আদর্শ ছেলে: প্রথম যেদিন টিউশনি থেকে বেতন পেয়েছিলাম, আব্বুর জন্য একটা হাল্কা বেগুনী রঙের শার্ট কিনেছিলাম। শার্ট হাতে নেয়ার পর আব্বুর মুখটা ছোট হাতের এন(n) এর মত হয়েছিলো। আর বলেছিলেন-
কাপড়টা কেমন জানি? রঙ টা মনে হয় থাকবে না। অনকে পাতলা। কত নিলো রে?
সেদিন কিছু বলতে পারিনি কারণ শার্ট টা সিটি মার্কেট থেকে ৩০০ টাকায় কিনেছিলাম।
আমার আব্বা একজন প্রবাসি ছিলেন। এখন একটা মুদি দোকান চালান। আমি ইন্টার ১ম বর্ষে পড়ি। আব্বা সব সময় দামি কাপড় পড়ে আসছেন। তাই আমার দেয়া জামাটা তুচ্ছ ভাবাটাই স্বাভাবিক।
আমি তাই কিছু বলিনি। চোখে একটা ময়লা পড়েছিলো। তাই কয়েক ফোটা পানি পড়েছিলো মাত্র। সেবার ঈদে আমার ছোট মামা আমাকে এক হাজার টাকা দিয়েছিলেন শার্ট কিনতে।
আম্মু বলেছিলো আমি যেন কালো শার্ট কিনি। আমাকে কালোতে মানায়। আমি সিটি মার্টেক থেকে ৪০০ টাকা দিয়ে একটা টি-শার্ট আর ৬০০ টাকা আম্মুর জন্য একটা শাড়ি কিনেছিলাম।
বাসায় গিয়ে যখন শাড়িটা আম্মুর হাতে দিয়েছিলাম আম্মু সেটা ছুড়ে ফেলে দেয়। আর বলেছিলো – “তোকে এইটা কে আনতে বলেছিলো? তোকে না শার্ট কিনতে বললাম। বেসি বুঝিস?”
আমি সেদিন ও কিছু বলতে পারিনি। শুধু একটা মুচকি হাসি দিয়ে রুমে চলে যাই। কাপড় টা টেবিলের কোনায় পড়ে ছিলো। সেদিনও আমার চোখে ময়লা পড়েছিলো। এশার নামাজ পড়ে বাসায় এসে আম্মুকে দেখতে পেলাম না।
আম্মুর ঘরে উঁকি দিয়ে দেখি, আমার কেনা শাড়িটা জড়িয়ে কান্না করছে। আর বলছে – “আমার খোকা বড় হয়ে গেছে, আমার জন্য শাড়ি আনছে।”
পোকাগুলো কেমন জানি? বারবার আমার চোখেই পড়ে। তখনও পড়লো।
আমি মনে মনে সেদিন বলেছিলাম – “একদিন বড় হয়ে তোমার জন্য জামদানি শাড়ি আনবো মা, আর বাবা আপনাকে আমি ভালো কাপড়ের শার্ট কিনে দিবো।”
আরো পড়ুন: বাবার ভালবাসা – বাবার প্রিন্সেস মেয়ের প্রতি আদরের ভালোবাসা