হারামী ডট কম – ত্রিভুজ প্রেমের গল্প কাহিনী

হারামী ডট কম – ত্রিভুজ প্রেমের গল্প কাহিনী: দেখুন মি. জাহিদ। আমি জানি আপনি বার বার আমাকে দেখার জন্য আসেন। তবে নিজেকে সামলান তিন চারদিন পর আমার বিয়ে। আমি চাইনা আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক।


পর্ব ১

মামা এক কাপ চা তিন ভাগে ভাগ করে দেনতো।
~ কিরে তোরা এভাবে তাকিয়ে আছিস কেনো? কি চা খাবি না? (আমি)
~ তোর চা তুই খা, হালা কিপ্টে। (লাবিব)

~ মদনে জীবনেও ঠিক হবে না। (হাসিব)
~ আরে আগে বলবি তো তোরা খাবি না। মামা ভাগ করা লাগবে না এক কাপেই দেন। (আমি)

লাবিব আর হাসিব চলে গেলো। আমি তৃপ্তি নিয়ে চা শেষ করে পকেটে হাত দিয়ে দেখি হারামি দুইটা আমার ওয়ালেট মেরে দিছে। বুকের বাম পাশে চিন চিন ব্যাথা অনুভব করলাম, চোখে মুখে শুধু জুনি জুনি দেখি। আজ সকালে আব্বুর কাছ থেকে ৫০০ টাকা মারছি। হারম জাদারা একটা টাকাও রাখবে না। ভাবতেই বুকটা ধরপর করে উঠলো৷ খুঁজতে বের হয়েছে।

দূর কি জন্য যে কিপ্টামি করতে গেলাম৷ এখন ঠ্যালা সামলাও।
অনেক খুঁজেছি শহরের অলিতে-গলিতে, ফাস্টফুড রেস্টুরেন্টে সব জায়গায়। কিন্তু পরাস্থ গলা শুখিয়ে গেলো। পানি পানি বলে চিৎকার করলাম। দূর এই মধ্যদুপুরে কে আমার জন্য পানি আনবে।

নদীর পারে গিয়ে ঠান্ডা হয়ে আসি। ওফ এতো গরম, আর একটু হলে ফিট হয়ে পরে যেতাম। দূর থেকে একটা পানির বোতল দেখতে পেলাম৷ ক্ষুদার্থ শিকারীর মত ঝাপিয়ে পরে বোতলের সবটুকু পানি শেষ করে একটা নিশ্বাস নিলাম।

পাশেই একটা মেয়ে, অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে৷
ওমা, একটু পানির জন্য মানুষ এমন করে তাকিয়ে থাকে? নজর ফিরে না, মনে হয় ক্রাশ খাইছে। হ্যান্ডসাম তো তাই।
ভাব নিয়ে জিজ্ঞাস করলাম।

~ হেল্লোও? (আমি)
~ দোকানদার কে একটা মাইর দিতে হবে।
~ পানি খেয়েছি আমি, তার জন্য দোকানদার কেনো মাইর খাবে?

~ আরে তার জন্য না। পানির সাথে বিষ ছিলো। দোকানদার বলেছে খাওয়ার সাথে সাথে মরে যাবো। কই আপনি তো এখনো বেঁচে আছেন। এখন বিষেও ভেজাল?
একহাজার ভোল্টের সক্ট খেলাম।

~ বিষ ! নিজের গলা নিজে চেপে ধরলাম। প্রাণটা এখনি যায় যায় অবস্থা। আমি বিষ খাইছি? ও মা গো বাবাগো মরে গেলাম।
~ দূর চিৎকার করবেন না। আমার মাথা এমনেই গরম৷

কি বলে এইসব, মেয়ে নাকি ভুত? মধ্যদুপুরে নদীর পার কি করছে?
~ আপনাকে আমি পুলিশে দিবো! (আমি)
~ বাঁচলে দেখা হবে।

মেয়েটা চলে গেলো। এ কেমন বিপদের মধ্যে পরলাম, আদো বিষ ছিলো নাকি পানি? জানিনা কখন বুক জ্বলা শুরু হয়ে যায়। আল্লাহ বাঁচাও আর জীবনে খারাপ কাজ করবো না।

মোটামুটি হেলেধুলে বাসায় পৌছালাম৷ বিষের একশন এখনো উপলব্ধি করতে পারি নি। নাহ ওইটা পানি ছিলো? মেয়েটা মিথ্যা বলছে। আবার দেখা হবে না? সেদিন বুঝাবো মজা কাকে বলে। হুম,

আমি জাহিদ, সিভিল 4th সেমিস্টার। আমার ক্লাসমেট, লাবিব আর হাসিব। এলাকায় তিন জনের দ্বারা তৈরী হয়েছে হারামি ডট কম। কাকে কিভাবে বাঁশ দেওয়া যায় এই চিন্তা নিয়ে কাঁটে আমাদের দিন।
বিকেল বেলা হারামি দুইটার সাথে রাস্তায় দেখা হলো। বেশ হাসি খুশি লাগছে৷ আমি কিছু বলতে যাবো তখনি চোখে পরলো দুপুরের মেয়েটা। কাদে একটা বেগ।

~ ওই দেখ ইবলিশ আইতেছে! (আমি)
হাসিব আর লাবিব পিছনে ফিরে তাকালো,
~ এইটা তো পরী, ইবলিশ বলছিস কেন? (হাসিব)

~ আরে, সেটা অনেক লাম্বা ঘটনা। চল মেয়েটাকে একটা খেলা দেখাই। (আমি)
পকেট থেকে রুমাল বের করে মুখে বাঁধলাম। আমরা, কিডন্যাপার৷ মেয়েটা কাছে আসলেই সামনে গিয়ে দাড়াবো। বিকট ভাবে ভয় দেখাবো।

অপেক্ষা অপেক্ষা অপেক্ষা।
মেয়েটা কাছে আসলো, হারিমি দুইটা আমাকে পিছন থেকে এমন জোরে ধাক্কা মারলো নিজেকে কন্ট্রল করতে না পেরে সজা মেয়েটির গায়ে গিয়ে পরলাম। রাস্তার মাঝে হুমরি খেয়ে পরে আছি। কিছুক্ষন পর মেয়েটি ছাড়িয়ে নিয়ে। দুই গালে দুইটা বসিয়ে দিলো৷ আমার এই অবস্থা দেখে হাসিব আর লাবিব দৌড়ে পালালো। ।
~ ওই বদমাইস, রাস্তায় মেয়ে দেখলেই গায়ের ভিতির হুমরে খেয়ে পরতে হয়৷

আমি গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি৷ খেলা দেখাইতে গিয়ে নিজেই বেকুব হয়ে গেলাম৷ হারামি তোদের খবর আছে।
~ তোকে আমি পুলিশে দিবো। শালা বজ্জাত, ওই তুই আজকে নদীর পার আমাকে ডিস্ট্রাব করেছিলি না? পাইছি তোকে, আমার বাবা পুলিশ অফিসার আজকেই তোর নামে বিচার দিবো।
~ পুলিশ,

বুকটা ধকধক করে উঠলো। কথা সত্যি হলে আমি শেষ৷ আমি কি করবো মেয়েটির পায়ে ধরবো আরে নাহ এত নিচু হয়া যাবে না।
~ পুলিশের ভয় দেখেন? শুনেন এই জাহিদ পুলিশ কে ভয় পায় না। আপনার বাবার মত কত পুলিশ অফিসার আমার কাছে আসে যায়, পাত্তা দেইনা কাউকে।

মেয়েটি এবার রাগে গজ গজ করতে লাগলো।
~ তোকে দেখে নিবো।
~ ওকে, ফেসবুক থেকে আমার ওয়াও মার্কা ছবিটা ডাউনলোড দিয়ে চব্বিশ ঘন্টা দেইখেন, কিছু মনে করবো না ৷
মেয়ে টা চলে গেলে। আমার মনের ভিতর নতুন একটা ভয় জাগলো, “পুলিশ”। অল্প বয়সে মরার ইচ্ছা নেই।
এগুলো সবি ভুয়া, নিজেকে বুঝদিলাম।

সন্ধ্যায় ডাব চুরির একটা অভিজান ছিলো। আমি প্রথমে রাজি ছিলাম না। লাবিব আর হাসিবের জোরাজোরিতে অভিজানে গেলাম।
বাড়িটা দুই তলা ছাদে উঠলে সহজেই পাড়া যাবে। আমি একাই উঠলাম পাশের পেয়ারা গাছ দিয়ে। সব কিছু ভালোভাবেই চলতে লাগলো৷ মনে হয় অভিজানটায় সফল হবো। কিছুক্ষন পর দরজা খুলার শব্দ পেলাম। পিছনে তাকাতেই বিকট আকারে চিৎকারের শব্দ পেলাম।

নিচে থাকা হারামি দুইটা দৌড়ে পালালো। এবার কোন বিপদে পরলাম?
মেয়েটাকে চিনা চিনা লাগছে, আরে সকালের মেয়েটাইতো৷ বাবা পুলিশ অফিসার কথাটা মনে পরতেই হাটু কাপা শুরু হয়ে গেলো৷
~ তুই? দ্বারা বাবাকে ডাক দিয়ে নেই।

আমি নিচে নামতে যাবো তখন পিছন থেকে মেয়েটা কলার ধরে ফেলে।
~ বাবা চোর ধরছি, রিভাল বারটা নিয়ে আসো৷
অনেক চেষ্টা করেছে মেয়েটির হাত থেকে ছুটার। কিন্তু এত শক্তি যে আমি বারবার পরাস্থ হলাম। শার্ট এর উপরের দুইটা বুতাম ছিরে গেলো৷

হাতির শরীর নিয়ে একটা লোক আসলো। সম্ভবত পুলিশ অফিসার।
মেয়েটা তখনো আমার কলার ধরে রেখেছে।
~ বাবু গুলি করে দাও, এই ছেলেটাই আমাকে রাস্তায় ডিস্ট্রাব করেছে।
~ নাহ আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়া যাবে না। ইসিতা তুই লিটুকে একটা ফোন দে৷ ওকে থানায় নিয়ে গিয়ে সায়েস্তা করবো।

(মাত্র জানলাম মেয়েটির নাম ইসিতা)
ইসিতা চলে গেলো। আমার হাটু কাপা শুরু হয়ে গেলো৷ পুলিশের বুকপিট নাই মেরে তকতা বানাবে।
আমি লোকটির পায়ে পরে গেলাম৷ স্যার আর কোনো দিন হবে না এবারের মত মাপ করে দিন৷ আর জীনেও আপনার মেয়ের সামনে আসবো না৷

এরে মধ্যে ইসিতা এসে হাজির। আমার এ অবস্থা দেখে হাসতে লাগলো৷
~ যাহ ইসিতার কাছে ক্ষমা চা৷ যদি ইসিতা মাপ করে তাহলে আমিও মাপ করবো।
ব্যাপারটা পেস্টিস এ বাঝলো৷ কিন্তু কিছু করার নেই, জান নিয়ে বাসায় ফিরতে হবে।
~ প্লিজ মেডাম এবারের মত মাপ করে দেন আর কোনোদিন হবে না৷ (আমি)

~ কানে ধর! (ইসিতা)
~ এক্সকিউজ মি!
~ কানে ধর (ঝারি দিয়ে)
কানে ধরলাম।
~ এবার দশবার উঠা বসা কর৷

যাহ কপাল মেয়েরাও আমাকে কানে ধরাই৷ এই জীবন আর রাখা যাবে না৷
চার দিকে তাকালাম নাহ কেউ নেই।
আমার এই অবস্থা দেখে ইসিতা বেশ মজা পেয়েছে। ধারা আবার রাস্তায় পাবোনা দেখবি সেদিন কি করি। রক্ত চুইষা খাইছো হজম করতে পারবা না।

সেদিনের মত জানটা নিয়ে বাড়ি ফিরলাম৷ বেশ ক্লান্ত লাগছে। কঠিন বিপদ থেকে রক্ষা পেলাম।
ওই হারামি দুইটার সাথে আর চলা যাবে না। আজকের দিনটায় শুধু বিপদ আর বিপদ৷ নিতান্ত শুয়ে পরলাম। কানে ধরার বিষয়টা বার বার উকি মারে। আজকে রাতে আর ঘুম হবে না।

সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠে হাল্কা নাস্তা করে ক্যাম্পাসে চলে গেলাম।
ক্যাম্পাসে বসে আছি। হাসিব এসে বলতে লাগলো,
~ কিরে তোকে পুলিশ খোঁজ করলো। (হাদিব)
~ পুলিশ, কেন আমি কি করলাম?

~ কি করস নাই সেইটা বল। কালকে ডাব চুরি করতে গিয়ে ধরা খাইছোত। (লাবিব)
~ তোকে আর আমাদের দলে রাখা যাবে না৷ তুই চোর সমাজের কলঙ্ক। বেটা জীবনে কত চুরি করেছে কই কেউতো ধরতে পারলো না সেই ডাব চুরি থেকে হাস চুরি। তোকে আর দলে রাখা যাবে না। । (হাসিব)

আমার হাতে থাকা কলমটা মাটিতে পরে গেলো হাসিবের কথা শুনে৷
~ যাহ দূরে গিয়ে মর আর কখনো আমার কাছে আসবি না৷ (আমি)
~ ক্যাম্পাস থেকে বের হইছ না বাহিরে পুলিশ আছে। শুনছি কাল পুলিশের বাসায় চুরি করে ডাব পেরে ধরা খাইছোত৷ (লাবিব)

আবার আর থাকতে পারলাম না।
~ ওই দ্বারা হারামজাদা আজকে তোর একদিন কি আমার যতদিব লাগে। (আমি)
লাবিব দৌড়ে চলে গেলো।

ক্যাম্পাস শেষ একা একা বাসায় ফিরছি৷ হারমি দুইটা আবার কাকে বাঁশ দিতে গেলো আল্লাহ ভালো জানে। আমার মত মাইনকার চিপায় না পরলে ঠিক হবে না।
পিছনে ব্যাপক হাসির শব্দ পেলাম। আরে এতো ইসিতা 1st ইয়ারের বেশ কতক লেডিস নিয়ে হাসতেছি। ইজ্জত প্লাস্টিক।


পর্ব ২

ক্যাম্পাস শেষ একা একা বাসায় ফিরছি৷ হারমি দুইটা আবার কাকে বাঁশ দিতে গেলো আল্লাহ ভালো জানে। আমার মত মাইনকার চিপায় না পরলে ঠিক হবে না।
পিছনে ব্যাপক হাসির শব্দ পেলাম। আরে এতো ইসিতা 1st ইয়ারের বেশ কতক লেডিস নিয়ে হাসতেছি। ইজ্জত প্লাস্টিক। আমি মাথা নিচু করে হাটতে লাগলাম।

যত অগ্রসর হই হাসির শব্দটা ততই বারতে থাকে। পিছন ফিরে তাকাবার সোযোগ নেই। এক পর্জায়ে ইসিতা বলে উঠলো,
~ চোর দেখবি? ডাব চোর চুরি করতে গিয়ে ধরা খাইছে। কান মলা খাইছে।
সবাই আবার এক সুরেতে হাসা শুরু করলো। এক পর্যায় বিরক্ত হয়ে ইসিতার সামনে ধারালাম৷

~ সমস্যা কি তোমার, হুম। জুনিয়র জুনিয়রের মত থাকো। নাইলে কিন্তু পস্তাতে হবে। ~ কাল যে কান ধরিয়েছি মনে আছে? না কি আজকেও বাবাকে বলবো, আপনি আজও ডিস্ট্রাব করেছেন৷

~ শুনো তোমার বাবার ভয় দেখাবা না৷ তোমার বাবার মত এমন পুলিশ অফিসার আমার পকেটে থাকে। আর তোমার বাবাকে আমি ভয় পাই না।
আইছে বাপের বরাই দেখাতে। সারাদিন ঘুষ খায় (আমি)

~ ওই তুই কি বললি। তোর হাড্ডি গুরা করে ফেলবো আমি৷ (ইসিতা)
~ আর আমি কি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে দেখবো? তোকে কিডন্যাপ করে তোর বাবার কাছ থেকে ঘুষের টাকা উসুল করবো।
~ কি তুই কিডন্যাপ করবি? দারা আমি এখনি বাবাকে ফোন করে বলতেছি৷

~ দে তোর বাবাকে ফোন। আজকেই প্রমাণ হবে কার কত শক্তি৷
~ ওই লরবি না দাঁড়ায় থাকবি এখানে৷
ওমা সত্যি সত্যি ইসিতা ফোন করেছে৷

~ সাহস থাকলে এখানে দাঁড়ায় থাক, বাবা আসতেছে৷। (ইসিতা)
~ সাহস দেখতে চাও? তাইলে দেখো আমি কি করি।
~ কি করবি তুই?
~ দৌড়ে পালাবো, টাটা।

ওহ আল্লাহ জানি না আবার কোন বিপদে পরলাম। ইসিতার বাবা যদি সত্যি ধরে নিয়ে যায়, তাহলে এলাকায় মুখ দেখাবো কি করে?
বাসায় চলে আসলাম৷ মনের ভয় রয়ে গেলো। এই বুঝি পুলিশ আসলো।

হাতের ঘড়িটা নষ্ট আজ অনেকদিন। আর একটা নতুন দরকার। বিকেলে বের হলাম। রাস্তায় হাসিব আর লাবিবের সাথে দেখা তারা দৌড়াতে আছে। কিছু বলার আগেই হাসিব বলে উঠলো:~
~ পুলিশ আসছে তাড়াতাড়ি পালা। (হাসিব)

মুহূর্তে আমার হাটু কাপা শুরু হয়ে গেলো। কথা না বাড়িয়ে দৌড়াতে লাগলাম। রাস্তায় অনেক বার পরেছি। তাতে কিছু যায় আসে না, আগে জান নিয়ে পালাই। বাসায় এসে টেবিলে থাকা পানি ভর্তি জগটার পুরুটা শেষ করে দিলাম। বড় বাঁচা বেঁচে গেলাম।
মোবাইল এ ক্রিং ক্রিং শব্দ, রিসিব করতেই,

~ কিরে এমন জোরে দৌড়ালি কেন তোকে কি পাগলা কুত্তায় দৌড়ানি দিছে? (হাসিব)
~ মানি
~ আরে আমরাতো ফাজলামো করে পুলিশের কথা বলছি। আর তুই দেখি সত্যি সত্যি ভয় পাইছোত!

হাসিব এক গাল হেসে নিলো। আমার রাগ বিকট আকার ধারণ করলো৷ এমন আমারও আসবে সেদিন বুঝবি মজা কাকে বলে।
আমিতো তো কোনো ক্রাইম করিনি। তাহলে পুলিশকে এত ভয় পাই কেনো? আবার বের হলাম। একটা ঘড়ি কিনে হাসিব আর লাবিব এর সাথে দেখা করলাম।
~ কিরে তোকে নাকি আজ পুলিশে দৌড়ানি দিছে? (লাবিব)
কিছু না বলে চুপ করে রইলাম।

~ আহরে পোলাটার জোবানই বন্ধ হয়েগেছে৷ (হাসিব)
~ সারাদিন মেয়েদের সাথে টাঙ্কি মারলে এমনই হবে। (লাবিব)
পিছনে দেখ তোর ইবলিশ আসতেছে।

সত্যিতো ইসিতা আসতে কাঁদে একটা বেগ।
~ আজকে দেখবি খেলা, আমার বন্ধুকে পুলিশের ভয় দেখাবি। আর আমরা কিছুই বলতে পারবো না? (হাসিব)
হাসিব আর লাবিব মুখে রুমাল বাঁধলো। আমি দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে তাদের কার্যকলাপ দেখি। দুই জন ইসিতার সামনে গিয়ে দাড়ালো।

~ আমার বন্ধুর সাথে বাজে ব্যাবহার করার কারণে তোমাকে কিডন্যাপ করলাম৷ (হাসিব)
~ what? কে আপনাদের বন্ধু?
লাবিব হাত দিয়ে ইশারা করে আমাকে দেখিয়ে দিলো৷ দিলোতো আবার বাঁশটা।
~ কিরে বন্ধু এই মেয়ের কথাই তো বলছিলি? (লাবিব)

~ আরে আমি কখন বললাম? (আমি)
~ তুইতো বলেছিলি কিডন্যাপ করে মুক্তিপন আদায় করতে। কিরে লাবিব কথা ঠিক না বেঠিক? (হাসিব)
~ তোদের তিন জনকে রিমান্ডে নিমু। দ্বারা পুলিশ ডেকে নেই।

কথা শুনে লাবিব আর হাসিব এক সাথে হাসতে লাগলো।
~ আমার বন্ধু পুলিশ কে ভয় পায় না৷ সে পুলিশের মাইর খাইতে খাইতে এই পর্যন্ত আসছে। অবশ্য আমরা ভয় পাই তাই আমরা এখন পালিয়ে যাবো, টাটা, (হাসিব)

হারামী দুইটা দৌড়ে পালিয়ে গেলো। চিপায় পরলাম আমি। বাঁঁশের সঠিক ব্যাবহার।
ইসিতা মাঝায় হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে একরাস রাগ নিয়ে।
~ কিরে বদমাইশ, তোকে কি আবারো থ্যারাপী দেওয়া লাগবে? (ইসিতা)

~ শুনো তোমার সাথে জগরা করার মুড নাই ৷ তুমি তোমার রাস্তা মাপো আমি আমার কাজে যাই। (আমি)
~ আমাকে কিডন্যাপ করার হুমকি ৷ এই শাস্তি তোকে পেতেই হবে। (ইসিতা)
~ গায়ে এক ফোটা রক্ত থাকতে কেউ আঘাত করতে পারবে না, হুক সে পুলিশ অফিসার বা ঘুষ খর। (আমি)
~ খবরদার বাবার নামে বাজে কথা বলবি না। (ইসিতা)

~ হাজার বার বলবো তুই কি করবি রে?
~ নিজের চেহারাটা একবার আয়নায় দেখিস তারপর আমার সাথে পাঞ্জা নিতে আসিস।
~ বাব্বাহ, পেত্নীর আবার পরী হবার শখ, ছিঃ

~ ওই কি বললি আমি পেত্নী, তোকে আমি আজ,
ইসিতা হাতে লাঠি নিলো, মেজাজ চাঙে ৷ এখন যদি ভয়ে দৌড় দেয় তাহলে এলাকা ভাইরাল হয়ে যাবে৷ কিছু একটা করা দরকার। ইসিতার হাত ধরে হেসকা টান দিয়ে লাঠিটা ফেলে দিলাম। ইসিতা এসে পরলো আমার বুকে।
দুজনেই চুপ। আমি তো ভয়ে মরি, আবার নতুন কোন ঝামেলা পাকালাম, আল্লাহ জানে৷

ইসিতা আমার মুখের দিকে একবার তাকালো, আবার কি মনে করে আমার বুকে মাথাটা গুজিয়ে দিলো দুই হাত দিয়ে শক্ত করে ঝরিয়ে ধরলো৷ এইটা আবার কোন মছিবত৷ অনেক বার চেষ্টা করলাম ছাড়ানোর। কিন্তু পারছি না। কিন্তু ইসিতা হটাৎ এই রুপে কেন।
~ প্লিজ ছাড়ো রাস্তায় লোকজন দেখলে খারাপ ভাববে। (আমি)

এবার ইসিতা বাস্তবে ফিরলো, আমার মুখের দিকে তাকিয়ে বললো sorry, মুখে ভ্যাংচি কাঁটলো। তারর নিজের মতো করে চলতে লাগলো।
আমি হতবম্ভ হয়ে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে ইসিতার চলে যাওয়া দেখছি। কি হয়ে গেলো? এইটা কি আগে থেকেই
পরিকল্পিত ৷
নাকি মিস্টেক?

পিছন থেকে আওয়াজ পেলাম।
~ দোস্ত তুই ফেমাস হয়ে গেছোত? (হাসিব)
~ মানি? (আমি)

লাবিব মোবাইলটা এগিয়ে দিয়ে বললো
~ এইদেখ তোর কত সুন্দর ছবি উঠেছে৷।
কি সাংঘাতিক ছবিতে ইসিতা আমাকে ঝরিয়ে ধরে রেখেছে।

~ এইটা এখন তোর বাবার কাছে পাঠাবো, তারপর বলবো দেখেন আপনার কলিজার টুকরা ছেলে রাস্তার মাঝ খাবে রোমাঞ্চ করছে৷ (লাবিব)
~ প্লিজ ভাই, এইটা একটা মিসটেক ছিলো। এইটা নিয়ে ফাজলামো করবি না। (আমি)
~ অনেক দিন হলো হাতটা খালি যাইতেছে, ৷ কোনো টাকা পাইতেছি না। (হাসিব)

~ ওইদিন 500 টাকার সাথে মানিবেগ গায়েব করে নিয়েছিস৷ এখন আমার কাছে একটা টাকাও নেই৷
লাবিবের চোখ পরলো সদ্য কিনে আনা ঘড়ির দিকে।
~ আরে বন্ধু নতুন ঘড়ি, চকচক করছে। বেশ সুন্দরতো। (লাবিব)
~ ওই আশা বাদ দেও৷ এইটা দেওয়া যাবে না। (আমি)

~ তাহলে আর কি করার, হাসিব চল তাইলে আঙ্কেলের কাছে, খোশ বিনিময় করে আসি৷ (লাবিব)
মনের কষ্টগুলো চাপা পরে গেলো। হাত থেকে ঘড়িটা খুলে দিয়ে দিলাম। হারামী দুইটা চলে গেলো।
মনে মনে বললাম ইসিতা এমন ভাবে ঝরিয়ে ধরেছে যে ভিতরের সব কিছু বাহির হয়ে গেলো।

সন্ধ্যায় ইসিতার বাড়ির রাস্তায় হাটা হাটি করছি। বেশ নিরিবিলি বাসাটা। অনেকক্ষন হাটার পর হাসিব বলে উঠলো,
~ এইভাবে হাটি হাটি না করে ইসিতাকে একটা ডাক দিলেইতো হয়।
~ ওই তুই কি পাগল হয়ে গেলি? ইসিতার বাবা বাসায়। যদি জানতে পারে তাহলে এক গুলিতে তিন জনকে উড়িয়ে দিবে৷ (আমি)

~ ইহ বললেই হলো। আমি এখন ডাক দিবো দেখি ইসিতার বাবা কি করে। (হাসিব)
হাসিব ইসিতা বলে একটা চিৎকার করলো৷ আমি হাসিবের মুখ চেপে ধরলাম।
তৎক্ষনাৎ দুইতালার বারান্দার দরজা খুলার আওয়াজ পেলাম। আমরা তিন জন ভয়ে আতরে উঠলাম। বারান্দায় ইসিতার মুখটা দেখে একটু সস্থি পেলাম। কিন্তু ইসিতার মুখেও ভয়ের ছাপ। আমরা অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি।


পর্ব ৩

সন্ধ্যায় ইসিতার বাড়ির রাস্তায় হাটা হাটি করছি। বেশ নিরিবিলি বাসাটা। অনেকক্ষন হাটার পর হাসিব বলে উঠলো,
~ এইভাবে হাটি হাটি না করে ইসিতাকে একটা ডাক দিলেইতো হয়।
~ ওই তুই কি পাগল হয়ে গেলি? ইসিতার বাবা বাসায়। যদি জানতে পারে তাহলে এক গুলিতে তিন জনকে উড়িয়ে দিবে৷ (আমি)

~ ইহ বললেই হলো। আমি এখন ডাক দিবো দেখি ইসিতার বাবা কি করে। (হাসিব)
হাসিব ইসিতা বলে একটা চিৎকার করলো৷ আমি হাসিবের মুখ চেপে ধরলাম।

তৎক্ষনাৎ দুইতালার বারান্দার দরজা খুলার আওয়াজ পেলাম। আমরা তিন জন ভয়ে কাতরে উঠলাম। বারান্দায় ইসিতার মুখটা দেখে একটু সস্থি পেলাম। কিন্তু ইসিতার মুখেও ভয়ের ছাপ। আমরা অনেক বড় অপরাধ করে ফেলেছি মনে হয়।

ইসিতা হাত দিয়ে ইশারা করলো, “দাড়াও আমি আসতেছি। “
~ কিরে পুলিশ সাহেব কই? কতই তো ভয় দেখাইছিলি। (হাসিব)

~ আরে ওর তো কলিজা ছোটো। সামান্য একটা ডাব চুরি করতে গিয়ে ধরা খায়। আবার নাকি পুলিশের মেয়ের সাথে প্রেম করবে? (লাবিব)
হাদিব আর লাবিব একাদারে হাসতে লাগলো।
~ আল্লাহর দোহাই। ভাই তোরা একটু থাম। আর আমি কখন বলছি আমি ইসিতার সাথে প্রেম করবো? (আমি)
~ ও, তুই আবার প্রেম করবি না। সরাসরি বিয়ে করবি। (লাবিব)

আমি কিছু বললাম না। এরি মধ্যে ইসিতা হাজির।
~ ওই তোমরা এখানে কি করছো? বাবা জানতে পারলে জেন্ত কবর দিবে। (ইসিতা)

~ বললেই হলো জেন্ত কবর দিবে? আমরা তিন জন আর তোমার বাবা একা পারবে আমাদের সাথে? (হাসিব)
~ ওই তোরা থামবি। আজুইরা বক বক শুরু করছোত। (আমি)
~ আচ্ছা, এখন কি জন্য এখানে এসেছো সেইটা বলো? (ইসিতা)

~ আসলে আমি sorry, আজ কে রাস্তায় কি থেকে কি হয়ে গেলো বুঝতে পারি না। তুমি কিছু মনে করনা।
~ আমি কিছু মনে করি নি৷ তবে আর জেনো না হয় এমন৷ রাস্তায় মেয়েদেরকে জরিয়ে ধরা এইসব কু অভ্যাস বাধ দেও। (ইসিতা)

(ইসাতা জড়িয়ে ধরেছে এখন দোষ আমার! )
~ আরে ও এমনি, যাকে পায় তাকেই জড়িয়ে ধরে৷ (লাবিব)
~ হারাম জাদা তুই একটু মুখটা বন্ধ কর। (আমি)
~ সত্য কথা বললেই দোষ৷ (হাসিব)

হাসিব কে কিছু বলতে যাবো তখনি ইসিতার বাবার ডাক।
হারামী দুইটা আগেই পালিয়ে গেলো৷ মদন দুইটা এতক্ষন কি ফাফর? । আর এখন বিড়াল।
আমিও চলে আসতে যাবো তখন ইসিতা পিছন থেকে ডাক দিলো।

~ তুমি হয়তো আনফরচুনেটলি আমাকে জড়িয়ে ধরেছি৷ কিন্তু আমি তোমাকে ইচ্ছা করেই জড়িয়ে ধরেছি৷ (ইসিতা)
কথাটি বলেই ইসিতা ভিতরে চলে গেলো
~ বিকজ? (আমি)

ইসিতা ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরেছে। ভাবতেই নিজের কাছে লজ্জা লাগে। কিন্তু কেনো। ইসিতার সাথে যতদিন দেখা হয়েছে ততদিনই জগরা হয়েছে। মনে পরলো সেই কান ধরার কথা একবারনয় দশ বার।

রতে ইসিতাকে নিয়ে ভাবতে লাগলাম। পুলিশের মেয়ে সব কিছু আইন মুতাবেক করবে৷ একটু এদিক সেদিক করলেই পুলিশের ভয় দেখাবে। প্রেম কেইসের আসামি করতে পারে। নাহ এই মেয়ের সাথে প্রেম করলে লাইফটা তেজ পাতা হয়ে যাবে।

তার থেকে বরং আমি আমার মতই থাকি।
সকাল বেলা ঘুম ভাঙ্গলো ভয়ংকর এক দুঃস্বপ্নে৷ যেখানে আমার হাত পা বাঁধা এক গাছের সাথে৷ সামনে ইসিতার বাবা হাতে ইয়া বড় এক লাঠি। আর ক্রমাগত আঘাত করতেছি আর ইসিতা পিছনে দাঁড়িয়ে হাত তালি দিতেছে। ঘুমটা ভেঙে গেলো৷ পাশে থাকা পানি ভর্তি গ্লাসটা ফ্লরে পরে ভেঙে গেলো৷

ইদানিং ইসিতার সামনে যেতে লজ্জা লাগে৷ আমাকে দেখলেই একটা হাসি দেয়। আর ওইটা দেখলেই আমার লজ্জার পরিমান বেরে যায়। তাই ইসিতাকে দেখলে লুকিয়ে পরি। ইসিতা ব্যাপারটা কোন চোখে দেখে জানি না। রাস্তায় দেখা হলেও যথাসম্ভব পা চালিয়ে যাই মাথা নিচু করে৷

আমি না দেখলে ইসিতাও আমাকে দেখবে না৷ ইসিতা পিছন থেকে ডাক দিলে আমার হাটার স্প্রিট আরো বেরে যায়।
ওইদিকে হারামী দুইটার সাথে আজ তিনদিন ধরে দেখা নেই। কবার কাকে কোন জাগায় বাঁশ দিতে গেলো আল্লাহ ভালো জানে৷

রাত তখন 11:15 জানালার পাশে কারা জেনো নিচু গলায় কথা বলছে। জানালা খুলে ভুত ভুত বলে চিৎকার দিয়ে উঠলাম৷
~ আরে আবুল থাম আমরা ভুত না। (হাসিব)

~ তোরা এতদিন পর কোন থেকে? (আমি)
~ সে অনেক লম্বা ঘটনা। লাবিব হালায় প্রেম করতে গিয়ে ধরা খাইছে। তাই বাড়িতে জায়গা হয়নি তাই বাইরে বাইরে ছিলাম। (হাসিব)

~ এখন দোষ আমার, হুম? নিজে মেয়ের গায়ে ঢিল মারতে গিয়ে মেয়ের বাবার গায়ে ঢিল মেরেছেন তার কোনো দোষ নেই? (লাবিব)
~ ঢিলটা মারতে কে বলেছিলো শুনি? (হাসিব)
~ ওই তোরা থাম। এখন কি মতলব নিয়া আইছো সেইটা বলো? (আমি)

~ বন্ধু টক টকে ধক ধক করে দেখলেই শান্তি। মনে হয় এখনি গিয়ে সব ছাপা করে দেই। (লাবিব)
~ ছাপা কর তা আমার কাছে কি? আমি ভদ্র হয়ে গেছি এখন ওই সবের দিকে তাকাইনা। (আমি)
~ আরে সরকারী মাল। তুই দেখলে লব সামলাতে পারবি না। ডাবতো নয় যেন রসের হাঁড়ি৷ (লাবিব)

~ শুন লোভ দেখাইস না। আমি কারো লোভে পরি না৷ (আমি)
~ ওকে, তাইলে আর কি করার। আমরা যাই তুই থাক। (হাসিব)
~ আরে আমিতো তোদের সাথে ফাজলামো করেছি। তোদের ছাড়া কি আমি থাকতে পারি৷ (আমি)
~ তুই তো সত্যি একটা হারামী৷

হারামী দুইটার সাথে রওয়ানা দিলাম নতুন একটা মিশনে৷ জানিনা সফল হবো কিনা?
~ কোরে এইটা ইসিতাদের বাসা না? (আমি)
~ হুম, সরকারী মাল। তাছাড়া আমার বন্ধুর শশুর বাড়ি আমাদের তো হক আছেই। কিরে পাবিব কথা বলিস না কেন? (হাসিব)

~ একদম ঠিক কথা! তার ভিতর বিন্দু মাত্র ভুল নেই। (লাবিব)
হাসিব আর লাব হাতে হাত মিলালো।
~ তোরা থাক আমি যাই। আর, দোয়া করি গাছ থেকে পরে দুই জনেরই কমর ভাঙুক৷ (আমি)

~ অকথা বলে না জাহিদ তুমি আমাদের সাথেই আসিছো আর আমাদের সাথেই থাকবে? না হলে তোমার জড়িয়ে থাকা ফটো তোমার বাবার কাছে চলে যাবে। (লাবিব)
তিন জন এক সাথে ছাদে উঠলাম। কলিজাটা ধপাস ধপাস করে। ইসিতার বাবা দেখে ফেললে জারো রক্ষা নেই৷
পিছন থেকে কে যেনো কাঁদে হাত রাখলো৷ লাফ দিয়ে উঠলাম৷

~ আরে ভয় পাস কেনো আমি লাবিব।
~ ওই দেখ তোর ইসিতা পড়তেছে। (লাবিব)
ছাদের এক কিনার থেকে দেখা যাচ্ছে ইসিতার রুমটা।

~ ডাক দেই? (হাসিব)
~ মরতে চাইলে দে, না বলছে কে? (আমি)
~ ওকে যে কাজে আসছি সেটা আগে কর। ডাকা ডাকি পরে হবে? (লাবিব)

এক বস্তা ডাব পারলাম। আসার সময় ইসিতার রুমে উকি মারলাম ইসিতা নেই৷ ভাবলাম হয়তো বা ওয়াশরুমে গেছে। সিঁঁড়ি দিয়ে আস্তে আস্তে নামতে লাগলাম। ডাব নিয়ে লাবিব আর হাসিব সামনে আর আমি পিছনে৷
হঠাৎ দুই জন থেমে গেলো৷

~ কিরে তোদের আবার কি হলো? (আমি)
~ তুই বলেছিলি বাসায় কেউ নেই৷ সে জন্য আমরা আসছি। এখন ইসিতা কোন থেকে এলো? (লাবিব)
সামনে তাকিয়ে দেখি ইসিতা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।

~ দূর৷ তোর জন্য এখন ইসিতা আমাদেরকে চোর ভাববে? (হাসিব)
(সব দোষ আমার কাঁদে চাপিয়ে দিলো)
~ যাই আপা মনি? (লাবিব)
ইসিতা যাওয়ার অনুমতি দিলো৷

~ জ্বী ডাব গুলো নিয়ে যাবো? (হাসিব)
~ হুম (ইসিতা)
~ ধন্যবাদ।
হাসিব আর লাবিব চলে গেলো। আমিও সিঁড়ি দিয়ে নামতে যাবো তখনি ইসিতা সামনে এসে দাড়ালো৷

~ ওই তুই আমাকে দেখলে পালিয়ে যাস কেনো? (ইসিতা)
~ তোমাকে দেখলে আমার ভয় পায়৷
~ তাইলে আমাদের ডাব চুরি কিভাবে করলি?
~ আমি না৷ হাসিব আর লাবিব নিয়ে আসছে।
~ আমি তোকে বাবার হাতে ধরিয়ে দিবো৷

এই বলেই ইসিতা বাবা বাবা বলে চিল্লাতে লাগলো।
আমি তারাতারি করে ইসিতার মুখ চেপে ধরলাম৷
~ প্লিজ আর হবে না৷ এবারের মত যেতে দাও৷

ইসিতা আমার হাতে একটা কামর বসিয়ে দিলো৷ ইসিতাকে ছেড়ে দিলাম।
~ ওই তুই আমাকে ধরলি কেন। (ইসিতা)
এই বলেই ইসিতা আমার দিকে আসতে লাগলো। আমিও পিছনে পিছনে সরতে লাগলাম।

বেশে দূর যেতে পারনি পিঠে দেয়াল ঠেকলো। ইসিতাও আমার মুখের সামনে এসে পরলো৷ আমি ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেললাম৷ ইসিতা টুব করে আমার বুকে মাথা রখলো৷
~ কালকে ক্যাম্পাসে বারোটার দিকে দেখা করবি৷ আর যদি এদিক সেদিক হয় তাহলে খুন করে ফেলবো।

এই অবস্থায় কতসময় ধরে ছিলাম জানিনা। মোবাইলটা পকেটে বেজে উঠলো। ইসিতা তখনো আমার বুকে। রিংটনের আওয়াজ শুনে ইসিতা লজ্জা পেয়ে ভিতরে চলে গেলো।
আজকের মত বাঁচা গেলো৷ ওই হারামী দুইটার সাথে আর কোনো দিন আসবো না।

পরেরদিন ক্যাম্পাসে গেলাম৷ ইসিতা কি বলেছে সেটা শুনার টাইম এখন আর আমার নেই। আমার একটা উদ্দেশ্য ইসিতার কাছ থেকে দূরে থাকা।
বারোটা অভার হয়ে গেলো। ইসিতার কথায় সারা দিলাম না।
ক্যাম্পাস শেষ বাসায় ফিরবো৷ পিছন থেকে হাসিবের ডাক।

~ কিরে তুই এখানে? আর ওই খানে তোর ইসিতা অন্য এক জনের সাথে জমিয়ে প্রেম করছে৷ (হাসিব)
কথা শুনে হলো হাসিবের গালে দুইটা বসিয়ে দেই।
~ তোর মাথা ঠিক আছে? যে মেয়ে আমার জন্য পাগল সে যাবে অন্য কারো সাথে প্রেম করতে? (আমি)
~ বিশ্বাস না হলে নিজের চোখে দেখে আয়। (হাসিব)

~ চল দেখে।
ওমা সত্যি তো। গায়ে আগুন জ্বলে উঠলো।
ইসিতার সামনে গিয়ে দাড়ালাম।
~ এটা কি ইসিতা? (আমি)

~ who is he? (অচেনা ছেলেটি)
~ Don’t worry, give me hanble it. (ইসিতা)
~ কি সমস্যা তোমার এই খানে কি চাও? (ইসিতা)

~ বাহ কালকেও তো আমার জন্য পাগল ছিলা আর আজকে অন্য এক জন জুটিয়ে নিয়েছো। (আমি)
~ তোমার সাথে এত দিন নাটক করেছিলাম। এখন আমি সিরিয়াস। রকিবের সাথে আমার আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো৷ আজ হঠাৎ করে ওর সাথে দেখা হয়ে গেলো। তাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি। প্লিজ এই ব্যাপারে নাক গলাতে এসো না। (ইসিতা)

আমার গায়ে আগুন জ্বলে উঠলো। এইটা কেমন মেয়ে নাটক করে একটা ছেলে কে জড়িয়ে ধরে?
ইসিতা চলে গেলো,
~ কে সে? (রকিব)
~ এক পাগল! ছাড়ো তো ওই সব কথা। (ইসিতা)


পর্ব ৪

~ তোমার সাথে এত দিন নাটক করেছিলাম। এখন আমি সিরিয়াস। নকিবের সাথে আমার আগে থেকেই সম্পর্ক ছিলো৷ আজ হঠাৎ করে ওর সাথে দেখা হয়ে গেলো। তাই বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি। প্লিজ এই ব্যাপারে নাক গলাতে এসো না। (ইসিতা)
আমার গায়ে আগুন জ্বলে উঠলো। এইটা কেমন মেয়ে নাটক করে একটা ছেলে কে জড়িয়ে ধরে?
ইসিতা চলে গেলো,

~ কে সে? (নকিব)
~ এক পাগল! ছাড়ো তো ওই সব কথা। (ইসিতা)
ইসিতার শেষ কথাটা শুনে হতবম্ব হয়ে গেলাম। একবার তাকালাম ইসিতার দিকে বেশ হাসি খুশি। বাহ এতদিন আমার সাথে নাটক করে এখন অন্য একজনের সাথে পিরিত জমিয়েছে। আমি সেখানে সাইট বেন্সের লোক। একটা খেলনার পাত্র।

বাড়ি ফিরতে হবে। কিন্তু পা চলে না। নিজের চোখের সামনে ভালোবাসার মানুষটা অন্য একজনের সাথে হেসে হেসে কথা বলছে। ভাবতেই হিমসিম খেয়ে যাই৷
দোষটা আমারই, প্রথমেই রাজ্বী হয়ে যেতাম৷ এখন আর এই অবস্থা দেখতে হত না। কিন্তু ভয় পেয়েছেলাম পুলিশের মেয়ে৷ ধরা খেলে জামিন নাই।

ক্যাম্পাসের সামনের ঘাটলায়৷ কিছুক্ষন বসে ছিলাম। অনেক খারাপ লাগছে৷ হাসিব আর লাবিবের সাথে দেখা না হলেই ভালো হয়৷ কারণ ওরা এখন মোজা নিবে, অনেক মোজা।
বাসায় চলে আসলাম। আম্মু অনেক বার ক্ষেতে ডাকলো৷ খাবার ইচ্ছা নেই।

হাত পা বিছিয়ে দিয়ে পরলাম৷ বার বার ইসিতার কথা মনে পরে৷ সেই ইচ্ছে করে জড়িয়ে ধরার কথা। নদীর পারে বিষ বলে ভয় দেখানোর কথা৷
চোখ দিয়ে দুই ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো বাঁধা দিলাম না। এতোটা কঠোর হয়ার শক্তি এখন নেই। হারিয়ে গেলাম বাস্তবতার শহর থেকে কাল্পনিক শহরে৷ ইচ্ছে ছিলো বাস্তবে ফিরার৷

বিকেল বেলা হাসিবের ডাকে ঘুম ভাঙ্গলো।
~ কিরে? এই সময় ঘুমাস কেন? (হাসিব)
~ তোরা, ! কখন আসলি?
~ আমরা তো সব সময়ই আসি৷ (লাবিব)

~ আরে রোকেয়া, তুই কিল্লাই আরে দোকা দিলো! (হাসিব)
~ ইসিতার প্রেমের দড়ি বেয়ে উপড়ে উঠতে গিয়ে ছিটকে পড়ে মন ভেঙে গেলো জাহিদের। (লাবিব)
~ তোরটা হয়নি, আমারটা শুন:~ ” লিপস্টিকের লোভ দেখিয়ে জাহিদের কাপুড় ভিজিয়ে পালিয়ে গেলো ইসিতা। (হাসিব)

~ তোরটা থেকে আমারটা সুন্দর হইছে। (লাবিব)
~ না আমারটা। (হাসিব)
দুজনের মধ্যে শুরু হয়ে গেলো তর্ক বিতর্ক। বলছিলামনা আমার এই অবস্থায় দুজনে ব্যাপক মোজা নিবে তাই হলো৷ আমি উঠে ছাদে চলে গেলাম। আসার সময় রুমের দড়জা বন্ধ করে দিলাম৷ হারামী দুইটা যেন এসে ডস্ট্রাব না করে।
নানান চিন্তা এসে ভির জমায়৷

নেশা করবো? বাড়িতে ভাত বন্ধ৷ বিষ খাবো, না মৃত্যু অনেক কষ্ট। মনের আগচরে কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারবো না। ইসিতার সাথে পরিচয় হলো এক মাসও হয়নি। তার আগের দিন গুলো যেভাবে পার করেছি সামনের দিন গুলো সেভাবেই পার করতে হবে।
.
পরের দিন ক্যাম্পাসে যাওয়ার জন্য রওয়ানা দিলাম৷ পিছন থেকে ইসিতার ডাক।
~ ওই জাহিদ ভাই একটু দাড়ান। (ইসিতা)
আমি ওর কথা না শুনার বান করে চলতে লাগলাম।
ইসিতা দৌড়ে এসে আমার সামনে দাড়ালো।

~ কি ডাকি শুনেন না৷ (ইসিতা)
~ কি জন্য শুনবো। (আমি)
~ তাও তো কথা। যে কলিজাটা খেয়ে ফেলেছে তার কথা কে শুনবে। (ইসিতা)
আমি ইসিতার দিকে একবার তাকালাম।

~ দেখো ইসিতা তোমার সাথে ফাজলামো করার সময় নেই। সময় মত ক্লাস ধরতে হবে৷
~ বাহ, এখন দেখি টাইম টেবিল মেনে চলেন ভালোই৷
আমি আর কিছু বললাম না। নিচের দিকে তাকিয়ে হাটতে লাগলাম।
~ জানেন নকিব ছেলেটা খুব ভালো। আমার অনেক কেয়ার করে। সে আপনার মত না, পুলিশকে ভয় পায়না। (ইসিতা)

~ এই কথা আমাকে বলছো কেন? যাও তোমার নকিবের সাথেই থাকো। তোমার মত এমন কারেক্টারলেস মেয়ে আমি জীবনেও দেখি নি। ইচ্ছা করে একটা ছেলেকে জড়িয়ে ধরো৷ আবার বলো আমার সাথে নাটক করছো। নেক্সট টাইম তুমি আর আমার সামনে আসবা না। (আমি)

ইসিতার সাথে থাকার মুড নেই। সে এখন কাঁটা গায়ে নুনের ছিটা দিবে। ক্যাম্পাসের দিকে দ্রুত অগ্রসর হতে লাগলাম। ইসিতা দাঁড়িয়ে রইলো৷ ঠিকই বলেছি কেরেকটারলেস৷ কত সুন্দর করে জড়িয়ে ধরে এখন বলে নাটক৷
ক্যাম্পাসে এসে হাসিব আর লাবিব কে খুজতে লাগলাম। দু’জন এর কোনো টাইম টেবিল নেই। হয়তোবা ক্যান্টিনে বসে আড্ডা দিচ্ছে না হয় ক্যাম্পাসের বাইরে ফজু মিয়ার চায়ের দোকানে৷

ক্যান্টিনে খুঁজলাম নেই৷ তাহলে সিউর চায়ের দোকানে। ক্যাম্পাস গেইটে যেতেই পিছন থেকে কে যেনো ডাক দিলো,
~ ওই জাহিদ, একটু দাড়া?
পিছনে তাকালাম। এটা সুপ্তি!
~ কি তোর আবার কি হইছে?
~ আমার এই শিটটা একটু ফটোকপি করে এনে দে। (সুপ্তি)
~ টাকা দে?

~ ওই তোর শরম করে না, মাত্র দশ টাকা সেইটা আবার খুঁজে নিস?
~ মেয়ে মানুষ আমি বিশ্বাস করি না, তারা অনেক অনেক খারাপ। তাই তাদের সাথে হিসাব মিলিয়ে চলতে হবে।
~ কিরে হঠাৎ এই কথা কেন? ছ্যাকা খাইছো মনে হয়?
~ জাহিদ ছ্যাকা খায় না দেয়?

~ ইহরে। এই নে দশ টাকা।
~ ধন্যবাদ।
~ আর শোন, তোদের দেশের বাড়ি কোথায় যেন? (আমি)
~ কেনো, গাইবান্ধা?

~ কি বান্ধা?
~ গাইবান্ধা।
~ কার গাইবান্ধা?
~ আরে আমার বাড়ি গাইবান্ধা।

~ আমি তো সেটাই বলি। তোর বাড়িতে গাইবান্ধা আমি কি করবো। যার গাই তাকে খুঁজে বের কর।
~ ওই তুই লরবি না দাড়া। আমার সাথে ফাজলামি? দাড়া দেখাচ্ছি মোজা।
~ টাটা,
মেয়েটা একটু সরল সোজা আমি প্রাই সুপ্তির সাথে মজা করি।
চায়ের দোকানে গিয়ে হারামী দুইটাকে দেখতে পেলাম।

~ কিরে মোদন কুমার ঢেউটিন। এই খানি কি করস? (আমি)
~ কিরে তোরে এতো খুশি খুশি লাগে? কি ভাঙ্গা মন আবার কেঠায় জোরা লাগালো? (লাবিব)
~ অতিরিক্ত কথা বলবি একটা উষ্ঠা খাবি? (আমি)

~ দূর লাবিব তুই সব সময় ফাজলামি করিস৷ ছেলেটা এমনেই ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছে, তার উপরও তুই মোজা নিস। তুই বন্ধু নামের কলঙ্ক। (হাসিব)
লাবিব মুখে একটা, ভ্যাংচি কাটলো।
~ বন্ধু তুই শুধু একবার বল, তারপর দেখ আমি আর হাসিব ইসিতাকে কিডন্যাপ করে তোর পায়ের কাছে ফেলবো। (লাবিব)

~ জ্বি না, ইসিতা পুলিশের মেয়ে। তুই একা কিডন্যাপ করলে কর আমি এত ভিতর নেই। (হাসিব)
~ দুর বেটা আমি কি সত্যি সত্যি কিডন্যাপের কথা বলছি? আমিতো জাস্ট জাহিদকে পাম দিলাম। (লাবিব)
~ তোরা থামবি? নাকি মাইর খাবি? (আমি)

~ চল ক্যাম্পাসে যাই। (লাবিব)
~ তোরা যা আমি একটু বাজার থেকে আসছি? (আমি)
~ তোর আবার কি হইছে? (হাসিব)
~ একটু কাজ আছে।
~ ওকে যা দূরে গিয়ে মর।

বিকেল বেলা রাস্তায় দাঁড়িয়ে আছি অপেক্ষা ইসিতার জন্য। এক নজর না দেখলে মন ভালো থাকে না।
দূর থেকে দেখা যাচ্ছে ইসিতা আসতেছে। নিজের চুল, শার্ট এর কলার ঠিক করলাম। দাঁড়িয়ে আছি রাস্তার মাঝখানে৷
~ এক্সকিউজ মি সাঈট প্লিজ। (ইসিতা)
~ পাশে জায়গা আছে। (আমি)

ইসিতা আর কিছু না বলে পাশ দিয়ে চলতে শুরু করলো। ঘটনা কি এমন তো হওয়ার কথা ছিলো। ছোটো খাটো একটা জগরা হবে, আর মনটাও ভালো থাকবে। কিন্তু এখন দেখছি তার উল্টো। আমিও পিছু নিলাম।
ইসিতা হাটছে আমিও হাটছি। কিন্তু আমার তো সইছে না। ইসিতার সাথে কথা না বলতে পারলে হার্ট attack ~ এ মারা যাবো। কি করি কি করি?

ছোটো একটা ইটের কোনা হাতে নিলাম। ইসিতার গায়ে মারলাম। ইসিতা আমার দিকে রাগী দৃষ্টিতে তাকালো। তার রাগের আগুনে আমি পুড়ে ছাই হয়ে যাবো।
বিপরীত দিকে ফিরে বুকে ফুঁ দিলাম। ব্যাপক ভয় পাইছি।
ইসিতা এসে আমার সামনে দাড়ালো।

~ কি হচ্ছেটাকি? (ইসিতা)
~ কই কিছু না তো।
~ আমি তো দেখছি আপনি আমাকে ফলো লরেন, আর কি সব আজে বাজে মারছেন।

ইসিতার সাথে জগরা করবো না। মনের আগুনটা একটু কমানোর জন্য একটু চেষ্টা করি। ইসিতার হাতটা ধরলাম।
~ প্লিজ ইসিতা, এরকম কর না।
ইসিতা হাতটা ছাড়িয়ে নিলো,

~ ওই কুত্তা তুই হাত ধরলে কোন সাহসে? কেরেক্টার লেস। মেয়ে মানুষ দেখলেই হাত ধরতে মন চায়?
~ ইসিতা তুমি কিন্তু বারাবাড়ি করতেছো।
~ তাতে তোর কি? তোর মত রাস্তার ছেলের সাথে কথা বলাত ইচ্ছে আমার নেই।
কথাটা গায়ে লাগলো৷ কসিয়ে ইসিতার গালে একটা বসিয়ে দিলাম।

ইসিতা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে দু’ ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।
~ আজকের পর থেকে আল্লাহ যেম তোর মুখটা আমাকে আর না দেখায়। (ইসিতা)


পর্ব ৫

~ ইসিতা তুমি কিন্তু বারাবাড়ি করতেছো।
~ তাতে তোর কি? তোর মত রাস্তার ছেলের সাথে কথা বলার ইচ্ছে আমার নেই।
কথাটা গায়ে লাগলো৷ কসিয়ে ইসিতার গালে একটা বসিয়ে দিলাম।
ইসিতা গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। চোখ দিয়ে দু’ ফোটা পানি গড়িয়ে পরলো।

~ আজকের পর থেকে আল্লাহ যেম তোর মুখটা আমাকে আর না দেখায়। (ইসিতা)
ইসিতা চলে গেলো। দূর কি করলাম, ইসিতার গায়ে হাত তুললাম? কিন্তু ইসিতা আমাকে কেনো রাস্তার ছেলে বলবে? যাক বলছে হয়তোবা রাগের মাথায় কিন্তু আমি কি করলাম?

মাথা কাজ করছে না। ওইদিকে ইসিতার চোখের পানি আনমনে পরতেছে। ইসিতা ক্যাম্পাসে আমার আর সুপ্তির বিষয়টি দেখে ফেলছে। ইসিতার আর নকিবের রিলেশন এর কথা শুনেও আমার কোনো রিয়েকশন নেই সেইটা দেখেও ইসিতার রাগ চারগুণ বেড়ে যায়। ইসিতা মনে মনে আমার উপর খোব ঝারে ” হারামী একটা, আমার মন নিয়ে খেলা করেছে। “

আমি কিন্তু ইসিতাকে পছন্দ করিনি। অন্যদিকে ইসিতার বাবা পুলিশ, এ কথা শুনেতো ইসিতার কাছ দিয়েও যাইনি৷ জানিনা কি দেখে ইসিতা আমাকে পছন্দ করে আর এখন নিজেও কষ্ট পাচ্ছে আর আমিও।
জনি না ইসিতা আমাকে ক্ষমা করবে কি? ভালোবাসা তো দূরে থাক। আগে মাপ চেয়ে নিতে হবে। কিন্তু ইসিতার সামনে যাবো কোন মুখে। যেখানে ইসিতা আমার মুখ কোনোদিন দেখতে চাইবে না। নিজেকে খুব অপরাধী মনে হচ্ছে।

রাত তখন দুইটার কাছা কাছি, চোখে ঘুম নেই। অভিমানটা ইসিতার সাথে ঘুমটাও কেড়ে নিয়েছে। রুমের ভিতর হাটা হাটি করছি।
অন্যদিকে ইসিতার চোখের পানিতে বালিশ বিজে যায়। তার মাথায় আসে না যে আমি এতো বদলে যাবো।
রাত্রে আর ঘুম হলো না। সকাল হয়েছে কি হয়নি তার আগেই ইসিতার বাসার সামনে হাজির হলাম।

উদ্যেশ্য ইসিতাকে এক নজর দেখা, তার মুখের দুইটা কথা শুনা। সূর্য উঠেছে তার মানে সকাল হয়েছে। বেশ নিঝুম বাড়িটা। অনেক্ষন দাঁড়িয়ে রইলাম। ইসিতার দেখা নেই। রাত্রে ঘুম হয়নি তাই একটু লেট করছে।
ইসিতার বাড়ির সামনে টানা এক ঘন্টা দাঁড়িয়ে থাকার পর ইসিতাকে দেখতে পেলাম। বুক ভরে নিঃশ্বাস নিলাম। আমার মুখে একটু হাসি ফুটলো।

কিন্তু ইসিতা আমাকে দেখেই তার মেজাজ গরম হয়ে গেলো। সে ভিতরে চলে গেলো। কি ব্যাপার ইসিতা এমন করছে কেনো? মিনিট বিশ পর ইসিতা আবার এলো,
~ কি, এখানে কি চাও? এখান থেকে যাও না হয় বাবাকে ডাক দিবো। (ইসিতা)

~ প্লিজ, ইসিতা এমন করো না। কালকের ঘটনার জন্য I am really sorry. কি থেকে কি হয়ে গেছে আমি নিজেও বুঝতে পারি নি। মাথাটা ঠিক ছিলো না তাই তোমার সাথে বাজে ব্যাবহার করেছি। বিশ্বাস করো আমি তোমাকে খুব খুব ভালোবাসি। তোমার জন্য কাল সারা রাত ঘুমাতে পারিনি। প্লিজ এবারের জন্য মাপ করো। আর কখনো হবে না৷ (আমি)

ইসিতা কিছু বলতে যাবে তখনি ভিতর থেকে ইসিতার বাবার ডাকঃ~
~ ইসিতা,
ইসিতা ভিতরে চলে গেলো, যাওয়ার সময় একবার বাঁকা চোখে তাকালো। কিন্তু ইসিতার মুখে তখনো বিরক্তির ছাপ। আমি হাত দিয়ে মাথায় আঘাত করলাম৷ দূর উত্তরটা পেলাম না।

ঘড়িতে তাকিয়ে দেখি ক্যাম্পাসের সময় হয়ে গেছে।
বাসায় চলে আসলাম। এখন নিজের কাছে একটু ভালো লাগছে। কারণ ইসিতার কাছে মাপ চেয়ে নিয়েছি। আমি সিউর ইসিতা ক্ষমা করে দিবে। কারণ ইসিতাও আমাকে পছন্দ করে।

ক্যাম্পাসের উদ্দ্যেশ্যে রওয়ানা দিলাম। রাস্তায় একটু অপেক্ষা করলাম ইসিতার জন্য। প্রখর রোদ কালো চেহারাটা আরো কালো হয়ে যাবে। আজকেই ইসিতাকে প্রপোজ করবো এখানে রোদ কোনো ফেক্ট না। মনের ভিতর নানান চিন্তা এসে ভির জমায়। সব গুলোর একটাই চাওয়া ইসিতাকে কাছে পাওয়া।

কিছুক্ষন পর যে চিত্রটি দেখলাম তার জন্য একেবারেই প্রস্তুত ছিলাম না। ইসিতা এসেছে কিন্তু একা না সাথে নকিবও রয়েছে। নকিব তো শহরে থাকে তার এখানে কি। তার মানি ইসিতার সাথে নকিবের সত্যি সত্যি রিলেশন আছে? সব কিছু গোলমাল হয়ে গেলো। বুকে সদ্য ফুঁটা তাজা ফুলটা অকারণে ঝড়ে গেলো।

ইসিতা আমাকে দেখে নকিবের হাতটা ভালোভাবে জড়িয়ে ধরলো। দুজনের মুখে হাসি। ইসিতা আমাকে দেখেও না দেখার বাণ করে চলে গেলো। চোখ দিয়ে দু ফোটা পানি ঘড়িয়ে পরলো। উপলব্ধি করলাম আঘাতটা কলিজায় লাগছে৷

আমিও ক্যাম্পাসে আসলাম। যেদিন শুনেছি ইসিতার সাথে নকিবের রিলেশন আছে সেদিন থেকে ইসিতার কাছ থেকে দূরে সরে এসেছি। কিন্তু ইসিতা নিজের ইচ্ছায় আমার সাথে কথা বলতো। এমন সব কথা বলতো যেন সে আমাকে রাগানোর জন্য এমন অভিনয় করছে৷ আমি তখন বুঝেছি এইটা ইসিতার সাজানো নাটক। এখন কি চলছে এইসব হুম? কেনো এমন করছে আমার সাথে এইটার রহস্য খুঁজে বের করতে হবে।

হাসিব আর লাবিব কে খুঁজে বের করতে হবে। হারামী দুইটা যে কোথায় থাকে সময় মত খুঁজে পাওয়া যায় না। এরি মধ্যে ইসিতার সাথে দূর থেকে দেখা হয়েছে, তখন দূর থেকে হাবা দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকা ছাড়া কোনো উপায় ছিলো না। ইসিতার চোখের ভাষা ছিলো অন্য রকম, ” কি মরিচের ঝাঁজ কেমন লাগছে। “

আমিও দেখে নিবো, মারিচ আরো অনেক কাজে ব্যাবহার করা যায়।
হাসিব ও লাবিব কে খুঁজে পেলাম।
~ তোরা বলেছিলি না, ইসিতাকে কিডন্যাপ করবি? (আমি)
~ হুম, কি হয়েছে এখন?

~ কিডন্যাপ কর।
~ হঠাৎ এই কথা? আমরা তো তখন ফাজলামো করে বলেছি।
~ আমি জানি না, তোরা কিডন্যাপ করবি।

~ কিভাবে আমরাতো নিয়ম জানি না। দাড়া ইউটিউবে এই বিষয়ে কোনো টিউটোরিয়াল আছে কিনা দেখে নেই।
~ হাসিব সব সময় ফাজলামি ভালোলাগে না। যা তোদের কিডন্যাপ করা লাগবে না, আমি নিম তলার ব্রিজের উপর আছি। তোদের কথা ইসিতা শুনবে। ইসিতাকে সেখানে নিয়ে আছিস। ।

~ ওকে, বন্ধু কাজ হয়ে যাবে, তবে এই কাজের জন্য কিছু বকশিস দেওয়া লাগবে।
~ ওকে,
আমি চলে আসলাম অপেক্ষা ইসিতার জন্য। কিছুক্ষন পর হাসিব আর লাবিব ইসিতাকে নিয়ে আসছে। একি? ইসিতার মুখ বাঁধা, হাতও।
~ বন্ধু জীবনের প্রথম কিডন্যাপ, ভুল হলে কিছু মনে করিস না। (হাসিব)

~ আরে কি করেছিস তোরা এইটা? (আমি)
~ কেনো তুই তো বলেছিলো কিডন্যাপ করতে।
ইসিতা তো রেগে আগুন। মনে হচ্ছে আমাকে কাচা খেয়ে ফেলবে।
~ আরে বোকা*দা বাস্তবতা বুঝিছ না। (আমি)

আমি ইসিতার হাতের বাঁধন খুলে দেওয়ার সাথে সাথে হিট, ৷ দুই গালে দুইটা। হারামী দুইটা পিছন থেকে পালিয়ে গেলো।
~ তোর নামে আমি পুলিশ কে ইনফরম করবো। কি ভাবছিলি এভাবে জোর করে আমাকে হুমকি দিবি আর আমি তোকে ক্ষমা করে দিবো? তোকে ভালোবাদা তো দূরের কথা তোর মুখটাও আমি আর দেখতে চাইনা। এতদিন কনফিউজড ছিলাম নকিব কে লাইফ পার্টনার করবো কিনা? কিন্তু এখন আমি সিউর নকিব আমার জন্য বেস্ট। (ইসিতা)

ইসিতা চলে যেতে লাগলো, আমি পিছন থেকে ইসিতার হাতটা ধরলাম।
~ প্লিজ ইসিতা এবার একটু মুখটা ফিরাও আমি আর পারছি না। (আমি)
ইসিতা হাতটা ছাড়িয়ে নিয়ে আমার গালে একটা বসিয়ে দিলো।

~ ওই বদমাইশ তোর সাহস হয় কি ভাবে আমার হাত ধরার? (ইসিতা)
ইসিতাকে আটকানোর চেষ্টা করলাম না। আজ অনেক কষ্ট পেয়েছি আর পেতে চাইনা। নিজের মত করে বাসায় চলে আসলাম।

এখন আর ইসিতার সাথে কথা হয় না। রাস্তায় একটু দেখা হয়, এইটা দিয়ে দিন পার করতে হয়।
আমি প্রতিদিন টাইম অনুযায়ী রাস্তায় দাড়িয়ে থাকি ইসিতাকে এক নজর দেখার জন্য। । জানি না তাতে ইসিতা কি মনে করে।

বিকেল বেলা হারামী দুইটার সাথে রাস্তায় হাটতেছি।
~ বন্ধু আমাদের বকশিস কোথায়? (লাবিব)
~ কিসের?
~ ওইযে সেদিন ইসতাকে কিডন্যাপ করে ছিলাম।

~ ও তার কথা তো আমি ভুলেই গেছি। আয় তোরে বকশিস দেই। হারামী সেদিন কত সুন্দর প্লান ছিলো তোদের জন্য সব নাজেহাল হয়ে গেলো। আবার আইছোত বকশিস নিতে। দাড়া তোকে বকশিস দেই। (আমি)
হাসিব আর লাবিব দোড়ে পালাতে লাগলো।
পিছন থেকে ডাক পরলো,

~ ওই তোমরা এদিকে এসো।
হাসিব দূর থেকে গননা করলো তিন জন পুলিশ। ভয়ে তিন জনের অবস্থা কাহিল।
~ তোমাদের মধ্যে জাহিদ কে?
~ জ্বী আমি।
~ আর তুমি?
~ লাবিব।

~ তুমি?
~ হাসিব।
~ তোমাদের তিন জনের নামে থানায় ইনফ্রম আসছে, তিন জনকে আমাদের সাথে যেতে হবে।
~ কিন্তু আমাদের অপরাধটা কি? (আমি)
~ এক মেয়েকে রাস্তা ঘাটে ডিস্ট্রাব করছেন। সে হাই কমিশনার স্যারের মেয়ে। সুতরাং কথা না বারিয়ে আমাদের সাথে চলুন।

আমার বুঝতে বাকি রইলো না এ কাজ ইসিতার। কিন্তু বুঝলাম না দিনে দিনে এতো অপ্রিয় হয়ে গেলাম ইসিতার? যার জন্য কেইসও হয়ে গেলো।

~ বন্ধু আমার বিষণ ভয় করছে। পুলিশের মাইর দুনিয়ার শ্রেষ্ঠ মাইর। (লাবিব)
~ বাসায় জানতে পারলে খবর আছে, এমন কি আজি বিদেশে পাঠিয়ে দিবে। (হাসিব)
আমি আর কিছু বললাম না, সব তো আমার জন্যই হয়েছে তাই নিরব হয়ে থাকলাম।
আদের অবস্থান এখন থানায়। কিছু ক্ষন পর ইসিতার বাবা আসলো।

~ তাইলে তোমরা তিন জন।
আমরা মুখে কোনো কথা না বলে গাঢ় নেরে সম্মতি জানালাম।
~ দেখতে তো ভদ্র ঘরের মনে হচ্ছে। বখাটের মত আচারণ করো কেনে?
তার পর আমাকে উদ্যেশ্য করে বলতে লাগলো,

~ তো তোনকে আমার বাসার ছাদে ধরে ছিলাম একদিন। সে দিন বলেছিলে আর কোনো দিন হবে না। এখন যদি ডান্ডার মাইর দেই৷ তাহলে ঠিক হবি।
আমরা কিছুই বলছি না। ভাগ্যটাই খারাপ। কাউকে এতোটা ভলোবাসার ফল এইটা৷ একজন এসে আমাদের অবিভাবকের নাম্বার নিলো।

থানা থেকে যখন বাসায় ফিরি তখন রাত দশটা। আব্বু এসে নিয়ে গেলো। হাসিবের আর লাবিবের আব্বু পুরো ফায়ার৷ মনে হচ্ছে বাসায় নিয়ে হাতের কসারত সারবে৷
গায়ের শার্টা খুলে ধুপাস করে শুয়ে পরলাম। আব্বুর বক বক চলতেছে৷ সেদিকে খেয়াল করলাম না৷

ইসিতা কি দরকার ছিলো এতো অপমান করার। আগেই বলে দিতে। নিজের চোখের পানি ধরে রাখতে পারছি না। কষ্টটা গভীর থেকে গভীরে চলে গেলো।

পুলিশের ব্যাপারটা এলাকায় ভাইরাল হয়ে গেলো তার জন্য তিন চারদিন বাসা থেকে বের হতে পারলাম না।

আজ অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে আসলাম। সবাই আমাদের দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকালো অপরাধী আসছে সবাই সাইট দে।
বসে আছি ক্যান্টিনে। সুপ্তি এসে পাশে বসলো। ।
~ কি হিরো? মনে নাকি রঙ লাগছে আপনার?

আমি কোনো কথা না বলে মুখ নারালাম
~ তো কোন ইয়ারে পরে মহা রাণী৷
~ তৃতীয় বর্ষ।


পর্ব ৬

আজ অনেক দিন পর ক্যাম্পাসে আসলাম। সবাই আমাদের দিকে অন্য দৃষ্টিতে তাকালো অপরাধী আসছে সবাই সাইট দে।
বসে আছি ক্যান্টিনে। সুপ্তি এসে পাশে বসলো। ।
~ কি হিরো? মনে নাকি রঙ লাগছে আপনার?

আমি কোনো কথা না বলে মুখ নারালাম
~ তো এমন হাবার মত মুখ কালো করে বসে আছোস কেন?
~ এমনেই, মন খারাপ।
~ থানার পুলিশ তোকে মারছে?

~ মারবে কেন?
~ ওইযে পুলিশের মেয়েকে ডিস্ট্রাব করিস, আবার নাকি কিডন্যাপ করার হুমকি দিছিস তাই বললাম আর কি? পুলিশের তো আর বুক পিঠ নাই।
~ আরে আমারে মারবে কেন, সম্পর্কে আমি তার জামাই না।
~ বাব্বাহ, ওই দুইটারে মারছে?

~ কোন দুইটা,?
~ আরে হাসিব আর লাবিব।
~ ও নাহ, মারে নাই।
~ মারলে ভালো হত। তারপর হারামী দুইটা সোজা হত।

~ হঠাৎ এই কথা কেন। এতদিন তো দেখতাম হাসিবের সাথে গলায় গলায় খাতির।
~ আর বলিস না, আমার দুইশো টাকা মাইরা দিছে।
~ কিভাবে?

~ মেজিক দেখাইছে। দেখে নিবো দুইটারে, আমি গাইবান্ধার মেয়ে। হুম,
সুপ্তির মুখে গাইবান্ধা শুনে অনিচ্ছুক ভাবে হাসি চলে আসলো।
~ ওই তুই হাসছিস কেনো? (সুপ্তি)
~ গাইবান্ধা, কার গাইভান্ধা?

~ ওই তুই আজকেও আমার সাথে ফাজলামি শুরু করছিস। তোর আজকে খবর আছে।
সুপ্তি পুরো ক্যান্টিনের ভিতর আমাকে তাড়া করলো সামনে থাকা পানির বোতলটার পুরটা আমার মাথায় ঢেলে দিলো।
~ কি করলি এইটা?

~ ভালোই করেছি থাক তুই এবার আমি গেলাম।
সুপ্তি মুখটাকে একটা ভেঙছি কেটে চলে গেলো।
শার্টটা ভিজে গেলো৷ দূর এখন বের হব কিভাবে মানুষ দেখলে কিভাববে?

ক্যান্টিন থেকে বের হলাম সুর্যটা ঠিক মাথার উপরে। হাসিব আর লাবিব ক্যাম্পাসের ভিতর একটা ব্যাঞ্চের উপর বসে আছে। তাদের কাছে গেলাম।
~ কিরে তোর এই অবস্থা কেন? এই বয়সেও প্যান্ট ভিজে যায়? (হাসিব)
~ দূর বেটা বাজে কথা রাখ। (আমি)

~ তোর এই অবস্থা কেন?
~ সুপ্তির থেকে টাকা মারছোত। তোদের কে না পেয়ে আমার উপর শোধ নিয়েছে।
~ যাক হিসেব ক্লিয়ার। কালকে তোর জন্য আমরা জেলে গিয়েছি আজ তুই আমাদের জন্য।
~ রাখতো কালকের কথা। ।

~ আমি বুঝলাম না ইসিতা মেয়েটা এতো বদলে যাবে? (লাবিব)
~ বাবা পুলিশ একটু অহংকার তো থাকবেই।
~ অহংকার থাকা ভালো। কিন্তু এতো কেন? মন নিয়ে খেলা করে কিভাবে? (হাসিব)
~ রাখ তো। সে জাহান্নামে যাক তাতে আমার কি? (আমি)

আর কথা বাড়ালাম না সবাই চুপ।
~ চল চা খেয়ে আসি।
~ হুম চল

তিন জন চলে গেলাম। কালকের ঘটনার বিন্দু মাত্র প্রভাব আমাদের উপর নেই।
~ মামা এক কাপ চা তিন কাপে ভাগ করে দেনতো। (আমি)
~ ওই হারামজাদা আজকেও শুরু করছিস? (লাবিব)
~ sorry, মামা ভাগ করা লাগবে না তিন কাপই দেন৷ (আমি)

আজ অনেকদিন ধরে ইসিতাকে দেখছি না। না দেখাটাও ভালো। অনেক কষ্ট দিয়েছে শুধু শুধু। তারপরও অনেক দিন না দেখাতে পেরে মনটা আনছান করছে।
বেশ সুখে আছে মনে হয়।

মধ্যদিয়ে আমরাও ক্যাম্পাসে যাইনি। আমাদের উপর যে কালো থাবা নেমে এসেছে তার রেশ এখনো কাটে নি। ক্যাম্পাসের সবাই একটু অন্যভাবে আমাদের দিকে তাকায়। যেটা আমাদের পছন্দ না। তাই তিনজন ঠিক করলাম কিছুদিন ক্যাম্পাসে যাবো না।

চতুর্থ দিন ক্যাম্পাস থেকে খবর আসলো প্রিন্সিপাল খোঁজ করেছে, আজকে ক্যাম্পাসে যেতে হবে। হাসিব আর লাবিব কে ফোন করলাম তাদেরও একি কাহিনী। আজ হয়তোবা ক্যাম্পাসের শেষ দিন টিসি নিয়ে বাসায় আসতে হবে।
ক্যাম্পাসে গেলাম। কিছুক্ষন ওয়েট করলাম জানি না হারামী দুইটা এতো লেট করে কেনো? কিছুক্ষন পর নবাব আসলো।

~ কিরে এতো লেট কেনো? (আমি)
~ আরে এমনেই, চল।
~ ওকে।

প্রিন্সিপালের রুমে চলে গেলাম। আমাদের আগমন তার কাছে আগে থেকেই জানা ছিলো।
~ আসুন, হিরো সাহেবরা।
আমাদের তিন জনের মাথা নিচু।
~ তোমাদের জন্য আমার ক্যাম্পাস মুখরিত। অনেক কিছু করেছো আমাদের জন্য এবার প্লিজ টিসি নিয়ে আমার কাছ থেকে বিদায় নেও।

আমরা তিন জিন অপরাধী কন্ঠে বললাম
~ sorry স্যার, আর হবে না। এবারের মত মাপ করে দিন।
স্যার কিছু বলতে যাবে তখনি দড়জায় কারো আসার শব্দ পেলাম। তাকিয়ে দেখি ইসিতা বেশ হাপিয়ে গেছে।
~ প্লিজ স্যার, ওদেরকে মাপ করে দিন। কিছুটা মিসটেক আছে। (ইসিতা)

~ হুম, এবারের মত মাপ করে দিলাম, তবে এইটাই শেষ।
আমরা আর সেখানে থাকলাম না বের হয়ে গেলাম। বের হবার পর আমরা হিরো থেকে কম ভাব নেই নি, তিন জনের শার্টের বোতাম খুলে পুরো নায়কের বেশে। ক্যাম্পাসের সবাই আমাদের দিকে তাকিয়ে থো হয়ে গেলো।
দাঁড়িয়ে আছি সুপ্তির সাথে পুরো ঘটনা টা শেয়ার করলাম। পিছন থেকে ইসিতা ডাক দিলো,

~ জাহিদ, তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো, একটু ক্যাম্পাসের বাইরে এসো। (ইসিতা)
ইসিতা চলে গেলো।
হাসিব আর লাবিব তো আমাকে যেতে দিবে না। ওই মাইয়া তোকে আবারো গোলের পানি খাওয়াবে।
~ দূর বেটা আমি ভয় পাই কাউকে? (আমি)

~ বুঝছিতো এখনো ভুলতে পারোনি।
আমি চলে গেলাম ইসিতার কাছে। ইসিতা অন্য দিকে তাকিয়ে আছে। আমি আস্তে একটা কাশি দিলাম।
ইসিতা আমার দিকে তাকালো।

~ জাহিদ তুমি আমাকে যতটা খারাপ ভাবো আমি ততটা খারাপ না৷ আমি অনেক ভালো৷ সামন্য একটু ইগো আমাদের জীবনটা অন্য দিকে নিয়ে গেছে৷ আমি নকিবের সাথে অভিনয় করেছে তোমার আর সুপ্তির ব্যাপারটা দেখে, ৷ আর তোমার কোনো টাইমসেন্স নেই।

সেদিন যদি তুমি আমার সাথে দেখা করতে আসতে তাহলে আজকে আর এমন দিন দেখতে হতো না। সেদিন দেখা করতে আসো নি৷ আমি সেই বারোটা টা থেকে তিনটা পর্যন্ত বসে ছিলাম। তুমি আসো নি তাই তোমার থেকে প্রতিশোধ নিয়েছি৷ আমার মনে হয় এই ঘটনার জন্য তুমি দায়ী৷ কালকে চলে যাচ্ছি এখান থেকে। পারলে মাপ করে দিও। (ইসিতা)

~ চলে যাচ্ছি মানি?
~ বাবা ট্রান্সফার হয়ে গেছে বরিশাল। কাল না হয় তার পরের দিন চলে যাবো।
~ তোমার চলে যাওয়াতে আমার কিছু আসে যায় না, তবে যে কষ্ট দিয়েছো তা সারা জীবন মনে থাকবে। যদি পারো আমাকেও ক্ষমা কিরে দিও। (আমি)

~ হুম, কষ্ট শুধু তুমি একা পেয়েছো আর আমার কোনো কষ্ট হয়নি?
আমি একটু হেসে নিলাম,
~ পাষান আবার কষ্টও বুঝে, (আমি)
ইসিতা কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো।

~ আমি জানিনা কেনো আমি পাষাণ। আমার কোনো মায়াদয়া নেই। অকারনে মানুষের মন নিয়ে খেলা করি। পুলিশ দিয়ে অপমান করি। করবোইতো পুলিশের মেয়ে বলে কথা। আমারও খুব ভালো লাগে এমন করতে। কিন্তু যেদিন শুনেছে আব্বু ট্রান্সফার হয়েছে সেদিন থেকেই কেনো জানি মনে হচ্ছে আমি যেন একজন কে হারিয়ে ফেলছি।

যাকে ঘিরে ছিলো আমার সকল স্বপ্ন। তুমি হয়তো বা মনে করবে” পাষাণ ” আবার স্বপ্নও দেখে। মরে যাবো, পাষাণ মরলে সবাই মুক্তি পাবে।
~ এসব কথা আমাকে বলছো কেন। ক্যাম্পাস শেষ হয়েছে প্রায় আধাঘন্টা ওভার। বাসায় যেতে হবে। তোমার আজুইরা বক বক শুনার টাইম নাই। তোমার যাত্রা শুভ হক। ভালো থেকে নতুন জায়গায়৷ আর হে, কোনো হেল্প লাগলে বলিও। (আমি)

ইসিতার দিকে আর ফিরে তাকালাম না। মেয়েদের মন বুঝা বড্ড কঠিন। আর একটু থাকলে আবেগে জড়িয়ে যেতাম৷ আমি আর মিথ্যে অভিনয়ের সঙ্গি হতে চাইনা।

আজ দুইদিন ইসিতার কোনো খোঁজ নেই। হয়তো বা চলে গেছে। অন্তর পুরোটা না জ্বললেও একটু একটু জ্বলে। আমিতো ভালোবেসেছি৷ আর ভালোবাসার মানুষয়াকে ভুলা খুব কঠিন।

ইসিতার বাসায় গেলাম, সামনে “to let” ঝুলছে সত্যি সত্যি চলে গেলো? মনটা খারাপ হয়েগেলো৷ যাহ কিছুই ভালো লাগে না। বাসায় চলে আসলাম। অনেক কষ্টে নিজেকে বুঝালাম, ইসিতার সাথে আমার একজাস্ট হতো না৷ এটা শুধু মাত্র আবেক ছিলো।

ইসিতার পরিবার আর আমার পরিবারের মধ্যে আকাশ সমান পার্থক্য। জীবন টা সাধারণ ভাবেই কাটিয়ে দেই। বামুন হয়ে চাঁদে হাত দিতে নেই৷
দিন পার করি আর ভাবি, কি দরকার ছিলো এত তাড়াতাড়ি চলে যাওয়ার হুম? এর কিছুদিন থাকতে জ্বলে পুরে মরতে?

ক্যাম্পাস গিয়েও কোনো মোজা পাইনা। হাসিব আর লাবিব যেন কেমন হয়ে গেছে আগের মত আর ফাজলামি করে না। লাবিব কে তো দেখাই যায় না।
আজ ক্যম্পাসে আসছি। ক্যাম্পাসে এসে যে খবর শুনেছি তার জন্য মানসিক ভাবে প্রস্তুত ছিলাম না। ২ য় সেমিস্টারের এক মেয়ে হাসিবের নামে বিচার দিয়েছে। প্রিন্সিপাল তো আগে থেকেই হাসিবের উপর রাগ ছিলো তাই টিসি দিয়ে ক্যাম্পাস থেকে বের করে দিয়েছে?

মনটা খারাপ হয়ে গেলো দূর কি চলছে এসব আমার সাথে। ঘটনার তদন্তে নামলাম। মেয়েটার নাম সাইফা আফরিন। ২য় সেমিস্টার, হাসিব নাকি আগে থেকে পছন্দ করতো আজকে প্রপোজ করেছে৷ আর মেয়েটা সরাসরি প্রিন্সিপালের কাছে। মেয়ে জাতি বলে কথা।

এখানে হাসিবের দোষটা কি? মুখের উপর না বলে দিলেইতো হয়। আবার বিচার কেন? ক্যাম্পাস থেকে বের হবো তখনি সুপ্তির ডাক। মন খারাপ তার, কারণ জিজ্ঞাস করতেই সুপ্তির চোখে পানি চলে আসলো৷
~ ছেলেরা এতো খারাপ কেন? (সুপ্তি)

~ কেন তোরে আবার কি করছে? যা প্রিন্সিপাল এর কাছে গিয়ে বিচার দে। (আমি)
~ বিচার দিলে যদি সব কিছু ঠিক হয়ে যেতো তাহলে আমি দেরী করতাম না।
~ বুঝলাম না, তোর আবার কি হয়েছে?

~ মানুষ মন নিয়ে এভাবে খেলা করে?
~ কার মন নিয়ে কে খেলা করেছে?
~ হাসিব আমার মন নিয়ে খেলা করেছে।
~ কি বলছিস?

~ হুম, জানি না কবে থেকে পছন্দ করি। যখন শুনেছি সাইফা আফরিন কে প্রপোজ করেছে তখন মাথায় রক্ত উঠে গেলো। টিসি দিছে একদম উচিত শিক্ষা হয়েছে। এবার বুঝবে অন্য মেয়েদের দিকে কিভাবে তাকায়।
~ আরে হাসিব তো এ পারা থেকে চলে যাবে। তাকে আটকানো লাগবে না।

~ আমি জানিনা। তোদের সব কটাকে চেনা হয়ে গেছে। আর কোনো দিন দেখতে চাইনা।
সুপ্তি চলে গেলো চোখের পানি মুছতে মুছতে ৷ আমি আর সুপ্তির কথা চিন্তা না করে হাসিবের বাসায় চলে গেলাম।
হাসিব ব্যাগ পত্র রেডি করছে। আমাকে দেখেই,

~ কিরে জাহিদ, আয় ভিতরে আয়৷ (হাসিব)
~ তুই কিভাবে পারলি এই কাজটা করতে? একবার আমাদেরকে জিজ্ঞাস করার প্রয়োজন মনে করলি না?
~ কাদের বলবো, তুই তো ছ্যাকা খেয়ে ব্যাকা হয়ে গেছিস৷ আর লাবিব তো এলাকা ছেড়েছে আজ তিনদিন।
~ মানি লাবিব কোথায় গেছে?

~ জানি না। শুধু বলেছে আঙ্কেল ট্রান্সফার হয়ে গেছে। যাওয়ার সময় একটু বলেও যায়নি৷ আর মোবাইল অফ৷ কোনো খবর পাইনি।
~ কি বলেছিস? লাবিব চলে গেছে?
~ হুম, হয়তো তোর সাথে দেখা হবে। আর আমিতো,

~ তুই কোথায় যাবি?
~ আমি আজকে ঢাকা যাবো। আবার আগামি মাসে পুস, , সিঙ্গাপুর।
~ কিহ, তার মানি আমি সবাইকে হারাবো?
~ come back to the reality. বাস্তব এমনি।

~ পারবি তো ছেড়ে থকতে?
~ প্রথম হয়তো পারবো না, কিন্তু চেষ্টা করতে হবে। চেষ্টার ফল বিফলে যায় না।
আমার চোখে পানি চলে আসলো। কি বলে এইসব। যাদের কে ছাড়া আমার দিন চলে না। তারা চোখের সামনে থেকে এভাবে চলে যাবে?

~ প্লিজ বন্ধু তুই অন্তত থাক, আমিযে বড্ড একা হয়ে যাবো। (আমি)
~ এখানে থেকেই বা কি করবো? সবার চোখে তো আমি অপরাধী। এক হারামী চলে গেছে, এখন আর এক হারামী চলে যাচ্ছে। অতঃপর শান্তি পাড়ায় আবার শান্তি ফিরে আসবে।
হাসিব কাদে ব্যাগ নিয়ে বেড়িয়ে পরলো, আমার মাথা কাজ করছে না। ।

~ সুপ্তি কিছু বলেছে তোকে? (আমি)
~ হুম, তবে মেয়ে জাতিকে বিশ্বাস করতে নেই, তোর সাথে কি হয়েছে দেখিস নি৷ যতো সম্ভব তাদের কাছ থেকে দূরে থাকা উচিত। জানি না আবার কোন অভিনয়ের জ্বালে আটকে পরি৷ তার থেকে ভালো আমি আমার মত থাকি। আর শোন ভালো থাকবি। ইসিতার কথা বেশি ভাববি না৷ (হাসিব)

হাসিব চলে গেলো৷ মনের ভিতর দুঃখগুলো চাপা দিয়ে বাসায় ফিরছি। রাস্তায় সুপ্তির সাথে দেখা ৷ আমি শুধু একটা কথাই বকছি, ” চলে গেছে”।

সুপ্তি আর কিছু না বলে চলে গেলো। হয়তো অনেক কষ্ট পেয়েছে। বাড়িতে চলে আসলাম। একেক করে সবাইকে হারালাম। জীবনে চিন্তা করি নি যে হাসিব আর লাবিব কে এভাবে হারাবো। লাবিব একটা নিমক হারাম। কিভাবে পারলো এভাবে ছেড়ে যেতে? হাসিব নাহয় এক কারণে চলে গেছে৷

অদের কে ভুলে থাকাটা অনেক কষ্ট কর। কারণ ওরাইতো ছিলো আমার জীবনের সবটা ঘিরে। কত কাহিনী রয়েছে আর কত স্মৃতি। যাক বাস্তব নাকি এমনি।
দিন গুলো কিভাবে পার হয় জানি না। শুধু ক্যাম্পাস যাই আর সারাদিন বাসায় বসে থাকি। হাসিব আর লাবিব এর হারানোর কষ্টে ইসিতার কথা একদম ভুলে গেছি।

প্রায়ই হারামী দুইটার কথা মনে পরতো৷ তারপরও আমি অদের কথা চিন্তা বাদ দিয়ে আমার মত থাকি। দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসলো৷ এখন সারাদিন পড়ালেখায় ব্যাস্ত থাকি কে কখন কি হয়ে ছিলো তা ভাবার সময় নেই।


পর্ব ৭

দেখতে দেখতে ফাইনাল পরীক্ষা চলে আসলো৷ এখন সারাদিন পড়ালেখায় ব্যাস্ত থাকি কে কখন কি হয়ে ছিলো তা ভাবার সময় নেই। বিকেল হলে হাসিব আর লাবিবের শুন্য বাসাটা একবার করে দর্শন করে আসি। জানি না আর দেখা হবে কিনা। হাসিবের বাসাটায় নতুন ভাড়াটিয়া আসছে।

সেখানে বেশী সময় দাঁড়িয়ে থাকা যায় না। কিন্তু লাবিব ছিলো পুরোনো কোয়ার্টারে সেখানে আর কেউ আসবে বলে মনে হয় না। সামনের লক্কর জক্কর গেইটে বড় মাপের একটা তালা ঝুলছে। তাকালেই মন শিউরে উঠে, এই বাসায় কত আসা যাওয়া ছিলো, কত স্মৃতি আছে, মনে পরলে চোখে পানি চলে আসে।

ওরা সত্যি অনেক হারামী, মাসের পর মাস চলে যায় তাও একটা ফোনও করেনি৷ কিভাবে ভুলে থাকে, আর আমি স্মৃতি আকড়িয়ে কাঁদি। দুইজনই সিম চেঞ্জ করেছে। ফোন দিলে পাওয়া যায় না। যাক পৃথিবীটা গোল হয়তো আবার দেখা হবে৷ হারানো সোনালী দিন গুলো আর পাবো না জেনেও প্রতিদিন তার আশায় বসে থাকি।

ইসিতার বাসাটা ঠিক উল্টোদিকে দিকে ছিলো হেটে যেতে মাত্র পাঁচ মিনিট সময় লাগবে৷ গেইটের সামনে “to let” লেখা সাইন বোর্ডটা এখন আর দেখি না। হয়তো নতুন কেউ এসেছে। ইসিতার চলে যাওয়াতে আমার কোনো দুঃখ নেই। সে আমার কাছে পাষাণ এর মত ছিলো। অনেক কষ্ট দিয়েছে, হুম অনেক কষ্ট৷
সন্ধায় এক বুক কষ্ট নিয়ে বাসায় ফিরে৷ আবার রাতের আধারে হারিয়ে যায়।

আমার দিন এভাবেই কাটে। জানি না আর কত ভবঘুরে হয়ে পথে পথে ঘুরবো। ফাইনাল পরিক্ষা সন্নিকটে চলে আসছে আমিও ব্যাস্ত হয়ে গেলাম। আমারও হয়তো বা শান্তি পাড়া ছেড়ে চলে যেতে হবে জীবীকা আহরণে ৷
সাপ্তাহ পার হয়ে পরিক্ষা শুরু হয়ে গেলো আমিও ভদ্র ছেলের মত পরিক্ষা শেষ করলাম। এক মাস এখানেই কেটে গেলো।

এখন ফ্রি সময়, আব্বু বলেছে বাইরে থেকে ঘুরে আসতে। আমি বলে দিয়েছি আমার সোনায় মোড়ানো স্মৃতি ফেলে কোথায় যাবো না।

দেখতে দেখতে তিনটা বছর কেটে গেলো৷ হারামী দুইটার কোনো খোজ পাওয়া গেলো না। বেঁচে আছে কিনা মরে গেছে তাও জানি না।
এখন আমিও ছুটছি চাকরীর বাজারে। তাই নিজের গ্রাম ছেড়ে এক ভংকর রাজ্যে পা বারালাম৷

অনেক খুজা খুজা করার পর যখন সোনার হরিণ পেতে ব্যার্থ হলাম তখন বড় মামা একটা প্রাইভেট কম্পানির কথা বললো। মামার খুব ক্লোজ বন্ধুর ফার্ম। সে বিল্ডিং এর প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করে। আমি যেহেতু সিভিল নিয়ে স্টাডি করেছি আমার মনে হয় জবটা আমার জন্য পারফেক্ট হবে৷

তাই মামার সাথে এক মত হয়ে জবটাকে প্রাধান্য দিলাম।
দুদিন পর জয়েনিং লেটার আসলো। আজকেই আমাকে শান্তি পাড়া ছেড়ে ব্যাস্ত নগরীতে যেতে হবে। স্মৃতি গুলো বুকে জমা রেখে রওয়ানা দিলাম। পথে লাবিবের বাসাটা চোখে পরলো। রেলিং আর ছাদ আগাছায় পরিপূর্ণ। দেয়ালের রঙ জলছে গেছে। বাসার ভিতরেও বড় কয়েকটা গাছ দেখা ছাচ্ছে৷ সব মিলিয়ে এ যেন এক ভুতুরে পরিবেশ।

ছোটো খাটো একটা অফিস। চারটা রুম এর তিনটা রুমই হলো সিনিয়রদের। বাকি রুমে কয়েকটা ডেক্স কম্পিউটার সসমৃদ্ধ। আমার সিট পরেছে ছয় নাম্বার ডেক্সে। তেমন ছোট বললেও হবে না। এইটার নাকি আরো চারটা শাখা রয়েছে।

চাকরি জীবন শুরু, নতুন অফিস অল্পদিনে সবার সাথে পরিচিত হয়েগেলাম৷ সিনিয়রদের সাথেও৷ অফিসের হেড ম্যাডাম তার সাথে এখনো পরিচিতো হতে পারি নি। তার অ্যাজ্ঞেজমেন্টের জন্য কিছু দিন আসতে পারেনি। মনে হচ্ছে অল্প কয়েকদিনের ভিতর একটা ধুমাধুম বিয়ের দাওয়াত পাবো।

একসাপ্তাহ পার হয়ে গেলো, একদিন নিজের ডেক্সে বসে কাজ করছি।
~ জাহিদ সাহেব ম্যাডাম ডেকেছে? (রাকিব)
~ ম্যাডাম আসছে আজকে? (আমি)
~ জ্বী, আপনাকে দ্রুত যেতে বলেছে।
~ ওকে আসতেছি।

হাতের কাজটার বাকি অংশ সেরে ম্যাডাম এর রুমে গেলাম।
~ may I com, , , , , (গলায় আটকে পরলো)
আরে মুখতা খুব চেনা চেনা লাগছে। কই জানি দেখেছি? আরে এতো ইসিতা।
~ ইসিতা তুমি? (আমি)

ইসিতা আমার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে সে হয়তো ভাবেনি আমার সাথে এমন করে দেখা হবে। কিছুক্ষন পর ইসিতা বলিতে লাগলো,
~ কে আপনি? আর আমাদের কি আগে কখনো দেখা হয়েছে? (ইসিতা)

ইসিতার মুখে এমন কথা শুনে বুকটা কেপে উঠলো কি বলে এই সব৷ যার সাথে আমার রিলেশিন হওয়ার কথা ছিলো, আমাকে জড়িয়ে ধরেছে অনেক বার সে আমাকে চিনে না৷ নাকি আবার নাটক শুরে করেছে।
~ আরে আমি জাহিদ, ওই যে শান্তি পাড়ায় এক সাথে ট্যাকনিকেল~ এ পরতাম। (আমি)
~ আসলে আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি কখনো শান্তি পাড়ায় যাইনি। আমার এখানেই বেরে উঠা এখানেই সব কিছু৷

~ আরে ইসিতা তুমি, , , , (মাঝ পথে থামিয়ে দিলো)
~ অফিসের সিনিয়র আর্টিস্টদের সম্মান দিয়ে কথা বলুন। আমি হয়তো বা বয়সে আপনার থেকে ছোটো কিন্তু অফিসে আমি আপনার সিনিয়র। সো, বিকেয়ারফুল। ~ ইসিতা তুমি আবারো নাটক করছো আমার সাথে। প্লিজ এবার সিরিয়াস হও।

~ দেখুন জাহিদ সাহেব। আমি আগেও বলেছি এখনো বলছি, আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে। আমি আপনাকে চিনি না।
~ এটা কেমন কথা, তোমার কি ব্রেনে আঘাত লাগছে। আমাকে চিনতে পারো না?
ইসিতা একটু হেসে বললো,

~ আমি একদম ঠিক, আমার কিছুই হয়নি। উল্টো আমার মনে হচ্ছে আপনাকে মানসিক ডাক্তার দেখানো প্র‍্যয়োজন৷
~ ইসিতা, ,
~ plz, don’t calle me ইসিতা। আমি আপনার সিনিয়র। সো ম্যাম ইজ দ্যা বেস্ট।
~ ইসিতা তুমি কেনো এমন করছো?

এবার ইসিতা খানিকটা রেগে গিয়ে,
~ আর একবার যদি নাম ধরে ডাকেন। তাহলে আমি আপনাকে চাকরি বিচ্যুত করতে বাধ্য হবো। কি ভাবেছেন ভালোভাবে কথা বলি দেখে? যান নিজের ডেক্সে যান।

আমি আর কি করবো ইসিতার কথায় সম্মতি দিয়ে,
~ sorry, মেম ভুল হয়ে গেছে। আর হবে না।
ইসিতার হাতের আঙুলে নতুন আংটি৷ সদ্য অ্যাজ্ঞেজ হয়েছে। আমি আর কিছু না বলে নিচের দিকে চেয়ে নিজের ডেক্সে ফিরে আসতে লাগলাম।

~ কোথা থেকে যে এ পাগল আসলো, সকাল সকাল মাথাটাই গরম হয়েগেলো।
ইসিতার কথাটা গায়ে লাগলো। রুম থেকে বেড়িয়ে গেলাম। মুখটা ফেকাসে হয়ে গেলো।

ইসিতা আমার সাথে পরিচয় রাখতে চায় না তাই না চিনার বান করছে। এতোদিন পর দেখা মানুষ তো “কেমন আছি? ” এইটাও একবার জিজ্ঞাস করে। কিন্তু পাষাণ তো পাষানই থাকবে। সেতো আমার কষ্ট বুঝবে না। নিজের ডেক্সে এসে বসে পরলাম। এমনটা হবে জীবনেও কল্পনা করিনি। ইসিতা আগেও রঙ বদলাতো। কিন্তু এতোটা না।

ইসিতার সামনে যেতে পাড়িনা। কেমন যেন লজ্জা লাগে। যে আমাকে চিনতে চায়না তাকে চিনার জন্য মরিয়া হয়ে উঠেছি।
দিনের ভিতর চার থেকে পাঁচ বার ইসিতার রুমে যাওয়া পরে। কিন্তু আমি লজ্জায় যেতে পারিনা। রাকিব কে দিয়ে এ কাজ সম্পন্য করি। একদিন রাকিব এসে বললো,

~ ম্যাম ডাকছে। (রাকিব)
~ কেনো?
~ আমি কিভাবে বলবো, আপনি গিয়ে দেখে আসুন।
ভয়ে ভয়ে ইসিতার রুমে গেলাম।

~ ম্যাম আসবো?
~ হুম, আসুন।
~ জ্বী ম্যাম ডেকেছেন? (ম্যাম বলতে কষ্ট হয় অনেক কষ্ট)

~ আপনাকে একটা প্রশ্ন করি। আপনি কি আমাদের অফিসে কাজ করতে চান?
~ কেন ম্যাম? হঠাৎ এই কথা কেন?
~ না মানি, কিছু দিন যাবত দেখছি আপনার কাজের প্রতি অনিহা সৃষ্টি হচ্ছে। নিজের কাজ রাকিব কে দিয়ে সারেন। দেখুন এখানে আপনাকে আপনার কাজের জন্য রাখা হয়েছে আর রাকিব কে রাকিবের কাজের জন্য। সো একজন আর এক জনের পরিপূরক হতে পারে না।

~ sorry ম্যাম, আর হবে না।
~ ওকে, আপনাকে একটা কাজ দেই।
~ জ্বী।

~ আমাদের নতুন ছয়টা বিল্ডিংয়ের প্রজেক্টের কাঠামো করা হয়ে গেছে। আপনি সেগুলো সংগ্রহ করে কোনো ভুল আছে কিনা দেখে নিন।
~ কিন্তু ম্যাম আর আধা ঘন্টা পরতো অফিস শেষ হয়ে যাবে। কিন্তু এ কাজ করতে তো আমার তিন থেকে চার ঘন্টা সময় লাগবে৷ তার থেকে ভালো আমি কালকে কাজটা করে দেই।

~ শুনেন আমি দরকার ছাড়া কাউকে বাধ্য করি না। সরি কাজটা আজকেই করা লাগবে। আর অফিসের জন্য এতটুকু ত্যাগ স্বীকার করতে না পারলে চাকরি করার কি দরকার যান বাসায় গিয়ে ঘুমিয়ে পরেন।
ইদানিং ইসিতা গায়ে লাগার মত কথা বলছে। যা আমার সহ্য হয় না।

ইসিতাকে কিছু না বলে কাজে ব্যাস্ত হয়ে গেলাম। যত সময় লাগে কাজ শেষ করতে হবে। আস্তে আস্তে সবাই চলে গেলো অফিসটা শুন্য হয়ে গেলো। তার ভিতর আমি একা। জানি না ইসিতা আমার থেকে আবার কিসের প্রতিশোধ নিচ্ছে।

হাতের কাজ সারতে প্রায় সারে তিন ঘন্টা লেগে যায়। ইসিতার রুমে গিয়ে দেখি ইসিতা নেই। টেবিল এ থাকা কার্ডটা থেকে নাম্বার উঠিয়ে ইসিতাকে গোন দিলাম।
~ হেল্লোও, কে বলছেন?

~ জ্বী ম্যাম আমি জাহিদ, আমার কাজ শেষ ফাইল গুলো কোথায় রাখবো।
~ ওফ আমি সত্যি ভুলে গেছি। এক মিনিট দাড়ান আমি আপনাকে আমার ঠিকানা টেক্সট করে দেই সেখানে নিয়ে আসুন।

ইসিতা ফোন কেটে দিলো।
দূর এমনেতেই রাত আটটা ওভার বাসায় যেতে হবে রাতের রান্না করতে হবে। কি ভেজালের ভিতর পরলাম।
একটা রিক্সা নিয়ে ইসিতার পাঠানো ঠিকানায় চলে গেলাম। পৌছাতে রাত নয়টা ইসিতাকে ফোন দিলাম,
~ ম্যাম আপনার যে জায়গার কথা বলেছেন আমি তো সেখানে চলে এসেছি।

~ একটু অয়েট করুন। আমি শপিং এ বের হয়েছি কিছুক্ষন পর চলে আসবো।
গায়ে আগুন জ্বলে উঠলো। এইটা কেমন ফাজলামী।
ইসিতাকে কিছু বলার আগে ফোন রেখে দিলো।
মেয়েদের শপিং। আজকে রাত পুরোটা খেয়ে ফেলবে। না পারি সইতে না পারি কিছু বলতে। আজকে রাতে উপস থাকতে হবে৷

ইসিতা যখন আসলো রাত তখন এগারোটা। আমি ফাইল গুলো বুঝিয়ে দিয়ে বাসায় চলে আসলাম। তার সাথে পিতলা আলাপ করার সময় নেই। আবার কোন ভেজালের ভিতর ফেলে জানি না। বাসায় আসতে আসতে রাত বারোটা ওভার। রাতটা উপস কাটিয়ে দিলাম। এই ব্যাস্ততার ভিতির কিছু করতে পারবো না।

অফিসে বসে কাজ কারছি,
~ জাহিদ সাহেব, আপনাকে নিচে এক ভদ্রলোক খোঁজ করেছে। (রাকিব)
~ আমাকে আবার কে খোঁজ করবে? কি নাম তার?
~ জানি না নিচে বসে আছে।

~ ওকে, আমি আসতেছি।
নিচে নামলাম৷ আমি খুব আতরে উঠিলাম মুখটা খুব চিনা চিনা মনে হচ্ছে। কোথাও যেন দেখেছি?


পর্ব ৮

অফিসে বসে কাজ কারছি,
~ জাহিদ সাহেব, আপনাকে নিচে এক ভদ্রলোক খোঁজ করেছে। (রাকিব)
~ আমাকে আবার কে খোঁজ করবে? কি নাম তার?
~ জানি না নিচে বসে আছে।

~ ওকে, আমি আসতেছি।
নিচে নামলাম৷ আমি খুব আতরে উঠিলাম, মুখটা খুব চিনা চিনা মনে হচ্ছে। কোথাও যেন দেখেছি? হাসিবের মত দেখা যাচ্ছে। দাড়িয়ে আছি, আজ চার বছর পর কিভাবে? হাসিবের নজর পরলো আমার দিকে। দুজনের আবেগ ধরে না রাখতে পেরে চোখের পানি পরে গেলো৷

~ হারামজাদা তোর বউরে টুট টুট। (আমি)
হাসিবের উপর হামলা শুরু হয়েগেছে। এতোদিন পর মনে পরলো হুম?
~ আরে আমার কি দোষ, মারছিস কেন? (হাসিব)

~ তোর কি দোষ মানি, চার বছরে একটা কল নেই। কোনো খোঁজ নেই। কিভাবে পাড়লি এমন করতে? (আমি)
~ আরে দূর ওইসব কথা রাখ। তো বোল কি অবস্থা তোর? বেশ ভালোই আছিস মনে হচ্ছে।
~ কচু আছি। আগে বল আমার সাথে এমন করলি কেন? আমার দোষটা কী?

~ তোর কোনো দোষ নেই। আমি লাবিবের সাথে রাগ করে এমন করেছি।
~ লাবিব! লাবিব যেন কে?
~ এ কিরে, তুই লাবিব কে ভুলে গেলি? আমাকে চিনলি কিভাবে।

~ তুইও একটা হারামী। তবে তুই যাওয়ার সময় বলে গেছিলি। কিন্তু ওই হারামী তো না বলেই চলে গেছে। তারপর আর কোনো খোঁজ নেয়নি।
~ সে জন্যই তো আমি এমন করেছে। কষ্টটা আমি লাবিব কে দিতে চেয়েছি কিন্তু আনফরচুনেটলি তুই পাইছোত।

আমাদের কথার মধ্যে ইসিতা অফিসে ঢুকলো। হাসিব দেখে নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারছে না যে ইসিতা এখানে।
~ ইসিতা তুমি এখানে?
~ এক্সকিউজ মি। কে আপনি? আর এটা আমার অফিস আমি থাকবো না তো কে থাকবে।

~ তুমি আমাকে চিননা, আমি হাসিব, জাহিদের ফ্রেন্ড। ওই শান্তি পাড়ায় এক সাথে ছিলাম। (হাসিব)
~ পরিচিত হওয়ার জন্য ধন্যবাদ। তবে আমি আপনাকে আগে কখনো দেখি নি? আর শান্তি পাড়ার নাম এই প্রথম শুনলাম। আমার কাজ আছে প্লিজ যেতেদিন।

ইসিতা চলে গেলো আর হাসিব অবাক হয়ে গেলো। আমাকে ব্যাস্ত হয়ে জিজ্ঞাস করলো,
~ কিরে, ইসিতা না এইটা?
~ নামটা ঠিক আছে চেহারাটাও ঠিক তবে মনটা ঠিক নাই৷
~ তোকেও চিনে না?

আমি একটা মুঁচকি হাসি দিলাম।
~ তোর সাথে যা হয়েছিলো ঠিক আমার সাথেও তেমন হয়েছে।
~ আমার মনে হয় নাটক করছে।

~ Engaged হয়ে গেছে ৷ হাতে গনা দুই থেকে তিন সপ্তাহ পর বিয়ে হয়ে যাবে। এখন নাটক করে কিলাভ।
~ একটা কাজ কর, কিডন্যাপ করে মারার হুমকি দে। দেখবি পানির মত সোজা হয়ে যাবে। আর কত কষ্ট দিবে তোকে?

~ যাহ, এখন ওইসব নিয়ে ভাবার সময় নেই৷ বড় হয়ে গেছি তো কষ্ট সহ্য করতে পাড়ি।
হাসিবের সাথে কথার কথা বলার মাঝখানে ইসিতার ফোন।
~ উপরে আসুন আপনার সাথে কথা আছে। (ইসিতা)
~ ওকে ম্যাম আসতেছি।

~ এখনি আসেন।
~ ওকে।
ইসিতা ফোন রেখে দিলো, ইসিতা আজকে আবার কোন অঘটন ঘটায় জানি না।
~ বন্ধু তোর কোনো কাজ আছে?

~ না তো, আমি আসছি তোর সাথে দেখা করতেই।
~ ও তাহলে তো ভালোই হলো। পাঁচ মিনিট ওয়েট কর আমি উপরে যাবো আর আসবো।
~ ওকে।
আমি দৌড়ে ইসিতার রুমে গেলাম।

~ জ্বী ম্যাম।
~ কি হচ্ছে জাহিদ সাহেব এই সব?
~ কেন ম্যাম?

~ এইটা কি আপনার বাসা পেয়েছেন যে যাকে ইচ্ছা তাকেই নিয়ে আসবেন? আর এটা অফিস আড্ডা দেওয়ার জায়গা না। (ইসিতা)
~ আসলে ম্যাম চার বছর পর দেখা তো। আর আমার অনেক ক্লোজ ফ্রেন্ড। (আমি)

~ চার বছর আর একশ বছর পরে হক, তাতে আমার কি? কাজ রখে আড্ডা দেওয়া যাবে না। যান কাজ করুন।
~ ম্যাম আজকের জন্য একটু মাপ করা যায়। অনেক দিন পর বন্ধুটাকে দেখেছি।
~ টাকাটা তো একদিনের জন্যও কম নিবেন না।
কথাটা গায়ে লাগলো উঠে চলে আসতে লগলাম।

~ দাড়ান। এই ফাইলটা নিয়ে যান। কম্পিলিট করে দিয়ে যাবেন।
আমার কিছু বলার শক্তি নেই। আহরে জীবন। ক্যাম্পাস জীবনেও জ্বালিয়ে খাইছে এখন চাকরি জীবনেও।
ইসিতার হাতের রিংটা আজকে আর দেখতে পাইনি। অনেক দামি রিং হাত থেকে পরে যাওয়ার ভয়ে মনে হয় খুলে রেখেছে।

নিচে চলে আসলাম৷
~ বন্ধু একটু বস। আমি হাতের কাজটা সেরে আসতেছি। (আমি)
~ আমিও আসি তোর সাথে তোর অফিসটাও দেখতে পারবো। (হাসিব)
~ নাহ, ওইটা দজ্জাল। আবার কি থেকে কি দোষ ধরে ফেলে। তার চেয়ে ভালো তুই এখানেই থাক৷ (আমি)

~ ওকে, বো প্রবলেম। তবে তুই সারা বছর মেয়েদের ঝাড়ি খেয়েই যাবি।
আমি হাসিব কে কিছু না বলে উপরে চলে আসলাম। তাড়াতাড়ি হাতের কাজটা শেষ করা লাগবে। রাকিব কে দিয়ে নিচে পা পাঠালাম। জানি না হাসিব কি মনে করবে৷ যাক বন্ধু মানুষ৷ সব কিছু বুঝার ক্ষমতা রাখে।

পাক্কা আধা ঘন্টা পর হাতের কাজ শেষ হলো। ফাইলটা নিয়ে ইসিতার রুমে গেলাম। ~ আসি ম্যাম।
~ হুম
~ জ্বী ম্যাম, কাজ শেষ।
~ এত তাড়াতাড়ি? দাড়ান তাহলে আরেকটা কাজ দেই।

আমি আর কিছু না বলে দৌড়ে ইসিতার রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। ইসিতা আর কি বলছে জানি না। শুধু হাসার শব্দ পেয়েছি।
নিচে নেমে ইসিতাকে ফোন দিলাম।

~ ম্যাম আমি একটু বাইরে যাই।
~ তাড়াতাড়ি আসবেন।
~ আজকের জন্য আমার অফিস শেষ।

~ ওই আপনাকে কে ছুটি দিয়েছে। আধা ঘন্টা সময় দিয়েছি তার পর অফিসে আসবেন।
~ আমি আসবো না।
~ ওকে আমিও দেখে নিবো।
হাসিব কে নিয়ে বাইরে ঘুরতে আসলাম।

~ তারপর বল সুপ্তি কেমন আছে? (আমি)
~ সেটা তো তুই ভালো জানিস।
~ আরে আমার সাথে তো কারো যোগাযোগ ছিলো না।

~ তুই দেশে থেকেই সুপ্তির কোনো খবর জানিস না আর আমি বিদেশে থেকে কিভাবে জানবো৷
~ সেটাও ঠিক। তবে মেয়েটা অনেক ভদ্রছিলো। ইসিতার মত এতোটা রাক্ষস না।
~ হুম, তো লাবিব কে খুঁজে পাওয়া গেলো না।

~ নাহ, কোথায় আছে সেটাও জানা নেই।
~ কি হয়েছিলো রে ওর?
~ আমি জানি না। আমাকে কিছুই বলে নি।

~ যাক ভাগ্য ভালো হলে একদিন দেখা হবে।
~ হুম সেটাই।
হাসিবের সাথে ঘুরতে ঘুরতে এক ঘন্টা ওভার। আমি অফিসে চলে আসলাম যাতে শাস্তির পরিমানটা কিছুটা হলেও কম হয়।

অফিসে ঢুকতে না ঢুকতেই ইসিতার ফোন। ইদিতার নামটা মোবাইলে হার্মফুল দিয়ে সেভ করেছি।
~ জ্বী ম্যাম।
~ কই আপনি?
~ অফিসেই তো, কেনো ম্যাম।

~ ওই ফাজলামো করছেন আমার সাথে। এই মত্র আপনার ডেক্সের থেকে ঘুরে আসলাম। আপনি নেই।
~ বিশ্বাস না হলে এক মিনিট ওয়েট করেন আমি চলে আসতেছি আপনার রুমে।
~ ওকে আসেন।

ইসিতার রুমে গেলাম।
~ তাইলে চলে আসছেন। বসেন।
~ ঘটনা কি আজকে বসতে বলছে।

ইসিতা আমার সামনে একটা কার্ড এগিয়ে দিলো
আমি কার্ড টা হাতে নিলাম।
~ আপনার বিয়ের কার্ড মনে হচ্ছে?
~ হুম, বিয়েতে আসবেন কিন্তু।

~ সেইটা আপনার বলা লাগবে না আমি এইসব জিনিস মিস করি না।
ইসিতার রুম থেকে চলে আসলাম। কার্ডটা এক বারের জন্য পড়ে নিলাম।

ইসিতার বিয়ের কার্ড আমার হাতে আমার কষ্ট পাওয়া উচিত। কিন্তু আমি ইসিতাকে চার বছর আগেই ভুলে গেছে। কষ্ট যা পাবার তখনি পেয়ে গেছি। এখন আর নতুন করে কষ্ট পাবো কেন? আর সবচেয়ে বড় কথা হলো ইসিতা এখন আমাকে চিনতেই চায় না।

ছুটির দিন বসে বসে গল্প করছি।
~ বন্ধু চল একবার গ্রাম থেকে ঘুরে আসি৷ কতদিন হলো শান্তি পকড়ার মুখ দেখি না। (হাসিব)
~ মনে আছে তাইলে, শান্তি পাড়ার কথা?
~ কেনো থাকবে না? সেখানেই তো আমার সব।

~ হুম জানি তো সুপ্তির আশায় এখনো ঘুম হয় না।
~ চার বছর হয়ে গেছে। আর সুপ্তি এখনো সিঙ্গেল আছে? তার বাচ্ছা এখন হাটতে পারে৷
~ দূর কি বলছিস? ইসিতার এখনো বিয়ে হয়নি, মাত্র engaged হয়েছে, আর সুপ্তি তোকে ভালোবাসে সে এতো তাড়াতাড়ি বিয়ে করবো।

~ সুপ্তি আরো আগে বিয়ে করবে, কারণ বেইমানের জন্য কেউ অপেক্ষা করে না। যাক ওইসব কথা রাখ। এখন বল কবে যাবি?
~ আজ কে কত তারিখ?
~ কেনো? , সাতাশ তারিখ

~ দাড়া এই মাসের স্যালারি পেয়ে নেই, এই আগামি সাপ্তার মাঝ দিয়ে যাবো।
~ তোর যেই বস। ছুটি দিবে তো?
~ কেনো দিবে না? দরকার হলো চাকরি ছেড়ে দিয়ে গ্রামে কৃষি কাজ করবো।
~ বন্ধু সিরিয়াসলি?

~ আরে বোকা কথার কথা বললাম আর কি।
~ ওকে, তুই যেইটা ভালো বুঝছ।
~ আমাদের সাথে লাবিব হলে ভালো না? তিন জন আবার এক হতাম। আবার চুরির মিশনে নামতাম।
~ এখন কোথায় খুঁজবি তাকে?

~ সেটাই।
~ মন খারাপ করে লাভ নাই। একদিন না একদিন ঠিকি পাবো।

মাস শেষে স্যালারি হাতে পেলাম। একটা আবেদন পত্র নিয়ে ইদিতার রুমে গেলাম।
~ আসি ম্যাম।
~ হুম, । দিনের ভিতর কত আসেন আমার রুমে। মেয়ে মানুষ দেখলেই এই অবস্থা।

মনে হচ্ছে ইসিতার মনটা আজ অনেক ভালো। ছুটি পেয়ে যেতে পারি।
~ Sorry ম্যাম।
আমি আবেদন পত্রটা ইসিতার হাতে দিলাম। ইসিতা এক নজর দেখে নিলো।

~ দেখুম জাহিদ সাহেব, এই মাসে আমাদের কাজের পরিমান বেশি। আমি জানি আপনি ছুটি পাওয়ার যোগ্য। কিন্তু কি করবো, আর কয়টা দিন ওয়েট করুন।
~ প্লিজ, ম্যাম একটু দেখুন।

~ আপনাকে তো বললামই, আপনার খালি জায়গার ব্যাকআপ হিসেবে কেউকে দিতে পারছি না।
মনটা খারাপ হয়ে গেলো। হাসিব কে কি জবাব দিবো বুঝতে পারতেছি না। ইসিতার মনটা ভালো আজকে তাই জোরাজোরি করলাম না। ইসিতার রুম থেকে বেরিয়ে নিজের ডেক্সে চলে গেলাম। কিছুতেই কাজে মন দিতে পারছি না।

(ইসিতা মনে মনে বলছে, :~ আমার চোখের আড়াল হবি, এই সুযোগ তো আমি দিবো না। )
লাস্ট টাইম, ইসিতা আমার ডেক্সে আসলো। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।
~ আপনার ছুটি কতদিন লাগবে?

~ জ্বী ম্যাম সাত দিন।
~ ওরে বাবা এত দিন। (আমি এতো দিন না দেখে থাকতে পারবো না, মনে মনে বলছে)
~ জ্বী ম্যাম।
~ এখন শুধু তিন দিনের ছুটি পাবেন। না হয় কোনো ছুটি নেই।

~ আসতে যেতেই তো তিনদিন চলে যাবে, তাহলে আর ছুটি দিয়ে কি করবো।
~ তাহলে থাক। আর কি করবেন কাজ করুন।
~ ম্যাম লাস্ট একটা চাঞ্জ, পাঁচ দিন।

~, , , , তা দেওয়া যায়, তবে মনে থাকে যেনো, পাঁচ দিন।
~ থ্যাংকস ম্যাম।


পর্ব ৯

লাস্ট টাইম, ইসিতা আমার ডেক্সে আসলো। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম।
~ আপনার ছুটি কতদিন লাগবে?
~ জ্বী ম্যাম সাত দিন।

~ ওরে বাবা এত দিন। (আমি এতো দিন না দেখে থাকতে পারবো না, মনে মনে বলছে)
~ জ্বী ম্যাম।
~ এখন শুধু তিন দিনের ছুটি পাবেন। না হয় কোনো ছুটি নেই।
~ আসতে যেতেই তো তিনদিন চলে যাবে, তাহলে আর ছুটি দিয়ে কি করবো।
~ তাহলে থাক। আর কি করবেন কাজ করুন।

~ ম্যাম লাস্ট একটা চাঞ্জ, পাঁচ দিন।
~, , , , তা দেওয়া যায়, তবে মনে থাকে যেনো, পাঁচ দিন।
~ থ্যাংকস ম্যাম।
হাসিব কে ফোন দিলাম,

~ বন্ধু ছুটি মিলগেয়া।
~ সত্যি?
~ হুম, ব্যাগ পত্র গুছিয়ে নে আজকে বিকেলেই রওয়ানা দিবো।
~ ওকে, আমি রেডি।

হঠাৎ মনটা ভালো হয়ে গেলো। হাতির কাজ গুলো মনযোগ সহকারে করতে লাগলাম। কাজের প্রতি উৎসাহ বেরে গেলো।
বিকেল বেলা ব্যাগ পত্র নিয়ে বের হলাম। মাত্র পাঁচ দিনের ছুটি তাই বাশি কিছু নিলাম না। লঞ্চ ধরতে হবে।
আমি আর হাসিব একটা কেভিন বুক করলাম। কাল সকাল বেলা গিয়ে পৌছাবো আমার গ্রামে৷ লঞ্চ যাত্রা শুরু করলো।

আমি চিন্তা করতে লাগলাম যদি লঞ্চ থেকে নেমে যদি লাবিবের সাথে দেখা হয় তাহলে কত না সুন্দর হত। আমাদের তিন জনের উদ্দেশ্য একটাই থাকবে যে মাতৃভূমিত প্রতি টান৷ পুরনো স্মৃতি গুলোর ডাকে সারা দিয়ে চলে আসা। হঠাৎ আমাদের সাথে দেখা হয়ে যাবে। লাবিব আমাদের দেখে পলাতে চাইবে, তারপর? তারপর মোবাইলের রিংটন বেজে উঠলো। স্কিনে তাকিয়ে দেখি হার্মফুল। টেনশনে পরে গেলাম এইটা আবার কে?

ওও কল্পনায় থাকার কারণে আমি যে ইসিতার নাম হার্মফুল দিয়ে সেভ করেছি ভুলেই গেছি।
~ হেল্লোও,
~ কি খবর জাহিদ সাহেব? চলেগেছেন?

~ জ্বী ম্যাম লঞ্চে।
~ ও, একটু ইনভাইট করলেন না, আপনার সাথে যাওয়ার। একটু দেখার ইচ্ছে ছিলো আপনাদের শান্তি পাড়া কেমন?
~ sorry, ম্যাম ভুলে গেছি।

~ ওকে নো প্রবলেম। আর কত দিনের ছুটি?
~ পাঁচ দিন।
~ মনে থাকবে তো, ৷ একটু দেরী হলে কিন্তু অফিসে জায়গা পাবেন না।
~ ওকে ম্যাম।

ইসিতা ফোনটা রেখে দিলো।
আমি মনে মনে বললাম, ছয় মাস শান্তি পাড়ায় থেকেও নাটক কিরছো। আবার বলছো আমাকে চিনো না। পাষান একটা।
~ কিরে কার সাথে কথা বলছিলি? (হাসিব)
~ আর কার সাথে, পাষাণ ফোন দিছিলো।

~ তোকে এতো মনে পরে কেন?
~ জানি না আবার কোন নাটক করে। তার তো আবার মেঘা সিরিয়াল এর অভাব নেই।
~ সারা জীবন মেয়েদের লাত্থি ঘুতা খেয়েই যাবি।
~ তার মানি তুই কি বুঝাতে চাস? ইসিতাদের গাছ থেকে কত ডাব চুরি করে খাইছোত, সেটার জন্য যদি ধরে তুই কুল খুইজা পাবি? ইসিতার বাবা পুলিশ।

~ চুরি কি আমি একলা করছি? তুইও তো ছিলি। আর আমি পুলিশ কে ভয় পাইনা।
~ বাব্বাহ, ভুতের মুখে রাম রাম।
~ তুই কি আমার সাথে জগরা করবি?

~ ভাই অনেক দিন পর গ্রামে আসছি কোনো অঘটন ঘটাবি না বলে দিলাম। একে তো আমরা তিন জন হারামী নামে বহুল প্রচলিত ছিলাম গ্রামে।
~ দূর তোর তোরসাথে কথা বলার ইমেজ টাই নষ্ট হয়ে গেছে৷
~ আচ্ছাsorry, .

মোবাইলের রিংটন টা আবার বেজে উঠলো। হার্মফুল? আবার কি?
~ জ্বী ম্যাম।
~ কি করছেন এখন।
~ হিসু করে মাত্র ওয়াশ রুম থেকে বের হয়েছি।

~ ছিঃ আপনি এমন কেন? সিনিয়রদের সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় সেটাও জানেন না?
~ হেল্লোও এইটা আপনার আফিস না। এইটা লন্সের ওয়াস রুম। আর আমি আপনার থেকে দুই বছরের বড়। একটা কথা, এখানে এতো দুর্গন্ধ ম্যাম বলে বুঝাতে পারবো না।
~ দূর আপনার সাথে কথাই বলবো না।

~ যান আপনার হবুর সাথে কথা বলুন।
~ সেটা আপনার বলা লাগবে না। আসুন অফিসে তারপর দেখাবো মজা?
ইসিতা ফোনটা কেটে দিলো। আমি আর হাসিব হাসতে লাগলাম। শরীরে মস্ত বড় ভাব এসে পারেছে।
~ তুই না, কোনোদিন মানুষ হবি না। (হাসিব)

সকাল হয়ে গেলো টার্মিনাল এর হৈচৈ তে ঘুম ভেঙ্গে গেলো। লঞ্চ থেকে নামতেই চোখে পরলো মস্ত বড় সুর্যটা, আর সুজলা সুফলা গাছ গাছালিতে ঘেরা সোনার গ্রামটা। আমি এক মাস পর গ্রামে আসছি তাই আমার কাছে সকল কিছু আগের মতই। হাসিব চর বছর পর আসছে তাই সে যা দেখে তাই নতুন লাগে।
~ ওয়াও অনেক সুন্দর হয়েগেছে! (হাসিব)

~ দেখতে হবে না গ্রামটা কার?
~ তোর একা আমার নাই মনে হয়।
~ তুই এখন রোহিংগা। ঘর বাড়ি কিছুই নেই এখানে।
~ দিলি তো সকাল সকাল মেজাজটা খারাপ করে।

~ সত্যি কথা সবসময় গায়ে লাগে।
~ ওই তুই থামবি?
~ ওকে, এখন হাটা শুরু কর।

বাসা বেশি দূরে নয়। পথে লাবিবদের পুরোনো বাসাটার পরই আমাদের বাসা।
লাবিবের বাসাটা ক্রমশ ভভয়ংকর হয়ে উঠেছে। দায়েলের আবরন খসে পরে আস্ত ইট দেখা যাচ্ছে। ছাদের উপর নানা প্রজাতির গাছের জন্ম নিয়েছে। সেগুলো ক্রমাগত বড় হতে লাগলো। সামনের লোহার গেইট এখন আর নেই কে নিয়ে গেছে জানি না।
~ চল ভিতরে যাই! (হাসিব)

~ কি আছে এর ভিতর, বাইরে থেকেই তো সব দেখা যাচ্ছে।
~ আরে চল।
ভিতরে গেলাম। মনের ভিতর ভয় কাজ করছে এই বুঝি পুরো বিল্ডিংটা মাথার উপর ভেঙে পরবে।
~ সাবধানে, সাপ থাকতে পারে।
~ আয় ছাদে যাই। (হাসিব)

~ সিঁড়ি তো ভাঙা। কিভাবে?
~ আরে চলতো।
ভয়ে ভয়ে ছাদে গেলাম। দেয়ালে খোদাই করা আমদের তিন জনের নাম এখনো স্পষ্ট।

আমরা কিছুটা নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। চার পাশের এলাকাটা বেশ সুন্দর দেখা যাচ্ছে।
~ হাসিব এবার চল৷ বাসায় যাওয়া লাগবে।
~ ওকে চল।

বাসায় চলে আসলাম। বাবা তো হাসিব কে দেখে পুরোই অবাক। কত দিন পর দেখছে। নানা ধরনের আলাপ শুরু হয়ে গেলো।
বিকেল বেলা হাসিব কে নিয়ে ঘুরতে বের হলাম নদীর পারে।

নদীর পারে আগে শুধু সুপারি গাছ ছিলো। এখন সেগুলো কেটে পার্ক করা হয়েছে। আগে পর্যটক ছিলাম শুধু আমরা আর এখন শত শত। । আমি আর হাসিব বসে আছি একটা নিরিবিলি স্থানে৷
~ আরে জাহিদ সাহেব? (সুপ্তি)
(হাসিব কে দেখলেও এখনো চিনতে পারেনি)

~ আরে মেডাম জ্বী, কি খবর তোর? (আমি)
~ ভা, , , লো,
চোখ পরলো হাসিবের দিকে। কিছুক্ষন তাকিয়ে রইলো। যার জন্য কত চোখের পানি ঝড়েছে, সে আজ চোখের সামনে।
~ কিরে কি দেখিস এমন করে? (আমি)

~ কে সে? (সুপ্তি)
~ এক জন রোহিঙ্গা। তোর চিনা লাগবে না। (আমি)

হাসিব কোনো কথা বলছে না। কি করবে সেতো জানে সুপ্তি তাকে পছন্দ করে। ভয়ে কথা বলতে পারছে না।
ইসিতা ফোন করেছে।
~ তোরা কথা বল আমি একটু আসছি।

একটু দূরে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করালাম।
~ কালকে রাতে এমন করলেন কেন? (ইসিতা)
~ কি করেছি?

~ ওই যে, হিসু করে ওয়াস রুম থেকে বের হয়েছেন, সেটা আমাকে বললেন কেন?
~ আপনি জিজ্ঞাস করলেন কি করি। আর আপনার সাথে তো মিথ্যা বলা যায় না।
~ এখন, এখন আছি নদীর পার। যেখানে অবিকল আপনার মত একজন মানুষের সাথে প্রথম দেখা হয়েছে।
~ ও রেলি? মেয়ে আছে সেখানে?

~ হুম, প্রাই 70%~ ই মেয়ে।
~ ওকে দেখেন, আপনার তো আবার চরিত্র ভালো না৷ মেয়ে মানুষ দেখলে আপনার কাপুড় ঠিক থাকে না।
~ ওই ওই কিবল্লেন।

টুট টুট, ইসিতা ফোন কেটে দিলো৷ আমি মুখে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছি। কি বললো এই মেয়ে? কালকে রাতের প্রতিশোধ নিলো। দাড়া আমার সাথে নাটক আবার আমার সাথে পিতলা আলাপ?
দূর থেকে বুঝা যাচ্ছে হাসিব আর সুপ্তি বেশ হাসি খুশে ভাবেই কথা বলছে।

বাহ পটিয়ে ফেলেছে।
আমি ফিরে গেলাম।

~ বাহ চার দিকে রোমান্টিক ওয়েদার। তার মাঝে আমি এক নিরব দর্শক। (আমি)
আমি দুই জনের মাঝে গিয়ে বসলাম।
~ ওই তো মাঝখানে বসলি কেন? (হাসিব)

~ কেন কি হইছে। নাহলে তোরা আরো ক্লোজ হয়ে বস।
~ তোর মত আমার বাজে স্বভাব নেই। সারা বছর মেয়েদের লাত্থি উষ্ঠা খায়ে যাবি।
~ আচ্ছা লাবিব কে দিখছি না তোদের সাথে কি আসেনি? (সুপ্তি)
আমি আর হাসিব কিছুক্ষন নিরব থাকলাম।

~ লাবিব এখান থেকে যাওয়ার পর আর কোনো খোঁজ পাইনি। (আমি)
~ যে খানে গেছে সুখেই আছে৷ (হাদিব)
~ কি হয়েছিলো ওর? (সুপ্তি)

~ জানি না। আমাদেরকে বলেও যায় নি। জানি না আর দেখা হবে কিনা।
সুপ্তি, আমি, হাসিব, আর লাবিব আমরা সবাই ক্লাস মেট।

~ কিরে সুপ্তি হাসিবের উপর তোর কোনো অভিমান নেই। (আমি)
~ নাহ, অভিমান রেখেই বা কি করবো? কষ্ট অনেক পেয়েছি আর কত?
~ Sorry, আমার কিছু করার ছিলো না। তবে তোর হাতের রিংটা অনেক সুন্দর। আমি থাকলে হয়তো এমন কোনো রিং তোর ভাগ্যে থাকতো না। (হাসিব)

~ তার মানে তোরও Engaged হয়ে গেছে? (আমি)
~ হুম, এক সাপ্তাহ ও হয় নি। (সুপ্তি)
~ বাহ, দাড়ুন। ওই দিকে ইসিতারও একি অবস্থা।
~ ইসিতার সাথে দেখা হয়েছে তোর?

~ শুধু দেখা না৷ আমি তার আন্ডারে কাজ করি৷ আমার সিনিয়র৷ আর আমাকে পরিচয় দেয় না।
~ আহরে ভাইটা আমার বড় দুঃখ আছে।
আমি জানি হাসিবের মনটা খুব খারাপ। নিজের পছন্দের মানুষটার হাতে রিং। ইহা অতি হৃদয় বিদারক, অনেক কষ্টের৷।

সেদিনের মত বিদায় নিয়ে চলে আসলাম। হাসিব কিছুটা চুপ চাপ।

সকাল বেলা মোবাইলের রিংটনে ঘুম ভাঙলো,
~ কি জাহিদ সাহেব, কয়টা বাজছে এখনো অফিস আসেন না কেন? (ইসিতা)
~ আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন ম্যাম? নিজের হাতেই তো ছুটি দিলেন আমাকে।

~ ও, , আসলে কাজের অনেক চাপতো কি থেকে কি করে ফেলি বুঝতে পাড়ি না।
~ দূর দিলেন তো ঘুমের বারোটা বাজিয়ে।
~ sorry, ডিস্ট্রাব করে ফেলেছি।
~ রাখেন তো।

(দাড়া দিনের 10 টা পর্যন্ত ঘুমাছ একবার হাতের কাছে আয় দেখবি মজা)


পর্ব ১০

সকাল বেলা মোবাইলের রিংটনে ঘুম ভাঙলো,
~ কি জাহিদ সাহেব, কয়টা বাজছে এখনো অফিস আসেন না কেন? (ইসিতা)
~ আপনি কি পাগল হয়ে গেছেন ম্যাম? নিজের হাতেই তো ছুটি দিলেন আমাকে।

~ ও, , আসলে কাজের অনেক চাপতো কি থেকে কি করে ফেলি বুঝতে পাড়ি না।
~ দূর দিলেন তো ঘুমের বারোটা বাজিয়ে।
~ sorry, ডিস্ট্রাব করে ফেলেছি।
~ রাখেন তো।

(দাড়া দিনের 10 টা পর্যন্ত ঘুমাছ একবার হাতের কাছে আয় দেখবি মজা)
অফিসের বাইরে তারপরও শান্তি নেই।
ছাদে গিয়ে শরীরটা ঝাজিয়ে নিতে হবে। হাসিবের মন খারাপ একা ছাদে বসে আছে।
~ কিরে তুই এমন হয়ে আছিস কেন? (আমি)

~ আমি আবার কি করলাম?
~ একা একা কার কথা ভাবছিস?
~ কারো কথা ভাবার সময় আছে আমার?
~ সবি বুঝি, কত আশা নিয়ে গ্রামে আসছি সুপ্তির সাথে দেখা হবে, এক সাথে ঘুরবো ফিরবো, আরো কত কি? কিন্তু সব শেষ। she already Engage.
~ দূর বেটা ওই সব কিছু না।

~ আরে মন খারাপ করিস না, যা হবার তাই হয়েছে। তুই তো চার বছর আগেই সুপ্তিকে ভুলে গিয়েছিস। ওইটাই বহাল রাখ।
~ Thanks for your good advice.

~ আমি কিন্তু মটেও ফাজলামো করছি না। ইসিটা ও তো Engaged, দেখ আমার কোনো রিয়েকশন আছে?
~ কিন্তু আমার ব্যাপারটা অন্য রকম হতে পারতো। আর একটা কথা আমি কিন্তু আর দেশের বাইরে যাবো না।
~ কি করবি?
~ দেখি কি করা যায়। একটা কিছুতো করা লাগবে।

~ আমার সাথে জব নিয়ে নে?
~ তোর সাথে, কোটা খালি আছে?
~ আমাদের এখানে নেই তবে তিনটায় থাকতে পারে। এইটার চারটা শাখা। তাহলে আমি ইসিতার সাথে আলাপ করবো।

~ তোর যেই ম্যাম, মানবে তো?
~ দেখি বলে। মানলে তো ভালোই। আর আমি নিচে যাই, কিছু লাগলে ফোন করিস।
ইসিতাকে ফোন দিলাম।
~ হঠাৎ কি মনে করে ফোন দিলেন? (ইসিতা)
~ একটা কথা ছিলো ম্যাম।

~ জাহিদ সাহেব, আপনি কাজের বাইরে আর আমি ভিতরে সো আমি কাজ রেখে আপনার কথা শুনতে পারবো না। যা বলার অফিসে এসে বলবেন?
~ বুঝলাম না এমন করছেন কেন ম্যাম?

~ সকালে কি বলছিলেন মনে আছে? আমি নাকি ফোন দিয়ে ডিসট্রাব করি। তাই আমি ভাবছি আপনাকে আর ফোন দিবো না। আপনার ছুটি শেষ না হয়া পর্যন্ত আপনার সাথে কথাও বলবো না।
~ কথাটা অতি জরুরী?

~ sorry, ফোন রাখতে হবে। আর আমাকে কখনো দিবেন না। কাজের ডিস্ট্রাব হয়। ইসিতা ফোন রেখে দিলো।
আমার মনে হয় ইসিতার মাথার তার ছিড়ে গেছে। পাবনায় নেওয়া লাগবে। তা নাহলে এমন করে কারো সাথে কথা বলে নাকি?

হাসিব এর ব্যাপারে কোনো কথা বলতে পারলাম না। ইসিতা সিরিয়াস বিষয় নিয়েও মজা করে। নিজের ইচ্ছাতে ফোন দিয়েছি তাই ভাব বেরে গেছে।

হাসিবের মনটা অনেক খারাপ। সুপ্তিকে অনেক অনেক পছন্দ করে। কিন্তু কি আর করার? সুপ্তির বিয়ে হয়ে যাবে অন্য একজনের সাথে।
রুমে বসে আছি।
~ বন্ধু আমার যেতে হবে? (হাসিব)
~ বুঝলাম না?

~ আরে বাবা ফোন করেছে। কালকে চলে যেতে হবে?
~ মানি কি, আমি একা কি করবো?
~ একা কই তোর সাথে তোর গ্রাম আছে।
~ হাসিব ফাজলামি কম কর। আমি আজকেই সুপ্তিকে বলবো বিয়ে ভেঙ্গে তোর কাছে চলে আসতে। আমি জানি তুই সুপ্তির জন্য এমন করছিস।

~ আরে নাহ বেটা, সুপ্তি কে তো চার বছর আগেই ভুলে গেয়েছি।
~ তাহলে এখানে থকতে সমস্যাকি?
~ আমার কোনো প্রবলেন নেই, বাবার কি যেন দরকারী কাজ আছে তাই যেতে বলছে। ।
হাসিব ব্যাগ গোছাতে ব্যাস্ত হয়ে গেলো।

~ কালকে সকালে চলে যাবো। আর তুই ঢাকা গেলে ফোন দিস, দেখা করবো। (হাসিব)
আমি আর কিছু বললাম না। এখন আমার মনটা খারাপ হয়ে গেলো। এক সাথে গ্রামে আসছি ঘুরবো ফিরবো। আর এখন হাসিব চলে যাচ্ছে। হারামী তো তাই। সব সময় নিজের স্বার্থটাই বুঝে।

ও সময়ে মোবাইলটা বেজে উঠলো। ইসিতা ছাড়া আর কেউ হতে পারে না।
~ হেল্লোও, (আমি)
~ লাস্ট তিনটা প্রজেক্টের ফাইল গুলো কি আপনার কাছে?

~ সে গুলোতো আপনার কাছে। আসার সময়ও আপনার ডেক্সের উপর দেখেছি।
~ ও ঠিক আছে, আসলে কাজের চাপে মাথাটা খারাপ হয়ে গেছে।

~ আমার মনে হয় আপনাকে জরুরী ডাক্তারের সাক্ষাৎ এর প্রয়োজন।
~ ইনসাল্ট করলেন?
~ হুম, ধরতে পারেন।

ইসিতা মনে মনে বলছে : কি জন্য এমন করছি সেটাতো আর আপনি বুঝবেন না। আগের মতই স্বার্থপর রয়ে গেলেন। আজ দুইদিন দেখা নাই।
~ হেল্লোও, কথা নেই কেনো? (আমি)

~ ওকে, রাখছি আর আপনাকে ফোন করে বিরক্ত করবো না।
~ সকাল বেলাও তো এমন কথা বলছেন? কই এখন তো আবার ফোন দিলেন।
~ দেখুন আমি অফিসের কাজে ফোন করেছি। আর আপনাকে বার বার ফোন করি বলে ভাববেন না যে আমি আপনার প্রতি দুর্বল। আর দুই সপ্তাহ পর আমার বিয়ে। এবং এই বিয়ে সম্পুর্ন আমার মতের ভিত্তিতে হবে।
~ বেস্ট অফ লাক।

ইসিতা ফোন কেটে দিলো। আজুইড়া বক বক শুনার টাইম নাই। নাটক অনেক দেখছি আর না।
সকাল বেলা হাসিব কে এগিয়ে দিয়ে আসার পথে সুপ্তির সাগে দেখা।
~ কিরে এই সকাল সকাল কোথা থেকে আসলি? (সুপ্তি)

~ হাসিব বাসায় চলে যাবে? তাই এগিয়ে দিয়ে আসলাম।
~ হাসিব চলে গেছে মানি?
~ চলে গেছে মানি নিজের গ্রামে গেছে।
ইসিতা রাগ নিয়ে কিছুক্ষন চুপ করে থাকলো।
~ ওর নাম্বারটা দেতো৷

~ কি করবি?
~ প্রেম করবো। (রাগ নিয়ে)
আমি আর দেরি না করে, নাম্বার দিয়ে দিলাম।
~ শুন একটু ভালো করে বকিস৷ হারামজাদা অনেক ফাজিল হয়ে গেছে? (আমি)
আমি চলে আসলাম বাসায়। এখন ঘরটা ফাঁকা ফাঁকা মনে হচ্ছে।

সুপ্তি হাসিব কে ফোন করলো।
~ হেল্লোও, (হাসিব)
~ এতো খারাপ কেনরে তুই? (সুপ্তি)
~ আমি আবার কি করলাম। আর কে আপনি এভাবে কথা বলছেন কেনো?

~ আমি তোর জম। কতো সুন্দর করে প্লানটা সাজিয়েছি। দিলি তো সব চুরমার করে।
~ ও, সুপ্তি?
~ ও সুপ্তি (মুখটা ভেঙ্গিয়ে)।
~ দেখ আমি যা করেছি তোর আর আমার ভালোর জন্যই করেছি? ।

~ আমার জন্য কোন দিক দিয়ে ভালো হয়েছে? ইতিহাসে আমি এক মাত্র মেয়ে যে নিজের বিয়ে নিজেই ভেঙ্গে দিতে চাচ্ছি। আর তুই এর মাঝে চলে গেলি। তুই সালা সত্যি হারামী।
~ দূর কি বলিস এগুলো? আমার জন্য বিয়ে ভাঙবি কেন?
~ তাহলে চারটা বছর তোকে মনে রাখছি কেন? নিজের স্বার্থটাই বড় করে দেখলি?

~ আমি ভাবছি তোর Engaged হয়ে গেছে, তাই আর মায়ায় জড়িয়ে লাভ কি?
~ যা এবার ভিজেবিড়াল এর মত বিয়েতে দাওয়াত খেতে আছিস।
~ আচ্ছা sorry রে আর হবে না।

~ এখন আর লাভ নাই। দূরে গিয়ে মর।
সুপ্তি ফোনটা রেখে দিলো। এবার হাসিব তার ভুল বুঝতে পেড়েছে।

দেখতে দেখতে ছুটি শেষ। কর্ম স্থানে চলে আসছি। ইসিতার করা শাসন। এক মিনিটও লেট হলে শাস্তি পেতে হবে৷ তাই চলে আসছি।
সকাল না হতেই ইসিতার ফোন,
~ কি অফিসে আসবেন কখন? (সুপ্তি)

~ আজকে মনে হয় আসতে পারবো না। জার্নি করে এসেছিতো তাই ক্লান্ত।
~ খুন করে ফেলবো৷ দশ মিনিটের ভিতর অফিসে আসবেন।
~ কেনো ম্যাম অফিসের সময় তো অনেক দেরী৷
~ কাজের অনেক চাপ, তাই তাড়াতাড়ি আসতে হবে।

আমি আর দেরি করিনি। অনেকদিন অফিসে যাইনি তাই মনে হয় কাজের চাপ বেরে গেছে।
ইসিতার কথা মত সঠিক সময়ে অফিসে চলে আসলাম।
একি, অফিস পুরো ফাকা। মাত্র খুলছে। ইসিতা আমার সাথে ফাজলামো করছে। আবারো বোকা বানালো।

বাকি সময়টা বসে বসে পার করতে হবে। এতো সুন্দর ঘুমটার বারোটা ভাজালো। । পুরো অফিস টাকে ঘুরে ঘুরে দেখলাম। কিছু সময় নিচ তলায় পত্রিকা পরলাম। সময় পার হয়না, হঠাৎ মনে পরলো সকাল বেলা নাস্তা করে আসি নি৷ তাই তো পেটের ভিতর মচর দিয়ে উঠে। সময় এর দিকে না তাকিয়ে নাস্তা করতে চলে গেলাম।
ফিরতে একটু লেট হলো।

~ মেডাম ডাকছে। (রাকিব)
শিট, সময় অনেক হয়েগেছে। দূর এতো কষ্ট করে সকাল বেলা উঠে এসে কি লাভ হলো? সেইতো অপরাধী হয়ে গেলাম।
ইসিতার রুমে চলে গেলাম। দু চোখে আগুন জ্বলছে।
~ আ, আসি ম্যাম? (আমি)

~ আসুন নবাব আসুন। আপনার জন্যই তো অপেক্ষা করছি৷
~ ধন্যবাদ ম্যাম।
~ কি মনে করেন নিজেকে অফিসের হিরো? যা মনে চায় তাই করবেন? টাইম সেন্স নেই?
~ sorry, আর হবে না।
(জানি ইসিতা কে বললেও বিশ্বাস করবে না, তাই আর বৃথা চেষ্টা করিনি। )
আমার হাতে এক গাদা ফাইল তুলে দিলো,

~ তিন দিনের ভিতর কম্পিলিট করে দিবেন। {ইসিতা)
আমি একবার ফাইল গুলোর দিকে তাকালাম। সাত দিনেও শেষ করা যাবে না।
~ ম্যাম এতো অসম্ভব।

~ আমি জানি না। আপনাকে করতে বলেছি করবেন?
আমি আর কিছু না বলে চলে আসলাম৷
(ইসিতা মনে মনে বলছে : কেমন লাগে এবার হুম? এতোদিনে আমি ফোন করেছি বলে ভাব নিয়েছিস। এবার দেখ মজা!)

নিজের ডেক্সে চলে আসলাম। ও একটা কথা হাসিবের ব্যাপার নিয়ে কথা বলতে ভুলে গেছি। আবার চলে গেলাম ইসিতার রুমে।
~ আবার কি? (ইসিতা)
~ একটা কথা ছিলো ম্যাম।

~ তো দাঁড়িয়ে আছেন কেন? তাড়াতাড়ি বলে বিদায় হন।
~ ম্যাম আপনাদের এখানে কোনো পোস্ট খালি আছে?
~ কেনো হঠাৎ এই কথা কেনো?

~ না মানে দরকার ছিলো।
~ আগে বলেন কেনো?
~ ম্যাম আমার বন্ধু হাসিব আছে না ও তো সিংগাপুর থেকে একে বারেই চলে আসছে তাই চাকরি খুঁজছে। তাই আমাদের এখানে সিপ্ট হয়ে গেলে ভালো হতো৷

ইসিতা কিছুক্ষন চুপ করে রইলো।
~ এক তো ভুল করেছে আপনাকে জায়গা দিয়ে৷ এখন বলছেন আবার দ্বিতীয় ভুল করতে৷ আপনাদের সবকটাকে জানা আছে৷ সো নিজের কাজ নিজে করুন।
~ আসলে ম্যাম হাসিব ওরকম ছেলে না।

~ প্লিজ আমাকে চিনাতে আসবেন না আমি ভদ্রতা চিনি।
ইসিতা মুখ দিয়ে যেইটা বের করে সেটাতেই বহাল থাকে। তাই আর জোর দিলাম না। হাসিব কে এ কথা বলা যাবে না। বলতে হবে অফিসের কাজ বেশি তোর ব্যাপারে পরে আলাপ করবো৷
কষ্ট হচ্ছে কাজেও মন বসে না। এতো গুলো কাজ তিন দিনে করা অসম্ভব। তাই আর কাজের দিকে মনোযোগী হওয়া যায় না।

শেষ সময়ে ইসিতা আমার ডেক্সে এলো।
~ আপনার বন্ধুর কাগজ পত্র আছে আপনার কাছে? (ইসিতা)
~ আমার কাছে নেই, তবে ও কালকের ভিতর নিয়া আসবে।
~ ওকে, নিয়ে আসতে বলবেন। আর বলবেন আমার সাথে অতি শীগ্রই দেখা করতে।

~ অনেক অনেক ধন্যবাদ ম্যাম।
~ এতোটা এক্সাইটেড হওয়ার কিছু নেই। আপনার বন্ধু দেখে সেক্রিপাইস করলাম। কাজে অনিয়ম করলে দুজন কেই বের করে দিবো

ইসিতা চলে গেলো। আমি হাসিব কে ফোন দিলাম,
~ বন্ধু তোর তো জব কনফার্ম।
~ সত্যি?
~ হুম। কালকের ভিতর কাগজ পত্র জমা দিতে হবে?
~ কালকের ভিতর?

~ হুম, কোনো সমস্যা?
~ নাহ, কাল কের ভিতর~ ই চলে আসছি।
~ ওকে, এবার সুপ্তিকে গান শুনাবি, ” চাকরিটা আমি পেয়ে গেছি বেলা শুনছো৷ “
যাক এবার মন দিয়ে কাজ করা যায়।

ওফিসে বসে কাজ করছে? আজকে হাসিব আসবে কাগজ পত্র নিয়ে।
ফোনটা বেজে উঠলো৷
~ কিরে এতো দেরি কেন তোর? (আমি)

~ বন্ধু, আমি আমি,
~ আমি কি বল?
~ লাবিব কে দেখেছি?
~ কাকে দেখছিস?

~ লাবিব কে, সদর ঘাটে। হাতে একটা দান বক্স৷ আমার কাছে আসছিলো আমি মোবাইলে কথা বলছিলাম খেয়ায়াল করিনি। যখন খেয়াল হলো তখন অনেক দূর চলে গেছে। অনেক খুঁজছি আর পাইনি।
~ তুই সেখানেই দাড়া আমি আসছি।
~ ওকে,

গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় ইসিতার সাথে ধাক্কা খেলাম। এখন এত কিছু দেখার সময় নেই৷ আমি আমার মত চলতে লাগগলাম।
ইসিতা অনেক বার ডাকলো, ” জাহিদ, এই জাহিদ”।


অন্তিম পর্ব

ওফিসে বসে কাজ করছে? আজকে হাসিব আসবে কাগজ পত্র নিয়ে।
ফোনটা বেজে উঠলো৷
~ কিরে এতো দেরি কেন তোর? (আমি)
~ বন্ধু, আমি আমি,
~ আমি কি বল?

~ লাবিব কে দেখেছি?
~ কাকে দেখছিস?
~ লাবিব কে, সদর ঘাটে। হাতে একটা দান বক্স৷ আমার কাছে আসছিলো আমি মোবাইলে কথা বলছিলাম খেয়ায়াল করিনি। যখন খেয়াল হলো তখন অনেক দূর চলে গেছে। অনেক খুঁজছি আর পাইনি।
~ তুই সেখানেই দাড়া আমি আসছি।

~ ওকে,
গেট দিয়ে বের হওয়ার সময় ইসিতার সাথে ধাক্কা খেলাম। এখন এত কিছু দেখার সময় নেই৷ আমি আমার মত চলতে লাগলাম।
ইসিতা অনেক বার ডাকলো, ” জাহিদ, এই জাহিদ”।

পাঁচটা বছর পর লাবিব কে দেখা গেলো। যদিও আমি এখনো দেখিনি। একটা সিএনজি নিয়ে চলে গেলাম। লাবিব কে খুঁজে বের করতেই হবে।
হাসিব কে ফোন দিলাম,

~ কিরে কই তুই? আর লাবিব কোথায়? (আমি)
~ তুই কই?
~ আমি তো ভিতিরে।
~ বের হো। তিন নাম্বার গলির পুর্ব পাশ দিয়ে আয়। আমি লাবিবের পিছু নিয়েছি।
~ ওকে আসতেছি৷

হাসিবের কথা মত তিন নাম্বার গলিতে গেলাম।
লাবিব আমার সামনেই। আমাকে এখনো দেখতে পায়নি।
মনটা শান্ত হয়ে গেলো।

এটা লাবিব আমার পুরনো বন্ধু, আমার কলিজার একটা অংশ। সামনে অগ্রসর হচ্ছি লাবিবও। লাবিবের চোখ পরলো আমার দিকে। দমকে দাড়ালো লাবিব। পিছনে হাসিবও প্রস্তুত। আমি দাঁড়িয়ে গেলাম রাস্তার মাঝখানে। লাবিব আমার কাছে আসতে লাগলো। হাসিব পিছন থেকে লাবিবের পাশে দাড়ালো। এবার লাবিব আরও অবাক হয়ে গেলো।

~ তোরা? (লাবিব)
~ আমরা কারা? (হাসিব)
হাসিব দুইটা বসিয়ে দিলো লাবিবের গালে।

~ হারামী, ইতর, বদমাইশ, আজকে তোর শেষ। (হাসিব)
~ মার সালারে, হারামী একটা। পাষাণ। (আমি)
লাবিব গালে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। সে হইতো ভাবেনি আমাদের সাথে এভাবে দেখা হয়ে যাবে৷

~ পাঁচটা বছর! কিভাবে লাবিব এমন ভুলে রইলি? একবার মনে করার প্রয়োজন মনে করলি না? (আমি)
~ আসলে কিছু সিচুয়েশনে এমনটাই হয়? (লাবিব)
~ সিচুয়েশন? তোর আবার কি হইছে? (হাসিব)

~ সে অনেক লম্বা ঘটনা! চল এক জায়গায় বসে আড্ডা দেই,
~ ওকে, চল।
একটা খোলা মেলা চায়ের দোকানে গিয়ে বসছি।

~ মামা এক কাপ চা তিন ভাগে ভাগ করে দেনতো। (হাসিব)
~ ওই বেটা আমার ডায়ালগ কপি করস কেন? (আমি)
~ এবার দেখ কেমন লাগে! (হাসিব)

~ দূর বাদ দে, লাবিব তোর দান বক্সটা তো খুব সুন্দর। দেখি তো কি লেখা আছে, ” উপহার দিবো একটি হাসি। ” (আমি)
~ তুই বা কেন এই দান বক্স নিয়ে ঘুরিস? (হাসিব)
~ বললাম না অনেক লম্বা কাহিনী।

চা এসে পরলো সবার সামনে।
হাসিব চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,
~ তাহলে বল শুনি তোর লম্বা কাহিনী৷

লাবিব প্রথমে একটা মুচকি হাসি দিলো। যার অর্থ আমাদের অজানা।
লাবি শুরু করলো,

~ গ্রামে থাকতেই বাবা খুব অসুস্থ ছিলো। বিশেষ করে চাকরি থেকে অবসর নেওয়ার পর অসুস্থতার তীব্রতা বেরে গেলো। একবার বড় মামা বাবা কে নিয়ে আসলো ঢাকা বড় ডাক্তার দেখানোর জন্য। আমি ফোন করেছি মামা কি হয়েছে বাবার? মামার মুখে কঠিন একটা শব্দ শুনেছি, ” ক্যান্সার “। ভয়ে হৃদয়টা কেপে উঠলো।

জানি না কতক্ষণ কেঁদেছি সেদিন। পপরবর্তী সপ্তাহে গ্রাম ছেড়ে শহরে চলে আসলাম। তোদের কে আর বললাম না। কারণ তখন আমি কে? সেটাই ভুলে গেছি।

অনেক টাকার প্রয়োজন ছিলো। বাবার পেনসনের টাকাও আস্তে আস্তে শেষ হয়ে গেলো। অনেক দিন ধরে চিকিৎসা বন্ধ ছিলো টাকার অভাবে। কারো কাছে হাত পাততে পারি নি। অতটা গরিব ছিলাম না। তখন বুঝলাম পৃথিবীতে আমার মত অসহায় আর কেউই নেই।

অনেক দিন কেটে গেলো, আমি বেকুল হয়ে কয়েকটা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে আবেদন করলাম। সেখান থেকে কিছু লড়াই করার মত পুঁজি আসছিলো। কিন্তু তখন অনেক দেরী হয়ে যায়। আমি অনেক চোখের পানি ফেলেছি।

আমার কেনো যেন মনে হলো এই পৃথিবীতে আমি একা না, আমার মত অনেকেই আছে যার মা, ভাই, ও বোন এই রোগে আক্রান্ত। তারা কত অসহায় তা আমি হারে হারে বুঝছি। আমার এই দান বক্স তাদের জন্য। আমি একা না আরো গোটা দশেক আছে আমার সাথে। আমাদের মূল উদ্যেশ্য একটা হাসি উপহার দেওয়া। যেইটার জন্য তোদের কে ভুলে থাকতে হলো। (লাবিব)

হাতে চায়ের কাপ কারো খেয়াল নেই। শরবতে পরনত হয়েছে। আমাদের মন শক্ত তাই আর কাঁদি নি লাবিবের কথা শুনে। যে ছেলাটার প্রধান পেশা ছিলো সারাক্ষন মানুষ কে বাঁশ দেওয়া৷ সে আজ মানবতার জন্য কাজ করে।
~ তোর বাবা ক্যান্সারে আক্রান্ত ছিলো তখন তোর সম্মান থেকে তোর বাবার জীবনটা বড় ছিলী না? কিভাবে পারলি এমন করতে? আমরা কি সত্যি তোর বন্ধু ছিলাম? (হাসিব)

~ আরে তা না। তোদের কে ঝামেলায় ফেলবো কেন শুধু শুধু? (লাবিব)
~ আঙ্কেল তো তোর থেকে জাহিদ কে বেশি পছন্দ করতেন! কিন্তু সেই জাহিদই তার মৃত্যুর খবর জানেনি? (হাসিব)
~ আচ্ছা হাসিব রাখতো। লাবিব তার বাবাকে হারিয়েছে। সেটা আমাদের তিন জনের দুঃখ। (আমি)

~ টাকার জন্য চিকিৎসা করতে পারে নি। কেন আমরা কি মরে গিয়েছিলাম? (হাসিব)
~ তুই তো চলে গেলি সিঙ্গাপুর, লাবিব তোকে খুঁজে পেতো কোথায়? (আমি)
~ সিঙ্গাপুর? তুই আবার সিঙ্গাপুর গেলি কবে? (লাবিব)

~ আরে বলিস না তুই যাওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় ক্যাম্পাস থেকে টিসি দিয়ে দিছে। তারপর চার বছর সিঙ্গাপুর কাটিয়ে মাত্র আসলো এক মাসও হয়নি। হারামজাদা, চারটা বছর একটুও যোগাযোগ রাখেনি। (আমি)
~ কেনো লাবিব পারলে আমি তোকে ছাড়া থাকতে পারবো না কেন? (হাসিব)

~ আবার আমার কাছে আসলি কেন বন্ধু একটা চাকরি খুঁজে দে? (আমি)
চাকরির কথা মনে পরতেই হাসিব তার হাতের কাগজ পত্রের দিকে নজর দিলো, হায় হায় আজকে তো ইসিতার কাছে এগুলো জমা দেওয়ার কথা৷ আমি পকেট থেকে মোবাইলটা বের করলাম।

নয়টা মিসকল৷ মোবাইল সাইলেন্ট ছিলো। ইসিতা আজকে খুন করে ফেলবে। অফিস রেখে বসে বসে আড্ডা দিচ্ছি। ঘড়িতে বারোটা ওভার?
~ বন্ধু আজকে তো তোর চাকরি যাবেই সাথে আমারটাও। (আমি)
~ কথা না বলে দৌড়া। এখনো সময় আছে। (হাসিব)

জটাপট লাবিব এর মোবাইল নাম্বারটা নিয়ে নিলাম। নাহলে আবার হারিয়ে যেতে পারে।
~ আবার দেখা হবে, বাই৷ (আমি)
আমি আর হাসিব অফিসে চলে আসলাম ৷

~ জাহিদ স্যার আপনাকে ম্যাডাম ডুকতে নিষেধ করেছে। (দারোয়ান)
~ কেনো?
~ সেটা আমি জানি না। আপনি সকাল সকাল তারাহুরো করে অফিস থেকে বের হওয়ার সময় ম্যাডামের সাথে ধাক্কা লাগে। এতে ম্যাডাম মাথায় চোট পায়। (দারোয়ান)

আমি খুব টেনশনে পরে গেলাম। আবার নতুন কোন ঝামেলার উৎপত্তি হলো?
~ আর আপনি ভিতরে ঢুকলে আমার চাকরি চলে যাবে। (দারোয়ান)
দারোয়ান কে বুঝানোর চেষ্টায় ব্যার্থ হয়ে বাইরেই অবস্থান করলাম।

~ তাহলে থাক তুই, আমি আমার সামগ্রী গুলো ইসিতার কাছে দিয়ে আসি। (হাসিব)
~ ইসিতা কিন্তু খুব রাগী। সিচুয়েশনে সামলাতে পারবি তো?
~ আরে বেটা তোর যত বাজে স্বভাব আছে সব ইসিতাকে বলে আমি কেমন প্রিয় হয়ে যাই ইসিতার কাছে শুধু দেখ৷ (হাসিব)

~ ফাজলামি করিস না হাসিব৷ চাকরিটা কিন্তু চলে যাবে আমার৷
কে শুনে কার কথা। হাসিব ভিতরে চলে গেলো। জনিনা হারিমীটা আবার কোন প্যাচ লাগায়।

~ আসি ম্যাম? (হাসিব)
~ আসুন। (রাগ নিয়ে)।
~ আসলে ম্যাম গ্রাম থেকে সরাসরি এইখানে এসেছি তো তাই একটু লেট হয়ে গেছে। ~ আপনার সাথে গাঁধাটার দেখা হয়েছে?

~ কোন গাঁধা ম্যাম?
~ জাহিদ,
~ কেনো ম্যাম জহিদ আজকে অফিসে আসেনি?
~ আসছিলো, কিন্তু আবার জানি কোথায় চলে গেছে দেখন ধাক্কা দিয়ে আমার কপালের কি অবস্থা করেছে?
~ এটা পরিকল্পিত, জাহিদ প্রায়ই বলতো আপনার থেকে প্রতিশোধ নিবে!

~ প্রতিশোধ? কিসের প্রতিশো?
~ ওই যে অফিসের সব কাজ তাকে দিয়ে করান তাই। তিনদিনের কাজ একদিনে করার জন্য বাদ্য করেন তাই।
~ আপনি সিরিয়াস তো?

~ ওফকর্স, টেবিলে একটা বারি দিয়ে।
~ মি. হাসিব, কন্ট্রোল ইউর সেল্ফ।
~ সরি।
~ আপনার কাজ করুন। আপনার প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট জমাদিন। আর কালকে যথা সময়ে অফিসে চলে আসবেন।
~ থ্যাংকস।
হাসিফ ফ্রি মাইন্ডে অফিস থেকে বের হলো। আগুন তো জ্বালিয়ে আসছে।
~ কিরে এতো খুশি খুশি লাগতেছে কেন? (আমি)
~ কেনো তুই বুঝিস না। আমার চাকরি কনফার্ম।
~ সব তো আমার ক্রেডিট।

~ আগে নিজের চাকরি বাঁচা।
~ কিছু বললি?
~ কই নাতো। চল বাসায় যায়।
~ না যাওয়া যাবে না। তাহলে পুরোটাই যাবে।

~ থাক তুই আর বাঁশ খা। আমি যাই।
হাসিব চলে গেলো। আমি দাঁড়িয়ে আছে। লান্সের টাইম হয়ে গেছে ইসিতা এখন বাসায় চলে যাবে। ইসিতা বের হলো৷ আমি দাঁড়িয়ে আছি৷ বেশ রাগি দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমার দিকে। কপালের এক কনে কিছুটা ক্ষতের চিহ্ন। বেশ সুন্দর লাগছে।

~ কি অফিস রেখে কোথায় গিয়ে ছিলেন? (ইসিতা)
~ আসলে ম্যাম পুরোনো বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়ে ছিলাম। কেনো ম্যাম হাসিব কছু বলেনি?
~ হুম বলেছে, অনেক কিছু বলেছে তাই আর কষ্ট করে অফিসে আসা লাগবে না। কাল থেকে আপনাকে আর অফিসের কোনো দরকার নেই। রিজাইন লেটার পেয়ে যাবেন।

~ সরি ম্যাম ভুল হয়েভগেছে। আর হবে না এবারের মত ক্ষমা করে দিন।
~ জাহিদ সাহেব এটা আপনার বাড়ি না যা ইচ্ছে করবেন। আর আপমার প্লান আমি জেনে গেছি৷ সো আর চালাকি করার চেষ্টা করবেন না।

~ প্লান? আমার আবার কিসের প্লান? ম্যাম বিয়ে করার প্লান এখন আমার নেই।
~ বিয়ে না। আমাকে মারার প্লান করেছেন সেটা আমি জেনে গেছি।
~ তওবা তওবা, কি বলছেন ম্যাম। আমি কেনো মারার প্লান করবো?
~ ভালো হওয়ার চেষ্টা করবেন না। হাসিব সব বলেছে আমাকে।

মাত্র বুঝলাম ঝামেলা কোন জায়গায়। হারামীটা গেঞ্জাম লাগাইছে।
~ ম্যাডাম আপনি চলে জান লান্সের সময় চলে যাচ্ছে৷ (আমি)
ইসিতা চলে গেলো। দাড়া হাসিব্বা আজকে তোর শেষ।
বাসায় চলে আসলাম। বাসার দরজা খোলা কেন?

ও হাসিব তো আমার বাসায় থাকে৷
~ ওই হারামজাদা, কি প্যাচ লাগাইছোত ইসিতার কাছে? (আমি)
~ কই আমি তো কোনো প্যাচ লাগাইনি।

~ আমার যদি চাকরি চলে যায় আমি তোর সুপ্তিরে নিয়া পালিয়ে যাবো।
~ আমি তোর ইসিতাকে নিয়ে।
~ তোরে আজকে, , ,

দড়জার কলিং বেল বেজে উঠলো, অসময় আবার কে?
~ আরে লাবিব, ঠিকানা পাইলি কই? (আমি)
~ ইবলিশটায় দিছি। (লাবিব)
~ কিরে হাসিব তোর এই অবস্থা কেন? (লাবিব)

~ ওর কথা আর কি বলবো। শহরে এসেই বাঁশ দেওয়া শুরু করছে। (আমি)
~ ইসিতার বাবাকে দিয়ে দোলাই খাওয়া। ঠিক হয়ে যাবে। (লাবিব)
~ ইবলিশ জীবনেও ঠিক হবে না।

সকাল ৯টা ১৫৷ হাসিব হাসিব অফিসে চলে গেলো। আমাকে একটু ডাকলো না। হারামীটারে কেন যে চাকরিটা নিয়ে দিলাম৷ এখন আমি বাঁশ খাই। লাবিব কে অনেক ডাকলাম, নাহ সারা শব্দ নেই। সকাল বেলা নিম্ন চাপটা একটু বেশীই থাকে। ওয়াশ রুমে গেলাম। মোবাইলটা বেজে উঠলো।

ইসিতা! এই টাইমে? কি আর বলবে অফিসে লেট কেনো। কালকে তো চাকরি খেয়ে দেওয়ার হুমকি দিয়েছে। ভয়ে ভয়ে ফোন রিসিভ করলাম।
~ হেল্লো, (আমি)
~ কোথায় আপনি?

~ বলা লাগবে ম্যাম?
~ অবশ্যই, অফিস রেখে কোন মেয়ের সাথে রেস্টুরেন্টে দেখা করতে গিয়েছেন?
~ কি বলছেন এইসব৷ আপনার মাথা ঠিক আছে?
~ ওই একদম মিথ্যা বলবেন না। আপনি এখন কোথায় আছেন?

(বুঝছি হাসিব আবারো প্যাচ লাগাইছে)
~ আমি মাত্র ঘুম থেকে উঠে একটু আসছি।
~ কোথায় আসছেন?

~ ওইটা বলা যাবে না।
~ তাহলে হাসিব সত্য কথাই বলেছে।
~ আরে ম্যাম আমি বাথরুমে,
~ আমার বিশ্বাস হয়না, ভিডিও কল দেন।

ইসিতার কথা শুনে হাত থেকে মোবাইলটা পরে গেলো। ডিসপ্লে এক কোন দিয়ে ফাটল দিলো। কি বলে এই অবস্থায় ভিডিও কল?
~ ম্যাম ইউ সিরিয়াস? আমি বাথরুমে!

~ তো কিহয়েছে ভিডিও কলে আসেন।
বুঝছি ভুত বড়টা পাইছে। কোনো মত বাথরুম সেরে বের হয়ে ইসিতাকে কল দিলাম৷ শান্তিতে একটু অযুত সারতে দিবে না।

~ এই ম্যাম দেখুন এইটা আমার রুম লাবিব শুয়ে আছে। এবার বিশ্বাস হলো আমি বাসায়?
~ এক মিনিট লাবিব আপনার বাসায় কি করে?
~ ম্যাম আমরা তিন জন এখন এক সাথেই থাকি।

~ ও তাইলে ঠিক আছে। আর এতো লেট কেনো তাড়াতাড়ি অফিসে আসেন।
~ ওকে, আসতেছি।
কিছুক্ষন নিরব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম। একটা ঝড় গেলো।
~ ওই লাবিব টেবিলে খাবার আছে উঠে খেয়ে নে। আমি চলে যাই। (আমি)
আমি চলে আসলাম। নিজের ডেক্সে বসতে যাবো।

~ উহু, আগে ম্যামের সাথে দেখা করতে হবে। (রাকিব)
দেখাতো করাই লাগবে যে গোলের পানি আজকে খাওয়ালো তা ভুলার মত না।
~ আসি ম্যাম,

ইসিতা গালে হাত দিয়ে আমার দিকে তাকালো। মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।
~ কি হয়েছে এমন করে তাকিয়ে আছেন কেন? (আমি)
~ এতো লেট করলেন কেন?
~ ঘুম থেকে উঠতে একটু লেট হয়ে গেছে।

~ কি করেন রাতে লেট হয় কেনো?
ইসিতার নজর ফিরে না আর আমি লজ্জায় মাথা তুলতে পারি না।
~ সরি ম্যাম আর হবে না।
~ ওকে, জান কাজ করুন। ।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে চলে আসলাম।
বসে আছি নিজের ডেক্সে। টেবিলে ঠক ঠক আওয়াজ পেলাম।
~ বন্ধু আমি তো মহা বিপদে পরেছে ! (হাসিব)
~ তুই মর তাতে আমার কি?

~ প্লিজ বন্ধু।
~ কেনো প্যাচ লাগানোর সময় বন্ধুর কথা মনে ছিলো না?
~ সরি রে৷ আর হবে না। প্লিজ বন্ধু হেল্প কর।
~ বল দেখি।

~ সুপ্তি বিয়ে ভেঙে দিয়েছে। কালকে দেখা করতে বলেছে তার বাবার সাথে নাহলে সমস্যা হবে।
~ ছুটি লাগলে ইসিতাকে বল আমি কি এখানে?
~ আমি একা যাবো নাকি দেখা করতে? দেখ আমার জন্য সুপ্তি বিয়ে ভেঙ্গে দিয়েছে ব্যাপারটা কোথায় দাড়িয়েছে?
~ ছুটি শেষ হলো দুই দিন হলো। আবার ছুটি দিবে?

~ প্লিজ দোস্ত একবার ট্রাই কর।
~ ওকে দেখতে পারি৷ তবে কাজ না হলে কিছু বলতে পারবি না।
~ ওকে।

আমি চলে গেলাম ইসিতার রুমে। আমি জানি এইটা বৃথা চেষ্টা অফিসে এতো কাজের মধ্যে করেছি অনিয়ম আবার ছুটি?
~ আসি ম্যাম।
~ আবার কি?
~ ওই তো ম্যাম, কি জন্য যেন আসছিলাম,

~ দেখুন মি. জাহিদ। আমি জানি আপনি বার বার আমাকে দেখার জন্য আসেন। তবে নিজেকে সামলান তিন চারদিন পর আমার বিয়ে। আমি চাইনা আমার জন্য কেউ কষ্ট পাক।
~ দূর ম্যাম ওই সব কিছুনা। আসলে ম্যাম দুই দিনের জন্য ছুটি লাগতো৷
~ কি? দুই দিন হলো না আবার, ছুটি?

~ ম্যাম কারণ আছে। ইমারজেন্সি মেয়ের বাবার তলব।
~ মেয়ে? তার মানি আপনি গোপনে কাজ সেরে ফেলেছেন?
~ আরে ম্যাম ওইসব কিছু না। হাসিব যেই মেয়ে কে ভালোভাসে তার বাবা হাসিব কে দেখতে চেয়েছে।
~ ও তাই বলুন। আমিতো ভয় পেয়েগেছি?

~ কিছু বললেন ম্যাম?
~ না মানি ছুটিটা এখনি লাগবে?
~ জ্বি ম্যাম অনেক সিরিয়াস ইসু। হাত ছাড়া হয়ে গেলে প্রবলেম হবে।
~ ওকে মাত্র দুই দিন কিন্তু।
(ইয়েস ছুটি মিলগেয়া)

~ ধন্যবাদ ম্যাম।
আমি চলে আসতে লাগলাম।
~ শুনুন। (ইসিতা)
~ জ্বী।
~ আমাকে নিবেন আপনাদের সাথে একটু দেখবো আপনার গ্রামটা৷ আমাকে নাকি আপনি সেখানে দেখেছেন?
~ সিরিয়াসলি, সিত্যি যাবেন?
~ হুম

~ ওকে ডান।
ইসিতার রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। হাসিব এসে সামনে দাড়ালো।
~ কিরে কাজ হয়েছে? {হাসিব)
~ আগে প্রনাম কর তোর গুরুজি কে।

~ দূর বেটা কে তুই। ভালোকালে গনায় ধরি তোকে?
~ হাসিব্বা,

গ্রামে চলে আসলাম। আমরা চার জন। আমি আর হাসিব তো আগেও এসেছি। লাবিব আর ইসিতা পাঁচ বছর পর আসছে তাই তাদের কাছে সব কিছু নতুন মনে হয়। ইসিতার পুরোনো বাসার সামনে আসিতেই ইসিতা দাঁড়িয়ে গেলো৷ এখানে তার সৃত্মি পরে আছে। কিন্তু এই ইসিতা তো সেই ইসিতা না যে শান্তি পাড়া চিনতেই পারে না।
লাবিবের বাড়িটা সবচেয়ে চোখে পরার মত। বন জঙ্গলে আবদ্ধ।

লাবিব বাসাটা দেখে চোখের পানি ফেলা ছাড়া উপায় ছিলো না।
সুপ্তির বাসায় চলে আসলাম৷ আমরা তিন জনই ভয়ে আছি। অনেক অনেক ডাব চুরে করেছি এই বাসা থেকে। আজকে সেই বাসায়ই জামায় হতে আসছি।

সুপ্তির বাবা যদি চুরির একটা হিসেব নেয়৷ তাহলে হাসিব কে আর বিয়ে করতে হবে না। ।
বসে আছি সুপ্তির বাবা সামনে। আমরা তিন জন ভয়ে গাপটি মেরে বসে আছি। ইসিতা তো আর আমাদের কর্মকান্ডের হিসেব জানে না সে সুপ্তির সাথে গল্প করছে। ~ আহরে ভাগ্য, ! কত চুরি করেছিস এই বাসা থেকে। শেষে আমার মেয়েটাকেও ছাড়লি না। (আঙ্কেল)

আঙ্কেল যেভাবে শুরু করছে ইসিতা শুনলে মান ইজ্জত প্লাস্টিক। সুপ্তিকে ইশারা করলাম ইসিতাকে ভিতরে নিয়ে যেতে। সুপ্তি ইসিতাকে ভিতরে নিয়ে গেলো।
আমরা তিনজন চুপ করে রইলাম।

কিছুক্ষন পর হাসিব একটা চিমটি কাটলো আমাকে। কিছু বল তুই। আমি আবার লাবিব কে তুই কিছু বল?
~ কি তোমরা এমন খোছা খোছি করছো কেন?
~ আসলে আগে কি হয়েছিলো তার জন্য আমরা সরি। এখন তো বড় হয়েছি তাই আর পুরোনো ককর্মকাণ্ড মনে করতে চাইনা। (লাবিব)

~ তাই বলো, ময়েটার জন্য ভালো একটা পাত্র পেয়েছিলাম। কিন্তু মেয়েটা একটা বদমাইশ এর জন্য বিয়েটা ভেঙ্গে দিয়েছে।
হাসিব আমার দিকে তাকালো,

~ ঠিক তো বলেছে, তুই তো বদমাইশ থেকেও খারাপ। (আমি)

আমরা বসে আছি। এমন সময় ইসিতা এসে আমার হাত ধরে বাইরে নিয়ে গেলো।
~ আপনাদের প্লান কি? (ইসিতা)
~ কিসের প্লান?

~ আরে দেখতে আসছেন, ভালো কথা সাথে একটা রিং নিয়ে আসতেন। আজকে রিং এর কাজটা হয়ে গেলে অনেক ভালো হত৷ (ইসিতা)
~ কন্তু আমরা তো রিং নিয়ে আসনি।
~ সত্যি আপনারা একটা বলদ৷ কি দেখে যে আঙ্কেল মেয়ে বিয়ে দেয় আমি নিজেও জানি না।
হাসিব কে ডাক দিলাম।

~ কিরে রিং কই?
~ কিসের রিং?
~ মেয়ে দেখতে আসছিস রিং নিয়ে আসলি না কেন?

~ ওফ সেটাতো মনে ছিলো না।
ইসিতা হাত থেকে তার রিংটা খুলে দিলো।

~ এইটা নেন। ।
আমি অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম।
~ এইটা তো আপনার পরে ঝামেলা হবে না?
~ ওইটা আমি সামলিয়ে নিবো।

হঠাৎ করে ইসিতার এমন পরিবর্তন?
কুচতো গরবিল হে,

হাসিবের কাজ শেষ বাসায় চলে আসলাম৷ হাসিবের বিয়ের জন্য পাত্রী রেডি। জানি না আমার ঘন্টা কবে বাজবে?
বিকেল বেলা ইসিতাকে নিয়ে ঘুরতে গেলাম নদীর পাড়। যেখানে আমার আর ইসিতার প্রথম দেখা হয়।
~ এইদেখা আপনার সাথে আমার প্রথম দেখা হয়ে ছিলো! (আমি)

~ কই দেখি কোন জায়গায়?
~ এইতো এখানে বড় একটা সেগুন গাছ ছিলো যেটার নিচে বসে কি জানি ভাবছিলেন আমি এসে আপনার বোতলের পানি, , ,

~ বাকিটা আমি বলি?
আমি ইসিতার মুখের দিকে তাকিয়ে রইলাম।
~ আপনি আমার বোতলে রাখা পানি টুকো নিঃসন্দেহে খেয়ে ফেললেন। আমার মেজাজ গরম হয়ে গেলো। তাই আপনাকে ভয় দেখানোর জন্য বলেছি পানিতে বিষ রাখা ছিলো৷ আপনার তো ভয়ে মরি মরি অবস্থা হয়ে ছিলো। (ইসিতা)

~ তার মানি তুমি এতদিন নাটক করেছিলা? (আমি)
~ হুম। ভাবছিলাম আর কোনোদিন তোমাকে পরিচয় দিবো না। কিন্তু দুই দিন পর আমার বিয়ে হয়ে যাবে, তখন কোথায় থাকি জানা নেই, তাই আর নাটক করে কি লাভ?
~ কি দোষ করেছিলাম আমি? এতো কষ্ট দিলে।

~ আমি যেদিন গ্রাম ছেড়ে চলে যবো সেদিন অনেক কেঁদেছি। পথের দিকে বার বার তাকাতাম। এই বুঝি জাহিদ এসে বলবে, ইসিতা তুমি কোথায় যেতে পারবে না। তুমি শুধু আমার তুমি আমার সাথেই থাকবে। কিন্তু তুমি আসো নি। সেইদিন টার্মিনালে তোমার সাথে দেখা হয়েছে।

আমি অনেক খুশি হয়েছি। আমার জাহিদ এসে গেছে আমাকে নিতে। কিন্তু আমার ধারনা ভুল ছিলো। তুমি আমাকে না, হাসিবকে আগিয়ে দিতে আসছো৷ তারপরও তোমার দেখা পেয়েছি আমার মনটা আনন্দে নেচে উঠলো।

আমি ব্যাগ পত্র নিয়ে লঞ্চ থেকে নেমে গেছি আমি তোমার সাথে চলে যাবো। কিন্তু তুমি ততক্ষন চলে যেতে লাগলে। আমি মান অভিমান ভুলে তোমাকে ডাকতে লাগলাম। জানি না সেই আওয়াজ তোমার কানে পৌছে ছিলো কিনা? তুমি আর পিছন ফিরে তাকালে না। কষ্ট হয়েছে খুব কষ্ট। তখন তোমার একটা কথা মনে হলো ” পাষাণ চলে গেলো তোমার কিছু যায় আসে না “। (ইসিতা)

আমি কিছু না বলে নিরবে দাঁড়িয়ে রইলাম।
সন্ধ্যা নেমে গেছে ইসিতাকে নিয়ে বাসায় চলে আসলাম। ইসিতা আমার সাথে জীবনবর নাটক করেছিলো৷ কিন্তু নাটকের ভিতরও কিছু সত্যের অস্তিত্বে থাকে সেটা আমার জানা ছিলো না।

কাল সকাল বেলা ইসিতা চলে যাবে। কয়েক দিন পর তার বিয়ে। শুনেছি বিয়ের পর পর অস্ট্রেলিয়া চলে যাবে। আর হয়তোবা দেখা হবে না।
ইসিতা ব্যাগ গোছাতে লাগলো। আমার বাঁধা দেওয়ার শক্তি নেই। ইসিতার কাজে সাহায্য করলাম।

ইসিতা অনেক উপদেশ দিলো, ইসিতা চলে গেলে আমি যেনো চাকরিটা ছেড়ে না দেই। নতুন যে সিনয়র আসবে তার সাথে ভালো করে কথা বলতে হবে৷ কাজে অনিয়ম করা যাবে না। সর্বপরি আমি যেন ভালো থাকি।
অনেক রাত হলো ইসিতা ঘুমিয়ে পরেছে।

আমি দূর থেকে ইসিতার মায়া মাখা মুখটা দেখছি। কাছে পেয়েও আবার হারিয়ে ফেলেছি। মনের কষ্টটা একটু একটু করে বিশাল আকার ধারণ করলো। জোবনটা গেলো দুঃখের নদীতে বাসতে বাসতে।

সকাল বেলা ঘুম থেকে চমকিয়ে উঠলাম। বাসা ভর্তি পুলিশ। ইসিতার বাবাকেও দেখা যাচ্ছে তার মাঝে। কি হয়েছে ঘটনার তদন্ত করার জন্য ইদিতার রুমে গেলাম। ইসিতা এখনো ঘুমাচ্ছে।
ইসিতাকে ডাক দিলাম।
~ বাসায় পুলিশ আসছে। (আমি)

~ তো কি হয়েছে? হাসিব আর লাবিব কি দোষ করেছে দেখ আবার। দুইটার তো আবার চুরির অভ্যাস আছে৷ (ইসিতা)
~ তাহলে তোমার বাবা আসবে কেন?
ইসিতা আতঙ্কিত হয়ে উঠে বসলো।

~ কি বলছো বাবা চলে আসছে? (ইসিতা)
~ হুম। কিন্তু কেনো। তুমি বলে আসো নি?
~ না,
~ বলোনি কেনো?

~ আমি আসার সময় বাবাকে একটা চিঠি লিখে এসেছি। যেটার লেখা ছিলো, ” আমি তোমার সাথে পালিয়ে এসেছি। আমি তোমাকে ছাড়া কাউকে বিয়ে বিয়ে করবো না। “
আমি নিস্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলাম

~। এখন তোমার বাবার হাত থেকে আমি বাঁচবো কিভাবে? (আমি)
~ তুমি ভয় পাও কেন আমি আছিতো।
ইসিতা আমাকে নিয়ে নিচে নামলো। হাসিব আর লাবিবও এক সাথে বসে আছে। দুইটার অবস্থা দেখে বুঝলাম অবস্থা করুণ থেকে করুণ এর দিকে যাচ্ছে।

ইসিতা গিয়ে তার বাবাকে জড়িয়ে ধরলো,
~ বাবা, (ইসিতা)
~ কেমন আছিস মা তুই।
~ ভালো,

ইসিতা পাশে থাকা ফল দিয়ে সাজানো প্লেট টা থেকে একটা আপেল নিয়ে নির্দ্বিধায় খেতে পাগলো। ইসিতার হাব ভাব ভালো ঠেকতেছে না।
ইসিতার বাবা হুংকার দিয়ে বললো,
~ দারোগা সাহেব এদেরকে থানায় নিয়ে জান। এরা আমার মেয়েটাকে পালিয়ে নিয়ে আসছে।

~ ইসিতা তুমি কিছু বলছো না কেন? (আমি)
~ খবর দার তুই আমার মেয়ের নাম ধরে ডাকবি না।
আমি ইসিতার দিকে তাকালাম। সে একটা আপেল শেষ করে আর একটা হাতে নিয়েছে। এখানে কি চলছে তার কোনো খবর নেই।

আমাদেরকে হাত করা পরিয়ে থানায় নিয়ে যেতে লাগলো,
পিছন থেকে ইসিতা ডাক দিলো,
মনে একটু শান্তি ফিরে পেলাম,

~ এখন প্রচুর শীত পরছে, তুমি তো আবার ঠাণ্ডা সহ্য করতে পারনা। তোমার জেকেট টা নিয়ে যাও। (ইসিতা)
আমরা তিন জনই অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলাম। ইসিতার কথা শুনে মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পরলো। এই নাটকের অবসান কথায়?
এখন বুঝলাম এখানে থাকার চাইতে আমার থানায় যাওয়াই ভালো।

থানায় চলে আসছি। হাসিব তো পুরোই ফায়ার।
তার নতুন রিলেশন। যদি ভেঙ্গে যায় তাহলে আমাকে মেরে ফেলবে।

মশা পোকা মাকড়ের শহর থেকে তিন দিন পর বাসায় ফিরলাম।
ওমা পুরো বাড়ি সাজানো। বাসার ভিতর ঢুকে আরো অবাক হয়ে গেলাম বিয়ের আসর সাজানো। কাজি সাব রেডি। বর মাত্র জেল থেকে ছাড়া পেলো।
~ বলুন কবুল, (কাজি)

~ কবুল কবুল কবুল।

~ এইটা কি হলো, (আমি)
~ কেনো তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে। (ইসিতা)
~ বিয়ে যদি করবেই তাহলে এত নাটকের কি ধরকার ছিলো?
~ তুমি জানো না আমি নাটক করতে ভালোবাসি!

~ তোমার দুইটা পায়ে পরি প্লিজ এবাদ বন্ধ কর তোমার পটের দোকান।
~ পোটের দোকান মানি কি?
~ নাটক।

~ তাহলে তোমার হারামী লাইফের অবসান করতে হবে।
~ নাহ সেটা করা যাবে না। হারামী দুইটা আমার জীবনের সব।
~ ওকে তাহলে ঘুমিয়ে পরুন, কাল থেকে আবার নতুন নাটক নিয়ে পিরবো।

লেখা – এস আর জাহিদ

সমাপ্ত

(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “হারামী ডট কম – ত্রিভুজ প্রেমের গল্প কাহিনী” গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)

আরো পড়ূন – যদি জানতে চাও – Valobasar Golpo Kahini

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *