রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ৯

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৯ | Love Story

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৯: গত পর্বে মাহি আর নাবিলের হটাৎ বিয়ে হয়, নাবিল কিছুটা খুশি হলেও মাহির মন খারাপ। কিন্তু কেন এবং মাহি এখন নাবিলের সাথে কিরূপ আচরণ করতে পারে? চলুন দেখি কি হয়?

মাহির অভিমান ভাঙ্গানো

আজ সীমার বিয়ে, চারদিকে অনেক মানুষের আগমন। অতিথি আপ্যায়ন এ সবাই ব্যস্ত। নাবীল ও শফিকও খুব ব্যস্ত। কিছুক্ষণ পর বর ও আসবে। তাই এই সময় সবাই যে যার কাজ নিয়ে মগ্ন, এদিক দিয়ে সীমা অনেক চেস্টা করেও মাহিকে রেডি করতে পারলো না। সে ঘরের বাহিরে কিছুতেই যাবে না। ঘর ভর্তি মানুষ বলে ছাদে গিয়ে দাড়িয়ে আছে সে কখন থেকে। আর বাড়ীর চারপাশের লাইটগুলোর দিকে তাকিয়ে আছে।

কতো আনন্দ করবে বোনের বিয়েতে, কতো কিছু করবে, সীমার হবু হাসবেন্ড কে কিভাবে ঝালাবে সবই ভাবা ছিলো, কিন্তু এখন সব শেষ! একটা ঝড় এসে মনে হয় মাহির সব স্বপ্নকে লন্ড ভন্ড করে দিয়েছে। মাহি কিছুতেই লোকজনের সামনে যেতে চায় না, মনে হয় সবাই ওর দিকে আর চোখে দেখছে, আর হাসছে। এসব মনে মনে ভেবেই চলছে।

সীমা বার বার শফিককে ফোন দিচ্ছে। কিন্তু শফিক মানুষের ভীড়ে ফোনের শব্দ শুনতে পেলো না। তাই বাধ্য হয়ে নাবীলকে ফোন দেয়।

হে মা আমরা কালই রওনা দেবো। তুমি চিন্তা করো না। এসে তোমাকে ফোন দেবো। ওকে মা এখন রাখি। পরে কথা বললো। আল্লাহ হাফেজ, বলে ফোনটা কাটার সাথে সাথেই সীমার ফোনটা এলো।

নাবীলঃ হ্যালো সীমা বলো।

সীমাঃ হ্যালো ভাইয়া আপনে কি ব্যস্ত।

নাবীলঃ না, বলো কিছু লাগবে।

সীমাঃ আসলে ভাইয়া মাহিকে কিছুতেই রেডি করাতে পারছি না। ও নাকি বেরই হবে না, মন খারাপ করে ছাদে বসে আছে। শফিক ভাইকে ফোন দিলাম সে মনে হয় ব্যস্ত তাই ফোন ধরছে না। আপনে একটু দেখুন না ওকে রাজি করাতে পারেন কিনা। প্লিস ভাইয়া।

নাবীলঃ তুমি চিন্তা করো না, আমি দেখছি।

নাবিলের প্রতি মাহির ভালবাসা

এরপর নাবীল ছাদে গিয়ে দেখে মাহি ছাদের এক পাশে দাড়িয়ে আছে। এখনো বিয়ের শাড়িটা পড়ে আছে। দেখতে অপরূপ লাগছে মাহিকে। কিন্তু চোখ মুখ ফুলে আছে, হয়তো কাদার কারণে।

নাবীলঃ মাহি কি করছোস এখানে? এখনো রেডি হোসনি কেন? (নাবীল মাহির পাশে গিয়ে কথাটা বললো)

মাহি এখনো চুপ।

নাবীলঃ কি রে কথা বলবি না। আমি কি খুব বেশি অপরাধ করে ফেলেছি। আমাকে কি ক্ষমা করা যায় না। দেখ আমি জেনে এটা করেনি। অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি তোকে। আই এম সরি, মাহি। রাগ করিস না আমার উপর। দেখ, এ কথা বলে নাবীল মাহিকে নিজের দিকে ঘুরালে। মাহি নাবীল কে হঠাৎ জড়িয়ে ধরে। আর নাবীলের বুকে মাথা রেখে চিৎকার করে কাঁদতে থাকে।

নাবীলও হতোভম্ভ হয়ে যায়। এই প্রথম মাহি নিজ ইচ্ছায় নাবীলকে জড়িয়ে ধরেছে। নাবীলের বুঝতে বাকি নেই, মাহি খুব ভেঙ্গে পড়েছে, আজকের এই ঘটনার কারণে। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব মাহিকে এই কষ্ট থেকে মুক্তি দিতে হবে।

মাহিঃ আমি নিচে যাবো না, ওই লোক গুলো আমাকে নিয়ে আাবার খারাপ খারাপ কথা বলবে। আমাকে নোংরা চোখে দেখবে। আমি আর নিতে পারবো না। আমার কি দোষ ছিলো। আমি কিছু করিনি। তাহলে কেনো ওরা আমাকে খারাপ বলছে। আমি সত্যি বলছি আমি কিভাবে ওখানে গেলাম আমার কিছুই মনে নেই। ওরা আমার সাথে খারাপ কিছু করেছে কিনা তাও জানি না। এ কথা গুলো বলছে আর নাবীলের বুকে মাথা রেখে কান্নায় ভেঙ্গে পরছে।

নাবীল বার বার মাহিকে সামলানোর চেষ্টা করছে। কিন্তু মাহির মনের কস্টটা একটু বেশিই ছিলো। চিৎকার করে কাঁদতে চাইছিলো কিন্তু সারা দিন ঘরভর্তি মানুষ থাকায় মাহি তার মনের কষ্টগুলো প্রকাশ করতে পারে নি। তাই এখন নাবীলকে দেখে আর নিজেকে ধরে রাখতে পারেনি, চোখের পানির বাধ জেনো ভেঙ্গে গেছে।

স্বামী স্ত্রীর প্রথম ভালবাসা

নাবীলও মাহিকে শক্ত করে জড়িয়ে আছে। নাবীলের চোখ দিয়ে দুফোটা নোনাজল মাহির কপালে এসে পড়ে। মাহি বুঝতে পারে নাবীলও কাঁদছে। তাই নিজেকে সামলিয়ে নাবীলকে ছেড়ে দেয়। কিন্তু নাবীল মাহিকে ছাড়ে না। ওকে বুকের মধ্যে শক্তকরে এখনো জড়িয়ে আছে। নাবীল ছাড়ছে না বলে, আমি ঠিক আছি এখন। প্লিস, ছাড়ুন আমাকে।
এরপর মাহির কথায় নাবীলের ধ্যান ভাঙ্গে।

কিছুক্ষণের জন্য সীমা আর মামা-মামীর জন্য নিজের কষ্টটাকে একটু ভুলে যা। কথা দিলাম, যাদের কারণে তোকে কষ্ট পেতে হলো, তারা সবাই কঠোর শাস্তি পাবে। শুধু কিছুক্ষণের জন্য হলেও রেডি হয়ে নিচে আস। কেউ তোকে কিছু বলবে না, আর যদি বলেও তাহলে তাদের সব প্রশ্নের উত্তরও আমি দেবো। আমি থাকতে তোর গায়ে কেউ একটা আঙ্গুলও তুলতে পারবে না। আমার উপর বিশ্বাস আছে।

মাহি মাথা নাড়িয়ে হ্যাঁ জবাব দিলো।

যা সীমা বসে আছে তোর জন্য, তোকে ছাড়া ও বের হবে না। আমি ও আসছি একটু পর।

তারপর মাহি নিচে নেমে সীমার রুমে চলে গেলো।

আর নাবীল একটা সিগারেট ধরিয়ে ধোয়ায় নিজের কষ্টটা উড়িয়ে দিচ্ছে আজকের রাতের জন্য। কারণ মাহির চোখের পানি নাবীলকে কুড়িয়ে খাচ্ছে। তাদের সবাইকে নাবীল শাস্তি দিবে কিন্তু আজ না কাল। যাদের কারণে মাহির আজ এ অবস্থা, কাউকে মাপ করবে না।

সিগারেট শেষ করে নাবীল নিচে গেলো মাহির জন্য। মাহি আজ ল্যাহেঙ্গা পড়েছে, হালকা সাজেও খুব সুন্দর লাগছে। মাহির দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে মাহির হাতটা ধরে বাহিরে নিয়ে গেলো। এতক্ষণে বরপক্ষও এসে পরেছে। মাহি ও নাবীলকে এক সাথে দেখে সবাই তাকিয়ে আছে। কারণ তাদের এক সাথে অনেক সুন্দর লাগছে। মাহির পাশে নাবীলকে দেখে কেউ কোন কথাই বলেনি। আর সারা অনুষ্ঠানে নাবীল মাহিকে এক সেকেন্ড এর জন্যও ছাড়েনি। সারাক্ষণ ওর সাথেই ছিলো।

নাবিলের প্রতিশোধ

এক সময় সীমার বিদায়ের সময় এসে পরলো। সবাইকে ধরে সীমা কানছে। মাহির জন্য সীমার সবথেকে বেশি কস্ট পাচ্ছে। কারণ ওর বিয়েতে না আসলে হয়তো এমন কোন কিছুই হতো না।

সীমাকে বিদায় দিয়ে সবাই ঘরে এসে বসলো। মাহির মামা-মামী এখনো কাঁদছে, মাহি সবাইকে সান্তনা দিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিলো।

মাহি, নাবীল ও শফিক ড্রয়িংরুম এ বসে আছে। মাহি সব গুছিয়ে রাখিস আজিই, কাল সকাল হলেই আমরা ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দেবো। এই গ্রামে আর একদিনও থাকতে চাই না। শফিক মাহিকে বলছে। এখন গিয়ে ঘুমা,কাল আবার অনেক জার্নি করতে হবে।

ভাইয়ের কথা শুনে মাহিও রুমে চলে গেলো। নাবীল বসে বসে কি জেনো ভাবছে। শফিকের কথায় ধ্যান ভাঙ্গলো।

শফিকঃ কি রে ঘুমাবি না, চল। কাল আবার সকাল সকাল উঠতে হবে।

নাবীলঃ হুমমমমম। চল।

আজ সকাল…

শফিক ঘুম থেকে উঠে দেখে নাবীল নাই। তাই ফ্রেস হয়ে বাড়ীর উঠানে বসে নাবীলের জন্য অপেক্ষা করছে। ফোনটাও সাথে নেয়নি।
হঠাৎ বাড়ীর মেইন গেট এ নজর পরলে নাবীলকে দেখতে পায়। নাবীল বাড়ীর দিকেই আসছে দেখে, শফিক নাবীলের সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।

শফিকঃ আমাকে নিলি না কেন?

নাবীলঃ কষ্ট যেহেতু আমাকে দিয়েছে, তাই শাস্তি আমি নিজেই দিয়েছি।

বউয়ের সাথে মিষ্টি ঝগড়া

শফিকঃ তোকে একা দেয়নি আমার বোনকেও ওরা অনেক কষ্ট দিছে, অপমান করছে। তাই আমারো অধিকার আছে ওদের শায়েস্তা করানোর।

নাবীলঃ তুই ভুলে গেছিস শফিক তোর বোন এখন আমার বউ। আর আমার বউয়ের অপমানের বদলা আমি নিজেই নিতে পারি। আর কাউকে দরকার পরেনি বলে। তাই তোকে নেই নাই।

মাহি ব্রাশ করতে করতে বাড়ির বাহিরে এসে দেখে শফিক ও নাবীল কথা বলছে। কি বলছে শুনার জন্য একটু কাছে আসলে হঠাৎ নাবীলের শার্টের দিকে চোখ পরে মাহির। রক্ত..! এতো রক্ত কেনো শার্ট এ।

শফিক ও নাবীল দুজনেই বিচলিত হয়ে পড়ে মাহিকে দেখে।

শফিকঃ মুরগীর রক্ত এগুলো। মামা মুরগী কাটতে দিছিলো, নাবীল মুরগী ধরতেই পারেনা জানস, ছেড়ে দিছে কাটতে গিয়ে। তাই মুরগীর রক্ত ওর শার্টে এসে পরেছে। মাহি ভ্রুটা কুচকিয়ে নাবীলের দিকে তাকিয়ে আছে। ওর বিশ্বাস হচ্ছে না শফিক এর কথা।

নাবীল মাহির সামনে গিয়ে বললো, ব্রাশটা ঠিক মতো কর। তা নাহলে মুখের গন্ধে বাসের সবাই পালাবে। কথাটা বলেই নাবীল রুমে চলে যায় ফ্রেস হতে।

মাহিঃ ভাইয়ায়য়য়য়া দেখছোস কি বলে।

শফিকঃ দেখ, আমাকে তোদের ঝগড়ার মাঝে ডাকবি না।

বউয়ের প্রতি প্রেম

নাবীল ফ্রেস হয়ে, রক্ত মাখা শার্টটা ব্যাগে ভরে নেয় আর নতুন একটা শার্ট পরে নেয়। পেছনে ঘুরে দেখে মাহি দাড়িয়ে আছে, চোখে ওর অনেক প্রশ্ন।

নাবীলঃ কি..রে। কিছু বলবি।

মাহিঃ এগুলো মুরগীর রক্ত না। মামাকে আমি জিজ্ঞেস করেছি। সত্যি করে বলুন, এগুলো কার রক্ত।

নাবীল প্যান্টের পকেটে হাত রেখে মাহির দিকে এগোতে থাকে। মাহিও ভয়ে পেছনে ফিরতে ফিরতে দেয়ালে গিয়ে আটকে যায়।

নাবীল দেয়ালের দু’দিকে হাত রেখে মাহিকে আটকে দেয়, যাতে মাহি পালাতে না পারে।

নাবীলঃ কি জানতে চাস, রক্তগুলো কার। বলেছিলাম না, তোকে কেউ টাচ করলে তার হাত দুটা ভেঙে দিবো। আর ওই কুকুরগুলোর কতো বড় সাহস তোর দিকে নযর দিছে। তোকে বেহুঁশ করে ওখানে নিয়ে গেছে। তাই হাত ও পা দুটাই ভেঙ্গে দিছি। আর হ্যাঁ ওরা তোর সাথে উলটা পালটা কিছুই করেনি। তাই তাদের জানে মারেনি। কিন্তু তোকে কষ্ট দেয়ার শাস্তি তো ওদের পেতে হবে, তাই না।

মাহিঃ তাই বলো আপনে এভাবে শাস্তি দিবেন।

নাবীলঃ হ্যা, তোর দিকে কেউ নজর দিলে তাকে এভাবেই শাস্তি পেতে হবে। তাই তুই ও এখন উল্টা পাল্টা চিন্তা করা বন্ধ করে দে। স্বপ্নেও অন্য কারো স্বপ্ন দেখিস না, তাহলে তোকেও জ্বালিয়ে দেবো, আমার ভালোবাসার আগুনে। মনে রাখিস, তুই এখন শুধুই আমার।

মাহির মুখে ভয়ের ছাপ দেখে নাবীল মাহির কপালে একটা ভালবাসার পরশ দিয়ে দিলো।

যা তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে নে। কিছুক্ষণ পর আমরা রওনা দেবো। মাহিও এক দৌড়ে ওর রুমে চলে গেলো। চলবে…

পরের পর্ব- রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১০

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *