রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ২২: আমাদের স্বামী স্ত্রীর মাঝে দুষ্টু মিষ্টি ভালোবাসার দিনগুলো বেশ ভালোই কাটছে কিন্তু কোথা থেকে কাবাব মে হাড্ডি হয়ে আসল একজন! কেমন জানি একটা সন্দেহমনা, কে জানি আমাদের সুখের সংসারে আগুন লাগায় নাকি আবার।
সংসারে তৃতীয় পক্ষের আগমন
আপু আপনে কষ্ট করতে গেলেন কেনো? আমিই আসছিলাম, দেখুন আপনার কষ্টটা বৃথা গেলো। যাই হোক, কফিটা আমাকে দিন। আর আপনে নিচে গিয়ে সবার সাথে বসুন, উনি এখন চেন্জ করবে।
লাবনি রাগে গজগজ করতে করতে নিজের রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে অস্থির হয়ে পড়লো কিভাবে মাহিকে নাবীলের জীবন থেকে সরাবে। প্লান মতো কাজ করতে হবে। আগে বুঝতে হবে মাহিকে কি দিয়ে জালে ফেলতে হবে। অবশ্যই নাবীলের সামনে করা যাবে না। যা করতে হবে একা, যখন নাবীল বাসায় থাকবে না।
লাবনি ভাবতে ভাবতে ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মাহির মতো মোটা মাথা মেয়েকে জালে ফেলতে সময় লাগবে না। যেভাবেই হোক, মাহিকে আমার নাবীল থেকে দূরে সরাতেই হবে। নাবীলকে আমার চাইইই চাই। যে কোনও মূল্যে। তুমি শুধু আমার আর কারো না।
মাহি চা নিয়ে উপরে যেতে নিলে, নাবীলকে নামতে দেখে আর উপরে গেলো না। নাবীল মাহি থেকে চাটা নিয়ে ড্রয়িংরুম এ সবার সাথে গিয়ে বসলো। সবাই গল্প নিয়ে ব্যস্ত।
নিশিঃ ভাইয়া, আজকের প্লান মনে আছে তো? আজ আমরা মুভি দেখবো। রাত জেগে।
নাবীলঃ হুমমম, তা তো ঠিক আছে। কিন্তু প্রত্যেকবারের মতো এবারও তাওহিদ ভাইয়া ছবির মাঝ পথে ঘুমিয়ে যাবে, দেখিস।
সবাই হা হা করে হেসে উঠে।
মাহি গিয়েও নাবীলের পাশে বসে।
তানজিলাঃ ঠিক বলেছে নাবীল, তুমি প্রত্যেকবার এমন করো কেনো? সোফায় বসেই হা করে ঘুমিয়ে পরো। এতো শব্দে ঘুমাও কেমনে?
মাহিঃ ভাবী, ভাইয়া সকালে তাড়াতাড়ি উঠে ঘুম থেকে নামায পড়ার জন্য, কখনো কখনো আর ঘুমায় না। আর সারা দিন অফিসের কাজে শরীল ক্লান্ত হয়ে যায়, তাই হয়তো রাত জাগতে কষ্ট হয়।
তানজিলাঃ একদম ঠিক বলছো, মাহি। এতোদিন পর আমার দুঃখ দূর হবে বলে মনে হয়। এরা সবাই আমার বিরোধী দল জানো। কেউ আমার কষ্ট বুঝে না, আজ এতোদিন পর আমার দলে একজন সদস্য পেয়েছি। নিজেকে আজ শক্মাহিলী মনে হচ্ছে।
নাবীলঃ ওকে ভাইয়া, আজ থেকে আমিও আপনার দলে।
স্বামীর দুষ্টু মতলব
এতোক্ষণে লাবনিও নিচে নেমে তাদের সাথে জয়েন হয়। কিন্তু কোন কথা বলে না, চুপচাপ বসে থাকে।
নাবীলঃ চল, আগে ডিনার সারি। আমরা তারপর মুভির প্লানিং করবো নি।
সবাই ডিনার করতে বসে নাবীলের পাশের চেয়ারে লাবনি বসে পরে। কিন্তু মাহি বসার জন্য জায়গা পায়না। কারণ মেহমান বাসায়, তাই চেয়ার সব বুক। নাবীল উঠতে নিলে লাবনি হাতটা ধরে বলে কি হলো ডিনার করবে না।
নাবীলঃ হাতটা সরিয়ে, তোমরা শুরু করো। আমি মাহির সাথে করবো পরে, বলে চলে যায়।
সবার ডিনার শেষে মাহি, নাবীল এক সাথে বসে ডিনার করে নেয়।
ডিনার শেষে সবাই কিছুটা বিশ্রাম নিয়ে, মুভি দেখার জন্য প্রস্তুতি নেয়। নাবীলদের বাসায় আলাদা একটা থিয়েটার রুম আছে। সেখানে বড় একটা টিভি, আর বসার জন্য তিনটা শোফা আছে। যাতে পরিবারের সবাই বসে এক সাথে মুভি এনজয় করতে পারে। তাইতো নাবীলের কাজিনরা যখনি আসে ওদের বাড়ীতে তারা একত্রে মুভি দেখার প্লান করে।
নাবীল মুভি সেলেক্ট করে তাকিয়ে দেখে সবাই আসছে কিনা। সবাইকে দেখতে পেলেও মাহি এখনো আসে নি। তাই ও রুম থেকে বের হয়ে মাহিকে খুঁজতে লাগে।
নাবীলঃ তুই এখনো রান্নাঘর এ কি করছিস?
মাহি নাবীলের দিকে তাকিয়ে,
মাহিঃ আপনার এখানো মুভি আরম্ভ হয়নি?
নাবীলঃ কিভাবে হবে, আমার ম্যাডামতো এখানে?
মাহিঃ আমি এখনি আসতাম, খাবারগুলো না নিয়ে আসলে সবাই আবার মুভির মাঝখানে জ্বালাবে। তাই সব একবারে নিয়ে যাবো বলে দেরি হলো।
মাহি চিপস, কোক, পপকর্ন একসাথে করে একটা ব্যাগে ভরছিলো।
নাবীল মাহির পেছনে দাঁড়িয়ে মাহির কোমড়টা জরিয়ে ধরলে মাহি কিছুটা কেপে উঠে।
নাবীল মাহির কানের কাছে মুখটা নিয়ে ফিসফিসিয়ে বলে,
নাবীলঃ মাহি। (একদম মায়াভরা কন্ঠে)
মাহিঃ হুমমমমম।
নাবীলঃ শরীল ভালো হয়েছে।
মাহি যেন সাত আসমান থেকে নিচে ধপ করে পড়লো মনে হয়। মাহি তাই নিশ্চুপ।
কানের কাছে আবার,
নাবীলঃ কি হলো, বলিস না কেনো?
মাহিঃ আমার কাজ শেষ চলুন, সবাই বসে আছে।
লজ্জাবতী বউ
এ কথা বলে মাহি নাবীলের হাতটা কোমড় থেকে ছাড়াতে চাইলে নাবীল আরো শক্ত করে ধরে, নিজের সাথে।
নাবীলঃ আগে আমার কথার জবাব দে।
মাহিঃ কি জবাব দিব?
নাবীলঃ আমি যা জিঙ্গেস করেছি।
মাহিঃ জানি না, কি জিঙ্গেস করছেন?
নাবীলঃ তাইইই, চল বেড রুমে চল। আমি চেক করি। সব ঠিক আছে কিনা।
মাহির কোমর ছেড়ে কোলে তুলে নিলো।
মাহিঃ আরেরেরে কি করছেন, ছাড়েন আমাকে? আমি ভালো আছি এখন। প্লিজ নামান। কেউ এসে পরবে।
নাবীল মাহিকে নামিয়ে একদম বুকের সাথে চেপে ধরে।
মাহিঃ এখন কি হলো?
মাহির দিকে তাকিয়ে এক চোখ টিপ মেরে।
মাহিঃ ছাড়ুন আমাকে, এটা আপনার বেডরুম না। কেউ এসে পড়লে লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাবে।
নাবীলঃ তোর জন্য সারপ্রাইজ আছে।
মাহিঃ কি!
নাবীলঃ তোর পছন্দের মুভি।
মাহিঃ আমার কোন মুভি পছন্দ আপনে কিভাবে জানেন।
নাবীলঃ আগে ভেতরে চল, তার পর সব বুঝতে পারবি।
মাহি নাবীলের দিকে আড় চোখ দিয়ে তাকাচ্ছে আর ভাবছে কিছু একটা প্লানতো করছে এই হিটলার, তা না হলে সামান্য মুভি পাগল এই ছাগলে না।
সিনেমাটিক প্রেম
মাহি ও নাবীল প্রয়োজনীয় সব কিছু নিয়ে থিয়েটার রুমে আসলো।
ঝুমুরঃ আসছোস তোরা, আমি তো ভাবলাম বউকে নিয়ে মনে হয় হানিমুনে চলে গিয়েছোস।
নাবীলঃ ঝুমুর আপু, তুমিও না! কখন কি বলো, আশেপাশে দেখেতো বলো।
সোফাগুলো একটার পিছে আরেকটা করে তিনটা শোফা সেট করা।
প্রথম সারিতে নাবীলের কাজিনরা বসেছে, দ্বিতীয় সারিতে তানজিলা, তাওহিদ, অর্ক, নিশি বসেছে।
লাবনি এখনো বসেনি, নাবীলের জন্য অপেক্ষা করছে। নাবীল যেখানে বসবে ওখানেই বসবে।
মাহি গিয়ে নিশির পাশে বসে পড়লো।
নাবীল মুভি চালু করে দেখে মাহি নিশির পাশে বসে আছে।
নাবীলের মেজাজটাই খারাপ হয়ে যায়।
মাহির হাত ধরে একটান দিয়ে উঠিয়ে, পিছনে নিয়ে গিয়ে বসে। লাবনি বসতে চাইলে নাবীল বলে উঠে,
নাবীলঃ লাবনি প্লিস, নিশির সাথে একটু বসবে। বেচারী নিশি ভয় পাবে একটু পর।
মাহিঃ কেনো, ভয় পাবে কেনো?
নাবীলঃ দাঁতে দাঁত চেপে বলে মুভি আরম্ভ হলেই বুঝবি।
লাবনি বাধ্য হয়ে নিশির সাথে বসে পরে।
পেছনের শোফায় মাহি আর নাবীল ছাড়া কেউ নেই। নাবীল এটাই চেয়েছিলো মনে মনে।
মুভি আরম্ভ হবার সাথে সাথে সবাই একটা চিৎকার দিয়ে উঠলো। কারণ এটা হরোর মুভি।
সবাই নাবীলের দিকে তাকিয়ে,
সবাইঃ এটা কি হলো ভাইয়া? আমরা রোমান্টিক মুভি আসা করেছিলাম। আর তুমি ভূতের ছবি নিয়ে আসলে।
নাবীলঃ আরে এটা অন্যধরনের রোমান্টিক ছবি।
সবাইঃ ভূতের ছবি আবার রোমান্টিক হয় কিভাবে।
নাবীলঃ হয় হয়, আগে দেখ। পরে তোরাই বলবি, ভাইয়া অস্থির একটা মুভি।
এতোক্ষণ মাহি নাবীলের কথাগুলো মনোযোগ দিয়ে শুনছিলো। আর ভাবছে,
মাহিঃ বলে কি এসব? পাগল হয়ে গিয়েছে, এই ছবি আর রোমান্টিক। এটা সব থেকে ভয়ের একটা ছবি। আমি তিনবার দেখার ট্রাই করেছি একবারও পারিনি ভয়ে।
নাবীলঃ মাহির দিকে তাকিয়ে কি ভাবছিস এতো?
মাহিঃ এটা আমার পছন্দের ছবি, কে বলছে আপনাকে?
নাবীলঃ তাহলে…।
মাহিঃ আমি দেখবো না। এই মুভি আপনেই দেখুন, বলে মাহি উঠে চলে যেতে চাইলে নাবীল মাহির হাতটা ধরে নিজের কোলে বসিয়ে দেয়। আর মাহির কোমড়টা শক্ত করে জরিয়ে ধরে যাতে মাহি যেতে না পারে। ছাড়ুন আমায়, আমি এই মুভি দেখবো না।
নাবীলঃ এটা কি করে হয়? এতো কষ্ট করে তোর জন্য খুঁজে আনলাম আর তুই দেখবি না।
মাহিঃ আপনাকে কে বলেছে এই মুভির কথা?
নাবীলঃ কে আর বলবে?
মাহিঃ বুঝছি, শফিক ভাই নিশ্চয়।
নাবীলঃ এতো তাড়াতাড়ি বুঝে গেলি।
মাহিঃ আমি এটা দেখতে পারবো না আমার খুব ভয় করে।
নাবীলঃ আমি আছি না, আমি থাকতে তোর ভয় কিসের? এবার তুই একটুও ভয় পাবিনা, দেখিস।
মাহিঃ ঠিক আছে, ছাড়ুন। আমি শোফায় বসি, আপনার পা ব্যথা করবে।
নাবীলঃ না, করবে না। তুই এখানে বসেই দেখবি। আর আমি তোর শরীলের ঘ্রাণ নিবো। যা আমার খুব ভালো লাগে।
নাবীলের কথায় মাহির ভেতরে তোলপার শুরু হয়ে যায়।
সবাই মুভি দেখাতে ব্যস্ত আর নাবীল মাহিকে নিয়ে।
মিষ্টি মধুর ভালোবাসায় ডুব
নাবীল মাহির চুলের খোপা খুলে দিয়ে চুলের ঘ্রান নিতে থাকে। মাতাল করা ঘ্রান আসে মাহির চুল থেকে। আর নাবীল তা খুব মনোযোগ দিয়ে উপভোগ করছে। এক সময় চুলটা কাধ থেকে সরিয়ে মাহির গলায় ঘাড় এ কিস করতে থাকে।
বেচারী মাহি মুভি দেখে ভয় পাবে কি, সে তো নাবীলের রোমান্টিক অত্যাচারে অতিষ্ঠ!
না উঠতে পারছে, না শান্তি মতো বসতে পারছে। এভাবে তাদের রোমান্টিক মুভি শেষ হলো।
মুভি শেষে যে যার রুমে চলে গেলো। একেকটার চেহারা দেখলে বুঝা যায় তারা কি ভয়টা পেয়েছে!
মাহিও ভয়ে নাবীলের হাত ধরে চোখ বন্ধ করে বসে আছে।
নাবীলঃ কি রে রুমে যাবি না, নাকি এখানেই থাকবি।
মাহিঃ আমার ভয়, করছে।
নাবীল মাহিকে কোলে তুলে নিলো, এবার মাহি আর কিছু বলেনি। চুপচাপ নাবীলের গলা জড়িয়ে আছে।
নাবীলঃ সবার আগে আল্লাহকে ভয় পাবি। এরপর দুনিয়াতে আমাকে ভয় পাবি, বুজলি। তোর হাসবেন্ড কিন্তু ডেবিলের থেকে কম না। মাহিকে কোলে করেই রুমে নিয়ে গেলো।
আজ মাহি নিজেই নাবীলের বুকে মাথা রেখে নাবীলকে আষ্টেপৃষ্ঠে জরিয়ে ঘুমিয়ে আছে ভয়ে।
নাবীল এটাই চেয়েছিলো। কারণ নাবীল ভালো করেই জানে এই ছবি দেখার পর মাহি একা কিছুতেই ঘুমাবে না।
শফিকের কাছ থেকে জেনেছিলো, মাহি হরোর মুভি দেখলে রাতে একা ঘুমাতে পারেনা। তাইতো এতো ব্যবস্থা।
মাহি নাবীলের বুকে মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়লো। আর নাবীলও মাহির কপালে একটা কিস করে ওকে জরিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। চলবে….
পরের পর্ব- রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ২৩
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প