রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর শেষ পর্ব: কত আনন্দ কত বেদনা আর হাসি কান্না নিয়ে মাহি ও নাবিলের প্রেম ভালোবাসা এবং বিয়ে। সংসার জীবনে নাটকীয়তা আর অভিমান এর পালা তাদের সম্পর্ক যেন নতুন মাত্রায় নিয়ে যাচ্ছে। বলতে না পারা ভালোবাসা যেন নতুন রং খুঁজে পাচ্ছে। ভুল বোঝাবোঝি যেন নিজেকে শুদ্ধ করে পবিত্র ভালোবাসার রং এনে দিচ্ছে।
সংসারে অশান্তির মেঘ
মাহি কাঁদতে কাঁদতে ঝর্নার নিচে বসে পড়লো। না জেনে নাবীলকে কষ্ট দিয়ে ফেললো। এভাবে অনেকক্ষণ ভিজলো সে। তার চোখের পানি ঝর্ণার পানির সাথে মিশে যাচ্ছে। এভাবে অনেকক্ষণ থাকার পর বাহিরে বের হয়ে দেখলো নাবীল এখনো আসে নি। তাই মাহিও চুপচাপ বিছানায় গিয়ে শুয়ে পড়লো। খুব ক্লান্তে ঘুমিয়ে গেছে।
এদিকে নাবীল ছাদে এক কর্নারে দাঁড়িয়ে সিগারেট এর ধোয়া ছাড়ছে আর গভীর চিন্তায় আছে। কি হবে এখন? কেনো জানি মনে হচ্ছে সামনে অনেক বড় বিপদ আসছে, আর এই বিপদ থেকে মুক্ত হবার কোন উপায় জেনো নাবীলের জানা নেই। নিলয় ও রনি দুজনকেই চিনি। আর এ দুজনেই মাহির জন্য বিপদ ডেকে আনবে। এদের চোখ থেকে এতো বছর আড়ালে রাখলাম কিন্তু এখন কেনো পারছি না। কেনো জানি মনে হচ্ছে, খুব শীঘ্রই আমি কিছু হারাবো।
এমন সময় নাবীলের ফোন বেজে উঠলো। নাবীল একটু চিন্তিত হলো, এতো রাতে আননোন নাম্বার থেকে কে কল করছে? জরুলী হতে পারে ভেবে ফোনটা ধরে,
নাবীলঃ হ্যালো……।
নিলয়ঃ হ্যালো নাবীল। কি হলো ঘুম আসছে না!
নাবীলঃ উমমম। আমি ভাবছিলাম, এখনো ফোন কেনো আসলো না।
নিলয়ঃ হা হা হা, আসলেই আমরা দুজন শত্রু হলেও দুজন দুজনকে খুব ভালো করে চিনি।
নাবীলঃ উমমমম, আমি এটাও জানি কেনো এতো রাতে আমাকে ফোন করেছিস। তাই আমি আগেই বলেদি ভালো করে শুন, যার দিকে নযর দিচ্ছিস সে আমার ভালোবাসা, আমার জীবন, আমার রাতের পূর্ণিমা চাঁদ। যা শুধু আমাকে আলোকিত করার জন্য জন্মেছে। আমার চাঁদকে আমি অন্য কাউকে আলোকিত করতে দিবো না। আর এটা কলেজ না, যা নিয়ে তোর আর আমার মধ্যে দন্দ হবে বা প্রতিযোগিতা হবে। ও আমার গার্ল ফ্রেন্ড না আমার বিবাহিত স্ত্রী। তাই আমি আশা করবো তুই ওর থেকে দূরে থাকবি।
নিলয়ঃ রিলেক্স… এতো চিন্তা করে কি হবে এখন। আমি আপাতত দূরেই থাকবো কিন্তু মনে রাখিস, মাহির ওই চোখের চাওনী আমাকে ঘায়েল করছে। তাই ওকে ভুলা এতো সহজ না। আর আমি ভুলতেও চাই না।
আসলে রনি ঠিকই বলেছিলো, মাহি মানেই নেশা। তাইতো এতো পাগল হয়ে গিয়েছে ওওও।
নাবীলঃ নিলয়, জাস্ট সেট আপ।
নিলয়ঃ আমাকে চুপ করিয়ে লাভ নেই। আমি ততোক্ষণ মাহিকে আপন করে পাওয়ার চেষ্টা করবো না, যতোদিন তুই ওকে আঘলে রাখবি। কিন্তু মাহির প্রতি তোর কোন অবহেলা হলেই, আমি মাহিকে নিজের কাছে নিয়ে আসবো। আর এতে তুই কেনো মাহিও আটকাতে পারবে না। আর আমি কেমন আর কি করতে পারি, এটা খুব ভালো করেই জানোস।
নাবীলঃ নিরব।
নিলয়ঃ আর একটা কথা, রনি খুব রেগে আছে। যে কোন সময় কিছু একটা করবে, সো বি রেডি।
নাবীলঃ তোকে এতো চিন্তা করতে হবে না।
নিলয়ঃ আরে ভাই আমি তোর চিন্তা করিনা, আমার তো মাহির জন্য চিন্তা হচ্ছে। আর মাহি যেহেতু এখন তোর দায়িত্বে, তাই ওকে সব দিক থেকো রক্ষা করাও তোর কাজ, আমার না।
নাবীল আর কিছু না বলে ফোনটা কেটে দিলো।
আপাতোত নিলয়কে নিয়ে টেনশন করতে চাই না। সমস্যা হচ্ছে রনিকে নিয়ে। এই রনির একটা ব্যবস্থা করতে হবে।
ভালোবাসা হারানোর ভয়
নাবীল আর কিছু না ভেবে, রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে দেখি মাহি শুয়ে আছে, হয়তো ঘুমিয়ে গেছে। তাই নিজেও গিয়ে শুইয়ে পড়লাম। গভীর রাতে কারো আর্তনাদে ঘুম ভাঙ্গলো। হঠাৎ লাফ দিয়ে উঠে দেখি মাহি কাঁপছে। আমি তাড়াতাড়ি ওর মাথায় হাত দিয়ে দেখি, এতো ভীষণ জ্বর শরীলে। একি ওর চুল ভিজা, তার মানে ও এতো রাতে শাওয়ার নিয়েছে।
মনে হয় অনেকক্ষণ ছিলো, তাইতো এতো জ্বর আসছে। আমি ওর চুলগুলো ভালো করে মুছে দিলাম। ওকে তুলে জোর করে ওষুধ খাইয়ে দিয়ে কপালে পট্টি দিতে লাগলাম। আর ওর গালটাতে আমার আঙ্গুলের দাগ গুলো কালছে হয়ে পরেছে, আমি দাগগুলোতে মলম লাগিয়ে দিলাম। কিন্তু জ্বর এখনো কমছে না। তাই আর কিছু না ভেবে নিজের শার্টটা খুলে মাহিকে বুকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পড়লাম, শরীলের তাপ দেয়ার জন্য। ভোর রাতে মাহির জ্বর চলে গিয়ে শরীল থেকে ঘাম বের হয়।
সকালে উঠে দেখি নাবীল আমাকে আষ্টেপৃষ্ঠে ধরে ঘুমিয়ে আছে। উনার ঘুমান্ত ফেসটা একদম বাচ্চাদের মতো দেখতে। কে বলবে এই মানুষটা এতোটা রাগি। আমাকে বকে, আবার সারারাত বসে আমার সেবাও করছে। মাঝে মধ্যে মনে হয় আমি উনাকে এখনো পুরাপুরি চিনি নাই। আমি আস্তে করে উঠে ফ্রেস হতে চলে গেলাম। এরপর নিচে গিয়ে সবার জন্য নাস্তা টেবিলে সাজাতে লাগলাম। গালের দাগটা এখনো অনেকটা আছে তাই চুল দিয়ে ডেকে রাখলাম। নিশি এসে টেবিলে বসলো। কিন্তু আমি কোনো কথাই বললাম না ওর সাথে। কারণ দোষটা সম্পূর্ণ ওর ছিলো। ও ভালো করেই জানে নাবীল কেমন তবুও মিথ্যা বলছে। তাই আমি ওকে দেখে রান্নাঘরে চলে গেলাম।
নাবীল ও কিছুক্ষণ পর নিচে আসলো নাস্তা করার জন্য। কাল থাপ্পর খেয়েও এই মেয়ের মধ্যে কোন অনুশোচন নেই। বুঝছি, কালকের ডুসটা কম ছিলো, এখনো কন্ট্রোল না করলে এমন ঘটনা আরো ঘটবে।
নাবীলঃ নিশিএএএএ।
নিশিঃ বলো ভাইয়া, কি বলবে? (মুখটা গোমরা করে)
নাবীলঃ তোর ফোনটা দে তো।
নিশিঃ কেনো?
নাবীলঃ দিতে বলছি দে। (অনেকটা চেঁচিয়ে)
অভিমানী স্বামীর রাগ
নাবীলের চেঁচানো শুনে রান্নাঘর থেকে দৌড়ে টেবিলে এসে যা দেখলাম, আমি তো শোকড। নিশির ফোনটাও আমার ফোনের মতো ইন্তেকাল করছে।
নাবীল নিশির ফোনটা জোরে ফ্লোরে ছুড়ে মারলো, আর ফোনটা ভেঙ্গে চুরমার।
নিশিঃ ভাইয়া এ কি করলে, আমার নতুন ফোন।
নাবীলঃ কাল কয়টা কল করেছিলাম। একটা কলও রিসিভ করার টাইম হয়নি তোর। তোকে ফোন দিলে যদি তুই ফোন ধরার টাইমই না পাস তাহলে ফোন দিয়ে কি হবে। আজ থেকে ২ মাস তুই ফোন ছারাই থাকবি। এটা তোর শাস্তি। এরপর নাবীল রাগে গজগজ করতে অফিসে চলে গেলো। আর আমি ওর যাওয়ার পথে চেয়ে রইলাম।
নিশি ন্যাকা কান্না করতে লাগলো, তখন আমার শ্বাসুড়ী এসে এক ধমক দিলো।
নিশিঃ মা তুমিও আমাকে বকছো। ভাইয়াকে কিছু বলছো না কেনো?
আম্মুঃ কি বলবো, সব নষ্টের মুল তুই। তোর ফোনটা ভাঙ্গছে বলে এতো নাটক করছিস। দেখ, তোর কারণে এই মেয়েটার কি অবস্থা! আমাকে টেনে নিশির সামনে নিয়ে।
তোর কারণে ওকে ও শাস্তি পেতে হইছে। আমি তোকে বার বার বলেছিলাম না, নাবীলকে না বলে মাহিকে কোথায়ও না নিতে। তুই জানিস তোর ভাই কেমন! তবুও তুই মিথ্যা বলে মাহিকে নিয়ে গেলি। এখন আবার এখানে বসে নাটক করছিস।
নিশি আমার গালের দাগটা দেখে, আমাকে জরিয়ে কান্না করে দিলো।
নিশিঃ সরি ভাবী। আমার জন্য তোমাকে শাস্তি পেতে হলো। আমি ভাবছি, ভাইয়া একটু বকবে। কিন্তু এতো কিছু হবে আমি বুঝতে পারিনি। সরি।
ওর কান্না দেখে আমি আর রাগ করে থাকতে পারলাম না। আমি ওকে শান্ত হতে বললাম। ওর কান্না বন্ধ করার জন্য বললাম,
মাহিঃ ননদিনী শুধু তোমার ফেনটা ইন্তোকাল করেনি, আমারটাও কাল শহীদ হইছে।
নিশিঃকি তোমার ফোনও ভাইয়া ভেঙে ফেলছে।
মাহিঃ হুমমমমম…..আমি বাচ্চাদের মতো ঠোটটা উলটিয়ে।
এরপর আমরা দুজনেই হেসে দিলাম।
সারাদিন নাবীল আর কল করেনি। তাই আমিও আর কল দি নাই।
রাতে বাসায় এসে ফ্রেস হয়েই আবার লেপটপ নিয়ে বসে পড়লো। একটাবারও আমার সাথে কথা বলেনি।
আমাদের সুখের সংসার
একটু পর ডিনারের জন্য নিশি এসে ডেকে গেলে, উনি ডিনার করে রুমে এসে বারান্দায় সিগারেট এর ধোয়া উড়াচ্ছে। আর আমি সব কাজ শেষ করে রুমে আজ ইচ্ছা করেই দেরি করে গেলাম। ভাবলাম, ঘুমিয়ে গেছে কিন্তু গিয়ে দেখি উনি এখনো বারান্দায়।
আমি আস্তে করে উনার পেছনে গিয়ে জরিয়ে ধরলাম।
মাহিঃ সরি, আমি আর এমন কখনো করবো না। আপনাকে না বলে কোথাও যাবো না। প্লিস, এবারের মতো আমাকে ক্ষমা করে দিন। প্লিস….। আপনে বললে আমি কানও ধরতে রাজি। তবুও ক্ষমা করেদিন।
এদিকে নাবীল মাহির এমন আচরনে হাসবে না কাঁদবে চিন্তা করছি। একদম পিচ্ছিদের মতো মাপ চাচ্ছে। আমি ওর হাতটা ধরে ওকে সামনে নিয়ে এলাম। দেখি ও এখনো কান্না করছে।
নাবীলঃ কান্না বন্ধ কর, মাহি।
মাহিঃ আপনে এখনো আমার উপর রেগে আছেন। আগে বলুন, আমাকে মাপ করেছেন।
নাবীলঃ আমি রেগে নেই, তুই কান্না বন্ধ কর।
মাহিঃ সত্যি…..
নাবীলঃ হুমমমমম, কিন্তু এরপর এমন যাতে না হয়, মনে থাকবে।
আমি মাথা নেড়ে হা বললাম। উনি আমাকে শক্ত করে বুকে জরিয়ে ধরলেন। এরপর কপালে একটা কিস করে কোলে তুলে নিলেন। বিছানায় রেখে আবারো ভালোবাসার সাগরে ডুব দিলাম আমরা।
এভাবে রাগ অভিমান আর দুষ্টু মিষ্টি প্রেমে কাটতে লাগল আমাদের সংসার জীবন। শত বাঁধা আর ভুল বোঝাবোঝি আমাদের সম্পর্ক এক চুলও নড়াতে পারে নি। বরং আমাদের স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা অনেক বেশি মজবুত হয়েছে। আশা করি আপনাদের ভালোবাসার মানুষের সাথে এরকম সুখের জীবন কাটবে। ভালো থাকবেন সবাই, এক অপরকে বুঝার চেষ্টা করবেন, ভুল ক্ষমা করবেন।
~সমাপ্ত~
আরো পড়ুন- নতুন বিয়ের গল্প – পর্ব ১