বাবার ভালবাসা: পৃথিবীর সব বাবারাই মেয়েদের কাছে সুপারহিরো। বাবা-মেয়ের ভালবাসা এক অনন্য সৃষ্টি মহান সৃষ্টিকর্তার। আজ এমনি এক বাবা মেয়ের অকৃত্রিম ভালবাসার গল্প বলব তবে তা অনেক বেদনাদায়ক এবং কষ্টের। তাই আজকের এই লেখা তাদের জন্য উৎসর্গ করলাম যারা জীবনের অন্যতম ভালবাসার মানুষ প্রিয় বাবাকে হারিয়েছে। যাই হোক, শুরু করা এখন।
প্রেমিক থেকে বাবা
সামাজিক ভাবেই বিয়ে হয় রানা আর সুতপার, তবে টানা ৪ বছর ছিল মিষ্টি মধুর প্রেম। একজন ভাল প্রেমিক এবং স্বামী হওয়ার সব যোগ্যতা ছিল রানা সাহেবের। মোটামোটি সুখেই চলছে তাদের সংসার। কিন্তু রানা সব সময় সুতপার কাছে একটা চাওয়া চেয়ে এসেছিল। চাওয়াটা ছিলো একটা ফুটফুটে সন্তান।
বিয়ের দুই বছর পর সুতপার কোল জুড়ে আসে পুত্র সন্তান। বেশ হাসি খুশি, প্রাণবন্ত ভাবে কাঁটছে দিনগুলো। কিন্তু রানা কোথাও যেন কিছু একটার অভাব বুঝতে পারে। একদিন সে সুতপাকে তার অভাবের কথাগুলো খুলে বলল। অভাব ছিলো পুত্র সন্তান এর পাশাপাশি একটা কন্যা সন্তানের। একদিন রানা অফিস থেকে বাড়ি ফিরে আসে। তখন সুতপা, রানার কানে কানে বলে, ওগো তুমি আবার বাবা হতে চলেছো।
দ্বিতীয়বার বাবা হওয়ার খুশিতে আত্মহারা হয়ে যায় রানা। বিধাতার ইচ্ছা আর রানার আকুল আবেদনে সুতপার কোল জুড়ে কন্যা সন্তান জন্ম নেয়। খুব সুন্দর ফুঁটফুঁটে, মুখের দিকে তাকালে মনে হয়, এ যেন স্বর্গের পরী জন্ম নিয়েছে। খুব সখ করে রানা তাকে এঞ্জেল বলে ডাকে।
আস্তে আস্তে এঞ্জেল বড় হতে থাকে। যদি ভুল করে কোনোদিন রানা তার এঞ্জেল এর জন্য চকলেট আনতে ভুলে যেত, তাহলে ছোট এঞ্জেলটি সেদিন বাবার সাথে কথা বলা বন্ধ করে দিতো। না, কোন রাগ করে কথা বন্ধ করতো না ছোট্ট এঞ্জেলটি। এটা ছিলো বাবার প্রতি অভিমান। কেনো আজ তার জন্য চকলেট আনেনি তার আব্বু?
বাবা মেয়ের খুনসুটি
এঞ্জেল এর বয়স যখন ১০ বছর। তখন মা-বাবা-ভাই সবাইকে বুঝতে শিখে যায়। সারাদিন খেলা ধুলা শেষ করে, রাতে অপেক্ষায় থাকতো কখন বাবা আসবে। আর তাকে এত্তগুলো চকলেট দিয়ে বলবে, এই নাও এঞ্জেল তোমার জন্য চকলেট এনেছি।
প্রতি রাতে রানা অফিস থেকে বাড়ি ফেরার সময় তার ছোট্ট এঞ্জেল এর জন্য চকলেট নিয়ে আসে। আর বাড়ি পৌঁছে দরজায় কড়া নাড়াতেই ছোট এঞ্জেলটি দৌড়ে এসে রানার কোলে উঠে, দুই গালে আদর করে চুমু খায়। মিষ্টি মিষ্টি করে বাবা বলে ডাকে। আর রানাও ছোট্ট এঞ্জেলটির আদরে সারাদিনের ক্লান্তি গুলো ভুলে যায়।
অফিসের একটু সময় পেলেই রানা মেয়েকে নিয়ে মাঠে খেলতে যায়, দুজনে ক্রিকেট, ফুটবল খেলত। বাবা-মেয়ের এত সুন্দর খেলা দেখে আশেপাশের মানুষজন গুলো মুগ্ধ হয়ে থাকত। এভাবে বাবার ভালবাসা আর আদরে এঞ্জেল আস্তে আস্তে অনেক বড় হয়ে যায়।
বাবার অভিমান
একদিন এঞ্জেল স্কুল থেকে বাড়ি এসে দেখে তার বাড়ির সামনে অনেক লোকজন ভীড় করছে। সবাই কাঁদছে, লোক জনের ভীড় ঠেলে এঞ্জেল ঘরে ঢুকে।
ঘরে ঢুকেই এঞ্জেল বাকরুদ্ধ হয়ে পরে। বাবার দেহটা সাদা কাপড়ে মাটিতে শুয়ে আছে। মা বাবার নিথর দেহটার পাশে বসে কাঁদছে। যত আত্মীয়স্বজন আছে, সবাই আজ তাদের বাড়িতে। আর কখনো এত মানুষ এক সাথে তাদের বাড়িতে দেখেনি এঞ্জেলটি।
বাহিরের দিকে তাকিয়ে দেখে কিছু লোক বাবার লাশটা কবরে রাখার জন্য ব্যস্ত। ধীর পায়ে মা এর পাশে গিয়ে বসে এঞ্জেলটি।
মা এই মা, তোমরা কাদঁছো কেনো?
কাঁদো কাঁদো কন্ঠে কথাগুলো বলে উঠে এঞ্জেলটি।
মা কোন জবাব দিতে পারছে না। কি বলবে ছোট এঞ্জেলটিকে? তার বাবা আর বেঁচে নাই! না এটা বললে এঞ্জেলটি বাবার শোকে শোকে নিজেও শেষ হয়ে যাবে। কিছু না বলেই ছোট্ট এঞ্জেলটিকে বুকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকে তার মা।
অভিমানী বাবার না ফেরার দেশে গমন
মা এর বুক থেকে নিজেকে বের করে এঞ্জেলটি এখন বাবার লাশ কে চিৎকার করে বলতে লাগলো। ও বাবা, বাবা, উঠো, দেখনা সবাই তোমার জন্য কেমন করে কাঁদছে। ও বাবা উঠনা, আমার জন্য আজ চকলেট আননি? বাবা উঠো বাবা, কথা বলো বাবা। চিৎকার করে কাঁদতে লাগলো এঞ্জেল। কিন্তু বাবার কোন সাড়া পায়না।
মুহুর্তেই সেই ছোট্ট এঞ্জেলটি অজ্ঞান হয়ে যায়। তাকে সবাই ধরাধরি করে মাথায় জল দিয়ে সুস্থ করার চেষ্টা করতে লাগলো। এক সময় বাবার লাশটা ঘর থেকে বের করে নিয়ে যাওয়া হলো।
জ্ঞান ফেরার পর দেখতে পেলো সব কিছুতেই শুন শান নিরবতা। সবাই আছে কিন্তু বাবাকে কোথাও দেখতে পাচ্ছেনা। এতক্ষনে নিশ্চই বাবাকে ওরা সবাই একা রেখে চলে এসেছে।
এঞ্জেলটি বুঝতে পারে, তার বাবা আর তার জন্য চললেট আনবে না। আদর করে বাবার দুই গালে আর চুমু খেতে পারবে না। কোন কারণে বাবার সাথে মান-অভিমান করতে পারবে না। জীবন থেকে অতি মূল্যবান জিনিস হারিয়ে ফেলেছে সে।
পৃথিবীর সব এঞ্জেল এর বাবাগুলো ভালো থাক। আর কখনো যেনো বিধাতা সেই সব ছোট্ট এঞ্জেলগুলোর বাবাকে কেড়ে না নেয়।
আরো পড়ুন: ব্যর্থ প্রেমের চিঠি – প্রতারক স্ত্রীর হৃদয়বিদারক চিঠি কাঁদাবে আপনায়