রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১৫: গত পর্বে মাহির হটাৎ বিয়ের আয়োজনে মাহি চমকে গেলেও নাবিল কিন্তু বেশ খোশমেজাজে আছে। বাড়িতে বিয়ের ধুম আয়োজন চলছে। মাহি কিন্তু আনমনে হয়ে আছে। দেখা যাক কি হয় এরপর-
মাহির অস্থিরতা
আজ মাহির বিয়ে…
সকাল সকাল ঘুম থেকে মা আমায় একপ্রকার টেনে উঠালো।
মাহিঃ মা আরো একটু ঘুমাইনা এমন করো কেনো?
আম্মুঃ এই কি বলিস, তাড়াতাড়ি উঠ, আজ বিয়ে, কতো কাজ আছে? তুই তাড়াতাড়ি নাস্তা কর। পার্লার থেকে মেয়েরা এসে পড়বে তোকে সাজাতে। নাবীল ওদের পাঠিয়েছে, যে কোন সময় এসে পরবে। তুই একটু তাড়াতাড়ি কাজ করতে পারোস না। আজ বাধে কাল শ্বশুর বাড়ি যাবি। এভাবে ঢিলা ঢিলা হয়ে কাজ করলে চলে। শ্বশুর বাড়ীর মানুষ বলবে আমরা তোকে কিছুই শিখাইনি।
মাহিঃ তাইতো বলছি আমাকে কোথাও পাঠাতে হবে না। আমি তোমাদের সাথেই থাকবো। (মার কোমর জরিয়ে ধরে)
আম্মুঃ পাগল মেয়ে, এটা কি হয় কখনো! একদিন না একদিন তোকে নিজের বাসায় যেতেই হবে। আর তোর স্বামীর বাসাই এখন তোর বাসা। মেয়েরা বাবা মায়ের কাছে কারো আমানত হিসেবে থাকে। একদিন না একদিন যার জিনিস তা কেতো দিতেই হবে। আর কথা বলিস না, তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে, নাস্তা করে নে।
মাহি উঠতে যাবে, তখনিই মেসেজ,
নাবীলঃ শুভ সকাল জান, নিজের বাসায় আসার জন্য তৈরি হয়ে নে। পার্লারের মেয়েদের সব বলে দেয়া হইছে, তাই তাদের কোন ডিস্টার্ব করবি না। তোর কাজ শুধু বসে থাকা, ওরা তোকে আমার মতো করে তৈরি করে দেবে।
ওওও আরেকটা কথা ভুলে গেছি love u jan…
মাহিঃ তোর লাভ ইউ তুই রাখ। আমার জীবনটা তেজপাতা বানিয়ে এখন আসছে লাভ ইউ বলতে। ব্যাটা খাটাইশ কোথাকার! মন চায় বুড়ি গঙ্গা নদীতে গিয়ে ফেলে দিই। আমার শান্তি কেড়ে নিয়ে আবার আমাকে এখন ভালোবাসা দেখাতে আসছে। (মাহি মনে মনে কথা গুলো বলছে আর দাঁতে দাঁত চাবাচ্ছে)
আবার মেসেজ আসছে,
নাবীলঃ গালাগালি হইচে, কিছু গালাগালি রেখে দে পরে তোর কাজে লাগবে, এখন তাড়াতাড়ি কর।
মাহির চোখ কপালে উঠে যায়। এই নাবীলের বাচ্চা আমার মনের কথা জানে কিভাবে! (এদিক ওদিক তাকিয়ে, মাহি)
না, বাদ দে মাহি। উঠে ফ্রেস হয়ে নেই।
বধূ সেজে মাহি বর সেজে নাবিল
পার্লারের মেয়েরা মাহিকে রেডি করিয়ে দিলো। পার্লারের মেয়েদের খুব কড়া করে বলে দেয়া হইছে, ভারী মেকআপ একদম না। আর চুলে জোট করানো যাবে না। তাই তারা সেভাবেই রেডি করালো। সিম্পল সাঝে গর্জিয়াছ যাকে বলে। মাহির শরীলের গায়ের রং এর সাথে বিয়ের লেহেঙ্গাটা একদম পার্ফেক্ট মানিয়েছে। তার সাথে মেচিং জুয়েলারি, হাত ভরা চুরী। মাহিকে দেখে আজকেউ চোখ ফেরাতে পারবে না। পার্লারের মেয়েরাও খুব অবাক। এতো সিম্পল সাজে কোন বউ তারা দেখেনি, তবুও জেনো চোখ ফেরানো যায় না এই বউ থেকে। মাহির জন্য প্রত্যেকটা জিনিস নাবীল নিজেই পছন্দ করে এনেছে, তাইতো সব পার্ফেক্ট।
নাবীলকেও আজ কোন রাজকুমার থেকে কম লাগছে না, মাহির সাথে মেচিং করেই শেরয়ানি পড়েছে নাবীল। নাবীলের বাসার সবাই কমিউনিটি সেন্টারের দিকে রওনা দিলো।
নাবীল আসার আগেই মাহিকে সেন্টারে আনা হলো।
এদিক দিয়ে নাবীলও এসে পড়েছে। নাবীলকে সবাই বরণ করে নিলো।
অবাক করার বিষয় হলো, আমার জামাই লজ্জা শরম সব ভুলে ফ্রেন্ডদের সাথে নাচতে নাচতে আসছে। তার দুপাশে তার কাজিন আর ফ্রেন্ডসরাও নাচছে। সে ও তাদের তালের সাথে তাল মিলাচ্ছে। আশেপাশের সবাই খুব আনন্দ পাচ্ছে, এমন বিয়ে পাগল জামাই আমি এই জীবনে দেখি নি। (মনে মনে)
যেখানে আমি লজ্জায় মাথা উচু করতে পারছি না, আর সে নাকি নিজের বিয়েতে নিজেই নাচছে।
দাদী সত্যিই বলছে, এটা শেষ জামানা কতো কিছুই না আরো দেখতে হবে।
কান্নাবিজড়িত বিদায়
এরপর বিয়ের আয়োজন শুরু হলো। আমাকে আবার কবুল বলতে হলো। একই ব্যক্তির সাথে আমার দুবার বিয়ে হলো। কি ভাগ্য আমার!
আয়োজন শেষে এবার এলো বিদায়ের পালা। আমার কান্নাতো কেউ বন্ধই করতে পারছে না। সবার কাছ থেকে বিদায় রুহি কিন্তু শফিক ভাইকে দেখিনা। এই তিনদিন আমি শফিক ভাইকে তেমন কাছে পাইনি। আমার সাথে খুব কম কথা বলছে। আর আজ তো আমার বিদায়ের সময় সে আসেনি। আমি সবার দিকে তাকিয়ে শফিক ভাইকে খুঁজছি। আমি জানি আমার বিদায়টা সে দেখতে পারবে না তাই হয়তো সামনে আসেনি। নাবীল ব্যাপারটা বুজতে পারছে।
তাই আমার হাতটা ধরে ভিড় থেকে আমাকে বাহির করে এনে, বারান্দায় নিয়ে আসে। আমি সামনে তাকিয়ে দেখি শফিক ভাইয়া একটা চেয়ারে মাথাটা দুহাত দিয়ে ধরে বসে আছে, হয়তো কাঁদছে নিরবে। আমি দৌড়ে গিয়ে শফিক ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরলাম।
মাহিঃ ভাইয়া, আমি যাবো না। তোমাদের ছাড়া আমি কিভাবে থাকবো? তুমি যা বলবে আমি তাই করবো, তোমার সব কথা শুনবো। প্লিজ ভাইয়া, আমি যাবো না।
শফিকও বোনকে ধরে নিরবে কাঁদছে।
নাবীল দূর থেকে দাঁড়িয়ে সব দেখছে, তার চোখেও কিছুটা জল এসে পড়েছে, ভাই বোনের ভালোবাসা দেখে।
নাবীলও ভালো করে জানে, শফিকের কলিজা মাহি। তাই মাহির বিদায় সবথেকে কষ্টকর শফিকের জন্য। কিন্তু আজ নাবীলের কিছুই করার নাই। কারণ এটাই নিয়ম। মাহি যদি শফিকের কলিজা হয়, তাহলে নাবীলের নিঃশ্বাস। আর নিঃশ্বাস ছাড়াকেউ বাঁচাতে পারেনা, নাবীলও পারবে না।
একটা নাড়ী, আর দুজন ভালোবাসার মানুষ, একজন তার ভাই, আরেক জন তার সঙ্গী। আজ একজনকে ছেড়ে আরেক জনের কাছে যেতেই হবে। এটা যে মেয়েদের কপাল।
বোনের জন্য ভাইয়ের আকুতি
শফিক কিছুই বললো না মাহিকে, ওকে নাবীলের কাছে নিয়ে গেলো। মাহির হাতটা নাবীলের হাতে দিয়ে দিলো।
শফিকঃ আমার কলিজাটা আজ ছিড়ে তোকে দিয়ে দিলাম, আজ থেকে তুইও ওকে আমার মতো বুকে আগলে রাখিস। ও ভুল করলে ওর ভুল গুলো ক্ষমা করে দিস।
নাবীলঃ তুই চিন্তা করিস না, আজ থেকে ওর ভালোমন্দ সব দায়িত্ব আমার।
শফিক জোর করে মাহিকে গাড়িতে বসিয়ে দিলো কিন্তু মাহি বার বার বের হয়ে যায়। শেষে শফিকের রাগ উঠে যায়,
শফিকঃ আর একবার গাড়ী থেকে নামলে আমি কিন্তু তোর সাথে আর কথা বলবো না।
এরপর মাহি আর গাড়ী থেকে নামেনি।
মাহি চলে গেলো নাবীলের সাথে, নতুন এক জীবনে, নতুন এক দুনিয়া। পুরাতন সব চেহারাগুলো ফেলে সব নতুন মানুষ গুলোকে আপন করতে।
সারা গাড়িতে মাহি এভাবেই কান্না করতে লাগলো। আর নাবীল মাহিকে টিস্যু পেপার দিতে থাকে।
এদিক দিয়ে নাবীল ভাবতে থাকে…
আজ যা কান্না করার করে নে, এরপর তোকে আর কাঁদতে দেবোনা। তোর চোখের জল, আমার হ্রদয়টাকে ছিন্নবিচ্ছিন্ন করে। তোকো যে বড্ড ভালোবাসি পাগলী। চলবে….
পরের পর্ব- রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১৬
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প