ভালোবাসার কষ্টের গল্প

ভালোবাসার কষ্টের গল্প – টিউশন স্যারকে ভালবাসা পর্ব ২

ভালোবাসার কষ্টের গল্প – টিউশন স্যারকে ভালবাসা পর্ব ২: গত পর্বে দেখেছি মিলা কিভাবে অসহায় স্যারের সাথে খারাপ ব্যবহার করত। এবার যখন স্যারের সংগ্রামের জীবন সম্পর্কে মিলা জেনে গেছে, এখন তাহলে দেখা যাক স্যারের সাথে কিরূপ আচরণ করে সে।

স্যারের জন্য অপেক্ষা

আজকে স্যারের জন্য অপেক্ষা করছে মিলা। কালো পাড়ের নীল তাঁতের শাড়ি পড়েছে। চোখে ঘন করে কাজল দিয়েছে সে। এদিকে সাতটা বেজে যাচ্ছে এখনো স্যারের কোন খবর নেই। হঠাৎ মিলার মা এসে বলল- মিলা তোর টিচার আজ আসবে না।

মিলাঃ মা আসবে না কেন স্যার?
মাঃ অসুস্থ নাকি সেজন্য আসবে না।
মিলাঃ ওহ্ আচ্ছা। রাতে আর ঘুম আসছে না মিলার।

এদিকে জ্বরে সকালে চোখ খুলতে পারছে না রাহাত। এভাবে অসুস্থ থাকলে ‘রিত্তের’ চিকিৎসার টাকা কিভাবে জোগাড় করবো? এসব ভেবেও কোন কূল কিনারা পাচ্ছে না। তাই মনে মনে মনে আল্লাহ আল্লাহ করছে। কাঁপনি দিয়ে জ্বর উঠছে শরীরে। চোখ দু’টি রক্তের মতো লাল হয়ে গেছে। খুব কষ্ট হচ্ছে, সহ্য করতে পারছে না রাহাত।

অন্যদিকে মিলার আজ ক্লাসে মন বসছে না। তাই জেসিকে বলল-

মিলাঃ দোস্ত তুই তো সব জানিস।’ স্যারকে দেখতে খুব মনে চাচ্ছে।
জেসিঃ আচ্ছা মিলা, তুই কি তোর স্যারকে ভালোবেসে ফেলছিস? তাচ্ছিল্যের সুরে মিলাটা বলল জেসি।
মিলাঃ যা, মজা করিস না।
জেসিঃ না, মজা করছি না। যাকে তুই দু’নয়নে দেখতে পারতি না। তাকে দেখার জন্য এত উতলা হলি কেন?
মিলাঃ আচ্ছা তুই থাক, আমি গেলাম।
জেসিঃ আচ্ছা, সাবধানে যাস।


স্যারের বাসায় মিলা

মিলা স্কুল থেকে বের হয়ে, সোজা বাসায় এসে দেখে রাহাত সেন্সলেন্স হয়ে পড়ে আছে ফ্লরে। রাহাতকে ফ্লরে পড়ে থাকতে দেখে ভয় পেয়ে যায় মিলা। দৌড়ে এসে, রাহাতের মাথাটা কুলে নিয়ে বলতে লাগে ‘স্যার কি হয়েছে আপনার?’ বলেন প্লিজ। মিলা রাহাতের মাথায় হাত দিয়ে চমকে ওঠে! এতো জ্বর! তাড়াহুড়া করে বিছানায় কোন রকম তুলে মাথায় পানি দিতে লাগে। মিলার খুব কষ্ট হচ্ছে। স্যারের কিছু হয়ে যাবে না তো। বারবার মাথায় জ্বলপট্টি দিচ্ছে। আর বলছে ‘ স্যার চোখ খুলেন প্লিজ। আর আমি আপনাকে কটু কথা বলব না। প্লিজ স্যার!

এদিকে প্রায় ঘন্টাখানেক পর চোখ খুলল রাহাত। চোখ খুলতেই দেখে মিলা তার মাথাটা কুলের উপর রেখে মিলা দু’চোখে অবিরাম বৃষ্টি ঝরাচ্ছে।

রাহাতঃ এই মিলা তুমি এখানে? আর কাঁদছো কেন?
মিলাঃ রাহাতের মিলা শুনে মিলা বলল’ স্যার আপনি অসুস্থ আমাকে ফোন করে জানাবেন না? আচ্ছা স্যার খেয়েছেন?
রাহাতঃ না খাইনি। আর তুমি এখান থেকে চলে যাও। রাহাত রাগী ভঙ্গিতে বলল।
মিলাঃ স্যার চলেই তো যাব, তবে রাখতে চাইলে সারা রাতই থাকবো!


রাহাতঃ কি বলছো এসব তুমি?
মিলাঃ স্যার কিছু না। আচ্ছা স্যার, আমাকে ক্ষমা করা যায় না?
রাহাতঃ কিসের ক্ষমা?
মিলাঃ স্যার, আমি আপনার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। অনেক কষ্ট দিয়েছি। আমাকে ক্ষমা করে দেন। আর আপনার জন্য খাবার নিয়ে এসেছিলাম স্যার। খেয়ে নিয়েন টেবিলে রাখা আছে।
রাহাতঃ মিলার মুখে এমন মিলা শুনে রাহাত বলল ‘তুমি কি আমাকে করুণা দেখাতে এসেছো? করুণা দেখাতে এলে প্লিজ চলে যাও।’
মিলাঃ স্যার এটা করুণা না। এটা, আর কিছু বলতে পারল না মিলা। আর বলতে পারবেও না সে।


একটু একটু ভালবাসার গল্প

মিলার এমন কথা শুনে রাহাত বুঝতে পারল, তার প্রতি মিলা অনেকটা উইক হয়ে পড়েছে। মিলা এখন যা করছে এসব কিছু করুণা থেকে করছে। তাই রাগী ভাব নিয়ে রাহাত বলল-

রাহাতঃ কি হলো যাচ্ছো না কেন? দরদ দেখাতে এসছো? দরদ দেখিয়ো না প্লিজ। প্লিজ চলে যাও। তোমার বাবা জানতে পারলে অন্য কিছু ভাববে।
মিলাঃ আচ্ছা আমি চলে যাচ্ছি। আপনি খাবারটা খেয়ে নিয়েন। এই বলে মিলা চলে গেল।

রাহাত অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে মেয়েটার দিকে। কি অদ্ভূত যে মেয়েটা তাকে দেখতেই পারতো না, আর আজ সেই মেয়ের চোখে অজানা রহস্য দেখতে পেল সে। বিছানায় শুয়ে আছে রাহাত।

হঠাৎ পাশের বাসায় রাকিব এসে বলল- ভাইয়া এই যে আপনার ওষুধ।

  • রাহাত চমকে ওঠে! ওষুধ! কে পাঠিয়েছে রাকিব?
  • একটা আপু আপনাকে দিতে বলেছে।

রাহাত বুঝতে পারল এটা মিলার কাজ। তাই কিছু বলল না।

এদিকে মিলা বাসায় এসে ফ্রেশ হয়ে আসরের নামায শেষ করে। মোনাজাতে রাহাতের জন্য দোয়া করল। কেন জানি রাহাতকে বারবার দেখতে মন চাচ্ছে মিলার। কিন্তু কি করার স্যার তো অসুস্থ।

দু’দিন পর রাহাত অনেকটা সুস্থ। রুমে শুয়ে আছে। হঠাৎ ফোনটা বিরক্তিকর সুরে বেজে উঠল। ফোনটা ধরতেই ওপাশ থেকে মেয়েলী কন্ঠে আওয়াজ আসলো-
মিলাঃ স্যার আপনি আসবেন না?
রাহাতঃ কে বলছো তুমি?
মিলাঃ স্যার আমি মিলা। আপনার ছাত্রী।
রাহাতঃ ওহ্ আচ্ছা, সন্ধ্যায় যাবো।

স্যারের জন্য অপেক্ষা

মিলা ফোনটা কেটে দিয়েই। খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেল। তাড়াতাড়ি শাওয়ার নিতে বাথরুমে চলে গেল। শাওয়ার শেষ করে, মিলা তার পছন্দের শাড়ির সাথে ম্যাচিং করা ব্লাউজ পরে নিল। সুন্দর করে চোখ জোড়াতে কাজল দিতে লাগল।

মাঃ কিরে আমার মা আজ এত সাজছিস কেন?
মিলাঃ মা কই সাজছি না তো।
মাঃ না’রে মা তোকে এভাবে তো কখনো সাজতে দেখিনি। বাট আজ প্রথম এভাবে সাজছিস। আচ্ছা বল না কিসের জন্য এতো সাজ-গোছ।
মিলাঃ মা তুমি যাবা। আমার আজ সাজতে মন চাচ্ছে, তাই সাজতেছি।
মাঃ আচ্ছা, সাজেন মহারানী।

মিলার মা চলে গেলে। মিলা আবারো সাজায় মন দিল। বারবার আয়নার নিজেকে দেখছে। আর মনে মনে ভাবছে, সত্যিই কি আমাকে সুন্দর লাগছে। এমন সময় মিলা দেখে তাদের বাসার কাজের মেয়েটা তার রুম গোছাচ্ছে।

মিলাঃ এই জান্নাত এ দিকে আয় তো?
কাজের মেয়েঃ জি আপামনি কিছু বলবেন?
মিলাঃ দেখতো আমাকে কেমন লাগছে?

জান্নাত মিলার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো ‘আপা মনি আমি ছেলে থাকলে তোমার প্রেমে পড়ে যেতাম।’ কথাটা শেষ হতে না হতেই, কলিং বেলের আওয়াজ। মিলা দৌড়ে গিয়ে দরজা খুলেই দেখে রাহাত দাঁড়িয়ে আছে।

রাহাতঃ কি হলো এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে, না আমাকে ভেতরে যেতে দিবে?
মিলাঃ লজ্জা পেয়ে সরে যায়।

মিলার ভালবাসার চারা রোপণ

রাহাত একের পর এক অঙ্ক করে দিচ্ছে। মিলা রাহাতের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে আছে। অঙ্ক করা শেষ হলে রাহাত দেখে মিলা তার দিকে অবাক নয়নে তাকিয়ে আছে।

রাহাতঃ কি হলো, অঙ্ক করালাম বুঝছো কিছু?
মিলাঃ জী মানে (লজ্জা চোখে)।
রাহাতঃ এবার একটু রাগি স্বরে বলল ‘কি হলো প্রবলেমটা কি তোমার?’
মিলাঃ কিছু না, স্যার।
রাহাতঃ আচ্ছা। শুনো, কাল থেকে আমি আর পড়াতে আসতে পারব না।

মিলাটা যেন মিলার বুকে তীরের ফলার মতো বিঁধলো। চোখের পানি আঁকটে রেখে বলল –
মিলাঃ স্যার কেন আসবেন না?
রাহাতঃ নতুন একটা টিউশনি পেয়েছি। তাছাড়া আমার জন্য তোমাকে নিয়ে সবাই মজা করে। আমি চাই না আর তোমার বিরক্তির কারণ হতে।
মিলাঃ প্লিজ স্যার, আমি আপনার কাছেই পড়ব। আপনি আমাকে পড়াবেন। (অনেকটা কাঁদো কাঁদো সুরে)
রাহাতঃ তোমার তো খুশি হওয়ার কথা।
মিলাঃ জানি না আপনি যদি আমাকে না পড়ান তাহলে বাবাকে বলবো আমাকে খারাপ মিলা বলেছেন। প্লিজ স্যার, আপনি আমাকে প্রতিদিন পড়াতে আসবেন। বলেন আসবেন তো? নইলে বাবাকে বলে দিবো আপনি আমার গায়ে হাত দিয়েছেন।

রাহাত মিলার মুখে এমন কথা শুনে স্মিত হেসে বলল ‘আমি জানি পারবে না।’ কেননা, তোমার চোখে আমি অন্যকিছু দেখতে পাচ্ছি। আচ্ছা আসি। আমার কথায় বা আচরণে যদি কখনো কষ্ট পেয়ে থাকো ক্ষমা করে দিয়ো।

রাহাতের কথা শুনে কথার দু’চোখ বেয়ে অশ্রু গড়িয়ে পড়তে লাগল। সদ্য কাজল দেয়া চোখ দুটি ঝাপসা হয়ে আসছে মিলার। কাজলগুলো লেপ্টে যাচ্ছে। তার মন বলছে এখনই স্যারকে বলে দিতে যে, ‘সে রাহাতকে ভালোবাসে। বড্ডবেশি ভালোবাসে।’

স্যারের হাত ধরা

রাহাত বুঝতে পারল এখানে থাকা তার ঠিক হবে না। তাই যখন চলে যাওয়ার জন্য উঠে দাঁড়িয়েছে। এমন সময় মিলা রাহাতের হাত ধরে ফেলে। রাহাত খানিকটা ঘাবড়ে গিয়ে বলে-

রাহাতঃ কি হচ্ছে এসব?
মিলাঃ বুঝেন না? আমি আপনাকে ভালোবাসি। যখন দেখতে পারতাম না। অপমান করতাম তখন আমার অপমান সহ্য করে পড়াতেন। আর আজ যখন ভালোবাসি তবে কেন চলে যাচ্ছেন? আমি আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না। এই দু’দিনে আপনি আমার হৃদয়ে আসন গেড়ে বসেছেন। আপনার প্রতি ঘৃণা থেকে ভালোবাসার জন্ম নিলেও আমার ভালোবাসাতে কোন খাঁত নেই। প্লিজ এ ভালোবাসাকে নষ্ট করে দিবেন না।

রাহাতঃ মিলা, তোমার মনে যা চলছে এটা তোমার আবেগ। আমার প্রতি করুণা থেকে বলছ এসব। এটা ভালোবাসা না।

মিলাঃ রাহাতের কথা শুনে চোখের পানি ছেড়ে দিয়ে বলতে লাগল ‘স্যার, আমি সত্যি আপনাকে ভালোবাসি। আপনাকে ছাড়া বাঁচবো না।’

ঠাস করে রাহাত মিলার গালে চড় বসিয়ে দিয়ে বলল-

রাহাতঃ ‘লজ্জা করে না, ভালোবাসার কথা বলতে। ভালোবাসা কি জানো? নেক্সট টাইমে এমন পাগলামী যেন আর না হয়।’
মিলাঃ গালে হাত দিয়ে আবারো বলল ‘রাহাত আমি তোমাকে ভালোবাসি।’ কোনটা ভালোবাসা কোনটা কি জানতে চাই না।
রাহাতঃ কিছু না বলে বাসা থেকে বেরিয়ে এলো। আসার সময় মিলার বাবাকে বলে এলো, আর পড়াতে আসবে না।

মিলার বাবা পিছন থেকে আঁটকাতে গিয়েও থেমে গেল।

রাহাত (স্যার) ও তার বোন

রাতে রুমে শুয়ে শুয়ে রিত্তের মিলা ভাবতে ভাবতে ঘুমিয়ে যায় রাহাত। সকাল বেলা ফোনটা চেনা সুরে বেজে ওঠল। রাহাত ঘুম জড়ানো হাতে ফোনটা ধরতেই, ওপাশ থেকে কে যেন বলল ‘ হ্যালো আপনি কি রাহাত?’

জি। আমি রাহাত। আপনি কে বলছেন?

আমি হসপিটাল থেকে বলছি, আপনি এখনি আসেন আপনার বোনের অবস্থা বেশি ভালো না।

রাহাত বিছানা থেকে উঠে, গায়ে কোন রকম শার্ট চাঁপিয়ে বের হয়ে গেল।

এদিকে মিলা স্কুলে যাওয়ার পথে রাহাতকে দেখতে পেল কোথায় যেন যাচ্ছে পাগলের বেশে। তা দেখে মিলাও রাহাতের পিছু নেয়।

রাহাত হসপিটালে এসেই দৌড়ে যায় রিত্তের রুমে। রিত্ত কেমন যেন ছটফট করছে?

রাহাতকে দেখেই রিত্ত কষ্ট চেঁপে রেখে বলল-

রিত্তঃ ভাইয়া তুমি এসেছো।’
রাহাতঃ হুম আমার মহারানী ডেকেছে, আমার যে আসতেই হবে।
রিত্তঃ ভাইয়া আমার মাথার কাছে এসে বসবে?
রাহাতঃ রিত্তের মাথার কাছে বসে, মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে।
রিত্তঃ জানো ভাইয়া, আমার না অন্ধকার খুব ভয় হয়। মানুষ মরে গেলে নাকি আকাশের তারা হয়ে যায়। ভাইয়া তারা তো অনেক দূরে থাকে। তারা হয়ে গেলে, আমাকে ভুলে যেয়ো না ভাইয়া। আর শুনো প্রতিদিন রাতে বাহিরে এসো আমি তোমাকে ভাইয়া বলে দূর আকাশ থেকে ডাকব। তুমি শুনবে তো ভাইয়া?

রাহাতঃ এই রিত্ত এসব বলছিস কি তুই? প্লিজ বোনটা না ভালো। এমন বলে না। তোর কিছুই হবে না। তোর ভাইয়াকে খাইয়ে দিবে কে তোর কিছু হলে? মহারানী আর কখনো তারা হওয়ার কথা বলবি না ঠিক আছে?
রিত্তঃ ভাইয়া তোমার বুকে নিবে? আমার খুব কষ্ট হচ্ছে। পেটের বাম সাইডে খুব ব্যাথা করছে। নাও না ভাইয়া।
রাহাতঃ ছোট্ট রিত্তকে বুকে টেনে নেয়।
রিত্তঃ ভাইয়া আর কোনদিন আইসক্রিমের জন্য বকা দিবো না। কখনো তোমার প্লেট থেকে খাবার নিয়ে খাবো না। তোমাকে বলবো না ভাইয়া আমার চুলগুলো আঁচড়ে দিতে। আমার না খুব কষ্ট হচ্ছে, চোখ বন্ধ হয়ে আসছে ভাইয়া ।

রাহাত ও ডাক্তার

রিত্তের কথা শুনে রাহাত চোখের পানি ধরে রাখতে পারছে না। আপন বলতে পৃথিবীতে যে এই ছোট্ট পরীটা ছাড়া আর কেউ নেই তার।

এদিকে রিত্ত আর কথা বলছে না। রাহাত বারবার বলছে’ এই মহারানী তোর কি হয়েছে কথা বল। এই দেখ তোকে বুকে নিয়েছি। কি হলো কথা বল? তোর কিছুই হবে না। তোর ভাই তোকে জীবন দিয়ে হলেও বাঁচাবে । কথা বল না। মা-বাবাকে হারিয়ে তোকে নিয়েই যে বেঁচে আছি। এই ডাক্তার কোথায় গেলেন? দেখে যান, আমার মহারানী কথা বলছে না।

রাহাতের কথা শুনে ডাক্তার এসে দেখলো রিত্ত সেন্সলেস হয়ে গেছে।

ডাক্তারঃ মিঃ রাহাত, আপনার বোনের অবস্থা বেশি ভালো না। আপনার বোনকে বাঁচাতে হলে যতদূর সম্ভব অপারেশন করতে হবে। এতে অনেক টাকা খরচ হবে। আর অপারেশন না করা গেলে, আমাদের কিছুই করার থাকবে না।

ডাক্তারের কথা শুনে রাহাত বলল-

রাহাতঃ স্যার অপারেশন করতে কত টাকা লাগবে?
ডাক্তারঃ অপারেশন করতে প্রায় ৪ লাখ খানিক তো লাগবেই।

এত টাকার কথা শুনে রাহাত চমকে যায়। এত টাকা! সে কিভাবে ম্যানেজ করবে। কোন উপায় না পেয়ে ডাক্তারকে বলল-

রাহাতঃ স্যার যেভাবে হোক আপনি রিত্তের অপারেশন করেন। আমি টাকা দিয়ে দিবো আপনাকে।
ডাক্তারঃ সরি মিঃ রাহাত। টাকা আগে পেমেন্ট করতে হবে।
রাহাতঃ কোন উপায় না পেয়ে ডাক্তারের পায়ে পড়ে বলল ‘স্যার আমার বোনকে বাঁচান। দরকার হলে সারাহাতীবন আপনার গোলামী করে দিবো।’
ডাক্তারঃ সরি মিঃ রাহাত। এই বলে চলে গেল ডাক্তার।

জানালায় পাশে দাঁড়িয়ে এসব কিছু মিলা প্রত্যক্ষ করল। মিলার বুক ফেটে কান্না আসছে। একটা ভাই যে তার বোনকে এতবেশি ভালোবাসে স্যারকে না দেখলে বিশ্বাস হতো না। মিলা আরো বেশি রাহাতের প্রতি উইক হয়ে যাচ্ছে। মনে হচ্ছে, মানুষটাকে জীবন সাথি হিসেবে পেলে জীবন ধন্য হবে।

মিলার বিয়ের প্রস্তাব

এদিকে বিকেলে মিলা বাসায় যেতেই মিলার মা বলল-

মাঃ স্কুলে না গিয়ে কোথায় গিয়েছিলি? আর শোন রেডি হয়ে নে। তোর বাবার বন্ধুর ছেলে তোকে দেখতে আসবে।

মিলাঃ কি বলছো এসব মা!

মাঃ সত্যিই বলছি ভাবছিলাম আর একটু পড়ালেখা করলে বিয়ে দিবো। কিন্তু তোর হাব-ভাব ঠিক দেখছি না। ওরাও ঠিক করেছে বিয়ে করে ছেলে তোকে নিয়ে বিদেশ চলে যাবে। আর ছেলেও ভালো।

এদিকে সন্ধ্যাবেলা মিলাকে দেখতে এসে তারা আংটি পড়িয়ে দিয়ে গেল। ছেলেরা চলে গেল, মিলা তার বাবাকে গিয়ে বলল-

মিলাঃ বাবা আমি এ বিয়ে করবো না।
বাবাঃ বিয়ে করবে না কেন?
মিলাঃ বাবা আমি এখন বিয়ে করতে চাচ্ছি না।
বাবাঃ হুম জানতাম তুমি এটাই বলবে, কিন্তু তোমার বিয়ে আমার বন্ধুর ছেলের সাথেই হবে। চলবে…

পরের পর্ব এখানে: ভালোবাসার কষ্টের গল্প – টিউশন স্যারকে ভালবাসা শেষ পর্ব

আমাদের চ্যানেলের ভিডিও দেখতে পারেন-

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *