রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৪: গত পর্বে আমরা দেখেছি নাবীল পড়ানোর সময় মাহির অবস্থা। এক ধরনের অসহায় অবস্থায় আছে মাহি এখন। বিরক্তি আর রাগ নিয়ে নাবিলের কাছে পড়তে বসা এই মেয়েটা আজ কি করে তা দেখার পালা।
নাবিলের দূর্বলতা মাহির প্রতি
এভাবে অনেকদিন চলে গেলো। মাহির সিলেবাসও অনেকটা কমপ্লিট হয়ে গিয়েছে। নাবীল এর ভয়ে মাহি পড়াচুরি করতে পারেনি।
নাবীল পড়ানোর সময় তেমন কোন কথা বলে না মাহির সাথে, নাবীলের মনে মাহির জন্য সব কিছু আছে তা ভালোবাসা কিনা তা বুজতে পারছে না। তবে মাহির প্রতি ও দূর্বল তা নাবীল এ কয়েকদিনে মাহিকে পড়াতে গিয়ে বুজতে পেড়েছে। কিন্তু নাবীল মাহির সামনে এমন কোন কিছু প্রকাশ করতে চায় না। কারণ শফিক আর নাবীলের বন্ধুত্বের ফাটল ধরুক এমন কিছু নাবীল চায় না। অনেক বিশ্বাস করে নাবীলকে এই দায়িত্ব দিয়েছে, আর তাই নাবীল নিজের ভালো লাগাটা প্রকাশ করে না কখনো।
নাবীল রাগী হলেও খুব গম্ভীর প্রকৃতির মানুষ। ও কি চিন্তা করে তা কখনো কেউ বলতে পারেনা। আর নিজের আবেগকে কখনো প্রকাশ করেনা। নাবীল এর চরিত্র ঠিক নারিকেলের মতো, উপর দিয়ে খুব শক্ত, কিন্তু ভেতরে নরম।
এভাবে বেশ কিছু দিন চলে গেলো। রাতে মাহির মা ড্রয়িংরুম এ বসে সবাইকে উদ্দেশ্য করে মাহির বাবাকে বলল ‘জানো আজ কে ফোন দিয়েছে।’ মাহির বাবা একটু নেড়ে চেড়ে বললো কে? রফিক ভাই, সিমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গিয়েছে। দাওয়াত দেবার জন্য ফোন দিয়েছে। কাল সকালে তোমাকেও ফোন দিবে। বেশিদিন বাকি নাই। এই শুক্রবারেই নাকি বিয়ে।
মাহির আবদার
মামাতো বোনের বিয়ের কথা শুনে মাহিতো মহা খুশি। অনেকদিন পর একটু আনন্দ করতে পারবে। এতো তাড়াহুড়া কেনো বিয়ের জন্য। আর এমন সময় বললো, আমিতো কিছুতেই ছুটি নিতে পারবো না অফিস থেকে। তোমাকে তো আগেই বললাম, এই মাসে অফিসের কাজ অনেক বেশি। কি করা যায় বলতো? (মাহির বাবা) আমি ভাইজানকে বলেছি সব। আমি বলে দিয়েছি আমরা আসতে পারবো না। কিন্তু শফিক আর মাহিকে পাঠিয়ে দেবো। মা আমার তো তোমাদের গ্রামে যেতে মন চায় না। এই আধুনিক যুগেও ওখানকার মানুষ বিভিন্ন কুসংস্কার নিয়ে আছে।
বাবাঃ দেখ বাবা, যেতেতো হবেই। আমরা ছাড়া তোর মামার কে আছে। গ্রামের মানুষকে কুসংস্কার থেকে মুক্ত করার জন্য তোর মামা এতো লিখাপড়া করার পরও গ্রামে থেকে গেছে। ওখান কার বাচ্চাদের জন্য একটা স্কুলও খুলেছে। এর জন্য ভাইজানকে অনেক কিছু সহ্য করতে হইছে। এখনো অনেকে আছে, যারা চায় তোর মামা যেনো গ্রাম ছেড়ে চলে যায়। কিন্তু গ্রামের মানুষ যারা তোর মামাকে শ্রদ্ধা ও ভালোবাসে তাদের জন্য পারেনা।
শফিকঃ ঠিক আছে বাবা। কবে যেতে হবে।
মাহি ওর মাকে বললো, আমাকে আগে মার্কেটিং করে দিতে হবে। তারপর যাওয়া।
মাঃ দেখছোস শফিক। তোর বোনের এখন আবার সোপিং করতে হবে। আচ্ছা ঠিক আছে সকাল সকাল সোপিং এর ঝামেলা সারিয়ে ফেলবো। তোরা বিকেলে রওনা দিস।
বাবাঃ ওকে। সব গুছিয়ে নে। সময় কম। আর রাতও অনেক হইছে মাহি গিয়ে ঘুমা, কাল অনেক জার্নি কারতে হবে।
শফিক রুমে গিয়ে ভাবলো নাবীল কে সাথে নিলে কেমন হয়? একা একা আর বোরও হবো না। নাবীল কে কল দিলো, অনেক বলার পর নাবীল রাজি হলো যেতে ওদের সাথে। ওকে কাল দেখা হবে বিকেলে।
নাবিলের হটাৎ আগমন
সকাল সকাল সোপিং শেষ করে, খাওয়া দাওয়া করে মাহি রেডি হয়ে গেলো। বাহিরে বের হতে দেখলো নাবীল হুন্ডা থেকে নামছে।
মাহিঃ আরে নাবীল ভাই, ভাইয়ার সাথে দেখা করতে আসছেন। কিন্তু আমরা তো এখন বের হব। ভাইয়া আপনাকে কিছু বলনি।
নাবীলঃ যা তকে ধরে রাখছে কে?
নাবীল মাহিদের বাড়ির ভেতর হুন্ডাটা রাখলো।
শফিকঃ আরে নাবীল আসছোস। দাঁড়া আমি ব্যাগ নিয়ে আসছি। তুই সব কিছু আনছোস তো।
নাবীলঃ আরে হো সব কিছু নিছি। তুই তাড়াতাড়ি কর। লেট হলে বাস পাবো না।
মাহি হা করে আছে। এটা কি হলো নাবীল ভাইও আমাদের সাথে যাবে। কেউ আমাকে কিছু বললো না কেন? এই লোকটা আমার জীবন তেজপাতা বানিয়ে দিচ্ছে।
নাবীলঃ কি রে হা করে আছস কেনো, মুখটা বন্ধ কর?
মাহিঃ আপনেও আমাদের সাথে আসছেন।
নাবীলঃ হুমমমম।
মাহিঃ আপনার কি অন্য কোন কাজ কর্ম নাই।
নাবীলঃ আছে তো! তোকে পাহাড়া দেয়া।
মাহিঃ মা.. মা…নে।
নাবীলঃ তুই যাতে অন্য কারো নযরে না পরিস, সবার বদ নযর থেকে বাঁচিয়ে রাখা। এটা কি এতো সহজ বল। এটাই এখন আমার প্রধান কাজ। নাবীল মাহির একদম সামনে এসে কথাটা বললো।
মাহির প্রতি নাবিলের যত্ন
নাবীল এতো কাছাকাছি আসায় মাহি একটু ঘাবরে গেলো। ও ২ পা পেছনো নিয়ে বললো-
মাহিঃ মানে কি? আমাকে কেনো পাহাড়া দেবেন। আমি কি ছোট বাচ্চা?
নাবীলঃ বাচ্চা না, তাইতো আগলে রাখতে হয়। বাচ্চা হলেতো কোলে করে নিয়ে যেতাম। ভালো হতো তখন..ঠিক না। (নাবীল একটু বাকা হাসি দিয়ে কথাটা বললো)
নাবীলের মুখে এমন কথা শুনে মাহি তো শকড। এমন ভাবে নাবীল কখনো মাহির সাথে কথা বলেনি, তাই মাহি কিছুটা চিন্তায়মগ্ন।
কিছুক্ষণ পর মাহি, নাবীল ও শফিক রওনা দিলো ওদের গন্তব্যে। ওদের মামা বাস স্ট্যান্ড এ ওদের নেবার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলো। ওদের যেতে অনেক রাত হলো। মাহির মামা ওদেরকে নিয়ে বাসায় ঢুকলো। সিমা দৌড় দিয়ে এসে মাহি কে জরিয়ে ধরলো।
মাহিঃ ছাড়, এতো জোরে জরিয়ে ধরলে তোর বিয়ের আগেই মারা যাবো।
সিমাঃ যা শয়তান, তুই তো আমায় ভুলে গেছস! তাইতো একবার দেখতেও আসিস না। (সিমা কিছুটা রাগ নিয়ে কথাটা বললো)
মাহিঃ ওওওও..! নতুন বউ দেখি রাগ করছে। এতো রাগ জামাইরে গিয়া দেখাইও আমারে না।
শফিকঃ আমরাও আছি সিমা। আমাদের মনে হয় তুই দেখছ নাই। নাকি আমরা চলে যাবো।
সিমাঃ ভাইয়া, কি বলো! একেতো কতো বছর পর
আসছো, তার উপর এখন ঢং করছো আমার সাথে।
মামিঃ হইছে কাল কথা বলিস, এখন ওদের ঘরে আসতে দে। কতো দূর থেকে আসছে? খেয়ে দেয়ে বিশ্রাম নিক। কাল আবার অনেক কাজ আছে বিয়ে বাড়ি বলে কথা।
মাহির মামা-মামী ও সিমা নাবীলকে ভালো করে চেনে। ঢাকায় মাহিদের বাসায় নাবীলের সাথে দেখা হয়েছিলো অনেকবার। তাদের ভালো সম্পর্ক তৈরি হয়ে গিয়েছে। তাই নাবীল কে দেখে তারা খুব খুশি হয়েছে।
এরপর সবাই খাওয়া দাওয়া শেষ করে, ঘুমাতে চলে গেলো। চলবে…
আরো পড়ুন: রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ৫
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প