আজও ভালোবাসি – খুনশুটি ভালোবাসার গল্প: আরাফের কথা শুনে মারিয়ার মনে হলো ওর বুকের ভিতর কেউ হাতুড়ি দিয়ে মারছে। ও আর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। পুরো গল্পটি পড়ুন অবশ্যই ভালো লাগবে।
পর্ব ১
পাঁচ বছর পর নিজের ভালোবাসার মানুষের সামনে দাঁড়িয়ে আছে আরাফ। নিজের মেয়ের জন্মদিনের অনুষ্ঠানে এসেছে সে। কিন্তু সে জানেই না যে মেয়েটা তার।
মারিয়া ও খুব অবাক হয় এতোদিন পর নিজের ভালোবাসার মানুষকে দেখে। আর এটা দেখে আরোও অবাক হয় যে আরাফ ওদের মেয়ে কে কোলে নিয়ে ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। তাহলে কি সবকিছু জেনে গেল ও।
নাহহহ। আর ভাবতে পারছে না। অপলক তাকিয়ে আছে দুজন দুজনের দিকে।
কতক্ষণ এভাবে ছিলো ওদের জানা নেই। কিন্তু ওদের ঘোর কাটে অনিকার কথায় (ফারহাত অনিকা। ওদের মেয়ে)
_ মাম্মা, তোমাকে আমার প্রিন্স আংকেল এর কথা বলেছিলাম না। এই হলো আমার প্রিন্স আংকেল। আর প্রিন্স আংকেল। এই হলো আমার মাম্মা।
মারিয়া এখনো চুপ করে দাড়িয়ে আছে। ও কি করবে ভাবতে পারছে না। তবে ও এটা খুব ভালো করে বুঝতে পেরেছে আরাফ এখানে সব জেনে নয়। না জেনে এসেছে। কারণ ও জানলে এখানে আসতো না।
মারিয়াকে চুপ থাকতে আরাফ নিজেই আগে কথা বললো, কারণ ও চায় না সবার সামনে ওদের অতীত চলে আসুক।
_ হাই্ আমি আরাফ। অনিকার কাছে নিশ্চয় আমার কথা শুনেছেন।
আরাফ কথা শুনে মারিয়া খুব অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিয়ে কথা বলতে শুরু করলো কারণ ও নিজেও চায় না সবার সামনে কনো সিনক্রিয়েট করতে।
_ হ্যা, অনিকার কাছে আপনার কথা অনেক শুনেছি। তো কেমন আছেন আপনি? (জোর পূর্বক হাসার চেষ্টা করে)
_ আছি ভালোই। তো আপনি কেমন আছেন?
_ এইতো চলছে।
মারিয়ার কথার মাঝখানে একজন সুদর্শন পুরুষ এসে ওদের সামনে দাড়ালো। অনিকা তাকে দেখেই বাবাই বলে তার কাছে গেল। এটা দেখে আরাফ যেন নিজের চোখ কে বিশ্বাস করতে পারছে না। তারমানে মারিয়া সত্যি ই নতুন করে নিজের জীবন সাজিয়ে নিয়েছে। ভেবেই একটা তাছছিল্লের হাসি দিলো আরাফ। ও আর একমুহূর্ত এখানে দাড়িয়ে থাকতে পারছে না। কিন্তু তবুও ও নিজেকে সামলে নিয়ে ওখানে দাঁড়িয়ে থাকলো।
আরাফের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ওর বন্ধু নিলীম বেশ বুঝতে পারছে আরাফের মনের মধ্যে কি চলছে? তাই ও চায়ছে যাতে তাড়াতাড়ি আরাফ কে এখান থেকে নিয়ে যেতে পারে।
তারপর সবাই মিলে অনিকাকে কেক কাটতে নিয়ে গেলো।
এভাবে অনুষ্ঠান শেষ হলো। আর আরাফ ও ওখান থেকে চলে আসবে সেই সময় মারিয়াকে একা দাড়িয়ে থাকতে দেখে ও ওর কাছে গেল। আর বললো,
_ বাহ! ভালোই তো নিজের সংসার সাজিয়ে নিয়েছো। তাহলে আগে শুধু শুধু নাটক কেন করেছিলে যে তুমি শুধু আমাকেই ভালোবাসো। আমাকে ছাড়া তুমি বাঁচবে না, হুহ। আসলে তোমাদের মতো মেয়েরা এমনই হয়। লো ক্লাস মেন্টালিটির মেয়ে তোমরা।
আরাফের কথা শুনে মারিয়ার মনে হলো ওর বুকের ভিতর কেউ হাতুড়ি দিয়ে মারছে। ও আর নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। কিন্তু মুখে কিছু বলতেও পারছে না। কারণ ও জানে আরাফ ওর কোনো কথা বিশ্বাস করবে না। তাই শুধু শুধু বলে কোনো লাভ নেই।
তারপর আরাফ ও আর কোনো কথা না বলে নিলীমের সাথে বাড়ি চলে যায়।
মারিয়া ও নিজেকে সামলে নিয়ে বাড়ির ভিতরে এসে দেখে অনিকা কবিরের সাথে খেলা করছে।
মারিয়া ওখানে যেতেই অনিকা ছুটে এসে ওর কোলে ওঠে।
মারিয়া ও মেয়েকে বুকে জড়িয়ে নেই। তারপর কবিরকে বলে,
_ ভাইয়া, তুমি একা কেন এলে? ভাবি কোথায়?
_ আার বলিস না। দুজনে একসাথে রেডি হয়ে বেরিয়েছি। সেই সময় ওর স্কুল থেকে ফোন আসছে ওকে এখনি যেতে হবে। তাই আর কি করার!
_ তাহলে এক কাজ করি ভাবি ফোন দিয়ে এখন এখানে আসতে বলি। তোমরা আজ থেকে কালকে যেও।
_ হ্যা, মাম্মা। খুব ভালো হবে। বাবাই তুমি কিন্তু আজ যেতে পারবে না।
_ ঠিক আছে মা। যাবো না।
_ তাহলে ভাবির কাছে ফোনটা করি।
_ আচ্ছা।
রাতে….
আরাফ একা ছাঁদে দাড়িয়ে আছে আর আজকের কথা গুলো ভাবছিলো। তখনই পিছন থেকে কেউ ওর কাধে হাত রাখে।
ও পিছনে ফিরে দেখে নিলীম দাঁড়িয়ে আছে। ও নিলীমের দিকে একবার তাকিয়ে আবার আগের মতো করে দাড়িয়ে থাকে।
তারপর নিলীম জিজ্ঞেস করে।
_ কিরে। এতো রাত হয়ে গেছে। এখনো এখানে দাড়িয়ে আছিস যে। ঘুমাবি না।
_ ঘুম আসছে না।
_ হুম। জানি গত পাচ বছর ধরেই তোর এমনই হয়। আর কতো আরাফ। কতো কষ্ট দিবি আর নিজেকে। এবার সবকিছু ঠিক করে নে না ভাই। আর আমি এটাও জানি যে মারিয়াও তোর মতোই কষ্টে আছে।
নিলীমের কথা শুনে আরাফ হেসে উঠলো।
_ কিরে হাসছিস। কেন?
_ তোর কথা শুনে। তুই কি বললি মারিয়া আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। আরে ইয়ার আমি জানি। তুই সব সময় মারিয়ার সার্পোটে কথা বলিস। আর আগে তুই না জেনে বলতিস কিন্তু আজ তো নিজের চোখেই দেখলি ও তো ভালোই সুখে সংসার করছে। আর তুই কিনা বলছিস ও আমার জন্য কষ্ট পাচ্ছে। হুহ।
_ হ্যা, বলেছি। আর এখনো বলছি।
_ মানে। তুই এখনো ওকে।
_ হুম। আমি এখনো বিশ্বাস করি ভুল টা তুই করছিস। আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি। চোখের দেখা ও অনেক সময় ভুল হয় আরাফ।
তাই আমি আবার ও বলছি এখনো সবটা জানার চেষ্টা কর।
_ আর কিছু ই জানার নেই আমার।
_ আরে তুই।
_ নিলীম প্লিজ। আমি ওর নামে আর কিছু ই শুনতে চায় না। চোখের সামনে ওর স্বামী মেয়েকে দেখে ও ওর নসমে সাফাই গায়ছিস।
_ আমি মানছি সব। কিন্তু এটাও তো হতে পারে যে অনিকা তোর মেয়ে।
_ মানে! কি বলতে চায়ছিস তুই।
_ যেটা বলতে চায়ছি। তুই খুব ভালো করেই বুঝতে পারছিস।
_
_ এনিওয়ে। চল ঘুমাবি। আমাকে আবার সকালে চলে যেতে হবে না।
_ হুম। ওকে চল।
তারপর ওরা নিচে চলে আসে।
এদিকে মারিয়ার চোখে ও ঘুম নেই। বার বার শুধু আরাফের কথাই মনে পড়ছে।
মারিয়া অনিকা কে ঘুম পাড়িয়ে ছাঁদে গিয়ে দাড়ালো আর আজকের কথা গুলো ভাবতে লাগলো। ঠিক তখনই পিছনে থেকে কবির ওকে ডাক দিলো।
কবিরের ডাক শুনে মারিয়া পিছনে ফিরলো। আর বললো,
_ কিছু বলবে।
_ তোর কি হয়েছে মারিয়া? সেই অনুষ্ঠানের সময় থেকে দেখছি।
_ কিছু না। তুমি ভুল ভাবছো।
_ লুকানোর চেষ্টা করছিস।
_ নাহ। আমি তো।
_ দেখ আমি তোকে খুব ভালো করেই চিনি। তাই মিথ্যা বলার চেষ্টা করিস না। কি হয়েছে সত্যি করে বল। আর আমি এটা ও খেয়াল করেছি অনিকার ওই আংকেল আরাফ না কি যেন নাম উনাকে দেখার পর থেকে ই তুই আপসেট হয়ে আছিস আর উনাকে আমি তোর সাথে আলাদা কথা বলতেও দেখেছি। তুই কি ওকে আগে থেকে চিনিস।
কবিরের কথা শুনে মারিয়া আর কিছু লুকালো না।
_ হুম। চিনি। আর শুধু তাই নয় খুব ভালো করেই চিনি। আর উনিই অনিকার বাবা।
_ কি!
পিছনে থেকে কারো আওয়াজ শুনে মারিয়া ও কবির দুজনেই পিছনে ফিরে দেখে কবিরের স্ত্রি মালা।
_ মালা। তুমি
_ হ্যা, কবির। আমি তোমাকে ঘরে না খুজতে খুজতে এখানে এলাম আর তোমাদের কথা শুনলাম। মারিয়া কি বলছে এটা অনিকার ওই প্রিন্স আংকেল ই অনিকার বাবা।
_ হ্যা, ভাবি।
তারপর কেউ আর কোনো কথা বললো না। কারণ ওরা আরাফ কে না চিনলে ও মারিয়া আর ওর সর্মপকে সবকিছু ওরা জানে।
তারপর কবির বললো,
_ অনেক রাত হয়ে গেছে। চলো সবাই ঘুমাতে যায়।
_ ভাইয়া তোমরা যাও। আমি একটু পরেই আসছি।
_ ঠিক আছে। তাড়াতাড়ি আয়।
_ হুম।
তারপর কবির আর মালা নিচে চলে যায় আর মারিয়া ওখানে বসে তার অতীতের ভাবনায় ডুব দেয়।
কত সুন্দর ছিলো সেই সময় টা। খুব খুশি ছিলো আরাফ এবং মারিয়া দুজনেই। কিন্তু এক দমকা হাওয়াতে সব শেষ হয়ে গেল।
অতীত……..
পর্ব ২
আরাফ চৌধুরী। দেশের নাং ওয়ান বিজনেস ম্যানদের মধ্যে একজন চৌধুরী গ্রুপ অব কোম্পানির মালিক ফারহাদ চৌধুরীর একমাত্র ছেলে। বর্তমানে ঢাকা ভার্সিটিতে মাস্টার্স করছে। ভার্সিটির সব টিচার দের প্রিয় স্টুডেন্ট। ভার্সিটি টপার। এন্ড সব মেয়েদের ক্রাস। কারণ সে দেখতে অনেক সুন্দর। তার চেহারা। কথা বলার এটিটিউট ইস! সব মেয়েকে পাগল করার জন্য যতেষ্ঠ।
ছয় ফুট উচ্চতা। হলদে ফর্সা গায়ের রং। ডার্ক গোলাপি ঠোঁট। স্পাইক করা চুল। এক কথায় কোনো হিরোর থেকে কোনো অংশে কম নয় বরং বেশি।
অন্য দিকে মারিয়া। মধ্যবিত্ত পরিবারের মেয়ে। দেখতে একদম পরির মতো। গায়ের রং উজ্জ্বল ফর্সা। চোখ দুটো টানা টানা। লম্বা ৫.৪” বাবা আরমান সাহেব একজন সরকারি কর্মকর্তা। আর মা মোহিনী বেগম গৃহিণী। মারিয়া তার বাবা মায়ের একমাত্র মেয়ে। মধ্যবিত্ত পরিবারের হলেও খুব হ্যাপি তারা। মারিয়া এবার অনার্স ফাস্ট ইয়ারে ভর্তি হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
আর আজকে ওর ভার্সিটির প্রথম দিন। তাই ও তাড়াতাড়ি ভার্সিটি যাওয়ার জন্য রাস্তায় দাঁড়িয়ে ওর বেস্টু দিনার জন্য ওয়েট করছে। ও দাঁড়ানোর প্রায় আধঘন্টা পর দিনা এলো। মারিয়া তো রাগে বোম হয়ে আছে। তা দেখে দিনা ভয়ে ভয়ে বললো,
_ স সরি দোস্ত। আর কোনো দিন দেরি হপপে না আমার।
_ তোর সরির কাঁথায় আগুন। বান্দরানি। শয়তান। উগান্ডার টিকটিকি কোনহানকার? তোর জন্য প্রথম দিন ই লেট হয়ে গেছে।
_ সরি বললাম তো আমি। এবার তাড়াতাড়ি চল না। তা নাহলে আরো দেরি হয়ে যাবে।
_ ঠিক আছে চল। আজকে হাতে সময় নাই বলে বাইচা গেলি। নাহলে তোরে আজকে আমি এক মগ পানিতে চুবিয়ে মারতাম।
_ ঠিক আছে। এবার চল মেরি মা।
_ চল
তারপর ওরা ভার্সিটি চলে যায়। ওদের দেরি হয়ে গেছে বলে ওরা তাড়াতাড়ি কলেজের গেট দিয়ে ঢুকছিলো তখনই পিছনে থেকে কেউ একজন মারিয়ার ওড়না ধরে টান দেয়। মারিয়া কে তার ওড়না ধরলো। তা দেখার জন্য পিছনে ফিরে দেখে একটা ছেলে ওর ওড়না হাতে ধরে ওর দিকে খুব বাজে ভাবে তাকিয়ে আছে। তা দেখে মারিয়া বলে,
_ ওঠনাটা ছাড়ুন।
_ আরে কিউট বেবি রাগ করছো কেন।
তখন পাশ থেকে দিনা বলে ওঠে।
_ রাগ করবে না তো কি করবে না তো কি করবে? আপনি ওর ওড়না ধরে রেখেছেন কেন। ওর ওড়না ছাড়ুন বলছি।
_ যদি না ছাড়ি তো কি করবে?
এবার মারিয়া বলে ওঠে।
_ সেটা দেখার আগে আবার ও ভালো ভাবে বলছি আমার ওড়না ছাড়ুন।
_ আমি ও বলছি সোনা ছাড়বো না। এরকম একটা মাল হাতে পেয়ে কি কেউ ছেড়ে দেয় বলে ও আর ওর সাথী রা হাসতে শুরু করলো।
তখনই ঠাসসসসস করে একটা চড় পড়লো ওই ছেলেটার গালে। ছেলেটা গালে হাত দিয়ে সামনে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মারিয়ার দিকে।
হ্যা, চড়টা মারিয়াই মেরেছে।
মারিয়ার চড় মারা দেখে আশেপাশে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। কারণ এই ছেলেটা তুরাগ। একে সবাই খুব ভালো মতো চেনে। খুব বাজে একটা ছেলে। ভার্সিটির সব মেয়েরা ওর জন্য অতিষ্ঠ। কিন্তু কেউ কিছু বলতে পারে না। কারণ তুরাগ একটা বড় মাফিয়া গ্যাং এর সাথে জড়িত। একমাত্র আরাফ ছাড়া ওকে কেউ কিছু বলে ও না।
মারিয়ার চড় খেয়ে তুরাগ তো খুব রেগে যায় আর বলে,
_ তোর এত বড় সাহস। তুই আমার গায়ে হাত তুলেছিস। তুরাগর গায়ে। আমার ক্ষমতা সম্পর্কে তোর কোন ধারণা আছে। আজ দেখ আমি তোর কি অবস্থা করি? বলে যেই না ওর ওড়না ধরে সম্পূর্ণ টান দিবে তখনই আরাফ এসে তুরাগর নাক বরাবর একটা ঘুসি মারলো। আর তুরাগ ছিটকে যেয়ে নিচে পড়লো।
একটু আগে এদিকের অবস্থা দেখে আরাফের একজন বন্ধু আরাফ কে যেয়ে খবর দেয় যে তুরাগ একটা মেয়েকে আবার টিস করছে। এটা শুনে আরাফ খুব রেগে যায় কারণ তুরাগকে এতোবার বারণ করার পরও তুরাগ আবার এসব শুরু করেছে।
তারপর আরাফ ওখানে যায় আর ওকে মারতে শুরু করে।
তুরাগকে মারতে মারতে ও প্রায় আধমারা করে ফেলে। তুরাগর অবস্থা খুব খারাপ দেখে সবাই ওকে আরাফের কাছ থেকে জোর করে ছাড়িয়ে নেই।
তুরাগ তো ছাড়া পেয়েই ছুট। সাথে ওর চেলা গুলো ও।
আরাফ তুরাগ চলে যাওয়ার পর নিজের রাগ কনট্রোল করে মারিয়ার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। মারিয়া ওকে দেখে বলে,
_ অনেক ধন্যবাদ আপনাকে। আজ আপনি না থাকলে কি যে হতো।
_ ইট’স ওকে। এট’স মাই ডিউটি।
তারপর আরাফের সাথে কথা শেষ করে মারিয়া আর দিনা ক্লাসের দিকে যায়।
আর আরাফ সেতো অপলক তাকিয়ে আছে মারিয়ার যাওয়ার দিকে। মুহূর্তেই যেন ওর চোখ দুটো আটকে গেছে মারিয়ার সৌন্দর্যে। ওর চোখে মারিয়াকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরী এবং মায়াবতী মেয়ে বলে মনে হচ্ছে। ওতো এখন মারিয়ার সৌন্দর্যে বিভোর হয়ে গেছে। ওর আশেপাশে কি হচ্ছে সেদিকে ওর কোন খেয়াল নেই।
এদিকে ওর বন্ধু রা সমানে ওকে ডাকছে।
_ দোস্ত। ওদিকে কি দেখছো এমন করে।
_ বিউটি (ঘোর লাগা কন্টে)
_ কোথায় বিউটি বন্ধু? আমরা তো কেউ দেখতে পাচ্ছি না। সপ্ন দেখছো বুঝি। তাই না।
বলে সবাই একসাথে হেসে উঠলো। এবার আরাফের ঘোর কাটলো যে ও এতক্ষন কি করছিলো।
তারপর আবার ওর বন্ধু নিলীম বললো,
_ কি ব্যাপার বন্ধু প্রেমে পড়লে নাকি!
নিলীমের কথা শুনে আরাফ বললো,
_ এরকম একটা মায়াবতী কে দেখলে যে কেউ প্রেমে পড়ে যাবে রে।
আরাফের কথা শুনে ওর বন্ধু রায়হান মাথা ঘুরে পড়ে যেতে নিলে রাকিব ওকে ধরে নেয়। আর বলে,
_ আরে কি হলো তোর?
_ আবার জিগায়। আরে এটা শুনে এটা শোন যে আমি আরাফের কথা শুনার পরোও এহোনো বাইচা আছি কি কইরা? তুই শুনলি না আরাফ কি বললো ও নাকি প্রেমে পড়ছে। এটাও সম্ভব।
ওর কথা শুনে আরাফ তো রেগে ওকে মারতে শুরু করে।
_ শয়তান কি বললি তুই? প্রেম কি শুধু তুই একা করতে পারিস নাকি!
_ দোস্ত বিশ্বাস কর। আমি তা বলিনি। মানে তুই তো কোনো মেয়ের দিকে তাকাস ই না। আর হঠাৎ এই মেয়ের প্রেমে পড়ে গেলি হের লাইগা বলছিলাম।
_
_ আচ্ছা। বাদ দে তুই যে এতো দিনে কাউকে পছন্দ করেছিস। এতে আমরা হগগোলেই খুব খুশি। এখন তুই শুধু বল তোর কি হেল্প লাগবো। ভাবি কে পটাতে। আমরা জান দিয়ে দেব তোর প্রেমের লাইগা। কি বল সবাই।
_ একদম
_
তারপর ওরা ও ওদের কাজে চলে যায়।
এদিকে..
মারিয়া ও ক্লাস শেষ করে বাড়ি চলে আসে। তারপর রাতে খেয়েদেয়ে ঘরে গিয়ে শুয়ে পড়ে। কিন্তু কিছু তেই ঘুম আসছে না। ওর ও বার বার আরাফের কথায় মনে পড়ছে।
কি মায়বি চেহারা। কথা বলার এটিটিউট। তাকানোর ইস্টাইল ইস সবকিছু যেন একদম মন কেড়ে নেওয়ার মতো।
ও কিছুতেই পর কথা মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে পারছে না। প্রথম দেখাতেই আরাফ যেন মারিয়ার মনটা কেড়ে নিয়েছে।
এসব ভাবতে ভাবতে ও একসময় ঘুমিয়ে পড়ে। তারপর সকালে উঠে আবার রেডি হয়ে নাস্তা করে ভার্সিটি চলে যায়।
পর্ব ৩
মারিয়া ভার্সিটি পৌঁছে দিনার জন্য ওয়েট করতে থাকে। কিছুক্ষণ পর দিনা আসলে আবারও কালকের মতো ওকে আগে একটু ইচ্ছা মতো ঝেড়ে নেয়। আর বেচারি দিনা চুপচাপ সব হজম করে নেয়।
_ কুত্তা, বিলাই, ডাইনির মা তোকে তো পিচ পিচ করে কেটে তেলাপোকার খাবার বানাতে ইচ্ছা করছে।
_
_ শয়তানি। আজকেও তুই দেরি কইরা আসলি কেন? জানিস। কতক্ষণ ধরে এখানে একা একা বসে ওয়েট করছি আমি?
_ সরি বান্ধুপি। আর হপপে না।
ঠাসসসসস করে একটা চড় পড়লো দিনার গালে। আর দিনা গালে হাত দিয়ে অসহায় চোখে মারিয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
_ প্রতিদিন এই এক কথা বলিস। আর যদি কোনোদিন এই একই কথা বলিস না। সেদিন বুঝবি।
_ তাই বলে তুই আমারে মারলি।
_ হ।মারলাম। এবার চুপচাপ আমার সাথে চল নাহলে আবার মার খাবি।
একথা শুনে দিনা আর কোনো কথা না বলে মারিয়ার পিছনে পিছনে যেতে থাকে। কারণ ওর আর মার খাওয়ার কোনো ইচ্ছা নেই।
ওরা ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলো। তার পাশেই আরাফ আর তার বন্ধু রা বসে ছিলো। ওর বন্ধু রায়হান মারিয়াকে দেখতে পেলো।
আর আরাফ কে বললো,
_ দোস্ত।
_ ভাবি আসতেছে।
_ কোথায়?
_ সামনে তাকা।
রায়হানের কথা শুনে আরাফ সামনে তাকালো আর মারিয়াকে দেখে আবার চোখ দুটো মারিয়াতে আটকে গেল। ও যেন আজ নতুন করে আবার মারিয়ার প্রেমে পড়ে গেলো।
আরাফ ভেবে পাচ্ছে না যে এই মেয়ের মধ্যে এমন কি আছে? ও যতবারই ওর সামনে আসছে মনে হচ্ছে আবার নতুন কোনো রুপে ওকে দেখছে। যতই দেখছে ততই যেন ওর মনের তৃষ্ণা আরোও বেড়ে যাচ্ছে।
মারিয়া আজকে সাদা আর হালকা গোলাপি মিক্সি একটা ত্রিপিচ পড়েছে। যাতে ওকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে।
আরাফকে ওভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ওর বন্ধু রা বললো,
_ দোস্ত। শুধু কি এভাবে তাকিয়েই থাকবে না তাকে মনের কথাটা বলবে। পরে দেখা গেল তুমি ওকে শুধু এভাবে দেখতেই থাকলে আর অন্য কেউ এসে তোমার পাখিকে নিয়ে উড়াল দেবে।
_ ওই। চুপ কর তোরা। ও শুধু আমার। আর কেউ যদি ওর দিকে হাত বাড়ানোর চেষ্টা করে তার এমন অবস্থা করবো না।
ওদের কথার মাঝেই মারিয়া আর দিনা ক্লাসে ঢুকে গেলো।
_ এই যাহহ। চলে গেল।
_ হুহহহ। বেশি বিভোর থাকলে এভাবেই চলে যাবে। তাই তো বলছি সময় থাকতে সব বলে দাও।
_ বলবো তো অবশ্যই।
তারপর আরাফ ওয়েট করতে থাকে কখন মারিয়ার ক্লাস শেষ হবে আর ও কখন বের হবে।
তারপর মারিয়া আর দিনা ও সবগুলো ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে আসে। তখনই আরাফ এসে ওদের সামনে দাঁড়ায়।
_ হাই
_ আরে আপনি কেমন আছেন?
_ ওয়েল। তা আপনি কেমন আছেন?
_ আমি ও ভালো।
_ তা মিস…। আহহ। এই দেখুন আপনার নামটাই তো শোনা হলো না।
_ হা হা। আমি মারিয়া। আর আপনার নাম।
_ মারিয়া। ওয়াও নাইচ নেইম। এনিওয়ে আমি আরাফ। তো আপনারা কি বাসায় যাচ্ছেন।
_ জি
_ ওওও। তাহলে আমার সাথে যেতে পারেন আমি ড্রপ করে দিচ্ছি।
_ নো থাংকস। আমরা যেতে পারবো। আসছি বাই।
_ ওকে।বাই
তারপর মারিয়া আর দিনা যে যার বাসায় চলে গেলো।
এভাবে কিছুদিন পার হয়ে গেল আর এর মধ্যে আরাফের সাথে মারিয়ার সম্পর্কটা আগের থেকে অনেকটা এগিয়ে গেছে।
আর মারিয়ার আর আরাফের এমন মেলামেশা দেখে একজন জলে পুড়ে ভোম হয়ে যাচ্ছে। সে হলো রুবা। বড়োলোক বাবার মেয়ে রুবা। খুব জেদি আর অহংকারি। মারিয়ার সাথে সেইম ইয়ারে পড়ে। স্টুডেন্ট হিসেবে খুব একটা ভালো না। কিন্তু বাবার টাকার জোরে কোনোরকমে ক্লাসে ওঠে।
ওহো আরাফকে ভালোবাসে। অবশ্য সেটা ওর ভালোবাসা নাকি মোহ। সেটা ওই ভালো জানে।
কিন্তু ও কিছু তেই মেনে নিতে পারছে না যে আরাফ ওর সামনে মারিয়ার সাথে এভাবে মিশবে। কারণ ও আরাফ কে প্রোপজ ও করেছিলো কিন্তু আরাফ ওকে রিজেক্ট করেছিলো। এজন্য ওর জেদ টা আরো বেশি।
তাই ও কিছু তেই আরাফের সাথে মারিয়ার সম্পর্ক ঠিক থাকতে দেবে না। তাই ও খুব চেষ্টা করছে ওদেরকে আলাদা করার।
সেদিন মারিয়ার ক্লাস শেষ করে বেরিয়ে আসে তখন আরাফের সাথে দেখা হয়। আর ওদের কথা বলতে দেখে রুবা দূর থেকে রাগে ফুসতে থাকে।
আরাফ চলে যাওয়ার রুবা মারিয়ার সামনে আসে আর ওকে অনেক আজেবাজে কথা শুনায়।
_ এই যে যতসব মিডিল ক্লাস ফ্যামেলির মেয়ে। বড়োলোকের ছেলে দেখলে লোভে চোখ চিকচিক করে ওঠে। তাই না।
_ মানে! কি বলতে চায়ছো তুমি।
_ হা হা হা। বুঝতে পারছো না। তাই না। এই যে তুমি আরাফ কে পটিয়ে ওকে বিয়ে করে ভিখারি থেকে রাজরানী হওয়ার সপ্ন দেখছো। আমরা বুঝি না ভেবেছো।
পাঠক আপনাদের জন্যই আমরা প্রতিনিয়ত লিখে থাকি। আপনাদের আনন্দ দেয়াই আমাদের প্রধান লক্ষ। তাই এই পর্বের “খুনশুটি ভালোবাসার গল্প” টি আপনাদের কেমন লাগলো পড়া শেষে অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন।
_ মুখ সামলে কথা বলো। আরাফের সাথে আমার এমন কোন সম্পর্ক নেই যে। যারজন্য তুমি এসব বলবে।
_ নেই! তাহলে ওর সাথে এতো কিসের মেলামেশা তোমার।
_ সেটা নিশ্চয়ই তোমার কাছে কৈফিয়ত দিতে যাবো না।
_ হ্যা, তা যাবে কেন। কি জানি বাবা। হয়তো আরো না জানি কি কি করেছো। তোমাদের মতো লো ক্লাস ফ্যামেলির মেয়েরা তো এসবের জন্য নিজের শরীর টাকেও বিলিয়ে দিতে পিছপা হয় না।
রুবার কথা শুনে মারিয়া নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারলো না। ও যেন কথা বলার শক্তি পাচ্ছি না। শুধু চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
দিনা এতক্ষণ চুপ করে থাকলেও এবার আর পারলো না।
_ কি যাতা বলছো তোমরা। মারিয়া ওরকম মেয়ে নয়। বরং তোমরা যে কথা টা বললে না। এটা তোমাদের দ্বারা সম্ভব মারিয়ার নয়।
_ আর কখনো যেচে পড়ে আমাদের সাথে এসব বলতে আসলে না। সেদিন বুঝতে পারবে আমরা কি জিনিস। চল মারিয়া।
বলে মারিয়ার হাত ধরে টেনে দিনা ওখান থেকে চলে আসে।
মারিয়া বাড়ি এসে কাউকে কিছু না বলে নিজের ঘরে যেয়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। আর বিছানায় শুয়ে কাঁদতে থাকে।
ও কিছু তেই মানতে পারছে না যে ওকে এসব কথা শুনতে হলো। আজ অবধি ওকে কেউ এরকম বাজে কথা বলেনি।
ও রাগে দুঃখে মনে মনে ঠিক করে নেয় যে ও আর কোনোদিন আরাফের সাথে কথা বলবে না।
তারপর দু_তিন দিন কেটে যায়। মারিয়া একয় দিন কলেজে যায় নি। আর ওদিকে আরাফ মারিয়াকে না দেখতে পেয়ে পাগল প্রায় অবস্থা।
চারদিনের দিন মারিয়া দিনার সাথে ভার্সিটি যায়। মারিয়াকে দেখে আরাফ যেন তার দেহে প্রাণ ফিরে পায়।
ও ছুটে এসে মারিয়ার সামনে দাঁড়ায়। মারিয়া আরাফের দিকে একবার তাকিয়ে আবার চোখ ফিরিয়ে নেই তারপর দিনার সাথে সামনের দিকে পা বাড়ায়।
কিন্তু তার আগেই আরাফ মারিয়ার হাত ধরে টান দিয়ে ওর সামনে এনে দাড় করাই আর বলে,
_ কি হলো। আমার সাথে কথা না বলে কোথায় যাচ্ছো। আর এই তিন দিন কোথায় ছিলে।যানো তেমাকে না দেখে আমার কি অবস্থা হয়েছিল। আর আজ তুমি এসেও আমার সাথে কথা না বলে আমাকে ইগনোর করে চলে যাচ্ছো। ওয়াই ডেমেট।
_ কেন। আপনি কে হোন আপনার যে আপনার সাথে কথা না বলে যাওয়া যাবে না। সবকিছু আপনাকে কেন বলতে যাবো আমি।
_ মানে! মারিয়া কি হয়েছে তোমার। তুমি এভাবে কেন কথা বলছো আমার সাথে।
_ তো কিভাবে কথা বলবো। দেখুন আমার হাত ছাড়ুন আর আমাকে যেতে দিন। প্লিজ ডোন্ট ডিসর্টাব মি।
_ কি! আমি তোমাকে ডিসর্টাব করছি!
_ হ্যা, করছেন। এবার আমার পথ ছাড়ুন।
_ ওকে, ফাইন। আজকের পর থেকে আর কেউ তোমাকে ডিসর্টাব করবে না। এতোদিন ভাবতাম তুমি ও হয়তো আমার ফিলিংস গুলো বোঝো বাট আই ওয়াজ রং। সরি এতোদিন তোমাকে ডিসর্টাব করার জন্য। ডোন্ট ওয়ারি। আজ থেকে আর করবো না। বাই।
এই বলে আরাফ ওখান থেকে চলে আসে আর মারিয়াও ও কাঁদতে কাঁদতে ওখান থেকে চলে যায়। কারণ আরাফ কে কষ্ট দিয়ে ওর ও যে খুব কষ্ট হচ্ছে। কিন্তু ওর ও যে কিছু করার নেই।
আরাফ রাগে কলেজ থেকে বেরিয়ে গাড়ি নিয়ে জোরে ড্রাইভ করতে থাকে। পিছনে থেকে ওর বন্ধুরা এতো ডাকে কিন্তু ও কারো কথা শোনে না।
মারিয়াও বাড়ি চলে আসে। কারণ ওর পক্ষে আজ চর ক্লাস করা সম্ভব নয়।
আর এদিকে এসব দূর থেকে দেখে রুবা তো খুব খুশি হয়। ওর মুখে ভেসে ওঠে শয়তানি হাসি।
পর্ব ৪
এভাবে আরো বেশ কিছু দিন কেটে যায়। এ কয়দিনে আরাফের সাথে মারিয়ার কোনো যোগাযোগ হয় নি। সেদিনের পর থেকে আরাফ ও মারিয়াকে দেখলে এড়িয়ে চলে। মারিয়া এতে খুব কষ্ট পাই। কিন্তু কিছুই করার নয়। কারণ মারিয়া নিজই দায়ী এসবকিছুর জন্য। এটাই ওর মনে হয়।
তাই ওরা দুজন দুজনকে পাগলের মতো ভালোবেসে ও একে অন্যের কাছ থেকে অনেক দূরে শুধুমাত্র নিজেদের ইগোর কারণে।
সেদিনের পর থেকে মারিয়া যেন হাসতেই ভুলে গেছে। মারিয়ার অবস্থা দেখে দিনা খুব ভালো করেই বুঝতে পারছে যে মারিয়া ও আরাফ কে ভালোবেসে ফেলেছে। কিন্তু রুবার ওই কথা গুলোর জন্য মারিয়া ওর থেকে দূরে সরে এসেছে।
দিনা আর মারিয়ার এই কষ্ট সহ্য করতে পারছে না। তাই ও মনে মনে সিদ্ধান্ত নেয় যে ওকেই কিছু করতে হবে ওদের দুজন কে এক করার জন্য। তার জন্য ও একটা পরিকল্পনা করে।
আর পরদিন সকালে ও মারিয়ার আগেই ভার্সিটি চলে আসে। ওর কোনো বিশেষ কাজ আছে এটা মারিয়াকে বলে ও তাড়াতাড়ি চলে আসে। কারণ মারিয়ার সাথে থাকলে ও ওর কাজটা করতে পারবে না।
ও ভার্সিটি পৌঁছেই আরাফকে খুজতে শুরু করে। আরো পেয়েও যায়। কারণ আজকে আরাফ ও তাড়াতাড়ি ভার্সিটি এসছিলো একটা জরুরি প্রয়োজনে।
দিনা আরাফের সামনে যেয়ে দাঁড়ালে আরাফ ওকে দেখে খুব অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করে।
_ আরে দিনা তুমি এখানে। কিছু বলবে।
_ হ্যা, ভাইয়া। আপনার সাথে আমার খুব জরুরি কথা আছে।
_ আমার সাথে! তা তোমার বান্ধবি যদি জানতে পারে যে তুমি আমার সাথে কথা বলেছো। তাহলে সেজন্য আবার তোমার সাথে জামেলা করবে না তো।
_ করতে পারে। এজন্যই তো আমি ওর আগে চলে এসেছি।
_ ওকে। বলো। কি বলবে।
_ এখানে নয় ভাইয়া। মারিয়া এসে দেখে ফেললে ও আমাকে মেরেই ফেলবে। প্লিজ আপনি আমার সাথে চলুন। অন্য কোথাও।
_
_ ভাইয়া। প্লিজ।
_ ওকে। চলো।
তারপর ওরা একটা কপিশপে গিয়ে বসে।
_ এবার বলো। কি বলবে।
_ ভাইয়া আসলে সেদিন মারিয়া আপনাকে যে কথাগুলো বলছে এগুলো ওর মনের কথা নয়। ও বাধ্য হয়ে আপনাকে একথা গুলো বলেছে।
_ মানে! কি বলতে চায়ছো তুমি।
_ ঠিকই বলছি। ভাইয়া। ও আপনাকে কথাগুলো বলাতে যতোটা না আপনি কষ্ট পেয়েছেন তার থেকেও বেশি কষ্ট ও পেয়েছে। কারণ ওহো আপনাকে ভালোবাসে।
_ হুহহহহ। আই আম সরি টু সে। বাট আমি তোমার কথা বিশ্বাস করতে পারছি না। ও যদি আমাকে ভালোই বাসতো তাহলে সবার সামনে আমাকে ওইভাবে বলতে পারতো না।
_ অনেক সময় চোখের সামনে যেটা ঘটে সেটা সত্যি হয় না। ভাইয়া। ঠিক তেমনি মারিয়াও সেদিন আপনাকে যেগুলো বলেছে সেগুলো সত্যি নয়।
_ মানে!
_ আপনি রুবাকে নিশ্চয়ই চেনেন। আমাদের ইয়ারে পড়ে।
_ হ্যা চিনি। ও আমার বাবার বন্ধুর মেয়ে। আমাকে ও প্রোপজ ও করেছিলো একবার।
_ হুম। মারিয়া সেদিন যা কিছু বলছে সব ওই রুবার কথা শুনে বলতে বাধ্য হয়েছে।
_ মানে। কি বলছো তুমি। আমি কিছুই বুঝতে পারছি না। প্লিজ ক্লিয়ার করে বলো।
_ হুম। বলছি। শুনুন তাহলে….
তারপর দিনা আরাফকে সেদিন রুবা মারিয়াকে যা যা বলছিলো সবটা বলে দেয়।
সবশুনে আরাফ তো রেগে ভোম হয়ে গেছে। ওর চোখ মুখ লাল হয়ে গেছে। চোখ দুটো দেখে মনে হচ্ছে এখুনি আগুন ঝরতে শুরু করবে।
_ কি! এতো বড় সাহস ওই রুবার। ওর জন্য ই এতকিছু হয়ে গেছে। ওকে তো আমি ছাড়বো না।
_ হ্যা, ভাইয়া। আর এজন্যই মারিয়া সেদিন আপনাকে এইকথা গুলো বলতে বাধ্য হয়েছিলো। এবার আপনিই বলুন মারিয়া ভুল ছিলো না ঠিক ছিল। একটা মেয়েকে যদি এভাবে কেউ তার চরিত্র নিয়ে এসব বাজে কথা বলে তাহলে তার আর এটা ছাড়া আর কিইবা করার থাকে বলুন।
_ হুম। আর কিছু বলতে হবে না আমাকে। এবার আমার কি করতে হবে আমি খুব ভালো করেই জানি। ডোন্ট ওয়ারি। এবার আমি সবকিছু ঠিক করে দেব।
তুমি শুধু দেখতে থাকো যে এবার কি কি হয়?
বলে আরাফ ওখান থেকে চলে আসলো আর দিনা ও ভার্সিটি ফিরে যায়।
আরাফ রাগে আগুন হয়ে কলেজের ভিতরে ঢুকে। ঢুকেই ওর মারিয়ার সাথে দেখা হয়।
ও মারিয়াকে কিছু না বলে আর ওকে ও কোনোকিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সোজা ওর হাত ধরে টেনে সামনের দিকে হাঁটতে শুরু করে।
মারিয়া আরাফের এমন কাজে চরম অবাক হয়। আরাফ যে হঠাৎ করে এমন একটা কান্ড করে বসবে ও ভাবতে পারে নি।
ওর যখন হুস হলো যে আরাফ ওর হাত ধরে টেনে কোথায় নিয়ে যাচ্ছে। তখন ও নিজেকে আরাফের থেকে ছাড়িয়ে নেওয়ার চেষ্টা করলো। কিন্তু আরাফের ওর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকানো দেখে ও একদম ভয়ে চুপসে গেল। আর তাই কোনো কথা না বলে চুপচাপ আরাফের সাথে যেতে লাগলো।
আরাফ মারিয়াকে নিয়ে সোজা রুবার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়। রুবা ওদের দুজনকে একসাথে দেখে ভিষণ অবাক হয়। সাথে রাগ ও হয়। কিন্তু মুহূর্তেই ওর রাগ ভয়ে পরিণত হয় আরাফের চোখের দিকে তাকিয়ে।
কারণ আরাফ অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। তারপর ও কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরাফ ওর গালে ঠাসসসস করে একটা চড় মেরে দেয়। চড় টা এত জোরে মেরেছিলো যে রুবা ছিটকে নিচে পড়ে যায়।
এরই মধ্যে দিনা ও চলে এসেছে। আর রুবাকে চড় মারতে দেখে ওর তো খুশিতে নাগিন ডান্স দিতে ইচ্ছা করছে।
মারিয়া সহ ওখানে উপস্থিত সকলে খুব অবাক চোখে তাকিয়ে আছে আরাফের দিকে।
ওর বন্ধু রা ও রুবা কে মারতে দেখে তাড়াতাড়ি এগিয়ে এসে ওকে জিজ্ঞেস করে।
_ আরাফ কি করছিস তুই। পাগল হয়ে গেলি নাকি! ওকে মারছিস কেন?
_ আরে ও তো এটারই যোগ্য। জানিস কি করেছে ও।
_ ক ক কি করেছি আমি। যে আপনি আমাকে মারলেন।
_ কি করেছো বুঝতে পারছো না। তাই না।
_ না তো। কি বুঝবো আ আমি।
_ মারিয়াকে কি বলেছো তুমি?
একথা শুনে রুবা খুব ঘাবড়ে যায়। তারমানে কি মারিয়া সব বলে দিয়েছে ওকে। সর্বনাশ। এবার কি হবে।
_ আ আমি ওকে কেন কিছু বলতে যাবো। আমি কিছু বলিনি। ওই আপনাকে আমার নামে বানিয়ে বানিয়ে কি বলেছে দেখুন আমাকে ফাসানোর জন্য।
_ মারিয়া আমাকে কিছু ই বলে নি। আমি নিজে সবটা জেনেছি। এখন ভালোই ভালোই সব সিকার কর নাহলে তোমাকে কিন্তু আমি….
_ না না! আমাকে আর মারবেন না। আমি বলছি।
_ হুম বলো।
_ আমিই সেদিন মারিয়া কে অনেক বাজে কথা বলেছিলাম এজন্য ও সেদিন আপনার সাথে ওরকম ব্যবহার করেছিলো।
_ আজকে সবার সামনে তুমি ওর কাছে ক্ষমা চাইবে। নাহলে…
_ ন না। আ আমি ওর কাছে ক্ষমা চাইবো।
বলে মারিয়ার সামনে যায়।
_ মারিয়া আমার ভুল হয়ে গেছে। প্লিজ তুমি আমাকে মাপ করে দাও।
বলে ওর পা ধরতে যায়।
_ আরে আরে কও করছো ওঠো বলছি।
_ আগে বলো তুমি আমাকে মাফ করেছো।
_ হুম। করেছি। তুমি যাও।
_ ঠিক আছে। তাহলে আমি আসি।
_ হুম।
তারপর রুবা আর ওর বন্ধু রা ওখান থেকে চলে আসে আর এদিকে আরাফ মারিয়ার সামনে যেয়ে ওকে ঠাসসসসসস।
পর্ব ৫
মারিয়া গালে হাত দিয়ে অবাক চোখে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে। মারিয়াকে ও মারতে দেখে দিনা সহ ওর বন্ধু রা ও খুব অবাক হয়।
ওরা এগিয়ে এসে বলে,
_ আরে আরাফ কি করছিস ভাই। মারিয়াকে ও মারছিস কেন!
_ তো কি করবো। ওকে তো শুধু একটা চড় মেরেছি। ইচ্ছা তো করছে ওকে খুন করে ফেলতে।
_ আমি আবার কি করলাম?
_ কি করেছো মানে। এসব কথা এতোদিন আমার কাছ থেকে লুকালে কেন। স্টুপিড কোথাকার?
_
_ তোমার কোনো ধারণা আছে এই কয়দিন আমার কিভাবে কেটেছে। তোমার সাথে একটা দিন কথা না বলে, তোমায় না দেখলে আমার নিশ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। আর তুমি ইচ্ছা করে আমার থেকে এতো দূরে থেকেছো।
_ কিন্তু আমি ইচ্ছা করে কিছু করিনি। আমি তো।
_ অফকোর্স ইচ্ছা করে করেছো। তুমি যদি সেদিন আমাকে সবটা বলতে তাহলে আজ এদিন দেখতে হতো না। স্টুপিড।
মারিয়া আর কিছু বললো না। কারণ ও বুঝতে পারছে যে ওর আরাফ কে সবটা বলা উচিৎ ছিলো। আর এখন কিছু বললে যদি আবার চড় মারে।। তাছাড়া আরাফের এই রাগী চেহারার দিকে তাকিয়ে মারিয়ার যেন হাত পা কাঁপছে। কারণ আরাফের এই ভয়ংকর রুপ ও আগে কোনোদিন দেখে নি। এ যেন এক নতুন আরাফ কে দেখছে ও।
_ কি হলো। এখন চুপ করে আছো কেন?
_ সরি। আর কোনো দিন এমন হবে না। আমাকে আর মারবেন না প্লিজ।
মারিয়ার এমন কথা শুনে আরাফের সব রাগ যেন এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেলো। মারিয়ার এই ভিতু ভিতু চেহারা দেখে ওর খুব হাসি পাচ্ছে কিন্তু তবুও ও মুখে গম্ভীর ভাবে এনে বললো
_ মনে থাকবে তো। আর কখনো আমার কাছে কিছু লুকাবে না তো।
_ একদম না।
_ ইয়াহুহহহহ। সব তো ঠিক হলে কিন্তু দোস্ত তুই তো ওকে প্রোপজ ও করলি না। এই নে ফুল আজকে সবার সামনে তুই মারিয়াকে প্রোপজ করবি। নে ধর।
আরাফ ও হেসে ওদের হাত থেকে ফুল টা নিয়ে হাঁটু গেড়ে মারিয়ার সামনে বসলো।
মারিয়ার তো লজ্জায় মাটিতে মিশে যেতে ইচ্ছে করছে। কিন্তু এই ছেলে দেখো কি সুন্দর সবাই বলার সাথে সাথে বলা শুরু করলো। কেমন ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে। যেন ওর আশেপাশে আর কেউ নেই।
তারপর আরাফ বলা শুরু করলো।
_ জানিনা লোকে কিভাবে তার ভালোবাসা। অনুভূতি প্রকাশ করে। আমি এতো সাজিয়ে গুছিয়ে বলতে পারি না। আমি শুধু জানি প্রথম দেখাতে তুমি আমার হৃদয়ে যে ঢেউ তুলে দিয়েছো। তাতে তোমাকে না দেখে আমি একমুহূর্ত থাকতে পারবো না। বাঁচতে পারবো না আমি তোমায় ছাড়া। তোমায় ভালোবাসার জন্য আমার কাছে কোনো কারণ নেই। আমি শুধু এটা জানি তোমায় ছাড়া আমি নিশ্বাস ও নিতে পারি না। যার জন্য আমর তোমাকে প্রয়োজন। আমার প্রতিটা মুহূর্ত সুন্দর করতে তোমায় প্রয়োজন। মরে যাবো আমি তুমি হিনা। তাই আমার সুখ দুঃখ সবকিছু তেই তোমাকে প্রয়োজন। হবে কি তুমি আমার সুখ দুঃখের সাথি। থাকবে কি সারাজীবন আমার সাথে।
মারিয়াকে অবাক চোখে আরাফের দিকে তাকিয়ে আছে আর এদিকে সবাই মারিয়াকে হ্যা বলতে বলছে।
তারপর মারিয়া মিষ্টি হেসে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানিয়ে ওর হাত থেকে ফুল টা নিয়ে। আর আরাফ ও একটা তৃপ্তির হাসি দিয়ে উঠে দাড়ায় তারপর সবার সামনে মারিয়ার যে গালে চড় মেরেছিলো সেই গালে কিস করলো। মারিয়া তো লজ্জায় শেষ। কি শুরু করলো এই ছেলেটা।
_ সরি। তখন চড় টা মারার জন্য।
এদিকে সবাই হাত তালি দিয়ে ওদের দুজন কে বাহোবা জানাচ্ছে।
এই ঘটনা গুলো দূর থেকে একজন দেখছে আর রাগে ফুসছে। সে আর কেউ নয়। রুবা।
_ রুবা তুই এতো অপমান মুখ বুঝে সহ্য করলি। কিছু ই বলবি না ওদের।
_ হ্যা রুবা তৃশা তো ঠিকই বলেছে। তুই সব কিছু এতো সহজে মেনে নিবি।
_ দাড়া না। কে বললো আমি সব কিছু মেনে নেবো। আমার এই অপমানের প্রতিশোধ তো আমি নিবোই। আমাকে অপমান করা তাই না। ওদের জীবন টাকে যদি নরক বানাতে না পেরেছি। তাহলে আমার নাম ও রুবা নয়।
তারপর ওরা সবাই ওখান থেকে চলে আসে।
মারিয়া বাড়ি এসে আজ খুব খুশি খুশি লাগছে ওকে। ওর এখনো বিশ্বাস ই হচ্ছে না এসব। ওর শুধু বারবার আরাফের কথা ই মনে পড়ছে।
মারিয়ার বাবা মা ও এতোদিন পর মেয়েকে খুশি দেখে ওরা ও খুব খুশি। কারণ একয়দিনে ওরা মারিয়াকে হাসি তো দূরে থাক প্রয়োজন ছাড়া ওদের সাথে একটা কথা ও বলে নি। এই নিয়ে ওর বাবা মা দুজনেই খুব টেনশনে ছিলো। কারণ একমাত্র মেয়ে বলে মারিয়াকে ওরা অনেক যত্নে মানুষ করেছে। কখনো কোনো কষ্ট পেতে দেয় নি।
আর সেই মেয়ের কি এমন হলো যে সে এতোটা চুপ হয়ে গেছে। মুখে হাসি নেই এই নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলো।
কিন্তু আজ এতোদিন পর মেয়েকে আবার আগের মতো হাসি খুশি দেখে ওরা ও খুব খুশি।
মারিয়া রাতে ওর ঘরে বসে পড়ছিলো তখন ওর বাবা আসলো।
_ মামনি। আসবো।
_ হ্যা বাবা। এসো। এতে পারমিশন নেওয়ার কি আছে?
মারিয়ার বাবা হেসে মেয়ের পাশে যেয়ে বসলো।
_ কিছু বলবে আব্বু।
_ তেমন কিছু না। দেখতে এলাম আমার মা টা কি করছে।
_ ওওওওও
_ তবে আজকে আমার মামনি যেন খুব খুশি।
_ হ্যা বাবা। আজকে আমি সত্যি ই খুব খুশি।
_ খুশি হলেই ভালো। আমরা ও চায় যে তুমি সব সময় এরকম হাসি খুশিই থাকো। তোমার কোনো কিছু তে মন খারাপ হবে। কষ্ট পাবে এটা যে আমরা সহ্য করতে পারবো না মা।
তুমি এখন বড় হয়েছে। তাই তোমার সব কিছুতে ইন্টারফেয়ার করতে পারি না আমরা। তাই সব কিছু জানতেও চায়বো না যে কেন এতোদিন তোমার মন খারাপ ছিলো। যদি তোমার বলতে তোমার বলতে আপত্তি থাকে। শুধু এটুকুই বলবো সব সময় এরকম হাসি খুশি থেকো মা। আর কোনো সমস্যা হলে নিদ্বিধায় আমাদের সাথে সেয়ার করতে পারো মা। ছোট বেলা থেকে তোমার কোনো ইচ্ছা ই অপূর্ণ রাখিনি। আর ভবিষ্যতে ও চেষ্টা করবো। হুম।
_ হুম। আমি জানি বাবা। তুমি আমার সব ইচ্ছাই পূরণ করবে। আমার বাবা মা পৃথিবীর বেস্ট। আই লাভ ইউ বাবা। বলে ও ওর বাবাকে জড়িয়ে ধরে।
_ লাভ ইউ টু সোনা।
এবার পিছন থেকে ওর মা এসে বলে,
_ বাহ বাহ। বাবা মেয়ের কি ভাব দেখো। আর আমি যেন বানের জলে ভেসে এসেছি। আমাকে কেউ ভালোই বাসে না।
_ _ আরে মাদার বাংলাদেশ। রাগ করছো কেন আমি তোমাকে ও ভালোবাসি কিন্তু বাবার থেকে একটু কম।
_ এ্যাএএএএ
_ হা হা হা। লাভ ইউ মা। আমি তোমাদের দুজন দুজনকে ই খুব ভালোবাসি।
তারপর ওরা ডিনার করে ঘুমিয়ে পড়ে।
সকালে উঠে আবার কলেজে যায়। আরাফের সাথে ঘোরাঘুরি। এভাবেই বেশ অনেক দিন কেটে যায়। আর এদিকে…..
পর্ব ৬
এরই মধ্যে আরাফের স্টাডি ও কমপ্লিট হয়ে গেছে। আর ও ওর বাবার কথামতো ওদের বিজনেস দেখা শোনা ও শুরু করে দিয়েছে।
কারণ ওর বাবা চায় ওর যেহেতু লেখা পড়া শেষ সো সবকিছু এবার ওকে বুঝিয়ে দিতে চায়।
আর আরাফ ও অমত করে নি। আজ না হোক কাল ওকে ই তো সব সামলাতে হবে। তাই আর দেরি করে কি লাভ।
আর তাছাড়া আর একটা কারণ ও আছে। ওর ধারণা ও যতো তাড়াতাড়ি নিজেকে প্রতিষ্ঠিত আর যোগ্য করে তুলতে পারবে ততো তাড়াতাড়ি মারিয়ার
কথা ও বাড়ি জানাতে পারবে।
আগে নিজে স্বাবলম্বী না হয়ে তো আর বিয়ের কথা বলা যায় না।
আরাফ এখন মন প্রাণ দিয়ে চেষ্টা করছে নিজেকে যোগ্য প্রমাণ করার আর ও সফল ও হয়েছে। খুব অল্প সময়ের মধ্যে ও একজন সফল বিজনেস ম্যান হয়ে উঠেছে।
ছেলের এতো সুন্দর কাজের গতি দেখে ওর বাবা তো খুব খুশি।
এতো কাজের মধ্যে আরাফ মারিয়াকে তেমন সময় দিতে পারছে না। এর জন্য মারিয়ার একটু অভিমান হলে ও ওকে বুঝতে দেয় না। কারণ ও নিজেও চায় ওর জন্য যেন আরাফের কাজের উপর কোনো ইফেক্ট না পড়ে।
এরমধ্যে একদিন আরাফ অফিস থেকে ফিরে রাতে ওর বাবা মায়ের সাথে ডিনার করতে বসেছে। তখন ওর বাবা বললো,
_ আরাফ। তোমার সাথে জরুরি কিছু কথা ছিলো।
_ বলো। কি কথা।
_ এখানে না। খাওয়া শেষ করে আমার রুমে এসো।
_ _ ওকে।
তারপর ওর খাওয়া শেষ করে ওর বাবার রুমে যায়।
_ আব্বু আসবো।
_ হ্যা, এসো।
_ বলো কি বলবে।
_ দেখ তুমি লেখাপড়া শেষ করেছো। এখন আমার বিজনেস দেখাশোনা করছো। সব কিছু ঠিক ভাবেই চলছে। তাই আমি আর তোমার মা চায়ছিলাম এবার তোমার বিয়েটা দিয়ে দিতে।
_ হ্যা বাবা। তোর বাবা ঠিক ই বলছে। তুই রাজি হয়ে যা।
আরাফ তো মনে মনে সেই খুশি কিন্তু বাবা মায়ের সামনে তো সাথে সাথে রাজি আছি একথা বলা যায় না। তাই ও বললো,
_ আচ্ছা। তোমরা যা ভালো মনে হয় তাই করো।
বলে ও ঘরে চলে আসলো। ও খুব খুশি মনে মারিয়াকে ও ফোন করে সব বললো,
মারিয়াও খুব খুশি হয় আরাফের কথা শুনে। কিন্তু ওদের এই খুশি বেশিক্ষণ থাকে না।
সকালে নাস্তা করার সময় ওর বাবা ওকে বলে,
_ আরাফ। আজকে তোমার অফিস যেতে হবে না।
_ কেন। আব্বু।
_ _ আজ তোমার লতিফ আংকেলের বাসায় যাবো। তোমার আপুকে ও আসতে বলেছি।
_ কিন্তু আব্বু হঠাৎ করে লতিফ আংকেলের বাসায় যাবো কেন তাও আবার সবাই একসাথে।
_ হুম। কারণ আমরা ওখানে লতিফের মেয়ে রুবার সাথে তোমার বিয়ের কথা পাকা করতে যাবো।
_ ওয়াট! কি বলছো বাবা তুমি এসব। হঠাৎ করে এসব তুমি আমার কাছে একবার শোনার প্রয়োজন মনে করলে না।
তখন ওর মা বলে উঠলো।
_ আরে বাবা। তুই তো কাল রাতেই মত দিয়ে দিলি।
_ আর রুবাকে ও আমাদের পছন্দ তাই আমরা চায়ছি ওর সাথে তোমার বিয়ে টা হোক।
_ কিন্তু বাবা আমি।
_ আরে তুই এতো লজ্জা পাচ্ছিস কেন বলতো। রাজি হয়ে যা না বাবা। মায়ের কথা টা রাখ।
_ আরে আ
আর কিছু বলার আগেই কলিং বেল বেজে উঠলো ওর আর মারিয়ার কথা বলা হলো না। তাই ও ওর ঘরে চলে গেলো।
ওর মা গিয়ে দরজা খুলে দেখে ওর বোন এসেছে।
ওর বোন আরাফা ভিতরে এসে নিচে আরাফ কে না দেখে ওর ঘরে যায়। যেয়ে দেখে ও মন খারাপ করে বসে আছে।
তাই ও ভিতরে ঢুকে বললো,
_ কিরে এমন মন খারাপ করে বসে আছিস কেন। বিয়ে ঠিক হতে চলছে। তোর তো খুশি হওয়ার কথা রে ভাই কিন্তু তা না তুই মন খারাপ করে বসে আছিস।
_ আপু। তুই এসেছিস ভালোই হলো আব্বু আম্মু এসব কি শুরু করেছে বল তো। আরে আমার মতামতের কোনো গুরুত্ব নেই নাকি। বলা নেই কওয়া নেই হুট করে বিয়ে ঠিক করলেই হয়ে গেল!
_ আরে আরে এতে কি তুই লজ্জা পাচ্ছিস না কি। ওলে বাবালে। থাক আর লজ্জা পেতে হবে ন।
_ আপু। আমি কিন্তু সিরিয়া।
_ মানে!
_
_ আরাফ। এই। তোর কি এই বিয়েতে মত নেই।
_ না।
_ না! তাহলে তুই কি কাউকে পছন্দ করিস।
_ হ্যা,আপু। কিন্তু মা বাবা তো আমার কথা শুনতেই চাচ্ছে না। আপু তুই প্লিজ আব্বু আম্মু কে বুঝিয়ে বল। কারণ আমি ওকে ছাড়া অন্য কাউকে বিয়ে করতে পারবো না। আমি ওকে ভিষণ ভালোবাসি।
_ তুহ
_ এসব তুই কি বলছিস বাবা?
আরাফা কিছু বলার আগে পিছনে থেকে ওর মা বলে উঠলো।
_ মা। তুমি সবকিছু..
_ হ্যা, আমি তোদের সব কথায় শুনেছি।
_ তাহলে তুমি প্লিজ আব্বু কে বুঝিয়ে বলো। প্লিজ। আমার পক্ষে ওকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করা সম্ভব নয়।
_ ছোট বেলা থেকে তোদের কোনো ইচ্ছা আমরা অপূর্ণ রাখিনি তাই আজও জোর করবো না। তাই তুই যা চাস তাই হবে।
পিছনে থেকে কারো মুখে এ কথা শুনে ওরা পিছনে ফিরে দেখে ওর বাবা। আরাফ খুব অবাক হয় সাথে খুশিও হয়।
_ আব্বু তুমি!
_ হ্যা বাবা আমি। তোর সব কথা শুনেছি। এবার বলতো মেয়েটি কে। আর কোথায় থাকে। আরে বিয়ের কথা বলতে হবে না!
_ আব্বু তুমি সত্যি বলছো।
_ হুম। মাই সান। আমার ছেলে আমার কাছে কিছু চাইবে আর আমি সেটা দেব না তা কি হতে পারে।
_ থ্যাংক ইউ আব্বু।
তারপর আরাফ ওদের সবাই কে মারিয়ার সব কথা বলে, মারিয়ার ফ্যামেলি বাকগ্রাউন্ড শুনে ওর বাবার যদি ও তেমন একটা মত হয় নি মিডিলক্লাস ফ্যামেলি বলে, কিন্তু ছেলের কথা ভেবে আর কিছু বলেন নি।
আরাফের বাবা সব কথা রুবার বাবাকে বলে, আর এটাও বলে যে উনি ছেলের অমতে কিছু করতে চান না। তার জন্য উনার কাছে ক্ষমা ও চেয়ে নেন।
রুবার বাবাও সব শুনে আর কিছু বলেন না। কারণ উনি ও চান না যে তার মেয়ে এমন কারো সাথে বিয়ে যে কোনোদিন হয়তো তার মেয়েকে ভালোই বাসতে পারবে না।
কিন্তু রুবা এটা কিছু তেই মেনে নিতে পারছে না। ও এবার আরো বড় প্ল্যান করে ওদের দুজন কে আলাদা করার।
রুবা পরদিন সকালে আরাফদের অফিসে যায় ওর বাবার সাথে দেখা করতে। ও খুব সাবধানে আরাফের বাবার কেবিনে যায়। কারণ ও চায় না আরাফ ওকে দেখে ফেলুক।
ও ওখানে যেয়ে।
_ আসবো আংকেল।
_ আরে রুবা মামনি। এসো ভিতরে এসো।
_ কাল আপনাদের যাওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু আপনারা তো যান নি তাই আমি ই এলাম আপনার সাথে দেখা করতে।
_ আসলে মামনি আমি জানি তুমি আরাফ কে খুব ভালোবাসো। আমার ও তোমাকে বেশ পছন্দ। তোমার সাথে ওর বিয়ে টা হলে সবচেয়ে বেশি খুশি তো আমিই হতাম। কিন্তু আরাফ টা…
_ আমি জানি আংকেল সবটা। আর আমি একটু ও কষ্ট পাই নি। আমি চায় আরাফ সুখে তাহলে আমি ও খুশি থাকবো। কিন্তু…
_ কিন্তু কি মামনি।
_ আংকেল আরাফ ভুল করছে।
_ মানে টা হলো। আরাফ নিশ্চয়ই আপনাকে বলেছে যে ওই মেয়েটা মিডিল ক্লাস ফ্যামেলির মেয়ে।
_ হ্যা, আর এজন্য তো আমার ও মত হচ্ছে না। কিন্তু কি করবো বলো।
_ সেটা সমস্যা নয় আংকেল কিন্তু।
_ কিন্তু…
_ আংকেল মেয়েটার চরিত্র ভালো না। ওর এরকম অনেকগুলো ছেলের সাথে সম্পর্ক আছে। ও এভাবে বড়লোক ছেলেদের ফাঁসিয়ে তাদের কাছ থেকে টাকা পয়সা লুট করে।
_ ওয়াট!
_ হ্যা আংকেল। আমি সত্যি বলছি। এএই দেখুন ওই মেয়েটার ছবি।
ছবিটা দেখে নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন মেয়েটা কেমন। এই যে ছেলেটা এ ও অনেক বড়লোক। আর এর কাছ থেকে ও টাজা পয়সা সব নিয়ে এবার আরাফের পিছনে পড়েছে। আমি আরাফ পাই বা না পাই কিন্তু সত্যি তো এটাই যে আমি ওকে খুব ভালোবাসি তাই আমি চায় না ওর সাথে খারাপ কিছু হোক।
_ ছি ছি! শেষে আমার ছেলে এরকম একটা মেয়ের ফাঁদে পড়লো। না। এই বিয়ে আমি কিছু তেই হতে দেবো না। আর তোমাকেও আমি কথা দিচ্ছি যে আরাফের বিয়ে তোমার সাথে ই হবে এই মেয়েটার সাথে নয়।
রুবা তো একথা শুনে খুব খুশি। সবকিছু ওর পরিকল্পনা অনুযায়ী হচ্ছে।
তারপর ও আবার বলে,
_ কিন্তু আংকেল আরাফ কে এখুনি এসব কিছু বলবেন না। কারণ ওই মেয়ে ওকে এমন যাদু করে রেখেছে না। যে ও আপনার কোনো কথায় বিশ্বাস করবে না।
_ তাহলে কি করবো।
_ এমন কিছু করতে হবে যাতে ওই মেয়ে নিজেই আরাফের জীবন থেকে চলে যায়। আর আরাফ ও ওই মেয়েকে ভুল বোঝে।
_ হুম। তুমি ঠিক বলেছো।
_ আচ্ছা আংকেল তাহলে আমি আজ আসি। আমাকে এখান থেকে আবার ভার্সিটি যেতে হবে।
_ আরে আমি৷ ও তো ওইদিকে যাবো। তাহলে চলো আমি তোমাকে ড্রপ করে দেয়।
_ ওকে চলুন।
তারপর রুবা উনার সাথে বেরিয়ে যায়। মাঝরাস্তায় জ্যামে ওরা আটকা পড়ে যায়। কিন্তু এই জ্যামের কারণে রুবার আইডিয়া যেন শতগুনে সফল হয়ে যায় কারণ হঠাৎ করে রুবার চোখ যায় রাস্তার ধারে যেখানে মারিয়া একটা ফুসকার দোখানের পাশে দাঁড়িয়ে আছে সাথে একটা ছেলে। একে রুবা চেনে দিনার বয়ফ্রেন্ড। তার ওপাশে দিনা ও দাঁড়িয়ে আছে কিন্তু তাতে কি আরাফের বাবাতো আর দিনা কে চেনে না।
হঠাৎ করে হাঁটতে যেয়ে মারিয়া কিছুতে বেঁধে পড়ে যেতে নিলে ওই ছেলেটা ওকে ধরে নেয়। রুবা এই সুযোগ টা কে কাজ লাগায়। কারণ দূর থেকে মনে হচ্ছে ওরা দুজন দুজনকে জড়িয়ে ধরে আছে।
রুবা আরাফের বাবাকে ডেকে এই দৃশ্য দেখায়। ওর বাবা এটা দেখে তো রুবার কথা পুরোপুরি বিশ্বাস করে নেয়। আর এটাও ঠিক করে ফেলে যে কিছুতেই এই মেয়ের সাথে আরাফের বিয়ে হতে দেবে না।
চলবে
আজও ভালোবাসি
লেখিকাঃ মাহিয়া মারিয়া
আরো পড়ুনঃ আজও ভালোবাসি – সিজন ২ঃ খুনশুটি ভালোবাসার গল্প