রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১৩: গত পর্বে আমরা মাহি ও নাবিলের মাঝে একে অপরের কিছু অনুভূতি দেখছি। চলুন দেখি মাহি নাবিলকে স্বামী হিসেবে কিভাবে মেনে নেয়?
মাহির পরীক্ষা
মাহির পরীক্ষা আজ, তাই সবার কাছ থেকে দোয়া নিয়ে বাড়ী থেকে বের হলো। শফিক আগেই বাড়ীর বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে। আজ শফিক নিজেই নিয়ে যাবে বোনকে।
বাড়ী থেকে বের হয়ে দেখি নাবীল দাঁড়িয়ে আছে। শফিক ভাই আর নাবীল কথা বলছে। আমাকে দেখে নাবীল শুধু একবার তাকালো, আর সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো। শফিক ভাইয়ের হাতে একটা ব্যাগ দিয়ে হুন্ডাটা নিয়ে চলে গেলো, আমি তো শোকড। লোকটা আজও একটা কথা বললো না। আমাকে দেখেও না দেখার ভান করে চলে গেলো।
আমি শফিক ভাইয়ের পাশে দাঁড়ালাম।
আম্মুঃ আরে তুই আসছোস, আরো একটু আগে আসলে নাবীলের সাথে দেখা করতে পারতি। বেচারা এতোক্ষণ এখানেই ছিলো তোর জন্য।
মাহিঃ তোমার বন্ধু আমাকে দেখেই পালিয়েছে, এ কথা তোমায় কিভাবে বলি! (মাহি মনে মনে)
আম্মুঃ নে ধর, এটা তোর জন্য নাবীল দিয়েছে।
শফিকঃ কি এটাতে?
আম্মুঃ আরে আমি কি করে বলবো? তোকে দিয়েছে, তুই দেখ। আমি বরং একটা রিকসা নিয়ে আসি।
একটা সোপিং ব্যাগ এর মতো, ব্যাগটা খুলে দেখলাম।
শফিকঃ আরে এখানে একটা চকলেট বক্স, একটা কলম, একটা খুব সুন্দর হাতের ঘড়ি আছে, আর একটা চিরকুট। তাতে লেখা – “সব চিন্তাবাদ দিয়ে ভালোমতো পরীক্ষা দিস।”
আমার খুব হাসি পেলো চিরকুটটা দেখে।
শফিক ভাই আমাকে হলে নামিয়ে দিয়ে চলে গেলো। আসার সময় রুহির সাথে আসতাম।
পরীক্ষার এ কয়দিন নাবীলের সাথে আমার একবারও দেখা হয়নি। কিন্তু নাবীল প্রতিদিনই শফিক ভাই বা মায়ের কাছ থেকে আমার সব খবর নিতো।
এভাবে এক এক করে সব পরীক্ষা শেষ হয়ে গেলো, আর আজ আমার লাস্ট পরীক্ষা। তাই কিছু ফ্রেন্ডরা ডিসিশনস রুহিম পরীক্ষার পরে একটা ছোট পার্টি করবো। কারণ এর পর হয়তো কেউ কাউকে দেখবো না।
যেমন বলা তেমন কাজ। পরীক্ষার পর সবাই একটা রেস্টুরেন্ট এ গেলাম। আমাদের সাথে আমাদের কোচিং এর কিছু ফ্রেন্ডরাও যোগ দিলো।
নাবিলের লুকোচুরি
সবাই খাবার অর্ডার করে গল্প করতে লাগলাম। হঠাৎ আবিরও কোথা থেকে যেনো হাজির হয়ে গেলো। আবিরকে দেখে তো আমি আবাক। কারণ ওর এখানে কি কাজ?
মাহিঃ আরে আবির ভাই, আপনে এখানে। কোন কাজে আসছেন?
আবিরঃ না, তোদের পার্টিতে জয়েন হতে আসছি। আমি থাকলে কোন সমস্যা।
মাহিঃ না, সমস্যা হবে কেনো? আপনে কিভাবে জানলেন আমরা এখানে?
আবিরঃ আরে রুহিকে কিছুক্ষণ আগে কল করলাম, ও বললো তোরা সবাই নাকি পার্টি করতে এখানে আসছোস। তাই আমিও বিনাইনভার্ট এ এসে হাজির হলাম।
মাহিঃ ওওওও আচ্ছা। আমিতো রুহির দিকে তাকানোর সাথে সাথে বেচারি ভয় পেয়ে গেলো। কি মনে করে যেনো আমি একটু পিছনের দিকে তাকলাম। কিন্তু যা দেখলাম মনে হলো, আমার এখনি মনে হয় দম বন্ধ হয়ে যাবে।
পেছনের দুটা টেবিল পরেই কয়েকজন বসে আছে। তাদের মধ্যে একজন আমার দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে। এই চোখ অনেক চেনা। চোখগুলো থেকে মনে হয় আগুন বের হবে। আর আমাকে জ্বালিয়ে দেবে। কারণ এই চোখ দুটো আর কারো না নাবীলের।
এই দুনিয়াতে কি আর কোন লোক নাই, ঘুরেফিরে নাবীলের সামনেই কেনো পরি আমি। পোড়া কপাল আমার, যার ভয়ে দুনিয়া ছাড়ি সেই আমার সাথে মরে। হে আল্লাহ আমাকে বাঁচিও এবার। তার উপর এই আবির আর সময় পাইনি আসার। ওর জন্য কতো কি হলো? নাবীল তো মনে করবে, আমিই আবিরকে আসতে বলছি। রেগে মেগে রুহির দিকে তাকালাম।
রুহিঃ কিরে তুই এতো রেগে আছিস কেনো? সরি ইয়ার। আর আবির ভাই আসছে তো কি হইছে, সে তো আর অপরিচিত কেউনা।
মাহিঃ রেগে আছি কেনো? দেখ আমার যম পিছে বসে আছে।
রুহিঃ পিছে তাকিয়ে তো বেচারি শোকড, আরে জিশশশশান ভা.. ভা..ই।
মাহিঃ হুমমমমম, নাবীল। এবার বুঝতে পারছো, আমি রেগে আছি কেনো?
রুহিঃ আরে মাপ করে দে দোস্ত, তোর জামাইয়ের কি কোন কাজ নাই? এখানে কি করে, আর সে জানলো কি করে তুই এখানে?
মাহিঃ আরে আমি কি করে বলবো, মনে হয় কোন কাজে আসছে। তাইতো পরিবেশ এতো শান্ত।
রুহিঃ হুমমমমম, মনে হয়। তাড়াতাড়ি খেয়ে চল, চলে যাই। তা না হলে নাবীল ভাই এসেই তোকে ঠাশঠাশ করে লাগিয়ে দিবে।
মাহিকে প্রপোজ
দুই বান্ধবী মিলে মিনমিন করেই কথাগুলো বলছে।
এদিক দিয়ে জিদ্দের চোটে নাবীলের চেহারা লাল হয়ে গেছে। আজ আবার মাহিকে আবির ছেলেটার সাথে দেখছে। যা নাবীলের একদম পছন্দ না, কিন্তু নাবীল তবুও চুপ হয়ে আছে। কারণ সাথে ওর কিছু ফ্রেন্ডরাও আছে। আর ওরা কেউ মাহিকে আগে দেখেনি। তাই এখানে সিনক্রিয়েট করতে চায়না নাবীল।
নাবীল মাহির দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে কফি খাচ্ছে। আর বলছে, যা করার করে নেও সোনা। এরপর তোমাকে আমার খাচায় বন্দি হতেই হবে। তখন দেখবো তুমি উড়ো কিভাবে?
মাহি আর কোন কথাই বললো না কারো সাথে। আর আবির তো সেই কখন থেকে বাজতেই আছে, যা মাহির একদমই ভালো লাগছে না।
হঠাৎ আবির মাহির সামনে হাটুগেরে বসে মাহিকে প্রপোজ করলো।
আবিরঃ মাহি আমি তোমাকে অনেক ভালোবাসি। বলবো বলবো করে বলা হয়নি। কিন্তু আজ আর মনের কথা মনে রাখতে চাই না, তাই তোমাকে বলেই দিলাম। তুমি কি আমার বউ হবা?
মাহিঃ মাহিতো লাফ দিয়ে উঠে দাঁড়ালো, আবির কি সিনক্রিয়েট করছেন। সবাই দেখছে, প্লিজ উঠে চেয়ারে বসেন।
আবিরঃ না মাহি, তুমি আগে বলো তুমি আমার ভালোবাসা একসেপ্ট করেছো।
মাহিরতো মনে চাইতাছে, একটা দড়ি নিয়ে গলায় দড়ি দিয়ে মরে যাই। রেস্টুরেন্ট এর সব লোক ওদের দিকে তাকিয়ে আছে, সাথে নাবীলও।
নাবীল শুধু দাঁতেদাঁত চেপে বসে আছে মাহির উত্তর জানার জন্য।
মাহিঃ আবির পাগলামো ছাড়েন, আর এসব আজে বাজে কি বলছেন? কি জানেন আমার সম্পর্কে… । আমি বিবাহিত।
আবিরঃ না, আমি বিশ্বাস করি না। আগেতো কখনো শুনি নাই? আর আজ হঠাৎ বলছো তুমি বিবাহিত। দেখো মাহি, একদম মিথ্যা বলবে না।
মাহিঃ ও খোদা! আরে বেকুব তকে মিথ্যা বলে আমার কি লাভ? ফাজিল কোথাকার, বিশ্বাস না হলে রুহিকে জিজ্ঞেস করে দেখিস। আর রুহি এই গাধাটা আমার সামনে কোন দিন যাতে না আসে।
মাহী ও নাবিলের বাইক প্রেম
এরপর মাহি আর এক মুহুর্তেও ওখানে থাকেনি। বাহিরে চলে গেলো।
আবিরঃ What is this রুহি। মাহি আমাকে তুই করে বলছে। এ কেমন ভাষা? আমি কি এমন রং বললাম।
রুহিঃ ভাইয়া কিছু বলার আগে জায়গা, আর পরিস্থিতি বুঝে বলতে হয়। আর তুমি তো….। বাদ দেও, এটা সত্য মাহির বিয়ে হয়ে গেছে।
আবিরঃ তাহলে আমাকে কেনো বলিস নি?
রুহিঃ আরে মাহির পরীক্ষার পরে সবাইকে বলা হতো। অনেকটা ঘরোয়া ভাবে বিয়েটা হইছে, তাই কেউ জানে না।
বেচারা আবির মনটাই ভেঙে গেলো।
এদিক দিয়ে মাহি..
নিজেকে বকতে বকতে হেটে যাচ্ছে, কচু একটা রিকসাও পাইনা।
হঠাৎ মাহির সামনে একটা বাইক দাঁড়ালো। মাহি বাইকটা চিনে। এটা কার। মাহি ভয়ে পিছাতে চাইলে হঠাৎ নাবীল বলে উঠে, চুপচাপ উঠে বস। (খুব গম্ভীর ভাবে কথাটা বলে)
এরপর নাবীল আর কোন কথা বলে নি।
এখন না বসলে আমার কপালেই খারাপি আছে। তাই চুপচাপ বসে পড়াই ভালো। আরে আমিতো আবার বাইকে উঠতে ভয় পাই। শফিক ভাইকে শক্ত করে ধরে রাখতাম। কিন্তু এখন কি করি? কিছু বললে আবার কে জানে আমাকে হয়তো বাইকের নিচে ফেলে দিবে।
নাবীল ভালো করেই জানে মাহি বাইকে উঠতে ভয় পায়। তাই মাহির একটা হাত টান দিয়ে নাবীলের বুকের সামনে নিয়ে আসলো। মাহিও ভয়ে হাত আর সারালো না।
মাহি নাবীলের পিঠের সাথে একদম লেগে আছে, এতে মাহির খুবই আনইজি লাগছে। এমন করে আগে কখনো নাবীলের সাথে বসেনি। আর নাবীলও এর আগে মাহিকে নিজের বাইকে উঠায়নি। কিন্তু আজ নাবীলের খুব ভালো লাগছে। বাইকের আয়না দিয়ে মাহিকে দেখছে। বেচারি মাহি, নাবীলের এতো কাছে বসায় লজ্জায় লাল হয়ে যাচ্ছে। যা নাবীল খুব উপভোগ করছে। একটু আগে মাহির উপর যে রাগ ছিলো তা এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো।
নাবীল সারারাস্তায় খুব আস্তেই বাইক চলালো, মাহির জন্য।
কিছুক্ষণ পর মাহির বাড়ীর সামনে এলে, মাহিকে নামিয়ে দিয়ে নাবীল চলে যায়।
আর মাহি নাবীলের যাওয়ার পথে চেয়ে থাকে। মাহি চিন্তা করছে এটা কিভাবে হলো? আমাকে আজ কিছুই বললো না, কেন? চান্দু, এতো ভালো হলো কেমনে?
মাহি জানেই না, নাবীল কি প্লান করে আসছে এতো দিন? চলবে….
পরের পর্ব- রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১৪
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প