রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১২: গত পর্বে নাবিল আর মাহির কিছু রোমান্টিক মুহুর্ত দেখেছি আমরা। একটু একটু করে মাহি নাবিলকে মনের কোণে জায়গা করে দিতে শুরু করেছে। স্বামী স্ত্রীর সম্পর্কটা এখন কিভাবে কোথায় গড়ায় তা দেখার পালা।
মাহির কলেজে ফেরা
আজ থেকে মাহি কলেজে যাওয়া শুরু করলো আবার। অনেক দিন কলেজে যায় না। আজ রুহিও আসেনি, অসুস্থ বলে। তাই মাহি একাই গেলো, আবার কলেজ শেষে একাই বাসার দিকে রওনা দিলো। কিন্তু পথে আজ আবিরের সাথে দেখা হয়ে গেলো।
আবিরঃ আরে মাহি কোথায় যাও?
মাহিঃ আবির ভাই, এতো দিন পর, কোথায় ছিলেন? কোন খোঁজ খবর ছিলোনা এতোদিন।
আবিরঃ আরে আমি একটু ঢাকার বাহিরে কাজে গিয়েছিলাম। কিন্তু তোমারও তো কোন খবর নাই। তুমি তো পারতে আমাকে একটা কল দিতে।
মাহিঃ আসলে ভাইয়া আমিও ঢাকায় ছিলাম না, কাজিন এর বিয়েতে গিয়েছিলাম। এতোদিন কলেজও আসেনি। আজই আসলাম।
আবিরঃ ওওও আচ্ছা, তাই বলো। রুহি নাকি অসুস্থ।
মাহিঃ হুমমমম, আমি ও আজই জানতে পারলাম।
আবিরঃ তুমি কি যাবে দেখতে ওকে? গেলে চলো আমার সাথে আমি তো ওর বাসায়ই যাচ্ছি।
মাহিঃ না থাক ভাইয়া, আমি বিকেলে গিয়ে দেখে আসবোনি। আপনি জান।
আবিরঃ আরে না না। তোমার কোন কথাই আজ শুনবো না। তুমি এখনই আমার সাথে যাবে। কতোদিন পর দেখা হলো, তোমার সাথে কথা বলিনা, অনেক দিন হলো।
মাহিঃ এক ধরনের জোরাজোরি করার পর মাহি উপায় না পেয়ে আবিরের সাথে এক রিকশায় উঠে পরে।
রুহি আর আবিরের সাথে অনেক গল্প করে মাহি বিকেলে বাসায় আসে।
স্বামী স্ত্রীর প্রথম ঝগড়া
বাড়ীতে এসেই…
মাহির মাঃ কিরে এতো দেরি করলি কেনো। নাবীল কখন থেকে এসে বসে আছে তোর ঘরে জানোস। আর তোর কোন খবর নাই।
মাহিঃ নাবীলননন…। উনি আসবে আমাকে তো বলেনি। তাহলে আমি কি করে যানবো। (মাহি একটু আশ্চর্য হলো)
মাহি ঘরে গিয়ে দেখে নাবীল বসে আছে। আজ নাবীল কে অন্য রকম লাগছে মাহির। চোখে মুখে কেনো জানি রাগ দেখা যাচ্ছে।
মাহিঃ স্যার আপনে আসবেন আমি তো জানতাম না, জানলে তাড়াতাড়ি আসতাম।
নাবীল উঠে আমার সামনে এসে দাড়ালো, আমার হাতটা ধরে খাটে বসালো। ঠিক আমার সামনে একটা চেয়ার নিয়ে বসে তার দুপায়ের মাঝে আমাকে আটকিয়ে ফেললো। আমিতো চুপচাপ বসে আছি আর ভাবছি আজ আবার কি হলো? এই রাক্ষসটা এমন রেগে আছে কেনো।
নাবীলঃ কোথায় ছিলি তুই।
মাহিঃ আ… মিমিমি। রুহিদের বাসায় গিয়েছিলাম, রুহি অসুস্থ তাই।
নাবীলঃ ছেলেটা কে মাহি?
মাহি উঠে দাড়িয়ে গেলো। কো..ননন…ছেলে। (ভয়ে মাহির গলা শুকিয়ে গেলো)
নাবীল মাহির হাতটা ধরে আবার ওর সামনে বসিয়ে দিলো। যার সাথে রিক্সায় বসেছিস, কেনো মনে পরছে না।
মাহি ভয়ে নিচের দিকে তাকিয়েই বলছে,
মাহিঃ ওওওও তো আবির ভাইয়া।
নাবীলঃ কে এই আবির ভাইয়া যাকে আমি চিনিনা। দেখেতো মনে হয়না তোর সাথে পড়ে। তাহলে কে..?
মাহিঃ নি নি রুহির কাজিন।
নাবীলঃ রুহির কাজিন তোকে চিনে কিভাবে?
মাহিঃ রুহির বাসায় পরিচয়ে হয়েছিলো। রুহিকে দেখতে যাচ্ছিলো, তাই তার সাথে আমিও গিয়েছিলাম। আর কিছুনা।
নাবীলঃ পরিচয়টা মনে হয় খুব ঘনিষ্ঠ তা না হলে ছেলেটা বলার সাথে সাথে তুই ওর সাথে চলে গেলি।
নাবীল মাহির হাতটা ধরে এক টান দিয়ে মাহিকে সামনে টেনে আনে, মাহির মুখের উপর নাবীলের গরম নিঃশ্বাস পড়ছে, তা মাহি বুঝতে পারে।
নাবীলঃ রুহির বাসায় সেজেগুজে যাওয়ার কারণ কি এই আবির?
মাহি ভয়ে কাঁপতে থাকে।
মাহিঃ না না না কি বলছেন?
মাহির প্রতি নাবিলের না বলা ভালবাসা
এমন কিছুই না বলে মাহি উঠে দাঁড়াতে চায়। নাবীল রেগে মাহির দুই বাহু খুব শক্ত করে ধরে।
নাবীলঃ কি মনে করিস তুই, আমি বোকা কিছুই বুঝি না, নাকি নিজেকে খুব বেশি চালাক মনে করিস। তুই যা খুশি তাই করবি আর আমি জানতে পারবো না। তুই কবে বুঝবি আমার ভালোবাসা, নিজের ক্যারিয়ার ফেলে শুধু তোকে পাহাড়া দিই, যাতে কেউ তোকে নজর দিতে না পারে, আর তুই কিনা নিজের নজরে অন্যকে বসাতে চাস, কেনো বল। আমার ভালোবাসার কি কোন মুল্য নেই তোর কাছে, তুই ছাড়া কোন মেয়েকে কাছে আসতে দেয়াতো দূরে থাক চোখ তুলে দেখিনি। শুধু তোকে ভালোবেসে গিয়েছি। বিনিময় তোর থেকে কিছুই চাইনি।
কিন্তু এখন তুই শুধু আমার ভালোবাসা না, আমার বিবাহিত বউ, আর আমার বউয়ের মুখে অন্য কারো নাম আমি কিছুতেই শুনতে চাইনা। আমি আগেই বলে দিয়েছি, তোকে কেউ হাত দিলে আমি তাকে যেমন মাপ করবো না, ঠিক তুই কারো কাছে গেলে আমি তোকেও কিন্তু মাপ করবো না। আমার শাস্তি থেকে তুই নিজেকেও বাঁচাতে পারবি না। মনে রাখিস, আমি ভালোবেসে তোর জন্য মরতে পারি, তেমনি তুই অন্যকারো হতে চাইলে নিজ হাতে তোকে মেরে ফেলবো। এরপর নিজেও মরবো।
নাবীলের চোখের দিকে তাকানো যাচ্ছে না, আর মাহির চোখ দিয়ে তো অশ্রু বেয়েই চলছে।
মাহিঃ প্লিস আমাকে ছাড়ুন, আমার খুব লাগছে।
নাবীলঃ তোর খুব লাগছে, আমারো এমন লেগেছে তোকে আবিরের সাথে দেখে।
মাহিঃ আপনে ভুল বুজছেন, আমার আর আবির ভাইয়ের মধ্যে এমন কিছুই নেই।
নাবীলঃ না থাকলে তোর জন্যই ভালো। নাবীল কথাটা বলেই মাহিকে ছেড়ে দেয়। ওখান থেকে চলে যায়।
মাহি খাটের উপর বসেই কান্না করছে। কেনো কান্না করছে তা হয়তো মাহি নিজেও ঠিকমতো জানে না, আবিরকে মাহি পছন্দ করে, কিন্তু ভালোবাসে না। আর নাবীল তো এখন ওর স্বামী, তাই ভালোবাসতে চায় কিন্তু ভয়ে ভালোবাসতে পারেনা। সেই ছোট কাল থেকে নাবীলকে দেখে আসছে কিন্তু সেই চোখে কখনো দেখেনি। তাই অনেক সংশয় কাজ করে মাহির মাঝে।
মাহি ও নাবিলের ইঙ্গেজমেন্ট
সেদিন এর পর থেকে মাহি আর নাবীলের মধ্যে কোন কথা হয়নি। নাবীল শফিকের কাছ থেকে মাহির সব খবর নিচ্ছে কিন্তু মাহির সাথে কোন কথা বলে না।
আসতে আসতে শুক্রবার এসে পড়েছে। আজ নাবীলের বাড়ী থেকে সবাই আসবে। মাহির বাবা মার সাথে কথা বলে সব ঠিকঠাক করে মাহিকে আংটিও পড়িয়ে যাবে।
তাই সকাল সকাল ই মাহির বাড়ী মেহমান দিয়ে ভরে গিয়েছে, মাহির কিছু কাজিন আর ফুফুরা আসছে। মাহিকে তার কাজিনরা ও রুহি মিলে রেডি হতে সাহায্য করলো। আজ মাহি একটা নীল রংয়ের শাড়ী পড়লো, আর সাথে কিছু হালকা সাজ। এতেই ওকে অনেক সুন্দর লাগছে। আর মাহি ভালো করেই জানে বেশি সাজ নাবীলের একদমই পছন্দ না। এর জন্য মাহি একদিন থাপ্পড় ও খেয়েছিলো নাবীলের হাতে। সে থেকে মাহি খুব হালকা সাজই দেয়।
কিছুক্ষণ পর নাবীলের পুরো পরিবার এসে পড়েছে। সাথে নাবীলও। এই প্রথম নাবীল এই বাড়ীতে শফিক এর বন্ধু হয়ে না বরং এ বাড়ীর জামাই হয়ে এসেছে। তাই নাবীলের খাতিরদারি এখন ভিন্ন।
কিছুক্ষণ পর মাহিকেও নিয়ে আসে।
নাবীলের মাঃ এইতো আসছে আমার বউ মা। নাবীলের মা মাহিকে নাবীলের পাশেই বসালো। আর উনিও মাহির সাথেই বসলো। আমার তো মাহিকে খুব পছন্দ হয়েছে। ওর পরীক্ষা না থাকলে আমরা আজই নিয়ে যেতাম আমাদের বাসায়।
নাবীলের মার কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো।
এরপর একটা আংটি নাবীলকে দিলো মাহিকে পড়িয়ে দেবার জন্য, মাহি হাত বাড়াতে দেরি করছিলো বলে নাবীল নিজেই মাহির হাতটা ধরে আংটিটা পড়িয়ে দিলো। আর মাহিকেও নাবীলকে আংটি পড়িয়ে দিতে হলো।
এভাবে ওদের এংগেসমেন্টটা হয়ে গেলো। কিছুক্ষণ পর মাহির কাজিনরা নাবীল ও মাহির কিছু ভালো ভালো পিক তুললো একটু জোর করেই।
যাওয়ার সময় নাবীল সবার থেকে বিদায় নিলেও মাহির সাথে একটা কথাও বলনি।
মাহি নাবীলের এই ব্যবহার দেখে কিছুটা অবাক হলো। চলবে….
পরের পর্ব: রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১৩
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প