রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১৬: অবশেষে আজ মাহি ও নাবিলের বাসর রাত, অনেক কল্পনা জল্পনা শেষে তারা স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কে আবদ্ধ হয়েছে। বন্ধুর বোন ছিল ছাত্রী আর এখন বউ। দেখা যাক তাদের কি হয়?
বাসর ঘরে অপেক্ষা
মাহি বাসরঘর এ বড় একটা ঘুমটা দিয়ে বসে আছে। একটু ঘুমটাটা ফাঁক করে পুরো রুমটা দেখছে। রুমটা খুব সুন্দর করে সাজানো। হঠাৎ দেয়ালের দিকে চোখ পড়লো। বিছানার পাশের দেয়ালটাতে নাবীলের একটা ছবি বড় করে বাধানো। মাহি ছবিটার দিকে তাকিয়ে আছে, অসম্ভব সুন্দর লাগছে নাবীলকে ছবিটার মধ্যে, কেউ দেখলে বলবেই না এই মানুষটা এতোটা রাগী।
অনেকক্ষণ ধরে মাহি নাবীলের জন্য অপেক্ষা করছে। কিন্তু নাবীলের কোন খবর নেই। মাহির খুব অস্বস্তি লাগছে। সব খুলে ফেলতে মন চাইছে। কিন্তু মাহির চিন্তা হচ্ছে নাবীলকে কিভাবে বলবে তার সমস্যার কথা?
সবাইকে বিদায় দিয়ে নাবীল ঘরের দিকে যেতে নিলো, বেচারা আজ খুব খুশি। আর তার খুশিতে পানি ঢালতে এসে পরলো তার ভাবী।
নাবীলের ভাবীঃ নাবীল…।
নাবীলঃ জি, ভাবী। এগুলো নিয়ে যাও, মাহির ব্রিটকেসটা দেখিয়ে।
নাবীলঃ ওকে ভাবী।
নাবীলের ভাবীঃ শোনো নাবীল।
নাবীলঃ জি ভাবী, আর কিছু।
নাবীলের ভাবীঃ এই ব্যাগটা নিয়ে যাও, এতে মাহির কিছু প্রয়োজনীয় জিনিস আছে। তোমাকে আরো কিছুদিন ধৈর্য্য ধরতে হবে, আসলে মাহির ডেট পরে গিয়েছে। তুমি কি বুঝতে পারছো আমি কি বুঝাতে চাইছি?
নাবীল প্রথমে ভাবীর কথা না বুঝলেও পরে, একটু ভেবে বুঝতে পারে, ভাবী কি বলতে চাইছে?
বেচারা খুব কষ্টে একটু হেসে ভাবীকে বলে,
নাবীলঃ জি ভাবী, আমি বুঝেছি।
এরপর নাবীল মাথাটা নিচু করে ঘরের দিকে চলে গেলো।
বাসর রাতের গল্প
ঘরে প্রবেশ করতেই বুঝতে পারি আমার মেডামটার খুব অস্বস্তি লাগছে। একতো ভারী লেহেঙ্গা, জুয়েলারি তার উপর বেচারির এই অবস্থা। ওর কষ্টের তুলনায় আমার কষ্টটা খুব সামান্য মনে হলো।
নাবীলকে দেখে আমি আবার চুপ করে বসে পরলাম, আমার চিন্তা একটাই কিভাবে বলবো? আর এই খাটাইশটা কি আমার সমস্যা বুঝবে? নাকি আবার ঝাপিয়ে পরবে। হে খোদা আমাকে এবার বাঁচিও।
নাবীলঃ কিরে তুই এখনো এসব পড়ে বসে আছিস কেনো? যা তাড়াতাড়ি গিয়ে আগে ফ্রেস হও। আর এ সবকিছু খোল, তোকে দেখে আমারি অস্বস্তি লাগছে। কিভাবে পারস, এতো ভারী ভারী জিনিস পড়তে?
মাহিঃ শালা খচ্চর কোথাকার? আমাকে এই অবস্থায় এনে এখন আবার বলছে কিভাবে পরি? তুই তো দিলি, এতো ভারী লেহেঙ্গা, জুয়েলারি, তখন মনে ছিলো না। কমপক্ষে বিয়ের ডেটটা ফিক্সড করার আগে আমার ডেট টাতো জেনে নিতি। তাহলে আজ এতো প্যারা লাগতো না। (মাহি মনে মনে কথা গুলো বলে যাচ্ছে)
নাবীলঃ কিরে কি ভাবস এতো? তুই চেঞ্জ করবি নাকি আমি করিয়ে দেবো। এতে আমার কোন সমস্যা নাই।
মাহি নাবীলের কথা শুনে ৪৫০ ভোল্ট শোকড খেলো। কি বলে এসব? লজ্জা শরমের মাথা খাইছে, মনে হয়।
মাহিঃ না না না…আমিই করছি।
এতেক্ষণে নাবীল চেঞ্জ করে ফ্রেস হয়ে এসে দেখে মাহি একটা একটা করে জুয়েলারি গুলো খুলছে।
নাবীল মাহির সামনে গিয়ে মাহিকে নিজের দিকে ঘুরালো। তারপর নিজেই মাহির গয়নাগুলো খুলে দিচ্ছে। নাবীলের হালকা স্পর্শে মাহি কিছুটা কেঁপে উঠে।
মাহি একবার বাধা দেয়ার চেষ্টা করছে।
কিন্তু নাবীল….
নাবীলঃ চুপ, আমার কাজে কখনো বাধা দেবার চেষ্টা করবিনা। তোর জন্য ভালো হবে না। (গয়নাগুলো খুলছে আর বলছে)
মাহির মাথার প্রতিটি ক্লিপ খুব যত্ন করে খুলছে, এদিক দিয়ে মাহি বেচারি লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে, যা নাবীলের চোখ এড়ায় নি।
নাবীলঃ কিভাবে স্বপ্ন ভাঙ্গতে হয়, তোকে দেখলে বোঝা যায়, বুজছোস। কতো শখ ছিলো বাসর ঘরে বিড়াল মারবো। কিন্তু্ আমার বিল্লি আমাকেই মেরে ফেলার প্লানিং করে বসে আছে। তো আজ কয়দিন তোর।
দুষ্টু মিষ্টির ভালোবাসার গল্প
নাবীলের সবগুলো কথাই মাহির মাথার উপর দিয়ে গেছে। মাহি বুঝতে পারছে না, নাবীল কি বলতে চাইছে? আর এতো বিড়াল মারার শখ থাকলে বাহিরে গিয়ে মারুক, ঘরে বিড়াল মারার কি দরকার আছে। আমিতো তাই বুজলাম না। আর কিসের কথা জানতে চাইছে। আমিতো কিছুই বুঝতে পারছি না।
নাবীল আবার বলে উঠলো,
নাবীলঃ আমি কিছু জিজ্ঞেস করেছি তোকে? জবাব দিস না কেনো? এতে এতো লজ্জা পাবার বা ভয় পাবার কিছুই নেই। একজন নারীর জন্য এটা আশির্বাদ। তাই এটা নিয়ে কখনো লজ্জা পাবিনা। এটা না হলে তুই আমার বাচ্চার মা হবি কিভাবে?
এবার তো মাহির মন চাইতাছে দরজাটা খুলে এক দৌড় দিয়ে কোন জঙ্গলে চলে যেতে।
মাহির চেহারাটা দেখার মতো ছিলো। নাবীলতো মুচকি মুচকি হাসছে। মনে মনে বলছে অনেক জালাইছোস আমারে, এবার বুঝ কেমন লাগে! আমার থেকে দূরে দূরে সরে থাকতি এতো দিন। তোর দূরত্ব আমার জন্য বেদনাময় ছিলো। আজ আমি দেখ তোকে কিভাবে সাইজ করি?
নাবীল জানে মাহি খুব লাজুক এবং চাপা স্বভাবের মেয়ে, সহজে কিছু বলেনা। তাই নাবীল এসব বলছে।
নাবীল আবারো মাহিকে জিঙ্গেস করল,
নাবীলঃ মাহি কতো দিন আজ?
মাহি এখন একটু সহজ হয়ে বললো,
মাহিঃ তিনদিন।
এরই মধ্যে গয়না খোলাও শেষ। এরপর মাহি নরমাল একটা শাড়ি ও ব্যাগটা নিয়ে বাথরুমে চলে গেলো।
আর এদিক দিয়ে জিশান মনে মনে হাসছে, মাহির অবস্থা দেখে।
মাহি চেঞ্জ করে এসে দেখে নাবীল নাই। তাই ও আয়নার সামনে এসে চুলগুলো আছড়াতে লাগলো।
নাবীল রুমে এসে মাহির সামনে দাঁড়ালো এক গ্লাস দুধ নিয়ে।
দুধ দেখে মাহি মুখটা কালো করে ফেললো। আমি দুধ খাবো না। একদমই পছন্দ না আমার।
দেখ মাহি, নাটক করবি না আমার সামনে, কষে একটা দেবো গালে। আমি চিনি মিক্সড করে আনছি। তাই খেতে কোন সমস্যা হবে না। তাই চুপচাপ খেয়ে নে। আজ অনেক ধবল গেছে তোর উপর তা আবার এই অবস্থায়। কাল আবার বৌ-ভাত। আমি চাইনা তুই অসুস্থ হয়ে পড়িস।
নাবীলের কথা শুনে মাহি চুপচাপ নাক বন্ধ করে দুধটা খেয়ে নিলো।
স্বামী স্ত্রীর নতুন প্রেমের গল্প
মাহির এখন নতুন চিন্তা হলো নাবীলের সাথে এক বিছানায় শোয়া। এসব ভাবতে ভাবতে হঠাৎ ঘরের লাইট বন্ধ হয়ে গেলো। মাহি কিছু বলবে তার আগেই নাবীল মাহিকে কোলে তুলে নিলো, মাহিতো পুরো শোকড। লাইটের আবছা আলোয় মাহি নাবীলকে দেখতে পাচ্ছে। নাবীল মাহিকে বিছানায় শুয়ে দিয়ে নিজেও মাহির বুকের উপর মাথা দিয়ে শুয়ে পড়লো। নাবীলের এতো কাছে থাকায় মাহির হ্রদস্পন্দন যেন বেড়ে গেলো।
আর এ দিক দিয়ে নাবীল মাহির বুকে মাথা রেখে মাহিকে জরিয়ে ধরে শুয়ে আছে। মনে হয়, এই স্থানটা যেন ওরই ছিলো, শুধু এতোদিন কাছে ছিলোনা।
নাবীলঃ জানোস মাহি, ৫বছর ধরে তোর অপেক্ষা করছি। তোকে পাবার জন্য ছটফট করেছি। তোকে একদিন না দেখে থাকতে পারতাম না। তাই কতো দিন তোর কলেজ এ গিয়ে তোকে লুকিয়ে লুকিয়ে দেখছি। তোর আশেপাশে কাউকে সহ্য হতো না। তোকে একটু স্পর্শ করার জন্য মন ব্যাকুল হয়ে পরতো। কিন্তু আমি তো আমার মাহিকে ভালোবাসি, তাই তোকে অপবিত্র করতে চাইনি।
তোর অবহেলায় আমি কখনো নেশা করিনি। কারণ তুই নিজেই আমার নেশার কাজ করিস। নেশা যেমন মস্তিষ্ককে বস করে। তোর নেশাও আমার পুরো শরীলে চড়ে গেছে। কতো রাত নির্ঘুম কাটিয়েছি, আমি জানি না। কিন্তু সকাল হলেই তোকে দেখার জন্য ছুটে গেছি, খুব বলতে ইচ্ছা করতো, আমি তোকে ভালোবাসি। ঠিক কতক্ষানি ভালোবাসি বলতে পারবো না।
ভালোবাসার পরিমাপ মাপতে পারবোনা, ভালোবাসার গভীরতা দেখাতে পারবো না। কিন্তু সব শেষে বলবো ভালোবাসি, ভালোবাসি। তুই ভালো না বাসলোও তোকে আমি ভালোবাসব, ভালোবাসতে না জানলে শিখিয়ে দেবো। কিন্তু তবুও ছেড়ে যাওয়ার কথা চিন্তা করবি না। ছেড়ে যেতে চাইলে তোর পায়ের শিকল হয়ে যাবো, আর ভালোবাসলো তোর গলার মালা হয়ে থাকবো। তুই ভুল করলে শাস্তি দেবো, আবার ভালোবাসা দিয়ে পুষিয়ে দেবো। কিন্তু ছাড়তে তোকে কখনোই পারবো না।
মাহি বুঝতে পারছে নাবীলের চোখ দিয়ে জল পড়ছে, কিন্ত আজ মাহির চোখদিয়েও অশ্রু ঝরছে। আর এবারকার অশ্রু কস্টের না, এক পরম সুখের, মাহি কখনো ভাবতেও পারেনি নাবীল ওকে এতোটা ভালোবাসে। যে মানুষটি সবসময় আমার উপর রাগ দেখাতো, তার রাগের পেছনে ছিলো আমার জন্য বুক ভরা ভালোবাসা। কেনো আমি দেখলাম না নাবীলের মনের কষ্টটা নাবীলের চোখ বলে দিতো। তাও লুকাতে চাইলেও পারতো না।
এসব ভাবছে আর নাবীলের মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
এতোদিন পর মনে হয় নাবীল কোন টেনশন ছাড়া শান্তিতে ঘুমাচ্ছে।
আর মাহিও এসব ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে গেলো।
চলবে….
পরের পর্ব- রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১৭
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প