হ্যাকার বউ – বউয়ের গোয়েন্দাগিরি

হ্যাকার বউ – বউয়ের গোয়েন্দাগিরি: আজব! আমার যা ইচ্ছা তাই করব। এতে আপনার কি? আর আপনি কি করে এই সব জানেন?


পর্ব: ১

গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন আমি। রাত তখন ২:২০ বাজে। হঠাৎ ফোন এর রিংটনে ঘুম ভেঙে যায় আমার। ফোনের দিকে তাকিয়ে দেখি অচেনা নাম্বার। এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফোনটা পিক করলাম।

আমিঃ হ্যালো, কে বলছেন?

মেয়েঃ এই যে মি. ভাবওয়ালা। আমার সাথে বেশি ভাব দেখাবেন না, বলে দিলাম। (একটি মেয়েলী কণ্ঠ)

আমিঃ এই কথা বলার জন্য এত রাতে কল দিয়ে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়েছেন, বুঝি। ফালতু যতসব! (কি করব বলেন, আমার আরামের ঘুম হারাম করে দিল।

মেয়েঃ এইযে আমি ফালতু কথা বলার জন্য কল দেই নি। (বালিকা উলটা আমার সাথে রাগে কথা বলতেছে)

আমিঃ তাহলে কিসের জন্য কল দিছেন, বলেন?

মেয়েঃ তুমি আমার মেসেজ সিন কর নি কেন?

আমিঃ তোমাকে মেসেজ দিতে বলছে কে?

মেয়েঃ আমার ইচ্ছা হইছে, তাই দিছি।

আমিঃ আমারও ইচ্ছা হইছে তাই সিন করি নি। আর আপনি আমার নাম্বার কোথায় পাইলেন?

মেয়েঃ তোমার তিনটা নাম্বার আছে, তাই না।

আমিঃ আমার ১০০ টা থাকলে আপনার সমস্যা কি!

মেয়েঃ আমার কোনো সমস্যা নাই। তবে তোমার তিনটা নাম্বার দিয়ে তিনটা ফেসবুক আইডি আছে।

আমিঃ এই আপনি কি করে জানলেন? (খুব অবাক হলাম ওর কথা শুনে)

মেয়েঃ একটা আইডি তোমার সব রিলেটিভরা জানে আর দুইটা ফেক, তাই না।

আমিঃ এই মেয়েটা কে কিছুই বুঝতেছি না। আমার তিনটা আইডি আছে, একথা আমি ছাড়া আর কেও জানে না। আমি কাউকে বলিও নি। তাহলে কি করে জানল, কিছুটা খটকা লাগতেছে। আপনি কে বলেনতো?

মেয়েঃ বলব, সব বলব। একটা আইডি দিয়ে গল্প পোস্ট কর, আর একটা দিয়ে কিছু মানুষকে ফলো করো, রাইট।

আমিঃ আজব! আমার যা ইচ্ছা তাই করব। এতে আপনার কি? আর আপনি কি করে এই সব জানেন?

মেয়েঃ তোমার তিনটা নাম্বার লাস্ট ২৪, ৬০,৭০ রাইট।

আমিঃ কে আপনি বলেন?

মেয়েঃ আরও কিছু তথ্য মেসেজ দিয়ে দিচ্ছি, দেখে নাও। আমার আইডি “মিরা আহমেদ”।

এই বলেই কল কেটে দিল। আমি পরলাম এক মহা টেনশনে। এই মেয়ে যা যা বলল সব সঠিক। আমার ফেসবুক আইডির কথা কেও জানে না? আমি আমার কলিজার টুকরা বন্ধু সোহেল কেও বলি নি।

আমি পরিচয় দিতেই ভুলে গেছি। আমি হৃদয়। দ্বাদশ শ্রেণিতে পড়াশোনা করি। আর বেশি পরিচয় দিব না। এমনিতেই একজন আমার সব কিছু জেনে গেছে। এখন যদি আপনাদের কাছে বেশি পরিচয় দেই তাহলে আপনারাও আমাকে চিনে ফেলবেন।

ফেসবুকে গেলাম আমি। গিয়ে দেখি অনেক মেসেজ আসছে ওই আইডি থেকে। মেসেজ দেখে আমার মাথা ঘুরানো শুরু হয়ে গেল। কে এই মেয়ে? আমার সব কিছু যেনে গেছে। প্রথম থেকে দেখতে লাগলাম মেসেজগুলি। আপনাদের বলি, শুনুন….

মিরাঃ এইযে কেমন আছেন? কি হলো, কথা বলেন না কেন? এইযে ভাব দেখাবেন না আমার সাথে।

আমিঃ কি হলো, আপনি কি আমার মেসেজ চোখে দেখেন না?

মিরাঃ ওহ আপনাকে এই ভাবে বললে হবে না। এইযে আপনার এই তিনটা নাম্বার দেখেনত মিলিয়ে, ০১৬২৪,০১৭৬০,০১৭৭০ এইযে আপনার ফেবু আইডির পাসওয়ার্ড। এই দেখেন ,,* দেখেন, ভাল করে দেখেন। এখন দেখি আমার মেসেজ রিপ্লাই না দিয়ে কোথায় যান।

হায় হায় এখন আমি কি করব? আমার সব কিছু এই মেয়ে লুটে নিল। তাড়াতাড়ি করে আমার একটা আইডির পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করলাম। সাথে সাথে মেসেজ আসল….

মিরাঃ পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে কোনো লাভ নাই।

আমিঃ কেন লাভ নাই?

মিরাঃ কারণ নতুন পাসওয়ার্ড এইটা আমি পেয়ে গেছি।

কি যে না করব এই মেয়ে কি জন্য আমার সাথে এমন করে কিছুই বুঝতেছি না, এখন আর পাসওয়ার্ড চেঞ্জ করে লাভ হবে না।

যেই করেই হোক এই মেয়েকে আমার আয়ত্বে আনতে হবে। আসলে এই মেয়ে অনেক দিন আগে ফ্রেন্ড রিকুয়েস্ট দিছিল আমি ইচ্ছা করেই গ্রহন করি নি, তাই মনে হয় প্রতিশোধ নিতেছে।

আমিঃ আচ্ছা আপু আপনি আমার সাথে এমন করেন কেন?

মিরাঃ আমার ইচ্ছা তাই।

আমিঃ আমি কি আপনার কোনো ক্ষতি করছি না কি?

মিরাঃ অনেক ক্ষতি করছেন।

আমিঃ কি করলাম আপনার সাথে?

মিরাঃ এই যে আমার রিকুয়েস্ট গ্রহণ করনি। আর আমার মেসেজও সিন করনি।

আমিঃ আমি এখনি রিকুয়েস্ট করতেছি। আপনি আর আমার পাসওয়ার্ড নিয়েন না। আর কি করে আপনি এই কাজ করলেন?

মিরাঃ বুঝবে না। আমি এখন তোমার আইডি থেকে তোমার আপুকে, ভাইয়াকে মেসেজ দিয়ে বলব, তুমি আমার সাথে প্রেম করো। আমার সাথে রুম ডেট করো। এখন আমার সাথে ব্রেক আপ করতে চাইছ।

আমিঃ কি এত বড় অপবাদ, কি করে দিতে পারলেন আপনি!

মিরাঃ আমি সব পারি।

আমিঃ প্লিজ, আপনি এমন কইরেন ন।

মিরাঃ যদি আমার কথা শুন তাহলে কিছুই করব না।

আমিঃ আপনি যা বলবেন আমি তাই শুনব। আপনি আমার পিছু ছেড়ে দিন, প্লিজ।

মিরাঃ কি বললে আমি তোমার পিছু নিয়েছি।

আমিঃ না না আপনি আমার পিছু নেন নি। এইযে আপনি আমার পাসওয়ার্ড হ্যাক করছেন। এমন আর কইরেন না, প্লিজ। (এমন চাপায় পরলে অনেক কিছুই করতে হয়)

মিরাঃ হে বলতে পার আমি এক প্রকার তোমার পিছু নিছি। কিন্তু আমি তোমাকে ছাড়তে পারব না।

আমিঃ কি? কিন্তু কেন বলবেন?

মিরাঃ আমার ইচ্ছা হইছে, তাই।

আমিঃ আপনার ইচ্ছার জন্য আমার সাথে এমন করবেন।

মিরাঃ যদি আমার কথা মত চল তাহলে তোমার সাথে কোনো কিছু করব না।

আমিঃ হে বলেন, আমি শুনব।

মিরাঃ তাহলে আজ থেকে আমি যখন মেসেজ দিব সাথে সাথে রিপ্লাই দিবে।

আমিঃ হে করব।

মিরাঃ আমি ছাড়া অন্য কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতে পারবে না।

আমিঃ কোনো মেয়ের সাথে কথা বলব না। (বালিকা কে হাতে রাখার জন্য বললাম, একবার শুধু ছুটতে পারলেই হল)

মিরাঃ মানে আমার সাথেও বলবে না।

আমিঃ না না, আপনার সাথে বলব।

মিরাঃ হুম, আমি যখন যা বলব সব পালন করতে হবে।

আমিঃ করব।

মিরাঃ তাহলে এখন ঘুমিয়ে পর, কাল কথা হবে। শুভ রাত্রি।

আমিঃ শুব রাত্রি।

এখন কি করব আমি? এত দিন প্রেম করি নি এই জন্য। আর এখন এই মেয়ে উড়ে এসে জুরে বসতে চাইতেছে। মাথায় কোনো কিছুই আসাছে না এখন কি করব আমি!

ধেৎ এত রাতে এই সব চিন্তা করে লাভ নাই। যা হবার হবে এখন ঘুমাই।

সকাল ৭ টায় ঘুম ভেঙে গেল, কলেজে যাব তাই উঠে ফ্রেশ হয়ে রেডি হতে লাগলাম। নাস্তা করতে বসছি তখনি কল আসল ফোনে।

ফোন হাতে নিয়ে দেখি কাল রাতের ওই মেয়ে। ওর নামত মিরা তাহলে আমি মেয়ে বলি কেন ওর নাম বলব।

ভাবিঃ কে কল দিছে?

আমিঃ ফ্রেন্ড।

আপুঃ ফ্রেন্ড কল দিছে পিক করলে সমস্যা কি?

আমিঃ এইতো চলে যাব। তাই কল পিক করে ওর টাকা যাওয়াতে চাই না।

আর কিছুই বলল না। আবার মিরা কল দিল কোনো উপায় না পেয়ে কল পিক করে বললাম।

আমিঃ হে হে আসতেছি।

মিরাঃ কি বলতেছ আবুল তাবুল।

আমিঃ হ্যা আমি রেডি হয়ে গেছি। নাস্তা শেষ করেই আসতেছি একটু অপেক্ষা কর।

এই বলেই কল কেটে দিলাম, কিন্তু মিরা আবার কল দিল তাই উপায় না পেয়ে ফোন সাইলেন্ট করে রাখলাম।

নাস্তা শেষ করে তাড়াতাড়ি করে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পরলাম। বাসা থেকে কিছু রাস্তা দূরে এসে ফোন পকেট থেকে বাহির করলাম।

বাসার কাছে ফোন হাতে নেই নি এতে কেও দেখলে সন্দেহ করবে। আর বাসায় যদি বড় আপু থাকে তাহলে আর বলতো না।

বাবা মা থেকে বড় গার্জিয়ান হল আপু যদি সে আপনার বড় হয়। যার বাসায় বড় আপু আছে সে ছাড়া আমার এই কষ্ট আর কেও বুঝবে না।

কষ্ট হলেও অনেক লাভ আছে। অনেক সময় অনেক কিছুর পারমিশন নেওয়া যায়। যেমন পিকনিকে যেতে হলে আপুকে বুঝিয়ে টাকা আদায় করি ।

পকেট থেকে ফোন হাতে নিয়ে আমি অভাক হলাম। মিরা অনেক কল দিয়ে ফেলছে এই সময়ের মধ্যে তাড়াতাড়ি ফেসবুকে ঢুকলাম মেসেজ দেওয়ার জন্য।

মোবাইল ডাটা অন করতেই মেসেঞ্জারের চিল্লানো শুরু হয়ে গেল। মিরার আইডি থেকে অনেক মেসেজ আসছে। সেই গুলা না দেখে তাড়াতাড়ি মেসেজ দিলাম।

আমিঃ আইএম রিয়েলি সরি, বাসায় ছিলাম আপু ভাবি সবার সামনে কথা বলব কি করে আপনি বলেন?

মিরাঃ আপু আর ভাবি কি তোমার একা আর কারও নাই।

আমিঃ হে আছে কিন্তু আমার আপু আর ভাবি খুব ডেঞ্জারাস আমি খুব ভয় পাই।

মিরাঃ এত ভয় পাওয়ার কি আছে।

আমিঃ আমি সবার ছোট তাই।

মিরাঃ তাই বলে এত ভয় পেতে হবে!

আমিঃ এখন যদি ওরা জেনে যায় আমি আপনার সাথে কথা বলছি, তাহলে আমার ফোন নিয়ে নিবে।

মিরাঃ সমস্যা নাই আমি তোমাকে ফোন দিব।

আমিঃ কি আপনার কাছ থেকে ফোন নিব কেন?

মিরাঃ না নিলে, আমি এখনি আপুকে মেসেজ দিব।

আমিঃ না না আপনি এমন করবেন না, প্লিজ।

মিরাঃ ওই আপনি আপনি করছ কেন? আমাকে তুমি বল আমি তোমার ৮ দিন এর ছোট।

আমিঃ কি?

মিরাঃ হুম, তোমার ১২ ফেব্রুয়ারি আর আমার ২০ ফেব্রুয়ারি একি বছর।

আমিঃ ওহ আচ্ছা আমি এখন কলেজে চলে আসছি। আপনার সাথে পরে কথা বলব।

মিরাঃ আবার আপনি।

আমিঃ সরি তুমি!

মিরাঃ ওকে ভাল থাকো আর ক্লাস শেষ হলে আমাকে কল দি।

আমিঃ আচ্ছা দিব।


পর্বঃ২

মিরাঃ আর যদি না দাও তাহলে কি হবে ভাল ভাবেই বুঝতেছ।

আমিঃ হুম, এখন রাখি বাই।

কল কেটে দিয়ে ক্লাস এ গেলাম, এসেই সোহেল এর সাথে দেখা হল।

সোহেলঃ দোস্ত কেমন আছিস?

আমিঃ আমার আর ভাল।

সোহেলঃ কি হইছেরে, এমন করে কথা বলিস কেন?

আমিঃ তাহললে কি করে বলব।

সোহেলঃ কি হইছে সেটা বল?

আমিঃ নতুন একটা সমস্যা দেখা দিছে

সোহেলঃ সমস্যাটা কি?

আমিঃ মেয়ে।

সোহেলঃ কি মেয়ে, কিন্তু কেন?

আমিঃ কি জানি।

সোহেলঃ কি করছে?

আমিঃ আমার ফেসবুজ আইডি হ্যাক করছে। আর বলছে ওর কথা না শুনলে আপুর আইডিতে মেসেজ দিয়ে বলবে, আমি ওর সাথে খারাপ কিছু করছি।

সোহেলঃ ওহ তাহলে ভাল হইল। হ্যাকার বউ পেয়ে গেলি।

আমিঃ আমার কপাল।

সোহেলঃ হুম, এখন ট্রিট দে।

আমিঃ ভাংতি নাই।

সোহেলঃ ভাংতি দিয়ে কি করবি?

আমিঃ ভিক্ষা দেওয়ার জন্য।

সোহেলঃ এখানে ফকির দেখছি না। তুই কাকে ভিক্ষা দিবি।

আমিঃ তুই কিছু সময় আগে চাইলি।

সোহেলঃ আমি ট্রিট চাইছি?

আমিঃ একি কথা।

সোহেলঃ যাই হোক, তুই দিবি কি না বল?

আমিঃ পারব না। আমি মরি আমার জালায় তুই আইছিস নতুন আরেকটা নিয়ে।

সোহেলঃ আচ্ছা লাগবে না, কিন্তু মজা পরে বুঝবি আমাকে ট্রিট না দেওয়ার।

আমিঃ যা করার করিস।

স্যার ক্লাস এ চলে আসলেন। ক্লাস শেষ করে আমি আর সোহেল কলেজ মাঠের এক পাশে বসে আড্ডা দিচ্ছিলাম। এমন সময় মিরার কল আসল। আমি ফোন এর দিকে চেয়ে আছি কল পিক করছি না।

সোহেলঃ কে কল দিছে।

আমিঃ মিরা।

সোহেলঃ মিরা আবার কে?

আমিঃ যার কথা বলছিলাম সে।

সোহেলঃ ও তাহলে তুই কথা বল আমি যাই।

সোহেল চলে গেল আমি চাল পিক করলাম।

অননাঃ এই তুই কোথায় এখন। (এমন কথা শুনে খুব অবাক হলাম)

আমিঃ এই মাত্র ক্লাস শেষ করে বাহির হলাম।

অননাঃক্লাস শেষ করছিস না। ডেটিং শেষ করছিস।

আমিঃ কি বল এসব।

মিরাঃ তুই ভিডিও কল দে। আমি দেখব তুই এখন কোথায় আছিস?

আমিঃ আচ্ছা দিতেছি।

কাল ওর সাথে প্রথম কথা হল আর আজ তুই বলল এই কথা শুনলে যে কেও অবাক হবে। ডাটা অন করার সাথে সাথে মিরার কল চলে আসল।

মিরাঃ দেখিত আশেপাশে কে কে আছে?

আমিঃ কই কেও নাই আমি একা একা বাসায় যাচ্ছি। (চারিদিক দেখালাম)

মিরাঃ ওহ সোহেল আহমেদ আইডি কার?

আমিঃ আমার বন্ধুর।

মিরাঃ আর মুন কে?

আমিঃ মুন কে আমি জানি না।

মিরাঃ একদম মিথ্যা বলবে না।

আমিঃ আমি সত্যি বলছি, মুন কে আমি জানি না।

মিরাঃ তাহলে সোহেল এর আইডি থেকে মেসেজ দিল কেন? তুই মুনের সাথে কথা বল আমি যাই।

আমিঃ কি সোহেল মেসেজ দিছে কোথায় দিছে।

মিরাঃ তোমার আইডি তে।

আমিঃ ওহ এর জন্য তুমি কল দিছ শুনেই চলে গেছে।

মিরাঃ আচ্ছা তোমার বাসায় কে কে আছে?

আমিঃ আম্মু ভাইয়া ভাবি আপু আর আমি।

মিরাঃ আহ আচ্ছা তুমি পিচ্ছি ছেলে তাই।

আমিঃ হুম, আমি পিচ্ছি!

মিরাঃ আমি ও পিচ্ছি।

আমিঃ শুধু পিচ্ছি না বজ্জাৎ একটা।

মিরাঃ ওই ওই কি বলল?

আমিঃ কি বললাম।

মিরাঃ আমি বজ্জাৎ, তাই না।

আমিঃ তা না হলে আমার মত মাসুম পিচ্ছি ছেলের সাথে এমন করতে। (অভিমানী সুরে)

মিরাঃ অলে আমার পিচ্ছি সোনারে।

আমিঃ এই যে আমাকে সোনা বলবেন না, আমার শরিরে কোনো সোনা নাই।

মিরাঃ আমার যা ইচ্ছা তাই বলব তোমার সমস্যা।

আমিঃ আমাকে বলবেন আর আমার সমস্যা হবে না।

মিরাঃ বেশি কথা বললে আমি এখনি আপুকে কল দিব।

আমিঃ না না আর বলব না।

মিরাঃ ঠিক আছে, তুমি কিছু পিকচার তুলে আমাকে সেন্ড কর এখন।

আমিঃ করতেছ, হুম।

মিরাঃ কথা না বললে আপুকে..।

আমিঃ কি সমস্যা বলতো কথা বললেও আপুকে না বললেও আপুকে…।

মিরাঃ আমি যা বলব তার উত্তর দিবে এক্সট্রা বলবে না।

আমিঃ পারব না আমার যা ইচ্ছা তাই করব।

মিরাঃ আমি কিন্তু।

আমিঃ বলতে হবে না। আপুকে কল ও দিতে হবে না। আমি পিকচার দিতেছি।

মিরাঃ এইতো আমার কিউট বাবু।

আমিঃ ও হেল আমি বাবু না।

মিরাঃ তুমি আমার সোনা বাবু ময়না চুরুই বিড়াল কুত্তা…..

আমিঃ কি আমি কুত্তা!

মিরাঃ না না তুমি আমার সোনা….

আমিঃ তাহলে আমাকে কুত্তা বললে কেন?

মিরাঃ না মানে হইছে কি আমি বলা শুরু করছি। তাই কি বলব আর কি না বুঝতে পারছি না।

আমিঃ তাই আমাকে কুত্তা বলবে।

মিরাঃ না মানে হইছে গিয়ে তুমি আমার পুরু পৃথিবী এইটা বুঝাতে চাইছি।

(কান্না করার অভিনয় করলাম)

মিরাঃ কি হল কান্না করছ কেন?

আমিঃ আমি বাসার কাছে চলে আসছি, এখন রাখি।

মিরাঃ এই শুন শুন।

আমিঃ কি?

মিরাঃ বাসায় গিয়ে ফ্রেশ খাওয়া দাওয়া করে আমাকে কল দিস।

আমিঃ আচ্ছা দিব, আমি কল না দেওয়া পর্যন্ত কল দিবে না।

মিরাঃ আচ্ছা অপেক্ষায় আছি।

আমিঃ ওকে।

কল কেটে দিয়ে মনে হল আমি খুব বড় বাছা বেছে গেছি। কি মাইয়া রে বাবা! সারাক্ষণ আমাকে ভয় দেখায়। এটা মেয়ে নয় লেডি ডন। এই সমস্যা থেকে কবে যে মুক্তি পাব আল্লায় জানেন। হে আল্লাহ তুমি আমাকে তাড়াতাড়ি এই প্যারা থেকে মুক্তি দাও। না হলে আমাকে উপরে তুলে নাও। এই সব ভাবতে ভাবতে বাসায় চলে আসলাম। বই ব্যাগ রেখে ফ্রেশ হয়ে খেতে গেলাম।

আমিঃ ভাবী খাবার দাও।

ভাবীঃ বস দিতেছি।

আমিঃ হুম।

খাবার টেবিলে এসে চুপচাপ বসে পড়লাম। ভাবী খাবার নিয়ে আসল। আমি খাওয়া শুরু করলাম।

ভাবীঃ তা কি খবর দেবর সাহেব?

আমিঃ ট্রাক এক্সিডেন্ট এ একটা কুকুর মারা গেছে।

ভাবীঃ তোমার খবর কি?

আমিঃ ভাত খাইতেছি।

ভাবীঃ খুব বেশি পেকে গেছ, তাই না। আপু কে বলব।

আমিঃ কি সমস্যা বলত সব কিছু আপুকে বলতে হবে কেন?

ভাবীঃ আপুকে না বললে তোমার কাছ থেকে সঠিক ফলাফল আসবে না, তাই।

আমিঃ আমিত সব সময় সঠিক ফলাফল দেই।

ভাবীঃ তোমার পড়াশুনার খবর কি?

আমিঃ খুব ভাল।

ভাবীঃ কেমন চলতেছে?

আমিঃ খুব স্পিডে চলেছে।

ভাবীঃ আপু আপু।

আমিঃ কি হল আপু কে ডাকছ কেন?

ভাবীঃ তোমার পড়াশুনার স্পিড কতটুকু তা দেখার জন্য।

আমিঃ ভাবি তুমিও না।

ভাবীঃ হৃদয়। (চিৎকার করে আপু ডাকল)

আমিঃ জি আপু।

ভাবীঃ দেবর সাহেব এবার বাতাস বাহির হবে।

আমিঃ একটু হেল্প কর আমায়।

ভাবীঃ এখন আর পটর পটর করবে না।

আমিঃ আপু চলে যাক তারপর দেখাব মজা।

ভাবীঃ আমি এখনি মজা দেখাব।

আপুঃ মিরা কে?

আমিঃ অ অ অ আ আ আ (তুতলাতে তুতলাতে বললাম)

আপুঃ কি অ আ বলছিস, মিরা কে বল?

আমিঃ আম আমার ফ্রেন্ড। (কাঁপতে কাঁপতে বললাম)

আপুঃ কে কল দিল কেন?

আমিঃ ও কিছুদিন কলেজ আসে নি। তাই সিলেবাস নেওয়ার জন্য।

আপু আর কিছু না বলে ফোন রেখে চলে গেল। আমারত এখন হার্ট এটাক করার মত অবস্থা হয়ে গেছিল। কোনো রকম মরার ঘাট থেকে ফিরে আসছি। আর একটু দেরি হলে আমাকে আর খুঁজে পাওয়া যেত না।

খাওয়া শেষ করে তাড়াতাড়ি করে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে মিরা কল দিলাম।

আমিঃ আমাকে কি মেড়ে ফেলতে চাও। তোমাকে বলছি না আমি কল না দেওয়ার আগে কল দিবে না।

মিরাঃ তুমি দেরি করছিলে। তাই আমি কল দিলাম।

আমিঃ আপু কল ধরছিল, কি বলছ তুমি?

মিরাঃ আমি তেমন কিছু বলি নি।


পর্ব ৩

আমিঃ যাক তাহলে আপু বুঝতে পারে নি কিছু। (বলেই পেছনে তাকালাম)

মিরাঃ না বুঝলেই ভালো!

পিছলে তাকিয়ে দেখি আপু দাড়িয়ে আছে। আর ইসারায় বলল মোবাইল দেওয়ার জন্য। এদিকে মিরা বক বক করতেছে। আপু মোবাইল হাতে নিয়ে কল কেটে দিয়ে মোবাইল নিয়ে চলে গেল।

কি আর করব? এখন কিছু বলতেও পারব না। বললেই আমার খবর খারাপ হয়ে যাবে। তাই কোনো কিছু না করে চুপচাপ ঘুমাবার সিদ্ধান্ত নিলাম। ঘুম থেকে উঠে যদি কিছু করা যায় তাহলে করব না হলে নাই। এখন এত কিছু চিন্তা করে লাভ হবে না। তাই ঘুমিয়ে গেলাম।

ঘুম থেকে উঠে গোছল করে ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি, বিকাল ৫:৩০। চুপিচুপি ভাবীর রুমে গেলাম। দেখি ভাবীকে বলি কিছু করতে পারে কিনা।

এখন ভাবী ছাড়া আর কেও আমাকে হেল্প করবে না। ভাবীও না করতে পারে, কিন্তু আমি ভাবী ছাড়া আর কাউকে বলার সাহস পাচ্ছি না। আম্মু কে বলেও লাভ নাই। আম্মু উলটা আমাকে ঝাড়ি দিবে। ভাইয়াকে বললে এই মাসের হাত খরচ না পেতেও পারি।

তবে ভাবীকে বললে কাজ হোক আর না হোক বিপরীত কিছু হবে না। সব কিছুর পরেও আমি তার ছোট জামাই। ভাবীর রুমে এসে বললাম,

আমিঃ ভাবী, আসতে পারি।

ভাবিঃ এসেই গেছ যখন, তাহলে অনুমতি নেওয়ার কি আছে?

আমিঃ আমার লক্ষি ভাবী! কি কর এখন?

ভাবিঃ মতলব কি, হুম?

আমিঃ না মানে, হইছে কি ভাবী।

ভাবিঃ আমি পারব না।

আমিঃ প্লিজ ভাবী, একটু ট্রাই কর।

ভাবিঃ কাজ হবে না।

আমিঃ তুমি না আমার লক্ষি ভাবি।

ভাবিঃ এখন যদি আপু জানতে পারে, তুমি আমার কাছে আসছ সুপারিশ করার জন্য তাহলে কি হবে বুঝতে পারছ।

আমিঃ ভাবী, কিছু একটা কর!

ভাবিঃ চিন্তা করে দেখি কি করা যায়?

আমিঃ তাড়াতাড়ি কর। আমাকে হেল্প করবে।

আপুঃ ও কিসের হেল্প করবে ভাবী?

হঠাৎ করেই আপু চলে আসল। এখন কি করব বুঝতেছি না। আমি ভাবীর দিকে আর ভাবী আমার দিকে তাকাচ্ছে।

ভাবিঃ আপু আমি বলছিলাম, ছাদে কিছু ফুল গাছ লাগাব। তাই ছোটভাই বলছে ও আমাকে হেল্প করবে।

আপুঃ ওহ আচ্ছা, তাহলে ভাল।

ভাবিঃ কি কি ফুল লাগানো যায়, আপু?

আপুঃ দেখ, তোমার দেবর কে বলে কি লাগাবে, আমি এ সবে নাই। (এই বলে আপু চলে গেল)

ভাবিঃ যাক, এই যাত্রায় বেঁচে গেছ।

আমিঃ হুম এখন বল? মোবাইল পাবো কি করে?

ভাবিঃ ১ মাস অপেক্ষা কর, দেখি কি করে।

আমিঃ এত দিন কিভাবে থাকব আমি।

ভাবিঃ অপরাধ যখন করছ তাহলে শাস্তি ভোগ করতে হবে।

আমিঃ একটা কিছু কর প্লীজ।

ভাবিঃ আচ্ছা মেয়েটা কে?

আমিঃ কোন মেয়ে?

ভাবিঃ আপু যে বলল, মিরা নামের কে কল দিছে?

আমিঃ আর বল না, ওই শয়তান এর জন্য আমার এই অবস্থা হল।

ভাবিঃ শয়তান না শয়তানী, বল। কে ওইটা, বাসা কোথায়?

আমিঃ কিছুই জানি না। শুধু জানি ও একটা হ্যাকার।

ভাবিঃ কি? হ্যাকার।

আমিঃ হুম।

ভাবিঃ হা হা হা হা তোমাকে শেষ পর্যন্ত হ্যাকারে পাইছে। তা কি কি হ্যাক করল?

আমিঃ আমার সম্পুর্ণ মোবাইল।

ভাবিঃ মানে?

আমিঃ মানে আমার মোবাইল দিয়ে যা যা করি সব ওর কাছে চলে যায়। ফেসবুক এর পাসওয়ার্ডও জানে!

ভাবিঃ বাবা কি ডেঞ্জারাস!

আমিঃ হুম, আর আমাকে সব সময় তোমার মত আপুর ভয় দেখায়।

ভাবিঃ এই ব্যাপার কি করে জানল।

আমিঃ কি জানি!

ভাবিঃ আমাদের পরিচিত কেহ নাকি!

আমিঃ জানি না, তবে তুমি এইটা জানতে পারবে কি?

ভাবিঃ কি করে জানব।

আমিঃ ওর ফেসবুক আইডিতে ওর সাথে কথা বলে দেখ।

ভাবিঃ আমি পারব না।

আমিঃ কেন?

ভাবিঃ আমার আইডিও যদি হ্যাক করে ফেলে।

আমিঃ আরে তোমারটা করবে কেন?

ভাবিঃ তাহলে তোমারটা করল কেন?

আমিঃ আমারটা করছে। কারণ ওর মেসেজ এর রিপ্লাই দেই নি বলে।

ভাবিঃ তুমি রিপ্লাই দেও নি কেন?

আমিঃ আমি কি লুচ্চা যে সব মেয়েদের সাথে কথা বলব।

ভাবিঃ ওরে আমার ভদ্র দেবর। বিয়ের সময় আমার বান্ধুবিকে চোখ মারছিলা কেন?

আমিঃ ওই আপুতো আনাকে দেখে ক্রাশ খাইছিল।

ভাবিঃ কি ও তোমাকে দেখে ক্রাশ খাইছিল। তুমি জানো ও তোমার থেকে ৬ বছর এর বড়। আর তুমি কি করে বুঝলা ও ক্রাশ খাইছিল।

আমিঃ বড় হইছে তো কি হইছে? আমার দিকে ডেবডেব করে তাকাচ্ছিল। তাই বুঝলাম ক্রাশ খাইছে।

ভাবিঃ আচ্ছা ঠিক আছে। এখন যাও পড়াশুনায় মনযোগ দাও।

আমিঃ হুম কি আর করব? আমার ফ্রেন্ডগুলা এখন গল্প মিস করবে।

ভাবিঃ কি বললে, হুম।

আমিঃ কিছু না।

এই বলে ভাবীর রুম থেকে চলে আসলাম। এখন আর কি করব? বই এর সামনে সারা দিন বসে থাকতে হবে। সব কিছু ওই মিরার জন্য হইছে। কেন যে আমার সাথে লাগা শুরু করল। আর কেন আমার সাথে কথা বলতে লাগল। আমাকে কল না দিলে আপুর কাছে ধরা পরতাম না। এখন সব সময় আপু আমাকে ফলো করবে। রুমে বসে ভাল লাগছে না। যাই ছাদে গিয়ে শেষ বিকেল এর মিষ্টি বাসার খেয়ে আসি। বাতাস খাওয়া যায় না কি, আচ্ছা বাতাস যাই করুক আমি ছাদে যাই।

ছাদে এসে মুক্ত আকাশের পানে থাকিয়ে মনে মনে বললাম আমি এখনো আগের মত পিচ্ছি রয়ে গেছি। আপু ছোটবেলায় আমার সাথে যেমন আচরণ করত এখনো তেমন করে। তাহলে আমি এখনো বড় হইনি। বড় হইলে কি আর এখন এভাবে ছাদে বসে থাকতাম। বন্ধুদের সাথে চায়ের দোকানে বসে আড্ডা দিতে থাকতাম। সামনের টেবিলে চা আর হাতে সিগারেট থাকত। কিন্তু আমি বড় হইলে ও আপুর কাছে এখনো বড় হইনি। আপুর কাছে আগের পিচ্ছি আছি। এসব চিন্তা করতে করতে অন্ধকার নেমে আসল। এখন আর ছাদে থাকা ঠিক হবে না রুমে গিয়ে পড়তে বসতে হবে। ছাদ থেকে বাসায় এসে হাল্কা নাস্তা করে রুমে এসে পরতে বসলাম।

পরেরদিন…..

সকালে ঘুম থেকে উঠে ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করে কলেজে চলে আসলাম। মাঠে সোহেলকে পেয়ে গেলাম।

সোহেলঃ ওই তোর ফোন অফ কেন?

আমিঃ আপুর কাছে।

সোহেলঃ কেন?

আমিঃ কাল বাসায় যাওয়ার পরে মিরা কল দিছে। আর আপু পিক করছে। আমি খাওয়াত ছিলাম।

সোহেলঃ তারপর মোবাইল নিয়ে নিছে।

আমিঃ না তখনও নেয় নি। আমাকে জিজ্ঞাসা করছে মিরা কে? আমি বলছি আমার ফ্রেন্ড।

সোহেলঃ তারপর!

আমিঃ তারপর রুমে এসে কথা বলতেছিলাম আপু এসে দেখে ফেলল।

সোহেলঃ ব্যস ধরা খেয়ে গেলি।

আমিঃ হুম।

সোহেলঃ তাহলে এই কদিন তোকে খুঁজে পাওয়া যাবে না ফোনে।

আমিঃ হুম চল। ক্লাস এ যাই।

সোহেলঃ চল।

ক্লাস এ চলে গেলাম। ক্লাস শেষ করে কিছু সময় সোহেল এর সাথে গল্প করে বাসায় চলে গেলাম। এভাবে এক এক করে দিন চলে যেতে লাগল।

দশ দিন পরে….

আজ খুব তাড়াতাড়ি ঘুম ভেঙে গেল। তাই উঠে ফ্রেশ হয়ে ক্লাস এর পড়া রিভিশন দিলাম। কলেজ যাওয়ার সময় হয়ে গেল। তাই রেডি হয়ে নাস্তা করে কলেজের উদ্দেশ্যে রওনা দিলাম। কিছু রাস্তা আসার পরে হঠাৎ….


পর্ব ৪

কিছু রাস্তা আসার পরে হঠাৎ করে আমার সামনে একটা গাড়ি ব্রেক করল। সামনে বাধ ছিল। তাই মনে হয় ব্রেক করছে। আমি আমার মত হাটতে লাগলাম। কিন্তু বেশি হাঁটা হল না। কে যেন পিছন থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল। ঠিক মত মাটিতে পরলাম না। তাই ব্যথাও পাইনি কোথাও? চোখ খুলে দেখতে লাগলাম, আমি এখন কোথায় আছি? হায় হায় আমাকে কেও কিডন্যাপ করতেছে। আমাকে একটা গাড়ির ভেতরে ফেলে দিছিল। কিন্তু আমাকে কে বা কারা…..?

আর এ কেমন কিডন্যাপ আমার চোখ বাধল না, অজ্ঞান করল না। দেখতে লাগলাম কোন হারামি এমন কাজ করল। হায় আল্লাহ এ আমি কি দেখছি! আমার সামনে একটা মেয়ে বসে আছে। আমার মত কি ওই মেয়েকেও ওরা কিডন্যাপ করছে নাকি! এখন যদি আমাকে মেরে ফেলে তাহলে কি হবে? এতক্ষণ চিৎকার করিনি। এখন মনে হচ্ছে চিৎকার করা লাগবে। যেই ভাবা সেই কাজ।

আমিঃ বাঁচাও! বাঁচাও! আমাকে কেহ কিডন্যাপ করতেছে। বাঁচাও! (চিৎকার শুরু করলাম। কিন্তু ওই মেয়ে আমার মুখ চাপ দিয়ে ধরল। তার মানে এই মেয়েও কিডন্যাপার)

মেয়েটাঃ এই কি হইছে? চিল্লাচ্ছ কেন?

আমিঃ আমাকে কিডন্যাপ করতেছ আর আমি চিল্লাব না।

মেয়েটাঃ আরে কে তোমাকে কিডন্যাপ করতেছে?

আমিঃ আপনি, আপনারা।

মেয়েটাঃ ওহহহ! আমি মিরা।

আমিঃ তো আমি কি করব? কিহহহহ তু তু তু!

মিরাঃ আমি মিরা। আমাকে চিনতে পারছ না।

ওর কথা শুনে ভালো করে ওর দিকে তাকালাম। আরে হে এইতো মিরা আগে খেয়াল করিনি। কিন্তু ও আমাকে রাস্তা থেকে তুলে নিয়েছে।

মিরাঃ কি হল?

আমিঃ তু তু আ আ আ কে কে এ এ (ভয় পাওয়া শুরু হয়ে গেল। এর আগে এতটা ভয় পাইনি)

মিরাঃ কি হইছে তোমার এমন করতেছ কেন

আমিঃ আ আ আ আ তু তু তু তু আ আ আ আ।

আর কিছুই মনে নাই। অজ্ঞান হয়ে গেলাম। যখন জ্ঞান ফিরল তখন দেখি মিরা আমার মাথায় হাত বুলাচ্ছে আর কান্না করতেছে।

মিরাঃ ওই কি হইছে? তোমার এত ভয় পাওয়ার কি আছে, হুম?

আমিঃ কয়টা বাজে এখন?

মিরাঃ দুপুর ১২ টা।

আমিঃ কি আর এক ঘণ্টা পরে আমার কলেজ ছুটি। আমি বাসায় চলে যাব, এখনি।

মিরাঃ চুপ কর। আমি সময় মত বাসায় দিয়ে আসব।

আমিঃ আমি এখন কোথায়?

মিরাঃ আমার বাসায়।

আমিঃ কিইইইই তু তু তু।

মিরাঃ এই চুপ কর। সব কিছুতে এত ভয় পাও কেন? আমি আছি তো। তোমার কিছু হবে না। এই দেখো, আমি তোমার পাশে আছি।

আমি আর কিছু বলতে পারলাম না। কি জন্য আবার ভয় পেতে শুরু করলাম। এই অবস্থা দেখে মিরা আমাকে জড়িয়ে ধরল।

মিরাঃ হৃদয়, এমন করতেছ কেন? প্লীজ, ভয় পাওয়ার কিছু নাই। ভয় পেও না।

আমি কি করব, বুঝতেছি না। আমার শরীরে ১১০০ ভোল্ট এর শক লাগল। এই প্রথম কোনো মেয়ে আমাকে এভাবে জড়িয়ে ধরছে। আমি থ হয়ে গেলাম। নড়াচড়া করার শক্তি পাচ্ছি না।

মিরাঃ এই হৃদয়। দেখ, আমি মিরা। দেখ, ভয় পাওয়ার কিছু না এখানে।

আমিঃ তুমি আমাকে এখানে নিয়ে আসলে কেন?

মিরাঃ এ ছাড়া আর কি করব? এত দিন হয়ে গেল তোমার কোনো খোজ নাই। ফেবুতেও আস না। নাম্বার বন্ধ। এসব দেখে আমি মনে করছি তোমার কিছু হয়ে গেছে। তাই আমি দেশে ফিরে আসছি।

আমিঃ দেশে আসছ মানে! এত দিন কোথায় ছিলে?

মিরাঃ ওয়াশিংটন এ ছিলাম।

আমিঃ তাহলে এখানে আসলে কেন?

মিরাঃ কেন মানে! তোমার জন্য আসছি।

আমিঃ আমার জন্য মানে!

মিরাঃ মানে বুঝ না।

আমিঃ আ আমি বাসায় চলে যাব। আপু যদি জানতে পারে আমি ক্লাস এ যাই নি তাহলে…..।

মিরাঃ কিচ্ছু হবে না, আমি আছি।

আমিঃ জানো, তোমার জন্য আপু আমার মোবাইলটা নিয়ে নিছে।

মিরাঃ আচ্ছা সমস্যা নাই। আমি তোমার জন্য নতুন মোবাইল আনছি। একটু দাড়াও, আমি নিয়ে আসছি।

আমিঃ না না। আপু জানতে পারলে আমাকে বাসা থেকে বাহির হতে দিবে না।

মিরাঃ আচ্ছা আপুকে এত ভয় পাও কেন? আপু কি বাঘ নাকি!

আমিঃ বাঘ না কিন্তু সবাই খুব ভয় পায়, আপুকে। আমিও।

মিরাঃ সবাই ভয় পায় বলে তুমিও ভয় পাবে।

আমিঃ আমিতো সব থেকে বেশি ভয় পাই।

মিরাঃ কেন এত ভয় পাও?

আমিঃ জানি না। আমি এখন বাসায় যাব।

মিরাঃ আচ্ছা চল। লেট হলে তোমার আবার সমস্যা।

আমিঃ হুম চল।

মিরাঃ দাঁড়াও! দাঁড়াও!

আমিঃ কি?

কি আর বলব আপনাদের? সে ঝট করে এসে আমার ঠোঁটে ঠোঁট রাখল। আমি আবার শক খেলাম। এর আগে আমি কোনো মেয়ের হাত ধরি নি। এমনকি আমার ফ্যামিলিরও কারো হাত ধরিনি প্রয়োজন ছাড়া। আর এই মেয়ে আমাকে কিস করতেছে, তাও লিপকিস। আমি পাথর হয়ে দাড়িয়ে আছি। কতক্ষণ পর ছাড়ল জানি না। ওর ধাক্কায় আমি বাস্তবে ফিরে এলাম।

আমিঃ তু তু তু!

মিরাঃ আবার শুরু করলে ভয় পাওয়া।

আমিঃ তুমি এমন করলে কেন?

মিরাঃ কি করলাম? জাস্ট কিস দিলাম। আমার ইচ্ছা ছিল প্রথম যে দিন তোমার সাথে দেখা করব সেই দিন কত কি করব! ঘুরব, হাতে হাত রেখে হাটব। আর তুমি কি করলে ভয় পেয়ে অজ্ঞান হয়ে গেলে।

আমিঃ তুমি কি একা আসছ?

মিরাঃ না, আব্বুও সাথে আসছে। তুমি যদি আরও ভয় পেয়ে যাও তাই আব্বুকে বলছি বাহিরে যেতে।

আমিঃ তোমার আব্বু জানেন আমার কথা।

মিরাঃ সব জানে।

আমিঃ সব।

মিরাঃ হুম।

আমিঃ কি কি!

মিরাঃ এইযে আমি তোমাকে ভালবাসি।

আমিঃ কি ভা ভা ভা!

মিরাঃ আবার শুরু হয়ে গেল। আমি যদি ভাল না বাসতাম তাহলে এসব করতাম না।

আমিঃ বাসায় চলে যাব।

মিরাঃ চল।

কি মেয়ে রে বাবা! আমাকে ও নাকি ভালবাসে আর আমি জানি না। ওর বাবাকেও বলছে এই কথা। আর আমার আপু জানতে পারলে আমাকে পেয়াজের মত কুচিকুচি করে নদীতে ফেলে দিবে। গাড়িতে করে আমাদের বাসার কাছে চলে আসলাম।

আমিঃ এখানেই দাড়াও। আমি এখানেই নেমে যাব।

মিরাঃ ড্রাইভার, গাড়ি থামাও।

আমি গাড়ি থেকে নেমে হাটা শুরু করলাম।

মিরাঃ এই দাঁড়াও।

আমিঃ কি?

মিরাঃ কাল আমি এখানে তোমার জন্য অপেক্ষা করব।

আমিঃ না না, এখানে এসো না। আপু দেখলে সমস্যা হবে।

মিরাঃ আচ্ছা যাও। আর পারলে আমাকে কল দিও।

আমি আর কিছু বললাম না। বাসার প্রায় কাছে চলে আসছি। এখন যদি আপু দেখে তাহলে কি হবে আমি জানি না।

বাসায় এসে নক করতেই আপু দরজা খুলে দিল। আমি চুপচাপ রুমে যেতে লাগলাম।

আপুঃ দাঁড়াও!

আমিঃ ক ক কি আ আপু

আপুঃ সারা দিন কোথায় ছিলে?

আমিঃ ককককলেজে।

আপুঃ আচ্ছা, দাঁড়া!

এই বলেই মোবাইল নিয়ে কাকে কল দিতে লাগল, লাউডস্পিকার দিল।

আপুঃ আসসালামু আলাইকুম স্যার। আমি হৃদয় এর আপু বলছি।

স্যারঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম। জি বলেন।

আপুঃ হৃদয় কি আজ কলেজ গেছিল?

স্যারঃ না, আজ ও আসে নি কেন? কোনো সমস্যা নাকি।

আপুঃ না স্যার, কোনো সমস্যা নাই। রাখি, ভাল থাকবেন।

আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আমি মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছি।

আমার দিকে তাকা বলে আমার তুতুনি ধরে উপর করল।

আপুঃ সারা দিন কোথায় ছিলি? আর এর সাহস হল কোথা থেকে কলেজ ফাঁকি দেওয়ার। (বলেই ঠাশঠাশ করে থাপ্পড় দেওয়া শুরু করল)

ভাবী এসে থামিয়ে আপুকে নিয়ে গেল।

আপুঃ আমার অনুমতি ছাড়া একে বাসার বাইরে যেতে দিবে না আজ থেকে।

আমি চুপচাপ রুমে চলে আসলাম। ব্যাগ রেখে ফ্লোরে বসে পরলাম। গালে খুব ব্যথা করতেছে। আর চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পরতেছে। কিছু সময় পরে ভাবী রুমে আসল… হাতে বরফ নিয়ে আমার কাছে এসে গালে বরফ ঘষানো শুরু করলেন।

ভাবীঃ কেঁদে আর কি হবে? কলেজ ফাঁকি দিয়ে প্রেম করতে যাবে, কিস করবে আর লিপস্টিক দিয়ে দুজন মাখামাখি করে বাসায় আসবে। মুখে যে লেগে আছে সেইটা মুছে আসতে পার নি।

এই কথা শুনে ভাবীর দিকে তাকালাম।

ভাবীঃ আমার দিকে তাকিয়ে লাভ নাই। আয়নায় গিয়ে দেখ।

আমি বসা থেকে উঠে আয়নার সমনে গিয়ে নিজেই অবাক হয়ে গেলাম। ঠোটের চারিপাশে লিপস্টিক লেগে আছে।

ভাবীঃ হইছে আর দেখতে হবেনা। এখানে বস। আমি তোমার বউ না যে সারা দিন বরফ ঘসব।

আমার বাকশক্তি যেন হারিয়ে গেছে। আমি কথা বলতেই পারছি না।

ভাবীঃ যাও, গোছল করে আস।

এই বলে ভাবী চলে গেল। আমি আরও কিছুক্ষণ বসে তারপর গোছল করতে গেলাম। অনেক্ষণ শাওয়ার ছেড়ে নিচে বসে ভিজলাম। পানির সাথে আমার চোখের পানি পরতে লাগল। অনেকক্ষণ ভেজার পরে গোছল শেষ করে বাহির হলাম। বাহির হয়েই দেখি….


শেষ পর্ব

বাহির হয়েই দেখি ভাবী খাবার নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

ভাবীঃ কাপড় পরে খেয়ে নে তাড়াতাড়ি।

এই বলে ভাবী চলে গেল। আমি কাপড় পরে খেতে ইচ্ছা করছে না, তাই শুয়ে পড়লাম।

ভাবীঃ কি হল? না খেয়ে শুয়ে পরলি কেন?

আমিঃ আমার খেতে ইচ্ছা করছে না।

ভাবীঃ এখন ইচ্ছা করবে কেন? সারা সকাল গফ এর সাথে অনেক কিছু খাইছ। যাইহোক, এখন তাড়াতাড়ি খেয়ে নে।

আমিঃ খাব না ভাবী, তুমি নিয়ে যাও।

ভাবীঃ খাবি না কেন? উঠ উঠ বলছি। (আমার হাত ধরে টানা শুরু করল)

আমিঃ খাব না বললাম তো। (চিৎকার করে বললাম)

ভাবীঃ আমার সাথে রাগ দেখিয়ে লাভ নাই, খেয়ে নে।

ভাবীর জোড়াজুড়িতে না খেয়ে পারলাম না। হাল্কা খেয়ে ঘুমিয়ে পরলাম। বিকালে মাথায় খুব ব্যথা করছিল। তাই আর বেশি ঘুমাতে পারলাম না। গায়ে জর চলে এসেছে। কোনো মতে মুখ ধুয়ে এসে আবার শুয়ে পড়লাম। কিছু সময় পরে..

ভাবীঃ ছোটভাই কি হল আজ এখনো ঘুমাচ্ছ কেন? উঠো ভাত খাওয়ার সময় হয়ে গেছে।

আমার জর বেড়ে গেছে। তাই কথাও বলতে পারছি না। চোখও খুলতে পারছি না।

ভাবীঃ কি হল উঠো তাড়াতাড়ি?

আমিঃ হুহ।

ভাবীঃ কি হুহ! বলতেছি রাত ১০:৩০ হয়ে গেছে। (এই বলে আমাকে তুলতে লাগল)

আমিঃ একি তোমার শরীর এত গরম কেন? কি হইছে তোমার?

ভাবীঃ এত জর বাধালে কি করে?

আমার কথা বলার শক্তি ছিল না। আবার ঘুমিয়ে গেলাম। কিছু সময় পরে ভাবী না আপু আসল খাবার নিয়ে। কোনো রকম কিছু খেয়ে আবার ঘুমিয়ে গেলাম।

পরের দিন কখন ঘুম ভাঙল জানি না। ডাক্তার এসেছে বুঝতে পারলাম। ডাক্তার চেক আপ করে কিছু ঔষধ দিয়ে গেল। কিছু সময় পরে……

আপুঃ হা কর।

শুনে আমি চোখ খুলে তাকালাম। দেখি, আপু। ভয়ে আপুর দিকে আর তাকাতে পারলাম না। মাথা নিচু করে খাইয়ে দিয়ে গেল। পরে ভাবী মেডিসিন খাইয়ে দিল। আসতে আসতে জর ছাড়তে লাগল। আমি আবার ঘুমিয়ে গেলাম। শরীর খুব দূর্বল তাই শুধু ঘুম পাচ্ছে। হঠাৎ করে আমার ঘুম ভেঙে গেল। কেও আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে কপালে চুমো দিল। চোখ খুলে দেখতে লাগলাম কে? যা দেখলাম দেখেতো আবার অজ্ঞান হওয়ার মত অবস্থা হয়ে গেল। মিরা আমার মাথার কাছে বসে আছে। ও এখানে কি করে আসল? হঠাৎ করে ভাবী রুমে আসলেন।

মিরাঃ ভয় পেও না। আপুর পারমিশন নিয়ে আসছি।

আমিতো অবাক! আপু কিছু না বলে এমনিতে ছেড়ে দিল।

মিরাঃ যাও মুখ ধুয়ে এসে নাস্তা কর। কাল থেকে কিছুই খাও নি।

আমি উঠতে লাগলাম কিন্তু পারলাম না। মিরা আমাকে সাহায্য করল।

ভাবীঃ আগেই বাসায় নিয়ে আসতে তাহলে আজ এমন হত না।

এই বলে ভাবী চলে গেল। মিরা আমাকে বাথরুমে নিয়ে মুখ ধুইয়ে দিল। তারপর এসে নাস্তা করতে লাগল। না, ও খায় নি। তাই আমাকে খাইয়ে দিতে লাগল।

আমিঃ আপু তোমাকে কিছু বলেনি।

মিরাঃ বলছে।

আমিঃ মারে নিতো।

মিরাঃ মারবে কেন?

আমিঃ না মানে কি কি বললে যে তোমাকে আমার কাছে আসতে দিল।

মিরাঃ অনেক কিছু এখন চুপচাপ খাও।

আমিঃ তুমিও খাও।

মিরাঃ তুমি খাও, আমি পরে খাব।

মিরা আমাকে খাওয়াতে লাগল। এখন কিছুটা ভয় করছে। আপু যেহেতু মেনে নিয়েছে তাহলে আর কোনো সমস্যা হবে না। আপুকে নিয়েই আমার সব ভয় ছিল। মিরা আমাকে খাইয়ে দিচ্ছে। আর আমি অঅকে ড্যাবড্যাব করে দেখছি।

মিরাঃ এমন করে কি দেখছ, হুম?

আমিঃ তোমাকে দেখছি।

মিরাঃ এর আগে কি দেখনি? কি করেই দেখবে কাল যা করছ আমাকে ভয় পাইয়ে দিছ।

আমিঃ আসলে আমি খুব ভয় পাইছি, তোমাকে হঠাৎ দেখে।

মিরাঃ আমি বাঘ নাকি!

আমিঃ কম কিসে!

মিরাঃ কি আমি বাঘ!

আমিঃ হুম, সব সময় আমাকে ভয় দেখাতে।

মিরাঃ তুমি আমার সাথে কথা বলনি কেন?

আমিঃ আমিতো মেয়েদের সাথে বেশি কথা বলি না।

মিরাঃ আমার সাথে বললে কি এমন হত। আমি যে তোমার লেখার প্রেমে পরে গেছি। আর লেখক কে ভালবেসে ফেলেছি।

আমিঃ না দেখেই।

মিরাঃ হুম।

এর মধ্যেই দরজায় শব্দ হল। আমি আর মিরা দরজার দিকে তাকালাম। তাকিয়ে দেখি আপু আসছে। আমি আপুকে দেখে ভয়ে মাথা নিচু করে ফেলছি।

আপুঃ মিরা খাওয়ানো শেষ করে এই ঔষধ খাইয়ে দিও।

মিরাঃ আচ্ছা আপু।

আপুঃ আর তুই ভাল করে শুনে রাখ মিরাকে আমাদের সবার পছন্দ হইছে। আর ওর আব্বুর সাথেও আমরা কথা বলছি। মিরা ছাড়া যদি কোনো দিন অন্য কোনো মেয়ের সাথে দেখি তাহলে আমি কি করব তা নিজে যানি না।

এই বলে আপু চলে গেল। আমি মিরার দিকে তাকালাম। আর মিরা আমার দিকে তাকাল।

মিরাঃ শুনছ, আপু কি বলে গেছে?

আমিঃ হুম।

মিরাঃ মনে থাকবে ত।

আমিঃ হুম।

মিরাঃ এখন মেডিসিন খেয়ে নাও। আর তাড়াতাড়ি সুস্থ হও।

তারপর মিরা আমাকে মেডিসিন খাইয়ে দিল।

মিরাঃ আচ্ছা, আপু তোমার সাথে এমন করে কথা বলে কেন?

আমিঃ জানি না।

মিরাঃ আমার সাথে প্রথমে ভাল ভাবে কথা বলছিল। যখন বলছি আমি ভালবাসি তখন রাগ দেখিয়ে কথা বলা শুরু করল।

আমিঃ তারপর কি করলে?

মিরাঃ আব্বু সাথে ছিল, আব্বু আপুর সাথে কথা বল শুরু করল। আর আপুকে বুঝাতে লাগল। তারপর মেনে নিল।

আমিঃ জানো, কাল আপু আমাকে খুব মারছে।

মিরাঃ ভাবী আমাকে বলছে আর এই জন্য তোমার জর আসছে।

আমিঃ আরে এই জন্য না।

মিরাঃ তাহলে কেন?

আমিঃ আমিত বাথরুমে গিয়ে ইচ্ছা মত পানিতে ভিজছি।

মিরাঃ তাহলে থাপ্পড় খেয়ে জর আসে নি।

আমিঃ না।

মিরাঃ তাহলে ঠিক আছে, এখন কি হাটতে পারবে?

আমিঃ দেখি ট্রাই করে।

দাড়িয়ে হাটার চেষ্টা করতে লাগলাম। হে এখন আর শরীর আগের মত দূর্বল লাগতেছে না।

মিরাঃ এখন ঠিক হয়ে গেছ।

আমিঃ হুম।

মিরাঃ তাহলে আমাকে প্রপোজ কর।

আমিঃ কি প্রপোজ, আমি কেন করব?

মিরাঃ তুমি আমাকে ভালবাস না!

আমিঃ বাসি ত।

মিরাঃ তাহলে প্রপোজ কর।

আমিঃ তুমি কি আমাকে ভালবাস না।

মিরাঃ বাসি কিন্তু আমি প্রপোজ করতে পারব না।

আমিঃ কেন?

মিরাঃ মেয়েদের লজ্জা বেশি, তাই! তাড়াতাড়ি প্রপোজ কর, না হলে আপুকে গিয়ে বলব তুমি…..।

আমিঃ আবার শুরু করে দিলে।

মিরাঃ আচ্ছা আর বলব না। ভয়ও দেখাব না। তাড়াতাড়ি প্রপোজ কর।

আমিঃ কি দিয়ে করব গোলাপ ফুল নাইত।

মিরাঃ তাইতো! কি দিয়ে প্রপোজ করবে। উম্মম্মম্মম্ম লাক্স সাবান আছে।

আমিঃ কেন লাক্স সাবান দিয়ে কি করবে?

মিরাঃ লাক্স সাবান দিয়ে প্রপোজ করলে চলবে।

আমিঃ লাক্স সাবান দিয়ে কেন?

মিরাঃ কারণ লাক্স সাবানে হাজারো গোলাপের সুবাস আছে। তাই লাক্স হলে চলবে।

আমিঃ লাক্স নাই। আমরা সবাই লাইফবয় ব্যবহার করি।

মিরাঃ তাহলে কি করা যায়? পাইছি, এই নাও আংটি। এইটা দিয়ে কর। (ওর আঙুল থেকে খুলে দিয়ে বলল)

আমিঃ তোমার টা দিয়ে তোমাকেই?

মিরাঃ সমস্যা নাই, আমার এসব কিছুই লাগবে না। আমার শুধু তোমাকে লাগবে। তাড়াতাড়ি কর।

আমিঃ হুম করতেছি।

একটু পিছু হয়ে হাটু গেটে ফিল্মি স্টাইলে প্রপোজ করতে লাগলাম।

আমিঃ এইযে হ্যাকার মেয়ে, তুমি আমার ফেসবুক হ্যাক করছ, কিছু বলিনি। আমার মোবাইল হ্যাক করছ, কিছু বলি নি। কিন্তু এখন আমার মন হ্যাক করে ফেলছ তাই তোমাকে শাস্তি পেতে হবে। আর তোমার শাস্তি হল আমি তোমাকে ভালবাসি। তুমি আমার হ্যাকার বউ হবে।

মিরাঃ আমিও তোমাকে অনেক ভালবাসি।

ভাবীঃ বাবাহ হ্যাকার বউ এর সেবা পেয়ে এত তাড়াতাড়ি সুস্থ হয়ে গেল।

আমিঃ ভাবী তুমি আসার সময় পেলে না।

ভাবীঃ ওহ সরি! ভুল সময়ে এসে গেছি। তোমরা চালিয়ে যাও। আমি গেলাম। (এই বলে দরজা লাগিয়ে চলে গেল)

মিরাঃ কাল আমার জন্য আপু তোমাকে এই গালে থাপ্পড় মারছে। আজ এই গালে অনেক আদদর করব।

আমিঃ না না আবার যদি আপু দেখে ফেলে।

মিরাঃ আর দেখতে পারবে না। আর দেখলেও আমি আছিতো। এখন আর ব্যথা পেতে হবে না। শুধু আদর পাবে উম্মাহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহহ!

শুরু হয়ে গেল আরেকটা নতুন সম্পর্ক। দোয়া করবেন আমাদের জন্য।

সমাপ্ত

লেখাঃ আরিফ শাহরিয়ার

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “হ্যাকার বউ” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ুন – অফিসের বসের সাথে প্রেম পর্ব ১

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *