন যখন আমি বের হচ্ছিলাম তখন অধরা আমাকে বললো ও নাকি তোমার সাথে ঘুরতে চায়।
আমি অনেকবার না করা সত্ত্বেও ও জেদ করে তাই ওকে পাঠিয়ে দেই! সেদিন আমি তোমার সাথে থাকলে হয়তো আমি বেঁচে থাকতাম না।
ওর মৃত্যুর জন্য তোমাকে দায়ী করেছি। তাই তো আর তোমার সামনে এসে এটা কখনো বলিনি তোমার জুলি মরেনি বেঁচে আছে।
আর তাই কয়েকদিন দেশে থেকেই আমরা চলে যাই লন্ডন।

তোমার খোঁজ খবর সবসময় নিয়েছি কিন্তু শুনলাম দিনের পর দিন তোমার অনেক অবনতি হচ্ছে।
তাই নিজের মুখের প্লাস্টিক সার্জারি করে চলে আসলাম দেশে যাতে করে আমাকে চিনতে না পারো।
আমি জানতাম হঠাৎ করে আমাকে দেখলে তোমার বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যেতে পারে।
আর বলতে পারবো না। যতটুকু দরকার ততটুকু বললাম।
রোহানঃ কিন্তু তার পরেও কেনো আমার কাছে পরিচয় লুকালে?

জুলিঃ আমি দেখতে চেয়েছিলাম তুমি অন্য কাউকে পেয়ে জুলি মানে আমাকে ভুলে যাও নাকি?
কিন্তু আমি যেটা দেখলাম আমি ভুল কাওকে ভালোবাসিনি। আমি এমন একজনকে ভালোবেসেছি যে শুধু আমাকেই ভালোবাসে।
এই বলেই জুলি রোহানকে জড়িয়ে ধরলো।
রোহানঃ আওওও।
জুলিঃ কি হলো?

রোহানঃ হাতে ব্যাথা।
জুলিঃ কিভাবে পেলে?
রোহানঃ যখন গাছের সাথে গাড়ি ঘষে গেলো তখন পেয়েছিলাম।
জুলিঃ হ্যাঁ তুই তো একটা হারামি কিভাবে সত্যি বের করে নিতে হয় ভালোই জানিস হারামি। I love you.
রোহানঃ l love you too আর কখনো ছেড়ে যাবে না তো?

জুলিঃ নাহ আর কখনো যাবো না।
এইভাবেই চলবে তাদের ভালোবাসাময় জীবন।

লেখা – আরফিন সুমন (সোহাগ)

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “অভিনয় – অসহায় ভালোবাসার গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ুন – পাগলী তোকে বড্ড বেশি ভালোবাসি – গল্প ভালোবাসার গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *