রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১১: গত পর্বে আমরা দেখেছি কিভাবে নাবিল তার হতাৎ বিয়ের কথা পরিবারকে বুঝিয়ে বলে। পরিবারও মেনে নেয় এটা। এবার দেখার পালা নাবিলের সংসার জীবন আর মাহির স্ত্রী হিসেবে ভূমিকা।
মায়ের কাছে মনের কথা
নাবীল মায়ের কোলে মাথা দিয়ে শুয়ে আছে।
নাবীলঃ মা তুমি কি আমার উপর রাগ করেছো।
নাবীলের মাঃ মা কি সন্তানের উপর রাগ করে থাকতে পারে, বল?
নাবীলঃ তাহলে কিছু বলছো না কেন? আমার উপর রাগ হলে আমাকে মারো, বকো, কিন্তু চুপ করে থাকবে না। তুমি আমার সাথে কথা না বললে আমার যে কিছুই ভালো লাগে না, জানো না।
নাবীলের মাঃ পাগল ছেলে আমি তোর উপর কেনো রাগ করবো। তুই তো এমন কোন অপরাধ করিসনি। আচ্ছা বলতো, সত্যি করে বলবি, তুই কি মাহি কে পছন্দ করিস।
নাবীলঃ মা আমি মাহিকে ভালোবাসি। নিজের জীবন থেকেও বেশি ওকে ভালোবাসি। কবে, কখন, কিভাবে জানি না কিন্তু এতোটুকু জানি ও ছাড়া আমি শূন্য। আমার খালি জীবন কে ভরাট করার জন্য ওকে আমার প্রয়োজন।
(নাবীল ওর মায়ের সাথে খুব ফ্রি, সারা দিন কি করে না করে সবই ওর মাকে বলে, তাই আজও ওর ফিলিংস কাউকে বুঝতে না দিলেও মায়ের কাছে লুকায় নি)।
নাবীলের মাঃ আর মাহি! মাহি কি তোকে পছন্দ করে।
নাবীলঃ জানি না মা। ও কখনো আমাকে সেই চোখে দেখেছে কিনা জানি না। আমিও তো আমার ফিলিংস ওকে কখনো বুজতে দেইনি।
নাবীলের মাঃ কিন্তু আমার তো ভয় হয় তকে নিয়ে, তোর জিদ আর রাগের কারণে তুই সকলের কাছ থেকে আলাদা হয়ে যাস। মাহি কি তোর সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবে।
নাবীল ওর মার হাতটা ধরে,
নাবীলঃ তুমি চিন্তা করো না, যেদিন ও আমাকে মন থেকে মেনে নিয়ে ভালোবাসবে, আমার জিদ ও রাগটাকেও আপন করে নিবে। আমি ওকে আমার মতো বানিয়ে নেবো।
নাবীলের মাঃ দেখিস আবার ওকে জব্দ করতে গিয়ে তুইনা আবার জব্দ হয়ে যাস। (নাবীলের মা একটি হেসে)
শোন, শফিককে বলে দিস আমরা এই শুক্রবারেই আসছি। আমরা তো মাহিকে দেখেছিলাম,তাওহিদ এর বিয়ের সময়, তখন তো ও আরো ছোট ছিলো। আর এখনতো ও এই বাড়ীর ছোট বউ,আমাদের ও তো কিছু দায়িত্ব আছে।
নাবীলঃ আচ্ছা মা, আমি বলে দেবো।
শাশুড়ির সাথে নাবিল
২দিন নাবীলের সাথে কোন দেখা বা কথা হয়নি মাহির।
দুদিন পর নাবীল শফিকদের বাড়ীতে আসছে, মাহিকে পড়াতে। এদিক দিয়ে শফিকের চাকরীটাও হয়ে গেছে।
মাহির মা দরজা খুলে দেখে নাবীল দাঁড়িয়ে আছে।
মাহির মাঃ আরে বাবা তুমি এসো এসো ভেতরে এসো। তুমি সেদিন দেখা না করেই চলে গেলা। কাজটা ঠিক করোনি।
নাবীলঃ আসলে আন্টি, বাড়ীতে যাওয়াটা খুব দরকার ছিলো। কারণ বাসার কেউ কিছু জানতো না আর আমি চাইনা তারা অন্য কারো থেকে কিছু জানতে পারুক। তাই আর কি?
মাহির মাঃ আারে তুমি কি এখনো আমাকে আন্টি বলবে। মা ডাকবে এখন থেকে।
(নাবীল একটি লজ্জা পেলো কথাটা শুনে।
নাবীলঃ ওকে মা। আসলে আমি মাহিকে পড়াতে আসছি। ওর কিছু সমস্যা ছিলো, আমি বলেছিলাম গ্রামের বাড়ী থেকে এসে সোলভ করে দেবো। তাহলে আর ওর পরীক্ষাগুলো দিতে সমস্যা হবে না। তাছাড়া আমাকেও তাড়াতাড়ি বাবার ব্যবসায় জয়েন হতে হবে। বাবা ওয়ার্নিং দিয়েছে।
মাহির মাঃ আচ্ছা ঠিক আছে, কিন্তু তোমার বউতো আজ দুদিন ধরে খেয়ে আর ঘুমিয়ে কাটাচ্ছে। যাও তুমি, ওর রুমে গিয়ে ডাক দেও।
ঘুমন্ত বউকে আদর
বউ শব্দটা শুনে নাবীলের খুব ভালো লাগলো। মাহির রুমে গিয়ে দেখি আমার ম্যাডাম হাতপা গুটিসুটি করে ঘুমিয়ে আছে। ওড়না টেবিলে রাখা। ওকে অনেক আদর করতে মন চাইছিলো, ভালোবাসা দিয়ে ওকে জড়িয়ে ধরতে মন চাইছিলো। কোনও কিছু চিন্তা না করে ওর গালে একটা কিস করে দিলাম, কিন্তু ম্যাডামের কোন সারা নেই, বুজলাম সে ঘুমে দিশাহারা। তাই ওর পাশেই ফ্লোরে গিয়ে বসে ওর ঘুমন্ত মুখের মায়ায় যেন পরে গেছি।
তোকে খুব কাছে পেতে মন চাইছে মাহি। তুই আমার নেশায় পরিণত হচ্ছিস। তোর নেশাটা আমাকে ভেতর থেকে পুড়িয়ে ফেলছে। তোকে পাবার জন্য কতো কাল নিজেকে পুড়িয়ে ছাই করেছি তা তো তুই জানিসই না। এখন থেকে আমার ভালোবাসায় তোকেও আমি পুরাবো, তোর মন, দেহে শুধু আমার নেশাই জরিয়ে থাকবে। একদিন তুইও আমার ভালোবাসায় নিজেকে পুড়িয়ে মারতে চাইবি। এগুলো বলে নাবীল মাহির ঠোঁটের দিকে আগাতে তাকে।
আরে এই আমি কি করছি, নিজেকে আরো সংযত করতে হবে আর তো কিছুদিন তার পর মাহি আমার শুধুই আমার। মাহির দিকে তাকিয়ে, তোকে বধু সাজিয়ে আমার ঘরে নিয়ে যাবো। তার পর মন ভরে তকে ভালোবাসবো, আমার ভালোবাসাটা তোর সহ্য হবে তো..। একটু হেসে
নাবীল উঠে গ্লাস থেকে হাতে একটু পানি নিয়ে মাহির মুখে মারে। মাহি ভয়ে লাফিয়ে উঠেই-
মাহিঃ এই কেকককক রেরররর।
নাবীল লাইটটা ধরিয়ে চেয়ার থেকে ওরনাটা নিয়ে মাহির দিকে ছুড়ে মারে। আর নিজে চেয়ারে গিয়ে বসে পরে।
মাহি তো শোকড, প্রথমত নাবীলকে নিজের ঘরে দেখে, তারপর শকড এভাবে ওর দিকে ওড়না মারার জন্য।
মাহিঃ আপনে এখানে কি করেন, আর আমি তো ঘুমিয়ে ছিলাম। আপনাকে আসতে কে বলছে এই ঘরে?
নাবীলঃ মা বলছে। (নাবীল মোবাইল টিপছে আর বলছে)
মাহিঃ মা, কার মা?
নাবীলঃ আমার শাশুড়ী, আর তোর মা।
মাহিঃ শাশুড়ীইইই।
নাবীলঃ হুমমমম, তোর কি আর কিছু বলা আছে। তাহলে বল, আর যদি না থাকে তাহলে তাড়াতাড়ি ফ্রেস হয়ে পড়তে বস।
নাবিল ও মাহির মিষ্টি ঝগড়া
মাহিঃ আপনে আমাকে পড়াতে এসেছেন। কিন্তু কেনো?
নাবীলঃ কেনো মানে, এটা কেমন প্রশ্ন?
মাহিঃ আরে আমি তো বিয়ের ডরে আপনার কাছে পড়তে রাজি হয়েছিলাম। পরীক্ষায় খারাপ করলে নাকি ভাইয়া আর বাবা আমাকে বিয়ে দিয়ে দিবে, তাই এতো দিন আপনার অত্যাচার সহ্য করছি। কিন্তু লাভ কি হলো, সেই বিয়েতো হয়েই গেলো, তাও আবার হিটলারের সাথে। তাহলে আমি এখন আর কেনো পরে নিজের এনার্জি নষ্ট করবো। কথাগুলো একনাগাড়ে বলে নাবীলের দিকে চোখ যায়। (নাবীল রেগে মাহির দিকে তাকিয়ে আছে)
মাহিঃ হে খোদা! এ আমি কার সামনে কি বললাম? সরি নাবীল ভাইয়া, আসলে….. আর কোন কথা বলতে দিলো না।
নাবীল-মন চাইতাছে ওকে একটা থাপ্পড় মারি, রাগটা এতক্ষণ কন্ট্রোল করলেও নাবীল ভাইয়া শুনে মাথা নষ্ট হয়ে গেছে।
নাবীল মাহির হাতটা পেছনের দিকে বাকিয়ে নিজের দিকে টেনে আনে, মাহি নাবীলের বুকের সাথে মিশে আছে, ভয়ে মুখ দিয়ে কথা বের হচ্ছে না।
নাবীলঃ কি বললি, আমি হিটলার, তোর উপর অত্যাচার করি। আর লজ্জা করে না নিজের স্বামীকে ভাই বলে ডাকিস, কেউ শুনলে আমার মান সম্মান কিছু থাকবে না। আর বিয়ে হয়েছে বলে কি পরতে হবে না। পরীক্ষা খারাপ করলে আমার শাস্তি থেকে তোকে কেউ বাঁচাতে পারবে না, বুজলি। কথা বলিস না কেন?
মাহিঃ সরি, ভুলে বলেছি, আর প্লিস আমাকে ছাড়ুন। আমার খুব লাগছে।
নাবীল মাহিকে ছেড়ে..
নাবীলঃ সরি, একটু জোরেই ধরে ফেলেছি। যা ফ্রেস হয়ে তারাতারি আস।
মাহি ফ্রেস হয়ে পড়তে বসলো। নাবীল শুধু মাহির সমস্যা গুলো সমাধান করে চলে গেলো।
বউকে মধুর শাসন
রাতে ডিনারে….
বাবা নাবীলের পরিবার এই শুক্রবার আসছে। মাহিকে দেখতে, আর আন্টি পড়াতে আসবে, যাতে কেউ কোন উল্টাপাল্টা কথা না বলতে পারে। কারণ ওদের বিয়েটা তো কেউ এখনো জানে না। তাই তারা মাহির বাবাকে আর কথা বলতে দিলো না।
হুমমমম, আমি বুঝতে পারছি, আর কিছু বলতে হবে না। আমি এতেই খুশি নাবীলের পরিবার খুব সহযে বিয়েটা মেনে নিলো। তোমরা সবাই শুক্রবারের জন্য প্রস্তুতি নিয়ে নেও।
মাহি শুনছে সবই কিন্তু কিছু বলার নাই।
মাহি রাতে ফেসবুকে ডুকে কিছু সময় কাটাচ্ছিলো ঘুম আসছিলো না বলে।
হঠাৎ একটা ম্যাসেজ আসলো, যা দেখে মাহির চোখ কপালে উঠে গেলো।
নাবীলঃ কি রে এতো রাতে তুই অনলাইন এ কেনো? কার সাথে গল্প করছিস, কয়টা বাজে এখনো ঘুমাসনি কেনো? নাকি তোকে ঘুম পারাতে আমি আসবো।
ম্যাসেজটা আর কারো না নাবীলের। মাহি ভয়ে ফোনটাই বন্ধকরে শুইয়ে পরে।
নাবীল এমন কেনো, সব সময় রাগ করে কথা বলে, মনে হয় ছোটবেলায় করলা একটু বেশি কাইছে, উনার মাকে জিঙ্গেস করতে হবে। এই লোকটার সাথে সারা জীবন কিভাবে কাটাবো, হে আল্লাহ, আমাকে রক্ষা করো। চলবে..
পরের পর্ব: রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১২
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প