ভয়ানক ভৌতিক গল্প ৫

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৫

ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৫: নিজেকে বাঁচার জন্য কত কিছুই না করত হচ্ছে আমাকে! ভয়ানক সব কাজ যেগুলো এতদিন অন্যের মুখে গল্প লাগত আর আজ কিনা আমাকেই বাস্তবে রূপ দিতে হচ্ছে! না জানি কি কপালে আছে আমার?

অশুভ আত্মার আশ্চর্য শর্ত

অশুভ আত্মা আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে। উনার এতই ভয়ঙ্কর চেহারা সেই চেহারা দেখলে যে কেউ হার্ট অ্যাটাক করে মারা যাবে। আমি মনে মনে ভাবছি এই বুঝি আমিও হার্ট অ্যাটাক করে ফেললাম। তখনই অশুভ আত্মাটা আমার দিকে চোখ রাঙ্গিয়ে অনেক ভয়ঙ্কর গর্জন করে বলে উঠলো,

আত্মাঃ আমার থেকে বাঁচার জন্য তুমি জীবনের মায়া ত্যাগ করে এত কিছু করে ফেলছো, কিন্তু হ্যাঁ, আমি তোমার পিছু ছাড়তে পারি একটা শর্তে। আর যদি তুমি আমার শর্তে রাজি থাকো তবেই আমি তোমার পিছু ছাড়বো।

[ভূতের মুখে এমন কথা শুনে মাথা কেমন গুলিয়ে যাচ্ছে!]

শাফিনঃ আপনার আবার কিসের শর্ত!

আত্মাঃ তোমাকে আমার একটা সাহায্য করতে হবে।

শাফিনঃ ভূতেদের সাহায্য করার কি আছে, তারা তো নিজেরাই অলৌকিক শক্তি দিয়ে সবকিছু করতে পারে।

আত্মাঃ ভুতেরা ভয় দেখাতে পারে, কিন্তু নিজের বা কারো উপকার করতে পারে না। এখানে তুমি যা করবে, সেটা হচ্ছে তুমি আমার উপকার করবে। বিনিময়ে আমিও তোমার পিছু ছাড়বো।

শাফিনঃ আপনার উপকার করলে আমার কি লাভ?

আত্মাঃ যদি আমার উপকার করো, তাহলে আমি আজ থেকে তোমাকে কোন ভয় দেখাবো না। ডিস্টার্ব করবো না, কিংবা তোমার আশেপাশেও আসবো না কখনো।

শাফিনঃ সত্যি তো?

আত্মাঃ হ্যাঁ, সত্যি।

শাফিনঃ ঠিক আছে। বলুন, আপনার কি শর্ত।

আত্মাঃ আমার একটা মেয়ে আছে, নাম জেরিন। আমার মৃত্যুর পর আমার মেয়েটা অনেক কষ্টে আছে। তুমি গিয়ে আমার মেয়েটাকে বিয়ে করে ফেলো।
যদি আমার মেয়েটাকে তুমি বিয়ে করো, তাহলে আমি তোমাকে আর ডিস্টার্ব করবো না, তোমার কোন ক্ষতিও করবো না।

শাফিনঃ কী বলছেন এসব! আপনি.. আপনার মেয়েকে আমি বিয়ে করতে যাব কেন? আর পছন্দের একটা ব্যাপার স্যাপার আছে। আপনার মেয়েকে আমি আজ পর্যন্ত দেখিও নাই। আমি কিভাবে না দেখে কাউকে বিয়ে করে ফেলবো?

( তখন সেই আত্মাটা দাত বড় করে, চোখ লাল করে, নিজের শরীরের আকার আরেকটু বড় করে ভয়ঙ্কর গর্জন করে উঠল)

আত্মাঃ তাহলে তুই আমার হাতে মারা পড়বি।

শাফিনঃ কুল কুল! দেখুন, আপনি শান্ত হোন। ঠিক আছে, আমি আপনার শর্তে রাজি আছি। বলুন, আপনার মেয়ের সাথে কিভাবে কথা বলব?

আত্মাঃ ভোলাকোট জুয়েল মার্কেট এর পিছনে একটা বাড়ি আছে। সেখানে গিয়ে জেরিনের বাসা কোনটা যে কাউকে বললেই তোমাকে দেখিয়ে দিবে।

শাফিনঃ তারপর আমি কি করব?

আত্মাঃ তারপর তুমি কি করবে সেটা আমি জানি না। কিন্তু আমার মেয়েকে তোমার বিয়ে করতে হবে এতোটুকুই।

মায়াবী ফাঁদ

কি বিপদে পড়লাম রে বাবা, জোর করে গলার মধ্যে একটা ভোজা তুলে দিচ্ছে। তবে বাঁচতে হলে আমার এটা করতে হবে। না হলে এই আত্মার হাতে আমি মারা যেতে পারি।

শাফিনঃ একটু পর আজান হবে। আমি নামাজ পড়ার পরে আপনার মেয়ের সাথে গিয়ে কথা বলব।

(এমন সময় আজান দিয়ে দিল এবং সাথে সাথে আমার সামনে থেকে আত্মাটা গায়েব হয়ে গেছে। আমি নামাজ পড়তে গিয়ে দেখলাম আজকে হুজুর মসজিদে আসেনি। অন্য একজন নামাজ পড়িয়েছে। আমি ও উনার সাথে আর যোগাযোগ না করে চলে এলাম সোজা ভোলাকোট)

সেই বাড়ির সামনে গিয়ে দাঁড়িয়ে আমি একজন লোককে জিজ্ঞাসা করলাম,

শাফিনঃ ভাই জেরিনদের বাসাটা কোনটা?

(লোকটি আমার কথা শুনে কেমন ঘাবড়ে গেল! তিনি চোখ মুখ নিচের দিকে নামিয়ে ফেলছেন। কোন উত্তর না দিয়েই চলে গেছে। আমি অবাক হয়ে গেলাম। আমি একটা বাসার নাম জিজ্ঞেস করলাম আর উনি এরকম করলো কেন?)

যাই হোক, আর একটু সামনে গিয়ে দেখি কাউকে পাই কিনা। যেতেই দেখলাম একটা মেয়ে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। দেখতে তো মাশাআল্লাহ। আমার সামনে এসেই আমাকে বলল,

মেয়েটাঃ আমিই জেরিন।

(আমি জেরিনের দিকে তাকিয়ে পুরা থ হয়ে গেলাম। একি! উনি কি করে জানলেন যে আমি উনার সাথে দেখা করতে এসেছি।)

আমার চিন্তাভাবনার বাঁধ ভেঙ্গে জেরিন প্রশ্ন করে বসলো,

জেরিনঃ আমাকে বিয়ে করবে?

মেয়েটার কথা শুনে আমি হাসবো, নাকি কাঁদবো, নাকি দৌড় দিবো, নাকি দাঁড়িয়ে থাকবো। কিছুই বুঝতে পারতেছি না। এই মেয়েকে তো আমি এখনো কিছু বলিনি। মেয়েটা কিভাবে জানবে যে আমি মেয়েটিকেই খুচ্ছিলাম। তাও আবার আমাকে একবারেই বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিল।

আমি কোন কিছু উত্তর না দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। সেই মেয়েটি আমার হাত ধরে একটা বাসার ভিতরে ঢুকিয়ে ফেলল। বাসাটা দেখে মনে হচ্ছে অনেক পুরনো। ভিতরে গিয়ে দেখলাম মাকড়সার জাল ভরা, অন্ধকার, ময়লা-আবর্জনা। যেন অনেকদিন হয়ে গেছে এই বাসায় কেউ আসে না। আমি ভেবেছি হয়তো জেরিন আমাকে এখানে এনেছেন অন্য কোন কারণে। তখনই আমার ফোনে একটা কল আসলো,

শাফিনঃ জেরিন, একটু দাঁড়াও! কথা বলে আসি।

রহস্যময় বাড়ি

কানের মধ্যে ফোন তুলতেই ওপাশ থেকে রনি বলল,

রনিঃ হ্যালো, শাফিন! কই তুই?

শাফিনঃ আমি একটা জরুরী কাজে বাহিরে আসছি রনি। কিছু বলার আছে?

রনিঃ আচ্ছা ঠিক আছে, এলাকায় আসলে আমাকে একটা কল দিস।

শাফিনঃ ওকে।

ফোনটা রাখার পরেই দেখতে পেলাম আমার সামনে একজন বয়স্ক লোক দাঁড়িয়ে আছে।

দেখে মনে হচ্ছে আশেপাশে কোথা়ও থাকে। আমি পিছনে ফিরে চলে আসার প্রস্তুতি নিচ্ছি। তখনি উনি বলল,

লোকটাঃ তুমি এখানে কী করো?

শাফিনঃ না, এমনি এসেছি দাদু… কিন্তু কেন?

লোকটাঃ এই বাড়িতে দিনের বেলা সবাই ভয় পায়। কেউ বাড়ির সামনে দিয়ে হেটে যাওয়ার সাহসটা পর্যন্ত পায়না। আর তুমি বাড়ির ভিতর থেকে কেমনে বাহির হয়ে আসলে।

শাফিনঃ আমি আপনার কথার আগামাথা কিছুই বুঝতে পারতেছি না। এখানে ভয় পাওয়ার কি আছে! আমি তো এখানে জেরিনের সাথে এসেছি।

আমার কথা শুনে উনি বুকের মধ্যে হাত দিয়ে কাঁপতে কাঁপতে পড়ে যাচ্ছে। যেন এক্ষুনি উনি হার্ট অ্যাটাক করবে।

তখনি আমি দৌড়ে গিয়ে বললাম,

শাফিনঃ দাদু, আপনার কি হয়েছে? এরকম করতেছেন কেন?

তিনি অনেক কষ্টে বললেন,

লোকটাঃ জেরিন এবং জেরিনের আব্বুকে আরো ৭৫ বছর আগে মেরে ফেলা হয়। তারা মারা গেছে অনেক আগে এবং দুইজনেই মৃত। আর তুমি বলছো জেরিনের সাথে এসেছো? চলবে…

পরের পর্ব- ভয়ানক ভৌতিক গল্প – অশুভ আত্মার প্রতিশোধ – পর্ব ৬

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *