হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প ৭

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৭ | Love Story

হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৭: গত পর্বে প্রিয়ন্তীর মনে রংধনুর খেলা দেখেছি। নীলের বোন এই খেলাকে আরো এগিয়ে দিচ্ছে। একটু একটু করে নীল ও প্রিয়ন্তী এগিয়ে আসছে একে অপরের দিকে। চলুন দেখি আজকে কি হয়?

অবুঝ নীল

নীল এই দুটো কথা বলেই ফোন রেখে দিল। ইশশশ! কি ছেলেরে বাবা! একটু তো গল্পও করতে পারতো তাইনা! কিসের এত তাড়া!
কত কিছুই না বলার আছে প্রিয়ন্তীর।

কিছুদিন পরেই তুরিন আপুকে ডিসচার্জ করে দিল হসপিটাল থেকে। প্রিয়ন্তী ও সেদিন গেল। আপু এখন বেশ সুস্থ। তুরিন আপু অনেক জোড় করল প্রিয়ন্তী কে তাদের বাসায় নিতে কিন্তু প্রিয়ন্তীই রাজী হলোনা। বলল: “কন্ট্যাক তো আছেই পরে একদিন আসব আপু, আজ থাক।”
নীল একবারও বলল না। আজ এমন ভাব করছে যে সে প্রিয়ন্তীকে চেনেই না! খুব মন খারাপ হলো প্রিয়ন্তীর। ছেলেটা কি এতটুকু বোঝেনা! তার চোখে কি নীলের প্রতি ভালো লাগাটা সে দেখেনা! সবাই বোঝে আর এই এক গাধা ছেলে কিচ্ছু বুঝেনা। অবশ্য বুঝবে কিভাবে! ঠিকভাবে তো তাকায়ই না কোনদিন!

আজ নিহা ক্যাম্পাসে এসেছে তানুকে নিয়ে। তাই সবাই বেশ গোল হয়ে জড়ো হয়েছে ব্যাচমেটের ফিয়ন্সে কে দেখতে, আলাপ করতে। প্রিয়ন্তী যেতেই নিহা বলে উঠল: “তো ম্যাডামের সময় হলো তাহলে আমাদের জন্য? আমিতো ভাবলাম এখন সব সময় শুধু ডাক্তারবাবুর জন্যই!”
রাকা আর অর্ন জোড়ে হেসে উঠল।

প্রিয়ন্তীর এমনিতেই নীলের আজকের ব্যবহারে মেজাজ খারাপ তার উপর ওদের এই ফাজলামি ভাল লাগছিল না।
তাই কিছুটা রিয়্যাক্ট করেই বলল: “তোরা আন্তাজেই এসব ভাবোস কেন বলবি একটু? আমি কি বলছি ওই ছেলে আমার বফ? নাকি আমি ওকে বিয়ে করতেছি? হুদাই মজা করার মানেই হয় না কোনো।”
নিহারা ঠিক বুঝতে পারল প্রিয়ন্তীর মেজাজ খারাপ ওই ছেলের উপরেই। নইলে এই একমাত্র ছেলে যার কথা বললে প্রিয়ন্তী কখনো রিয়্যাক্ট ও করেনা, উল্টো লজ্জা পায়!
আজ কিছু তো হয়েছেই।

প্রিয়ন্তী একা এক সাইডে বসল। আশেপাশের কিচ্ছু ভাল লাগছেনা তার! কি হলো নিজেও বুঝতে পারছেনা! জাস্ট নীলের বিহেভিয়ারে এতোটা আপসেট কেন লাগছে ওর!
রাকা এসে পাশে বসল আর বলল: ‘ প্রিয়ন্তী তুই ছেলেটার প্রেমে পড়ে গেছিস। দেখ অস্বীকার করিস না আর এত্ত ভাবিস না। এটাই সত্যি। তোর চোখেই সত্যিটা দেখা যায়।’
প্রিয়ন্তী অবাক চোখে শুধু রাকার দিকে চেয়ে রইল। তাহলে কি রাকা সত্যিই বলছে? সে সত্যিই ওই ছেবলাটার প্রেমে পড়েছে নাকি? হায়হায় এখন কি হবে!
রাকা আবারো বলল: ‘এত্ত ভাবার তো কিছু নেই। ভালোবাসিস সেটা তাকে জানা। না বললে বুঝবে কিভাবে? দরকারে আমরা হেল্প করি?”
প্রিয়ন্তী বসা থেকে উঠেই রাকাকে হাগ করে থ্যাঙ্কস বলে দৌড়ে বেরিয়ে গেল।
রাকার আর বুঝতে বাকী নেই সে কোথায় যাচ্ছে। আমার পাঠকরাও নিশ্চয়ই বুঝে গেছে এতক্ষনে।

আনমনে প্রিয়ন্তী

গাড়িতে বসেই নীলকে ফোন দিল প্রিয়ন্তী। প্রথমবার পিক না করলেও দ্বিতীয়বার জনাব ফোন পিক করল।
প্রিয়ন্তী: “আপনি কি ব্যস্ত? কাল একটু দেখা করা যাবে?”
নীল: “ঠিক ব্যস্ত না তবে চারটা অবধি ডিউটি আছে। কোন জরুরী প্রয়োজন?”
প্রিয়ন্তী: “না। ঠিক আছে কাল সাড়ে চারটায় একবার টিএসসি যাবেন আমার সাথে?”
নীল: “হ্যা, চারটার পরে হলে আমার সমস্যা নেই।”

প্রিয়ন্তী আপন মনে গুনগুন করতে লাগল,
শোনো গো দখিনো হাওয়া,
প্রেম করেছি আমি।
চোখেতে লেগেছে নেশা,
দিক ভুলেছি আমি!

হঠাৎ গাড়ী ব্রেক করায় প্রিয়ন্তীর হুশ ফিরল। নিজের অজান্তেই হেসে দিল, কি কি ভাবছে সে! নীলের তো পছন্দের কেউও থাকতে পারে অথবা নীল তো ওকে পছন্দ নাও করতে পারে! তবু কেন জানি ওর বারবার এসব ভাবতেই ভাল লাগছে যে নীল ওরই হবে।

সারারাত প্রিয়ন্তী ভাবতে লাগল কাল কি হবে! নীল কে কি বলবে ও? কি পড়ে যাবে? নীল কি ওর চোখে একটাবার তাকাবে? আর তাকালেও কি বুঝবে চোখের ভাষাটা? ইশশ ভাবতেই ওর মন খুশিতে ভরে যাচ্ছিল।

সকালে মায়ের ডাকে ঘুম ভাঙে প্রিয়ন্তীর। চোখ খুলতেই সকালের রোদ ওর গালে পড়ল। ওর মনে হলো এটাই সবচেয়ে মিষ্টি সকাল ওর জীবনের। উঠে বসেই ফোন হাতে নিল আর নীলকে একটা ম্যাসেজ দিল “গুড মর্নিং”
তারপর ফ্রেশ হতে গেল ও। ফিরে এসে ফোন চেক করল। না নীল কোন রিপ্লাই দিল না! ছ্যাবলাটার কি এত কাজ যে ম্যাসেজ এর রিপ্লাই ও দেয়না নাকি ম্যাসেজটা পায়নি!
ধ্যাত!
প্রিয়ন্তী বাবাকে মর্নিং উইশ করে টেবিলে বসল নাস্তা করতে। চা খাওয়ার সময়েই ফোনে একটা নোটিফিকেশন এর সাউন্ড পেল ও। কিসের নোটিফিকেশন হতে পারে? নীল রিপ্লাই দিল?
তাড়াতাড়ি চা শেষ করে ফোন হাতে নিল।
হ্যা নীলের ম্যাসেজ,
ওর ফেইস এক্সপ্রেশন মুহুর্তেই চেইঞ্জড!
না এখানে বসে থাকলে বাবা মায়ের সামনে ধরা পড়বে! দ্রুত রুমে গিয়ে ম্যাসেজটা ওপেন করল।
নীল – ” শুভ সকাল মিস প্রিয়ন্তী “
প্রিয়ন্তী যেন নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছেনা।
নীল রিপ্লাই দিল তাও এত্ত সুইট করে তার নাম ডেকে।

দুপুরে গোসল করে এসে তাড়াতাড়ি ড্রেস সিলেক্ট করছে প্রিয়ন্তী। আজ তাকে সবচেয়ে সুন্দর দেখাতে হবে শুধু তার নীলের চোখেই।
একবার রেড ড্রেস দেখছে তো আরেকবার ব্ল্যাক ড্রেস। কিছুতেই সিদ্ধান্ত নিতে পারছেনা সে! নীল কোন রং এ তাকে দেখতে পছন্দ করবে? বুঝে উঠতে পারছেনা। (চলবে)

পরের পর্ব- হৃদয়স্পর্শী ভালোবাসার গল্প – বেলা শেষে পর্ব ৮

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *