রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১০: গত পর্বে দেখেছি আমরা নাবিলের সাহসিকতা ও পরিস্থিতি সামাল দেয়ার দক্ষতা। আজ বাসায় ফেরার পালা। বিয়ের বাড়িতে বিয়ের আনন্দ করতে গিয়ে নিজেই বিয়ে করে ফিরে আসা নাবিল ও মাহির কি হয় এখন তা দেখার পালা।
মায়ের সাথে মাহি
নাবীল, মাহি ও শফিক সবাইকে বিদায় দিয়ে ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। তারা পৌছাতে পৌছাতে বিকেল হয়ে গেলো। নাবীলও মাহিদের বাসায় গেলো কারণ মাহিদের বাসার গ্যারেজ এ হুন্ডাটা রেখে গিয়েছিলো তা নিতেই ওদের সাথে আসছে। শফিক অনেক বললো ঘরে আসতে কিন্তু আজ না পরে আসবো। এখন বাসায় যাওয়া জরুরি বলে চলে গেলো।
মাহি ঘরে ডুকার সাথে সাথে মাহির মা মাহিকে ধরে কাঁদতে লাগলো। কারণ শফিক ফোন করে সব বলেছিলো, যা যা হইছে। মাহি মায়ের চোখের পানি মুছে দিয়ে মাকে গালে কতো গুলো চুমো দিয়ে বললো –
মাহিঃ মা দেখো আমি ঠিক আছি। তুমি এভাবে কাঁদলে আমিও কেঁদে দেবো কিন্তু! দেখো মা কতো দূর জার্নি করে এসেছি, আমার পেটে খোরগোশ দৌড়াচ্ছে। খুব ক্ষুধা পাইছে।
মাঃ আচ্ছা আচ্ছা যা তুই ফ্রেস হয়ে আস, আমি এখনি খাবার রেডি করছি। তোর পছন্দের চিংড়ির মালাইকারি রান্না করছি।
মাহিঃ সত্যিইইইইইইই।
মাঃ হুমমমমমম।
শফিকঃ আগে আমার কথার জবাব দে। (ভ্রুটা কুচকিয়ে মাহিকে শফিক)
মাহিঃ কি?
শফিকঃ ক্ষুধা পেলে সবাই বলে পেটে ইদুর দৌড়াচ্ছে। কিন্তু তোর খোরগোশ দৌড়াচ্ছে কেনো?
মাহিঃ ইয়ায়ায়ায়াক। তুমি জানো না আমি ইদুর একদমই সহ্য করতে পারি না। তাহলে আমার পেটে ইদুর কেনো দৌড়াবে। আমার খোরগোশ পছন্দ তাই আমার পেটে খোরগোশই দৌড়ায় ক্ষুধা পেলে। বুজছো..। (মাহি মুখ ভেঙ্গছিয়ে চলে যায়)
আসলে শফিক ইচ্ছা করেই ওর সাথে এমন করেছে, যাতে মাহির মনটা ভালো হয়ে যায়।
নাবিলের পরিচয়
গল্পের নায়ক নাবীলের পরিচয় এখন দেয়া হবে, এতো দিন প্রয়োজন ছিলো না তাই দেয়া হয়নি।
নাবীল রহমত হাওলাদার এর মেঝো সন্তান। নাবীলেরা তিন ভাইবোন। তাওহিদ, নাবীল আর ছোট বোন নিশি। তাওহিদ নাবীলের বড় ভাই, বাবার সাথে ফ্যামিলি বিজনেস এ জরিত। নাবীলেরা এলাকার স্থানীয়। আর ওর বাবাও এলাকার নামীদামী ব্যক্তিদের মধ্যে একজন। বড় ভাই তাওহিদ এর স্ত্রীর নাম তানজিলা। আর মা রাবেয়া বেগম কে নিয়ে নাবীলের পরিবার। আর সবার আদরের মধ্যমনি হলো নাবীল। নাবীলকে তার পরিবার কখনো কিছু বলে না। শুধু নাবীলের রাগটাকে সবাই ভয় পায়। নাবীলের রাগ খুবই খারাপ সহযে কাউকে মাপ করে না, তাই ওর ফ্যামিলি কখনো কোন কিছুতে বাধা দেয় না।
নাবীল বাড়ীর কলিংবেল বাজাচ্ছে। গেট খুলতে আসছে নাবীলের ছোট বোন নিশি।
নিশি-ভাইয়য়য়য়া। জরিয়ে ধরে।
নিশিঃ আরে ভাবি কই?
নাবীলঃ ভাবি কই মানে, ভাবি ওর বাসায়।
নিশিঃ কেন ওর বাসায় কেনো? আমিতো ভাবলাম, তুমি সাথে করে নিয়ে আসবে, সবাইকে সারপ্রাইজ দিতে।
নাবীলঃ পাগলি..। তুই ছাড়া বাসায় কেউ জানে না বিয়ের কথা। আগে সবাইকে বলি তার পর..
নিশিঃ কবে বলবা, সবাইকে।
নাবীলঃ দেখি আজই বলে দেবো। বাবা আসুক তারপর।
নাবীলের মাঃ কিরে তোরা দরজায় দাঁড়িয়ে ভাই বোন কি প্লানিং করছোস?
নাবিল ও মা
মার কথায় নাবীল নিশিকে চুপ থাকতে ইশারা করে।
নাবীলঃ আরে মা কিছু না, তুমিতো জানো ওও কেমন? এসেই আগে আমার মাথা খাচ্ছে। এখন বলো তুমি কেমন আছো (মাকে জরিয়ে ধরে)
নাবীলের মাঃ পাগল ছেলে আমার, আমি ভালোই আছি,তুই বল। সব ঠিকঠাক হয়েছে তো।
নাবীলঃ মানেনননন। (নাবীল একটু ভয় পেয়ে)
নাবীলের মা, আরে বাবা, তুইনা শফিক এর মামাতো বোনের বিয়ে খেতে গেলি, বিয়েটা ঠিকঠাক মতো হলো কিনা তা জানতে চাইলাম। আর তুই এতো মানে মানে করছিস কেন, সব ঠিক আছে তো।
নাবীলঃ হে মা সব ঠিক আছে। তুমি খাবার রেডি করো, আমি ফ্রেস হয়ে আসছি।
নাবীলের মাঃ আচ্ছা, যা।
নিশি মুখ চেপে হাসছে, ভাইয়ের কাণ্ড দেখে।
নাবীলঃ ফ্রেস হয়ে খাবার টেবিলে বসলো। ভাবি ভাইয়া আর বাবা কখন আসবে।
তানজিলাঃ এইতো আসতে আসতে ৭টা-৮টা বাজবে। কেনো, খুব বেশি দরকার। (বলে নেই তানজিলা হলো নাবীলের ভাবি)
নাবীলঃ তোমাদের সবার সাথে আমার কিছু কথা আছে, তাই।
তানজিলাঃ ওওওও তো কি এমন ইমপোর্টেন্ট কথা, আমাকে আগে বলো।
নাবীলঃ না না সবাইকে এক সাথেই বলবো।
তানজিলাঃ ওকে।
বিয়ের কথা পরিবারকে বলা
নাবীল খাবার খেয়ে রুমে চলে গেলো। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নেয়া দরকার। রাতে সবাই খাবার টেবিলে বসছে।
রাবেয়া বেগম-নাবীল সবাইকে কি বলতে চাস, বল। সবাইতো আছে এখন। তোর কি টাকা পয়সা লাগবে?
নাবীলঃ না মা, আমার টাকা লাগলে তোমাকেই বলতাম।
নাবীলের বাবাঃ রাবেয়া এই বয়সে তোমার ছেলে টাকা না লাগলে আর কি চাইবে, বিয়ে করার জন্য কাউকে পছন্দ হইছে মনে হয়।
নাবীলের মাঃ আরে কি বলো, আমার ছেলে কাউকে পছন্দ করবে, আর আমি জানবো না। আর যদি কাউকে পছন্দ হয় সমস্যা কি, ওর যাকে পছন্দ হবে আমরা তাকেই বউ করে আনবো।
বল বাবা তুই কি বিয়ে করতে চাস?
নিশি মুখ চেপে আসছে।
তানজিলাঃ নিশি কি হইছে, তুমি হাসছো কেন এতো?
নাবীলঃ আসলে মা বিয়ে করতে চাইনা, বিয়ে করে ফেলছি।
খাবার টেবিলে সবাই…কিকিকিকিকি!
নাবীল মাথা নিচু করে আছে। হ্যা মা, আমি বিয়ে করে ফেলছি।
নিশিঃ সবাই এমন করছো কেনো? দেখো ভাইয়া লজ্জা পাচ্ছে।
নাবিলের বাবার প্রতিক্রিয়া
রাবেয়া বেগমঃ নিশি তুই চুপ থাক। আর নাবীল এসব কি বলছোস, আমরা কখনো তকে কিছুতে মানা করছি, তুই বললে আমরাই বিয়ে করিয়ে দিতাম এভাবে একা একা কাউকে কিছু না বলে বিয়েটা করে ফেললি। আমাদের কথা একবারও চিন্তা করলি না। (নাবীলের মা রাগ করে)
নাবীলের বাবাঃ কবে করলা।
নাবীলঃ গতকাল
তাওহিদঃ তো মেয়েটা কে। আর তুইতো বিয়ে খেতে গেলি আর নিজেই বিয়ে করে ফেললি।
তানজিলাঃ কি হলো দেবরজি, বলো তোমার বউয়ের নাম কি, কি করে?
নাবীলঃ একবার সবাইয়ের দিকে তাকিয়ে বললো..মাহি।
মাহিশাশাশাশশা। উপস্থিত সবাই এক সাথে…।
নাবীল নিরব।
তাওহিদঃ শফিকের বোন। রাইট।
নাবীলঃ হুমমমমমম।
তাওহিদঃ এই কারণেই বলি এতো ঘন ঘন ওদের বাসায় যায় কেনো।
নাবীলের বাবাঃ তুমি আমাদের বলতে পারতে একবার, আমরাই সবাইকে রাজি করিয়ে বিয়েটা করিয়ে দিতাম। এভাবে করাটা মানে কি?
নাবীল এর পর সবাইকে বললো, গ্রামে কি কি হইছে, আর কোন পরিস্থিতির মধ্যে বিয়েটা করতে হলো।
খাবার টেবিলে সবাই চুপ। কেউ কিছুই বলছে না।
নাবীলঃ আমি কি কোন ভুল করেছি, বাবা?
নাবীলের বাবাঃ আমি আজ খুব গর্বিত মাই স্যান। তুমি দুটো পরিবারকে বাঁচিয়েছো। তাদের সম্মান রক্ষা করেছো। তুমি ভুল কিছুই করো নি।
তানজিলাঃ ছবি আছে, তোমার কাছে দেখাও, মাহিকে দেখতে চাই।
নাবীল নিজের ফোনটা থেকে মাহির কিছু পিক বের করে দিলো।
মাহিকে দেখে সবার পছন্দ হলো। চলবে….
পরের পর্ব: রোমান্টিক ভালোবাসার গল্প – ভাইয়ের বন্ধু বর পর্ব ১১
সকল গল্পের ধারাবাহিক সব পর্ব এখানে গিয়ে খুঁজুন – ধারাবাহিক পর্বের গল্প