রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প ২৩

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ২৩ | Love Story

রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ২৩: কোন ছেলে যে এত খচ্চর আর দুষ্টু হয় তা আমার স্বামীকে না দেখলে বুঝতাম না। তার রোমান্টিকতা আর প্রেমের সাগরে হাবুডুবু খাচ্ছি আমি। আমি চাইনা আমার এই ভালবাসার মাঝে কেউ নাক গলাক। কিন্তু চাইলে তো আর সব হয় না!

ভালোবাসার আকুতি

মাহি নাবীলের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। আর নাবীলও মাহির কপালে একটা কিস করে ওকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। ।

সকালে নাবীল ঘুম থেকে উঠে আজ মাহিকে পায়নি। কারণ মাহি আগে উঠেই নিচে চলে গিয়েছিলো নাবীল ঘুমিয়ে আছে বলে। তানজিলার সাথে রান্নাঘর এ সবার জন্য নাস্তা রেডি করছে।

নাবীল ফ্রেস হয়ে রেডি হতে লাগলো, এমন সময় লাবনি ঘরে ডুকলো। লাবনিকে দেখে নাবীলের মেঝাজ খারাপ হলেও কিছু বললো না।

নাবীলঃ তুমি এখানে, কি চাই? আর তোমাকে না বললাম, এখন আমি এই রুমে একা থাকি না। তাই দরজা নক করে আসবে। তাহলে…

লাবনিঃ হুমমম, আমি জানি তুমি একা নও। কিন্তু কি করবো বলো, এই রুমটাকে নিজের মনে করেছিলাম, সাথে রুমের মানুষটি কেও। কিন্তু তুমি! কেনো এরকম করলে আমার সাথে।

নাবীলঃ দেখো লাবনি, আমি আগেও বলেছি আমি তোমাকে সেই নজরে কখনো দেখিনি। তাই এসব বলে কোন লাভ নেই।

লাবনি নাবীলকে পেছন দিয়ে জরিয়ে ধরে,

লাবনিঃ কেনো কেনো তুমি আমাকে সেই নজরে দেখতে পারো না? কি নেই আমার মাঝে বলো, আমি কি ওই মাহি থেকে কম সুন্দর বরং সব দিক থেকে অনেক এগিয়ে আছি। আর তোমাকে অনেক বেশি ভালোবাসি। কেনো তুমি আমার ভালোবাসা বুঝতে চাও না?

নাবীল লাবনিকে ছাড়িয়ে কষে এক থাপ্পড় দিলো। তাল সামলাতে না পেরে লাবনি ফ্লোরে পরে গেলো।

নাবীলঃ নিজেকে আমার মাহির সাথে তুলনা করছিস। আমার নজরে মাহি সব থেকে সুন্দরী নারী। কারণ জানোস মাহিকে আল্লাহ আমার জন্য সৃষ্টি করেছে, তাইতো মাহি আজ আমার অর্ধাঙ্গিনী। মাহিকে ওর রুপ দেখে আমি ভালোবাসিনি। ও তোর মতো গায়ে পরে কথা বলেনি, বরং দূরত্ব রেখে আমার হ্রদয়কে স্পর্শ করেছে। তাই ওর সাথে কারো তুলনা হয় না, কারো না।

ত্রিভুজ প্রেম

লাবনি এখনো ফ্লোরে বসে চোখের পানি ফেলছে আর নাবীলের দিকে তাকিয়ে আছে। নাবীলের কথা শেষে লাবনি উঠে দাঁড়ালো। ঠিক নাবীলের সামনে এসে,

লাবনিঃ মাহি কি তোমাকে ভালোবাসে? আমার তো মনে হয়না। (একটু বাকা হেসে) আর বাসবেও না, কারণ ও মন থেকে তোমাকে মেনে নেয়নি এখনো। এক প্রকার বাধ্য হয়েই বিয়েটা করছে। আর এখন বাধ্য হয়ে সংসার চালাচ্ছে। কিন্তু কতোদিন তুমি ওকে এভাবে বেধে রাখবে। এক দিন পাখি খাঁচা থেকে উড়ে যাবেই, মনে রেখো।

লাবনি রুম থেকে বের হতে নিলে মাহির সাথে দেখা হয়। মাহি নাবীলকে ডাকতে এসেছিলো নাস্তার জন্য।

মাহিঃ আপি আপনে, কোন কাজ ছিলো?

লাবনিঃ হুমমমম, কিন্তু তোমার সাথে না। যার সাথে ছিলো হয়ে গেছে। (নাবীলের দিকে ইশারা করে)

মাহির লাবনির উপর রাগ উঠলো, কারণ যখন তখন লাবনির এই রুমে আসা ওর একদম পছন্দ না।

তবুও চুপ থাকলো কারণ নাবীলের কাজিনরা এই বাড়ীর মেহমান। তাই কিছু বলতে চায় না।

মাহিঃ নাস্তা করবেন ,চলুন।

নাবীলের এমনেই সকাল সকাল মেজাজ খারাপ, একেতো মাহিকে সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখতে না পারা আর তার উপর লাবনির এই ধরনের আচরণ আরো রাগটা বাড়িয়ে দেয়।

নাবীলঃ কোথায় ছিলি, তুই? ধমক দিয়ে।

মাহিঃ আমি তো রান্না ঘরে ছিলাম, নাস্তা রেডি করছিলাম ভাবীর সাথে।

নাবীলঃ বাড়ীতে অনেক মানুষ আছে কাজ করার জন্য। তোকে কি বলেছিলাম, আমি যেন ঘুম থেকে উঠে তকে দেখতে পাই। বলেছিলাম কি না। আবারও ধমক দিয়ে।

মাহিঃ জিজিজি…..। (মাহি একটু ভয় পেয়ে গেলো নাবীলের এমন আচরণে)

নাবীলঃ আমারি ভুল, তোর কাছে কিছু আশা করা। তুই কখনো বুঝবি না, আমাকে।

কথাগুলো বলেই কোটটা আর ব্যাগটা নিয়ে চলে গেলো। নাস্তা না করেই চলে গেলো আজ।

অভিমানী ভালোবাসার সম্পর্ক

আর মাহি বসে বসে ভাবছে সামান্য একটা ব্যাপারে এমন রাগ করার কি আছে। আমিতো তাকে ডাকতেই এসেছিলাম, কিন্তু উনিই আজ তাড়াতাড়ি উঠে গেছে।
মাহির খুব কান্না পাচ্ছে কিন্তু এখন নিচে যেতে হবে, তা না হলে সবাই প্রশ্ন করা শুরু করে দিবে।

নিচে গিয়ে দেখি সবাই নাস্তা করছে কিন্তু নাবীল নেই তার মানে নাস্তা না করেই চলে গেছে। রাগ করে। কিন্তু লাবনি সবার সাথে দিব্বি নাস্তা করছে আর আমার দিকে আড় চোখে তাকিয়ে হাসছে। ব্যাপারটা আমার মোটেও ভালো লাগেনি। কি যে চলছে এই মেয়েটার মনে আল্লাহই জানে।

দিনটা যেন আজ কাটছে না, সব কিছুতে খুব বিরক্তি লাগছে। আজ সারাদিন নাবীল একটা কলও করেনি।

মাহিঃ কেনো রে ভাই এতো কিসের রাগ তোর? বজ্জাত কোথাকার, আমাকে বকে আবার আমার সাথেই রাগ করোস। মনে তো চায়, মাথার সব গুলো চুল টেনে ছিড়ে ফেলেদি ওর। না না টাক হলে কেমন লাগবে? সকলে তখন আবার আমাকে টাকলুর বউ বলবে। অন্য কিছু ভাবতে হবে। (মনে মনে ভাবছে)

এদিকে নাবীল…..

নাবীলঃ আমি আজ কল দিই নাই বলে কি আমাকে একটা কল করবে না? মানলাম সকালে রাগ করেছি তাই বলে কি একটাবারও ফোন দিয়ে খোঁজ নেয়া যায় না। (নাবীল চোখ বন্ধ করে কথাগুলো ভাবছে)

একটু ভালোবাসার জন্য তোর কাছে ছুটে যাই। আমাদের সারা জীবনের জন্য আমার ভালোবাসাই যথেষ্ট কিন্তু সম্পর্ক টিকে রাখার জন্য তোকেও কিছু করতে হবে। তা না হলে আমাদের মাঝের দূরত্ব টা অনেক বেড়ে যাবে, যা আমি হতে দেবো না। তাই আমাকেই কিছু করতে হবে।

এদিকদিয়ে রাত ১১টা বেজে গেছে, কিন্তু নাবীল এখনো আসছে না। সবাই ডিনার করে যার যার রুমে চলে গেলো কিন্তু মাহি খাবার নিয়ে নাবীলের জন্য অপেক্ষা করছে। কয়েকবার কলও করছে কিন্তু নাবীল ফোনটা সুইচ অফ করে রাখছে। মাহির খুব চিন্তা হচ্ছে। কখনোতো এমন করেনা। কি হলো আজ?

এরপর রাত ১২ টায় নাবীল বাড়ীতে আসলো। এসেই দেখে মাহি এখনো খাবার টেবিলে বসে আছে।

নাবীল কিছু না বলেই রুমে গিয়ে ফ্রেস হতে চলে গেলো।

মাহি ২ জনেরি খাবারগুলো আবার গরম করে রুমেই নিয়ে গেলো। মাহিও না খেয়ে ছিলো। নাবীলের সাথে একসাথে খাবে বলে।

কষ্ট ব্যথার ভালোবাসা

নাবীল ফ্রেস হয়ে এসে দেখে মাহি খাবার নিয়ে এসেছে।

নাবীলঃ খাবার কার জন্য?

মাহিঃ আপনার জন্য, খাবেন না? সকালেও না খেয়ে চলে গেলেন। এখন তো খেয়ে নিন।

নাবীলঃ (নাবীল অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে) আমি খেয়ে আসছি, এগুলো নিয়ে যা। আর লাইট অফ করে দে, আমি ঘুমাবো। খুব টায়ার্ড আমি।

মাহির মনটা খারাপ হয়ে গেলো, তবুও কিছু বললো না। কিন্তু অনেক কিছু বলতে মন চাইছিলো আজ নাবীলকে। কেনো জানি, নাবীলের অবহেলাটা সহ্য হচ্ছে না।

মাহি লাইটটা অফ করে খাবার গুলো রেখে আসলো। এসে দেখে নাবীল আজ একলাই অন্য দিকে মুখ করে ঘুমিয়ে আছে। তাই মাহিও না খেয়ে শুয়ে পরলো। কিন্তু মাহির চোখে আজ ঘুম নাই। সারা রাত নির্ঘুম কাটালো।

আর এসব রাতের আধারে শুধু একজন দেখলো, তা হলো লাবনি। লাবনি মনে মনে অনেক খুশি। লাবনি ভাবছে মাহি ও নাবীলের মাঝের দূরত্ব যতো বাড়বে ততোই আমারি লাভ।

ভোর রাতে মাহির চোখ লেগে গিয়েছিলো। সারারাত ঘুম না হবার কারণে সকালে ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হলো। ঘুম থেকে উঠে দেখে নাবীল নেই। ফ্রেস হয়ে নিচে গেলে, তানজিলা ভাবী বলে নাবীল নাকি অনেক আগেই চলে গেছে। আজও নাস্তা করেনি। মাহির মনটা খারাপ হয়ে গেলো। ভাবী আর শ্বাসুড়ীর জোড়া জোড়িতে মাহি কোন রকম নাস্তাটা করে নিলো।

মাহিঃ না, এভাবে চলতে দেয়া যাবে না। আজ এর একটা ফয়ছালা করতেই হবে। এই লোকটা কি চায় আমার কাছ থেকে, কেনো এমন করছে?

মাহি সারাদিন অনেক ফোন দিলো। কিন্তু নাবীল আজ খুবই ব্যস্ত থাকার কারণে ধরতে পারেনি।

এদিকে মাহি প্রায় পাগল হয়ে যাবে। নাবীলের এমন অবহেলা মাহি কখনো দেখেনি। তাই হয়তো সহ্য হচ্ছে না।

নাবীল কাজ শেষে ফোন চেক করে মাহির অনেকগুলো মিসকল পেলো।

নাবীল মনে মনে ভাবছে, এবার লাইনে আসা শুরু করলো। তুই যেমন ত্যারা তোকে সোজা করতে ত্যারা রাস্তাই বেঁচে নিতে হলো। আমাকে কম জ্বালাস নাই। দেখ, ভালোবাসার মানুষ থেকে অবহেলা কেমন লাগে? নাবীলের মোবাইলের কভার ফোটোতে মাহির ছবি দেওয়া। (সেটা দেখছে আর মনে মনে বলে যাচ্ছে)

অপেক্ষার প্রহর

এদিকে মাহি অপেক্ষা করছে নাবীলের ফোনের।

নাবীল মাহিকে কল ব্যাক করার সাথে সাথে মাহি কল ধরলো।

মাহিঃ হ্যালো, কোথায় ছিলেন আপনে? ফোন ধরছেন না কেনো?

নাবীলঃ ব্যস্ত ছিলাম, তাই খেয়াল করিনি। বল, কি বলবি?

মাহিঃ বাসায় কখন আসবেন?

নাবীলঃ কেনো, আমাকে দিয়ে তুই কি করবি? আজ আমার অনেক কাজ তাই কখন আসবো বলতে পারিনা। আমার অপেক্ষায় থাকার কোনো দরকার নাই। ঘুমিয়ে যাস। এখন রাখি, আমি।

মাহিঃ না না শুনেন, টুংটুং টুংটুং কেটে গেলো। হাধারাম কোথাকার, আমার কথা না শুনেই ফোনটা কেটে দিলো। আরও একটু কথা বললে তোর কি লেজ গজাতো। (মনে মনে মাহি এমন হাজারো গালি দিচ্ছে)

মাহি মন খারাপ করে ঘরে বসে আছে। এমন সময় লাবনি রুমে আসে।

লাবনিঃ আসতে পারি।

মাহিঃ আপু আসুন। জিঙ্গেস করার কি কাছে।?

লাবনিঃ না, এখন তো এই রুমটা তোমার। একসময় আমার হওয়ার কথা ছিলো। তাই ভুলে আগে অনুমিত না নিয়েই এসে পরেছিলাম। তুমি কিছু মনে করো নিতো।

মাহিঃ না আপু, আমি কিছুই মনে করেনি।

লাবনিঃ নাবীল কি রাগ করেছে তোমার উপর?

মাহিঃ নাতো আপি, আপনার এমন কেনো মনে হলো?

লাবনিঃ না, তেমন কিছু না। দুদিন ধরে নাস্তা না করে চলে যাচ্ছে, আবার রাতেও দেরি করে আসে। তাই আর কি? ও তো কখনো এমন করে না। যতোই রাগ করুক ও বাসায় টাইম মতো আসে। কিন্তু এমন কি হলো, ও এতো চেঞ্জ হয়ে যাবে ভাবতেও অবাক লাগে। তোমরা কি একে অপরের সাথে সুখী নও।

মাহিঃ না আপু, এমন কিছু না। আপনে হয়তো ভুল বুজছেন। সে একটু ব্যস্ত কাজের চাপটা বেশিতো। মাহি মুখটা অন্য দিকে ঘুড়িয়ে কথাগুলো বলছে।

লাবনিঃ ওওও আসলে নাবীল আর তুমি সম্পূর্ণ আলাদা তো তাই এমন মনে হলো। নাবীল এর মতো ছেলে আরো ভালো সঙ্গী পাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু তোমাদের বিয়েটাতো একটা এক্সিডেন্ট মাত্র। নাবীল ভালো বলে বিয়েটা একসেপ্ট করে নিয়েছে। না হলে অন্য কেউ হলে, তোমার জন্যই অনেক মুশকিল হতো।

দেখোনা, এই শহরের অনেক বড় বড় ঘর থেকে প্রস্তাব এসেছিলো নাবীলের জন্য। প্রত্যেকটা ঘরের মেয়ে যেমন দেখতে সুন্দর তেমনি উচ্চ শিক্ষিত, কারো থেকে কেউ কম ছিলো না। আমার কথাই ধরো আমার বাবার কোন কিছুর অভাব নেই। আমার বিয়ের কথাও হয়েছে নাবীলের সাথে। এই বিয়ে নামক দূর্ঘটনাটা যদি না ঘটতো তাহলে হয়তো আমার আর নাবীল এর বিয়েটা হয়েই যেতো। কিন্তু আমার চিন্তা হচ্ছে তোমাকে নিয়ে।

সন্দেহ ভালোবাসা

মাহি লাবনির দিকে করুণ চোখে তাকালো।

মাহিঃ আমায় নিয়ে….?

লাবনিঃ হুমমমম, আমি ভাবছি নাবীল আবার বিয়েটা নিয়ে আফসোস করেনি। তাই আর কি তোমার সাথে কথা বলতে আসলাম। যেভাবে তোমাকে এড়িয়ে চলছে মনে হচ্ছে নাবীলের আফসোস হচ্ছে। আসলে ছেলে মানুষের মন বলে কথা।

লাবনি খেয়াল করলো মাহি কিছু একটা ভাবছে। লাবনি মনে মনে খুশি হলো যাক কাজ হচ্ছে মনে হয়। আজকের পর থেকে মাহি ও নাবীলের মধ্যে দূরত্ব আরো বেড়ে যাবে। আমার কাজ শেষ। মাহি আমি এখন আসি। তুমি কোন চিন্তা করো না সব ঠিক হয়ে যাবে।

এদিকে মাহি গভীর চিন্তায় মগ্ন, আসলে কি সত্য নাবীলের আফসোস হচ্ছে আমাকে বিয়ে করে। উনি তো আরো ভালোকিছু পেতো। কিন্তু আমি তো কিছুই দিতে পারিনি। এমনকি ভালোবাসাটাও না। হয়তো এখন উনার আফসোস হচ্ছে আমাকে বিয়েটা করায়। কিন্তু উনিতো বললেন আমাকে ভালোবাসে। তাহলে এখন…..। না, আমি কোন চিন্তা করতে পারছি না।

মাহি চোখ বন্ধকরে ফ্লোরে বসে পড়লো।

রাতে মাহি ডিনারের জন্য নিচেও নামেনি। সবাই কিছু বুঝতে পারলো কিছু একটা হয়েছে। কিন্তু নাবীল আর মাহিকে জিঙ্গেস করলে লাভ নেই, কেউ কিছুই বলবে না। তাই ডিনার করে সবাই যার যার রুমে চলে গেলো।

নাবীল আজও লেট করে বাড়ী ফিরলো। এসে দেখে বাড়ী পুরো অন্ধকার। তার মানে মাহি আজ আর আমার জন্য ওয়েট করেনি। নাবীল সোজা নিজের রুমে চলে গেলো।

রুমের লাইট অফ, ভাবলাম মাহি ঘুমিয়ে আছে তাই লাইট ওন করলাম না। কিন্তু ড্রিম লাইট আর চাঁদের আলোয় ঘর আলোকিতো। মাহি বিছানায় নেই, ঘরের চারদিকে তাকিয়ে দেখি মাহি ঘরের এককোনায় ফ্লোরে মাথা নিচু করে বসে আছে।

শার্ট এর টাইটা খুলতে খুলতে মাহির কাছে গেলাম।

নাবীলঃ মাহি, এই মাহি। তুই এখানে কি করছ? উঠ, বিছানায় চল।

মাহি মুখটা উচু করে আমার দিকে তাকালো।

আমি ওকে দেখে কিছুটা হতভম্ভ হয়ে গেলাম। কারণ চোখ মুখ ফুলে গেছে। মনে হয়, অনেকক্ষণ ধরে কানছে। চোখের কাজলগুলো ছড়িয়ে গেছে। নাকটা লাল হয়ে গেছে।

নাবীলঃ এই তোর এই অবস্থা কেনো? আর তুই কান্না করছিস কেনো? উঠ আগে।

ঝগড়াটে সম্পর্ক

মাহিকে জোর করে উঠালাম।

মাহি আমাকে ধাক্কা দিয়ে চেঁচিয়ে উঠলো।

মাহিঃ আমার ফোন কেনো ধরছেন না। আর কথা বলার আগেই ফোন কেনো কেটে দিলেন।

মাহির এমন রুপ আমি আগে কখনোই দেখিনি। নিজে শান্ত হয়ে জবাব দিলাম কারণ আমিও যদি রেগে যাই তাহলে পরিস্থিতি আরো খারাপ হবে।

নাবীলঃ আমি ব্যস্ত ছিলাম, তোকে তো ফোনে বলেছি।

মাহিঃ মিথ্যা সব মিথ্যা, আপনে একটা মিথ্যাবাদী লোক। এতো দিন ধরে শুধু মিথ্যা বলে এসেছেন।

নাবীলঃ কি বলছিস এসব, পাগল হয়ে গেছোস?

মাহিঃ হে সত্য কথা বললে, আমি পাগল, তাই না?

নাবীলঃ কি সত্য বলছিস? আর কোন সত্য কথা জেনেছিস তুই?

মাহিঃ এই যে আপনার এখন আফসোস হচ্ছে আমাকে বিয়ে করায়।

নাবীলঃ কিকিকিকিকিকি, কি সব বলছিস, তুই?

মাহিঃ সত্য বলছি, তাইতো দুদিন ধরে আমাকে এড়িয়ে চলছেন। আমার সাথে ঠিকমতো কথা বলছেন না, রাতে আমাকে জরিয়ে এখন ঘুমান না। সকালে ঘুম থেকে উঠে আমাকে জ্বালান না। ভালোবাসি ভালোবাসি বলে কান জ্বালাপুরা করে ফেলেছেন এতোদিন আর এখন যখন আপনাকে ভালোবাসতে শুরু করে দিয়েছি আর আপনে, এমন করছেন। জানেন, আপনাকে ভালোবাসা কতোটা কষ্টকর।

আপনার ভয়ে আপনাকে ভালোবাসতে পারতাম না। মনে হতো, এই বুজি এখন রাগ করবেন, ধমক দিবেন। আর ঠিকমতো ভালো না বাসতে পারলে থাপ্পড় সব আমার গালে পরবে। আর আপনার এখন আফসোস হচ্ছে। এতোদিন কোথায় ছিলো আপনার আফসোস?

মাহি একাধারে কথাগুলো বলছে। ও হয়তো জানেই না রাগের মাথায় কি কি বলছে? কিন্তু সত্য বলছে।

স্বামী স্ত্রীর অভিমানের পর্ব

নাবীল অপলক ভাবে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে, কারণ আজ সে নতুন এক মাহিকে দেখছে।

মাহিঃ আমি চলে যাবো, আপনাকে আর ডিস্টার্ব করবো না। আপনে লাবনি আপুকে বিয়ে করে নিয়েন।

নাবীলঃ কোথায় যাবি? (নাবীল হাত দুটো পকেটে রেখে)

মাহিঃ যে দিকে দু’চোখ যায় চলে যাবো। আর যাওয়ার জায়গা না থাকলে মরে যাবো। আপনার কি?

নাবীলঃ ঠাসসসসসস। (মাহির এমন কথায় নাবীলের রাগ উঠে গেলো) কি বললি তুই? সাহস কি করে হলো তোর এমন বলার?

মাহি গালে হাত দিয়ে কান্না করতে লাগলো।

নাবীল মাহির হাত ধরে টেনে নিজের বুকের সাথে চেপে ধরলো মাহির ঠোঁটকে নিজের ঠোঁটে আবদ্ধ করে ফেললো। ঘটনা আকস্মিক ঘটায় মাহি কি করবে কিছুই বুজতে পারছে না? তাই রোবট এর মতো দাঁড়িয়ে আছে।

ঠিক ১০ মিনিট পর নাবীল মাহিকে ছেড়ে দিলো। মাহির মুখটা দুহাতে আবদ্ধ করে কপালে কপাল রেখে, জানোস মাহি এই দুদিন মনে হয় আমি নরকে ছিলাম। তোর মুখ দিয়ে ভালোবাসি কথাটা বের করতে আমাকে কতো কাঠকয়লা পোড়াতে হয়েছে, তুই কিছু জানোস না। আমি জানতাম তোর সাথে এমন না করলে তুই কখনো মুখ খুলে আমাকে কিছুই বলবি না। তাইতো এমন করতে হলো।

স্বামী স্ত্রীর মধুর মিলন

কষ্ট তোকে দিতে গিয়ে দ্বিগুণ কষ্টে আমি ভুগেছি। তোকে ছাড়া আমি এই দুদিন কিভাবে কাটিয়েছি তুই ভাবতেও পারবি না। আর আফসোস, সেটা কি জানি না, আমি শুধু জানি আমি তোকে ভালোবাসি, অনেক ভালোবাসি। তোর থেকে দূরে থাকলে নিশ্বাস যেনো বন্ধ হয়ে আসে আমার। তুই আমার নেশা যার থেকে পরিত্রাণ হতে আমি চাই না। বরং এই নেশায় আমি আরো নেশাগ্রস্ত হতে চাই। দিবি আমায় তোর ভালোবাসায় নেশাগ্রস্থ হতে, বল না।

নাবীলের কথায় এবার মাহি কিছুটা লজ্জা পেয়ে গেলো।

নাবীল মাহির কানের সামনে গিয়ে বলে,

নাবীলঃ আজ লজ্জা পাবার সময় না, লজ্জা ভাঙ্গাবার রাত। তোর মুখ থেকে ভালোবাসা কথাটা শুনার জন্য অনেক অপেক্ষা করছি। কিন্ত আজ আর পারছি না নিজেকে সামলাতে। আজ আমি তোকে ভালোবাসবো ঠিক আমার মন মতো। আর তুই শুধু অনুভব করবি আমার ভালোবাসাকে।

নাবীল মাহিকে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় শুয়ে দিলো। নাবীল মাহির উপর ভর দিয়ে আবারও মাহির ঠোঁটে ভালোবাসার পরশ দিয়ে দিলো। এক সময় মাহির ঘাড়ে, বুকে সব জায়গায় নাবীলের ঠোঁট স্পর্শ করছে। ভালোবাসার এ খেলায় দুজনেরি নিশ্বাস যেন ভারী হয়ে গেলো। মাহি আজ সত্যি নাবীলের ভালোবাসা অনুভব করছে। এই ভালোবাসায় কোনো পাপ নেই, আছে শুধু পবিত্রতা। যা একজন স্বামী স্ত্রীর ভালোবাসায় আল্লাহর তরফ থেকে হয়ে থাকে।

নাবীলের ভালোবাসাটা সহ্য করার ক্ষমতা আসলেও অন্য কেউ পারবে না। কারণ নাবীল মাহির নেশায় এতোটাই মগ্ন যে ওর ভালোবাসাগুলো কামড়ে পরিণত হয়েছে। কিন্ত মাহি ভালোবাসার মাঝে নাবীলের দেয়া কষ্টটাও আপন করে নিয়েছে।

আজ দুটি দেহ এক হয়ে গিয়েছে। আর তার সাক্ষী হয়েছে দূর আকাশের সেই চাঁদ। চলবে….

পরের পর্ব- রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ২৪

সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *