একটি প্রেমের গল্প

বেলা শেষে তোমারি অপেক্ষায় – একটি প্রেমের গল্প

বেলা শেষে তোমারি অপেক্ষায় – একটি প্রেমের গল্প: প্রেম সবার জীবনে আসলেও শেষ পর্যন্ত একান্ত কাছে পায় কয়জন? কয়জন তাঁর মনের মানুষটির সাথে সুখের সংসার করতে পারে? চলুন এরকম একটি কষ্টের জীবন গল্প পড়ি।


পর্ব ১

স্টেশন ভর্তি লোকজনের মধ্যেই আশিক বর্নাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কিস্ করতে লাগল।

বর্না দুই হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। একটু পর আশিক বর্নার চোখে চোখ রেখে বলল, আই রিয়েলি হেইট ইউ! ডাম ইট?

বর্না আশিককে কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখনি সে সামনে তাকিয়ে দেখলো রোজি দাঁড়িয়ে থেকে ওদের দেখছে। বর্না আশিকের গলা ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। কারন রোজি এখন ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে।

রোজি একদম ওদের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর শান্তভাবে আশিকের দিকে তাকিয়ে বলল –

~ আমি জানতাম আশিক তুমি বর্নাকে অনেক বেশি ভালোবাসো। ইভেন আমার থেকেও বেশি!

আশিক মাথা নিচু করে ফেললো। রোজি ওর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে আবার বলতে লাগলো-

~ আমাদের তিন বছরের রিলেশন। কিন্তু কখনো আমার জন্য তোমার চোখে যেই ভালোবাসা দেখিনি সেই ভালোবাসা আজ বর্নার জন্যে দেখলাম।

আশিক এক পলক রোজির দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। কারন রোজির চোখে পানি টলমল করছে। আশিক অস্বস্তি বোধ করতে করতে বললো-

~ আমি বুঝতে পারিনি কখন বর্নার প্রতি এতোটা দুর্বল হয়ে পরেছি।

রোজি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আশিকের কথাগুলো শুনতে লাগলো আর আশিক ওকে এক এক করে সব বলতে লাগলো!

বর্না নিশব্দে ওদের কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। কারন সে ওদের বোঝাপড়ার মধ্যে থাকতে চায়না। এমন শীতের মধ্যেও ওর শরীর প্রচন্ড উত্তেজনায় কাঁপছে। সে দূর থেকে আশিক ও রোজিকে কে দেখছে আর ভাবছে তিন মাস আগের কথা। ঠিক যেদিন থেকে এই গল্পটার সূচনা হয়েছিলো।

বর্না ও রোজি শুধু কলেজ ফ্রেন্ড ই ছিলো না বেস্ট ফ্রেন্ডও ছিলো। তারা দুজনেই কলেজ হোষ্টেলে একই সাথে একই রুমে থাকতো। তাদের সম্পর্ক টাও ছিলো অনেক গভীর ও বন্ধুত্বপূর্ণ।

আশিকের সাথে রোজির রিলেশন ছিলো স্কুল লাইফ থেকে। আশিক আর রোজির গ্রামের বাড়ি ছিলো একই পাড়ায়। সেই সূত্র ধরেই ওদের পরিচয়।

রোজি আশিককে একটু বেশিই লাভ করতো। আর ওদের রিলেশনশিপ টাও অনেক সুইট ছিলো। কয়েকদিন পরপর ঘুরতে যাওয়া থেকে শুরু করে শপিং করা রেস্টুরেন্টে খেতে যাওয়া অল হতো। এক কথায় একটা সুন্দর রিলেশন চলছিলো ওদের।

রোজি অবশ্য প্রায় দিনই বর্নাকে আশিকের সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিতে নিয়ে যেতে চাইতো। কিন্তু বর্না যেতো না। কারণ তার ফ্যামিলি থেকে পর্দা করার নিয়ম ছিলো। তাই সে বিয়ের আগ পর্যন্ত কখনো আশিককে দেখেনি।

এভাবেই দিন যেতে লাগলো। সব কিছু ঠিকঠাক মতোই চলতে লাগলো।

কিন্তু হঠাৎই একদিন রোজি আশিকের সাথে দেখা করা শেষে খুব বিষণ্ণমন নিয়ে রুমে আসলো। এসেই সে অস্থির হয়ে বর্নাকে বললো-

~ বর্না, আমার অনেক বড় একটা সমস্যা হয়ে গেছে। কি করবো কিছুই বুঝতে পারছিনা।
বর্না অবাক হয়ে বললো-

~ কি হয়েছে সেটা তো আগে বল?
রোজি কান্না জড়ানো কন্ঠে বলল-

~ আশিকের মা আমাদের রিলেশনের ব্যাপারে জানতে পেরে হঠাৎ করেই আশিকের বিয়ে ঠিক করেছে। আশিক ওর মায়ের সাথে আমায় নিয়ে কথা বলেছে। কিন্তু ওর মা কিছুতেই আমায় ছেলের বউ হিসেবে মেনে নিতে চাচ্ছে না। আর এদিকে হাতে একদম সময় নেই! মাত্র তিন দিন পরেই ওর বিয়ে। ডেট ও ফিক্সড হয়ে গেছে।

এখন আমি কি করবো বল? প্লিজ কিছু আইডিয়া দে!
~ চিন্তা করিসনা। কিছু তো একটা ব্যবস্থা হয়েই যাবে।

কিন্তু আশিক ভাইয়া কি চাইলেই বিষয়টা নাকোচ করে দিতে পারতো না?
~ না রে। তুই তো জানিসই ও প্রায় এক বছর থেকে লয়ার হয়ে জয়েন করেছে। প্রতিষ্ঠিত না হলে সেটা একটা আলাদা কথা ছিলো। এখন ও কোন কিছু বলেই অজুহাত দিতে পারছেনা।

বর্না হতভম্ব হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
~ তাই বলে দু’দিনের মধ্যেই কিভাবে ওরা মেয়ে ঠিক করতে পারলো?
~ আশিক ওর বাবার একমাত্র ছেলে। ওর বাবা কোটিপতি। আর তাছাড়া আশিক এতোটাই সুন্দর যে ওকে দেখে যেকোনো মেয়ে এনিটাইম বিয়ের জন্যে রাজি হয়ে যাবে।

কথাটা বলেই রোজি কান্না করে ফেলল। একটুপর চোখ মুছতে মুছতে বলল-
~ আমার কপালে আশিক নেই বর্না। আমার তো এখন সুইসাইড করার ইচ্ছা হচ্ছে!
~ আরে কি সব বাজে কথা বলছিস। এই সময় এতো ভেঙে পরলে হবে? ঠান্ডা মাথায় ভেবে চিন্তে একটা উপায় বের করতে হবে!

সেদিন ওর দুজনে অনেক আইডিয়া বের করতে লাগলো। কিন্তু কোনোটাই পারফেক্ট ভাবে মিললো না।

পরদিন সকালে রোজির ডাকে বর্নার ঘুম ভেঙ্গে গেলো। সে চোখ মেলে তাকাতেই দেখলো রোজি ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে। বর্না উঠে বসতেই রোজি ওর ডান হাতটা চেপে ধরে বলল-

~ বর্না আইডিয়া পেয়ে গেছি!
বর্না চোখ ডলতে ডলতে বলল-
~ কি আইডিয়া বল?

~ তুই
~ মানে?
~ মানে তুই আশিককে বিয়ে করবি!

রোজির কথা শুনে বর্না যেনো আকাশ থেকে পড়লো। সে রোজিকে আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
~ রোজি আমি তোর কথা কিছুই বুঝতে পারছি না। প্লিজ একটূ ক্লিয়ার করে বলবি?

~ শোন, তুই আশিককে বিয়ে করবি। আশিক ওর মাকে বলেছে যে ও আমাকেও বিয়ে করবে না, ওর মায়ের পছন্দের মেয়েকেও বিয়ে করবে না। অন্য একটা মেয়েকে বিয়ে করবে। আর ওর মা সে শর্তে রাজি হয়ে গেছে!

আমরা প্ল্যান করেছি সেই মেয়েটা হবি তুই। বিয়ের কয়েক মাস পর নানা রকম প্রবলেম দেখিয়ে তুই ওকে ডিভোর্স দিয়ে দিবি। ব্যস তারপর ও আমাকে বিয়ে করবে। তখন ওর ফ্যামিলি থেকে কেউ আমায় রিজেক্ট করতে পারবেনা।

কিছুক্ষণ চুপ থেকে রোজি আবার ইতস্তত করতে করতে বললো-
~ তোর তো অনেক টাকার দরকার। টিউশনি করে আর কতোদিন ই বা এভাবে চলবি! প্লিজ কিছু মনে নিস না, এর জন্যে তুই যা চাইবি আমি আর আশিক তোকে তাই দিবো।

রোজির কথাগুলো বর্না শুধু এতোক্ষণ চুপচাপ শুনছিলো। রোজির শেষ কথাটা শুনে বর্নার ভেতরটা কষ্টে ছিন্ন বিচ্ছিন্ন হতে লাগলো। সে নিজেকে খুব হীন ভাবতে লাগলো। সে যে রোজির কথা শুনে নিজেকে কতোটা ছোট অনুভব করলো সেটা যদি রোজি বুঝত তাহলে কখনোই ওকে ঐ ধরনের কথা বলতো না।

হ্যাঁ, বর্নার পড়াশোনার খরচ বহন করার সামর্থ্য ওর বাবার নেই। কিন্ত তাই বলে রোজি ওর সেই দুর্বল জায়গাটাতেই আঘাত করবে? সেই রাইট ওকে কে দিয়েছে? এসব ভাবতেই বর্নার দম বন্ধ হয়ে যেতে লাগলো। ওর মাথা টলমল করত লাগলো। ও কোনমতে চোখের পানি আটকে নিজেকে সামলে নিয়ে বললো-

~ তুই ঠিক ই বলেছিস। পড়াশোনা কন্টিনিউ করতে টিউশনির টাকা দিয়ে আমি হিমশিম খেয়ে যাই। এজন্য আমার টাকার প্রয়োজন টা অনেক বেশি। কিন্তু আমি সেইটা মূখ্য বিষয় হিসেবে দেখছিনা।

কারন তুই আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। আমি সবসময় তোর ভালো চাই। তাই বুঝতে পারছিনা তোকে এখন কি বলবো বা কি বলা উচিত। আমায় একটু সময় দিতে পারবি?
~ হুম পারবো, তবে প্লিজ বর্না আমার শেষ ভরসা টা নষ্ট করে দিসনা প্লিজ?

রোজি আশিককে হারিয়ে ফেলার ভয়ে এতোটা উদ্বিগ্ন হয়ে গেছে যে তার কথায় কেউ আঘাত পাচ্ছে কিনা, কষ্ট পাচ্ছে কি না, সেটা সে মাথাতেই আনলোনা।

শেষে রোজি বর্নার চোখের পানি দেখে ফেলে সেই ভয়ে বর্না অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বলল-

~ তুই আমার একমাত্র বেস্ট ফ্রেন্ড। আমার যে কোন ধরনের প্রবলেমে তোকে না বলতেই পাশে পেয়েছি। সেই ঋণ আমি কখনোই শোধ করতে পারবোনা। তবে এই বিষয় টা যেহেতু আমার পুরো জীবন নিয়ে একটা খেলা। তাই প্লিজ আমায় একটু ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ দে।


পর্ব ২

সেদিন রাতে বর্নার কিছুতেই ঘুম আসছিলো না। বার বার শুধু রোজির কথাটা তার মাথার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছিল। অতঃপর সে অনেক ভেবে চিন্তে রোজির প্রস্তাবে রাজি হয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলো।

সকাল বেলা বর্না ঘুম থেকে উঠে দেখলো রোজি বারান্দায় বসে ফোনে কথা বলছে। সে ফ্রেস হয়ে রোজির সামনে গিয়ে বসলো। রোজি ওকে দেখে ফোনের লাইন টা কেটে দিয়ে দিকে উৎসুক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল-
~ কিছু সিদ্ধান্ত নিলি?

বর্না একটু চুপ করে থেকে বলল-

~ হুম! আমি তোর শর্তে রাজি। তবে আমার কিছু শর্ত আছে!
~ কি শর্ত বল?
~ আমার পড়াশোনা থেকে শুরু করে আম্মুর চোখের অপারেশন, বড় আপুর বিয়ে আর বাসা মেরামত করার সমস্ত খরচ তোদের বহন করতে হবে।

রোজি বর্নার কথা শুনে হেসে ফেললো। তারপর বর্নার একটা হাত ধরে বলল-
~ ব্যস এইটুকুই?
~ হুম!

~ তুই এর থেকে আরো দ্বিগুণ কিছু আবদার করলেও আমি তোর শর্তে রাজি হতাম!
বর্না অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
~ কেনো? আমি ঠিক বুঝলাম না।

~ বলছি। আমি তোকে অনেক কাছ থেকে চিনি। তুই কেমন মেয়ে সেটাও আমি জানি। তোর হাতে আশিককে তুলে দিয়ে আমি যতোটা স্বস্তিতে থাকতে পারবো অন্য কোন মেয়ের হাতে তুলে দিয়ে ততোটা স্বস্তিতে থাকতে পারবোনা। তাই আমি মন থেকে চাচ্ছিলাম যেকোন মূল্যেই হোক তুই এই শর্তে যেনো রাজি হয়ে যাস!
বর্না একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল-

~ আমার প্রতি তোর এতো বিশ্বাস?
~ হুম। আমি তোকে অনেক বিশ্বাস করি আর ভালোও বাসি। সেটা তো তুই জানিস ই!

বর্না কিছুক্ষন চুপ থেকে বলল-
~ আচ্ছা তুই ফোনে কথা বল আমি রুমে যাই!
~ আচ্ছা যা!

বর্না রুমে গিয়ে শুয়ে পরলো। তার মাথায় এখন আর কোন কিছু কাজ করছে না।

রোজি আশিককে বর্নার রাজি হওয়ার কথা জানালো। সাথে তার শর্তের কথাও জানালো। আশিক ও সেই শর্ত মেনে নিতে রাজি হলো। সে বর্নার সাথে ফোনে কথা বলতে চাইলো। তাই রোজি একটুপর রুমে গিয়ে বর্নাকে জানালো যে আশিক তার সাথে কথা বলতে চায়।
আশিক লাইনেই ছিলো। বর্না বিছানা থেকে উঠে ফোন হাতে নিয়ে বলল-
~ হ্যাঁ, বলুন।
আশিক কিছুটা ভারী ও গম্ভীর কন্ঠে বললো-
~ আমাদের বিয়েটা কিন্তু অনুষ্ঠান করে হবেনা। শুধু আপনার ফ্যামিলি এবং আমার ফ্যামিলির লোকজন থাকবে। আর বিয়েটা কাজি অফিসেই হবে। এতে কি আপনার কোন আপত্তি আছে?

~ না। আমার কোন আপত্তি নেই। শুধু আমার ফ্যামিলির লোকজন জেনো এই প্ল্যানটা সম্পর্কে কিছু জানতে না পারে তাহলেই হবে।
~ হুম অবশ্যই। সেটা আমিও চাই।

~ আর কি কিছু বলবেন?
~ না। আপনার কিছু বলার থাকলে বলতে পারেন।
বর্না কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলল-

~ না, আমার কিছুই বলার নেই।

বর্না রোজিকে ফোনটা দিয়েই দৌড়ে ছাদে চলে গেলো। কারন সে আজ কোনমতেই তার কান্না আটকাতে পারছিলোনা। কান্না করার মতো হয়তো বিশেষ কিছু ঘটেনি। কেননা তার নিজের ইচ্ছাতেই সবকিছু হচ্ছে। তবুও তার ভিশন কান্না পাচ্ছিল। বার বার শুধু মনে হচ্ছিলো সে জেনো নিজেই নিজের জীবন নিয়ে খেলছে।

পরক্ষনেই আবার সে ভাবলো, সে তো সবসময় তার পরিবারের সকলের মুখে হাসি দেখতে চেয়েছিলো। আর সেই জন্যে না হয় একটা ফাঁদে পা দিয়েই ফেললো। তাতে কি ই বা এতো এসে যায়! তার নিজের জীবনের চাইতেও তার কাছে তার বাবা মা আপু অনেক বেশি গুরুত্ব পূর্ণ।

বর্না ছাদ থেকে রুমে গিয়ে দেখলো রোজি কান্না করছে। বর্না অবাক হয়ে ওকে জিজ্ঞেস করলো-
~ কান্না করছিস কেনো? তুই কি খুশি নয়?

রোজি চোখ মুছতে মুছতে বলল-
~ না রে, আজ আমি খুব খুশি। খুশিতে আমার কান্না পাচ্ছে! তুই আমার অনেক বড় একটা উপকার করলি। তোকে ধন্যবাদ জানানোর ভাষা আমার জানা নেই।

~ এমন ভাবে বলিস না, আমি তো স্বার্থপরের মতো তোকে কত্তোগুলো শর্ত বেধে দিলাম।
~ আরে নাহ! এমনটাই তো কথা ছিলো! এতে তোর কোন স্বার্থ নেই। বরং তুই নিজেকেই সবার সুখের জন্যে বলি দিলি। এইসব কথা ছাড়। তুই বাসায় বলছিস কিছু?

~ না, এখোনো কিছু বলিনি। ভাবছি ফোনে কিছু বলবোনা। বাসায় গিয়ে বলবো।
~ হুম সেটাই ভালো হবে। তুই তাহলে কখন রওনা দিবি?
~ একটু পরেই।

রোজি আর কোন কথা বলল না। সে চুপচাপ বিছানায় শুয়ে পরলো।
বর্না কাপড়চোপর গোছগাছ করতে লাগলো। তাদের মধ্যে এই বিষয় নিয়ে আর কোন কথা হলোনা। অতঃপর বিকেলের দিকে বর্না বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো।

বাসায় গিয়ে সে সবাইকে মিথ্যা সাজিয়ে বানিয়ে বলে কোনমতে রাজি করালো।
সেদিন রাতেই রোজি বর্নাকে মেসেজ করে বললো বিয়েতে আশিকের বাবা মা কেউ আসবেনা। কিন্তু তুই চাইলে তোর বাবা মাকে নিয়ে যেতে পারিস।

মেসেজ টা দেখে বর্নার মুড অফ হয়ে গেলো। সে মনে মনে অনেক বিষন্ন হয়ে গেলো। তারপর ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো যে সেও তার বাসার কাওকে নিয়ে যাবেনা। কারন সে চায়না তার কোন কাজে তার ফ্যামিলির কেউ ছোট হয়ে যাক। সে তার বাবা মাকে বলল যে সে বিয়েটা একা একাই করবে। অনেক জেদাজেদির পর সবাই রাজিও হয়ে গেলো।

পরদিন সন্ধ্যার দিকে রোজি ফোন করে বর্নাকে রওনা দিতে বলল! সাথে মেসেজ করে কাজি অফিসের এড্রেস টাও পাঠিয়ে দিলো।

বর্না রেডি হতে লাগলো। সে হালকা বেগুনী রঙের একটা শাড়ি পরে নিলো। অবশ্য তার সাজ গোছের খুব বেশি একটা উপকরন ছিলোনা। তাই সে সিম্পলি ভাবে সাজতে লাগলো। চোখে কাজল দিলো। হাত ভর্তি চুড়ি পরলো। চুল গুলো বেশি বড় হওয়ায় খোপা করে ফেললো। গায়ে কোন গহনা পরার মতো ছিলোনা। সব শেষে উপরে একটা বোরখা আর হিজাব পরে রওনা দিলো।

কাজি অফিসে গিয়ে দেখলো রোজি আর ওর সাথে লম্বা করে একটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। যেতে যেতে রাত হয়ে গেছে তাই সে ছেলেটার মুখ স্পষ্টভাবে বুঝতে পারলো না। কাছে যেতেই রোজি পরিচয় করে দিলো, যে ও আশিক।

কাজি অফিসে ঢুকে তারা তিনজন তিনটা চেয়ারে বসে পরলো। বর্না চেয়ারে বসে সেইযে মাথা নিচু করে ফেললো তার তোলার আর কোন নাম নাই। হয়তো কতোকটা দুশ্চিন্তায় আবার কতোকটা লজ্জায় তার মাথা আপনাআপনি নিচু হয়ে গেছে।

বর্নার কবুল নেওয়ার পর কাজি সাহেব যখন আশিকর কবুল নিতে লাগলো তখন হঠাৎই সে আশিকের দিকে মাথা উঁচু করে তাকালো। সে দেখলো আশিক নেভী ব্লু কালারের একটা শার্ট আর জিন্স প্যান্ট পরে আছে।

তার গায়ের রং টা ঠিক কমলার গায়ের রঙের মতো। চোখ দুটো ভাসা ভাসা, নাকটা সরু ও তীক্ষ্ম, কালো চুল গুলো দিয়ে অর্ধেক কপাল ঢাকা। মুখে বিষন্নতার ছাপ ফুটে উঠেছে কিন্তু তবু ওর চেহারার সৌন্দর্য টাকে একটুও কমে দিতে পারেনি। তাকে দেখে বর্না মনে মনে বলল-
~ ইশ! যদি ওর মতো কেউ একজন আমায় সত্যিকারের ভালোবাসতো তাহলে বোধহয় আমার জন্ম টা সার্থক হতো।

বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর রোজি কাওকে কোন কথা না বলেই চলে গেলো। হয়তো সে কথা বলার মতো কোন অবস্থাতে ছিলো না। আশিক ও ওকে আটকালো না।

কেমন একটা দ্বিধা দ্বন্দ্বের মাঝামাঝি এক থমথমে পরিবেশ তৈরি হয়ে গেলো। কিন্ত আশিককে এখন একদম নরমাল মনে হতে লাগলো। তার মুখে আর কোন বিষন্নতার ছাপ ও দেখা গেলো না।

একটু পর আশিক বর্নাকে নিয়ে তাদের বাসার উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। বিশাল বড় একটা বাড়ির সামনে গিয়ে তার বাইক টা স্ট্যান্ড করে রাখলো। দুজশ গাড়ি থেকে নেমে বাসার ভেতরে ঢুকতে লাগলো। বর্না দেখলো রাতের অন্ধকারেও শ্বেত পাথরে খচিত বাড়িটা চকচক করছে। মেইন গেটের উপরে বড় করে লেখা আছে রোজ ভিলা।

আশিক বর্নাকে কারো সাথে পরিচয় করিয়ে না দিয়েই সোজা ওর রুমে নিয়ে গেলো। বর্নাকে ফ্রেস হতে বলে সে দরজা লক করে দোতলা থেকে নিচে নেমে গেলো।

একটু পর সে আবার রুমে চলে আসলো। বর্না তখন ফ্রেস হয়ে ড্রেস চেঞ্জ করে বেডের উপরে বসে ছিলো।
সে বর্নার দিকে তাকাতেই কেমন হকচকিয়ে গেলো। তারপর বেডের এক পার্শ্বে বসে বর্নাকে বললো-

~ বাসার সবাই খুব রেগে আছে। এখনই কারো সাথে আপনার কথা বলিয়ে দেয়া ঠিক হবেনা। ওদের রাগ পরে গেলে ওরা নিজেরাই আসবে আপনার সাথে কথা বলতে। আমি নিচের রুমে গেলাম। ওখানেই ঘুমাবো। একটু পর হাসুর মা (কাজের মহিলা) এসে আপনাকে খাবার দিয়ে যাবে খেয়ে নিয়েন। আর কোন সমস্যা হলে আমায় মেসেজ করে জানাবেন।

বলেই আশিক আলমারি থেকে কিছু একটা খুঁজে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।

বর্না আশিকের মুখে পরিতৃপ্তি ও খুশির ছাপ দেখতে পেয়ে খুব অবাক হয়ে গেলো।

বর্না মনে মনে রোজিকে খুব মিস্ করতে লাগলো। কাজি অফিসে বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর রোজি আর একটা কথাও বলেনি তখন। বলেনি বললে ভুল হবে হয়তো বলতে পারেনি। ওর চোখ দুটো শুধু ছলছল করছিল। রোজির জন্য ওর খুব খারাপ লাগা কাজ করলো।

একটুপর সে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে রোজিকে কল করলো। একবার কল হতেই রোজি রিসিভ করলো।
~ হ্যালো রোজি?

~ হ্যালো বর্না, কোথায় তুই? কি করছিস?
~ আমি তো আশিকের রুমে। তুই কোথায়? কি করছিস? ঠিক আছিস তো?
~ হ্যাঁ, আমি ঠিক আছি। আশিক কই?

~ ও তো একটু আগেই রুম থেকে বেরিয়ে গেলো।
~ ওহ আচ্ছা। বর্না শোন না, আমার খুব ঘুম পাচ্ছে আমি রাখছি ওকে?

রোজি শেষ কথাটা কান্না জড়ানো ভারী কন্ঠে বলল। বর্না রোজির কথাটা শেষ হতেই বলো-

~ ওয়েট রোজি, প্লিজ। আমি জানি তুই অনেক কষ্ট পাচ্ছিস। কিন্তু তুই যদি এভাবে ভেঙে পরিস তাহলে তো আমরা কিছুতেই সাকসেস্ হতে পারবোনা। এই সব প্লান তো তোর ই ছিল, তাইনা?
~ হুম। কিন্তু প্ল্যান টা যেনো প্ল্যান ই থাকে, সত্যি যেনো না হয় বর্না।

বর্না ওকে আশ্বস্ত করে বলল-
~ আরে ছাড় না এইসব বিষয়, তুই আমার উপরে নিঃসন্দেহে বিশ্বাস রাখতে পারিস। ট্রাস্ট মি!
~ ওকে বর্না বাই, টেক কেয়ার!
~ ওকে বাই!

কথা বলা শেষ হতেই হাসুর মা বর্নাকে খাবার দিয়ে গেলো। বর্না খেয়ে ঘুমিয়ে পরলো।

সকালবেলা দরজা নক করার শব্দে বর্নার ঘুম ভেঙে গেলো। সে দরজা খুলতেই দেখলো আশিক দাড়িয়ে আছে। ওর মুখটা কেমন জানি ফ্যাকাশে হয়ে গেছে। তাই বর্না নিজ থেকেই জিজ্ঞেস করলো-
~ কিছু হয়েছে কি?

~ না তেমন কিছুই হয়নি। নিচে ডাইনিং রুমে মা, দাদি, বড়মা সবাই আপনার জন্যে ওয়েট করছে। ফ্রেস হয়ে চলে আসুন।
~ ওকে আসছি।

বর্না খুব দ্রুত ফ্রেস হয়ে মাথায় কাপড় দিয়ে নিচে নেমে গেলো। গিয়েই সবার উদ্দেশ্যে একটা ছালাম দিলো। এরপর আশিক এক এক করে সবার সাথে বর্নাকে পরিচয় করে দিলো।

আশিকের দাদি ওনার পার্শে বর্নাকে বসালেন। বর্নার থুতনি তে হাত দিয়ে বললেন-
~ আমার খুব পছন্দ হয়েছে। আমার আশিক কে আগলে রাখতে পারবি তো?
বর্না শুধু মাথাটা ঝাঁকালো।

~ তোর শরীরে তো দেখছি কোনই গহনা পাতি নেই। আজ থেকে আমার সমস্ত গয়না সমস্ত জিনিসপত্র তোকে দিয়ে দিবো। নিবিনা?
~ হুম, নিবো।

বর্না ওনার কথা শুনে খুব দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পরে গেলো। সে আশিকের দিকে তাকাতেই দেখলো আশিকের মুখে আনন্দের ছাপ ফুটে উঠেছে। তার ঠোঁটের এক কোণে হাসিও লেগে আছে। আশিককে এমন ভাবে দেখে সে আরো দ্বিধা দ্বন্দ্বের মধ্যে পরে গেলো।

একটু পরেই আশিকের মা বর্নার গোটা শরীর গয়না গাটি দিয়ে ভরিয়ে দিলেন। বর্নার হাতে দুইটা নতুন শাড়ি তুলে দিতে দিতে বললেন-
~ শুনলাম তুমি নাকি পর্দা করে চলো?

~ হ্যাঁ মা, আপনি ঠিকই শুনেছেন।
~ যাক, তোমাকে আমার খুবই ভালো লেগেছে বউমা। এমন চাঁদের মতো যার মুখ, এমন নিষ্পাপ যার চাহনি তাকে আমি কিভাবে অপছন্দ করি বলোতো?

আশিক বউমাকে রুমে নিয়ে যা। আজ থেকে ও এই পরিবারেরই একজন সদস্য। আশিকের মার শেষ কথাগুলো শুনে বর্নার চোখে পানি ছলছল করে উঠলো। সে ভাবতেই পারেনি এতো সহযে সবাই ওকে এভাবে কাছে টেনে নিবে। এতোটা আপন করে নিবে।

গল্প পরিচয় শেষে বর্না রুমে চলে গেলো। তার চোখ দিয়ে ঝরঝর করে পানি পড়ছে। সে নিজেকে খুব অপরাধী মনে করতে লাগলো। সে নিজেকে এক মিথ্যা রোজিজাল দিয়ে সাজিয়ে রেখেছে, কিন্তু ওরা কেউ সেই রুপ ধরতে পারছে না। অথচ সে ঠিকই খুব নিপুণ ভাবে সবার কাছ তার প্রাপ্য ভালোবাসা টুকু নিয়ে নিলো। যার কিনা কোন দিক দিয়েই সে যোগ্য নয়।

একটু পরেই আশিকও রুমে আসলো। সে বর্নার চোখে পানি দেখে কিছুটা শান্ত গলায় বলল-
~ আমি নিজেই এই বিষয়টার সাথে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারছিনা। আপনার জন্যে আরো বেশি খারাপ লাগছে।
~ ব্যাপার না, আমি সময়ের সাথে ঠিকই নিজেকে মানিয়ে নিতে পারবো।
আশিক কতোকটা উৎসুক হয়ে বলল-

~ আমি মনে মনে চাচ্ছিলাম যেনো বাসার সবাই আপনাকে অপছন্দ করে। তাহলে সেই সুযোগ নিয়ে অন্তত আপনার থেকে আমি দুরে দুরে থাকতে পারবো।

বর্না চোখ মুছে অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো-
~ মানে? আপনার কথা আমি ঠিক বুঝতে পারলাম না!

~ মানেটা সহজ। বাসার সবাই আপনাকে পছন্দ করেছে। মেনে নিয়েছে। তাই এখন একই সাথে একই রুমে আমাদের থাকতে হবে, আর সব কিছু এমন ভাবে মিলিয়ে নিয়ে চলতে হবে, যাতে তারা আমাদের আসল ব্যাপারটা আঁচ করতে না পারে।
কিন্তু আমি যদি আপনার সাথে দূরত্ব রেখে চলি তাহলে বিষয়টা কেমন দেখায় না?
~ হুম বুঝতে পারছি এবার!


পর্ব ৩

বর্না হতাশ হয়ে আশিককে জিজ্ঞেস করলো-
~ আমাদের একই রুমে একই সাথে থাকার বিষয়টা কি রোজি মেনে নিতে পারবে?
~ জানিনা, আপাতত এই বিষয়টা নিয়ে আমি আর ভাবতে পারছি না।

~ কিন্তু কিছু তো একটা ব্যবস্থা করতে হবে, তাই না?

~ হ্যাঁ, করতে তো হবে। দেখি কি করা যায়।

কথাটা বলেই আশিক চলে যেতে ধরলো। কিন্তু একটু যেতেই থেমে গিয়ে বলল-
~ এখন থেকে আমাদের আপনি আপনি করে কথা বলাটাও ঠিক হবেনা।
বর্না বিরক্তি নিয়ে বলল-

~ হুম। কি আর করার।

বর্না আশিককে আড় চোখে তাকিয়ে দেখলো। আশিকের ঠোঁটের কোণে বাঁকা হাসিটা স্পষ্ট বোঝা যাচ্ছে।

বর্নাকে বিরক্ত হতে দেখে আশিক বলল-
~ তোমার যদি তুমি করে বলতে খুব কষ্ট হয়, তাহলে থাক বলতে হবেনা।

বর্না কিছু না বলে একমনে জানালা দিয়ে বাইরে তাকিয়ে রইল। সে মনে মনে ভাবছে কোন ভাবেই তার আশিকের প্রতি দুর্বল হওয়া যাবে না। বা এমন কিছু করা যাবে না যাতে আশিক তার প্রতি দুর্বল হয়ে যায়।

কিছুক্ষণ পর বর্না পেছনে ঘুরে দেখলো আশিক কোর্টে যাওয়ার জন্যে রেডি হচ্ছে। ওর রেসলার দের মতো বডি ফিটনেস দেখে বর্না অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো। যেকোন মেয়েই এমন হ্যান্ডসাম বডি ফিটনেস ওয়ালা ছেলেকে নিয়ে কল্পনা করে। বর্নার তাকানোর ধরন দেখে আশিক আঁচ করতে পারলো। তাই সে একটু হেসে বললো-

~ এমন করে দেখলে তো আমি লজ্জা পেয়ে যাবো!
আশিকের কথা শুনে বর্না যেনো সম্মতি ফিরে পেলো। সে লজ্জায় মাথা নামিয়ে নিলো। আশিককে ও যতোটা চুপচাপ ভেবেছিলো সে ততোটাও চুপচাপ নয়।

আশিক বাইরে যেতে যেতে বলল-
~ আজ আমার খুব তাড়া আছে। তুমি ব্রেকফাস্ট করে নিও। আমি বাইরে গিয়ে করবো।
বর্না লজ্জায় কোন কথা বলতে পারলো না। আশিক চলে গেলো।

বর্না ব্রেকফাস্ট করে রুমে এসে বই পড়তে লাগলো। সে ইচ্ছা করেই এখানে কারো সাথে মিশছেনা। কারন মিশলে যদি আবার এদের প্রতি ভালোবাসা তৈরি হয়ে যায়! তখন সে আরো বেশি কষ্ট পাবে!

তিন মাস পর যখন ওকে এখান চলে যেতে হবে তখন সেগুলোই কষ্ট হয়ে ওর বুকে বিঁধবে।

দুপুরে গোসল করার জন্যে বর্না ওর রুমের এটাস্ট বাথরুমে ঢুকলো। কিন্তু পরক্ষণেই ওর মনে পরলো একটু পর তো আশিক আসবে আর এসেই সেও গোসল করবে। তার উপরে আবার বর্নার গোসল করতে দীর্ঘক্ষণ সময় লাগে। তাই ও রিলাকসে গোসল করার জন্যে নিচের বাথরুমে চলে গেলো।

সে অন্যমনস্ক হয়ে থাকার কারনে বাথরুমের দরজাটা লাগাতে ভুলে গেলো। ওর গোসল করা যখন প্রায় শেষের দিকে ঠিক তখন আশিক বিদ্যুত বেগে তাড়াহুড়ো করে বাথরুমে ঢুকে পড়লো।

বর্নার দিকে চোখ পড়তেই সে মাথা নিচু করে ফেললো। কয়েক সেকেন্ড চুপ করে থেকে সে বাহিরে চলে গেলো। তারপর বাহির থেকে বর্নাকে দরজা লক করতে বললো। বর্না কোনমতে দরজাটা লক করে লজ্জায় মরে যেতে লাগলো! এমনকি এইসব চিন্তা ভাবনা করতে গিয়ে সে শাড়ি টাও ঠিক ভাবে পরতে পারলো না।

আশিক দ্বিধার মধ্যে পরে গেছো। সেও এমন পরিস্থিতির জন্য প্রস্তুত ছিলোনা।

গোসল শেষে বর্না রুমে ঢুকেই দেখতে পেলো আশিক সোফায় বসে ভেজা চুল গুলো মুছতিছে আর এক হাত দিয়ে ফোন চাপছে। ও লজ্জায় বিছানার এক কোনায় গুটিশুটি মেরে মাথা নিচু করে বসে রইল।

আশিক ওর দিকে এক পলক তাকিয়ে বলল-
~ রুমে এসে তোমায় দেখতে না পেয়ে আমি মা কে জিজ্ঞেস করলাম তোমার কথা। মা বললো তুমি নাকি গোসলে গেছো। আমি ভাবলাম তুমি হয়তো এই রুমের বাথরুমেই গেছো! তাই আমি নিচের টাতে গিয়েছিলাম।
একটু পর সে আবার থেমে থেমে বলল-

~ লজ্জা পাওয়ার কিছু নেই। আমি তোমার দিকে ভালোভাবে লক্ষ্যই করিনি।

একটু পর বর্না আশিকের সাথে নিচে গিয়ে শশুর মসাই, দাদু সবার সাথে কথা বললো, গল্প করলো। গল্প শেষে সবাই ডাইনিংয়ে একসাথে দুপুরের খাবার খেতে বসলো। খেতে গিয়ে বর্না একটা বিষয় খেয়াল করলো, আশিকের আলাদা গ্লাস থাকা সত্ত্বেও সে যে গ্লাসে পানি খাচ্ছে আশিক ও সেই গ্লাসে পানি খাচ্ছে।

খাওয়া শেষ করে বর্না রুমে চলে গেলো। একটু পর আশিক ও রুমে আসলো। বর্না আশিককে জিজ্ঞেস করলো-
~ এইটা কি হলো?
আশিক অবাক হয়ে উত্তর দিলো-
~ কোনটা?
~ ঐ যে তুমি আমার গ্লাসে পানি খেলে।
আশিক একটা য় হাসি দিয়ে বলল-

~ আমাদের বাসার এইটাই নিয়ম। স্বামী স্ত্রী এক গ্লাসে পানি খায়। তাতে নাকি ভালোবাসা বাড়ে।
বর্না অবাক হয়ে আশিকের দিকে তাকিয়ে বললো-
~ তুমি এগুলো বিশ্বাস করো?

~ বিশ্বাস করি না কিন্তু মানতে তো হবে। যেহেতু আমার উত্তরপুরুষ রা সবাই এটা মেনে আসছে!
~ যদি সত্যি সত্যিই আমাদের মধ্যে ভালোবাসা তৈরী হয়ে যায় তাহলে?
বর্নার কথাটা শুনে আশিকের মুখ বিমর্ষ হয়ে গেলো।

একটু পর বর্না আবার বলতে লাগলো-
~ তোমার ফ্যামিলির সবাই যে আমায় এতো তাড়াতাড়ি আপন করে নিবে, সেটা আমি স্বপ্নেও ভাবিনি। আমার মনে হচ্ছে আমি যেনো স্বপ্নের মধ্যে আছি। তোমার পরিবারের সবাইকে আমি খুব মিস করবো!

কথাটা বলতে গিয়েই বর্নার কন্ঠটা কেঁপে উঠলো।
একটু পর আশিক বর্নার দিকে তাকিয়ে বলল –

~ এলেই তো মাত্র দুই দিন হলো। এরই মধ্যেই এতো ইমোশনাল হয়ে গেলে?
বর্না চুপ করে রইলো। আশিক অন্য দিকে তাকিয়ে বলল-

~ এখন শুধু একটাই চাওয়া আমাদের প্ল্যান টা যেনো সাকসেস্ ফুল হয়।
~ হুম ঠিক বলেছো।
একটুপর কি যেনো ভেবে বর্না বলল-

~ আর একটা বিষয় না বললেই নয়। জানিনা তুমি কিভাবে নিবে, তবু বলে রাখি! আমি কিন্তু আমার ফ্যামিলির কাওকে এই বাসায় আনবোনা। আমি চাইনা আমার পরিবারের কেউ এই খেলার ভেতরে বন্দি হয়ে যাক।
~ তুমি যেমন টা চাও তেমনি হবে।
~ থ্যাঙ্কস।

এদিকে রোজি আশিককে বার বার কল মেসেজ করছে কিন্তু আশিক কোন সাড়া দিচ্ছে না। বরং সে রোজির নাম্বার ব্লাক লিস্টে রেখেছে।

রোজি আশিকের উপরে যতোটা না রেগে গেলো তার চেয়ে দ্বিগুণ বেশি বর্নার উপরে রেগে গেলো। কারন বর্না ওকে নিজ থেকে কল মেসেজ কিছুই করছেনা। উপরি রোজি দুইবার কল দিয়েছিলো কিন্তু বর্না রিসিভ করেনি।

রোজি রাগে ক্ষোভে ফেটে পরতে লাগলো। কিন্তু কিছুই করতে পারলো না। কারন তার ইচ্ছাতেই যে সবকিছু হয়েছে। সে এখন নিরুপাই।

রাত প্রায় এগারোটার দিকে আশিকের চিল্লানোর আওয়াজ শুনে বর্নার ঘুম ভেঙে গেলো। সে রুম থেকে বের হয়ে নিচে ডাইনিংয়ে নেমে যেতেই দেখলো আশিকের বাবা রাগান্বিত হয়ে ওকে বলছে-

~ ছোট বেলা থেকে তোমার সব জেদ আবদার মেনে নিয়েছি। আর না। এখন তুমি লিমিট ক্রস করে ফেলছো।

আশিক এতোটাই রাগান্বিত হয়ে ছিলো যে বর্না একবারের জায়গায় দুইবার ওর দিকে তাকাতে পারলো না। আশিক বর্নাকে দেখে আর কোন কথা না বলে হনহন করে রুমে যেতে লাগলো। কিন্তু ও টেবিলের খুব কাছ দিয়ে হেঁটে যাওয়ায় দুইটা গ্লাস পরে ভেঙে গেলো। তবু সে ফিরেও তাকালো না।

বর্না কিছুক্ষন হতভম্ব হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো। তারপর কাঁচ গুলো তুলতে গেছে মাত্র অমনি একটা কাচঁ তার পায়ে ফুটে গেলো। কেউ দেখে ফেলার আগেই সে তারাতারি কাঁচটা বের করে রুমে চলে গেলো।

আশিক ফ্যান ছেরে দিয়ে সোফায় বসে আছে। বর্নাকে খুরে খুরে হাটতে দেখে সে জিজ্ঞেস করলো-
~ পায়ে কি হয়েছে?
বর্না নরমাল ভাবে বলল-

~ তেমন কিছু না। কাঁচ গুলো তুলতে গিয়ে একটা পায়ে ফুটছে।
বর্না বেডে গিয়ে বসলো। আশিক তাড়াহুড়া করে ওর কাছে উঠে গেলো। ওর সামনে গিয়ে ফ্লোরে বসে ওর পা টা হাতে তুলে নিলো। হাতে নেওয়ার সাথে ওর হাতে কয়েক ফোঁটা রক্ত পরলো। ও কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলতে লাগলো-

~ ইশ! কত্তো খানি কেটে গেছে, ব্যান্ডেজ করতে হবে।
যেনো কিছুই হয়নি এমন ভঙ্গিতে বর্না বলল-

~ না কিছুই করতে হবেনা! আমি একদম ঠিক আছি!
~ কি করতে হবে সেটা আমি ভালো বুঝবো। তুমি এখন প্লিজ চুপ করে বসে থাকো। আমি এক্ষুনি আসছি। 😊

বর্না বেডে বসে আছে আর আশিক ফ্লোরে বসে ওর পা ব্যান্ডেজ করে দিচ্ছে। ব্যান্ডেজ করতে করতে ও বললো-
~ এখন থেকে তোমার আর রুমের বাইরে যাওয়ার দরকার নেই। যখন যেটার দরকার পরবে তখন সেটা আমায় বলবে। যদি আমি না থাকি তাহলে হাসুর মাকে বলবে।

ব্যথার কারণে বর্নার কথা বলার ইচ্ছা হচ্ছিলো না, তাই সে ছোট্ট করে বললো-
~ আচ্ছা বলবো।

~ আর একটা কথা, কাল থেকে প্রতিদিন সকালে গোসল করবে। আই মিন ঘুম থেকে উঠেই।
কথাগুলো বলেই আশিক চুপ হয়ে গেল। মনে হয় বিব্রত বোধের কারনে আর কিছু বলতে পারছে না।

কিন্ত বর্না ঠিকই বুঝতে পারলো সে কেনো সকালে গোসল করার কথা বলল। তাই ও আর কিছু বললো না।
ব্যান্ডেজ করা শেষ হয়ে গেলে বর্না বেডেই শুয়ে পড়লো আর আশিক সোফায় গিয়ে শুইলো।

সকাল বেলা বর্না গোসল সেরে জানালার পাশে চেয়ারটায় বসে আছে। আশিক এখনও ঘুমাচ্ছে। ওখান থেকে আশিকের মুখটা ভালো ভাবে দেখা যাচ্ছে। ঘুমন্ত অবস্থায় ওকে আরো বেশি সুন্দর লাগছে। বর্না ওর দিক থেকে যেনো কোনভাবেই চোখ ফেরাতে পারছেনা।

রুমের আলমারিতে আশিকের আইন সম্পর্কিত কতকগুলো বই ছিলো। বর্না সেখান থেকে একটা বই বের করে পড়তে লাগলো। আশিক গোসল সেরে রুমে এসে ফরমাল ড্রেস পরতে লাগলো। বর্না বইয়ের দিকে তাকিয়েই ওকে বললো-

~ আজ এতো তাড়াতাড়ি রেডি হচ্ছো যে, আজ ও কি তোমার তাড়া আছে?

~ না, আজ খুব বেশি তাড়া নেই, একটু পর বাইরে যাবো। এমনিতেই রেডি হলাম।
আশিক কথাগুলো বলার সময় একবার মাত্র বর্নার দিকে তাকিয়েছিল। বর্না এতোক্ষণ ভেজা চুল গুলো শুকানোর জন্য ছেড়ে দিয়ে রেখেছিলো। সে চুলগুলো বাঁধতে বাঁধতে বললো-

~ ওহ, আচ্ছা। তাহলে আজ একসাথে ব্রেকফাস্ট করতে পারবো!
আশিক সেই কথার উত্তর না দিয়েই বলল-
~ বাঁধিওনা। ছেড়ে দেওয়াই থাক।
~ মানে?

~ না মানে চুল ছেড়ে দিয়ে রাখলেই বেশি ভালো লাগে। কথাটা বলেই সে ফ্যালফ্যাল করে বর্ষরার দিকে তাকিয়ে থাকলো। সে যে মুখ ফসকে সত্যি কথাটা বলে ফেলছে এটা সে ও বর্না দুজনেই বুঝতে পারলো। কিন্তু তবু সে বিষয় টাকে অন্য দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্যে বলল-

~ আসলে তোমার চুল গুলো ভেজা ভেজা লাগছিলো তাই ছেড়ে দিয়ে রাখতে বললাম।
কথাটা বলেই সে অন্যদিকে মুখ ফেরালো। বর্নাও কোন কথা না বাড়িয়ে বইয়ের দিকে তাকালো। সে ভাবতে লাগলো আশিক সকাল থেকে মাত্র দুই একবারের মতো তার দিকে তাকিয়েছিলো।

আর এরই মধ্যেই সে এতো কিছু খেয়াল করলো কিভাবে? চুল ভেজা আছে। ছেড়ে দিয়েই ভালো লাগছে। চোখ আছে বলতে হয়!

ড্রেস চেঞ্জ করার পর আশিক আলমারি থেকে একটা বই বের করে পড়তে লাগলো। একটু পর হাসুর মা রুমে চা দিয়ে গেলো। সে সোফায় বসে চা খেতে খেতে পড়তে লাগলো।

বর্না আড় চোখে ওকে দেখেছিলো এতোক্ষণ। ওর কেন জানি মনে হতে লাগলো ধীরে ধীরে আশিকের চোখের চাহনি আর কথা বলার ধরন পরিবর্তন হয়ে যাচ্ছে।

কয়েকদিন থেকে দুশ্চিন্তাই থাকায় বর্না একবারো ফেইসবুকে যেতে পারেনি। তাই সে ফোন টা হাতে নিয়ে ফেইসবুকে লগ ইন করলো। রোজি ওর ফ্রেন্ড লিস্টে ছিলো। তাই হঠাৎই বর্না তার একটা পোস্ট দেখতে পেলো। পোস্টে সে লিখেছে-
“একটা ভুল সিদ্ধান্তের কারনে আমি আমার ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেলতে বসেছি। বিশ্বাস নামক শব্দটা সত্যিই অন্ধ। “

পোস্ট টা পড়ে যেনো বর্না আকাশ থেকে পড়লো। রোজি গতকাল ওকে দুইবার কল করেছিলো কিন্তু ও ব্যস্ত থাকায় রিসিভ করতে পারেনি। তারমানে রোজি যাকে ঈঙ্গিত করে এফবিতে পোস্ট টা করেছে, সেই অবিশ্বাস্যের পাত্রী বর্নায়? এসব ভাবতে গিয়ে বর্না অস্থির হয়ে আশিককে জিজ্ঞেস করলো-

~ রোজির সাথে কি তোমার কথা হয়েছিল?
আশিক মিথ্যা বলল-
~ হ্যাঁ, কেনো?
~ ফেইসবুকে কি সব স্ট্যাটাস দিয়েছে তাই বললাম।

আশিক বর্নার কথা শুনে ফোন হাতে নিয়ে কি যেনো টাইপ করতে লাগলো। বর্না রোজিকে কল দিলো, মেসেজ করলো কিন্তু সে কোন রেসপন্স করলোনা।
বর্না আবার ফেইসবুকে ঢুকলো। রোজি একটিভ আছে কিনা তা দেখার জন্য। কিন্তু তাকে অনলাইনেও পেলো না।

বর্না রোজির প্রোফাইল ভিউ করলো। ভিউ করতেই ওর ফ্রেন্ড লিস্টে আশিকের আইডি দেখতে পেলো। কৌতুহল সামলাতে না পেরে আশিকের প্রোফাইলও ভিউ করে ফেললো। ভিউ করতেই টাইমলাইনের ফার্স্ট পোস্টে চোখ পড়লো। সে এগারো ঘন্টা আগে পোস্ট টা করেছে। পোস্ট টাতে লেখা ছিলো-

“Feeling Alive – At the first time I’m in love with someone”

বর্না পোস্ট টা পরে বাকরুদ্ধ হয়ে গেলো। সে একটু পর আশিকের দিকে তাকিয়ে দেখলো ও রাফ পৃষ্ঠায় কি যেনো লেখালেখি করছে। বর্না ইতস্তত করতে করতে বললো-

~ আশিক রোজির সাথে কি তোমার কনটাক্ট হলো?
~ হুম।
বর্নার দিকে না তাকিয়েই সে উত্তর টা দিলো।

বর্নার মাথা ভনভন করে ঘুরতে লাগলো। তাই সে আধাশোয়া হয়ে চোখ বন্ধ করে রইলো। একটুপরেই চিন্তার সাগরে ডুবে দিলো।
খানিক পরে আশিকের কথায় সে সম্মতি ফিরে পেলো।
~ বর্না একটা কথা জিঙ্গেস করবো?

~ হ্যাঁ, বলো।
~ তোমার কি খুব কাছের কেউ আছে? এই যেমন ধরো ভালোবাসার, কেয়ার করার! ‘

আসলে বর্নার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। কিন্ত যদি সেই সত্যি কথাটা বললে আশিক ওর প্রতি দুর্বল হয়ে যায় তাই সে মিথ্যা বলল-
~ হ্যাঁ আছে তো।

কথাটা বলেই ও আশিকের দিকে তাকালো। আশিক এক দৃষ্টিতে ফোনের দিকে তাকিয়ে আছে। একটুপর সে নরমাল ভাবে বলল-
~ ওহ, তাইতো। এমন পরীর মত দেখতে একটা মেয়ের কেয়ার করার কেউ থাকবে না তা কি করে হয়!

কিছুক্ষণ পরে হাসুর মা ব্রেকফাস্ট করার জন্য নাস্তা দিয়ে গেলো। বর্না আশিককে উদ্দেশ্যে করে বললো-
~ ব্রেকফাস্ট করবে না? ‘
~ হুম, তুমি শুরু করো!

দুজন একসাথে ব্রেকফাস্ট করছে। আশিক হঠাৎই বলল-
~ তোমার পায়ের এখন কি অবস্থা?
~ ব্যাথা অনেকটাই কমেছে।

তারপর দুজনেই চুপচাপ। ব্রেকফাস্ট শেষে আশিক বলল-
~ বর্না আজ দুপুরে আমরা রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো। তুমি রেডি হয়ে থেকো।
আশিক নির্দেশর স্বরে এমন ভাবে কথাটি বললো যে বর্না না করতে পারলো না। মাথা ঝাকিয়ে সম্মতি জানালো। একটুপর আশিক আবার বললো-

~ আমি তোমার জন্য কাল দুইটা শাড়ি এনেছি। বলতে ভুলে গিয়েছিলাম। ওয়্যারড্রোবে রাখা আছে। নীল কালার টা পরিও।
বর্না কি বলবে সেটা বুঝে ওঠার আগেই আশিক কোর্টে চলে গেলো।

এমনিতেই বর্না ঠিকঠাক মত শাড়ি পরতে পারেনা তার উপরে আবার আশিক যে দুটো শাড়ি এনেছে সে দুটোই ওয়েটল্যাস জর্জেটের। তাই সে অনেক ভেবে চিন্তে সিদ্ধান্ত নিলো যে শাড়ি পরে নয়, বোরখা পরেই সে রেস্টুরেন্টে খেতে যাবো।

দুপুরে বেলকনীতে বসে বর্না বই পড়ছিলো এমন সময় আশিক বাইরে থেকে আসলো। ওর আনা নীল শাড়িটা বর্নাকে পরতে না দেখে বলল-

~ কি ব্যাপার তুমি ক্যান জানি এখনো রেডি হওনি? শাড়িটা কি পছন্দ হয়নি?
~ না। দুই শাড়িই আমার খুব পছন্দ হয়েছে। কিন্তু সমস্যা হল আমি ঠিকঠাক মতো শাড়ি পরতে পারিনা। আর ওয়েটল্যাস জর্জেট তো আরোই পারিনা।

আশিক ড্রেস চেঞ্জ করতে করতে বলল-
~ ওহ্, তালে আর কি করার! !

একটু পরেই কি যেনো ভেবে সে আবার বলতে লাগলো-

~ আমি চাচ্ছিলাম যে তুমি আমার সাথে আমার পছন্দের শাড়ি টা পরে বের হও। কিন্তু সেটা আর হলোনা, নো প্রবলেম। তোমার যেমন ভাবে যেতে ভালো লাগবে তেমন ভাবেই যেও।

কথাটা বলেই সে ওয়াসরুমে গেলো ফ্রেস হতে। ওর কথা শুনে বর্নার ভেতরে খারাপ লাগা কাজ করতে থাকলো। কারন আশিক অনেকটা হতাশার স্বরেই কথা গুলো বলল। হয়তো সেজন্যই বেশি খারাপ লাগা কাজ করছে। যদি সে জোর করতো তাহলে হয়তো এই খারাপ লাগাটা আর কাজ করতো না।

অবশেষে বর্না শাড়ি পরার ই সিদ্ধান্ত নিলো। ওয়্যারড্রোব থেকে শাড়ি টা বের করতেই আশিক রুমে আসলো। ওকে আসতে দেখে সে বললো-
~ তুমি বেলকনীতে গিয়ে একটু ওয়েট করো আমি দেখি শাড়িটা পরতে পারি কি না!
ও কিছু না বলেই বেলকনীতে চলে গেলো।

প্রায় দুই ঘন্টা হয়ে গেল বর্না তবুও ঠিকভাবে শাড়ি পরতে পারছিলো না। বাসায় যে কারো কাছ থেকে পরে নেবে লজ্জায় সেটাও পারছিলো না। ওর এহেন অবস্থা আশিক আঁচ করতে পেরেছিল। একটু পর সে বলল-
~ আর কতক্ষণ লাগবে?

~ আমি একটুও পারছি না যে।
বর্নার কথাটা শেষ না হতেই আশিক সোজা বেলকনী থেকে রুমে চলে আসলো। বর্না ওকে দেখে দ্রুত কাপড় ঠিক করে নিতে লাগলো। বর্নার এমন কান্ড দেখে সে একটা বাঁকা হাসি দিয়ে বলল-

~ এতো লজ্জার কি আছে? কতক্ষণ থেকে আমায় বসিয়ে রেখেছো সেদিকে তোমার খেয়াল আছে?
~ আমি যে ঠিকভাবে পরতে পারছিনা কি করবো? আর তুমি আমায় না বলে রুমে ঢুকলে কেনো?
~ আমি তো তোমার স্বামীই তাই না? না বলে ঢুকলে কি এমন সমস্যা?

~ সমস্যা আছে। তুমি কি ভুলে গেছো আমাদের মধ্যে কি প্ল্যান হয়েছিলো? আর তাছাড়া তোমার গার্লফ্রেন্ড আই মিন রোজি যদি জানতে পারে তখন কি হবে?

~ কথায় কথায় এতো রোজি রোজি করো কেনো? যেই প্ল্যান ই হোক না কেনো। আমি এখন তোমার লিগ্যাল হাসবেন্ড। চাইলে অনেক কিছুই করতে পারি।

ওর কথা গুলো শুনে বর্না যেনো আকাশ থেকে পড়লো। ও কোন কথা না বলে পুরাই থ মেরে রইলো। আর আশিকের দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকলো। আশিক ওর সামনে গিয়ে ওর কানে ফিসফিস করে বললো-
~ সেদিন তো সবকিছু দেখেই ফেলেছি, তারপরও এতো লজ্জা কিসের?

আশিকের কথা শুনে লজ্জায় বর্নার সেন্সলেইস হওয়ার যোগার। সে দুই কান দুই হাত দিয়ে চেপে ধরলো। আশিক হঠাৎই ওর শাড়ি টা খুলে দিতে লাগলো। বর্না রাগে লজ্জায় চোখ বন্ধ করে ফেললো। সে খুব তাড়াতাড়িই শাড়ি টা পরিয়ে দিল।

বর্না যতোটা না ওর কথাবার্তায় অবাক হয়েছে তার চেয়ে বেশি অবাক হয়েছে ওর এতো দ্রুত শাড়ি পরিয়ে দেওয়া দেখে।


পর্ব ৪

শাড়ি পরানো শেষ হলে আশিক বর্নাকে চোখ খুলতে বলল। বর্না চোখ খুলতেই দেখলো আশিক ওর দিকে তাকিয়ে হাসছে।

এরপর আশিক ওকে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে বলল-
~ দেখো কেমন হয়েছে?
বর্না মুখ ভারী করে বলল-
~ দেখবোনা!
আশিক হাসতে হাসতে বলল-
~ আমি নিচে ওয়েট করতেছি, তুমি তারাতারি চলে এসো।

কথাটা বলেই আশিক নিচে চলে গেল। এই সুযোগে বর্না আয়নায় নিজেকে ভালো করে দেখতে লাগলো। সত্যি সত্যিই ওকে অনেক সুন্দর করে শাড়িটা পরিয়ে দিয়েছে। বর্নার মনে হচ্ছে সে যেনো ঘোরের মধ্যে আছে। সে আশিককে ইগনোর করতেও পারছেনা আবার ওকে দুরে ঠেলতেও পারছেনা। একদম দোটানায় পরে গিয়েছে।

ছোটবেলা থেকেই বর্না কোন ছেলের সাথে মিশতো না। হয়তো সে কারণেই আশিকের প্রতি ও এতো বেশি ইন্টারেস্ট হয়ে যাচ্ছে!

বর্না নিচে নেমে গিয়ে দেখলো আশিক বাইক নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বর্না আশিকের সামনে যেতেই আশিক ওকে চোখ টিপ মেরে বলল-
~ আমি কিন্তু ধীরে বাইক চালাতে পারি না। তাই তুমি এখনি সিদ্ধান্ত নাও বাইকে যাবে নাকি ট্যাক্সি তে যাবে!
~ আমি তাহলে ট্যাক্সি তেই যাবো।

কথাটা বলেই বর্না আশিকের দিকে তাকালো। আশিক অন্য দিক হয়ে আছে। মে বি হাসছে। ওর এমন আচরনে বর্না খুবে রেগে গেলো। মনে মনে বলল- ‘আজ আমায় খুব জালিয়ে মারছে। বা**। ভাল্লাগেনা। এর শিক্ষা তোমায় দিয়েই দিবো ময়নাপাখি!

বর্না রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে গাড়ি থামানোর চেষ্টা করতে লাগলো কিন্তু কোন গাড়িই থামলোনা। সে একটুও বুঝতে পারলো না যে আশিক ওর পেছন থেকে গাড়ি থামতে নিষেধ করছে। একটু পর বর্না হাল ছেড়ে দিয়ে ওর বাইকে যেতে রাজি হয়ে গেলো।

বর্না ভেবছিলো আশিক হয়তো একটু ধীরে চালাবে। কিন্তু না! বর্নার ধারনা ভুল হয়ে গেলো। আশিক এতোটাই হাই স্পিডে বাইক চালাতে লাগল যে বর্না চোখের পাতা পর্যন্ত মেলতে পারলো না। উপায় না পেয়ে সে পেছন দিক থেকে ওকে সাপের মতো করে পেচিয়ে ধরে রইলো।

রেস্টুরেন্টে ওরা দুজন সামনা হয়ে বসে আছে। বর্নার মাথা অনেক বেশি ঘুরছিল। তাই সে চুপচাপ মাথা নিচু করে বসে রইল। একটু পর আশিক ওর পছন্দ অনুযায়ী খাবার অর্ডার করলো।

তারপর বর্নার চোখে চোখ রেখে বলল-

~ আজ আমি তোমায় এমন কিছু কথা বলতে যাচ্ছি, যা তুমি শোনার জন্যে মোটেই প্রস্তুত ছিলে না। কিন্তু তবু বলতে হচ্ছে। কারন আমি না বলে থাকতে পারছিনা। তোমায় প্রথমে বাসাতেই এই কথাগুলো বলতে চেয়েছিলাম। পরে ভাবলাম তুমি যদি রাগের মাথায় কিছু করে বসো, তাহলে বাসার সবাই সব কিছু জেনে ফেলবে। তাই বাইরে আনলাম।

বর্না চিন্তিত হয়ে বলল-
~ ওহ আচ্ছা। তাহলে তোমার উদ্দেশ্য ঘোরাঘুরি, খাওয়া দাওয়া নয়? গোপন কথা বলা….

~ আসলে তুমি যা ভাবছো তা নয়। তোমার সাথে ঘুড়তে সময় কাটাতে আমার খুবই ভালো লাগছে।

~ হয়েছে থাক। কি বলবে তারাতারি বলো। আমার ধৈর্য সহ্য হচ্ছে না।

আশিক বর্নার দিকে তাকিয়ে মলিন মুখে বলতে শুরু করল-

~ 2017 সালের 23 শে মার্চ। আমার বড় চাচ্চুর বিয়ের ইনভাইট কার্ড দিতে রোজিদের বাসায় গিয়েছিলাম। সেদিন ওখানে গিয়ে তোমায় প্রথমবার দেখেছিলাম। সেই দেখাতেই আমার মনে হয়েছিলো যেনো আমি তোমায় যুগ যুগ ধরে চিনি। যেনো তোমারি অপেক্ষায় এতোদিন অপেক্ষা করেছিলাম। তারপর ধীরে ধীরে তোমায় ভালোবাসতে লাগি।

আমাদের আর রোজিদের বাসা একই পাড়াতে হওয়ায় মাঝে মাঝেই ওর সাথে আমার কথা হতো। কিছুদিন পরে জানতে পারলাম তুমি ওর বেস্ট ফ্রেন্ড। একই কলেজে পড়ো, একই সাথে একই হোস্টেলে থাকো।

আমি সেই সুযোগ টা নিয়ে নিলাম। আমি রোজির সাথে ফ্রেন্ডশীপ করলাম। এমনকি ওর সাথে রেগুলার কথাও বলতাম। কয়েকদিন পর আমি রোজিকে তোমার ব্যাপারে সব বললাম। ও তখন আমায় বলেছিলো তুমি নাকি অন্য যায়গায় রিলেশনশিপ করো। কিন্তু কথাটা আমার বিশ্বাস হয়নি।

আমি কোনভাবেই মেনে নিতে পারিনি। তাই আমি তোমার সাথে কথা বলার জন্যে ওর কাছে অনেকবার রিকোয়েস্ট করি। কিন্তু ও প্রতিবার ই বলেছিলো, তুমি নাকি আমার সাথে কথা বলতে চাওনা।

শেষে আমি হাল ছেড়ে দিই। কিন্তু হঠাৎ কিছুদিন পর যখন রোজি আমায় প্রোপোজ করে তখন আমি বুঝতে পারি যে ও নিজেই আমায় ভালোবাসে, যে কারনে ও তোমার সাথে আমার কনটাক্ট করিয়ে দেয়নি। প্রচণ্ড রাগ হচ্ছিলো ওর উপরে। তাই আমি সিদ্ধান্ত নেই যে ওর সাথেও একটা খেলা খেলবো।

যেমন ভাবা তেমন কাজ। আমি ওর সাথে রিলেশন করতে রাজি হয়ে গেলাম। আর প্রতিদিন এই কথায় ঐ কথায় তুমি কোথায় কি করছো না করছো এইসব শুনতাম। ওর সাথে প্রায়ই মিট করতাম আর ওকে বলতাম ওর সব ফ্রেন্ডদেরকে যেনো নিয়ে আসে। ও সবাইকে নিয়ে আসতো শুধু তোমাকে আনতো না। আমি বুঝতাম ও ইচ্ছা করেই এমনটা করছে। তাই আমার আরো বেশি রাগ লাগতো।

আমাদের বাসা থেকে তোমাদের হোস্টেলের দূরত্ব ছিলো পঁচিশ কিলোমিটারের মতো। তবু প্রতিদিন একবার করে হলেও তোমাদের হোস্টেলের সামনে গিয়ে, কফি হাউসে বসে থাকতাম। যদি কোন ভাবে তোমায় একবার দেখতে পারি সেই আশায়। কিন্তু না, একটা দিন ও তোমায় দেখতে পেতাম না।

শেষপর্যন্ত ডিসিশান নিলাম যে আর এভাবে নয়। ফাইনাল কিছু একটা করতে হবে। তারপরই বিয়ের প্ল্যান টা মাথায় আঁকলাম। আর তোমায় বিয়েটাও করে ফেললাম।

কথাগুলো বলেই আশিক চুপ হয়ে গেল। বর্না ওকে বলার মতো ভাষা হারিয়ে ফেলেছে। সে শুধু একদৃষ্টিতে ওর মুখের দিকে তাকিয়ে রইল।

একটু পর আশিক আবার বলা শুরু করলো-
~ কিন্তু তোমায় নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেছিলাম সেই স্বপ্নটা স্বপ্নই রয়ে গেলো। আজ সকালে যখন তোমার মুখ থেকে শুনলাম তোমার বয়ফ্রেন্ড আছে, তখন থেকে আমার সব আশা ভরসা শেষ হয়ে গেছে।

আশিকের শেষ কথাটা শোনার পর বর্নার চিৎকার করে বলার ইচ্ছা হচ্ছিলো, ‘যে আশিক আমিও তোমায় ভালোবেসে ফেলেছি। আমার কোন বয়ফ্রেন্ড নেই। আমি পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে ঐ কথা বলেছি। আমার কল্পনা জুড়ে শুধু তুমিই আছো। কিন্তু সে কিছুই বলতে পারলো না।

বর্নাকে চুপ থাকতে দেখে আশিক বলল-
~ চিন্তা করোনা, আমি তোমায় কখনোই জোর করে আমার কাছে আটকে রাখবোনা। তোমাকে স্বাধীন করে দিবো।
বর্না একটু ভেবে বললো-
~ স্বাধীন বললেই কি স্বাধীন হওয়া যায়? এমন অনেক সম্পর্ক আছে যা থেকে চাইলেও নিজেকে আলাদা করা যায় না।

দুইজন কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো। তারপর বর্না আগ বাড়িয়ে বলল-
~ রোজি কি এগুলো জানে?

~ না জানেনা। আর ওকে জানানোরও কোন প্রয়োজন নেই। তোমায় বিয়ে করার পর থেকে আমি ওর সাথে কনটাক্ট করা বন্ধ করে দিয়েছি। আর তখনই দেখেছি ও আমায় কতোটা ভালোবাসে।

আমার কাছে ভালোবাসার মূল্যটা অনেক বেশি। আমি ওকে ভালোবাসি না ঠিকই কিন্তু ও তো আমায় ভালোবাসে। আমি তোমায় পেয়েও হারিয়ে বুঝেছি, ভালোবাসার মানুষটিকে হারিয়ে ফেলার কতোটা কষ্ট। তাই আমি ওকে সেই কষ্টটা দিতে চাইনা। তুমি প্লিজ ওকে কিছুই বলোনা।
~ ঠিক আছে, আমি রোজিকে কিছুই বলবো না। কিন্ত এখন আমি কি করবো?

~ এখন আমরা আমাদের প্ল্যান মোতাবেক এগিয়ে যাবো। এছাড়া তো আর কিছু করার নেই। তাছাড়া আমি ভেবে দেখলাম আমাদের ডিভোর্সের পর আমি রোজিকেই বিয়ে করবো। সেটাই আমার জন্য ভালো হবে। আমি জানি আমি ওকে কখনো স্ত্রীর অধিকার দিতে পারবোনা, কিন্তু আমি তোমায় না পেয়ে যে কষ্টটা পাচ্ছি সেটা ওকে কখনো পেতে দিবোনা।
বর্না একটা শুকনো হাসি হেসে বলল-

~ গুড ডিসিশন।
আশিক অবাক হয়ে বললো-
~ আমি ভেবেছিলাম তুমি এগুলো শোনার পর হয়তো রাগ করবে বা তার চেয়েও বেশি কিছু। কিন্তু না তুমি তার কিছুই করলেনা। তুমি এখনো যেভাবে ধীর স্থির হয়ে বসে আছো তাতে আমার বিশ্বাসই হচ্ছেনা যে আমি তোমাকে সব ঘটনাই বলে ফেললাম।

আশিকের কথা শুনে বর্না মনে মনে খুব বিরক্ত হয়ে গেলো। সে ভাবলো আশিক ওকে এতো ভালোবাসে কিন্তু সে যে এখন পরিস্থিতির স্বীকার সেটা আশিক কেনৌ বুঝতে পারছে না? নাকি বুজেও বুঝতিছেনা।

বর্না শুধু একটা বিষয় ভেবেই রেগে যাচ্ছে যে আশিক কেনো ওর চোখের দিকে তাকিয়েও ওর চোখের ভাষা বুঝতে পারছে না। এই জন্যই হয়তো হুমায়ুন স্যার বলেছিলেন, ‘ছেলেদের মুখ ফুটে কিছু বললেও সহযে বুঝতে পারেনা।

আশিক তো তবু ওর ভালোবাসার কথা টা বর্নাকে বলতে পারলো। একটা সিদ্ধান্তও নিতে পারলো। কিন্তু বর্না তো সেটাও পারলো না। বরং অপরাধী সেজে বসে রইলো। আর আজ আশিককে এতোটা কাছে পেয়েও সে ভালোবাসার কথাটা বলতে পারলো না। ওর মতো এতো ভাগ্যবতী মেয়ে কি এই পৃথিবীতে আর আছে?

বর্নাকে চুপ থাকতে দেখে আশিক বলল-
~ এই বিষয়টা নিয়ে আর ভাবিওনা। শুধু সময় নষ্ট হবে এছাড়া আর কিছুই হবে না।
বর্না কিছুই না বলে চুপ করে মাথা নিচু করে থাকতে লাগলো।

আশিক আবার আগ বাড়িয়ে বলল-
~ কি ব্যাপার কিছুই খাচ্ছো না যে, অন্য কিছু কি অর্ডার করবো?
বর্না এবার অন্য দিকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বললো-

~ আমার মাথাটা খুব ব্যথা করছে। কিছু খাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছেনা। প্লিজ আমায় তাড়াতাড়ি বাসায় নিয়ে চলো।

বর্নার কথা শুনে আশিক বিল পে করতে গেলো। বর্না এই সুযোগে চোখ টা মুছে নিলো। নাহ্। আজ আর চোখ মুছেও কাজ হচ্ছেনা। ও কোনভাবেই চোখের পানি আটকাতে পারছে না।

বর্নাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে আশিক কোথায় জানি চলে গেলো। বর্না ওকে সে সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা না করেই সোজা রুমে চলে গেলো। রুমে গিয়ে সে কতক্ষন ধরে কান্না করলো তা বলা বাহুল্য।

রাতে ডিনারের পর বর্না ওর আপুর কাছে ফোন দিলো। আজ ওর বাসার সবাইকে একটু বেশিই মিস্ হতে লাগলো। একবার কল করতেই ওর আপু রিসিভ করলো-

~ শিমু আপু আমি বর্না বলছি, কেমন আছো?
~ হ্যা ভালো। এইটা কি তোর নতুন নাম্বার?
~ হুম, কি করছো?
~ ডাক্তার কালই মাকে হাসপাতালে এডমিট করতে বলেছে। কি কি নিয়ে যেতে হবে সেগুলো গোছগাছ করছি। মার সাথে কথা বলবি?

~ না থাক। তুমি মার যত্ন নিও। আর কখন কতো টাকা লাগে আমায় বলিও।
~ আচ্ছা বলবো। তুই নাকি বাবাকে পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিস?
~ হু।
~ এতো টাকা তুই কোথায় পেলি বর্না, আমায় সত্যি করে বলতো?

~ আশিক দিয়েছে। ওর কি টাকার অভাব আছে! ও বলেছে আমার ফ্যামিলির জন্য যতো টাকা লাগবে সব দিয়ে দিবে। তুমি কোন চিন্তা করোনা। আমি খুব শীঘ্রই তোমাদের সাথে দেখা করতে যাবো, বাই।
~ আচ্ছা ঠিক আছে।

বর্না ইচ্ছা করেই দ্রুত কথা বলা শেষ করলো। কারন সে ওর আপুর সাথে কথা বলতে গিয়ে কান্না আটাতে পারছিলো না।

বর্না বেলকনীতে দাঁড়িয়ে ওর আপুর সাথে কথা বলছিলো। তাই আশিক কখন বাইরে থেকে রুমে এসেছিলো বর্না বুঝতেই পারেনি। সে রুমে ঢুকতেই দেখলো আশিক সোফায় বসে টিভি দেখছে।
আশিককে দেখে ও মাথা নিচু করে বেডের এক পাশে গিয়ে বসলো। যাতে আশিক ওর চোখ দেখে বুঝতে না পারে যে সে কান্না করেছে।

একটু পর আশিক বর্নাকে রাগী রাগী ভাব নিয়ে জিজ্ঞেস করলো-
~ তো এতক্ষণ ধরে কোথায় কথা বলা হলো?

~ বাসায়, আপুর সাথে।
আশিক একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিয়ে বলল-
~ আই নো। গুড।

রাতে ওদের মধ্যে আর কোন কথা হলোনা। আশিককে দেখে মনে হচ্ছিল সে অনেক রেগে আছে। তাই বর্না চুপচাপ বেডের এক পাশে শুয়ে পরলো।

একটু পর টিভি অফ করে আশিক ও সোফায় শুয়ে পড়লো। একই ছাদের নিচে দুজন শুয়ে আছে। দুজন দুজনকে নিজের জীবনের চাইতেও বেশি ভালোবাসে অথচ তাদের মধ্যে আকাশ পাতাল দুরত্ব…. কেউ কারো সাথে কথা বলতে পারছেনা, ভালোবাসাগুলো শেয়ার করতে পারছেনা!

পরদিন সকালে বর্না গোসল সেরে বেলকনীতে বসে চুল শুকাচ্ছিলো। আশিক কখন ওর পিছে এসে দাঁড়িয়েছিল সেটা ও বুঝতেই পারেনি। বর্না হঠাৎ পেছনে তাকাতেই দেখলো আশিক ওর পিছে দাঁড়িয়ে আছে।

বর্নার চোখে চোখ পরতেই আশিক একটা বাঁকা হাসি দিয়ে ওর পাশে গিয়ে দাঁড়ালো। এতোটাই কাছাকাছি হয়ে দাঁড়াল যে বর্নার হাতের সাথে ওর হাতের স্পর্শ লাগতে ধরলো।

বর্না সাথে সাথেই একটু সরে দাঁড়ালো। আশিক বর্নার কপালের পাশের ভেঁজা চুল গুলো সরিয়ে দিতে দিতে বলল-
~ আমি কোন ভাবেই তোমার থেকে নিজেকে দুরে রাখতে পারছিনা। তোমায় যতো দেখছি ততোই মুগ্ধ হয়ে যাচ্ছি। প্রতি মুহূর্তে নতুন ভাবে নতুন করে প্রেমে পরছি। আর তুমি যতো বেশি চুপ চাপ হয়ে থাকছো ততো বেশি তোমার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যাচ্ছি। কি করি বলো তো?

বর্না খানিক ক্ষণ চুপ থেকে বলল-
~ কিছুই করার নেই। কারন তোমার সেই ভালোবাসা পাওয়ার যোগ্যতা আমার নেই। যদি থাকতোই তাহলে আমাদের মধ্যে এতোবড় দেয়াল থাকতো না।

আশিক ওর দু’হাত বর্নার দু’গালের উপর রেখে বলল-
~ তোমায় কি আমি কোন মুল্যেই পেতে পারিনা?

বর্না আশিকের দুইহাতের উপর ওর দু’হাত দিয়ে চেপে ধরলো। বর্নার এমন আচরনে আশিক ওর দিকে বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকালো। বর্না ওর মুখটা আশিকের মুখের খুব কাছে নিয়ে গিয়ে বললো-

~ তুমি কি পারবে আমার জন্য রোজিকে কষ্ট দিতে?
আশিক তৃপ্তি সহকারে বলল-
~ তোমায় পাওয়ার জন্য ওতোটুকু স্বার্থপর হতেই পারি।

বর্না আশিকের চোখের চাহনি দেখেই বুঝতে পারলো, আশিক ওকে যে কোন মূল্যে পেতে রাজি আছে। বর্না ওর গাল থেকে আশিকের হাত দুটো নামিয়ে দিয়ে বললো-

~ কিন্তু আমি তোমায় এভাবে পেতে চাইনা আশিক। আমি এতটা স্বার্থপরের মতো করে তোমায় পেতে চাইনা। আমি রোজিকে ধোকা দিতে পারবোনা।

বর্নার কথা শুনে এবার আশিকের মুখ শুকিয়ে গেলো। সে রাগী কন্ঠে বলল-

~ যা কিছু করেছি সব তোমায় পাওয়ার জন্যই করছি। আজ রোজির জন্যই আমাদের দুজনের মধ্যে এতো বড় একটা দেওয়াল তৈরি হয়ে আছে। আর তাকে নিয়েই তোমার এতো মাথাব্যথা। বাহ্। আমি যে এদিকে তোমাকে না পাওয়ার হতাশায় নিজেকে শেষ করে দিচ্ছি সেদিকে তোমার কোন খেয়াল ই নেই। সত্যিই আমি খুব আনলাকি।

আমার ভেবে দেখা উচিত ছিল যে তুমি আমায় ভালোবাসবে কি না! আজ এখন পর্যন্ত এতোকিছু হওয়ার পরও আমি তোমায় আপন করে পাওয়ার জন্য আকুল হয়ে আছি। জানিনা কতোটা ভালোবাসলে একটা ছেলে একটা মেয়ের জন্য এতোটা মাতাল হয়ে যায়!

আশিক কথা গুলো বলতে বলতে এতোটাই রেগে গেলো যে ওর চোখ দুটো রক্তজবার মতো লাল হয়ে উঠেলো। বর্না ওর দিকে ভয়ে তাকাতে পারলো না। মাথা নিচু করে অন্য দিকে তাকিয়ে রইল। এতে আশিক আরো বেশি রাগান্বিত হয়ে বর্নাকে বললো-

~ আমি যে প্রতিটা মুহূর্তে তোকে না পাওয়ার কষ্টে ধুকে ধুকে মরছি সেটা কি তুই বুঝতে পারছিস না, বল?

বর্নাকে চুপ করে থাকতে দেখে আশিকের রাগ যেনো আরো দ্বিগুণ বেড়ে গেলো। কিন্তু তবু বর্না চুপ করেই রইলো। কারন ওর বলার মতো কোন সাহস এখন নেই।

কন্টিনিউ এভাবে চুপ থাকতে দেখে আশিক আচমকাই ওর এক হাত দিয়ে বর্নার মাথার পিছন দিককার চুল মুষ্টিবদ্ধ করে ধরলো। তারপর ওর মুখের দিকে বর্নার মুখ তুলে ধরে বলল-

~ তুই তো টাকার জন্যে আমায় বিয়ে করেছিলি, তাইনা? ঠিক আছে আমি তোকে টাকা দিয়েই সারাজীবন আমার কাছে ধরে রাখবো। তুই আমার না হলে আর কারো হবিনা। এইটা মাথায় ঢুকে রাখ।

ও এতো জোরে বর্নার চুল ধরে রেখেছিল যে ব্যথায় বর্নার চোখ দিয়ে পানি ঝরতে লাগলো। বর্না কান্না করতে করতে বললো-
~ প্লিজ আমায় ছেড়ে দাও। তোমার কিছুই আমার লাগবেনা। আমি আজই আমার বাসায় চলে যাবো। গিয়েই তোমায় ডিভোর্স পেপার টা পাঠিয়ে দিবো।

ওর কথা শুনে আশিক যেনো বিদ্যুত বেগে রাগান্বিত হয়ে উঠলো। বর্নার মুখের কাছে ওর মুখটা নামিয়ে নিয়ে বলল-
~ তুই আমায় ডিভোর্স দিবি, তাইনা?

বর্না চুলের ব্যাথা সহ্য করতে না পেরে কান্না করতে লাগলো। আশিক বর্নার চুল ছেড়ে দিয়ে ওর ঠোঁটে গভীরভাবে একটা কিস্ করলো। তারপর বেলকনী থেকে রুমে চলে গেল। বর্না থ মেরে বেলকনীতেই দাঁড়িয়ে রইলো।
একটুপর আশিক আবার ওর সামনে গিয়ে কিছুটা নরম গলায় বলল-

~ এখন থেকে আমি কোন দরকার ছাড়া এ বাসায় আসবোনা। আমি আমাদের যে বাসাটা কোর্টের কাছে ভাড়া দেওয়া আছে ঐখানে থাকবো। আর কি যেন তখন বলছিলে “বাসায় চলে যাবে আমায় ডিভোর্স দিবে” [একটু হেসে] আজ থেকে তুমি এই রুমের বাইরেই বেরোতে পারবেনা। আমি সেই ব্যবস্থা করে রেখেই যাবো।

তুমি শুধু আমার। আর সারাজীবন আমার কাছেই থাকবে। তোমায় পাওয়ার জন্যে আমি কতোটা খারাপ হতে পারি সেটা তুমি কল্পনাও করতে পারবেনা।

কিন্ত হ্যাঁ আমি নিজেও তোমার সাথে থাকবোনা। কারন আমি তোমায় বুঝিয়ে দিবো যে একাকীত্ব কতোটা কষ্টের। তোমার জন্যে আমি প্রতিমহুর্তে যে কষ্ট ফিল করি সেটা তোমাকেও ফিল করাবো।

কথা গুলো বলার পর আশিক বর্নার কোন উত্তরের অপেক্ষা না করেই চলে গেলো।


পর্ব ৫ (শেষ পর্ব)

বর্নার মাথার উপরে যেনো আকাশ ভেঙ্গে পরলো। সে বেলকনী থেকে রুমের দরজায় গিয়ে দেখল সত্যি সত্যি দরজা বাহির থেকে লক করা। এবার ওর রাগে ক্ষোভে সুইসাইড করার ইচ্ছা হলো। এমন ভাবে সে পরিস্থিতির স্বীকার হয়ে পরলো যে সব কিছু পেয়েও সে ধরে রাখতে পারছেনা। শুধু দোষীই হয়ে যাচ্ছে।

কান্না করতে করতে কখন যে বর্না ঘুমিয়ে পড়েছে সে হিসেব বাহুল্য। রোজির ফোনে ওর ঘুমটা ভেঙে গেলো। রিসিভ করতেই রোজি ওপাশ থেকে বললো-

~ বর্না, তুই কি আমার ব্যাপারে আশিককে কিছু বলেছিস?
~ না তো! কেনো কি হয়েছে?

~ ও আমায় কল দিতে না করছে। হঠাৎই ওর এতো পরিবর্তন আমি মেনে নিতে পারছিনা। তুই কি বলতে পারবি ওর কি হয়েছে?
বলেই সে কান্না করতে লাগল। ওর কান্না শুনে বর্নার হার্টবিট হঠাৎ করেই বেড়ে যেতে লাগলো। কারন সে জানে আশিক কেন ওকে কনটাক্ট করতে না করছে। কিন্তু ওকে এসব বলবে কোন মুখে।

বর্নার মনে হতে লাগলো যেনো সে-ই রোজির সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করছে। তার জন্যেই এতো কিছু হচ্ছে। সে কিছুক্ষন চুপচাপ থেকে বললো-

~ প্লিজ রোজি তুই কান্না করিস না, আশিক হয়তো কোন বিষয় নিয়ে তোর উপরে রাগ করে আছে, সে জন্য কনটাক্ট করতে না করছে।

কিন্তু রোজি এতোটাই কান্নায় ভেঙ্গে পরেছিলো যে সে বর্নার সাথে আর কোন কথা বলতে পারলোনা। লাইন টা কেটে দিলো। বর্না উপায় না পেয়ে সাথে সাথে আশিককে কল করলো কিন্তু সে রিসিভ করলোনা। এতে ওর নিজের উপরে প্রচন্ড রাগ হতে লাগলো। কেনো সে জেনে শুনে এতোবড় একটা ফাঁদে পা দিয়েছিলো।

আজ প্রায় একমাস হতে চললো। বর্না বহুবার আশিককে কল এসএমএস করেছে কিন্তু সে কোন রেসপন্স করেনি। রোজি ও আর বর্নার কথা বলেনা। ওর ধারণা বর্নাই ওর সাথে বিশ্বাস ঘাতকতা করেছে।

বর্নার বড় আপুর বিয়ে হয়ে গেছে। ওর মা ও সুস্থ হয়ে উঠেছে।

এদিকে সে রুমের ভেতরে একা থাকতে থাকতে প্রায় সাইকো হয়ে গেছে। তার কারো সাথেই মিশতে ভালো লাগেনা, কথা বলতে ইচ্ছা করেনা। প্রথম দিকে শাশুড়ি মা, দাদি, বড় মা আসতো ওর সাথে গল্প করতে। কিন্ত এখন আর আসেনা। কারন তারাও বুঝে গেছে যে সে ওনাদের সাথে গল্প গুজব করতে বিরক্ত হচ্ছে। হাসুর মা এসে প্রতিদিন তিনবেলা খাবার দিয়ে যায়, তখন শুধু ওনার সাথে দুই একটা কথা হয়।

এভাবেই ওর বন্দি জীবন টা কেটে যাচ্ছিল। যতোই দিন যেতে লাগলো ততোই বর্না আরো বেশি করে আশিককে মিস্ করতে লাগলো। একা একাই কখনো ওর উপরে খুব রাগ করতো, আবার কখনো খুব অভিমান করতো।

রুমের প্রত্যেক টা যায়গায় হাত ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখতো যেখানে যেখানে আশিক চলাফেরা করতো, বসে থাকতো, ঘুমাতো। দেয়ালে টাঙানো ওর ছবিটার দিকে তাকিয়ে সে কথা বলতো। শেষে এমন হয়ে গেলো যে ওকে ছাড়া আর কিছুই সে ভাবতে পারতো না।

মাঝে মাঝে বর্নার মনে হতো সে আশিককে মেসেজ করে সত্যি টা বলে দেবে যে সেও ওকে ভালোবাসে। অনেক বেশিই ভালোবাসে। সব সময়ের জন্য ওকে পাশে চায়। ওকে পাওয়ার জন্য সেও রোজির কাছে স্বার্থপর হতে রাজি আছে। কিন্তু আফসোস। এসব ওর মনে মনে ভাবা পর্যন্তই শেষ, বাস্তবে কখনো তা মুখ ফুটে বলার সাহস পায়নি।

প্রতিদিনের মতো বর্না আজও সন্ধ্যায় বেলকনীতে বসে নিচে রাস্তার দিকে তাকিয়ে ছিলো। হঠাৎই সে খেয়াল করলো আশিক গেটের সামনে বাইকটা স্ট্যান্ড করে রেখে বাসায় ঢুকছে। বর্নার ভেতরে যেনো এক পাহার আশার সঞ্চয় হলো। কারন সে ওকে এক পলক দেখার জন্যে এতোদিন চাতক পাখির মতো তৃষ্ণার্ত হয়ে ছিলো আজ সেটার সমাপ্তি ঘটতে চলেছে।

বর্না দ্রুত আয়নার সামনে গিয়ে চুল টা আঁচরে ছেড়ে দিলো। কারন ওকে চুল ছেড়ে দেওয়া অবস্থায় দেখতেই আশিক খুব পছন্দ করে। শাড়িও টা ভালো করে গুছিয়ে নিয়ে পরলো।

একটুপরই সে দরজায় নক করার শব্দ শুনতে পেলো। দৌড়ে গিয়ে দরজা টা খুলে দিতেই দেখলো আশিক কয়েকটা পেপারস হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সে বর্নার দিকে না তাকিয়েই সোজা ওর আলমারির কাছে চলে গেলো। কি যেনো বই খুঁজতে লাগলো। বই টা খুঁজে না পেয়ে বর্নাকে জিজ্ঞেস করলো-

~ এখান থেকে কি বই গুছিয়ে অন্য যায়গায় রেখেছো?
কথাগুলো বলার সময় সে একবারো বর্নার দিকে তাকালো না।
কিন্ত বর্না ওর দিকে তাকিয়েই বলল-

~ না। ঐখানেই তো সব রাখা ছিলো।
আশিক আর কিছু বলল না। বর্নার খুব অভিমান হতে লাগলো। এতোদিন পর সে এসেছে কোথায় একটু তার সাথে ভালোমন্দ কথা বলবে তা না, এসেই উনি বই ঘাঁটতে শুরু করে দিয়েছে।

বর্না রাগে গজগজ করে মনে মনে বলতে লাগলো- ‘আমার দিকে একটাবার তাকানোর ও কি সময় নেই ওর? এটাই কি ওর ভালোবাসার নমুনা? বাহ্!

খুব রাগ লাগছে বর্নার। রাগের কারনে ওর চোখে পানি টলমল করছে। তাই সে বেলকনীতে গিয়ে দাঁড়ালো।
একটু পর আশিক বর্নাকে রুমে ডাকলো। ও রুমে যেতেই আশিক ওকে বলল-

~ এতোদিন তোমায় অনেক কষ্ট দিয়ে ফেলেছি। সরি। যেটা আমার একদমই উচিত হয়নি। তুমি চাইলে এখন তোমার বাসায় যেতে পারো। এমনকি ডিভোর্স ও দিতে পারো, নো প্রবলেম। আর হ্যাঁ, আমি চলে যাচ্ছি। এরপর থেকে আমায় আর শুধু শুধু কল মেসেজ করে বিরক্ত করিওনা।

আজ আর বর্না আশিকের কথা গুলো হজম করতে পারলো না। সে মাথা উঁচু করে আশিকের দিকে তাকাতেই দেখলো আশিকও ওর দিকে তাকিয়ে আছে। বর্না রাগ করে ওর চোখে চোখ রেখে বললো-

~ ঠিক আছে আমি কালকেই চলে যাবো। গিয়েই ডিভোর্স পেপার টা পাঠিয়ে দিবো। তুমি আমার ফ্যামিলির জন্য এতোদিন যা করেছে তার জন্যে আমি চির কৃতজ্ঞ থাকবো।

কথাটা বলেই সে আশিকের কাছে এগিয়ে গিয়ে ধীর গলায় বললো-
~ আশিক আমি কি তোমায় একবার জড়িয়ে ধরতে পারি? আশিক দেখতে পেলো বর্না কান্না করছে। তাই সে ওর কাছে এগিয়ে যেতেই বর্না ওকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। তারপর ওর কানের কাছে মুখ টা এগিয়ে নিয়ে গিয়ে বললো-

~ জানো এতোদিন আমি তোমায় কতোবার মিস করেছি?
~ কতোবার?
~ যতোবার আমি নিঃশ্বাস নিয়েছি ঠিক ততোবার!

বর্না আশিককে আরো বেশি শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। আশিক আজ নিজ থেকে একটা কথাও বলছে না। গম্ভীর হয়ে আছে। ওর এই গম্ভীর নিরবতা বর্নার কাছে আরো বেশি অসহ্য লাগছে। কিন্তু আশিক ওর বাহুবন্ধন থেকে বর্নাকে সরিয়েও দিচ্ছে না। তাই বর্না ওর এই নিরব ভাষা বুঝতে না পেরে বললো-

~ আশিক আজ তুমি জানতে চাইবেনা আমি তোমায় ভালবাসি কি না?
আশিক সাথে সাথে বলল-

~ জানিই তো, নতুন করে আর কি জানতে চাইবো।
আশিকের কথা শুনে বর্নার কান্নায় কথা আটকে যেতে লাগলো। তাই সে চুপ করে রইলো। বর্নাকে চুপ থাকতে দেখে আশিক বললো-
~ যদি তোমার বলা শেষ হয়ে যায়, তাহলে আমায় যেতে দাও, আমার বাইরে অনেক কাজ আছে।
ওর শেষ কথাটা বর্নার কানে তীরের ফলা হয়ে ঢুকলো। তাই বর্না ওকে ছেড়ে দিয়ে বললো-

~ এটাই কি তোমার ভালোবাসা আশিক? এতোদিন এই ভালোবাসা দেখানোর জন্যই কি আমায় তোমার কাছে বন্দি করে রেখেছিলে? আর আমিই বা কেমন বোকা দেখো, অবুঝের মতো তোমার সেই ফাঁদে পা দিয়ে সেই তোমাকেই আবার ভালোবাসে ফেলেছি!

বর্নার কথা গুলো আশিক শুধু মাথা নিচু করে শুনলো। কিন্তু কোন উত্তর দিলোনা। তারপর সে সোজা রুম থেকে বেরিয়ে গেলো। পেছনে একবার ফিরেও তাকালো না। ওর আচরন দেখে মনে হলো বর্নার কাছে ওর উত্তর দেয়ার কোন প্রয়োজন নেই।

ওর এমন ব্যবহারে বর্না অনেক বড় একটা শক খেলো। এটাই কি সেই আশিক যে ওর প্রতিটা নিশ্বাসের যত্ন নিতো? যে ওকে পাওয়ার জন্য মাতাল হয়ে গিয়েছিল? নাহ্! বর্না কিছুতেই উত্তর মেলাতে পারলো না।

কতোকটা কষ্টে আবার কতোকটা দুশ্চিন্তাই বর্না সারারাত ভালো মতো ঘুমাতেও পারলো না।
সকালে ঘুম থেকে উঠেই সে গোছগাছ শুরু করে দিলো। কিন্তু কিছুই ঠিকমত গোছাতে পারলো না। যেখানে যেটাই ধরতে যাচ্ছে সেখানে সেটাতেই আশিকের সাথে ওর কাটানো স্মৃতি গুলো মনে পরছে।

গতকাল পর্যন্ত এই রুমের প্রত্যেক টা জিনিস সে ছুঁয়ে ছুঁয়ে দেখেছে। আশিকের স্মৃতি গুলো রোমন্থন করেছে। অথচ আজ মাত্র এক টা দিনের ব্যবধানে সব এলোমেলো হয়ে গেছে।

বর্না মনে মনে ভাবছে সে চলে যাওয়ার পর হয়তো এখানে রোজি আসবে। এসব প্রত্যেক টা জিনিসে রোজির টাচ্ লাগবে। আচ্ছা আশিক কি কোন দিনই এই রুমে আমার চিহ্ন খুজে পাবেনা? বা আমার কথা ওর মনে পরবে না? রোজিকে টাচ করতে গিয়ে কি একবারও আমার মুখটা ওর সামনে ভেসে উঠবেনা?

বর্না আর এসব ভাবতে পারছেনা। সে যতো তাড়াতাড়ি সম্ভব এখান থেকে চলে যাওয়ার জন্য ব্যস্ত হয়ে উঠলো। সে খুব নিপুণ ভাবে এখান থেকে গিয়ে পালিয়ে বাঁচতে চায়। যেনো আশিক ওর ধরা ছোঁয়ার মধ্যে না থাকে।

সকালে কোনরকম ব্রেকফাস্ট টা করেই সে বাসা থেকে বের হলো। সবাইকে ওর মার অসুস্থতার কারনে বাসায় যাওয়ার কথা বললো। কাওকেই আসল কারণটা বললো না। বলবেই বা কোন মুখে। সে ভাবলো পরিস্থিতি সামলে নিতে গিয়ে কখনো কখনো মিথ্যা কথা বললে খুব বেশি ক্ষতি হয় না।

আশিক বাসায় ছিলোনা। না থেকেই ভালো হয়েছে। সে থাকলে হয়তো বিদায় বেলাটা বর্নার জন্য আরো বেশি কষ্টকর হতো। সবার কাছ থেকে সে হাসি মুখে বিদায় নিতে পারতো না। কারন বর্না আবার হাসির আড়ালে কান্না বেশিক্ষণ লুকিয়ে রাখতে পারেনা।

বাসা থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামতেই বর্নার আশিকের কথা মনে হতে লাগলো। শেষবার যখন সে এই রাস্তা দিয়ে গিয়েছিলো তখন ওর সাথে আশিক ছিলো। বর্না মনে মনে ভবলো, আশিক কি ঠিক ওর মতো করেই রোজিকে নিয়েও ঘুরবে? নাকি তার চেয়েও বেশি? সাথেই সাথে সে আবার নিজের মনকে ধমক দিয়ে বললো সে এসব ভাবছে কেনো?

আশিক তো আর এখন তার না। সো, এসব বিষয় নিয়ে তার চিন্তা ভাবনা করার ও কোন অধিকার নেই। যার জীবনে কিনা বর্নার কোন অস্তিত্বই নেই।

বর্না ট্যাক্সি তে করে স্টেশনে গেলো। গিয়েই সে ওর টিকিট কাটলো। ওদের বাসায় যাওয়ার জন্যে দিনে দুইটা ট্রেন পাওয়া যায়। একটা দুপুর বারোটার দিকের আর একটা বিকেল পাঁচটায়।

এখন সকাল দশটার কাছাকাছি। বর্না তবু বিকেলের টিকেট টাই কাটলো। সে যে কিসের টানে বিকেলের টিকেট টা কাটলো সেটা সে নিজেও জানে না। কোন এক গভীর টানে এই জায়গাটা থেকে তার কিছুতেই যাওয়ার ইচ্ছা হচ্ছেনা।

আশিকের বাসা থেকে আসার সময় বর্না সাথে করে কিছুই আনেনি। যে শাড়িটা পরে সে বিয়ের দিন আশিকের বাসায় গিয়েছিলো সেই শাড়িটায় সে আজো পরেছে। বর্না চাচ্ছিলো বিদায় বেলাটা যেনো অন্য কোন সাজে নষ্ট হয়ে না যায়।

বর্না প্লাটফর্মে দাঁড়িয়ে আছে। অনেক কাপল ওর চোখের সামনে দিয়ে যাওয়া আসা করছে। কল্পনায় ও তাদের সবার মুখেই আশিক আর ওর প্রতিচ্ছবি দেখতে পাচ্ছে। ও যতোই আশিকের স্মৃতি ভুলে থাকার চেষ্টা করছে, ততোই যেনো বেশি করে মনে পরছে।

রাতে বর্না ওর আপুকে বাসায় যাওয়ার কথা বলেছিলো। তাই ওর আপু বার বার ওকে ফোন দিচ্ছে। কথা বলতে গেলেই ওর কান্না চলে আসবে। তাই ও ইচ্ছে করেই ফোনটা রিসিভ করছে না। শুধু রোজিকে একটা মেসেজ করলো। তারপর ফোন টা সাইলেন্ট মুড করে পার্টসে রেখে দিলো।

রোজিকে জানালো “আমি বাসায় চলে যাচ্ছি। তোর প্ল্যান সাকসেস্ ফুল হয়ে গেছে। আজ থেকে আশিক শুধুই তোর”

দুপুর গড়িয়ে বিকেল হতে চললো। বর্না একদৃষ্টিতে রেল লাইনের দিকে তাকিয়ে আছে। আর মনে মনে ভাবছে কিসের আশায় সে বিকেলের টিকেট টা কাটলো।

কিসের টান ওকে বাধা দিলো। আশিক তো ওকে কখনোই ফিরিয়ে নিতে আসবেনা। কারন এই সিদ্ধান্ত টা তো ওর ই নেওয়া। তাহলে কেনো এমন করলো?

তারপরও ওর মন টা আশিকের আসার অপেক্ষায় ছটফট করতে লাগলো। এখন ওর মন ওর কন্ট্রোলের বাইরে। অতিরিক্ত বেশি মাত্রায় প্রেমে পরলে মন আর নিজের কন্ট্রোলে থাকেনা।

বিকেল গড়িয়ে যাচ্ছে। বর্নার মনটা অবুঝ শিশুর মতো এখনো আশিকের আসার অপেক্ষায় প্রহর গুনছে।
বেলা প্রায় শেষের দিকে। একটু পরেই ট্রেন ছাড়বে। বর্না চাতক পাখির মতো প্লাটফর্মে প্রবেশ পথের দিকে তাকিয়ে আছে। সে জানে আশিক আসবেনা, তবুও অজানা এক টান ওকে ঐ দিকে তাকিয়ে থাকতে বাধ্য করেছে।

ট্রেন ছাড়ার হুইসেল দিচ্ছে। বর্না দ্রুত ওর বগির দিকে হেঁটে যাচ্ছে। সবাই তাড়াহুড়া করছে ট্রেনে ওঠার জন্য। বর্না ট্রেনে উঠতে যাব এমন সময় পেছন থেকে ওর নাম ধরে কাওকে জোরে ডাকতে শুনতে পেলো। বেশি আওয়াজের কারনে সে তার কন্ঠটা বুঝতে পারলো না। তাই সে তাড়াহুড়া করে পেছনে ঘুরে তাকালো।

তাকাতেই সে অবাক হয়ে গেলো। আশিক ওর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। আর ও খুব জোরে জোরে নিশ্বাস নিচ্ছে। মনে হয় অনেটা পথ দ্রুত হেঁটে এসেছে। চোখ মুখ লাল হয়ে আছে। চোখের পলকেই আশিক বর্নার কাছে গিয়ে ওর বাম হাতটা শক্ত করে চেপে ধরলো। তারপর হাঁপাতে হাঁপাতে বলল-

~ তোমার ফোন কোথায়? আমি এতোবার করে ফোন দিচ্ছি মেসেজ দিচ্ছি তুমি কি দেখতে পাওনি?
~ না, আমি তো ফোন সাইলেন্ট করে পার্টসে রেখেছি! আচ্ছা পরে ফোনে কথা হবে এখন আমি যাই, নয়তো ট্রেন মিস হয়ে যাবে!
~ যাক মিস হয়ে। আমি তোমায় কোথাও যেতে দিচ্ছিনা। যদি যেতেই চাও তাহলে আমায় নিয়ে যাও।
ওর কথা শেষ হওয়ার আগেই ট্রেন ছেড়ে দিয়েছে।

বর্না আশিকের হাত থেকে ওর হাত টা ছাড়ানোর চেষ্টা করতে করতে বললো-
~ তোমার এসব মিষ্টি কথায় আমাকে আর ভোলাতে পারবেনা। আমি এসব কথা শুনতে চাইনা, অনেক হয়েছে, আর না।
আশিক বর্নার থুতনি তে হাত দিয়ে ওর মুখটা আশিকের মুখের দিকে তুলে ধরে বলল-

~ এই পাগলি, আমি তো তোমায় জাস্ট চেক করছিলাম। আমি দেখতে চেয়েছিলাম যে তুমি আমায় কতোটা ভালোবাসো! তুমি নিজেই তো সেই ভালোবাসার পরীক্ষায় হেরে গেছো। আমি তোমায় যেতে বললাম আর ওমনি তুমি যেতে রাজি হয়ে গেলে, এমনকি ডিভোর্স দিতেও রাজি হয়ে গেলে। এটা তোমার কেমন ভালোবাসা? তোমার ভালোবাসায় তো কোন শক্তিই নেই। কাল থেকে একবারো আমায় বলেছিলে যে তুমি আমায় ছেড়ে যাবেনা, যেতে চাওনা! একবারও? আমি সারাক্ষণ ফোন হাতে নিয়ে ওয়েট করছিলাম জাস্ট তোমার ঐ একটা কথাটা শোনার জন্য! কিন্তু তুমি কি করলে?

বর্না আর কান্না আটকাতে পারলো না। সে কান্না করতে করতে বললো-
~ আমি ভেবেছিলাম তুমি হয়তো আমায় আর চাচ্ছোনা, সেই জন্য….

কথাটা শেষ না হতেই স্টেশন ভর্তি লোকজনের মধ্যেই আশিক বর্নাকে জড়িয়ে ধরে পাগলের মতো কিস্ করতে লাগল।
বর্না দুই হাত দিয়ে ওর গলা জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো। একটু পর আশিক বর্নার চোখে চোখ রেখে বলল, ‘আই রিয়েলি হেইট ইউ! ডাম ইট?

বর্না আশিককে কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখনি সে সামনে তাকিয়ে দেখলো রোজি দাঁড়িয়ে থেকে ওদের দেখছে। বর্না আশিকের গলা ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। কারন রোজি এখন ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে।

রোজি একদম ওদের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর শান্তভাবে আশিকের দিকে তাকিয়ে বলল-
~ আমি জানতাম আশিক তুমি বর্নাকে অনে?

বর্না আশিককে কিছু একটা বলতে যাবে ঠিক তখনি সে সামনে তাকিয়ে দেখলো রোজি দাঁড়িয়ে থেকে ওদের দেখছে। বর্না আশিকের গলা ছেড়ে দিয়ে মাথা নিচু করে দাঁড়ালো। কারন রোজি এখন ওদের দিকেই এগিয়ে আসছে।

রোজি একদম ওদের কাছাকাছি গিয়ে দাঁড়ালো। তারপর শান্তভাবে আশিকের দিকে তাকিয়ে বলল-
~ আমি জানতাম আশিক তুমি বর্নাকে অনেক বেশি ভালোবাসো। ইভেন আমার থেকেও বেশি!

আশিক মাথা নিচু করে ফেললো। রোজি ওর দিকে তাকিয়ে গম্ভীর মুখে আবার বলতে লাগলো-
~ আমাদের তিন বছরের রিলেশন। কিন্তু কখনো আমার জন্য তোমার চোখে যেই ভালোবাসা কখনো দেখিনি সেই ভালোবাসা আজ বর্নার জন্যে দেখলাম।

আশিক এক পলক রোজির দিকে তাকিয়েই চোখ নামিয়ে নিলো। কারন রোজির চোখে পানি টলমল করছে। আশিক অস্বস্তি বোধ করতে করতে বললো-

~ আমি বুঝতে পারিনি কখন বর্নার প্রতি এতোটা দুর্বল হয়ে পরেছি।

রোজি চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে আশিকের কথাগুলো শুনতে লাগলো আর আশিক ওকে এক এক করে সব বলতে লাগলো!

বর্না নিশব্দে ওদের কাছ থেকে একটু দূরে গিয়ে দাঁড়ালো। কারন সে ওদের বোঝাপড়ার মধ্যে থাকতে চায়না। এমন শীতের মধ্যেও ওর শরীর প্রচন্ড উত্তেজনায় কাঁপছে।

একটু পর আশিক আর রোজি বর্নার সামনে গিয়ে দাঁড়ালো। রোজি বর্নার হাতে আশিকের হাতটা তুলে দিতে দিতে বলল- ~ সরি বর্না। আমার জন্য তোমাদের দুজনকেই অনেক কষ্ট সহ্য করতে হলো।

তোমাদের দুজন দুজনের প্রতি ভালোবাসা দেখে সত্যিই আমার খুব হিংসে হচ্ছে। কিন্তু সত্যি তো এটাই যে তোমাদের ভালোবাসার কাছে আমার হিংসে হেরে গেছে। এর শুরুটা একদিন আমিই করেছিলাম। আর এর শেষটাও আজ আমিই করবো।

কথাগুলো বলে রোজি চোখ মুছলো। তারপর বর্নার দিকে তাকিয়ে বললো-

~ তোর ভালোবাসার আঁচল দিয়ে ঠিক এইভাবেই সারাজীবন আশিককে আগলে রাখবি। যেনো আমি তোদের দুজনের মধ্যেই আমার ভালোবাসাকে খুঁজে পাই। আর প্লিজ তোর যদি মেয়ে হয় তাহলে তার নামটা “রোজি” রাখিস। “

রোজির কথাটা শেষ না হতেই বর্না ওকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগলো।

সমাপ্ত

আরো পড়ুন – ভালোবেসে তোমায় – জীবনের দুঃখের গল্প

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *