বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে প্রেম – মামু এবার খেলা হবে

বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে প্রেম – মামু এবার খেলা হবে: প্রচুর রাগী মহিলা, মা-বাবা আমার গলায় একটা বাংলা সিনেমার রিনা খান জুটিয়ে দিয়ে গেছে। সেই রিনা খানের সঙ্গে আজীবন পুড়তে পুড়তে জীবন তেজপাত হয়ে গেল।


অনেক কষ্টে একটা ফাঁকা ফ্ল্যাট পাওয়া গেছে কিন্তু ব্যাচেলর ভাড়া দেবে না। বাড়িওয়ালার একটা মেয়ে আছে অনার্সে পড়ে তাই এমন সিদ্ধান্ত, কিন্তু আমরাও শপথ নিলাম এখানেই থাকতে হবে। কারণ সবদিক দিয়ে বাড়িটা ভালো লেগেছে, তাই পদ্ধতি খুজতে লাগলাম।

অবশেষে বুকে সাহস নিয়ে রোটারি স্কুল মাঠে বাড়িওয়ালাকে পেয়ে তার সামনে দাঁড়িয়ে বিনয়ী হয়ে বললাম:-

আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল।

ওয়া আলাইকুম আসসালাম, কে আপনি?

আঙ্কেল আমার নাম সাজু, সবাই আমাকে সাজু ভাই বলে ডাকে, কেমন আছেন আপনি?

ভালো, কিন্তু আমি কি তোমাকে চিনি?

না আঙ্কেল, আমি আপনার বাসায় তিনতলায় ফাঁকা ফ্ল্যাট ভাড়া নিতে চাই।

ওহ্ আচ্ছা, কিন্তু তোমাকে দেখে তো বয়স কম মনে হচ্ছে তা বিয়ে করেছো তো?

জ্বি আঙ্কেল, ভালোবাসার বিয়ে।

ওরে বাপরে, তাহলে খুবই ভালো কিন্তু এতটা কম বয়সে বিয়ে কেন শুনি?

আঙ্কেল আসলে আমরা দুজন দুজনকে খুব ভালোবাসি, দুজনেই এই শহরে পড়াশোনা করি তাই রোজ রোজ রাস্তায় দাঁড়িয়ে দেখা করতে ইচ্ছে করে না তাছাড়া প্রায় সময় পার্কে গিয়ে কথা বলতেও মন চায় না।

ভেরি বিউটিফুল, কিন্তু তোমাদের পরিবার?

পরিবারকে জানিয়ে দিয়েছি, আমার পরিবারে সমস্যা নেই কিন্তু শশুর বাড়িতে সমস্যা।

কোন ব্যাপার না, সংসার শুরু করো তারপর আস্তে আস্তে সবকিছু ঠিক হয়ে যাবে।

আঙ্কেল সেজন্যই একটা ভালোবাসা খুঁজে বের করতে চাচ্ছি, আর আপনার বাসাটা একদম ঠিক আছে। এরকম মনোমুগ্ধকর পরিবেশের বাসা সবজায়গা পাওয়া যায় না।

হাহাহা, ভালোবাসা সফল করার জন্য একটা ভাল বাসার দরকার তাই না?

জ্বি আঙ্কেল।

তোমার মতো বয়সে আমিও একজনকে খুব ভালোবাসতাম জানো?

তারপর কি হয়েছে?

পরিবার থেকে মানলো না আর বিয়েও হলো না কিন্তু এখনো আমাদের যোগাযোগ আছে।

বলেন কি?

হ্যাঁ, আমরা এখনো মাঝে মাঝে দেখা করি, সে কল দিয়ে কথা বলে আবার আমিও কল করি।

এগুলো কি বর্তমান আন্টি জানে?

মাথা খারাপ তোমার? তাহলে এতদিনে আমার কবরে হাড্ডিও খুঁজে পেতে না কেউ।

আন্টি কি খুব রাগি?

প্রচুর রাগী মহিলা, মা-বাবা আমার গলায় একটা বাংলা সিনেমার রিনা খান জুটিয়ে দিয়ে গেছে। সেই রিনা খানের সঙ্গে আজীবন পুড়তে পুড়তে জীবন তেজপাত হয়ে গেল।

বলেন কি? আমি তো জানতাম পুড়লে নাম ছাই হয়ে যায় আর আপনি পাতা হয়ে গেলেন?

হাহাহা তুমি বেশ রসিক তাই না?

একটু রষরষ ভাব, নতুন বিয়ে তো।

আচ্ছা চলো তোমার আন্টির সঙ্গে কথা বলতে হবে তাহলেই ফ্ল্যাট পাওয়া যাবে।

আবার আন্টি?

উপায় নেই ভাতিজা, মহিলার যন্ত্রণায় আমি তো অতিষ্ঠ জলপ্রপাত।

ঠিক আছে চলুন তাহলে।

বাবা একটা কথা।

জ্বি বলেন।

এতক্ষণ ধরে তোমার আন্টির নামে যা কিছু বলছি এসব তাকে বলবা না কথা দাও। তাহলে তোমাকে বাড়ি ভাড়া দিয়ে আমাকে বাড়ি থেকে বের করে দেবে এটা সংবিধান লিখিত।

আচ্ছা ঠিক আছে কিন্তু কথার বদৌলতে আন্টি যদি রাজি না হয় তাহলে সেখানে আপনাকে খুব বড় ভূমিকা পালন করতে হবে। বিদ্রোহ করে হলেও আমাদের বাসা ভাড়ার ব্যবস্থা করতে হবে।

সেটা আমার উপর ছেড়ে দাও।

আন্টির সামনে বসে আছি, পাশেই আঙ্কেল বসে আছে কাচুমাচু হয়ে। আন্টি আমার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করলেন:-

  • তোমরা ফ্যামিলি মেম্বার কতজন?
  • জ্বি, আমার মা নেই আর বাবা দ্বিতীয় বিয়ে করে সবাইকে নিয়ে লন্ডনে থাকে। আমি এখানে থেকে পড়াশোনা করি, মাঝে মাঝে গ্রামের বাড়িতে গিয়ে মায়ের কবর দেখে আসি আর দাদা দাদি আছে।
  • তোমার স্ত্রী?
  • আন্টি আমি ব্যাচেলর!

দাড়ান শুরু হচ্ছে বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে প্রেম।

কিহহ? ( আন্টি অবাক হয়ে গেল কিন্তু তারচেয়ে বেশী অবাক হয়ে গেছে আঙ্কেল।)

জ্বি আন্টি, আমার নাম সাজু, আর আমার তিন বন্ধু সজীব রকি শফিক এই চারজন মিলে থাকার জন্য ভাড়া নেবো।

তোমাদের আঙ্কেলকে বলছো যে তুমি ব্যাচেলর একটা ছেলে?

হ্যাঁ বলেছি তো, আঙ্কেল বললেন কেন সমস্যা নেই কারণ আমাকে তার ভালো লেগেছে।

মেয়ের জামাই করার কথা কিছু বলে নাই?

মানে?

আমি ব্যাচেলর ভাড়া দেবো না।

কিন্তু আঙ্কেল তো আমাকে এতক্ষণ ধরে সব বলে নিয়ে এসেছে। আপনার বিষয় সবকিছুই তিনি আমাকে বলেছেন, তাই এসেছি আন্টি।


আঙ্কেলের মুখটা এখন এতটাই অসহায় সেদিকে তাকিয়ে হাসি পাচ্ছে আমার।

আমি বললাম, আন্টি আপনি বাংলা সিনেমার রিনা খানকে চিনেন?

মানে কি?

এবার আঙ্কেল বলে উঠলেন, কিসব কথা হচ্ছে শুনি? আমি যেহেতু বাড়িতে ভাড়া দিতে চেয়েছি সেহেতু তোমরা এখানেই থাকবে।

ধন্যবাদ আঙ্কেল।

স্বাগতম সাজু ভাই।

আঙ্কেল আমাকে ভাতিজা বলবেন।

ওহ্ সরি সরি।

ফ্ল্যাটের ব্যবস্থা হয়ে গেছে শুনে ওরা তিনজনেই বেশ আনন্দিত, এদিকে বিকেল বেলা শফিকের সঙ্গে সবাই তার গার্লফ্রেন্ডের দেখা করার কথা। তাই চারজন মিলে সেখানে যাবো, শফিক তার গার্লফ্রেন্ডকে একটা মোবাইল উপহার দেবে তাই গতকাল রাতে মোবাইল কিনে আনা হয়েছে। সেই মোবাইল সুন্দর করে পেপার দিয়ে মুড়িয়ে সুড়িয়ে সাজানোর দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে আমাকে। আমি গতকাল রাতে অনেক সময় ধরে সেটা প্যাকিং করে রেখেছি।

চরেরহাট নদীর তীরে হাঁটছি, শফিক গার্লফ্রেন্ড নিয়ে হাঁটছে। উপহার ডেলিভারি হয়ে গেছে আরো আগেই, এখন শুধু হাঁটাহাঁটি চলছে। আমার সঙ্গে শফিকের গার্লফ্রেন্ডের বান্ধবী আছে, আর সজীব ও রকি দুজনেই ছবি তুলতে ব্যস্ত।

সন্ধ্যার কিছুক্ষণ আগে আমরা বিদায় নিলাম, ওরা দুই বান্ধবী রিক্সা নিয়ে চলে গেছে আর আমরা হেঁটে হেঁটে যাচ্ছি। হঠাৎ করে একটা অপরিচিত নাম্বার দিয়ে কল এসেছে আমার মোবাইলে।

  • বললাম, হ্যালো।
  • আপনি তো সাজু, তাই না?
  • হ্যাঁ কিন্তু আপনি কে?
  • এতক্ষণ ধরে আপনার যে বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডের সঙ্গে হেঁটেছেন আমি সেই তিশা।
  • আপনি আমার নাম্বার পেলেন কোথায়?
  • বান্ধবীর কাছে, ওর কাছে নাকি শফিক ভাই আর আপনার নাম্বার আছে।
  • ওহ্ আচ্ছা।
  • একটা কথা বলতে কল দিলাম, আপনার বন্ধুকে বলবেন আজকের পরে যেন আমার বান্ধবীকে আর কল দিয়ে বিরক্ত না করে। মোবাইল ছিল টার্গেট, তাই টার্গেট যেহেতু পূরণ হয়ে গেছে তাই আর মাঠে থেকে লাভ কি বলেন?
  • মানে কি?
  • খুবই সহজ।
  • আপনি হয়তো ভুলে যাচ্ছেন এটা টেস্ট ম্যাচ, তাই এখানে ফলাফলের জন্য অনেক অপেক্ষা করতে হবে মেডাম।
  • বুঝতে পারলাম না।
  • গতকাল রাতে মোবাইল আমি প্যাকিং করেছি আর তখন মোবাইল, চার্জার, ইয়ারফোন সবকিছু বাহিরে রেখে ১৭৫ গ্রামের একটা পাথরের টুকরো দিয়ে সুন্দর করে প্যাকেট করছি। আফসোস হচ্ছে যে প্যাকেটটা হাতছাড়া হয়ে গেল, আহারে।
  • কি বললেন…?
  • আজ্ঞে, আমি সাজু ভাই আর আমার বন্ধুর লগে পিরিত করার অভিনয় করা?
  • কাজটা মোটেই ভালো হলো না।

আমি কল কেটে দিলাম, পিছনে চিন্তিত হয়ে শফিক বারবার মোবাইল টিপছে। আমি পকেট থেকে তার গতকাল রাতের কেনা মোবাইল বের করে ঠোঁট দিয়ে শিশ দিচ্ছি। ফু ফু ফু।

আমরা চারজন।

লেখা – সাইফুল ইসলাম সজীব।

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “বাড়িওয়ালার মেয়ের সাথে প্রেম – মামু এবার খেলা হবে” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – মা – একটি দারুণ শিক্ষণীয় গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *