হারিয়ে খুঁজি তোমায় – ভালোবাসার অনুগল্প: মানুষ কতো সহজে বদলে যায়। সম্পর্ক ভালোবাসা মায়া সব ভুলে অন্য কারো হাত ধরে। আমার কি সাফিনকে বলা উচিৎ যে আমি প্রেগন্যান্ট? নাহহহ বলা উচিৎ না।
মুলগল্প
দরজার কাছে বসে কান্না করছে অনু। অনুর স্বামী সাফিন একটু আগেই অনুকে ঘর থেকে বের করে দিয়েছে।
তিন বছর রিলেশন করে ছয় মাস আগে সাফিনের সাথে বাড়ি থেকে পালিয়েছিলো অনু। এই ছয় মাসে না অনু ওর বাবা মায়ের সাথে যোগাযোগ করেছে না অনুর বাবা মা অনুর সাথে যোগাযোগ করেছে।
খুব সুখের ছিলো অনু আর সাফিনের সংসার। কিন্তু মাস খানেক আগে সাফিনের সাথে অনুর ফুপাতো বোন ইরার পরিচয় হয়।
অনুদের সংসারটা কিছুটা টানাটানির ছিলো। ইরা কখনো সাফিনকে বলে নি আর অনুকেও বলতে দেয় নি যে ইরা অনুর বোন হয়।
সাফিন কাল অনুকে স্পষ্ট বলে দিয়েছে সাফিন ইরাকে বিয়ে করবে। আর অনুকে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যেতে বলেছে। অনু সাফিনের পায়ে ধরে কেঁদেছে তবুও সাফিনের মন গলে নি। গলবে কি করে সাফিনতো এখন ইরার প্রেমে অন্ধ হয়ে গেছে।
অনু কাল ইরাকে কথা শুনিয়েছে আর চড় মেরেছে তার শাস্তি সরুপ সাফিন অনুকে বেল্ট দিয়ে মেরেছে ঘন্টা ঘানিক। তারপর দরজার বাইরে ফেলে দরজা আটকে দিয়েছে।
অনুর হাত পা ব্যাথা হয়ে গেছে। নরার মতো শক্তি নেই। তবুও দরজা ধাক্কাচ্ছে। কিন্তু সাফিন বা ইরা কেউ দরজা খুলছে না।
সারারাত অনু দরজার কাছে বসে ছিলো। দরজা খোলার শব্দে অনুর মুখে হাসি ফুটে ওঠে। কোনোরকমে উঠে দাঁড়ায়। সাফিন আর ইরা দরজা লক করে চলে যায়। অনু পেছন থেকে ডাকে
সাফিন প্লিজ এমন করো না। কোথায় যাবো আমি?
সাফিন ঘুরে দাঁড়িয়ে ইরার হাত ধরে বলে,
জাহান্নামে যাও। প্লিজ আমাকে বিরক্ত করো না।
সাফিন সামনে হাটা শুরু করে
তুমি ঠিক করছো না সাফিন। একদিন তুমি তোমার ভুলটা বুঝতে পারবে আমায় খুঁজবে কিন্তু পাবে না। হারিয়ে খুঁজবে আমায়। মিলিয়ে নিও
অনু কাঁদতে কাঁদতে বসে পরে। সাফিনের কানে একটা কথায় বাজছে হারিয়ে খুঁজবে আমায়।
রাস্তায় এলোমেলো ভাবে হাঁটছে অনু। হাঁটার শক্তি নেই। চোখ দুটো বন্ধ হয়ে আসছে। আর কতোখন এভাবে হাটতে পারবে জানে না অনু।
চোখ খুলে অনু চোখের সামনে দুটো অতিপরিচিত মুখ দেখতে পায়। বাবা মা। অনুর মা কাঁদছে। ছয় মাস পরে মেয়েটাকে দেখতে পেলো। অনুর বাবা মাথায় হাত দিয়ে বসে আছে।
বাবা
অনুর ডাকে অনুর বাবা মা ওর দিকে তাকায়। অনুর মা অনুকে জড়িয়ে হুহু করে কেঁদে ওঠে। অনু কাঁদছে না।
মা কেঁদো না প্লিজ।
অনুর মা কান্না থামিয়ে চোখ মুছে।
আমি এখানে
তুমি কি ভাবো আমি তোমার খবর রাখি না? তোমার পিছে লোক লাগিয়ে রেখেছি আমি। ওরা খবর দিলো।
অনু কিছু বলছে না। চুপ করে আছে।
চলো বাসায় যাবে।
অনুর বাবা অনুকে ধরে বেড থেকে নামায়। অনুর বাবার হাত ধরে হাঁটছে।
মামু তুমি নানা হতে যাচ্ছ। মিষ্টি খাওয়াও।
ইরার ভাই মানে অনুর ফুপাতো ভাই বলে।
কথাটা শুনে অনুর বাবা মা খুব খুশি হয় কিন্তু অনু মুখটা কালো করে রাখে।
রাতে অনু নিজের রুমে বেলকনিতে বসে আছে। ছয় মাস পরে নিজের রুমে আসলো। বসে বসে সাফিনের কথা ভাবছে।
মানুষ কতো সহজে বদলে যায়। সম্পর্ক ভালোবাসা মায়া সব ভুলে অন্য কারো হাত ধরে। আমার কি সাফিনকে বলা উচিৎ যে আমি প্রেগন্যান্ট? নাহহহ বলা উচিৎ না।
যার কাছে আমার মুল্য নেই তার কাছে কি করে আমার বাচ্চার মুল্য থাকবে।
এসব ভেবে অনুর চোখ থেকে টপটপ করে পানি পরে।
যে চলে গেছে তাকে ভেবে কান্না করাটা বোকামি ছাড়া কিছু না।
ইমন কথাটা বলে। অনু চোখের পানি মুছে বলে,
আমি একা হলে সব ভুলে নতুন করে মুভ অন করতাম। কিন্তু আমার বেবিটা ও তো বাবা ছাড়া বড় হবে। ওর তো কোনো দোষ নেই বল তাহলে ও কেনো ওর বাবার ভালোবাসা পাবে না।
ইমন অনুর সামনে হাটু মুরে বসে অনুর চোখের পানি মুছে দেয়।
যে বাবার কাছে তার বেবির কোনো মূল্য নেই সেই বাবার কোনো দরকার নেই। তবে তুই যদি বলিস তাহলে তোর প্রিন্সটা আমাকে বাবা বলতে পারে।
অনু হেসে ফেলে।
যাক তোকে হাসাতে পারলাম।
অনুর মা অনুর জন্য দুধ নিয়ে আসে। অনু নাক ছিটকে বলে,
মা দুধটা প্লিজ সামনে থেকে সরাও।
চুপ তোকে কেউ খেতে বলে নাই আমাদের নিউ প্রিন্স খাবে দুধটা তাই না মামিমা।
ইমন ঠিক বলেছে।
ইমন আর অনুর মা জোর করে অনুকে দুধটা খাইয়ে দেয়।
অনুর মন ভালো করতে অনুকে নিয়ে ইমন ঘুরতে বের হয়। একটা পার্কে এসে বসে অনু আর ইমন। ওই পার্কেই সাফিন আর ইরা আসে। অনুকে একটা ছেলের সাথে দেখে সাফিনের রাগ হয়। সাফিন আর ইরা ইমন আর অনুর কাছে যায়।
ভাইয়া তুই এই মেয়েটার সাথে কি করছিস? আর এই মেয়ে হাসবেন্ডকে হারিয়েছো এখন আমার ভাইয়ের গলায় ঝুলতে চাইছো।
ইমন কিছু বলতে যায় অনু থামিয়ে দেয়।
তোমার কি মনে হয় আমার ভাই তোমায় ভালোবাসবে কখনো না। জাস্ট বেবহার করবে সাফিনের মতো।
সাফিন আমাকে না তোমাকে ব্যেবহার করছে। ইরা তুমি কখনো ভেবেছো যে ছেলেটা তিন বছরের সম্পর্ক ভুলে দুইদিনের পরিচিত তোমার হাত ধরতে পারলো। কে বলতে পারে আবার নতুন কাউকে পেলে তোমাকে ছাড়বে না। সাফিন আগেও আমায় ভালোবাসতো আর এখনো বাসে শুরু তোমার মোহে পরে আমায় ছেড়েছে। ভালো থাকো তোমরা আমি এটা চায়।
ইমন চলো।
অনু ইমনের হাত ধরে। সাফিনের অনুর কথাগুলো খুব ভাবাচ্ছে। কেনো যানি অনুকে যেতে দিতে ইচ্ছে করছে না।
সাফিন তোমার সামনে আমাকে এতো কথা শুনালো আর তুমি কিছু বললে না।
সাফিন কিছু না বলে চলে যায়।
বাড়ি ফিরে অনু প্রচুর কান্না করে। বাবাকে বলে এই শহর ছেড়ে অনেক দুরে নিয়ে যেতে। অনুর বাবা সব ব্যবস্থা করে ফেলে।
রাতে সাফিন শুয়ে আছে। অনুর মুখটা বারবার সাফিনের চোখে ভেসে ওঠে। তখন সাফিনের ফোনে একটা মেসেজ আসে মেসেজটা অনুর বেষ্টফ্রেন্ড তন্নি দিয়েছে।
কংগ্রাচুলেশনস জিজু। দোয়া করি আপনার গোলুমলু একটা ছেলে হয়। আজকেই অনুর বাবার কাছ থেকে জানতে পারলাম অনু প্রেগন্যান্ট। অনুর সিম অফ তাই আপনাকে কনগ্রাচুলেট করলাম।
অনু প্রেগন্যান্ট। আমি বাবা হবো। কালকেই আমি অনুকে ফিরিয়ে নিয়ে আসবো। আর ইরাকে বুঝিয়ে বলবো। আমি অনুকে ছাড়তে পারবো না।
সকালে সাফিন বেরিয়ে পরে অনুদের বাসার উদ্দেশ্যে। বাসার সামনে বড় একটা তালা ঝুলছে। আশেপাশে মানুষদের থেকে জানতে পারে অনুরা এখান থেকে চলে গেছে। সাফিন বসে পরে। হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে।
হারিয়ে ফেললাম আমি আমার অনুকে? কোথায় খুঁজবো তোমায়?
পাগলের মতো খুঁজছে সাফিন অনুকে। ব্যস্ত রাস্তায় পাগলের মতো দৌড়াচ্ছে। হঠাৎ একটা গাড়ির সাথে বারি খায় সাফিন।
পাঁচ বছর পরে।
অনুর বাবা মা অনু ইমন আর অনুর মেয়ে অরশি ওদের পুরোনো বাড়িতে আসে। রাস্তায় একটা পাগল দেখে যে অনুদের বাড়ি থেকে একটু দুরে বসে কি যেনো লিখছে। অনুর কেনো জানি চেনা মনে হয় কিন্তু পাত্তা দেয় না।
বিকেলে অনু আরশি আর ইমন হাত ধরে হাটছে। হঠাৎ অরশি ওদের হাত ছেড়ে দিয়ে ওই পাগলটার কাছে যায়।
পাগলটা অরশির দিকে তাকায়। অরশি পাগলটার দুই গালে দুই হাত দেয়।
তুমি আমার মায়ের নাম লিখছো কেনো?
সাফিন তাকিয়ে থাকে। ইরা আর অনু কাছে এসে দেখে পাগলটার হাতে অনু লেখা। অনু মুখের দিকে ভালো করে তাকিয়ে দেখে সাফিন। অনু হাউমাউ করে কেঁদে ওঠে। সাফিনকে ধরতে যায় সাফিন হাত সরিয়ে নেয়।
ছুঁবে না আমায়। আমার অনু আর আমার প্রিন্স রাগ করবে। ওরা ওই আকাশে চলে গেছে। আমাকে নেয় নি। ওরা পচা।
সাফিন কেঁদে ওঠে।
আপনার প্রিন্স আপনার সামনে।
অনু কাঁদতে কাঁদতে বলে,
ও কি করে আমার প্রিন্সেস হবে। আমার প্রিন্সেস তো আমাকো ভালোবাসে না।
সাফিন উঠে হাজারো বকবক করতে করতে চলে যায়। অনু কাঁদছে।
সেই এক্সিডেন্টের পরে সাফিন পাগল হয়ে যায়। ইরা পাগল সাফিনকে ছেড়ে চলে যায়।
অরশি ইমনের হাত ধরে বলে,
বাবা উনি কে? আর মা কাঁদছে কেনো?
ইমন অরশির মুখে হাত দিয়ে বলে,
উনি তোমার বাপি।
তাহলে আমাকে চিনতে পারলো না কেনো?
একদিন ঠিক চিনতে পারবে।
লেখা – তানিশা সুলতানা
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “হারিয়ে খুঁজি তোমায় – ভালোবাসার অনুগল্প” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – সুখের প্রেমাধ্যায় – শিক্ষণীয় ছোট গল্প