পাগল ভালোবাসার গল্প

দ্য ভিলেন লাভার – পাগল ভালোবাসার গল্প

দ্য ভিলেন লাভার – পাগল ভালোবাসার গল্প: মেয়েরা নাকি ভালো ছেলের প্রেমে পড়ে না, ভিলেন মার্কা বদমাশ ছেলেদের তারা পছন্দ করে। পরিণাম কি হয় সে তো আপনারাই ভালো জানেন। চলুন এরকম একটি সিনেমাটিক প্রেমের গল্প পড়ি।


পর্ব ১

ফ্যামিলির সাথে ঘুরতে এসেছে নাবিলা। সবসময় নিজের ফ্যামিলি কে কাছে পেলেও। একসাথে ঘুরতে আসা খুব কম হয়। নাবিলা’র বয়স মাএ ১৬ বছর। এবার ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। ৩ ভাইয়ের এক বোন নাবিলা। বাবা শহরের নামকরা বিজনেস টাইকুন। মা একজন উকিল। ভাইদের নাম সিয়াম, ইমন, আরাফ। নাবিলা সবার ছোট তাই খুব আদরের। ৩ ভাইয়ের কলিজা নাবিলা। নাবিলা কে কখনো কষ্ট পেতে দেয়না। কখনো যদি নাবিলা ব্যথা পায়ও। মনে হয় ওরা ব্যথা পেয়েছে। ঘুরতে এসে নাবিলা’র আনন্দের শেষ নেই। গাড়ি থেকে নেমে এদিক ওদিক ছুটছে!

সিয়ামঃ মিষ্টি কলিজা এভাবে ছুটছো কেন?
আরাফঃ এভাবে ছুটাছুটি করে না বোন। তুমি পড়ে গেলে ব্যথা পাবে।
ইমনঃ এখানে এসে বসো মিষ্টি!

ইমন নাবিলা কে মিষ্টি বলে, সিয়াম মিষ্টি কলিজা বলে, আরাফ বোন বলে ডাকে।
ইমরান চৌধুরীঃ তুমি যদি ব্যথা পাও। তাহলে ব্যথা তোমার ভাইয়েরা পাবে। সো এখানে চলে এসো কাম মামনি! (নাবিলা’র বাবা)
নাবিলাঃ নো পাপা ইটস নাইস প্লেস। আই জাস্ট লাভ ইট। আমি এখানে আরেকটু থাকি?

ইমন, আরাফ আর সিয়াম গিয়ে। নাবিলা কে নিয়ে বসিয়ে দেয়। নাবিলা গাল ফুলিয়ে রেখেছে। নাবিলা কে একদম পিচ্চি লাগছে। একটা লাল টি শার্ট গায়ে। আর লাল লং স্কার্ট। মুখে তেমন সাজ নেই। শুধু হালকা লাল লিপস্টিক। গলায় লাল একটা স্কার্ফ। মাথায় বাচ্চাদের মতো ব্যান্ড দেয়া। যার দুই সাইডে পুতুল ঝোলানো। চোখগুলো বড় বড়। ইমন গিয়ে আইসক্রিম নিয়ে এলো। কারন আইসক্রিম আর চকলেট। এগুলো নাবিলা’র ফেবারিট। তাই রেগে থাকলেও। আইসক্রিম আর চকলেট পেলেই হলো।

রাগ সাথে সাথে গায়েব। নাবিলা আইসক্রিম দিয়ে পুড়ো মুখ। একদম বাচ্চাদের মতো মাখিয়ে ফেলেছে। ইমন, আরাফ আর সিয়াম সাইডেই আছে। নাবিলা আইসক্রিম খেতে খেতে। পার্ক থেকে বাইরে চলে এলো। বাইরে এসে মনের সুখে আইসক্রিম খাচ্ছে। এরমাঝে হাটতে হাটতে রাস্তার মাঝে চলে এলো। রাস্তার মাঝে এসে নাবিলা হা করে তাকিয়ে আছে। কারন রাস্তার পাশেই একটা ছেলে। যার মুখে মাস্ক লাগানো। একটা লোক কে ছুড়ি দিয়ে একের পর এক। অনবরত আঘাত করে যাচ্ছে। আস্তে আস্তে লোকটা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। লোকটা ছটফট করা বন্ধ করে দিলো। ঠিক তখনই সেই ছেলেটা। লোকটার শরীরে গুড়া মরিচ ছিটিয়ে দিয়ে। পাগলের মতো হাসতে হাসতে বললো!

  • হা হা হা বলেছিলাম না? আমার কথার অবাধ্য হবি না। তুই কি করলি? আমার কথা শুনলি না তাইনা? এবার মরতে হলো তো? আমার কথার অবাধ্য হলে তাদের অবস্থা। ঠিক এতটাই ভয়ংকর হয়। কারন আমি দ্যা ভিলেন আমার নাম।

আর কিছু বলার আগেই। নাবিলা জোড়ে চিৎকার করলো। ছেলেটা সাথে সাথে চোখ মুখ লাল করে। নাবিলা’র দিকে তাকালো। কিন্তু নাবিলা কে দেখে সব রাগ। এক নিমিষে যেন গায়েব হয়ে গেলো। নাবিলা চোখ মুখ খিচে রেখেছে। মুখের মধ্যে আইসক্রিম মাখা। সামনে কিছু কাটা চুল। ছেলেটা ঘোর লাগা দৃষ্টিতে দেখছে। নাবিলা’র চিৎকারে সবাই চলে এলো। ছেলেটা ওখান থেকে চলে গেলো। নাবিলা ওখানেই সেন্সলেস হয়ে গেলো। ইমন, আরাফ, সিয়াম তো পাগল হয়ে গিয়েছে প্রায়। নাবিলা কে নিয়ে তাড়াতাড়ি হসপিটালে গেলো!

এবার বলি কে এই ছেলে? এর নাম ডালিম খাঁন। মাফিয়া জগতের কিং ডালিম খাঁন। যাকে মাফিয়া জগতের সবাই ভয় পায়। প্রত্যেকটা রাষ্টে যাকে একনামে চেনে সবাই। ডালিমে’র বয়স ২৫ গায়ের রং ফর্সা। মায়াবী চোখ চোখের মনি হালকা সিয়াম। যার জন্য বেশী ভাল লাগে। লম্বায় ৬.৩” লাল ঠোট। ঠোটের নিচে তিল। কিন্তু এই ডালিম কারো সামনে আসেনি। খুন করুক বা প্রেস কনফারেন্স করুক। অলওয়েজ নিজেকে কাভার করে রাখে। কেউ এই ব্যাপারে প্রশ্ন করতে পারেনা।

কারন ডালিম সেটা এলাও করে না। একবার একজন বারবার, জিগ্যেস করছিল। ডালিম বারন করেছিলো বাট লোকটা। সে তো শুনবেই এটাই তার নিয়ত ছিলো। নিয়তের জন্য নিয়তি তাকে ছেড়েছে। লোকটাকে মরতে হয়েছে। ডালিম ওখান থেকে বাড়ি চলে আসে। নিজের কাছের ছুড়িটা গরম পানিতে ছেড়ে দেয়। এরপর জোড়ে হাসতে থাকে। গরম পানির মধ্যে হাত দিয়ে। ছুড়িটা আবার উঠিয়ে নেয়। বডিগার্ডরা ভয়ে কাঁপছে। ধারালো ছুড়ি আর এটাই ডালিমে’র মারার স্টাইল। ছুড়ি দিয়ে মারুক বা পিস্তল দিয়ে। মারার পর গুড়া মরিচ দিয়ে দেয়। ছুড়িটা ড্রয়ারে রেখে বেরিয়ে যায়!

এদিকে নাবিলা কে নিয়ে হসপিটালে এসেছে। হসপিটালে এসে ডক্টরের কেবিনে ঢুকে যায়। ডক্টর কে দেখে অবাক হয়। কারন ডক্টর মাস্ক পড়া। আর চোখে কালো সাইনগ্লাস। কিন্তু এটা নিয়ে ভাবার সময় ওদের নেই।

ইমনঃ ডক্টর আমার বোন কে দেখুন!
ডক্টরঃ কি হয়েছে ওনার?
সিয়ামঃ দেখতে পারছেন না? আমার বোন সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে।
ডক্টরঃ ওকে আমি দেখছি আপনারা বাইরে যান!
আরাফঃ বাইরে কেন যাবো?

ডক্টরঃ বাইরে না গেলে দেখবো কি করে?
ইমনঃ আমাদের সামনেই দেখুন।
ডক্টরঃ ডক্টর এস আই মিন ডক্টর অজানা। নিজের মনোমত পেশেন্ট দেখো। সো প্লিজ আপনারা যান!

ওরা দাতে দাত চেপে বেরিয়ে যায়। এদিকে ডক্টর নাবিলা কে এক ধ্যানে দেখছে। যখন নিজের হুশ আসে তাড়াতাড়ি নাবিলা কে দেখে। নাবিলা’র হাতে একটা ইনজেকশন দিয়ে দেয়। একটুপর নাবিলা’র সেন্স আসে। সেন্স এসেই ডক্টর অজানা কে দেখে। আর দেয় এক চিৎকার। বেচারা ডক্টর তো থতমত হয়ে যায়। ওরা ভেতরে চলে আসে। আর ডক্টর কে রাগারাগি করে। ডক্টর দাতে দাত চেপে বলে,

  • এই মেয়ে চেচালে কেন? আমি কি তোমাকে কিছু বলেছি?

নাবিলা আমতা আমতা করে বলে,

  • আসলে আমি ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। তোমরা কেউ ছিলে না তাই। উনি আমাকে কিছু বলেনি। আমি বাড়ি যাবো ভাইয়া।
    সিয়াম নাবিলা কে কোলে নিয়ে। হসপিটাল থেকে বেরিয়ে আসে। নাবিলা’র মাথা থেকে বেরিয়ে গিয়েছে। যে ও কি দেখে সেন্সলেস হয়েছিলো। এদিকে ডক্টর অজানা বলে,
  • কি মেয়েরে বাবা? এত বড় মেয়ে কে কোলে নেয়া লাগে? পাগল নাকি?

এবার বলি ইনি অজানা কেন? কারন এনার নাম কেউ জানেনা। এই হসপিটাল ওনাদেরই। নিজেদের হসপিটালে ডক্টরী করে। সবাই ডক্টর অজানা বলেই চেনে। সব জায়গায় অজানা দেয়া। তাই সবাই ভাবে এটাই ওনার নাম। অজানা তো নাবিলা কে নিয়ে ভাবছে। নাবিলা কে নিয়ে বাড়ি চলে আসে। পরেরদিন নাবিলা কলেজে চলে আসে। গাড়ি থেকে নেমে এক দৌড়ে। নিজের বেষ্টু রফিকে’র কাছে চলে যায়। রফিক নাবিলা কে দেখে বলে,

  • কালকে আসিসনি কেন?

নাবিলাঃ কালকে আমি ঘুরতে গিয়েছিলাম। আমি মাম্মা, পাপা ভাইয়ারা। জানিস অনেক মজা হয়েছে?

  • রিয়েলি বেবী? খুব মজা হয়েছে?

পিছনে তাকিয়ে দেখে সায়ন। এই কলেজের র‍্যাগিং মাষ্টার। নাবিলা রেগে গিয়ে বললো!

  • তোমাকে বলেছি না? আমাকে বেবী বলবে না ফাজিল ছেলে। তোমাকে তো পেটানো উচিত।
    সায়ন নাবিলা’র সামনে এসে বললো!
  • তা কে পেটাবে আমাকে? তোমার ওই ৩ ভাই? আমি জানি তুমি আমার কথা। ওদের এখনো বলোনি বলতে পারোনি। আর বলতে পারোনি কারন। তুমিও আমাকে ভালবাসো।
    নাবিলা ভেংচি কেটে বললো!
  • আমার এত খারাপ সময়ও আসেনি। যে তোমাকে ভালবাসবো যত্তসব।
    বলে রফিক কে নিয়ে চলে গেলো!

সায়নঃ তুমি শুধু আমার বেবী। সায়ন আহমেদে’র তুমি আর কারো না। তোমাকে পেতে সব করতে পারি। প্রয়োজনে খুনও করতে পারি তাছাড়া।
বলে সায়ন বাঁকা হাসলো। নাবিলা গিয়ে ক্লাস করতে লাগলো!

সায়ন আহমেদ কলেজের সবার ক্রাশ। মেয়েরা সায়ন বলতে পাগল। সায়ন’র বাবা, মা নেই তাই একটু বখাটে টাইপ। বাবা, মা না থাকলে যেমন হয়। সায়ন ওর চাচ্চুর কাছে থাকে। সায়ন বড়লোক বাবার আদরের ছেলে ছিলো। আজ সব থাকলেও বাবা, মা নেই। নাবিলা কে ভালবাসে কিন্তু নাবিলা বাসেনা।

ক্লাস শেষ করে নাবিলা বেরিয়ে আসে। কলেজের ক্যান্টিনে যায় খেতে। বার্গার আর স্যান্ডুইচ অর্ডার করে। যেই না হাত দিতে যাবে। ওমনি কেউ টান দিয়ে প্লেট নিয়ে যায়। নাবিলা রেগে তাকায় তাকিয়ে দেখে রিশান। রিশান মেয়েদের অলওয়েজ বিরক্ত করে। কিন্তু আজকে ভুল জায়গায় হাত দিয়েছে। নাবিলা বসা থেকে দাড়িয়ে। রিশান কে ঠাস করে থাপ্পর মেরে বলে,

  • হাউ ডেয়ার ইউ রাস্কেল? তোর সাহস হয় কি করে? নাবিলা চৌধুরী’র খাবার নিস? তুই জানিস আমি কে? আমার ভাইয়ারা তোর কি হাল করতে পারে? ইউ হ্যাব নো আইডিয়া। দাড়া আমি এক্ষুণি কল করছি। তারপর দেখ তোর কি হয়?
    নাবিলা ফোন বের করলেই রিশান নিয়ে নেয়।

রিশানঃ এবার কি করবি তুই? খুব অহংকার না তোর? দেখ আজ তোর কি করি!
বলতে বলতে রিশান কে কেউ ঘুসি মারে। নাবিলা তাকিয়ে দেখে সায়ন। সায়ন’র চোখগুলো লাল হয়ে গিয়েছে। মনে হচ্ছে রক্ত পড়ছে। সায়ন ফোন নিয়ে নাবিলা কে দিয়ে দেয়। নাবিলা ওর ভাইয়াদের ফোন করে। এদিকে সায়ন রিশান কে মারছে। মারতে মারতে অবস্থা খারাপ। কিছুক্ষণ পর ইমন, আরাফ, সিয়াম চলে আসে। ওদের দেখে সায়ন রিশান কে ছেড়ে দেয়। আরাফ গিয়ে রিশান কে ওঠায়। এরপর কয়েকটা ঘুসি মেরে বলে,

  • তোর সাহস কি করে হলো? আমার বোন কে টাচ করার? তুই কি জানিস না ও কে? আমাদের বোন ইমরান চৌধুরী’র মেয়ে। তোকে তো জানে মেরে ফেলবো!
    নাবিলা গিয়ে আটকিয়ে বলে,
  • ছাড়ো ভাইয়া ও জানোয়ার। বাট তোমরা তো ভাল। এরপর ও এমন কিছু করলে তখন জানে মেরে দেবো!
    সিয়ামঃ শুধু ও না কেউ যদি এই ভুল করে। তাকে জানে মেরে দেবো।
    ইমনঃ আই হোপ সবাই জানো। আমাদের বোন আমাদের কলিজা। সো এই ভুল কেউ করো না গট ইট?
    সায়ন সহ সবাই ঢোক গিললো। ওরা ৩ ভাই নাবিলা কে নিয়ে বাড়ি গেলো!
    সায়নঃ জল্লাদের বোনে’র জল্লাদ ভাইরা। তাতে আমার কি? আমি তো আমার নাবিলা কে চাই। যে কোন মূল্যে নাবিলা আমার।

ডালিম নিজের রুমে বসে আছে। নাবিলা’র ছবিসহ সব ইনফরমেশন। একদিনে কালেক্ট করে ফেলেছে। ছবির সামনে দাড়িয়ে মুচকি হেসে বললো!

  • ইউ নো ওয়াট? তুমি সেই মেয়ে যাকে নিয়ে এই ডালিম। লাইফে ফার্স্ট স্বপ্ন দেখছে। সো তোমাকে আমার চাই। নিজের বুকে তোমাকে চাই। এই বুকের আগুন নেভাতে। তোমাকে আমার চাই জান।

বলে ডালিম হাসতে লাগলো। এদিকে অজানাও নাবিলা কে নিয়ে ভাবছে!

  • কি আছে তোমার মাঝে? কেন ভাবছি তোমাকে নিয়ে? তোমার বাচ্চামো গুলো মনে পড়ছে কেন? তাহলে কি এটা ভালবাসা?
    অজানা কিছুক্ষণ ভাবলো। এরপর লাফিয়ে উঠে বললো,
  • ইয়েস আই লাভ হার। আই লাভ ইউ পিচ্চি। ভালবাসি তোমাকে আমি। ভালবেসে ফেলেছি তোমাকে। তোমাকে আমার চাই খুব তাড়াতাড়ি!

পর্ব ২

সবাই যখন তাদের ভাবনায় বিভোর। তখন দেখে নেই নাবিলা কি করছে। নাবিলা ড্রয়িংরুমে বসে কার্টুন দেখছে। পড়নে কালো টি শার্ট আর। কালো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। লম্বা চুলগুলো দু পাশে ঝুটি করা। এক হাতে রিমোট আরেক হাতে চকলেট। পাশেই বসা নাবিলা’র ৩ ভাই। এমনি এমনি বসে নেই। গত ১ ঘন্টা ধরে বসে আছে। নাবিলা কে ফ্রুট জুস খাওয়ানোর জন্য!
সিয়ামঃ মিষ্টি কলিজা এবার খেয়ে নাও।
নাবিলা নাক মুখ শিটকে তাকালো!

ইমনঃ মিষ্টি তুমি কিন্তু বলেছো। এই চকলেট খাওয়া শেষ হলে। তুমি এই ফ্রুট জুস খেয়ে নেবে।
নাবিলা নিজের মনোমত চকলেট খাচ্ছে। যেন ওর কানে কথা যাচ্ছেনা। আরাফ নাবিলা কে কোলে বসিয়ে। জুসের গ্লাস সামনে ধরলো। নাবিলা ঠোট উল্টে তাকিয়ে আছে!
আরাফঃ ঠোট উল্টে লাভ নেই। এটা এক্ষুণি ফিনিশ করো হারি আপ।

নাবিলা ভেংচি কেটে জুস খেয়ে নেয়। এরপর আরাফ’র কোল থেকে নেমে। সোফায় সটান হয়ে শুয়ে পড়ে। নাবিলা এটা তখনি করে যখন মন খারাপ হয়। আরাফ ইমন কে চোখ দিয়ে ইশারা করে। ইমন গিয়ে ফ্রিজ থেকে এক বক্স আইসক্রিম নিয়ে আসে। এনে নাবিলা’র সামনে মিনি টেবিলে রাখে। আইসক্রিম দেখে নাবিলা লাফিয়ে ওঠে। নিয়েই খেতে শুরু করে। ৩ ভাই মুচকি মুচকি হাসছে!
ইমরান চৌধুরীঃ মামনি তুমি আইসক্রিম এত লাইক করো কেন?
নাবিলাঃ ইউ নো ওয়াট পাপা? ইটস সো ইয়াম্মী।
কণা চৌধুরীঃ তুমি তো জানো ইমরান। আইসক্রিম হলো তোমার মেয়ের। প্রথম ভালবাসা তাইনা সোনা?
নাবিলাঃ ইয়া মাম্মা ইউআর রাইট!
সিয়ামঃ মাম্মা আমার কি মনে হয় জানো?
ইমনঃ কি মনে হয় ভাইয়া?

সিয়ামঃ মিষ্টি কলিজা আমাদের থেকে। চকলেট, আইসক্রিম বেশী ভালবাসে।
আরাফঃ একদম ঠিক বলেছিস!
সিয়ামঃ আই নো ভাইয়া বিকজ। সিয়াম চৌধুরী অলওয়েজ ঠিক বলে,
এদের মধ্যে আরাফ সবার বড়। তারপর সিয়াম তারপর ইমন। ৩ ভাই মাশাআল্লাহ দেখতে কিউট। আরাফ নিজের বাবার বিজনেস সামলায়। ওর পড়াশোনা আগেই শেষ। আরাফ’র বয়স ২৮ বছর। এরপর সিয়াম সিয়ামও ব্যবসা সামলায়। অফিসে খুব কম যায় সিয়াম। সিয়ামে’র বয়স ২৫ বছর। ইমন এখনো পড়াশোনা করে। ইমন এবার এলএলবি ফাইনাল ইয়ারে। ইমনে’র বয়স ২৩ বছর!

নাবিলা গাল ফুলিয়ে। আইসক্রিম বক্স রেখে দিয়ে বললো,

  • না তোমরা ঠিক বলোনি। আমি তোমাদের ভালবাসি। আর আইসক্রিম খাবোনা!
    বলতে বলতে ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো। ৩ ভাই তো ব্যস্ত হয়ে পড়লো। নাবিলা কে এটা ওটা বলছে কিন্তু নাবিলা। সে তো কেঁদেই যাচ্ছে। ঠোট উল্টে বাচ্চাদের মতো বললো,
  • আমি তোমাদের বেশী ভালবাসি। যদি বিশ্বাস না হয়। তাহলে কিছু চেয়ে দেখো। আমি ঠিক তোমাদের দেবো প্রমিস!
    আরাফঃ বোন আমরা মজা করছিলাম।
    নাবিলাঃ না চাও এখনি আমি দেবো!
    সিয়ামঃ মিষ্টি কলিজা আমাদের কিছু চাইনা।
    ইমনঃ হ্যা মিষ্টি তুমি আছো তো!

নাবিলাঃ না আমি দেবো তোমরা চাও। ও মাম্মা ও পাপা বলো না চাইতে।
এবার ওরা পড়ে গেলো মুশকিলে। আরাফ বুদ্ধি খাটিয়ে বললো!

  • আচ্ছা যখন চাই তখন দিয়ো কেমন?
    নাবিলা লাফাতে লাফাতে বললো,
  • ওকে ভাইয়া আমি দেবো!

কণা চৌধুরীঃ ওকে অনেক হয়েছে। এবার সবাই ডিনার করবে চলো।
ডিনারের কথা শুনে নাবিলা। মুখটা কাঁচুমাচু করে বলে,

  • মাম্মা আজ খাবোনা প্লিজ?

কণা চৌধুরীঃ নাবিলা তুমি জানো না? আমি খাওয়া নিয়ে বাহানা লাইক করি না।
নাবিলা মুখটা চুপসে গিয়ে খেতে বসে। কণা চৌধুরী প্লেট দেয়!
আরাফঃ মাম্মা তুমি কি জানোনা? আমরা বোন কে খাইয়ে দেই। ও কি কাটা বেছে খেতে পারে?

এরপর ওরা নাবিলা কে। নিজেদের প্লেট থেকে খাইয়ে দেয়। খাইয়ে নাবিলা কে ঘুম পাড়িয়ে দিয়ে। ৩ ভাই মিলে ছাদে আসে।
সিয়ামঃ ভাইয়া আমরা খুব লাকি তাইনা? কারন আমাদের বোন আছে। যাকে আমরা এত ভালবাসি। আর মিষ্টি কলিজাও আমাদের এত ভালবাসে!
ইমনঃ হ্যা মিষ্টি কে পেয়ে আমরা পরিপূর্ণ।

আরাফঃ এরজন্য তো আমি আল্লাহ কে। লাখ লাখ শুকরিয়া জানাই। যে আল্লাহ আমাদের একটা পিচ্চি পরী দিয়েছে!
সিয়াম, ইমনঃ ঠিক বলেছো।
আরাফঃ আচ্ছা এখন গিয়ে ঘুমিয়ে পড়। আর ইমন তোর তো ক্লাস আছে। তুই এখনো জেগে আছিস?
ইমনঃ তোমাদের তো অফিস আছে না?
সিয়ামঃ হ্যা চল ঘুমিয়ে পড়ি।

এরপর যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে। নাবিলা আগে ফ্রেশ হয়ে নেয়। এরপর একটা টপস পড়ে। টপসটা একদম কালো। আর সাথে থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। সাদা জুতো জুতোর উপর লাল ডল বসানো। চুলগুলো ঝুটি করে নেয়। ঠোটে হালকা লিপস্টিক। রেডি হয়ে ব্যাগ নিয়ে নিচে চলে আসে। শিরি দিয়ে হেলেদুলে নামছে। সবাই তাকিয়ে আছে। মনে হচ্ছে কোনো বাচ্চা মেয়ে নামছে। আরাফ, সিয়াম, আর ওর বাবা অফিসে যায়। আর ইমন নাবিলা কে নিয়ে কলেজ যায়। ব্রেকফাস্ট ক্যান্টিনে গিয়ে করে নাবিলা। এই বিষয়ে কেউ জোড় করতে পারেনা। তাহলে রেগে যায় তাই ওরাও অফিসে গিয়ে করে। আর ইমন নিজের ভার্সিটি ক্যান্টিনে। নাবিলা কে ওর কলেজে নামিয়ে দেয়!
ইমনঃ মিষ্টি কেউ কিছু বললে। জাস্ট একটা কল করবে। বাকিটা আমরা বুঝে নেবো। আর একদম দুষ্টমি করবে না।

ইমন নিজের ওয়ালেট থেকে। ১ হাজার টাকার ৩ টা নোট বের করে। নাবিলা’র হাতে দিয়ে বলে,

  • এই টাকা শুধু খাওয়ার জন্য। বাট বাইরের বাজে খাবার খাবেনা ওকে? আর আমি এসে নিয়ে যাবো। নয়তো ভাইয়ারা কেউ আসবে। একা একা বের হবেনা মনে থাকবে?
    নাবিলাঃ ওকে মনে থাকবে ভাইয়া বাই।
    ইমনঃ বাই মিষ্টি!

ইমন গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যায়। রফিক নাবিলা’র কাছে এসে বলে,

  • নাবিলা তুই অনেক লাকি রে। এরকম ৩ জন ভাইয়া পেয়েছিস। যারা তোকে প্রানের চেয়ে ভালবাসে!
    নাবিলাঃ হুুম আই এম সো লাকি। এখন চল ক্যান্টিনে যাই।

নাবিলা কে বাজে নজরে দেখছে। আর এই বাজে নজরের লোক কে। দুর থেকে দেখছে ডালিম। চোখ লাল করে তাকিয়ে আছে। চোখ দিয়ে যেন রক্ত পড়ছে। ডালিম হাত মুঠ করে রেখেছে!
ডালিমঃ আমার জান কে বাজে নজরে দেখছিস? তুই তো আজ গেলি। তোর হায়াত এই পর্যন্তই। এবার দেখ আমি তোর কি হাল করি।
নাবিলা ক্যান্টিনে বসে খাচ্ছে। কোথা থেকে সায়ন এসেই। নাবিলা’র পাশের চেয়ারে বসে পড়ে। নাবিলা সেদিকে পাত্তা না দিয়ে। নিজের মনোমত খেয়ে যাচ্ছে। সায়ন শুধু দেখছে একটুপর বললো!

  • বেবী তোমার ৩ ভাইয়া। ওনারা এত খারুশ কেন?
    নাবিলাঃ শাট আপ সায়ন তুমি আমার সিনিয়র। তাই আমি তোমাকে সম্মান করি। আমার পেছনে পড়ে আছো। তোমাকে এখনো কিছু বলিনি। তারমানে এটা নয়। তুমি আমার ভাইয়াদের কিছু বলবে। আর আমি সেটা সহ্য করবো। আমার ভাইয়ারা অনেক ভাল। সো নেক্সট টাইম এমন কিছু বলবে না। আন্ডারস্ট্যান্ড মিস্টার সায়ন?
    সায়নঃ ইয়েস বেবী বুঝেছি। বাট তুমি এখনো অনেক কিছুই বোঝোনি। বিকজ তুমি বাচ্চা এখনো।
    নাবিলাঃ তাহলে বাচ্চার পিছনে। এত ঘুরঘুর করো কেন?

সায়নঃ এই বাচ্চাটাকে আমার চাই। সারাজীবনের জন্য চাই। ভালবাসি যে অনেক বেবী!
বলে সায়ন চলে যায়। এদিকে রফিক নাবিলা কে বলে,

  • সায়ন ভাইয়া তোকে ভালবাসে। অনেক বেশী ভালবাসে নাবিলা। আমি সায়ন ভাইয়ার চোখে। তোর জন্য ভালবাসা দেখেছি!
    নাবিলাঃ তাহলে তুই ওকে ভালবাস।
    রফিকঃ আরে সায়ন ভাইয়া তোকে ভালবাসে!
    নাবিলাঃ কিন্তু ওর চোখে ভালবাসা তুই দেখেছিস।
    খাওয়া শেষে ওরা ক্লাসে চলে যায়। মন দিয়ে ক্লাস করে। ক্লাস শেষে বেরিয়ে আসে। নাবিলা আইসক্রিম কিনে। কলেজের বেন্চে বসে খাচ্ছে। এরমাঝে নাবিলা’র সামনে কেউ দাড়ায়। যার পড়নে কালো শার্ট। কালো জিন্স প্যান্ট। শার্টের হাতা ফোল্ড করা। যার কারনে হাতে করা ট্যাটু দেখা যাচ্ছে। মুখে রুমাল বাধা চোখে সাইনগ্লাস। নাবিলা ভ্রু কুঁচকে বললো!
  • কে আপনি?

লোকটা যেন শকড হলে। তবুও নিজেকে সামলে বললো,

  • আমি তোমার ভালবাসা মাই লাভ!
    নাবিলা’র হাত থেকে আইসক্রিম পড়ে গেলো। রাগী দৃষ্টিতে বললো,
  • আর ইউ ম্যাড? পুরান পাগল ভাত পায়না। নতুন পাগলের আমদানি। এই ওয়েট আপনি কি ডক্টর?
    অজানাঃ ইয়েস মাই লাভ ডক্টর অজানা!

নাবিলা চোখ মুখ খিচে বললো,

  • এখানে কি চাই? কেন এসেছেন এখানে?
    অজানাঃ তোমাকে চাই তোমার জন্য এসেছি!

নাবিলা নিচু হলো ডাল উঠাতে। ওটা দিয়ে অজানা কে পেটাবে। এটাই ওর ইচ্ছে তাকিয়ে দেখলো নেই।
নাবিলাঃ আরে এই ব্যাটা গেলো কোথায়? ওহ বুঝেছি ভয় পেয়ে পালিয়েছে। আর এই রফিক কোথায় গেলো?
নাবিলা হাটতে হাটতে চলে আসে। এসে দেখে রফিক আসছে। নাবিলা গিয়ে রফিক কে কিল মারে!
রফিকঃ কি হলো মারলি কেন?

নাবিলাঃ কোথায় গিয়েছিলি?
রফিকঃ পানি খেতে গিয়েছিলাম।
নাবিলাঃ ওইতো ভাইয়া এসেছে যাই রে!
এরপর রফিক ওর বাড়ি। আর নাবিলা নিজের বাড়ি চলে আসে।

রাত ১ টা বাজে সারা শহর ঘুমে। ঘুম নেই শুধু কয়েকজনের। তার মাঝে ডালিম একজন। যাকে এই মুহূর্তে হিংস্র বাঘ লাগছে। রাগে চোখ লাল হয়ে আছে। ঘাড়ের রগ সব ফুলে গিয়েছে। চোখ দিয়ে যেন আগুন পড়ছে। হাতে ধারালো ছুড়ি মুখে শয়তানি হাসি। আর ডালিমে’র সামনের চেয়ারে। কলেজের সেই ছেলেটা। যে নাবিলা কে লোলুপ দৃষ্টিতে দেখছিলো। ডালিম দাতে দাত চেপে বললো!

  • তোর সাহস হয় কি করে? আমার জান কে লোলুপ দৃষ্টিতে দেখিস? তোর এমন হাল আমি করবো। রাস্তার কুৃুকুরও তোর লাশ দেখে ভয় পাবে।
    লোকটাঃ আমাকে ছেড়ে দিন বলছি!
    ডালিমঃ ইউ ব্লাডি রাস্কেল আই উইল কিল ইউ। এন্ড রাইট নাউ।

বলেই হাতে থাকা ছুড়িটা। লোকটার চোখের ভেতর ঢুকিয়ে দেয়। লোকটা গলা কাটা মুরগির মত ছটফট করছে। ছুড়িটা বের করে আরেক চোখে ঢুকিয়ে দেয়। এরপর ছুড়ি বের করে লোকটার ছোখে। পাশে থাকা গুড়া মরিচ ছিটিয়ে দেয়। লোকটার বুকে ছুড়ি ঢুকিয়ে। সেখানেও গুড়া মরিচ দিয়ে দেয়। লোকটা ছটফট করতে করতে মারা যায়। মৃত দেহটা কে দেখে ডালিম পাগলের মত হাসছে। আর সমস্ত শরীর ছিন্নভিন্ন করছে। সারা শরীরে গুড়া মরিচ ছিটিয়ে। গম্ভীর কন্ঠে বলে,

  • এটাকে রাস্তায় ফেলে দাও।

লোকমানঃ ই ইয়েস ব ব বস! (বডিগার্ড)
ডালিম ভ্রু কুঁচকে তাকায়। এরপর গাড়ি নিয়ে হনহন করে বেরিয়ে যায়। বডিগার্ডদের অবস্থা খারাপ। কারন ডালিম এত ভয়ংকর ভাবে আজ অবদি। নিজের কোনো শএুকে মারেনি। মরে যাওয়ার পর গুড়া মরিচ দেয়। আর ওদের শুধু ছুড়ি পেটে নয়তো বুকে ঢুকিয়ে দেয়। গাড়ি নিয়ে ডালিম বাড়ি চলে আসে। নাবিলা’র ছবির সামনে দাড়িয়ে বলে,

  • তুমি আমার জান। তোমার দিকে কেউ চোখ তুলে তাকালে। আর আমি যদি সেটা জানতে পারি। কসম আল্লাহর তাকে জানে মেরে দেবো। এতদিন ছিলাম The Villain। আর এবার থেকে The Villain Lover।
    বলে ডালিম বাঁকা হাসে!

পর্ব ৩

ডালিম শাওয়ার নিতে চলে যায়। শাওয়ার শেষ করে এসে। বিছানায় বসে মদের বোতল খুলে। ঢকঢক করে পুড়ো খেয়ে নেয়। এভাবে প্রায় ৩ বোতল মদ শেষ করে। একটা সময় বিছানায় ঠাস করে শুয়ে পড়ে। ঘুমানোর আশা নিয়ে চোখ বন্ধ করে। কিন্তু না ঘুম নামক জিনিষটা নেই। যেটা হারিয়েছে আজ থেকে প্রায়। ৭ বছর আগে এরপর কবে ঘুমিয়েছে। সেটা হয়তো ডালিম নিজেও জানেনা। তাচ্ছিল্য হেসে উঠে বসে। আবার মদ খেতে থাকে। মদের নেশা থাকলেও আর কোনো নেশা নেই। যেমন স্মোকিং বা মেয়ে মানুষ। মদ খেতে খেতে নাবিলা’র ছবির দিকে তাকিয়ে বলে,

  • আমি জানি জান তুমি পারবে। তুমি পারবে আমার জীবন থেকে। সব কষ্ট, বেদনা, যর্ন্তনা দুর করতে। আমার বুকের জলন্ত আগুন নেভাতে। তোমাকে খুব তাড়াতাড়ি আমার করবো। আমার জন্য তোমার জন্ম জান।
    বলে আবার শুয়ে পড়ে। রাতে নিজের রুমে টিভি দেখছে নাবিলা। রফিকে’র বলা কথা ভাবছে। ক্যান্টিনে রফিক বলেছিলো। সায়ন’র চোখে ও নাবিলা’র জন্য ভালবাসা দেখেছে। নাবিলা নিজেই বলতে শুরু করলো!
  • আচ্ছা সায়ন কি সত্যি আমাকে ভালবাসে? হয়তো বাসে তাইতো এমন করে। আমাকে কেউ কিছু বললে। ভাইয়াদের মতোই তাকে পেটায়। কিন্তু আমি কি বাসি? আমি কি ভালবাসি সায়ন কে?
    এরমাঝে কেউ নাবিলা কে। একটানে জড়িয়ে ধরে নাবিলা হা করে দাড়িয়ে আছে। ব্যাপারটা বোঝার চেষ্টা করছে। যখন বুঝতে পারে এক ধাক্কায় সরিয়ে দিয়ে তাকায়। তাকিয়ে রেগে চেচিয়ে বলে,
  • আপনি এখানে? আপনার সাহস তো কম না। আমার বাড়ি আমার রুমে চলে এসেছেম?
  • ইয়েস মাই লাভ চলে এলাম। তোমাকে খুব দেখতে ইচ্ছে করছিলো। কি করবো বলো? একটা পিচ্চি আমার সেটাও তুমি। এত ভালবাসি তোমাকে তাই চলে এলাম!
    নাবিলা চোখ মুখ খিচে বলে,
  • লিসেন ডক্টর অজানা। আই এম ওয়ার্নিং ইউ। ইউ জাস্ট স্টে এওয়ে ফ্রম মি। আদারওয়াইস আই ডোন্ট নো। ওয়াট ক্যান আই ডু উইথ ইউ গট ইট?
    অজানা নাবিলা কে আবার জড়িয়ে ধরে। আর এবার শক্ত করে ধরে বলে ওঠে!
  • ওয়াও মাই লাভ আই এম ইমপ্রেসড। এই না হলে অজানা’র লাভ। অজানা’র মতোই তার ঝাজ। রিয়েলি নাউ আই এম সো হ্যাপি। আজকে আসি মাই লাভ? বাই এন্ড লাভ ইউ।
    বলে চলে যায় আর নাবিলা। রাগে ফোস ফোস করতে করতে বলে,
  • নেক্সট টাইম আয় শুধু। মেরে আলুর ভর্তা বানাবো। স্টুপিড কোথাকার টোটাল রাবিশ।

একটুপর নাবিলা ঘুমিয়ে পড়ে। সকালে ঘুম থেকে উঠে। ফ্রেশ হয়ে কলেজে চলে আসে। কলেজে আসতেই সায়ন আসে। সায়ন এভাবে সামনে চলে আসায়। নাবিলা বিরক্তি নিয়ে তাকায়। সায়ন সেদিকে পাত্তা না দিয়ে। নাবিলা কে টেনে নিয়ে যেতে থাকে!

  • আরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছো? সায়ন লিভ মি প্লিজ।

সায়ন নাবিলা কে নিয়েই যাচ্ছে। নাবিলা এবার রেগে চেচিয়ে বলে,

  • সায়ন আই সেইড লিভ মি। নাহলে খুব খারাপ হয়ে যাবে বলছি। কোথায় নিয়ে যাচ্ছো আমাকে?
    সায়ন নাবিলা কে কমন রুমে এনে। এক প্রকার ছুড়ে মেরে বলে,
  • বলো কি নেই আমার?

নাবিলা বুঝতে না পেরে বলে,

  • মানে কি সায়ন?
    সায়ন চেচিয়ে বলে ওঠে।
  • কেন ভালবাসো না আমাকে? আমি তোমাকে এত ভালবাসি। কেন বোঝোনা আমাকে? কি করলে বুঝবে তুমি? আমি মরে গেলে বুঝবে? আমি কি খুব খারাপ? আমাকে কি একটুও ভালবাসা যায়না?

নাবিলা কি বলবে বুঝতে পারছে না। আচমকা নাবিলা বলে উঠলো!

  • তোমার যা ইচ্ছে করো। আমাকে এভাবে ডিস্টার্ব করবে না ওকে? আমার এসব আর ভাল লাগেনা সায়ন।
    বলে নাবিলা হনহন করে চলে যায়। আর সায়ন ধপ করে বসে পড়ে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। কান্না করতে করতে বলে,
  • আমাকে কি ভালবাসা যায়না? আমি কি ভালবাসার এতটা অযোগ্য? কেন বেঁচে আছি আমি? কেন আল্লাহ? হুয়াই?

সায়ন’র এই কথা নাবিলা শোনে। এরপর ওখান থেকে চলে আসে। সায়ন ও ওখান থেকে উঠে চলে যায়। নাবিলা ক্লাসে সায়ন’র কথা ভাবছে। কোনোমতে ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে আসে। রফিক খেয়াল করে নাবিলা কিছু ভাবছে তাই বলে,

  • নাবিলা কি ভাবছিস?
    নাবিলা অন্যমনস্ক থেকে বলে ওঠে!
  • একচুয়েলি আমি সায়ন’র কথা ভাবছি।

রফিক চমকে উঠে হেসে বলে,

  • সত্যি নাবিলা? সত্যি তুই সায়ন ভাইয়ার কথা ভাবছিস?
    নাবিলা বুঝতে পারে ও কি বলেছে। তাই মুখে রাগ ফুটিয়ে বলে,
  • হ্যা ভাবছি বেয়াদব একটা। এতবার বলি ওকে ভালবাসি না। তবুও পেছনে পড়ে আছে আমার ইডিয়ট একটা!

সায়ন এখান দিয়েই যাচ্ছিলো। তাই কথাগুলো ওর কানেও পৌছে যায়। সায়ন নাবিলা’র সামনে এসে বলে,

  • খুব ডিস্টার্ব করি তোমাকে তাইনা? খুব বিরক্ত তুমি আমার উপর? কি বলো তো ভালবাসি তো তাই। তাই তোমার এত অবহেলা করার পরও। বেহায়ার মতো আবার ছুটে আসি!

নাবিলা ভাবতে পারেনি সায়ন শুনবে। নাবিলা আমতা আমতা করে বলে,

  • সায়ন আমি আসলে বলতে চাইনি। আমার কথা শোনো প্লিজ!

সায়ন মুচকি হেসে বলে,

  • আজ টাইম নেই বেবী। এখন আমার যেতে হবে। কাল আবার দেখা হবে!
    কথা বলার সময়। সায়ন’র চোখ দুটো ছলছল করছিলো। সায়ন ওখান থেকে চলে যায়।
    রফিকঃ এটা কি করলি নাবিলা?

নাবিলাঃ আমি বুঝতে পারিনি রে!
রফিকঃ সায়ন ভাইয়া তোকে ভালবাসে। অনেক বেশী ভালবাসে নাবিলা। একটু ভেবে দেখিস ওনার কথা।
রফিক ওখান থেকে চলে যায়। নাবিলা ঠায় দাড়িয়ে আছে। নাবিলা’র গাড়ি চলে আসে নাবিলা ও চলে যায়। নিজের কেবিনে বসে পেশেন্ট দেখছে ডক্টর অজানা। এরমাঝে একজন কেবিনে এলো!

অজানাঃ পেয়েছিস সব?
লোকটাঃ জ্বি স্যার সব পেয়েছি।
অজানাঃ দ্যাটস গুড এখন যা!
লোকটা কাঁচুমাচু করে বললো,

  • স্যার একটা কথা বলি?
    অজানা ভ্রু কুঁচকে বললো!
    _কি বলবি তুই?
    লোকটাঃ স্যার আপনি তো ডক্টর। এটা দিয়ে কি করবেন?

অজানাঃ ননসেন্স এটা দিয়ে কি করে? ওটি করবো তাই লাগবে। নাউ গেট আউট।
চেচিয়ে বললো লোকটা কেটে পড়লো। অজানা বিরক্তি নিয়ে একা বললো!

  • আজব কোশ্চেন এটা দিয়ে কি করবো? কোথা থেকে যে আসে এরা?

এরপর অজানা বেরিয়ে যায়। নাবিলা’র কথা ভেবে মুচকি হাসে। নাবিলা কে নিয়ে ভাবতে ভাবতে বলে,

  • কবে যে তোমাকে পাবো? একদম নিজের করে শুধু তুমি আমি। আমাদের মাঝে কেউ থাকবে না!
    রোজ রাতের মতো আজও। নাবিলা টিভি দেখছে নিজের রুমে। এরমাঝে আবার অজানা আসে। নাবিলা চিৎকার দিতে গেলেই। অজানা একহাত দিয়ে নাবিলা’র কোমর। আর আরেক হাত দিয়ে মুখ চেপে ধরে বলে,
  • তুমি কি পাগল? এভাবে কেউ চিৎকার করতে যায়?

নাবিলাঃ উমমমমম, উমমমমম!
অজানাঃ আরে উমমম উমমম করছো কেন? আমাকে কিস করতে মন চায়?
নাবিলা’র ইচ্ছে করছে। অজানার চুল ছিড়তে। কারন ওর মুখে হাত দিয়ে রেখেছে। নাবিলা উমম উমম করছে। বুঝতে পেরে অজানা ছেড়ে দেয়। আর ছেড়ে দেয়ার আগে কন্ডিশন দেয়। যাতে নাবিলা না চেচায়। নাবিলা রাগী দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

  • আপনার প্রবলেম কি?

অজানাঃ প্রবলেম না তো ভালবাসা তুমি!
নাবিলাঃ সাট আপ ওকে? যান বেরিয়ে যান।
অজানাঃ ওকে এখন যাচ্ছি। বাট আমি আবার আসবো। এভরি ডে আসবো মাই লাভ। মনে রেখো তোমাকে পেতে। The Villain Lover হতে। আমার কিন্তু টাইম লাগবে না সো বি কেয়ারফুল!

অজানা যেতেই নাবিলা শুয়ে পড়ে। রাত প্রায় ২টা বাজে। হঠাৎ নাবিলা’র মনে হচ্ছে। কেউ গভীর ভাবে ওকে দেখছে। নাবিলা পিটপিট করে চোখ খোলে। চোখ খুলে নাবিলা অবাক। এক জোড়া সিয়ামাভ চোখের মালিক। নাবিলা কে গভীর ভাবে দেখছে। যার মুখটা ঢাকা চোখদুটো দেখা যাচ্ছে শুধু। নাবিলা যখন বুঝতে পারে ওর রুমে কেউ আছে। তখন চেচাতে যায় লোকটা। নাবিলা’র মুখে আলতো করে হাত দিয়ে বলে,

  • হিশশশশশ সাউন্ড করবে না। আমি তোমাকে দেখতে এসেছি। দেখে আবার চলে যাবো সো ডোন্ট ডিস্টার্ব মি জান। তোমাকে প্রথম দেখে ভালবেসেছি। আইসক্রিম খেতে খেতে চেচিয়ে উঠেছিলে। সবাই যাকে ভয় পায় যাকে হার্টলেস বলে জানে। সেই ডালিম খাঁন কি না শেষে। একটা পিচ্চি কে ভালবাসে। ট্রাস্ট মি জান এটা মানতে পারছিলাম না। আর এখন যখন মানতে পেরেছি। তখন বুঝেছি তুমি আমার সব হয়ে গিয়েছে। আমার শ্বাস প্রশ্বাস সব তুমি। আই লাভ ইউ সো মাচ জান। একটা রিকোয়েস্ট ছেলেদের থেকে দুরে থাকবে। নাহলে সেই ছেলে কে শেষ করতে। আমার একটুও হাত কাঁপবে না। বিকস আইম এম ভিলেন। The Villain Lover জান!
    নাবিলা তো ভয়ে কাঁচুমাচু করে আছে। ডালিম বুঝতে পেরে বলে,
  • মজা করছিলাম ঘুমিয়ে পড়ো!

বলেই তাড়াতাড়ি চলে যায়। আর নাবিলা আবালের মতো তাকিয়ে বলে,

  • আরে এসব কি হচ্ছে? এটা আবার কে? কি নাম বললো ডালিম? ইনি আবার কোথা থেকে উদয় হলো? ও মাই আল্লাহ ইনি তো খুনি। আমাকে যদি মেরে দেয়?

এসব আকাশ পাতাল ভাবতে ভাবতে। নাবিলা আবার ঘুমিয়ে পড়ে। নাবিলা এমনি একটা মেয়ে। যখন ভয় পায় কয়েক সেকেন্ডের জন্য। সকালে ঘুম থেকে উঠে। একটা লাল থ্রি পিচ পড়ে। লাল ঝুমকো লাল লকেট গলায়। হাতে লাল ব্রেসলেট। ঠোটে লাল লিপস্টিক। আজকে কলেজে ফাংশন আছে। নাবিলা শাড়ি পড়তে পারেনা। তাই থ্রি পিচ পড়েছে। রেডি হয়ে সিয়ামে’র সাথে বেরিয়ে পড়ে। রফিক এখনো আসেনি। কলেজে প্রচুর ভীড়। তাই সিয়াম নিজে গিয়ে। নাবিলা কে একটা চেয়ারে বসিয়ে দেয়। পাশে নিজেও বসে পড়ে। সিয়াম কে বসতে দেখে নাবিলা বলে,

  • ভাইয়া তুমি থাকবে?
    সিয়ামঃ না মিষ্টি কলিজা আমি যাবো। বাট আগে রফিক আসুক।
    নাবিলাঃ ওই তো রফিক এসেছে!

রফিক কে দেখে সিয়াম চলে যায়। যাওয়ার আগে নাবিলা কে টাকা দিয়ে যায়। সবাই শাড়ি পড়েছে ছেলেরা পান্জাবী। ওরা চেয়ারে বসা এরমাঝে সায়ন’র নাম বলে, সায়ন এখন গান গাইবে। সায়ন স্টেজে উঠতেই নাবিলা তাকিয়ে থাকে। সায়ন কে অসম্ভব সুন্দর লাগছে। সায়ন নাবিলা’র দিকে তাকায়। নাবিলা নিজের চোখ নামিয়ে নেয়। সায়ন তাচ্ছিল্য হেসে বলে ওঠে।

  • হয়তো এটা গান বাট এটা আমার রিয়েল লাইফ!
    নারে নারে নারে নারে
    নারে নারে নারে নারে না
    বোঝেনা সে বোঝেনা সে তো আজও বোঝেনা
    বোঝেনা সে বোঝেনা সে গে আজও বোঝেনা
    নাবিলা চমকে গিয়ে তাকিয়ে আছে!
    কাঁদে মনের কথা প্রেম কি শুধু ব্যথা
    উত্তর আজও মেলেনা মেলেনা মেলেনা
    বোঝেনা সে বোঝেনা সে তো আজও বোঝেনা
    সায়ন’র চোখ ছলছল করছে। নাবিলা উঠে চলে যেতে গেলেই শুনতে পায়।
    এ বুকে এত প্রেম তার চোখে ঘৃনা
    চায়না শুনতে সে এ বুকের কান্না
    আমি চোখের বালি কি করে তাকে বলি
    এ বুকে কি বেদনা
    নাবিলা উল্টো দিকে ঘুরে আছে। চোখ দিয়ে পানি পড়ছে। নাবিলা মনে মনে বলছে!
  • না সায়ন ঘৃনা করিনা আমি তোমাকে। ভালবাসি তোমাকে সায়ন। কখন যে মনের অজান্তে তোমাকে। আমার মনে জায়গা দিয়েছি। সেটা বুঝতেই পারিনি আই লাভ ইউ।
    বোঝেনা সে বোঝেনা সে তো আজও বোঝেনা
    কাঁদে মনের কথা প্রেম কি শুধু ব্যথা
    উত্তর আজও মেলেনা মেলেনা মেলেনা

বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনবেন।
সায়ন গান শেষ করেই নেমে যায়। কারন ও নাবিলা কে কাঁদতে দেখেছে। নাবিলা কে খুজতে খুজতে পেয়ে যায়। কলেজের পিছনে পুকুরপাড়ে। সায়ন দৌড়ে গিয়ে বলে,

  • বেবী তুমি কাঁদছিলে কেন? আর ইউ ওকে?

নাবিলা অবাক চোখে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ নাবিলা বসা থেকে উঠে। সায়ন কে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে। সায়ন তো থ হয়ে গিয়েছে। বিশ্বাস করতে পারছে না যে নাবিলা ওকে জড়িয়ে ধরেছে। সায়ন কে আরেকদফা অবাক করে দিয়ে। কান্না করতে করতে নাবিলা বলে,

  • আই লাই ইউ সায়ন। পারলাম না তোমার থেকে দুরে থাকতে। খুব ভালবেসে ফেলেছি তোমাকে। তোমার ভালবাসা বাধ্য করেছে আমাকে। তোমাকে ভালবাসতে আই লাভ ইউ!
    সায়ন অবাক হয়ে গিয়েছে। সাথে খুশিও হয়েছে নাবিলা কে জড়িয়ে ধরে বললো,
  • ইউ নো ওয়াট বেবী? টুডে আই এম সো হ্যাপি। ফাইনালি তুমিও আমাকে ভালবাসো। আই লাভ ইউ সো ভেরী মাচ!
    সায়নঃ আজকে আমি খুশি বেবী। বাট আমি এটাও জানি। তোমার পরিবার হয়তো আমাকে মেনে নেবে না। আমি যে একটু বখাটে টাইপ। বাট আই ডোন্ট কেয়ার। তোমাকে পেতে সব করতে পারি। ভিলেনও হতে পারি। The Villain Lover বেবী। তুমি শুধু আমার। [মনে মনে]

এরমাঝে হুট করেই। একটা ছুড়ি এসে সায়ন’র হাতে লাগে। হাত অনেকটা কেটে যায়। নাবিলা সায়ন কে ছেড়ে দেয়। সায়ন এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। নাবিলা ওর ব্যাগ থেকে। lস্যাভলন বের করে সায়ন’র হাত পরিষ্কার করে। সেখানে ব্যান্ডেজ করে দেয়। নাক টেনে অস্থির করছে। সায়ন বুঝতে পারে নাবিলা কান্না করছে। নাবিলা রাতের বলা ডালিমে’র কথা ভাবে। এরপর সায়ন কে নিয়ে চলে যায়। এদিকে কেউ একজন রাগে ফোস ফোস করছে!


পর্ব ৪

সায়ন আর নাবিলা ওখান থেকে চলে যায়। নাবিলা কে পৌছে দিয়ে। সায়ন নিজের বাড়ি যায়। বাড়ি যেতেই ওর দাদুভাই ডাকে। সায়ন শিরি দিয়ে যেতে গিয়েও থেমে যায়। ওর দাদুভাইর পাশে গিয়ে বসে!
সায়নঃ কিছু বলবে দাদুভাই? আর চাচ্চু আসেনি?

দাদুভাইঃ না দাদু তোর চাচ্চু আসেনি। আর তোকে আজকে খুশি লাগছে কেন? অন্যদিন তো মুখ ফুলিয়ে আসিস। তা আজ এত খুশির কারন কি?
সায়ন মাথা চুলকে মুচকি হেসে বলে,

  • আজ আমি সত্যি অনেক খুশি। আমি যাকে ভালবাসি। ও আজ বলেছে দাদু। ও আমাকে ভালবাসে। তুমি জানো? আমি ওকে খুব ভালবাসি। ওর জন্য সব করতে পারি আমি!
    দাদুভাইঃ তা কি নাম মেয়েটার?

সায়নঃ ওর নাম নাবিলা চৌধুরী। ইমরান চৌধুরী’র মেয়ে। একদম বাচ্চা টাইপ। এই মেয়েটা কে আমার চাই দাদু।
দাদুভাইঃ যাক তাহলে বিয়ে কবে করছিস?

সায়নঃ খুব তাড়াতাড়ি এখন আমি রুমে যাচ্ছি!
সায়ন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। এদিকে নাবিলা ও আজ খুশি। নাবিলা মনের সুখে গান গাইছে। গান গাইতে গাইতে ঘুমিয়ে পড়ে। নাবিলা বুঝতে পারে কেউ ওর রুমে। নাবিলা লাফ দিয়ে উঠে বসে। আর সামনের লোকটা কে দেখে। ভয়ে ওর কলিজা কাঁপছে। ওর সামনে স্বয়ং ডালিম বসা। চোখগুলো লাল টকটকে হয়ে আছে। হাত মুঠো করে রেখেছে। নাবিলা কাঁপা কাঁপা গলায় বলে,

  • আ আপনি এ এখানে?
    ডালিমঃ তোমাকে বারন করেছিলাম না? তোমাকে যেন কোনো ছেলের সাথে না দেখি? তাহলে কেন সায়ন কে আই লাভ ইউ বললে? হাউ ডেয়ার ইউ?
    নাবিলা’র অনেক রাগ লাগছে। তাই নাবিলা রেগে বলে,
  • তাতে আপনার কি হ্যা? আপনি কে এসব বলার? আমি সায়ন কে ভালবাসি। আপনি কেন মাথা ঘামাচ্ছেন?
    ডালিম শান্ত কন্ঠে বলে ওঠে।
  • কারন আমি তোমাকে ভালবাসি জান। অনেক বেশী ভালবাসি। প্লিজ এমন কিছু করো না যাতে আমি। এনিওয়ে ঘুমিয়ে পড়ো!
    বলে আর এক মুহূর্ত না থেকে। সোজা বেলকনি দিয়ে চলে যায়। আর নাবিলা তাকিয়ে বলে,
  • এর কি মাথা খারাপ? যখন দেখি শুধু চোখ দেখি। আর রাত কেবল ১০টা। এখন কি করে এলো? কেউ দেখলো না বাট কি করে?
    এরমাঝে নাবিলা কে ডাকে। নাবিলা ড্রয়িংরুমে চলে আসে!

ইমনঃ মিষ্টি তুমি ঠিক আছো?
আরাফঃ এদিকে এসো দেখি। তোমার শরীর ঠিক আছে তো?
সিয়ামঃ মিষ্টি কলিজা আর ইউ ওকে?
নাবিলাঃ উফ আমি ঠিক আছি।

কণা চৌধুরীঃ তাহলে কলেজ থেকে এসে। সেই যে ঘুমিয়েছো। এরপর ডাকলাম বারবার বললে আসছি। আর তো এলেনা সোনা। তুমি কি জানোনা? তোমার ভাইয়ারা তোমাকে কত ভালবাসে? ওরা তো অস্থির হয়ে গিয়েছিলো একদম!
সিয়ামঃ মাম্মা ওর ঘুম পেয়েছিলো হয়তো।

নাবিলা’র এখন খারাপ লাগছে। কানে হাত দিয়ে বলে,

  • সরি আমি আর এমন করবো না।
    সিয়াম গিয়ে নাবিলা’র হাত সরিয়ে। চেয়ারে বসিয়ে দেয় এরপর বলে,
  • আমাদের টেনশন হয়েছিলো। আর তোমার সরি বলতে হবেনা। তুমি শুধু বলো আর এমন করবে না। তাহলেই হবে মিষ্টি কলিজা।
    নাবিলাঃ ওকে মাই অল ব্রাদার। আমি তোমাদের বলছি। আমি আর এমন করবো না!

এরপর ওরা নাবিলা কে খাইয়ে দেয়। নাবিলা রুমে চলে যায়। রুমে গিয়ে দেখে সায়ন’র ফোন। নাবিলা তাড়াতাড়ি রিসিব করে। ওপাশ থেকে সায়ন বলে ওঠে।

  • হেই বেবী কোথায় ছিলে? কখন থেকে ফোন করছি। আর ইউ ওকে না?

নাবিলাঃ ইয়া আই এম ওকে। একচুয়েলি আমি ডিনার করছিলাম!
সায়নঃ টেনশন হচ্ছিলো বেবী।
নাবিলাঃ আর টেনশন করতে হবেনা। এখন বলো ডিনার করেছো?
সায়নঃ হ্যা ডিনার কম্পিলিট। কি করছো এখন?

নাবিলাঃ বসে বসে তোমার সাথে কথা বলছি!
সায়নঃ আমি তোমাকে মিস করছি।
নাবিলা খিলখিল করে হেসে দেয়। মুগ্ধ হয়ে সায়ন শুনতে থাকে। নাবিলা’র মুখের হাসিই যেন সব। এই হাসির জন্য যে সব করতে পারে সায়ন। এভাবে কথা বলতে বলতে। নাবিলা ফোন বুকে রেখে ঘুমিয়ে পড়ে। সায়ন নাবিলা’র হার্টবিট শুনতে শুনতে। একটা সময় নিজেও ঘুমিয়ে যায়!

রোজকার মতো নাবিলা কলেজে যাচ্ছে। নাবিলা কলেজে যাচ্ছে আর ভাবছে।

  • আজ সায়ন কে বলে দেবো। এই অজানা আর ডালিমের কথা। এরা দুজন কি যে চায়? আমি সায়ন কে ভালবাসি। আমি চাইনা এরা দুজন আমার জীবনে থাকুক!
    আরাফঃ বোন কি ভাবছো?
    নাবিলা আমতা আমতা করে বলে,
  • না ভাইয়া কিছুনা তুমি চলো!

আরাফ নাবিলা কে কলেজে দিয়ে। নাবিলা কে টাকা দিয়ে চলে যায়। আরাফ যেতেই নাবিলা দৌড়ে সায়ন’র কাছে আসে।
সায়নঃ বেবী আসতে হাটো!
নাবিলাঃ সায়ন তোমাকে কিছু বলার আছে।

সায়নঃ হুম বলো কি বলবে?
নাবিলাঃ এখানে না সাইডে চলো!
সায়ন নাবিলা কে নিয়ে। সেই পুকুরপাড়ে আসে এরপর বলে,

  • হ্যা এবার বলো!

নাবিলা সায়ন কে সবটা বলে, সায়ন রাগে ফোস ফোস করছে। চোখগুলো ভীষন লাল হয়ে গিয়েছে। হাত মুঠ করে বলে,

  • এদের দুজন কে তো আমি খুন করে ফেলবো। ওদের সাহস হয় কি করে? ছাড়বো না এই ডালিম। আর ডক্টর অজানা কে!
    নাবিলা ঢোক গিলে সায়ন কে শান্ত করে। সায়ন ফোস ফোস করেই যাচ্ছে।

নাবিলাঃ জানতাম সায়ন রেগে যাবে! [মনে মনে]
সায়নঃ বেবী তুমি বসো পানি নিয়ে আসছি।

সায়ন পানি আনতে গেলেই। তার কিছুক্ষণ পর অজানা আসে। হাতে নাবিলা লিখে ট্যাটু করা। নাবিলা কে দেখেই চলে যায়। সায়ন পানি নিয়ে এসে নাবিলা কে নিয়ে চলে যায়। নাবিলা ভাবে আর সায়ন কে বলবে না। ও তো সায়ন কে ভালবাসে। তাই সায়ন’র সাথে বিয়ে হয়ে গেলে। এরা কিছু করতে পারবে না। ওরা ক্লাস শেষ করে বাড়ি চলে যায়!
বিকেলে ৩টা নাবিলা’র ছবির সামনে দাড়িয়ে। এক ধ্যানে ছবিটা দেখছে ডালিম। পাশেই লোকমান দাড়ানো। বেচারা এসেছিলো দরকারে। এখন ডালিমে’র পাগলামী দেখছে। হঠাৎ ডালিম দাত কিড়কিড় করে বলে,

  • আমার বারন শুনছো না তো? আমি কি করতে পারি। তোমার কোনো ধারনা নেই জান। আমি কতটা ভয়ংকর হতে পারি। আই এম ডালিম খাঁন। বাট আই এম নট হিরো। আই এম ভিলেন। আর তোমার জন্য আগেই বলেছি। The Villain Lover জান!

সায়ন গাড়ি রেখে বাড়িতে ঢোকে। বাড়ি গিয়ে সায়ন নিজের চোখ কে। যেন নিজে বিশ্বাস করতে পারছে না। অবাক হয়ে বলে ওঠে।

  • তুমি এখানে?
    ওই লোকটাও হেসে বলে,
  • ইয়েস আমি খুশি হসনি?

পর্ব ৫

[আগেই কিছু কথা বলে নেই। আমি কালকে বলে দিয়েছিলাম। যে কেন হুট করে লাস্ট পার্ট ওভাবে দিয়েছিলাম। আমাকে নোংরা কথা বলা হয়েছিলো। যে একটা মেয়ের কয়টা লাগে। এমন গল্প কেন লেখেন? যেখানে নাবিলা’র ৩টা ছেলে লাগে। আরো বাজে কথা বলেছে যেটা আমি বলতে পারছি না। আর তাই আমি গতকাল ওভাবে লাস্ট পার্ট দিয়েছিলাম। এটাও বলেছিলো বাস্তব জীবনে আমি ওমন হয়তো। এবার আপনারাই বলুন এত নোংরা কথা বললে। কোন রাইটার সেই গল্প লেখতে চাইবে?

যেই গল্পর জন্য এত খারাপ কথা শুনতে হয়। আমি বুঝিয়ে বলেছিলাম কেন গল্প শেষ করতে চেয়েছিলাম। আর এটা আমি গল্পের নিচে বলেও দিয়েছি। তবুও অনেকে বলছেন গল্প না শেষ হলো? আবার শুরু হলো বুঝতে পারছি না হাউ ফানি ইটিসি। আর অনেকে বলছেন গল্পের আগা মাথা নেই। কাহিনী নাকি বুঝতে পারছেন না। হিরো কে? বুঝতে পারছেন না। তাদের বলছি গল্প কয়টা পার্ট হয়েছে? মাএ তো গল্প শুরু হলো। একটু পেশেন্চ রাখুন। ইনশা আল্লাহ খুব তাড়াতাড়ি সব জানতে পারবেন। ]

সায়ন তাকে দেখে চমকে গিয়ে বললো!

  • তুই এখানে?
    লোকটাঃ ইয়েস আমি খুশি হসনি?

সায়নঃ খুশি হইনি মানে? অনেক খুশি হয়েছি মুন্না। আমি ভাবতে পারছি না রে। এত বছর পর তোকে দেখতে পাবো। বাই দ্যা ওয়ে চাচ্চু কোথায়?
হ্যা এটা মুন্না সায়ন’র কাজিন। ছোট থেকে মুন্না বিদেশে থাকে। লন্ডনেই পড়াশোনা করেছে মুন্না। সায়ন কে ওর চাচ্চু নিতে চেয়েছিলো। কিন্তু সায়ন জেদ করে যায়নি। সায়ন’র ২জন চাচ্চু একজন বাংলাদেশে থাকে। আরেকজন লন্ডন আর তার ছেলে মুন্না। কথা বলতে বলতে সায়ন’র চাচ্চু কবির চলে এলো।
কবিরঃ কেমন আছিস বাবা?

সায়ন ওর চাচ্চু কে জড়িয়ে ধরে বললো!

  • খুব ভাল আছি চাচ্চু। আর আমি খুব খুশি হয়েছি তোমরা এসেছো।
    মুন্নাঃ বাহ গুড আমি আগে এসেছি। বাট তুই কিন্তু আমাকে হাগ করিসনি। আর ড্যাড পড়ে এসেছে তাকে ঠিকই হাগ করলি। দিস ইজ নট ফেয়ার!
    সায়ন গিয়ে মুন্না কে জড়িয়ে ধরে। মুন্না ও সায়ন কে জড়িয়ে ধরে। দুরে থাকলেও দুজন দুজন কে অনেক ভালবাসে। মুন্না সায়ন’র জন্য মাঝে মাঝেই চলে আসতো। অনেকক্ষণ গল্প করে ওরা রুমে যায়। সায়ন রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে ঘুমিয়ে পড়ে। সায়ন’র ঘুম ভাঙে সন্ধ্যায় মুন্নাে’র ডাকে। সায়ন চোখ কচলে উঠে বসে বলে,
  • কি হলো ডাকছিস কেন?

মুন্নাঃ আরে এত কেউ ঘুমায়?
সায়ন ভ্রু কুঁচকে বললো!

  • তাহলে কি করবো?
    মুন্নাঃ চল বের হবো এখন।
    সায়নঃ কোথায় যাবো?
    মুন্নাঃ রাতের শহর দেখতে প্লিজ চল!

সায়ন আর না করতে পারেনা। উঠে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নেয়। এরপর রেডি হয় একটা লাল টি শার্ট। আর সাদা প্যান্ট পড়ে বেরিয়ে যায়। ওরা গাড়ি নিয়ে ব্রিজের সামনে দাড়ায়। গাড়ি থেকে নেমে ব্রিজের উপর বসে পড়ে। মুন্না একটুপর বলে ওঠে।

  • তুই কাউকে ভালবাসিস?
    সায়ন মুচকি হেসে বলে,
  • হুম অনেক ভালবাসি।

মুন্না চমকে গিয়ে বলে,

  • ওহ মাই গড রিয়েলি? নাম কি তার?
    সায়নঃ ওর নাম নাবিলা আই লাভ হার। সি ইজ মাই লাইফ। মাই এব্রিথিং আই কান্ট লিভ হার।
    মুন্নাঃ আরে ভাই তুই তো রোমিও হয়ে গিয়েছিস। তো ভাবী কে কবে দেখতে পাবো?

সায়নঃ উম কালকে চল কলেজে। ওখান থেকে দেখিয়ে আনবো।
মুন্নাঃ ওকে ব্রো!
সায়নঃ নট দ্যা টাইম ওকে? ইউআর মাই সিনিয়র। জাস্ট রিমেম্বার দ্যাট।
মুন্নাঃ ইয়েস মনে আছে এখন চল। এই এক জায়গায় থাকবো নাকি?

ওরা আরো অনেকক্ষণ ঘুরে। এরপর বাড়ি ফিরে যায়। বাড়ি ফিরে সায়ন আগে নাবিলা কে কল করে। নাবিলা ফোন রিসিব করে না। করবে বা কেন? নাবিলা তো রেগে আছে। সায়ন ফোন দিতে দিতে বলে,

  • এই রে বেবী মনে হয় রেগে আছে। কলেজ থেকে এসে তো ফোন করিনি। ধুর কি যে করি এখন কি করবো?

সায়ন কিছু একটা ভেবে মুচকি হাসে। এরপর ফোনটা রেখে শুয়ে পড়ে। আর ওদিকে নাবিলা তো রেগে বোম। রাগে গজগজ করতে করতে বলে,

  • দাড়া কাল আসি কলেজে। এখনি আমাকে ভুলে গিয়েছিস? আর তো দিন পড়েই আছে। আমাকে যাতে না ভুলিস। সেই ব্যবস্থাই আমি কালকে করবো। নাহলে আমিও নাবিলা চৌধুরী না!
    এরমাঝে ওর ভাইয়ারা আসে।
    সিয়ামঃ কার কথা বলছো মিষ্টি কলিজা?

নাবিলা চমকে পিছনে তাকায়!
নাবিলাঃ ওহ গড শুনে নেয়নি তো? [মনে মনে]
আরাফঃ কি হলো? বলো কি বলছিলে?
নাবিলা আমতা আমতা করে বলে,

  • না না কিছুনা আমি তো। ওহ হ্যা রফিকে’র কথা বলছিলাম!

ইমনঃ বাট মিষ্টি আমরা সব শুনেছি।
নাবিলা ভয়ে ঢোক গিলছে। কারন ওরা ৩জনই রেগে তাকিয়ে আছে। নাবিলা নিজেদের ভাইয়াদের রাগ জানে। তাই ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে আছে। হঠাৎ ৩জন একসাথে হেসে দেয়। নাবিলা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকায়!
সিয়ামঃ রিল্যাক্স মিষ্টি পাখি। আমরা তো মজা করছিলাম।

আরাফঃ তাহলে আমাদের বোনও ভয় পায়?
ইমনঃ খুব বেশী ভয় পায় সেটা বলো!
নাবিলা মনে মনে খুশি হয়। তবে সেটা জানতে না দিয়ে। গাল ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে।

সিয়াম গিয়ে নাবিলা কে বিছানায় বসিয়ে বলে,

  • সরি মাই ডিয়ার কিউট সিস্টার। দেখছিলাম তুমি কি করো?

নাবিলা গাল ফুলিয়েই আছে। আরাফ আর ইমন কান ধরে বললো,

  • সরি সিস্টার!
    নাবিলা ফিক করে হেসে দিলো। ৩ ভাই যেন প্রান ফিরে পেলো। পরেরদিন নাবিলা কলেজে গেলো। সাদা টি শার্ট পড়েছে। লাল থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। ঠোটে হালকা লাল লিপস্টিক। মাথায় ব্যান্ড লাগানো যেটাতে দুটো ডল। আর পায়ে ডল জুতো। হাতে একটা আইসক্রিম। যেটা সিয়াম কিনে দিয়েছে। নাবিলা খেতে খেতে কলেজে ঢুকলো। পুরো বাচ্চা লাগছে নাবিলা কে। সায়ন আর মুন্না দাড়িয়ে আছে। নাবিলা কে দেখতে পেয়েই সায়ন এলো। সায়ন কে ভেংচি কেটে নাবিলা চলে গেলো। সায়ন বুঝলো নাবিলা এখনো রেগে আছে মুন্না এসে বললো,
  • ভাই কোথায় তোর নাবিলা?

সায়নঃ তুই এখানে দাড়া আমি নিয়ে আসছি!
সায়ন দৌড়ে চলে গেলো। মুন্না ক্যাবলা হয়ে দাড়িয়ে আছে। সায়ন গিয়ে নাবিলা কে ধরে বললো,

  • বেবী আই এম সরি!
    নাবিলাঃ আমি কি আপনাকে চিনি?

সায়নঃ সরি প্লিজ ট্রাই টু আন্ডারস্ট্যান্ড। কালকে আমার চাচ্চু এসেছি। সাথে আমার কাজিন মুন্না। ওদের টাইম দিতে গিয়েই। প্লিজ সরি আর এমন হবেনা।
সায়ন মুখটা কালো করে বললো, নাবিলা বুঝতে পারলো ব্যাপারটা। তাই সায়ন’র হাত ধরে বললো!

  • ওকে যাও কিছু বললাম না। বাট আর যেন এমন না হয় ওকে?
    সায়নঃ ওকে আর হবেনা এখন চলো।

নাবিলাঃ কোথায় যাবো?
সায়ন কিছু না বলে নিয়ে গেলো। সায়ন নাবিলা কে মুন্নাে’র সামনে নিয়ে বললো!

  • বেবী ও আমার ভাই মুন্না। আর মুন্না সি ইজ নাবিলা।
    মুন্না হা করে তাকিয়ে থেকে বললো!
  • এটা তোর জিএফ? এটাতো একটা পিচ্চি মেয়ে।
    নাবিলাঃ কি আমি পিচ্চি? আপনি জানেন আমার বয়স কত? আমি অনেক বড় হয়ে গিয়েছি!
    গাল ফুলিয়ে বললো নাবিলা। মুন্না হাসি চেপে রেখে বললো,
  • তা কত বয়স তোমার?

নাবিলাঃ আমার বয়স ১৬ বছর ওকে?
মুন্না এবার জোড়ে হেসে দিলো। নাবিলা ঠোট উল্টে তাকিয়ে আছে। সায়ন মুন্না কে পিঠে থাপ্পর দিয়ে বললো!

  • শালা চুপ কর মার খাবি।

মুন্নাঃ ওকে ওকে সরি ভাবী মজা করছিলাম!
ওইদিন আর ক্লাস করলো না। পরেরদিন অজানা আর ওর সাথে যে থাকে। দুজন মিলে বের হলো। অজানা তো নাবিলা কে নিয়ে ব্যস্ত। গাড়িতে বসে নাবিলা’র ছবি দেখছে। হঠাৎ গাড়ির জানালা দিয়ে। একটা গুলি এসে লাগলো। কিন্তু অজানা বুঝতে পেরে নিচু হয়ে গেলো। যার জন্য গুলিটা জানালার কাচ ভেঙে বেরিয়ে গেলো। লোকটা গাড়ি থামিয়ে বললো,

  • স্যার আপনি ঠিক আছেন?
    অজানাঃ হ্যা আমি ঠিক আছি তুমি যাও!
    ওরা গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। কলেজ থেকে বাড়ি এসে। সোফায় গিয়ে বসলো সায়ন। ওর দাদুভাই বসে বললো,
  • কলেজ থেকে এলে?

সায়নঃ হ্যা দাদুভাই!
দাদুভাইঃ আমার কথাটা শুনবি না?
সায়ন উঠে চলে গেলো। কারন ও জানে ওর দাদু কি বলবে। পায়ের উপর পা তুলে বসে আছে ডালিম। ঠোটের কোনে বাঁকা হাসি। হাসতে হাসতে বললো,

  • কি বলেছি মনে আছে?

লোকমানঃ জ্বি স্যার মনে আছে!
ডালিমঃ তাহলে কাজটা করে ফেল।

ডালিম উঠে চলে গেলো। লোকমান ঢোক গিলে বের হলো। সায়ন নাবিলা কে নিয়ে ঘুরতে এসেছে। একটা বিলের পাড়ে এসেছে। সায়ন’র ঘাড়ে মাথা দিয়ে রেখেছে নাবিলা। অনেকক্ষণ হলো এসেছে। নাবিলা বলে উঠলো!

  • সায়ন এবার আমাদের যাওয়া উচিত।

সায়নঃ হুম চলো তাহলে!
ওরা উঠে দাড়াতেই। ঝড়ের গতিতে একটা গুলি এসে। সায়ন’র লাগলো সায়ন নিচে পড়ে গেলো। নাবিলা হঠাৎ এমন হওয়ায় স্তব্ধ হয়ে গেলো।
নাবিলাঃ সায়ন!

সায়ন বলে চিৎকার করে উঠলো নাবিলা।


পর্ব ৬

নাবিলা সায়ন বলে চিৎকার করলো। সায়ন আস্তে উঠে বসে। নিজের হাত চেপে ধরলো। কারন গুলিটা সায়ন’র বাম হাতে লেগেছে। উঠে বসে নাবিলা কে জড়িয়ে ধরে বললো!

  • বেবী ডোন্ট ওয়ারী আই এম ওকে।

নাবিলাঃ কোথায় ওকে তুমি? তোমার গুলি লেগেছে চলো। আমরা হসপিটালে যাবো!
নাবিলা সায়ন কে ধরে নিয়ে। গাড়িতে বসিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসলো।

সায়নঃ তুমি ড্রাইভ করতে পারো?
নাবিলাঃ আমার ভাইয়ারা আমাকে সব শিখিয়েছে!
সায়নঃ কিন্তু তোমার কি লাইসেন্স আছে?

নাবিলাঃ তোমার তো আছে।
নাবিলা আর কথা না বলে, গাড়ি স্টার্ট দিয়ে সোজা হসপিটালে চলে এলো। এরপর সায়ন কে নিয়ে ডক্টরের কাছে গেলো!
নাবিলাঃ ডক্টর ওকে দেখুন।
সায়ন নিচের দিকে তাকিয়ে আছে!

ডক্টরঃ উনি তো।
নাবিলা ডক্টর কে থামিয়ে বললো!

  • জানি ওকে চেনেন। ও সায়ন আহমেদ এবার ট্রিটমেন্ট করুন।

ডক্টরঃ ইয়াহ সিওর!
ডক্টর সায়ন কে নিয়ে শুইয়ে দিলো। এরপর গুলি লাগা জায়গার পাশে। একটা ইনজেকশন দিয়ে আস্তে গুলিটা বের করলো। সায়ন এক হাত দিয়ে নাবিলা কে ধরে রেখেছে। আর দাতে দাত চেপে রয়েছে। নাবিলা বুঝতে পারছে সায়ন’র কষ্ট হচ্ছে। নাবিলা ও সায়ন’র হাত ধরলো। ডক্টর গুলিটা বের করে ব্যান্ডেজ করে দিলো। সাথে ঔষুধ ও দিয়ে দিলো। ডক্টরের বিল দিয়ে ওরা বেরিয়ে গেলো।

নাবিলা ড্রাইভ করে সায়ন কে নিয়ে। ওর বাড়ির সামনে এলো। সায়ন কে নামিয়ে নিজের ড্রাইভার কে ফোন করলো!
সায়নঃ কাকে ফোন করছো?
নাবিলাঃ ভাইয়ারা বাড়ি ছিলো না। তাই আমি ড্রাইভার কে নিয়ে আসিনি। তোমার গাড়িতে চলে এলাম গাড়ি আনিনি। ড্রাইভার কে ফোন করে আসতে বললাম। তুমি ভেতরে যাও তুমি সিক আছো।
সায়নঃ থাপ্পর চেনো? আমার সাথে ভেতরে চলো!
নাবিলাঃ না অন্যদিন যাবো।

সায়নঃ সাট আপ বেবী কাম উইথ মি!
নাবিলাঃ বাট সায়ন লিসেন টু মি।
সায়নঃ নো মোর দিস টপিক এগেইন!
বলে নাবিলা কে ভেতরে নিয়ে গেলো। নাবিলা বাড়িটা ঘুরে ঘুরে দেখছে। বিশাল বাড়ি সায়ন’দের। বাইরে থেকে যতটা সুন্দর। ভেতর থেকে আরো বেশী সুন্দর। যদিও নাবিলা’দের বাড়িও বিশাল বড়। তবুও নাবিলা’র কাছে ভাল লাগছে। এরমাঝে শিরি দিয়ে মুন্না নেমে বললো,

  • আরে ভাবী আপনি?

নাবিলাঃ জ্বি কেমন আছেন?
মুন্নাঃ আমি আলহামদুলিল্লাহ ভাল আছি। আপনি কেমন আছেন?
নাবিলাঃ জ্বি আলহামদুলিল্লাহ!
সায়নঃ মুন্না দাদুভাই কোথায়?
মুন্নাঃ ওইতো দাদু আসছে।

শিরি দিয়ে নামতে দেখে বললো, সায়ন’র দাদু আসার পর। নাবিলা গিয়ে ওনাকে সালাম করলো। উনি অনেক খুশি হলো। নাবিলা কে দোয়া করলো। সায়ন’র হাতে ব্যান্ডেজ দেখে মুন্না বললো!

  • এই তোর হাতে কি হয়েছে?
    সায়নঃ কিছুনা কেটে গিয়েছে।

নাবিলাঃ কিন্তু তোমার হাতে তো!
সায়ন রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। নাবিলা আর কিছু বললো না। নাবিলা সায়ন’র দাদুভাইয়ের সাথে কথা বলছে। এরমাঝে ড্রাইভার এলো। তাই নাবিলা চলে গেলো। সায়ন ও নিজের রুমে চলে এলো।

রাতে সায়ন নাবিলা’র সাথে কথা বললো, নাবিলা ঘুমানোর পরই ডালিম এলো। নাবিলা কে ছেলেদের সাথে মিশতে মানা করলো। এভাবেই কেটে গেলো ১মাস। কখনো ডালিম তো কখনো অজানা আসে। কিন্তু নাবিলা তো সায়ন কে ভালবাসে। কলেজে ক্লাস শেষ করে সায়ন আর নাবিলা। প্রতিদিনের মতো ঘুরতে গেলো। নাবিলা সায়ন’র ঘাড়ে মাথা দিয়ে আছে। নাবিলা’র একটা হাত সায়ন’র হাতের মাঝে। এই পথেই আরাফ যাচ্ছিলো গাড়ি করে। আরাফ দুর থেকে সব দেখলো। আরাফ তো রেগে ফায়ার হয়ে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে নাবিলা’র সামনে দাড়ালো। নাবিলা নিজের ভাইয়া কে দেখে ঢোক গিলছে। আরাফ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। নাবিলা ভয়ে ভয়ে বললো!

  • ভা ভাইয়া আ আসলে আ আ আমি।
    আরাফঃ জাস্ট সাট আপ বোন!
    নাবিলা চুপ হয়ে গেলো। আরাফ একবার সায়ন কে দেখে। নাবিলা’র হাত ধরে নিয়ে গেলো। নাবিলা অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আরাফ নাবিলা কে নিয়ে বাড়ি এসে। সবাই কে ডেকে বললো,
  • মাম্মা তোমার মেয়ে। কলেজে না গিয়ে ঘুরতে যায়। তাও আবার ছেলেদের সাথে!
    নাবিলা মাথা নিচু করে দাড়িয়ে আছে। সবাই অবাক হলো সিয়াম বললো,
  • ভাইয়া এসব কি বলছো?
    আরাফঃ ঠিকই বলছি আমি নিজে দেখেছি!

আরাফ সবটা বললো সব শুনে। ইমন রেগে বলে উঠলো।

  • মিষ্টি এসব কি শুনছি?
    সিয়ামঃ মিষ্টি কলিজা এসব সত্যি?
    নাবিলা আমতা আমতা করে বললো!
  • ওর নাম সায়ন আহমেদ। আমি ওকে ভা ভালবাসি।
    ইমরান চৌধুরীঃ নাবিলা কি বলছো তুমি?
    নাবিলাঃ হ্যা পাপা ভালবাসি সায়ন কে!

সিয়াম দাতে দাত চেপে বললো,

  • নিজের রুমে যাও!
    নাবিলাঃ ভাইয়া আমার কথা শোনো।
    সিয়ামঃ রুমে যেতে বলেছি!
    চিৎকার করে বললো, নাবিলা এক দৌড়ে রুমে চলে এলো। রুমে এসে কান্না করে সায়ন কে ফোন দিলো।
  • বেবী তুমি ঠিক আছো?

সায়ন’র গলার আওয়াজ পেয়ে। নাবিলা কান্না বাড়িয়ে বললো!

  • সায়ন সবাই জেনে গিয়েছে। এবার কি হবে?
    সায়নঃ ডোন্ট ওয়ারী কিছু হবেনা।

সায়ন নাবিলা কে বোঝালো। পরেরদিন গিয়ে রাতে আরাফ, সিয়াম, ইমন। নাবিলা’র রুমে এলো আরাফ বললো!

  • মনে আছে তোমার? সেদিন কি বলেছিলে?
    নাবিলা মনে করতে না পেরে বললো, কি?
    সিয়ামঃ তুমি আমাদের কিছু দিতে চেয়েছিলে। আমরা নেইনি বলে রাগ করেছিলে। তখন আমরা বলেছিলাম যখন চাই তখন দিয়ো।
    নাবিলাঃ হ্যা বলো কি চাও? আমি এখনো দেবো!

ইমনঃ প্রমিস তো মিষ্টি?
নাবিলাঃ প্রমিস ভাইয়া।
আরাফঃ আমরা তোমার বিয়ে ঠিক করেছি। আমরা চাই তুমি এই বিয়ে করো!
নাবিলা স্তব্ধ হয়ে গিয়েছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বললো,

  • কা কার সাথে?
    সিয়াম মুচকি হেসে বললো!
  • তোমার সায়ন’র সাথে।
    নাবিলা নিজের কান কে বিশ্বাস করতে পারছে না। খুশি হয়েছে অনেক কিন্তু লাফাতে পারছে না। ওদের জড়িয়ে ধরে বললো!
  • তোমরা খুব ভাল। তোমাদের এত্তগুলো থ্যাংস।
    ইমনঃ পাগলী বোন!

সিয়ামঃ তোমার খুশিই আমাদের সব।
আরাফঃ তুমি আমাদের কলিজা। তোমাকে কি করে কাঁদাবো?
নাবিলা ওরা যাওয়ার পরই সায়ন কে ফোন করলো!


পর্ব ৭

ইমন, আরাফ, সিয়াম যাওয়ার পরই। নাবিলা সায়ন কে ফোন করলো!
সায়নঃ হ্যালো বেবী আমি একটু বিজি আছি। তোমাকে পরে ফোন করছি।
নাবিলাঃ কিন্তু সায়ন!

তার আগেই সায়ন কল কেটে দিলো। নাবিলা ঠোট উল্টে বিছানায় বসে পড়লো। একটা সময় ঘুমিয়েও পড়লো। হঠাৎ মাঝরাতে নাবিলা’র মনে হলো। ও শূন্যে ভাসছে তাই চোখ খুললো। চোখ খুলে দেখলো সায়ন’র কোলে। নাবিলা ভুত দেখার মত চমকে বললো,

  • তুমি এখানে?

সায়নঃ ইয়েস আমি বেবী তুমি জানো? আজকে আমি কত খুশি। আমি তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না। ভাবলাম এই খুশিটা সেলিব্রেট করবো। কিন্তু একা একা তো করতে পারিনা। তাই তোমার কাছে চলে এলাম!
নাবিলাঃ তুমি যে বললে বিজি আছো?

সায়নঃ ওটা না বললে তুমি ঘুমাতে না। তুমি যাতে ঘুমিয়ে পড়ো তাই বলেছি। বাট কি হলো বলো তো? সেই তুমি তো জেগে গেলে।
নাবিলাঃ ঘুমিয়ে থাকলে কি হতো?
সায়নঃ কিছু হতো না এখন চলো!
নাবিলা ভ্রু কুঁচকে বললো, কোথায় যাবো?
সায়নঃ বাড়ির বাইরে যাবো।

নাবিলাঃ ওয়াট? আর ইউ ক্রেজি সায়ন?
সায়নঃ নো বেবী আই এম নট ক্রেজি!
নাবিলাঃ ক্রেজি না হলে এতরাতে আমাকে। বাইরে নিতে চাইতে না সায়ন। কেউ দেখলে কি হবে?
সায়নঃ কি আবার হবে? আমি আমার উডবি ওয়াইফ কে নিয়ে বাইরে যাচ্ছি। আর তাছাড়া কেউ টের পাবেনা তুমি চলো।
নাবিলাঃ সায়ন আর ইউ ম্যাড?

সায়নঃ ওকে ইয়েস আই এম ম্যাড ফর ইউ। নাউ ডোন্ট সাউন্ড, এন্ড কাম উইথ মি বেবী!
নাবিলাঃ আমি আর কি যাবো? তুমি তো কোলে করেই নিয়ে যাচ্ছো।

সায়ন মুচকি হেসে বেরিয়ে এলো। আস্তে আস্তে শিরি দিয়ে নামলো। এরপর খুব সাবধানে দরজা খুললো। নাবিলা হা করে তাকিয়ে আছে। সায়ন গেটে এসে দেখলো দারোয়ান ঘুম। এটা যেন মেঘ না চাইতেই জল। নাবিলা কে কোলে নিয়েই বেরিয়ে গেলো। গাড়িতে বসিয়ে গাড়ি স্টার্ট দিলো!
নাবিলাঃ কোথায় নিয়ে যাচ্ছো?
সায়নঃ আমাকে বিলিভ করো?
নাবিলাঃ নিজের থেকে বেশী বিলিভ করি।

সায়ন গাড়ি ড্রাইভ করে। একটা ঝিলের পাড়ে এলো। নাবিলা তো মুগ্ধ হয়ে ঝিল দেখছে। জ্যোৎস্না রাত হওয়ায় চাঁদের আলো এসে ঝিলের মাঝে পড়েছে। মাঝে পদ্মাফুল ফুটে আছে। চারপাশ থেকে ঝিড়ি ঝিড়ি বাতাস ভেসে আসছে। আনমনেই নাবিলা দু হাত টান করে। নিজের চোখ দুটো বন্ধ করে ফেললো। সায়ন ধীর পায়ে এগিয়ে এসে। পেছন থেকে নাবিলা কে জড়িয়ে ধরলো। নাবিলা চট করে ঘুরে সায়ন কে বললো!

  • থ্যাংক ইউ সায়ন এই জায়গাটা সুন্দর। অনেক বেশী সুন্দর আই লাভ ইট। তুমিও খুব ভালো আই লাভ ইউ।
    সায়নঃ আই লাভ ইউ সো মাচ বেবী!

নাবিলাঃ এবার আমাদের যাওয়া উচিত।
সায়ন কে ছেড়ে দিয়ে বললো, সায়ন মুচকি হেসে বললো!

  • ওকে লেটস গো।
    সায়ন নাবিলা কে নিয়ে গাড়িতে উঠলো। নাবিলা সায়ন’র ঘাড়ে মাথা রাখলো। সায়ন গাড়ি স্টার্ট দিয়ে নাবিলা’র দিকে তাকালো। তারপর আবার সামনের দিকে তাকালো। দেখতে দেখতে বাড়ি পৌছে গেলো!

সায়নঃ চলো দিয়ে আসি।
নাবিলাঃ বাড়ির ভেতর আমি একা যাবো। তুমি এখন চলে যাও!
সায়নঃ সামনের সপ্তাহে তুমি আমার কাছে থাকবে। সো গেড রেডী বেবী।
নাবিলাঃ কেন?

সায়ন চোখ বড় করে বললো, তুমি জানোনা?
নাবিলাঃ কি জানবো?
সায়নঃ সামনের সপ্তাহে আমাদের বিয়ে। তুমি বাচ্চা বলে তো ওনারা রাজী হচ্ছিলো না। অনেক কষ্টে রাজী করিয়েছি।
নাবিলাঃ মানে নেক্সট উইকে বিয়ে?

সায়নঃ ইয়াহ বেবী নেক্সট উইকে!
নাবিলা’র কাছে স্বপ্নের মতো লাগছে। আর খুশিও হয়েছে অনেক। কারন সায়ন কে বড্ড ভালবেসে ফেলেছে। সায়ন’র ডাকে ভাবনা থেকে বের হলে নাবিলা।
সায়নঃ কি ভাবছিলে?
নাবিলাঃ আই এম সো হ্যাপি সায়ন!

সায়নঃ আর তুমি ওই ডালিম বা অজানা। ওদের কাউকে নিয়ে ভয় পেয়োনা। ওরা কিছুই করতে পারবে না।
নাবিলাঃ কি করে বলছো?
সায়নঃ ডালিম দেশে নেই লন্ডনে আছে। আর অজানা আমার কাছে!
নাবিলা চোখ গোল গোল করে বললো,

  • তোমার কাছে মানে?

সায়নঃ বেবী প্লিজ আমাকে খারাপ ভেবো না। আমি চাই আমার আর তোমার বিয়েটা। ঠিকমত হোক কোনো ঝামেলা চাইনা। তাই আমি অজানা কে কিডন্যাপ করেছি। বাট আমি ওর ক্ষতি করবো না। বিয়ে হলেই ওকে ছেড়ে দেবো!
মুখটা কালো করে বললো সায়ন। নাবিলা বুঝতে পারলো ব্যাপারটা।
নাবিলাঃ আমি তোমাকে খারাপ ভাবছি না। তুমি যা করেছো আমার জন্য করেছো। বাট ডালিম লন্ডনে এটা কি করে জানো?
সায়নঃ ডালিম খাঁন দ্যা মাফিয়া ভিলেন। ও কখন কি করে ভাইরাল হয়ে যায়!
নাবিলাঃ বাট ডালিম যদি চলে আসে?

সায়নঃ কিছু হবেনা টেনশন করো না।
নাবিলাঃ হুুম ওকে এখন বাড়ি যাও!
সায়নঃ গুড নাইট বেবী, লাভ ইউ।
নাবিলাঃ গুড নাইট, এন্ড লাভ ইউ টু!

সায়ন গাড়ি স্টার্ট দিলো। নাবিলা ও বাড়ির ভেতরে চলে গেলো। নিজের রুমে গিয়ে সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। এরপর রিল্যাক্সে ঘুমিয়ে পড়লো। পরেরদিন কলেজে গেলো নাবিলা। গিয়ে রফিক কে বললো বিয়ের কথা। রফিক তো মহা খুশি।
রফিকঃ দোস্ত আমি তো ভাবতে পারছি না। যাক ফাইনালী তোদের বিয়ে!
নাবিলাঃ হুম তোর কিন্তু আজই যেতে হবে।

রফিকঃ কোথায় যাবো?
নাবিলাঃ আমাদের বাড়ি!
রফিকঃ মানে বিয়ে ৭দিন পর। আর আমি আজ কেন যাবো?
নাবিলাঃ আমি বলেছি তাই।

রফিকঃ না রে আমি আজ যেতে পারবো না। আমি বিয়ের ২দিন আগে চলে যাবো!
নাবিলাঃ না আজকেই যাবি।
রফিকঃ বোঝার চেষ্টা কর নাবিলা। মা একটু অসুস্থ আমি যাবো। বাট বিয়ের ২দিন আগে!

নাবিলা বুঝতে পারলো তাই কথা বাড়ালো না। সায়ন’র সাথে দেখা করে চলে গেলো।
ড্রয়িংরুমে বসে আছে নাবিলা। বসে বসে টিভি দেখছে। পাশেই ওর ৩ ভাই যাদের হাতে খাবার। ১ ঘন্টা ধরে খাবার নিয়ে দাড়িয়ে আছে। কিন্তু নাবিলা কে খাওয়াতে পারেনি। এরমাঝে দরজায় কলিং বেল বেজে উঠলো। র্সাভেন্ট গিয়ে দরজা খুলে দিলো। দরজা দিয়ে ভেতরে এলো একটা ছেলে। বয়স ২৫ নাম কবির চৌধুরী। ছেলেটা নাবিলা’র কাজিন। বড় চাচ্চুর ছেলে দেখতে যথেষ্ট হেন্ডসাম!

কবিরঃ মিষ্টি সোনা।
কবিরে’র কন্ঠ শুনেই। নাবিলা পিছনে তাকালো আর বাকীরাও। নাবিলা কবির কে দেখে এক দৌড়ে কাছে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো। কবির ও নাবিলা কে জড়িয়ে ধরলো। ইমন, আরাফ আর সিয়ামে’র মতো। কবির ও নাবিলা কে ভালবাসে। নাবিলা ও সমান ভালবাসে কবির কে। ফুপিয়ে কান্না করতে করতে বললো নাবিলা!

  • তুমি আমাকে ভুলে গিয়েছো ভাইয়া?

কবিরঃ না মিষ্টি সোনা আমি ভুলিনি। তোমাকে কি করে ভুলবো? কলিজার অংশ তুমি তোমাকে ভুলতে পারি?
নাবিলা কবির কে ছেড়ে গাল ফুলিয়ে বললো,

  • তাহলে আসোনি কেন?

কবির কিছু বলবে তার আগে আরাফ বললো!

  • বোন তোমার কবির ভাইয়া। আমেরিকা পড়তে গিয়েছিলো। পড়া শেষ তাই এসেছে।
    কবির গিয়ে আরাফ কে জড়িয়ে ধরলো। ইমন, সিয়াম, ইমরান চৌধুরী। কণা চৌধুরী সবার সাথে কুশল বিনিময় করলো। এরপর নাবিলা’র সামনে এসে। ব্যাগ থেকে এক বক্স চকলেট দিলো। নাবিলা কে ড্রেস দিলো কয়েকটা। ডায়মন্ড নেকলেস হাতের চুরি। নাবিলা তো লাফাচ্ছে এগুলো পেয়ে। মূলত লাফালাফি চকলেট পেয়ে। সবাই হাসছে ইমন বললো!
  • কবির ভাইয়া চাচ্চু আসবে কবে? আর কাকী মনি অনু।

অনু কবিরে’র বোন। আর ওদের কাজিন!
কবিরঃ সবাই ৩দিন পর আসবে।
সিয়াম কবির কে ওর রুমে নিয়ে গেলো। কবির ফ্রেশ হয়ে আবার নিচে এলো। দেখলো আরাফ নাবিলা কে খাওয়ানোর চেষ্টা করছে। ইমন আর সিয়াম ও কবির মুচকি হেসে। নাবিলা’র পাশে গিয়ে বসে বললো!

  • আচ্ছা মিষ্টি সোনা তুমি খাচ্ছোনা কেন?
    নাবিলাঃ আমি খাবোনা ভাইয়া।
    কবিরঃ আমি খাইয়ে দিলে খাবে?

নাবিলাঃ তুমি খাইয়ে দেবে? তাহলে আমি খাবো!
কবির নাবিলা কে খাইয়ে দিলো। আর নাবিলা মনের সুখে টিভি দেখছে। খাওয়া শেষে নাবিলা’র মুখ মুছে দিলো। সিয়াম হেসে দিয়ে বললো,

  • নে আজ থেকে তুইও এড হলি!
    কবিরঃ তাতে কি? আমাদেরই তো বোন।

দেখতে দেখতে বিয়ের দিন ঘনিয়ে এলো। সবাই তো আগেই শপিং করে ফেলেছে। শহরের সব থেকে বড় কমিউনিটি সেন্টার বুক করেছে। ইমরান চৌধুরীর কলিজার টুকরা মেয়ে বলে কথা। আজকে ওদের গায়ে হলুদ। সব মেহমান চলে এসেছে। কিন্তু সিয়াম, ইমন, কবির আর আরাফ’র অবস্থা খারাপ হয়ে যাচ্ছে। আদরের বোন কাল চলে যাবে। আর তাকে কাছে পাবেনা ভাবতেই কান্না পাচ্ছে। কিন্তু কান্নাটা কে কন্ট্রোল করছে। নাবিলা দেখলে নাবিলা ও কান্না করবে!

সন্ধ্যায় নাবিলা কে সাজানো হচ্ছে। গায়ে হলুদে হলুদ লেহেঙ্গা পড়িয়েছে। গায়ে কাচা ফুলের গয়না। মুখে মেকআপ চোখে মোটা করে কাজল। ঠোটে লাল লিপস্টিক দিয়েছে।
এদিকে সায়ন ও রেডী হচ্ছে। হলুদ পান্জাবী যার বুকের কাছে। স্টোন বসানো চিকচিক করছে। কালো জিন্স প্যান্ট চুলগুলো স্পাইক করা। হাতে ব্রান্ডের ঘড়ি ঠোটের পাশে তিল। সব মিলিয়ে পুরো ক্রাশ। এমনিতেও সবার ক্রাশ সায়ন আহমেদ। রেডী হয়ে সায়ন নিচে স্টেজের কাছে গেলো। মেয়েরা চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছে। একটুপর নাবিলা কেও নিয়ে এলো। সায়ন তো নিজের রাজ্যের রানী কে দেখছে। নাবিলা কে আর সায়ন কে পাশাপাশি বসানো হলো। সায়ন ফিসফিস করে বললো!

  • বেবী ইউআর লুকিং সো হট।

নাবিলা চোখ বড় বড় করে তাকালো। সায়ন চোখ টিপ মারলো। নাবিলা ঢোক গিলে চোখ নামিয়ে নিলো!
অনু ফোন ফেলে এসেছে রুমে। ফোন আনতে ধাপ ধুপ যাচ্ছে। এরমাঝে লেহেঙ্গায় পা বেজে পড়তে গেলেই। কেউ একজন ধরে ফেলে। অনু ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে।

  • দেখে চলতে পারিস না?
    কারো কন্ঠ পেয়ে চোখ খোলে। তাকিয়ে দেখে ইমন হা করে ইমন কে দেখছে। ইমন অনু কে দাড় করিয়ে রেগে বলে,
  • কি রে শুনতে পাচ্ছিস না?
    অনুঃ আমি খেয়াল করিনি ইমন।

ইমন চোখ বড় করে তাকিয়ে বলে,

  • থাপ্পর চিনিস? ফাজিল মেয়ে আমি তোর ২ বছরের বড়। আমাকে ইমন বলিস কোন সাহসে? ইমন ভাইয়া বলবি গট ইট?
    বলে হনহন করে চলে যায়। অনু মুখ ভেংচি কেটে বলে,
  • ইস ঢং ইমন ভাইয়া বলবি গট ইট?

নাবিলা আর সায়ন’র হলুদ অনুষ্ঠান শুরু হয়। সবাই ওদের হলুদ ছোয়ায়। অনেক ভাল ভাবেই হলুদ অনুষ্ঠান শেষ হয়!

পরেরদিন আজকে ওদের বিয়ে। সকাল থেকেই নাবিলা’র মন খারাপ। সবাই বুঝতে পারছে কেন মন খারাপ। কিন্তু কেউ প্রকাশ করছে না। তাহলে নাবিলা কান্নাকাটি করবে। বিকেলে নাবিলা কে সাজানো হচ্ছে। লাল লেহেঙ্গা তার মাঝে গোল্ডেন স্টোন বসানো। গা ভর্তি গয়না চোখে কাজল ঠোটে লিপস্টিক। নাবিলা কে স্টেজে নিয়ে গেলো রফিক আর অনু। স্টেজে বর সাজে বসে আছে সায়ন। নাবিলা সায়ন কে দেখলো মনে হচ্ছে কোনো রাজকুমার। নাবিলা কে স্টেজে নিতেই কাজী এলো। নাবিলা’র বয়স নিয়ে ঝামেলা হয়েছিলো। কিন্তু সায়ন সবটা হ্যান্ডেল করেছে। আগে সায়ন কবুল বলেছে আর সাইন করেছে।

এরপর কাজী এসে নাবিলা কে কবুল বলতে বলছে। নাবিলা চুপ করে আছে বলছে না। বুকটা ভেঙেচুরে যাচ্ছে কি করে থাকবে সবাই কে ছেড়ে? কারা ওকে মিষ্টি কলিজা, মিষ্টি, মিষ্টি সোনা, বোন বলে ডাকবে? কে সোনা বলে ডাকবে? কে মামনি বলে ডাকবে? কে ঘন্টার পর ঘন্টা খাবার নিয়ে দাড়িয়ে থাকবে? এসব ভাবতেই বুক ফেটে যাচ্ছে। নাবিলা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কান্না করতে লাগলো। চোখ দিয়ে গড়িয়ে পড়ছে নোনা জল। নাবিলা কে বোঝানোর পর কবুল বললো, এরপর সাইন করলো। ওদের বিয়েটা হয়ে গেলো। আস্তে আস্তে ঘনিয়ে এলো বিদায়ের মুহূর্ত। নাবিলা এবার হাউ মাউ করে কাঁদতে লাগলো।

সবাই কে জড়িয়ে ধরে। চিৎকার করে কান্না করছে। নাবিলা কে এভাবে কাঁদতে দেখে। সায়ন’র মনে হচ্ছে কেউ ওর বুকে ছুড়ি চালিয়েছে। কিন্তু সায়ন এখন কি করবে? ওর ও যে নাবিলা কে চাই নিজের পাশে। নাবিলা অনবরত কেঁদেই যাচ্ছে সবাই নিজেদের স্ট্রোং রেখেছে!
নাবিলাঃ আমি যাবোনা কোথাও।

সিয়ামঃ এরকম বলে না মিষ্টি কলিজা। আমরা রোজ তোমার কাছে যাবো। আর তুমিও চলে এসো!
নাবিলা কে বোঝানোর পরও। নাবিলা বারবার বলছে যাবোনা। তাই সায়ন নাবিলা কে কোলে নিয়ে গাড়িতে বসালো। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে চলে যেতেই সবাই কান্নায় ভেঙে পড়লো। নাবিলা ও গাড়ির মধ্যে সেন্সলেস হয়ে গেলো। সায়ন ওদের বাড়ির সামনে এসে। নাবিলা কে কোলে নিয়ে দরজায় দাড়ালো। সায়ন’র কাকী মনি বললো,

  • একি কি হয়েছে ওর?

সায়নঃ কাঁদতে কাঁদতে সেন্সলেস হয়েছে। যা করার তাড়াতাড়ি করো!
নাবিলা কে বরন করে বাড়ি ঢোকালো। সায়ন নাবিলা কে রুমে নিয়ে গেলো। রুমে নিয়ে নাবিলা কে শুইয়ে দিয়ে বললো,

  • আজ থেকে তুমি আমার। শুধুই আমার হয়ে থাকবে!

নাবিলা’র কপালে চুমু দিয়ে ফ্রেশ হতে গেলো।
২দিন পর!
নিজের চেম্বারে বসে আছে অজানা। ওর কাছেই ওর এসিস্টেন্ট। অজানা হাত মুঠ করে রেখেছে। হঠাৎ করে টেবিলে ঘুষি দিয়ে বললো,

  • আমি তোকে ছাড়বো না সায়ন। তোর মরতে হবে সো গেট রেডি!

বাড়ির সব ভাংচুর করছে ডালিম। পাশেই দাড়ানো লোকমান। ডালিম কে এই মুহূর্তে ওর জলন্ত আগুন মনে হচ্ছে। যার উত্তাপে সব জ্বলে পুড়ে ছাড় খার হয়ে যাবে। ডালিম চেচিয়ে বলে উঠলো।

  • নাবিলা শুধু আমার। ওকে আমি আমার করবোই। সায়ন কে মরতে হবে!
    এরপর দাতে দাত চেপে বললো,
  • ইয়েস মরতেই হবে। আই এম ডালিম খাঁন। বাট আই এম নট গুড পার্সন। আই উইল কিল ইউ সায়ন!

সবাই ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। ডালিম অনবরত ভাঙচুর করেই যাচ্ছে। চিৎকার করে ডালিম বলে উঠলো।

  • নাবিলা ইজ মাই লাইফ। জান তুমি শুধু আমার ইয়েস। ইউআর অনলি মাইন জান। তুমি আমার না হলে আর কারো না। সব ধ্বংস করে দেবো আমি। সায়ন কে শেষ করে দেবো!

পর্ব ৮

আগে কিছু কথা বলি। সেটা হচ্ছে যে আমার আইডিতে। বারবার প্রবলেম হচ্ছে আইডি ডিজেবল হচ্ছে। আবার ব্যাক আসছে অন্য আইডি থেকে আজ গল্প দেয়ার কথা ছিলো। এটা দিয়ে দিলাম বিকজ রাতে এই আইডি ব্যাক পেয়েছি। একচুয়েলি আমার প্রথম আইডিতে যখন প্রবলেম হয়। তখন আমি আরো ২টা আইডি রেখে দেই। যাতে একটা আইডি ডিজেবল হলে। আরেকটা আইডি দিয়ে গল্প লেখতে পারি। বাট এত প্রবলেমের জন্য গল্প লেখতে ইচ্ছে করেনা। তবুও রানিং গল্প তাড়াতাড়ি শেষ করে দেবো। আর গল্প লেখবো না লেখলেও অনেক লেট হবে। আর এর জন্যই গল্প পোষ্ট করতে লেট হলো। আশা করি সবাই প্রবলেমটা বুঝবেন]

২দিন পর আজকে নাবিলা আর সায়ন’র রিসেপশন। কিছু সমস্যার জন্য আজ রিসেপশন হবে। সকাল থেকেই বাড়িতে সবাই কাজ করছে। নাবিলা সায়ন’র রুমে বসে আছে। এখন তো দুজনেরই রুম সায়ন গিয়ে বললো!

  • বেবী খেয়ে নাও।
    নাবিলাঃ আমি খাবোনা সায়ন!
    সায়নঃ কেন খাবেনা কেন?
    নাবিলাঃ আমার ক্ষিদে নেই তাই।
    সায়ন খাবার প্লেট পাশে রেখে। নাবিলা’র পাশে বসে বললো!
  • মন খারাপ?

নাবিলা মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো,
সায়নঃ কেন মন খারাপ?
নাবিলাঃ সবাই আসছে না কেন?
একচুয়েলি আজ রিসেপশন। তাই নাবিলা’র বাড়ির সবার আসার কথা। এখনো আসেনি আসবে তো রিসেপশন পার্টি শুরু হলে। সায়ন নাবিলা’র কপালে চুৃমু দিয়ে মুচকি হেসে বললো!

  • ওনারা আরেকটু পর চলে আসবে। আগে তুমি খেয়ে নাও।

সায়ন নাবিলা কে খাইয়ে দেয়। আর নাবিলা ঠোট উল্টে খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষ সায়ন প্লেট রেখে আসে!
দুপুর ১টা নাবিলা কে সাজাচ্ছে। ব্লু লেহেঙ্গা পড়িয়েছে। ব্লু’র মধ্যে গোল্ডেন স্টোন বসানো। গলায় ডায়মন্ড নেকলেস কানে ঝুমকো। হাতে চিকন চুরি চোখে মোটা করে কাজল। ঠোটে লাল লিপস্টিক নাবিলা কে সাজিয়ে বসিয়ে রাখলো। একটুপর সায়ন এলো সায়ন কে দেখে নাবিলা’র চোখ আটকে গেলো। সায়ন ব্লু কালার পান্জাবী পড়েছে। ব্লু কালারের পান্জাবীতে গোল্ডেন স্টোন। স্টোন গুলো গলার কাছে দুটো বোতাম খোলা। পান্জাবীর হাতা ফোল্ড করা ফর্সা হাতে কালো বেল্টের ঘড়ি। চুলগুলো স্পাইক করা চোখে কালো সাইন গ্লাস। আর ঠোটের কোনে কিলার হাসি। সব মিলিয়ে ক্রাশ লুক। সায়ন কে দেখে সবাই চলে গেলো। সায়ন নাবিলা’র সামনে গিয়ে বললো,

  • কি ম্যাডাম আমাকেই দেখবেন?

নাবিলা চোখ ছোট ছোট করে বললো!

  • তোমাকে কেন দেখবো?
    সায়নঃ আমাকেই তো দেখছিলে।
    নাবিলাঃ মোটেও না হু!
    সায়নঃ ওকে বাট ইউআর লুকিং সো প্রিটি।

নাবিলাঃ হয়েছে পাম দিতে হবেনা। এবার নিচে চলো!
সায়ন আর নাবিলা হাত ধরে নিচে যায়। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। একদম মেড ফর এচ ওদার। নাবিলা ওর বাড়ির লোকদের দেখে। দৌড়ে গিয়ে সবাই কে জড়িয়ে ধরে।
নাবিলাঃ তোমরা এত লেট করলে কেন?
সিয়ামঃ মিষ্টি কলিজা আমরা ঠিক টাইমেই এসেছি!
ইমনঃ হ্যা মিষ্টি তোমার মনে হচ্ছে।

নাবিলাঃ না তোমরা লেট করেছো!
কবিরঃ আরে মিষ্টি সোনা থাক না। চলো সবার সাথে পরিচয় হই।
সায়ন সবার সাথে আলাপ করে। সবার সাথে ওদের পরিচয় করিয়ে দেই!

রিসেপশন শেষে নাবিলা আর সায়ন কে। নাবিলা’দের বাড়িতে নিয়ে যায়। এখানে এসে সায়ন পড়েছে বিপাকে। কারন সায়ন কে ইচ্ছেমতো খাওয়াচ্ছে। নাবিলা কে যে বলবে নাবিলা চলে গিয়েছে গল্প করতে। সায়ন খাবার টেবিলে খাচ্ছিলো তখন ওর চোখ গেলো শিরিতে। সায়ন’র চোখ ছানাবড়া হয়ে গেলো।
সায়নঃ এই পিচ্চি আমার বউ! [মনে মনে]
সায়ন’র এটা বলার কারন। নাবিলা শিরি দিয়ে নামছে গায়ে পিংক কালার টি শার্ট। কালো থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। মাথায় দু পাশে ঝুটি করেছে। আর ডল ব্যান্ট নিয়েছে মাথায়। নাবিলা নেমে এসে সায়ন’র পাশে বসে বললো,

  • কি হলো তাকিয়ে আছো কেন?

সায়নঃ বেবী শাড়ি পড়োনি কেন?
নাবিলাঃ শাড়ি পড়ে আমি পড়ে গিয়েছিলাম!
সায়নঃ তাহলে পড়তে হবেনা।
পরেরদিন সকালে নাবিলা ঘুম থেকে উঠে। সায়ন কে পেলোনা হাজার খুজেও পেলোনা!
নাবিলাঃ আরে সায়ন কোথায় গেলো? একটা ফোন করে দেখি।

নাবিলা সায়ন কে ফোন করলো। কিন্তু সায়ন ফোন তুললো না। নাবিলা গাল ফুলিয়ে বসে রইলো। বেলা ১০টায় সায়ন এলো রুমে গিয়ে দেখলো। নাবিলা গাল ফুলিয়ে বসে আছে!
সায়নঃ বেবী কি হলো তোমার?
নাবিলাঃ কিছু করেছিস যে হবে?
সায়ন ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। বাট বুঝতে পারলো নাবিলা রেগে আছে। তাই নাবিলা’র পাশে গিয়ে বসলো। মিনমিন করে সায়ন বলে উঠলো।

  • বেবী রেগে আছো কেন?

নাবিলাঃ কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
সায়নঃ আমি বাইরে গিয়েছিলাম!
নাবিলাঃ আমাকে না বলে? এভাবে লুকিয়ে কেন গিয়েছো?
সায়নঃ দরকার ছিলো বেবী।
নাবিলাঃ ওহ আচ্ছা!
নাবিলা উঠে চলে গেলো। সায়ন নাবিলা’র যাওয়ার দিকে তাকিয়ে। এরপর নিজেও উঠে গেলো।

পরেরদিন সায়ন আর নাবিলা চলে যায়। দিন কাটছে বাট সায়ন এখনো। নাবিলা কে কাছে টেনে নেয়নি নাবিলা’র অদ্ভুত লাগে ব্যাপারটা। যে সায়ন ওকে এত ভালবাসে। সে এখনো কাছে টেনে নেয়নি কেন?

কলেজে বসে আছে নাবিলা। সায়ন নিজের ক্লাসে গিয়েছে। নাবিলা আর রফিক বসে আছে বেন্চে। দুর থেকে একটা ছেলে বাজে নজরে নাবিলা কে দেখছে। সায়ন এসে নাবিলা কে নিয়ে চলে যায়। আর রফিক ভ্যাবলাকান্ত হয়ে বসে থাকে। এরপর নিজেও বাড়ি চলে যায়!
চৌধুরী বাড়িতে সবাই কথা বলছে। বিশেষ করে বড়রা এতদিন পর এক জায়গায়। ইমন বসে গেমস খেলছিলো তখন অনু এলো। ইমন ভ্রু কুঁচকে বললো,

  • কি রে সামনে এসে দাড়ালি কেন?
    অনুঃ কি সারাদিন গেমস খেলো!

ইমনঃ তো কি করবো?
অনুঃ চলো আমরা ঘুরতে যাই।
ইমনঃ তোর যাওয়ার হলে তুই যা!
অনুঃ তুমিও যাবে সাথে।
কবির দেখে বললো!

  • এই কি এত ফুসুর ফুসুর করছিস?
    ইমনঃ ভাইয়া এটাকে সরাও।
    সিয়ামঃ কেন ও কি করলো?
    অনুঃ ঘুরতে যেতে চেয়েছি শুধু!
    ইমনঃ আমি কোথাও যাবোনা ওকে?
    অনু মুখ ফুলিয়ে বসে পড়লো। সেটা দেখে ইমরান চৌধুরী বললো,
  • ইমন ওকে নিয়ে ঘুরতে যাও। যেতে চাইছে যখন নিয়ে যাও!
    ইমনঃ বাট পাপা আমি।

ইমরান চৌধুরীঃ নো মোর টক গো!
ইমনঃ যা রেডি হয়ে আয়।
দাতে দাত চেপে বললো ইমন। অনু দাত কেলিয়ে বললো!

  • আমি তো রেডি।
    ইমন খেয়াল করে দেখলো সত্যি!
    ইমনঃ তাহলে আর কি চল।
    অনুঃ তুমি রেডি হবেনা?

ইমনঃ আমি ঠিক আছি চল!
ইমন অনু কে নিয়ে গেলো। বাকীরা মুচকি মুচকি হাসছে।
সায়ন কলেজ থেকে এসেই বেরিয়ে গিয়েছে। এখন দুপুর ৩টা বাজে এখনো ফেরেনি!
নাবিলাঃ সায়ন এখনো আসছে না কেন?

তখনি গাড়ির শব্দ পেলো। নাবিলা গিয়ে বেলকনিতে দাড়ালো। দেখলো সায়ন আসছে তাই নাবিলা রুমে গেলো। সায়ন ওর গায়ের শার্ট খুলে বললো,

  • বেবী এটা ওয়াসরুমে রেখে আসবে প্লিজ?
    নাবিলাঃ হ্যা দাও রেখে আসছি!

সায়ন নাবিলা কে শার্ট দিলো। নাবিলা ওটা নিয়ে ওয়াসরুমে গেলো। সায়ন বিছানায় গা এলিয়ে দিয়েছে। ৫মিনিট হয়ে গিয়েছে বাট নাবিলা আসছে না।
সায়নঃ বেবী কি হলো? আসছো না কেন?
নাবিলাঃ আসছি!
নাবিলা ওয়াসরুম থেকে বেরিয়ে বললো,

  • কোথায় গিয়েছিলে তুমি?
    সায়নঃ অফিসে গিয়েছিলাম!

নাবিলাঃ ওহহহহ আচ্ছা সায়ন। তুমি তো আমাকে এত ভালবাসো। তাহলে আমাকে কাছে টেনে নিচ্ছো না কেন?
সায়নঃ তুমি ছোট তাই।
নাবিলাঃ তাহলে আমাকে বিয়ে কেন করেছো?
সায়নঃ আরে বেবী কি শুরু করলে?
নাবিলাঃ কিছুনা!

সায়নঃ ওকে আমি একটু ঘুমাই।
নাবিলাঃ তুমি কে সায়ন? ইদানিং তোমাকে আমার সন্দেহ হয়। তুমি নিজেকে যেটা দেখাও। সেটা তো তুমি না তাহলে কে? আমাকে জানতেই হবে! [মনে মনে]
৫দিন পর হঠাৎ সায়ন খাওয়া রেখে। তাড়াহুড়ো করে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যায়। নাবিলা ও সায়ন কে ফলো করে বেরিয়ে যায়। আর নাবিলা যেটা দেখে যেটা জানে। নাবিলা’র পায়ের তলার মাটি সরে যায়। নাবিলা নিজেদের বাড়ি যেতে গিয়েও চলে আসে।
এদিকে সায়ন আগেই বাড়ি ফিরেছে। সায়ন মনে মনে কিছু একটা বলছে। এরমাঝে আওয়াজ করে বলে,

  • কি নামে ডাকবে?

নাবিলা হাততালি দিতে দিতে এসে বলে ওঠে।

  • আমিও সেটাই ভাবছি। তোমাকে আমি কি বলে ডাকবো? সায়ন, অজানা নাকি তোমার আসল নামে মিস্টার ডালিম খাঁন?
    নাবিলা’র কথা শুনে সায়ন’র হাত থেকে। ফোনটা ফ্লোরে পড়ে যায় ভীতু কন্ঠে বলে,
  • মা মানে কি কি ব ব বলছো?

নাবিলা এগিয়ে এসে ঠাস করে থাপ্পর মারে!


পর্ব ৯

নাবিলা এসে ঠাস করে থাপ্পর মেরে বলে,

  • কেন করলে এমন? কেন ঠকালে আমাকে? নিজের পরিচয় কেন গোপন করলে? কেন কেন কেন?
  • বেবী তু তু তুমি ভুল ভাবছো।

নাবিলাঃ জাস্ট সাট আপ। আমি কোনো ভুল ভাবছি না। কোথায় গিয়েছিলে আজ তুমি? খুন করতে তাইতো? আমি সব দেখেছি আমি ভুল না। কেন এমনটা করলে বলো? আমার বিশ্বাস নিয়ে এভাবে খেললে? তুমি একজন খুনি আই হেট ইউ!

  • দেখেছো মানে?
    অবাক হয়ে বললো,

নাবিলাঃ হ্যা তুমি বাড়ি থেকে যাওয়ার পর। আমিও তোমাকে ফলো করে যাই। সন্দেহ তো আমার সেদিনই হয়েছিলো। যেদিন তুমি আমাকে তোমার শার্ট দিয়েছিলে। আর ওই শার্টে আমি রক্ত দেখেছিলাম!

  • ওয়াট? ওয়াট আর ইউ সেয়িং?
    নাবিলাঃ ইয়েস মিস্টার সায়ন। ওপস সরি ডালিম খাঁন বিলিভ হচ্ছেনা? ওয়েট আমি শার্ট নিয়ে আসছি।
    নাবিলা গিয়ে শার্টটা নিয়ে আসে। যেটাতে স্পষ্ট রক্ত লেগে আছে!

নাবিলাঃ এবার কি বলবে?

  • ইয়েস আমি ডালিম খাঁন। আমি কোনো সায়ন বা অজানা নই। এদুটো নামই নকল ছদ্মনাম ওকে? এবার বলো কি দেখেছো তুমি?
    নাবিলাঃ তাহলে শোনো।

অতীত

সায়ন রফিকী ডালিম বাড়ি থেকে যাওয়ার পর। নাবিলা ও ওকে ফলো করে যায়। সায়ন গাড়িতে যখন ওঠে তখন মুখ দেখা যায়। বাট গাড়ি থেকে যে নেমে আসে। তাকে দেখে নাবিলা চমকে যায়। কারন গাড়ি থেকে নামে ডালিম খাঁন। ডালিম খাঁন যে সায়ন নাবিলা তখনও বোঝেনা। নাবিলা ভাবে সায়ন হয়তো গাড়িতে আছে। ডালিম গাড়ি থেকে নেমে একটা পোড়া বাড়িতে ঢোকে। যেখানে অনেক বডিগার্ড আছে। আর একটা লোককে চেয়ারে বেধে রেখেছে। ডালিম গিয়ে লোকটার সামনের চেয়ারে বসে। লোকটা ভয়ে কাঁপছে নাবিলা এই সুযোগে। গাড়ির কাছে চলে আসে কিন্তু গাড়িতে আর কেউ নেই। নাবিলা ও ধীর পায়ে পোড়া বাড়ি চলে আসে। আর ও লুকিয়ে পড়ে এদিকে ডালিম বাঁকা হেসে বলে,

  • সো এবার কি করবি তুই?

লোকটাঃ আমাকে ছেড়ে দিন!
ডালিমঃ হা হা ভেরী ফানি তোকে ছাড়বো? ডালিম ধরতে শিখেছে ছাড়তে না।
বলেই নিজের কাছে থাকা। ধারালো ছুড়িটা লোকটার পেটে ঢুকিয়ে। চিৎকার করে বলে ওঠে!

  • তোকে বলেছিলাম না? আমার সাথে বেইমানি করিস না? তুই কি করলি সেই আমার প্রজেক্ট। অন্য একজন কে দিতে গেলি? এবার যা উপরে গিয়ে প্রজেক্ট দে।
    বলেই ছুড়ি দিয়ে। লোকটার পেটে অনবরত আঘাত করলো। এরপর আঘাতের জায়গায় গুড়া মরিচ দিতে লাগলো। আর সাথে পাগলের মতো হাসি। লোকটা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো। গার্ডরা ভয়ে থরথর করে কাঁপছে। নাবিলা ও ভয়ে কাঁচুমাচু হয়ে মনে মনে বললো!
  • সায়ন কোথায় গেলো?

ডালিমঃ লোকমান এটাকে ফেলে দে। আমি যাচ্ছি ফাস্ট এটাকে গুম কর।
লোকমানঃ জ্বি স্যার!
ডালিম বের হওয়ার আগেই। নাবিলা বেরিয়ে গাছের পিছনে লুকিয়ে পড়ে। ডালিম ওখান থেকে বেরিয়েই। মুখের মাস্কটা একটানে খুলে ফেলে। নাবিলা নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। ওর মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসে।

  • শু সায়ন!

ডালিমঃ এখন বাড়ি যাই!
যেই ডালিম গাড়িতে উঠবে। এরমাঝে ওর ফোনে আসে। ডালিম ফোনটা রিসিব করে।

  • হ্যালো!
    ওপাশঃ..।

ডালিম আশেপাশে তাকিয়ে বলে ওঠে!

  • ইয়েস ডক্টর অজানা বলছি। এনিথিং রং?
    এবার নাবিলা’র মাথায় আকাশ ভেঙে পড়লো। ডালিম কথা বলে গাড়িতে উঠে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে হসপিটালে চলে যায়। আর নাবিলা কান্না করতে করতে বাড়ি চলে আসে।

বর্তমান!

ডালিম থম মেরে বসে আছে। নাবিলা চেচিয়ে বললো,

  • এখন চুপ করে আছো কেন?
  • আজ আর কিছু লুকাবো না!

নাবিলাঃ লুকাবে কি করে? সব তো আমি জেনেই গিয়েছি। তোমার সাথে আমি থাকবো না। আমি এক্ষুণি এখান থেকে চলে যাবো।
নাবিলা’র চলে যাওয়ার কথা শুনে। ডালিমে’র মাথায় আগুন ধরে গেলো। নাবিলা দরজা খুলে বের হতে গেলেই। ডালিম নাবিলা’র হাত চেপে ধরে বলে,

  • কি বললি তুই? আমার কাছ থেকে চলে যাবি?
    নাবিলা ভয় পেয়ে গেলো। ডালিমে’র চোখ মুখ লাল হয়ে আছে।

নাবিলাঃ তু তুমি ছাড়ো আমাকে!
ডালিমঃ ছাড়বো বলে ধরিনি জান। যখন জেনেই গিয়েছো সব। তাহলে এটাও জেনে নাও তুমি এখান থেকে। কোথায় যেতে পারবে না আমি যেতে দেবোনা। তোমার জন্য নিজেকে নিজে আঘাত করেছি। ডালিম থেকে সায়ন হয়েছি এখন ভাবছো তো? ডালিম থেকে সায়ন কবে হলাম? ওয়েল বেবী আমি নিজেকে কাভার করতাম ঠিক। আচ্ছা তুমি বলো তো সায়ন হয়ে আমি। তোমার সামনে কবে গিয়েছিলাম?
নাবিলাঃ ১ বছর আগে স্কুলে।

ডালিমঃ রাইট ১ বছর আগেই আমি চেয়েছিলাম। দুনিয়ার সামনে আসতে প্রেস কনফারেন্সে। সবাই কে নিজেকে দেখাতে গাড়িতে যাচ্ছিলাম। বাট ওইদিন স্কুলের সামনে তোমাকে দেখি। চোখ আটকে গিয়েছিলো মাফিয়া ডালিম খাঁন। একটা পিচ্চি কে ভালবেসে ফেলেছিলো। আমি জানতাম ডালিম হয়ে তোমার সামনে গেলে। তুমি আমাকে ভয় পাবে দুরে থাকবে। মনে করে দেখো রুমাল বেধে আমি। তোমার সামনে গিয়েছিলাম কিন্তু তুমি। আমার নাম শুনেই ভয় পেয়ে কান্না করে দিয়েছিলে। সেদিন আমি প্রেসের সামনে যাইনি।

সারারাত ভাবতে থাকি কি করবো? আইডিয়া পেয়েও যাই সায়ন হয়ে তোমার সামনে যাই। কথা না বললেও সেদিন তুমি ভয় পাওনি। হয়ে যাই ডালিম থেকে সায়ন। আর যদি অজানার কথা জানতে চাও। আমি একজন ডক্টরও বাট। হ্যা আমি অজানা সেজে আছি। মানুষের পাশে থাকার জন্য আমি বিনা কারনে। কাউকে খুন করিনা জান ট্রাস্ট মি। আমি সত্যি তোমাকে অনেক ভালবাসি। তোমার জন্য আমি কলেজে এডমিশন নিয়েছি। গার্ডদের সামনে নাটক করেছি। ভাঙচুর করেছি যাতে ওরাও ভাবে। সায়ন, অজানা, ডালিম আলাদা লোক। নিজেকে নিজে গুলি করিয়েছি। যাতে তুমি ডাউট না করো। বাট তুমি জেনেই গেলে!

নাবিলাঃ হ্যা কারন সত্যি গোপন থাকেনা।
ডালিমঃ আই ডোন্ট কেয়ার। বাট তুমি যাবেনা!
নাবিলাঃ যাবো তোমাকে ডিভোর্স দেবো।

ডালিম অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে। ঠাস করে নাবিলা কে থাপ্পর মারলো। টাল সামলাতে না পেরে নাবিলা ফ্লোরে গিয়ে পড়লো। ডালিম নাবিলা কে টেনে তুলে গাল চেপে ধরে বললো!

  • কি বললি তুই? আমাকে ডিভোর্স দিবি? এত বড় সাহস তোর? আর একবারও যদি আমাকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলিস। তোর কি হাল আমি করবো তুই জানিস না। আমি যেমনই হই তুই আমার সাথেই থাকবি। তুই চাইলেও তুই আমার। আর তুই না চাইলেও তুই আমার।
    নাবিলাঃ থাকবো না আমি তোর সাথে। তুই একটা খুনি জানোয়ার!
    ডালিমঃ কি আমি জানোয়ার?

নাবিলাঃ শুধু তাইনা তুই একটা পাগল, সাইকো।
ডালিম যেন এবার অগ্নিমূর্তি হয়ে গেলো। নিজের সব শক্তি দিয়ে। নাবিলা কে থাপ্পর মারলো নাবিলা নিচে পড়ে গিয়ে। খাটের কোনায় লেগে কপাল কেটে সেন্সলেস হয়ে গেলো!
ডালিম তাড়াতাড়ি নাবিলা’র কাছে এলো।

ডালিমঃ জান কি হলো তোমার? জান কথা বলো আমার সাথে। ও গড এটা কি করলাম আমি?
ডালিম নিজেই নাবিলা কে দেখলো। নাবিলা’র কপাল কেটে রক্ত পড়ছে। ডালিম তাড়াতাড়ি ব্যান্ডেজ করে দিলো। নাবিলা কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে। নাবিলা’র একটা হাত ধরে কান্না করতে করতে বললো!

  • কেউ খুনী হয়ে জন্মায় না জান। ভাগ্য কখন কাকে কি বানায়। কেউ জানেনা তোমাকে আমি ভালবাসি। তুমি আমাকে ছেড়ে গেলে আমি তোমাকে মেরে ফেলতে বাধ্য হবো। এরপর নিজেও মরবো।

পর্ব ১০

কথাগুলো বলার সময় ডালিমে’র চোখ থেকে। টপটপ করে পানি পড়ছে হ্যা কান্না করছে ডালিম। ৭বছর আগে ডালিম লাস্ট কান্না করেছিলো। আর আজ আবার কান্না করছে। ডালিম চোখের পানি মুছে রুম থেকে চলে যায়। তখন ওর দাদুভাই ডাকে!
ডালিমঃ হ্যা দাদু বলো।

দাদুভাইঃ সায়ন তুই!
ডালিম ওনাকে থামিয়ে বলে,

  • আর সায়ন বলতে হবেনা। এখন থেকে আমাকে আমার নামেই ডাকবে!
    দাদুভাইঃ কিন্তু তুই যে বলেছিলি?
    ডালিমঃ হ্যা আবার আমিই বলছি।

এরমাঝে মুন্না এসে বলে,

  • ভাই কি নিয়ে কথা হচ্ছে?
    ডালিমঃ না তেমন কিছুনা।
    মুন্নাঃ ওয়েল আমি তাহলে যাচ্ছি!
    দাদুভাইঃ কোথায় যাচ্ছিস?

মুন্নাঃ দাদু বাড়ি বসে বোর লাগছে। তাই একটু বাইরে থেকে ঘুরে আসছি বাই দাদু বাই ভাই।
ডালিম সোফায় বসে আছে। চোখ ছলছল করছে ওর!
দাদুভাইঃ দাদুভাই কি হয়েছে তোর?
ডালিমঃ দাদু জানো? আজকে মম, ড্যাড আর শ্রেয়া কে। খুব খুব বেশী মনে পড়ছে। কেন হলো এমন?
শ্রেয়া ডালিমে’র একমাএ বোন ছিলো।

দাদুভাইঃ মন খারাপ করিস না দাদু। তুই কান্না করলে কি ওরা ফিরে আসবে?
ডালিমঃ আমি কান্না করছি না।
বলে ডালিম রুমে চলে যায়। আর ওর দাদুভাই মলিন ভাবে তাকায়। ডালিম রুমে গিয়ে দেখে নাবিলা বসে আছে। ডালিম যেন নিজের জান ফিরে পেয়েছে। দৌড়ে গিয়ে নাবিলা কে জড়িয়ে ধরে বলে,

  • জান তুমি ঠিক আছো? আমি কতটা টেনশন করছিলাম। তুমি বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি। তোমাকে নিজের হাতে খাইয়ে দেবো।
  • তোর মতো জানোয়ারের হাতে। আমি কিছুতেই খাবার খাবোনা। এরথেকে বিষ খাওয়া আমি বেশী পছন্দ করবো!
    নাবিলা’র কথায় ডালিম দাড়িয়ে পড়ে। ডালিমে’র রাগ উঠে যায় আর নাবিলা’র। বিষ খাওয়ার কথা শুনে তো রাগে থরথর করে কাঁপছে। চোখদুটো রক্ত বর্ন ধারন করেছে। উল্টো দিকে ঘুরে যেতে গিয়েছিলো। নাবিলা’র কথা শুনে চট করে ফেরে ওর দিকে। ডালিম কে দেখে নাবিলা’র জান যায় অবস্থা তবুও বলে,
  • আমাকে মারতে এসেছিস না? নে আমাকে মেরে ফেল অন্তত তোর থেকে মুক্তি তো পাবো!

ডালিম নাবিলা’র কাছে এসে। ঠাস করে নাবিলা কে থাপ্পর মেরে চেচিয়ে বলে,

  • আমি তোকে কেন মারবো? আমি তোকে ভালবাসি তুই কেন বুঝিস না? আর কি বললি আমি জানোয়ার? আমার হাতে খাওয়ার থেকে। তুই বিষ খাওয়া বেশী পছন্দ করবি? দাড়া তুই তোকে তো আমার হাতেই খেতে হবে!
    বলে ডালিম পাগলের মতো হাসে। নাবিলা কাঁচুমাচু হয়ে তাকিয়ে আছে।
    ডালিমঃ জান তুমি বসো আমি খাবার নিয়ে আসছি!

ডালিম খাবার আনতে যায়। আর নাবিলা কান্না করতে করতে বলে,

  • আল্লাহ কেন এমন হলো? কোন পাপের শাস্তি পাচ্ছি আমি? শেষে কি না একটা পাগল আমার স্বামী? একটা পাগল, সাইকো কে আমি ভালবাসলাম? কি করবো এখন আমি? তুমি আমাকে পথ দেখাও!
  • কিছুই করতে পারবে না জান।
    রুমে ঢুকতে ঢুকতে ডালিম বলে,
    নাবিলাঃ আমাকে যেতে দাও।

ডালিম রাগী দৃষ্টিতে তাকায়। ভয় পেয়ে নাবিলা চুপ হয়ে যায়। ডালিম খাবার নিয়ে নাবিলা’র পাশে বসে!
ডালিমঃ দেখি জান হা করো।
নাবিলাঃ বলেছি না আমি খাবোনা!
ডালিম শান্ত গলায় বলে,

  • বেবী আমি হা করতে বলেছি!

নাবিলাঃ আমি খাবোনা শুনেছো?
ডালিমঃ মাই লাভ হা করো!
নাবিলাঃ খাবোনা খাবোনা।
ডালিমঃ আমি হা করতে বলেছি হা কর!

চিৎকার করে বলে ডালিম। ভয়তে নাবিলা তাড়াতাড়ি হা করে। ডালিম মুচকি হেসে নাবিলা কে খাইয়ে দেয়। নাবিলাও লক্ষী মেয়ের মতো খেয়ে নেয়। খাওয়া শেষে ডালিম নিচে যায় প্লেট রাখতে। ফোনটা রুমেই রেখে যায় এই সুযোগে। নাবিলা ফোন নিয়ে সিয়াম কে ফোন দেয়। সিয়াম ফোন রিসিব করতেই নাবিলা বলে,

  • ভাইয়া কোথায় তোমরা? আমাকে এখান থেকে নিয়ে যাও। সায়ন একটুও ভাল না ও আমাকে মারে। ও একটা পাগল ভাইয়া নিয়ে যাও। আর সায়ন আসলে সম্রা!
    ডালিম এসে ছো মেরে ফোন নিয়ে নেয়। নাবিলা ও আর বলতে পারেনা সায়ন আসলে ডালিম। ডালিম রেগে নাবিলা কে ধরে বলে,
  • কি করছিলে তুমি?
    নাবিলাঃ ঠিকই করেছি আমি থাকবো না!
    ডালিমঃ থাকতে তো তোমাকে হবেই জান।
    বলে ডালিম বাঁকা হাসে!

২ ঘন্টা পরই সিয়াম, আরাফ, ইমন আর কবির চলে আসে। এসেই নাবিলা কে ডাকতে থাকে। ওদের মাথায় রক্ত চেপে গিয়েছে। যখন নাবিলা বলেছে সায়ন ওকে মারে।
এদিকে রুমে!
ডালিমঃ প্লিজ জান আমাকে ছেড়ে যেয়োনা।

নাবিলা কিছু না বলে নিচে যায়। ওর ভাইয়াদের দেখে জড়িয়ে ধরে!
সিয়ামঃ মিষ্টি কলিজা সায়ন কোথায়?
ইমনঃ হ্যা মিষ্টি কোথায় সায়ন?

আরাফঃ ওর সাহস কি করে হয়? তোমার গায়ে হাত তোলে। আজতো ওর হাত আমি ভেঙে ফেলবো।
এরমাঝে ডালিম নেমে আসে। ডালিম কে দেখেই আরাফ এগিয়ে যায়। আর নাবিলা হঠাৎ খিলখিল করে হেসে ওঠে। নাবিলা’র হাসি দেখে সবাই ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায়। শুধু ডালিম ছাড়া ডালিম বাঁকা হাসি দেয়!
আরাফঃ বোন তুমি হাসছো কেন?

নাবিলাঃ আমার কথা তোমরা সত্যি ভেবেছো?
কবিরঃ মানে কি মিষ্টি সোনা?
নাবিলাঃ আসলে তোমাদের অনেকদিন দেখিনা। এমনি বললে হয়তো আসতে না তাই নাটক করলাম। তোমরা বিশ্বাস ও করে নিলে?
বলে আবার হাসে নাবিলা।

  • ঠাসসসসসস!

নাবিলা গালে হাত দিয়ে। ছলছল চোখে তাকিয়ে বলে,

  • ভাইয়া তুমি আমাকে মারলে?
    ডালিম হাতের মুঠি বন্ধ করে নেয়। ওর চোয়াল শক্ত হয়ে গিয়েছে। তবুও নিজেকে কন্ট্রোল করে রেখেছে।
    ইমনঃ ভাইয়া কি করলে তুমি?
    সিয়ামঃ ইমন তুই চুপ কর। আর হ্যা মারলাম তোমাকে আর আমি কোনো ভুল করিনি। এভাবে মিথ্যে কেন বললে তুমি? তুমি জানো তোমার মিথ্যে শুনে।
    সিয়াম কিছু একটা ভেবে থেমে আবার বললো!
  • মিষ্টি কলিজা আই এম সরি। আমার তোমাকে থাপ্পর মারা উচিত হয়নি। এবার তুমি বলোতো সত্যিটা কি? তুমি সত্যি মজা করেছো তো? নাকি ফোনে যেটা বলেছো সেটা ঠিক?
    ডালিম এবার ঘাবড়ে গেলো। সিয়ামে’র কাছে এসে আরাফনয় করে বললো,
  • ভাইয়া এসব কি বলছো তুমি? তোমার মনে হয় আমি বেবী কে মারবো? বেবী তুমি কিছু বলবে না?
    নাবিলাঃ হ্যা আমি মজা করেছি!

কবিরঃ তাহলে আমরা আসি আজ।
ডালিমঃ আরে না কি বলছো? আজকে থাকো প্লিজ!
আরাফঃ না আজ যেতে হবে কাজ আছে।

ওরা ৪জন চলে যায়। নাবিলা রুমে গিয়ে কান্না করতে থাকে। ডালিম রুমে এসে নাবিলা’র পাশে বসে। নাবিলা ডালিমে’র কলার ধরে বলে,

  • খুশি হয়েছো তুমি? এটাই তো চেয়েছিলে না? আমার ভাইয়া আমাকে মারুক? তোমার জন্য আমি আজ প্রথমবার। আমার ভাইয়াদের কাছে মিথ্যে বললাম।
    এবার ভাবছেন তো? নাবিলা মিথ্যে কেন বললো? চলুন দেখে নেই কি হয়েছিলো!

একটু আগে

ডালিম বাঁকা হেসে ড্রয়ার থেকে। একটা পিস্তল বের করে নাবিলা ভয় পেয়ে। দু কদম পিছিয়ে যায় তা দেখে ডালিম বলে,

  • রিল্যাক্স জান ভয় পেয়োনা। এটা তো তোমার জন্য না।
    নাবিলাঃ তা তাহলে?
    ডালিমঃ এটা তোমার ৪ভাইয়াদের জন্য!
    নাবিলাঃ মা মানে?
    ডালিমঃ জানালা দিয়ে নিচে তাকাও।

নাবিলা নিচে তাকিয়ে দেখে ওর ভাইয়ারা। নাবিলা ভয় পেয়ে যায় কারন ডালিম খুনি। সো ও খুন করতেই পারে!
ডালিমঃ এটা দিয়ে ওদের উপরে পাঠিয়ে দেবো।
নাবিলাঃ না তুমি কিছু করবে না!
ডালিমঃ তাহলে আমি যা বলছি সেটা করো। নাহলে তুমি ওদের কাছে পৌছাবে। আমি যে মাফিয়া ডালিম খাঁন সেটাও বলবে। বাট ওরা কিছু করতে পারবে না কারন। আমি ওদের এই পিস্তলের ৪টা গুলি দিয়ে। এই পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেবো।

নাবিলাঃ না তুমি যা বলবে আমি করবো!
ডালিমঃ গুড সো কাম উইথ মি।
এরপর কি হয়েছে সবার জানা!

এখন

নাবিলাঃ আমি তোমাকে ঘৃনা করি!

বলে বেলকনিতে চলে যায়। ডালিম একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়ে। রাতে ডালিম ছাদে দাড়িয়ে আছে। রাত এখন ১টা ডালিমে’র চোখে ঘুম নেই। যে কদিন সায়ন হয়ে নাবিলা’র ভালবাসা পেয়েছিলো। সেই কয়দিন ঘুমোতে পেরেছিলো। চোখের কোনায় পানি জমে আছে।

ডালিমঃ ভালবাসা কি আমার জন্য না? ভালবাসা কি পাপ আমার জন্য? কেন এমন হয় আমার সাথে? কিন্তু আমি তোমাকে হারাতে পারবো না জান। তুমি কোথাও যেতে পারবে না। যেদিন তুমি চলে যাবে সেদিন আমি তোমাকে মেরে ফেলবো। তবে তুমি ভেবোনা তোমাকে মেরে। আমি সুখে শান্তিতে বেঁচে থাকবো। তোমাকে মেরে আমিও মরবো। তুমি যেতে চেওনা জান প্লিজ!
ডালিম পুড়ো বাড়ি গার্ড দিয়ে ঘিরে রেখেছে। যাতে নাবিলা না পালাতে পারে।
১০দিন পর।

ডালিম নাবিলা কে অনেক বুঝিয়েছে। কিন্তু ৭বছর আগে কি হয়েছিলো। সেটা চেয়েও বলতে পারেনি নাবিলা শোনেনি। মুন্না আর ওর বাবা আবার বিদেশ চলে গিয়েছে। ডালিম অফিস থেকে এসে রুমে গিয়ে অবাক। নাবিলা লাল রঙের একটা শাড়ি পড়েছে। ঠোটে লাল লিপস্টিক চোখে কাজল!
ডালিমঃ আমি কি স্বপ্ন দেখছি?
নাবিলাঃ মোটেও না এটা সত্যি।

ডালিম আবারও অবাক হলো!
নাবিলাঃ এবার বলো আমাকে কেমন লাগছে?
ডালিমঃ জান তুমি সেজেছো? তুমি আমার সাথে ঠিকমত কথা বলছো?
নাবিলাঃ হ্যা ডালিম আমি বুঝেছি। তুমি আমাকে সত্যি ভালবাসো। তাই আমি ঠিক করেছি আমি এখানেই থাকবো।
ডালিম নাবিলা কে জড়িয়ে ধরে বললো!

  • আই লাভ ইউ সো মাচ জান। আমি যে কতটা খুশি হয়েছি। তোমাকে বলে বোঝাতে পারবো না।
    নাবিলাঃ আই লাভ মোর দেন ইউ!
    ডালিম মুচকি হাসলো।
    নাবিলাঃ এখন যাও ফ্রেশ হয়ে এসো!
    ডালিমঃ জ্বি ম্যাডাম।

ডালিম ফ্রেশ হতে গেলো। নাবিলা ডালিমে’র কোট ঠিক করে রাখলো। ডালিম ফ্রেশ হয়ে আসার পর নাবিলা বললো!

  • চলো তোমার পছন্দের। সব খাবার তৈরী হয়েছে আজ।
    ডালিমঃ রিয়েলী?
    নাবিলাঃ হুম চলো দেখতে পাবে!
    ডালিমঃ খেতেও পারবো।
    নাবিলাঃ পাগল এখন চলো!

এরপর ওরা একসাথে নিচে যায়। নাবিলা ডালিমে’র দাদুভাই কে ডেকে আনে। এরপর ৩জন খাওয়া শেষ করে। ডালিম আজ অনেক খুশি। নাবিলা ওকে বুঝেছে ওর ভালবাসা বুঝেছে।
ডালিমঃ থ্যাংক ইউ আল্লাহ!
নাবিলাঃ ডালিম চলো না বাইরে যাই।
ডালিমঃ কেন?

নাবিলাঃ ঘুরতে প্লিজ!
ডালিমঃ ওকে চলো।
ডালিম নাবিলা কে নিয়ে বাইরে যায়। ডালিম ভেবেছিলো নাবিলা পালাতে চাইবে। কিন্তু না যতক্ষণ ওরা বাইরে হেটেছে। ততক্ষণ নাবিলা ডালিমে’র হাত ধরে রেখেছিলো। ডালিম সস্তির নিঃশ্বাস ফেললো!

ডালিমঃ তাহলে জান আর পালাবে না। সত্যি জান আমার সাথে থাকবে। [মনে মনে]
ওরা ঘুরে বাড়ি চলে আসে। ডালিম গার্ডদের রাখে বাট নাবিলা কে। আগের মতো পাহাড়া দিতে বারন করে। নাবিলা কলেজে যেতে চাইলে ওকে যেতে দিতে বলে,
এভাবে আরো ১০দিন কেটে গেলো।
আজকে ডালিম বাইরে যাচ্ছে। তবে অফিসে না একজন কে খুন করতে। নাবিলা মুখ ফুলিয়ে বসে আছে।
ডালিমঃ কি হলো জান?

নাবিলাঃ তুমি অফিসে না গেলে হয়না আজ?
ডালিম তো খুশিতে গদগদ। বাট ওর যেতেই হবে তাই বললো!

  • না জান আমার যেতে হবে।
    নাবিলা নিজের ব্যাগ নিয়ে এসে বললো!
  • তাহলে আমাকে কলেজে পৌছে দিতে হবে।
    ডালিমঃ ওকে জান আমি তোমাকে নিয়েও আসবো!

ডালিম নাবিলা কে কলেজে দিয়ে। নিজের কাজে গেলো এদিকে নাবিলা রহস্যময় হাসি দিয়ে বললো,

  • বাই মাই ডিয়ার ক্রাশ হাসবেন্ড!
    নাবিলা বেরিয়ে নিজেদের বাড়ি গেলো।
    নাবিলাঃ ভাইয়া আমি রেডি!
    আরাফঃ ওকে তাড়াতাড়ি চলো।

ওরা ৪ ভাই আর নাবিলা এয়ারপোর্ট গেলো। নাবিলা এই ১০দিন ডালিমে’র সাথে নাটক করেছে। যাতে ডালিম ওকে বাইরে একা ছাড়ে। আর ওর ভাইয়াদেরও বলে সব। কিন্তু ও চায়না ডালিমে’র কোনো ক্ষতি ওর ভাইয়ারা করুক। তাই ও দেশ ছেড়ে চলে যাওয়ার পরিকল্পনা করে। নাবিলা প্লেনে বসে আছে থাইল্যান্ড চলে যাচ্ছে। একটুপর প্লেন ছেড়ে দেয় আর ডালিম জানতেও পারলো না!

নিজের কাজ শেষ করে ডালিম কলেজে আসে। কলেজে এসে জানে নাবিলা নাকি ক্লাসে যায়নি। গেট থেকেই বাড়ি চলে গিয়েছে। ডালিম ভাবে নাবিলা হয়তো অসুস্থ ছিলো। তাই তাড়াতাড়ি গাড়ি নিয়ে বাড়ি চলে যায়। বাড়ি গিয়ে শোনে নাবিলা বাড়ি আসেনি। ডালিম তবুও রুমে চলে যায়। হঠাৎ ওর চোখ যায় বিছানায় থাকা। একটা কাগজের দিকে এটা নাবিলা। রুম থেকে বের হওয়ার সময় রেখেছে। যেটা ডালিম তখন দেখেনি কারন ডালিম আগে বের হয়েছিলো। ডালিম কাগজটা খুলে দেখে কিছু লেখা।

  • সরি মাই ডিয়ার হাসবেন্ড। আমি তোমার সাথে থাকতে পারলাম না। কারন তোমার মতো পাগলের সাথে। কোনো সুস্থ মানুষ থাকতে পারেনা। আমি তোমার সাথে এই ১০দিন নাটক করেছি। যাতে আমি বাইরে বের হতে পারি। তুমি আর আমাকে খুজে পাবেনা। কারন আমি চলে যাচ্ছি গুড বাই!

চিরকুটটা পড়ে ডালিম স্তব্ধ হয়ে গেলো। চোখ থেকে গড়িয়ে পড়ছে নোনা পানি। ধপ করে বিছানায় বসে পড়লো।
ডালিমঃ নাটক করলে জান? আমাকে ফেলে চলে গেলে? কি নিয়ে বাঁচবো আমি?
ডালিম বিরবির করছে একা। হঠাৎ চোখের পানি মুছে বললো!

  • আমি তোমাকে খুজে বের করবো জান।

৩ ঘন্টা পর ওরা থাইল্যান্ড গিয়ে পৌছালো। বাংলাদেশ থেকে সরাসরি থ্যাইল্যান্ড যেতে ৩ঘন্টা লাগে। ওরা প্রথমদিন তাই থাইল্যান্ডে’র “নাম নাকা”হোটেলে গেলো। এটা থাইল্যান্ডে’র “টপ স্টাফ এন্ড সার্ভিস ফার্স্ট হোটেল”। ওরা রুম বুক করে রেস্ট করলো। পরেরদিন ব্রেকফাস্ট শেষ করে নিজেদের। থাইল্যান্ডে যেই বাড়ি আছে সেখানে চলে গেলো। এদিকে ডালিম নাবিলা কে খুজছে। কিন্তু পাচ্ছেনা পাবে কি করে? নাবিলা তো বাংলাদেশেই নেই। ডালিম পাগলের মতো হয়ে গিয়েছে। নাবিলা’র বাবা, মা কে রিকোয়েস্ট করেছে। যাতে ওনারা বলে নাবিলা কোথায়। ওনারা মিথ্যে বলেছে নাবিলা বাংলাদেশে আছে পারলে খুজে নাও। এভাবে কেটে গিয়েছে ১ মাস। কবির আর ইমন বাংলাদেশে চলে এসেছে। আরাফ আর সিয়াম থেকে গিয়েছে!

ডালিম বিদেশেও খুজেছে নাবিলা কে। কত খুজবে? ডালিম বাড়ি ভাঙচুর করছে। আর পাগলের মতো চিৎকার করে কান্না করছে। ডালিমে’র দাদুভাই আটকাতে এসে। এসব দেখে উনি স্ট্রোক করে বসে। ডালিম ছুটে আসে ওনার কাছে।
দাদুভাইঃ এমন করিস না ডালিম!

আর বলতে পারেনা চোখ বন্ধ করে নেয়। ডালিম যেহেতু ডক্টর তাই ও চেক করে যা বোঝে। দাদু বলে একটা চিৎকার দেয়। কারন ওর দাদু মারা গিয়েছে। এতকিছু ডালিমে’র এই অবস্থা মানতে পারেনি উনি।

ডালিমঃ দাদু প্লিজ তাকাও প্লিজ। আমাকে এভাবে একা ফেলে যেওনা। দাদু আমি একা হয়ে যাবো ওপেন ইউআর আইস!
ডালিম এরপর আরো হিংস্র হয়ে যায়।
৩ বছর পর!

নাবিলা বসে আছে থাইল্যান্ডে’র। “মাহিদোল ইউনিভার্সিটি তে” ওয়েট করছে নিজের ফ্রেন্ডের। অতঃপর এসে হাজির হয় সেই ফ্রেন্ড সৌহাদ্র। সৌহাদ্র একজন বাঙালী ছেলে। নাবিলা এখন সব বুঝতে শিখেছে বয়স ১৯ এখন। সৌহাদ্র কে দেখে নাবিলা বললো,

  • লুকিং সো নাইস!
    সৌহাদ্রঃ ইয়া তুমিও।

নাবিলাঃ আমি কালকে বাংলাদেশে যাচ্ছি!
সৌহাদ্র মুখ কালো করে বলে,

  • আবার কবে আসবে?
    নাবিলাঃ পাপা সুস্থ হলেই চলে আসবো!

ওরা কথা বলে অনেকক্ষণ। এরপর নাবিলা চলে আসে পরেরদিন বাংলাদেশে চলে আসে। সবাই অনেক খুশি হয় নাবিলা ভাবে। রফিকে’র সাথে দেখা করতে যাবে। যেই ভাবা রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে। কালো শার্ট আর কালো জিন্স প্যান্ট পড়ে। গাড়ির চাবি নিয়ে নিজে ড্রাইভ করে বেরিয়ে যায়। নাবিলা হয়তো ভাবেনি কি অপেক্ষা করছে ওর জন্য। বিকেলে রফিক’দের বাড়ি যাওয়ায়। ওখান থেকে আসতে আসতে রাত হয়ে যায়। ব্রিজের উপরে যখন গাড়ি নিয়ে আসে। তখনি সামনে দেখতে পায় একটা গাড়ি। যেটা ওর রাস্তা আটকেছে। নাবিলা রেগে গাড়ি থেকে নেমে বলে,

  • হেই ওয়াট দ্যা হেল? আর ইউ ম্যাড?
    গাড়ি থেকে যে বেরিয়ে আসে। তাকে দেখে নাবিলা ভয় পেয়ে যায়!

নাবিলাঃ স ডালিম?
ডালিম আগের থেকে যেমন হিংস্র হয়েছে। তেমন কিউটও হয়েছে নাবিলা হা করে তাকিয়ে আছে।
ডালিমঃ যাক চিনেছো তাহলে?
বলে ডালিম এগোতে থাকে। নাবিলা ব্রিজের রেলিং ধরে আছে। ডালিম নাবিলা’র সামনে এসে বলে,

  • ভালবেসেছি তোমাকে বিনিময়ে। তুমি আমাকে ধোকা দিয়েছো। ওয়াও জান তুমিতো আগের থেকে হট, সেক্সি হয়ে গিয়েছো!
    নাবিলাঃ সাট আপ আমাকে যেতে দাও।

ডালিমঃ যাবেতো তবে উপরে!
নাবিলা ভয়ে ভয়ে বলে,

  • মা মা মানে?
    ডালিম নিজের পিস্তল বের করে। নাবিলা’র থেকে একটু দুরে গিয়ে তাক করে বলে,
  • তোর জন্য আমি দাদু কে হারিয়েছি। তুই আমার বিশ্বাস ভেঙেছিস। আমি বলেছিলাম নিজেকে যে তুই আমাকে ছেড়ে গেলে। আমি তোকে মেরে ফেলবো সো গুড বাই।
    নাবিলা মুচকি হেসে বলে,
  • তুমি আমাকে মারবে না আমি জানি।
    কিছুক্ষণে’র মাঝেই নাবিলা’র ধারনা ভুল প্রমানিত হয়। যখন একটা বুলেট ওর বুকে লাগে। নাবিলা ছলছল চোখে ডালিম কে বলে,
  • তুমি আমাকে মেরে ফেললে?

আরো একবার নাবিলা কে গুলি করে। নাবিলা ব্রিজ থেকে নিচে পড়ে যায়। ডালিম হাটু গেড়ে বসে পড়ে।

  • আমি আরো একটা কথা বলেছিলাম। তোমাকে মেরে আমিও মরে যাবো!
    ডালিম উঠে দাড়িয়ে নিজের বুকে গুলি ধরে। এরপরই আরো একটা গুলির আওয়াজে। সবকিছু স্তব্ধ হয়ে যায় রাস্তায় পড়ে আছে ডালিম। সারা শরীর রক্তে ভিজে আছে।

পর্ব ১১

৬ মাস পর!
বেলকনিতে রাতের আধারে। দাড়িয়ে আছে নাবিলা স্থির দৃষ্টি। আকাশের সুন্দর চাঁদটার দিকে। চোখের কোনা বেয়ে গড়িয়ে পড়ছে পানি। আজকাল এটাই যেন নিয়তি হয়ে গিয়েছে। আজকাল খুব কান্না পায় নাবিলা’র। কান্না পাবেনাই বা কেন? ডালিম যে নিখোজ হ্যা সেই রাতের পর। নাবিলা বেঁচে গেলেও ডালিম কে আর পাওয়া যায়নি। সেই রাতে নাবিলা যখন ব্রিজের নিচে পড়ে। তখন ব্রিজের নিচে একটা নৌকা ছিলো। আর নাবিলা গিয়ে সেই নৌকার উপর পড়ে। আর নৌকাওয়ালা নাবিলা কে চিনতো।

নাবিলা মাঝে মাঝেই রফিক কে নিয়ে। নৌকায় ঘুরতে যেতো নৌকাওয়ালা। মানুষ ডেকে নাবিলা কে হসপিটালে নিয়ে যায়। আর হসপিটালের ডক্টর নাবিলা’র বাবা কে ফোন দেয়। এরপর সবাই হসপিটালে চলে আসে। গুলি নাবিলা’র বুকে লাগায় অবস্থা খারাপ ছিলো। ডক্টররা হাল ছেড়ে দিয়েছিলো। ঠিক সেই সময় নাবিলা জোড়ে নিঃশ্বাস নেয়। ডক্টররা আবার ট্রিটমেন্ট শুরু করে। কিন্তু নাবিলা কোমায় চলে যায়।

নাবিলা কে নিয়ে সিঙাপুর চলে যেতে বলে, আল্লাহ’র রহমাতে সিঙাপুর নেয়ার। ২মাস পরই নাবিলা’র সেন্স আসে। আর সেন্স আসার পর বাংলাদেশে এসে। জানতে পারে ডালিম নিখোজ। জুন মাসের ২২ তারিখ রাত থেকে। নাবিলা’র মনে পড়ে যায় এই রাতেই। ডালিম ওকে গুলি করেছিলো। আর এটাও মনে পড়ে ও ব্রিজ থেকে পড়ে যাওয়ার পর। সাথে সাথে ও সেন্স হারায়নি।

তাই ও ব্রিজের উপরে আরো একটা। গুলির আওয়াজ শুনতে পেয়েছিলো। এরপর নাবিলা সেন্সলেস হয়ে যায়। ২মাস পর যখন সেন্স আসে নাবিলা’র। আর ও যখন জানে ডালিম নিখোজ। তখন নাবিলা ডালিম’দের বাড়ি গিয়েছিলো। কিন্তু বাড়ি কেউ নেই জনমানব শূন্য। বাইরে থেকে তালা মারা যে সেটা নয়। জনমানব শূন্য মানে ডালিম বা ওর কেউ নেই। আছে শুধু কেয়ারটেকার ইয়াসিন চাচা। আর ইয়াসিন চাচা সবসময় চেপে যায়। ডালিম কে নিয়ে কিছু জানতে চাইলেই। উনি মুখ লুকিয়ে কান্না করে চলে যায়। নাবিলা’র ব্যাপারটা ভাল লাগেনা।

নাবিলাঃ কেন সেই রাতে আমাকে। তুমি মারতে চেয়েছিলে? কেন গুলি করেছিলে? আর গুলি করে কোথায় চলে গেলে?
নাবিলা কান্না করতে করতে বলে, হয়তো ও মাফিয়া ডালিম খাঁন কে ঘৃনা করতো। কিন্তু সায়ন আহমেদ কে তো ভালবাসতো। ডালিম’ই তো সায়ন সেজেছিলো!
নাবিলাঃ কেন আমার জীবনটা এমন হলো? যাকে ভালবাসলাম তাকেই ঘৃনা করতে হলো। আসলে কি ঘৃনা করতে পেরেছি? না পারিনি তাহলে আজ তার জন্য কাঁদতাম না। আল্লাহ আমি জানিনা কোথায় ডালিম। কিন্তু তুমি ওকে ভাল রেখো প্লিজ।

নাবিলা বেলকনি থেকে এসে। বিছানায় বসে ভাবলো কাল। আবার ইয়াসিন চাচার কাছে যাবে। আর কাল জেনেই ছাড়বে ডালিম কোথায়?
এদিকে নাবিলা’র সব কথা। ওর মা শুনে খুব কষ্ট পায়। নিজের মেয়ের এভাবে কান্না। কোনো মা পারবে না সহ্য করতে। উনি গিয়ে ইমরান চৌধুরী কে সব বলে,
পরেরদিন নাবিলা গাড়ি নিয়ে। ডালিম’দের বাড়ি চলে আসে। এসেই ইয়াসিন চাচা কে ডাকে।
ইয়াসিন চাচাঃ বৌমা তুমি?

নাবিলা ডালিমে’র বউ তাই বৌমা বলে, আর নাবিলা ও কিছু বলেনা!
নাবিলাঃ চাচা আমি তো তোমার মেয়ের মতো বলো?
ইয়াসিন চাচাঃ হ্যা মা আমি তোমাকে। সবসময় আমার মেয়ের মতো ভাবি।
নাবিলাঃ তাহলে আজ একটা সত্যি বলবে চাচা?
ইয়াসিন চাচাঃ কি সত্যি?

নাবিলাঃ আগে কথা দাও সত্যি বলবে!
ইয়াসিন চাচাঃ কথা দিলাম সত্যি বলবো।
নাবিলাঃ ডালিম কোথায় চাচা?

ওমনি ইয়াসিন চাচার মুখ কালো হয়ে যায়। চোখের কোনে পানি ছলছল করছে। নাবিলা ইয়াসিন চাচার হাত ধরে বলে,

  • চাচা আজ আমাকে বলো। আমি আর পারছি না এভাবে। প্লিজ বলো কোথায় ডালিম?
    ইয়াসিন চাচাঃ সত্যিটা তুমি মানতে পারবে না মা।

নাবিলা ভয় পেয়ে যায় কাঁপা গলায় বলে,

  • তুমি ব বলো চা চাচা।
    ইয়াসিন চাচাঃ ছোট সাহেব আর নেই মা!
    নাবিলা স্তব্ধ হয়ে যায়। চেচিয়ে বলে ওঠে।
  • এসব কি বলছো ইয়াসিন চাচা?

ইয়াসিন চাচাঃ হ্যা মা ৬ মাস আগেই। গুলি লেগে উনি মারা গিয়েছে। ওনার শরীরে মোট ৬টা গুলি লেগেছিলো। ডক্টর ৫টা গুলি বের করলেও। ওনার মাথায় যেই গুলি লেগেছিলো। সেটা নাকি বের করতে পারেনি। তাই ওনাকে লন্ডন নিয়ে যায়। কিন্তু ১ সপ্তাহ পর ওনার লাশ আনে বাড়ি!
নাবিলা’র মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ে। নাবিলা জোড়ে কান্না করতে করতে বলে,

  • না এটা হতে পারেনা তুমি মিথ্যে বলছো!
    ইয়াসিন চাচাঃ মিথ্যে না আমার সাথে চলো বুঝবে।

নাবিলাঃ কোথায় যাবো?
ইয়াসিন চাচাঃ চলো গেলে জানতে পারবে!
ইয়াসিন চাচা নাবিলা কে নিয়ে। ডালিম’দের পারিবারিক কবরস্থানে যায়। নাবিলা চারপাশে ঘুরে ঘুরে দেখছে। একটা কবরে চোখ যায় যেটাতে লেখা। মৃত খলিল খাঁন ডালিমে’র দাদুভাইয়ের কবর। একটা কবরের সামনে এসে ইয়াসিন চাচা বলে,

  • এটা দেখো বৌমা!

উনি সরে যায় আর নাবিলা যা দেখে। তা দেখে ওর বুঝতে বাকী থাকেনা। যে ইয়াসিন চাচা যা বলেছে সব সত্যি। নাবিলা চিৎকার করে বসে পড়ে। ওই কবরে লেখা আছে মৃত ডালিম খাঁন আয়াশ। আর মরার তারিখও লেখা। জুন মাসের ২৯তারিখ। নাবিলা চিৎকার করে কান্না করছে।
নাবিলাঃ ডালিম এটা হতে পারেনা। আমি কেন বুঝলাম না তোমাকে? কেন তোমাকে রেখে চলে গেলাম? ডালিম তুমি না আমার চোখের। পানি সহ্য করতে পারোনা? দেখোনা আমি কান্না করছি। তুমি মুছে দেবেনা বলো? তুমি কি করে মরতে পারো? তুমি মরতে পারোনা ডালিম!

নাবিলা কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়ে। সিয়াম ও চলে আসে কারন সিয়াম। অনেকক্ষণ আগেই নাবিলা কে ফলো করে এসেছে। সিয়াম দৌড়ে গিয়ে নাবিলা কে ধরে। নাবিলা সিয়ামে’র বুকে ঢলে পড়ে। সিয়াম নাবিলা কে কোলে নিয়ে গাড়িতে শুইয়ে। তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যায়।
সিয়ামঃ ডক্টর আমার বোন?
ডক্টরঃ মানসিক চাপ থেকে উনি সেন্সলেস হয়েছে। প্রেশার তো একদম লো শরীরও উইক। ওনাকে ঠিকমত খাওয়াবেন!
সিয়ামঃ জ্বি ডক্টর।

সিয়াম নাবিলা কে নিয়ে বাড়ি যায়। বাড়ি নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দেয়। সবাই চলে এসেছে নাবিলা’র রুমে। বাড়ি আনার পরই নাবিলা’র সেন্স আসে। নাবিলা ফুপিয়ে ফুপিয়ে কাঁদছে। সবাই অস্থির হয়ে পড়ে ওর কান্নায়!
আরাফঃ বোন কেন কাঁদছো?
ইমনঃ মিষ্টি বলো প্লিজ কেন কাঁদছো?
কবিরঃ মিষ্টি সোনা বলো না।
ইমরান চৌধুরীঃ মামনি কেউ কিছু বলেছে?
সিয়ামঃ পাপা আমি বলছি!

সবটা শুনে সবাই হতবাক।
আরাফঃ ওয়াট কি বলছিস তুই?
কবিরঃ ডালিম মারা গিয়েছে?
সিয়ামঃ হ্যা ৬মাস আগেই আর তাই। মিষ্টি কলিজা কাদছে!
কণা চৌধুরীঃ ছেলেটা মরে গেলো?

ইমনঃ মাম্মা আমিতো বিলিভই করতে পারছি না।
নাবিলাঃ এই সব আমার জন্য হয়েছে। ডালিমে’র মৃত্যুর জন্য আমি রেসপন্সিবল। ও আমাকে সত্যি ভালবাসতো তবুও। আমি ওকে ছেড়ে গেলাম!
কণা চৌধুরীঃ এখন বুঝে কি হবে?
আরাফঃ কিন্তু বোন তোমাকে তো। ডালিম গুলি করেছিলো সেদিন।
কবিরঃ তবুও তুমি ওকে নিয়ে ভাবছো?
ইমনঃ একদম তাই কেন ভাবছো মিষ্টি?

নাবিলাঃ কারন ডালিম আমার স্বামী!
বলে নাবিলা আবার কাঁদতে থাকে। সবাই কে রুম থেকে চলে যেতে বলে, বাধ্য হয়ে সবাই চলেও যায়। নাবিলা হাটুতে মুখ গুজে কান্না করছে।
এভাবে কেটে গিয়েছে আরো ১০দিন। নাবিলা কে নিয়ে সবাই এখন টেনশনে আছে। ঠিকমত খায়না রুমের দরজা দিয়ে বসে থাকে। আগে কান্না করলেও কাউকে বুঝতে দিতোনা। সবার সামনে ঠিকই হাসি মুখে থাকতো। এখন তো জোড়ে জোড়ে কান্না করে ওঠে। যখন বুকের ভেতরে কষ্টটা বেশী লাগে। তখন আর সইতে না পেরে চিৎকার করে কান্না করে। নাবিলা’র বাবা মেয়ে কে নিয়ে। টেনশন করে অসুস্থ হয়ে গিয়েছে!

ড্রয়িংরুমে বসে আছে সবাই। এরমাঝে সৌহাদ্র আসে সৌহাদ্র কে দেখে। সিয়াম আর আরাফ চিনতে পারে তাই বলে,

  • সৌহাদ্র তুমি?
    সৌহাদ্রঃ হ্যা গতকাল রাতেই এসেছি!
    ইমরান চৌধুরীঃ ও কে সিয়াম?

সিয়ামঃ পাপা ও নাবিলা’র ফ্রেন্ড। বাট ও নাবিলা’র ৩বছরের সিনিয়র।
সৌহাদ্রঃ আসসালামু আলাইকুম আঙ্কেল!
ইমরান চৌধুরীঃ ওয়ালাইকুম আসসালাম।
সৌহাদ্র এদিক ওদিক তাকাচ্ছে। নাবিলা কেই খুজছে না পেয়ে বলে,

  • সিয়াম ভাইয়া নাবিলা কোথায়?
    সবাই চুপ হয়ে যায়। সৌহাদ্র আবার জিগ্যেস করে।
    আরাফঃ নাবিলা ওর রুমে আছে!

সৌহাদ্রঃ ওকে ডেকে দাও প্লিজ।
সিয়ামঃ ও আসবে না!
সৌহাদ্র অবাক হয়ে বলে,

  • কেন ওকি আমার সাথে কথা বলতে চায়না?
    সিয়ামঃ সৌহাদ্র নাবিলা’র সম্পর্কে। তুমি অনেক কিছুই জানোনা!
    সৌহাদ্রঃ কি জানিনা?
    আরাফঃ আগে তুমি বসো এরপর বলছি।

সৌহাদ্র বসে সিয়াম সব বলতে শুরু করে। সব শুনে সৌহাদ্র শকড হয়ে বলে,

  • নাবিলা ম্যারিড?
    ইমনঃ হ্যা ম্যারিড।
    সৌহাদ্রঃ আই ডোন্ট কেয়ার। নাবিলা’র অতীতে কি ছিলো। আমি যাচ্ছি ওর কাছে ওর রুম?
    কণা চৌধুরীঃ শিরি দিয়ে উপরে উঠে। একটু এগিয়ে রাইট সাইডে!
    সৌহাদ্রঃ থ্যাংক ইউ আন্টি।

সৌহাদ্র উপরে নাবিলা’র রুমের সামনে গিয়ে নাবিলা কে ডাকে!
নাবিলাঃ প্লিজ চলে যাও আমি একা থাকতে চাই।
সৌহাদ্রঃ নাবিলা ওপেন দ্যা ডোর। ইটস মি ইউআর বেস্ট ফ্রেন্ড সৌহাদ্র!
নাবিলা অবাক হয়ে এসে দরজা খোলে। পরিবারের সবাই অবাক হয়ে যায়। হাজার চেষ্টা করলেও নাবিলা দরজা খোলেনা। আর সৌহাদ্র একবার বলাতে দরজা খুলে দিলো। কিন্তু নাবিলা তো দরজা খুলেছে সৌহাদ্র। এতদুর থেকে এসেছে তাই।
নাবিলাঃ সৌহাদ্র তুমি?

সৌহাদ্রঃ আগে সরো রুমে যেতে দাও!
রুমে গিয়ে সৌহাদ্র হা করে তাকিয়ে আছে। সম্পূর্ণ রুম অগোছালো বেডশিট ফ্লোরে। মোটকথা গরুর গোয়াল মনে হচ্ছে।
সৌহাদ্রঃ ওয়াট দ্যা হেল?
নাবিলাঃ একচুয়েলি!
সৌহাদ্রঃ আমি সব জানি কোনো ব্যপার না। ওয়েট আমি সব গুছিয়ে দিচ্ছি।
নাবিলাঃ আরে না আমি করে নেবো!

সৌহাদ্রঃ আমি করছি।
সৌহাদ্র এক এক করে সব গোছায়। নাবিলা অবাক হয়ে দেখছে!
নাবিলাঃ তুমি কি করে পারো?
সৌহাদ্রঃ আমি সব পারি। আর তোমার কি অবস্থা? তোমাকে এভাবে দেখলে। তোমার পরিবারের লোকের কষ্ট পায় তুমি বোঝোনা? নাবিলা তোমার ৩ভাই যারা তোমাকে এত ভালবাসে। তাদের কথা একবারও ভাববেনা? তোমার পাপা অসুস্থ তোমার টেনশনে জানো তুমি?
নাবিলাঃ কি বলছো পাপা অসুস্থ?

সৌহাদ্রঃ হ্যা যাও ফ্রেশ হয়ে এসো। আজকে তুমি নিচে যাবে।
নাবিলা একটা টি শার্ট। আর প্লাজু নিয়ে ওয়াসরুমে যায়। এরপর ফ্রেশ হয়ে এসে আয়নার সামনে গিয়ে। চুলগুলো একটা ঝুটি করে নিচে গিয়ে। ওর বাবা কে জড়িয়ে ধরে বলে,

  • আই এম সরি পাপা।
    ইমরান চৌধুরীঃ তুমি যে আমার কাছে এসেছো। এতেই আমি খুব খুশি!
    নাবিলা সবার সাথে কথা বলে, এরপর আবার রুমে চলে যায়।
    সিয়ামঃ সৌহাদ্র আমি তোমাকে যা জিগ্যেস করি। তুমি তার সঠিক উত্তর দেবে!
    সৌহাদ্রঃ হ্যা শিওর বলো।

সিয়ামঃ তুমি কি নাবিলা কে পছন্দ করো?
সৌহাদ্রঃনা!
সিয়ামঃ তাহলে এতকিছু কেন করলে?
সৌহাদ্রঃ কারন আমি নাবিলা কে ভালবাসি।
সবাই অবাক হয়ে যায়!
আরাফঃ সব জেনেও এটা বলছো?

সৌহাদ্রঃ হ্যা ভাইয়া আপনারা রাজি থাকলে। আমি নাবিলা কে বিয়ে করবো।
কণা চৌধুরীঃ কিন্তু নাবিলা কি রাজি হবে?
এরমাঝে ইমরান অসুস্থ হয়ে পড়ে!
ইমনঃ পাপা কি হলো?
চেঁচামেচি শুনে নাবিলা চলে আসে। এসে দেখে এই অবস্থা। ইমরান চৌধুরী কে তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যায়। নাবিলা সবথেকে বেশী কাঁদছে। ডক্টর ওনাকে ভেতরে নিয়ে যায়। ১ঘন্টা পর ডক্টর বেরিয়ে আসে!
সিয়ামঃ ডক্টর আমার পাপা?
ডক্টরঃ উনি ব্রেইন স্ট্রোক করেছে।
ইমনঃ ওয়াট? কেমন আছে পাপা?

ডক্টরঃ দেখুন এখন উনি ঠিক আছে। কিন্তু ওনাকে কোনোরকম টেনশন দেয়া যাবেনা। ওনাকে কোনো চাপ দেয়া যাবেনা। তাহলে কিন্তু ওনার বড় ক্ষতি হতে পারে!
নাবিলাঃ না ডক্টর আমরা পাপা কে দেখে রাখবো।
কণা চৌধুরীঃ আমরা কি ভেতরে যাবো?
ডক্টরঃ হ্যা যান!
সবাই ভেতরে আসে নাবিলা গিয়ে। ইমরান চৌধুরী কে জড়িয়ে ধরে।
ইমরান চৌধুরীঃ তুমি কি চাও আমি মরে যাই?
নাবিলাঃ পাপা এসব কি বলছো? আমি এসব কেন চাইবো?

ইমরান চৌধুরীঃ তাহলে আমি যা বলবো তুমি করবে?
নাবিলাঃ করবো পাপা তুমি বললে জীবনও দিয়ে দেবো!
ইমরান চৌধুরীঃ জীবন দিতে হবেনা। তুমি সৌহাদ্র কে বিয়ে করো।
নাবিলা ওর বাবা কে ছেড়ে দিয়ে বলে,

  • এসব কি বলছো পাপা?

ইমনঃ মিষ্টি রাজি হয়ে যাও। ডক্টর কি বলেছে মনে নেই?
নাবিলাঃ আল্লাহ এখন আমি কি করবো? [মনে মনে]
নাবিলা’র বাবা আবার অসুস্থ বোধ করে। ভয় পেয়ে নাবিলা বলে ওঠে।

  • আমি রাজি পাপা। তুমি যা বলবে আমি তাই করবো!
    বলে নাবিলা বেরিয়ে গিয়ে কান্না করতে থাকে।
    সিয়ামঃ পাপা তুমি কি সত্যি অসুস্থ?
    ইমরান চৌধুরীঃ মানে?

সিয়ামঃ নাকি মিষ্টি কলিজা কে। বিয়েতে রাজী করানোর জন্য নাটক করলে?
ইমরান চৌধুরীঃ সিয়াম কি বলছো তুমি?
সিয়ামঃ সরি পাপা!
২দিন পর ইমরান চৌধুরী কে বাড়ি নিয়ে যায়। সৌহাদ্র ওর পরিবার কে সব বলে, ওনারা এসে জানুয়ারি ১০তারিখে বিয়ে ঠিক করে। আজ ২তারিখ আর ৮দিন পর। বিয়ের শপিং শুরু করে দিয়েছে। দেখতে দেখতে ৬দিন চলে যায়। এবার আর অত হৈ চৈ নেই। নাবিলা বারন করে দিয়েছে। তবুও গায়ে হলুদ করছে আজ গায়ে হলুদ।

  • না না আমি ওটা নেবোনা!

এভাবেই বাচ্চাদের মতো। প্রলাপ বকছে একটি ছেলে। কারন ওকে ইনজেকশন দিতে চাইছে।
ছেলেটিঃ আমি পাগল না আমি ওটা নেবোনা!
যে ইনজেকশন দিতে চাইছে সে একজন ডক্টর।

  • এটা নাও তুমি ঠিক হয়ে যাবে। তুমিতো একজন পাগল!
    ছেলেটিঃ নো আই এম নট ম্যাড।
    বলে ছেলেটি ছুটতে থাকে। তাই দেখে ডক্টর কাউকে ডাক দেয়। সাথে সাথে কয়েকজন ভেতরে আসে। তাদের দেখে ছেলেটি ভয়ে ঢোক গিলে বাচ্চাদের মতো বলে,
  • প্লিজ আমাকে ছেড়ে দাও। আমি ওটা নেবোনা ওটা নিলে। আমার শরীর খুব ব্যথা করে।
    ডক্টরঃ তোমরা ওকে ধরো!

সবাই গিয়ে ছেলেটি কে চেপে ধরে। আর ডক্টর ইনজেকশন পুশ করে দেয়। এটা এমন একটা ইনজেকশন। যেটা দিলে শরীর অকেজো হয়ে যাবে। কিন্তু ওনারা বোঝেনা এখনও হচ্ছেনা কেন? এদিকে ইনজেকশন দেয়ার পর ছেলেটি ছটফট করছে। আস্তে আস্তে চোখ বন্ধ করে ঢলে পড়ে।
আজকে নাবিলা’র বিয়ে। সবাই নিজেদের কাজে ব্যস্ত। জানালার গ্রিল ধরে দাড়িয়ে আছে নাবিলা। চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। একটুপর নাবিলা কে সাজাতে আসে। বর আসার কথা শুনে সবাই নিচে চলে যায়। রফিক কেও সাথে নিয়ে যায়। নাবিলা বিছানা থেকে উঠে যায়। একটুপর আবার বিছানায় বসে। চোখের পানি মুছে মুচকি হাসে। সবাই আবার উপরে আসে নাবিলা কে নিতে!


পর্ব ১২

নাবিলা কে নিয়ে স্টেজে আসে। নাবিলা স্থির হয়ে সবার সাথে যায়। স্টেজে নিয়ে নাবিলা কে বসিয়ে দেয়। একটুপর কাজী চলে আসে। কাজী এসে সৌহাদ্র’র কাছে যায়। সৌহাদ্র কে কবুল বলতে বললে। সৌহাদ্র সাথে সাথে বলে দেয়। এবার আসে নাবিলা’র কাছে। নাবিলা কে কবুল বলতে বলছে। নাবিলা এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। বারবার বলতে বলার পরও যখন বলেনা। তখন ইমরান চৌধুরী এসে বলে,

  • মামনি কবুল বলছো না কেন?

এরমাঝে গুলির শব্দ শুনে। সবাই পিছনে তাকায় প্রায় ৩০জন হবে। যাদের গায়ে কালো পোশাক। সবাই বাইকে বসে আছে হাতে পিস্তল। সবাই বাইক থেকে নেমে রাস্তা করে দেয়। আর তখন সেখানে ঢোকে মাস্ক পড়া একজন। যার হাতে পিস্তল এখনো ধোয়া উড়ছে। কালো শার্ট পড়া তার উপরে কালো জ্যাকেট। কালো জিন্স প্যান্ট চোখে কালো সাইন গ্লাস। মুখে কালো মাস্ক পড়া। ছেলেটা স্টাইল করে ভেতরে ঢোকে। ভেতরে ঢুকেই একটানে মাস্ক খুলে ফেলে দেয়। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে।
নাবিলাঃ ডালিম?

নাবিলা শকড হয়ে তাকিয়ে আছে। হ্যা ইনি আর কেউ না ডালিম খাঁন। ডালিম ভেতরে গিয়ে নাবিলা’র বাবা কে বলে,

  • ওয়াট দ্যা হেল ফাদার ইন ল? আমার ওয়াইফ কে আরেকজনের সাথে। আপনারা বিয়ে দিতে চাইছেন? দিস ইজ নট ফেয়ার রাইট?
    ইমরান চৌধুরীঃ তুমি বেঁচে আছো?
    ডালিমঃ কেন মরে যাওয়ার কথা ছিলো আমার?

বলেই ডালিম হেসে দেয়। এরপর দাতে দাত চেপে বলে,

  • একমাএ আল্লাহ ছাড়া কারো ক্ষমতা নেই। এই ডালিম খাঁন কে মারার। সবটা তো আমি বের করবোই। আমার ওয়াইফ কে বিয়ে দেবেন। আর আমি চুপচাপ থাকবো? নো স্টেজে যে আছে ও আর কারো না। মাফিয়া ডালিম খাঁনের ওয়াইফ। ওকে কি করে বিয়ে দেবেন?
    ডালিম ধীর পায়ে নাবিলা’র কাছে যায়। মুচকি হাসি দিয়ে বলে,
  • আমি একজন মাফিয়া। তাই তুমি আমাকে ঘৃনা করো। আচ্ছা একটা কথা বলো তো। মাফিয়া হয়ে কেউ জন্মায়?
    নাবিলা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে।

ডালিমঃ এই আমি ১০বছর আগেও। মারামারি ভয় পেতাম অথচ আজ আমি। হ্যা আমি একজন মাফিয়া কিন্তু কেন? কখনো জানতে চেয়েছো তুমি? তুমি না আমাকে ভালবাসতে? যখন সায়ন হয়েছিলাম তখন? সেই ভালবাসা থেকে একবার জানতে চাইতে। কিন্তু না আমার সাথে প্রতারনা করে। আমাকে ধোকা দিয়ে চলে গেলে। আমি এতটা ভেঙে পড়েছিলাম। সেটা সহ্য করতে না পেরে আমার দাদু মারা গেলো। তুমি জানো? আমি কেন মাফিয়া হয়েছিলাম? তাহলে শোনো ১০বছর আগে। আমি আমার মম, ড্যাড আর আমার।

একমাএ আদরের বোন শ্রেয়া। একটা হাসি খুশি পরিবার ছিলাম আমরা। আমার বোন ছিলো আমার ২বছরের ছোট। দাদু তখন বিদেশে চাচ্চুর কাছে ছিলো। সবকিছু ভাল চলছিলো। ১দিন আমি বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিয়ে বাড়ি যাই। বাড়ি ঢোকার সাথে সাথে কেউ আমাকে। পিছন থেকে আমার মাথায় আঘাত করে। সাথে সাথে আমি সেন্সলেস হয়ে যাই। যখন সেন্স ফেরে নিজের মম, ড্যাড। আর একমাএ আদরের বোনের। মৃত দেহ আমার চোখের সামনে দেখতে পাই। ওরা আমার বোন কে ধর্ষন করে মেরে ফেলেছিলো।

আমি আমার পরিবারের বিভৎস দেহ দেখেছিলাম। শুধু তাইনা ওরা একটা ভিডিও রেখে গিয়েছিলো। যেটাতে ওরা নিজেদের কাভার করে রেখেছিলো। যার জন্য আমি জানিনা ওরা কারা ছিলো? ভিডিওতে মম কে ছুড়ি দিয়ে মারতে দেখি। ড্যাড কে পিস্তল দিয়ে গুলি করে। আর আমার বোনেরটা ওসব দেখতে পারিনি। ওদের আমি নিজের হাতে দাফন করেছিলাম। রাস্তায় দাড়িয়ে কান্না করছিলাম আমি।

তখন আমার বয়স ছিলো ১৮। এরমাঝে একটা গাড়ি আমাকে ধাক্কা দেয়। আমি মুখ থুবরে রাস্তায় পড়ি। সেন্স আসার পর জানতে পারি। আমি ৫দিন সেন্সলেস ছিলাম কেউ একজন আমাকে বাঁচিয়েছে। আর যে বাঁচিয়েছিলো সে একজন মাফিয়া ছিলো। ওনার সাহায্যে আমিও হয়ে যাই একজন মাফিয়া। মাস পেরিয়ে চলে যায় বছর। আস্তে আস্তে আমি হিংস্র হয়ে যাই। এবার তুমি বলো আমার কি দোষ? আরে আমি সব পেয়েও হারিয়েছি। আমার জায়গায় আপনি থাকলে কি করতেন সিয়াম ভাইয়া? আরাফ ভাইয়া আপনি কি করতেন?

সবাই মাথা নিচু করে আছে। সবার চোখেই পানি ডালিম। কান্না করতে করতে বসে পড়ে বলে,

  • তুমিও আমাকে বুঝলে না জান? আমি মৃত জেনে বিয়ে করতে গেলে অন্য কাউকে? বাট জান বেঁচে তো আছি আমি। তোমার কাছে আসতে পারিনি কেন পরে বলবো।
    ডালিম হুট করে দাড়িয়ে। চোখ মুখ লাল করে দাতে দাত চেপে বলে,
  • কিন্তু আমি তো সেটা হতে দেবোনা। তুমি কি করে বিয়ে করবে?
    বলে নাবিলা কে টান দিয়ে। স্টেজ থেকে নামিয়ে বলে ওঠে!
  • আমার বউ কে আমি নিয়ে যাচ্ছি।
    নাবিলা কে টানতে টানতে নিয়ে যাচ্ছে!
    নাবিলাঃ স ডালিম আ আ আমার কথা।
    এরমাঝে নাবিলা কাশতে শুরু করে। কাশতে কাশতে মুখে হাত দেয়। মুখ দিয়ে গলগল করে রক্ত পড়ছে। নাবিলা ঠাস করে নিচে পড়ে যায়!
    ডালিমঃ জান কি হয়েছে র রক্ত।

নাবিলাঃ অ অনেক দে দেরী ক করে ফে ফেলেছো আসতে!
নাবিলা চোখ বন্ধ করে নেয়।
ডালিমঃ জাননননননন!
এদিকে সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে।


পর্ব ১৩

সবাই স্তব্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। ডালিম নাবিলা কে ঝাকছে। ডালিমে’র ঝাকুনিতে নাবিলা আবার পিটপিট করে তাকায়!
ডালিমঃ তুমি এটা কেন করেছো?
কাঁদতে কাঁদতে বলে ডালিম।

নাবিলাঃ তো তোমাকে ছা ছাড়া আ আর। কা কাউকে কি ক ক করে স স্বামী মানবো?
সবাই এবার দৌড়ে আসে!
সিয়ামঃ মিষ্টি কলিজা কি করলে তুমি?

সবার পাগল প্রায় অবস্থা। ডালিম নাবিলা কে কোলে তুলে নিয়ে। তাড়াতাড়ি গাড়িতে শুইয়ে ড্রাইভ করতে থাকে। ড্রাইভ করে হসপিটালে গিয়ে পৌছায়। ডালিম নিজেই ডক্টর কিন্তু আজ। আজ কেন জানি ওর সাহস নেই কিছু করার। থরথর করে কাঁপছে ডালিম। চেচিয়ে ডক্টর কে ডাকতে থাকে ডক্টর এসে বলে,

  • কি হয়েছে ওনার?

ডালিমঃ ডক্টর ও বিষ খেয়েছে। প্লিজ ওকে বাঁচিয়ে দিন। আমি চাইলেও পারছি না ওয়াস করতে। কারন তখন তো খুব কষ্ট হয়। আমি পারবো না সেটা সহ্য করতে। আপনি ওকে বাঁচিয়ে দিন প্লিজ!

ডক্টর অবাক হয়ে দেখছে। ডালিম আবারও বলে ডক্টর তাড়াতাড়ি। নাবিলা কে নিয়ে ওটিতে যায়।

এদিকে সৌহাদ্র একই ভাবে দাড়িয়ে আছে ছাদে। ওখান থেকে চলে এসেছে। নাবিলা কে দেখতে যেতে চেয়েছিলো। কিন্তু ওর মা, বাবা যেতে দেয়নি। সৌহাদ্রে’র চোখ থেকে পানি পড়ছে। সৌহাদ্র ওর বাবা মায়ের একমাএ ছেলে। সেই সুবোধে আদরটা একটু বেশী। কখনো ওকে কষ্ট পেতে দেয়নি। আর সেই সৌহাদ্র আজ কান্না করছে!
সৌহাদ্রঃ কেন তাকেই ভালবাসলাম? যে আসলে আমার না। কোনদিন আমার ছিলো না হবে ও না। নাবিলা’র এই অবস্থার জন্য আমি দায়ী। আমাকে বিয়ে করবে না বলে, ও সুইসাইড করতে চেয়েছিলো। আমিতো ওকে ভালবাসি তাহলে। কেন আমি ওকে বুঝলাম না? ও শুধু ডালিম কে ভালবাসে।
এদিকে যাদের কাছে এতদিন। ডালিম আটকা ছিলো ডালিম চলে যাওয়ায়। তারা সবকিছু ভেঙে চুরে ফেলছে!

  • কি করে চলে গেলো ও?

ডক্টরঃ সবাই কে মেরে চলে গিয়েছে।

  • ওকে না ইনজেকশন দেয়া হতো? এই ৬মাসে তো ওর প্যারালাইজড হয়ে যাওয়ার কথা। তাহলে কেন হলোনা? কি ইনজেকশন দিতে হ্যা?
    ডক্টরঃ সেটা আমিও বুঝতে পারছি না!

আরেকজনঃ আপনি কোথায় ছিলেন?

  • আমি কি তোমাদের সাথে থাকতাম? যাদে ডালিম আমাকে চিনে ফেলে?
  • বাট এবার কি হবে?
  • এবার যা হওয়ার তাই হবে। ডালিম কে তো মরতেই হবে। ওর জান ওর বউ না?
  • হ্যা বউ বলতে পাগল।
  • এবার ওর জানেই আঘাত করবো!
  • জানে কি আগে আঘাত করোনি?
    বলে হেসে দেয়।
    হসপিটালে বসে আছে ডালিম। তবে শান্ত হয়ে বসে নেই। একটুপর পর গিয়ে ওটির দরজা ধাক্কাচ্ছে। কতক্ষণ বসে থেকে আবারও গেলো!
    সিয়ামঃ ডালিম কি করছো?
    ডালিমঃ ভাইয়া ওরা বের হচ্ছেনা কেন?
    আরাফঃ ডালিম কাম ডাউন।

ডালিমঃ পারছি না আমি আপনারা কি হ্যা? কেন ওকে বিয়ে দিতে গেলেন?
ডালিম কে সবটা বললো, ডালিম তো বিশ্বাস করতে পারছে না!
ডালিমঃ জান আমার জন্য কান্না করতো?
ইমনঃ শুধু কান্না করতো না। ঠিকমত খেতো না দরজা দিয়ে বসে থাকতো।
সিয়ামঃ আমি এটা বুঝতে পারছি না। তুমিতো বেঁচে আছে তাহলে তোমাদের। পারিবারিক কবরস্থানে যেই করব। যেটাতে লেখা মৃত ডালিম খাঁন আয়াশ ওটা কার করব? আর তোমার নামই বা কেন লেখা?

ডালিমঃ হোয়াট?
ইমনঃ হ্যা একদম তাই!
এরমাঝে ডক্টর বেরিয়ে আসে।
ডালিমঃ ডক্টর আমার ওয়াইফ?
ডক্টরঃ ডোন্ট ওয়ারী আপনার ওয়াইফ। এখন ঠিক আছে বিষ বের করা হয়েছে। ওনাকে কেবিনে দিয়ে দিয়েছি। আপনারা চাইলে দেখা করতে পারেন!
ডালিম আগে যায় কেবিনে। নাবিলা’র গায়ে হসপিটালের পোশাক। ডালিম গিয়ে নাবিলা’র পাশে বসে নাবিলা’র হাত ধরে। নাবিলা আস্তে আস্তে চোখ খুলে তাকায়।
নাবিলাঃ ডালিম কোথায় চলে গিয়েছিলে তুমি?

ডালিমঃ যেখানেই যাই তোমার কি? তুমিতো আর আমাকে ভালবাসো না!
এরমাঝে বাকীরাও চলে আসে।
ইমরান চৌধুরীঃ তুমি কি করতে যাচ্ছিলে মামনি?
নাবিলাঃ বিয়েটা করা সম্ভব হতো না পাপা। তাই নিজেকে শেষ করতে চাচ্ছিলাম!
ইমরান চৌধুরীঃ এভাবে নিজের পাপা কে। অপরাধী করে দিতে চেয়েছিলে?
নাবিলাঃ না পাপা ওর জন্য না।

সবাই এটা ওটা বলছে। এবার কবির ডালিম কে বলে,

  • আচ্ছা সেই রাতে কি হয়েছিলো? আর তুমি এই ৬মাস কোথায় ছিলে?
    ডালিমঃ সেই রাতে জান কে। আমি গুলি করিনি।
    সবাইঃ হোয়াট?
    নাবিলাঃ কি বলছো তুমি?

ডালিমঃ যাকে ভালবাসি তাকে কি করে মারি?
নাবিলাঃ কিন্তু তুমিতো পিস্তল তাক করেছিলে!
ডালিমঃ হ্যা তোমার গুলি লাগার পর। আমি এতটাই ভেঙে পড়েছিলাম। নিজেকে পাগল পাগল লাগছিলো। যার কারনে আমি খেয়ালই করিনি। গুলি আমার পিস্তল থেকে বেরিয়েছে কি না। তুমি ব্রিজের নিচে পড়ে যাও। আর তারপর যা হয়।

অতীত

নাবিলা ব্রিজের নিচে পড়ে যায়। আর ডালিম যখনি নিজেকে গুলি করতে যাবে। কোথা থেকে একটা গুলি এসে। ডালিমে’র পিঠে লাগে ডালিম আহ করে ওঠে। এরপর আরো একটা গুলি ওর পিঠে লাগে। ডালিম ঘুরে দেখতে চায় আসলে কে? ডালিম দেখে সেই ৭বছর আগের মতো। নিজেদের কাভার করা ৩জন লোক।
ডালিমঃ কারা তোমরা?

বলতে না বলতেই ডালিমের মাথায়। নিজেদের হাতে থাকা হকিষ্টিক দিয়ে। একজন আঘাত করে বারি মারে। সাথে সাথে ডালিম মাথা চেপে ধরে। আর পিছন থেকে আবার বারি মারে। ডালিম মাথা ধরে দাড়িয়ে আছে। মাথা থেকে রক্ত পড়ছে। এরপর ওরা ডালিমে’র বুকেও আর পেটে গুলি করে। ডালিম ঠাস করে মাটিতে পড়ে যায়। লোকগুলো ওখান থেকে চলে যায়। ডালিম নিজের পিস্তল ধরে বলে,

  • আমি তোমাকে গুলি করেছি। তাই আমার কথামত নিজেকেও। আমার গুলি করা উচিত।
    ডালিম পিস্তলের ট্রিগার চেপে। নিজের বুকের বাম পাশে আবার গুলি করে। মোট ৫টা গুলি ডালিমে’র শরীরে বিদ্ধ হয়। ডালিম ট্রিগার চেপেই থমকে যায়। ও পিস্তল থেকে গুলি বের করে ফেলে। আর দেখে ৫টা গুলি ডালিমে’র বুঝতে বাকী থাকেনা। যে ওর পিস্তল থেকে নাবিলা কে গুলি করা হয়নি। যারা ওকে গুলি করেছে তারাই। নাবিলা কে গুলি করেছে। কারন ও পিস্তলে ৬টা গুলি ভরে এনেছিলো। এদিকে ডালিম আস্তে আস্তে শরীর ছেড়ে দেয়। চোখদুটো বন্ধ করে ফেলে। রাস্তা দিয়ে ওর বডিগার্ড লোকমান যাচ্ছিলো। লোকমান ডালিম কে এভাবে দেখে। তাড়াতাড়ি হসপিটালে নিয়ে যায়। ডক্টর জানায় ডালিমে’র শরীর। গুলি দিয়ে ধরতে গেলে ঝাঝড়া হয়ে গিয়েছে। ৫টা গুলি শরীরে অবস্থা খুব খারাপ। ডক্টর গুলি বের করে দিয়েছে। ওকে লন্ডন নিয়ে যেতে হবে।

লোকমানে’র কাছে ডালিমে’র অনেক টাকা আছে। তাই কোনো প্রবলেম হয়না লোকমান ডালিম কে। কয়েকজন গার্ড সাথে নিয়ে লন্ডন চলে যায়। প্রথমে ওরা লন্ডনের “বারবিকন সেন্টার” যায়। এরপর ডালিম কে “দ্যা রোয়েল লন্ডন হসপিটালে” নিয়ে যায়। কিন্তু ওখানে নেয়ার মাএ ৬দিন পর। ডালিম গায়েব হয়ে যায় যেই ডক্টর ডালিম কে দেখছিলো। সেই ডক্টর সহ গায়েব হয়ে যায়। লোকমান পুলিশ কে জানায়। কিন্তু পুলিশও খুজে পায়না। যারা ডালিম কে নিয়ে যায়। ডালিমে’র সেন্স আসার পরই নেয়।

ডালিম ইচ্ছে করে সেন্সলেস হওয়ার আরাফনয় করে। কারন ও জানতে চায় কারা ওরা? এভাবে ডালিম ইচ্ছে করে ওদের সাথে থাকে। ওরা রোজ ডালিম কে ইনজেকশন দেয়। ডালিম সব বুঝতো তাই ও ইনজেকশন পাল্টে দিতো। ডালিম খাঁন যে লন্ডনেও রাজত্ব করতো। সেটা হয়তো ওরা জানতো না। এভাবে ৬মাস কেটে যায়। ডালিম লোকমানে’র সাথে যোগাযোগ রাখতো। আর লোকমান’ই জানায় যে নাবিলা’র বিয়ে ঠিক। ডালিম আর ওখানে থাকেনা। যারা ওইদিন ওখানে ছিলো তাদের মেরে। ওখান থেকে চলে আসে। ওর আর জানা হয়না যে কারা। ওকে আর নাবিলা কে মারতে চায়?

এখন

সবাই শকড হয়ে তাকিয়ে আছে।
ডালিমঃ দিনের পর দিন ওদের টর্চার। আমি মুখ বুজে সহ্য করেছি। শুধু জানার জন্য যে ওরা কারা? কারন আমি এটা বুঝতে পারছি। ওরাই আমার পরিবারের খুনি। আমি ওদের কাউকে ছাড়বো না!
ইমনঃ মাই গড এত বড় ষড়যর্ন্ত?
আরাফঃ যে বা যারা এসব করেছে। ওরা অনেক চালাক আচ্ছা ডালিম। তোমার মিথ্যে লাশ কে পাঠালো?
নাবিলাঃ আমি যদি খুব ভুল না হই। তাহলে যে এসব করেছে। সে আমাদের খুব কাছের কেউ।
ইমরান চৌধুরীঃ এখন এসব থাক। ডক্টর কে গিয়ে জিগ্যেস করো। নাবিলা কে আমরা বাড়ি নিতে পারবো কি না?
ডালিমঃ না আজকে নিতে হবেনা!

ইমরান চৌধুরীঃ ওকে।
পরেরদিন সকালে!
ইমরান চৌধুরীঃ মামনি চলো।
ডালিমঃ ওয়েট ও আমার সাথে যাবে!
ইমরান চৌধুরীঃ কিন্তু।
ডালিমঃ কোনো কিন্তু না!
ডালিম নাবিলা কে কোলে তুলে নেয়।
নাবিলাঃ আরে আমি যেতে পারবো!
ডালিমঃ আমি জানি।

নাবিলাঃ ডালিম আমাকে নামাও। সবাই তাকিয়ে আছে দেখো!
ডালিমঃ আমার বউ আমি কোলে নিয়েছি। আর তুমি চুপ করে থাকো। নাহলে কোল থেকে ফেলে দেবো।
নাবিলা ভয় পেয়ে চুপ হয়ে যায়। ডালিম মুচকি হেসে নাবিলা কে গাড়িতে বসিয়ে। গাড়ি স্টার্ট দিয়ে বাড়ি পৌছে যায়। বাড়িতে গিয়ে কলিংবেল বাজায়। ডালিম কে দেখে ইয়াসিন চাচা থ!
ইয়াসিন চাচাঃ ছোট সাহেব আপনি?
ডালিমঃ হ্যা এখন সরো যেতে দাও।
ইয়াসিন চাচাঃ আপনি বেঁচে আছেন?
ডালিমঃ কেন মরে যাওয়ার কথা ছিলো?

ইয়াসিন চাচাঃ তাহলে আমরা যাকে কবর দিলাম। সে কে ছিলো ছোট সাহেব?
ডালিমঃ আমি কি জানি?
বলে নাবিলা কে নিয়ে চলে যায়!

  • ইয়াসিন চাচা সব গুছিয়ে দাও। আর আগের সার্ভেন্টদের আসতে বলো।
    যেতে যেতে বলে যায় ডালিম। ইয়াসিন চাচা সবাই কে আসতে বলে, সবাই ডালিম কে দেখে চরম অবাক। ডালিম ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে। ড্রয়িংরুমে বসে পায়ের উপর পা তুলে। রিল্যাক্স মুডে আপেল খাচ্ছে। এদিকে নাবিলা ও ড্রয়িংরুমে চলে আসে। নাবিলা ডালিমে’র পাশে বসে ভ্রু কুঁচকে আছে!
    ডালিমঃ কি হলো?
    নাবিলাঃ আমি কি খাবো?
    ডালিমঃ আপেল খাও বেবী।
    নাবিলাঃ না আমি আপেল খাবোনা!
    ডালিমঃ তাহলে কি খাবে?

নাবিলাঃ তোর মাথা খাবো ডালিমে’র মাথা ফ্রাই।
বলে হনহন করে চলে যায়। ডালিম তো ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে তাকিয়ে আছে!
ডালিমঃ যাহ বাবা আমি কি করলাম?
কিছু একটা ভেবে উঠে দাড়ায় ডালিম। এরপর নিজেই রান্নাঘরে যায়।
সার্ভেন্টঃ স্যার আপনি এখানে কেন?
ডালিমঃ রান্নাঘর কি তোমার বাপের?

সার্ভেন্টরা তো ভ্যাবাচ্যাকা খায়। ডালিম যে এভাবে কথা বলতে পারে। ওদের কারো জানা ছিলোনা। আরেকজন সার্ভেন্ট বলে,

  • মানে স্যার আমরা বানিয়ে দিতাম।
    ডালিমঃ আমার বউ খাবে আমি বানাবো ওকে?
    ডালিম নুডুলস বানিয়ে নিয়ে যায়!
    ডালিমঃ জান দেখো আমি কি এনেছি?
    নাবিলাঃ এনেছো তো নুডুলস। এমন ভাবে বলছো আইসক্রিম এনেছো মনে হয়।
    ডালিম মিনমিন করে বলে,
  • খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে।
    নাবিলা নুডুলস নিয়ে খেতে শুরু করে। একবার গালে দিয়ে চোখ বড় বড় করে ফেলে!
    ডালিমঃ ভাল হয়নি?
    নাবিলাঃ মাই গড খুব ভাল হয়েছে। তুমি খেয়েই দেখো।
    ডালিম খুশি হয়ে যায়। নাবিলা’র পাশে বসে নুডুলস মুখে দেয়। নুডুলস মুখে দিয়ে নাবিলা’র মত। ডালিম ও চোখ বড় বড় করে ফেলে। ডালিম ওয়াসরুমে গিয়ে নুডুলস ফেলে দেয় মুখ থেকে। এরপর নাবিলা’র কাছে এসে বলে,
  • ইয়াক ছিঃ এটা নুডুলস হলো?
    নাবিলা ভ্রু কুঁচকে বলে ওঠে।
  • তো কে বানিয়েছে এই নুডুলস?
    ডালিম মুখ কাঁচুমাচু করে বলে,
  • আমি তো বানালাম।
    বলেই দাত কেলিয়ে তাকায়। আর নাবিলা ভ্রু কুঁচকে বুঝতে চাইছে। ডালিমে’র দাত কেলানোর কারন!

পর্ব ১৪

ডালিম দাত কেলিয়ে তাকিয়ে আছে। আর নাবিলা ভ্রু কুঁচকে বোঝার চেষ্টা করছে। ডালিমে’র দাত কেলানোর কারন!
নাবিলাঃ দাত কেলাচ্ছো কেন?
ডালিমঃ আমি কিছু একটা ভাবছি জান।
নাবিলাঃ কি ভাবছো?
ডালিম আস্তে আস্তে নাবিলা’র। একদম কাছে চলে আসে। নাবিলা ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে। ডালিম নাবিলা’র কোমর ধরে। নিজের আরো কাছে নিয়ে আসে!
নাবিলাঃ ককি কককরছো?
ডালিম নাবিলা’র গালে স্লাইড করতে করতে বলে,

  • ভাবছি বেবী আমাদের ফার্স্ট নাইট। এখনো কিন্তু হয়নি রাইট?

নাবিলা কাঁপতে কাঁপতে বলে,

  • হ্যা হহহয়নি তততো?
    ডালিমঃ হবে নাকি?
    চোখ টিপ মেরে বলে,
    নাবিলাঃ কিন্তু এখন তো দিন!
    ডালিম নাবিলা কে ছেড়ে। রাগী লুক নিয়ে তাকালো। নাবিলা হু হা করে হেসে দিলো। ডালিম রেগে গিয়ে বললো,
  • ইউআর জাস্ট টু মাচ। কত সুন্দর রোমান্টিক মুডে ছিলাম। আর তুমি নষ্ট করে দিলে?
    নাবিলাঃ তুমি যে কত রোমান্টিক। সেটা আমার জানা হয়েছে ওকে? বেরসিক বুড়ো একটা!

ডালিমঃ হোয়াট? হোয়াট আর সেয়িং? আমি বুড়ো? আমাকে কোনদিক দিয়ে বুড়ো লাগছে? বরং দেখো আমি আগের থেকে। আরো বেশী কিউট হয়ে গিয়েছি। হ্যান্ডসাম, ড্যাসিং, হট বয় আই এম ওকে?
নাবিলাঃ নিজের প্রশংসা নিজে করছো?
ডালিমঃ ইয়েস বিকজ ইটস ট্রু।
নাবিলাঃ নিজের প্রশংসা নিজে মানুষ কখন করে জানো?
ডালিমঃ কখন?
নাবিলাঃ যার প্রশংসা করার জন্য। কেউ থাকেনা তখন নিজের প্রশংসা। নিজেই করে যেমন তুমি!
ডালিমঃ ইউউ।

বলে নাবিলা কে তাড়া করলো। নাবিলা ও দৌড়াতে শুরু করলো। খাটের এপাশ থেকে ওপাশ। আবার ওপাশ থেকে এপাশ!
ডালিমঃ ওয়েট দাড়াও বলছি।
নাবিলাঃ পারলে ধরো!
বলে নাবিলা বিছানায় উঠলো। ওপাশে যাবে বলে ডালিম একটানে। নাবিলা কে বিছানায় ফেলে। নিজেও লাফ দিয়ে বিছানায় গেলো। নাবিলা’র দু হাত বিছানার সাথে চেপে ধরলো। নাবিলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছে।
ডালিমঃ এবার কোথায় পালাবে মাই লাভ?
নাবিলাঃ ছাড়ো আমাকে!
নাবিলা’র ঠোট কাঁপছে। যা ডালিম কে ক্রমশ কাছে টানছে। ডালিম আস্তে আস্তে নাবিলা’র। ঠোটের কাছে নিজের মুখ এগোচ্ছে। এবার নাবিলা’র ও কাঁপাকাঁপি শুরু হয়ে গিয়েছে।
নাবিলাঃ সসডালিম সসসসরো প্লিজ!

ডালিমে’র যেন কিছুই কানে যাচ্ছেনা।
নাবিলাঃ সসসডালিম তুতুতু!
আর কিছু বলার আগে। ডালিম নাবিলা’র ঠোটে ঠোট মেলালো। নাবিলা যেন পাথর হয়ে গিয়েছে। ডালিম নাবিলা’র হাত ছেড়ে। নাবিলা’র গালে হাত দিয়ে স্লাইড করছে। নাবিলা বিছানার চাদর খামচে ধরেছে। ডালিম কিস করেই যাচ্ছে। হঠাৎ নাবিলা কি মনে করে। ডালিম কে ধাক্কা মেরে সরিয়ে দিলো। ডালিম পাশে গিয়ে পড়লো। এরপর উঠে অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,

  • হোয়াট হ্যাপেন্ড? নাউ ইউ লাভ মি রাইট? সো হোয়াটস ইউআর প্রবলেম?
    নাবিলাঃ আই এম নট রেডি ফর দিস!
    ডালিমঃ মানে?
    নাবিলাঃ আমি এখনো এসবের জন্য তৈরী না।

বলে নাবিলা বেলকনিতে চলে গেলো। আর ডালিম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে!
ডালিমঃ তুমি কি কোনদিন আমাকে বুঝবে না? তুমি কি করে ভাবলে জান? তোমার পারমিশন ছাড়া আমি তোমার সাথে।
আর কিছু বললো না। চুপচাপ একপাশে বসে পড়লো। এরপর কিছু একটা ভেবে বললো!

  • হোয়াটস রং ইউথ ইউ ডালিম? কি করছিস তুই? তুই কি ভুলে গেলি? তোকে তো খুনি কে খুজে বের করতে হবে। এরপর তো তাদের খুন করতে হবে। আফটার অল ইউআর মাফিয়া কিং।

বলে বাঁকা হাসলো। এরপর রুম থেকে বেরিয়ে নিচে গেলো!
ডালিমঃ ইয়াসিন চাচা হয়ার আর ইউ?
ইয়াসিন চাচাঃ কি হলো ছোট সাহেব?
ডালিমঃ চাচা আমাকে আমার। কবরের কাছে নিয়ে চলো।
ইয়াসিন চাচাঃ মানে?
ডালিমঃ আই মিন নকল কবর!
ইয়াসিন চাচাঃ কিন্তু কেন?

ডালিমঃ সেই কৈফিয়ত তোমাকে দেবো?
ইয়াসিন চাচাঃ না চলুন।
ইয়াসিন চাচা ডালিম কে নিয়ে। সেই কবরের কাছে গেলো। ডালিম ওখানে গিয়ে বললো!

  • আচ্ছা এই লাশটা। এই বাড়িতে কে পৌছে দিয়েছিলো?
    ইয়াসিন চাচাঃ কয়েকজন বিদেশী লোক।

ডালিমঃ তোমরা না দেখে দাফন করলে?
ইয়াসিন চাচাঃ রাতে এসে ওনারা দাফন করেছে!
ডালিমঃ কি বলেছিলো?
ইয়াসিন চাচাঃ বলেছিলো আপনারা মাথায়। কারা নাকি গুলি করেছে? মোট ৬টা গুলি তাই আপনি।
ডালিমঃ মারা গিয়েছি?
ইয়াসিন চাচাঃ হ্যা ছোট সাহেব!

ডালিমঃ ওকে ইউ ক্যান গো নাউ।
ইয়াসিন চাচাঃ আচ্ছা!
ইয়াসিন চাচা যথেষ্ট শিক্ষিত। কিন্তু এখন উনি কেয়ারটেকার হয়েই আছে। পেটের দায়ে মানুষ কি না করে?
ডালিম তাকিয়ে আছে লেখাটার দিকে। যেখানে লেখা মৃত ডালিম খাঁন আয়াশ। ডালিম হাত মুঠ করে তাকিয়ে আছে। এরপর পাশ থেকে একটা ইট নিয়ে। ওটাতে ইচ্ছে মতো ইট মারছে। কিছুক্ষণ পর ওটা খুলে পড়ে যায়। আর ডালিম ওটা নিয়ে ফেলে দিতে গিয়েও। কি ভেবে রেখে দেয় হাতে নিয়ে। চলে আসতে গেলেই চোখ যায়। ওর দাদুভাইয়ের কবরে। মনে পড়ে যায় ৩বছর আগের কথা। যেদিন ওর দাদুভাই মারা গেলো। পাগলের মতো কান্না করছিলো ডালিম। ডালিম ওর দাদুভাইয়ের কবরের কাছে যায়।
ডালিমঃ দাদু খুব মিস করি তোমাকে। কেন এভাবে চলে গেলে? একবারও আমার কথা ভাবলে না? তুমি ছাড়া কেউ আমাকে বোঝেনা। সবার তো মম, ড্যাড পুরো পরিবার আছে। আমার তো সেটাও নেই রিয়েলি মিস ইউ দাদু!

ডালিমে’র চোখ থেকে। পানি গড়িয়ে পড়লো কিন্তু। ডালিম সেটা মুছে ফেললো। এরপর ওখান থেকে চলে এলো।
নাবিলাঃ কোথায় গিয়েছিলে?
রুমে ঢুকতেই নাবিলা প্রশ্ন করলো!
ডালিমঃ কবরস্থানে।
নাবিলাঃ কেন?
ডালিমঃ আমার নামের কবর দেখতে!
নাবিলাঃ ওহহহহহ।

দেখতে দেখতে আরো। ৫টা দিন চলে গেলো। নাবিলা ডালিম কে নিজের কাছে আসতে দেয়না। ডালিম বুঝেই উঠতে পারেনা। যে নাবিলা এমন কেন করে?
ডালিমঃ বেবী কেন এমন করছে? আমিতো ওর স্বামী তাহলে। কেন আমাকে ওর কাছে যেতে দেয়না? এখন তো ও আমাকে ভাল ও বাসে। তাহলে কেন দুরে দুরে থাকছে?
মনে মনে ভাবছিলো এসব। এরমাঝে নাবিলা রুমে এসে বললো!

  • ডালিম শোনো।
    ডালিমঃ কিছু বলবে?
    নাবিলাঃ আমি আমাদের বাড়ি যাবো!
    ডালিমঃ কবে যেতে চাও?
    নাবিলাঃ আজকেই যাবো।

ডালিমঃ ওকে রেডি হয়ে নাও!
নাবিলাঃ তুমিও রেডি হও।
ডালিমঃ কেন?
নাবিলাঃ তুমিও যাবে তাই!
ডালিমঃ আমি তোমাকে পৌছে দিয়ে চলে আসবো।

নাবিলাঃ জ্বি নো থাকতে হবে সো ফাস্ট!
ডালিম ও রেডি হয়ে নিলো। ব্লু কালার শার্ট ব্লাক জিন্স। শার্টের উপর ব্লাক জ্যাকেট। শার্টে ছোট হাতা। আর জ্যাকেট হাতা কাটা। জ্যাকেটের চেইন খোলা। চুলগুলো হালকা জেইল দেয়া। কয়েকটা চুল কপালে এসে পড়েছে। চোখে কালো সাইন গ্লাস। ঠোটের একটু নিচে ডান পাশে। কালো ছোট একটা তিল। সব মিলিয়ে ক্রাশ লুক।
নাবিলা একটা টপস পড়েছে। যেটার কালার ব্লাক। তারসাথে ব্লু কালার জিন্স। নাবিলা চেন্জ করে এসে। ডালিম কে দেখে হা করে তাকিয়ে আছে। ডালিম সেটা বুঝতে পেরে। দুষ্ট হাসি দিয়ে বললো!

  • জান তুমি নিজে যদি। নিজের স্বামীর দিকে কু নজর দাও। তাহলে অন্য মেয়েরা কি করবে?
    নাবিলাঃ কি আমি কু নজর দেই?
    রেগে গিয়ে বললো,
    ডালিমঃ এখন তো কু নজর দিচ্ছো!

নাবিলাঃ শোন তুই আমার স্বামী। যেই নজর দেই আমি দেবো। বাইরের মেয়েরা দিলে চোখ তুলে নেবো!
ডালিমঃ ওকে ওকে এখন রেডী হও।
নাবিলা গিয়ে ঠোটে লিপস্টিক নিলো। মুখে আগে থেকেই হালকা মেকআপ করেছিলো। এরপর চুলগুলো একটা ঝুটি করে বললো!

  • চলো আমি রেডি।
    ডালিমঃ এভাবে যাবে?

নাবিলাঃ হ্যা কেন কি প্রবলেম?
ডালিমঃ ওড়না কোথায় তোমার?
নাবিলাঃ ওপস সরি বাট আমি ওড়না নেই না। স্কার্ফ নেই বুঝলে?

এরপর নাবিলা গলায় স্কার্ফ নিলো। ডালিম মুচকি হেসে নিচে গেলো। পিছনে নাবিলা ও গেলো!
নাবিলাঃ আগে আমার ভার্সিটি যেতে হবে।
ডালিমঃ কেন?
নাবিলাঃ নোট আনতে হবে!
ডালিমঃ ওকে গাড়িতে ওঠো।
নাবিলা গিয়ে গাড়িতে উঠলো। ডালিম গাড়ি স্টার্ট দিলো। গাড়ি চলছে আপনমনে। নাবিলা বাইরেটা দেখছে। ডালিম গাড়ি ড্রাইভ করার ফাকে। নাবিলা কেও দেখছে মাঝে মাঝে। দেখতে দেখতে ওরা ভার্সিটি গিয়ে পৌছালো!
নাবিলাঃ তুমি থাকো আমি যাচ্ছি।
ডালিমঃ আমিও যাচ্ছি!

নাবিলাঃ না তুমি থাকো আমি যাবো আর আসবো!
ডালিমঃ ওকে হারি আপ।
নাবিলা গাড়ি থেকে নেমে চলে গেলো। ডালিম গাড়ি থেকে নেমে। হাটতে হাটতে ভেতরে গেলো। নাবিলা নোট নিয়ে এসে দেখলো। মেয়েরা ভীর করে আছে। নাবিলা ভ্রু কুঁচকে তাকালো!
রফিকঃ কি হচ্ছে ওখানে?
নাবিলাঃ ডোন্ট নো লেটস সি।
রফিকঃ ইয়া রাইট!

এরপর ওরা দুজন গেলো। ভীর ঠেলে ভেতরে ঢুকেই। নাবিলা’র মেজাজ গরম হয়ে গেলো।
নাবিলাঃ ডালিম!
ডালিম অসহায় ফেস করে তাকালো। এদিকে মেয়েরা তো। ডালিমে’র সাথে ছবি তুলছে। এত বড় একজন ড্যাসিং বিজনেসম্যান। তার সাথে ছবি তোলার সুযোগ। হাত ছাড়া করতে চাইছে না মেয়েরা। অনেকে তো নাম্বারও চাইছে। নাবিলা অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। তাই দেখে ডালিম কয়েকটা ঢোক গিলে বললো,

  • শোনো আন্টিরা!

আন্টি শুনে সব মেয়েরা থ। নাবিলা নিজেও হা করে চেয়ে আছে। আর রফিক তো হেসে লুটোপুটি খাচ্ছে।
ডালিমঃ আমি কোনো হিরো না। যে আমার সাথে ছবি তুলছো। এরপর ছবি তুলতে হলে। আগে আমার বউয়ের পারমিশন নেবে। তারপর ছবি তুলতে আসবে গট ইট?
সব মেয়েরা কাঁচুমাচু করে চলে গেলো!
রফিকঃ ওয়াও জিজু কি দিলে তুমি?
ডালিমঃ কি আর দিতে পারলাম?
রফিকঃ তবুও আন্টি বানিয়ে দিলে?

বলে আবারও হাসতে লাগলো। নাবিলা ও মিটিমিটি হাসছে। এরপর আরো কিছুক্ষণ কথা বলে ওরা চলে গেলো। নাবিলা কে পেয়ে সবাই মহাখুশি।
সিয়ামঃ আরে ডালিম দাড়িয়ে আছো কেন?
ডালিমঃ তোমাদের ভালবাসা দেখছি!
কণা চৌধুরীঃ তুমি কেমন আছো বাবা?
ডালিমঃ জ্বি আন্টি ভাল।
কণা চৌধুরীঃ এখনো আন্টি বলবে?
ডালিমঃ তাহলে?
কণা চৌধুরীঃ নাবিলা কি বলে?

ডালিমঃ মাম্মা!
কণা চৌধুরীঃ রাইট তুমিও মাম্মা বলবে। তুমিও তো আমার ছেলে তাইনা?
ডালিম ছলছল চোখে তাকিয়ে আছে।
কণা চৌধুরীঃ কি হলো?

ডালিমঃ মাম্মা!
বলে জড়িয়ে ধরলো। কণা চৌধুরী বুঝলো ডালিমে’র। ওর মায়ের কথা মনে পড়েছে। তাই উনি ডালিম কে জড়িয়ে ধরে। পিঠে হাত বুলিয়ে দিলো।
ইমরান চৌধুরীঃ তা কণা তোমার এই ছেলে। আমাকে কি চেনে? আমি কিন্তু ওর বউয়ের পাপা হই!
ডালিমঃ পাপা।
ইমরান চৌধুরীঃ পাপা কে জড়িয়ে ধরবে না?
ডালিম ওনাকেও জড়িয়ে ধরলো। নাবিলা, ইমন, আরাফ, সিয়াম, কবির। তাকিয়ে মুচকি হাসছে!
নাবিলাঃ আমরা কি কিছু হই?

সবাই হেসে দিলো নাবিলা গাল ফুলিয়ে আছে। সবাই মিলে নাবিলা কে আদর করছে।
কণা চৌধুরীঃ আচ্ছা এবার তোমরা রুমে যাও!
ওরা রুমে চলে গেলো। রাতে ডিনার করার সময়। সবাই খুব মজা করলো। ডালিম ও ওদের সাথে মিশে গিয়েছে।
নাবিলাঃ মাম্মা এবার আরাফ ভাইয়া কে। বিয়ে করানো উচিত তাইনা?
আরাফ বিষম খেলো!

নাবিলাঃ রিল্যাক্স ভাইয়া তুই যাকে পছন্দ করিস। তার সাথেই তোর বিয়ে হবে।
ডালিমঃ ভাইয়া কাকে পছন্দ করে?
আরাফঃ ডালিম ও মিথ্যে বলছে!
কণা চৌধুরীঃ কিন্তু আমার তা মনে হয়না আরাফ।
সিয়াম, ইমন, ডালিমঃ মাম্মা তুমিও জানো?

সবাই ওদের দিকে তাকালো। আর ওরা ৩জন ৩জনের দিকে। এরপর জোড়ে হেসে দিলো। এখানে ২দিন থেকে ওরা চলে গেলো!
ডালিম অফিসে বসে আছে। এমন সময় ওর ফোনে একটা ফোন এলো। সাথে সাথে কপালের রগ ফুলে গেলো।
ডালিমঃ ধরে নিয়ে আয় ওকে!
ডালিম গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। চলে গেলো নিজের আস্তানায়। চেয়ারে হাত পা বেধে বসিয়ে রেখেছে একজন কে। লোকটা ডালিম কে দেখেই বললো,

  • আমাকে নিয়ে এসেছিস কেন?
    ডালিমঃ ইউ ব্লাডি বিচ!

বলেই নাকে একটা ঘুষি দিলো।
ডালিমঃ তোর সাহস হয় কি করে? ভার্সিটিতে আমার ওয়াইফ কে টিচ করিস? ওর ওড়না ধরিস ওর দিকে নজর দিস। তোর চোখ আমি তুলে ফেলবো!
বলেই পাশে থাকা চিকন শিক। লোকটার চোখে ঢুকিয়ে দেয়। লোকটা ছটফট করতে থাকে। সবাই থ ভয় পেয়ে অন্যদিকে ঘুরে যায়। ডালিম একটা ছুড়ি নিয়ে লোকটার শরীর। ছিন্নন ভিন্ন করতে করতে বলে,

  • তোর কলিজা অনেক বড় তাইনা? লোকমান জলন্ত শিকটা নিয়ে আয়।
    লোকমান গিয়ে শিক নিয়ে আসে। ডালিম শিকটা নিয়ে। লোকটার বুকে ঢুকিয়ে দেয়। লোকটা চিৎকার করছে। আর ডালিম পাগলের মতো হাসছে!
    ডালিমঃ এই জিহ্বা দিয়ে বাজে কথা বলেছিস, তাইনা?
    বলেই মুখের মধ্যে। গরম শিক ঢুকিয়ে দেয়। বডিগার্ডরা থরথর করে কাপছে। ডালিম লোকটার চোখে। বুকে, মুখে গুড়া মরিচ দিয়ে পাগলের মতো হাসছে। লোকটা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েছে। হাসি থামিয়ে গম্ভীর কন্ঠে বলে,
  • লোকমান একে গুম কর!
    বলে হনহন করে চলে যায়। ভাবছেন তো কি হলো? আজকে নাবিলা একা ভার্সিটি গিয়েছিলো। আর ওই লোকটা সবাই কে। সব মেয়েদের বাজে কথা বলে টিচ করে। কিন্তু আজকে ভুল জায়গায় হাত দিয়েছে। যার করুন পরিনতি হলো ভয়ংকর মৃত্যু। ডালিম বাড়ি এসে দেখে নাবিলা স্বাভাবিক। ডালিম কিছুটা অবাক হয়। নাবিলা কে ডালিমে’র অবাক লাগে এখন।
    পরেরদিন রাতে ডালিম ঘুমিয়ে আছে। হঠাৎ কেউ ওকে ছুড়ি দিয়ে আঘাত করতে যায়। ডালিম সাথে সাথে চোখ খুলে। তার হাত ধরে ফেলে। যার হাত ধরেছে সে ছোটার জন্য ছটফট করছে!

ডালিমঃ কে তুমি?
লোকটার মুখে মাস্ক। সম্পূর্ণ কালো ড্রেস পড়া। তবে বোঝা যাচ্ছে একটা মেয়ে। ধস্তাধস্তির এক পর্যায় ডালিম। একটানে মাস্ক খুলে ফেলে। খুলে ডালিমে’র পায়ের তলার মাটি সরে যায়। ডালিমে’র চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে। কাঁপা কাঁপা গলায় বলে ডালিম।

  • জাজাজান তুতুতুমি?

পর্ব ১৫

ডালিম সেন্সলেস হয়ে ওখানেই পড়ে রইলো। যখন সেন্স এলো তখনও নিজেকে। সেই কবরস্থানেই আবিষ্কার করলো। ডালিমে’র রাতের কথা মনে পড়ে গেলো। নিজের দিকে তাকিয়ে দেখলো। সম্পূর্ণ শরীরেই কাদা দিয়ে মাখামাখি!
ডালিম উঠে বাড়ির ভেতরে গেলো। গিয়ে অবাকের শেষ পর্যায়। নাবিলা ড্রয়িংরুমে সোফায় বসে। পায়ের উপর পা তুলে মনের সুখে। আপেল খাচ্ছে আর একজন সার্ভেন্ট। নাবিলা’র পা টিপে দিচ্ছে। ডালিমে’র মেজাজ বিগরে গেলো। কারন সার্ভেন্টটা বয়সে নাবিলা’র বড়।
আর ডালিম কখনোই। কোনো সার্ভেন্ট কে বিনা কারনে হার্ট করে না। নাবিলা মাঝে মাঝে খারাপ বিহেভ ও করছে। ডালিম হনহন করে নাবিলা’র সামনে গেলো। ডালিম কে দেখেই নাবিলা নাক শিটকে বললো!

  • ইয়াক ছিঃ এটা কি অবস্থা তোমার?
    ডালিমঃ তার আগে বলো তুমি এটা কি করছো?
    নাবিলা না জানার ভান করে বললো,
  • কোনটা? কি করেছি আমি?

ডালিমঃ তুমি ওনাকে দিয়ে পা টেপাচ্ছো?
নাবিলাঃ হ্যা টেপাচ্ছি তো?
ডালিমঃ জাস্ট সাট আপ উনি তোমার বড় হয়!
নাবিলাঃ আই ডোন্ট কেয়ার।
ইয়াসিন চাচাঃ বৌমা এসব কি বলছো?
নাবিলাঃ চুপ ম্যাডাম বলবে আমাকে!
ডালিমঃ উনিও তোমার বড়।
নাবিলাঃ সো হোয়াট? ওর পরিচয় ও একজন সার্ভেন্ট। আর একজন সার্ভেন্ট হয়ে। মালিকের পা টিপে দিচ্ছে এতে। কি এমন মহাভারত অশুদ্ধ হলো শুনি?
ডালিমঃ কে মালিক শুনি?

নাবিলাঃ বেইব তোমার সামনে দাড়ানো।
ডালিমঃ মানে কি?
নাবিলাঃ আমি জানি তোমার প্রপার্টির। ৬০% তুমি আমার নামে করে দিয়েছো। আর সেইদিক থেকে এই সবকিছুর উপর। তোমার থেকে আমার অধিকার বেশী!
ডালিমঃ তুমি কি করে জানো?
নাবিলাঃ জানি সব জানতে হয়। তুমি কি ভেবেছিলে? তুমি আমাকে রুমে আটকে রাখলে। আর আমি রুমে আটকে থাকবো? হাহ ইউআর রং ডালিম।
ডালিম নাবিলা কে নিয়ে রুমে গেলো!
নাবিলাঃ ছাড়ো আমাকে তুমি নোংরা।

ডালিমঃ চুপচাপ থাকো!
নাবিলা কে রুমে এনে ডালিম বললো,

  • বলো কেন এমন করছো? সামান্য প্রপার্টির জন্য তুমি। আর যাইহোক এমন করতে পারোনা!
    নাবিলাঃ সামান্য কোথায় সামান্য? তোমার তো দেশে বিদেশে প্রপার্টি। দেশে বাড়ি বিদেশে বাড়ি। এরপরও সামান্য কেন বলছো?
    ডালিমঃ স্টপ ইট আমি সত্যিটা জানতে চাই? প্লিজ কেউ কি তোমাকে চাপ দিচ্ছে? তাহলে তুমি আমাকে বলো জান। কসম আল্লাহ’র জানে মেরে ফেলবো।
    নাবিলাঃ ওহ সাট আপ কেউ আমাকে চাপ দেয়নি!
    ডালিমঃ তাহলে তুমি মজা করছো?

নাবিলাঃ রিয়েলী ডালিম? তোমার এখনো মনে হয় আমি মজা করছি? আসলে মাফিয়া তো তুমি? তোমার মতো ইমোশনাল ফুল তো আমি। আমার জীবনে দুটো দেখিনি!
ডালিম নাবিলা কে থাপ্পর মারতে গিয়েও। নিজের হাত নামিয়ে নিয়ে বললো,

  • আমি ইমোশনাল ফুল না। তোমাকে ভালবাসি আর তাই। এখনো তুমি বেঁচে আছো ট্রাস্ট মি। তোমার জায়গায় অন্য কেউ যদি। এভাবে আমার সাথে বেইমানি করতো। তাহলে সাথে সাথে তার লাশ ফেলে দিতাম!
    নাবিলাঃ অনেক দেখেছি আর দেখতে চাইনা।
    ডালিম আর কথা না বাড়িয়ে। ওয়াসরুমে চলে গেলো এরপর। প্রায় ২ঘন্টা পর বেরিয়ে এলো। বেরিয়ে এসে একটা লাল টি শার্ট পড়লো। আর থ্রি কোয়াটার প্যান্ট। ভেজা চুলগুলো কপালে লেপ্টে আছে। পায়ের পশমগুলোও লেপ্টে আছে। মাঝে মাঝে নিজের ঠোট। নিজেই কামড়ে ধরছে নাবিলা তাকিয়ে আছে!
    ডালিমঃ এভাবে হা করে তাকিয়ে আছো কেন?

নাবিলা’র হুশ এলো ও কি করছে। ভেংচি কেটে বিছানা থেকে নেমে বললো,

  • আমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই? যে তাকিয়ে থাকতে যাবো?
    ডালিমঃ আমিও সেটাই ভাবছি। তোমার কি খেয়ে দেয়ে কাজ নেই?
    নাবিলাঃ হোয়াট ডু ইউ মিন?
    ডালিমঃ আই মিন টু সে কন্ট্রোল ইউআর সেলফ বেবী। আমাকে চোখ দিয়ে গিলে খাচ্ছো কেন?
    নাবিলাঃ জাস্ট সাট আপ স্টুপিড!
    বলে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। ডালিম একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে। বিছানায় নিজের ল্যাপটপ নিয়ে বসলো। এরপর একমনে ল্যাপটপেই ধ্যান দিলো। এদিকে নাবিলা বাড়ি থেকে বেরিয়ে। কোথাও একটা গেলো ডালিম কাজ শেষ করে। নিচে গিয়ে দেখলো নাবিলা নেই।
    ডালিমঃ আরে ও কোথায় গেলো?

ইয়াসিন চাচাঃ কি হয়েছে ছোট সাহেব?
ডালিমঃ তোমার ম্যাডাম কোথায়?
ইয়াসিন চাচাঃ উনিতো বাইরে গেলো!
ডালিমঃ এখন বাইরে কেন গেলো?

ডালিম ও গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেলো। নাবিলা কে খুজতে লাগলো। আর খুজতে খুজতে পেয়েও গেলো। কিন্তু ডালিমে’র মনে হচ্ছে এখন। নাবিলা কে খুজে না পেলেই বেটার হতো। কারন নাবিলা সৌহাদ্র’র হাত ধরে বসে আছে। আর দুজন হেসে হেসে কথা বলছে। ডালিমে’র মাথা গরম হয়ে গেলো। গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে ওদের সামনে দাড়ালো।
নাবিলাঃ তুমি এখানে?
ডালিমঃ কেন খুব প্রবলেম হলো?

নাবিলাঃ অবভিয়েসলি ইউআর এ বিগ প্রবলেম অফ মাই লাইফ!
ডালিমঃ সাট আপ এন্ড কাম উইথ মি।
নাবিলাঃ আমি তোমার সাথে কোথাও যাচ্ছিনা!
ডালিম নাবিলা কে টেনে নিয়ে চলে এলে।
নাবিলাঃ এই তোমার প্রবলেম কি? সবসময় এরকম টানাটানি করো কেন?
ডালিমঃ তুমি বেশী ভাল তাই!
ডালিম গাড়ি স্টার্ট দিলো। নাবিলা আনমনে বসে আছে। নাবিলা’র গায়ে পিংক কালার শার্ট। আর ব্লাক কালার প্যান্ট। চুলগুলো ছেড়ে দেয়া বাতাসে উড়ছে। নাবিলা বিরক্তি নিয়ে বারবার সরাচ্ছে। ডালিম আড়চোখে তাকিয়ে দেখছে।

দেখতে দেখতে বাড়ি চলে এলো। বাড়ি এসে নাবিলা রুমে চলে গেলো। এভাবেই ওইদিন চলে গেলো। পরেরদিন সকালে নাবিলা একটা শাড়ি পড়ে। ডালিমে’র জন্য পায়েস বানিয়ে নিয়ে এলো। পায়েস ডালিমে’র ফেবারিট অনেক!
ডালিমঃ পায়েস?
নাবিলাঃ হুম তুমি পছন্দ করো রাইট? তাই তো আমি বানিয়ে নিয়ে এলাম।
ডালিমঃ কিন্তু তুমি তো আমাকে মারতে চাও!
নাবিলাঃ আই এম সরি ডালিম। আমি তোমার সাথে মজা করেছি।
ব্যাস ডালিম নাবিলা কে জড়িয়ে ধরে বললো!

  • আমি জানতাম তুমি মজা করেছো। এরকম মজা আর কখনো করবে না। আমার অনেক কষ্ট হয় জান।
    নাবিলাঃ এখনো পায়েসটা খাও তো!
    ডালিমঃ তুমি খাইয়ে দাও প্লিজ।

নাবিলাঃ ওকে দিচ্ছি বসো!
নাবিলা যেই পায়েসটা ডালিমে’র মুখে দেবে। একটা বিড়াল এসেই লাফ দিয়ে। নাবিলা’র হাতের বাটির উপর পড়লো। যার জন্য সব পায়েস ড্রয়িংরুমের ফ্লোরে পড়ে গেলো। যা বিড়ালটা খেতে শুরু করলো।
ডালিমঃ যা পড়ে গেলো তো!
নাবিলাঃ পড়ে কই গেলো? এই বিড়ালটা ফেলে দিলো। আমার সব প্লান ভেস্তে দিলো। এবার মরুক এই বিড়াল।
ডালিমঃ এসব কি বলছো তুমি?
নাবিলাঃ আব কিছুনা তো!

একটুপরই ডালিম দেখলো। বিড়ালটা কেমন একটা করছে। ছটফট করছে বিড়ালটা। ডালিম অবাক হয়ে গেলো। আর বুঝেও গেলো কেন বিড়ালটা ওমন করছে।
ডালিমঃ তারমানে বিষ ছিলো পায়েসে?
নাবিলাঃ হ্যা বিষ ছিলো। যেটা এই বিড়াল খেয়ে নিলো। তুমি খেলে ওই বিড়ালের জায়গায়। এতক্ষণে তুমি মরে যেতে। আর এটাইতো আমি চেয়েছিলাম। কিন্তু সব শেষ করে দিলো বিড়ালটা!
ডালিম থম মেরে বসে রইলো।

ডালিমঃ তুমি আবারও আমাকে ঠকালে?
নাবিলাঃ হ্যা আর বেশ করেছি!
বলে নাবিলা চলে গেলো। আর ডালিম সেখানেই বসে রইলো।

রাতে বেলকনিতে দাড়িয়ে আছে ডালিম। হঠাৎ ওর মনে হলো ওর পিছনে। কেউ আছে ডালিম চট করে তাকালো। তাকিয়ে দেখলো নাবিলা ছুড়ি নিয়ে। মাএই ওকে আঘাত করতে গিয়েছে। ডালিম নাবিলা’র হাত ধরে ফেললো!
ডালিমঃ যেটা পারবে না সেটা কেন করো? তুমি সব বার তো ধরা পড়ে যাও।
নাবিলাঃ হাত ছাড়ো তোমাকে মারতেই হবে!
ডালিমঃ বেশী হয়ে যাচ্ছেনা এবার?

নাবিলাঃ না যা হচ্ছে ঠিক হচ্ছে।
ডালিমঃ অনেক সহ্য করে নিয়েছি!
বলে টেনে নাবিলা কে রুমে এনে ফ্লোরে ফেলে দিলো।
পায়ের উপর পা তুলে ডান হাতে। পিস্তল নিয়ে মুখে বাঁকা হাসি। বসে আছে ডালিম আর তার সামনেই। হাত, পা বাধা অবস্থায় পড়ে আছে নাবিলা। একেরপর এক সিগারেট টানছে ডালিম। আর ধোয়াগুলো ছাড়ছে নাবিলা’র মুখের কাছে!
নাবিলাঃ ইউ ইডিয়ট হোয়াট আর ডুয়িং?

ডালিমঃ ও কানঅন বেবী আমি তো দেখছি। তোমার সাথে সুন্দর সুন্দর দুটো চোখ আছে। তুমিতো দেখতেই পাচ্ছো কি হচ্ছে।
নাবিলাঃ ছাড়ো আমাকে!
ডালিমঃ কেন ছাড়বো? পারলে ছুটে যাও।
নাবিলাঃ ডালিম ছাড়ো আমাকে!
ডালিম ওর হাতের পিস্তল। নাবিলা’র কপালে ঠেকালো। নাবিলা চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে। কয়েকবার ঢোক গিললো। ডালিম বাঁকা হেসে বললো,

  • সাহস কোথায় গেলো? ডালিম কে মারতে এসেছিলে না? এখন আমি যদি তোমাকে মেরে ফেলি। তোমাকে মারলে আমার কেউ কিছু করতে পারবে না!
    নাবিলা মুচকি হেসে বললো,
  • তুমি আমাকে মারতে পারবে না!

ডালিমঃ রাইট এটাই তো প্রবলেম। তুই হাজার বেইমানি করলেও। আমি তোকে মারতে পারবো না। কারন আমি তো তোকে ভালবেসেছি। কিন্তু এবার তুই দেখবি তোকে ছাড়া। আমিও চলতে পারবো।
বলে নাবিলা’র হাত, পায়ের। বাধন খুলে রুম থেকে চলে গেলো। আর নাবিলা বলতে লাগলো!

  • আমাকে ছাড়া চলবে? তাও আবার তুমি? ওকে আমিও দেখি কতটা সত্যি।
    পরেরদিন সকালে ডালিম। ব্লাক শার্ট, ব্লাক জিন্স প্যান্ট পড়েছে। চুলগুলো স্পাইক করেছে। হাতে ব্লাক বেল্টের ব্রান্ডের ঘড়ি। ফর্সা মুখে খোচা খোচা দাড়ি। ঠোটের নিচে ছোট তিল। জাস্ট ওয়াও লাগছে। নাবিলা ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে!
    একটুপর দরজায় কলিং বেল বাজলো। ডালিম গিয়ে দরজা খুলেই বললো,
  • ওয়েলকাম মাই হাউস সুইটহার্ট!

ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠে কেউ বললো,

  • থ্যাংক ইউ বেবী!
    এরপরই একটা মেয়ে কে নিয়ে। ডালিম ভেতরে এলো মেয়েটা দেখতে। অনেক সুন্দরী একটা শর্ট টপস পড়া। যার কারনে হাটু দৃশ্যমান। নাবিলা হা করে তাকিয়ে আছে।
    ডালিমঃ তানিসা মিট মাই এক্স ওয়াইফ!
    মেয়েটির নাম তানিসা।
    তানিসাঃ ওহ এখানে কি করছে ও?
    নাবিলাঃ এক্সকিউজ মি এক্স ওয়াইফ মানে?
    ডালিমঃ হওনি হয়ে যাবে।
    নাবিলাঃ হোয়াট রাবিশ? এন্ড ইউ তানিসা গেট আউট!

ডালিমঃ ও কোথাও যাবেনা। ও আমার সাথে এখানে থাকবে।
নাবিলাঃ ওকে এজ ইউআর উইশ!
বলে নাবিলা চলে গেলো। ডালিম তানিশা কে নিয়ে সোফায় বসলো। রাতে খাবার টেবিলে ডালিম আর তানিশা। পাশাপাশি চেয়ারে বসেছে। তার সামনে মুখোমুখি নাবিলা। ডালিম তানিশা কে খাইয়ে দিচ্ছে।
নাবিলাঃ এত ঢলাঢলি করতে হলে। বেডরুমে চলে যাচ্ছোনা কেন?
ডালিমঃ খাওয়া হলে যাবো!
খাওয়া শেষে সত্যি সত্যি ডালিম। তানিশা কে নিয়ে উপরে চলে গেলো। নাবিলা ও খাওয়া রেখে চলে এলো।
ডালিমঃ কি হলো?

নাবিলাঃ এটা আমার রুম!
বলে তানিসা’র হাত ধরে। রুম থেকে বের করে দরজা লাগিয়ে দিলো। এরপর ধপাস করে বিছানায় শুয়ে পড়লো। ডালিম ও শুয়ে পড়লো।
এভাবে কেটে গেলো কয়েকদিন। ডালিম তানিসা কে নিয়ে মেতে থাকে। তানিসা কে নিয়ে ঘুরতে যায়। দুজন দুজন কে খাইয়ে দেয়। নাবিলা’র সামনে তানিসা। ডালিমে’র কাধে মাথা রাখে!

নাবিলাঃ ব্যাস অনেক হয়েছে।
বিকেলে তানিসা রান্নাঘরে। ডালিম সোফায় বসে আছে। ডালিম কিছু একটার জন্য দাড়ালো। ওমনি নাবিলা ওর হাতে লুকিয়ে রাখা ছুড়িটা। ডালিমে’র পেটে ঢুকিয়ে দিলো। ডালিম আহ করে উঠলো। যেটা শুনে রান্নাঘর থেকে তানিসা এলো। ডালিম কে এভাবে দেখে চিৎকার করে। দৌড়ে কাছে এলো আর ডালিম। ফ্লোরে পড়ে নাবিলা কে বললো!

  • এত ঘৃনা করো আমাকে?
    নাবিলাঃ গুড বাই ডালিম বেইব।

পর্ব ১৬

ডালিমে’র পেটে নাবিলা ছুড়ি ঢুকাতেই। ডালিম ফ্লোরে পড়ে যায়। পেট চেপে ধরে আছে ডালিম। নাবিলা’র দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলে,

  • এত ঘৃনা করো আমাকে?
    নাবিলাঃ গুড বাই ডালিম বেইব।

তানিসা এসে ডালিম কে ধরে। ডালিমে’র পেট থেকে গলগল করে রক্ত পড়ছে। নাবিলা মুচকি মুচকি হাসছে। ডালিম অসহায় দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে। নাবিলা মুচকি হেসে রান্নাঘরে যায়। রান্নাঘর থেকে মরিচের গুড়া নিয়ে আসে। ডালিম ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে আছে!
নাবিলাঃ বেবী এটা চিনতে পারছো?
তানিসাঃ ওটা দিয়ে কি করবে তুমি?
নাবিলাঃ সেটা কি তোকে বলবো?

নাবিলা মরিচের গুড়া নিয়ে। ডালিমে’র পাশে বসে ওর পেটে। যেই জায়গায় ছুড়ি দিয়ে আঘাত করেছে। সেই জায়গায় দিয়ে দেয়। ডালিম আহ বলে চিৎকার করে ওঠে।
নাবিলাঃ এখন কেমন লাগছে? অন্য কে আঘাত করতে খুব মজা তাইনা? আঘাতের জায়গায় আবার গুড়ামরিচ দাও। এবার বোঝো কেমন লাগে জান!
তানিসাঃ ইয়াসিন চাচা তাড়াতাড়ি এসো।

নাবিলাঃ হসপিটালে নেবে বুঝি? চলো আমি নিয়ে যাচ্ছি। এই কে আছো এখানে এসো!
কয়েকজন গার্ড আসে। ওরা ডালিম কে নিয়ে গাড়িতে ওঠায়। নাবিলা গিয়ে ড্রাইভিং সিটে বসে। তানিসা ও গাড়িতে ওঠে। নাবিলা ড্রাইভ করে ডালিম কে হসপিটালে নিয়ে যায়। ডক্টর ডালিম কে তাড়াতাড়ি অপারেশন থিয়েটারে নেয়। নাবিলা তানিসা’র সামনে গিয়ে বলে,

  • শুধু শুধু হসপিটালে আনলাম ওকে!
    তানিসাঃ মানে?

নাবিলাঃ ও তো বাঁচবে না সো স্যাড।
একটুপর ডক্টর আসে মুখ কালো করে!
তানিসাঃ ডক্টর ডালিম কেমন আছে?
ডক্টরঃ আই এম সরি হি ইজ নো মোর।
তানিসাঃ হোয়াট? এটা কি করে পসিবল?
নাবিলা হাসতে হাসতে বলে,

  • ইয়েস ডক্টর হাউ ইজ দ্যাট পসিবল?

ডক্টরঃ আপনি হাসছেন?
তানিসাঃ প্লিজ ডক্টর বলুন।
ডক্টরঃ দেখুন ছুড়ির আঘাতে। ওনার শরীরের সব রক্তই। ধরতে গেলে বেরিয়ে গিয়েছে!
নাবিলাঃ ডক্টর লাশ কোথায়?

ডক্টরঃ আপনি না ওনার ওয়াইফ? আপনি স্বাভাবিক কি করে আছেন?
নাবিলাঃ সাট আপ ডক্টর টেল মি।
ডক্টরঃ চলুন ভেতরে!
ওরা গিয়ে দেখে ডালিম কে। সাদা হসপিটালের বেডশিট দিয়ে। ঢেকে রাখা হয়েছে তানিসা কান্না করছে।
নাবিলাঃ ডক্টর লাশ মর্গে রেখে দিন!
তানিসাঃ এসব কি বলছো? ওকে প্লিজ নিয়ে চলো নাবিলা।
নাবিলাঃ ডক্টর যা বলছি করুন!

ডক্টরঃ কিন্তু।
নাবিলাঃ মরতে চান?
ডক্টরঃ ওকে ওকে আমরা নিয়ে যাচ্ছি!
ডক্টর লাশ নিয়ে মর্গে যায়। এদিকে চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে। ডালিম খাঁন আর বেঁচে নেই। নাবিলা’র পরিবার থমকে যায়।
সিয়ামঃ মাম্মা এসব কি দেখাচ্ছে টিভিতে?
ইমনঃ এটা কি করে হলো?

কণা চৌধুরীঃ নাবিলা কে ফোন কর!
আরাফ নাবিলা কে ফোন করে।
নাবিলাঃ হ্যালো ভাইয়া!
আরাফঃ বোন এসব কি শুনছি?

নাবিলাঃ কি শুনছো?
আরাফঃ ডালিম নাকি মারা গিয়েছে?
নাবিলাঃ ওহ হ্যা মারা গিয়েছে।
আরাফঃ তুমি এত স্বাভাবিক কি করে আছো?
নাবিলাঃ তো কি করবো?

আরাফঃ ডালিম মারা গিয়েছে বোন। ও তোমার স্বামী আর তুমি!
নাবিলাঃ ওহ ভাইয়া প্লিজ স্টপ এনিওয়ে বাই।
নাবিলা ফোনটা রেখে দেয়। পরেরদিন নাবিলা ড্রয়িংরুমে বসে আছে। মনের সুখে চকলেট খাচ্ছে!

  • তাহলে পথের কাটা শেষ।
    কারো কথায় নাবিলা পিছনে তাকায়। তাকিয়ে অনেকটা অবাক হয়ে বলে,
  • চাচ্চু তুমি?
  • ইয়েস আমি আনোয়ার খাঁন।
    নাবিলাঃ পথের কাটা মানে?
  • পথের কাটা তোমার স্বামী!
    এবার নাবিলা আরো অবাক হয়।
    নাবিলাঃ মুন্না ভাইয়া তুমিও?

মুন্নাঃ ইয়েস বেবী আমিও!
আনোয়ার খাঁনঃ আরো একজন আছে।
নাবিলাঃ কে?
মুন্নাঃ ইয়াসিন চাচা!
নাবিলা অবাক হয়ে যায়।
নাবিলাঃ তোমরা এত খারাপ?

মুন্নাঃ সাট আপ খারাপ আমরা না? তুমি এত ভাল হলে নিজের ভালবাসা। নিজের স্বামী কে কেন খুন করলে?
নাবিলাঃ তোমরা কেন এসেছো?
আনোয়ার খাঁনঃ এই বিশাল সম্পতি একা ভোগ করবে? যেই সম্পতির জন্য এতকিছু করলাম। আমার ভাই, ভাবী, ভাতিজি কে মারলাম। ডালিম কে মারতে চাইলাম। সেই সম্পতি একা কি করে ভোগ করবে?
নাবিলাঃ তারমানে তোমরা?

ইয়াসিন চাচাঃ হ্যা মা আমরা ছিলাম। তবে এই মুন্না তখন ছোট ছিলো। মুন্না তো এইকিছু দিন হলো। আমাদের সাথে রয়েছে।
নাবিলাঃ ডালিম তোমাদের এত ভালবাসে। আর শেষে কি না তোমরা এমন করলে?
মুন্নাঃ ডালিম তো তোমাকেও ভালবাসতো। অথচ তুমি ওকে খুন করলে!
আনোয়ার খাঁনঃ হ্যা একটা কথা বলো তো। তুমি কেন মিথ্যে বললে যে তুমি। ডালিম কে গুলি করেছিলে? তুমি ওকে পাগল করতে চেয়েছিলে? এসব তো করেছিলাম আমরা।

  • ওয়াও হোয়াট এ সিন?

সবাই পিছনে তাকালো। আর তাকিয়ে শকড হয়ে তাকিয়ে আছে!
আনোয়ার খাঁনঃ ডালিম তুই?
ডালিমঃ তো তুমি কি ভেবেছো? আমি এভাবে মরে যাবো?
নাবিলাঃ আর তোমরা ভাবলে কি করে? আমি আমার স্বামী কে খুন করবো?
মুন্নাঃ তাহলে এসব?
ডালিমঃ সব নাটক আরাফনয়। যেমন তোরা করেছিলি ভাল মানুষির।
ইয়াসিন চাচাঃ তারমানে গেম খেলেছো?

ডালিমঃ ইয়েস সন্দেহ তো আমার আগেই হয়েছিলো। তোমার উপর যেদিন জান বললো, তুমি ওকে আমার কথা বলে, কবর দেখিয়েছো আর তাতে লেখা। মৃত ডালিম খাঁন আয়াশ। কিন্তু তোমাকে বিশ্বাস করতাম। তাই সেসবে পাত্তা দেইনি। এরপর সেদিন রাতে জান হঠাৎ। আমার উপর ছুড়ি নিয়ে আ্যাটাক করে। আমি বুঝতে পারছিলাম না। ও কেন এমন করছে আমাকে আঘাত ও করে। এরপর ওসব বলে এক মুহূর্তে সত্যি মনে হয়েছিলো। আর তাই আমার পাগল পাগল লাগছিলো। পরে আমি ভাবলাম যে আমার জন্য বিষ খেলো। সে আর যাইহোক আমাকে খুন করবে না। তাই ওকে আমি সব বলতে বলি। আর ও আমাকে তোমার কথা বলে, ছিঃ ইয়াসিন চাচা তুমি কি করে করলে এসব?
ইয়াসিন চাচাঃ অনেক বড় খেলোয়ার তোমরা!

নাবিলাঃ তোমরা কি কম নাকি?
আনোয়ার খাঁনঃ তা এখন কি করবি? ৭বছর আগে যখন কিছু করতে পারিসনি। আর এখনও কিছু করতে পারবি না।
ডালিমঃ চাচ্চু সামান্য সম্পতির জন্য। তুমি আমাকে এতিম করে দিলে? আমার ড্যাড কে বলতে তাহলেই হতো!
আনোয়ার খাঁনঃ তোর বাপ ছিলো লোভী। তাই তো বাবার সব সম্পতি। নিজের নামে করিয়েছিলো।
ডালিমঃ না ড্যাড বড় ছিলো। তাই দাদু সব সম্পতি ড্যাড কে দিয়েছিলো। তুমি এর জন্য ওদের মেরে ফেললে? আমার বোন কেও ছাড় দিলেনা?
আনোয়ার খাঁন শয়তানি হেসে বললো,

  • দেখ তোর মা বাবা কে মেরে। আমি আর ইয়াসিন তো বাইরে চলে এসেছিলাম। যাদের সাথে নিয়ে গিয়েছিলাম। ওরা বললো তোর বোন কে!
    আর কিছু বলার আগেই। ডালিম ওনার নাক বরাবর ঘুষি মারলো। আনোয়ার খাঁনের নাক দিয়ে রক্ত পড়ছে। মুন্না ক্ষেপে গিয়ে বললো,
  • তুই আমার ড্যাড কে মারলি?
    ডালিমঃ মুন্না তুই এসবে থাকিস না। আমি তোকে অনেক ভালবাসি। আর আমি এটাও বুঝতে পারছি। এই লোকটা তোকে উস্কে দিয়েছে। তুই নিজের কানে শুনলি তো? এই লোকটা আমাকে এতিম করেছে। এবার বল আমার ওনাকে মারাটা কি নাজায়েজ?
    মুন্না থমকে গেলো। আর ভাবতে লাগলো ডালিম যা বলেছে ঠিক!

মুন্নাঃ এতকিছুর পরও তুই আমাকে ভালবাসিস?
ডালিমঃ হ্যা ভালবাসি তুই ভাব। এই লোকটা ভাল হলে। কোনদিনও তোকে খারাপ রাস্তায় আনতো না।
মুন্না আর কি বলবে? ডালিম যা বলেছে একদম ঠিক। মুন্না চোখ মুখ খিচে বললো!

  • ভাই ওনাকে কঠিন শাস্তি দে।

ডালিম বাঁকা হেসে গার্ডদের ডাকলো!
ডালিমঃ এদের দুজন কে নিয়ে যা আমি আসছি।
ওরা ইয়াসিন আর আনোয়ার খাঁন কে নিয়ে গেলো!

মুন্নাঃ ভাই তুই বাঁচলি কি করে?
ডালিমঃ আমার কিছুই হয়নি। ওইসব নাটক ছিলো।
মুন্নাঃ তাহলে ওই রক্ত?
ডালিমঃ কেনা রক্ত সব সাজানো। ডক্টর কেও মিথ্যে বলতে বলেছিলাম। আর তানিসা ও সাজানো একটা ক্যারেক্টার। এবার আমি আসছি তোরা থাক!
মুন্নাঃ আই এম সরি ভাই।
ডালিমঃ ইটস ওকে মুন্না। আমি জানি এতে তোর দোষ নেই। সব ওই লোকটার দোষ!
ডালিম বেরিয়ে চলে যায়। যেখানে ওদের আটকে রেখেছে। ডালিম গিয়ে চেয়ার নিয়ে ওদের সামনে বসলো।
আনোয়ার খাঁনঃ ডালিম আমি তোর চাচ্চু। আমাকে ছেড়ে দে বাবা!

ডালিমঃ শুধু আমাকে মারতে চাইলে। আমি হয়তো তোমাকে ছাড়তাম। কিন্তু তুমি আমার পরিবার কে মেরেছো। কেন চাচ্চু কেন করলে?
ডালিম এতক্ষণ পর। এখন কান্না করতে করতে বললো, এরপর এক প্রকার গর্জন করে বললো,

  • লোকমান শিক নিয়ে আয়!

লোকমান শিক আনতেই। ডালিম নিয়ে আনোয়ার খাঁনের। বুকে ঢুকিয়ে দিলো জলন্ত শিক ঢোকাতে। উনি চিৎকার করে উঠলো। সাথে সাথে ডালিম ধারালো ছুড়ি দিয়ে। ওনার জিহ্বা কেটে ফেললো। বুক থেকে শিক বের করায়। কলিজাটা বেরিয়ে চলে এলো। ইয়াসিন থরথর করে কাঁপছে। ডালিম আনোয়ারের বুকে মুখে। গুড়ামরিচ দিয়ে দিলো ছটফট করতে করতে। মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লো আনোয়ার খাঁন। এরপর ইয়াসিন কেও একই ভাবে মারলো। মারার পর ডালিম কাঁনা করলো। তারপর লোকমান কে বলে চলে গেলো।
ডালিম কিছুক্ষণ বাইরে থেকে। বাড়ি চলে গেলো বাড়ি গিয়ে। রুমে ঢুকতেই ডালিম থ। পুরো রুম সাজানো পাশেই। নাবিলা দাড়িয়ে আছে লাল শাড়ি পড়া। নাবিলা ডালিমে’র কাছে চলে এলো। কাছে এসে ডালিমে’র গলা জড়িয়ে ধরলো!

ডালিমঃ জান আর ইউ ওকে?
নাবিলাঃ ইয়েস আই এম ওকে। আমি তোমার সাথে মিলেমিশে। একাকার হয়ে যেতে চাই ডালিম।
ডালিম বুঝলো নাবিলা কি চাইছে। ডালিম ও চায় নাবিলা কে পেতে। তাই ডালিম নাবিলা কে কোলে তুলে নিয়ে বিছানায় গেলো। নাবিলা কে বিছানায় শুইয়ে দিয়ে। নাবিলা’র ঠোটে ঠোট ছুইয়ে। গলায় মুখ গুজে দিলো। ওদের মাঝে আর কোনো বাধা রইলো না!
দিন গিয়ে মাস কেটে গেলো। এভাবে ৬মাস চলে গেলো। নাবিলা আর ডালিম ভালই আছে। মুন্না ও ওদের সাথে থাকে। ইদানিং নাবিলা কিছু খেতে পারেনা। গা গুলিয়ে বমি পায়। ডালিম কে বললে চিন্তা করবে। এটা ভেবে চেপে গিয়েছে। ডালিম আর মুন্না ড্রয়িংরুমে। নাবিলা ও শিরি দিয়ে নামছে ওদের কাছে যাবে। লাস্ট শিরিতে এসেই নাবিলা’র মাথা ঘুরে উঠলো। নাবিলা পড়ে যেতে গেলেই। ডালিম দৌড়ে এসে ধরে ফেললো। ততক্ষণে নাবিলা সেন্সলেস হয়ে গেলো।
ডালিমঃ জান কি হলো তোমার?
মুন্নাঃ ভাই ভাবী কে রুমে নিয়ে চল!

ডালিম নাবিলা কে রুমে নিয়ে। নিজেই দেখতে লাগলো। ডালিমে’র চোখে মুখে খুশির ঝলক। মুন্না ভ্রু কুঁচকে বললো,

  • তোর বউ অসুস্থ তোকে খুশি লাগছে কেন?
    ডালিমঃ মুন্না তুই চাচ্চু হবি। আমি পাপা হবো!
    মুন্নাঃ সত্যি?
    ডালিমঃ সত্যি আমি যে কতটা খুশি হয়েছি।
    মুন্নাঃ আমি এক্ষুণি মিষ্টি কিনতে যাচ্ছি!

মুন্না যাওয়ার পর নাবিলা’র সেন্স এলো।
ডালিমঃ জান আমি পাপা হবো তুমি মাম্মা।
নাবিলা নিজের পেটে হাত রাখলো। ডালিম খুশিতে কেঁদেই ফেলেছে!
ডালিমঃ আমাদের বেবী ছোট ছোট হাত, পা। ও মাই গড আমাদের সন্তান জান।

নাবিলা ডালিম কে দেখছে। কতটা খুশি হয়েছে ডালিম। ভেবে নাবিলা ও খুশি হলো!
এদিকে কেউ একজন বলছে।
যত আনন্দ করার করে নাও। আসল খেলা তো এবার হবে। আমিও দেখি এত খুশি তখন কোথায় থাকে?


পর্ব ১৭

ডালিম আজ অনেক খুশি। আর খুশি হবারই কথা। বাবা হওয়ার অনুভূতি অনুভব করছে। সেটাও প্রথমবার নাবিলা ও খুশি। বারবার নিজের পেটে হাত রাখছে। হয়তো নিজের সন্তান কে ফিল করতে চাইছে। ডালিম দরজার পাশে দাড়িয়ে। নাবিলা’র কান্ড দেখছে আর মুচকি হাসছে। এবার ভেতরে এসে বললো!

  • জান তুমি কি করছো?
    নাবিলা উত্তেজনা নিয়ে বললো,
  • ডালিম আমি আমার বেবী কে। খুব করে ফিল করতে চাইছি। আমি তো ভাবতেই পারছি না এখনো। আর মাএ কয়েকমাস পর। আমারও একটা কিউট ছেলে থাকবে!
    ডালিমঃ ছেলে মানে?
    ভ্রু কুঁচকে বললো ডালিম।

নাবিলাঃ ছেলে মানে ছেলে। আমি চাই তোমার মতো। একটা কিউট গুলুমুলু ছেলে!
ডালিমঃ নো আমার মেয়ে চাই। তোমার মত কিউট হবে।
নাবিলাঃ না ছেলে হবে ওকে?
ডালিমঃ না মেয়ে হবে ওকে?

ডালিম আর নাবিলা রীতিমত। ঝগড়া করতে শুরু করেছে। মুন্না রুমে এসে ওদের দেখে। ওর চোখ কপালে ওঠার উপক্রম!
মুন্নাঃ আরে ভাই, ভাবী কি করছো তোমরা?
নাবিলাঃ ভাইয়া দেখো না। আমি বলছি ছেলে হবে আমার। আর ডালিম বলছে মেয়ে।
নাবিলা মুন্না কে ভাইয়া বলে,
মুন্নাঃ ভাই এটা একদম ঠিক না। আমিও তো চাই আমার। কিউট একটা ভাতিজা হোক।
ডালিমঃ হোয়াট?

নাবিলা, মুন্নাঃ ইয়েস ছেলে চাই।
ডালিম অসহায় হয়ে বললো!

  • দেখো জান আমি বললাম। আমার একটা মেয়েই হবে!
    নাবিলাঃ হু আমিও বললাম ছেলে হবে।

এদিকে নাবিলা প্রেগন্যান্ট শুনে। সবাই খুব খুশি হয়েছে। আরাফ, ইমন, সিয়াম, কবির। ৪জন তো লাফালাফি করছে। ইমরান চৌধুরী, কণা চৌধুরী। আর কবিরে’র বাবা ছেলেদের কান্ড দেখছে। এরমাঝে বাইরে থেকে অনু এলো!
অনুঃ একি কি হচ্ছে এসব? তোমরা এভাবে লাফাচ্ছো কেন?
কবিরঃ আরে অনু আমরা মামা হবো। তুই খালামনি হতে চলেছিস।
অনুঃ ভাইয়া সত্যি?
সিয়ামঃ হ্যা রে সত্যি!

ব্যাস অনু ও যোগ দিলো ওদের সাথে। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। এরপর সবাই রেডি হয়ে মিষ্টি নিয়ে। ডালিম’দের বাড়িতে গিয়ে হাজির হলো।
নাবিলাঃ তোমরা?
ওরা ড্রয়িংরুমে বসা ছিলো। কলিংবেল বাজতেই নাবিলা দরজা খোলে। আর দরজা খুলে দেখে ওদের বাড়ির লোকজন। নাবিলা সবাই কে জড়িয়ে ধরে!
ডালিমঃ মাম্মা, পাপা তোমরা এসেছো। খুব ভাল করেছো এসো। এত সহজে আর যেতে দিচ্ছিনা।
ইমনঃ আমরা সন্ধ্যার আগে চলে যাবো!

মুন্নাঃ নো ওয়ে সেটা হচ্ছে না।
নাবিলাঃ একদম থাকতে হবে অনেকদিন!
সবাই অনেক মজা করছে। নাবিলা রফিক কে ফোন দিয়ে আসতে বললো, তাই কিছুক্ষণ পর রফিক চলে এলো। রফিক আর আরাফ চোখাচোখি করছে। ডালিম আর নাবিলা বাকীরা হাসছে।
ডালিমঃ আমরা কিন্তু সব দেখতে পাচ্ছি!
সিয়ামঃ আমিতো আগেই দেখেছি।

ইমনঃ আমিও দেখেছি এখন তোমরা দেখো।
সবাই জোরে হেসে দিলো। রফিক আর আরাফ লজ্জা পেয়ে। মাথা নিচু করে ফেললো!
কবিরঃ বাপরে আরাফ ভাইয়া লজ্জাও পায়?
আরাফঃ কেন লজ্জা কি তোদের। ব্যক্তিগত সম্পতি নাকি? যে অন্যদের পেতে নেই?
কবির ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো।
এদিকে একজন বলছে!
খুব শান্তিতে আছো দেখছি। কিন্তু আফসোস এই শান্তি। আমি বেশী দিন থাকতে দেবো না। একবার তোমাদের বেবী এই পৃথিবীতে আসুক। তারপর হবে আসল মজা।

রাতে ডিনার করছে সবাই!
অনুঃ ইমন আস্তে খাও।
ইমন সহ সবাই অবাক হয়ে তাকালো!
ইমনঃ এই ডায়নি আমি কি রাক্ষস? যে তোর মত খাবো। আমি তো আস্তেই খাচ্ছি!
অনু তেলে বেগুনে জ্বলে উঠে বললো,

  • কি আমি ডায়নি? তুই ডায়নি তোর ১৪গুষ্টি ডায়নি!

সবাই হা হয়ে তাকিয়ে আছে। আর সবাই ডালিম, মুন্না। আর নাবিলা’র মা বাদে রেগে তাকিয়ে আছে।
নাবিলাঃ এই কি বললে তুমি আপু? ১৪গুষ্টি ডায়নি মানে কি? ১৪গুষ্টির ভেতরে যে আমি। আমার মতো মাসুম কিউট ভোলা ভালা। মেয়েটা আছে সেটা তোমার খেয়াল আছে?
অনু দাত কেলিয়ে বললো!

  • সরি বোন মিস্টেক হয়ে গিয়েছে।
    ডালিমঃ তুমি আর ভোলা ভালা? তাহলে তো হয়েই গেলো!
    নাবিলা দাত কিড়মিড় করে বললো,
  • কি বলতে চাও তুমি? আমি ভোলা ভালা না?
    ডালিমঃ এই হলো তোমার ভোলা ভালার নমুনা!
    সবাই হেসে দিলো নাবিলা রেগে তাকালো।
    মুন্নাঃ ভাই এটা কিন্তু ঠিক না। তুমি শুধু শুধু ভাবী কে জ্বালাচ্ছো!
    নাবিলাঃ হ্যা মুন্না ভাইয়া। তুমিই একমাএ আমাকে বুঝলে।
    ডালিম ভ্রু কুঁচকে তাকালো!

নাবিলাঃ তুমি আর মুখ খুলবে না।
ডালিম বেচারা ভয় পেয়ে চুপ হয়ে গেলো!
রফিকঃ ভাবা যায় আরাফ? আমাদের জিজু মাফিয়া জিজু। তার একমাএ বউ কে ভয় পায়।
ইমন হেসে হেসে বললো!

  • আসলেই ভাবা যায় আরাফ?

আরাফ আর রফিক বিষম খেলো। আর সবাই শব্দ করে হেসে দিলো। সিয়াম হাসতে হাসতে বললো,

  • তো মাম্মা ভাইয়ার বিয়ে কবে হচ্ছে?
    আরাফঃ ওই সিয়াম কি বলছিস?

ইমনঃ ভাইয়া তুমি কিন্তু একদম। সিয়াম ভাইয়া কে আটকাবে না। এবার তোমার বিয়ে আমরা দেবো!
আরাফঃ আর তুমি কবে বিয়ে করবে? এইযে অনু কবে বিয়ে করছো? আর আমার আরো ২ভাই।
আরো ২ভাই বলতেই। সিয়াম আর কবির বিষম খেলো। নাবিলা আর ডালিম হা করে আছে!
নাবিলাঃ মানে ওদেরও জিএফ আছে?

আরাফঃ আমাদের সিয়াম বাবুর জিএফ হচ্ছে। সিয়ামা রহমান মেঘা। মানে মেঘ আর কবির বাবুর।
কবিরঃ হে হে কেউ নেই আমার!
সিয়ামঃ কবির মিথ্যে কথা বলতে হয় না। তোর জিএফের নাম রিয়া রাইট?
নাবিলাঃ আর আমাদের মুন্না ভাইয়া?

মুন্না এতক্ষণ হাসছিলো। এবার চোখ বড় বড় করে তাকালো।
ইমনঃ মুন্না ভাইয়া বলে ফেলো!
মুন্নাঃ আমার কেউ নেই।
দাত কেলিয়ে বললো মুন্না!
ডালিমঃ তাহলে আমরা মেয়ে দেখে। তোর ভাল জায়গায় বিয়ে করিয়ে দেবো।
মুন্না চেচিয়ে বলে উঠলো!

  • নোওওওওওও তাহলে দিয়া’র কি হবে?
    বলে মুখে হাত দিলো। আর সবাই হেসে দিলো।
    ডালিমঃ এবার বলো বিয়ে কবে করছো?
    ইমরান চৌধুরীঃ আমি ভাবছি একসাথেই সবার বিয়ে হবে!
    নাবিলাঃ ওয়াও পাপা গ্রেট ডিসিশন।

কণা চৌধুরীঃ হুম ভাল বলেছো!
এভাবেই মজা করতে করতে। সবাই ডিনার শেষ করলো। এখানে কয়েকদিন থেকে। নাবিলা’র পরিবারের সবাই ফিরে গেলো। দিন যেতে লাগলো ৪মাস চলে গেলো। এক এক করে সবাই বিয়ে করলো। ওদের জীবনে এখন কোনো দুঃখ নেই। ধুমধাম করেই সবাই বিয়ে করেছে। আফটার অল খাঁন আর চৌধুরী বলে কথা। মুন্নাে’র বউ দিয়া খুব ভাল। সময় পেলেই দিয়া আর নাবিলা। গল্প করতে বসে যায় মুন্না এখন অফিসে যায়।

আরো ৩ মাস চলে গেলো। নাবিলা’র প্রেগন্যান্সির এখন ৮মাস চলে। আগের থেকে খিটখিটে হয়ে গিয়েছে নাবিলা। সবসময় রেগে থাকে ডালিমে’র সাথে রেগে কথা বলে, এটা খাবোনা, ওটা খাবোনা। এটা করবো না, ওটা করবো না। রাত নেই দিন নেই। অনেক সময় রাত ৩টা নেই ৪টা নেই। উঠে খেতে চায় ডালিম হাসি মুখে এনে দেয়। খেতে না খেতে আবার বমি করে দেয়। ডালিম হাসি মুখে আগে নাবিলা কে ফ্রেশ করে। এরপর নিজে ফ্রেশ হয়ে নেয়!

নাবিলা মাঝে মাঝে খুব অবাক হয়। একজন মাফিয়া হয়েও ডালিমে’র ধৈর্য্য দেখে। নাবিলা নিজেকে এখন লাকি মনে করে। যে জীবনে ও ভাল কিছু করেছে। যার জন্য ও ডালিম কে নিজের। হাসবেন্ড হিসেবে পেয়েছে।
দেখতে দেখতে নাবিলা’র। ডেলিভারীর দিন এগিয়ে আসছে। আর ডালিমে’র ভয়টাও বাড়ছে। ভয়টা নাবিলা কে নিয়ে হয়। যেখানে ভয় নাবিলা’র পাবার কথা। সেখানে ভয় ডালিম পায়। ডালিমে’র চোখে ঘুম নেই। নাবিলা’র মুখের দিকে তাকিয়ে আছে!
ডালিমঃ আল্লাহ প্লিজ তুমি দেখো। আমার জান আর আমার বেবী। দুজনেই যেন সেভ থাকে।
হঠাৎ নাবিলা ঘুমের মাঝে। নিজের পেটে হাত দেয়। এপাশ ওপাশ করছে একসময়। জোরে চেচিয়ে ওঠে ডালিম ভয় পেয়ে যায়!
ডালিমঃ জান কি হলো ব্যথা করছে?

নাবিলাঃ ডালিম আমার খুব ব্যথা করছে। আহ ডালিম আমি মরে যাচ্ছি।
ডালিম প্রচুর ঘামছে। চোখ ছলছল করছে তাড়াতাড়ি। নাবিলা কে কোলে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে। মুন্না কে ডাকে ডাক শুনে। মুন্না আর দিয়া দুজনেই বেরিয়ে আসে। এরপর নাবিলা কে নিয়ে হসপিটালে চলে আসে। ডক্টর নাবিলা কে নিয়ে ওটিতে যায়। আজও ডালিমে’র সাহস হচ্ছেনা ওটি করার। নাবিলা ব্যথায় চিৎকার করছে। যা ওটি ভেদ করে বাইরে আসছে। ডালিমে’র মনে হচ্ছে কেউ ওর কলিজায়। ছুড়ি দিয়ে অনবরত আঘাত করছে। ডালিমে’র চোখ দিয়ে পানি পড়ছে!
নাবিলা’র বাড়ির সবাই চলে এসেছে।
মুন্নাঃ ভাই ভাবীর কিছু হবে না!

ডালিমঃ আমি যদি জানতাম। বেবী হওয়ার সময় জান এত কষ্ট পাবে। বিশ্বাস কর মুন্না তাহলে আমরা বেবী নিতাম না। প্রয়োজনে এডোপ্ট করতাম।
কাঁদতে কাঁদতে বলে ডালিম। সবাই অবাক হয়ে যায়। নাবিলা’র প্রতি ডালিমে’র ভালবাসা দেখে। একটুপরেই বাচ্চার কান্নার আওয়াজ এলো। আর সবকিছু স্তব্ধ হয়ে গেলো। ডালিমে’র হাত পা কাঁপছে এখন। নার্স সাদা কাপড়ে পেচিয়ে। একটা ফুটফুটে বেবী কে নিয়ে এসে বললো!

  • বেবীর বাবা কে?
    ডালিম এগিয়ে এসে বললো,
  • আমার ওয়াইফ কেমন আছে?

এবারও সবাই অবাক হলো। নার্স বুঝলো ডালিম’ই বেবীর বাবা। তবে অবাক হলো বেবী কে না নিয়ে। আগে ওয়াইফ কেমন আছে জানতে চাইছে!
নার্সঃ আপনি বেবী কে নেবেন না?
ডালিমঃ আগে বলুন আমার ওয়াইফ কেমন আছে?

নার্স হেসে দিয়ে বললো,

  • স্যার আপনার ওয়াইফ। একদম ঠিক আছে এবার। আপনার ছেলে কে কোলে নিন!
    ডালিম একটা সস্তির নিঃশ্বাস ফেলে। কাঁপা হাতে বেবী কে কোলে নিলো। খুশিতে ওর চোখে পানি চলে এলো। বেবীর সারা মুখে চুমু খেলো। সবাই বেবী কে কোলে নিচ্ছে। একটুপর ডক্টর বললো নাবিলা কে কেবিনে দিয়েছে। ডালিম বেবী কে নিয়ে নাবিলা’র কাছে গেলো। নাবিলা তখন তাকিয়েই ছিলো।
    নাবিলাঃ আমার বেবী ওকে দাও!

ডালিম নাবিলা’র কাছে বেবী দিলো। নাবিলা বেবী কে কোলে নিয়ে। অজস্র চুমু খেলো এক নিমিষে। সব কষ্ট ভুলে গেলো বেবী কে। বুকের সাথে হালকা ভাবে মিশিয়ে রেখেছে। এমন সময় কেবিনে একজন। মাস্ক পরিহিত ডক্টর এসে বললো,

  • মিস্টার খাঁন এই মেডিসিন লাগবে!

ডালিম ঠিকমত না দেখেই। লোকটার হাত থেকে পেসক্রিপশন নিয়ে। ডালিম বাইরে চলে এলো। এদিকে ডালিম বাইরে আসতেই। লোকটা নাবিলা কে একটা ইনজেকশন দিয়ে দিলো। নাবিলা সাথে সাথে ঢলে পড়লো। লোকটা নাবিলা’র বেবী কে কোলে নিলো। ডালিম বাইরে এসে পিসক্রিপশন দেখে। অবাক হয়ে গেলো কি মনে করে। দৌড়ে আবার কেবিনে চলে গেলো। কেবিনে গিয়ে দেখলো নাবিলা ঢলে পড়ে আছে। আর লোকটা কেবল জানালা দিয়ে নামতে গিয়েছে। ডালিম গিয়ে ধরে ফেলে সবাই কে ডাকে।

ডাক শুনে সবাই ভেতরে চলে আসে। এসে দেখে এই অবস্থা। ডালিম বেবী কে নিয়ে দিয়া’র কোলে দেয়। আর লোকটাকে ইচ্ছে মতো মারতে থাকে। মারতে মারতে মাস্ক খুলে ফেলে!
ডালিমঃ আসলাম তুই?
আসলামঃ হ্যা আমি ছাড় আমাকে।

ডালিমঃ তোকে কি করে ছাড়বো? আমার বেবী চুরি করতে এসেছিস। এত বড় কলিজা তোর? তোর কলিজাটা তো আমি দেখবো!
এরপর লোকমান কে ফোন দেয়। লোকমান এসে আসলাম কে নিয়ে যায়। ডালিম নাবিলা কে গিয়ে দেখে বোঝে। নাবিলা সেন্সলেস হয়ে গিয়েছে। এই সুযোগে ডালিম চলে যায়।
চেয়ারে শিকল দিয়ে বেধেছে আসলাম কে। সামনে চেয়ারে বসে আছে ডালিম। মুখে শয়তানি হাসি ডালিমে’র। আসলাম ভয় পাচ্ছে কিন্তু প্রকাশ না করে বললো!

  • ডালিম আমাকে ছাড় বলছি। তুই আমার ভাই কে মেরেছিলি। তাই আমি তোর ছেলে কে চুরি করে। তোকে শাস্তি দিতে চেয়েছি।
    ডালিমঃ তোর সাহস কি করে হলো? তুই আমার সদ্য জন্ম নেয়া। ছেলে কে চুরি করতে এসেছিস? তুই ভুলে গিয়েছিলি আমি একজন ডক্টর। তোকে আমি ভয়ংকর মৃত্যু দেবো। তোর ভাই কে বলেছিলাম। যেন আমার থেকে দুরে থাকে। তোর ভাই উঠে পড়ে লেগেছিলো। দুনিয়ার সামনে আমার চেহারা দেখাতে। আমার অবাধ্য হয়েছে তাই ওকে মেরেছি। এবার তোর পালা আসলাম!

ডালিম আসলাম কে ওর স্টাইলে। মেরে ফেললো এরপর লোকমান কে। লাশ গুম করতে বলে হসপিটালে গেলো। ২দিন পর নাবিলা কে বাড়ি নিয়ে এলো। বেবী পেয়ে সবাই খুব খুশী। ডালিম তো ছেলে ছাড়া পাগল। একদিকে নাবিলা তো আরেকদিকে ছেলে। ছেলের নাম রাখা হলো আরিয়ান খাঁন।
৭বছর পর!

আজ ইমনে’র মেয়ে। সিনথিয়া’র ১বছরের জন্মদিন। সবাই অনেক মজা করছে। আরাফ’র ১ছেলে নাম বিহান বয়স ৫বছর। সিয়ামে’র ও ১ছেলে নাম রাজ বয়স ৫রানিং। কবিরে’র ১টা মেয়ে নাম উপমা। উপমা’র বয়স ৪বছর। মুন্নাে’র ও ১ মেয়ে নাম আদ্রিতা বয়স ৫বছর। আরিয়ান হিরোর স্টাইল করে হাটছে। হঠাৎ ওর মেজাজ গরম হয়ে গেলো। আদ্রিতা কে আরেকটা ছেলের সাথে কথা বলতে দেখে। গিয়ে ইচ্ছেমতো আদ্রিতা কে বকলো। বকা খেয়ে বেচারী ভ্যা ভ্যা করে কেঁদে দিলো। নাবিলা আর দিয়া চলে এলো।
দিয়াঃ আদ্রিতা কি হয়েছে?

আদ্রিতাঃ ভাইয়া বকেছে!
নাবিলাঃ আরিয়ান কেন বকেছো?
আরিয়ানঃ মাম্মী ও ওই ছেলেটার সাথে কথা বলেছে।
নাবিলাঃ তো কি হয়েছে?

আরিয়ান রেগে বললো!

  • ও শুধু আমার সাথে কথা বলবে।
    বলে হনহন করে চলে গেলো। দিয়া হেসে দিয়ে বললো!
  • ভাবী দেখো আরিয়ান বড় হয়ে। ডালিম ভাইয়ার দ্বিগুন রাগী হবে।

১৫বছর পর!

ভার্সিটি থেকে সবাই ঘুরতে এসেছে। আরিয়ান আর আদ্রিতা ও এসেছে। ওরা একই ভার্সিটিতে পড়ে। আদ্রিতা অনার্স ফার্স্ট ইয়ারে পড়ে। আর আরিয়ান ফাইনাল ইয়ারে। আসলেই আরিয়ান ডালিমে’র চেয়ে দ্বিগুন রাগী। আর স্টাইল, চেহারা ও ডালিমে’র মতো। এক কথায় হ্যান্ডসাম, ড্যাসিং। আদ্রিতা ও মাশা আল্লাহ দেখতে। আরিয়ান একপাশে ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলছে। এরমাঝে ওর চোখ গেলো। আদ্রিতা হেসে হেসে ওরই ইয়ারের। রাফি’র সাথে কথা বলছে। সাথে সাথে আরিয়ানে’র রাগ উঠে গেলো। রাফি আদ্রিতা’র হাত ধরলো। এবার আর আরিয়ানে’র সহ্য হলো না। সবার সামনে গিয়ে আদ্রিতা কে কিস করলো। সবাই হা করে তাকিয়ে আছে। আদ্রিতা শকড হয়ে গিয়েছে। আরিয়ান আদ্রিতা কে ছেড়ে বললো,

  • আজকের পর কোনো ছেলের সাথে কথা বললে। এর থেকে বেশী কিছু হবে মাইন্ড ইট!
    আরিয়ানে’র সামনে একজন এসে বললো,
  • তুমি মাফিয়া ডালিম খাঁনে’র ছেলে না?

আরিয়ানঃ ইয়েস আই এম আরিয়ান খাঁন। বাট আই এম নট মাফিয়া। আই এম Villain, The Villain Lover!
বলে আরিয়ান বাঁকা হাসলো।
আরিয়ান খাঁন ডালিম খাঁনে’র ছেলে। ডালিমে’র কার্বন কপি। রাগটা ডালিমে’র চেয়ে বেশী!

সমাপ্ত

দ্য ভিলেন লাভার
লেখিকাঃ নাবিলা ইসলাম নাবিলা

আরো পড়ুন – হৃদয় ছোঁয়া প্রেমের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *