জামাই ৪২০ – স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প: আহহহহহহ, সারা বাড়িতে নাহিদে’র পেছনে ছুটছে ইরা। বেচারা নাহিদ বউয়ের ভয়তে পালাচ্ছে। ইরা নাহিদে’র পেছনে আর নাহিদ আগে। নাহিদ ছুটেই চলেছে কারণ। নাহিদ ভাল করেই জানে। এখন যদি ওর বউ ওকে ধরতে পারে। তাহলে ওর কপালে অশেষ দুঃখ আছে। কারণ আজ ও যা করেছে। তাতে ইরা যে ওর কি হাল করবে। এই ব্যাপারে নাহিদ অবগত। নাহিদ ছুটছে আর মনে মনে বলছে।
- ধুর কেন যে আমি এটা করলাম? এখন যদি ইরা আমাকে ধরে। তাহলে তো আমি আজ শেষ। নাহিদ তু তো আজ গায়া কই মুঝে বাঁচালো। নাহিদ দৌড়াচ্ছে আর ভাবছে আজ কি করেছে ও?
একটু আগে……..
ইরা বাড়িতে নেই নাহিদ বসে আছে।
নাহিদঃ ইস আমার বউ বাড়ি নেই। এখন আমি কি করবো? একা একা বোর লাগছে। হিহি যদি আরেকটা বউ থাকতো।
নাহিদ বসা থেকে উঠে। এদিক ওদিক ছুটে চলেছে। হঠাৎ ওর চোখ গেলো। শোকেজে থাকা ইরা’র মেকআপ বক্সে।
নাহিদঃ আরিববাস কিতনি সুন্দার হে।
নাহিদ মেকআপ বক্সটা বের করে খোলে। খুলে দেখে অনেক কালার আইসেড। এবার চোখ পড়ে একুরিয়ামে।
নাহিদঃ ধুর এই একুরিয়ামের পানি। হু এটার কালার তো ভাল না। এখন যদি আমি এইগুলো ওটাতে ঢালি। তাহলে অনেক সুন্দর কালার হবে।
নাহিদ ওয়াসরুমে গিয়ে। মগে পানি নিয়ে এরপর রুমে আসে। রুমে এসে সব মেকআপ মগে ঢালে।
নাহিদঃ বাহ কি বুদ্ধি আমার। বউয়ের মেকআপ নষ্ট করে এত শান্তি হয়। জানলে তো আমি আরো আগে এই কাজ করতাম।
ও মেকআপ তুমি এত সুন্দর কেন?
তোমাকে গুলিয়ে আমি এত শান্তি পাই কেন?
নাহিদ গান গাইছে আর মেকআপ গুলছে। গোলানো শেষ হতেই একুরিয়ামে ঢেলে দেয়। এরপর পায়ের উপর পা তুলে বসে। নাহিদ মনের সুখে গান শুনছে। এরমাঝে ইরা এসে দেখে। নাহিদে’র পায়ের কাছে মগ। বিছানায় মেকআপ বক্স পড়ে আছে। আর একুরিয়ামের পানি নানান কালার হয়ে আছে। ইরা’র বুঝতে বাকি থাকেনা এটা কার কাজ। ইরা হনহন করে হেটে গিয়ে। নাহিদে’র কান থেকে হেডফোন ফুলে ফেলে।
- এই কোন শালীরে? আমার স্বাধের গান শোনা নষ্ট করলি?
সামনে তাকিয়ে দেখে। স্বয়ং নাহিদে’র বউ ইরা। নাহিদ ঢোক গিলে বলে,
- হে হে তু তুমি?
ইরাঃ এটা কি করেছো তুমি?
নাহিদ এদিক ওদিক তাকাচ্ছে।
ইরাঃ কি হলো বলো।
নাহিদঃ আমি কিছু করিনি তো। আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম। ইস বেবী আমার যে এত ঘুম কেন?
ইরা রাগে রাগে ফোস করছে। নাহিদ বুঝতে পারে বিপদ আছে। নাহিদ কোনোরকম বিছানা থেকে উঠে। দেয় ভো দৌড় নাহিদে’র পিছনে ইরা ও দৌড় দেয়।
এখন….
নাহিদ দৌড়াতে দৌড়াতে। হাসান চৌধুরীর কাছে গিয়ে বললো,
- শ্বশুর ফাদার হেল্প মি।
হাসান চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে বললো,
- কি হয়েছে বাবা? তুমি এভাবে ট্রেনের মতো ছুটে চলেছো কেন?
নাহিদঃ ছুটছি কি আর স্বাদে? আপনার ডাইনি মেয়ে। আমাকে যেভাবে তাড়া করেছে।
ইরা শিরি দিয়ে নামতে নামতে বললো।
- ওই কি বললি তুই? আমি ডাইনি হ্যা? শালা তুই ডাইনি। তোর ১৪গুষ্টি ডাইনি।
হাসান চৌধুরীঃ আহা কি হচ্ছে মা? তুই নিজের স্বামী কে শালা বলছিস?
নাহিদঃ এহ আর নতুন কি?
ইরাঃ ওই কি বললি তুই?
নাহিদ কাঁদো কাঁদো ফেস করে বলে।
নাহিদঃ না আর না শ্বশুর ফাদার। অনেক হয়েছে এই বাড়ি আমি আর থাকবো না। আজ পুরানো জামাই বলে এত অত্যাচার। নতুন বেলায় তো কত ভাল ছিলো। এর চেয়ে আমি এই বাড়ি থেকে চলে যাবো। আর গিয়ে নতুন একজন কে বিয়ে করবো। সেখানে আমি আরামসে থাকতে পারবো। ওয়াও ওয়াট এ গ্রেট আইডিয়া। নাহিদ তোমার তো প্রধানমন্ত্রী হওয়া উচিত ছিলো। তাহলে এতদিনে দেশে অনেক উন্নতি হতো। আহা কেন যে হলেনা? তার চেয়ে আপাতত এই বুদ্ধি নিয়ে। দ্বিতীয় বিয়ে করার জন্য তৈরী হও বাবা নাহিদ।
নাহিদ নিজেই বকবক করছে। এদিকে ইরা তো রেগে ফায়ার। আর হাসান চৌধুরী ভয় পেয়ে বললো,
- কি বলছো বাবা? আরেকটা বিয়ে করলে আমার মেয়ের কি হবে?
ইরাঃ কেন আমার কি আর বিয়ে হবেনা?
হাসান চৌধুরীঃ তুমি চুপ করো।
ইরাঃ কেন চুপ করবো? বাপি ও আমার সব মেকআপ নষ্ট করে ফেলেছে। আমার এত ফেবারিট ছিলো ওগুলো। বাইরে থেকে এসে দেখি ও আমার মেকআপ। মগের মধ্যে ভিজিয়েছে। আবার সেই পানি একুরিয়ামে ঢেলেছে। যাতে নানান রকম কালার হয়।
নাহিদঃ আজ শ্বশুর বাড়ি বলে।
হাসান চৌধুরীঃ কে বললো শ্বশুর বাড়ি? এটা তো তোমারই বাড়ি বাবা।
নাহিদঃ ও রিয়েলী?
হাসান চৌধুরীঃ হ্যা অবশ্যই।
নাহিদঃ শুনলে এটা আমার বাড়ি। তারমানে ওই মেকআপ আমার বাড়িতে ছিলো। আর আমার বাড়ির মেকআপ। আমি যা খুশি করতে পারি।
ইরাঃ স্টুপিড।
নাহিদঃ শ্বশুর ফাদার দ্বিতীয় বিয়ে করবো নাকি?
হাসান চৌধুরীঃ আব না এই ইরা যা এখান থেকে।
ইরা রেগে কটকট করতে করতে চলে গেলো। নাহিদ সোফায় পায়ের উপর পা তুলে বললো,
- এই কে আছিস? ভিআইপি নাহিদ খাঁনে’র জন্য। মজার মজার ইয়াম্মি খাবার নিয়ে আয়।
একজন সার্ভেন্ট বিরবির করে বললো,
- থাকে তো শ্বশুর বাড়ি। পুরাই জামাই ৪২০।
সার্ভেন্ট নাহিদে’র জন্য খাবার আনে। খাবার দেখে নাহিদ ভ্রু কুঁচকে বলে।
- এইটুকু খাবার কেন? আরে এতে আমার কি হবে? এইটুকু খাবার তো আমার পেটের। এক কোনায় পড়ে থাকবে।
সার্ভেন্ট হা করে তাকিয়ে আছে। কারণ নাহিদে’র সামনে। ৪গ্লাস দুধ, ৪টা সিদ্ধ ডিম। ৪টা আপেল ৪টা কমলা। মুরগির লেকপিস ও ৪পিচ। আর বাটি ভর্তি আঙুর। তবুও বলছে এইটুকু খাবার।
সার্ভেন্টঃ কিন্তু স্যার এখানে তো অনেক খাবার।
নাহিদঃ ওততেরী আমাকে স্যার বলছে। দাড়া এবার দেখাচ্ছি মজা।
নাহিদ একটু নড়েচড়ে বসে বলে।
- যা স্যারের কথা শোন। রান্নাঘরে যা খাবার আছে সব নিয়ে আয়। আরে আমি খাবো বলে কথা তাইনা? তুই জানিস আমার। প্রধানমন্ত্রী হওয়ার কথা ছিলো। আরে আমাকেই তো বানাতে চেয়েছিলো। আমি বাচ্চা ছেলে এত দায়িত্ব কি করে পালন করবো? তাই তো আমি ওই পদটা ছেড়ে দিলাম। আর এই বাড়ির ঘর জামাই হয়ে গেলাম। নাহলে দেশে অনেক কিছু হয়ে যেতো।
সার্ভেন্ট রান্নাঘরে চলে যায়। আর হাসান চৌধুরী হা করে আছে।
হাসান চৌধুরীঃ আমার জামাই এত মিথ্যে কি করে বলে?
নাহিদ ভ্রু নাচিয়ে বলে।
- আমাকে কিছু বললেন?
হাসান চৌধুরী আমতা আমতা করে বলে।
- বললাম তুমি কত সত্যবাদী ছেলে।
নাহিদঃ হ্যা ছোট থেকেই।
হাসান চৌধুরী সোফায় বসে পড়ে। সার্ভেন্ট আরো খাবার এনে। নাহিদে’র সামনে দেয়।
নাহিদঃ এখন তোমরা চলে যাও। জানোই তো খাবার সময় আমি পর্দা করি।
সবাই বিরবির করতে চলে যায়। কতক্ষণ পর নাহিদ ডাকে। এসে দেখে সব খাবার ফিনিশ। নাহিদ বড় বড় ঢেক ছাড়ছে। সবার চোখ কপালে যদিও এটা নতুন না। একজন সার্ভেন্ট জোড়েই বলে ফেলে।
- কি রাক্ষস রে বাবা।
নাহিদ রেগে মেগে বলে।
- ওই তোর বাপেরটা খাই আমি? একদম মাথা ন্যাড়া করে দেবো। আর সেই ন্যাড়া মাথায় কবর খুচে। তোকেই কবর দেবো হাতির ডিম একটা হু।
এরমাঝে সজিব এসে বলে।
- হোয়াট এগুলো কি বলছো তুমি?
নাহিদঃ ইস চলে এলো ইংরেজের বাচ্চা।
মনে মনে বলে নাহিদ।
নাহিদঃ কিছু বলিনি তো আমি। আমি এত ইনোসেন্ট বাচ্চা। মানে জামাই আমি কি কিছু বলতে পারি?
বলে নাহিদ হনহন করে চলে যায়। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। বেচারারা ভাবছে কি বলে গেলো জামাই?
নাহিদ রুমে’র সামনে এসে দাড়িয়ে পড়ে।
নাহিদঃ রুমে কি করে যাবো? বউ তো আমাকে কিমা বানাবে। তারপর আমার কিমা যদি আমাকেই খাওয়ায়?
নাহিদ এরকম আজগুবি ভাবছে। এরমাঝে পিছন থেকে ইরা ধাক্কা মেরে। নাহিদ কে রুমে ঢুকিয়ে দরজা আটকে দেয়। বেচারা বিছানায় গিয়ে বসে আছে। আচমকা নাহিদ চেচিয়ে ওঠে।
- শ্বশুর ফাদার আমাকে বাঁচাও।
ইরাঃ চুপ একটা থাপ্পর মারবো। শালা সারাক্ষণ শ্বশুর ফাদার। এখন যদি আমি তোমাকে উল্টো ঝুলিয়ে রাখি। তখন তোমার কি হবে বেবী?
নাহিদ কল্পনা করলো। ওকে ইরা উল্টো ঝুলিয়ে পিটাচ্ছে। এরপরই চেচিয়ে বলে উঠলো।
- আফা আমারে ছাইড়া দেন।
ইরাঃ হোয়াট?
পর্ব ২
নাহিদ কল্পনা করতে লাগলো। ইরা ওকে উল্টো ঝুলিয়ে পেটাচ্ছে। এরপরই চেচিয়ে উঠে বললো,
- আফা আমারে ছাইড়া দেন।
ইরা রেগে মেগে বললো,
- হোয়াট? সোম হোয়াট আর ইউ সেয়িং?
নাহিদঃ মানে? এরমানে কি? তুমি জানোনা আমি ইংরেজী জানিনা।
ইরাঃ ইয়াহ আমারই ভুল। আমি আসলে ভুলে যাই তুমি কে?
নাহিদ লজ্জা মাখা মুখ নিয়ে বললো,
- আমি তোমার স্বামী।
ইরাঃ হোয়াটএভার ইডিয়ট।
ইরা হনহন করে বেরিয়ে গেলো। নাহিদ হাফ ছেড়ে বাঁচলো। নাহিদ বসে বসে গান শুনছে।
নাহিদঃ হুহু আমার উপর রাগ করে। ভিআইপি নাহিদ খাঁনে’র উপর। এইরে আমার তো আবার ক্ষিদে পেয়ে গেলো।
বলে দৌড়ে নিচে চলে এলো। হাসান চৌধুরী খবরের কাগজ পড়ছিলো। নাহিদ কে আসতে দেখে বললো,
- কি হলো জামাই?
নাহিদঃ বা আসলে আমার ক্ষিদে পেয়েছে।
সবাইঃ ……
নাহিদ দাত কেলিয়ে বললো,
- আমার খাবার নিয়ে রুমে দিয়ে আয়। আর মি মানে ইরা কোথায়?
সজিবঃ ইরা ফ্রেন্ডের বাড়ি গিয়েছে।
নাহিদঃ ফ্যানের আবার বাড়ি হয়?
সজিবঃ হোয়াট?
নাহিদঃ ওইযে তুমি বললে। ইরা ফ্যানের বাড়ি গিয়েছে। কিন্তু এই বাড়িতে তো কত ফ্যান।
সজিবঃ আরে ফ্যান না ফ্রেন্ড। তুমি যে মাঝে মাঝে ইংরেজী বলো। ওগুলো কি করে বলো তুমি?
নাহিদঃ তোমাদের থেকে শিখে বলি।
হাসান চৌধুরী ছোট শ্বাস ছেড়ে বললো,
- জামাই তোমার খাবার দিয়ে এসেছে। তুমি গিয়ে খেয়ে নাও যাও।
নাহিদঃ হ্যা হ্যা এক্ষুণি যাচ্ছি।
নাহিদ এক দৌড়ে উপরে গেলো।
সজিবঃ বাপি হোয়াট ইস দিস?
হাসান চৌধুরীঃ কি হলো?
সজিবঃ বাপি নাহিদ কে তুমি কেন এলাও করো?
হাসান চৌধুরীঃ মানে কি সজিব?
সজিবঃ বাপি হি ইজ জাস্ট টু মাচ। ওর বিহেভ একদম সহ্য হয়না আমার। কেন ছেলের কি অভাব ছিলো? ওর সাথেই কেন ইরা’র বিয়ে দিলে? আমার জাস্ট ইরিটেড লাগে।
হাসান চৌধুরীঃ জাস্তি সাট আপ সজিব। ভুলে যেওনা ও এই বাড়ির জামাই।
সজিব ও রেগে উঠে গেলো। হাসান চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইলো। একটুপর নাহিদ ঢেক ছাড়তে ছাড়তে নেমে এলো। সার্ভেন্টরা হা করে তাকিয়ে আছে।
হাসান চৌধুরীঃ খাওয়া হলো জামাই?
নাহিদঃ সব খেয়ে ফেলেছি।
হাসান চৌধুরীঃ যাও সবাই রুম থেকে সব নিয়ে এসো।
সবাই ওগুলো আনতে গেলো। নাহিদ হাসান চৌধুরী কে বলে। বাড়ি থেকে বেরিয়ে গেলো। একটুপরই ইরা এসে বললো,
- বাপি সোম কোথায়?
হাসান চৌধুরীঃ বাইরে গিয়েছে?
ইরাঃ কেন?
হাসান চৌধুরীঃ আমি কি জানি?
ইরাঃ তোমার জামাই তুমি জানোনা?
ইরা রুমে চলে গেলো। সন্ধ্যার দিকে নাহিদ বাড়ি এলো। নাহিদ কে দেখে সবার চোখ কপালে।
ইরাঃ এসব কি হ্যা?
নাহিদঃ খেলতে গিয়েছিলাম।
নাহিদে’র সারা শরীরে কাদা দিয়ে মাখামাখি।
সজিবঃ খেলতে গিয়েছিলে মানে?
নাহিদঃ বাচ্চাদের সাথে ফুটবল খেলেছি।
ইরাঃ কেন তুমি কি বাচ্চা?
হাসান চৌধুরীঃ আহা জামাই ২দিন পর। তুমি নিজে বাচ্চার বাবা হবে।
নাহিদঃ শ্বশুর ফাদার ওভাবে বলবেন না। হিহি আমার খুব লজ্জা করে।
সজিবঃ ইরা ওকে ক্লিন কর।
নাহিদঃ আরে আমার দাড়ি, মোচ নেই। আমার ক্লিন করতে হবে না।
ইরাঃ ইউ তোমার গায়ের কাদার কথা বলেছে।
নাহিদঃ ওপস সল্লি।
নাহিদ ফ্রেশ হয়ে এসে। এরপর রুমে গেলো গিয়ে দেখলো। ইরা একটা গেন্জী আর প্লাজু পড়ে বসে আছে।
নাহিদঃ এগুলো কি পড়েছো?
ইরা ভ্রু কুঁচকে বললো,
- কেন কি পড়েছি?
নাহিদঃ আরে এগুলো পড়তে নেই। মুভি নাকি ছবিতে দেখি। এগুলো নায়িকারা পড়ে তারপর।
ইরাঃ তারপর কি?
নাহিদঃ তা তারপর নায়ক কি কিস করে।
ইরাঃ হ্যা তো?
নাহিদঃ আমার ডর করে।
ইরাঃ হোয়াট ইজ দিস ডর?
নাহিদঃ আমি চকলেট খাবো।
ইরাঃ তুমি কি বাচ্চা নাকি? যে তুমি চকলেট খাবে?
নাহিদঃ খাবো তোমার কি?
নাহিদ নিচে গিয়ে চকলেট নিয়ে এলো। এরপর বিছানায় বসে খেতে শুরু করলো। ইরা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নাহিদ একটার পর একটা খেয়েই যাচ্ছে। ইরা বিছানায় গিয়ে বসে পড়লো।
নাহিদঃ কি দেখছো?
ইরাঃ তুমি আগেও চকলেট খেয়েছো?
নাহিদঃ হ্যা খেয়েছি।
নাহিদ উঠে বেলকনিতে চলে গেলো। ইরা বিছানায় শুয়ে পড়লো। এভাবে রাত ১০টা বেজে গেলো। নাহিদ এসে দেখলো ইরা ঘুমিয়ে পড়েছে। লাইট নিভিয়ে নাহিদ ও শুয়ে পড়লো। সকালে সব সার্ভেন্টদের তাড়া করছে নাহিদ। চেঁচামেচি শুনে সবাই ছুটে এলো। এদিকে বেচারারা দৌড়েই যাচ্ছে।
হাসান চৌধুরীঃ আরে কি হচ্ছে এসব?
সজিবঃ কি আবার হবে? জোকারগীরি হচ্ছে।
নাহিদ দাড়িয়ে গেলো। কতক্ষণ ওভাবে থেকে এরপর ফিরে বললো,
- কি বললি তুই?
সজিব হচকচিয়ে গেলো।
নাহিদঃ আমি জোকার? তুই জোকার তোর বাপ জোগার। তোর চিকুচি গুষ্টি যে যেখানে আছে সবাই জোকার।
হাসান চৌধুরী অসহায় ফেস করে বললো,
- তুমি আমাকে জোকার বললে জামাই?
নাহিদঃ শ্বশুর ফাদার আপনাকে বলিনি। আমিতো ওই ইংরেজের বাচ্চার বাবা কে বলেছি।
ইরাঃ সোম কি বলছো তুমি? ভাইয়ার বাবা কি অন্য কেউ?
নাহিদঃ এত ইংরেজী বলে ভাইয়া। আমি তো ভাবি চায়না থেকে কিনে এনেছে।
সজিবঃ বাপি ও কি বলছে এসব?
হাসান চৌধুরীঃ ওর কথায় আমি নিজেই কনফিউসড। আসলেই কি তোকে চায়না থেকে কিনে এনেছি?
সজিবঃ বাপি।
হাসান চৌধুরীঃ আব তুই ভার্সিটিতে যা।
ইরাঃ আমার ও যেতে হবে।
ইরা আর সজিব উপরে গেলো। ইরা এবার এলএলবি সেকেন্ড ইয়ারে। আর সজিব মেডিকেল ফাইনাল ইয়ারে। ওরা দুজন যেতেই নাহিদ কে হাসান চৌধুরী বললো,
- জামাই তুমি ওদের তাড়া করছিলে কেন?
নাহিদঃ ওরা আমার কথা শোনেনি, তাই।
হাসান চৌধুরীঃ কি কথা শোনেনি?
নাহিদঃ আমাকে আইসক্রিম দেয়নি।
হাসান চৌধুরী আবারও ছোট শ্বাস ছাড়লো। ইরা রেডি হয়ে নিচে এসে। গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। একটুপর সজিব ও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। নাহিদ দু হাত দুলিয়ে বললো,
- যাক ডাইনি আর রাক্ষস গেলো।
হাসান চৌধুরী ভ্রু কুঁচকে বললো,
- কি চলছে তোমার মনে?
নাহিদঃ কমু নট।
নাহিদ হেলে দুলে রুমে গেলো।
নাহিদঃ কাল মেকআপ গুলেছি। আজকে কি গোলানো যায়?
নাহিদ ড্রেসিংটেবিলের সামনে গিয়ে বসলো। একটা লোশন পেলো ওটা নিয়ে। ঘুড়িয়ে ঘুড়িয়ে দেখে হাসি দিলো। নিজের কাজ শেষ করে শুয়ে পড়লো।
ও লোশন ও লোশন রে।
তুই অপরাধী রে।
আমার বউয়ের সুন্দর ফেস।
দে ফিরাইয়া দে।
আমার বউয়ের সুন্দর ফেস।
নষ্ট করার অধিকার দিলো কে?
আমার বউয়ের সুন্দর ফেস।
দে ফিরাইয়া দে।
গান গাইতে লাগলো নাহিদ। গান গেয়ে লাফ দিয়ে উঠে বসলো। উঠে বসে নিজেই বললো,
- লোশন কে অধিকার তো আমি দিলাম।
দরজায় দাড়িয়ে ইরা’র ফুপ্পি। নাহিদে’র গান শুনছিলো। নাহিদে’র গান শুনে ওনার মাথা ঘুরছে। ফুপ্পি তাড়াতাড়ি স্থান ত্যাগ করলো। নাহিদে’র ফোন আসায় ও বেলকনিতে গেলো। কথা বলা শেষ করে নিচে গেলো। বেচারার কাজই ড্রয়িংরুম আর রুমে যাওয়া। নিচে এসে এদিক ওদিক দেখছে।
সার্ভেন্টঃ কিছু খুজছেন স্যার?
নাহিদঃ স্যার বলিস কেন?
সার্ভেন্টঃ তাহলে কি জামাই ৪২০ বলবো?
নাহিদঃ প্রধানমন্ত্রী বলবি।
সার্ভেন্ট মানে মানে কেটে পড়লো। কারণ জানে এখানে থাকলেই। নাহিদ এখন ওর মাথা খাবে বকবক করে। নাহিদ মুখ ভেংচি কেটে। সোফায় বসে কার্টুন দেখতে লাগলো। ইরা ভার্সিটি থেকে এসে দেখলো। তার গুনধর স্বামী কার্টুন দেখছে। শুধু দেখছে না হেসে বাড়ি কাঁপিয়ে তুলছে। ইরা একরাশ বিরক্তি নিয়ে রুমে গেলো। রুমে গিয়ে শাওয়ার নিয়ে লোশন নিলো। লোশন মুখে নিয়েই আহ শব্দ করে চিৎকার করলো।
নাহিদঃ হিহি কাজ হয়ে গিয়েছে।
ইরা রেগে রুম থেকে বেরিয়ে এলো। ইরা কে দেখে সবাই হাসছে।
ইরাঃ সোম এটা তুমি করেছো, তাইনা?
নাহিদঃ আমিতো ঘুমিয়ে ছিলাম।
ইরাঃ আজ তোর ১দিন কি। আমার যে কয়দিন লাগে।
নাহিদঃ জোশ লাগছে।
পর্ব ৩
ইরা চেচিয়ে নিচে নেমে এলো।
নাহিদঃ হিহি কাজ হয়ে গিয়েছে।
ইরাঃ ইউ স্টুপিড এগুলো তুমি করেছো, তাইনা?
নাহিদঃ আমি কেন করবো? আমিতো ঘুমিয়ে ছিলাম। এত ঘুম আমার কি বলবো?
ইরাঃ আজ তোর ১দিন কি। আমার যে কয়দিন লাগে।
নাহিদঃ জোশ লাগছে।
ইরা নিচে নেমে নাহিদ কে তাড়া করলো। কিন্তু পেরে উঠলো না বেচারী। নাহিদ ঝড়ের গতিতে দৌড়াচ্ছে। ইরা টায়ার্ড হয়ে সোফায় বসে পড়লো। সারা মুখে কালী দিয়ে মাখামাখি। নাহিদ তখন লোশনের মাঝে। আইলানার ঢেলে দিয়েছিলো আর তাই। তখন ওরকম উদ্ভট গান গাইছিলো। নাহিদ দুরে দাড়িয়ে দাত কেলাচ্ছে।
হাসান চৌধুরীঃ ইস কি বাজে লাগছে তোকে।
ইরাঃ …..
নাহিদঃ পেত্নী দেখিনি কখনো। খুব ইচ্ছে ছিলো পেত্নী দেখার। আজ সেটা পূরন হয়ে গেলো।
সজিবঃ হোয়াট পেত্নী কোথায় এখানে?
নাহিদঃ ওমা তুমি কি কানা? এত বড় পেত্নী চোখে পড়ছে না?
ইরা কে দেখিয়ে বললো,সবাই হেসে দিলো সাথে সজিব ও। ইরা রাগে ফোস ফোস করতে করতে বললো,
- আয় তুই আজ রুমে। দেখ তোর কি অবস্থা করি আমি।
বলে হনহন করে উপরে গেলো। রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে ইরা’র। রুমে গিয়ে আবার শাওয়ার নিলো। নাহিদ সোফায় আরাম করে বসলো।
হাসান চৌধুরীঃ জামাই এটা কেন করলে?
কাঁদো কাঁদো ফেস করে বললো,
নাহিদঃ ও সবসময় আমাকে বকে। চোখ রাঙায় তো তাই টাইট দিলাম।
সজিব ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
নাহিদঃ কি হলো শালা বাবু?
হাসান চৌধুরীঃ ও তোমার বড় হয়।
নাহিদঃ গালতি সে মিস্টেক।
সজিবঃ ডিজগাস্টিং।
বলে সজিব ও চলে গেলো। নাহিদ হাই তুলতে তুলতে বললো,
- যাতো খাবার নিয়ে আয়।
হাসান চৌধুরী ছোট শ্বাস ছাড়লো। নাহিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে বসে আছে। শাওয়ার নিয়ে ইরা নিচে এলো। একটা টপস আর জিন্স প্যান্ট পড়া। দেখলো নাহিদ জোড়ে শব্দ করে হাই তুলছে।
ইরাঃ এসব কি হচ্ছে?
নাহিদঃ তুমি আবার এসেছো?
ইরা ভ্রু কুঁচকে বললো,
- কেন না এলে ভাল হতো নাকি?
নাহিদঃ অনেক ভাল হতো।
বলে মুখে হাত দিলো।
নাহিদঃ তুমি আইসক্রিমের জন্য। সবাই কে তাড়া করেছিলে, তাইনা?
নাহিদঃ হ্যা ওরা আইসক্রিম দেয়নি আমাকে।
ইরাঃ সো স্যাড না বেবী? ওকে ডোন্ট ওয়ারী ইরা ইজ হেয়ার।
নাহিদঃ এর মানে কি?
ইরাঃ আমি এসে গিয়েছি।
নাহিদঃ কি করবে তুমি?
ইরাঃ বাপি আমি বাইরে থেকে আসছি।
ইরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। নাহিদ আর হাসান চৌধুরী। দুজন দুজনকে দেখছে এরমাঝেই খাবার দিয়ে গেলো। নাহিদ সেগুলো নিয়ে রুমে চলে গেলো। কতক্ষণ পর সব শেষ করে নেমে এলো। এসে বসে বসে টিভি দেখছে। ২ঘন্টা পর ইরা এলো বাড়িতে। তবে একা আসেনি কয়েকজন ফ্রেন্ড আছে ওর। সবাই স্টাইলিশ ছোট ছোট ড্রেস পড়া। নাহিদ ওদের সামনে গিয়ে বললো,
- তোমরা বাচ্চাদের ড্রেস পড়েছো কেন?
লিজাঃ হোয়াট আর ইউ সেয়িং?
নাহিদঃ উনি কি বলছে?
রোদেলাঃ ইরা হু ইজ হি?
ইরাঃ হি ইজ মাই স্টুপিড হাসবেন্ড।
লিজাঃ হোয়াট? এই ক্লাউনটা তোর হাসবেন্ড?
নাহিদঃ আই শালী বাংলা বল।
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।
লিজাঃ হোয়াট দ্যা হেল?
নাহিদঃ বাংলা কবি নাকি বাথরুমের। ছেড়া স্যান্ডেল দিয়ে পিডামু?
সবাইঃ ….
ইরাঃ নাহিদ কি বলছো এগুলো?
নাহিদঃ তুমি চুপ করো নয়তো।
ইরাঃ নয়তো কি করবে শুনি?
নাহিদঃ খেজুর গাছে উল্টা ঝুলামু।
ইরা রেগে বললো,
- বাপি ওকে আটকাও। ও এগুলো কি বলছে হ্যা?
নাহিদঃ হুহু আমারে কইলো ক্যান? যে আটকাবে তারেও ঝুলামু।
রোদেলাঃ ইরা এটা কোন ক্ষ্যাত রে?
নাহিদঃ আমাদের গ্রামে ক্ষেত আছে তো। তোরা বেশী বাংলিশ কবি। তো তোগো ওই ক্ষেতে। গরুর দরির সাথে বেধে। তার পিছনে পাঠাবো।
লিজা আর রোদেলা কেটে পড়লো।
নাহিদঃ হিহি এসেছিলো ইংলিশ বলতে। দিলাম তো একদম ঝেড়ে। এবার বোঝ কেমন লাগে।
হাসান চৌধুরী ছোট শ্বাস ছাড়লো।
নাহিদঃ আই বুইড়া শ্বশুর ফাদার। এতবার শ্বাস নেন কেন?
হাসান চৌধুরীঃ জামাই কি বলো?
সবাই তো মহা অবাক।
ইরাঃ তাহলে কি শ্বাস নেবেনা বাপি?
নাহিদঃ এত ছোট শ্বাস নেয় কেন?
ইরাঃ তুমি এমন কেন হ্যা?
নাহিদ ইরা’র কাছে গিয়ে। ইরা’র হাতের ব্যাগের পাশে ঘুরঘুর করছে।
ইরাঃ কি হলো কি?
নাহিদঃ বলছি আমার জন্য কি এনেছো?
হাসান চৌধুরীঃ ……..
ইরাঃ কি আনবো?
নাহিদঃ খাবার আনোনি?
সার্ভেন্টঃ স্যার একটু আগেই তো খেলেন।
নাহিদঃ প্রধানমন্ত্রী বল আমাকে। আর তোর বাপেরটা খেয়েছি?
বেচারা চলে গেলো। ইরা কতগুলো আইসক্রিম বক্স বের করে বললো,
- এই নাও তোমার আইসক্রিম। অরেঞ্জ ফ্লেভার সবগুলো। এখন এখানে বসে খাও।
নাহিদঃ রেখে দাও পরে খাবো।
ইরাঃ না এখনি খাবে স্টার্ট করো।
নাহিদঃ কি করবো?
ইরাঃ শুরু করো।
হাসান চৌধুরীঃ ও তো বললো পরে খাবে।
ইরাঃ নো বাপি এখনি খাবে। এর জন্য সকালে কম ঢং করেনি ও।
নাহিদ গিয়ে খাওয়া শুরু করলো। এভাবে এক বক্স শেষ করে ফেললো। ইরা বিরক্তি নিয়ে তাকিয়ে আছে। আর হাসান চৌধুরী হা করে দেখছে।
নাহিদঃ আহা কি মজা রে।
নাহিদ বাকী বক্স ফ্রিজে রেখে বললো,
- এগুলো কেউ ধরবি না পরে খাবো।
বলে দরজার কাছে গেলো।
ইরাঃ কোথায় যাচ্ছো?
নাহিদঃ বাগানে যাবো বল খেলতে।
ইরাঃ ইডিয়ট একটা।
ইরা উপরে চলে গেলো। আর নাহিদ বেরিয়ে গেলো। ইরা রুমে গিয়ে বসে পড়লো।
ইরাঃ জাস্ট টলারেটলেস ড্যাম ইট। বাপি এই স্টুপিডটার সাথে আমার কেন বিয়ে দিলো? ওর এসব পাগলামি আমার অসহ্য লাগে। মাঝে মাঝে মনে হয় কোনো পাগল।
এরমাঝে ইরা’র ফুপ্পি এসে বললো,
- একদম ঠিক বলেছিস মা। ভাইয়া যে কেন এই পাগলের সাথে তোর বিয়ে দিলো? না আছে পড়ালেখায়। আর না আছে বাড়ী, গাড়ি।
ইরাঃ বাপি এটা কেন করলো ফুপ্পি?
ফুপ্পিঃ শান্ত হ মামনি আমি আছিতো।
উনি আরো ভুলভাল বোঝালো। এরপর রুম থেকে চলে গেলো। প্রায় ৩/৪ঘন্টা পর নাহিদ এলো। আবার সেই কাদা মাখানো গায়ে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো ইরা। ওর মায়ের ছবির সামনে দাড়িয়ে কাঁদছে। নাহিদে’র ইরা’র কান্না ভাল লাগলো না। তাই ছবির সামনে গিয়ে বললো,
- এই বুড়িটা কে? চোখগুলো তালের আঠির মতো। হিহি তোমার মতোই পেত্নী। তোমার মা হবে তাইনা?
নাহিদ ভেবেছিলো এটা বললে। ইরা রেগে ঝগড়া করবে। আগেও করেছে কিন্তু আজ তা হলো না। ইরা ঠাস করে নাহিদ কে থাপ্পর মারলো। নাহিদ গালে হাত দিয়ে অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
ইরাঃ ব্যাস অনেক সহ্য করেছি তোমাকে। গত ২মাস আমাকে জ্বালিয়ে আসছো। আর সহ্য করবো না আমি। বেরিয়ে যাও এখান থেকে।
নাহিদ কিছু বললো না। মুচকি হাসি দিয়ে বেরিয়ে গেলো। ইরা হাসি দেখে অবাক হলো।
পর্ব ৪
নাহিদ মুচকি হেসে বেরিয়ে গেলো। ইরা অবাক হলো অনেক।
ইরাঃ আজব হাসলো কেন ও? অবশ্য যে পাগল হাসবেই তো।
ইরা বিছানায় বসে পড়লো। ছাদে দাড়িয়ে আছে নাহিদ। দৃষ্টি এই ব্যস্ত শহরের মানুষগুলোর উপর। রোডের পাশেই ইরা’দের বিল্ডিংটা। তাই ছাদে দাড়ালে সবটাই দেখা যায়। নাহিদ কিছু একটা ভেবে নিচে নেমে এলো। রুমে এসেই ইরা কে বললো,
- তুমি আমাকে থাপ্পর মারলে কেন?
ইরাঃ তুমি না চলে গেলে?
নাহিদঃ আমি এক্ষুণি শ্বশুর ফাদার কে বলবো।
বলেই রুম থেকে বের হতে গেলো। ইরা গিয়ে ধরে ফেললো।
নাহিদঃ ছাড়ো শ্বশুর ফাদার।
বলে জোরে চেঁচাতে গেলো। ইরা নাহিদে’র মুখে হাত দিয়ে বললো,
- এই সোম সোম লিসেন লিসেন। আই এম সরি আই এম এক্সট্রেমলি সরি।
নাহিদঃ এরমানে কি?
ইরাঃ আমার ভুল হয়ে গিয়েছে। আমি খুব দুঃখিত ওকে? তোমাকে আর মারবো না।
নাহিদঃ সত্যি তো?
ইরাঃ হুম সত্যি।
নাহিদঃ হু হু আর যদি মারো আমাকে। শ্বশুর ফাদার কে বলে দেবো।
বলে বিছানায় চিত হয়ে শুয়ে পড়লো।
ইরাঃ সোম আইসক্রিম খাবে?
নাহিদ লাফ দিয়ে উঠলো। ইরা মুচকি হেসে নিচে গেলো। ফ্রিজ থেকে আইসক্রিম বক্স এনে। নাহিদে’র হাতে দিয়ে মিষ্টি হেসে বললো,
- তুমি খাও আমি আছি।
নাহিদ হাত কচলাচ্ছে।
ইরাঃ কি হলো খাও? নাকি এখনো রেগে আছো?
নাহিদঃ না মি মানে ইরা রেগে নেই।
ইরাঃ তাহলে খাও।
নাহিদঃ হ্যা খাচ্ছিতো।
নাহিদ আইসক্রিম খেতে শুরু করলো। একটুপর ইরা কে বললো,
- তুমি তাকিয়ে আছো কেন? নিশ্চয় নজর দিচ্ছো তাইনা?
ইরাঃ হোয়াট?
নাহিদঃ যেভাবে তাকিয়ে আছো। মনে হচ্ছো কোনদিন খাওনি।
ইরাঃ ইডিয়ট একটা।
বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ইরা যেতেই নাহিদ বেলকনিতে গেলো। এরপর ওয়াসরুমে ঢুকে গেলো। ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে ঠাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। এদিকে ইরা এসে দেখলো নাহিদ ঘুমে।
ইরাঃ এর মধ্যে ঘুমিয়েও গেলো?
ইরা কতক্ষণ পড়ে ঘুমিয়ে পড়লো।
দেখতে দেখতে ১মাস কেটে গিয়েছে। নাহিদে’র পাগলামি তো আছেই। সামনেই ইরা’র জন্মদিন। সেটা নিয়ে ড্রয়িংরুমে বসে কথা বলছে।
সজিবঃ ইরা সামনেই তো তোর বার্থডে।
নাহিদঃ কার বাড্ডু?
ইরাঃ উফ কিসব বলছো?
নাহিদঃ আমার কি দোষ? এই ইংরেজের বাচ্চাই তো বললো,
ইরাঃ তুমি ওকে ইংরেজের বাচ্চা বলো কেন?
নাহিদঃ তোমার খুব দুঃখ হয় তাইনা?
ইরাঃ হ্যা আমার খারাপ লাগে।
নাহিদঃ আচ্ছা এখন থেকে তোমাকেও বলবো।
ইরাঃ নাহিদ?
নাহিদঃ ওমা তুমিই তো বললে। তোমার খুব খারাপ লাগে। মানে ভাইয়া কে বলি। তোমাকে কেন বলিনা তাই খারাপ লাগে। তাই তোমাকেও বলবো শান্তি?
ইরাঃ বাপি কিছু বলো।
হাসান চৌধুরী ছোট শ্বাস ছেড়ে বললো,
- আমি আর কি বলবো?
সজিবঃ বাপি তো ওরই সাপোর্ট করে।
নাহিদঃ ভিআইপি তো আমি তাই।
ইরাঃ ইউ জাস্ট সাট আপ।
নাহিদ মুখ ভেংচি কেটে বেরিয়ে গেলো।
ইরাঃ কোথায় যাও?
নাহিদঃ কাজ আছে হু খেলবো।
ইরা রেগে রুমে গেলো। সজিব ও বেরিয়ে গেলো। একটুপর হাসান চৌধুরী অফিসে গেলো।
ইরা রুমে বসে বোর হচ্ছে তখন ফুপ্পি এলো।
ফুপ্পিঃ কি করছে আমার মা টা?
ইরাঃ বোর হচ্ছি ফুপ্পি।
ফুপ্পিঃ কেন সোনা মা?
ইরাঃ আমার বোরিং লাগে। বাপি লাইফটা স্পয়েল করে দিলো।
ফুপ্পি টেনে ইরা কে। নিজের কোলে শুইয়ে। মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বললো,
- মন খারাপ করিস না মা। তুই নাহিদ কে ছেড়ে দে।
ইরাঃ কি বলছো ফুপ্পি? কি করে?
ফুপ্পিঃ কেন ডিভোর্স দিবি।
ইরাঃ আমাদের বিয়ে তো ৩মাস হলো কেবল।
ফুপ্পিঃ হ্যা সেটাও ঠিক। বাট এপ্লাই করে রাখতে পারিস। ওরকম একটা গাইয়া অশিক্ষিত। ছোটলোক ছেলের সাথে কেন তোর বিয়ে দিলো? কত করে বারন করেছি আমি সজিব, সাব্বির । কিন্তু ভাইয়া তো শুনলোই না। একটা কথা বলবি মা?
ইরাঃ কি ফুপ্পি?
ফুপ্পিঃ মাইন্ড করিস না তুই আর নাহিদ। মানে তোরা কি কাছাকাছি এসেছিস?
ইরা বুঝলো উনি কি বলছে তাই বললো,
- নো ফুপ্পি কখনোই না।
ফুপ্পিঃ তাহলে তো হলোই।
ইরাঃ ফুপ্পি সাব্বির ভাইয়া আসবে না?
ফুপ্পিঃ কি বলছিস হ্যা? তোর জন্মদিন সামনে। আর তোর সাব্বির ভাইয়া আসবে না? এটা কখনো হয়েছে হ্যা?
ইরাঃ সাব্বির ভাইয়া কে ফোন করি।
ফুপ্পিঃ ওকে ফোন কর আমি যাই।
ফুপ্পি চলে গেলো। ইরা সাব্বির কে ফোন করলো। ১বারেই ফোন ধরলো সাব্বির ।
ইরাঃ হ্যালো সাব্বির ভাইয়া।
সাব্বিরঃ হেই সুইট সিক্সটিন।
ইরাঃ আমি সিক্সটিন?
সাব্বিরঃ আই ডোন্ট কেয়ার কিউটিপাই। ইউ নো হোয়াট? তুমি আমার কাছে সুইট সিক্সটিন থাকবে।
ইরাঃ হয়েছে হয়েছে কবে আসছো?
সাব্বিরঃ তোমার বার্থডে যেদিন।
ইরাঃ হোয়াট?
সাব্বিরঃ ইয়েস বিকজ আমার।
ইরাঃ তোমার কি হ্যা?
সাব্বিরঃ কামঅন রিল্যাক্স লিসেন টু মি। আমার এই কয়েকদিনই ইমপরটেন্ট ক্লাস আছে। আমি এগুলো মিস করতে পারবো না। তাহলে আমার প্রব্লেম হয়ে যাবে। বাট তবুও তুমি বললে আজই চলে আসবো।
ইরাঃ এই না তুমি ওইদিনই এসো।
সাব্বিরঃ ওকে সুইট সিক্সটিন।
ইরাঃ ওকে বাই।
সাব্বিরঃ বাই কিউটিপাই।
ইরা ফোন কেটে দিলো। সাব্বির মুচকি হাসলো। এবার পরিচয় দিয়ে দেই। সাব্বির আহমেদ ইরা’র ফুপ্পির ছেলে। সাব্বির পড়াশোনা করার জন্য। ৪বছর রানিং আমেরিকা এসেছে। সাব্বির দেখতেও অনেক কিউট। লম্বায় ৫। ১১” ফর্সা গায়ের রং। সিল্কি চুল ভাসা চোখ। সবমিলিয়ে মাশাআল্লাহ দেখতে। সাব্বির কথা বলা শেষ করে ক্লাসে গেলো।
দুপুরে নাহিদ এলো বাড়ি। ফ্রেশ হয়ে কার্টুন দেখতে লাগলো। এভাবে দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো। হাসান চৌধুরী বেশ ফুরফুরে মেজাজে বাড়ি এলো।
নাহিদঃ আপনি এত খুশি কেন?
ইরাঃ হ্যা বাপি বেশ খুশি খুশি লাগছে।
হাসান চৌধুরীঃ হ্যা রে আজ আমি খুব খুশি।
সজিবঃ কেন?
হাসান চৌধুরীঃ আমি একটা ডিল করে এলাম।
নাহিদঃ কি? কাকে ঢিল মেরে এলেন?
হাসান চৌধুরী ছোট শ্বাস ছেড়ে বললো,
- ঢিল মারিনি জামাই ডিল করেছি।
সজিবঃ কিসের ডিল?
হাসান চৌধুরীঃ “এস কে এ” গ্রুপ অফ ইন্ডাস্ট্রির সাথে। ১০কোটি টাকার ডিল এটা।
ইরাঃ তুমি বলেছিলে ১মাস আগে?
হাসান চৌধুরীঃ হ্যা রে আর ওরা তো। অর্ডার পাওয়ার আগেই টাকা দিয়েছে।
নাহিদঃ দেখি কোথায় টাকা?
ইরাঃ নাহিদ তুমি দেখে কি করবে?
সজিবঃ তুমি দেখেছো কখনো?
নাহিদ ভেংচি কেটে বসে রইলো।
হাসান চৌধুরীঃ আহ চুপ কর তোরা।
বলে উনি চলে গেলো। দেখতে দেখতে ইরা’র জন্মদিন চলে এলো। শহরের নামকরা হোটেলে পার্টি রেখেছে। সবাই রেডি হয়ে হোটেলে চলে গেলো। ইরা নেভি ব্লু কালার গাউন পড়েছে। গলায় ডায়মন্ডের নেকলেস। কানে ডায়মন্ডের ঝুমকো। হাতে চিকন ডায়মন্ডের চুরি। ঠোটে লাল লিপস্টিক চোখে কাজল। কপালে ছোট পাথরের টিপ। চুলগুলো কার্ল করা। নাহিদ কে ম্যাচ করে ড্রেস পড়িয়েছে। ব্লু কালার শার্ট, ব্লু কালার প্যান্ট। শার্টের উপর কালো সুট। চুলগুলো জেইল দেয়া সিল্কি চুল কপাল ছুয়ে আছে। সজিব ও নাহিদে’র মতো সেম সাজ। ওরা ভেতরে গেলো চারপাশটা অনেক সুন্দর লাগছে।
নাহিদঃ কিতনা সুন্দার হে।
ইরাঃ দেখো এখানে একদম চুপ থাকবে।
নাহিদঃ ……
ভেতরে যেতেই সবাই বিজি হয়ে গেলো। হাসান চৌধুরী ওনার অফিসের। সবার সাথে কথা বলছে সজিব ওর ফ্রেন্ডদের সাথে। ইরা ও লিজা আর রোদেলা’র সাথে কথা বলছে। সাথে রুপ ও আছে।
লিজাঃ তোর হাসবেন্ড কে গান গাইতে বলি?
ইরাঃ ও গান পারেনা তো।
রোদেলাঃ বলি ইরা প্লিজ? এনাউন্স করি গিয়ে?
রুপঃ বাট ও তো বললো জিজু গান পারেনা।
লিজাঃ তুই চুপ করতো।
লিজা গিয়ে এনাউন্স করলো।
- লেডিস এন্ড জেন্টলম্যান। এখন আপনাদের সবাই কে গান শোনাবে। বার্থডে গার্ল ইরা খাঁনে’র হাসবেন্ড নাহিদ খাঁন।
নাহিদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। লিজা সামনে এসে বললো,
- সেদিন ইনসাল্ট করেছিলে না? আজ দেখো তোমার কি করি।
নাহিদ দাড়িয়ে আছে একপাশে। এরমাঝেই সেখানে এন্ট্রি নিলো সাব্বির ।
ইরাঃ সাব্বির ভাইয়া।
সাব্বিরঃ হেই সুইট সিক্সটিন।
সাব্বির ইরা কে জড়িয়ে ধরলো। ইরা ও সাব্বির কে জড়িয়ে ধরলো। নাহিদ আস্তে আস্তে স্টেজে গেলো। গিয়ে একটা চেয়ারে বসে। লিজা’র থেকে গিটার নিলো। এরপর সুর তুলে গাইতে শুরু করলো।
আমি কি কেবল হেরেই যাবো
হবে নাকি জীবনের স্বপ্ন পূরন (২বার)
না পাওয়ার বেদনায়
শুধু কেঁদে কেঁদে যাবে
ভালবাসাহীন এই পরাজিত মন।
সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সাব্বিরঃ তোমার হাসবেন্ড না?
ইরাঃ হ্যা।
সাব্বিরঃ এই গান গাইছে কেন? আর গান শুনে মনে হচ্ছে। গানের মাধ্যমে মনের কষ্টগুলো প্রকাশ করছে।
আমি কি কেবল হেরেই যাবো
হবে নাকি জীবনের স্বপ্ন পূরন।
[বাকীটা নিজ দায়িত্বে শুনবেন]
গান গাওয়া শেষে সবাই হাততালি দিলো। লিজা রাগে ফোস ফোস করছে। নাহিদে’র একটা ফোন আসতেই সাইডে চলে গেলো। একটুপর ফিরে এলো একরাশ হতাশা মুখে নিয়ে। সবাই কেক কাটতে বলছে। ইরা কেক কাটতে গেলো। কিন্তু সেখানে গিয়ে নাহিদ কেক ধরে ফেলে দিলো। সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে।
সাব্বিরঃ হোয়াট দ্যা হেল?
ইরাঃ এটা কি করলে তুমি?
লিজা সুযোগ পেয়ে গেলো।
লিজাঃ ছিঃ ছিঃ ছিঃ ইরা। তোর গাইয়া স্বামী এটা কি করলো? এরজন্যই বলে গ্রামের এসব থার্ড ক্লাস ছেলেদের। কখনো বিয়ে করতে হয় না। আমার কি মনে হয় জানিস? আঙ্কেল কে ও ফুসলে তোকে বিয়ে করেছে। যাতে তোদের বিশাল সম্পতির মালিক হতে পারে।
নাহিদ মাথা নিচু করে আছে।
সজিবঃ এটা কেন করলে তুমি?
হাসান চৌধুরীঃ জামাই এটা কেন করলে?
ইরাঃ ব্যস বাপি অনেক হয়েছে। ওকে অনেক সহ্য করেছি আমি। গত ৩মাস আমি এসব সহ্য করেছি। নাউ আই এম জাস্ট টায়ার্ড বাপি।
লিজাঃ এই তোমার বাবা, মা এসব শিখিয়েছে?
রোদেলাঃ এত হ্যাপি ছিলো সবাই। দিলে তো হ্যাপিনেস নষ্ট করে? ওহ তুমিতো অশিক্ষিত বোঝো হ্যাপিনেস কি?
লিজাঃ বাবা, মায়ের শিক্ষা বুঝলি?
নাহিদে’র এবার মেজাজ বিগরে গেলো। সাথে সাথে চোখগুলো রক্ত লাল হয়ে গেলো। হাত মুঠ করে রেখেছিলো এতক্ষণ।
নাহিদঃ ব্যস এনাফ আই সেইড এনাফ ইজ এনাফ।
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।
নাহিদঃ হোয়াট আর ইউ থিংক? আর ইউ অনলি এডুকেটেড এন্ড জেন্টল গার্ল? নো ইউআর রং এন্ড ইউআর আইডিয়া ইজ এবসুলিউটলি রং।
লিজাঃ তুমি ইংরেজী বলছো?
নাহিদ লিজা কে ঠাস করে থাপ্পর মারলো। এরপর চেঁচিয়ে বলে উঠলো।
- তুই মেয়ে বলে বেঁচে গেলি। নয়তো কসম আল্লাহর। আমার পাপা আর আম্মু কে নিয়ে এসব বলার জন্য। তোকে এখানেই পুতে দিতাম আমি।
এরপর রোদেলা’র সামনে গিয়ে বললো,
- এন্ড ইউ কি বলছিলে?
রোদেলা ভয়ে অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে আছে।
নাহিদঃ হেই ইউ আই এম টক টু ইউ।
রোদেলা এবার তাকালো।
নাহিদঃ হ্যাপিনেস নট ইন এনাদার প্লেস। বাট দিস প্লেস নট ফর এনাদার আওয়ার। বাট দিস আওয়ার ওয়েল হোয়াটএভার। বাট ইউ জাস্ট রিমেম্বার দ্যাট। লাইফ ইজ টেন পার্সেন্ট। হোয়াট হ্যাপেন্স টু ইউ? এন্ড নাইন্টি পার্সেন্ট হাউ ইউ রেসপন্ড টু ইট মাইন্ড ইট।
এরপর ইরা’র সামনে গেলো। ইরা’র সামনে আসতেই। নাহিদে’র চোখ থেকে টপটপ করে পানি পড়তে লাগলো।
ইরাঃ তুমি কে?
নাহিদঃ তোমার স্টুপিড হাসবেন্ড মিষ্টি।
মিষ্টি নাম শুনেই ইরা চমকে গেলো। বারবার ঝাপসা কিছু ভেসে আসছে। মাথায় হাত দিয়ে চেপে ধরলো।
নাহিদঃ একটা কথা খুব কানে বাজছে জানো? গত ৩মাস আমাকে টলারেট করেছো। নাউ ইউআর জাস্ট টায়ার্ড।
সজিবঃ তোমার আসল পরিচয় কি?
নাহিদঃ আজ আর আমি কিছুই বলবো না। মিষ্টি টায়ার্ড হা হা ৩মাসে বড্ড টায়ার্ড। বাট জানো তো মিষ্টি? ৩বছরেও আমি টায়ার্ড হইনি। আর তুমি ৩মাসে টায়ার্ড হয়ে গেলে? তোমার জন্য চকলেট, আইসক্রিম খেয়েছি। এরকম গাইয়া সেজে রয়েছি। কারণ আই লাভ ইউ সো মাচ ড্যাম ইট। নিজেই নিজেকে প্রমিস করেছিলাম।
হাসান চৌধুরীঃ তুমি ওগুলো কেন খেতে? বিশেষ করে আইসক্রিম ওটাতে তো তোমার।
নাহিদঃ এলার্জি আছে আর তাই। আইসক্রিম আর চকলেট খাওয়ার পর। আমি বমি করে দিতাম। জাস্ট এতটুকু বলবো আজ। আই এম নট ইল্লিটারেট এন্ড আনএডুকেটেড। আই এম এ ডক্টর। ডক্টর নাহিদ খাঁন আয়াশ। আর মিষ্টি তোমাকে সেভ রাখতে। তোমাকে সুস্থ করতে এরকম হয়ে ছিলাম। কারণ নিজে নিজেকে প্রমিস করেছিলাম। তোমাকে সুস্থ করতে যা করতে হয় আমি করবো। যত অপমানিত হতে হয় আমি হবো।
বলে নাহিদ বেরিয়ে গেলো। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে নোনা পানি।
হাসান চৌধুরীঃ তোরা এটা ঠিক করলি না।
সজিবঃ বাপি ও?
হাসান চৌধুরীঃ “এস কে এ”কোম্পানির মালিক। ওই অফিসের বস নাহিদ। এই শহরের নামকরা বিজনেসম্যান। রায়হান খাঁনে’র একমাএ ছেলে।
ইরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ওর মাথায় ঘুরছে ওকে সুস্থ করতে এসেছে মানে? আর মিষ্টি কেন বললো? এসব ভাবতে ভাবতে সেন্সলেস হয়ে পড়ে।
পর্ব ৫
ইরা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। ওর মাথায় ঘুরছে ওকে সুস্থ করতে এসেছে মানে? আর মিষ্টি কেন বললো নাহিদ? এসব ভাবতে ভাবতে ইরা সেন্সলেস হয়ে। ওখানেই লুটিয়ে পড়ে যায়।
সাব্বিরঃ কিউটিপাই।
সজিবঃ ইরা কি হলো?
ওরা ছুটে যায় ইরা’র কাছে।
হাসান চৌধুরীঃ ইরা মামনি চোখ খোল।
সাব্বিরঃ মামা ওকে হসপিটালে নিয়ে চলো।
সজিব ইরা কে কোলে তুলে। তাড়াতাড়ি গাড়িতে ওঠায়। এরপর গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হসপিটালে চলে আসে। হসপিটালে ডক্টর ইরা কে কেবিনে নিয়ে যায়। কেবিনে নিয়ে সেন্স আনার ট্রাই করছে।
সাব্বিরঃ ডক্টর কি হলো?
ডক্টরঃ ওনার মাথায় চাপ থেকেই। উনি সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। ডোন্ট ওয়ারী আমি ইনজেকশন দিয়ে দিয়েছি। আর স্যালাইন ও দিয়ে দিচ্ছি। একটু ওয়েট করুন সেন্স এসে যাবে।
ওরা বাইরে গিয়ে বসে। এদিকে নাহিদ বাড়ি এসে ধপ করে সোফায় বসে। নাহিদে’র মা তাড়াতাড়ি এসে বলে।
- সোম কি হলো?
নাহিদঃ নাথিং আম্মু।
নাহিদে’র মাঃ তোর চোখমুখ এমন লাগছে কেন?
নাহিদঃ বলছি তো কিছুনা।
রেগে বলে নাহিদে’র চাচী চলে আসে।
নাহিদে’র চাচীঃ একিরে কি হলো?
নাহিদঃ মামনি আমি বলছি কিছুনা।
চাচী কে মামনি বলে নাহিদ। দুজনেরই খটকা লাগছে। বাট নাহিদ যেই রাগী এটা ভেবে চুপ করে আছে। নাহিদ রুমে গিয়ে দরজা আটকে দেয়।
নাহিদে’র মাঃ কি হলো বলো তো?
নাহিদে’র চাচীঃ বুঝতে পারছি না।
রুমে ফ্লোরে বসে আছে নাহিদ। আর ভাবছে কি কি করতো। নাহিদ খাবার নিয়ে রুমে গেলেও খেতো না। অত খাবার কেউই খেতে পারবে না। সব রেখে দিতো আর পরে বিলিয়ে দিতো। সেদিন রাতে চকলেট খেয়ে। নাহিদ বেলকনিতে গিয়েই বমি করে দেয়। আর কিছুটা অসুস্থ হয়ে যায়। যার কারণে রাত ১০টায় রুমে আসে। এরপর ইরা যখন আইসক্রিম খাওয়ায়। আইসক্রিম খেয়ে নাহিদ বাগানে চলে যায়। ওইদিন ও বাড়ি থেকে বেরিয়ে আসে। এসে ঔষুধ খায় কারণ আইসক্রিমে ওর এলার্জি। আর ফেবার হয়ে যায় অনেক সময়। আর রাতে আইসক্রিম খেয়ে শুয়ে পড়ে। সেই রাতে ও সেন্সলেস হয়ে গিয়েছিলো। কিন্তু ইরা ভেবেছিলো ঘুমিয়ে পড়েছে। সবটা ভেবে নাহিদ তাচ্ছিল্য হাসি দিয়ে বলে।
- আর কবে চিনবে তুমি আমাকে? মিষ্টি তুমি তোমার বজ্জাত জামাই কে ভুলে গিয়েছো? আমি পারলাম না তোমাকে সব মনে করাতে। গত ১বছর তুমি সব ভুলে গিয়েছো। আমি ব্যর্থ পারিনি তোমাকে আগলে রাখতে। কি হলো এসব করে? সেই আমি রেগে গেলাম আজকে। সবটা সামনে চলে এলো। রাগটা কেন কন্ট্রোল করতে পারিনা? ১বছর আগেও এই রাগের জন্যই। তোমার বিপদ হয়েছিলো আর আজ আবার। সেই আমি নিজের আসল রুপে চলে এলাম। মিষ্টি আমি চেন্জ হয়ে গিয়েছি। আমি আর আগের মতো রাগিনা।
বলে কান্নায় ভেঙে পড়লো নাহিদ। কাঁদতে কাঁদতে সব ভাঙচুর করছে।
নাহিদঃ কেন আমার এত রাগ? রাগের জন্যই সবাই দুরে সরে যায়। আমি এখন কি করবো? কি করে মনে করাবো সবটা মিষ্টি কে?
এরমাঝে নাহিদে’র ফোন এলো। তাকিয়ে দেখলো হাসান চৌধুরী।
নাহিদঃ হ্যালো বাপি।
হাসান চৌধুরীঃ নাহিদ কোথায় তুমি?
নাহিদঃ বাড়ি বাট হোয়াট হ্যাপেন্ড?
হাসান চৌধুরীঃ ইরা সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।
নাহিদঃ হোয়াট?
হাসান চৌধুরীঃ হ্যা তুমি যাওয়ার পরই।
নাহিদঃ আমি এক্ষুণি আসছি।
নাহিদ চোখে মুখে পানি দিয়ে। গাড়ির চাবি নিয়ে বেরিয়ে এলো।
নাহিদে’র মাঃ কোথায় যাচ্ছিস?
নাহিদঃ হসপিটালে।
উনি ভাবলো নিজের চেম্বারে যাচ্ছে। তাই আর কিছু বললো না। নাহিদ গাড়ি স্টার্ট দিয়ে তাড়াতাড়ি ড্রাইভ করছে। ফোন করে কোন হসপিটালে জেনে নিলো। এরপর সেখানে গিয়ে পৌছালো।
সজিবঃ তুমি?
নাহিদঃ মিষ্টি কোথায়?
সাব্বিরঃ আব জিজু ও কেবিনে।
নাহিদ কেবিনে ঢুকে গেলো। নাহিদ কে দেখেই ইরা বললো,
- তুমি এখানে?
নাহিদঃ ইয়েস আমার সাথে চলো।
ইরাঃ মানে কোথায় যাবো?
নাহিদঃ তোমার শ্বশুর বাড়ি।
ইরাঃ আমি আমার বাড়ি যাবো।
নাহিদঃ হ্যা শ্বশুর বাড়িই তোমার বাড়ি।
ইরাঃ আমি যাবোনা ওকে?
ইরা নেমে দরজার কাছে গেলো। নাহিদ খপ করে হাত ধরে ফেললো।
ইরাঃ আরে কি করছো?
নাহিদঃ বললাম তো আমার সাথে যাবে।
হাসান চৌধুরীঃ ও যখন না করছে তখন।
নাহিদঃ নো বাপি ও আমার সাথেই যাবো।
ইরাঃ আমি তোমাকে স্বামী বলে মানিনা। তো শ্বশুর বাড়ি যাওয়ার প্রশ্নই আসে না।
নাহিদঃ তুমি মানো আর না মানো। তুমি আমার বিয়ে করা বউ জান। তাও ১বার না ২বার বিয়ে করা বউ। সো নো মোর টক এন্ড কাম উইথ মি।
বলে ইরা কে কোলে নিয়ে চলে গেলো। সাব্বির আর সজিব অবাক হলো।
সজিবঃ ২বার বিয়ে করা বউ মানে?
পর্ব ৬
নাহিদ ইরা কে নিয়ে নিজেদের বাড়ি এলো। বাড়ির সামনে গাড়ি থামাতেই ইরা রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। নাহিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে ইরা কে গাড়ি থেকে নামালো। ইরা রেগে কিছু বলতে যাবে সামনে তাকিয়ে হা হয়ে গেলো। বিশাল বাড়ি নাহিদ’দের পুরোটা টাইলস করা। মার্বেল পাথর দেয়া অনেক জায়গায়। একপাশে বাঁকানো সুইমিং পুল আছে। আরেক পাশে বাগান নানান রকম ফুল তাতে।
বসার জন্য দোলনা চেয়ার টেবিল সব আছে। আর বাড়ির দরজা থেকে গেইট পর্যন্ত রাস্তা করা। তার দুপাশেও ফুল গাছ শুধু গোলাপ ফুল। বাট অনেক ধরনের কালার গোলাপের। ইরা বাড়িটা মুগ্ধ হয়ে দেখছে যদিও ওদের ও অনেক বড় বাড়ি। বাট নাহিদ’দের বাড়ির ডিজাইনটাই আলাদা। নাহিদ ইরা কে হুট করেই কোলে নিলো। ইরা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে বললো,
- আরে কি করছো এটা?
নাহিদঃ নিজের বউ কে কোলে নিয়েছি জান।
ইরাঃ ইউ স্টুপিড আমাকে নামাও।
নাহিদঃ এখনো কি স্টুপিড লাগছে?
ইরাঃ কথা না বলে আমাকে নামাও সোম।
নাহিদঃ জাস্ট সাট আপ মিষ্টি।
ইরাঃ …
নাহিদ বাঁকা হাসি দিয়ে ভেতরে গেলো। ভেতরে যেতেই ইরা আরো অবাক হলো। বাইরে থেকে ভেতরটা আরো বেশী সুন্দর। নাহিদ সবাই কে ডাকলো সবাই ইরা কে দেখে অবাক হলো।
নাহিদে’র মাঃ মনপাখি তুই?
ইরা ভ্রু কুঁচকে তাকালো। নাহিদে’র মা ইরা কে ছোট থেকেই মনপাখি বলে ডাকে। নাহিদ ইরা কে কোল থেকে নামিয়ে দিলো। নাহিদে’র মা এসে জড়িয়ে ধরলো। ইরা’র কেমন একটা ফিল হচ্ছে যেন ওনাকে চেনে। কিন্তু মনে করতে পারছে না তাই বললো,
- আপনি কে আন্টি?
নাহিদে’র মা অবাক হয়ে বললো,
- তোর সব মনে পড়েনি তাহলে?
ইরাঃ কি মনে পড়বে?
নাহিদে’র মা কিছু বলতে গেলেই নাহিদ ইশারা করলো। উনি আর কিছু বললো না চুপ হয়ে গেলো। এদিকে ইরা এসেছে শুনে নাহিদে’র দুই বোন চলে এলো। যাদের নাম কাজল আর মুন্নি। দুজনের হাসবেন্ডই পুলিশ অফিসার। দুজনেই ইরা কে জড়িয়ে ধরলো।
কাজলঃ তিশুপাখি কেমন আছিস তুই?
ইরা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। মুন্নি ও ইরা কে বললো কেমন আছিস। কিন্তু ইরা তো ওদের চিনতে পারছে না। তবুও মুচকি হেসে বললো ভাল আছি। নাহিদ বুঝলো ইরা কাউকে চিনবে না তাই উপরে নিয়ে এলো। নাহিদে’র রুমে এসে ইরা শকড হয়ে তাকিয়ে আছে। ইরা’র অনেক ছবি নাহিদে’র রুমে। এমনকি ছোট বেলার ছবিও আছে এখানে।
ইরাঃ এই ছবিগুলো এখানে?
নাহিদঃ মিষ্টি তুমি রেস্ট করো। পরে সব জানতে পারবে ওকে? আমি এক্ষুণি আসছি তুমি রেস্ট নাও।
বলে নিচে চলে গেলো। ইরা রুমটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। অনেক বড় রুম ব্লু কালার করা পুরো রুমটা। জানালার পর্দাগগুলোও ব্লু কালার। ইরা ভাবলো এই কালার তো ওর ফেবারিট। আবার ভাবলো হয়তো নাহিদে’র ও ফেবারিট। ইরা গিয়ে একটা বালিশ নিয়ে শুয়ে পড়লো। হঠাৎ বালিশে কি লেখা দেখে হাতে নিলো। দেখলো ওটাতে সোম লেখা আছে।
ইরাঃ স্ট্রেঞ্জ বালিশে নাম লেখা?
ইরা আরেকটা বালিশ নিলো। এবার আরো অবাক হলো। ওটাতে মিষ্টি লেখা ইরা বিরবির করে বললো,
- সোম আমাকে মিষ্টি বলে। তারমানে এটা আমার বালিশ। কিন্তু আমার কিছু মনে নেই কেন? কি হয়েছিলো আমার সাথে?
ইরা ভাবতে ভাবতেই ঘুমিয়ে পড়লো। ড্রয়িংরুমে পিনপনতা বিরাজ করছে। কাজল একটা শ্বাস ছেড়ে বললো,
- মানে তিশুপাখির কিছু মনে পড়েনি?
নাহিদঃ না রে আপু।
মুন্নিঃ আমরা তো ভেবেছিলাম।
নাহিদঃ হুম ভেবেছিলি মনে পড়েছে তাইনা আপু?
মুন্নি কাজলঃ মন খারাপ করছিস কেন? এসব তো তোর জন্যই হয়েছে।
নাহিদে’র মাঃ হ্যা সেটাই তো।
নাহিদে’র বাবা অফিস থেকে এসে বললো,
- এটাই তো চেয়েছিলো এই কুলাঙারটা।
নাহিদ মাথা নিচু করে আছে। একে একে সবাই চলে গেলো। নাহিদ উঠে নিজের রুমে গেলো। গিয়ে দেখলো ইরা ঘুমিয়ে আছে। নাহিদ ইরা’র কপালে চুমু দিয়ে ওায়সরুমে গেলো। গিয়ে ঝর্না ছেড়ে ভিজতে লাগলো আর ডুব দিলো অতীতে।
অতীত।
৫বছর পর লন্ডন থেকে ফিরছে নাহিদ। বাড়িতে উৎসব মুখর পরিবেশ। যেন কোনো উৎসব হচ্ছে আসলে খাঁন বাড়ির জান নাহিদ। নাহিদে’র ভুলেই ওকে বিদেশে পাঠিয়েছিলো। নাহিদ অত্যন্ত জেদী আর রাগী একটা ছেলে। স্কুলে কলেজে অনেক ছেলেদের ধরে মারতো। কয়েকজনের মাথা ও ফাটিয়ে দিয়েছিলো। টিচার্সরা তাদের বাবা মায়েরা কমপ্লেইন করেছিলো। যদিও দোষ ওদেরই ছিলো কিন্তু ওর চাচ্চুই। ওর বাবা কে বলে বিদেশে পাঠিয়ে দেয়। নাহিদ ও জেদের জন্য চলে যায়। যখন বিদেশ পাঠায় তখন ওর বয়স ছিলো ১৭বছর। যাইহোক সন্ধ্যায় নাহিদ এসে পৌছালো। সেই লেভেলের হ্যান্ডসাম হয়ে গিয়েছে। ফ্যামিলি ড্রামা হলো অনেক নাহিদ নিজের রুমে গিয়ে। রাগটা মাথায় চরে গেলো।
নাহিদঃ হোয়াট দ্যা হেল? এটা রুম নাকি গরুর গোয়াল? আম্মু আম্মু উপরে এসো।
নাহিদে’র মা তাড়াতাড়ি এসে বললো,
- কি হলো রে?
নাহিদঃ এটা কি রুম নাকি গরুর গোয়াল?
নাহিদে’র মা মাএ খেয়াল করলো। আর উনি বুঝে গেলো এটা কার কাজ। উনি আমতা আমতা করে বললো,
- আমি এক্ষুণি ঠিক করে দিচ্ছি?
নাহিদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো। উনি তাড়াতাড়ি রুম গুছিয়ে দিলো। একটুপরই ওরা দুজনই শুনতে পেলো।
- আরিব্বাস কিতনি সুন্দার হে।
নাহিদে’র মা ঢোক গিললো। নাহিদ পিছনে তাকালো। ইনি আর কেউ না ইরা। ইরা এক দৌড়ে বিছানার উপর গেলো। আর গিয়েই উল্টো ঘুরে লাফালাফি শুরু করলো।
নাহিদে’র মাঃ ……
নাহিদঃ হেই ইই ইডিয়ট।
ইরা পেছনে না তাকিয়েই বললো,
- কোন গরুরে এভাবে চেচালি?
পিছনে তাকিয়েই ঢোক গিলে বললো,
- বজ্জাত আপনি?
নাহিদঃ মিষ্টি তুমি এটা কি করলে?
ইরাঃ ওহ মাই আল্লাহ আপনি কবে এলেন? আল্লাহ গো এখন আমার কি হবে? বজ্জাত রাক্ষস তো আমাকে খেয়েই ফেলবে। আমার ফিউচার জামাইর কি হবে?
নাহিদে’র মা কেটে পড়লো। আর নাহিদ রেগে বোম হয়ে বললো,
- স্টপ ইট মিষ্টি।
এক ধমকে ইরা থেমে গেলো। নাহিদ ইরা’র কাছে গিয়ে বললো,
- বেড অগোছালো কে করেছে?
ইরাঃ আমি।
নাহিদ ভ্রু নাচালো।
ইরাঃ আ আমি করেছি।
নাহিদঃ এখন তুমি গোছাবে ওকে?
ইরাঃ কিন্তু আমি তো।
নাহিদঃ নো এক্সকিউস কামঅন ফাস্ট।
বলে ওয়াসরুমে গেলো। এদিকে ইরা মনের সুখে নাহিদ কে বকছে।
- শালা বজ্জাত রাক্ষস একটা। তোর জীবনেও বিয়ে হবেনা। আমার মতো গুলুমুলু বাচ্চা কে দিয়ে। বেড গোছাচ্ছিস তাইনা? তোর কপালে বউ জুটবে না শালা হাতির ডিম। তোকে তো আমি ঘোড়ার ডিম খাওয়াবো শালা।
যতসব আজগুবি কথা বলছে। নাহিদ হা করে সব শুনছে। নাহিদ নিজেই কনফিউসড হাতির আর ঘোড়ার ডিম ও হয়? পরে আবার ভাবলো যেহেতু এটা তাদের মিষ্টি। তখন ওর পক্ষে এসব বলা সম্ভব। নাহিদ ইরা কে দেখছে ইরা একটা লাল টি শার্ট পড়া। কফি কালার থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। লম্বা চুলগুলো দুই পাশে ঝুটি করে সামনে আনা। বয়স মাএ ১৬ বছর বাচ্চাই লাগছে। মাঝে মাঝে যখন নাহিদ আসতো লন্ডন থেকে।
তখন ইরা কে কখনো কখনো এই বাড়িতেই পেতো। তাছাড়া বেশীরভাগ সময়ই ইরা’র সাথে কাটিয়েছে। ইরা’র মা নেই নাহিদে’র মা কে মামনি বলে। মাম্মি ও বলে অনেক সময় সজিব ওর মামার কাছে। ছোট থেকেই আমেরিকা আছে। ইরা’র বাবা ও বিজনেসের জন্য বিদেশে থাকে অনেক সময়। তখন ইরা এই বাড়িতে থাকে। ইরা’র মা আর নাহিদে’র মা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলো। আর বিজনেসের জন্য ওদের বাবাদের ও ভাল রিলেশন। নাহিদ ইরা’র বকা শুনলো অনেকক্ষণ। এবার মুখটা সিরিয়াস গম্ভীর করে বললো,
- মিষ্টি তুমি আমাকে বকছো?
ইরা’র মুখ অটোমেটিক বন্ধ হয়ে গেলো। নাহিদে’র দিকে ফিরে মুখে মিথ্যে হাসি ফুটিয়ে বললো,
- কি যে বলেন না বজ্জাত। আমি মানে আমার মতো মাসুম। গুলুমুলু নান্নিসি পরি কি আপনাকে বকতে পারে?
নাহিদঃ ……..
ইরাঃ আমিতো আপনার প্রশংসা করছিলাম।
নাহিদ হা করে তাকিয়ে ভাবছে।
- কি মিথ্যুক মেয়েরে বাবা।
ইরাঃ হিহি আমি কত ভাল তাইনা?
নাহিদঃ বাই দা ওয়ে মিষ্টি হাতির ডিম। ঘোড়ার ডিম এগুলো বুঝি প্রশংসা?
ইরাঃ মামনি কোথায় তুমি?
বলে ভো দৌড় নাহিদ হাসতে লাগলো। ইরা দৌড়ে নিচে গেলো নাহিদে’র মা তাই দেখে বললো,
- কি হলো মনপাখি?
ইরাঃ তোমার বজ্জাত ছেলে মাম্মি।
নাহিদে’র মাঃ আমার ছেলে কি করলো?
ইরা একা একা বকবক করছে। নাহিদে’র বাবা এসে বললো,
- কি হলো আমার মামনিটার?
ইরাঃ তোমার ছেলে বাবাই পচা খুব।
আবার বকবক শুরু করলো। সবাই শুনতে লাগলো নাহিদে’র দাদু আর দিদা হাসছে। সবাই হাসছে ইরা যা বলছে।
ইরা কলা নিয়ে খেতে লাগলো। আর একা একা বিরবির করছে। এরমাঝে দেখলো নাহিদ নামছে। ইরা’র মাথায় দুষ্ট বুদ্ধি এলো। ইরা গিয়ে কলার খোসাটা সিরির নিচে রাখলো। সবাই নিজেদের কাজে বিজি। তাই কেউ খেয়াল করলো না। আর নাহিদ ও মোবাইল চাপতে চাপতে নামছে। সিরি থেকে নেমেই পা রাখলো কলার খোসায়। ওমনি ধপাস করে পড়লো সবাই তাকিয়ে পড়লো।
ইরাঃ
সবাইঃ ……..
সবাই প্রথমে চুপ করে থাকলেও পরে হেসে দিলো।
নাহিদ বুঝলো এটা ইরা’র কাজ। তাই চেচিয়ে উঠে বললো,
নাহিদঃ মিষ্টিইইইই।
ইরাঃ …
সবাই এখনো হাসছে। নাহিদ প্রচুর রেগে চিৎকার করে বললো,
- জাস্ট সাট আপ অল।
সবাইঃ ….
পর্ব ৭
নাহিদে’র ধমকে সবাই চুপ হয়ে গেলো। শুধু একজন ছাড়া আপনাদের ইরা। হুম ইরা এখনো হেসেই যাচ্ছে। নাহিদ অগ্নিদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কিন্তু তাতে ইরা’র বাপির কি?
ইরাঃ ও মাই আল্লাহ বজ্জাত পড়ে গিয়েছে। মামনি ফোনটা কোথায় গো আমার?
নাহিদে’র মাঃ কেন মনপাখি?
ইরাঃ ওমা ভিডিও করতে হবে না?
নাহিদে’র দাদুঃ পড়ে যাওয়ার পর ভিডিও?
নাহিদে’র চাচ্চুঃ নাহিদ তুই কি বসেই থাকবি?
ইরাঃ হ্যা উনি বসেই থাকুক। আমি ভিডিও করে ভাইরাল করে নেই। তারপর উনি উঠবে তাইনা বজ্জাত?
নাহিদঃ জাস্ট সাট আপ ইউ ননসেন্স। আর একটা কথা ও তুমি বলবে না। নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না বলে দিচ্ছি।
ইরাঃ হুহু এমনিতেও আপনার থেকে খারাপ। আমার মনে হয়না আর একটা আছে।
নাহিদে’র রাগ এবার মাথায় উঠে গেলো। নাহিদ উঠে এসেই ইরা’র হাত ধরলো। সমস্ত শক্তি দিয়েই হাত ধরেছে। সবাই বুঝলো ইরা’র কপালে দুঃখ আছে আজ। নাহিদে’র মা আমতা আমতা করে বললো,
- বলছি নাহিদ বাবা।
নাহিদ রাগি দৃষ্টিতে তাকালো। নাহিদে’র মা চুপ হয়ে গেলো। ইরা তো বকবক করেই যাচ্ছে।
- এই বজ্জাত আমার হাত ছাড়ুন।
নাহিদ টানতে টানতে ইরা কে উপরে নিচ্ছে।
ইরাঃ কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে? আমার হাতটা ছাড়ুন বজ্জাত।
নাহিদঃ সাট আপ আমাকে ফেলে দেওয়ার সময়। তোমার মনে পড়েনি আমি কি করতে পারি?
ইরাঃ মনে পড়লে কি আর ফেলতাম?
বলে মুখে হাত দিলো। নাহিদ ইরা কে নিজের রুমে নিয়ে এলো। রুমে এনে দরজা বন্ধ করে দিলো।
ইরাঃ দরজা বন্ধ করলেন কেন?
নাহিদঃ ডোন্ট ইউ থিংক যে। রোমান্স করতে এনেছি তোমাকে। আর তার জন্যই দরজা আটকেছি।
ইরাঃ …..
নাহিদঃ হা করে আছো কেন?
ইরাঃ তাহলে কেন এনেছেন?
নাহিদঃ আমার প্যান্ট ধোয়াতে।
ইরাঃ হোয়াট? ছিঃ ছিঃ আপনি এত লুচু?
নাহিদ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
নাহিদঃ ………
ইরাঃ আমি ভাবতেও পারছি না। বিদেশ থেকে এত লুচু হয়ে এসেছেন।
নাহিদঃ মিষ্টি হোয়াট আর ইউ সেয়িং? আর আমি কি বলেছি হ্যা? যে তুমি আমাকে লুচু বলছো?
ইরাঃ ওইযে বললেন প্যান্ট ধোয়াবেন।
নাহিদঃ তো লুচুর কি বললাম?
ইরাঃ আপনার পড়া প্যান্ট খুলে। আমি কি করে ধোবো? মানে আমি কেন আপনার প্যান্ট খু।
আর কিছু বলার আগেই নাহিদ।
- স্টপপপপপপ।
ইরাঃ মাম্মি বাঁচাও।
নাহিদ রেগে যেমন গিয়েছে। তেমন অবাকও হয়েছে। ইরা এটা কি ভেবেছে?
নাহিদঃ লুচু আমি না তুমি।
ইরাঃ কি বললেন?
নাহিদঃ ঠিকই বলেছি আমি বলেছি ওয়েট।
আলমারি থেকে প্যান্ট এনে। ইরা’র হাতে দিয়ে বললো,
- এই প্যান্টগুলোর কথা ওকে? আর তুমি কি ভেবেছো?
ইরা নিজেই এবার লজ্জা পেলো।
ইরাঃ হিহি ওহ সল্লি।
নাহিদঃ হোয়াট ইজ দিস সল্লি?
ইরাঃ সরি ইংরেজের বাচ্চা।
নাহিদঃ হোয়াট?
ইরাঃ আমার মাথা।
নাহিদঃ যাও প্যান্টগুলো ধোও।
ইরাঃ কিহহহহ? আপনি কি পাগল? আমি কেন এগুলো ধুতে যাবো?
নাহিদঃ আমাকে ফেলে দিয়েছো তাই। নাউ নো মোর টক দিস টপিক গো।
ইরাঃ পারবো না।
নাহিদঃ তাহলে কি অন্য শাস্তি দেবো?
ইরাঃ কি শাস্তি?
নাহিদ ইরা’র একটু কাছে এসে বললো,
- ফার্স্টে যেটা ভেবেছিলে সেটা।
ইরা না বলে চেচিয়েঁ উঠলো।
নাহিদঃ তাহলে যাও ধোও।
ইরা নাহিদ কে মনে মনে বকতে বকতে। প্যান্ট ধুতে গেলো নাহিদ মিটিমিটি হাসছে। ইরা তো জীবনেও প্যান্ট তো থাক দুরে। গোসলের পর নিজের ড্রেসই ধোয় না কখনো। এই বাড়িতে থাকলে নাহিদে’র মা ধুয়ে দেয়। নয়তো সার্ভেন্টরা আর নিজেদের বাড়িতে। হয় ওর বাবা নয়তো সার্ভেন্টরা।
ইরাঃ শালা খারুস কোথাকার। আমার মতো গুলুমুলু বাচ্চা কে। এভাবে কষ্ট দিচ্ছিস তো? তোর কপালে বউ নেই রে। এই আমি ইরা বলে দিলাম হু হু।
ওয়াসরুমের দরজা তো বন্ধ। নাহিদ ফোনে গেমস খেলছে। এবার নিজেই ভাবতে লাগলো।
- মিষ্টি কি করছে ভেতরে? পারবে তো প্যান্ট ধুতে? কোনদিন করেছে কোনো কাজ?
ইরা ইচ্ছেমতো প্যান্ট বাড়ি দিচ্ছে ফ্লোরে। এদিকে থেকে ওদিকে আছড়াচ্ছে। এই মুহূর্তে ওর মনে হচ্ছে প্যান্টই নাহিদ।
নাহিদঃ মিষ্টি হলো তোমার? আর তুমি কি করছো হ্যা? আমার প্যান্ট ঠিক আছে তো?
ইরাঃ হ্যা বজ্জাত ঠিক আছে।
ইরা চোখ বন্ধ করে মনের সুখে। প্যান্ট আছড়াচ্ছে আর বলছে। অনেকক্ষণ পর চোখ খুলে হা হয়ে গেলো। কারণ ইতিমধ্যে বেচারা প্যান্টগুলো নিহত হয়েছে। মানে ছিড়ে গিয়েছে। ইরা ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে দেখছে।
ইরাঃ এইরে প্যান্ট তো সবগুলো শেষ। এবার আমি কি করবো?
নাহিদঃ মিষ্টি ২মিনিটে বের হও বলছি।
ইরা একটা বুদ্ধি বের করলো। প্যান্টগুলো ভেতরে রেখে এসে। মুখে হাসি ফুটিয়ে বললো,
- বজ্জাত শুনুন না।
নাহিদে’র খটকা লাগলো তাই বললো,
- শোনাশোনি বাদ আগে বলো। আমার প্যান্টগুলো কোথায়?
ইরাঃ ……….
নাহিদঃ কি হলো?
ইরাঃ ওগুলো তো পুরনো প্যান্ট। আমি আপনাকে দামী নতুন প্যান্ট কিনে দেবো।
নাহিদঃ হোয়াট রাবিশ? তোমাকে কে বললো পুরনো? তোমার কি মনে হয়? নাহিদ খাঁন আয়াশ পুরনো প্যান্ট পড়ে? ওগুলো একদম নতুন আর দামী ওকে? তোমাকে দিয়ে ধোয়াবো বলে। নতুন প্যান্টই আমি দিয়েছি।
ইরা মনে মনে আরেক দফা বকলো।
নাহিদঃ কি বিরবির করছো?
ইরাঃ কিছুনা।
নাহিদঃ আমার প্যান্ট কোথায়?
ইরাঃ বললাম তো নতুন কিনে দেবো।
নাহিদঃ সামথিং ইজ ডেফেনেটলি রং রাইট?
বলেই ওয়াসরুমে গেলো। এই সুযোগে ইরা পালিয়ে গেলো। ওয়াসরুমে গিয়ে নাহিদ হা করে তাকিয়ে আছে। প্যান্টগুলো ছিড়ে দফারফা হয়ে গিয়েছে। তাহলে ভেবে নিন কত অত্যাচার করেছে ইরা। নাহিদ রেগে বোম হয়ে বেরিয়ে এলো। এসে দেখলো ইরা নেই নাহিদ নিচে এলো। ইরা মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছে। আর সাথে ফেবারিট কার্টুন হানি বানি দেখছে।
নাহিদঃ মিষ্টিইইই।
নাহিদে’র মাঃ কি হলো রে?
নাহিদঃ আম্মু ও আমার প্যান্ট ছিড়ে ফেলেছে।
নাহিদে’র মা নাহিদে’র দিকে তাকিয়ে বললো,
- কিন্তু তোর প্যান্ট তো ঠিকই আছে।
নাহিদঃ …….
ইরাঃ ……..
নাহিদঃ সাট আপ ইডিয়ট মেয়ে। তোমাকে যে আমি কি করবো। ছাড়বো না তোমাকে আমি।
বলে হনহন করে চলে গেলো।
ইরা তো রেগে বোম।
ইরাঃ কি আমাকে ছাড়বে না? এবার দেখুন মিস্টার বজ্জাত খাঁন আমি কি করি।
ইরা বকবক করছে। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। এরমাঝে ল্যান্ড লাইনে ফোন এলো। নাহিদে’র বাবা ধরে কথা বলে ইরা কে ডাকলো।
ইরাঃ কে বাবাই?
নাহিদে’র বাবাঃ তোমার বাপি এসো।
ইরা দৌড়ে গেলো।
ইরাঃ হ্যালো বাপি।
ইরা ওর বাবা’র সাথে কথা বললো,
ইরা কথা বলা শেষ করে। নিজের রুমে গেলো রুমে গিয়ে। একটা বাটিতে পানি নিলো। তার মধ্যে নিজের অনেকগুলো আইলানার ঢাললো। ঢেলে আবার নিচে নেমে এলো। দরজা থেকে একটু দুরে বাটিটা রাখলো। এরপর আবার একটা কলা খেলো। খেয়ে কলার খোসা দরজায় রাখলো।
এরপর জানালা দিয়ে তাকিয়ে রইলো। কখন নাহিদ আসবে কতক্ষণ পরই নাহিদ এলো। ইরা আগেই দরজা খুলে দাড়িয়ে রইলো। নাহিদ ফোনে কথা বলতে বলতে ভেতরে পা রাখলো। ওমনি দুরুম করে পা পিছলে পড়ে। মুখ গিয়ে পড়লো ওই বাটিতে। যেহেতু আইলানার ঢালা ছিলো পানিতে। ফলসরুপ নাহিদে’র পুরো মুখ কালো হয়ে গেলো।
ইরাঃ ওএমজি।
সবাই তো হা করে তাকিয়ে আছে। নাহিদ মুখ উঠিয়ে সবার দিকে তাকালো।
সবাইঃ ….
নাহিদ কিছুই বুঝছে না। কিন্তু পড়ে যাওয়ায় রাগ লাগছে। ইরা হাসতে হাসতে বললো,
- বজ্জাত আপনার মুখ।
নাহিদঃ এত হাসছো কেন সবাই?
নাহিদে’র মাঃ তোর মুখটা দেখ।
নাহিদ ফোনে নিজের মুখ দেখলো। দেখেই তো প্রচুর পরিমানে রেগে গেলো।
নাহিদঃ মিষ্টি এটা তুমি করেছো না? এবার দেখো আমি কি করি।
সবাই হেসেই যাচ্ছে।
নাহিদঃ স্টপ ইট।
সবাইঃ ….
ইরাঃ ……
নাহিদ রেগে নিজের রুমে চলে গেলো। নাহিদ উপরে যেতেই সবাই আবার হেসে দিলো। কিন্তু নাহিদে’র কানে ঠিকই হাসির আওয়াজ গেলো।
পর্ব ৮
সন্রাট হনহন করে উপরে চলে গেলো। নাহিদ উপরে যেতেই সবাই আবার হেসে দিলো। কিন্তু নাহিদে’র কানে ঠিকই পৌছালো। সবার হাসির আওয়াজ আর ইরা তো ইরা’ই। নাহিদ আয়নায় গিয়ে নিজেকে দেখলো। পুরো মুখটা একেবারে কালো হয়ে গিয়েছে। নিজের মুখে নাহিদ হাত বুলালো। আয়নার সামনে থেকে সরে এসে। রুমের সব ভাঙচুর শুরু করলো। নিচ থেকে সবাই আওয়াজ পেলো। কারণ দরজা এখন খোলা আছে। নাহিদে’র মা আমতা আমতা করে বললো,
- মনপাখি নাহিদ রেগে গিয়েছে।
ইরাঃ তাতে আমার বাপির কি?
নাহিদে’র বাবাঃ যদি তোমাকে কিছু করে?
ইরাঃ আমাকে ভয় দেখাচ্ছো বাবাই?
নাহিদে’র মাঃ তুমি ভয় পাচ্ছো বুঝি?
ইরাঃ হু হু মোটেও না মাম্মি।
নাহিদে’র দাদুঃ সেটাই তো আমার ডার্লিং। মোটেও কাউকে ভয় পায়না।
নাহিদ শিরি দিয়ে নামতে নামতে বললো,
- ও রিয়েলি দাদু?
ইরাঃ বজ্জাত আবার কেন এলো?
বিরবির করে বললো ইরা।
নাহিদঃ কি বিরবির করছো তুমি?
নাহিদে’র মাঃ তুই মুখের কালি ওঠালি না?
নাহিদঃ অফকোর্স ওঠাবো আম্মু।
বলে হেটে এসে ইরা’র হাত ধরলো। কাউকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই। টেনে নিজের রুমে নিয়ে এলো। ইরা তোতলাতে তোতলাতে বললো,
- এএএখানে কেকেন আনলেন?
নাহিদঃ একি মিষ্টিপাখি তোতলাচ্ছো কেন? তুমি নাকি আমাকে ভয় পাওনা? সো কেন তোতলাচ্ছো?
ইরাঃ আমাকে যেতে দিন।
নাহিদঃ জাস্ট সাট আপ মিষ্টি। এখন আমি যা বলবো তাই করবে। নাহলে তোমার সাথে কি হতে পারে। ইউ হ্যাব নো আইডিয়া।
ইরাঃ কি করতে হবে?
নাহিদঃ আমি ওয়াসরুমে যাচ্ছি। এই কালি ক্লিন করতে ততক্ষণ তুমি। এখানে এই রুমে কান ধরে এক পায়ে দাড়িয়ে থাকবে।
ইরাঃ কিহহহহহ?
নাহিদঃ চুপ যা বলছি তাই করো।
ইরাঃ ছেড়ে দিন না বজ্জাত।
নাহিদঃ কামঅন হারি আপ কান ধরো।
ইরা কিছু বলতে গিয়েও। নাহিদে’র দিকে তাকিয়ে থেমে গেলো। আর তাড়াতাড়ি কানে হাত দিয়ে এক পায়ে দাড়ালো। নাহিদ বাঁকা হেসে ওয়াসরুমে গেলো। আর যেতে যেতে বলে গেলো।
- কোনোরকম চালাকি করবে না। ইউ নো ইটস খাঁন?
ইরাঃ শালা খারুস কোথাকার। তুই খাঁন হলে আমি চৌধুরী হু। আমার মতো ভদ্র, শান্ত মেয়ে কে পেয়ে। এত অত্যাচার করছিস তো? তোর কপালে বউ জুটবে না। আর শালি ও জুটবে না।
মনে মনে বকলো নাহিদ কে। নাহিদ ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখলো। ইরা কি যেন বলছে বিরবির করে। শুনতে না পারলেও বুঝতে পারলো। যে ইরা ওকেই বকছে।
নাহিদঃ মিষ্টি আমাকে বকছো বুঝি?
তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে বললো,ইরা একটা মিষ্টি হাসি দিয়ে। আবার মিথ্যে কথা বললো,যে ও নাহিদ কে বকেনি প্রশংসা করেছে।
নাহিদঃ ওকে এবার যাও।
ইরা কান ছেড়ে যেতে গেলো নাহিদ ডাকলো।
ইরাঃ কি হলো?
নাহিদঃ আর কখনো এমন করো না। তাহলে খুব শাস্তি দেবো কিন্তু।
ইরাঃ আর কখনো করবো না।
রুম থেকে বেরিয়েই ইরা বললো,
- করবো না আবার? আমাকে কান ধরিয়ে এক পায়ে দাড় করানো না? এবার দেখুন বজ্জাত আমি কি করি।
বকবক করতে করতে নিচে গেলো।
নাহিদে’র মাঃ মনপাখি নাহিদ কি করেছে?
ইরাঃ ……
নাহিদে’র বাবাঃ কি হলো মামনি বলো।
ইরাঃ ……..
নাহিদে’র দিদাঃ দিদিভাই বলবি তো?
ইরাঃ আমাকে খুব মেরেছে নাহিদ ভাইয়া। আমি বললাম আমাকে মারবেন না। শুনলো না খুব মারলো আমাকে।
সবাইঃ …….
ইরাঃ থাক বজ্জাত কে কিছু বলো না।
ইরা রুমে চলে গেলো।
ইরাঃ বজ্জাত এবার বুঝবি কেমন লাগে।
নাহিদ ফ্রেশ হয়ে নিচে নেমে এলো। গায়ে কালো টি শার্ট কালো জিন্স প্যান্ট। ফর্সা মুখে খোচা খোচা দাড়ি। পুরোই জোশ লাগছে হিহি।
নাহিদে’র বাবাঃ তুমি ইরা কে মেরেছো?
নাহিদঃ হোয়াট?
নাহিদে’র মাঃ তোমার থেকে এটা আশা করিনি।
নাহিদঃ আম্মু আমি মিষ্টি কে কেন মারবো?
ইরা দৌড়ে নিচে এসে বললো,
- মারলেনই তো কত মারলেন আমাকে।
মুখটা ছোট করে বললো,সবাই ভাবলো ইরা সত্যি বলছে। নাহিদ তো রেগে বোম হয়ে গেলো।
নাহিদঃ মিষ্টি তোমাকে বলেছি না? কখনো মিথ্যে বলবে না।
ইরাঃ দেখলে আবার বলছে আমি মিথ্যুক।
নাহিদঃ ঠিকই বলেছি ওকে?
- ওহহ শ্যাম।
ঢং করে কথা বলা শুনে সবাই তাকালো।
নাহিদঃ ওহ গড এটা কোথা থেকে টপকালো?
ইরাঃ রিমি আপু।
রিমি ভেতরে এলো। পড়নে একটা শর্ট টপস। যার কারণে হাটু বেরিয়ে আছে। নাহিদ কে ভালবাসে ঢংগী। বাবা একজন মন্ত্রী নাহিদ মিথ্যে হাসি দিলো। কারণ এই রিমি মেয়েটা কে ওর একদম পছন্দ না। রিমি এসেই নাহিদ কে জড়িয়ে ধরে বললো,
- শ্যাম ইউআর লুকিং সো হট।
ইরাঃ ……..
নাহিদঃ রিমি আমার নাম নাহিদ ওকে?
রিমিঃ ওহ বেবী নট রিমি ইটস রাটি ওকে?
ইরাঃ রাটি না আমের আঠি।
সবাইঃ ….
নাহিদ গম্ভীর হয়ে রইলেও। নাহিদে’র ও খুব হাসি পাচ্ছে। রিমি ইরা কে অনেকগুলো চকলেট দিলো। আর কি ইরা রিমি’র গুনগান গাইতে লাগলো। নাহিদ হা করে তাকিয়ে আছে। আসলে ইরা কে বোঝার চেষ্টা করছে।
পর্ব ৯
ইরাঃ রাটি না আমের আঠি।
সবাইঃ ……..
নাহিদ গম্ভীর হয়ে রইলেও। ওর ও খুব হাসি পাচ্ছে বাট হাসছে না। রিমি ঢং করে বললো,
- ওহ বেবী আঠি না ওকে?
ইরা ভেংচি কেটে দাড়িয়ে রইলো। রিমি ইরা কে অনেকগুলো চকলেট দিলো। ব্যাস ইরা রিমি’র গুনগান করতে লাগলো। নাহিদ হা করে তাকিয়ে আছে। আসলে ইরা কে বোঝার চেষ্টা করছে। ইরা চকলেট খেতে খেতে বললো,
- আমের আঠি আপু তুমি। কিতনি সুন্দার হিহি।
রিমিঃ তৃশ আমের আঠি না রাটি।
ইরাঃ হ্যা রাটি আপু।
নাহিদঃ এই মেয়েটা কি মাই গড?
বিরবির করে বললো নাহিদ।
রিমিঃ ইরা একটা কাজ করে দেবে?
ইরাঃ হামমম হামমম বলো কি কাজ?
রিমিঃ ওকে আগে চকলেট খেয়ে নাও।
নাহিদঃ এই রিমি মিষ্টি কে দিয়ে কি করাবে?
মনে মনে ভাবতে লাগলো। চকলেট খাওয়া শেষে ইরা সোফায় বসলো। রিমি ও সোফায় বসে বললো,
- চলো এবার কাজটা করে দাও।
ইরাঃ কাকে বলছো?
নাহিদ সহ সবাইঃ
রিমিঃ কেন তোমাকে?
ইরাঃ আমি কেন তোমার কাজ করে দেবো?
রিমিঃ তৃশ চকলেট নিয়ে তো বললে। তুমি কাজ করে দেবে তাই চকলেট দিলাম।
ইরাঃ চকলেট দিয়েছো আইসক্রিম তো দাওনি।
সবাইঃ ……
রিমিঃ এটা কিন্তু ঠিক না ইরা।
ইরাঃ শোনো আমের আঠি আপু।
রিমিঃ আমের আঠি না।
ইরাঃ তো কি কাঠালের আঠি?
ইরা’র কথাশুনে সবাই হাসতে হাসতে। রীতিমত গড়াগড়ি খাওয়ার অবস্থা। শুধু নাহিদ ছাড়া বাট নাহিদে’র ও হাসি পাচ্ছে।
রিমিঃ ইরা।
ইরাঃ কি আমাকে ধমক দিচ্ছো তুমি?
রিমি মনে মনে কিছু একটা ভেবে। সবাই কে বাই বলে চলে গেলো। ইরা কে সুন্দর করে বাই বললো,নাহিদে’র ডাউট হলো রিমি যেতেই।
নাহিদঃ তুমি এত মিথ্যুক কেন?
ইরাঃ কি বললেন আপনি?
নাহিদঃ ঠিক বলেছি তাইনা?
ইরাঃ বজ্জাত ভাল হচ্ছেনা কিন্তু।
নাহিদঃ সাট আপ বজ্জাত বলছো কেন?
নাহিদে’র মাঃ ওকে বাদ দাও মনপাখি।
ইরাঃ হামমম মামনি।
নাহিদে’র মাঃ চলো খেয়ে নেবে।
ইরাঃ হামমম।
নাহিদ উপরে চলে গেলো। রোদেলা মানে নাহিদে’র মা ইরা কে খাইয়ে দিলো। খাওয়া শেষে ইরা ও রুমে চলে গেলো। রায়হান নাহিদে’র বাবা একটা কাজে বাইরে গেলো। নাহিদ ল্যাপটপে কিছু একটা কাজ করছে। তখন ইরা এলো নাহিদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
- কি চাই এখানে?
ইরাঃ …..
নাহিদঃ কি হলো বলো?
ইরাঃ আমি এই পড়াটা বুঝতে পারছি না।
নাহিদ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। ইরা এসেছে ওর কাছে বই নিয়ে। এটা বেচারার মানতে কষ্ট হচ্ছে। যাকে কি না ধরে বেধেও পড়ানো যায় না। তবুও নাহিদ ভাবনা বাদ দিয়ে বললো,
- তো আমি কি করবো?
ইরাঃ পড়িয়ে দিন আমাকে।
নাহিদঃ …………
ইরাঃ দিন না নাহিদ ভাইয়া।
নাহিদঃ সাট আপ আমি তোমার ভাইয়া না।
ইরাঃ ……
নাহিদঃ বই বের করো।
ইরা বই বের করলো। নাহিদ ইরা কে পড়া দেখিয়ে দিচ্ছে। ইরা মন দিয়ে পড়া দেখছে। ইরা একটা পেজ উল্টে নাহিদ কে বললো,
- বজ্জাত দেখুন এই পেজে কি?
নাহিদঃ কোথায় কি?
ইরাঃ হাত দিয়ে দেখুন পানি মেবি।
নাহিদ বাম হাত দিলো ভেজা ভেজা লাগছে।
নাহিদঃ এটা কি?
ইরাঃ ডান হাতে দেখুন কি?
নাহিদ বাম হাত ডান হাতের সাথে মেলালো।
ইরাঃ হিহি কাজ হয়ে গিয়েছে।
নাহিদঃ মানে কি কাজ?
বলে হাত সরাতে গেলো। বাট পারলো না জোড়া লেগে গিয়েছে। নাহিদ টানাটানি করতে লাগলো হচ্ছে না।
নাহিদঃ হোয়াট দ্যা হেল?
ইরাঃ সুপারগ্লু আঠা।
নাহিদঃ হোয়াট?
ইরাঃ সকালে বকেছিলেন ভুলিনি।
নাহিদঃ ইউ স্টুপিড এটা কি করলে?
ইরাঃ …..
নাহিদঃ ড্যাম ইট আমার আগেই বোঝা উচিত ছিলো। মিষ্টি এটা ঠিক করো নয়তো খুব খারাপ হয়ে যাবে।
ইরাঃ ঠিক করবো কি করে?
নাহিদঃ মানে কি হ্যা? আমার যদি করতে হয়। তাহলে তোমার যে কি করবো আমি।
ইরাঃ হুহু আগে করুন তো।
বলে ইরা চলে গেলো। নাহিদ টানাটানি করছে বসে বসে। নাহিদ বিছানা থেকে নেমে ওয়াসরুমে গেলো। গিয়ে কোনোরকম ট্রাই করে ঝর্ণা ছেড়ে দিলো। ঝর্ণার নিচে ঘন্টার পর ঘন্টা দাড়িয়ে রইলো। আস্তে আস্তে হাত ছাড়াতে পারলো। হাত ছাড়িয়েই চেন্জ করে। ইরা’র রুমে চলে এলো। ইরা মনের সুখে চকলেট খাচ্ছে আর গান গাইছে।
ওহ বজ্জাত তুই কি শুনতে পাস?
তোর হাতের কি হলো?
ওহ বজ্জাত ওহ বজ্জাত রে।
তুই অপরাধী রে আমাকে বকেছিস।
এবার তোর কি হবে রে?
ইরা’র মুখে তুই ভাষা শুনে। নাহিদ রেগে আগুন হয়ে গেলো। হনহন করে এসে ইরা কে টেনে দাড় করালো। ইরা না দেখেই বললো,
- কোন হতচ্ছাড়া রে?
তাকিয়ে নাহিদ কে দেখে ঢোক গিললো।
ইরাঃ বববজজ্জাত আআআপনি?
নাহিদঃ কেন কি ভেবেছিলে? আমি বিছানায় ওভাবে বসে কান্না করবো? মিষ্টি ইউ জাস্ট রিমেম্বার দ্যাট ইটস খাঁন ওকে?
ইরা মনে মনে নাহিদ কে প্রচুর বকলো।
পর্ব ১০
ইরা মনে মনে নাহিদ কে প্রচুর বকলো।
নাহিদঃ মনে মনে বকছো রাইট?
ইরাঃ বজ্জাত আপনি কি করে এলেন? আমিতো আপনাকে সুন্দর করে বসিয়ে দিয়ে এলাম।
নাহিদঃ মিষ্টি তোমাকে বলেছিলাম না? আমার নিজের যদি হাত ছাড়াতে হয়। তাহলে তোমার কপালে দুঃখ আছে।
ইরাঃ ছেড়ে দিন না বজ্জাত আর করবো না।
নাহিদঃ সাট আপ মিথ্যে বলবে না। নাউ কাম উইথ মি।
ইরাঃ না আমি কোথাও যাবো না।
নাহিদ ইরা কে টানতে টানতে নিচে নিয়ে এলো।
রোদেলাঃ এই কি করছিস তুই?
নাহিদঃ মামনি প্লিজ ডোন্ট স্টপ মি।
রায়হানঃ বাট তুমি ওকে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
নাহিদঃ বাগানে পাপা।
বলে ইরা কে বাগানে নিয়ে গেলো।
ইরাঃ এখানে আনলেন কেন?
নাহিদঃ এখনি বোঝাচ্ছি।
ইরাঃ কি করে?
নাহিদঃ মালি কাকা।
ইরাঃ ওহ কমলা কাকা কে ডাকছেন?
নাহিদঃ আমি মালি কাকা কে ডেকেছি। তুমি কমলা কোথায় পেলে?
ইরাঃ মালি কাকা কমলা কাকা। ওনার নাম তো কমল আমি। কিতনি সুন্দার কমলা রেখেছি।
নাহিদঃ তুমিতো পৃথিবীর নবম আশ্চর্য।
ইরাঃ অষ্টম না কেন?
নাহিদঃ অষ্টম হচ্ছে তোমার এই ভাষাগুলো।
ইরাঃ কিন্তু এগুলো তো আমি বলি তাইনা?
নাহিদঃ ইয়া সো?
ইরাঃ তাহলে তো আমার অষ্টম আশ্চর্য হওয়া উচিত।
নাহিদঃ ওকে তুমিই অষ্টম আশ্চর্য হ্যাপি?
ইরাঃ হামম হামম।
ততক্ষনে কমলা কাকা মানে কমল কাকা এলো।
কমলঃ কি হয়েছে বাবা?
নাহিদঃ কাকা আজকে তোমার ছুটি।
কমলঃ কিন্তু গাছে পানি দিতে হবে তো।
ইরাঃ কমলা কাকা।
কমলঃ হ্যা মা বলো।
ইরাঃ আজকে মনে হয় গাছে পানি। বজ্জাত মানে নাহিদ ভাইয়া দেবে। তাই আজ তোমার ছুটি তুমি রেস্ট করো।
নাহিদঃ হোয়াট? আর ইউ ক্রেজি? আমি দেবো গাছে পানি? গাছে পানি আজকে তুমি দেবে। তাইতো তোমাকে আমি এখানে এনেছি।
ইরাঃ কিহহহহহ?
নাহিদঃ জ্বি, মালি কাকা তুমি যাও।
কমলঃ কিন্তু নাহিদ বাবা।
নাহিদঃ কাকা প্লিজ যাও।
কমলঃ আচ্ছা বাবা।
কমল যেতেই নাহিদ ইরা’র দিকে তাকালো। ইরা আমতা আমতা করে বললো,
- আমাকে যেতে দিন বজ্জাত।
নাহিদঃ গাছে পানি দেয়া শুরু করো ফাস্ট।
ইরাঃ মামনি কোথায় তুমি?
নাহিদঃ এই যে ড্রামাকুইন ড্রামা পরে। ১মিনিটে গাছে পানি দেয়া শুরু করো। নয়তো এক পায়ে কানে ধরিয়ে দাড় করে রাখবো।
ইরাঃ নোওওওওওও।
ইরা গিয়ে গাছে পানি দেয়া শুরু করলো। নাহিদ গিয়ে বাগানের দোলনায় বসলো। এরপর ফোন বের করে গেমস খেলতে লাগলো। এদিকে ইরা তো নাহিদে’র গুষ্টি উদ্ধার করছে।
ইরাঃ শালা বজ্জাত একটা। হাতির ডিম, ঘোড়ার ডিম সব খাওয়াবো তোকে। তোর কপালে কোনদিন বউ জুটবে না। তোকে তো উগান্ডা পাঠানো উচিত। লন্ডন থেকে আমার মতো কিতনি সুন্দার। গুলুমুলু মাসুম বাচ্চা কে টর্চার করা শিখে এসেছিস? জানিস না হ্যা রে বজ্জাত তুই কি জানিস না?
আমার মতো কিতনি সুন্দার গুলুমুলু মাসুম বাচ্চাদের। সবসময় চকলেট, আইসক্রিম দেয়া উচিত। কিন্তু তুই খারুস, বজ্জাত চকলেট, আইসক্রিম তো দিসই না। আবার আমাকে এক পায়ে কান ধরাস। আমাকে বকিস, ধমক দিস চোখ দিয়ে গিলে খাস। আর এখন মালির কাজ করাচ্ছিস। আবার বলছি তোর কপালে বউ জুটবে না। এই আমি কিতনি সুন্দার ইরা অভিশাপ দিলাম।
নাহিদঃ এই যে মিস চকলেট কি বিরবির করছো?
ইরাঃ তোকে বকছি।
নাহিদঃ হোয়াট?
ইরাঃ আব না কিছুনা তো।
নাহিদ আবার গেমস খেলায় মন দিলো। এদিকে বেচারী ইরা গাছে পানি দিতে দিতে। এখন অবস্থা খারাপ জীবনে ও তো দেয়নি। ইরা গিয়ে নাহিদে’র পাশে বসে পড়লো।
নাহিদঃ এলে কেন? পানি দেয়া শেষ নাকি?
ফোনের দিকে তাকিয়েই বললো,ইরা কাদো কাদো হয়ে বললো,
- আর পারবো না বজ্জাত।
নাহিদ ফোনটা পকেটে রেখে উঠে দাড়িয়ে বললো,
- আর লাগবে আমার সাথে?
ইরাঃ আর কখনো লাগবো না।
বলে চুপচাপ ভেতরে চলে গেলো। নাহিদ অবাক হলো ইরা মেনে নিলো? তাও এত তাড়াতাড়ি এটা ভেবে।
খাবার টেবিলে বসে আছে সবাই। তখন সেখানে ইরা এলো। কিন্তু আজকে কোনো দুষ্টমি করলো না। রোদেলা খাইয়ে দিলো ইরা খেয়ে চুপচাপ চলে গেলো।
রোদেলাঃ মনপাখি’র কি হলো?
সোহেলিঃ আমিও তাই ভাবছি ভাবী।
প্রতাপঃ ইরা তো এত চুপচাপ না।
নাহিদঃ চাচ্চু, চাচীমা চুপচাপ খাও।
নাহিদ খেতে খেতে ভাবছে।
- আসলেই মিষ্টি এত চুপচাপ কেন?
রায়হানঃ তুমি কি বলেছো ওকে নাহিদ?
নাহিদঃ আমি কি বলবো?
নাহিদে’র দাদু সায়েম খাঁন বললো,
- তুমি যে ওকে বাগানে নিয়ে গেলে। বাগান থেকে এসেই ও চুপচাপ আছে।
নাহিদঃ তো?
সায়েমঃ তারমানে তুমিই কিছু বলেছো তাইনা?
সবাই নাহিদ কে দোষ দিচ্ছে। নাহিদ চুপচাপ খেয়ে রুমে চলে গেলো। রাতেও ইরা চুপচাপ কার্টুন দেখছে। অন্যদিন হলে হেসে ড্রয়িংরুম কাঁপিয়ে ফেলতো। বাট আজকে চুপচাপ সবাই মনমরা হয়ে বসে আছে। আজকে চকলেট, আইসক্রিম ও খেলো না। নাহিদ হা করে তাকিয়ে আছে। যেই মেয়ে চকলেট, আইসক্রিম ছাড়া কিছু বোঝেনা। সে কি না চকলেট আইসক্রিম ফিরিয়ে দিচ্ছে? ব্যাপারটা ভেবেই নাহিদ অবাক হলো। রাতে কোনোরকম খেয়ে ইরা রুমে গেলো। নাহিদ ভাবছে ওর জন্যই ইরা চুপচাপ হয়ে গিয়েছে। ভেবে নিজের খারাপ লাগছে খুব।
পরেরদিন সকালে নাহিদ ঘুম থেকে উঠে। আয়নার সামনে গেলো গিয়েই চেচিয়ে উঠলো।
- আহহহহহহহহহ।
নাহিদে’র চেঁচানো শুনে সবাই এলো।
রোদেলাঃ এই কি হলো রে?
নাহিদ তাকালো নাহিদ কে দেখে সবাই হেসে দিলো।
সবাইঃ ……..
সবার পেছন থেকে ইরা বের হলো।
ইরাঃ ……
নাহিদঃ তুমি হাসছো?
ইরাঃ বাহ বজ্জাত আপনাকে জোশ লাগছে।
নাহিদঃ এটা তুমি করেছো না?
ইরাঃ আবার জিগায়।
নাহিদঃ আমার বোঝা উচিত ছিলো। আর যাইহোক তুমি কখনো চেন্জ হবে না।
ইরাঃ ভিআইপি ইরা চৌধুরী চেন্জ হবে। এটা ভাবা আর হাতির পেটে পিপড়ে হবে। এটা ভাবা একই হিহি।
নাহিদঃ স্টুপিড এটা কি করেছো তুমি?
ইরাঃ মেকআপ করেছি কিতনি সুন্দার হে না?
নাহিদঃ কালকে চুপ ছিলে কোন দুঃখে?
ইরাঃ ওরিমা বজ্জাত আপনি কি জানেন?
নাহিদ ভ্রু কুঁচকে বললো,
- কি জানবো?
ইরাঃ কাল আমার দাতে ব্যথা করেছে। তাইতো আমি চুপচাপ ছিলাম। কাল দাতে ব্যথার থেকে বেশী কষ্ট হয়েছে। আমি কথা বলতে পারিনি তাই। সব কথা পেটে জমা হয়ে ছিলো। মনে হচ্ছিলো পেট ফেটে কথা বেরিয়ে আসবে।
নাহিদঃ বাকওয়াস।
ইরাঃ কিহ?
নাহিদঃ নাথিং যাও সবাই তো চলে গিয়েছে।
ইরাঃ যাচ্ছি হুহু থাকতে আসিনি।
একটুপর ড্রয়িংরুমে ইরা। মনের সুখে চকলেট খাচ্ছে। নাহিদ রেডি হয়ে নিচে নেমে এলো। নিচে এসে দেখলো ইরা চকলেট খাচ্ছে।
নাহিদঃ এইযে মিস চকলেট।
ইরাঃ ……..
নাহিদঃ তোমার না কাল দাতে ব্যথা করেছে?
ইরাঃ হামমমম।
নাহিদঃ তাহলে চকলেট খাচ্ছো কেন?
ইরাঃ তাতে আপনার কি? আমার মুখ দিয়ে আমি খাচ্ছি। আমি কি আপনার মুখ ধার নিয়েছি চকলেট খেতে?
সবাইঃ …….
নাহিদঃ হোয়াট ননসেন্স?
ইরাঃ কি আমি ননসেন্স? আপনি ননসেন্স কানকাটা হনুমান হুহু।
নাহিদঃ মিষ্টি।
ইরাঃ মাম্মি।
রোদেলাঃ নাহিদ ছেড়ে দে না বাবা। মনপাখি এখনো বাচ্চা।
নাহিদঃ বাচ্চা না চৌবাচ্চা।
রোদেলাঃ …….
নাহিদ হনহন করে বেরিয়ে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে গেলো। বিকেলে নাহিদ এলো সারাদিন ইরা নাহিদে’র পিছনে লেগেছে। আর নাহিদ ও ইরা কে শাস্তি দিয়েছে। তাতে ইরার বাপির কি?
সন্ধ্যায় নাহিদ একটা ইম্পর্টেন্ট কাজ করছে। কয়েকটা পেপারস গুছিয়ে রাখছে। যেগুলো ওর ডক্টরীর জন্য খুব বেশী দরকার। হঠাৎই ইরা সেখানে দৌড়ে এলো। নাহিদ জানে ইরা উল্টো পাল্টা করতে পারে। তাই পেপারসগুলো ঠিকমত রাখতে গেলো। বাট তারআগেই ইরা এসে নাহিদে’র হাত থেকে। একটানে পেপারসগুলো নিয়ে ছিড়ে ফেললো।
আর লাফাতে লাফাতে বললো,
- বজ্জাত কাল বাপি আসবে।
নাহিদ পেপারসগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।
ইরাঃ কি হলো বজ্জাত? এগুলো কি ডায়মন্ড নাকি?
নাহিদ হুট করেই ইরা কে থাপ্পর দিতে। হাত ওঠালো বাট থাপ্পর দিলো না। হাত নামিয়ে চিৎকার করে বললো,
- আউট জাস্ট গেট আউট। এক্ষুণি বেরিয়ে যাও এখান থেকে।
ইরাঃ …..
নাহিদঃ গো রাইট নাউ।
ইরা দৌড়ে চলে গেলো। নাহিদ পেপারসগুলো তুলে রাখলো। ভাবতে ভাবতে বললো,
- ড্যাম ইট এখন কি করবো?
একটুপরই নাহিদ চেঁচামেচি শুনতে পেলো। চেঁচামিচি ইরা’র রুম থেকে আসছে। নাহিদ রুম থেকে বেরিয়ে ইরা’র রুমে গেলো। আর গিয়ে নাহিদে’র পায়ের তলার মাটি সরে গেলো। নাহিদ চেচিয়ে বললো,
- মিষ্টি।
দৌড়ে ভেতরে গেলো ইরা সেন্সলেস। বাম হাত কাটা গলগল করে রক্ত পড়ছে। নাহিদ গিয়ে ইরা’র হাত ধরলো। নাহিদে’র মা কান্নাকাটি করছে। সবাই তো হতবাক হঠাৎ কি হলো? নাহিদ ইরা’র হাত ধরে থমকে গেলো। ইরা’র হাতে অজস্র কাটার দাগ। নাহিদ অবাক হয়ে বললো,
- মামনি এসব কি?
রোদেলাঃ মিষ্টি রেগে গেলেই হাত কাটে। বা কেউ যদি ওকে বেশী রাগারাগি করে। কিন্তু আজকে কে ওকে বকলো? ওর বাপি কে কি বলবো আমি? এরআগে একদিন নিজের মাথা। দেয়ালে বারি দিয়ে নিজে ফাটিয়েছিলো। দেখ এখনো সেই দাগ আছে। এটা যে কতটা ভয়ংকর ওর জন্য।
নাহিদ আগেই দেখেছে কপালে। ডান সাইডে চুলের একটু নিচে কাটা দাগ। এবার ঠিকমত খেয়াল করলো। অনেক খানি নিয়ে দাগটা নাহিদ হতবাক। নাহিদ সবাই কে পাঠিয়ে।
ইরা’র হাত ব্যান্ডেজ করে দিলো। তারপর একটা ব্যথার ইনজেকশন দিলো। এরপর ইরা’র পাশে বসে বললো,
- আই এম সরি মিষ্টি। আমি বুঝতে পারিনি তুমি এটা করবে। তোমার কিছু হলে আমি কি করতাম মিষ্টি? আমিতো মরেই যেতাম মিষ্টি। সেই ছোট থেকে তোমাকে ভালবাসি। তোমার বাচ্চামীর জন্য কখনো বলিনি। কারণ তুমি আমার ফিলিংস। আমার ভালবাসা বুঝবে না। এত পাগলামি কেন করো মিষ্টি? বাট এই হাতকাটা নিজের ক্ষতি করা। এসব থেকে তোমাকে বের করতে হবে। তোমার কিছু হলে আমি মরে যাবো। আজকে তুমি যেখানে কেটেছো। তুমি হয়তো নিজেও জানোনা বা জানো। তার একটু উপরে কাটলে।
নাহিদ চোখ বন্ধ করে ফেললো। সাথে সাথে চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পড়লো। ইরা যেখানে কেটেছে তার একটু উপরেই রগ। নাহিদে’র এখন নিজের উপর রাগ লাগছে। কিন্তু নাহিদ তো আর জানতো না। যে ইরা রাগলে বা কেউ ওকে। বেশী রাগারাগি করলে হাত কাটে। নাহিদ ইরা’র পাশেই বসে রইলো।
পর্ব ১১
নাহিদ ইরা’র পাশেই বসে রইলো। ভাবতে লাগলো ছোটবেলায় ও। ইরা অলওয়েজ নাহিদ কে জ্বালাতো। তবে নাহিদ কখনোই ইরা কে মারতে যায়নি। নাহিদ উঠে দাড়িয়ে দেয়ালে ঘুষি মারলো। এতটাই জোড়ে সাথে সাথে হাত ফেটে। ঝপঝপ করে রক্ত পড়তে লাগলো। কিন্তু নাহিদে’র সেদিকে খেয়াল নেই।
নাহিদঃ কেন আমি এতটা রেগে গেলাম? কেন মিষ্টি কে মারতে হাত ওঠালাম? কেন ওকে রুম থেকে বের করে দিলাম। আমি এরকম না করলে মিষ্টি হাত কাটতো না। আই এম রেসপন্সিবল ড্যাম ইট। এতটা রেগে যাওয়া উচিত হয়নি।
নাহিদ গিয়ে আবার বসে পড়লো। দেখতে দেখতে রাত ১টা বেজে গেলো। ইরা পিটপিট করে চোখ খুললো। চোখ খুলেই বললো,
- আমি কি মরে গিয়েছি?
নাহিদ হুট করে ইরা’র মুখে হাত দিলো। ওমনি ইরা ভুত ভুত বলে চেঁচিয়ে উঠলো।
নাহিদঃ মিষ্টি ইটস মি নাহিদ।
ইরাঃ আপনি এখানে?
নাহিদঃ এখন কেমন লাগছে? হাতে ব্যথা করছে? কোথায় কষ্ট হচ্ছে প্লিজ বলো।
ইরাঃ …..
নাহিদঃ মিষ্টি প্লিজ বলো।
ইরাঃ আপনিও কি মরে গিয়েছেন?
নাহিদঃ হোয়াট?
ইরাঃ আমিতো মরে গিয়েছি তাইনা? তাহলে আপনি কি করে এখানে এলেন?
নাহিদঃ নো মিষ্টি তুমি বেঁচে আছো। তুমি আমার জন্য বেঁচে আছো।
ইরাঃ আপনার জন্য কেন বাঁচবো হু হু।
নাহিদ একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো এরপর বললো,
- মিষ্টি এরকম কেউ করে?
ইরাঃ আপনি আমাকে বকলেন কেন?
নাহিদঃ তুমিও আমাকে বকে দিতে।
ইরাঃ ওটা কি ছিলো?
নাহিদঃ ওটা মেডিকেলের কিছু পেপারস ছিলো। যেটা আগামীকাল আমার জমা দিতে হবে।
ইরাঃ ওহ মাই আল্লাহ।
নাহিদঃ কি হলো?
ইরাঃ আমিতো ওগুলো ছিড়ে ফেললাম। আই এম সরি আমি জানতাম না।
নাহিদঃ ইটস ওকে মিষ্টি।
ইরাঃ আমি বুঝতে পারিনি।
নাহিদঃ মিষ্টি ইটস ওকে ডোন্ট ক্রাই।
ইরাঃ আপনি আর রেগে নেই তো?
নাহিদঃ একদম রেগে নেই।
ইরাঃ কিতনি সুন্দার হে বজ্জাত।
নাহিদঃ …….
ইরা’র চোখ গেলো নাহিদে’র হাতের দিকে।
ইরাঃ এটা কি হয়েছে?
নাহিদঃ কিছুনা ছাড়ো।
ইরাঃ আপনিও কি আমার মতো হাত কেটেছেন?
নাহিদঃ নো এমনি কেটে গিয়েছে।
ইরা বিছানা থেকে নামতে গেলো।
নাহিদঃ আরে কি করছো?
ইরাঃ আপনার হাত ব্যান্ডেজ করবো।
নাহিদঃ আমি করে নেবো।
ইরাঃ না আমি করবো।
নাহিদঃ মিষ্টি আমি করে নেবো।
ইরাঃ ……….
নাহিদঃ ওকে তুমিই করো বাট কেঁদো না।
নাহিদে’র হাত ইরা ব্যান্ডেজ করে দিলো। নাহিদ একভাবে ইরা’র দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো,
- কবে যে আমি তোমাকে বোঝাতে পারবো? কবে তুমি বড় হবে মিষ্টি?
ইরাঃ হয়ে গিয়েছে।
নাহিদ তো তাকিয়েই আছে।
ইরাঃ বজ্জাত হয়ে গিয়েছে।
নাহিদে’র ধ্যান এলো।
নাহিদঃ থ্যাংক ইউ।
ইরাঃ ওলুকাম।
নাহিদঃ হোয়াট?
ইরাঃ মানে ওয়েলকাম।
নাহিদঃ নবম আশ্চর্য।
ইরাঃ কি বললেন?
নাহিদঃ নাথিং আচ্ছা একটা কথা বলো?
ইরাঃ কি?
নাহিদঃ তুমি হাত কাটো কেন?
ইরাঃ আমার রাগ উঠলে মাথা ঠিক থাকেনা। আর কেউ রাগারাগি করলেও মাথা ঠিক না।
নাহিদ কিছুটা অবাক হয়ে বললো,
- আচ্ছা মিষ্টি তোমার কেমন লাগে? আই মিন কেউ বকলে বা রাগ উঠলে। তোমার তখন কি মনে হয়?
ইরাঃ মনে হয় সব শেষ করে ফেলি। সব ভেঙেচুরে গুড়িয়ে দিতে ইচ্ছে করে আর।
নাহিদঃ আর?
ইরাঃ আর নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে।
নাহিদ ভয় পেয়ে গেলো।
নাহিদঃ মিষ্টি তুমি বসো আমি আসছি।
ইরাঃ …………..
নাহিদ নিচে গিয়ে খাবার নিয়ে এলো।
ইরাঃ এসব কি?
নাহিদঃ খাবার খেয়ে নাও।
ইরাঃ আমি খাবোনা।
নাহিদঃ আমি খাইয়ে দিচ্ছি হা করো।
ইরাঃ না আমি খাবোনা।
নাহিদঃ মিষ্টি তুমি যদি খাও। তাহলে আমি কাল তোমাকে। তোমার ফেবারিট চকলেট, আইসক্রিম। এন্ড হোয়াইট চকলেট এনে দেবো।
ইরাঃ সতি?
নাহিদঃ হামমম এবার হা করো।
ইরা হা করলো নাহিদ মুচকি হেসে। ইরা কে খাইয়ে দিলো ইরা ও খেয়ে নিলো। খাইয়ে ইরা কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে। প্লেট আর গ্লাস নিচে রেখে। নিজের রুমে চলে গেলো তবে চোখে ঘুম নেই।
নাহিদঃ মিষ্টি কে আমার ঠিক করতে হবে। ওকে এসব থেকে বের করতে হবে। আর আমার ভালবাসাও ওকে বোঝাতে হবে।
নাহিদ সারারাত বসে। মেডিকেলের পেপারস বের করলো। তবে সব বের করতে পারলো না। এজ ইউজেল পরেরদিন নাহিদ কে। মেডিকেল থেকে কথা শুনতে হলো। বাট নাহিদ গায়ে মাখলো না। নাহিদ বাড়ি ফিরে গেলো যাওয়ার সময়। ইরা’র জন্য চকলেট, আইসক্রিম। এন্ড হোয়াইট চকলেট নিয়ে গেলো।
বাড়ি এসে ইরা কে ডাকতে লাগলো। ইরা শিরি দিয়ে নেমে এসে বললো,
- ষাড়ের মতো চেঁচাচ্ছেন কেন?
নাহিদঃ হোয়াট?
ইরাঃ …….
নাহিদঃ তোমার জন্য চকলেট, আইসক্রিম। হোয়াইট হট চকলেট এনেছিলাম। বাট নাউ এগুলো আমি তোমাকে দেবোনা।
ইরাঃ এই না বজ্জাত দিন প্লিজ। আমি আর আপনাকে রাগাবো না।
কিউট ফেস করে বললো ইরা। নাহিদ মুচকি হেসে দিয়ে দিলো। দিয়ে সোফায় বসলো ইরা ও খেতে শুরু করলো। নাহিদ কতক্ষণ বসে থেকে উঠে দাড়ালো। নিজের রুমে যাবে বলে তখনি। ইরা মনে মনে বিরবির করে বললো,
- আজকে তো চলে যাবো। যাওয়ার আগে বজ্জাত কে জ্বালিয়ে যাই। আবার আমাকে এগুলো দিতে চায়নি। তার জন্য সাজা তো বান্তি হে।
বলে টুপ করে একটু আইসক্রিম। নাহিদে’র পায়ের কাছে ফেললো। নাহিদ ও সেখানে পা দিয়ে ফেললো। পা পিছলে ধপাস করে পড়ে গেলো। ইরা দাত কেলিয়ে বললো,
- ৩বার।
নাহিদ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে।
পর্ব ১২
ইরা দাত কেলিয়ে বললো,
- ৩বার।
নাহিদ রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। ইরা মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছে।
নাহিদঃ হোয়াট দ্যা হেল ড্যাম ইট? এটা কি করলে তুমি?
ইরাঃ ফেলে দিলাম।
নাহিদঃ উফ মিষ্টি তুমি কি?
নাহিদ হাতের দিকে তাকালো। দেখলো গতকাল রাতে রেগে। যেখানে হাত দেয়ালে ঘুষি মেরেছিলো। সেখান থেকে আবার রক্ত বের হচ্ছে। নাহিদ উঠে নিজের রুমে চলে গেলো। ইরা ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে চকলেট খাচ্ছে। নাহিদ রুমে এসে ব্যান্ডেজ খুলে ফেললো। হাতে এখন প্রচুর ব্যথা করছে।
নাহিদঃ হঠাৎ এত ব্যথা হচ্ছে কেন?
নাহিদ কাউকে ডাকছে ও না। কাউকে ডাকতে গেলেই ইরা চলে আসবে। আর হয়তো গিলটি ফিল করবে। আর নাহিদ চায়না ইরা গিলটি ফিল করুক। নাহিদ একা একাই ট্রাই করে ব্যান্ডেজ করলো। এরপর ব্যাগ থেকে ইনজেকশন বের করে। ডান হাত দিয়ে বাম হাতে ব্যথার ইনজেকশন নিলো। আস্তে আস্তে ব্যথাটা কমতে লাগলো।
নাহিদঃ নাউ ফিলিং বেটার।
এরমাঝেই নাহিদ শুনতে পেলো।
- বজ্জাত এই বজ্জাত।
নাহিদঃ ……..
ইরা ডাকতে ডাকতে উপরে এলো। নাহিদ দেখলো ইরা রেডি হয়ে এসেছে। রেড টি শার্ট আর ব্লাক থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়া। দু পাশে চুল ঝুটি করে সামনে আনা। হাতে রেড বেল্টের ঘড়ি ঠোটে লিপস্টিক। নাহিদ ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে।
ইরাঃ কি হলো?
নাহিদঃ তুমি কোথায় যাচ্ছো?
ইরাঃ আমাদের বাড়িতে আজতো বাপি আসবে।
নাহিদঃ ওহহ।
ইরাঃ বজ্জাত চলুন আমাকে দিয়ে আসবেন।
নাহিদঃ আমি?
ইরাঃ হামম মাম্মি তো বললো,
নাহিদঃ ওকে ওয়েট আমি আসছি।
ইরাঃ ওকে তাড়াতাড়ি আসুন।
ইরা হেলে দুলে নিচে গেলো। নাহিদ শুধু শার্টটা চেন্জ করলো। চুলগুলো সেট করে গাড়ির চাবি নিয়ে নিচে গেলো।
ইরাঃ ওইতো বজ্জাত চলে এসেছে।
রোদেলাঃ মনপাখি।
ইরাঃ মামনি আমি আবার আসবো তো।
সোহেলিঃ তোমাকে খুব মিস করবো।
অনেক মেলোড্রামা হলো। নাহিদ ইরা কে নিয়ে বের হলো। ২ঘন্টার রাস্তা দেখতে দেখতে শেষ হয়ে গেলো। ইরা গাড়ি থেকে নেমেই ভো দৌড় দিলো। নাহিদ বিরবির করে বললো,
- কি মেয়ে রে বাবা? আমাকে বললো ও না?
নাহিদ গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
ইরাঃ বাপি।
হাসানঃ মামনি কেমন আছো?
ইরাঃ তুমি খুব পচা বাপি।
হাসানঃ কেন মা?
ইরাঃ আমাকে একটুও মিস করো না। ভাইয়া তো কখনোই মিস করে না। আর তুমিও করো না মাম্মা তো নেই।
হাসান মেয়ে কে গিফট দিলো। এতগুলো গিফট পেয়ে ইরা খুশি হয়ে গেলো।
হাসানঃ ইরা তুমি কার সাথে এসেছো?
ইরাঃ বজ্জাতের সাথে।
হাসান চৌধুরী জানে। ইরা নাহিদ কে বজ্জাত বলে।
হাসানঃ তা কোথায় নাহিদ?
ইরাঃ বাইরে আছে বাপি।
হাসান বাইরে গেলো। কিন্তু পেলোনা নাহিদ তো চলে গিয়েছে। হাসান চৌধুরী চেঁচিয়ে বললো,
- মামনি কোথায় নাহিদ?
ইরা দৌড়ে এলো এসে দেখলো নেই।
ইরাঃ মেবি চলে গিয়েছে।
বলে আবার ভেতর গেলো। হাসান ও মেয়ের পিছনে এলো। ইরা গিফটের লাগেজ নিয়ে উপরে চলে গেলো। রুমে এসে একা বকবক করছে।
ইরাঃ মাই কিতনি সুন্দার। গুলুমুলু মাসুম রুম আমাকে মিস করেছো না? চিন্তা করো না আমি চলে এসেছি। তোমার কিতনি সুন্দার গুলুমুলু। মাসুম ইরা চলে এসেছে। যদিও বেশীদিনের জন্য না তবে এসেছি তো।
ইরা’র চোখ গেলো পড়ার টেবিলে। সাথে সাথে ইরা ভেংচি কাটলো। ইরা’র মনে হচ্ছে পড়ার টেবিল যেন বলছে।
- তোকে পেয়েছি অনেকদিন পর। এবার তোকে ছাড়বো না।
ইরা ভেংচি কেটে বললো,
- হু হু ধরতে পারলে তো ছাড়বি। এসেছি তো কয়েকদিনের জন্য। আর সামনেই তো জঘন্য পরিক্ষা। তারপর তো তোকে ছুয়েও দেখবো না। আবার বলছে ছাড়বে না হু।
ইরা গিফটগুলো রেখে। ঠাস করে শুয়ে পড়লো। টেডিবিয়ার জড়িয়ে ধরে মনের সুখে ঘুম দিলো। এদিকে বেচারা নাহিদ রুমময় পায়চারি করছে। এইটুকুতে নিজেকে তো আর দেবদাস মানা যায় না।
নাহিদঃ মিষ্টি কে কত মিস করছি।
নাহিদ ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। ল্যাপটপে ইরা’র পিক দেখছে। নাহিদে’র মনে হচ্ছে ইরা ওর আশেপাশে।
নাহিদঃ কাল মিষ্টি’র স্কুলে চলে যাবো।
পরেরদিন নাহিদ ইরা’র স্কুলে গেলো। ইরা আর রুপ বসে আছে। একচুয়েলি রুপ বসে আছে ইরা দাড়িয়ে। নখ ঝুলিয়ে কি যেন বলছে। নাহিদ এগিয়ে গেলো আর শুনতে পেলো।
ইরাঃ তোকে আমি ডিভোর্স দেবো।
নাহিদঃ …………
ইরাঃ খুব তাড়াতাড়ি তোকে ডিভোর্স দিয়ে। নতুন আরেকটা কে ধরবো। তোর মতো প্রথমে তাকেও ভালবাসবো। কিতনি সুন্দার করে বাট পরে। তাকেও ডিভোর্স দিয়ে দেবো।
নাহিদঃ ………
ইরাঃ এরপর আবার নতুন একটা ধরবো।
রুপঃ হলো তোর?
ইরাঃ স্কুলকে তো ডিভোর্স ২মাস পরই দেবো। এরপর কলেজ কে দেবো দ্যান ভার্সিটি।
নাহিদঃ হোয়াট দ্যা?
রুপ আর ইরা আসতে গেলো। পিছনে তাকিয়ে দেখলো নাহিদ।
ইরাঃ বজ্জাত আপনি?
নাহিদঃ এসব কি বলছিলে তুমি?
রুপঃ ………..
ইরাঃ ডিভোর্স দেবো স্কুল কে।
নাহিদঃ রুপ কেমন আছো?
রুপ আমতা আমতা করে বললো,
- ভাভাভাল ভাভাভাইয়া।
নাহিদঃ ডোন্ট ওয়ারী আমি তোমাকে কিছু বলবো না।
রুপ আমতা আমতা করে হাসি দিলো।
ইরাঃ আপনি এখানে কেন?
নাহিদঃ তোমার টিচার্সদের সাথে কথা বলবো।
ইরাঃ কিহহহহহহ?
নাহিদে’র ডাউট হলো ভ্রু কুঁচকে বললো,
- নিশ্চয় গন্ডগোল করেছো?
ইরাঃ আব কি যে বলেন? আমার মতো কিতনি সুন্দার। গুলুমুলু মাসুম বাচ্চা কোনো গন্ডগোল করতে পারে?
নাহিদঃ এখন তো আমি শিওর। যে তুমি গন্ডগোল করেছো।
ইরাঃ ………
নাহিদঃ সরো আমাকে যেতে দাও।
নাহিদ স্কুলের ভেতরে গেলো। ইরা বসে বসে ঢোক গিলছে। কতক্ষণ পর হনহন করে হেটে এলো নাহিদ।
ইরাঃ বজ্জাত।
নাহিদঃ আনবিলিভেবল মিষ্টি।
বলে গাড়ি নিয়ে চলে গেলো।
রুপঃ নে হয়ে গেলো।
ইরাঃ ওই বেল স্যার নিশ্চয় বলে দিয়েছে।
ইরা ও ধাপধুপ পা ফেলে গিয়ে। গাড়িতে উঠলো বাড়ি গিয়ে রুমে গেলো। সন্ধ্যায় ইরা’র বাপি এসে বললো,
- ইরা তুমি খাঁন বাড়িতে চলে যাও।
ইরাঃ কেন বাপি?
হাসানঃ আমার আমেরিকা যেতে হবে আজই।
ইরাঃ আজই?
হাসানঃ হ্যা রে মা নাহিদ এসে নিয়ে যাবে।
একটুপরই নাহিদ এসে হাজির হলো। ইরা মন খারাপ করে চলে গেলো। হাসান চৌধুরী ও এয়ারপোর্টের উদ্দেশ্য বেরিয়ে গেলো। সারা রাস্তা ইরা চুপচাপ ছিলো। গাড়ি গিয়ে থামলো ইরা তাকিয়ে দেখলো। এটা নাহিদ’দের বাড়ি না।
ইরাঃ এটা কোথায়?
নাহিদঃ আমরা কাজী অফিসে এসেছি।
ইরাঃ কাজী অফিসে কি করে?
নাহিদঃ কাজী অফিসে।
ইরাঃ চকলেট, আইসক্রিম দেয়?
নাহিদঃ হোয়াট?
পর্ব ১৩
ইরাঃ কাজী অফিসে কি করে?
নাহিদঃ কাজী অফিসে।
ইরাঃ চকলেট, আইসক্রিম দেয়?
নাহিদঃ হোয়াট?
ইরাঃ তো?
নাহিদঃ মিষ্টি তুমি জানোনা?
ইরাঃ না তো।
নাহিদঃ ওকে ওকে এখন জেনে যাবে।
ইরাঃ সত্যি?
নাহিদঃ হামমমম।
বলে ইরা কে নিয়ে গাড়ি থেকে নামলো। নেমে কাউকে ফোন করে বললো,
- হ্যালো হ্যা সব রেডি?
ওপাশঃ হামমম সব রেডি।
নাহিদঃ ওকে তাড়াতাড়ি নিয়ে এসো।
বলে ফোন কেটে দিলো। কিছুক্ষণ পর কালো কোট পড়া একটা লোক এলো। লোকটা গাড়ি থেকে নেমে কিছু একটা দিলো নাহিদ কে। নাহিদ ও লোকটা কে একটা লাগেজ দিলো। লোকটা হাত দিয়ে অল দ্যা বেস্ট বলে চলে গেলো। নাহিদ ইরা কে নিয়ে ভেতরে গেলো। ভেতরে যেতেই একজন বললো,
- মিস্টার খাঁন চলে এসেছেন?
নাহিদঃ ইয়েস।
ইরাঃ উনি কে বজ্জাত?
নাহিদঃ মিষ্টি উনি হচ্ছে এডভোকেট। উনি আমাদের বিয়ে দেবে।
ইরাঃ আপনি বিয়ে করবেন?
নাহিদঃ হামমমম বিয়ে করবো।
ইরাঃ বিয়ে করে কি করবেন?
নাহিদঃ তোমাকে পরে বুঝিয়ে বলবো। নাউ আপনি সবকিছু রেডি করেছেন তো?
এডভোকেটঃ জ্বি সব রেডি।
বলে একটা পেপারস এগিয়ে দিয়ে বললো,
- এখানে আপনারা সাইন করুন। আর স্বাক্ষী হবে কারা?
- আমরা হবো।
নাহিদ মুচকি হেসে পিছনে তাকালো। নাহিদে’র ফ্রেন্ড নাজিম আর সৌরভ এগিয়ে এলো।
এডভোকেটঃ ওকে তাহলে সাইন করুন।
নাহিদ সাথে সাথে সাইন করে দিলো। কিন্তু ইরা সাইন করবে না। সাইন করতে হলে কলম ধরতে হবে। আর ইরা মোটেও কলম ধরবে না।
নাহিদঃ এক্সকিউজ মি।
বলে ইরা কে বাইরে নিয়ে এলো।
নাহিদঃ মিষ্টি একটা জিনিষ দেখবে?
ইরাঃ কি?
নাহিদ গিয়ে নাজিম’রা যেই গাড়ি নিয়ে এসেছে। ওই গাড়ির দরজা খুলে দিলো।
ইরাঃ ………
নাহিদঃ এগুলো তোমার চাই?
ইরাঃ হামমম, হামমম।
নাহিদঃ তাহলে ওই পেপারটাতে সাইন করো।
গাড়ি ভর্তি চকলেট, আইসক্রিম।
ইরাঃ ……
নাহিদঃ সাইন করলে তুমি যা চাইবে তাই দেবো।
ইরাঃ সত্যি?
নাহিদঃ হামম সত্যি।
ইরাঃ তাহলে আমাকে বাবু দেবেন।
নাহিদঃ হামমমম, হোয়াট?
ইরাঃ না দিলে সাইন করবো না।
নাহিদঃ মিষ্টি এসব কে শেখালো তোমাকে?
ইরাঃ ওমা কে শেখাবে?
নাহিদঃ মিষ্টি তোমাকে কি করে যে বোঝাই। আচ্ছা বাবু কি করে হয় জানো?
ইরাঃ হামমমম।
নাহিদঃ হোয়াট দ্যা? কি করে হয় বলো?
ইরাঃ কপালে চুমু দিলে।
নাহিদ হাফ ছেড়ে বাঁচলো।
ইরাঃ দেবেন না?
নাহিদঃ দেবো এখন চলো।
এরপর ইরা গিয়ে সাইন করলো। আর স্বাক্ষী হলো নাজিম আর সৌরভ। ইরা’র বয়স নিয়ে প্রবলেম হওয়ার আগেই। নাহিদ সবটা হ্যান্ডেল করে নিয়েছে।
ইরাঃ এটাতে সাইন করে কি হলো?
নাহিদঃ আমাদের বিয়ে হয়ে গেলো।
ইরাঃ ………
নাজিমঃ কংগ্রাচুলেশনস নাহিদ।
নাহিদঃ মিষ্টি কোথায় গেলো?
সৌরভঃ এখানেই তো ছিলো।
এডভোকেটঃ আপনার ওয়াইফ তো বেরিয়ে গেলো।
নাহিদ এডভোকেট কে টাকা দিয়ে। বেরিয়ে চলে এলো এসে চোখ কপালে। ইরা মনের সুখে চকলেট, আইসক্রিম খাচ্ছে। শুধু নিজে খাচ্ছে না টি শার্ট আর প্যান্ট কে ও খাওয়াচ্ছে। মুখ মেখে একাকার একেবারে। গাড়ির ভেতরে গিয়ে বসে বসে খাচ্ছে।
নাজিমঃ এটা আমাদের ভাবী।
সৌরভঃ পিচ্চি ভাবী।
নাহিদঃ ওকে তোরা আমার গাড়ি নিয়ে চলে যা। মিষ্টি তো ওখানে গিয়ে বসেছে।
সৌরভঃ ওকে বাই।
এরপর ওরা নাহিদে’র গাড়ি নিয়ে গেলো।
নাহিদঃ মিষ্টি বেরিয়ে এসো।
ইরাঃ ওমা এগুলো খাবোনা?
নাহিদঃ ওগুলো খাওয়ার অনেক টাইম আছে।
ইরাঃ নো এখনি খাবো।
নাহিদঃ মিষ্টি বেরিয়ে এসো রাইট নাউ।
ইরাঃ কিন্তু আপনি তো বললেন। এগুলো সব নাকি আমার।
নাহিদঃ হামমম ওগুলো সব তোমার। বাট এখন আর খাওয়া যাবেনা।
ইরা ভেংচি কেটে বেরিয়ে এলো। নাহিদ রুমাল দিয়ে ইরা’র নাক, মুখ। আর টি শার্ট, প্যান্ট মুছে দিয়ে। সামনের সিটে নিয়ে বসালো। দ্যান গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাড়ি গেলো। ইরা কে পেয়ে সবাই মহা খুশি।
নাহিদঃ মামনি সবাই তো আছে। আমার একটা কথা বলার ছিলো।
রোদেলাঃ কি কথা?
নাহিদঃ মামনি মিষ্টি কে আমি।
রোদেলাঃ ভালবাসিস ঠিক?
ইরাঃ ………
নাহিদ অবাক হয়ে বললো,
- তুমি জানো?
সবাইঃ আমরা সবাই জানি।
নাহিদঃ বাট হাউ?
রোদেলাঃ আমি বলেছি মনপাখি বড় হোক। তারপর তোদের বিয়েটা দিয়ে দেবো।
ইরাঃ বাট মাম্মি আমাদের বিয়ে হয়ে গিয়েছে।
সবাইঃ ………..
ইরাঃ হামমম তাইনা বজ্জাত?
রোদেলাঃ মনপাখি তুমি জানো বিয়ে কি করে হয়?
ইরাঃ সাইন করে।
রোদেলাঃ ওমা গো।
নাহিদঃ হামম মামনি এটাই বলতে চেয়েছি। আমি মিষ্টি কে বিয়ে করে নিয়েছি।
বাড়িতে থমথম পরিবেশ চলছে।
ইরাঃ আরে কি হয়ে গেলো সবার? বজ্জাত কি এমন করেছে? বিয়েই তো করেছে বাই দ্যা রাস্তা। বিয়ে করলে কি হয়?
নাহিদঃ মামনি কিছু বলো।
রোদেলাঃ এটা তুই কি করলি নাহিদ?
নাহিদঃ মামনি আমি একচুয়েলি।
রোদেলাঃ আর কাউকে না নিতি। বাট আমাকে এটলিস্ট তোর সাথে নিয়ে যেতি।
সোহেলিঃ আমাকেও নিয়ে যেতি।
অনেক মেলোড্রামা হলো। বাট ইরা কে সবাই মেনে নিলো।
রোদেলাঃ মনপাখি এখন থেকে এখানেই থাকবে।
সোহেলিঃ হামমম ভাবী।
সায়েমঃ আমার বউ কে তুমি বিয়ে করলে?
নাহিদঃ দাদু তোমার বউ তোমার পাশে।
ইরাঃ ক্ষিদে পেয়েছে।
রোদেলাঃ আগে বলবে তো সোনা বাচ্চা চলো।
রোদেলা ইরা কে নিয়ে খাইয়ে দিলো। নাহিদ ভাবতে লাগলো স্কুলের কথা। নাহিদ স্কুলে গিয়ে লাইব্রেরীতে যায়।
নাহিদঃ হ্যালো স্যার।
তারিক স্যারঃ তুমি নাহিদ খাঁন আয়াশ না?
নাহিদঃ জ্বি।
তারিক স্যারঃ এখানে স্কুলে?
নাহিদঃ একচুয়েলি আমার কিছু জানার আছে।
তারিক স্যারঃ কি জানতে চাও?
নাহিদঃ ইরা চৌধুরী নাবিলা’র ব্যাপারে।
তারিক স্যারঃ হাসান চৌধুরী’র মেয়ে। খুব বেশী দুষ্ট ইরা।
নাহিদঃ মানে?
তারিক স্যারঃ অনেক ফাজলামি করে। ঠিকমত ক্লাস করেনা কখনো। ক্লাসে কাউকে ঠিকমত ক্লাস করতেও দেয়না। আর ছেলেদের সাথেও আড্ডা দেয়।
নাহিদঃ হোয়াট? কি বলছেন আপনি? মিষ্টি যত দুষ্টমি করুক এমন কিছু করবে না।
তারিক স্যারঃ আমি স্যার হয়ে কেন মিথ্যে বলবো?
নাহিদ রেগে বেরিয়ে যায়। কি মনে করে আবার ফিরে আসে। আর এসে দেখে রিমি কথা বলছে।
রিমিঃ থ্যাংক ইউ স্যার।
তারিক স্যারঃ এসব কেন বলতে বললে? ইরা যথেষ্ট ভাল একটা মেয়ে।
রিমিঃ সরি স্যার বাট নাহিদ কে। আমি খুব ভালবাসি স্যার। ওই ইরা বাচ্চা মেয়ে হয়ে। নাহিদ কে ভুলভাল বুঝিয়ে। আমার থেকে দুরে করে দিয়েছে।
নাহিদ রেগে আগুন হয়ে গিয়েছে।
রিমি বেরিয়ে এলো নাহিদ লুকিয়ে গেলো।
রিমিঃ শ্যাম শুধু আমার হবে।
বলে মুচকি হেসে চলে গেলো। নাহিদ রেগে ফোস ফোস করে বললো,
- এতটা নিচে নেমে গিয়েছে এই মেয়ে? ওকে এবার আমিও দেখি। আমাকে তুমি কি করে পাও।
বলে নাহিদ চলে আসে। আর ওই কথাটা বলে ইরা কে ভয় দেখাতে।
নাহিদ রেগে বিরবির করে বললো,
- রিমি তোমাকে তো আমি দেখে নেবো। আমার মিষ্টি কে আজেবাজে কথা বলা। তোমাকে আমি উচিত শিক্ষা দেবো স্টুপিড।
ইরাঃ রুমে যাবো।
নাহিদঃ হামম চলো পড়তে বসবে তো।
ইরাঃ আমার বই তো এখানে নেই।
নাহিদ ইরা কে নিয়ে উপরে গেলো। ইরা নিজের রুমে যেতে গেলেই নাহিদ বললো,
- এখন থেকে তুমি আমার রুমে থাকবে।
ইরাঃ আমার কিতনি সুন্দার। গুলুমুলু মাসুম রুম থাকতে। আপনার রুমে কেন যাবো?
নাহিদঃ সাট আপ আমি বলেছি তাই।
বলে ইরা কে নিয়ে এলো। রাত ১টা কান ধরে এক পায়ে দাড়িয়ে আছে ইরা। ইরা কাঁদো কাঁদো হয়ে বললো,
- বজ্জাত ছেড়ে দিন না। আমার পা ব্যথা করছে।
নাহিদঃ এখন ছাড়তে বলছো কেন? আমি তোমাকে ১০টা অংক দিয়েছি মাএ মিষ্টি। তুমি ১টা অংক করে মনের সুখে কার্টুন দেখছিলে কোন সাহসে?
ইরাঃ আর করবো না এমন ছেড়ে দিন।
নাহিদঃ এখন তোমার শাস্তি। তুমি সারারাত বসে সবগুলো অংক করবে।
ইরাঃ নো।
নাহিদঃ ইয়েস নাহলে ওরকম দাড়িয়ে থাকো।
ইরাঃ ……..
নাহিদ গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। ইরা এদিকে মনে মনে। নাহিদে’র গুষ্টি উদ্ধার করছে।
পর্ব ১৪
নাহিদ গিয়ে ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। ইরা এদিকে মনে মনে। নাহিদে’র গুষ্টি উদ্ধার করছে।
নাহিদঃ আমাকে বকা শেষ?
ল্যাপটপে চোখ রেখেই বললো,ইরা আমতা আমতা করে বললো,
- আপনি কি করে জানলেন আমি বকছি?
নাহিদঃ কারণ তোমাকে আমি হারে হারে চিনি।
ইরাঃ ………..
নাহিদঃ নাউ তুমি ডিসাইড করো। অংকগুলো করবে নাকি কান ধরে দাড়িয়ে থাকবে?
ইরাঃ ছেড়ে দিন না বজ্জাত।
নাহিদঃ ১মিনিটে বলো কি করবে?
ইরা ভাবতে লাগলো। এভাবে কান ধরে এক পায়ে দাড়ানোর চেয়ে। বসে বসে অংক করাটাই বেটার।
ইরাঃ আমি অংক করবো।
নাহিদঃ গুড ওকে দ্যান স্টার্ট করো।
ইরা ভেংচি কেটে টেবিলে বসলো। ইরা অংক করছে আর নাহিদ। ল্যাপটপে কিছু পেপারস রাখছে। দেখতে দেখতে রাত ৩টা বেজে গিয়েছে। এরমাঝে নাহিদ কাজেই মন দিয়েছে। এবার ইরা’র দিকে তাকালো। ইরা মনের সুখে টেবিলে মাথা দিয়ে ঘুমিয়ে আছে। নাহিদ ল্যাপটপ রেখে মুচকি হেসে। ইরা’র কাছে গেলো গিয়ে চোখ কপালে। ইরা অংক না করে মানুষ আর্ট করেছে। দেখতে একদম বাজে পাশে আবার লেখা। মিস্টার বজ্জাত খাঁন।
নাহিদঃ হোয়াট দ্যা হেল?
নাহিদ রাগটা কন্ট্রোল করে। ইরা কে কোলে তুলে নিলো। বিছানায় নিয়ে ঠিকমত শুইয়ে দিয়ে। লাইট নিভিয়ে নিজেও শুয়ে পড়লো। সকালে নাহিদে’র আগে ঘুম ভাঙলো। তবে নিজের মুখের উপর কিছু আবিষ্কার করলো। ঠিকমত দেখে নাহিদ হা করে তাকিয়ে আছে।
নাহিদঃ এভাবে কেউ ঘুমায়?
ইরা’র মাথা নাহিদে’র পায়ের কাছে। আর ইরা’র পা নাহিদে’র নাক বরাবর।
নাহিদঃ আর কি কি যে দেখবো।
নাহিদ ইরা কে ঠিকমত শুইয়ে দিয়ে। জগিং সুট পড়ে এসে ইরা কে ডাকলো।
নাহিদঃ মিষ্টি ওঠো।
নাহিদে’র ডাক ইরা শুনলো। তবে শুনে আরো বেশী করে ঘুমাচ্ছে। অনেকবার ডেকে নাহিদ এবার রেগে গেলো।
নাহিদঃ মিষ্টি ওঠো বলছি।
ইরা তবুও উঠছে না। নাহিদ এবার টেনে ওঠালো।
ইরাঃ আমাকে ঘুমাতে দিন না প্লিজ।
নাহিদঃ নো জগিং করতে হবে ওঠো।
ইরা এক লাফ দিয়ে উঠে বললো,
- কিহহহহহ?
নাহিদঃ কি হলো?
ইরাঃ আমি আর জগিং করবো?
নাহিদঃ হামমম করবে।
ইরাঃ না আমি জগিং করবো না। কোনদিন করিনি আজকে কেন করবো?
নাহিদঃ করতে হবে আমি বলেছি, তাই।
ইরাঃ কেন আপনি বললে কেন করবো?
নাহিদঃ আমি তোমার হাসবেন্ড। তাই আমি যা বলবো তুমি শুনবে।
ইরাঃ ………
নাহিদঃ যাও রেডি হয়ে নাও।
ইরা নাহিদে’র দিকে। ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। নাহিদ ব্লাক কালার জগিং সুট পড়েছে। পায়ে স্কেটস হোয়াইট সুজ। দুহাতে কালো গ্লাভস আঙুল বের হয়ে আছে। হাতের তালুটা জাস্ট ঢাকা। গ্লাভসের উপর ব্লাক রাবারের ঘড়ি। নাহিদে’র চুল অনেক সিল্কি যার কারণে। কিছু চুল কপালে পড়ে আছে। আর ফর্সা যার জন্য ব্লাক কালারে বেশী ভাল লাগছে।
নাহিদঃ এইযে মিস চকলেট। কোথায় হারিয়ে গেলেন?
ইরা বিরবির করে বললো,
- বজ্জাতটা কত কিউট।
নাহিদঃ মিষ্টিইইইইইইই।
ইরাঃ কি হলো?
নাহিদঃ রেডি হও যাও।
ইরা গিয়ে রেডি হয়ে এলো। ইরা’র জগিং সুট ব্লু কালার। রেডি হয়ে একটা ঝুটি করে বের হলো। চোখে মুখে একরাশ বিরক্তি। এদিকে জগিং করতে গিয়ে ইরা’র অবস্থা খারাপ।
ইরাঃ বজ্জাত আমি আর পারবো না।
নাহিদ দৌড়াতে দৌড়াতে বললো,
- এইটুকুতেই হাপিয়ে গেলে? এখন থেকে রোজ জগিং করতে হবে।
ইরাঃ ……
নাহিদঃ চলো আজ ছেড়ে দিলাম।
দুজনে বাড়ি চলে এলো। বাড়ি আসতেই রোদেলা বললো,
- এই তুই ওকে কেন নিলি জগিং করতে?
নাহিদঃ শাশুড়ি হতে না হতে। ছেলে কে সাওয়াল।
ইরাঃ কে শাশুড়ি?
সবাইঃ ……
রোদেলাঃ আমি তোমার শাশুড়ি মনপাখি।
ইরাঃ কি করে শাশুড়ি হলে মাম্মি?
নাহিদঃ আমি তোমাকে বিয়ে করেছি। এখন তো আমি তোমার হাসবেন্ড। তাই আমার মামনি তোমার শাশুড়ি।
রোদেলাঃ বাট মনপাখি আমার মেয়ে।
ইরাঃ কিতনি সুন্দার হে। আমি তাহলে তোমাকে শাশুড়ি বলবো।
রোদেলাঃ কি?
নাহিদঃ এটা কেমন ডাক মিষ্টি? তুমি তো মামনি আর মাম্মি বলো।
ইরাঃ আমি বলবো।
রোদেলাঃ আচ্ছা তুমি বলো।
ইরাঃ শাশুড়ি আম্মু।
রায়হানঃ আর আমাকে কি বলবে?
ইরাঃ শ্বশুর বাবাই।
নাহিদঃ মিষ্টি তুমি রুমে যাও আমি আসছি।
ইরাঃ ……
নাহিদঃ কি হলো যাও।
ইরা রুমে চলে গেলো। নাহিদ একটুপর রুমে গিয়ে দেখলো ইরা নেই।
নাহিদঃ মিষ্টি কোথায় গেলো?
নাহিদ বুঝলো ইরা কোথায়। প্রিজ রেখে ইরা’র রুমে গেলো। ইরা জগিং সুট চেন্জ করে। ফ্রেশ হয়ে টম টি শার্ট আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট পড়েছে।
নাহিদঃ মিষ্টি চলো।
ইরাঃ কোথায়?
নাহিদঃ আমাদের রুমে।
ইরাঃ …..
নাহিদ ইরা কে নিয়ে গেলো। রুমে গিয়ে প্রিজ এনে বললো,
- মিষ্টি এগুলো সব ফিনিশ করো।
সামনে তাকিয়ে ইরা বললো,
- হোয়াট? এগুলো আমি ফিনিশ করবো?
নাহিদঃ হামমম হারি আপ। দ্যান স্কুলে যেতে হবে।
প্রিজে ফ্রুটস, মিল্ক, ভেজিটেবল।
ইরাঃ ইয়াক এগুলো আমি খাবোনা।
নাহিদঃ মিষ্টি বেশী টাইম নেই।
ইরাঃ আমি এসব খাবো না।
নাহিদঃ আমি শাওয়ার নিয়ে এসে। এগুলো যেন না দেখি।
বলে ড্রেস নিয়ে ওয়াসরুমে গেলো। শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখলো। ইরা বসে আছে কিন্তু প্রিজ নেই।
নাহিদঃ প্রিজ কোথায়?
ইরাঃ আপনি তো বললেন। শাওয়ার নিয়ে এসে যেন না দেখি। তাই আমি নিচে রেখে এসেছি।
নাহিদঃ মিষ্টি তুমি এমন কেন?
বলে হনহন করে নিচে গেলো। আবার প্রিজ নিয়ে এসে ইরা’র পাশে বসলো।
নাহিদঃ হা করো।
ইরাঃ খাবো না আমি।
নাহিদঃ তাহলে জোর করে খাওয়াবো।
ইরাঃ কি গেলাবেন?
নাহিদঃ হোয়াট? গেলানো কি?
ইরাঃ জোর করে খাওয়ানো।
নাহিদঃ হামমম গেলাবো।
ইরাঃ না বজ্জাত আমি খাবো না।
নাহিদ জোর করে ইরা কে খাওয়ালো। মুখ চেপে ধরে ইরা মনে মনে বকা দিলো। খাওয়া শেষে নাহিদ প্রিজ রেখে এসে বললো,
- মিষ্টি রেডি হয়ে এসো।
ইরাঃ কেন?
নাহিদঃ তোমাকে স্কুলে নিয়ে যাবো।
ইরাঃ আমি রোজ স্কুলে যাই না।
নাহিদঃ এখন থেকে রোজ যাবে। যাও রেডি হয়ে এসো।
ধমক খেয়ে ইরা স্কুল ড্রেস পড়ে এলো। তবে স্কুল ড্রেস পড়ে রোদেলা’র কাছে গেলো।
ইরাঃ শাশুড়ি আম্মু আমি স্কুলে যাবো না।
রোদেলাঃ ওকে মনপাখি যেতে হবে না।
নাহিদ ইরা’র ব্যাগ নিয়ে নামতে নামতে বললো,
- যেতে হবে মামনি।
ইরা গিয়ে রোদেলা’র পিছনে লুকালো।
নাহিদঃ মিষ্টি বেরিয়ে এসো। নাহলে কান টেনে বের করবো।
ইরাঃ আমি যাবো না।
নাহিদ সত্যি সত্যি গিয়ে। ইরা’র কান ধরলো।
ইরাঃ আহ বজ্জাত ছাড়ুন।
নাহিদঃ চলো এখন থেকে। আর স্টাডিতে ফাকি দিতে পারবে না।
বলে কান ধরে নিয়ে। গাড়িতে বসালো ইরা ভ্যা ভ্যা করে কান্না করছে।
পর্ব ১৫
নাহিদঃ চলো এখন থেকে আর। স্টাডিতে ফাকি দিতে পারবে না।
বলে কান ধরে নিয়ে। ইরা কে গাড়িতে বসালো। ইরা ভ্যা ভ্যা করে কান্না করছে। নাহিদ গাড়িতে বসে গাড়ি স্টার্ট দিলো। ইরা কান্না করেই যাচ্ছে।
নাহিদঃ জাস্ট সাট আপ মিষ্টি।
জোরে ধমক দিলো। সাথে সাথে ইরা চুপ হয়ে গেলো। কারণ এখন কেউ নেইও। যে ওকে বাঁচাতে পারে নাহিদে’র ধমক থেকে। তাই মিনি বিড়ালের মতো বসে রইলো চুপটি করে। গাড়ি গিয়ে স্কুলের সামনে থামলো।
নাহিদঃ নামো।
ইরা আমতা আমতা করে বললো,
- কাল থেকে ক্লাস করবো।
নাহিদে’র মেজাজ গরম হয়ে গেলো।
নাহিদঃ সাট আপ ওকে? তোমার পরিক্ষার তো ২মাস ও নেই। আর কয়দিন বা ক্লাস হবে হ্যা? তাহলে কাল ক্লাস করবে কেন বলছো? চুপচাপ ক্লাসে যাও আর একটা কথাও না বলে। সবগুলো ক্লাস করবে আমি এসে নিয়ে যাবো।
ইরা ভেংচি কেটে ক্লাসে গেলো। নাহিদ ও গাড়ি নিয়ে চলে গেলো। ইরা নাহিদ কে বকতে বকতে ভেতরে গেলো।
রুপঃ কি রে কাকে ঝাড়ছিস?
ইরাঃ কাকে আবার বজ্জাত কে।
রুপঃ ভাইয়া আবার কি করলো?
ইরাঃ জোর করে স্কুলে দিয়ে গেলো।
রুপঃ ওকে এখন ক্লাস কর।
ইরা বিরবির করেই যাচ্ছে। স্যার চলে আসায় থেমে গেলো। ক্লাস শেষ করে বের হতেই। ইরা নাহিদ কে দেখলো গাড়ির সাথে হেলান দিয়ে। দাড়িয়ে ফোন টিপছে ইরা ধাপধুপ পা ফেলে গিয়ে। নিজে থেকে গাড়িতে বসলো নাহিদ ও বসে বললো,
- বাড়ি যাওয়ার সময়। আমাকে আর গাড়িতে বসতে বলতে হয় না।
ইরাঃ ……….
নাহিদ ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে। গাড়ি ড্রাইভ করছে হঠাৎ ইরা বললো,
- আমিও ড্রাইভ করা শিখবো।
নাহিদঃ হোয়াট? তুমি শিখে কি করবে?
ইরাঃ আপনি কি করছেন? গাড়িতে নিশ্চয় ফুটবল খেলছেন না?
নাহিদঃ মিষ্টি।
ইরাঃ হিহি সল্লি।
নাহিদঃ মিসেস জেরী।
ইরাঃ মিস্টার টম।
নাহিদঃ ড্রাইভ করা শিখতে চাও?
ইরাঃ হামমম, হামমম।
নাহিদঃ তাহলে আমি যা বলবো তাই শুনবে।
ইরাঃ …..
ওরা বাড়ি গিয়ে পৌছালো। ইরা স্কুল ব্যাগ ফেলেই দৌড়ে ভেতরে গেলো। নাহিদ ব্যাগ নিলো আর গিয়ে শুনলো।
ইরাঃ শাশুড়ি আম্মু আমি ড্রাইভ করা শিখবো।
রোদেলাঃ ওকে মনপাখি তুমি চেন্জ করে নাও। আমি নাহিদ কে বলছি ও তোমাকে শেখাবে।
ইরাঃ ওকে।
ইরা উপরে যেতেই নাহিদ বললো,
- মামনি তুমি মিষ্টি কে কেন বললে?
রোদেলাঃ কি?
নাহিদঃ যে আমি ড্রাইভ শেখাবো।
রোদেলাঃ তো শেখাও ওকে।
নাহিদঃ মামনি ও এখনো ছোট। এখন ড্রাইভ শিখে কি করবে ও?
সোহেলিঃ ওতো শিখতে চাইছে।
নাহিদঃ চাচীমা মিষ্টিতো কতকিছুই চায়। বাট ওকে সেটা আমি অবশ্যই দেই। যেটাতে ওর ভাল হবে তাইনা? আর আমি বলছি না আমি ওকে। ড্রাইভ শেখাবো না শেখাবো বাট পরে।
বলে উপরে চলে গেলো।
রোদেলাঃ মনপাখি কি মানবে?
সোহেলিঃ ইরা যে জেদী।
রোদেলাঃ হামমম সেটাই তো।
রায়হানঃ বাট নাহিদ কে ভয় পায়।
নাহিদ রুমে গিয়ে দেখে। ইরা হাত পা ছড়িয়ে শুয়ে আছে।
নাহিদঃ ফ্রেশ হয়েছো তুমি?
ইরাঃ পরে হবো।
নাহিদ ব্যাগ রেখে টেনে ইরা কে ওঠালো।
নাহিদঃ যাও ফ্রেশ হয়ে এসো।
ইরাঃ …….
ফ্রেশ হয়ে এসে আবার শুয়ে পড়লো। নাহিদ খাবার এনে খাইয়ে দিলো। এভাবে কেটে গিয়েছে ১বছর। ইরা’র বয়স এখন ১৬ গিয়ে ১৭তে পড়েছে। আর ইরা এবার ইন্টার সেকেন্ড ইয়ারে যাবে। তবে ইরা একদম চেন্জ হয়নি। আগের মতোই আছে সন্ধ্যা ৭টা। নাহিদ ইরা কে পড়াচ্ছে।
ইরাঃ আমি আর পড়বো না।
নাহিদঃ কতক্ষণ পড়লে হ্যা? তোমাকে যে আমি আইসিটিতে। ডি-মরগ্যানের উপপাদ্য করতে বললাম। ওটা করেছো এখনো তুমি?
ইরাঃ কালকে করবো।
নাহিদঃ আজকে দিয়েছি আজকেই করবে।
ইরাঃ ……
এরমাঝে নাহিদে’র ফোন এলো। ফোন নিয়ে দেখলো লন্ডন থেকে ফোন এসেছে। নাহিদ ফোন নিয়ে বেলকনিতে গেলো। কিছুক্ষণ পর ফিরে এলো।
ইরাঃ কে ফোন করেছিলো?
নাহিদঃ লন্ডন ইউনিভার্সিটি থেকে কল করেছে।
ইরাঃ কেন?
নাহিদঃ ডিটিএম এন্ড এইস ডিগ্রির অফার এসেছে। আমাকে যেতে বলছে বাট আমি।
ইরা লাফ দিয়ে উঠে। দাড়িয়ে লাফাতে লাফাতে বললো,
- ইয়ে বজ্জাত চলে যাবে। তাহলে আর কেউ আমাকে পড়তে বলবে না। জোর করে খাওয়াবে না। জগিং করাবে না নিজের মতো চলতে পারবো।
নাহিদ থমকে গিয়ে তাকিয়ে আছে।
নাহিদঃ বাট আমি তো যেতে চাইনি। আমি চলে গেলে মিষ্টি এত খুশি? তুমি কি কোনদিন আমাকে বুঝবে না মিষ্টি? আমার ভালবাসা কোনদিন বুঝবে না? ওকে ফাইন তুমি যখন এতটা খুশি হয়েছো। তাহলে আমি চলে যাবো।
মনে মনে বললো নাহিদ।
ইরাঃ আচ্ছা বজ্জাত ডিটিএম এন্ড এইস। এটাতো বললেন এটার মানে কি?
নাহিদঃ ডিপ্লোমা ইন ট্রপিক্যাল মেডিসিন এন্ড হেলথ।
বলে নাহিদ আবার বেলকনিতে চলে গেলো।
পর্ব ১৬
নাহিদ বেলকনিতে চলে গেলো আবার। এদিকে ইরা তো মহাখুশি নাহিদ চলে যাবে ভেবে। নাহিদ বেলকনিতে গিয়ে ফোন করে জানিয়ে দিলো। যে ও লন্ডন যাচ্ছে সেটাও খুব তাড়াতাড়ি। ইরা ডি-মরগ্যানের উপপাদ্য করে নাহিদ কে ডাকলো।
নাহিদঃ হোয়াট হ্যাপেন্ড?
ইরাঃ আমি ডি-মরগ্যানের উপপাদ্য করেছি।
নাহিদ মুচকি হেসে দেখতে লাগলো। সব ঠিকই আছে তাই নাহিদ বললো,
- মিষ্টি তুমি ঘুমিয়ে পড়ো।
ইরা হা করে তাকিয়ে আছে।
নাহিদঃ কি হলো?
ইরাঃ এত তাড়াতাড়ি ঘুমাবো?
নাহিদঃ ৯টা বেজে গিয়েছে তো।
ইরাঃ ডিনার করবো না?
নাহিদঃ মন চাইলে করে এসো।
বলে নাহিদ শুয়ে পড়লো। ইরা হা করে তাকিয়ে আছে। নাহিদ ওকে রোজ জোর করে ডিনার করায়। আর আজকে বলছে মন চাইলে করো। ইরা কিছুই বুঝতে পারছে না। হঠাৎ নাহিদে’র কি হলো?
ইরাঃ এই বজ্জাতের হঠাৎ কি হলো?
ইরা রুমময় পায়চারী করছে। নাহিদ চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
ইরাঃ এই বজ্জাত ঘুমিয়ে পড়েছেন?
নাহিদ কোনো সারা দিলো না। ইরা বিছানায় গিয়ে নাহিদে’র টি-শার্ট টানছে।
নাহিদঃ আজকে তোমার ঘুম আসছে না?
ইরাঃ আপনি কি রেগে আছেন?
নাহিদঃ কার উপর রাগ করবো আমি?
ইরাঃ হ্যা তাও ঠিক।
নাহিদ আবার চোখ বন্ধ করে নিলো।
ইরাঃ বজ্জাত শুনুন।
নাহিদ তাকালো তবে রাগী দৃষ্টিতে।
ইরাঃ চলুন ডিনার করে নেবেন।
নাহিদঃ আমার ক্ষিদে নেই তুমি যাও।
ইরাঃ ……..
ইরা ও ডিনার না করে শুয়ে পড়লো। নাহিদ একবার তাকিয়ে আবার চোখ বন্ধ করে নিলো। এরমাঝে রোদেলা এসে ডেকে গিয়েছে। কিন্তু কেউ যায়নি রাত ১টা। ইরা ঘুমিয়ে আছে নাহিদ এখনো ঘুমায়নি।
নাহিদঃ মিষ্টি তো ডিনার করলো না। এই মেয়েটা কি যে করে?
নাহিদ উঠে নিচে গেলো। নিচে গিয়ে খাবার নিয়ে আবার উপরে এলো। ইরা গুটিশুটি মেরে ঘুমিয়ে আছে। নাহিদ খাবারটা রেখে ইরা কে ডাকলো। ইরা পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
- সকাল হয়ে গিয়েছে?
নাহিদঃ না ওঠো খাবারটা খেয়ে নাও।
ইরা লাফ দিয়ে উঠে বসলো।
নাহিদঃ …….
ইরাঃ এখন খাবো?
নাহিদঃ হামমমম খাবে।
ইরাঃ …..
নাহিদঃ আগে ফ্রেশ হও আই মিন। পানি দিয়ে মুখ ক্লিন করো ওকে?
ইরা তাই করলো এরপর। নাহিদ ইরা কে খাইয়ে দিলো।
ইরাঃ আপনি খাবেন না?
নাহিদঃ না।
বলে আবার নিচে গেলো। প্লেটগুলো রেখে উপরে এসে শুয়ে পড়লো। ইরা আগেই ঘুমিয়ে গিয়েছে। পরেরদিন সকালে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আছে। তখন সেখানে নাহিদ এসে বললো,
- পাপা, মামনি আমার কথা আছে।
রায়হানঃ কি কথা?
নাহিদঃ ২০তারিখে আমি লন্ডন যাচ্ছি।
রোদেলাঃ কেন?
নাহিদঃ মামনি আমার ওখানকার। ইউনিভার্সিটি থেকে ডিটিএম এন্ড এইস ডিগ্রির অফার এসেছে।
সোহেলিঃ কিন্তু তুই গেলে ইরা কে।
নাহিদ মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বললো,
- মিষ্টি ভাল থাকবে তাইনা মিষ্টি?
ইরাঃ হামমম, হামমম।
সবাই বুঝতে পারলো। নাহিদ কেন যেতে চাইছে? যথারীতি ২০তারিখ চলে এলো। নাহিদ ও রেডি হয়ে গিয়েছে। আর ২ঘন্টা পরই ফ্লাইট নাহিদ রেডি হয়ে নিচে এলো। ইরা সোফায় বসে চকলেট খাচ্ছে। নাহিদে’র চোখের কোনে পানি জমে আছে।
নাহিদঃ একবার আমাকে আটকাও মিষ্টি। একবার বলো তুমি চাওনা আমি যাই। আমি তাহলে কোথাও যাবো না। দেশে থেকেই নিজের ক্যারিয়ারে ফোকাস করবো। প্লিজ মিষ্টি স্টপ মি কি করে থাকবো আমি?
মনে মনে বলছে কথাগুলো।
প্রতাপঃ নাহিদ চল।
নাহিদ ধীর পায়ে হাটছে। যদি ইরা ওকে আটকায় এটা ভেবে। দরজার কাছে আসতেই ইরা বললো,
- বজ্জাত শুনুন।
ওমনি নাহিদ দাড়িয়ে গেলো। একবুক আশা নিয়ে বললো,
- মিষ্টি কিছু বলবে?
ইরাঃ হামমমম।
নাহিদঃ কি বলবে প্লিজ বলো।
ইরাঃ আমার জন্য চকলেট নিয়ে আসবেন।
নাহিদে’র হাসি মুখটা কালো হয়ে গেলো। পিছন ফিরে হনহন করে চলে গেলো। গাড়িতে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো। নাহিদে’র সাথে রায়হান আর প্রতাপ গিয়েছে। ইরা রুমে গেলো গিয়ে গান শুনছে। নাহিদে’র ফ্লাইটের টাইম হয়ে গেলো। প্লেন উড়াল দিলো লন্ডনের উদ্দেশ্যে।
নাহিদ লন্ডন গিয়েছে ১০দিন হয়ে গিয়েছে। সবার সাথেই কথা বলেছে শুধু ইরা ছাড়া।
ইরাঃ বজ্জাত আমার সাথে কথা বলে না কেন? বজ্জাত কি আমাকে ভুলে গেলো?
ইরা’র ইদানিং ভাল লাগেনা কিছু। নাহিদ কে মিস করে কথায় আছে। দাত থাকতে দাতের মর্ম বোঝেনা কেউ। দিন কাটছে তার মতো সময় বয়ে চলেছে আপনগতিতে। কেটে গিয়েছে কয়েকটা মাস। আর ১৫দিন পর ইরা’র জন্মদিন। এবার ১৭তে পা দেবে ইরা। রাতে ফোন নিয়ে নাহিদ কে ফোন দিলো। বাংলাদেশ টাইম ৮টা আর লন্ডনে ২টা। মোট ৬ঘন্টার ডিফরেন্স যাইহোক। ১বারেই নাহিদ ফোন তুললো ফোন তুলতেই। ইরা’র কান্নামাখা গলা শুনতে পেলো। নাহিদ এটা আশা করেনি পাগলের মতো বললো,
- মিষ্টিপাখি কি হয়েছে তোমার? তুমি কান্না করছো কেন? কেউ কিছু বলেছে? প্লিজ টেল মি মিষ্টি।
ইরাঃ আই মিস ইউ বজ্জাত।
নাহিদ হা হয়ে গিয়েছে। ইরা ওকে মিস করছে?
নাহিদঃ তুমি আমাকে মিস করছো?
ইরাঃ খুব মিস করছি প্লিজ চলে আসুন।
নাহিদ হয়তো এটারই অপেক্ষা করছিলো।
নাহিদঃ মিষ্টি ডোন্ট ক্রাই ওকে? আমি আসবো প্রমিস। তোমার বার্থডের আগেরদিনই আসবো।
ইরাঃ সত্যি?
নাহিদঃ হামমমম।
ইরা কান্না থামিয়ে দিলো। কথামতো ইরা’র জন্মদিনের আগেরদিন নাহিদ এলো। নাহিদ কে পেয়ে সবাই খুব খুশি হলো। ইরা দৌড়ে এসেই বললো,
- মিস্টার বজ্জাত খাঁন। আমার চকলেট কোথায়?
নাহিদঃ আছে রুমে চলো দেবো।
রিয়াদঃ কোন চকলেট দেবে শালাবাবু?
রিয়াদ হচ্ছে নান্নি’র হাসবেন্ড। মানে নাহিদের’র জিজু নাহিদ চোখ মেরে বললো,
- এখানেই দেখাবো?
রিয়াদঃ না থাক।
নাহিদ ইরা কে নিয়ে রুমে গেলো। ইরা এখনো একফোটা চেন্জ হয়নি। নাহিদ একটা দীর্ঘশ্বাস নিলো। জন্মদিনের দিন সন্ধ্যায় পুরো খাঁন প্যালেস সাজিয়েছে। ইরা কে সাদা গাউন পড়িয়েছে। সাদা জুয়েলারি হালকা মেকআপ। তার সাথে চোখে মোটা করে কাজল। ঠোটে লাল লিপস্টিক নাহিদ সাদা শার্ট। সাদা প্যান্ট সাদা সুট পড়েছে। বাম হাতে সাদা ব্রান্ডের ঘড়ি। চুলগুলো জেইল দিয়ে সেট করা। দুজনে একসাথে নিচে গেলো। নিচে গিয়েই নাহিদে’র মেজাজ বিগরে গেলো। রিমি ঢং করে এসে বললো,
- ওয়াও শ্যাম লুকিং চকলেট বয়।
নাহিদঃ তুমি এখানে?
রিমিঃ বাপি ও এসেছে।
নাহিদ আর কিছু বললো না। এদিকে ভীরের মধ্যে ইরা গায়েব। সবাই নিজেদের মতো ব্যস্ত। কেক কাটার টাইমে ইরা এলো। এসেই নাহিদ কে সবার সামনে বললো,
- বজ্জাত একটা কথা বলবো?
নাহিদঃ হামমমম বলো।
ইরাঃ আপনি রিমি আপু কে বিয়ে করুন।
সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।
নাহিদঃ মিষ্টি কি বলছো?
ইরাঃ বলুন বিয়ে করবেন বলুন।
রোদেলাঃ মনপাখি কি বলছো?
সোহেলিঃ ইরা কেক কাটো।
ইরাঃ না বজ্জাত কে বিয়ে করতে হবে।
নাহিদঃ মিষ্টি স্টপ ইট।
ইরাঃ না বলুন বিয়ে করবেন।
নাহিদে’র রাগটা অতিরিক্ত বেড়ে গিয়েছে। ইরা কেকটা ধরে ফেলে দিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
- বিয়ে করবেন বলুন রিমি আপু কে।
নাহিদঃ ইরা।
বলে ঠাস করে একটা থাপ্পর মারলো। পরিবারের সবাই হতবাক হয়ে গিয়েছে। নাহিদ চেঁচিয়ে বলে উঠলো।
- স্টপ ইট অনেক হয়েছে এই পাগলামি।
ইরা গালে হাত দিয়ে ছলছল চোখে বললো,
- মিষ্টি থেকে ইরা হয়ে গেলাম? আর আপনি আমাকে মারলেন?
বলেই দৌড়ে উপরে চলে গেলো। পরিবেশ থম মেরে আছে। নাহিদ রিমি কে টেনে এনে রাগী গলায় বললো,
- মিষ্টি কে এসব তুমি শিখিয়েছো তাইনা?
রিমিঃ কি বলছো? আমি কেন বলবো?
নাহিদ রিমি কে এক থাপ্পর মারলো।
অভিকঃ নাহিদ তোমার এত সাহস। তুমি আমার মেয়ে কে আমার সামনে মারলে?
নাহিদঃ আপনি চুপ করুন। নাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।
রিমিঃ শ্যাম।
নাহিদঃ জাস্ট সাট আপ রাবিশ মামনি শোনো।
নাহিদ স্কুলের সব ঘটনা বললো,সবটা শুনে সবাই অবাক হলো।
রোদেলাঃ ছিঃ রিমি তুমি এমন?
রিমিঃ আন্টি আমি তো শ্যামে’র জন্য।
নাহিদঃ আর একটা কথাও তুমি বলবে না। মামনি আমি মিষ্টি কে নিয়ে আসছি।
বলে শিরির দিকে যেতে গেলেই দেখে। ইরা নিজেই নেমে আসছে সবাই শান্ত হয়। কিন্তু নাহিদে’র ডাউট হচ্ছে কেমন। ইরা ঢুলে ঢুলে হেটে আসছে। শিরির কাছে এসে শিরি দিয়ে নামছে। এরমাঝে রিমি বলে ওঠে।
- শ্যাম শোনো।
নাহিদ ফিরে চোখ লাল করে বলে,
- আই সেইড গেট আউট।
এদিকে ইরা ঢুলতে ঢুলতে। ব্যালেন্স রাখতে না পেরে গড়িয়ে। শিরি থেকে নিচে গিয়ে পড়ে।
রোদেলাঃ মনপাখি।
নাহিদ দৌড়ে গিয়ে ইরা কে ধরে। ইরা’র হাত থেকে একটা বোতল পায়। বোতলটা ধরে নাহিদে’র পায়ের তলার মাটি সরে গিয়েছে। কারণ এতে ঘুমের মেডিসিন ছিলো ২৩টা। একদম নতুন যেটা নাহিদ’ই ওর দীদা কে দিয়েছে। তার উপর ইরা’র মাথা ফেটে ফিনকি দিয়ে রক্ত পড়ছে।
নাহিদঃ মিমিমিমিষ্টি।
পর্ব ১৭
ইরা আস্তে আস্তে বলে উঠলো।
- আআআই এম সসসসরি। সসসসরি ফফফর এভ্রিথিং সসনাহিদ।
বলে চোখদুটো বন্ধ করে নিলো।
রোদেলাঃ মনপাখি।
নাহিদঃ মিষ্টি চোখ খোলো প্লিজ। আমি আর কখনো তোমার গায়ে হাত তুলবো না। আর কখনো তোমাকে বকবো না প্লিজ। মামনি ওকে বলো না চোখ খুলতে। একবার আমাকে বজ্জাত বলতে।
সোহেলিঃ নাহিদ ওকে হসপিটালে নিতে হবে।
নাহিদঃ হ্যা আমার মিষ্টি’র কিছু হবে না।
নাহিদ ইরা কে কোলে তুলে নিলো। রিমি হা করে তাকিয়ে আছে। নাহিদ রিমি’র সামনে গিয়ে রিমি’র বাবা। অভিকে’র দিকে তাকিয়ে বললো,
- আমার মিষ্টি’র যদি কিছু হয়। কসম আল্লাহর আপনার মেয়ে কে আমি জানে মেরে ফেলবো।
বলে তাড়াতাড়ি বেরিয়ে গেলো। গাড়িতে গিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিয়ে। হসপিটালে পৌছালো হসপিটালে পৌছে। ডক্টর কে ডাকতে লাগলো।
ডক্টরঃ কি হয়েছে ওর?
নাহিদঃ ও স্লিপিং পিল খেয়ে নিয়েছে। আর মাথায়ও আঘাত পেয়েছে প্লিজ ডু সামথিং ডক্টর। বাট আই ওয়ান্ট মাই ওয়াইফ প্যাক সেভলি।
ডক্টরঃ ওকে আমরা দেখছি।
নাহিদঃ আমিও যাবো।
ডক্টরঃ নাহিদ তুমি গিয়ে কি করবে?
নাহিদঃ আপনি কি জানেন না?
ডক্টরঃ প্লিজ আমাদের কাজটা আমাদের করতে দাও।
নাহিদঃ লিসেন ডক্টর।
রোদেলাঃ নাহিদ ওনাদের যেতে দে।
নাহিদঃ But মামনি।
রায়হানঃ নাহিদ পাগলামি করো না।
নাহিদঃ ওকে সরি ডক্টর।
ডক্টর ইরা কে নিয়ে অপারেশন থিয়েটারে গেলো। নাহিদে’র নিজের উপর রাগ লাগছে।
নাহিদঃ এতটা রেগে যাওয়া উচিত হয়নি। কেন মিষ্টি কে মারলাম আমি? কি করে পারলাম এটা করতে?
রোদেলাঃ নাহিদ শান্ত হ। মনপাখির কিছু হবেনা।
প্রায় ৪ঘন্টা পর ডক্টর বের হলো।
নাহিদঃ ডক্টর আমার ওয়াইফ?
ডক্টরঃ স্লিপিং পিলটা আমরা বের করেছি। ওর মাথায় আঘাতটা খুবই গভীর। তাই ওর সেন্স না আসা অবদি আমরা কিছু বলতে পারছি না।
বলে ডক্টর চলে গেলো। নাহিদ ধপ করে বসে পড়লো। ধীর পায়ে গিয়ে ইরা’র পাশে বসলো। ইরা কে দেখে নাহিদে’র চোখ দিয়ে। টপটপ করে পানি পড়ছে।
নাহিদঃ সরি মিষ্টি ভেরী সরি। আর কখনো তোমাকে বকবো না। তোমার গায়ে হাত তুলবো না। প্লিজ চোখ খোলো মিষ্টি প্লিজ।
রোদেলা এসে নাহিদে’র কাধে হাত রাখলো।
নাহিদঃ মামনি আমি বুঝতে পারিনি। মিষ্টি এটা করবে আমি বুঝতে পারিনি। বাট আমি মেনে নিতে পারিনি। মিষ্টি রিমি কে বিয়ে করার কথা বললো,আমি সত্যি কন্ট্রোললেস হয়ে গিয়েছিলাম। আমি কেন ওর গায়ে হাত তুললাম? সবথেকে বেশী কষ্ট পেয়েছে। ওকে ইরা বলেছি আজকে এটাতে। ওকে তো কোনদিন আমি ইরা বলিনি। কোনদিন ওর গায়ে হাতও তুলিনি।
রোদেলাঃ নো ওয়ারী বাচ্চা। আমাদের মনপাখির কিছু হবেনা।
রোদেলা যতই নিজেকে স্ট্রং দেখাক। ভেতরে ভেতরে ওরও কষ্ট হচ্ছে।
পরেরদিন সকালে ইরা চোখ খুললো। চোখ খুলে সামনে সবাই কে দেখলো। নাহিদ এসে ইরা কে ধরে বললো,
- মিষ্টি এখন তুমি ঠিক আছো?
ইরা একভাবে তাকিয়ে আছে।
সোহেলিঃ ইরা কেমন লাগছে এখন?
ইরাঃ ভাল।
নাহিদঃ মিষ্টি কোথাও কষ্ট হচ্ছেনা তো?
ইরাঃ আপনি কে?
সবাই হতবাক হলো এমন প্রশ্নে।
রোদেলাঃ মনপাখি কি বলছো তুমি?
ইরাঃ কে মনপাখি? আপনারা কারা?
নাহিদঃ মিষ্টি প্লিজ মজা করো না।
ইরাঃ হোয়াট? কে মজা করছে?
নাহিদ অবাক হলো খুব। ইরা বড়দের মতো করে কথা বলছে দেখে। নাহিদ ডক্টরের কাছে গেলো।
নাহিদঃ ডক্টর ওর কি মেমোরি লস?
ডক্টরঃ হ্যা ঠিক ধরেছেন। আমারও তাই মনে হচ্ছে।
নাহিদ স্তব্ধ হয়ে গেলো। ডক্টর বুঝতে পেরে মেডিসিন এনে। নাহিদে’র হাতে দিয়ে বললো,
- এটা Cholinesterase inhibitors। আরেকটাতে আছে Memantine এটা রাখো।
নাহিদ ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
ডক্টরঃ এটা ওকে খাওয়াবে। আশা করি ইরা তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে।
নাহিদঃ But ডক্টর এটাতো ড্রাগসে। আশক্ত হয়ে ধীরে ধীরে সব ভুললে দেয়। বাট মিষ্টি তো শিরি থেকে পড়ে সবটা ভুলেছে।
ডক্টরঃ ডোন্ট ওয়ারী নাহিদ। আই নো তুমি ও একজন ডক্টর। বাট তুমি কিন্তু হার্ট সার্জন। এন্ড আই এম ইউআর সিনিয়র।
নাহিদঃ আই নো ইইআর মাই সিনিয়র। এন্ড আই রেসপেক্ট ইউ আঙ্কেল। But হার্ট সার্জন হলেও। এতটুকু বোঝার ক্ষমতা আছে। এন্ড এখানে কথা হচ্ছে আমার ওয়াইফ কে নিয়ে।
ডক্টরঃ ডোন্ট ওয়ারী কিছু হবে না।
নাহিদ গিয়ে ইরা’র পাশে বসলো।
নাহিদঃ মিষ্টি আমাকে চিনতে পারছো না?
ইরাঃ না পারছি না।
নাহিদ মেডিসিনটা কোনোরকম। জোর করে ইরা কে খাইয়ে দিলো। ইরা পাগলামি করছিলো যার কারণে। ওকে ঘুমের ইনজেকশন দিয়ে রাখা হয়েছে। নাহিদ রেগে রিমি’দের বাড়িতে এলো। নাহিদ কে দেখে রিমি দৌড়ে এসে বললো,
- ওয়াও শ্যাম তুমি এখানে?
নাহিদ ঠাস করে রিমি কে থাপ্পর মারলো।
নাহিদঃ তোমার জন্য সব হয়েছে। তোমার জন্য মিষ্টি আমাকে চিনতে পারছে না।
রিমিঃ হোয়াট?
নাহিদ রিমি কে আবার থাপ্পর মারলো। এরমাঝে অভিক চলো এলো কিন্তু নাহিদ। একেরপর এক রিমি কে থাপ্পর মেরেই যাচ্ছে।
পর্ব ১৮
নাহিদ একেরপর এক রিমি কে। থাপ্পর মেরেই যাচ্ছে অভিক চেঁচিয়ে বললো,
- নাহিদ কি করছো? ছাড়ো আমার মেয়ে কে।
নাহিদঃ আপনি একটা কথাও বলবেন না আঙ্কেল। নিজের মেয়ে কে ভাল কিছু শেখাতে তো পারেননি।
রিমিঃ শ্যাম আমি তোমাকে ভালবাসি।
নাহিদ ফল কাটার ছুড়ি দেখলো। ছুড়িটা এনেই রিমি’র গলায় ধরলো।
অভিকঃ নাহিদ।
নাহিদঃ ওকে আমি মেরে ফেলবো। ওর জন্য মিষ্টি আমাকে চিনতে পারছে না।
হঠাৎ সেখানে রায়হান এলো।
রায়হানঃ সোম কি করছো তুমি?
নাহিদঃ পাপা আই উইল কিল হার।
রায়হানঃ ছাড়ো ওকে ছাড়ো বলছি।
রায়হান গিয়ে নাহিদ কে ছাড়িয়ে। টেনে নিয়ে যেতে লাগলো নাহিদ যেতে যেতে বললো,
- আর কোনদিন যদি আমার লাইফে। বা আমার আর মিষ্টি’র লাইফে আসার চেষ্টা করিস। তাহলে কসম আল্লাহর তোকে আমি জানে মেরে ফেলবো।
রিমি ভীতু চোখে তাকিয়ে আছে। রায়হান নাহিদ কে নিয়ে হসপিটালে গেলো।
৬মাস পর।
৬মাসেও ইরা নাহিদ কে চিনতে পারেনি। আর ডক্টরও বেশী চাপ দিতে নিষেধ করেছে। মেডিসিনটা দিয়ে যাচ্ছে রোজ। ডক্টর বলেছে ধীরে ধীরে সবটা মনে পড়ে যাবে। ইরা’র ইন্টার ফাইনাল ইয়ারের পরিক্ষা শেষ। সোফায় বসে খবরের কাগজ পড়ছে হাসান। তখন ইরা নেমে এসে বললো,
- বাপি আমি বাইরে যাচ্ছি।
হাসানঃ কেন?
ইরাঃ পরিক্ষা শেষ একটু আড্ডা দিয়ে আসি।
হাসান চৌধুরী কিছু বললো না। ইরা বেরিয়ে গেলো ইরা যাওয়ার পর নাহিদ এলো।
হাসানঃ আরে তুমি?
নাহিদঃ বাবাই আমার কথা আছে।
হাসানঃ হ্যা বলো কি বলবে?
নাহিদঃ আমি মিষ্টি কে বিয়ে করবো।
হাসানঃ মিষ্টি তো তোমারই বউ।
নাহিদঃ আমি মিষ্টি কে সবটা মনে করাতে চাই। ওর মাএ কিছু কিছু কথা মনে পড়েছে। বাট আমি চাই ওর সবটা মনে পড়ে যাক। আর তারজন্য মিষ্টি কে আমি আবার বিয়ে করবো। মিষ্টি’র তো মনে নেই আমি ওর হাসবেন্ড। এরপর আমি মিষ্টি কে সবটা মনে করাবো। মিষ্টি যা যা করতো সেই সবটা ওর চোখের সামনে প্রেজেন্ট করবো। এবার নাহিদ হবে মিষ্টি’র জামাই ৪২০।
হাসান হা করে তাকিয়ে আছে।
নাহিদঃ বাবাই তার জন্য তোমার। মিরপুর যেতে হবে প্লিজ নো মোর কোশ্চেন।
হাসানঃ ইরা’র সব মনে করাতে হলে তাই যাবো।
৪দিন ওরা মিরপুরে গেলো। নাহিদ’রাও ওদের মিরপুরের বাড়ি গেলো। আবার ওদের বিয়ে হলো তবে কাবিন হলো শুধু। বিয়ের সময় অবদিও নাহিদ নিজের আসল রুপেই ছিলো। এরপর নাহিদে’র সাজ দেখে ইরা’র মেজাজ গরম হয়ে গেলো।
ইরাঃ একি এটা কি সেজেছো?
নাহিদঃ আমিতো এমন সেজেই থাকি।
ইরাঃ হোয়াট?
নাহিদঃ হোয়াট মানে কি?
ইরাঃ ……
নাহিদঃ কিতনি সুন্দার হে।
ইরা হাসান কে ডেকে আনলো।
হাসানঃ কি হলো মা?
ইরাঃ বাপি ও এমন জোকার সেজেছে কেন?
হাসানঃ এটাই ওর আসল সাজ মা।
ইরাঃ মানে ও না ডক্টর? তুমি তো বললে বাপি।
হাসানঃ তোকে বিয়ে দিতে মিথ্যে বলেছি।
ইরাঃ কিহহহহ?
হাসানঃ হাম না হলে তুই রাজি হতিনা তো।
ইরাঃ এটা তুমি ঠিক করোনি বাপি। একে আমি স্বামী বলে মানি না।
বলে ইরা হনহন করে চলে গেলো। নাহিদ নিজেকে আয়নায় দেখে বললো,
- হায়রে নাহিদ এটা কি সাজ তোমার? আমারই পছন্দ হচ্ছেনা আর তো মিষ্টি।
এরমাঝে নিচে কারো ডাক শুনলো। হাসান আর নাহিদ নিচে গেলো।
সজিবঃ বাপি।
হাসানঃ সজিব তুই?
সজিব এসে হাসান কে জড়িয়ে ধরলো।
হাসানঃ মনে পড়লো সবার কথা?
সজিবঃ রোজ মনে পড়তো বাপি।
নাহিদঃ এটা কে?
হাসানঃ ও সজিব আমার ছেলে।
নাহিদ মনে মনে বললো,
- সজিব এত বছর পর এলো। ধ্যাত আমিতো কথাও বলতে পারবো না এখন। আমার তো স্টুপিট কাজগুলো করতে হবে।
সজিবঃ ও কে?
হাসানঃ ও নাহিদ ইরা’র হাসবেন্ড।
সজিবঃ হোয়াট? বাপি হোয়াট আর ইউ সেয়িং?
নাহিদঃ চল নাহিদ স্টার্ট হয়ে যা।
মনে মনে বলে এরপর বললো,
- আই ইংরেজের বাচ্চা। এত ইংলিশ বলিস কেন?
সজিবঃ হোয়াট দ্যা হেল বাপি? এটা বোনের হাসবেন্ড?
নাহিদঃ কিহহ আবার বলিস?
বলে তেড়ে গেলো সজিবে’র দিকে।
সজিবঃ ……..
হাসানঃ জামাই তুমি উপরে যাও।
নাহিদঃ ওকে শ্বশুর ফাদার।
হাসানঃ….
নাহিদঃ হু আসছে।
বলে থেমে গিয়ে মনে মনে বললো,
- ওহ গড আসছে না। ওটা যেন কি হবে? আই আই আইছ ইয়েস আইছে।
নাহিদঃ হুহু আইছে।
জোরে বলে উপরে গেলো। সজিব হা করে তাকিয়ে আছে। ইরা একটুপর এলো ইরা এসে বললো,
- তুমি ভাইয়া তাইনা?
সজিবঃ তুই আমাকে চিনতে পারছিস না?
হাসানঃ আমি তোকে বলবো সবটা। আর মামনি এটাই তোমার ভাইয়া।
আবার মেলোড্রামা হলো।
সজিবঃ বাপি আমি এখানকার ভার্সিটিতে। অলরেডি ট্রান্সফার হয়ে এসেছি। আমেরিকা আমি আর যাবোনা।
এভাবে কাটতে লাগলো দিন। ইরা’র পরিক্ষার রেজাল্ট দিলো। অনেক ভাল রেজাল্ট করেছে। ইরা এলএলবি ফার্স্ট ইয়ারে এডমিশন নিলো। নাহিদ তো লেগেই আছে ইরা কে সব মনে করাতে। আর সাথে এক্সট্রা সবকিছু করলো। বাট নাহিদ যে রাগী ইরা’র জন্মদিনে। নিজের রাগটা আর কন্ট্রোল করতে পারেনি। আর ওরকম একটা পরিস্থিতিতে কেউই পারতো না। নিজের রাগটা কন্ট্রোল করতে চুপ থাকতে।
বর্তমান।
নাহিদ ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে দেখে। ইরা এলোমেলো হয়ে ঘুমিয়ে আছে। নাহিদ মুচকি হেসে ঠিকমত শুইয়ে দেয়।
পর্ব ১৯ (শেষপর্ব)
নাহিদ মুচকি হেসে ইরা কে। ঠিকমত শুইয়ে দিয়ে নিচে গেলো। রোদেলা কে বলে হসপিটালের জন্য বেরিয়ে গেলো। এদিকে ততক্ষণে ইরা’র ও ঘুম ভেঙে গিয়েছে। ঘুম থেকে উঠে রুমটাতে একবার চোখ বুলিয়ে নিচে গেলো। গিয়ে দেখলো সবাই এক জায়গায় আছে। ইরা কে দেখে রোদেলা বললো,
- মনপাখি ঘুম হলো?
ইরাঃ হামমমম।
সোহেলিঃ আমাদের চিনতে পারছো না?
ইরা মাথা নাড়লো মানে না।
রোদেলাঃ …….
ইরাঃ সোম কোথায়?
রোদেলাঃ তুমি তো ওকে বজ্জাত বলতে।
ইরাঃ মনে পড়ছে না আন্টি।
কাজলঃ ও তো হসপিটালে গিয়েছে।
ইরাঃ ওহ আমি উপরে যাচ্ছি।
ইরা উপরে চলে এলো। নাহিদ রাতে বাড়িতে এলো। এসে দেখলো ইরা রুমে নেই।
নাহিদঃ মিষ্টি কোথায় গেলো? এখন তো ও কাউকে চেনেও না। যে তার রুমে যাবে মিষ্টি কোথায় তুমি?
নাহিদ বেলকনিতে গেলো। গিয়ে দেখলো ইরা বসে আছে। নাহিদ সস্তির নিঃশ্বাস ছাড়লো।
নাহিদঃ তুমি এখানে?
ইরাঃ হামমম কেন?
নাহিদঃ ডাকছিলাম তোমাকে আমি।
ইরাঃ ওহ কখন?
নাহিদ কিছু না বলে ইরা’র পাশে বসলো।
ইরা সাব্বির ের দিকে তাকিয়ে আছে।
নাহিদঃ কি দেখছো?
ইরাঃ কিছুনা।
বলে উঠে চলে যেতে গেলে। নাহিদ হাত টেনে নিজের কোলে বসিয়ে দিলো।
ইরাঃ আরে কি করছো?
নাহিদঃ চুপ আমার কথা শোনো। মিষ্টি আই নো তুমি আমাকে চিনতে পারছো না। আর তার জন্য রেসপন্সিবল ও আমি। ১বছর আগে যদি আমি তোমাকে চর না মারতাম। তাহলে এমন কিছুই হতো না। তোমার তো মনে নেই বাট সেদিন। তুমি যদি রিমি কে বিয়ে করতে না বলতে। তাহলে আমি রেগে গিয়ে চর মারতাম না। আর তুমিও সুইসাইড করার ট্রাই করতে না। বাট মিষ্টি একটা কথা জেনে রেখো। ভাল আমি তোমাকেই বাসি। আজীবন বাসবো মরন না হওয়া অবদি। আমি তোমাকেই ভালবাসবো মিষ্টি।
ইরা একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। কেটে গিয়েছে আরো ১মাস ইরা এখানেই আছে। সবার সাথে মিশে গিয়েছে তবে। আগের মতো আর মাতিয়ে রাখেনা সবাই কে। সবাই আগের দুষ্টু ইরা কে মিস করে।
নাহিদ হসপিটালে গিয়েছে। ইরা দৌড়ে নিচে গেলো। গিয়ে দেখলো রোদেলা বসে আছে।
ইরাঃ মামনি।
রোদেলা হা করে তাকিয়ে আছে।
সোহেলিঃ ইরা।
ইরাঃ চাচিমা।
রোদেলা গিয়ে ইরা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
- মনপাখি তোমার সব মনে পড়েছে?
ইরাঃ হামমমম মাম্মি সব মনে পড়ে গিয়েছে। আমি সবাই কে চিনতে পারছি মাম্মি। আমার সবটা মনে পড়ে গিয়েছে। এতদিন ঝাপসা দেখতাম সব। বাট আজকে সব মনে পড়েছে। আমি তোমাদের চিনতে পারিনি সরি।
সবাই আজকে খুশি হঠাৎ ইরা বললো,
- আমার যেতে হবে মামনি।
রোদেলাঃ যেতে হবে মানে?
ইরাঃ অনেক পাগলামি করেছি। এখানে থেকে আর পাগলামি করতে চাইনা।
সোহেলিঃ না তুই কোথাও যাবিনা।
ইরাঃ আজকে যেতেই হবে চাচী।
বলে উপরে গিয়ে শুধু ফোন নিয়ে এলো। সবাই অনেক বারন করলো কিন্তু ইরা। ইরা আজকে নিজের সিদ্ধান্তে অটল। রোদেলা বুঝলো এই ইরা কে আটকাতে পারবে না তাই বললো,
- তাহলে ড্রাইভার কে নিয়ে যাও।
ইরাঃ না মামনি আমি রিক্সা করে চলে যাবো।
রায়হানঃ কি বলছো মামনি?
ইরাঃ হ্যা আসছি।
ইরা একটা রিক্সা নিয়ে চলে এলো। সন্ধ্যায় নাহিদ এলো এসেই ইরা কে খুজতে লাগলো।
রোদেলাঃ মনপাখি নেই।
নাহিদঃ নেই মানে?
রায়হানঃ নেই মানে চলে গিয়েছে। মামনির সবটা মনে পড়ে গিয়েছে। আর তুমি যা করেছো সেটাও মনে পড়ে গিয়েছে। আর তাই আজকে চলে গিয়েছে।
নাহিদঃ পাপা সত্যি বলছো? মিষ্টি’র সব মনে পড়ে গিয়েছে?
রায়হানঃ হ্যা সত্যি বলছি।
ইরা’র সব মনে পড়ায়। নাহিদ খুশি হলেও ইরা চলে গিয়েছে। এটা ভেবেই কষ্ট হচ্ছে খুব। নাহিদ গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। সোজা চৌধুরী প্যালেস গেলো গিয়ে দেখলো। সাব্বির আর সজিব বসে আছে।
সজিবঃ তুমি?
নাহিদঃ মিষ্টি কোথায়?
সাব্বিরঃ সুইট সিক্সটিন রুমে আছে।
নাহিদ উপরে গেলো। ইরা বসে কান্না করছে।
নাহিদঃ মিষ্টি কেন চলে এসেছো?
ইরাঃ আপনি এখানে?
নাহিদঃ কেন চলে এলে?
ইরাঃ ভাল লাগেনি তাই চলে এসেছি।
নাহিদঃ ভাল লাগেনি কেন?
ইরাঃ আপনি চলে যান প্লিজ।
নাহিদঃ মিষ্টি আই এম সরি। আমার সেদিন থাপ্পর।
ইরাঃ প্লিজ মিস্টার খাঁন গো।
নাহিদ থম মেরে রইলো। এটা ওর মিষ্টি? না এই মিষ্টি কে চিনতে পারছে না ও। নাহিদে’র চোখ থেকে পানি পড়ছে।
নাহিদঃ তোমাকে কি আমি এমনি চর মেরেছিলাম? মিষ্টি ছোট থেকে ভালবাসি তোমাকে। কখনো বলিনি কেন বলিনি জানো? কারণ তুমি কোনদিন আমাকে বুঝতে চাওনি। আমি জানতাম আমি যদি বলি তোমাকে ভালবাসি। তুমি সেটা বুঝবেনা আমার ফিলিংস বুঝবেনা। তাই কোনদিন বলিনি রিমি আজেবাজে কথা বললো,আমাকে যাতে করে ও নিজের করে পায়।
আমি তোমাকে ভালবাসি তাই তোমাকে বিয়ে করলাম। বিয়ের ১বছর পরেও তুমি আমার ভালবাসা বোঝোনি। তুমি আমার সাথে আছো এটাই এনাফ ছিলো আমার জন্য। সবসময় নিজেকে নিজে বলেছি একদিন। একদিন তুমি আমার ভালবাসা ঠিকই বুঝবে। লন্ডন থেকে ড্রিগির অফার এলো।
আমি ওদের না করে দিয়েছিলাম। ডিরেক্ট বলে দিয়েছিলাম আমি আমার ওয়াইফ কে রেখে। কোথাও যাবোনা কিন্তু রুমে গিয়ে। তোমাকে সবটা বলার আগেই তুমি শুনলে। আমার লন্ডন থেকে ড্রিগির অফার এসেছে। তুমি খুশিতে লাফাতে শুরু করলে। মিষ্টি সেদিন বুকের বাম পাশটায় খুব লেগেছিলো। চলে গেলাম তোমার খুশির জন্য লন্ডন। ওখানে এক একটা দিন কিভাবে কেটেছে আমি জানি।
তোমার জন্য চলে এলাম ভেবেছিলাম। এবার আমার মিষ্টি আমার ভালবাসা বুঝবে। কিন্তু তুমি সবার সামনে কি বললে? রিমি কে বিয়ে করতে? আরে এরথেকে বলতে বজ্জাত আপনার জীবন চাই। আমি সেটা দিয়ে দিতাম। তুমি আমার কলিজায় আঘাত করেছিলে সেদিন। আর আমি তোমাকে থাপ্পর মেরেছি। তার জন্য তুমি নিজেকে শেষ করতে গেলে? হাউ মিষ্টি?
ইরা চুপচাপ চোখের পানি ফেলছে। এবার চেঁচিয়ে বললো,
- তখন হয়তো এতকিছু বুঝতাম না। কিন্তু তুমি আমার নাম বলাতে। আমার ও খুব কষ্ট হয়েছিলো।
নাহিদঃ সরি ফর এভ্রিথিং।
বলে নাহিদ বেরিয়ে গেলো। ইরা ও আটকায়নি নাহিদ বাড়ি গিয়ে বললো,
- পাপা আমি লন্ডন ব্যাক করছি। এন্ড আর কোনদিনও বাংলাদেশে আসবো না। বাট ইয়েস আমি ওখানকার লোকেদের বলে দেবো। আমি মরে গেলে আমার লাশটা পাঠিয়ে দিতে।
বলে উপরে গিয়ে দরজা আটকে দিলো। রোদেলা বুঝলো কেন একথা বললো নাহিদ। তাই ইরা কে ফোন করে জানালো সবটা।
পরেরদিন সকালে নাহিদ বের হচ্ছে।
রোদেলাঃ কোথায় যাচ্ছো?
নাহিদঃ টিকিট আনতে।
বলে বেরিয়ে গেলো। রোদেলা আবার ইরা কে ফোন দিলো। বিকেলে নাহিদ বাড়ি এসে রুমে গিয়ে থ। রুমের ১২টা বেজে আছে।
নাহিদঃ হোয়াট দ্যা হেল?
ইরাঃ বজ্জাত রুমটা ভাল লাগছে না?
নাহিদঃ মিষ্টি তুমি?
ইরাঃ ভিআইপি ইরা ছাড়া। আর কে থাকবে এখানে?
নাহিদঃ কেন এসেছো এখানে?
ইরাঃ ওই বজ্জাত ভাব দেখিও না। হুহু বউ হই তোমার ওকে? আমি আসবো না তো কি ওই আমের আঠি আসবে? এনিওয়ে আই লাভ ইউ বজ্জাত। আই লাভ ইউ টু বলে লন্ডন যাওয়া ক্যান্সেল করো।
নাহিদ হা করে তাকিয়ে আছে। বেচারা ভাবছে এটা প্রপোজ নাকি আর হুংকার? নাহিদ ভাবতে ভাবতে বেরিয়ে গেলো।
ইরাঃ কি ইরা খাঁন কে ভাব দেখানো দাড়া।
ইরা কলা একটা নিয়ে খেতে খেতে। নিচে নামলো নাহিদ ভাবতে ভাবতেই। শিরি দিয়ে নামছে ইরা কলা খেয়ে খোসা ফেলে রাখলো। আর কি নাহিদ ধপাস করে পড়লো।
ইরাঃ লে।
সবাইঃ ………
নাহিদঃ মিষ্টিইইইই।
রাতে ইরা বসে আছে। নাহিদ এসেই ইরা কে দাড় করিয়ে। শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো।
ইরাঃ ……
নাহিদঃ আই লাভ ইউ মিষ্টি। আমি তোমাকে রেখে কোথাও যাবোনা।
ইরাঃ আই লাভ ইউ টু বজ্জাত। এন্ড তুমিও জেনে রেখো ভাল আমি তোমাকেই বাসি।
নাহিদ মুচকি হেসে ইরা কে কোলে তুলে নিলো। এরপর আর কি? ইরা কে নিজের করে নিলো।
৬মাস পর এই ৬মাসে। নাহিদ আর ইরা অনেক জায়গায় ঘুরেছে। ইরা’র ড্রিম প্লেস প্যারিসেও গিয়েছে। ইরা বসে বসে আচার খাচ্ছে। নাহিদ হসপিটাল থেকে এসে দেখলো ইরা আচার খাচ্ছে।
নাহিদঃ আচার খাও কেন অলওয়েজ?
ইরাঃ কি?
নাহিদঃ …..
ইরাঃ আমি খাচ্ছিনা তোমার ছেলে মেয়েরা খাচ্ছে।
ইরা ২মাসের প্রেগন্যান্ট।
নাহিদঃ ছেলে মেয়ের নাম মামনির কাম।
ইরাঃ …..
নাহিদ হেসে ওয়াসরুমে গেলো। ইরা বকবক করছে আর খাচ্ছে। এভাবে আরো ৭মাস কেটে গিয়েছে। ইরা এখন খিটখিটে হয়ে গিয়েছে। সবসময় রেগে থাকে তবে গুলুমুলু হয়ে গিয়েছে। পেট বেশীই উচু লাগে হওয়ারই কথা। ডক্টর বলেছে টুইন বেবী হবে। বাড়ির সবাই আগে থেকেই খেয়াল রাখতো। এখন আরো বেশী করে খেয়াল রাখে। একটা না একটা খাওয়াতেই থাকে। আর নাহিদ তো হসপিটালেই যায় না। সবসময় ইরা’র সাথে সাথে থাকে। ইরা’র সব আবদার পূ্রন করে। ইরা ও এটা আনলে ওটা খাবো। ওটা আনলে এটা খাবো। নাহিদ সবকিছু এনে দেয়। খাওয়ার পরই বমি করে দেয়। নাহিদ চুপচাপ সব পরিষ্কার করে। কখনো এতটুকু বিরক্তি দেখা যায় না ওর চেহারায়।
দেখতে দেখতে ডেলিভারীর সময় হয়ে এলো। ইরা কে হসপিটালে নিয়ে গেলো। তবে বেবী একটা বা দুটো না। পুরো তিনটে বেবী হলো। দুটো ছেলে একটা মেয়ে। ইরা আর বেবী সবাই ঠিক আছে। সবাই যেমন অবাক তিনটে বেবী দেখে। ঠিক তেমন খুশিও হলো ওদের বাড়ি নিয়ে এলো। মেয়ের নাম রাখলো “সতৃশা খাঁন আরশি”। ছেলে একটার নাম রাখলো “আরিয়ান খাঁন শান্ত। আরেকটার নাম রাখতে গিয়েই ঝামেলা হলো।
ইরাঃ এই নামই রাখবো।
নাহিদঃ মিষ্টি এটা মেয়েদের নাম। আর আরেকটা তো নামই না।
ইরাঃ দুজনের নাম তুমি রেখেছো। আমি কি কিছু বলেছি?
নাহিদঃ তাই বলে সতি খাঁন টাইগার?
ইরাঃ হামমম নাহিদে’র স আর ইরা’র তি সতি। কিতনি সুন্দার গুলুমুলু আর। আমার ছেলে টাইগার লোকে এমনিই ভয় পাবে।
নাহিদঃ মিষ্টি প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড।
ইরাঃ হু হু এই নামই রাখবো।
ইরা নিজের জেদ বজায় রাখলো। আরেকটা ছেলের নাম সতি খাঁন টাইগার রাখলো। সবাই খুব হ্যাপি ভাবেই থাকতে লাগলো। তবে ইরা’র দুষ্টুমি আর নাহিদে’র শাস্তি চলতেই থাকলো।
সমাপ্ত
পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসার গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
জামাই ৪২০
লেখিকাঃ তিশা ইসলাম নাবিলা
আরো পড়ুন – মিষ্টি প্রেমের কাহিনী