দ্য ডেঞ্জারাস লাভার – বাংলা প্রেমের কাহিনী – সিজন ১ (২য় খণ্ড)

দ্য ডেঞ্জারাস লাভার – বাংলা প্রেমের কাহিনী: সিম্মি চায় না সেই নিষ্পাপ শিশুটিকে রেখে ঘন কালো অন্ধকারে হারিয়ে যেতে। তবুও সেই অদৃশ্য শক্তির আকর্ষণ থামছে না। সিম্মি জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে।


পর্ব ২৮

আরাধ্যারকে চেকাপ করছে ডাক্তাররা। সিম্মি অনেক আকুতি মিনতি করে আরাধ্যার পাশে থাকার অনুমতি পায়। আরাধ্যার চোখের কোণ থেকে এক ফোঁটা পানি গড়িয়ে পড়লো। সেটা সিম্মির দৃষ্টি এড়াতে পারেনি। সিম্মি চোখ মুছে আস্তে করে থিয়েটার থেকে বের হয়ে, হাসপাতালের ছাঁদে যায়। সিম্মির মা, মাইশা সিম্মিকে আটকাতে চাইলেও সিম্মির বাবা বাঁধা দেয় আর বলে,
~ ওকে কাঁদতে দাও, ওর মনের কষ্ট হালকা হবে।

মাইশা আর সিম্মির মা থেমে যায়। সিম্মি দৌড়ে ছাঁদে গিয়ে দাড়িয়ে যায়। আকাশের অবস্থা খুব খারাপ। কালো মেঘের ঘনঘটা পুরো আকাশ জুড়ে। গুড়গুড় মেঘ ডাকছে। সিম্মি হঠাৎ করে বসে পড়ে ছাদের মেঝেতে। সিম্মির কষ্টে আজ পরিবেশ নিস্তব্ধ। তখনই ঝিরঝির বৃষ্টি শুরু হয়। সিম্মি কেঁদে কেঁদে,
~ খুব মিস করি আপনাকে। সেদিন যখন বৃষ্টি হয়েছিলো, তখন আপনি আমার পাশে ছিলেন আর আজকে আপনি কোথায়। অনেক ভালোবাসি আপনাকে। হে আল্লাহ, আরাধ্যারকে আমার কাছে ফিরিয়ে দাও।

মাইশা দৌড়াতে দৌড়াতে ছাদে আসে। মাইশা সিম্মির দিকে এক পলক তাকিয়ে দৌড়ে সিম্মির কাছে যায়। সিম্মির হুশ নেই। মাইশা সিম্মির কাঁধে হাত রেখে বলে,
~ খুব ভালোবাসিস আরাধ্যারকে? (সান্ত্বনা দিয়ে)
~ হুম। (মাথা নেড়ে)

~ আরাধ্যার জ্ঞান ফিরেছে। (হালকা হেসে)
~ সত্যি (অবাক হয়ে মাইশার দিকে তাকিয়ে)
~ হুম তিন সত্যি (সিম্মির গালে হাত রেখে)

কথাটা বলার সাথে সাথে সিম্মি দাঁড়িয়ে যায়। সিম্মি মাইশাকে জড়িয়ে ধরে। মাইশা ধরবে তার আগেই সিম্মি মাইশাকে ছেড়ে দিয়ে দেয় এক ভো দৌড়। সিম্মি এক দৌড়ে থিয়েটারের মধ্যে যায় কিন্তু সেখানে কেউ নেই, একজন নার্স বলেন, তাকে পাশের বেডে দেওয়া হয়েছে সবাই সেখানে। সিম্মি দৌড়ে সেখানে যায়। সিম্মি কেবিনের দরজার সামনে দাড়িয়ে যায়, সবাই আরাধ্যার পাশে। আরাধ্যার মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো, চোখ খোলা। সিম্মির বাবা সবাইকে বাহিরে যাওয়ার জন্য ইশারা করে। সিম্মি তখনও দরজার সামনে দাড়িয়ে আছে। সিম্মির মা সিম্মিকে ভিতরে যেতে বলে দরজা আটকে দেয়।

সিম্মি ধীরে ধীরে আরাধ্যার কাছে। সিম্মির মুখে বিজয়ীর হাসি, চোখে জল। আরাধ্যার তাকিয়ে আছে সিম্মির দিকে। সিম্মি আস্তে করে আরাধ্যার পাশে বসে। আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে থাকে অপলক দৃষ্টিতে। আরাধ্যারও ঠিক এভাবেই তাকিয়ে আছে। মনে হয় কত যুগ কত জনম পরে দুজন দুজনকে দেখছে। সিম্মি আরাধ্যার কপালে হাত রেখে বলে,

~ কি খবর? (আরাধ্যার কপালে হাত রেখে)
~ …….(অপলক ভাবে সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে)
~ কেয়ারলেস একটা? (অভিমানী সুরে)

~ ……. (অপলক ভাবে সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে)
~ খুব প্লানিং করেছিলেন আমাকে ছেড়ে যাওয়ার? (মন খারাপ করে)
( অপলক ভাবে সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে)
~ একবারও ভাবলেন না আমার কি হবে? (অসহায় ভাবে)

~ ……..(অপলক ভাবে সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে)
~ আমি আপনাকে কতটা ভালোবাসি আপনি জানেন? (কেঁদে কেঁদে)
~ ~ …….. (অপলক ভাবে সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে)

~ হ্যাঁ, চলে গিয়েছিলাম রাগ করে কিন্তু সারা জীবনের জন্য তো যাইনি? (কেঁদে কেঁদে)
~ ………(অপলক ভাবে সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে)
~ আপনি খুব বোকা! (ভেংচি মেরে)

~ ………(অপলক ভাবে সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে)
~ চুপ করে আছেন কেনো? কিছু তো বলুন, (রাগ করে)
~ …………(অপলক ভাবে সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে)
~ ঠিক আছে, গেলাম আমি। (রেগে)

~ I love you jaan.. (সিম্মির হাতের আঙুল ধরে ফিসফিস করে বলে)
~ শুনিনি আবার বলুন, (অবাক হয়ে, সিম্মি আরাধ্যার মুখের কাছে কান পাতে )
~ I love you jaan. (সিম্মির কানে ফিসফিস করে বলে)

~ I love you so much jaantos.(কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে)
সিম্মি আরাধ্যারকে হালকা করে জড়িয়ে ধরে। আরাধ্যার চেষ্টা করে সিম্মিকে আগলে ধরার কিন্তু হাতে স্যালাইনের বাটারফ্লাই পুশ করা। আরাধ্যার মুখে অক্সিজেন মাস্ক থাকায় কথা বলতে পারে খুব কম। আরাধ্যার মনে মনে বলে,

~ আজ যদি এ্যাক্সিডেন্ট না করতাম তাহলে বুঝতে পারতাম না জান, তুমি আমাকে এতো ভালোবাসো। কিন্তু এই এ্যাক্সিডেন্ট তো এমনি এমনি হয়নি এতে অভির হাত আছে, নিশ্চয়ই। আগে সুস্থ হই তারপর তোকে দেখে নেবো অভি। (বাঁকা হাসি দিয়ে)

ডাক্তার এসে আরাধ্যারকে চেকাপ করে। সবকিছু মোটামুটি ঠিকঠাক আছে। ডাক্তার আরাধ্যারকে বলে,
~ এই না হয় আরাধ্যার খান। মৃত্যু কে পরাজিত ফিরে এসেছেন। Weldone Mr.Mahir. (হেসে)
~ হুম। (ইশারা করে)

~ কিন্তু আপনাকে টানা ১ মাস বেড রেস্টে থাকতে হবে কারণ আপনার হাত পায়ের ফ্যাক্চারটা অতি গভীর তার সাথে আপনার মাথার ডান সাইডের আঘাতটা গুরুতর। রেস্ট না নিলে পরে আরও সমস্যা বাড়বে। রেস্টের পাশাপাশি একজন ভালো নার্স দরকার যে আপনার সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখবে। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ আমি পারবো। (ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে)
~ Are you sure Miss. Khan? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

~ Of course. (হেসে)
~ This is a very though work? (একটু অবাক হয়ে)

~ I can do it. (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ Very good. I wish, you will done this properly. (মুচকি হেসে)
~ Yeah sure. (হালকা হেসে)
~ আর ৩ দিন পরে আমরা হসপিটাল থেকে রিলিজ দিবো তারপর বাসায় বসে তার চিকিৎসা হবে। (রিপোর্ট দেখে)

~ ওকে। (মাথা নেড়ে)
অন্যদিকে, সিম্মির বাবা, মা আর আরাধ্যার বাবা ওয়েটিং রুমে বসে কথা বলছে আরাধ্যার আর সিম্মিকে নিয়ে, আরাধ্যার বাবা বলে,
~ দেখুন বেয়াইসাহেব, যা হওয়ার হয়ে গেছে। এবার ওদের মেনে নিন। বাচ্চা ছেলে মেয়ে না বুঝে ভুল করেছে তাই বলে আমরা যদি এভাবে রেগে থাকি তাহলে কি হবে বলুন? ( মার বাবার দিকে তাকিয়ে)
~ আমাদের একবার জানাতে পারতো? (গম্ভীর কণ্ঠে)

~ আমার ছেলে বিয়ে করছে সেটা আমি জানতামই না। আজ সন্ধ্যায় যখন হসপিটালে আসি তখন রেহান আমাকে বললো। আমার ছেলের জেদ প্রচুর পরিমাণে বেশি। যা মন চায় তাই করে। আপনাদের কাছে অনুরোধ, সব ভুলে গিয়ে সিম্মি আর আরাধ্যারকে মেনে নিন। (অনুরোধের সুরে)

~ হুম। (মাথা নেড়ে)
~ তাহলে, আগামী মাসে একটা রিসিপশনের মাধ্যমে ওদের বিয়ের পার্টি অরগানাইজ করবো। (হেসে)

~ ঠিক আছে। (হালকা হেসে)
আরাধ্যার আর সিম্মির ভালোবাসা জিতে গেলো। কিন্তু সামনেও কি তারা এভাবে এক থাকতে পারবে?


পর্ব ২৯

আরাধ্যার ঘুমিয়ে পড়েছে, সিম্মি আরাধ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে। তখনই সাবিহা আসে দৌড়াতে দৌড়াতে। সাবিহা এসেই খুব জোরে দরজা খুলে ফেলে। সিম্মি বিরক্ত হয়ে তাকায় আবার একটু অবাক ও হয়। সাবিহা আরাধ্যার কাছে এসে বলতে থাকে,
~ স্যার আপনার এ অবস্থা হলো কি করে? আর আমিও খবর পেলাম না। Extremely sorry sir!

সিম্মি সাবিহার কান্ড দেখে চরম মাত্রায় রেগে যায়। সিম্মি রেগেমেগে বলা শুরু করে,
~ Who are you? (রেগেমেগে)
~ Sabiha Tanjim. (ভাব নিয়ে)
~ এখানে কি চাই? (রেগে)

~ স্যার কে, (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ What? (রেগে উচ্চ স্বরে)

~ আমি স্যারের পিএ, (চোখ ঘুরিয়ে)
~ কবে থেকে? (রেগে)
~ কিছুদিন আগেই। কিন্তু আপনি কে? আর এতোকিছু জিজ্ঞেস করছেন কেনো? (তাচ্ছিল্যের সুরে)

~ আমি কে মানে? (রেগেমেগে)
সিম্মির চিল্লানোর জন্য আরাধ্যার কিছুটা নড়েচড়ে ওঠে। সিম্মি সেটা দেখে, সাবিহার হাত ধরে বাহিরে নিয়ে আসে,
~ এই আপনি আমার হাত চেপে ধরেছেন কেনো? (সিম্মির হাত সরিয়ে দিয়ে)

~ আমি আরাধ্যার খানের স্ত্রী মিসেস চৌধুরি। (চোখ রাঙিয়ে)
~ ওহ আচ্ছা। আমি ভাবলাম কে না কে! (ভাব নিয়ে বিড়বিড় করে)
~ কি? (রেগেমেগে)

~ কিচ্ছু না। স্যার এখন কেমন আছেন? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ ভালো। (স্বাভাবিক ভাবে)
~ That’s great.. তাহলে, আমি এখন আসি। (হেসে)
~ Why not? (বাঁকা হাসি দিয়ে)

~ Bye take care. (শয়তানি হাসি দিয়ে)
~ You too. (বিরক্ত হয়ে)

সাবিহা ঘুরে চলে যায়। সিম্মির মনে খটকা লাগে সাবিহাকে দেখে। সাবিহা কিছু দূর গিয়ে দাড়িয়ে পেছনে ফিরে তাকিয়ে একটা শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে আবারও ঘুরে চলে যায়। সিম্মি ভাবতে থাকে,

~ কে এই সাবিহা? ওর চোখে আমি ঘৃণা দেখেছি, সব ঘৃণা আমাকে নিয়ে। ওর কথায়, চেহারার সাথে কার যেনো মিল আছে? ও যখন শুনলো আমি আরাধ্যার স্ত্রী, তখনও ওর মধ্যে, ওর কথার মধ্যে কোনো পরিবর্তন আসেনি। আমার সাথে যেভাবে কথা বললো মনে হলো, যে আমি তুচ্ছ, কেউ নই। (সিম্মি বসে বসে ভাবতে লাগলো)
রেহান এসে সিম্মিকে ডাক দেয়। সিম্মির ধ্যান ভেঙে যায় রেহানের ডাকে। সিম্মি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে রেহানের দিকে তাকিয়ে জোর করে হেসে বলে,

~ কিছু বলবেন ভাইয়া? (হালকা হেসে)
~ কিছু ভাবছেন ম্যাম? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)

~ আচ্ছা, আপনার বসের কি কোনো পিএ আছে? (আগ্রহ নিয়ে)
~ হ্যাঁ, কিছু দিন আগেই নতুন একজনকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। (মাথা নেড়ে)
~ She is Sabiha Tanjim.. Am i right? (ভ্রু কুচকে)
~ Yeah mam. (মাথা নেড়ে)

~ মেয়েটার বায়োডাটা সম্পর্কে কিছু জানেন? (সন্দেহ নিয়ে)
~ তেমন কিছু জানিনা। (মাথায় হাত দিয়ে)
~ ওহ। (হতাশাপূর্ণ কন্ঠে)
~ বসের কি অবস্থা ম্যাম? (মন খারাপ করে)
~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো। এখন মোটামুটি সুস্থ। (হাসি দিয়ে)

~ খবরটা শুনে খুব খুশি হলাম। ম্যাম আমার একটু কাজ আছে, পরে আবার আসবো। (তাড়াহুড়ো করে)
~ আচ্ছা ভাইয়া ঠিক আছে, (সৌজন্যে হাসি দিয়ে)
~ আসি তাহলে। (হালকা হেসে)
~ জি আল্লাহ হাফেজ। (বিদায় দিয়ে)

সিম্মি কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে তাকিয়ে দেখে আরাধ্যার জেগে আছে। সিম্মি আরাধ্যার কাছে যায়। আরাধ্যার মুচকি হেসে সিম্মিকে বলে,
~ তো আমার পিএ এর সাথে কি কি বোঝা পড়া করলে? (হেসে)
~ কিইইইইইই, ( কোমরে হাত রেখে)
~ যা শুনেছো তাই, ( ভাব নিয়ে)

~ পিএ রাখার দরকার টা কি শুনি? (রেগেমেগে)
~ একজন সুন্দরী পিএ না থাকলে কি হয় বলো? (হাই তুলে)
~ লুচু কোথাকার। (ভেংচি মেরে)
~ কিছু বললে? (রাগী লুকে)

~ কই কিছু নাতো। (না জানার ভান করে)
~ তো আমাকে উঠতে হেল্প করো একটু পরে ডাক্তার রিলিজ পেপার দিয়ে যাবে। (হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
~ মানে? (অবাক হয়ে)
~ যা শুনেছো তাই! (বিরক্ত হয়ে)
~ কিন্তু রিলিজ তো আরও, (এক শ্বাসে)

~ দুই দিন পর দেওয়ার কথা কিন্তু এখানে আমার দম বন্ধ হয়ে আসছে তাই রেহানকে বলে দিয়েছি, রিলিজ এর ম্যানেজ করতে। (হাত দিয়ে ইশারা দিয়ে থামিয়ে দিয়ে)
~ আপনি তো এখনও সুস্থ হননি। (চিন্তিত হয়ে)
~ আমি ঠিক আছি, আর একটাও কথা বলবে না। (রেগেমেগে)
~ করুন যা খুশি, (রেগেমেগে)

সিম্মি রেগে হনহনিয়ে বের হয়ে যায়। আরাধ্যার ডাকলেও ফিরে তাকায় না। সিম্মি কেবিন থেকে বের হয়ে ওয়েটিং রুমে যায়। সেখানে গিয়ে আরাধ্যার বাবার কাছে গিয়ে অভিযোগ করা শুরু করে দেয়,
~ বাবা আপনার ছেলে একটুও কথা শুনে না। নিজে যা বলবে তাই করে ছাড়বে এটা কিছু হলো বলুন। কিছু বলতে নিলেই রাগ দেখায়। (এক শ্বাসে)

~ কি হয়েছে মা? (সিম্মির মাথায় হাত রেখে)
~ সে এখনো সুস্থ হয়নি আর এখনি হসপিটাল থেকে বাসায় যাবার জন্য পাগল হয়ে গেছে। (রেগে)
~ কি বলো? (রাগী সুরে)

~ হ্যাঁ বাবা! রেহান ভাইয়াকে ডাক্তারের কাছে পাঠিয়েছেন রিলিজ পেপার আনার জন্য। (রেগে)
~ না, এবার আরাধ্যার বাড়াবাড়ি করছে। চলো ওর কাছে, (রেগে)

সিম্মি করুন দৃষ্টিতে তার বাবার দিকে তাকায়। সিম্মির বাবা, মা সামনেই বসা ছিলো। সিম্মিকে আসতে দেখে সিম্মির বাবা অন্যদিকে তাকায় কিন্তু সিম্মির মা তা করতে পারেনি। এসব আরাধ্যার বাবার দৃষ্টি এড়ায়নি। আরাধ্যার বাবা সিম্মিকে বসিয়ে দিয়ে উঠে যায়। সিম্মি ধীরে ধীরে তার বাবার সামনে যায় তখনো সিম্মির বাবা অন্যদিকে তাকিয়ে আছে। সিম্মি তার বাবার সামনে হাটু গেঁড়ে বসে পড়ে তারপর তার বাবার হাতে হাত রেখে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

~ বাবা, কোনোদিনও তোমার মনে কষ্ট দিয়ে কোনো কাজ করিনি। তোমার মতের বিরুদ্ধে যাইনি। তোমার কথার অবাধ্য হয়নি। কিন্তু জীবনের সবচেয়ে বড় সিদ্ধান্ত তোমাদেরকে ছেড়ে নিতে হয়েছে। বাবা ক্ষমা করে দাও প্লিজ, প্লিজ বাবা,
~ অনেক বড় হয়ে গেছিস তাই না? অনেক বকবক করা শিখে গেছিস? (সিম্মির মাথায় হাত দিয়ে)

~ বাবা তুমি যদি আমাকে ক্ষমা না করো তাহলে আর জীবনেও তোমার সামনে আসবো না। (কেঁদে কেঁদে)
~ চুপ কর, সন্তান যতই ভুল করুক না কেনো বাবা, মা সেই ভুল ধরে বসে থাকতে পারে না। হ্যাঁ মা ক্ষমা করে দিলাম তোকে। তুই তোর সুখের পথ বেছে নিয়েছিস এজন্য আমার কোনো অভিযোগ নেই কিন্তু একবারও তো আমাদের জানাতে পারতি? (চোখ মুছে)

~ বাবা সবকিছু এতো জলদি হয়ে গেলো যে, (বলতে গিয়ে থেমে যায়)
সিম্মি কথা বলতে গিয়ে থেমে যায় কারণ বিয়ে করার সময় সিম্মির মত ছিলো না বিয়েতে আরাধ্যার জোর করে সিম্মিকে বিয়ে করে। অনেক হুমকি দিয়ে সিম্মিকে রাজি করায় বিয়েতে। সিম্মি মনে মনে বলতে থাকে,

~ বাবা মাকে যদি বলে দেই যে আরাধ্যার আমাকে জোর করে বিয়ে করেছে তাহলে আমাকে আরাধ্যার থেকে ছাড়িয়ে নিবে। আগে মত না থাকুক এখন তো আমি আরাধ্যারকে ভালোবাসি। আর আরাধ্যার সম্পর্কে এসব বললে, আরাধ্যার ছোটো হয়ে যাবে সবার সামনে, (মনে মনে বিড়বিড় করে)

~ কি হলো চুপ হয়ে গেলি যে? (সিম্মির কাঁধে হাত রেখে হালকা ধাক্কা দিয়ে)
~ আসলে বাবা, (হতভম্ব হয়ে)
তখনি সিম্মির মা মেয়ে আর বাবার কান্ড দেখে অভিমান করে বলে,
~ বাবাই সব। আমিতো কেউ না? (রাগ করে)

~ তুমি তো আমার ডার্লিং। তুমি আমার ওপর রাগ করতেই পারো না সেটা আমি খুব ভালো করে জানি, (মায়ের কোলে মুখ গুঁজে)
~ হয়েছে এখন আর গলাতে হবে না। (সিম্মির মাথায় হাত বুলিয়ে)
~ দেখো মা, মেয়ে মিলে অভিমান শুরু করে দিয়েছে। (মুচকি হেসে)

~ বাবা তিতলি কোথায়? (স্বাভাবিক ভাবে)
~ ওকে বাসায় রেখে এসেছি। আসতে চেয়েছিলো কিন্তু আনিনি। ওঠ এবার, আরাধ্যার কাছে চল। (সিম্মির হাত ধরে)
~ বাবা মাইশা, সাহিল? (এদিক সেদিক তাকিয়ে)
~ ওদের একটু কাজ আছে তাই চলে গেছে। আবার আসবে বলে গেছে। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ ওহ, আচ্ছা চলো। (অবাক হয়ে)

অন্যদিকে, আরাধ্যার তার বাবার সাথে কথা বলছে। আরাধ্যার তার বাবাকে বলে,
~ সেদিন ঐ এ্যাক্সিডেন্ট এমনি এমনি হয়নি। সবটা সাজানো, আমাকে পৃথিবী থেকে সড়ানোর জন্য এই সব পরিকল্পনা করা হয়েছে। (সন্দেহ মিশ্রিত কন্ঠে)
~ What? (অবাক হয়ে)

~ হ্যাঁ বাবা আর এই হসপিটালে থাকাটা সবচেয়ে বড় বোকামি হবে। কারণ এই জায়গা আমার জন্য মোটেও নিরাপদ না। (ভ্রু কুচকে)
~ তাহলে, বাসায়? (হতবাক হয়ে)
~ আরে বাবা আমার চাকররের অভাব নেই। তাছাড়া আমার সাথে সিম্মি তো আছেই। (তাচ্ছিল্যের সুরে)
~ কিন্তু এই কাজে কাদের হাত থাকতে পারে? (রেগে)

~ সব বের করে ফেলবো কার এতো সাহস আরাধ্যার খানকে মারার প্ল্যান করে? সবটা আমি বের করে ফেলবো। (মাথা নেড়ে)
তখনই সিম্মি আর তার বাবা কেবিনের মধ্যে আসে। আরাধ্যার ইশারায় তার বাবাকে চুপ থাকতে বলে। আরাধ্যার বাবা আরাধ্যারপর ইশারা অনুযায়ী চুপ হয়ে যায়। আরাধ্যার সিম্মিকে বলে,
~ আর দশ মিনিটের মধ্যে রিলিজ পেপার নিয়ে রেহান আসবে। (সিম্মিকে রাগানোর জন্য বলে)
~ কি? (রেগেমেগে)

তখন আরাধ্যার বাবা সিম্মির কাছে এসে। সিম্মির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
~ মা, আমারও মনে হয়, আরাধ্যার বাড়িতে থাকলে আরও তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে যাবে। তাই তুমি ওর ভালোর কথা ভেবে ওর সাথে রাগ করো না কেমন? (হালকা হেসে)
~ জি বাবা। (মাথা নেড়ে)

কিছুক্ষণের মধ্যে রেহান রিলিজ পেপার নিয়ে চলে আসে। নার্স আরাধ্যারকে হুইল চেয়ারে বসিয়ে দেয়। হাসপাতালের সামনে এসে সিম্মির মা আর বাবা বলে,
~ তিতলির পরিক্ষা শুরু হবে কালকে। মেয়েটা অতি মাত্রার দুষ্ট কথা শোনে না এজন্য আজ তোমার সাথে যেতে পারলাম না। (সংকোচ নিয়ে)
~ সমস্যা নেই বাবা। পরিক্ষা শেষ হলে ওকে সাথে নিয়ে আসবেন কেমন। (মুচকি হেসে)

~ আচ্ছা বাবা। তাহলে আমরা আসি। (হেসে)
~ আমার ড্রাইভার আপনাকে পৌঁছে দেবে। (গাড়ি দেখিয়ে দিয়ে)
~ তার দরকার নেই বাবা। (মাথা নেড়ে)

~ না করলে কষ্ট পাবো। (মন খারাপ করে)
~ আচ্ছা আমরা যাচ্ছি। (হাসি দিয়ে)
~ আল্লাহ হাফেজ। (বিদায় জানিয়ে)

আরাধ্যার বাবা আরাধ্যার কাঁধে হাত রেখে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
~ Sorry to say my son, (মন খারাপ করে )
~ it’s ok (আশ্বাস দিয়ে)

~ সিম্মি আরাধ্যার দিকে খেয়াল রেখো কেমন! (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আপনি কোথায় যাচ্ছেন বাবা? (অবাক হয়ে)
~ আমার খুব ইম্পরট্যান্ট মিটিং আছে সেখানে এ্যাটেন্ড করতে হবে তাই এখনি আমাকে আমেরিকা যেতে হবে। কাজ শেষ হলে আমি আরাধ্যারকে দেখতে আসবো। (আরাধ্যার মাথায় হাত দিয়ে)

~ আচ্ছা বাবা। (মাথা নেড়ে)
আরাধ্যার বাবা চলে যায়। সিম্মি আরাধ্যারকে নিয়ে গাড়িতে ওঠে। কিছুক্ষনের মধ্যে তারা বাড়িতে চলে আসে। সিম্মি বাড়ির দিকে তাকিয়ে একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। অনেক দিন পরে সে তার চিরচেনা নীড়ে ফিরে এসেছে। সিম্মি আরাধ্যারকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। সিম্মি বাড়ির মধ্যে ঢুকে হা হয়ে যায়।


পর্ব ৩০

সিম্মি আরাধ্যারকে নিয়ে বাড়ির মধ্যে প্রবেশ করে। সিম্মি বাড়ির মধ্যে ঢুকে হা হয়ে যায়। পুরো ঘর এলোমেলো। সিম্মি অগ্নি দৃষ্টিতে আরাধ্যার দিকে তাকায়, আরাধ্যার চোখ ঘুরিয়ে অন্যদিকে তাকায়। আরাধ্যার কোমরে শাড়ি গুঁজে বলে,

~ এসব কি? (রেগেমেগে)
~ কই? (না জানার ভান করে)
~ এটা ঘর নাকি চিড়িয়াখানা? (বিরক্ত হয়ে)

~ ঘর। (ভাব নিয়ে)
~ একি অবস্থা করে রাখছেন ঘরের? (রেগে)
~ ইচ্ছে হইছে করছি! এবার সব ঠিক করো! (তাচ্ছিল্যের সুরে)

~ তা করতেই হবে, (রেগেমেগে)
সিম্মি আরাধ্যারকে সোফায় বসিয়ে দিয়ে। এক নজরে পুরো ঘরের উপর চোখ বুলিয়ে নেয়। তারপর একরাশ হতাশা নিয়ে তার খোলা চুলগুলো হালকা করে বেনি করে নেয় তারপর কোমরে শাড়ি গুঁজে একটা ঝাড়ু নিয়ে আসে আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে হাসছে সিম্মি আড়চোখে তাকিয়ে বলে,

~ সব এলোমেলো করে রাখবেন আমি তো আছিই গোছানোর জন্য (আড়চোখে তাকিয়ে)
~ জান তোমাকে যা লাগছে না (মুখ চেপে হেসে)
~ নেকামি (ভেংচি মেরে)
সিম্মি কাজে মনোযোগ দেয়। পুরো দুই ঘন্টা পর সব কাজ শেষ হয়। আরাধ্যার ফোনে গেমস খেলছিলো। সিম্মি সোফায় বসে আরাধ্যার মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসে,

~ জান ও জান, (সিম্মিবী সুরে)
~ নিশ্চয়ই কোনো কু মতলব আঁটছে (মনে মনে)
~ কথা বলো না জানু? (মিষ্টি করে)
~ হুম বলুন (বিরক্ত হয়ে)
~ যাও আমার জন্য চিকেন নর স্যুপ, ফ্রেশ স্যালাড, বিফ নাগেট, গ্রিল চিকেন বানিয়ে নিয়ে আসো। (এক শ্বাসে)

~ কিইইইইইইই (অবাক হয়ে)
~ হুম যাও। সময় এক ঘন্টা। (চোখ ঘুরিয়ে)
~ মাত্র (অবাক হয়ে)
~ তোমার সময় এখন থেকে শুরু আর রান্না ঘরে রেসিপি বুক রাখা আছে দেখে দেখে রান্না করো যাও। (না তাকিয়ে)

~ আমাকে খাটানোর বুদ্ধি। আমিও হারবো না
(মনে মনে)
~ কি হলো যাচ্ছো না কেনো? (রেগেমেগে)
~ যাচ্ছি (ভেংচি মেরে)

সিম্মি গাল ফুলিয়ে রান্না ঘরে চলে গেলো। রান্না ঘরে গিয়ে খোঁজা খুঁজি শুরু করে দেয়। অবশেষে সব উপকরণ খুজে বের করে রেসিপি বই দেখে রান্না করে। প্রায় ৫৯ মিনিটে সব রান্না শেষ করে সিম্মি তারপর টেবিলে পরিবেশন করে। আরাধ্যার তখনও ফোনে গেমস খেলছে। সিম্মি আরাধ্যার সামনে গিয়ে বলে,
~ চলুন (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ কোথায় জান? (অবাক হয়ে)

~ ফ্রেশ হয়ে, খাবেন তারপর মেডিসিন (শান্ত সুরে)
~ আমি আগে শাওয়ার নিবো তারপর (ভাব নিয়ে)
~ আচ্ছা চলুন, (হেসে)

সিম্মি আরাধ্যারকে ধরে উপর রুমে নিয়ে যায়। আরাধ্যারকে খাটে বসিয়ে সিম্মি সংকোচ নিয়ে বলে,
~ আ আপনার শা শার্টটা খুলুন, (লজ্জা মিশ্রিত সুরে)
~ আমার হাতে ব্যাথা আমি পারবো না। তুমি খুলে দাও জান। (ভান করে)

~ আ আ আমি? (চোখ বড়বড় করে)
~ আরে লজ্জার কি আছে আমি তো তোমার কিউট, ডেসিং আর হ্যান্ডসাম হাসবেন্ড তাই না। (ভাব নিয়ে)
~ কাউয়া হাসবেন্ড (ভেংচি মেরে)

~ সে তুমি যাই বলো, তাড়াতাড়ি করো গরম লাগছে। (বাহানা করে)
~ ফুল পাওয়ারে এসি চলছে তাও গরম লাগছে? (ভ্রু কুচকে)
~ কি বললাম তোমাকে? (রেগে)

~ দিচ্ছি। (ভয়ে ভয়ে)
আরাধ্যার কাঁপা কাঁপা হাতে আরাধ্যার শার্টের বোতাম খোলে। আরাধ্যার সিম্মির কান্ড দেখে মুচকি হাসছে। সিম্মি শার্টের বোতাম খুলতেই দেখে আরাধ্যার বুকে বড় করে সিম্মির নাম লেখা। ক্ষত টা খুব গভীর। সিম্মির অজান্তেই হাত সেই লেখাটার উপর চলে যায় সিম্মির চোখ ছলছল করে ওঠে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আমার সবটা জুড়ে শুধু তুমি, তোমাকে ঘিরে আমার পৃথিবী, তুমি হীনা আমি প্রানহীন। (সিম্মির গালে হাত রেখে)
~ যতো পাগলামি (ভেংচি মেরে)

~ সব তোমার জন্য। (হেসে)
~ কি দরকার ছিলো? (কাঁদো সুরে)
~ যাকে এতো ভালোবাসি তার নামটা লেখা বেশি কষ্টকর নয় জান। চলো শাওয়ার নিবো। (তাড়াহুড়ো করে)

সিম্মি চোখ মুছে একটা চেয়ার নিয়ে বাথরুম রেখে তারপর আরাধ্যার একহাত কাঁধে নিয়ে আরাধ্যারকে বাথরুমে নিয়ে চেয়ারে বসায়। তারপর শাওয়ার অন করে দেয় আরাধ্যার সিম্মিকে হেচকা টান দিয়ে নিজের কাছে আনে। সিম্মি খুব কাছে চলে আসে আরাধ্যার। আরাধ্যার রাগী স্বরে বলে,
~ কোথায় গিয়েছিলে আমাকে ফেলে? (রেগেমেগে)

সিম্মি অপলক দৃষ্টিতে আরাধ্যার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। সিম্মি নিজেকে হারিয়ে ফেলেছে আরাধ্যার মাঝে।
~ তোমাকে কোথায় না খুঁজেছি? তুমি তো তোমার বাসায়ও যাওনি? কোথায় ছিলে? (রাগী কন্ঠে)

সিম্মি আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে কান্না শুরু করে দেয়। আরাধ্যার থ হয়ে যায় সিম্মির কান্ড দেখে। সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
~ আমাকে ক্ষমা করে দিন আর কখনো আপনাকে ছেড়ে আর কোথাও যাবো না। (কেঁদে কেঁদে)
আরাধ্যারও সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। মান অভিমান নিয়েই তো ভালোবাসা হয় ঠিক তেমন সিম্মি আর আরাধ্যার।


পর্ব ৩১

সিম্মি আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে কাঁদছে। আরাধ্যার বুকে চিনচিনে ব্যথা অনুভব করছে। দুজনের চোখের পানি ঝর্ণার পানির সাথে মিশে একাকার হয়ে গেছে। সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে আরাধ্যার দুই গালে হাত রেখে বলে,

~ আমি আপনাকে হারাতে চাই না। অনেক ভালোবাসি আপনাকে আমার জীবনের থেকেও বেশি। আপনাকে ছাড়া প্রতিটা মুহুর্ত বিষাদময় মনে হয় আমার কাছে। (কাঁদতে কাঁদতে)
~ তাহলে, আমাকে ছেড়ে গিয়েছিলে কেনো? (রাগী সুরে)

~ আপনি আমাকে জোর করেছিলেন কেনো? (অভিমান করে)
~ আমি চাই না, আমি ছাড়া অন্য কারো সাথে কথা বলো। আমি চাই না আমি ছাড়া অন্য কারো সামনে তুমি যাও। (রেগে)
~ ক্ষমা করে দিন, আমি আর কখনো আপনার কথার বাহিরে যাবো না। (চোখ মুছে)

~ তার প্রমাণ কি? (ভ্রু কুঁচকে)
~ তার প্রমাণ হলো, উম্মাহ (আরাধ্যার গালে কিস করে)

সিম্মি আরাধ্যার দুজনেই হেসে ওঠে। সিম্মি আরাধ্যার কোল থেকে উঠে ঝর্ণা বন্ধ করে টাওয়েল দিয়ে আরাধ্যার চুল মুছে দেয়। তারপর ধীরে ধীরে আরাধ্যারকে বাথরুম থেকে বের করে বেড এ বসিয়ে সিম্মি কাপড় চেঞ্জ করে আসে। আরাধ্যারকে একটা কালো টি শার্ট আর কালো টাউজার পড়িয়ে দেয় সিম্মি। আরাধ্যারকে নিয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে নিয়ে যায়। আরাধ্যার অবাক হয়ে সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ এগুলো কে রান্না করলো? (সন্দেহের দৃষ্টিতে)

~ মিস. ফারিয়া তাসনিম সিম্মি। (ভাব নিয়ে)
~ I don’t believe it. (মুখ ফিরিয়ে)

~ আরে খেয়ে তো দেখুন। (চোখ টিপ মেরে)
সিম্মি খাবার প্লেটে সার্ভ করে আরাধ্যার মুখে পুরে দেয়। আরাধ্যার মুখে নেয়। আরাধ্যার মনে মনে বলে,
~ নাহ, খাবারের স্বাদ তো দারুন কিন্তু এটা সিম্মিকে জানানো যাবে না তাহলে ভাব নেবে।

~ কি হলো বলুন? কেমন হয়েছে? (আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে)
~ গ্রিল চিকেনে চিলি সস্ বেশি হয়েছে, নাগেট ফ্রাই করেছো তেল দিয়ে এতো চিপচিপে (নাক কুঁচকে)
~ সত্যি? (চোখ বাঁকিয়ে)

~ আমি মিথ্যা বলি না। (মুখ ফিরিয়ে)
~ ঠিক আছে আপনাকে আর খেতে হবে না। আমি রান্না করেছি আমি তো আর ফেলে দিতে পারি না। তাই আমি খেয়ে ফেলি। (ভাব নিয়ে)
~ আমি তো বলিনি আমি খাবো না। (থতমত খেয়ে)
~ এতো দোষ ধরলে,

~ দাও
~ কি দিবো?
~ হাতের লোকমা টা দাও
~ নিন

আরাধ্যারকে সিম্মি খাইয়ে দেয় আর দুজনের দুষ্টু মিষ্টি খুন শুঁটি। অন্যদিকে, অভি তার প্লানিং এ সেকেন্ড বারের মতো ফেইল হয়। অভি তার গার্ডদের বলে,
~ টাকা দিয়ে আমি কুকুর পুষছি?
~ স্যার, আসলে?
~ Just shut up.

~ ওর গাড়ি ধাক্কা দিয়ে ফাঁদে ফেলে দিতে পারলি না।
~ স্যার, আমি বুঝতে পারিনি আরাধ্যার বেঁচে যাবে।
~ Stupid get lost from here…
তখনি একজন অভির কাঁধে হাত রেখে বলে,

~ ভাইয়া তুই টেনশন করিস না। তোর অপূর্ণ কাজ আমি করবো। আমিও দেখবো সিম্মি কি করে আরাধ্যার সাথে সুখে সংসার করে।
আরাধ্যার ল্যাপটপে কাজ করছে সিম্মি বসে বসে আরাধ্যারকে দেখছে। আরাধ্যার বারবার আড়চোখে সিম্মিকে দেখছে। আরাধ্যার মুচকি হেসে সিম্মিকে বলে,
~ এতো দেখলে তো আমার প্রেমে পড়ে যাবে। (ভাব নিয়ে)

~ প্রেমে পড়লে সমস্যা কোথায়? (রেগেমেগে )
তখনি আরাধ্যার পিএ সাবিহা দরজায় নক করে,
~ May i come in sir, (হালকা হেসে )
~ Yes coming, (না তাকিয়ে)

~ কেমন আছেন স্যার? (আরাধ্যার সামনে বসে)
~ ভালো। কাজ কেমন চলছে? (না তাকিয়ে )

~ জি স্যার, ভালো, (হেসে)
~ ফাইলগুলো দিন, (ল্যাপটপে কাজ করতে করতে)
~ এইযে স্যার, স্যার একটা কথা ছিলো? (সংকোচ নিয়ে)
~ হুম, (মাথা নেড়ে)

~ আপনি অফিসে গেলে বেশি ভালো হতো। (হালকা হেসে)
সাবিহার কথা শুনে সিম্মির মেজাজ বিগড়ে যায়। সিম্মি রেগেমেগে বলে ওঠে,

~ দেখুন আরাধ্যার অনেক অসুস্থ, সে কি করে অফিসে যাবে কি করে? (রেগেমেগে)
~ জান নো প্রব্লেম, সাবিহা আপনি যান, (সাবিহার দিকে তাকিয়ে)

~ ওকে স্যার। (মাথা নেড়ে)
সাবিহা চলে যায়। সিম্মির একটু একটু সন্দেহ লাগে সাবিহার উপর। সিম্মি নিজের সর্বোচ্চ চেষ্টা করে আরাধ্যারকে সারিয়ে তোলে। আরাধ্যার পুরোপুরি সুস্থ হয়ে যায়। কেটে যায় একটি মাস।


পর্ব ৩২

আরাধ্যার সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হতে চলে যায়। সিম্মি তাড়াতাড়ি করে নাস্তা রেডি করে। আরাধ্যার ফ্রেশ হয়ে ডাইনিং টেবিলের সামনে আসে, সিম্মি সব কিছু টেবিলে সার্ভ করছে। আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে পেছন থেকে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে, সিম্মি হকচকিয়ে যায়। আরাধ্যার সিম্মির কাঁধে মাথা রেখে বলে,

~ জান, (সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে)
~ জি সাহেব বলুন, (মুচকি হেসে)
~ তোমাকে না খুব সুন্দর লাগছে আজকে! (রোমান্টিক মুডে)

~ কেনো? আমাকে প্রতিদিন কি খুব খারাপ লাগে দেখতে? (রেগে)
~ আরে আরে আমি তো সেটা বলিনি, (ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে)
~ তাহলে কি বলেছেন শুনি? (রেগে)

~ বলতে চেয়েছি, (থতমত খেয়ে)
~ কি বলতে চেয়েছেন বলবেন তো? (রেগে)
~ বলতে চেয়েছি, এখন আমার হাতে মোটেই সময় নেই নাস্তা করার মতো, (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
~ কি বললেন? (রেগেমেগে)

আরাধ্যার সিম্মিকে সামনে ঘুরিয়ে কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে তাড়াহুড়ো করে চলে যায়। সিম্মিকে কোনো কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে। সিম্মি থ হয়ে দাঁড়িয়ে থাকে। আরাধ্যার দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
~ নাস্তা করে নিও জান, আসি। (ফ্লাইং কিস করে)

সিম্মি ভেংচি মেরে বলে,
~ বুঝছি এজন্যই এতো প্রশংসা করা হচ্ছিল ডেভিল একটা। (কোমড়ে হাত রেখে)।
সিম্মি টেবিলে গিয়ে নাস্তা করছে কিন্তু একা একা মন বসছে না। তাই তেমন কিছু না খেয়ে উঠে যায় সিম্মি। সিম্মি টেবিল ঠিক করছে আর তখনই সিম্মির মাথায় একটা আইডিয়া আসে,

~ আরাধ্যার তো নাস্তা করে গেলো না। আজকে যদি আমি নিজের হাতে আরাধ্যার পছন্দের সব খাবার রান্না করে অফিসে নিয়ে যাই তাহলে কেমন হবে? হুম ভালোই হবে। তাছাড়া কতোদিন হয় অফিসটাকে দেখি না। ঐ অফিসে ইন্টারভিউ দিতে গিয়েই তো ফেসে গেলাম। যাই হোক তাড়াতাড়ি করতে হবে।

অন্যদিকে আরাধ্যার অফিসে পৌঁছে গেছে। আরাধ্যার গাড়ি থেকে বের হয়ে ডিরেক্ট কেবিনে চলে যায়। কেবিনের লক অন করে তারপর ভেতরে যায়। তারপর ম্যানেজারকে ডাক দেয়,
~ May i come in sir, (দরজার সামনে দাড়িয়ে)

~ Yes, (মাথা নেড়ে)
~ সাবিহা কোথায়? (রেগে)
~ স্যার সে তো আসে না ১০.০০ টার আগে। (ভয়ে ভয়ে)

~ What? (টেবিলে ঘুষি দিয়ে)
~ জি স্যার, (মাথা নেড়ে)
~ কোম্পানির প্রডাক্টগুলো আমার সাইন ছাড়া সেল হলো কি করে? তাও এতো কম রেটে? (ফাইল ছুড়ে মেরে)

~ সেটা সাবিহা ম্যাম ভালো জানেন, (মাথা নেড়ে)
~ কোম্পানির লাস্ট বায় অর সেলের ফাইল নিয়ে আসুন। (শান্ত হয়ে)
~ সেটাও সাবিহা ম্যামের কাছে। (মাথা নেড়ে)

~ সব কিছু ওর কাছে তাহলে আপনারা কি বসে বসে আঙুল চুষছেন? (রেগেমেগে)
~ স্যার, সাবিহা ম্যাম, (ভয়ে ভয়ে)
~ You shut up. Get lost from here.. (চিৎকার করে)

ম্যানেজার ভয়ে ভয়ে কেবিন থেকে বের হয়ে যায়। আর তখনই সাবিহার সাথে দেখা হয় ম্যানেজারের,
~ আপনাকে স্যার ডাকছে। (রাগী সুরে)
~ স্যার হুট করেই অফিসে চলে এসেছে। (ভ্রু কুচকে)

~ এটা ওনার অফিস আপনার না। স্যারের যখন ইচ্ছে অফিসে আসবে। (রাগী লুকে)।
সাবিহা ম্যানেজারের পাশ কাটিয়ে সোজা আরাধ্যার কেবিনে চলে যায়। সাবিহা দরজার সামনে গিয়ে বলে,

~ May i coming sir? (স্বাভাবিক ভাবে)
~ এতো সাহস কোথায় পেয়েছেো? (রেগেমেগে)
~ জি স্যার, (না জানার ভান করে)

~ Oh you shut up. এই অফিসের মালিক আমি না তুমি? (সাবিহার সামনে গিয়ে)
~ স্যার আপনি। (মাথা নেড়ে)
~ তাহলে, এই সময় হলো আসার। (টেবিলে ঘুষি মেরে)

~ স্যার আমি অনেক ঝামেলায় আছি তাই, (বাহানা করে)
~ Don’t be excuse. (আঙুল উঠিয়ে)
~ স্যার সত্যি। (মাথা নেড়ে)

~ ১ ঘন্টার মধ্যে পুরো একমাসের বায় অর সেলের ফাইল দেখতে চাই। আর যদি না পারো তাহলে রিজাইন পেপার দিয়ে বহিষ্কার হয়ে যেও। Get out… (রেগেমেগে)
সাবিহা মাথা নিচু করে চলে আসে। সাবিহা কেবিন থেকে বের হয়ে বলে,
~ তোমার দিন শেষ আরাধ্যার। (শয়তানি মার্কা হাসি দিয়ে)

সিম্মি আরাধ্যার জন্য নিজ হাতে কড়াইশুঁটি, মালাই চিংড়ি, বিফ কাবাব, চিকেন বল, ফ্রাইড রাইস আর ভেজিটেবল স্যালাড রান্না করে প্যাকিং করে ফ্রেশ করতে চলে যায়। তারপর সিম্মি ফ্রেশ হয়ে এসে ব্ল্যাক কালারের একটা গাউন পড়ে। কানে ব্ল্যাক স্টোনের টপ এয়াররিং।

গলায় ব্ল্যাক স্টোনের পেন্ডেন্ট। আর হালকা সাজুগুজু করে বের হয় বাসার সামনে। সেখানে একজন গার্ড গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিম্মি গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয় গার্ড। কিছুক্ষণের মধ্যে সিম্মি অফিসে চলে আসে। সিম্মি বের হয় গাড়ি থেকে। সিম্মি ডিরেক্ট আরাধ্যার কেবিনে চলে যায়। সিম্মি দরজায় নক করে,
~ স্যার আসতে পারি?

আরাধ্যার না দেখেই সিম্মিকে আসতে বলে,
~ হুম,
~ তো আমার স্যার কি করছে?

আরাধ্যার সিম্মির কন্ঠ শুনে ওপরে তাকিয়ে দেখে সিম্মি দাঁড়িয়ে আছে। আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে অবাক হয়ে যায়। কর্ম ব্যাস্ততার জন্য আজকে আরাধ্যার বাসার সিসিটিভি ফুটেজ চেক করতে পারেনি। সিম্মিকে অনেক সুন্দর লাগছে আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে চোখ ফেরাতে পারছে না। সিম্মি আরাধ্যার সামনে আঙুলে তুড়ি বাজিয়ে বলে,

~ হুম জানি আমি অনেক সুন্দরী। ওভাবে তাকিয়ে থাকলে প্রেমে পড়ে যাবেন। (ভাব নিয়ে)
~ আমার কথা আমাকে ফিরিয়ে দিচ্ছো। (চেয়ারে হেলান দিয়ে)
~ মোটেও না। (ভেংচি মেরে)
~ তুমি হঠাৎ অফিসে? (ভ্রু কুঁচকে)

~ আপনি সকালে না খেয়ে এসেছেন তাই বাবলাম নিজের হাতে আপনার পছন্দের খাবারগুলো রান্না করে আপনার জন্য নিয়ে এসেছি। (হেসে)
~ তুমি আর রান্না? (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ Excuse me.. আমি রেসিপি বুক দেখে সব খুব ভালো করে রান্না করেছি। (ভাব নিয়ে)

~ বাহ্, আমার কি সৌভাগ্য। আমার সহধর্মিণী আমার জন্য রান্না করে অফিসে নিয়ে এসেছে। তুমি খাবার বের করো কেমন আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি। (সিম্মির গালে হাত রেখে)
~ আচ্ছা। (আরাধ্যার নাক টেনে )
আরাধ্যার ফ্রেশ হতে ওয়াশরুমে চলে যায়। সিম্মি কেবিনের একপাশে টেবিল ও সোফা রাখা সেখানে গিয়ে সব খাবার সার্ভ করছে। তখনই সাবিহা আরাধ্যার কেবিনে আসে। সাবিহা সিম্মির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

~ স্যার কোথায়? (অন্যদিকে তাকিয়ে)
~ সে তো ফ্রেশ হতে গেলো। কোনো কথা বা মেসেজ দিতে হলে আমাকে বলুন। (হেসে)

~ না তেমন কিছু না। (গম্ভীর কণ্ঠে)
সাবিহা কোনো কিছু না বলে বের হয়ে যায়। সিম্মি সাবিহার দিকে তাকিয়ে থাকে। সাবিহা কেবিন থেকে বের হয়ে দাড়িয়ে যায়। সাবিহার মাথায় আইডিয়া আসে। সাবিহা মনে মনে বলে,

~ এটাই মোক্ষম সুযোগ। এমনভাবে দাবার গুটি ঘুরাবে যে আরাধ্যার নিজ থেকে তোকে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বের করে দেবে। Just wait and see.
আরাধ্যার ফ্রেশ হয়ে বের হয়ে সিম্মির পাশে বসে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। সিম্মি আরাধ্যার পেটে চিমটি কেটে বলে,

~ এখানেও শুরু হয়ে গেলো। আরে এটা অফিস। (রেগে)
~ তুমি তো দেখছি চিমটিও কাটতে জানো। আর শোনো এটা আমার অফিস। এখানে আমি যা খুশি করতে পারি ওকে। (সিম্মির গাল টেনে)
~ হয়েছে। এবার হা করুন আমি খাইয়ে দিচ্ছি। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ ওকে দাও। (মাথা নেড়ে)

আরাধ্যার ইচ্ছে করে সিম্মির আঙুলে কামড় দেয়। সিম্মি তবুও কোনো রেসপন্স করে না। সিম্মি আরো এক লোকমা উঠিয়ে আরাধ্যার মুখে দেয় আরাধ্যার আবারও সিম্মির আঙুলে কামড় দেয়। এভাবে ২/৩ বার দেওয়ার পর ও সিম্মি কোনো কিছু বলছে না, যেনো কিচ্ছু হয়নি। আরাধ্যার এবার ক্ষেপে গিয়ে সিম্মির আঙুলে জোরেশোরে কামড় দেয়। কামড়টা এতো জোরে আরাধ্যার আঙুলে বসে যে সিম্মির আঙুল কেটে যায়। আর রক্ত বের হয়ে যায়। আরাধ্যার তাড়াতাড়ি করে সিম্মির আঙুল মুখে পুরে নেয় আর বলে,
~ কেমন মেয়ে তুমি? (মন খারাপ করে)
~ কেনো? (অবাক হয়ে)

~ এতো জোরে কামড় দিলাম তাও কোনো সাড়া দিলে না। (রেগে)
~ আপনি যদি আমাকে মেরেও ফেলেন তবুও আমি কোনো টু শব্দ করবো না। (হেসে)

~ চুপ, একদম চুপ। (সিম্মির ঠোঁটে আঙুল রেখে)
আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। সিম্মির চোখ ছলছল করে ওঠে। তখনই ম্যানেজার দরজায় নক করে। আরাধ্যার সিম্মিকে ছেড়ে দিয়ে ম্যানেজারকে আসতে বলে,
~ বলুন, (অন্যদিকে তাকিয়ে)
~ স্যার ক্লাইন্ট চলে এসেছে মিটিংয়ের জন্য। ওকে জান আমি আসছি। (মাথা নিচু করে)

আরাধ্যার টিস্যু দিয়ে মুখ মুছে সিম্মির কপালে কিস করে বের হয়ে যায়। সিম্মি সব ঠিকঠাক করে তখন সাবিহা দরজার সামনে এসে সিম্মিকে ডাক দেয়,
~ ম্যাম একটু এদিকে আসবেন? (ইশারা করে)
~ হ্যা বলো। (সাবিহার সামনে গিয়ে)

~ আসলে ম্যাম, এই ফাইলটা স্যার আপনাকে দিতে বলেছেন আর বলেছেন খুব সামলে রাখতে। (ফাইল হাতে দিয়ে)
~ আচ্ছা। (মাথা নেড়ে)
~ স্যার বলেছেন, তার আসতে অনেক দেরি হবে তাই আপনাকে বাসায় চলে যেতে বলেছেন। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ ঠিক আছে। (হালকা হেসে)

সিম্মি সব প্যাকিং করে বের হয়ে যায়। আরাধ্যারও কেবিনে চলে আসে কিন্তু সিম্মিকে দেখতে পায় না। সাবিহা কিছু পেপার নিয়ে আরাধ্যার কাছে আসে। সাবিহা আরাধ্যারকে বলে,
~ কাউকে খুঁজছেন স্যার? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ সিম্মি, (এদিক সেদিক তাকিয়ে)

~ ম্যামকে একটু আগে দেখলাম তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে গেলো। (অভিনয় শুরু করে)
আরাধ্যার সাবিহার কথা শুনে মনে মনে ভাবে,
~ মনে হয় সিম্মি অনেক কষ্ট পেয়েছে। এজন্য হয়তো না বলেই চলে গেছে।


পর্ব ৩৩

সিম্মি বাসায় চলে আসে। খুব ক্লান্ত থাকায় ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ে। সিম্মি নজর চলে যায় আঙুলের দিকে। সিম্মি আঙুলটা সামনে এনে দেখে আর বলে,
~ আপনাকে অনেক ভালোবাসি, আপনার দেয়া আঘাত গুলোকে ভালবাসার চিহ্ন হিসেবে রেখে দেবো না হয়। (মুচকি হেসে)
সিম্মি কথা বলতে বলতে কখন যে ঘুমিয়ে যায় তা নিজেও জানে না। আরাধ্যার তাড়াতাড়ি অফিস থেকে বের হয়ে বাসায় চলে আসে। সিম্মি স্বপ্নে দেখতে পায়,

একটা ঘরে সিম্মি বসে আছে। তখনি বাচ্চার কান্না শুনতে পায়। সিম্মি দৌড়াতে থাকে এদিকে সেদিকে কিন্তু বুঝতেই পারে না কোথা থেকে এই কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। সিম্মি ঘুরতে ঘুরতে একটা সিড়ির সামনে চলে আসে। সিম্মি সেই সিড়ি ধরে উপরে উঠতে থাকে। সিম্মি ছাঁদে চলে আসে। ছাঁদটা অসম্ভব সুন্দর করে সাজানো।

মাঝখানে একটি দোলনা সেখান থেকে কান্নার আওয়াজ ভেসে আসছে। সিম্মি দৌড়ে দোলনার কাছে চলে আসে তারপর দেখতে পায় দোলনায় একটি ফুটফুটে বাচ্চা খেলছে। সিম্মি বাচ্চাটিকে কোলে নেয় তখনই আরাধ্যার চলে আসে সেখানে। সিম্মি আরাধ্যার কাছে যেতে নিলে আরাধ্যার পিছিয়ে যেতে থাকে এমন করতে করতে আরাধ্যার ছাদের রেলিঙের থেকে পড়ে যায়। সিম্মি জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে।

সিম্মি ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। সিম্মি চারদিকে তাকিয়ে দেখে রাত হয়ে গেছে। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখে রাত ১০ টা বেজে গেছে। সিম্মি বিছানা থেকে উঠে নিচে পা রাখে। সিম্মির মনে হয় পায়ের নিচে তুলতুলে নরম কিছু আছে।

সিম্মি নিচে তাকিয়ে দেখে মিরিন্ডা রোজের পাপড়ি দিয়ে ছোটো খাটো একটা রাস্তা বানানো যেটা আলমারি পর্যন্ত গিয়েছো। সিম্মির মনে খটকা লাগে তবুও সে রাস্তা অনুসরণ করে আলমারি পর্যন্ত যায়। আলমারির সামনে এসে আলমারির দরজা খুলে দেখে সেখানে একটা একটা হালকা গোলাপি রঙের গাউন রাখা। তার সাথে একটা চিরকুট তাতে লেখা,

Your crazy lover
সিম্মি মুচকি হেসে গাউনটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। তারপর গাউনটা পড়ে বের হয়ে। রোজের পাপড়ি গুলোর রাস্তাটা ড্রেসিং টেবিলের সামনে চলে যায়। সিম্মি গাউন টা দুহাত দিয়ে উঁচু করে ড্রেসিং টেবিলের সামনে যায়। সিম্মি লুকিং গ্লাসে নিজেকে দেখে,

গাউনটা গলার সামনে দিয়ে একদম সমান আর ট্রায়াঙ্গেল হাটা গ্লিটারের। গাউনটা পুরোপুরি লং। গাউনের নিচে হালকা পিংক কালার গ্লিটারের ডিজাইন। সিম্মি দেখতে পায় ড্রেসিং টেবিলের উপর গোলাপি রঙের গোলাপের পাপড়ির উপর ডায়মন্ডের নেকলেস, কানের দুল, ব্রেসলেট, তার পাশে একটা ছোট্ট চিরকুট, তাতে লেখা
Your crazy lover

সিম্মি ওরনামেন্টস গুলো পড়ে নেয়। ঠোঁটে গাঢ় গোলাপি রঙের লিপস্টিক, চোখে কাজল আর গালে ব্লাশিং দেয় গোলাপি রঙের। তারপর চুলগুলো পাফ করে খোপা করে নেয়। দুই পাশে আঁকাবাকা লতার মতো চুল রাখে। খোপার মধ্যে সাদা স্টোনের ক্লিপ লাগিয়ে লুকিং গ্লাসের উপরে দুটো টকটকে লাল সদ্য ফোটা গোলাপ লাগানো দেখতে পায় আর তার পাশে একটা চিরকুট লাগানো, তাতে লেখা,

কালো রজনীর বুকে রক্ত গোলাপ ফুটলে অসাধারণ লাগবে
সিম্মি মুচকি হেসে গোলাপ দুটো হাতে নিয়ে খোপায় গুঁজে নেয়। সিম্মি দরজার দিকে তাকিয়ে দেখে একটা চিরকুট লাগানো, তাতে লেখা,
I wait for you in roof, meri jaan

সিম্মি দু’হাতে গাউন ধরে রুম থেকে বের হয়। রুম থেকে বের হয়ে দরজার সামনে একটা গোলাপ দেখতে পায়। সিম্মি গোলাপ ফুলটা উঠিয়ে হাতে নেয়। ছাঁদে যাওয়া পর্যন্ত এরকম ভাবে অনেকগুলো গোলাপ পায় সিম্মি। সিম্মি সবগুলো গোলাপ হাতে নিয়ে ছাঁদের দরজার সামনে যায়। দরজায় গোলাপের পাপড়ি দিয়ে লাভ আকাঁ তার মধ্যে পাপড়ি দিয়ে লেখা,
Your crazy lover

সিম্মি দরজা খুলে ছাঁদে যায়। একটা ঠান্ডা বাতাস সিম্মিকে ছুঁয়ে যায়। ছাঁদ পুরোপুরি অন্ধকার। কোথাও কোনো আলোর ছিটে ফোঁটাও নেই। তখনি কোনো শীতল হাত সিম্মির ঘাড় স্পর্শ করে। সিম্মি ঘুড়ে কাউকে দেখতে পায় না। সিম্মির কানে কেউ ফিসফিস করে বলে,

Love you jaan
সিম্মি পিছনে তাকিয়ে দেখে কেউ নেই। সিম্মি এদিক সেদিক তাকিয়ে দেখে বলে,
~ আরাধ্যার আপনি কোথায়? (এদিক সেদিক তাকিয়ে)

~ তোমার পাশে? (মুচকি হেসে)
~ আমি আপনাকে দেখতে পাচ্ছি না! (আতঙ্কের সুরে)
~ তোমার মনের কোণে। (হেসে)

~ প্লিজ সামনে আসুন। (মন খারাপ করে)
~ আমি তো তোমার সামনে, কাছে আসো জান। (হালকা হেসে)

সিম্মি সামনে এগুতে থাকে। সিম্মি হাঁটতে হাঁটতে একদম শেষ প্রান্তে চলে আসে। সিম্মি রেলিঙের পাশে চলে যায় তখনই আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে টেনে নিজের কাছে চলে আসে। সাথে সাথে সব লাইট জ্বলে ওঠে। ছাঁদের মাঝখানে গোলাপের পাপড়ি দিয়ে I love U লেখা। পুরো ছাঁদ গোলাপের পাপড়ি দিয়ে সাজানো।

সিম্মি অবাক হয়ে যায় সব কিছু দেখে। ফুলের গালিচার উপর একটা টেবিলে গোলাপের ডিজাইন করা রেড ভেলভেট কেক।
সিম্মির চোখে আনন্দ অশ্রু চলে আসে। সিম্মি অবাক হয়ে সব দেখছে। আরাধ্যার সিম্মির সামনে এসে হাটু গেড়ে বসে এক হাত পেছনে নিয়ে অন্য হাতে একটা ডায়মন্ড রিং সিম্মির সামনে এনে বলে,

~ I still love you I love you jaa I love you so much I love you forever and ever and ever and ever.
সিম্মি মুচকি হেসে হাত বাড়িয়ে দেয়। আরাধ্যার সিম্মির আঙুলে রিংটা পড়িয়ে সিম্মির হাতে কিস করে তারপর……….


পর্ব ৩৪

আরাধ্যার উঠে দাঁড়ায়। সিম্মি আরাধ্যার গালে হাত রেখে বলে,
~ I love you very much

আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। তারপর আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে গান শুরু করে অটোমেটিক মিউজিক অন হয়ে যায়,
Main tenu samjhawan ki
Na tere bina lagda jee

Main tenu samjhawan ki
Na tere bina lagda jee
Tu ki jane pyar mera

Main karoon intezar tera
Tu dil tu yun jaan meri

Main tenu samjhawan ki
Na tere bina lagda jee

আরাধ্যার সিম্মিকে ঘুরিয়ে নিজের কাছে আনে এক হাত সিম্মির কোমরে রেখে অন্য হাত সিম্মির হাতে রেখে ড্যান্স করে, Mere dil ne chun laiya ne
Tere dil diyan rahaan
Tu jo mere naal tu rehnta

Tur pe meriyaan saaha
সিম্মি আরাধ্যার চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। আরাধ্যার সিম্মির চোখের দিকে তাকিয়ে আছে। দুজন দুজনের চোখের সাগরে হারিয়ে ফেলেছে নিজেদের,

Jeena mera haye,
Hund hai tera

Ki main karaan tu kar eitbaar mera
Main karoon intezar tera
Tu dil tu yun jaan meri

Main tenu samjhawan ki
Na tere bina lagda jee
সিম্মি আরাধ্যার ঠোঁটে আঙুল রেখে আরাধ্যারকে থামিয়ে দেয়। সিম্মি মিউজিকের তালে গাইতে থাকে আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে,

Ve changa nahion keeta beeba
Ve changa nahion keeta beeba
Dil mera tod ke

Ve bada pachtaiyaan akhaan
Ve bada pachtaiyaan akhaan

Naal tere jod ke
আরাধ্যার সিম্মিকে ঘুরিয়ে নেয়। আরাধ্যার সিম্মির কাঁধে মাথা রাখে,
Tenu chadd ke kitthe jawaan

Tu mera parchanwa
Tere mukhde vich hi mein taan
Rabb nu apni pawa

Meri dua haye,
Sajda tera kaarti sada tu sun ekraar mera
Main karoon intezar tera

Tu dil tu yun jaan meri
Main tenu samjhawan ki
Na tere bina lagda jee

আরাধ্যার সিম্মির কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে সিম্মিকে বলে,
~ ভালোবাসি অনেক বেশি। (সিম্মির গালে হাত রেখে)

সিম্মি আরাধ্যার নাক টেনে বলে,
~ ভালোবাসি হাজার গুন বেশি, (মুচকি হেসে)

আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে টেবিলের সামনে নিয়ে যায়। কেকের উপর আরাধ্যার + সিম্মি লেখা। আরাধ্যার কেকের পাশে থাকা ছুরিটা সিম্মির হাতে উঠিয়ে দেয় তারপর আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে পেছন তারপর সিম্মির হাতে হাত রেখে দু’জনে কেক কাটে। আরাধ্যার কেকের পিস তুলে সিম্মির মুখের সামনে নেয়, সিম্মি কেকের পিস হাতে নিয়ে আরাধ্যার মুখের সামনে নেয়, আরাধ্যার বলে,

~ জান আগে তুমি, (সিম্মির মুখের সামনে নিয়ে)
~ না জান, আগে আপনি, (সিম্মি মুখের সামনে নিয়ে)
~ No baby, (মাথা নেড়ে)

~ Yes baby, (মাথা নেড়ে)
~ না সোনা, আগে তুমি, (রাগ করে)

~ না সোনামণি, আগে আপনি, (রাগ করে)
~ জান তুমি আগে, (হেসে)
~ জানটুস আগে আপনি, (হেসে)
~ তুমি, (আঙুল উঠিয়ে)

~ আপনি, (আঙুল উঠিয়ে)
~ বললাম না তুমি, (বিরক্ত হয়ে)
~ আমিও তো বললাম আগে আপনি। (বিরক্ত হয়ে)

আরাধ্যার বিরক্ত হয়ে সিম্মির হাত থেকে কেক নিয়ে, সিম্মির গালে লাগিয়ে দেয়। সিম্মি ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ এটা কি হলো? (রেগেমেগে)
~ যা হবার তাই হলো, (না জানার ভান করে)

সিম্মি কেকের পিস উঠিয়ে আরাধ্যার পুরো মুখে লাগিয়ে দেয়। সিম্মি আরাধ্যারকে দেখে খিলখিল করে হাসতে থাকে। আরাধ্যার রেগে গিয়ে বলে,
~ তবে রে, (দৌড়ে)
~ এই কি করছেন কি? (দৌড়ে পালিয়ে)

আরাধ্যার সিম্মির পেছনে দৌড় দেয়। সিম্মিও উল্টো দৌড় দেয়। আরাধ্যার সিম্মিকে তাড়া করে, সিম্মিও কম নয়। এরকম দুজন ছোটাছুটি করে। সিম্মি ক্লান্ত হয়ে দাড়িয়ে যায়, আর বলে,
~ আমি হেরেছি, আপনি জিতেছেন। এবার তো থামুন। (হাঁটুর উপর হাত রেখে নুইয়ে পড়ে)
~ এতটুকু দৌড়েই হাঁপিয়ে গেলে। (হাসতে হাসতে)
~ মোটেই না। (মুখ ফিরিয়ে)

~ মিথ্যাবাদী। (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ কতো সত্যবাদী লোকটা রে? (ভেংচি মেরে)
আরাধ্যার এসে সিম্মিকে কোলে তুলে নেয়। সিম্মি কোলের মধ্যে নাচানাচি শুরু করে দেয়,

~ আরে আরে পড়ে যাবো তো? (আরাধ্যারকে ছাড়াতে নিয়ে)
~ চুপ করে থাকোতো না হয় ফেলে দেবো। (ধমক দিয়ে)
~ আমি নামবো। (ভেংচি মেরে)
~ আমি নামাবো না। (ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে)

আরাধ্যার সিম্মিকে রুমে নিয়ে যায়। তারপর সিম্মিকে বেডের উপর রেখে দরজা বন্ধ করে। সিম্মি আরাধ্যারকে বলে,
~ বলি মশাই, হচ্ছে টা কি? (রেগেমেগে)
~ একটু পরেই দেখতে পাবে? (মুচকি হেসে)

~ লুচু কোথাকার! (ভেংচি মেরে)
~ বউয়ের সাথে দুষ্টুমি করলে যদি লুচু হয় তাহলে আমার মানতে সমস্যা নেই। (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ আপনি তো,

আর কিছু বলার সুযোগ পেলো না। তারপর যা হলো তাই হলো বাকিটা ইতিহাস। সিম্মি সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে শাওয়ার নেয়। সিম্মি শাওয়ার নিয়ে বের হয়ে দেখে আরাধ্যার ঘুমাচ্ছে। সিম্মির মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি আসে।


পর্ব ৩৫

সিম্মি আরাধ্যার কানে সুরসুরি দেয় শাড়ির আঁচল দিয়ে তবুও আরাধ্যার ওঠে না। সিম্মি আরাধ্যার হাতে চিমটি কাটে তবুও আরাধ্যার ওঠার নাম নেই। সিম্মি গালে দিয়ে ভাবতে থাকে, কি করলে আরাধ্যার উঠে যাবে? হঠাৎ আরাধ্যার মাথায় দুষ্টু বুদ্ধি আসে। সিম্মি আস্তে করে আরাধ্যার কানের কাছে মুখ নেয়,

আরাধ্যার এতক্ষণ জেগেই ছিলো কিন্তু চোখ বন্ধ করে রেখেছে কারণ আরাধ্যার দেখতে চেয়েছিলো যে সিম্মি কি কি করে?
সিম্মি আরাধ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে খুব আস্তে আস্তে আরাধ্যারকে ডাকতে থাকে কিন্তু আরাধ্যার ঘুমিয়ে আছে। সিম্মি তখনই গগন ফাটানো চিৎকার দেয় আরাধ্যার কানের কাছে গিয়ে,

~ আরাধ্যাররররররররররর, (চিৎকার করে)
আরাধ্যার ধড়ফড়িয়ে উঠে বসে কানে আঙুল দিয়ে ঝাকিয়ে বলতে থাকে,
~ কি পাগল হয়ে গেছো নাকি? (ক্ষেপে গিয়ে)

~ আমাকে আপনার পাগল মনে হয়? (রেগে)
~ পাগল না হলে এভাবে ষাঁড়ের মতো কেউ চিৎকার করে তাও আবার কানের কাছে এসে? (কানে হাত দিয়ে)
~ আপনি উঠছিলেন না তাই আর কি! (হেসে)

~ তাই বলে, তোমাকে তো? (রেগেমেগে)
সিম্মি দৌড়ে দূরে চলে যায়। আরাধ্যার রেগেমেগে সিম্মিকে বলে,
~ সিম্মি আমার কাছে আসো? (রাগী লুকে)

~ না না এই ভুল করা যাবে না, (মাথা নেড়ে)
~ তুমি আমার কাছে আসবে নাকি আমি তোমার কাছে আসবো? (রেগে)
~ আমাকে দেখে আপনার সিম্মিও হয় না? (বাচ্চাদের মতো মুখ করে)

~ বাংলা পাঁচের মতো মুখ করে রেখেছো কেনো? (মুখ বাকিয়ে)
~ আপনি তাহলে রাগ দেখান কেনো? (মুখ ফিরিয়ে)

~ আমার বয়েই গেছে এমনি এমনি তোমাকে রাগ দেখাবো। (রেগে)
~ আমার বয়েই গেছে। (ভেংচি মেরে)

~ তাই, দেখাচ্ছি। (দৌড়ে)
আরাধ্যার উঠে সিম্মির কাছে আসে তার আগেই সিম্মি দৌড়ে নিচে চলে যায়। আরাধ্যার দরজায় হেলান দিয়ে দাড়িয়ে সিম্মির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ সুযোগ মতো শোধ নেবো জান, (ডেভিল মার্কা হাসি দিয়ে)

সিম্মি নিচে গিয়ে দাড়িয়ে যায়। আর উপরের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আমিও ফারিয়া তাসনিম সিম্মি, আমাকে ধরা এতো সোজা না। (ভাব নিয়ে)

সিম্মি শাড়ির আঁচল কোমড়ে গুঁজে রান্না ঘরে যায়। তারপর ভাবতে থাকে কি রান্না করবে। তখনই আরাধ্যার চলে আসে রান্না ঘরে,
~ তো রাধূণী আজকে কি কি রান্না করবে? (ভ্রু নাচিয়ে)
~ কাপ নুডুলস। (দাঁত বের করে হেসে)

~ ওহ তাই! বাবা, মা, তিতলি, মাইশা, সাহিল কে তুমি কাপ নুডুলস রান্না করে খাওয়াবে। (হেসে)
~ কি কি? কি বললেন? (থতমত খেয়ে)
~ না শুনলে নাই! আমি এক কথা বারবার বলি না। (চোখ ঘুরিয়ে)

~ বাবা, মা, তিতলি, মাইশা, সাহিল আসবে আমাদের বাসায় আসবে? (অবাক হয়ে)
~ হুম। (মাথা নেড়ে)
~ সত্যি? (খুশিতে হাত তালি দিয়ে)

~ তোমার কি মনে হয় আমি মিথ্যে বলছি? (ভ্রু কুচকে)
~ আমাকে আগে বলেননি কেনো? (অভিমানী সুরে)
~ এখন তো বললাম, ড্রাইভার সব নিয়ে আসবে একটু পরে। (সিম্মির গাল টেনে)

~ কি কি রান্না করবো? (অবাক হয়ে)
~ রোস্টেড চিকেন, বিফ বিরিয়ানি, গরুর ঝাল মাংস, চিকেন মাটান, মালাই চিংড়ি, ভেজিটেবল কারি, সরষে ইলিশ, পটোলের দোলমা, কোরমা, বিফ কাবাব, শিক কাবাব, কৈ মাছ,

আরাধ্যার আর বলতে পারলো না, সিম্মি মাথায় হাত দিয়ে পড়ে যেতে নেয়, আরাধ্যার সিম্মিকে পড়ে যেতে দেখে সিম্মিকে খপ করে ধরে ফেলে।
আরাধ্যার সিম্মিকে কোলে করে নিয়ে সোফায় শুইয়ে দেয়। আরাধ্যার তাড়াতাড়ি করে টেবিল থেকে গ্লাসে করে পানি নিয়ে আসে। তারপর সিম্মিকে খাইয়ে দেয়। আরাধ্যার সিম্মির নাক টেনে বলে,
~ এতটুকু শুনেই মাথা ঘুরে পড়ে গেলে? (মুচকি হেসে)

~ না আসলে, (বলতে গিয়ে থেমে যায়)
~ No problem.. আমি আমার গার্ডদের বলে দিচ্ছি তারা হোটেল থেকে শেফ নিয়ে আসবে আর সার্ভেন্টদের নিয়ে আসবে। (সিম্মির মাথায় হাত রেখে)
আরাধ্যার কথা শুনে সিম্মির আগের বারের কথা মনে পড়ে যায়। সিম্মির মনে ভয় জেগে যায়। সিম্মি আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,

~ না না লাগবে না। আমি পারবো। (ভয়ে ভয়ে)
~ Are you sure? (ভ্রু কুঁচকে)
~ i’m sure. (মাথা নেড়ে)

~ জান, আমি জানি তুমি কেনো না করছো? (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~, (নিশ্চুপ হয়ে)
~ জেনে খুশি হলাম, আগের বারের কথা তোমার মনে আছে। (সিম্মির গালে হাত রেখে)

~, (মাথা নিচু করে)
~ তুমি আমার কথা শুনলেই হবে আর শুনলে, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~, (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
আরাধ্যার সিম্মির সামনে দিয়ে উঠে ফোনের কাছে গিয়ে রেহানকে কল করে,

সিম্মি সোফায় বসে ভাবছে,
~ হঠাৎ মাথায় চক্কর দিলো কেন? কোনো তো ঘাপলা আছে। (কপালে হাত রেখে)
আরাধ্যার সিম্মির কাছে চলে আসে। আরাধ্যার এসে দেখে সিম্মি কি যেন ভাবছে,

~ কি হলো? কি ভাবছো? (সিম্মির কাঁধে হাত রেখে)
~ না কিছু না, (মাথা নেড়ে)
~ চলো আজকে আমি নাস্তা বানাবো। (হেসে)

~ আপনি? (অবাক হয়ে)
~ Of course… (ভেংচি মেরে)
~ আচ্ছা চলুন কিন্তু মেহমানরা কখন আসবেন? (আরাধ্যার হাত ধরে)

~ বাবা বললেন দুপুরের আগে আসবেন। রেহান একটু পরে চলে আসবে শেফ আর সার্ভেন্টদের নিয়ে, (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)
~ ওহ আচ্ছা। (হলকা হেসে)
আরাধ্যার সিম্মিকে নিয়ে রান্না ঘরে চলে যায়। আরাধ্যার সিম্মিকে দাঁড় করিয়ে রান্না ঘরের মধ্যে যায় তারপর,


পর্ব ৩৬

আরাধ্যার ভাবতে থাকে কি রান্না করবে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকায় কিছু জিজ্ঞেস করার জন্য কিন্তু সিম্মির দিকে তাকিয়ে মুখ ফিরিয়ে নেয়। সিম্মি বুঝতে পেরে আরাধ্যার সামনে জিজ্ঞেস করে,

~ আপনি যান। আমি রান্না করছি। (আরাধ্যার হাত ধরে)
~ না আমি পারবো, তুমি যাও। (ভাব নিয়ে)

~ আপনি দাঁড়ান আমি পাস্তা বানিয়ে দিচ্ছি। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ কিন্তু, (বলার আগে সিম্মি তাকে চুপ করিয়ে দেয়)
~ কোনো কিন্তু না, (আঙুল দিয়ে চুপ করার জন্য ইশারা করে)

সিম্মি পাস্তা বানায় তার সাথে কফি, ডিমের অমলেট বানিয়ে ডাইনিং টেবিলে দিয়ে আসে। সিম্মি আরাধ্যারকে বসিয়ে দিয়ে খাবার সার্ভ করে। তখনই রেহান শেফ আর সার্ভেন্টদের নিয়ে আসে। ড্রাইভার লিস্ট অনুযায়ী সব সবজি নিয়ে আসে। আরাধ্যার গিয়ে শেফদের সব বলে দেয় কি কি রান্না করতে হবে আর সার্ভেন্টদের বলে দেয় পুরো ঘরের সব কাজ করতে। সিম্মি ডাইনিং টেবিলের, চেয়ারে বসে থাকে। সিম্মির মনের মধ্যে কোনো এক সংকোচ দানা বাঁধছে। আরাধ্যার কফি নিয়ে সোফায় বসে ল্যাপটপে কাজ করতে থাকে। সিম্মি আরাধ্যার পাশে বসে আছে। সবাই যে যার মতো লাজ করছে।

একটু পরেই বাবা, মা, তিতলি চলে আসে। সিম্মি দৌড়ে গিয়ে বাবা, মাকে জড়িয়ে ধরে। আরাধ্যার উঠে তাদের কাছে গিয়ে সালাম দেয়,
~ কেমন আছো বাবা,? কেমন আছো মা? (হেসে)

~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো, তোমরা কেমন আছো? (সিম্মি আর আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ অনেক ভালো আছি। (আনন্দে)
~ তুমি কেমন আছো বাবা? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ ভালো আছি বাবা। (হেসে)

~ আমার কথা সবাই ভুলেই গেলো? হায়রে তিতলি, তোর যে কি হব্বে? (ভাব নিয়ে)
~ তোকে কি ভোলা যায়! (তিতলির নাক টেনে)

~ তোমার আপু তোমাকে ভুলে গেলেও আমি তোমাকে ঠিকই মনে রেখেছি। (তিতলির দিকে তাকিয়ে)
~ তাই বুঝি দুলাভাই। (হেসে)
~ জি মিস শালিকা। (হেসে)

~ চলো ভেতরে চলো তোমরা। (সবার হাত ধরে)
সিম্মি আর আরাধ্যার সবাইকে নিয়ে যায় ভেতরে। আরাধ্যার সার্ভেন্টদের ইশারা করে নাস্তা নিয়ে আসার জন্য। সার্ভেন্টরা নাস্তা দিয়ে যায়। সিম্মি সার্ভ করে সবাইকে। সিম্মি আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,

~ মাইশা আর সাহিল কোথায়? আপনি না বললেন ওরাও আসবে? (আস্তে আস্তে আরাধ্যার কানের কাছে গিয়ে)
~ হুম আসার কথা ছিলো। অপেক্ষা করো, (হেসে)
~ আচ্ছা। (মাথা নেড়ে)

কথা শেষ হতে না হতেই মাইশা আর সাহিল চলে আসে। সিম্মি দৌড়ে গিয়ে মাইশাকে জড়িয়ে ধরে। আরাধ্যার অবাক হয়ে সিম্মিকে দেখছে কারণ আরাধ্যার এর আগে সিম্মিকে এতো হাসিখুশি কখনো দেখেনি। সিম্মি মাইশাকে ছাড়িয়ে বলে,
~ কিরে চিপকু গাম এতো দেরি হলো কেনো আসতে? (ভ্রু কুঁচকে)

~ আর বলিস না শাঁকচুন্নি, রাস্তায় অনেক জ্যাম। (নাক টেনে)
~ নাও শুরু হয়ে গেলো, শাঁকচুন্নি আর চিপকু গামের কাহিনি! (ভেংচি মেরে)

~ কেমন আছো সাহিল? (সাহিলের দিকে তাকিয়ে)
~ ভালো আছি, তুমি কেমন আছো। (হেসে)
~ ভালো ভালো ভালো। তোমরা এবার ভেতরে চলো।

মাইশা আর সাহিল সবার সাথে কথা বলে। আরাধ্যার বার বার সিম্মিকে দেখছে। সিম্মি আজকে অনেক খুশি। সবার নাস্তা শেষ হলে সিম্মি মাইশা আর তিতলিকে নিয়ে উপরে যায়। আরাধ্যার, সাহিল, বাবা আর মা কথা বলছে, মাইশা সিম্মিকে জিজ্ঞেস করে,
~ সিম্মি তোর চোখ মুখ এতো শুকনো শুকনো লাগছে কেনো? (সিম্মির গালে হাত দিয়ে)
~ আরে এমনি। (মাথা নেড়ে)

~ শোন আমি একজন হাফ ডাক্তারের হবু বউ একটু হলেও কিন্তু বুঝি, (ভাব নিয়ে)
~ কি বুঝলি? (ভ্রু কুঁচকে)
~ আমার মনে হয় আমি আন্টি হবো কিছু দিন পর, (মুচকি হেসে)

~ তুই ও না। (ধাক্কা দিয়ে)
~ সত্যি বলছি। (সিরিয়াস কন্ঠে)
~ চল নিচে চল। (হাত ধরে)

~ আমি বলি কি তুই টেষ্ট কর? (সিম্মির হাত ধরে)
~ কিন্তু, (ভ্রু কুঁচকে)
~ আরে টেস্ট করলে তো আর সমস্যা নেই। (মাথা নেড়ে)
~ আচ্ছা করবো কেমন। (হেসে)
তিতলি এসে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ আপি তোমার বাসাটা অনেক সুন্দর। (জড়িয়ে ধরে)
~ তাই বুঝি। তাহলে থেকে যা। (হেসে)
~ কলেজ খোলা না থাকলে তো থেকে যেতাম। (মন খারাপ করে)

সিম্মি, তিতলি, মাইশা নিচে চলে যায় তারা পুরো বাড়ি ঘুরে ঘুরে দেখে। সবাই ড্রইং রুমে বসে গল্প করে। সিম্মি রুমে যায় হঠাৎ কেউ একজন সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে। সিম্মি ভয় পেয়ে পেছনে তাকিয়ে দেখে আরাধ্যার, সিম্মি আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,

~ সাহেব আজকে খুব রোমান্টিক মুডে আছে মনে হয়? (ভাব নিয়ে)
~ অবশ্যই, (সিম্মির কাঁধে মাথা রেখে)
~ কিন্তু কেনো? (অবাক হয়ে)

~ আমার জান আজকে অনেক অনেক খুশি তাই। (হেসে)
~ আপনাকে অনেক অনেক ধন্যবাদ। (হেসে)
~ কেনো? (রেগে)

~ এত বড় একটা সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ তাহলে গিফট দাও, (দুষ্ট হাসি হেসে)
~ বলুন কি গিফট চান? (হেসে)
~ দাও একটা উম্মা দাও, (হেসে)

~ কি বেশরম? ( ভ্রু কুচকে)
~ বউয়ের সাথে এমন করা যায় বুঝলে, (দাঁত বের করে।
আরাধ্যার আর সিম্মি দুজনেই হেসে ওঠে। আরাধ্যার আলতো করে সিম্মির মাথায় টোকা দেয় মাথা দিয়ে। তারপর,


পর্ব ৩৭

সিম্মি আরাধ্যারকে ছেড়ে দিয়ে নিচে চলে আসে। আরাধ্যারও সিম্মির পিছনে পিছনে চলে আসে। সিম্মির মা সিম্মিকে ইশারা করে কাছে আসতে বলে, সিম্মি গিয়ে তার মায়ের পাশে বসে। সিম্মির মা আস্তে আস্তে বলে,

~ মা তোর সাথে কিছু কথা ছিলো? (ফিসফিস করে)
~ হ্যাঁ মা, বলো। (হেসে)
~ এখানে নয়। (আশেপাশে তাকিয়ে)

~ আচ্ছা, তাহলে অন্য কোথাও চলো। (মায়ের দিকে তাকিয়ে )
~ হুম চল। (মাথা নেড়ে)
জিনিসটা সবার দৃষ্টি এড়ালেও আরাধ্যার চোখে ঠিকই ধরা পড়েছে। সিম্মি সবার দিকে তাকিয়ে বলে,

~ অনেক দিন মায়ের সঙ্গে সময় কাটানো হয় না, আমি আর মা একটু ছাঁদে যাচ্ছি তোমরা সবাই গল্প করো কেমন। (হেসে)
সিম্মি আর তার মা ছাঁদে চলে যায়। সিম্মির মা বিরক্তিকর ভাব নিয়ে সিম্মির দিকে তাকায়, সিম্মি তার মায়ের এমন দৃষ্টি দেখে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে,
~ কি হয়েছে মা? (মায়ের দিকে তাকিয়ে)
~ তুই কি চাস বলতো? (রেগে)

~ মানে? (অবাক হয়ে)
~ আমাদের মেয়ে হয়ে তুই এমন কাজ করবি ভাবতেই অবাক লাগে! (রেগেমেগে)
~ কি হয়েছে বলবে তো? (অবাক হয়ে)

~ সব জেনেও না জানার ভান করছিস। (সিম্মির সামনে এসে)
~ প্লিজ মা, সব খুলে বলো আমি কিচ্ছু বুঝতে পারছি না তুমি কি বলছো? (মায়ের হাতে হাত রেখে)
~ অভির সাথে এখনো তোর কিসের সম্পর্ক? (হাত সরিয়ে দিয়ে)

~ What? (অবাক হয়ে)
~ তুই কি ভাবিস কেউ কিছু জানবে না। (রেগে)
~ মা আমার কথা শোনো, (মায়ের হাত ধরে)

~ নিজের ইচ্ছেতে আরাধ্যারকে বিয়ে করলি তারপর ও কেনো অভির সাথে যোগাযোগ রেখেছিস। (ঘৃণার চোখে তাকিয়ে)
~ আমি কি করে অভির সাথে যোগাযোগ করবো? বাসায় না আছে কোনো ফোন, না আমি বাসা থেকে বের হই। তোমাকে এসব বাজে কথা কে বললো? (ছলছল চোখে)
~ অভির বাবা বলেছেন, সেদিন শপিং মলে তার সাথে দেখা হয়েছে তখন সে বলেছে। (দূরে সরে গিয়ে)
~ অভির বাবা, (অবাক হয়ে)

~ তুই নাকি আরাধ্যারকে সর্বশান্ত করে দিয়ে অভিকে বিয়ে করে আরাধ্যার থেকে প্রতিশোধ নিবি? (রাগী কন্ঠে)
~ মা বিশ্বাস করো, (চোখের পানি মুছে)

~ আরাধ্যার না হয় ভালোবেসে তোকে জোর করে বিয়ে করেছিলো নিজের ভালোবাসাকে পূর্ণতা দেবার জন্য আর তুই কি না? (রেগে)
~ ছিঃ মা, আমি এসব ভাবতেও পারিনা। (কাঁদতে কাঁদতে)
~ এসব করার আগে একবার ও ভাবলি না? (রেগে)

~ তোকে নিজের মেয়ে বলতেও লজ্জা করে। এখানে আসতাম না, এসেছি তোর নোংরামি গুলো তোর সামনে তুলে ধরতে। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
সিম্মি কথাগুলো শুনে নিশ্চুপ হয়ে যায়। সিম্মির চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়ছে। সিম্মি তাড মাকে কিছু বলতে যাবে তার আগেই তার মা তাকে থামিয়ে দিয়ে বলে,
~ এখনো সময় আছে পারলে সব গুছিয়ে নে। আরাধ্যার এমন ওমন কিছু হয়ে গেলে তোকে ত্যাজ্য করে দেবো, ভাববো তুই মরে গেছিস।

(সিম্মিকে থাপ্পড় দিয়ে)
সিম্মি গালে হাত দিয়ে কাঁদছে। দরজার ওপাশে দাঁড়িয়ে সব কথা শুনে নেয় আরাধ্যার। আরাধ্যার চোখ দুটো অসম্ভব লাল হয়ে গেছে। এক হাত দেয়ালের সাথে রেখে তার উপর মাথা রাখে অন্য হাত মুষ্ঠিবদ্ধ করে রাখে। আরাধ্যার কপাল বেয়ে ঘাম ঝাড়ছে। আরাধ্যার খুব কষ্টে চোখ বন্ধ করে নিজেকে শান্ত করে। সিম্মির মা সিম্মিকে কথাগুলো বলে হনহন করে বেরিয়ে যায়। আরাধ্যার তার আগেই চলে আসে সেখান থেকে।

সিম্মি সেখানেই ঠায় দাঁড়িয়ে আছে। সিম্মির কানে তার মায়ের বলা কথাগুলো বাজছে। সিম্মি চোখ মুছতে মুছতে রুমে এসে পড়ে তারপর ওয়াশরুমে গিয়ে হাতমুখ ধুয়ে নিচে চলে আসে। তারপর সোফায় বসে, মাইশা তখন বলে,

~ তোর জন্য এতক্ষণ অপেক্ষা করছিলাম। তুই এসে গেছিস এবার তাহলে কথাটা বলি কেমন! (সিম্মির হাতে হাত রেখে)
~ হুম, (মাথা নেড়ে)
~ আগামী ১৪ তারিখে আমার সাহিলের অানুষ্ঠানিক ভাবে বিয়ে। আমি চাই আপনারা সবাই সেখানে এ্যাটেন্ড করবেন। (সবার দিকে তাকিয়ে)
সিম্মি খেয়ালই করলো না মাইশা কি কথা বললো। মাইশা সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে বলে,

~ শপিং করা থেকে সব রকম আয়োজনে তুই আমার সাথে থাকবি। (সিম্মির কাঁধে হাত রেখে)
~ হুম। (মাথা নেড়ে)
~ ভাইয়া আপনি কিন্তু না করতে পারবেন না। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

~ আমি না করার কে? তোমার বান্ধবী তোমার সাথে থাকবে তাতে আপত্তি নেই। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ সবাই খেতে চলো। (নিচের দিকে তাকিয়ে)
সিম্মি উঠে চলে যায়। আরাধ্যার সবাইকে নিয়ে ডাইনিঙয়ে চলে যায়। সার্ভেন্টরা সব খাবার সার্ভ করে রেখেছে। সিম্মি সব খাবার পরিবেশন করে দিচ্ছে। সিম্মি খাবার নিয়ে বসলেও একটি দানাও মুখে তোলে না।

আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে আবার চোখ সরিয়ে নেয়। খাবার শেষ করে সবাই কিছুক্ষণ বসে। তারপর সবাই চলে যায়। সিম্মি তার মায়ের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলেও সিম্মির মা ফিরেও তাকায়নি। আরাধ্যার গার্ডের বলে দেয়, সবাইকে বাসায় পৌঁছে দিতে। সিম্মি মনমরা হয়ে বাসায় চলে আসে। আরাধ্যার সিম্মির পাশ কাটিয়ে সোজা রুমে চলে যায়। সিম্মিও আরাধ্যার পেছনে পেছনে রুমে যায়।

সিম্মি রুমে গিয়ে দেখে আরাধ্যার দাঁড়িয়ে আছে। সিম্মি কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরাধ্যার হেঁচকা টান দিয়ে সিম্মিকে কাছে টেনে আনে। আরাধ্যার সিম্মির চুলে নাক ডুবিয়ে দেয় আর শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। আরাধ্যার হাতের চাপে সিম্মি ব্যাথা পেলেও কোনো কিছু বলে না। আরাধ্যার মনে মনে বলে,
~ তুমি এমনটা করতে পারো না। I still love you jaan. (মনে মনে)

আরাধ্যার সিম্মিকে ঘুরিয়ে নেয়। আরাধ্যার সিম্মির চোখে চোখ রাখে তারপরই আরাধ্যার সিম্মির ঠোঁটে ঠোঁট রাখে। সিম্মির চোখ পরক্ষনেই বড় বড় হয়ে যায় কারণ আরাধ্যার একের পর এক কামড় বসিয়ে দিচ্ছে। সিম্মি আরাধ্যার ভালোবাসার স্পর্শ চেনে, আরাধ্যার আজকের স্পর্শে কোনো ভালোবাসা নেই, আছে হিংস্রতা আর ঘৃণা। সিম্মি মুখ দিয়ে শুধু, উমমমমমমমমম উমমমমমমম শব্দ করে। সিম্মির ঠোঁট কেটে যায় কিন্তু সেদিকে আরাধ্যার খেয়াল নেই। আরাধ্যার ফোন বেজে ওঠে, আরাধ্যার সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে ফোন রিসিভ করে রুম থেকে বের হয়ে যায়।

আরাধ্যার ঠোঁট কেটে রক্ত পড়ছে, সিম্মি অবাক হয়ে আরাধ্যার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সিম্মির চোখের পানি বাঁধ মানছে না। সিম্মি মনে মনে বলে,
~ আরাধ্যার কেনো এমন করলো? সকাল পর্যন্ত সব ঠিকই ছিলো তাহলে কি আরাধ্যার সব শুনে ফেলেছে? (চোখের পানি মুছে)

তখনই সিম্মির শরীর গুলিয়ে আসে। সিম্মি মুখে হাত দিয়ে দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সিম্মি বেসিনের সামনে যেতেই হরহর করে বমি করে। সিম্মি মুখে পানির ঝাপটা দেয়। সিম্মির ঠোঁট জ্বলে যাচ্ছে। সিম্মি মুখে হাত দিয়ে ওয়াশরুম থেকে বের হয়। আরাধ্যার বেডে বসে আছে, মাথা নিচু করে। আরাধ্যার সিম্মিকে একপলক তাকিয়ে বেলকনিতে চলে যায়। সিম্মি বুঝতে পারে আরাধ্যার তাকে ইগনোর করছে।

সিম্মি গিয়ে আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে। আরাধ্যার সেদিকে তোয়াক্কা না করে ঠায় দাঁড়িয়ে আছে, সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
~ কেনো এমন করছেন? আমি কি কোনো ভুল করেছি?

~ প্লিজ বলুন?

আরাধ্যার সিম্মির হাত সরিয়ে দিয়ে রুমে চলে যায়, আলমারি থেকে শার্ট, প্যান্ট নিয়ে ওয়াশরুমে চলে যায়। সিম্মি সেখানে দাঁড়িয়ে আছে। আরাধ্যার ওয়াশরুম থেকে বের হয়ে গাড়ির চাবি আর ফোন হাতে নিয়ে বের হয়ে যায়।

সিম্মি দৌড়ে রুমে এসে খাটের উপর শুয়ে বালিশে মুখ গুঁজে কাঁদতে থাকে। আরাধ্যার ডিরেক্ট অফিসে চলে আসে। আরাধ্যার কেবিনে চলে আসে। সাবিহা সেটা দেখে আরাধ্যার কেবিনে চলে আসে,
~ স্যার আসতে পারি? (দরজার সামনে দাড়িয়ে)
~ হুম, (অন্যদিকে তাকিয়ে)

~ স্যারের কি মুড অফ? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ Shut up. That’s my personal matter. (রাগী সুরে)
~ Extremely sorry sir, (মাথা নিচু করে)
~ কি কাজে এসেছেন? (রেগে)

~ স্যার সেদিন আপনি যে ফাইলটা রেডি করতে বলেছিলেন? সেটা দেখেছেন? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ ফাইলটা আমাকে দিলে তো দেখবো, (রেগেমেগে)
~ কেনো স্যার, ম্যাম আপনাকে ফাইলটা দেয়নি? (অবাক হয়ে)
~ কোন ম্যাম? (ভ্রু কুঁচকে)

~ সিম্মি ম্যাম, আপনি যখন মিটিংয়ে গেলেন তারপর আমি আমি আপনার কেবিনে আসতে নিলে ম্যাম আমাকে ভেতরে আসতে বারণ করে। তিনি দরজার সামনে এসে আমাকে জিজ্ঞেস করে এটা কিসের ফাইল?

আমি বলি, এটা আমাদের কোম্পানির সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ফাইল, সেল এন্ড বায়ের সব ডিটেইলস এর ডকুমেন্টস আছে এটায়। ম্যাম আমার হাত থেকে ফাইলটা নিয়ে নেয়। তারপর তাড়াহুড়ো করে চলে যায়। আমি তো ভাবলাম সে হয়তো আপনাকে দিয়ে দেবে। (ভনিতা করে)
~ আপনি এখন যান, (মাথা নেড়ে)
~ জি স্যার। (মাথা নেড়ে)

সাবিহা রুম থেকে বের হয়ে যায়। আরাধ্যার চেয়ারে হেলান দিয়ে ভাবতে থাকে,
~ মা যা যা বললো তা সত্য নয়তো But how it’s possible? তুমি এতো বড় বেইমানি করতে পারো না সিম্মি!
রেহান চলে আসে আরাধ্যার কেবিনে।

রেহান তাড়াহুড়ো করে আরাধ্যার সামনে আসে। আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ কি হয়েছে তোর? (রেহানের দিকে তাকিয়ে)
~ বস সর্বনাশ হয়ে গেছে? (হাঁপাতে হাঁপাতে)
~ কি হয়েছে? (অবাক হয়ে)

~ Chowdhury Group of Industries এর সব প্রোডাক্ট আমাদের কোম্পানির থেকে কম রেটে সাপ্লাই করে দিয়েছে। এখন তো আমাদের কোম্পানির প্রোডাক্ট তো এতো হাই রেটে কেউ নেবে না। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

~ What? (টেবিলে ঘুষি মেরে)
~ এখন কি হবে বস? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

~ যা হবার তাই হবে। (নিচের দিকে তাকিয়ে)
আরাধ্যার কাজ শেষ করে বাসায় আসে। আরাধ্যার গাড়ি থেকে বের হয়ে দরজার সামনে এসে দেখে।


পর্ব ৩৮

আরাধ্যার দরজার সামনে এসে দেখে আরাধ্যার বাবা আর সিম্মি বসে বসে গল্প করছে। আরাধ্যার ভেতরে আসে। আরাধ্যারকে আসতে দেখে আরাধ্যার বাবা উঠে এসে আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে,
~ How are you my son? (আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে)
~ Fine and you baba. (অস্ফুট স্বরে)
~ Also fine, (হেসে)

~ তুমি কখন এলে বাবা? (অবাক হয়ে)
~ এইতো কিছুক্ষন আগে। ভাবলাম তোমাদের একটা সারপ্রাইজ দিবো তাই আগে থেকে কিছু বলিনি। (আরাধ্যার কাঁধে হাত রেখে)
~ হুম, বুঝতে পেরেছি। চলো ভেতরে চলো, (ইশারা করে)
~ হ্যাঁ চলো। (মাথা নেড়ে)

আরাধ্যার একবারও সিম্মির দিকে তাকায়নি। সিম্মি করুণভাবে আরাধ্যার দিকে তাকায়। আরাধ্যার ফ্রেশ হতে চলে যায়। আরাধ্যার রাতে ডিনার না করেই ঘুমিয়ে পড়ে। আরাধ্যার বাবা, সিম্মি ডাকলেও আসে না। সিম্মিও না খেয়ে শুয়ে পড়ে। সিম্মি আরাধ্যার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলে,
~ আমি এমন কি করেছি যার শাস্তি দিচ্ছেন? (কেঁদে কেঁদে)

সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে কখন ঘুমিয়ে পড়ে তা নিজেই জানে না। সিম্মি সকালে উঠে নাস্তা বানায়। আরাধ্যার বাবা টেবিলে এসে আরাধ্যার কথা জিজ্ঞেস করে, সিম্মি আরাধ্যারকে ডাকতে যায় কিন্তু আরাধ্যার উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হচ্ছে। সিম্মিকে কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আরাধ্যার সিম্মির পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আরাধ্যারকে দেখে তার বাবা বলে,

~ আরাধ্যার নাস্তা করবে এসো? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ না বাবা, সময় নেই অফিসে একটা জরুরি মিটিং আছে। (মাথা নেড়ে)
~ অল্প কিছু খেয়ে যাও। (অনুরোধের সুরে)

~ না বাবা। (মাথা নেড়ে)
আরাধ্যার বের হয়ে যায়। সিম্মি আরাধ্যার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে। সিম্মির চোখ দুটো ছলছল করে ওঠে। সিম্মি চোখ মুছে টেবিলের কাছে চলে যায়। সিম্মির সব সার্ভ করছে, আরাধ্যার বাবা বলে,

~ মা তুমি বসো? (সিম্মির হাত ধরে)
~ না বাবা, আমি একটু আগে খেয়েছি। (মাথা নেড়ে)
~ কি খেয়েছো? (ভ্রু কুঁচকে)

~ ফল, এখন আর খিদে নেই। (মাথা নিচু করে)
~ আচ্ছা একটুপরে খেয়ে নিও কেমন, (মুচকি হেসে)
~ ঠিক আছে বাবা, (মাথা নেড়ে)

সিম্মি সব গোছাচ্ছে তখনই মাইশা চলে আসে। মাইশা এসে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে।
~ কেমন আছিস? (জড়িয়ে ধরে)
~ ভালো, তুই (মাইশার দিকে তাকিয়ে)

~ ভালো। চল আমার সাথে? (হাত ধরে)
~ কোথায়? (অবাক হয়ে)
~ শপিংয়ে। (হেসে )

~ কিন্তু বাসায় তো বাবা আছেন তাকে একা রেখে, (মন খারাপ করে)
আরাধ্যার বাবা মাইশা আর সিম্মির সব কথা শুনে ফেলে। আরাধ্যার বাবা বলেন,
~ সমস্যা নেই মা, তুমি যাও। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

মাইশা আরাধ্যার বাবার দিকে তাকিয়ে সালাম দেয়।
~ কেমন আছেন আঙ্কেল? (আরাধ্যার বাবার দিকে তাকিয়ে)
~ ভালো আছি আম্মু, তুমি? (হেসে)

~ জি আঙ্কেল ভালো আছি। আমি মাইশা, সিম্মির বেষ্ট ফ্রেন্ড। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ তুই বাবার সাথে গল্প কর, আমি রেডি হয়ে আসছি। (মাইশার দিকে তাকিয়ে)
~ আচ্ছা তাড়াতাড়ি কর। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

সিম্মি রুমে গিয়ে আলমারি থেকে একটা মেরুন রঙের শাড়ি বের করে তারপর সেটা পড়ে রেডি হয়ে নেয়। সিম্মি নিচে চলে আসে। আরাধ্যার বাবা সিম্মিকে বলে,
~ তুমি আমার গাড়ি নিয়ে যাও। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ ঠিক আছে বাবা। তাড়াতাড়ি চলে আসবো। (হালকা হেসে)

~ আচ্ছা। (হেসে)
সিম্মি মাইশার সাথে শপিংয়ে চলে যায়। অন্যদিকে আরাধ্যার বসে আছে, সিম্মির ছবি বের করে সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে। তখনই,


পর্ব ৩৯

তখনই রেহান আসে। আরাধ্যার তখনও সিম্মির ছবির দিকে তাকিয়ে আছে। রেহান ভয়ে ভয়ে বলে,
~ বস একটা কথা বলবো? (ভয়ে ভয়ে)

~ হুম, (মাথা নেড়ে)
~ যদি কিছু মনে না করেন, (ভয়ে ভয়ে)

~ এতো ভনিতা না করে বল কি বলবি, ( রেগেমেগে)
~ বস, আমি একটু আগে বসুন্ধরা থেকে আসলাম। (মাথা নিচু করে)
~ তো কি হয়েছে? (রেগে)

~ সেখানে ম্যামকে দেখলাম, (ভয়ে ভয়ে)
কথাটা শুনে আরাধ্যার রাগ উঠে যায় চরম মাত্রায়। আরাধ্যার চোখ বন্ধ করে বলে,
~ কার সাথে? (রেগেমেগে)

~ বস আমি নিজেও বিশ্বাস করতে পারিনি, (তোতলাতে তোতলাতে)
~ কার সাথে দেখেছিস? (মাথা নিচু করে)
~ অভি চৌধুরী। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

আরাধ্যার ড্রয়ার থেকে পিস্তল বের করে উঠে গিয়ে রেহানের কপালে ঠেসে ধরে। রেহান ভয়ে ভয়ে বলে,
~ বস, আমি পরখ করে দেখার জন আরও সামনে যাই। আমি ছবি তুলে এনেছি। (ভয়ে ঢোক গিলে)
~ ছবি বের কর। (চিৎকার করে)

রেহান ভয়ে ভয়ে তাড়াতাড়ি ছবি বের করে। আরাধ্যার চোখ রক্তবর্ণ ধারণ করেছে। রেহান আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ বস, অভি বলছিলো যে বিজনেস ফাইলটা তার হাতে পৌঁছে গেলে আপনার অস্তিত্ব বীলিন করে দেবে ও। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

~ বস, ম্যাম হয়তো অভির সাথে হাত মিলিয়েছে। না হলে আমাদের কোম্পানির সিক্রেট ডকুমেন্টস গুলো হ্যাক হলো কি করে। (অবাক হয়ে)

~ সব কিছু হাতে নাতে প্রমাণ করতে হবে না হলে আপনার কষ্টে তিলে তিলে গড়া এই Mk group of industries ধ্বংস হয়ে যাবে। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ বেইমানী করেছে আমার সাথে এর ফল ও পাবে। (কটমট করে)

সিম্মি রেগেমেগে দাঁড়িয়ে আছে। মাইশা সিম্মির কাঁধে হাত রেখে বলে,
~ যা হয়েছে ভুলে যা। প্লিজ সিম্মি কথা তো বল, (শান্ত হয়ে)

~ মাইশা, আমার সব কেমন জানি ওলট পালট হয়ে যাচ্ছে। (মাথায় হাত রেখে)
~ কেনো? (অবাক হয়ে)
~ আমার সংসারে আবার কোনো ঝড় আসতে চলেছে। (কাঁদো কাঁদো সুরে)

~ কি বলছিস এসব? (অবাক হয়ে)
~ অভি বলে গেলো, ও এমন কিছু করবে যাতে আরাধ্যার নিজে আমাকে বের করে দেবে ওর জীবন থেকে। কাল মা আমাকে অনেক কিছু বললো? (কাঁদতে কাঁদতে)
~ আন্টি কি বলেছে? (সিম্মির কাঁধে হাত রেখে)

~ আমি নাকি আরাধ্যারকে সর্বশান্ত করে দিয়ে অভিকে বিয়ে করবো! (হাত দিয়ে মুখ চেপে কান্না করে)
~ What? এসব কে বললো? (অবাক হয়ে)

~ অভির বাবা। (চোখের পানি মুছে)
~ সিম্মি তোকে অনেক বড় ফাঁদে ফেলা হয়েছে। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আমি কি করবো? কিচ্ছু বুঝতে পারছি না।

( কাঁদতে কাঁদতে)
কথাটা বলতে বলতে সিম্মির বমি চলে আসে। সিম্মি দৌড়ে ওয়াশরুমে চলে যায় তারপর হরহর করে বমি করে। মাইশা সিম্মির কাঁধে হাত রেখে বলে,
~ সিম্মি হাসপাতালে চল, (সিম্মির হাত ধরে)

~ কিন্তু শপিং? (মাইশার দিকে তাকিয়ে)
~ পরেও করা যাবে। এখন যা বলছি শোন। (মাথায় হাত বুলিয়ে )

সিম্মি মাইশার সাথে হসপিটালে যায়। তারপর গাইনি চিকিৎসকের কাছে গেলে তিনি সব চেকাপ করে টেস্ট করতে দেন। সিম্মি টেস্ট করে ডক্টরের কাছে গেলে তিনি বলেন,
~ আমার মনে হয়, আপনি প্রেগ্নেন্যান্ট। বহুদিন ধরে ডাক্তারি পেশায় নিয়োজিত তাই বুঝতে সমস্যা হয় না। তবে রিপোর্ট হাতে কনফার্ম হওয়া যাবে। আগামীকাল আপনার রিপোর্ট দেয়া হবে তারপর রিপোর্ট নিয়ে আমার কাছে আসবেন কেমন। (হাসিমুখে)
~ ঠিক আছে। (মাথা নেড়ে)

সিম্মি আর মাইশা চেম্বার থেকে বের হয়। মাইশা সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আমি কালকে রিপোর্ট নিয়ে যাবো কেমন। এখন বাসায় চল। (মুচকি হেসে)

সিম্মি মাথা নিচু করে চলে আসে। সিম্মি বসায় এসে পড়ে। এসে সোজা রুমে চলে যায়। রমের সামনে এসে সিম্মি থমকে যায় কারণ পুরো রুমের মধ্যে ঝড় বয়ে গেছে। সবকিছু এলোমেলো, সব জিনিসপত্র ভেঙে ফেলা হয়েছে।

সিম্মি ধীরে রুমে ঢোকে। সিম্মির পায়ের নিচে একটা বড় কাঁচের টুকরো ছিলো। সিম্মি সেখানে পা রাখতেই কাঁচটি সিম্মির পায়ে ঢুকে পড়ে। সিম্মি অমনি নিচে বসে পড়ে, আস্তে আস্তে কাঁচের টুকরো টা পায়ের থেকে টেনে বের করে। সিম্মি তার সামনে একটা ছায়া দেখতে পায়, সিম্মি আস্তে আস্তে উপরে তাকায়। তাকিয়ে দেখে আরাধ্যার দাঁড়িয়ে আছে হাতে হকিস্টিক। সিম্মি অবাক দৃষ্টিতে আরাধ্যার দিকে তাকায়। আরাধ্যার অগ্নি দৃষ্টিতে সিম্মির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,
~ কোথায় গিয়েছিলে? (দাঁতে দাঁত চেপে)

~ শ শ শপিংয়ে। (ভয় পেয়ে)
~ কার সাথে? (রেগে)
~ সে সে মাইশার সাথে। (কাঁদো কাঁদো সুরে)

~ তোমার জামাকাপড়ের মধ্যে আমার অফিসের ফাইল কি করে? (চোখ বন্ধ করে)
~ আ আপনি না রাখ, (কাঁদতে কাঁদতে)

কথাটা বলার আগের আরাধ্যার সিম্মির গাল চেপে ধরে। আরাধ্যার এতটা জোরে সিম্মির গাল চেপে ধরে যে সিম্মি ব্যাথায় ছটফট করতে থাকে। আরাধ্যার বলে,
~ বেইমান, (গাল চেপে ধরে)

~ ক কি বলছেন এসব? (ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে)
~ কি ভাবো নিজেকে? (রেগে)
~ আ আপনি এসব কি বলছেন? (কান্না করে)

আরাধ্যার সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয় তারপর সিম্মির সামনে দাড়িয়ে প্যান্টের বেল্ট খোলে, সিম্মি কিছুই বুঝতে পারেনা আরাধ্যার কেনো এমন করছে। আরাধ্যার বেল্ট খুলেই সিম্মির উপর এলোপাতাড়ি ভাবে মারতে থাকে। সিম্মির মনে পড়ে যায় ডাক্তারের কথা, আপনি মনে হয় প্রোগ্নন্যান্ট।

সিম্মি ঘুরে যায় যাতে সব আঘাত তার পিঠে লাগে। সিম্মি দুহাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে যাতে কোনো শব্দ না বের হয়। সিম্মি কখন বেহুশ হয়ে যায় তা বুঝতে পারেনা। আরাধ্যার সিম্মির পাশে বসে পড়ে আর বলে,
~ কি কমতি ছিলো আমার ভালোবাসায়? যে এতো বড় বেইমানি করলে? (চোখ মুছে)

আরাধ্যার উঠে চলে যায়। আরাধ্যার গাড়ি নিয়ে বের হলো যায়। আরাধ্যার বাবাও বাড়িতে নেই। সিম্মি সেই ভাবে নিচে পড়ে থাকে।
সকালের রোদ পর্দা ভেদ করে সিম্মির চোখে এসে পড়ছে। সিম্মি টিপটিপ করে তাকায়। পুরো শরীর ব্যাথায় অবস হয়ে আসছে।

বেল্টের আঘাত গুলো চামড়া ফেটে দগদগে হয়ে গেছে। সিম্মি শরীরের সব শক্তি সন্ঞ্চার করে উঠে দাঁড়ায়। ওয়াশরুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে বের হয়। আরাধ্যারকে কোথাও না দেখতে পেয়ে পুরো বাড়ি খোঁজ করে তবুও পায় না। সিম্মি পা খোরাতে খোরাতে নিচে যায়। তখনই কেউ কলিং বেল বাজায়, সিম্মি আস্তে আস্তে যায় দরজার কাছে তারপর দরজা খুলে দেয়।

সিম্মি চারদিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায় কারণ চারপাশে কোনো গার্ড নেই আর একজন অপরিচিত লোক দাঁড়িয়ে আছে, সে সিম্মিকে বলে,


পর্ব ৪০

সিম্মির সামনে একজন অপরিচিত মাঝ বয়সি লোক দাড়িয়ে আছে। সিম্মি বারবার এদিক সেদিক তাকাচ্ছে কারণ চারপাশে একজন গার্ড ও নেই। সচরাচর এমন হয় না কখনও।
সিম্মি অবাক হয়ে লোকটির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আপনি কে? (অবাক হয়ে)
~ আমাকে চিনতে পারছেন না! আমি তরিক। (অবাক হয়ে)

~ নাতো, আমি আপনাকে চিনি না। (মাথা নেড়ে)
~ যাই হোক আপনাকে যেটা বলতে এসেছিলাম, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ হ্যাঁ, বলুন, (সায় দিয়ে)
~ আরাধ্যার স্যার এক্সিডেন্ট করেছেন। (মাথা নিচু করে)

~ কি বলছেন এসব? (আকস্মিক হয়ে)
~ যা বলছি সত্যি বলছি, তাকে দেখতে হলে আমার সাথে চলুন। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আরাধ্যার এখন কোথায় আছেন? (ছলছল চোখে)

~ হাসপাতালে। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ হুম চলুন, তাড়াতাড়ি। আমি আরাধ্যার কাছে যাবো। (তাড়াহুড়ো করে)
~ আসুন আমার সাথে। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

সিম্মি লোকটির সাথে যায়। লোকটি একটা ট্যাক্সি থামায় তারপর সিম্মি আর লোকটি উঠে। সিম্মি কাঁদছে আর মনে মনে বলছে,
~ হে খোদা, তুমি আমার আরাধ্যারকে সুস্থ করে দাও। তার জানি কিছু না হয়। (চোখ মুছে)
লোকটি সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ আসলে একটা কথা বলবো! (সংকোচ নিয়ে)
~ জি বলুন, (মাথা নেড়ে)

~ আমি একটা মিথ্যা কথা বলেছি। (মাথা নিচু করে)
~ কি মিথ্যা বলেছেন? (অবাক হয়ে)

~ আরাধ্যার স্যারের এক্সিডেন্ট করিয়েছেন তার এক শত্রু এজন্য তাকে সব ট্রিটমেন্ট করানো হচ্ছে একটি হোটেলে সিক্রেট ভাবে। (শান্তভাবে)
~ কোন হোটেলে? (লোকটির দিকে তাকিয়ে)

~ ঐ যে সামনে যে হোটেল টা আছে, ঐটাতে। (আঙুল দিয়ে ইশারা করে)
~ ওহ, তাড়াতাড়ি চলুন প্লিজ। (তাড়াহুড়ো করে)
~ এই এখানে থামো। (ড্রাইভারকে থামতে বলে)

লোকটি ট্যাক্সি থামাতে বলে। ট্যাক্সি থামনোর সাথে সাথে সিম্মি নেমে দৌড় দেয়। কোলটি সিম্মিকে ডাক দিয়ে বলে,
~ ম্যাডাম, স্যার দোতলায় ৪৫৯ নম্বর রুমে আছেন। (সিম্মিকে ডাক দিয়ে)
~ ঠিক আছে। (মাথা নেড়ে)

সিম্মি দৌড়ে হোটেলের মধ্যে চলে যায়। এদিক সেদিক তাকায় হোটেলের ডান দিকে একটি সিড়ি দেখতে পায় তারপর দৌড়ে সেখানে চলে যায়। সিড়ি দিয়ে উঠে করিডোরে দাড়িয়ে দেখে মাঝখানে দরজার উপর নম্বর দেয়া ৪৫৯। সিম্মি দৌড়ে দরজার সামনে গিয়ে দরজায় ধাক্কা দেয় আর সাথে সাথে দরজা খুলে যায়। সিম্মির রুমের মধ্যে যায়। পুরো রুম অন্ধকার। সিম্মি বলে,

~ আরাধ্যার আপনি কোথায়? প্লিজ সামনে আসুন। (আশে পাশে তাকিয়ে)
তখনি দুটি শীতল হাত সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে। সিম্মি কেঁপে ওঠে। অজানা মানুষটি সিম্মির কাঁধে মাথা রেখে বলে,
~ Wow, What a sweet smell? (সিম্মির কাঁধে হাত রেখে)

কন্ঠ টা শুনে সিম্মির আর বুঝতে বাকি থাকে না এ আরাধ্যার নয় অভি। সিম্মি ধাক্কা দিয়ে দূরে সরে যায়। তখনি রুমের বাতি জ্বলে ওঠে। সিম্মি সামনে তাকিয়ে দেখে অভি দাড়িয়ে আছে। সিম্মি খুব ভালো করে বুঝতে পারে তাকে মিথ্যা কথা বলে ফাঁসানো হয়েছে। অভি সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আসতে এতো দেরি হলো কেনো বেবি? (বাঁকা হাসি দিয়ে)

~ আপনি এখানে কি করছেন? (অবাক হয়ে)
~ আমি থাকবো না তো কে থাকবে? (না জানার ভান করে)

~ এখানে তো আরাধ্যার! (আশে পাশে তাকিয়ে)
~ আরে ভয় পেয়ো না, আরাধ্যার এখানে আসতে পারবে না। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আমি যাবো। (রেগে)

কথাটা বলে অভির পাশ কাটিয়ে সিম্মি আসতে নিলে অভি সিম্মির হাত ধরে টেনে সামনে আনে আর বলে,
~ কোথায় যাচ্ছো? (হাত ধরে)

~ আমি যাবো। (অভিকে ধাক্কা দিয়ে)
~ আমাকে এতো সাহায্যে করলে তার গিফট না নিয়েই চলে যাবে? (মুচকি হেসে)
~ মানে? (অবাক হয়ে)

অভি সিম্মিকে তার সামনে আনে। দরজা খোলাই ছিলো। দরজার সামনে থেকে কেউ একজন চিৎকার করে সিম্মির নাম ধরে ডাক দেয়।
মাইশা খুব হেপি মুডে দৌড়ে সিম্মির বাসায় আসে। দরজার সামনে এসে দেখে, দরজা খোলা। মাইশা বাসার সামনে ঢোকে, আরাধ্যার বাবা ড্রইং রুমে দাঁড়িয়ে আছে। মাইশা দৌড়ে তার কাছে চলে যায়,

~ আঙ্কেললললল, (চিৎকার করে)
~ আরে মাইশা তুমি? (স্নোহার দিকে তাকিয়ে)

~ আঙ্কেল সিম্মি, আরাধ্যার কোথায়? (উৎফুল্ল হয়ে)
~ তা তো বলতে পারছি না। বাসায় তো দুজনের একজনকেও দেখতে পাচ্ছি না। (শান্ত হয়ে)
~ আঙ্কেল একটা গুড নিউজ আছে? (হেসে)

~ তাই। সেই নিউজ টা কি? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
~ আপনাকেই নিউজটা আগে দেই। (হেসে)
~ হ্যাঁ হ্যাঁ বলো, (উৎসুক হয়ে)

~ আপনি দাদু হতে চলেছেন। (হেসে)
~ কি বললে? সত্যি! (অবাক হয়ে)
~ হ্যাঁ আঙ্কেল এই যে, সিম্মির মেডিকেল রিপোর্ট। (সামনে এগিয়ে দিয়ে)

~ এতো বড় একটা নিউজ কিন্তু ওরা কোথায়। (আশেপাশে তাকিয়ে)
~ আঙ্কেল আমার একটু কাজ আছে। এখনই যেতে হবে। আপনি সিম্মিকে রিপোর্ট টা দিয়ে দিবেন কেমন। (মুচকি হেসে)

~ আচ্ছা মা। ঠিক আছে। (মাথা নেড়ে)
~ তাহলে আসি আঙ্কেল। (হেসে)
~ এসো।

আরাধ্যার অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দুজনের দিকে। পাশে রেহান আর তার গার্ডরা। সিম্মি ভয়ার্ত চেহারায় আরাধ্যার দিকে তাকায়। আরাধ্যার এসে সিম্মিকে কষে থাপ্পড় দেয়। অভি কোনো কিছুই বলে না। আরাধ্যার অভির দিকে তাকিয়ে সিম্মির দিকে তাকায়। আরাধ্যার সিম্মির হাত টেনে নিয়ে আসে। অভি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। সিম্মি বুঝতে পারে না কি হচ্ছে। আরাধ্যার সিম্মিকে টানতে টানতে গাড়িতে উঠায়। তারপর,


পর্ব ৪১

আরাধ্যার গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। সিম্মি জমে পাথর হয়ে বসে আছে। মুখে কোনো কথা নেই।

আরাধ্যার ফুল স্পীডে গাড়ি চালাচ্ছে। সিম্মি বুঝতে পারছে আরাধ্যার হাত থেকে এবার আর রক্ষা নেই। পরক্ষণেই আরাধ্যার চলে আসে বাসার সামনে আরাধ্যার সিম্মির হাত টেনে বের করে। আরাধ্যার সিম্মিকে ছুড়ে ফেলে দেয়। সিম্মি তাল সামলাতে না পেরে ফ্লোরে পড়ে যায়। আরাধ্যার বাবা দৌড়ে সিম্মির কাছে যায় তখনই আরাধ্যার বলে ওঠে,
~ তুমি ঐ কালনাগিনীকে স্পর্শ করবে না বাবা। (বাবার দিকে তাকিয়ে)

সিম্মি আর আরাধ্যার বাবা অবাক হয়ে আরাধ্যার দিকে তাকায়। আরাধ্যার বাবা বলে,
~ এসব কি বলছিস আরাধ্যার? (অবাক হয়ে)

~ ও একটা কালনাগিনী, (সিম্মির দিকে রাগী চোখে তাকিয়ে)
~ কি করেছে সিম্মি? (রেগে)

~ ঠিক, ঠিক বাবা, ও সিম্মি, ও নিজের সিম্মিজালে ফেলেছে আমাকে ধ্বংস করার জন্য। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ মানে? (অবাক হয়ে)

~ ঐ কালসাপ হয়ে আমাকে গ্রাস করতে চেয়েছিলো কিন্তু ভাগ্য আমার সহায় ছিলো বিধায় ওর আর অভির সব প্ল্যান আমি জানতে পেরে গেছি। (রেগেমেগে)
~ What? অভির ওর কিসের প্লান? (হতবাক হয়ে)
~ আমাকে রাস্তার ফকির করার প্ল্যান। (রেগে)

সিম্মি এবার আর চুপ থাকতে পারলো না। সিম্মি উঠে দাঁড়িয়ে আরাধ্যার কাছে গিয়ে বলে,
~ আমার কথাটা শুনুন প্লিজ, (কাঁদতে কাঁদতে)

~ তোর আর কিচ্ছু বলার দরকার নেই, (সিম্মির সামনে এসে)
কথাটা বলেই আরাধ্যার কষে থাপ্পড় দেয় সিম্মির গালে। সিম্মির নাক দিয়ে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে। আরাধ্যার বাবা বলে,
~ সিম্মি এই কাজে জড়িত তার প্রমাণ কি? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

~ প্রমাণ চাও বাবা, তাহলে শোনো ও অভির সাথে প্ল্যানিং করেছে আমার অফিসের সব সিক্রট ডকুমেন্টস হ্যাক করে অভির কাছে দিতে চেয়েছিলো যাতে আমাকে সর্বশান্ত করতে পারে। ও প্ল্যান মোতাবেক আমার পিএ এর থেকে বায় এন্ড সেলের ফাইল নিয়ে এসে ওর জামাকাপড়ের মধ্যে লুকিয়ে রাখে। কাল ও বান্ধবীর সাথে শপিং করার নামে অভির সাথে দেখা করতে গেছে। (বাবার দিকে তাকিয়ে)

~ সিম্মি তুমি এমন? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
আরাধ্যার কথা শুনে আকাশ ভেঙে পড়ে সিম্মির মাথায়। সিম্মি আরাধ্যার বাবার সামনে গিয়ে বলে,

~ বাবা প্লিজ আমার কথাটা শুনুন, (হাত জোর করে বলে)
আরাধ্যার এসে আবারও কষে থাপ্পড় দেয় সিম্মির গালে। সিম্মি ছিটকে টি টেবিলের উপর পড়ে। সিম্মির কপাল কেটে রক্ত পড়ছে। আরাধ্যার তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ এখানেই শেষ নয় বাবা, ও একটা লোককে দিয়ে খবর পাঠায় অভিকে। আজকে ওকে হাতে নাতে ধরার জন্য সব গার্ডদের সরিয়ে দিয়েছিলাম সেই সুযোগে ঐ লোকটি বাসায় আসে আর এই কালনাগিনী চলে যায় হোটেলে অভির সাথে দেখা করতে। (ঘৃণার চোখে সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ তুমি হোটেলে গেছো অভির সাথে দেখা করতে? (অবাক হয়ে)
~ দেখা করতে নয় বাবা ও বাজে কাজ করতে সেখানে গিয়েছে। (বাবার কাছে গিয়ে)
~ আরাধ্যার বিশ্বাস করুন, (কাঁদো সুরে)

~ চুপ একদম চুপ। আমি নিজের চোখে দেখেছি অভি তোকে জড়িয়ে ধরে কিস করছিলো। (সিম্মির গাল চেপে ধরে)
~ আরাধ্যার আপনার দুটো পায় পড়ি আমার কথা শুনুন। (অসহায় ভাবে)
আরাধ্যার সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে দূরে সরিয়ে দেয়। সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ তোকে ভালোবেসেছিলাম নিজের থেকেও বেশি। তোর মাঝে নিজেকে খুঁজে পেয়েছিলাম। প্রথম দেখায় তোকে ভালোবেসেছিলাম। দুটো বছর তোকে তন্নতন্ন করে খুঁজেছি তারপর যখন তোকে পেয়েছি যাতে আর না হারিয়ে ফেলি এজন্য বিয়ে করেছি। তোর এতই টাকার দরকার? অভির থেকে আমার ব্যাংক ব্যালেন্স দশগুন বেশি তাও তুই আমাকে ঠকিয়ে অভির কাছে গেলি। (সিম্মির সামনে দাড়িয়ে)

আরাধ্যার সিম্মিকে তুলে গলা চেপে ধরে। সিম্মি অনেক কষ্ট করে বলে,
~ আমার আর আপনার সংসার ভাঙার জন্য ওরা এমন করেছে। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

~ তুই একটা কালনাগিনী, তোকে বিশ্বাস করি না। (জোরে সিম্মির গলা চেপে ধরে)
~ প্লিজ আমার কথা বিশ্বাস করুন, (কাশি দিতে দিতে)

আরাধ্যার আবারও কষে থাপ্পড় দেয় সিম্মিকে। সিম্মি মাথা ঘুরে পড়ে যায় টেবিলের উপর তখনই সিম্মি দেখতে পায় সেই হসপিটালের রিপোর্ট যেখানে কাল গিয়েছিলো। সিম্মি তাড়াতাড়ি করে রিপোর্ট বের করে চেক করে। রিপোর্টের রেজাল্ট দেখে সিম্মির চোখ দিয়ে জল গড়িয়ে পড়ে। আরাধ্যার সিম্মির চুলের মুঠি ধরে টেনে উঠিয়ে বলে,

~ তুই একটা প্রোষ্টিটিউট। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আরাধ্যার, (অবাক হয়ে)

~ ঐ নোংরা মুখে আমার নাম নিবি না, তোকে আমি শেষ করে ফেলবো। (সিম্মির দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে )
আরাধ্যার বাবা আরাধ্যার হাত ধরে বলে,
~ না তুমি এমন কিছু করবে না কারণ ওকে মেরে তুমি তোমার জীবন নষ্ট করবে কেনো? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

~ না বাবা ওকে এভাবে ছেড়ে দেওয়া যায় না। (রেগেমেগে)
~ আরাধ্যার, (অবাক হয়ে)
~ ও একটা বেইমান, আরাধ্যার খান বেইমানদের পৃথিবীতে বাঁচিয়ে রাখে না। (সিম্মির গলা চেপে ধরে)

সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে বলে,
~ আমার কথা শুনুন, (কাশি দিতে দিতে)
~ অনেক শুনেছি আর না, (সিম্মির গাল চেপে ধরে)

~ এই শেষ বার আমার কথা শুনুন, (অনুরোধ করে)
আরাধ্যার রিভলবার দিয়ে সিম্মির মাথায় ঠেসে ধরে। সিম্মির চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। আরাধ্যার বাবা আরাধ্যার হাত থেকে রিভলবার নিয়ে বলে,
~ ও তোমাকে নিঃস্ব করতে চেয়েছিলো কিন্তু পারেনি তো। তুমি ওকে ছেড়ে দাও। (রাগী দৃষ্টিতে সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ কখনো না। (মাথা নেড়ে)
~ কুকুর মানুষ কামড়ায় কিন্তু মানুষ কখনো কুকুরকে কামড়ায় না। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ ওকে তো, ( রেগে )
~ ওকে ছেড়ে দাও আর সম্পর্ক শেষ করে ফেলো। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
আরাধ্যার সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিয়ে বলে,

~ বাবার জন্য তোকে ছেড়ে দিলাম। তোর সাথে সব সম্পর্ক শেষ আর কোনোদিন ও আমার সামনে আসবি না। চলে যা আমার সামনে থেকে যাবে না হয়, রেগেমেগে)
~ আরাধ্যার প্লিজ, (হাতজোড় করে)

~ তুমি এতো বেহায়া, শুনতে পাচ্ছো না আরাধ্যার তোমাকে চলে যেতে বলছে। (রেগেমেগে)
~ বাবা আপনিও, (অবাক হয়ে)

~ ঐ অপয়া মুখে আমাকে বাবা ডাকবে না। এই ঘরের সব দরজা বন্ধ আজ থেকে তোমার জন্য। (রেগেমেগে)
সিম্মির মনে জেদ চেপে যায়। সিম্মি চোখের পানি মুছে অভিমান করে বলে,

~ ঠিক আছে চলে যাচ্ছি, আপনারা কেউ আমার কথা শুনলেন না। আমার দোষ না থাকা সত্বেও আমাকে তাড়িয়ে দিলেন। এর জন্য আপনাদের পস্তাতে হবে। আর কখনো আসবো না আপনাদের কাছে। আপনাদের ভুল একদিন না একদিন ভাঙবে সেদিন আর আমাকে পাবেন না। (চোখের পানি মুছতে মুছতে)

কথা গুলো বলে সিম্মি দৌড়ে বের হয়ে যায় বাসা থেকে। আরাধ্যার চোখ থেকে দুফোঁটা নোনাজল গড়িয়ে পড়ে। সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে রাস্তায় হাটছে আর বলছে,
~ আপনি আমাকে প্রষ্টিটউট বললেন? একবারও ভাবলেন না আপনার এড়িয়া ছেড়ে কখনো বাইরে যাইনি তাহলে কি করে অভির সাথে! (চোখের পানি মুছে)
সিম্মির সামনে একটা গাড়ি এসে থামে। গাড়ি থেকে সাবিহা বের হয়ে সিম্মির সামনে আসে,

~ কোথায় যাচ্ছো? (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ সে কৈফিয়ত তোমাকে দেবো কেনো? (রেগেমেগে)

~ ওহ সিম্মি, (তাচ্ছিল্যের সুরে)
হঠাৎ পেছন থেকে দুজন সিম্মির হাত চেপে ধরে আর মুখ চেপে ধরে সিম্মিকে গাড়ির মধ্যে উঠায়। কিছুক্ষণ পরে, একটা বিশাল বাড়ির সামনে এসে থামে।

বাড়িটা ফুল আর মরিচ বাতি দিয়ে সাজানো মনে হয়, বাড়িতে কোনো আয়োজন চলছে। লোক দুজন সিম্মিকে গাড়ি থেকে নামায়। সাবিহা গাড়ি থেকে নেমে সোজা হাটতে থাকে লোক দুটোও সাবিহা কে ফলো করে। সিম্মিকে নিয়ে যেই বাসায় ঢোকে তখনই অভি সিম্মির সামনে চলে আসে। তখনি,


পর্ব ৪২

সিম্মি অবাক হয়ে যায় অভিকে দেখে। সিম্মি অভির দিকে তাকিয়ে আবার সাবিহার দিকে তাকায়। সাবিহা হেসে অভির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ ভাইয়া তোর অপূর্ণ কাজ আমি পূর্ণ করে দিলাম। (অভির দিকে তাকিয়ে)
~ Many many thanks my sis……. (সাবিহার গাল টেনে)

~ তো বেবি, আরাধ্যার কি তোমাকে বেশি কষ্ট দিয়েছে? (সিম্মির গালে হাত দিয়ে)
সিম্মির মুখের বাধঁন খুলে দেয়। সিম্মি মুখ খোলার সাথে সাথে বলে,

~ সাবিহা তুমি অভির বোন? (অবাক হয়ে)
~ কে সাবিহা? আমি আমিরা চৌধুরী। (বাঁকা হাসি দিয়ে)

~ তার মানে এসব তোমাদের চাল ছিলো। (ঘৃণার চোখে তাকিয়ে)
~ তোমাকে ভাইয়ের কাছে আনার জন্য এতো প্রয়াস। (অভির কাঁধে হাত রেখে)
~ তোমরা দুই ভাইবোন মিলে আমার আর আরাধ্যার সংসার ভেঙে দিয়েছো? (কাঁদো কাঁদো সুরে)

অভি সিম্মির গালে হাত রেখে শান্ত হয়ে বলে,
~ তোমাকে পাওয়ার জন্য আমি সব করতে পারি। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ আমি আপনাকে ঘৃণা করি, (মুখ ফিরিয়ে নিয়ে)
~ আমি তোমাকে ভালোবাসি। (সিম্মির গালে হাত রেখে)
~ পৃথিবীতে এতো মেয়ে থাকতে আমার পিছনে পড়ে আছেন কেনো? (রেগেমেগে)

~ আমি সেদিন তোমাকে ভালোবেসেছিলাম যেদিন তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম আর সেইদিন ঠিক করে নিয়েছিলাম বিয়ে যদি করতে হয় তোমাকেই করবো। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আমার বিয়ে হয়ে গেছে আরাধ্যার সাথে, আমি তার বিবাহিতা স্ত্রী। (অভির দিকে তাকিয়ে)

অভি আর আমিরা সিম্মির কথা শুনে অট্টহাসিতে মেতে ওঠে। অভির হাসি চেপে রেখে বলে,
~ ছিলে এখন নেই। আরাধ্যার আর জীবনেও তোমাকে গ্রহন করবে না। (হাসতে হাসতে)

~ ভাইয়া ওকে নিয়ে রুমে যা তো। শুধু শুধু বকবক করছে। তোদের কথা রুমে গিয়ে মিটমাট করে নে। আমি এদিকটা সামলাচ্ছি। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ Okay sweetheart, (আমিরার দিকে তাকিয়ে)
অভি সিম্মিকে কোলে তুলে নেয়। সিম্মির হাত বাধা। সিম্মি বেশি নড়াচড়া করতে চেয়েও পারে না কারণ সিম্মি জানে যে, সে মা হতে চলেছে। অভি সিম্মির দিকে তাকিয়ে মুচকি হেসে, সিম্মিকে একটা রুমে নিয়ে যায়। রুমটি খুব সুন্দর করে সাজানো ফুল দিয়ে। অভি সিম্মিকে দাঁড় করিয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়।

তারপর সিম্মির কাছে এসে, সিম্মির হাতের বাঁধন খুলে দেয়। অভি সিম্মিকে জড়িয়ে ধরতে নিলে, সিম্মি ধাক্কা দিয়ে অভিকে ফেলে দেয়। সিম্মি অভির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ লজ্জা করে না আপনার, একটা মেয়ের সংসার ভেঙে দিতে? (কাঁদতে কাঁদতে)

~ আমি তোমাকে ভালোবাসি সিম্মি। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আমি আরাধ্যারকে ভালোবাসি। (মুখ ফিরিয়ে নিয়ে)
~ ও তো তোমাকে বের করে দিয়েছে? (রাগী দৃষ্টিতে)

~ আপনাদের ষড়যন্ত্রের শিকার হয়ে আরাধ্যার এমনটা করেছে। (আঙুল উঠিয়ে)
~ যত যাই করো আরাধ্যার আর তোমাকে মেনে নেবে না। (হেসে)

~ সমস্যা নেই, আমি আরাধ্যার স্মৃতি নিয়ে বেঁচে থাকবো। (পেটে হাত দিয়ে)
~ আমি তোমাকে বিয়ে করবো, এখন এই মূহুর্তে। ( সিম্মির সামনে এসে)

~ কখনো না। (দূরে সরে গিয়ে)
অভি এসে সিম্মির গালে চড় মারে। সিম্মি গালে হাত অভির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন, (হাত জোর করে)

~ তোকে আমার চাই, At any cost. (সিম্মির গাল চেপে ধরে)
~ আমার অনাগত বাচ্চার জন্য আমাকে ছেড়ে দিন। (কেঁদে কেঁদে)

~ What? You’re pregnant? (অবাক হয়ে)
~ হ্যাঁ, (মাথা নেড়ে)
~ সমস্যা নেই, এই বাচ্চাকে নষ্ট করে ফলবো। (রেগেমেগে)

সিম্মি অভির সামনে এসে কষে থাপ্পড় দেয় অভির গালে। সিম্মি অগ্নি দৃষ্টিতে অভির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আমার সন্তানকে নষ্ট করার কথা বলার সাহস কোথায় পেয়েছো? (রেগেমেগে)

~ এই সন্তান আরাধ্যার চিহ্ন, আর ওর কোনো চিহ্ন আমি রাখবো না। (রেগে)
~ আমি তোমাকে খুন করে ফেলবো। (রেগেমেগে)
~ তার আগে আমি তোমার সন্তানকে শেষ করে ফেলবো। (রেগে)

অভি সিম্মির দিকে এগোতে থাকে। সিম্মি পিছিয়ে যেতে থাকে। সিম্মি শেষ মেশ দেয়ালের সাথে আটকে যায়। অভি সিম্মির খুব কাছাকাছি চলে আসে। সিম্মির পাশেই একটা টেবিলের উপর ফ্লাওয়ার বাস ছিলো। অভি সিম্মিকে কিস করার জন্য সামনে আসতে নেয় চোখ বন্ধ করে আর তখনি সিম্মি ফ্লাওয়ার বাসটা দিয়ে অভির মাথায় আঘাত করে। অভির মাথা ফেটে যায়। অভি মাথায় হাত দিয়ে মাথা ঘুরিয়ে পড়ে যায়।

সিম্মি আনমনে বলতে থাকে,
~ যে করে হোক আমাকে পালাতে হবে না হয় ওরা আমার সন্তানকে বাচঁতে দেবে না। (পেটে হাত রেখে)

অন্যদিকে, আরাধ্যার সব ভেঙে চুড়ে তছনছ করে ফেলছে। আরাধ্যার বাবা হাজার বাঁধা দিয়েও আটকাতে পারছে না আরাধ্যারকে। আরাধ্যার নিজের শরীরে একের পর এক আঘাত করে যাচ্ছে। মাইশা হাসতে হাসতে বাসায় আসে, বাসার মধ্যে এসে মাইশা থমকে যায়, পরিস্থিতি দেখে, হঠাৎ আরাধ্যার চোখ যায় মাইশার দিকে, আরাধ্যার দাঁত কটমট করে বলে,
~ তুমি এখানে কি করছো? (রেগেমেগে)
~ মিষ্টি নিয়ে এসেছি সিম্মির জন্য, (হেসে হেসে)

~ কিসের মিষ্টি? (অবাক হয়ে)
~ আরে আপনি জানেন না, আপনি তো বাবা হতে চলেছেন। সিম্মি প্রেগন্যান্ট। (হাসিমুখে)

~ What? (অবাক হয়ে)
~ সিম্মি কোথায়? (আশেপাশে তাকিয়ে)

মাইশার কথা শুনে আরাধ্যার বাবা মাইশার সামনে এসে বলে,
~ সিম্মি নেই, ওকে বের করে দেওয়া হয়েছে এই ঘর থেকে। (রেগে)
~ কোন অপরাধে? (অবাক হয়ে)

~ ও একটা কালনাগিনী, প্রোষ্টিটিউট। (চিৎকার করে)
~ মুখ সামলে কথা বলুন! (রেগে)

~ ওর ধার ধারো, আমার সামনে থেকে সরো। (মুখ ফিরিয়ে নিয়ে)
~ আপনি যদি সিম্মির মতো একটা মেয়েকে প্রোষ্টিটিউট বলতে পারেন তাহলে ভালো কে? (আরাধ্যার সামনে গিয়ে)

~ Shut up.. (ধমক দিয়ে)
~ আপনি থামুন, কি করে পারলেন একটা অন্তস্বত্তা মেয়েকে ঘর থেকে বের করে দিতে। আপনাকে সিম্মি অনেক ভালোবাসে কিন্তু আপনি কখনো তা বুঝতে চেষ্টা করেননি। (রেগে)

~ ও আমাকে না অভিকে ভালোবাসে। (মাইশার দিকে তাকিয়ে)
~ বাহ্ বাহ্, কি প্রমাণ আছে আপনার কাছে? (হাত তালি দিয়ে )
আরাধ্যার সব কিছু মাইশা কে বলে। কথাগুলো মাইশা আরাধ্যারকে বলে,

~ এতে প্রমাণ হয়না যে সিম্মি অভিকে ভালোবাসে। আপনার মনে কি প্রশ্ন আসে না, যে এতো হাই সিকিউরিটি ডিঙিয়ে সিম্মি কীভাবে? সিম্মিকে ফাঁসানো হয়েছে, আর ফাঁসিয়েছে আপনার পিএ আর অভি। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

~ সিম্মি আমাকে সব বলেছে, সেদিন শপিং মলে অভির সাথে যখন দেখা হয় তখন অভি সিম্মিকে হুমকি দেয়, (নিচের দিকে তাকিয়ে)
~ কি হুমকি? (অবাক হয়ে)

~ যে অভি এমন ফাঁদ পাতবে, যে ফাঁদে পা দিয়ে আপনি সিম্মিকে ভুল বুঝে তাড়িয়ে দেবেন আর অভি সিম্মিকে জোর করে নিজের করে নেবে। অভি তো জিতে গেলো আর আপনি হেরে গেলেন। (তাচ্ছিল্যের সুরে )
~ Stop. (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ আরাধ্যার এর নাম ভালোবাসা নয়, আপনি একটি বার ও সিম্মির কাছে সত্যি টা জানতে চাইলেন না? (ছলছল করে)

~, (চুপ হয়ে যায়)
~ অনেক বড় ভুল করেছেন আপনি? সিম্মি একরাশ অভিমান নিয়ে চলে গেছে। আর আপনি একবারও আটকালেন না। (অবাক হয়ে)
~, ( চুপচাপ)

~ আপনার শত অমানুষিক নির্যাতন সহ্য করেও আপনার কাছে থেকেছে শুধুমাত্র আপনে আঁকড়ে ধরে বাঁচার জন্য। আর আপনি, (কেঁদে কেঁদে)
~, (মুখ ফিরিয়ে নিয়ে)
~ আপনি ঠিক করেননি সিম্মির সাথে, পারলে সত্য টা বের করুন। (চোখ মুছে)

মাইশা কথাগুলো বলে কাঁদতে কাঁদতে বের হয়ে যায়। আরাধ্যার তার বাবার কাছে গিয়ে বলে,
~ বাবা আমার কোথাও ভুল হয়েছে? (মন খারাপ করে)
~ মাইশা যা বললো, (চিন্তিত হয়ে)

~ হ্যাঁ বাবা, আমার সত্য টা বের করতে হবে। (হাত মুঠো করে)
সিম্মি বিছানার চাদর আর একটা শাড়ি একসাথে পেচিয়ে বেলকনির গ্রিলের সাথে ভালো করে বাঁধে তারপর চারপাশে ভালো করে দেখে নেয়, তারপর মনে মনে বলে,
~ হে খোদা তুমি আমায় রক্ষা করো, আমার কথা না হয় নাই ভাবলে কিন্তু আমার গর্ভের সন্তানের জন্য আমায় সুস্থ রাখো খোদা।

সিম্মি গাঁট ধরে নিচের দিকে পা বাড়িয়ে মনে মনে বলে,
~ বিসমিল্লাহির রহমানির রহিম।
বলে সিম্মি নেমে যায়। সিম্মি একসাথে নেমে যায় নিচে। সিম্মি বুকে হাত রেখে বলে,

~ ধন্যবাদ খোদা। এখন তাড়াতাড়ি করে যেতে হবে এখান থেকে,
সিম্মি সব সিকিউরিটি ফাঁকি দিয়ে মেইন গেইট দিয়ে বের হয় তারপর দৌড়ে রাস্তায় চলে আসে তারপর,


পর্ব ৪৩

সিম্মি দৌড়ে রাস্তায় চলে আসে। আর তখনি একটা গাড়ি ফুল স্পীডে চলে আসে, সিম্মি তৎক্ষনাৎ সরে যায় সেখান থেকে। সিম্মি দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে চোখ বন্ধ করে বলে,
~ অনেক হয়েছে আর না। চলে যাবো সবার থেকে দূরে যেখানে কষ্ট দেওয়ার মতো কেউ থাকবে না। শুধু আমি আর আমার সন্তান থাকবো। এখনই এখান থেকে যেতে হবে ওরা খবর পাওয়ার আগে, (চোখের পানি মুছে)

সিম্মি শাড়ির আঁচল দিয়ে ঘোমটা দিয়ে দ্রুত হাটা শুরু করে। অন্যদিকে আরাধ্যার অফিসে পৌঁছে দ্রুত সাবিহার কেবিনে যায়। কেবিনে গিয়ে টেবিল, ড্রয়ার থেকে শুরু করে সব তন্নতন্ন করে খোঁজা শুরু করে। আরাধ্যার সাবিহার ড্রয়ারে অফিসের সব থেকে গুরুত্বপূর্ণ ডকুমেন্টসের কপি পায় আরও কিছু কাগজপত্র পায়। আরাধ্যার রেহানকে কল করে আসতে বলে, কিছুক্ষনের মধ্যে রেহান চলে আসে,
~ জি বস, বলুন, (মাথা নিচু করে)

~ সাবিহা কোথায়? (রেগে)
~ বস তা তো জানি না, (ভয়ে ভয়ে)

~ ওকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আয় যত দ্রুত সম্ভব, (টেবিলে ঘুষি মেরে)
~ কিন্তু স্যার, তার বাসার ঠিকানা তো আমি জানি না, (ঢোক গিলে)

~ আমি ওকে কল করছি, লোকেশন ট্র্যাকিং কর, (রেহানের দিকে তাকিয়ে)
~ জি বস, (মাথা নেড়ে)

রেহান কম্পিউটার নিয়ে বসে। গুগল ম্যাপে সাবিহার কন্ট্যাক নাম্বার দিয়ে লোকেশন ট্রেস করে। আরাধ্যার একের পর এক কল দিয়ে যাচ্ছে সাবিহাকে কিন্তু সাবিহা ফোন রিসিভ করছে না। আরাধ্যার রাগ চরম মাত্রায় পৌঁছে গেছে। রেহান আরাধ্যারকে বলে,

~ বস লোকেশন ট্রেস করে নিয়েছি। (হালকা হেসে)
~ Very good. (বাঁকা হাসি দিয়ে)

নির্জন রাস্তায় সিম্মি একা একা হাটছে। মনে একরাশ কষ্ট। কিছু স্মৃতি ক্ষনিকের জন্য মধুময় হয় কিন্তু সময় ফুরিয়ে গেলে তা অতিশয় বিষাদময় লাগে। সিম্মির মন তাকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে, আরাধ্যার সাথে কাটানো সময় গুলো, সিম্মি নিজেকে শান্ত করতে চেয়েও পারছে না। সামনে তার অচেনা গন্তব্য। কি করবে? কোথায় যাবে? কার কাছে যাবে? কিছুই তার জানা নেই।
সিম্মি কাঁদছে আর মনে মনে ভাবছে,

~ এখন যদি বাসায় যাই তাহলে সবাই বাবা, মাকে কথা শোনাবে। তারাও আমাকে বোঝা মনে করবে। তাছাড়া তিতলিও তো বড় হয়ে গেছে, আমার জন্য ওর সুন্দর ভবিষ্যৎ নষ্ট হয়ে যাক তা আমি চাই না। কিন্তু কোথায় যাবো আমি? (চারদিকে তাকিয়ে)
তখনই সিম্মির মনে পড়ে যায় একজনের কথা। যে কখনো সিম্মিকে ফিরিয়ে দেবে না। সিম্মি সেই গন্তব্যে পা বাড়ায়।

আরাধ্যার কেনো যেনো মনে হচ্ছে, আজ সে খুব একা। নিজেকে বড় অসহায় মনে হচ্ছে। অনেক কথা ঘুরপাক খাচ্ছে মনে। কোনটা সত্য আর কোনটা মিথ্যা? সিম্মিকে নিয়ে অনেক চিন্তা হচ্ছে আরাধ্যার। আরাধ্যার ফোন হাতে নিয়ে কল করে সিম্মির বাসায়, সিম্মির মা ফোন রিসিভ করে,
~ আসসালামু আলাইকুম মা। (নিস্তেজ কন্ঠে)

~ ওয়ালাইকুম আসসালাম বাবা, কেমন আছো তোমরা? (হাসিমুখে)
~ ভালো। সিম্মি কি আপনাদের বাসায়? (শান্ত গলায়)

~ মানে? আমাদের বাসায় আসার কথা ছিলো ওর? (অবাক হয়ে)
~ মা একটা ঝামেলা হয়ে গেছে, (কাতর কন্ঠে)
~ কি ঝামেলা হয়েছে বাবা? দয়া করে বলো, (অবাক হয়ে)

আরাধ্যার দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সিম্মির মাকে সব খুলে বলে, সিম্মির মা নিজেকে সামলাতে পারে না, সে বসে পড়ে সোফায়,
~ কি কি বলছো এসব? সিম্মি এসব করতে পারে না। (শকড হয়ে )

~ আমি বুঝতে পারছি না কোনটা সত্য কোনটা মিথ্যা! (বিমূর্ত কন্ঠে)
~ সিম্মি কোথায় এখন? (কাঁদতে কাঁদতে)
~ জানি না, (মাথা নেড়ে)

~ ও এই অবস্থায় না জানি কোথায় আছে? (কেঁদে কেঁদে)
~ আমি ওকে খুঁজে বের করবো, (চোখ মুছে)

~ বাবা আমার মেয়ে অনেক অভিমানী, ওর মাথায় জেদ চাপলে, ও সেটা করেই ছাড়ে। (কেঁদে কেঁদে)
~ ভুল আমার হুম, ভুল যখন করেছি তার সমাধান ও আমি করবো। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
~ বাবা ওর কিছু হওয়ার আগে আমার মেয়েটাকে খুঁজে বের করো। (বিনীত সুরে)
~ হুম মা। টুট টুট টুট

আরাধ্যার আজ কাঁদছে, হুম আজ প্রথম সে কাঁদছে, সিম্মির জন্য। আরাধ্যার তার অশ্রুসিক্ত চোখ দুই আঙুল দিয়ে চেপে ধরে বলে,
~ অনেক বড় ভুল করে ফেলেছি আমি যার কোনো ক্ষমা নেই। তোমার অভিমান ঠিক আছে সিম্মি কিন্তু আমার থেকে দূরে সরে যেও না প্লিজ।
আরাধ্যার ফোন বের করে তার স্পেশাল গার্ডকে কল করে,
~ হ্যালো স্যার, (বিনয়ী সুরে)

~ আমি তোমার ফোনে সিম্মির ফোটো সেন্ড করছি, পুরো শহরে গার্ডদের টহল দিতে বলো, যেভাবে হোক সিম্মিকে আমার সামনে নিয়ে আসবে অক্ষত অবস্থায়। আর ওকে যদি আনতে অক্ষম হও তোদের সবার লাশ আমি কুকুর দিয়ে খাওয়াবো। (ধমক দিয়ে)

~ জি স্যার, আমি এখনই সবাইকে বলছি। (ভয়ে ভয়ে)
~ টুট টুট টুট।

সিম্মির পা ভারি হয়ে আসছে তবুও হার মানছে না তাকে এ শহর ছেড়ে বের হতে হবে তার অনাগত সন্তানের জন্য। সিম্মি অনেক ক্লান্ত। তার খেয়াল নেই তার পেছনে গাড়ি। বারবার হর্ণ বাজানোর পরও সিম্মি শুনতে পায় না। গাড়ি ব্রেক করে একটা ছেলে রাগান্বিত হয়ে বের খুব জোরে সিম্মির হাত ধরে সিম্মিকে নিজের দিকে ঘুরিয়ে নেয়। সিম্মি আচমকা এভাবে এমন হওয়াতে চমকে যায়। ছেলেটা রাগী দৃষ্টিতে সিম্মির দিকে তাকালেও নিমিষেই সব রাগ পানি হয়ে যায়, ছেলেটি নায়াকে বলে,

~ সিম্মি তুমি? (অবাক হয়ে)
সিম্মি ছেলেটির দিকে তাকিয়ে অবাক হয়ে যায়,

~ তুমি এখানে! (অবাক হয়ে)
~ আমারও একই প্রশ্ন? তুমি এখানে কি করছো তাও রাস্তায় মাঝখানে এতটা কেয়ারলেস হলে চলে, ভাগ্যেস, আমি ছিলাম, অন্য কেউ হলে তো ডিরেক্ট গাড়ি চালিয়ে যেতো। কত বার হর্ণ বাজালাম তুমি তো কানেই তুললে না। (রেগে)

~ আসলে, খেয়াল করিনি। (মাথায় হাত দিয়ে)
~ হ্যাঁ, তুমি একটুও বদলাওনি। কোথায় যাচ্ছো? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ এইতো, (সামনে ইশারা করে)

~ চলো আমি পৌঁছে দেই। (হেসে)
~ না না আমি যেতে পারবো। (মাথা নেড়ে )
~ চুপ করে গাড়িতে ওঠো, (রেগেমেগে)

সিম্মির শরীর বেশ খারাপ লাগছে তাই সিম্মিও বেশি না করেনি। সিম্মি গাড়িতে উঠে বসে। ছেলেটিও গাড়িতে উঠে বসে। গাড়ি স্টার্ট দেয়। সিম্মি চুপচাপ বসে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে, যেনো ভয়ংকর বিপদ থেকে হয়তো বের হয়ে আসতে পেরেছে সে।

অভির মাথায় খুব ব্যাথা অনুভব হচ্ছে। অভি ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায়। অভির মনে হয় চারদিক ঝাপসা হয়ে আসছে। অভি মাথায় হাত দিয়ে আস্তে আস্তে উঠে দাড়িয়ে সিম্মিকে ডাকে, কিন্তু পুরো রুমে কোথাও সিম্মিকে দেখতে পায় না। অভি বেলকনিতে গিয়ে দেখে বিছানার বেডশিট গ্রিলের সাথে বাঁধা।

অভির বুঝতে বাকি নেই যে, সিম্মি পালিয়ে গেছে। অভি রুম থেকে বের হয়ে আসে চারদিকে তাকায়।
রেহান লোকেশন অনুযায়ী পৌঁছে যায়। আরাধ্যার আরও কয়েকবার সাবিহাকে কল করে। শেষমেশ অতিষ্ঠ হয়ে সাবিহা কল রিসিভ করে,
~ জি বলুন, (বিরক্ত হয়ে)

~ কোথায় আছো? (শান্ত গলায়)
~ আছি বাসায়, কেনো? (বিরক্তিকর সুরে)
~ আসলে তোমাকে একটা জিনিস দেওয়ার ছিলো, (হেসে)

~ কি সেটা? (ভাব নিয়ে)
~ আসলেই দেখতে পাবে!
(রহস্যময় ভাবে)
~ আমি আসতে পারবো না। (বিরক্ত হয়ে)

~ সেটা একান্ত তোমার ব্যাপার, তবে অনেক বড় একটা মিস করে ফেলবে। (শ্বাস নিয়ে)
~ এতো ভণিতা না করে বললেই পারেন, কি সেই জিনিস, (রেগে)
~ তোমার হাতে দিয়ে তারপর বলবো। (হেসে)

~ কি হতে পারে? নাকি এটা আরাধ্যার কোনো চাল এটা! (মনে মনে)
~ না আসলে তোমার ক্ষতি হবে, আমার কিচ্ছু হবে না (ভাব নিয়ে)
~ কোথায় আসতে হবে (রেগে)

~ তুমি বলো, (হেসে)
~ আমি ঠিকানা মেসেজ করে দিচ্ছি। (বিরক্ত হয়ে)
~ ওকে। (মাথা নেড়ে)
আরাধ্যার বাঁকা হাসি দিয়ে বলে,

~ সব কিছুর মূল সাবিহা, এবার ওকে খুব ভালো করে টাইড দিতে হবে তারপর অভি
~ বস, সাবিহা খুব চালাক! মনে হয় না সে একা আসবে?
~ আমার হাত থেকে ওকে কেউ বাঁচাতে পারবে না।

সাবিহা গাড়িতে উঠে তাড়াতাড়ি বের হয়ে যায়। ঠিকানা অনুযায়ী আরাধ্যার আগেই পৌঁছে যায় সেখানে। কিছুক্ষণের মধ্যে সাবিহা চলে আসে। সাবিহা গাড়ি থেকে নেমে সামনে তাকিয়ে দেখে আরাধ্যার গাড়ির সামনে হেলান দিয়ে পকেটে হাত রেখে দাঁড়িয়ে আছে, সাবিহা দ্রুত হেটে আরাধ্যার কাছে যায় আর বলে,
~ তাড়াতাড়ি বলুন, (বিরক্ত হয়ে)

~ আরে এতো তাড়া কিসের? (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ আমার কাজ আছে, ( মুখ ফিরিয়ে)

~ কাজ তো এবার আমি করবো, (রেগে)
~ মানে? (অবাক হয়ে)
~ চারদিকে তাকিয়ে দেখো, (ইশারা করে)

সাবিহা চারদিকে তাকিয়ে দেখে, সাবিহাকে আরাধ্যার গার্ডরা ঘিরে ধরেছে। সাবিহা অবাক হয়ে আরাধ্যার দিকে তাকায়, আরাধ্যার এসে সাবিহার মুখ চেপে ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে আসে। সাবিহার ড্রাইভার এটা দেখে গাড়ি ঘুরিয়ে বাসার দিকে নিয়ে যায়।

অভি জোরে চিৎকার দেয়। সাথে সাথে বাড়ির সব সিকিউরিটি গার্ডরা চলে আসে, অভির জোরে চিৎকার দিয়ে বলে,
~ বাড়িতে এতো গুলো গার্ড থাকতে সিম্মি পালালো কি করে? আমিরা কোথায় গেছে? এখুনি খুঁজে বের কর সিম্মিকে!
ড্রাইভার দৌড়ে আসে অভির কাছে, হাঁপাতে হাঁপাতে বলে,

~ স্যার আমিরা ম্যামকে কিডন্যাপ করেছে, (হাঁপাতে হাঁপাতে)
অভি ড্রাইভারের কলার চেপে ধরে বলে,

~ কে করেছে? (রেগেমেগে)
~ তাকে আমি চিনি না তবে অনেক মানুষ ছিলো তার সঙ্গে, (ভয়ে ভয়ে)
~ আরাধ্যারররররররর। (চিৎকার দিয়ে)

মাইশার সোফার উপর বসে বসে কাঁদছে, সাহিল মাইশাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে, তখনই মাইশার বাসার কলিং বেল বেজে ওঠে। সাহিল মাইশাকে বসতে বলে দরজা খুলতে চলে যায়। সাহিল দরজা খুলে দেখে, সিম্মি দাঁড়িয়ে আছে। সাহিল মাইশাকে ডেকে বলে,

~ মাইশা, সিম্মি (মাইশার দিকে তাকিয়ে)
সিম্মি নামটা শুনেই মাইশা দৌড়ে আসে। মাইশা আসতেই সিম্মি জড়িয়ে ধরে হাউমাউ করে কান্না জুড়ে দেয় সাথে মাইশাও। পাশে থেকেই ছেলেটা মাইশার মাথায় টোকা মেরে বলে,
~ Hello miss, (হেসে)

মাইশা অবাক হয়ে বলে,
~ তিলাত তুমি! (অবাক হয়ে)

~ হুম আমি, বাহিরে দাঁড় করিয়ে রাখবে? (বিরক্ত হয়ে)
~ ভেতরে এসো, সিম্মি আয়, (সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে)
মাইশা সিম্মিকে নিয়ে ভেতরে আসে, মাইশাকে সিম্মির গালে হাত রেখে বলে,

~ কোথায় না খুঁজেছি তোকে? (কেঁদে কেঁদে)
~ মাইশা প্লিজ আমাকে একটু তোর কাছে থাকতে দিবি? (অনুরোধের সুরে)

~ এই কি বলছিস এসব, একটু মানে তুই চাইলে আমার কাছে সারাজীবন থাকতে পারিস। তুই আমার বান্ধবী না বোন বুঝলি। (জড়িয়ে ধরে)
~ আমি তোর কাছে সেটা যেনো পৃথিবীর কেউ না জানে! (চোখ মুছে)
~ কেউ জানবে না। (গালে হাত রেখে)

সাহিল পাশ থেকে বলে ওঠে,
~ আরাধ্যার? (অবাক হয়ে)
সিম্মি চোখ মুছে বলে,

~ না কেউ জানবে না। আমি চাই না কাউকে, যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসাও নেই। আমি আর কখনো আরাধ্যার কাছে ফিরে যাবো না। (কেঁদে কেঁদে)
তিলাত অবাক হয়ে সিম্মির দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করে,

~ আরাধ্যার কে? (অবাক হয়ে)
মাইশা তিলাতকে চোখ টিপ মেরে থামতে বলে, সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ সিম্মি ভেতরে চল, (হাত ধরে)
সিম্মি মাইশার সাথে ভেতরে চলে যায়। মাইশা সিম্মির মাথায় হাত রেখে বলে,

~ সব ভুলে যা, আমি সব জানি কি হয়েছে, তোকে শক্ত হতে হবে তোর সন্তানের জন্য, (সিম্মির কাঁধে হাত রেখে)
~ হুম, (মাথা নেড়ে)
~ তাহলে এখন ফ্রেশ হবি চল, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ ভালো লাগছে না, (মাথা নেড়ে)
~ একদম চুপ, তোর বাবুর জন্য তোকে সব টাইম টু টাইম করতে হবে। (কড়া কন্ঠে)

~ হুম যাচ্ছি। (মাথা নেড়ে)
~ সাবধানে কেমন, ( হেসে)
~ হুম। (ইশারা করে)

মাইশা একটা থ্রিপিছ সিম্মির হাতে দেয়। সিম্মি ওয়াশরুমে চলে যায়। মাইশা সেই ফাঁকে তিলাতের কাছে যায়। তিলাত মাইশাকে দেখে বলে,
~ কি হচ্ছে? কিচ্ছু বুঝতে পারছি না? (মাথায় হাত দিয়ে)
~ আমি তোমায় সব খুলে বলছি, (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

মাইশা শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সব খুলে বলে তিলাতে। তিলাত সবটা শুনে অবাক হয়ে মাইশাকে,
~ এত কিছু হয়ে গেলো? (অবাক হয়ে)
~ হুম, (মাথা নেড়ে)

~ শেষমেশ আমার বিউটিকুইনের বিয়ে হয়ে গেলো, যাই হোক বাবা না হতে পেরেছি মামা তো হতে পারবো। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
~ এই সিচুয়েশনে কেউ ফাইজলামি করে তিলাত। (রেগে)

~ কিছু একটা করতে হবে (মনে মনে)
মাইশা আর সাহিল ভাবছে সিম্মির কথা কিন্তু তিলাত ভাবছে অন্য কথা।


পর্ব ৪৪

আরাধ্যার হকি স্টিক হাতে নিয়ে আমিরার চার পাশে ঘুরছে। আমিরাকে একটা অন্ধকার রুমে পরাখা হয়েছে। চেয়ারের সাথে খুব ভালো করে বাঁধা হয়েছে দুই হাত চেয়ারের হাতলের সাথে আর দুই পা চেয়ারের সাথে বাঁধা। মুখ রুমাল দিয়ে বাধা।

আরাধ্যার আমিরার পায়ে হকি স্টিক দিয়ে জোরে আঘাত করে, আমিরা চিৎকার করতে চেয়েও পারে না কারণ মুখ বাধা, আরাধ্যার আমিরার গাল চেপে ধরে বলে,
~ বল তুই কে? (গাল চেপে ধরে)

~, (চুপ করে তাকে)
~ না বললে তোকে চিরবিদায় করে দেবো, (গলা চেপে ধরে)

আরাধ্যার আমিরার মুখের রুমাল খুলে দেয়, আমিরা আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে ভয়ে কেঁপে ওঠে, আরাধ্যার আমিরার চুলের মুঠি ধরে বলে,
~ বলবি নাকি, (কষে থাপ্পড় দিয়ে)
~ বলছি, (কেঁদে কেঁদে)

~ কে তুই? (আমিরার সামনে দাড়িয়ে)
~ আমিরা চৌধুরী, (কেঁপে কেঁপে)

~ তুই কি অভির বোন? (রেগে)
~ হ্যাঁ আমি অভির বোন, (মাথা নেড়ে)

~ তুই কেনো এসেছিস আমার অফিসে চাকরি করতে? (চুলের মুঠি ধরে)
~ আয়ায়ায়ায়ায়ায়ায়া, (ব্যাথায় কুকিয়ে ওঠে)
~ বল? (ধমক দিয়ে)

~ আ আ আমি চেয়েছিলাম আপনার অফিসের সব সিক্রেট ডকুমেন্টস গুলো জেনে তারপর আপনার ব্যবসায় ক্ষতি করা আর সিম্মির উপর সব দোষ চাপিয়ে আপনার থেকে দূরে সরিয়ে ভাইয়ের সাথে বিয়ে দিতে চেয়েছিলাম। (কেঁপে কেঁপে ওঠে)
~ ঐ ফাইল তুই দিয়েছিলি সিম্মিকে? (রেগে)

~ আমি বলেছিলাম সিম্মিকে, যে ঐ ফাইল লুকিয়ে রাখতে, (ভয়ে ভয়ে)
~ সিম্মির মা কি করে জানে এসব কথা? (রেগে)

~ ভাইয়া কিছু ফোটো ইডিট করে সিম্মির মাকে দেখিয়েছিলো, (কেঁপে কেঁপে)
~ তরিক কে? (গলা চেপে ধরে)

~ ওকে আপনার বাড়ির আশেপাশে পাহারা দেওয়ার জন্য রাখা হয়। আর সেদিন ইচ্ছে করেই ও ধরা দেয় আপনাকে, সিম্মি তরিককে চেনে না। (কাশি দিয়ে)
~ কতো সুন্দর করে তোরা প্ল্যানিং করেছিস আর আমিও কি না তোদের ফাঁদে পা দিয়ে সিম্মিকে অপমান করে ঘর থেকে বের করে দিয়েছি। সিম্মি এখন কোথায়? (আমিরার থেকে দূরে সরে গিয়ে)

~ জানি না, (মাথা নেড়ে)
আরাধ্যার হকি স্টিক হাতে নিয়ে আমিরার হাতে আর পায়ে আঘাত করতে থাকে। আমিরা ব্যাথায় চিৎকার করে বলে,
~ জানি জানি, (কুকিয়ে ওঠে)

~ বল সিম্মি কোথায়? (দাঁতে দাঁত চেপে)
~ সিম্মি আমাদের বাসায়, (কেঁদে কেঁদে )

~ সিম্মি তোদের বাসায় কীভাবে গেলো? (অবাক হয়ে)
~ ও বাসা থেকে বের হওয়ার পরই ওকে কিডন্যাপ করে নিয়ে আসি আমি কারন জানতাম আপনি সিম্মিকে বাসা থেকে বের করে দেবেন, (ঢোক গিলে)

আরাধ্যার পকেট থেকে ফোন বের রেহানকে কল দেয়, রেহান রুমের বাহিরেই ছিলো, রেহান ভিতরে চলে আসে, আরাধ্যার রেহানের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ অভির বাসায় যা এখনই, সিম্মি সেখানে আছে। (রেগেমেগে)
~ জি বস এখনই যাচ্ছি, (তাড়াতাড়ি করে)

আরাধ্যার আমিরার দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,
~ তোকে তো আমি পরে দেখে নেবো, (কটমট করে )

আরাধ্যার হনহনিয়ে বের হয় সেখান থেকে। আরাধ্যার রুম থেকে বের হয় তখনই আরাধ্যার ফোনে একজন কল করে, আরাধ্যার না দেখেই ফোন রিসিভ করে,
~ Hello bro, How are you? (হেসে)

~ আরে তুই, ভালো না। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
~ কেনো ভালো না সেটা কিন্তু আমি জানি, (হালকা হেসে)

~ কীভাবে, (অবাক হয়ে)
~ সেটা অন্য এক সময় বলবো, তবে মেইন কথাটা তোমায় আগে জানানো দরকার, (সিরিয়াস কন্ঠে)
~ কি মেইন কথা? (অবাক হয়ে )

~ তুমি সিম্মিকে উফফ সরি সিম্মি ভাবিকে খুঁজছো, am i right? (ভ্রু কুঁচকে)
~ yeah, Where is she? (শান্ত হয়ে)

~ আগে প্রমিস করো, আমার কথা কাউকে বলতে পারবে না, (সিরিয়াস কন্ঠে)
~ ওকে বলবো না, বল সিম্মি কোথায়? (সান্ত্বনা দিয়ে)
~ ভাবি তার বেষ্ট ফ্রেন্ড মাইশার বাসায়, ( হালকা হেসে)

~ মাইশার বাসায়! (অবাক হয়ে)
~ হুম, আর সে খুব রেগে আছে, মনে হয় না এতো সহজে মানাতে পারবে। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
~ তুই কি করে জানলি? (অবাক হয়ে)
~ বললাম তো ব্রো পরে বলবো, (হেসে)

~ আমি যাচ্ছি মাইশার বাসায়, (তারাহুরো করে)
~ নানা, তুমি এখন এসো না, আমি তোমাকে একটা প্ল্যান বলছি তুমি সেই অনুযায়ী কাজ করবে কেমন, (চিৎকার করে)
~ কি প্ল্যান? (থেমে গিয়ে)

আরাধ্যারকে সে সবকিছু বলে ফোন রেখে দেয়। রেহান কল করে আরাধ্যারকে, আরাধ্যার ফোন রিসিভ করে,
~ বস, বাসায় কেউ নেই অভির বাবা আর মা ছাড়া,

~ ওদের উঠিয়ে নিয়ে আয়,
~ জি বস,
আরাধ্যার দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে সিম্মির ফোটো বের করে দেখে। সিম্মি চুপচাপ ছাঁদে বসে আছে। চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে, চুল গুলো হাওয়ায় উড়ছে। সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে বলে,

~ এই ছিলো আমার ভাগ্যে, আমার কি দোষ ছিলো খোদা? কেনো এমন হলো আমার সাথে, (কেঁদে কেঁদে)
তিলাত পাশে এসে বসে পড়ে আর সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ নিয়তির উপর কারো হাত নেই আল্লাহ ছাড়া, সে যা চাইবে তাই হবে, ( সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
সিম্মি তিলাতের দিকে তাকায়, তিলাত হাসিমুখে আকাশের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ দেখো, এ কেমন নিয়তি? আমি তোমাকে ভালোবাসতাম কিন্তু তোমাকে পাইনি, তোমার বিয়ে হলো আরাধ্যার ভাইয়ার সাথে। (হেসে)
~ তুমি আরাধ্যারকে চেনো? (অবাক হয়ে)

~ নাতো, কেনো? (ভ্রু কুঁচকে)
~ মনে হলো, (নিচের দিকে তাকিয়ে)
~ তোমার হাসবেন্ড আমার তো ভাইয়া লাগে তাই না, (হেসে)

~ হুম, (মাথা নেড়ে)
~ তবে, একটা নিউজ শুনে খুব খুশি হয়েছি! (হাসিমুখে)

~ কি খবর? (অবাক হয়ে)
~ এইযে, আমি মামা হবো, (হেসে)
~ ওহ, (মাথা নিচু করে)

~ সিম্মি, (আকাশের দিকে তাকিয়ে)
~ হুম, (অস্ফুট স্বরে)

~ আরাধ্যারকে ভালোবাসো? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ জানি না, (অন্যদিকে তাকিয়ে)

~ কি সিদ্ধান্ত নিলে? (আকাশের দিকে তাকিয়ে)
~ কিসের? (অবাক হয়ে)

~ বিচ্ছেদের, (অন্যদিকে তাকিয়ে)
বিচ্ছেদের কথাটা শুনে সিম্মির মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। বুকের ডান পাশে চিনচিনে ব্যথা অনুভব হচ্ছে, দুচোখ বেয়ে কষ্টের নোনাজল পড়ছে। সিম্মি জমে গেছে কষ্টে। তিলাত সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ দূরে থাকতে চাইছো, তাহলে ডিভোর্স দিয়ে দাও আরাধ্যারকে,। (দৃঢ় কন্ঠে)
~, (নিশ্চুপ)

~ যে সম্পর্ক পরিপূর্ণতা পাবে না সেই সম্পর্ক রেখে কি হবে? (তাচ্ছিল্যের সুরে)
~, ( চোখ মুছে)

~ তোমার সন্তান যখন এই পৃথিবীর আলো দেখবে তখন তাকে কি পরিচয়ে বড় করবে? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~, (কোনো কথা না বলে )

~ তোমার সন্তান যখন তার পিতৃ পরিচয় জানতে চাইবে তখন কি বলবে? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~, ( চুপচাপ)

~ ভালোবাসায় অভিমান, রাগ থাকবে তাই বলে তুমি হুট করে সারাজীবনের সিদ্ধান্ত এক মূহুর্তে নিতে পারো না। (সিম্মির হাতে হাত রেখে)
~, (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

~ তোমাদের রোষানলের শিকার তোমার অনাগত সন্তান কেনো হবে? সে তো কোনো দোষ করেনি, (শ্বাস ছেড়ে)
~, ( চুপচাপ)

~ একটা মেয়ে যখন তার স্বামীর থেকে আলাদা হয়ে যায় তখন এই সমাজ তাকে বিষাক্ত সাপের ন্যায় ঠোকরাতে থাকে, একাকিত্ব আর নিসঙ্গতা তো তাকে গ্রাস করেই সেই সাথে সমাজে কিছু মানুষ রুপি কীট তাকে শান্তিতে থাকতে দিতে চায় না। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~, ( কোন শব্দ করে না)

~ আমি তোমাকে আরাধ্যারে ভাইয়ার কাছে যেতেও বলবো না আর তার থেকে দূরেও যেতে বলবো না, কিন্তু তোমাকে সব দিক ভেবে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
কথাগুলো বলে তিলাত উঠে চলে যায়। সিম্মি চুপচাপ, নির্বাক হয়ে বসে আছে। কি হবে এই সম্পর্কের শেষ পরিণতি। এতই কি ঠুনকো এই সম্পর্ক?


পর্ব ৪৫

সিম্মি আকাশের দিকে তাকিয়ে আছে, আকাশটা কতো বিশাল, রাতের পরে দিন আসে, দিনের পরে রাত। আচ্ছা, আকাশের মনেও কি কষ্ট আছে?

আকাশের উপর যখন বর্ষার বিচরণ হয় তখন এক পশলা বৃষ্টি নেমে যায় সেটাই কি তার কষ্টের বর্হিপ্রকাশ? আবার যখন সোনালী রোদ ওঠে তখন কি তার প্রশান্তি? সিম্মি তার পেটে হাত রেখে বলে,
~ তুই বল, আমি কি করবো? যেখানে বিশ্বাস নেই সেখানে ভালোবাসা কি করে থাকে? আরাধ্যার সব অত্যাচার আমি মেনে নিয়েছিলাম ভালোবেসে।

আরাধ্যারকে যখনই ভালোবাসতে শুরু করি তখনই সে জাগ্রত ভালোবাসাকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়, তারপরও আমি আরাধ্যারকে ভালোবেসেছি। (কেঁদে কেঁদে)
সিম্মি চোখের পানি মুছে আবারও বলে,

~ পরিস্থিতি আমাকে ফাঁদে ফেলেছে, আরাধ্যার কি করে ভাবলো যে, আমি তাকে ঠকানোর জন্য অভির সাথে হাত মিলিয়েছি! আপনাকে তো আমি ভালোবাসি আর ভালোবাসার মানুষকে কেউ ঠকাতে পারে না। আজ আপনাকে আমার সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন কিন্তু আপনি পাশে নেই।

না, আমি আপনার কাছে যাবো না আপনি যদি আমাকে ভালোবেসে থাকেন তাহলে আপনি আমার কাছে আসবেন। আপনাকে উপযুক্ত শিক্ষা আমি দিয়ে ছাড়বো। সব কষ্ট সহ্য করা যায় কিন্তু ভালোবাসার কষ্ট সহ্য করা যায় না। আপনাকে এর শাস্তি পেতেই হবে। (দৃঢ় কন্ঠে)
সিম্মি উঠে দাঁড়িয়ে শাড়ির আঁচল দিয়ে চোখ মুছে, দৌড়ে রুমে চলে যায়। সিম্মি যাবার পর তিলাত আড়াল থেকে বের হয়ে বলে,

~ কি আজব পৃথিবীর নিয়ম, কেউ ভালোবাসা পেয়েও দূরে সরিয়ে দেয়, আবার কেউ ভালোবাসা না পেয়ে জোর করে নিজের করার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে আবার অন্য প্রেমিক সেই খেলা দেখছে। বাহ্! তবে যে করেই হোক এর একটা বিহিত করতেই হবে। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)

আরাধ্যার তার বাসার সোফায় বসে আছে নিচের দিকে তাকিয়ে, আরাধ্যার চোখ দুটো রক্তের মতো টকটকে লাল হয়ে গেছে, আরাধ্যার তার হাতে রিভলবার নিয়ে ট্রিগারের দিকে তাকিয়ে আছে, সামনেই অভির বাবা আর মা বসা, তাদের হাত পা বাঁধা। আরাধ্যার তাদের দিকে তাকায়, অভির বাবা আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,

~ দেখো আরাধ্যার অভি এমনটা করবে আমি জানতাম না আর আমিরাও ওকে সাহায্য করবে সেটা ভাবতেও পারিনি। (অনুশোচনা নিয়ে)
অভির মা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ওঠে,

~ সিম্মির মা যদি আমাদের ফোন করে এসব না বলতেন তাহলে আমরা জানতাম না ওরা এসব করছে। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ আমি তোমাকে কথা দিচ্ছি, অভিকে আমরা বিদেশে পাঠিয়ে দিবো আর কখনো তোমাদের মধ্যে আসতে দিবো না। (অনুরোধ করে)
~ হ্যাঁ আরাধ্যার, প্লিজ বাবা আমিরা আর অভিকে ছেড়ে দাও, (বিনীত সুরে)

আরাধ্যার তাদের থেকে চোখ নামিয়ে নেয়। আরাধ্যার রাগ চরম মাত্রায় বেড়ে গেছে, আরাধ্যার আচমকা রিভলবার বাম হাতের তালুর মধ্যে চেপে ধরে ট্রিগার চেপে ধরে আর সাথে সাথে শুট হয়ে যায়। রেহান আরাধ্যার পাশেই দাঁড়িয়ে ছিলো, রেহান দৌড়ে এসে আরাধ্যার হাত ধরে, বলে,

~ বস, এ আপনি কি করলেন? বস আপনার হাতের ড্রেসিং করতে হবে চলুন, (হাত ধরে)
আরাধ্যার এক ঝটকায় হাত সরিয়ে নিয়ে, রেহানের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ এর থেকেও বেশি রক্তক্ষরণ হয়েছে সিম্মির মনে, আমি ওকে এতটা কষ্ট দিয়েছি যার কোনো ক্ষমা হয় না। আমার জান সবচেয়ে খুশির সংবাদ টা তার নিজের মুখে বলতে পারেনি শুধু মাত্র ওদের জন্য, আজ আমার জান আমার থেকে দূরে শুধু ওদের জন্য, ওদের কাউকে আমি ছাড়বো না। (দাঁতে দাঁত চেপে)
~ বস, আপনাকে আগে সুস্থ থাকতে হবে না হয় কিভাবে প্রতিশোধ নিবেন? প্লিজ বস, (অনুরোধ করে)

আরাধ্যার চুপচাপ বসে পড়ে সোফায়, রেহান দৌড়ে গিয়ে ফার্স্ট এইড বক্স নিয়ে আসে। রেহান আরাধ্যার হাতে ব্যান্ডেজ করে দেয়। আরাধ্যার সেদিকে কোনো খেয়াল নেই, আরাধ্যার ভাবছে সিম্মির কথা।
সিম্মি বালিশে মুখ গুজে কাঁদছে। বেহায়া মন যে কিছুতেই আরাধ্যারকে ভুলতে পারছে না। সিম্মির মনে হয়, একটি বার যদি আরাধ্যার বুকে মাথা রাখতে পারতো তাহলে সে স্বস্তির ঘুম ঘুমাতে পারতো। সিম্মি পেটে হাত রেখে বলে,
~ আরাধ্যার খুব ভালোবেসে ফেলেছি আপনাকে।

সিম্মির মাথায় কেমন জানি চক্কর দেয়। সিম্মির চোখের সামনে সব ঝাপসা হয়ে আসে। সিম্মির গলা ধরে আসছে, শ্বাস প্রশ্বাস নিতে খুব কষ্ট হচ্ছে। মনে হয়, এই বুঝি দম বন্ধ হয়ে যাবে। সিম্মির পেটে হাত রেখে বলে,
~ আমার এমন লাগছে কেনো? না, আমাকে ভালো থাকতে হবে, আমার সন্তানের জন্য আমাকে ভালো থাকতে হবে।

সিম্মি শরীরের শক্তি সন্ঞ্চয় করে জোরে চিৎকার দেয় মাইশার নাম ধরে, মাইশা তিলাত ড্রইং রুমে বসে কথা বলছিলো। সিম্মির চিৎকার শুনে দুজনেই দৌড়ে রুমে আসে। এসে দেখে সিম্মি অজ্ঞান হয়ে গেছে। মাইশা সিম্মির হাতের পালস রেট চেক করে, তিলাত সিম্মির হাত ধরে বলে,

~ ওকে এখনই হাসপাতালে নিতে হবে।
~ ঠিক বলেছো,

তিলাত তাড়াতাড়ি করে সিম্মিকে কোলে তুলে নেয়। তারপর মাইশা আর তিলাত একসাথে হাসপাতালে নিয়ে যায় সিম্মিকে। হাসপাতালে এনে সিম্মিকে এডিমট করানো হয়, ডাক্তার সিম্মিকে চেকাপ করে,
~ পেসেন্ট কি প্রেগনেন্ট? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
মাইশা ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ জি, (মাথা নেড়ে)

ডাক্তার চরমভাবে বিরক্ত হয়ে বলে,
~ এই অবস্থায় তাকে এতো প্রেশার দেয়া ঠিক হয়নি, Mentally depression এর জন্য তার এই অবস্থা। পেসেন্ট অতিরিক্ত দূর্বল, তার উপর প্রেগনেন্ট। (রেগে )
~ আসলে, (মাথা নেড়ে)

~ পেসেন্টের হাসবেন্ড কে? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
তিলাত থতমত খেয়ে মাইশার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আমি পেসেন্টের ভাই আর এই হচ্ছে বোন, আসলে দুলাভাই দেশের বাহিরে থাকেন তো তাই আসতে পারেননি। (থতমত খেয়ে)

~ এখন পেসেন্টের বিশেষ দেখভাল দরকার। এখন থেকে যদি স্টেপ না নেওয়া হয় তাহলে সন্তান ভূমিষ্টের সময় মা এবং সন্তানের জীবন হারানোর ঝুঁকি অনেক বেড়ে যাবে। (দুজনের দিকে তাকিয়ে)
~ হ্যা আমরা সবরকম খেয়াল রাখবো। (মাথা নেড়ে)

~ আপাতত ঘুমের জন্য ইনজেকশন পুশ করেছি, এখন আর কেউ বিরক্ত করবেন না তাকে, (দুজনের দিকে তাকিয়ে)
~ জি, (মাথা নেড়ে)
ডাক্তার বের হয়ে যায় সাথে সাথে তিলাত আর মাইশাও। মাইশা তিলাতের দিকে তাকিয়ে অস্ফুট স্বরে বলে,
~ সিম্মির কি হবে?

~ আমিও তাই ভাবছি,
মাইশা আর তিলাত দুজনেই ভারি টেনশনে পড়ে যায়।


পর্ব (বোনাস পার্ট)

সিম্মি হসপিটালের বেডে শুয়ে আছে। সিম্মির চোখ তলিয়ে গেছে ঘুমের দেশে। সিম্মি দেখতে পায় তার সামনে একটি ফুটফুটে বাবু দোলনার মধ্যে শুয়ে খেলছে। সিম্মি দৌড়ে যায় বাচ্চাটার কাছে। বাবু টা সিম্মিকে দেখে একটা হাসি দেয়। হাসিটা দেখে সিম্মির প্রাণ জুড়িয়ে যায়। চোখের কোণে বিন্দু বিন্দু পানি জমে গেছে। সিম্মি অনেক চেষ্টা করেও চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। চোখের কোণ বেয়ে অশ্রুবিন্দুটি গড়িয়ে পড়লো। কিন্তু এই অশ্রু বিরহের নয় বরং আনন্দের।

সিম্মি চোখের পানি মুছে বাচ্চাটিকে কোলে নেওয়ার জন্য হাত বাড়িয়ে দেয়। তখনই সিম্মির মনে হয় কোনো এক অদৃশ্য শক্তি সিম্মিকে টেনে পেছনে যাচ্ছে। সিম্মি শত চেষ্টা করেও নিজেকে স্থীর রাখতে পারছে না। সিম্মি পেছনে তাকিয়ে দেখে, পেছনে ঘুটঘুটে অন্ধকার। কিচ্ছু দেখা যাচ্ছে না।

সিম্মি চায় না সেই নিষ্পাপ শিশুটিকে রেখে ঘন কালো অন্ধকারে হারিয়ে যেতে। তবুও সেই অদৃশ্য শক্তির আকর্ষণ থামছে না। সিম্মি জোরে চিৎকার দিয়ে ওঠে।
সিম্মির চিৎকার শুনে মাইশা আর তিলাত দৌড়ে চলে আসে সিম্মির কাছে। এসি চলা সত্বেও সিম্মির পুরো শরীর ঘেমে একাকার হয়ে গেছে। সিম্মি খুব জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে। মাইশা সিম্মির মাথায় হাত বুলিয়ে বলে,

~ শান্ত হ সিম্মি, (সান্ত্বনা দিয়ে )
~ সিম্মি তোমার কি হয়েছে? এতো অস্থির লাগছে কেনো তোমাকে? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
সিম্মি হাঁপাতে হাঁপাতে তিলাত আর মাইশার দিকে তাকায় তারপর গলায় হাত রেখে বলে,

~ আমি পানি খাবো,
তিলাত তাড়াতাড়ি পানি নিয়ে আসে, সিম্মি পানির গ্লাস হাতে নিয়ে ঢকঢক করে পানি পান করে। মাইশা তার ওড়না দিয়ে সিম্মির ঘাম মুছে দেয় আর বলে,

~ তুই এতো ঘাবড়ে যাচ্ছিস কেনো? আমরা থাকতে তোর কিছু হবে না। (মার কাঁধে হাত রেখে)
তিলাত সিম্মির সামনে বসে, সিম্মির হাতে হাত রেখে বলে,

~ আমরা তোমার পাশে আছি,
সিম্মি তিলাত আর মাইশার দিকে তাকিয়ে বলে,

~ আমার খুব ভয় করছে, (কাঁপা কাঁপা গলায়)
~ কিসের ভয়? (অবাক হয়ে)
~ জানিনা, (মাথা নেড়ে)

তখনি একজন নার্স আসে, এসে মাইশা আর তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আপনাদের দুজনকে স্যার ডাকছে, এখনই।

~ কিন্তু কেনো?
~ তা জানি না, দেরি করলে স্যার রাগ করবেন।

~ আপনি যান, আমরা আসছি।
~ হুম, তাড়াতাড়ি আসুন।

মাইশা তিলাতের দিকে তাকায়, তিলাত মাইশার দিকে তাকায়। সিম্মি মাথা নিচু করে বসে আছে। মাইশার সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ তুই একটু অপেক্ষা কর, আমরা আসছি

~ আচ্ছা।
তিলাত আর মাইশা একসাথে বের হয়। মাইশা তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ হঠাৎ এতো জরুরি তলব,

~ আমারও একই প্রশ্ন?
~ চলো দেখা যাক, কেনো ডাকলো,
~ হুম চলো,

সিম্মি কেবিনের মধ্যে একা বসে আছে বেডের উপর। মনে কোনো অজানা ভয় হানা দিচ্ছে। তখনই কেউ হনহনিয়ে কেবিনে ঢুকলো। সিম্মি তার দিকে তাকাতেই ভয়ে চুপসে যায় কারণ সে আর কেউ নয় অভি, সিম্মি তোতলাতে তোতলাতে বলে,
~ আপনি এখানে?

~ তুমি কি ভাবলে, এতো সহজে আমার থেকে ছাড়া পেয়ে যাবে?
অভি তার গার্ডদের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ এই ওর হাত পা বেধে ফেল,

গার্ডরা সিম্মিকে ঘিরে ফেলে, সিম্মি জোরে চিৎকার করে, মাইশা আর তিলাত সিম্মির চিৎকার শুনে দৌড় দেয়,
অভি মায়কে কাঁধে করে উঠিয়ে নেয়, সিম্মি হাত নাড়াতে পারে না কারণ সিম্মির হাত আর মুখ বাঁধা। তিলাত দেখে অভি সিম্মিকে তুলে নিয়ে যাচ্ছে। তিলাত জোরে দৌড় দিলেও তার আগেই অভি গাড়িতে ওঠে।

তিলাত তাড়াতাড়ি করে গাড়িতে ওঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। তিলাত অভির গাড়ি ফলো করতে থাকে। তিলাত ফোন বের করে আরাধ্যারকে কল করে, আরাধ্যার ফোন রিসিভ করতেই, তিলাত বলে,
~ ভাইয়া, ভাবিকে অভি তুলে নিয়ে যাচ্ছে,

~ What? ও কি করে জানলো বাসার ঠিকানা?
~ আমরা হাসপাতালে নিয়ে গিয়েছিলাম ভাবিকে, সে বেহুশ হয়ে গিয়েছিলো।
~ অভিকে তো, ও কোথায়,

~ আমি ওকে ফলো করছি, তুমি আমার জিপিএস অন করা তুমি সেটা ট্রেস করো।
~ আমি আসছি এখুনি,

আরাধ্যার তখনই গাড়ি নিয়ে বের হয়, সিম্মি হাত পা ছুড়ছে কিন্তু কোনো লাভ হয় না কারন হাত বাঁধা, অভি পিছনে তাকিয়ে দেখে, একটা গাড়ি তাদের পেছনেই আসছে, অভি ড্রাইভারকে বলে,

~ স্পীড আরও বাড়িয়ে দে,
অভি রাগী চোখে সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ একদিন হলেও তোমার সাথে আমি সংসার করবো, আর আরাধ্যার চিহ্ন কে নষ্ট করে ফেলবো।
সিম্মি মাথা নাড়ে। অভির ফোনে কল আসে। অভি ফোন রিসিভ করে আর অপর প্রান্ত থেকে খুব রাগী কন্ঠে আরাধ্যার বলে,

~ তোকে এবার আর ছাড়বো না।
~ যা খুশি করেনে কিন্তু সিম্মিকে এবার আর ছাড়ছি না, তোর সন্তানকে আমি শেষ করে ফেলবো।

~ সিম্মির শরীরে একটা আঁচড় লাগলে তোর মা, বাবা, বোনকে চিরতরে বিদায় করে দেবো।
~ যা মন চায় কর কিন্তু সিম্মিকে আমি আমার করে নেবো।
~ অভি তোকে আমি শেষ করে ফেলবো, টুট টুট টুট

অভি ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে লেফট্ টার্নে নিতে বলে কিন্তু ভুলটা সেখানেই হলো কারণ লেফট টার্নে রাস্তা শেষ। সেই রাস্তায় গাড়ি চালানো প্রয় অসম্ভব। পেছনে তিলাতের গাড়ি থামে। সেই সাথে আরো দশটি গাড়ি এসে উপস্থিত হয়। অভি গাড়ি থেকে নেমে সিম্মিকে টেনে নামায় তখনি একটা গুলির শব্দ হয়।

অভিও রিভলবার বের করে এলোপাথাড়ি গুলি ছুড়তে থাকে। অভি জঙ্গলের মধ্যে চলে যায় সিম্মিকে নিয়ে। আরাধ্যার সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ চারদিক থেকে ঘিরে ফেল,

অভি সিম্মির হাত ধরে টেনে হিঁচড়ে নিয়ে যায়। সিম্মির মুখ বাঁধা। সিম্মি চেষ্টা করেও থামতে পারছে না। জঙ্গলের শেষ প্রান্ত একটা ছোটো আকারে মাঠ তারপর আর কোনো রাস্তা, জঙ্গল কিছুই নেই। শেষ প্রান্তের নিচে ঘন জঙ্গল আর পাথর।
অভি থেমে যায়। অভি সিম্মির দিকে তাকায়, সিম্মি ভয়ে চুপসে যায়। অভি দাঁতে দাঁত চেপে বলে,

~ ভালোয় ভালোয় শোনোনি এখন কি হবে তোমার? তোমাকে আমি না পেলে আর কেউ পাবে না। তুমি শুধু আমার।
অভি সিম্মির মুখের বাঁধন খুলে দেয়। সিম্মি জোরে জোরে শ্বাস নেয় আর বলে,
~ আমাকে ছেড়ে দিন,
~ কখনো না।

অভি সিম্মিকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। সিম্মি নিচে পড়ে যায়। সিম্মির কপাল কেটে যায় পাথরে। অভির সিম্মির দিকে এগুতে থাকে, সিম্মি কেঁদে কেঁদে বলে,
~ প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও,

অভি রিভলবার বের করে সিম্মির দিকে নিশানা তাক করে, তখনই একটা বুলের এসে অভির হাত ভেদ করে চলে যায়। অভি তাকিয়ে দেখে তিলাত গুলি করেছে, তিলাত অভির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ এত সহজ একটা মানুষকে শেষ করা।

~ সিম্মি শুধু আমার।
~ না সিম্মি শুধু আরাধ্যার।
~ না,

~ হ্যাঁ, সিম্মি আর আরাধ্যার পবিত্র বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছে আর আরাধ্যার সন্তান সিম্মির গর্ভে। তুমি বলছো তুমি সিম্মিকে ভালোবাসো এটাকে ভালোবাসা বলে না অভি। এটা তোমার ভালোলাগা আর জেদ। আমিও তো সিম্মিকে ভালোবাসতাম কিন্তু আমি তো এমন করিনি। জোর করে ভালোবাসা হয় না অভি। দুজনের সম্মতিতে ভালোবাসা হয়।

অভি চুপচাপ তিলাতের কথা শোনে। আরাধ্যারও চলে আসে ততক্ষণে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকায়, সিম্মি আরাধ্যার দিকে তাকায়। তখনই অভি সিম্মির হাত ধরে টেনে উঠায় আর সিম্মির মাথায় রিভলবার চেপে ধরে। আরাধ্যার আর তিলাত দুজনেই চিৎকার করে ওঠে। অভি সিম্মিকে টেনে একবারে কোণায় নিয়ে যায় আর একটু হলেই নিচে পড়ে যাবে। আরাধ্যার শান্ত হয়ে বলে,

~ দেখ অভি সিম্মিকে ছেড়ে দে,
~ না

তিলাত অভিকে বলে,
~ অভি সিম্মিকে ছেড়ে দাও প্লিজ,
~ কখনো না,

কথাটা বলেই অভি সিম্মিকে জোরে ধাক্কা দেয় আর সিম্মির পা পিছলে যায় আর তখনি,
কি হবে সিম্মির? সিম্মিকে কি চলে যাবে সবাইকে ছেড়ে? নাকি আমাদের মাঝেই থাকবে?


পর্ব ৪৬

অভি সিম্মিকে ধাক্কা দেয় আর অমনি সিম্মির পা পিছলে যায়। আরাধ্যার, তিলাত দুজনেই দৌড়ে আসে। অভি সিম্মির এক হাত ধরে ফেলে। অভি অন্যহাতে রিভলবার উঠিয়ে আরাধ্যার আর তিলাতের দিকে তাক করে বলে,

~ আমার কাছে আসলে, আমি সিম্মির হাত ছেড়ে দেবো, (আরাধ্যার আর তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
আরাধ্যার আর তিলাত শান্ত হয়ে অভিকে বলে,

~ অভি এমন করো না প্লিজ, (অনুরোধ করে)
~ আমরা পেছনে চলে যাচ্ছি প্লিজ সিম্মির কিছু করিস না। (থেমে গিয়ে)
অভি সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ সিম্মি আমি তোমাকে ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি, আমার চোখের সামনে তুমি অন্যকারো হয়ে যাবে তা আমি সহ্য করতে পারবো না। (কাঁদো কাঁদো সুরে)
সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে অভির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ অভি আমার বাচ্চার কথা ভেবে আমাকে ছেড়ে দাও, আমার বাচ্চাটা তো তোমার কোনো ক্ষতি করেনি তাহলে কেনো তুমি ওর ক্ষতি করবে? (ছলছল চোখে)
~ ঐ বাচ্চা আমার না আরাধ্যার, (রেগেমেগে)

~ অভি তুমি আমাকে ভালোবাসো? (অভির দিকে তাকিয়ে)
~ অনেক বেশি, (শান্ত গলায়)
~ না তুমি আমাকে ভালোবাসো না, (রেগে)

~ না সিম্মি আমি তোমাকে ভালোবাসি, (মাথা নেড়ে)
~ কখনো না, (রেগেমেগে)

~ বিশ্বাস করো সিম্মি, আমি তোমাকে ভালোবাসি। (তড়িঘড়ি করে)
~ তুমি যদি আমাকে ভালোই বাসতে তাহলে আমাকে মেরে ফেলতে চাইতে না। (কেঁদে কেঁদে)
~ আমি চাই না তুমি অন্যকারো, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ এক তরফা ভালোবাসা কখনো পূর্ণতা পায় না অভি, তুমি আমাকে ভালোবাসো কিন্তু আমিতো তোমাকে ভালোবাসি না, আমি ভালোবাসি আরাধ্যারকে। আমার সবটা জুড়ে আরাধ্যার। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ সিম্মি, (করুণ সুরে)

~ মেরে ফেলো আমাকে আর বাবুকে, আমার কোনো আক্ষেপ নেই, কিন্তু আফসোস একটাই থাকবে আমার সন্তান কে পৃথিবীর আলো দেখাতে পারবো না। (কেঁদে কেঁদে)
~, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে নিশ্চুপ হয়ে)

~ তুমি একটা পাষাণ অভি, আমাকে আরাধ্যার ছাড়া আর কেউ পাবে না, আমি শুধু মাত্র আরাধ্যার আর কারো না। (কেঁদে কেঁদে)
~, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে কোনো কথা না বলে)

তিলাত আর আরাধ্যার থমকে গেছে সিম্মির কথা শুনে। আরাধ্যার বুকের ভেতর তোলপাড় হয়ে যাচ্ছে। বুকের ভেতর দুমড়ে মুচড়ে যাচ্ছে। কথায় আছে না, দাঁত থাকতে কেউ দাঁতের মর্ম বোঝে না। ঠিক তেমনি এতো দিন আরাধ্যার সিম্মির মন বুঝতে পারেনি কিন্তু আজকে সে ঠিকই বুঝতে পারছে, সে কত বড় ভুল করেছে। সহজে কোনো পুরুষ কাঁদে না কিন্তু কষ্টের সীমা পেরিয়ে গেলে তখন তার চোখের জল বাঁধ ভাঙে ঠিক তেমনই আরাধ্যার অবস্থা।

তিলাত পুরোপুরি অবাক সিম্মির কথা শুনে, তিলাত মনে মনে বলে,

~ সিম্মি তুমি আরাধ্যার ভাইয়াকে এতো ভালোবাসো যে তার জন্য নিজের জীবন উৎসর্গ করতেও একবার ভাবছো না। তোমাদের ভালোবাসার কাটা হয়ে নয়, ফুল হয়ে তোমাদের এক করবো আমি। I promise, (মনে মনে প্রতিজ্ঞা করে)

অভির বাবা, মাকে ধরে নিয়ে আসে সেখানে আরাধ্যার গার্ডরা। অভির বাবা চিৎকার দিয়ে অভিকে বলে,
~ অভি এ কি করছিস তুই? সিম্মির যদি কিছু হয় তাহলে আমাকে আর তোর মাকে হারাবি চিরদিনের জন্য। (রাগান্বিত সুরে)

অভি অবাক হয়ে সাইডে তাকায় আর তাকিয়ে দেখে অভির মা আর বাবা দাঁড়িয়ে আছে সেই সাথে পেছন থেকে আমিরাকে ধরে নিয়ে গার্ডরা। অভির মা কেঁদে কেঁদে বলে,
~ তুই একটা জানোয়ার! তুই যদি মানুষ হতি তাহলে এভাবে দুটো জীবনকে শেষ করতে চাইতি না। (কেঁদে কেঁদে)

~ এমন ছেলের বাবা আমি ভাবতেও লজ্জা লাগে। কি করে পারলি ওদের সাজানো সংসারে তোরা দুই ভাইবোন মিলে আগুন লাগাতে? (রেগেমেগে)
~ তুই সিম্মিকে ছেড়ে দে, আমরা তিতলির সাথে তোর বিয়ে দেবো! (অভির দিকে তাকিয়ে)

কথাটা শুনে সিম্মি, আরাধ্যার, তিলাত, অভি সবাই চমকে যায়। অভি অবাক হয়ে তার মাকে বলে,
~ কি বলছো এসব? (অবাক হয়ে)

~ যা বলছি ঠিক বলছি, তুই সিম্মিকে ছেড়ে দে, (রেগে)
আমিরা হাঁপাতে হাঁপাতে অভির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ ভাই তুমি সিম্মিকে ছেড়ে দাও, সিম্মি তোমার না আরাধ্যার, ( হাঁপাতে হাঁপাতে)
সবার কথা শুনে অভি সিম্মির দিকে তাকায়, সিম্মির চোখ থেকে অশ্রু টলটল করে পড়ে। অভি হেঁচকা টান দিয়ে সিম্মিকে নিজের কাছে নিয়ে আসে। সবাই যেনো হাফ ছেড়ে বাঁচে। অভি সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি, আমার মনে তোমার জন্য যে জায়গা আছে সেটা চিরদিন থাকবে। পৃথিবীর যেখানেই থাকি না কেনো তোমাকে আমি ভুলতে পারবো না পারলে আমাকে ক্ষমা করে দিও। (সিম্মির কানে কানে বলে)

কথাটা বলে অভি সিম্মিকে ছেড়ে দিয়ে আরাধ্যার কাছে যায়, যদিও আরাধ্যার অন্যদিকে তাকিয়ে আছে, অভি আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ পারলে মাফ করে দিও, কখনো আর তোমাদের মাঝে আসবো না। তোমরা সুখি হও আমি না হয় সেই সুখ দূর থেকে দেখে সুখি হবো। তোমার অনেক ভাগ্য আরাধ্যার, যে সিম্মির মতো একজন মেয়ে কে নিজের সহধর্মিণী হিসেবে পেয়েছো। ভালো থাকো। (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)

কথাটা বলে অভি হনহনিয়ে চলে যায়। আরাধ্যার অভির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে, গার্ডদের দিকে ইশারা করে অভির মা, বাবাকে ছেড়ে দিতে বলে, গার্ডরা তাদের ছেড়ে দেয়, সিম্মি চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। অভির বাবা, মা সিম্মির কাছে আসে। অভির মা সিম্মির হাতে হাত রেখে বলে,

~ সিম্মি তুমি ক্ষমা করে দাও আমাদের, (হাতজোড় করে)
অভির বাবা সিম্মির মাথায় হাত রেখে বলে,

~ অভির হয়ে আমরা মাফ চাইছি তোমার কাছে মা, (সংকোচ করে)
~ না না ক্ষমা চাইতে হবে না, আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। (জোর করে হাসার চেষ্টা করে)
~ নিজের দিকে খেয়াল রেখো তুমি আর আরাধ্যার সুখি হও। (হেসে)

আমিরা মাথা নিচু করে সিম্মির সামনে দাড়িয়ে বলে,
~ আমি, (মাথা নিচু করে)

সিম্মি আমিরার হাতে হাত রেখে বলে,
~ ক্ষমা চাইতে হবে না। আমি সবাইকে ক্ষমা করে দিয়েছি। (হালকা হেসে)
অভির বাবা সিম্মির মাথায় হাত রেখে বলে,

~ আমরা আসি তাহলে, (মাথায় হাত বুলিয়ে)
~ জি, (মাথা নেড়ে)
অভির বাবা আর মা আরাধ্যার সামনে যেয়ে সংকোচ নিয়ে বলে,

~ হতে পারে, বিজনেস নিয়ে আমাদের মধ্যে শত্রুতা আছে কিন্তু তুমিও আমার ছেলের মতো আরাধ্যার। আমাদের ক্ষমা করে দাও। (মাথা নিচু করে)
~ It’s ok uncle.. যা হবার হয়ে গেছে। আপনাদের আমার গার্ডরা পৌঁছে দেবে। (অভির বাবার দিকে তাকিয়ে)
আরাধ্যার তাদের আরকিছু বলার সুযোগ দেয় না। আরাধ্যার গার্ডদের ইশারা করে, গার্ডরা এসে তাদের নিয়ে যায়।

সিম্মি সেখানেই চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে। চারদিকে থমথমে পরিবেশ। সিম্মির মন চাইছে দৌড়ে গিয়ে আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরতে কিন্তু সেই সুপ্ত বাসনাকে সিম্মি পাথর চাপা দেয়। সিম্মি অন্যদিকে ঘুরে তাকায়। আরাধ্যার ধীরে ধীরে সিম্মির দিকে যায়। আরাধ্যার সিম্মির কাছে গিয়ে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে পেছন থেকে, সিম্মি চমকে যায়, আরাধ্যার কাঁদতে কাঁদতে বলে,
~ জান আমাকে শেষ বারের মতো ক্ষমা করে দাও। (কেঁদে কেঁদে)

~, (চুপচাপ দাঁড়িয়ে আছে)

~ আর কখনো এমন হবে না, (কেঁদে কেঁদে)
~, ( নিশ্চুপ)
আরাধ্যার সিম্মির পেটে হাত রেখে বলে,

~ আমাদের ভালোবাসার প্রতীক, আমাদের অনাগত সন্তান। তার কথা ভেবে প্লিজ ক্ষমা করে দাও, (পেটে হাত রেখে)
সিম্মি আরাধ্যার হাত সরিয়ে, আরাধ্যার দিকে তাকায় আর অমনি ঠাস করে থাপ্পড় দেয় আরাধ্যার গালে। মাইশাও চলে আসে সেখানে। তিলাত আর মাইশা অবাক হয়ে যায় সিম্মির কান্ড দেখে। সিম্মি চোখের পানি মুছে বলে,

~ কি ভাবেন নিজেকে? (রেগে)
আরাধ্যার গালে হাত রেখে সিম্মির দিকে তাকায় অবাক হয়ে, সিম্মি রেগেমেগে বলে,

~ সন্তান! কোন দাবি নিয়ে আমার সামনে দাঁড়িয়েছেন? আমার সাথে আপনার কোনো সম্পর্ক নেই। সম্পর্ক সেদিন শেষ হয়ে গেছে যেদিন আমাকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছিলেন। (চোখ মুছে)
আরাধ্যার কথা বলতে গেলে সিম্মি থামিয়ে দিয়ে বলে,

~ আমাকে কি খেলনা পুতুল ভাবেন আপনি? যখন মন চায় তুলে নেবেন আবার যখন মন চায় তুলে নেবেন? আমি আমার সন্তানকে অনেক দূরে চলে যাবো যেখানে না থাকবে কোনো সন্দেহ না থাকবে অবিশ্বাস না ক্ষণস্থায়ী ভালোবাসা। (রেগেমেগে)

~ সিম্মি তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারবো না। (করুণ সুরে)
~ আমি চাই না আপনাকে সবাই স্বার্থপর। (রেগে)

আরাধ্যার সিম্মির সামনে হাটু ভাজ করে বসে পড়ে, আরাধ্যার কাঁদতে কাঁদতে বলে,
~ আমাকে ছেড়ে যেও না জান, (হাতজোড় করে)

~ কখনো আর আমার সামনে আসবেন না। যদি আসেন তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলবো। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

কথাটা বলে সিম্মি আরাধ্যার সামনে থেকে চলে আসে। সিম্মির শেষ কথাটা শুনে আরাধ্যার পাথর হয়ে যায়। বারাবার কথাটা আরাধ্যার কানে বাজছে। সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে চলে যায়। মাইশা তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ তুমি আরাধ্যারকে সামলাও আমি সিম্মিকে দেখছি। (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
~ হ্যাঁ যাও। (মাথা নেড়ে)

মাইশা সিম্মির পিছনে পিছনে যায়। তিলাত আরাধ্যার কাঁধে হাত রেখে আরাধ্যার পাশে বসে। আরাধ্যার তিলাতকে জড়িয়ে ধরে, তিলাত সান্ত্বনা দিয়ে বলে,
~ তুমি টেনশন করো না ভাইয়া। আমি সিম্মির পাশে থেকে ওর খেয়াল রাখবো।

ওকে একটু সময় দাও সিম্মির জেদ অনেক বেশি, কিন্তু আমার বিশ্বাস ও তোমার কাছে ফিরে আসবে। আমি তোমাদের এক করবো i swear, (আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে)

ভালোবাসায় অভিমান ভালো কিন্তু রাগ নয়। দেখা যাক কি হয় এই সম্পর্কে?


পর্ব ৪৭

আজকে দুজনের বিরহে সব যেনো থমকে গেছে। এমনটা তো হবার কথা ছিলো না কিন্তু নিয়তি যে এটাই চেয়েছিলো।

নিয়তির উপর যে কারো হাত নেই। আজ আরাধ্যার ভেঙে পড়েছে সিম্মির জন্য। সিম্মির মনে ঝড় বয়ে যাচ্ছে। দুজনের মন একসাথ থাকলেও আজ তারা দুই পথের দিশারি। ভালোবাসায় ব্যার্থ হয়ে অভি হার জিতের মাঝখানে।

ওদের কষ্টে আজ পরিবেশ ও চরম থমথমে রুপ ধারণ করছে। সিম্মি দৌড়ে রাস্তায় চলে আসে মাইশা সিম্মির হাত ধরে ফেলে। সিম্মি মাইশার দিকে ফিরে তাকায়,
~ আমি চলে যাবো থাকবো না এই কষ্টের সীমানায়। (মাইশাকে জড়িয়ে ধরে)

~ কোথায় যাবি এই অসুস্থ শরীর নিয়ে? মাথা খারাপ হয়ে গেছে তোর? চল আমার সাথে, (সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে)
~ না আমি যাবো না, (মাইশার দিকে তাকিয়ে)

~ সিম্মি তুই আর আমি বোন, আমাদের সম্পর্কটা ভুলে গেছিস? (সিম্মির গালে হাত রেখে)
~ আর পারছি না রে, আমার সহ্যের সীমা শেষ। (কেঁদে কেঁদে)

~ জানি সিম্মি, একটু শান্ত হ প্লিজ, তুই যদি এতো উত্তেজিত হয়ে পড়িস তাহলে সব প্রেশার পড়বে তোর বাবুর উপর। (সিম্মির মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)
~ মাইশা আমি করবো আমাকে বলে দে, (মাইশাকে জড়িয়ে ধরে)

~ তুই আমার কাছে থাকবি, (সিম্মির পিঠে হাত রেখে)
~ না আমি কারো বোঝা হয়ে থাকতে চাই না রে, ( মাথা নেড়ে)

~ বোনের কাছে বোন কখনো বোঝা হয় না। (সিম্মির গালে হাত রেখে)
~ তবুও আমার জন্য তোদের সমস্যা হবে। (কেঁদে কেঁদে)

~ চুপ একদম চুপ অনেক বকবক করিস তুই, চল এখন বাসায় যাবি। (ধমক দিয়ে)
~ কিন্তু, (বাঁধা দিয়ে)
~ কোনো কিন্তু নয়, সোজা আমার বাসায় যাবি এখন। (রেগে)

~ ঠিক আছে। (মাথা নেড়ে)
মাইশা সিম্মিকে নিয়ে স্কুটিতে উঠে স্কুটি স্টার্ট দেয়। সিম্মি ছলছল চোখে সেই রাস্তার দিকে তাকায় যেখান থেকে সেই মাঠে যাওয়া যায় আর সেখানেই আরাধ্যার আছে। সিম্মি মনে মনে বলে,

~ আপনাকে অনেক ভালোবাসি। কখনো ভুলতে পারবো না পারলে মাফ করে দিবেন। (চোখ মুছে)
আরাধ্যার বসে বসে কাঁদছে। তিলাত বহুকষ্টে আরাধ্যারকে সামলে নেয়। তিলাত আরাধ্যারকে গাড়িতে বসিয়ে তারপর নিজে বসে গাড়ি স্টার্ট দেয়। আরাধ্যার বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সবকিছু নিরব, নিস্তব্ধ। সব নিরবতা নিস্তব্ধতা কাটিয়ে তিলাত আরাধ্যারকে বলে,

~ জানো ভাইয়া, আমি সিম্মিকে চিনি অনেক আগে থেকে। (গাড়ি চালাতে চালাতে)
আরাধ্যার তিলাতের দিকে অবাক হয়ে তাকায়, তারপর আস্তে করে বলে,
~ কীভাবে? (অস্ফুট স্বরে)

~ তুমি জানতে চেয়েছিলে না আমি সিম্মি, মাইশাকে কি করে চিনি? আর জানলামই বা কি করে যে সিম্মি তোমার স্ত্রী? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ হ্যাঁ, আমি এই প্রশ্নের উত্তর এখনো পাইনি? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
~ আজ তোমাকে সব বলবো? (স্টেয়ারিং ঘুরিয়ে)

~ আমি শুনতে চাই বল? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে )
~ হুম আজকে সবটা বলবো। তাহলে শোনো,

আমি সিম্মিকে চিনি কলেজ লাইফ থেকে। সিম্মি আর আমি একই ক্লাসে পড়তাম। সিম্মি খুব মেধাবী, সুন্দরী, শান্ত আর খুব সুন্দর মনের মেয়ে ছিলো এখনো তেমনি আছে। জানো ভাইয়া কলেজের সব মেয়েদের মধ্যে শুধুমাত্র সিম্মিকেই আমার ভালো লাগতো। একবার তো ওকে প্রোপোজ করে ফেললাম কিন্তু ও সরাসরি না করে দিলো। ওকে আমি বিউটিকুইন বলে ডাকতাম। তারপর বহু কষ্টে ওর সাথে ফ্রেন্ডশীপ করলাম। আমি, মাইশা আর সিম্মি খুব ভালো বন্ধু ছিলাম।

ধীরে ধীরে কলেজ লাইফ শেষ হয়ে গেলো তুমি আমাকে দেশের বাইরে পাঠিয়ে দিলে এরপর ওদের সাথে আর যোগাযোগ হয়নি। যেদিন দেশে ফিরলাম সেদিন সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলো আর আমার গাড়ির সামনে ছিলো সিম্মি। ওকে অনকে বার জিজ্ঞেস করার পরও ও কিছু বলেনি তারপর ওর কথা অনুযায়ী মাইশার বাসায় নিয়ে গেলাম।

মাইশা তোমার নাম বলে? তখন কৌতূহল বশত মাইশার কাছে জিজ্ঞেস করলাম। মাইশা সবকিছু খুলে বললো। তারপর যা হলো সবটাই জানো। (গাড়ি চালাতে চালাতে)

~ সিম্মি আমাকে আর কখনো ক্ষমা করবে না। (বাহিরের দিকে তাকিয়ে)
~ এটা তুমি ভুল বললে ভাইয়া, (হালকা হেসে)
~ কোনটা? (অবাক হয়ে)

~ সিম্মি তোমাকে অনেক ভালোবাসে আর ভালোবাসার মানুষের উপর রাগ ক্ষণস্থায়ী আর ভালোই চিরস্থায়ী। সিম্মির জেদ অনেক বেশি আর এখন সিম্মি অনেক মানসিক স্ট্রেসের মধ্যে আছে ওর কিছুদিন একা থাকাই শ্রেয় আর চিন্তা করো না আমি আর মাইশা সবসময় ওর পাশে আছি।

এই কটা দিন দূর থেকেই তোমাকে ভালোবাসতে হবে সিম্মিকে। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
~ আমার একটা ভুলের জন্য আজ এমনটা হচ্ছে! (চোখ মুছে)

~ নিজেকে আর দোষ দিও না, যা হবার তা হয়ে গেছে। এই ভুলটা না করলে তুমি সিম্মির ভালোবাসাকে বুঝতে না। ভালোবাসার কদর ও বুঝতে না। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ অনেক রাগ আমার উপর সিম্মির। (অস্ফুট স্বরে)

~ তা ঠিক তবে এই রাগ ভালোবাসা বদলে যাবে আর সেই ব্যাবস্থা আমি করবো তুমি টেনশন করো না। (সান্ত্বনা দিয়ে)
~ ধন্যবাদ ভাই। (কৃতজ্ঞতা মিশ্রিত সুরে)
~ তুমি আমার জন্য যা করেছে তার ঋণ কখনো শোধ করতে পারবো না তবে এই সাহায্য টা করে একটু হলেও শোধ করার চেষ্টা করবো। (হেসে)

আরাধ্যার বাসার সামনে চলে আসে গাড়ি। তিলাত গাড়ি পার্ক করে আরাধ্যার সাথে ভিতরে যায়। তিলাত ফোন বের করে মাইশাকে কল করে। মাইশা ফোন রিসিভ করে,
~ হ্যাঁ তিলাত বলো! (ফোন রিসিভ করে)
~ তোমরা পৌঁছে গেছো? (বিচলিত হয়ে)

~ হুম এই একটু আগে, তোমরা? (শান্ত হয়ে)
~ হুম এইমাত্র আসলাম। সিম্মি কোথায়? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

~ সিম্মি বাসায় এসে দরজা বন্ধ করে ভেতরে বসে কান্না শুরু করে দিয়েছে এতো বার দরজা ধাক্কালাম কিন্তু দরজা খুললো না। (মন খারাপ করে)
~ থাক ওকে কান্না করতে দাও, ভেতরে জমে থাকা কষ্ট গুলো চোখের অশ্রুর সাথে বের হয়ে যাক তাহলে কিছুটা হালকা ফিল করবে। ওকে সম্পূর্ণ একা থাকতে দাও। (সান্ত্বনা দিয়ে)

~ ঠিক আছে তাহলে তাই করবো। আরাধ্যার ভাইয়া ঠিক আছে তো? (মাথা নেড়ে)
~ হুম বুঝতেই পারছো কেমন থাকতে পারে? (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)

~ আল্লাহ তাড়াতাড়ি সব ঠিক করে দিক। (চোখ মুছে)
~ হ্যাঁ সেটাই। এখন রাখছি কেমন, (মাথা নেড়ে)
~ আচ্ছা। টুট টুট টুট।

আরাধ্যার সোফার উপর বসে আছে পাশে তিলাত ও বসে আছে। আরাধ্যার স্পষ্ট অনুভব করছে পুরো বাড়ি হাহাকার করছে। আরাধ্যার সিম্মির নিসঙ্গতা অনুভব করছে। পুরো বাড়ি জুড়ে রয়েছে সিম্মির স্মৃতি। সব স্মৃতি গুলো নেত্রপল্লবে ভেসে উঠছে। আরাধ্যার কপোল বেয়ে নেমে গেলো দুফোঁটা অশ্রু।

আরাধ্যার ফোন বেজে উঠে। আরাধ্যার চোখের পানি মুছে পকেট থেকে ফোন বের করে। সিম্মির বাসা থেকে কল করেছে। আরাধ্যার ফোন রিসিভ করে, সিম্মির বাবা বলে,
~ সিম্মিকে খুঁজে পেয়েছো বাবা? (বিচলিত হয়ে)
~ হ্যা বাবা খুঁজে পেয়েছি। (চোখের পানি মুছে)

~ সিম্মি কোথায়? (তাড়াহুড়ো করে)
~ মাইশার বাসায় আছে এখন, (শান্ত গলায়)
~ মাইশার বাসায়! (অবাক হয়ে)

~ আমার উপর অনেক রাগ সিম্মির তাই আমার সাথে আসতে চায় নি। (মন খারাপ করে)
~ আমরা কালকে নিয়ে আসবো সিম্মিকে আমাদের বাসায়। (সিরিয়াস কন্ঠে)

~ যাবে না, (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
~ কিন্তু কেনো? (অবাক হয়ে)

~ কারণ সবার উপর সিম্মি রাগ করে আছে তবে চেষ্টা করে দেখতে পারেন। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
~ ঠিক আছে বাবা, তুমি ঠিক আছো তো? (ধীর কন্ঠে।

~ জি বাবা আমি ঠিক আছি। রাখছি, টুট টুট টুট
আরাধ্যার হুট করেই লাইন কেটে দেয়। আরাধ্যার মন শুধু সিম্মির কথা ভাবছে অন্যদিকে সিম্মি বন্ধ রুমের মধ্যে বসে কাঁদছে। সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে বলে,

~ বারবার আমার সাথে কেনো এমন হয়, হে আল্লাহ আমাকে কষ্ট দিতে তোমার এত ভালো লাগে, যে মানুষটাকে নিজের থেকেও বেশি ভালোবাসি তাকে এই হাত দিয়ে চড় মেরেছি। কীভাবে আমি তাকে মারলাম। আজ এক আকাশের নিচে থেকেও তার আর আমার মধ্যে এতো দুরত্ব। এক শহরে থাকবো তাও আপনাকে ছাড়া। আরাধ্যার প্লিজ ক্ষমা করে দিন আমাকে। আমি নিজের ইচ্ছেতে এমন করিনি। আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। (কাঁদতে কাঁদতে)

একটা ঝড় তছনছ করে দিলো দুটো জীবনকে। সন্দেহ এতটাই খারাপ যে ভালোবাসার শক্তিশালী প্রাচীরকে চূর্ণ বিচূর্ণ করে দেয়। ভালোবাসায় বিশ্বাস সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ বিশ্বাস না থাকলে সেই ভালোবাসা ক্ষণস্থায়ী।


পর্ব ৪৮

দেখতে দেখতে কেটে গেলো কয়েক মাস। সিম্মি আগেরমতই চুপচাপ, কারো সাথে কথা বলে না। তবে সিম্মি আগের থেকে অনেক সুন্দরী হয়ে গেছে। দৈহিক পরিবর্তন এসেছে। কিন্তু সিম্মি সবসময় একা বসে থাকে। সিম্মির বাবা, মা অনেক নিতে আসলেও সিম্মি যেতে রাজি হয়নি। মাইশাও কিছুটা বাধা দেয়। তিলাত ও মাইশার বাসায় থাকে। সিম্মির সার্বক্ষণিক খেয়াল রাখার জন্য। আরাধ্যার সব খবরাখবর নেয় তিলাতের থেকে।

তিলাত সোফায় বসে বসে চা খাচ্ছে। মাইশা আর সাহিলও এসে বসে। তিলাত ওদের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ কি খবর আপনাদের? ডেটিং কেমন কাটলো? (হেসে)

~ আর বলো না, এতো গরম বাহিরে তার থেকে ঘরে বসে এসির হাওয়া খাওয়া অনেক ভালো। (হাফ ছেড়ে)
সাহিল মুচকি হেসে বলে মাইশার দিকে তাকিয়ে বলে,

~ বউ তো আমার হেব্বি ভালো। (মুচকি হেসে)
~ ভালোর কি হলো? (অবাক হয়ে)

~ ভালোই তো কারণ এই যে তুমি ঘুরতে যেতে চাও না এতে আমার সেভিংস টাও হবে এই ছুতোয়। (মুখ চেপে)
~ তুমি একটা আস্তো হার কিপটে। (রেগেমেগে)

তিলাত দুজনের কান্ড দেখে হেসে হেসে বলে৷,
~ তোমরা এবার বিয়েটা সেরে ফেলো। (হেসে)

~ আগামী সপ্তাহে। (মুচকি হেসে)
~ আলহামদুলিল্লাহ। (হেসে)

মাইশা কিছুটা সংকোচ নিয়ে তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ তিলাত আমার কিছু কথা জানার ছিলো? (সংকোচ নিয়ে)
~ অবশ্যই, কি জানতে চাও বলো? (হেসে)

~ তোমার সাথে আরাধ্যার ভাইয়ার কি কোনো সম্পর্ক আছে? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
~ কেনো? (ভ্রু কুঁচকে)

~ দেখো সত্যি টা বলবে? প্লিজ, (সিরিয়াস কন্ঠে)
~ বলতে পারি তবে একটা শর্ত আছে, (বাঁকা হাসি দিয়ে)
~ কি শর্ত? (অবাক হয়ে)

~ তুমি সিম্মিকে কিছু বলতে পারবে না! (মাইশার দিকে তাকিয়ে)
~ ঠিক আছে, আমি সিম্মিকে কিছু বলবো না, (মাথা নেড়ে)

~ আমি আরাধ্যার ভাইয়ার আপন চাচাতো ভাই। ছোটো বেলায় একটা এ্যাক্সিডেন্টে আমার বাবা, মা মারা যান তারপর থেকে আঙ্কেল আর আরাধ্যার ভাইয়ের সাথে থেকে বড় হয়েছি। ভাইয়া কখনো কোনো কিছুর অভাব বুঝতে দেননি। হাই এডুকেশনের জন্য ভাইয়া আমাকে বাহিরে পাঠিয়ে দেন। শুনেছিলাম সে বিয়ে করেছে কিন্তু মেয়েটি যে সিম্মি তা জানতাম না তারপর দেশে এসে সব জানলাম। আরাধ্যার ভাইয়া আমার জন্য যা করেছে তার মূল্য আমি কোনো দিনও দিতে পারবো না। সে আমার কাছে একজন মহান ব্যাক্তিত্ব তাকে কি করে কষ্ট পেতে দেই বলো? (হালকা হেসে)

~ এজন্যই আরাধ্যার ভাইয়ার সাথে তোমার এতো ভাব দেখে আমার কিছুটা সন্দেহ হয়েছিলো যাক সন্দেহটা তাহলে ঠিক হলো।
~ সিম্মির সাথে দেখা করেছো? (হালকা হেসে)
~ হুম, চুপচাপ বসে আছে খাটের উপর। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)

~ ওকে এতো করে বলি কিন্তু শোনেই না, (রেগে)
~ সিম্মির আম্মু কল করেছিলো আমাকে, (সংকোচে)

~ কি বললো? (বিচলিত হয়ে)
~ যা বললো, সেটা শুনে তো, (অবাক হয়ে)
~ কি বললো এমন? (ভ্রু কুচকে)

~ অভির বাবা, মা চাইছেন তিতলিকে তাদের ছেলের বউ করে নিতে। তারা এই শত্রুতাকে সুসম্পর্কে পরিণত করতে চান। (চিন্তিত হয়ে)
~ সিম্মি জানে এই খবরটা? (অবাক হয়ে)

~ এখনও বলিনি, তবে ওকে কি এই খবরটা বলবো? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
~ বলতে পারো, কারণ ওর বোন, (চিন্তিত হয়ে)

তিলাত কথাটা বলতে গিয়ে থেমে যায় আর মনে মনে ভাবতে থাকে,
~ এটা আবার নতুন কোনো চাল নয়তো অভির। কি চাইছে ও? (মনে মনে)
মাইশা তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ কি ভাবছো? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
~ না কিছু না, (মাথা নেড়ে)

তখনই তিলাতের ফোন আসে, তিলাত ফোন রিসিভ করে উঠে অন্যপাশে চলে যায়, তিলাত বলে,
~ হুম বলো ভাইয়া, (হেসে)

~,
~ ঠিক আছে ভাইয়া, আমি চলে আসবো সিম্মিকে নিয়ে। (মাথা নেড়ে)
~ টুট টুট টুট

তিলাত ফোন পকেটে রেখে। ডায়নিং রুমে মাইশা আর সাহিলের কাছে যায় তারপর ওদেরকে সবটা খুলে বলে। তারপর ওরাও সায় দেয়। তিলাত সিম্মির রুমে যায়।
সিম্মির লম্বা চুল গুলো জানালা থেকে বয়ে আসা বাতাসে উড়ছে। সিম্মি বিছানার উপর দুই হাটুর ওপর হাত রেখে মাথা রেখে বসে আছে। আনমনে জানালার বাহিরে তাকিয়ে আছে। মুখটা ফ্যাকাসে হয়ে গেছে।

তিলাত সিম্মির পাশে বসে। সিম্মির সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। তিলাত কিছুক্ষন সিম্মির পাশে বসে থাকার পরে সব নিরবতার ছেদ করে তিলাত বলে,
~ সিম্মি,

সিম্মি আনমনে তাকিয়ে আছে অন্যদিকে। তিলাত আরো কয়েকবার ডাকার পরেও সিম্মি সাড়া না দিলে। তিলাত সিম্মির কাঁধে হাত রাখে। সিম্মির ধ্যান ভেঙে যায়। সিম্মি স্থীর চোখে তিলাতের দিকে তাকায়, তিলাত বলে,

~ সারাক্ষণ তো এখানে বসে থাকো, চলো আমার সাথে বাইরে কোথাও ঘুরে আসবে? (সিরিয়াস কন্ঠে)
~ ভালো লাগছে না তিলাত, তুমি যাও আমি যাবো না। (অস্ফুট স্বরে)
~ আমিও যাবো আর আমার সাথে তুমিও যাবে। (রেগে)

~ প্লিজ তিলাত জোর করো না, (বিরক্ত হয়ে)
~ আমি কোনো কথা শুনতে চাই না, তুমি এখুনি রেডি হও, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ তিলাত, (বিরক্তিকর ভাব নিয়ে)
~ সবসময় মনমরা হয়ে থাকলে এই ইফেক্ট তোমার বাবুর উপর পড়বে, Please maya try to understand! This is not fare. (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আচ্ছা আমি যাচ্ছি, (মাথা নেড়ে)

সিম্মি চুপচাপ উঠে আলমারি থেকে একটা কালো রঙের শাড়ি বের করে ওয়াশরুমে চলে যায়। তিলাত দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
~ অল্পতে রাজি হয়ে গেছে। ভাইকে শাড়ির কালারটা মেসেজ করে পাঠিয়ে দেই আর আমিও রেডি হয়ে আসি। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)

তিলাত উঠে তার রুমে যায় রেডি হওয়ার জন্য। সিম্মি শাড়ি পড়ে বের হয়। সিম্মি ধীর পায়ে ড্রেসিং টেবিলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। অনেক দিন পর আজকে সিম্মি নিজেকে দেখছে। সিম্মি চোখে হালকা কাজল দেয়। তারপর কানে সোনালী রঙের ঝুমকা আর হাতে কালো রঙের চুড়ি পড়ে। ঠোঁটে হালকা লাল রঙের লিপস্টিক দেয়।

চুলগুলো পিঠের ওপর ছেড়ে দেওয়া। সিম্মি হালকা সাজেও অপূর্ব সুন্দরী লাগছে।
তিলাত রুমের সামনে এসে ঢুকতে যাবে আর অমনি তিলাতের চোখ যায় সিম্মির দিকে তাকাতেই তিলাতের চোখ আটকে যায়। তিলাত ফিদা হয়ে বলে,

~ Oh my god you looking so beautiful. Just look like a cute and pretty fairy.
তিলাতের কথা শুনেও যেনো না শোনার মত ভান করলো সিম্মি। তিলাত কাহিনী টা বুঝতে পেরে হাসি দিয়ে বলে,

~ চলো এবার যাওয়া যাক। (মুচকি হেসে)

~ হুম। (মাথা নেড়ে)
রুম থেকে বের হতেই মাইশা আর সাহিলের সাথে দেখা হয় সিম্মির। মাইশা সিম্মির গালে হাত রেখে বলে,

~ আজ অনেক দিন পর তোকে এইভাবে দেখলাম। মন টা ভরে গেলো রে। তোকে অনেক অনেক সুন্দর লাগছে। (গালে হাত রেখে)
সিম্মি তাচ্ছিল্যের হাসি দেয়। সিম্মির মুখে স্পষ্ট অনীহার ছাপ ফুটে উঠেছে। সিম্মির মুড বদলানোর আগে তিলাত বলে,

~ এবার আমরা আসি কেমন, (তাড়াহুড়ো করে)
~ আচ্ছা, সাবধানে যেয়ো তোমরা। (সিম্মি আর তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

তিলাতের সাথে সিম্মিও বের হয়ে যায়। তিলাত আর সিম্মি গাড়িতে ওঠে। তিলাত গাড়ি স্টার্ট দেয়। সিম্মি চুপচাপ বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। সিম্মির মনে হাজারো স্মৃতি উঁকি দিচ্ছে। কিছুক্ষণ পর গাড়ি এসে থামে একটা বড় রেস্টুরেন্টের সামনে। সিম্মি কিছুটা অবাক হলেও কোনো কথা বলে না। সিম্মি বের হয় গাড়ি থেকে। তিলাতের পিছনে পিছনে সিম্মি চলে।

তিলাত একটা বড় রুমের মধ্যে যায়। সিম্মিও যায় কিন্তু অবাক করা বিষয় টা সিম্মি চোখ এড়ায়নি আর সেটা হলো, এই ফ্লোরের রুমে কোনো লোকজন নেই শুধু কয়েকজন ওয়েটার ছাড়া।

তিলাত সিম্মিকে চেয়ার টেনে দেয় বসার জন্য। সিম্মি চুপচাপ বসে পড়ে। তিলাত বসতে যাবে আর অমনি তিলাতের ফোনে একটা কল আসে।

তিলাত জোরে জোরে বলতে শুরু করে,
~ আরে কি বলছো? ফর্মুলা টা তো আমি সেখানেই রেখে এসেছিলাম। (জোরে জোরে)

~,
~ কি! পাচ্ছো না? এ কি করে সম্ভব। (অবাক হয়ে)

~,
~ আমি কি করে আসবো? আমার সাথে তো আমার বোন আছে। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~,
~ কি! পনেরো মিনিট লাগবে? (অবাক হয়ে)

~,
~ না আমি আমার বোনকে একা ছেড়ে আসতে পারবো না। (বিরক্ত হয়ে)

~,
~ দশ মিনিট লাগুক বা পনেরো মিনিট আমি পারবো না আসতে। (মাথা নেড়ে)

~,
~ আসতেই হব। ধুর, (রেগে)
সিম্মি তিলাতের কথা শুনে তিলাতকে জিজ্ঞেস করে,

~ কি হয়েছে? (জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে)
তিলাত ফোন কেটে দিয়ে সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ তুমি তো জানোই আমি একজন মেডিসিন বিভাগের ছাত্র। আমি একটা মেডিসিনের কিছু ফর্মুলা বানিয়েছিলাম সেটা স্যারকে দিয়ে এসেছিলাম কিন্তু স্যার সেটা খুঁজে পাচ্ছেন না। সেজন্য কল করেছেন। এখন যেতে বলছে। তোমাকে একা রেখে কি করে যাই বলো? (বিরক্ত হয়ে)

~ তুমি যাও, (হালকা হেসে)
~ না না সিম্মি এ হয় না, আমি তোমাকে একা ছেড়ে যেতে পারবো না, (মাথা নেড়ে)

~ মাত্র পনেরো মিনিট সময় লাগবে। আমি নাহয় ততক্ষণে এখানে বসে তোমার জন্য অপেক্ষা করি। (হালকা হেসে)
~ কিন্তু, (সংকোচ নিয়ে)
~ কোনো কিন্তু না, তুমি যাও, (রেগে)

~ ঠিক বলছো, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ হুম। (মাথা নেড়ে)
~ Are you sure? (ভ্রু কুঁচকে)

~ i’m sure. (মাথা নেড়ে)
~ আচ্ছা ততক্ষণে কিছু অর্ডার করে খেয়ে নাও আমি যাবো আর আসবো। এখান থেকে ল্যাব খুব কাছাকাছি। বেশি সময় লাগবে না। (মুচকি হেসে)
~ আচ্ছা। (মাথা নেড়ে)

তিলাত উঠে তাড়াহুড়ো করে বের হয়ে যায়। সিম্মি চুপচাপ বসে থাকে কিছুক্ষন তারপর ওয়েটার কে ডেকে কোল্ড কফি অর্ডার করে। ওয়েটার এসে কফি দিয়ে যায়। সিম্মি কফি মগে চুমুক দিবে আর অমনি,


পর্ব ৪৯

সিম্মি কফি মগে চুমুক যাবে আর অমনি ঐ ফ্লোরের সব লাইট গুলো বন্ধ হয়ে গেলো। সিম্মি চারদিকে তাকিয়ে দেখে সব অন্ধকার। বাহিরের রোড লাইট, শপিংমল আর দোকানে জ্বালানো আলোগুলো রেস্টুরেন্টের কাচ ভেদ করে ভেতরে এসে পড়ছে। সিম্মি কিছুটা ঘাবড়ে যায় আর মনে মনে বলে,
~ হঠাৎ ইলেকট্রিসিটি গেলো কেনো? আমার সাথে তো ফোন ও নেই যে ফোনের ফ্ল্যাশ অন করে এই অন্ধকার থেকে পরিত্রান পাবো।

তখনই কিছুটা ক্ষীণ আলো জ্বলে ওঠে। সিম্মির ঠিক সামনের দেয়ালে ভেসে তার ছবি লাল থ্রীপিছ পড়া একটি ছবি। সিম্মি মাথা নিচু করে বসে আছে সেই ছবি। সিম্মি চমকে যায়। সাথে সাথে আরেকটা ছবি ভেসে ওঠে সে ছবিতে সিম্মি হা ফুচকা খাচ্ছে। ছবি গুলো স্লাইড শো হচ্ছে,

তখনই কেউ গান গাইতে শুরু করে, কন্ঠটি সিম্মির অতি পরিচিত। সিম্মি হন্তদন্ত হয়ে এদিক সেদিক তাকায় কিন্তু কেউ নেই। পুরো হলে শুধু মাল্টিমিডিয়া প্রজেক্টরে সিম্মির এক এক মূহুর্তের ছবি ভেসে উঠছে,
তোমায় নিয়ে ভাবি না, ভুলতে গেলেও পারিনা

আমার পোড়া কপালে তুমি নেই তাই
মনের দুঃখে বারে বারে কই

( সিম্মি ব্যাকুল হয়ে আশেপাশে তাকায় আর মনে মনে বলে ~ আরাধ্যার এখানেই আছে কিন্তু কোথায়? এই কন্ঠ আরাধ্যার ছাড়া আর কারো হতে পারে না)
বড় ভালোবাসি, বড় ভালোবাসি
আমি মুখে বলি, মনে মনে বলি

( হঠাৎ দুটো হাত এসে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে, সিম্মি চোখ বন্ধ করে নেয় সিম্মি হাতে হাত রাখতে যাবে তখনই হাত দুটো সিম্মিকে ছেড়ে দেয়)
ব্যাথার সাথে গল্প বলি তোমায় বলি না
নিজের সাথে লড়াই করি সুখটাও দেখি না

কাছে যদি নাই আসো, ভালো যদি নাই বাসো
ভুলে যেও না

( ছবিতে ভেসে ওঠে সিম্মি আর আরাধ্যার একসাথে কাটানো সুন্দর মূহুর্ত, সিম্মি আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে হাসছে, সিম্মির চোখ ছলছল করে ওঠে। সিম্মি সামনে তাকিয়ে দেখতে পায়, একগুচ্ছ গোলাপের তোড়া আর তার পাশেই একটা চিঠি। সিম্মি চিঠি টা হাতে নিয়ে দেখতে পায় তাতে লেখা, Your crazy lover)

বড় ভালোবাসি, বড় ভালোবাসি
আমি মুখে বলি, মনে মনে বলি

( সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে চারদিকে তাকায় কিন্তু তার চোখ আরাধ্যারকে খুঁজে পাচ্ছে না। সিম্মি এক পা দুই পিছিয়ে যেতে নিলে টেবিলের সাথে হোঁচট খেতে নিলে কেউ একজন সিম্মির হাত ধরে ফেলে আর একটানে সিম্মিকে নিজের কাছে আনে, সিম্মির খুব কাছাকাছি চলে আসে)

ভিষণ ব্যাথার দিন গুলোতে কষ্ট বেদনা

নিজের কাছে লুকিয়ে রাখি কেউ তো জানে না

ফিরে পাওয়ার নেই এখানে চাওয়ার তার নেই তো
মানে ভুলে যাবো না

( সে সিম্মির চুলে নাক ডুবিয়ে দেয়, সিম্মি চোখ বন্ধ করে সেই ঘ্রাণ অনুভব করছে যে ঘ্রাণ আরাধ্যার শরীরে ছিলো)
তোমায় নিয়ে ভাবি না, ভুলতে গেলেও পারিনা
আমার পোড়া কপালে তুমি নেই তাই

মনের দুঃখে বারে বারে কই
( সে লোকটি আর কেউ নয় আরাধ্যার। আরাধ্যার সিম্মির কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিয়ে আস্তে করে সরে যায়)

বড় ভালোবাসি বড় ভালোবাসি,
আমি মুখে বলি, মনে মনে বলি

( সিম্মির চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে, সিম্মির মন শুধু আরাধ্যারকে খুঁজছে কিন্তু আরাধ্যার আড়ালে) বড় ভালোবাসি বড় ভালোবাসি,
আমি মুখে বলি, মনে মনে বলি

( সিম্মি কাঁদতে কাঁদতে বসে পড়ে, সিম্মির মনের অজান্তে মুখ ফসকে বেরিয়ে যায় ~ আরাধ্যার আপনি কোথায়? )
তখনই স্ক্রীনে ভেসে ওঠে, আমার সামনে আর কখনো আসবেন না তাহলে আমি নিজেকে শেষ করে ফেলবো।

সিম্মির মনে পড়ে যায় এই কথা সে বলেছিলো। সিম্মি মুখ চেপে ধরে কাঁদতে থাকে। সিম্মি পুরোপুরী স্থীর হয়ে গেছে। আবার সব অন্ধকার হয়ে যায়। আর সাথে সাথে সব লাইট অন হয়ে যায়। সিম্মি চোখ মুছে তাড়াতাড়ি উঠে দাড়িয়ে সব দিকে তাকায় কিন্তু আশেপাশে কেউ নেই। হঠাৎ সিম্মির কাঁধে কেউ হাত রাখে। সিম্মি ঘুরে তাকিয়ে দেখে তিলাত দাঁড়িয়ে আছে।

তিলাতকে দেখে সিম্মি চোখের পানি ধরে রাখতে পারে না। সিম্মি তিলাতকে জড়িয়ে ধরে কান্না জুড়ে দেয়। তিলাত সিম্মির মাথায় হাত রেখে সামনের দিকে তাকায়, সামনের আরাধ্যার দাঁড়িয়ে ছিলো। আরাধ্যার চোখ স্বচ্ছ জলে ভাসা কিন্তু বাঁধ ভাঙার অপেক্ষা।

সিম্মি আর আরাধ্যার এত কাছাকাছি থেকেও তাদের মধ্যে হাজার মাইলের দূরত্ব। আরাধ্যার, সিম্মির কষ্ট দেখে তিলাত নিজের অশ্রু ধরে রাখতে পারলো না। তিলাতের চোখ বেয়ে দুফোঁটা অশ্রু গড়িয়ে পড়লো।

তিলাত চোখের পানি মুছে সিম্মির মাথায় হাত দিয়ে বললো,
~ কি হয়েছে সিম্মি? কাঁদছো কেনো? (সিম্মির মাথায় হাত বুলিয়ে)
~ সে সে এসেছিলো? (হেঁচকি তুলে)

~ কে এসেছিলো? (অবাক হওয়ার ভান করে)
~ মা মা আরাধ্যার, (কেঁদে কেঁদে)

~ কই আমি তো দেখলাম না? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ আমি অনুভব করেছি, আমি জানি আরাধ্যার আমার আশেপাশে ছিলো? (কেঁদে কেঁদে)
~ আমার দিকে তাকাও, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ হুম, (মাথা নেড়ে)
~ আরাধ্যারকে যখন এতো ভালোবাসো তাহলে দূরে সরিয়ে রেখেছো কেনো? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আমি, (বিচলিত হয়ে)

বলতে গিয়ে থেমে যায়। সিম্মি তিলাতকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছে দৌড়ে বের হয়ে যায়। তিলাত সিম্মির যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থাকে। আরাধ্যার তিলাতের পাশে এসে বলে,
~ জান আমার অনেক সুন্দরী হয়ে গেছে। (চোখ মুছে)
~ ঠিক বলেছো ভাইয়া। (মুচকি হেসে)

~ দেখিস আবার প্রেমে পড়ে যাস না। (মুচকি হেসে)
~ আরে না ভাইয়া তুমি টেনশন ফ্রি থাকো। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)

~ ওর দিকে খেয়াল রাখিস, (শ্বাস ফেলে)
~ সবসময় কড়া নজরে রাখি। (হেসে)

~ না জানি কবে আমার জানকে নিজের করে পাবো? (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
~ খুব তাড়াতাড়ি পাবে, অপেক্ষা করো। (আরাধ্যার কাঁধে হাত রেখে)

~ তাড়াতাড়ি যা দেখ কাঁদতে কাঁদতে কোথায় গেলো? (গেইটের দিকে ইশারা করে)
~ ঠিক আছে ভাইয়া, ভালো থেকো। (হেসে)

~ সাবধানে যাস। (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

~ আচ্ছা, আসি। (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ হুম। (মাথা নেড়ে)

তিলাত ও চলে যায়। আরাধ্যার দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে হাটতে নিবে তখনই তার চোখ যায় ফ্লোরে পড়ে থাকে গোল্ডেন কালারের ঝুমকার উপর। আরাধ্যার বুঝতে পারে ঝুমকাটি সিম্মির। আরাধ্যার ঝুমকাটি তুলে নেয়। আর বলে,

~ খুব মিস করি তোমাকে জান, আজ তোমাকে এতো কাছে পেয়েও পায়নি। কবে তোমাকে নিজের করে পাবো? কিন্তু আমি তোমার কথা রেখেছি জান,
সিম্মি দৌড়ে গাড়িতে এসে ওঠে। সিম্মি জোরে জোরে কাঁদতে থাকে আর বলে,

~ আমি জানি, আপনি এসেছিলেন হ্যাঁ আপনি এসেছিলেন। আপনার শরীরের ঘ্রাণ আমার চিরচেনা। আপনি আমার কাছাকাছি ছিলেন তবুও আমি আপনাকে নিজের করে নিতে পারিনি। আমি না হয় রাগ করে বলেছিলাম সেজন্য আমার সামনে আসলেন না।

আমার পিপাসু চোখ আপনাকে দেখে পিপাসা মেটাতে চেয়েছিলো সেটা কি একবারও বুঝতে চেষ্টা করেননি। ভালোবাসি অনেক ভালোবাসি আপনাকে। (কেঁদে কেঁদে)
সিম্মি সেই চিঠিটা হাতে নিয়ে বুকে চেপে ধরে বলে,

~ আপনি আমার আর আমি আপনার। (কেঁদে কেঁদে)
কিছু সম্পর্ক ভেঙে যায় ইগোর কারণে। ঝগড়া বিবাদ হলেও কাউকে না কাউকে তো আগে সরি বলতেই হবে নাহয় কখনো সেই সম্পর্ক জোড়া লাগে না।


পর্ব ৫০

তিলাত গাড়ির সামনে এসে পড়ে। সিম্মি তিলাতকে দেখে চুপ হয়ে যায় আর চিঠিটা শাড়ির আঁচলের নিচে লুকিয়ে ফেলে। তিলাত গাড়িতে ওঠে। তারপর গাড়িতে স্টার্ট দেয়। সিম্মি চুপচাপ বসে আছে। তিলাত সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ দৌড়ে চলে আসলে যে? (গাড়ি চালাতে চালাতে)
~ এমনি, (অন্যদিকে তাকিয়ে)
~ মন খারাপ করে আছো? (স্টিয়ারিং ধরে)

~ কই না তো, (বাহিরের দিকে তাকিয়ে)
~ দেখো সিম্মি মিথ্যে বলো না, আমি জানি তোমার মন খারাপ, (গম্ভীর কণ্ঠে)

~, (নিশ্চুপ হয়ে আছে)
~ যাকে এতো ভালোবাসো, প্রতিটা মূহুর্তে যাকে এতো মিস করো তাকে কেনো নিজের থেকে দূরে সরিয়ে রেখেছো? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আমি জানি না, (মাথা নেড়ে)

~ ভালবাসায় মান, অভিমান, ইগো এসব থাকবেই। তাই বলে সেই জের ধরে বসে থাকলে সম্পর্কে ফাটল ধরে। (দৃঢ় কন্ঠে)
~, (ছলছল চোখে বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে)

~ যাই হোক, একটা কথা বলার ছিলো তোমাকে, (গাড়ি চালাতে চালাতে)
~ হুম বলো, (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

~ অভির পরিবার চায় এই শত্রুতা শেষ করতে, (বিরক্তিকর সুরে)
~ কীভাবে? (অবাক হয়ে)

~ তিতলির সাথে অভির বিয়ে দিয়ে। (সামনের দিকে তাকিয়ে)
~ কিহ্? কি বলছো এসব? (অবাক হয়ে)

~ তোমার মা তো এটাই বললো মাইশাকে আর মাইশা আমাকে বললো। আমি তোমাকে বললাম। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আমি তো এর কিছুই জানি না! (বিচলিত হয়ে)

~ জানবে কি করে? তোমার কাছে তো ফোন নেই যে কেউ তোমাকে ফোন করে বলবে। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ হ্যাঁ সেটাই, (মাথা নেড়ে)

~ আমার মতে, তুমি কিছুদিন তোমার বাসা থেকে বেড়িয়ে এসো এতে তোমারও ভালো লাগবে আর ওদের একটা বিহিত করে আসো কারণ অভির বিশ্বাস নেই ও নিশ্চয়ই আবার কোনো ফন্দি আঁটছে। (রেগে)
~ ঠিক বলেছো তাহলে কালকে না হয় যাবো। (সায় দিয়ে)

~ ঠিক আছে আমি তোমাকে পৌঁছে দেবো কেমন। (সামনের দিকে তাকিয়ে)
~ আচ্ছা। (মাথা নেড়ে)

তিলাত আর সিম্মি বাসায় চলে আসে। সিম্মি কারও সাথে কথা না বলে সোজা রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে আবারও কান্না শুরু করে দেয়। কান্না করতে করতে সিম্মি ঘুমিয়ে পড়ে। সকাল সকাল ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হয়। তিলাত আগে থেকেই মাইশাকে সব বলে রাখে। তারপর সিম্মি আর তিলাত নাস্তা সেরে বের হয় বাসার উদ্দেশ্য।

আজ প্রায় বহুদিন পর সিম্মি বাসায় যাচ্ছে। সিম্মির সেদিকে কোনো ভ্রুক্ষেপ নেই। সিম্মির বাসার সামনে এসে গাড়ি থামে। তিলাত গাড়ি থেকে নেমে যায় সিম্মিও বের হয়। সিম্মি বাসার সামনে দাড়িয়ে পুরো বাড়ির দিকে তাকিয়ে আছে। তিলাত সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ এভাবে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে বাসাকে দেখবে নাকি ভেতরে যাবে? (মুচকি হেসে)

~ হ্যাঁ চলো। (হেসে)
তিলাত আর সিম্মি ভেতরে। সিম্মির দরজার সামনে দাঁড়িয়ে কলিং বেল বাজায়। তিতলি এসে দরজা খুলে। তিতলি সিম্মিকে দেখে পুরোপুরি শকড্ হয়ে গেছে। তিতলি সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে আর বলে,

~ আপি কেমন আছো তুমি? (কেঁদে কেঁদে)
~ ভালো আছি তুই কেমন আছিস? (তিতলিকে জড়িয়ে ধরে)

~ একটুও ভালো না। তোমাকে অনেক অনেক বেশি মিস করেছি। (কাঁদতে কাঁদতে)
সিম্মির মা তিতলিকে ডাকতে ডাকতে দরজার কাছে এসে বলে,

~ তিতলি কে এসেছে? (কাজ করতে করতে)
তিতলি আনন্দে চিৎকার দিয়ে বলে,
~ আম্মু আপি এসেছে।

তিতলির কথা শুনে সিম্মির মা দৌড়ে দরজার কাছে আসে। সিম্মির মায়ের চোখ ছলছল করে ওঠে। সিম্মি তিতলিকে ছেড়ে দিয়ে তার মাকে জড়িয়ে ধরে। সিম্মির মা কাঁদতে কাঁদতে বলে,
~ কেমন আছিস মা? (সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে)

~ ভালো আছি তুমি কেমন আছো? (মাকে জড়িয়ে ধরে)
~ তোকে ছাড়া কিভাবে ভালো থাকি বল? ভালো হয়েছে তুই এসেছিস। (সিম্মির গালে হাত রেখে)

তিলাত হালকা কাশি দিয়ে সবার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আপনারা সবাই তো এখানে দাঁড়িয়েই কান্না কাটি শুরু করে দিলেন আগে ভেতরে তো চলুন। (সবার দিকে তাকিয়ে)

এবার সবার নজর গেলো তিলাতের দিকে, তিলাত তিতলির দিকে আড়চোখে তাকাচ্ছে। সিম্মির মা তিলাতের দিকে তাকায়। সিম্মি তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ মা এই হলো তিলাত, আমরা খুব ভালো বন্ধু। (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

~ শুধু বন্ধু না আমরা ভাইবোন তাই না সিম্মি। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ একদম ঠিক বলেছো, ( মুচকি হেসে)

সিম্মির মা তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ কেমন আছো বাবা? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

~ আলহামদুলিল্লাহ ভালো, আপনি? (হেসে)
~ এইতো বাবা, আসো তোমরা ভিতরে আসো! (তিলাত আর সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ হ্যাঁ চলো, (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

তিলাত তিতলির দিকে তাকিয়ে একটা মুচকি হাসি দেয়, তিতলি কিছুটা লজ্জা পেয়ে ভেতরে যায়। তিলাত আর সিম্মি ভেতরে আসে। সিম্মির পুরো বাসায় চোখ বুলিয়ে নিচ্ছে। সিম্মির বাবা নিউজপেপার হাতে নিয়ে রুম থেকে বের হচ্ছে।

সিম্মি করুন সুরে তার বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ বাবা কেমন আছো? (করুন সুরে)

সিম্মির বাবা চমকে যান, ধীর চোখে সে সিম্মির দিকে তাকায়। সিম্মি দৌড়ে এসে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরে আর কাঁদতে কাঁদতে বলে,
~ বাবা তুমি কেমন আছো? (জড়িয়ে ধরে)

~ তোকে ছাড়া কি করে ভালো থাকি মা! (কাঁদো কাঁদো সুরে)
~ আমি তো এসে গেছি, (চোখ মুছে)

~ আমি অনেক খুশি হয়েছি মা। (সিম্মির মাথায় হাত রেখে)
সিম্মি তার বাবার সাথে তিলাতের পরিচয় করিয়ে দেয়। তিলাত আর সিম্মির বাবা সোফায় বসে কথা বলে। তিতলি সিম্মিকে নিয়ে সিম্মির রুমে যায়। অনেক দিন পর আজকে তার রুমে আসে। তিতলি সিম্মির কাঁধে হাত রেখে বলে,

~ তুমি যেভাবে সব গুছিয়ে রাখতে আমিও তেমনি সব গুছিয়ে রেখেছি। প্রতিদিন তোমার রুম ঝাড়ু দিয়ে পরিষ্কার করেছি। দেখো সব আগের মতোই আছে। যখন তোমাকে খুব মিস করতাম তখন তোমার রুমে এসে বিছানায় শুয়ে কাঁদতে কাঁদতে ঘুমিয়ে পড়তাম। (কাঁদো কাঁদো সুরে)
~ তাই বুঝি আমার কলিজা টা, (তিতলির গালে হাত রেখে)

~ হ্যাঁ আপি, তুমি আর যাবে নাতো? (সিম্মির হাত ধরে)

~ না কোথাও যাবো না তোদের ছেড়ে, (মাথা নেড়ে)

~ সত্যি বলছো তো? (ভ্রু কুঁচকে)
~ তিন সত্যি, (তিতলির গাল টেনে)

~ আপি তুমি ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর এসো আমরা একসাথে নাস্তা করবো কেমন? (হেসে)
~ ঠিক আছে। (সায় দিয়ে)

সিম্মি রুমে চুপচাপ কিছুক্ষণ বসে থাকে। শরীর বড্ড ক্লান্ত হয়ে গেছে। সিম্মির মনে হয় সে অতিরিক্ত দূর্বল হয়ে যাচ্ছে দিনদিন। সিম্মি পেটে হাত রেখে বলে,
~ দিনদিন শরীর খুব খারাপ হয়ে যাচ্ছে। কেনো এমন হচ্ছে? (পেটে হাত রেখে)

সিম্মির চোখ ভারি হয়ে আসে, মনে হয় রাজ্যের ঘুম সব সিম্মির চোখে। সিম্মি বিছানায় গা এলিয়ে দিতেই ঘুমিয়ে পড়ে। দুপুরে সিম্মির ঘুম ভেঙে যায় তার মায়ের ডাকে। সিম্মি কোনোরকম উঠে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসে। সিম্মি তেমন কিছু খায় না। খাওয়া শেষ করে সিম্মি রুমে যায়। তিলাতও সিম্মির রুমে আসে। সিম্মি তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ তিলাত আমার একটু ডাক্তারের কাছে যেতে হবে। (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

~ কখন যাবে? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ একটু পরে, (ঘড়ির দিকে তাকিয়ে)

~ ঠিক আছে তুমি রেডি হয়ে নাও, আমি তোমার সাথে যাবো। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ আচ্ছা। (মাথা নেড়ে)

তিলাত উঠে গেস্ট রুমে চলে যায়। সিম্মি ক্রিম কালারের একটা শাড়ি পড়ে। তারপর কিছুক্ষন পরে তিলাতের সাথে ডাক্তারের কাছে যায়।
ডাক্তার সিম্মিকে চেকাপ করে দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,

~ আপনি ভিষণ দূর্বল। এতটা দূর্বল হলে তো চলে না এই প্রভাব আপনার বাচ্চার ওপর পড়বে। এই সময় টেনশন, ডিপ্রেশন, হতাশা থেকে যতটা দূরে থাকা যায় ততটা ভালো কিন্তু আপনি তো তার বিপরীত। (রেগেমেগে)

~, ( চুপচাপ শুনছে)
~ আপনার হাসবেন্ড এসেছেন? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

কথাটা শুনে সিম্মির মন একবারে খারাপ হয়ে যায়। সিম্মি কোনোরকমে চোখের পানি আঁটকে বলে,
~ না, (মাথা নেড়ে)

~ একা এসেছেন? (শান্ত গলায়)
~ না ভাই এসেছেন সাথে, (নিচের দিকে তাকিয়ে)

~ আপনি বাহিরে যান আর তাকে ভেতরে আসতে বলুন, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ ঠিক আছে, (মাথা নেড়ে )
সিম্মি চেম্বার থেকে বের হয়ে তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ তোমাকে ভেতরে ডাকছেন, (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
~ ঠিক আছে তুমি বসো আমি যাচ্ছি। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

তিলাত ভেতরে যায়। সিম্মি ওয়েটিং রুমে চেয়ারে বসে অপেক্ষা করে তিলাতের। তিলাত ডাক্তারের সামনে বসে। ডাক্তার তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আপনি কি পেসেন্টের ভাই? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
~ জি, (মাথা নেড়ে)

~ আপনারা কি করেন? একটুও খেয়াল রাখেন না পেসেন্টের। তার ফিজিক্যাল কন্ডিশন খুব খারাপ। অপারেশনের সময় তো বাচ্চা আর মায়ের জীবন নিয়ে টানাপোড়ন লাগবে তখন সেই দায়ভার কে নিবে বলুন। (রেগেমেগে)

~ আসলে, (কথা বলতে গিয়ে থেমে)
~ পেসেন্টের ব্রেন টিউমার, সেটা কি জানেন? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

তিলাত ডাক্তার কথা শুনে পুরোপুরি চমকে যায়। তিলাতের পায়ের নিচ থেকে মাটি সরে যায়। ডাক্তার বলে,
~ পেসেন্টের এই রিপোর্ট গুলো দেখুন, তার অবস্থা কতটা গুরুতর সেটা জানেন। এখনতো তাকে কোনো ট্রিটমেন্ট দেওয়া যাবে না। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)
~ তাহলে কি করা যায়, (চিন্তিত হয়ে)

~ শর্ট ট্রিটমেন্টের উপর রাখতে হবে। (রিপোর্টের দিকে তাকিয়ে)

ডাক্তার আরো অনেক কথা বলে তিলাতকে। তিলাত চুপ হয়ে সব কথা শুনছিলো। সবার শেষে ডাক্তার বলে,
~ পেসেন্ট যেন না জানে তার ব্রেন টিউমার তাহলে সে আরো ডিপ্রেসড হয়ে পড়বে। (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
~ ঠিক আছে ম্যাম। (মাথা নেড়ে)

~ কয়েকদিন পরপর আসবেন চেকাপ করাতে।

তিলাত কথা বলার ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। তিলাত বুঝতে পারছে তার কি করা উচিত বা কি বলা উচিত। সময় যেনো থমকে গেছে তার কাছে। তিলাতকে বের হতে দেখে সিম্মি তিলাতের কাছে আসে। তিলাত হতাশ হয়ে সিম্মির দিকে তাকায়।


পর্ব ৫১

তিলাত নির্বাক হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সিম্মি তিলাতের সামনে এসে দাঁড়ায়। তিলাতের মুখে গভীর চিন্তার ছাপ স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে। সিম্মি কিছুটা বিচলিত হয়ে বলে,

~ ডাক্তার কি বললো তিলাত? (বিচলিত হয়ে)
~ বললো তুমি খুব দূর্বল, তোমার সঠিক যত্ন নিতে হবে। (অস্ফুট স্বরে)

~ তোমার মুখ এতটা শুকিয়ে গেছে কেনো? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
~ আসলে ভালো লাগছে না শরীরটা এজন্য। (ইতস্তত করে)
~ সত্যি বলছো তো? (সন্দেহ করে)

~ চলো বাসায় যাবে এমনিতেই তুমি খুব ক্লান্ত, (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ হ্যাঁ চলো, (মাথা নেড়ে)
তিলাত হাঁটা শুরু করে সাথে সিম্মিও। সিম্মি গাড়িতে উঠে বসে। তিলাত সিম্মির কাছে গিয়ে বলে,

~ তুমি বসো আমি ওষুধ নিয়ে আসছি। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ ঠিক আছে। (মাথা নেড়ে)
তিলাত ফার্মেসী থেকে প্রয়োজনীয় ওষুধ কিনে নিয়ে এসে সোজা গাড়িতে উঠে গাড়ি স্টার্ট দেয়। তিলাত চুপচাপ গাড়ি চালাচ্ছে কোনো কথা বলছে না। সিম্মি বাহিরের দিকে তাকিয়ে আছে। তিলাত সিম্মির দিকে একপলক তাকিয়ে আবারও ড্রাইভিং এ মন দেয়। তিলাত মনে মনে বলে,

~ হে খোদা এ তুমি কি করলে? সিম্মির জীবনের ফুল এত শীঘ্রই ঝরে যাবে? ওর তো কোনো দোষ নেই তবুও এত কষ্ট কেনো ওর প্রাপ্য? কষ্টে কষ্টে ওর জীবনের ইতি হয়ে যাবে? এ কেমন বিচার তোমার? আরাধ্যার ভাইয়া এ খবর শুনলে কখনো নিজেকে সামলে রাখতে পারবে না। হে খোদা তুমি এভাবে সব তছনছ করে দিও না। (মনে মনে)
সিম্মি তিলাতের দিকে তাকিয়ে আবার অন্যদিকে তাকায় আর মনে মনে বলে,

~ তিলাত এতটা চিন্তিত হয়ে গেলো কেনো? ডাক্তারের চেম্বার থেকে বের হওয়ার পর থেকে ওকে কেমন যেনো লাগছে মনে হচ্ছে গভীর চিন্তায় মগ্ন আছে কোনো ব্যাপার নিয়ে। কিন্তু কি সেটা? (বাহিরের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বলে)

গাড়ি এসে সিম্মির বাসার সামনে থামে। সিম্মি গাড়ি থেকে বের হয় সাথে তিলাতও। দুজনে বাসায় যায়। সিম্মির বাবা, মা ড্রইং রুমে বসে আছে। সিম্মি আর তিলাতকে দেখে সিম্মির মা জিজ্ঞেস করে,

~ কি বললো ডাক্তার? (বিচলিত হয়ে)
তিলাত সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও আমি আঙ্কেল, আন্টির সাথে কথা বলছি।
~ আচ্ছা। (মাথা নেড়ে)

সিম্মি রুমে চলে যায়। তিলাত সোফায় বসে মাথা নিচু করে। সিম্মির মা তিলাতকে দেখে বুঝতে পারে কিছু একটা হয়েছে? সিম্মির মা তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ কি হয়েছে বাবা? সব ঠিক আছে তো? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

সিম্মির বাবা বিচলিত হয়ে তিলাতকে জিজ্ঞেস করে,
~ তোমাকে এতো চিন্তিত দেখাচ্ছে কেনো?

তিলাতের চোখে অশ্রুর ঢল নেমেছে। তিলাত দুই আঙুল দিয়ে চোখ চেপে ধরে বলে,
~ সিম্মির ব্রেনে টিউমার ধরা পড়েছে।

তিলাতের মুখে এমন কথা শুনে সিম্মির বাবা আর মায়ের মাথায় যেনো আকাশ ভেঙে পড়ে। সিম্মির মা আর কান্না চেপে রাখতে পারে না। সিম্মির বাবা হতভম্ব হয়ে গেছে। তিলাত সিম্মির মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ আন্টি সিম্মিকে এ বিষয়ে কোনো কিছু জানানো যাবে না কারণ সিম্মি অতিরিক্ত দূর্বল। সিম্মি সহ্য করতে পারবে না এই দুঃসংবাদ।
~ এর কি কোনো প্রতিকার নেই বাবা? (কাঁদতে কাঁদতে)

~ সিম্মি এখন প্রেগনেন্ট তাই ওকে কোনোরকম ট্রিটমেন্ট দেওয়া যাবে না। আর এখন থেকে সিম্মির সঠিক দেখভাল না করলে অপারেশনের সময় সিম্মির আর তার সন্তানের জীবন নিয়ে দোটানায় পড়তে হবে। (চোখ মুছে)
সিম্মির মা মুখে শাড়ির আচঁল গুঁজে কান্না করতে করতে বলে,

~ এই লেখা ছিলো আমার মেয়েটার কপালে?
সিম্মির মা কাঁদতে কাঁদতে দৌড়ে রুমে চলে যায়। তিলাত সিম্মির বাবার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আঙ্কেল ভেঙে পড়লে চলবে না আল্লাহকে স্মরণ করুন। (সিম্মির বাবার দিকে তাকিয়ে)

তিলাত আর কিছু বলতে পারলো না। তিলাত উঠে রুমে চলে গেলো। তিলাতের গলা ধরে আসে। তিলাতের ফোন বেজে ওঠে। তিলাত হাতে ফোন হাতে নিয়ে দেখে আরাধ্যার কল করেছে। তিলাত ফোন রিসিভ করে,

~ হ্যাঁ ভাইয়া বলো, (বহু কষ্টে নিজেকে শান্ত করে)
~ তখন বললি যে ডাক্তারের কাছে যাচ্ছিস? (শান্ত হয়ে)

~ হ্যাঁ গিয়েছিলাম একটু আগে আসলাম। (শান্ত হয়ে)
~ ডাক্তার কি বললো? (বিচলিত হয়ে)

আরাধ্যার কথা শুনে তিলাতের চোখের পানির বাঁধ ভেঙে গেলো। তিলাতের স্তব্ধতায় আরাধ্যার বুঝতে পারে এ কোনো দুঃসংবাদের আভাস। আরাধ্যার উদ্বিগ্ন হয়ে তিলাতকে বলে,
~ কি হলো বল? ডাক্তার কি বলেছে? (উদ্বিগ্ন হয়ে)

~ ভাইয়া, (কাঁদো কাঁদো সুরে)
~ হ্যাঁ বল, (চিন্তিত হয়ে)

~ ভাইয়া সিম্মির, (কাঁদো কাঁদো সুরে)
~ কি হয়েছে সিম্মির? (অবাক হয়ে)

~ সিম্মির ব্রেন টিউমার ধরা পড়েছে আর সিম্মির কন্ডিশন খুব খারাপ, সিম্মি দিনদিন দূর্বল হয়ে যাচ্ছে এমনটাি যদি চলতে থাকে অপারেশন টাইমে সিম্মিকে বাঁচানো অসম্ভব হয়ে যাবে সেই সাথে বাবুর জীবনও বিপদে পড়বে। (চোখের পানি মুছে)

কথাটা যেনো বারবার প্রতিধ্বনিত হচ্ছে আরাধ্যার কানে। আরাধ্যার হাত থেকে ফোনটা পড়ে যায়। আরাধ্যার যেনো স্থীর হয়ে গেছে। আরাধ্যার বলতে থাকে,
~ এত পরিকল্পনা করে রেখেছো আমাকে ছেড়ে যাওয়ার? কেনো জান কেনো? আমাকে এতো শাস্তি কেনো দিচ্ছো? আমার একটা ভুল আমার জীবনের কাল হয়ে দাঁড়ালো! তোমার কিচ্ছু হবে না জান, (কাঁদতে কাঁদতে)

তিলাতের সব কথা তিতলি শুনে নেয়। তিলাতের পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলো কিন্তু তিলাত সেটা খেয়াল করেনি। তিলাত ঘুরতেই পেছনে তিতলিকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে। তিলাত থতমত খেয়ে যায় তিতলিকে দেখে। তিতলি কাঁদছে মুখে হাত দিয়ে। তিতলি দৌড়ে যেতে নিলে তিলাত তিতলির হাত ধরে ফেলে। তিতলি দাঁড়িয়ে যায়। তিলাতের দিকে তিতলি তাকিয়ে তার হাতের দিকে তাকায়। তিলাত তিতলির হাত ছেড়ে দিয়ে বলে,

~ Extremely sorry, (হাত ছেড়ে দিয়ে)
~ আপনি আরাধ্যার ভাইয়ার সাথে কথা বলছিলেন তাই না? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)

~ কথাটা কাউকে বলো না আর সিম্মিকে তো একদমই না কারণ ওর ফিজিক্যাল + মেন্টালি কন্ডিশন খুব খারাপ ওকে কোনো ভাবে উত্তেজিত করা যাবে না। আশা করি বুঝতে পারছো আমি কি বলতে চাইছি? (তিতলির দিকে তাকিয়ে)
~ আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন কেউ জানবে না। (চোখ মুছে)

কথাটা বলে তিতলি দৌড়ে বের হয়ে যায় রুম থেকে। তিলাত মাইশাকে কল করে সব বলে। সবার মধ্যে যেনো শোকের ছায়া নেমে আসে। কিন্তু সিম্মি এসব না জানলেও সে বুঝতে পারে তার কিছু একটা হয়েছে।

সবাই সিম্মির খুব খেয়াল রাখে। সব সময় চোখে চোখে রাখে। মাইশা সিম্মির সাথে প্রায়ই দেখা করতে আসে। তিলাত কাজের বাহানায় সিম্মিদের বাসায়ই থাকে। সিম্মি স্নোহার বাসায় যেতে চাইলেও সিম্মির মা, বাবা বাঁধা দেয়। সবকিছু মোটামুটি ঠিকঠাক ভাবেই চলছিলো। সিম্মিসহ সবাই রাতে ডিনার করছে। সিম্মি মাথা নিচু করে খাচ্ছে তিলাত সিম্মির দিকে তাকিয়ে দেখে সিম্মির নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। তিলাত সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,

~ সিম্মি তোমার নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছে,
সাবই সিম্মির দিকে তাকিয়ে দেখে সত্যি সত্যি সিম্মির নাক থেকে রক্ত বের হচ্ছে। সিম্মি নাকে হাত দিয়ে দেখে তাজা রক্ত।

দিন দিন সিম্মির মাথা ব্যাথা অতিরিক্ত মাত্রায় বেড়ে গেছে। যতরকম সাহায্য দরকার সব সাহায্য আরাধ্যার করছে আড়াল থেকে। অভির পরিবার তিতলির সাথে অভির বিয়ে দিতে চাইলেও অভি রাজি হয়না। অভি নেদারল্যান্ডসে চলে যায় সারাজীবনের জন্য। মাইশা আর সাহিলেরও বিয়ে হয়ে যায়।

সিম্মি আগের মতো নেই। আগের থেকে অনেক বেশি সুন্দরী হয়ে গেছে কিন্তু সিম্মির চোখের নিচে কালো দাগ হয়ে গেছে। এখন আর সিম্মি শাড়ি পড়ে না বরং ঢিলেঢালা পোশাক পড়ে। চলাফেরা করতে কষ্ট হয় কারণ পা অনেকটা ফুলে গেছে।

সিম্মি তার বাবুর অস্তিত্ব টের পায় কারণ ক্ষানিকক্ষণ পরপর লাথি দেয়। জিনিসটা সিম্মির কাছে অনেক ভালো লাগলেও সিম্মির মস্তিষ্ক এটা সহ্য করতে পারে না। তখনই সিম্মির মাথা ব্যাথা প্রচন্ড ভাবে বেড়ে যায়।

ইদানীং সিম্মির মাথা ব্যাথা নিত্যদিনের একটা অসুস্থতা হয়ে দাঁড়িয়েছে, সিম্মির অপারেশনের সময়ও ঘনিয়ে এসেছে। আরাধ্যার সিম্মিকে দূর থেকে দেখে। সিম্মি আরাধ্যার ছবি দেখে দেখে ঘুমায়।

সিম্মি সোফার উপর বসে আছে। তিতলি পাশে বসে বকবক করলেও সিম্মি তেমন কথা বলে না। হঠাৎ সিম্মির অনুভব হয় যে তার পেটে ব্যাথা হচ্ছে। সিম্মি মনে করে হয়তো দুষ্ট সোনা হয়তো লাথি দিয়েছে কিন্তু না ব্যাথাটা ক্রমশ বাড়ছে সেই সাথে মাথা ব্যাথাটাও বাড়ছে। সিম্মি তিতলিকে ইশারা করে তার মাকে ডাকতে বলে। তিতলি দৌড়ে চলে যায় তার মাকে ডাকতে। সিম্মি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় আর তখনি সিম্মি,


পর্ব ৫২

সিম্মি ধীরে ধীরে উঠে দাঁড়ায় সোফা থেকে। আর তখনই সিম্মির মাথায় চক্কর দেয়। মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে তিলাত এসে সিম্মিকে ধরে ফেলে। সিম্মির মা, তিলাত, তিতলি চলে আসে। তিলাত তাড়াতাড়ি এম্বুলেন্স কল করে আসতে বলে।

আরাধ্যার পুরো দিন টা আজকে খুব অস্থিরতা মধ্যে দিয়ে কেটেছে। আরাধ্যার যেনো কোনো কিছুতেই শান্তি পাচ্ছে না। শুধু বার বার সিম্মির মুখ ভেসে উঠছে আরাধ্যার চোখে। আরাধ্যার বুঝতে পারে, কিছু না কিছু হবো আজকে। মাহওর ঠিক করে যে, সে আজ সিম্মির সাথে দেখা করবে। আরাধ্যার তাড়াহুড়ো করে রেডি হয়ে নেয়।

সিম্মির পেইন ধীরে ধীরে বাড়ছে। অল্প সময়ের মধ্যে এম্বুলেন্স চলে আসে। সিম্মিকে এম্বুলেন্সে ওঠানো হয়। সিম্মির হাত ধরে বসে আছে তিলাত তার পাশে তার মা আর তিতলি। সিম্মি তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আমি আরাধ্যার সাথে কথা বলবো! (কেঁদে কেঁদে )

~ দাঁড়াও আমি কল করছি। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
তিলাত তাড়াতাড়ি ফোন বের করে আরাধ্যারকে কল করে, সিম্মির কানের কাছে ধরে। আরাধ্যার ফোন রিসিভ করে বলে,
~ হুম তিলাত বল? (ফোন রিসিভ করে)

সিম্মি কান্নার সুরে বলে,
~ আরাধ্যার, (শান্ত গলায়)

সিম্মির কন্ঠ শুনে আরাধ্যার পুরোপুরি অবাক হয়ে যায়। আরাধ্যার এতটুকু বুঝতে পারে যে সিম্মির পেইন উঠেছে। আরাধ্যার অস্ফুট স্বরে বলে,
~ জান, (চমকে গিয়ে)

~ আরাধ্যার আমি আপনার সাথে দেখা করতে চাই, (কেঁদে কেঁদে)

~ হ্যাঁ জান, কোথায় দেখা করবে বলো? আমি সেখানে আসছি। (বিচলিত হয়ে)
~ হা হা হাসপা, (দম উঠাতে না পেরে)

কথাটা পুরোপুরি বলার আগে সিম্মি বেহুশ হয়ে যায়। আরাধ্যার ভয় পেয়ে যায়, তিলাত সিম্মির কানের কাছ থেকে ফোন নিয়ে বলে,
~ ভাইয়া তুমি সিটি হসপিটালে চলে আসো তাড়াতাড়ি।

আরাধ্যার কথাটা শুনে ফোন কেটে দিয়ে দৌড়ে গাড়িতে উঠে ড্রাইভার গাড়ি স্টার্ট দেয়। সিম্মির জ্ঞান ফিরলেও ব্যাথার মাত্রা বেড়ে গেছে অনেক। কিছুক্ষণের মধ্যে গাড়ি এসে হাসপাতালের সামনে থামে। স্ট্রেচারে করে সিম্মিকে নামানো হয় গাড়ি থেকে নামানো হয়। সিম্মির চোখ শুধু আরাধ্যারকে খুঁজছে।

আরাধ্যার লম্বা জ্যামের মধ্যে বসে আছে। রাস্তায় এতো পরিমাণে জ্যাম যা বলার বাহিরে। আরাধ্যার আশেপাশে তাকিয়ে বুঝতে পারে এই জ্যাম ছাড়তে আরো এক থেকে দেড় ঘন্টা লাগবে। আরাধ্যার গাড়ি থেকে বের হয়ে দ্রুত হাঁটা শুরু করে।

সিম্মিকে অটিতে নেওয়া হয়। ডাক্তার এসে সিম্মিকে চেকাপ করে বলে,
~ পেসেন্টের প্রেগনেন্সি পেইনের থেকেও তার হেডেক পেইন অতি মাত্রায় বেশি। তাড়াতাড়ি তাকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হবে। আগে তার অপারেশন করতে হবে তারপর টিউমারের অপারেশন করা হবে। (চিন্তিত হয়ে)

সিম্মির মা কাঁদছে, তিতলি তাকে সান্ত্বনা দিচ্ছে। ডাক্তার তিলাতের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ পেসেন্টের হাসবেন্ড কোথায়? (তিলাতের দিকে তাকিয়ে)
~ সে এসে পড়বে কিছুক্ষণের মধ্যে, (থতমত খেয়ে)

~ এতোক্ষণ অপেক্ষা করা যাবে না কারণ পেসেন্টের অবস্থা খুব ক্রিটিক্যাল। আপনি তো পেসেন্টের ভাই তাই না? (মাথা নেড়ে)
~ জি হ্যাঁ। (মাথা নেড়ে)

~ কিছু ফর্মালিটিস পেপোরে সাইন আপ করতে হবে, আপনি আমার সাথে আসুন। (তিলাতকে ডেকে)
~ জি চলুন। (মাথা নেড়ে)

তিলাত ডাক্তারের সাথে যায়। সিম্মির মা সিম্মির কাছে যায়। সিম্মি তার মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ মা আরাধ্যার কি আসবে না? (মায়র হাত ধরে)

~ একটু অপেক্ষা কর মা, আরাধ্যার চলে আসবে এখনি। (মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে)
~ মা আমি আর সহ্য করতে পারছি না। (কেঁদে কেঁদে)
~ মা একটু শান্ত হ, (কেঁদে কেঁদে)

~ মা আমি মনে হয় আর বাঁচবো না, (মায়ের দিকে তাকিয়ে)

~ চুপ কর মা, এসব কথা আর বলিস না, ( কেঁদে কেঁদে)
~ মা আমার ব্রেন টিউমার হয়েছে তাই না, (তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে)
~, (মুখ চেপে ধরে কান্না করে)

~ চুপ করে আছো কেনো? আমি সব জানি, আমি সেদিন রিপোর্ট গুলো দেখেছিলাম। আমি বুঝতে পেরেছিলাম যে আমার কিছু একটা হয়েছে। (ঢোক গিলে)
~ মা তোর কিচ্ছু হবে না। (কেঁদে কেঁদে)
~ মা আরাধ্যার আসতে এতো দেরি করছে কেনো? (আশেপাশে তাকিয়ে)

কথাটা বলতে না বলতেই আরাধ্যার সিম্মির বেডের সামনে চলে আসে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে আছে। সিম্মির চোখ যায় আরাধ্যার দিকে, আরাধ্যার দৌড়ে আসে সিম্মির কাছে। সিম্মির মা বের হয়ে যায় কেবিন থেকে। আরাধ্যারকে দেখে সিম্মির চোখ যেন স্বস্তি ফিরে পায়। সিম্মি উঠে বসতে নিলে আরাধ্যার মার হাত ধরে, সিম্মি আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে, আরাধ্যার আর কান্না থামিয়ে রাখতে পারে না। আরাধ্যার কাঁদতে কাঁদতে বলে,

~ জান আমাকে ক্ষমা করে দাও, আমি অনেক বড় ভুল করেছি। এই নিসঙ্গতা আমাকে বুঝিয়ে দিয়েছে তুমি আমার জীবনে কতটা জরুরি? আমার ঢের শাস্তি হয়েছে। (সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে)

~ আমি আপনাকে ক্ষমা করে দিয়েছি সেইদিন যেদিন আমার সামনে আপনি হাঁটু গেড়ে বসে ক্ষমা চেয়েছিলেন। (আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে)
~ জান আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে পারবো না, তুমি ছাড়া আমার জীবন শূন্য। (কেঁদে কেঁদে)

~ অপারেশন থিয়েটার থেকে যখন আমার লাশ বের হবে তখন আমার লাশের দায়িত্ব আপনাকে নিতে হবে। (কাঁদতে কাঁদতে)

~ এসব কথা বলো না জান, তোমার কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না। এসব কিছু আমার জন্য হয়েছে। (কেঁদে কেঁদে)
~ এটা আমার নিয়তি। আমার একটা কথা রাখবেন? (চোখ মুছে)

~ তোমার সব কথা আমি রাখবো। বলো, (নিজেকে সামলে)
~ আমি যদি মারা যাই, আমাদের বাবুকে আপনি নিজ হাতে মানুষ করবেন কথা দিন, (কেঁদে কেঁদে)

~ তোমার কিচ্ছু হবে না, যত টাকা দরকার কিছু দরকার আমি সব করবো। দরকার হলে অন্যদেশ থেকে ডাক্তার আনাবো। (সিম্মিকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে)
~ সেই সময় আমি পাবো না আরাধ্যার। একটা আবদার রাখবেন? , ( শান্ত গলায়)
~ এভাবে বলো না, বল তুমি কি চাও? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)

~ শেষবারের মতো আমাকে কিস করবেন প্লিজ, হয়তো এই স্পর্শ আর পাওয়ার সৌভাগ্য আমার হবে না। (নরম কন্ঠে)

আরাধ্যার সিম্মিকে ছেড়ে দিয়ে সিম্মির দুই গালে হাত রেখে ছলছল চোখে সিম্মির দিকে তাকায়। আজ সবকিছু স্তব্ধ। চারদেয়াল সিম্মি আর আরাধ্যার কষ্টে কাঁদছে। থমথমে পরিবেশ জানান দিচ্ছে আজ দুটো পবিত্র মনের ভালোবাসার কষ্টে তারাও ব্যাথিত। আরাধ্যার সিম্মির ওষ্ঠে গভীর স্পর্শ এঁকে দেয়।

একজন নার্স এসে দরজার কাছে দাঁড়িয়ে বলে, পেসেন্ট কে এখনি অপারেশন থিয়েটারে নিতে হবে। আরাধ্যার সিম্মিকে ছেড়ে দিয়ে, সিম্মির কপালে তার কপাল ঠেকিয়ে কান্না করে, সিম্মি হালকা হেসে বলে,

~ অনেক ভালোবাসি আপনাকে। I love you forever and ever and ever. (কেঁদে কেঁদে)
~ I love you very much jaan.. (সিম্মির গালে হাত রেখে)

তিলাত কেবিনের মধ্যে আসে। তিলাত আরাধ্যার কাঁধে হাত রেখে বলে,
~ ভাইয়া সব রেডি হয়ে অপারেশনের, নার্সরা এসেছে সিম্মিকে নেওয়ার জন্য।
আরাধ্যার পেছনে তাকিয়ে দেখে ট্রলি নিয়ে দাঁড়িয়ে নার্সরা।

আরাধ্যার উঠে দাঁড়ায়, নার্সরা এসে সিম্মিকে ট্রলি শুইয়ে দেয়। আরাধ্যার সিম্মির কপালে ভালোবাসার পরশ একে দেয়। সিম্মির আরাধ্যার হাত ধরে। ট্রলি অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে ঢুকানোর আগ পর্যন্ত আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরেছিলো। সিম্মি সবাইকে এক নজর দেখে। সিম্মি অনেক কান্না করে, সবাই সিম্মিকে সান্ত্বনা দেয়।

সিম্মিকে অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে নেওয়া হয়। রেড লাইট জ্বলে ওঠে। সবার মুখে গভীর চিন্তার ভাব। আরাধ্যার দৌড়ে হাসপাতালের নামাজের রুমে চলে যায়। আরাধ্যার ওজু করে সিম্মির জন্য নফল নামাজ পড়া শুরু করে। সিম্মির বাবা ও চলে আসে। সাথে মাইশা আর সাহিল ও আসে। প্রায় আধ ঘন্টা পর ডাক্তার বের হয়ে আসে। ডাক্তারের কোলে একটি পরীর মতো সুন্দর ফুটফুটে বাবু। মাইশা দৌড়ে ডাক্তারের কাছে গিয়ে দাঁড়ায়, ডাক্তার মাইশার দিকে তাকিয়ে বলে,

~ মেয়ে বাবু হয়েছে, (হেসে)
মাইশা সিম্মির মায়ের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ আন্টি আপনি নানু হয়ে গেছেন আর আমি আন্টি হয়ে গেছি। (আনন্দে হেসে)
তিলাত খুশির খবর শুনে দৌড়ে আরাধ্যার কাছে যায়। আরাধ্যার নামাজ শেষ করে সেখানে বসে কান্না করছে। তিলাত আরাধ্যারকে বলে,
~ ভাইয়া তুমি মেয়ের বাবা হয়েছো। (হাসতে হাসতে)

তিলাতের কথা শুনে আরাধ্যার এক মূহুর্ত দেরি না করে দৌড়ে অপারেশন থিয়েটারের সামনে যায়। ডাক্তার আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আপনি কি পেসেন্টের হাসবেন্ড? (আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে)
~ জি, (চোখ মুছে)

~ এই নিন আপনার রাজকন্যাকে, (আরাধ্যার দিকে এগিয়ে দেয় বাবুকে)
আরাধ্যার বাবুকে কোলে নেয়। আরাধ্যার চোখ ছলছল করে ওঠে। আরাধ্যার বাবুর কপালে কিস করে। আরাধ্যার ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ ওর মা কেমন আছেন? (ডাক্তার দিকে তাকিয়ে)

ডাক্তারের মুখ নিমিষেই কালো হয়ে গেছে। ডাক্তার মাথা নিচু করে বলে,
~ পেসেন্টের অবস্থা খুব খারাপ। তার জ্ঞান নেই পুরোপুরি বেহুশ। আমরা টিউমারের অপারেশন শুরু করবো এখনি কিন্তু, (মাথা নিচু করে)
~ কিন্তু কি? (অবাক হয়ে)

~ এই রোগের পেসেন্টরা জ্ঞান হারিয়ে ফেলার পরে অপারেশন করলে তাদের মধ্যে ৯৮% রোগীর আর জ্ঞান ফেরে না। আর তারা কোমায় চলে যায়। আর পেসেন্টের নার্ভ খুব দূর্বল বলতে পারছি না কি হবে? তবে আমরা আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করবো। (দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে)

কথাটা বলে ডাক্তার থিয়েটারের মধ্যে চলে যায়। এতো আনন্দের মূহুর্ত যেনো বিষাদময় হয়ে গেলো। আরাধ্যার তার বাবুকে নিয়ে হাঁটু গেড়ে বসে পড়ে। আরাধ্যারকে তিলাত ধরে ফেলে। সবাই কান্নায় ভেঙে পড়ে।


পর্ব ৫৩

সিম্মির অপারেশন শুরু হয়। আরাধ্যার তার মেয়েকে কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকে। সবাই কাঁদছে। তিলাত আরাধ্যারকে সামলানোর চেষ্টা করে। সিম্মির মা তার নাতনিকে কোলে নেয়। সে কোলে নিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলে,

~ হে আল্লাহ এই নিষ্পাপ বাচ্চাটার জন্য ওর মাকে বাঁচিয়ে রাখো, (কেঁদে কেঁদে)
আরাধ্যার দেওয়ালের সাথে মাথা ঠেকিয়ে কাঁদছে। মাইশা আরাধ্যার কাছে এসে বলে,
~ ভাইয়া, (আরাধ্যার পাশে দাঁড়িয়ে)

~ হুম, (মাথা নেড়ে)
~ সিম্মি খুব শখ করে দুটো নাম রেখেছিলো, আমাকে বলেছিলো যে যদি মেয়ে হয় তাহলে আপনার নামের সাথে রেখে মেহের রাখবে আর ছেলে হলে রাখবে সিম্মিঙ্ক। (চোখ মুছে)
আরাধ্যার মাইশার কথা শুনে অবাক হয়ে যায়। আরাধ্যার চোখের পানি মুছে বাবুকে কোলে নিয়ে বলে,

~ আমার ভাগ্য এতই খারাপ যে যখন তোর মায়ের কাছে আমাকে সবচেয়ে বেশি দরকার তখনই আমি তার থেকে দূরে ছিলাম। সিম্মির কিছু হয়ে গেলে আমি নিজেকে শেষ করে দেবো। (বাবুর দিকে তাকিয়ে)
তিলাত আরাধ্যার কাঁধে হাত রেখে বলে,

~ ভাইয়া সিম্মির কিচ্ছু হবে না আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখো। (সান্ত্বনা দিয়ে)
অপারেশন থিয়েটারের মধ্যে সিম্মির ব্রেন টিউমারের অপারেশন চলমান। ডাক্তাররা তাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিম্মির পালসরেট ধীরে ধীরে কমছে। ডাক্তার পারমিতা কিছুটা থমকে গিয়ে বলে,

~ পেসেন্টের পালস রেট ধীরে ধীরে কমছে, এভাবে যদি কমতে থাকে তাহলে আমাদের হাতে আর কিছু থাকবে না। (চিন্তিত হয়ে)
পাশ থেকে একজন নার্স বলে ওঠে,

~ পুরো পরিবার কান্নাকাটি করছে তার জন্য, জন্মের পর বাচ্চা টা তার মাকে দেখতে পায়নি আর মা ও তার সন্তান কে দেখতে পায়নি। (মন খারাপ করে)
ডাক্তার পারমিতার চোখ ভিজে ওঠে, তিনি চশমা খুলে চোখ মুছে বলে,

~ আমার লাইফে কোনো পেসেন্টের জন্য এতো খারাপ লাগেনি, কিন্তু এই মেয়েটির জন্য খুব খারাপ লাগছে। শেষ চেষ্টা করে দেখি। (চোখে চশমা লাগিয়ে)
ডাক্তার আর নার্সরা খুব মনোযোগ আর সাবধানতার সাথে অপারেশন করে। কাটতে কাটতে টানা তিন ঘন্টা কেটে যায়। তবুও ডাক্তাররা কেউ বের হচ্ছে না। সবাই আরও ভয় পেয়ে যায়। সবাই অপারেশন থিয়েটারের সামনে অপেক্ষা করছে।

অবশেষে সবার অপেক্ষার প্রহর ভেঙে ডাক্তার বের হয়। ডাক্তারকে দেখে আরাধ্যার এগিয়ে যায়। ডাক্তার আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আমাদের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে।

~ আলহামদুলিল্লাহ,
সবার মুখের দুঃখের ছাপ কিছুটা কেটে যায়। কিন্তু ডাক্তার দীর্ঘ নিশ্বাস ফেলে বলে,
~ কিন্তু বিপদ এখনো কাটেনি,

~ মানে?
~ পেসেন্টের ব্রেন টিউমারের অপারেশন সাকসেসফুল হয়েছে কিন্তু পেসেন্টের জ্ঞান ফেরেনি এখনো। তার ব্রেন কাজ করছে খুব আস্তে আস্তে, পেসেন্টের নার্ভ খুব দূর্বল। আগামী ৪৮ ঘন্টার মধ্যে জ্ঞান না ফিরলে সে কোমায় চলে যাবে আমাদের হাতে আর কিছু থাকবে না।

কথাটা বলে ডাক্তার মাথা নিচু করে আরাধ্যার পাশ কাটিয়ে চলে যায়। আরাধ্যার পুরোপুরি শকড হয়ে গেছে ডাক্তারের কথা শুনে। একজন নার্স বের হয় ভেতর থেকে সিম্মির মা আর বাবা দৌড়ে তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করে,

~ আমাদের মেয়েকে একবার দেখতে পারি?
~ পেসেন্ট কে এখন আইসিইউ তে শিফট করা হবে, এখনই বের করা হবে তখন দেখে নিবেন।

নার্স চলে যায়। একটু পরেই ট্রলিতে করে সিম্মিকে বের করা হয়। আরাধ্যার সিম্মিকে দেখে নিজেকে সামলাতে পারে না। আরাধ্যার সিম্মিকে জড়িয়ে ধরতে নিলে পাশের নার্সরা বাধা দেয়। সিম্মির মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে। সবাই কাঁদছে সিম্মির জন্য।

আরাধ্যার সিটে বসে পড়ে, আরাধ্যার চোখ থেকে অনবরত পানি পড়ছে। আরাধ্যার মনে পড়ে যায় সেদিনের কথা যেদিন সে প্রথম সিম্মিকে দেখে প্রেমে পড়ে যায়। সিম্মির সাথে কাটানো সুন্দর মূহুর্তগুলো। মনে পড়ে সেদিনের কথা, যেদিন সে সিম্মিকে বের করে দেয় ঘর থেকে। আরাধ্যার চোখ বন্ধ করে ফেলে।

মাইশা আর সাহিলও সিম্মিকে খুব মিস করছে। মাইশার মনে পড়ে সিম্মির সাথে কাটানো সুন্দর দিনগুলো। একসাথে কত দুষ্টুমিই না করছে। একসাথে লেখা পড়া করে গ্র্যাজুয়েট হয়েছে।

সিম্মির মা, বাবা ভাবছে সিম্মির কথা। ছোটোবেলা থেকে সিম্মি অনেক লক্ষী মেয়ে ছিলো। সারাক্ষণ বাসায় হৈ হুল্লোড় করে মাতিয়ে রাখতো সবাইকে। সিম্মি অতি আদরের সন্তান তাদের।

তিতলি মুখ চেপে কাঁদছে তার বোনের জন্য। দুজন মারামারি করলেও দিনশেষে সেই বোন না খাইয়ে দিলে খাওয়া হয় না। বোন যদি ঘুম পাড়িয়ে দিতো তাহলে ঘুম হতো না। পড়ালেখায় যদি বোন বকা না দিতো তাহলে ভালো রেজাল্ট হতো না।

তিলাতের সাথে সিম্মির পরিচয় দীর্ঘ দিনের না হলেও। খুব অল্প সময়ের মধ্যে তারা খুব ভালো বন্ধু হয়েছিলো তারা। সিম্মির সব রকম খেয়াল রেখেছিলো তিলাত। তিলাতের চোখের সামনে সিম্মির হাসিখুশি মুখটা ভেসে উঠছে।
সিম্মিকে বেডে রাখা হয়। মুখে অক্সিজেন মাস্ক লাগানো হয়। পাশেই ইসিজি মেশিন সেখানে সিম্মির পালস রেট অনুসারে চলছে।

সিম্মি নিজেকে দেখতে পায় আধ অন্ধকার একটি জায়গায়। কিছুটা ক্ষীণ আলো জ্বলছে আশেপাশে। সিম্মি চারদিকে তাকায়। কিন্তু কোথাও কেউ নেই। সিম্মির চোখ খুঁজছে তার আপনজনদের কিন্তু তাদের কান্না সিম্মি শুনতে পাচ্ছে কিন্তু তারা কোথায়। চারপাশটা যেনো মরূদ্যানের মতো কিন্তু ঘুটঘুটে অন্ধকার বিরাজমান।

সিম্মি চারদিকে তাকায় এই অন্ধকার থেকে বের হওয়ার রাস্তা খোঁজার জন্য। সিম্মি শুনতে পায় তার সন্তান কাঁদছে। স্বজনদের হাহাকার সে শুনতে পাচ্ছে। সিম্মি চারদিকে দৌড়ে যায় কিন্তু সবদিক অন্ধকার। সিম্মি অবশেষে দেখতে পায় একটি প্রজাপতি উড়ে যাচ্ছে। সিম্মি ঠিক করে এই প্রজাপতিকে অনুসরণ করবে। সিম্মি প্রজাপতির পেছনে পেছনে যেতে থাকে হঠাৎ,


পর্ব ৫৪ (শেষপর্ব)

সিম্মি প্রজাপতিটাকে অনুসরণ করতে থাকে হঠাৎ সিম্মির মনে হয় কোনো অদৃশ্য শক্তির আকর্ষণে সে পিছিয়ে যাচ্ছে। সিম্মি তবুও থামে না সিম্মি দেখতে পায় আরাধ্যার তার মেয়েকে নিয়ে খেলা করছে। সিম্মির চোখ ছলছল করে ওঠে, সিম্মি দৌড়ে যেতে নিলে হোঁচট খেয়ে পড়ে যায়।

সিম্মির মনে হয় তার শরীরের সব শক্তি ফুরিয়ে যাচ্ছে। সিম্মি অনেক কষ্টে উঠে দাঁড়ায়। সিম্মির সামনে আবার সেই রঙিন প্রজাপতিটা উড়ে যায়, সিম্মি পেছনে পেছনে ছুটে যায়। সিম্মি চারপাশে তাকিয়ে দেখে ধীরে ধীরে সব অন্ধকার হয়ে আসছে। সিম্মি বুঝতে পারে এ অন্ধকার মৃত্যুর প্রতীক। সিম্মি জোরে দৌড় দেয় কিন্তু তার মনে হয় কে যেনো তাকে পিছু টানছে, সিম্মি সর্বশক্তি দিয়ে দৌড় দেয়।

সিম্মির মনে হয় কে যেনো তার পা দুটো ঝাপটে ধরেছে। সিম্মি পড়ে যায়। সিম্মি অন্ধকার আর আলোর ঠিক মাঝ বরাবর রেখার মধ্যে আছে। সিম্মি আপ্রাণ চেষ্টা করছে অন্ধকার গন্ডি পেরিয়ে আলোর সীমানায় পৌঁছাতে।

এদিকে সবার চিন্তা দ্বিগুণ বেড়ে গেছে কারণ ৩৮ ঘন্টা পেরিয়ে গেছে কিন্তু সিম্মির কোনো উন্নতি হচ্ছে না। ডাক্তার রাও ধীরে ধীরে নিরাশ হয়ে যাচ্ছেন। সবাই আল্লাহর কাছে প্রার্থনা করছে যাতে আল্লাহ সিম্মিকে সুস্থ করে দেয়।

সিম্মি প্রাণপণ চেষ্টা করছে তবুও সেই অদৃশ্য শক্তির আকর্ষণ কমছে না তবুও সিম্মি হাল ছাড়ছে না। সিম্মি তার যথাসাধ্য চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সিম্মি হাতড়ে বহুকষ্টে আলোর সীমানায় পৌঁছে যায়। সিম্মির মুখে জয়ের হাসি।

সিম্মি ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায়। সিম্মির পাশে একজন নার্স বসে ছিলো। সে দেখে সিম্মি চোখ মেলেছে। সে দৌড়ে আইসিইউ থেকে বের হয় ডাক্তার ডাকার জন্য। নার্সকে এভাবে বের হতে দেখে তিলাত তাকে জিজ্ঞেস করে,
~ কি হয়েছে নার্স? (অবাক হয়ে)

~ পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে। (হেসে)

সবার মুখে হাসি ফুটে ওঠে। আরাধ্যার আল্লাহকে হাজার হাজার শুকরিয়া জানায়। সিম্মির বাবা আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে। তিলাত তিতলির দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দেয়। তিতলিও হাসে তিলাতের দিকে তাকিয়ে। ডাক্তার আইসিইউ তে গিয়ে সিম্মিকে চেকাপ করে বের হয়ে বলে,

~ She is out of danger. আমরা ভেবেছিলাম সিম্মি মনে হয় কোমায় চলে যাবে। আমাদের ধারণাকে ভুল প্রমাণ করে দিয়ে সে আমাদের মাঝে ফিরে এসেছে। (হেসে)
তিলাত ডাক্তারের দিকে তাকিয়ে বলে,

~ সিম্মির সাথে কি দেখা করা যাবে? (উদ্বিগ্ন হয়ে)
~ হুম যাবে তবে আইসিইউতে একজনের বেশি যাবেন না। (সবার দিকে তাকিয়ে)
~ ঠিক আছে। (হেসে)

সিম্মির বাবা আরাধ্যার কাঁধে হাত রেখে বলে,
~ বাবা তুমি আগে যাও, (চোখ মুছে)
~ কিন্তু, (সংকোচ নিয়ে)

সিম্মির মা আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ কোনো কিন্তু না বাবা, তুমি যাও। (কাঁদো কাঁদো সুরে)

আরাধ্যার ধীরে ধীরে এগিয়ে যায় আইসিইউর দিকে। আরাধ্যার দরজা খুলে ভেতরে যায়। সিম্মি চোখ বন্ধ করে আছে। আরাধ্যার সিম্মির পাশে বসে সিম্মির কপালে হাত রাখে। সিম্মি অনুভব করে খুব পরিচিত স্পর্শ তাকে ছুঁয়ে যাচ্ছে। সিম্মি ধীরে ধীরে চোখ খুলে তাকায়। আরাধ্যার মুখে আনন্দের হাসি ফুটে ওঠে। সিম্মির ঠোঁটের কোণে এক চিলতে হাসি। আরাধ্যার সিম্মির কপালে কপাল লাগিয়ে চোখ বন্ধ করে বলে,

~ I love you jaan I love you so much.

সিম্মি অস্ফুট স্বরে ধীরে ধীরে বলে,
~ I love you very much..

আরাধ্যার সিম্মির হাত ধরে। সিম্মি আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,
~ আমার বাবুটাকে একটু দেখবো।
~ একটু অপেক্ষা করো বাবুকে নিয়ে আসছি।

আরাধ্যার তার বাবুকে নিয়ে আসে। আরাধ্যার সিম্মির পাশে বাবুকে শুইয়ে দেয়। সিম্মি তার বাবুকে আদর করে। সিম্মির বাবা, মা, তিতলি, তিলাত, মাইশা, সাহিল সবাই সিম্মিকে দেখতে আসে। সিম্মি সবাইকে প্রাণ ভরে দেখে। সিম্মি নিজেকে ভাগ্যবতী মনে করে বহু লড়াই করে সে মৃত্যুর পথ থেকে ফিরে আসে।
সিম্মি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে ওঠে। মেহেরও বড় হয়ে যায়। সেই সাথে বদলে যায় অনেক কিছু।

দেখতে দেখতে কেটে গেলো সাত বছর। এই সাত বছরে অনেক কিছু পাল্টে গেছে। মাইশার ও একটি ছেলে হয়েছে। সাহিল মাইশা তাদের ছেলেকে নিয়ে অনেক সুখে আছে। তিলাত আর তিতলির বিয়ে হয়েছে পারিবারিক ভাবে। তারা আমেরিকাতে সেটেল্ড হয়ে গেছে।

সিম্মি ছাঁদে দাঁড়িয়ে আছে। আরাধ্যার মেহেরের সাথে খেলছে বাগানে। আরাধ্যার অনেক বদলে গেছে। সিম্মি বাবা আর মেয়েকে দেখে হাসছে। আরাধ্যার সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ এই ওখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? নিচে এসো। (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
~ না না, তোমরা খেলো। (মাথা নেড়ে)
মেহের সিম্মির দিকে তাকিয়ে বলে,
~ মাম্মাম আসো না। (আবদার করে)

সিম্মি মেহেরের আবদার ফেলতে পারলো না। সিম্মি নিচে নেমে আসে। সিম্মি বাগানে যেতেই মেহের এসে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে। আরাধ্যার সিম্মির সামনে এসে বলে,
~ মেয়ে এসে তোমাকে জড়িয়ে ধরলো আমি কাকে জড়িয়ে ধরবো? (সিম্মির দিকে তাকিয়ে)
সিম্মিকে ছেড়ে দিয়ে মেহের আরাধ্যার দিকে তাকিয়ে বলে,

~ পাপা আমাকে কোলে নাও। (দুই হাত বাড়িয়ে দিয়ে)
~ আমার প্রিন্সেসকে তো কোলে নিতেই হবে। (মেহেরকে কোলে নিয়ে)
মেহের আরাধ্যার কোলে উঠে আরাধ্যার গালে কিস দিয়ে বলে,
~ তুমি আমার সুপার হিরো পাপা।

সিম্মি কিছুটা অভিমান মিশ্রিত সুরে বলে,
~ হ্যাঁ সব ক্রেডিট পাপার আমি তো কেউ না,

আরাধ্যার মেহেরের কানে কানে বলে,

~ মাম্মাম তো রেগে গেলো এবার কি হবে?
~ পাপা তুমি টেনশন করো না, আমি দেখছি,

মেহের আরাধ্যার কোল থেকে নেমে সিম্মির সামনে দাঁড়িয়ে বলে,
~ আমার লক্ষীসোনা চাঁদের কণা রাগ করে না
সিম্মির হেসে মেহেরের গাল টেনে বলে,

~ ওরে আমার দুষ্টি মেয়েটা।
সিম্মি, আরাধ্যার আর মেহের দুজনেই হেসে ওঠে। সিম্মি আরাধ্যার আর মেহেরের দিকে তাকিয়ে বলে,
~ চলো এবার নাস্তা করবে।
~ চলো মাম্মাম।

আরাধ্যার আর মেহের ডাইনিং টেবিলে বসে। সিম্মি স্যান্ড উইচ বানিয়ে নিয়ে আসে। তখনই মাইশা আর সাহিল চলে আসে। মেহের দৌড়ে গিয়ে মাইশার কোলে ওঠে।
~ কেমন আছো আন্টি?
~ ভালো আছি আম্মু, তুমি কেমন আছো?

~ ভালো আছি। আন্টি নীরব আসেনি।
সাহিল মেহেরকে কোলে নিয়ে বলে,

~ ঐ যে নিরব।
মেহের নিরবের সাথে খেলতে চলে যায়। সিম্মি, আরাধ্যার, মাইশা আর তিলাত একসাথে বসে নাস্তা করে আর গল্প করে। রাতে ডিনার করার পরে মাইশা, সাহিল আর নিরব চলে যায়। মেহের ঘুমিয়ে পড়েছে। মেহেরকে শুইয়ে দিয়ে সিম্মি বেলকনিতে গিয়ে দাঁড়ায়। আরাধ্যার পেছন থেকে সিম্মিকে জড়িয়ে ধরে বলে,

~ দেখো জান চাঁদ টা কতো সুন্দর,
~ হ্যাঁ অনেক সুন্দর ঠিক আপনার মতো।

~ না তোমার মতো, আমি খুব ভাগ্যবান যে তোমার মতো একজনকে জীবন সঙ্গী হিসেবে পেয়েছি।
সিম্মি আরাধ্যারকে জড়িয়ে ধরে। এভাবেই তাদের সুন্দর মূহুর্ত গুলো কেটে যায়। জীবনে হাজারো ঝড় বয়ে যায় কিন্তু সেই ঝড়ের পরেই সোনালি রোদ ওঠে অন্ধকার কাটিয়ে আলোকিত করার জন্য। ভালোবাসা তো এমনই হয়।

লেখা – রাফিয়া অরিন

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “দ্য ডেঞ্জারাস লাভার – বাংলা প্রেমের কাহিনী” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ুন – দ্য ডেঞ্জারাস লাভার – বাংলা প্রেম কাহিনী – সিজন ১ (১ম খণ্ড)

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *