মিথ্যা অপবাদ – Sad love story bangla: ইতি ফোন কেটে দিলো। সোনালী এখন ভীষণ ঝামেলায় পড়লো। বাসায় চলে গেলে আম্মুর একশো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তাই মন খারাপ নিয়ে একা একাই যেতে লাগলো।
পর্ব ১
আজ সবার সামনে একজন মানুষের মুখোশ উন্মোচন করবো আমি। আমি যার কথা বলছি সবাই চিনেন তাকে। তিনি একজন অনেক বড় লেখক। কিন্তু তাকে লেখক আমি ভাবতে পারছি না। লেখক হয়ে ওনি আমার সাথে এই ধরনের বিহেভ কিছুতেই করতে পারেন না। তার অনেক পাঠক আছে, ফলোয়ার আছে তাই বলে কি তিনি নিজেকে প্রধান মন্ত্রী ভাবেন? আজ আপনাদের সামনেই আপনাদের প্রিয় লেখকের দুর্নীতি ধরিয়ে দিতে এসেছি।
বার বার ডাইরি অ্যাপসে লিখছি আর কাটছি। মনের ভিতর কেমন যেনো ঘুজঘুজ করছে। লেখক আরিয়ানের সাথে কিছুদিন ধরে ঝগড়া চলছে আমার তার জন্য ওনার নামে খারাপ রেকর্ড বানানোর জন্য কত কিছুই না করছি কিন্তু বার বার কিছু একটা লেখা সত্বেও তা পাবলিক করতে মন সায় দিচ্ছে না।
- ওই কি হলো পোষ্ট কর। আমরা তো এত ভালো করে এডিট করেছি যে, কেউ বুঝতে-ই পারবে না তাহলে এত ভয় কিসের তোর?”
- শুন না, আমার দ্বারা এইসব হবে না রে। ঝগড়া হয়েছে অন্য বিষয় নিয়ে এইখানে ওনার মান-সম্মান টানার কোন মানে হয় না।”
- ওহ চিল সোনালী। কেউ বুঝতে পারবে না এইটা যে আমাদের কাজ। তোর অনেকদিনের একটা ফেক আইডি আছে না ওইটা দিয়েই পোষ্ট করবি বিভিন্ন গ্রুপে। দেখিস ব্যাটার সুনাম এক নিমিষেই কুনাম হয়ে যাবে হাহাহা।”
ইতির কথায় সোনালী আবার খুব সুন্দর করে লিখে বিভিন্ন পাবলিক গ্রুপে পোষ্ট করলো। মিনিটে মিনিটে লাইক কমেন্ট ভরে গেলো। কেউ বিশ্বাস করে বাজে গালি দিচ্ছে কেউ আবার বিশ্বাস করতে চাচ্ছে না। এমনভাবে প্রুভ দিয়েছি ১০০% এর মধ্যে ৯৯% মানুষ আমার কথায় বিশ্বাস করছে। লেখকের পেজ, গ্রুপ আইডি সব জায়গায় পাঁচ মিনিটের মধ্য তার নামডাক বদনামে রূপান্তরিত হলো। খারাপ লাগা সত্বেও শত্রুর এমন দূর অবস্থা দেখতে সত্যিই খুব ভালো লাগছে। ফোনটা রেখে ইতি কে নিয়ে কিছুক্ষণ ডান্স করে চলে গেলাম মানিক চাচার ফুচকা খাওয়ার জন্য।
- আজ যে টাইড দিয়েছিস ব্যাটাকে দেখবি তিনমাস বাসা থেকে বের হবে না। লজ্জায় মনে হয় আত্মহত্যাই করে বসবে।”
- এইভাবে বলিস না ইতি। ওনি দোষ না করা সত্বেও ওনার চরিত্র নিয়ে আমরা মিথ্যা দোষারোপ করেছি। শুনেছি ওনি একজন বিজনেস ম্যান। ভার্চয়াল জগতের পাশাপাশি রিয়েল জগতেও ওনার সম্মান ধুলোয় মিশে যাচ্ছে।”
- ওই শয়তান লোকের কথা বাদ দে। মনে নাই কি করেছে ওনি তোর সাথে। সবার সামনে তোর গালে থাপ্পড় মেরেছে তুই তার প্রতিশোধ কেনো নিবি না বল তো? তোরও তো কোনো দোষ ছিল না।”
- তাহলে আমি যা করেছি একদম ঠিক কাজ করেছি ওনি যদি আমাকে অপমান করতে পারে আমি কেনো পারবো না হুহহহ।”
- হুম ঠিক তাই।”
- ভাই কি হচ্ছে তোকে নিয়ে এইসব? দেখ আধা ঘন্টায় হাজার কল এসে পড়ছে কেউ কেউ তো তোকে বাজে ভাষায় গালি দিচ্ছে।”
আরিয়ান তার পরবর্তী উপন্যাস ‘ অন্ধকারের মাঝে’ বানান কোথায় কোথায় কি মিসটেক হয়েছে দেখছিলো তখন ওর চাচাতো ভাই হৃদয় এসে তাকে কথা গুলো বললো, আরিয়ান কিছুক্ষণ হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো। ও বুঝতে পারে নাই হৃদয় কি বললো তাকে। - চুপ করে আছিস কেনো? বল কিছু?”
- আমাকে নিয়ে কেউ বাজে কথা বললে পাবলিক তাকে ছেড়ে দিবে না সো কুল থাক।”
- আজ পাবলিকেই তোকে দোষারোপ করছে। তুই বরং তোর ফোন চেক কর।”
আরিয়ান ফোন চেক করে দেখলো এতদিন যারা আরিয়ান বলতে অজ্ঞান ছিলো আজ তারাই তাকে বাজে বাজে কথা বলছে। আরিয়ান তার বিরুদ্ধে মিথ্যা অপবাদ গুলো দেখলো আর রাগে তার চোখ থেকে লাল পানি বের হচ্ছে। - এই মেয়ে কে? চিনিস তাকে?”
- উহু। কেনো তুই চিনিস না?”
- চিনলে তো আর তোকে প্রশ্ন করতে হতো না তাই না?”
ফোনটা হাত থেকে ফ্লোরে ফেলে দিয়ে জোরে চিৎকার করে বললো আরিয়ান। হৃদয় এখন আরিয়ানের সামনে থাকতে ভয় লাগছে যদি রাগের বশে কিছু করে ফেলে তাই আমতা আমতা করে বললো, - তুই শান্ত হো আমি খুঁজ নিচ্ছি মেয়েটা কে।”
- তুই আমাকে শান্ত হতে বলছিস কিভাবে? একটা মেয়ে আমার নামে এত বড় মিথ্যা অপবাদ দিয়ে সবার সামনে আমাকে ছোট করেছে। আর তুই আমায় শান্ত হতে বলেছিস?”
হাতের কাছে পানির জগটা বারী মেরে ফেলে দিলো আরিয়ান। এখন যদি তার সামনে ওই মেয়েটাকে পায় খুন করে ফেলবে মনে হচ্ছে।
হৃদয় চলে গেলো। আরিয়ানকে দেখে ওর খুব ভয় হচ্ছে। ও তো জানে আরিয়ান কে? সবার সামনে আরিয়ান একজন সেলিব্রিটি লেখক পাশাপাশি বিজনেস ম্যান কিন্তু কেউ তো জানে না আরিয়ানের রাগের সামনে বড় বড় মাফিয়ারা ভয় পাবে। আরিয়ান জোরে জোরে চিৎকার করছে আর জিনিসপত্র ছুড়ে মারছে।
সোনালী কিছুক্ষণ সবার কমেন্টের উত্তর দিচ্ছে। হটাৎ দেখলো আরিয়ানের ভাই হৃদয় তাকে ইনবক্সে ম্যাসেজ দিচ্ছে। সোনালী আইডি অফ না করে ফোন থেকে ডিলেট দিয়ে দিলো যেনো আইডি ওর কাছে না থাকে বাট পোষ্ট যেনো গ্রুপ গুলোতে থাকে। মাঝে দরকার পড়লে লগ আউট করে আবার আইডিতে ঢুকবে।
- ওই জানিস সোনালী আমি না আগে এই আরিয়ানের উপর ক্রাশ খাইছিলাম। কি সুন্দর তার লেখা। বার বার মুগ্ধ হয়ে যেতাম। মনে হতো তার লেখায় কোনো জাদু আছে কিন্তু দেখ আজ সেই মানুষটিকে সবার সামনে ছোট করার জন্য আমরা কত কিছুই না করলাম। বাই দা ওয়ে সকালে আইডি অফ করে দিস।”
- আইডি অফ করে দিলে তো মজা শেষ। পরে বলবে এইসব ফেক তাই আইডি অফ। আর আজকাল মানুষ ওর প্রতি অন্ধ ভক্ত পরে বিশ্বাস করে ফেলবে। আমাদের এত কষ্ট সব জলে যাবে থাকুক আইডি আর আমরাও আমাদের রিয়েল আইডি নিয়ে মজা করি পাশাপাশি আরিয়ানকে সান্তনা দেই।”
- কাটা গায়ে লবণের ছিটা দিবি হাহাহা।”
রাতে আরিয়ান বসে বসে সিগারেট খাচ্ছে। সেই সকাল থেকে ওর ক্লাইন্ড থেকে ধরে রিলেটিভ সবাই ফোন দিয়ে ওই এক কথাই বলছে। তাই রাগে এই ফোনও ভেঙ্গে ফেলছে। হৃদয়কে বলেছে কেউ ফোন দিলে যেনো না ধরে। সারাদিন দশ প্যাকেট সিগারেট শেষ করে আরেকটি প্যাকেট খুললো আরিয়ান। ভাবতে লাগলো কার সাথে ওর এমন শত্রুতা যে এত বিশ্রী ভাবে প্রতিশোধ নিবে।
- যে বা যারা এমন কাজ করেছে ছাড়বো না তাদের। কঠিন থেকে কঠিন শাস্তি দিবো আমি। আইডির লিংক হৃদয় নাকি একজনকে দিয়েছে। কিছুদিন সময় লাগবে মেয়েটার খুঁজ পেতে ততদিন এইভাবেই চলতে হবে।”
পুরো রুম অন্ধকার। হৃদয় রুমে এসে সিগারেটের ধোঁয়ায় কাশতে শুরু করলো।
- তোর কি করোনা হয়েছে তাহলে ট্রিপল নাইনে ফোন দিয়ে বল তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য।”
এই অসময়ে তার উপর এমন পরিস্থিতিতে আরিয়ানের এমন মজা সূচক কথায় ঘাবড়ে গেলো হৃদয়। ঝড় শুরু হওয়ার আগে নাকি পরিবেশ শান্ত থাকে তাই হৃদয় মনে মনে দোয়া দুরূদ পরে আরিয়ানকে বললো,
- তোর বইটি আর প্রকাশিত হবে না। প্রকাশক বলেছে যে লোকের চরিত্র ঠিক নেই সেই লোকের বই কেউ কিনবে না। এতে নাকি তাদের লোকসান হবে আর সম্মানহানি হবে।”
কথাটা বলে হৃদয় আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দু পা পিছিয়ে নিলো।
পর্ব ২
কথাটা বলে হৃদয় আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে দু পা পিছিয়ে নিলো।
আরিয়ান বসে থাকা চেয়ার লাত্থি মেরে ফেলে দিলো। সিগারেটের প্যাকেট ছুড়ে মারলো। রাগে তার পুরো শরীর জ্বলে যাচ্ছে। রাগ কমানোর কোনো কিছু না পেয়ে সোজা বাথরুমে চলে গেলো। হৃদয় আরিয়ানের রুমে বসে থাকার রিক্স না নিয়ে নিজের রুমে চলে যায়। আরিয়ান প্রায় আধা ঘন্টা পর্যন্ত ঝর্না ছেড়ে দাঁড়িয়ে থাকে।
পরেরদিন সকালে।
সোনালী বাসা থেকে বের হয়ে ইতিকে ফোন দিলো।
- কোথায় তুই কলেজ আসবি না?”
- আজ আসবো না রে শরীল ভালো লাগছে না।”
- কি হয়েছে তোর?”
- সারারাত আরিয়ানের সব কমেন্ট পড়তে পড়তে এখন খুব ক্লান্ত আমি। খুব ঘুম পাচ্ছে বায়।”
ইতি ফোন কেটে দিলো। সোনালী এখন ভীষণ ঝামেলায় পড়লো। বাসায় চলে গেলে আম্মুর একশো প্রশ্নের উত্তর দিতে হবে তাই মন খারাপ নিয়ে একা একাই যেতে লাগলো। - এই মাইয়াটা যে কি করে সব সময় কিছু না কিছু ঝামেলা করেই যাবে।”
সোনালী সামনে আরিয়ানকে দেখে ভয়ে পা পিছিয়ে ফেললো। - এই উজবুক এইখানে কেনো? ধরে ফেলেছে নাকি আমাকে?”
আরিয়ান এদিক ওদিক তাকিয়ে কিছু একটা খুঁজছে। আরিয়ানের ডান পাশে দাঁড়িয়ে আছে সোনালী। সোনালী এক পা এক পা পিছিয়ে পড়তে লাগলো।
ধপাসসসসসসসসস।
আরিয়ান দেখলো কেউ একজন খুলা ড্রেনে পরে গেছে। আশে পাশে কেউ না দেখেই আরিয়ান নিজে গেলো দেখতে।
- আম্মুউউউউ বাঁচাও ওয়াক থু ছিঃ কি বিশ্রী গন্ধ। ওয়াক বাঁচাও কেউ প্লিজ।”
ড্রেনের ভিতর থেকে চিৎকার করছে সোনালী। আরিয়ান একজন মেয়ের কণ্ঠ শুনে বললো, - আপনি কি আমার কথা শুনতে পাচ্ছেন মিস?”
- শুনতে পাচ্ছি প্লিজ বাঁচান আমায়। কি ভয়নকর বিশ্রী গন্ধ প্লিজ হেল্প করুন।”
আরিয়ান তার গাড়ি থেকে একটি শক্ত রশি বের করে আনলো। গাড়ির সাথে বেঁধে তা ড্রেনের ভিতর ফেলে দিলো। অনেকটা গভীর ড্রেনটা।
- আপনি রশিটা শক্ত করে ধরে থাকুন।”
- হ্যাঁ আমি ধরেছি তাড়াতাড়ি উঠান আমায়।”
আরিয়ান রশি টেনে সোনালীকে ড্রেন থেকে বের করলো। সোনালীর পুরো শরীলে ময়লে আবর্জনা ভরে আছে তাই আরিয়ান সোনালীকে চিনতে পারলো না। মুখে টিস্যু চেপে বললো, - তাড়াতাড়ি বাসায় চলে যান কেউ আপনাকে এইভাবে দেখলে ভাববে ড্রেনের ভিতর থেকে কোনো পেত্নী বের হয়ে এসেছে।”
সোনালী তো আরিয়ানকে দেখে এমনি ভয়ে মুখ থেকে কথা বের হচ্ছে না। আরিয়ানের কথা শোনে এক দৌড়ে চলে গেলো। - একটা ধন্যবাদও দিলো না। অকৃতজ্ঞ মেয়ে। ভাগ্যিস গাড়িতে সব সময় দড়ি রাখি তানাহলে আজ এই মেয়ে একটুর জন্য টাটা বায় বায় হয়ে যেতো।”
আরিয়ান এইখানে তার এক ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে এসেছিল গতকালের বিষয় নিয়ে কথা বলার জন্য। অনেক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ওর ফ্রেন্ড আসলো।
- সরি দোস্ত, আজ একটা ইম্পর্টেন্ট ক্লাস মিটিং ছিলো তাই তোকে দাঁড় করিয়ে রাখতে হয়েছে।”
আরিয়ান হাঁসি দিয়ে বললো, - তোর এই দেরি করার জন্য একটি মেয়ের প্রাণ বেঁচে গেছে। এইজন্যই বলি কোনো কিছু ঘটার আগে তার কোনো কারণ থাকে। এখন চল আমার কথা গুলো বলি।”
- হুম চল।”
বাসায় আসা মাত্রই সোনালীর আম্মু ঝাড়ু নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
- আম্মু আমি বাথরুমে যাবো যেতে দাও তাড়াতাড়ি।”
- খবরদার এই পঁচা শরীল নিয়ে একদম বাসার ভিতরে আসবি না। তুই বাগানে যা আমি পানি দিচ্ছি।”
- আম্মু তুমি বুঝতে পারছো না আমার অবস্থা।”
- বেশি পকপক করলে এইভাবেই দাঁড়িয়ে থাক।”
কোনো উপায় না পেয়ে সোনালী বাগানে দাঁড়িয়ে রইলো। বাগানে পানি দেওয়া পাইপ ধরে দাঁড়িয়ে আছে সোনালীর আম্মু। বিশ মিনিট এইভাবে থাকার পর। - আম্মু এখন তো ময়লা নেই এখন যেতে পারি বাসায়?”
- এই জামা পরে ওয়াশরুমে গিয়ে ভালোভাবে গোসল করে আমার সামনে আসবি।”
সোনালীর আম্মু জামা কাপড় সোনালীর হাতে দিয়ে চলে গেলো। - এই মহিলা কি আমার মা নাকি কোনো সিরিয়ালের ভিলেন মা বুঝতে পারি না।”
পাঁচদিন পর।
- ভাইয়া মেয়েটার আইডি অফ করে দেওয়া হয়েছে তাই আর মেয়েটার খুঁজ নেওয়া সম্ভব না।”
আরিয়ান হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু বললো না। - আমি অনেক চেষ্টা করেছি ভাইয়া কিন্তু ।”
- তোকে কি আমি জবাব দিহিতা করতে বলেছি?
- নাহ ভাইয়া। কিন্তু যে তোর সাথে এমন করেছে তাকে শাস্তি না দেওয়া পর্যন্ত শান্তি হবে না আমার।”
- সময় হলেই সব সমাধান করা হবে। এখন আয় আজ দুই ভাই মিলে কোথাও ঘুরে আসি।”
হৃদয় খুশি হয়ে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরলো। - তোকে এইভাবেই খুব ভালো লাগে ভাইয়া।”
ইতি আর সোনালী এসেছে কিছু শপিং করার জন্য। শপিং করা শেষ হলে সোনালী ও ইতি রাস্তায় দাঁড়িয়ে বাদাম খাচ্ছিলো। সেই রাস্তা দিয়ে হৃদয় আর আরিয়ান যাচ্ছে। হৃদয় সোনালীকে দেখে আরিয়ানকে বললো,
- ব্রো ওই মেয়েটা না যাকে তুই পাবলিক প্লেসে চড় মেরেছিলি?”
আরিয়ান হৃদয়ের কথায় মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বললো, - অসভ্য মেয়ে। কার সাথে কিভাবে কথা বলতে হয় শিখেনি। রাস্তা ঘাটে কিভাবে হাঁটতে হয় এখনো পারে না।”
- ওইদিন মেয়েটার কোনো দোষ ছিলো না। তুই না বুঝেই মেয়েটিকে”
- তোকে ওই মেয়ের চামচা বানানোর জন্য আমার চাচা চাচী তোকে জন্ম দেয় নাই ওকে।”
আরিয়ানের কথায় হাসতে থাকে হৃদয়। দুইভাই বড় এক রেস্টুরেন্টের ভিতর ঢুকে পড়ে। অন্যদিকে সোনালী বাদাম খাচ্ছিলো তখন একটা বড় গাড়ি আসলো দুইটা লোক বের হলো সোনালীর মুখে কিছু একটা স্প্রে করলো। চোখের পলকে ওরা সোনালীকে নিয়ে চলে গেলো। ইতি সব দেখেই যাচ্ছে কোনো কথা বলতে পারছে না। সব কিছু এত তাড়াতাড়ি ঘটে যাবে বুঝতেই পারছে না কেউ। ইতি এইবার জোড়ে জোড়ে চিৎকার দিতে লাগলো। খুব স্পিডে গাড়ির ড্রাইভার গাড়ি চালিয়ে নিমিষেই চোখের আড়াল হয়ে গেলো।
ঘণ্টা দুয়েক এর মধ্য সোনালীর আব্বু পুলিশের কাছে চলে গেলো। পুলিশ ইতির বিবরণ শুনে কিছুই বুঝতে পারছে না। ইতি বলছে কালো রঙের গাড়ি কিন্তু গাড়ির নাম্বার দেখেনি সে। এমন গাড়ি অনেক আছে। পুলিশ তাদের সাধ্য মত কাজ করে যাচ্ছে।
সোনালীর চোখ খুলে দেওয়া হলো। চারপাশে আলোর চিনে ফোঁটাও নেই। কারো পায়ের শব্দে সোনালী সামনে তাকালো। একটা অন্ধকার ছায়া মূর্তি ছাড়া কিছুই বুঝতে পারছে না সোনালী। ছায়াটা সোনালীর কাছে এসে সজোরে একটা থাপ্পড় মারে সোনালীর গালে। সোনালীর হাত চেপে ধরে হাতে কামড় দেয়।
“আয়াআআআআআআআআআ”
পর্ব ৩
সোনালীর চোখ খুলে দেওয়া হলো। চারপাশে আলোর চিনে ফোঁটাও নেই। কারো পায়ের শব্দে সোনালী সামনে তাকালো। একটা অন্ধকার ছায়া মূর্তি ছাড়া কিছুই বুঝতে পারছে না সোনালী। ছায়াটা সোনালীর কাছে এসে সজোরে একটা থাপ্পড় মারে সোনালীর গালে। সোনালীর হাত চেপে ধরে হাতে কামড় দেয়।
“আয়াআআআআআআআআআ”
- এই মেয়ে এইভাবে চেঁচাচ্ছ কেনো? বেশি বকবক করলে গুলি করে মাথার খুলি উরিয়ে দিবো।”
- তার মানে এতক্ষণ দিবা স্বপ্ন দেখছিলাম। ওহ আল্লাহ কি ভয়ানক স্বপ্নটা।”
সোনালী এতক্ষণ স্বপ্ন দেখছিল। এখন ভালো করে খেয়াল করলো। রুমটা বেশ বড়, সব সাদা রুমের ভিতর। দেখে মনে হচ্ছে যার এই রুম তিনি খুব সৌখিন মানুষ। - এই যে মেম কি দেখছেন?”
সোনালী লোকটির কথা শুনে লোকটির দিকে তাকালো। লোকটি বেশি লম্বা না আবার খাটোও না। শ্যামলা গায়ের রঙ। হাতে বন্দুক দেখে গুন্ডা গুন্ডা লাগছে।
- আমায় এইখানে নিয়ে এসেছেন কেনো?”
- আমি টাকা পেয়েছি আপনাকে কিডন্যাপ করার জন্য তাই এনেছি।”
- কে দিয়েছে টাকা?”
- আমি।”
দরজা খুলে একটি লোক ভিতরে আসলো আর বললো, সোনালী লোকটির দিকে তাকিয়ে প্রাণ যায় যায় অবস্থা। কেননা আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান চোখের ইশারায় লোকটিকে যেতে বললো, লোকটি চলে গেলো।
- ডার্লিং, কি ভেবে ছিলে তোমায় আমি চিনতে পারবো না।”
- ওনি কি বুঝে গেছে আমি ওনার সাথে এমন করেছি?”
সোনালী মনে মনে ভাবতে লাগলো তখন আরিয়ান সোনালীর পাশে বসে বললো, - কি হলো প্রিয়তমা? কিছু বলছো না কেনো?”
- আম আমি কি করেছি?”
- তুমি কি করেছো জানো না তুমি?”
ভ্রু কুচকে জিজ্ঞাসা করলো আরিয়ান তখন সোনালী বললো, - উহু। কি করেছি আমি।”
আরিয়ান থাপ্পড় মেরে সোনালী কে বললো, - আমি মিথ্যাবাদীদের ঘৃনা করি। আরেকবার মিথ্যা কথা বললে খুন করে ফেলবো।”
সোনালী ডুকরে কেঁদে উঠলো। - কেনো করেছো আমার সাথে এমন বলোতো?”
- আপনি ওইদিন সবার সামনে আমায় অপমান করেছেন তাই আমি রিভেঞ্জ নিলাম।”
আরিয়ান সোনালীর হাত চেপে ধরে বললো, - রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য এই রকম পথ বেছে নিলে। জানো তোমার এই মিথ্যা অপবাদের কারণে কি হয়েছে আমার সাথে? আমার এত দিনের তৈরি করা সম্মান এক নিমিষেই শেষ হয়ে গেছে।”
সোনালী কেঁদেই যাচ্ছে তখন আরিয়ান ধমক দিয়ে বললো,
- ভুল যেহেতু করেছো শাস্তিও তোমায় পেতে হবে মিস সোনালী।”
- কি কি করবেন আপনি?”
- বিয়ে করবে আমায়। পরে নিজের দোষ স্বীকার করবে তুমি?”
- অসম্ভব। কিছুতেই আপনাকে বিয়ে করবো না আমি।”
- নিজের ভালো যদি বুঝো তাহলে যা বলবো তাই করবে তানাহলে তোমার মান সম্মান তোমার পরিবারের মান সম্মান কয়েক মুহূর্তে ধুলোয় মিশিয়ে দিবো আমি।”
সোনালী কেঁদেই যাচ্ছে। কেনো যে বাঘের সাথে লড়াই করতে নামলো। এখন নিজের পুরো জীবন দিয়ে সংশোধন করতে হবে। - তার আগে শুনো তোমায় চিনলাম কিভাবে?
তুমি এতটা বোকা আমার জানা ছিলো না। ফেক আইডি মানলাম কিন্তু ইনফরমেশন সব ঠিক ছিলো জাস্ট নাম ফেক ছিলো। ইনফরমেশনে তোমার কলেজ স্কুল এমনি বাসার অ্যাড্রেস দিয়ে রেখেছো। কলেজের নাম দেখে তোমার কলেজে যোগাযোগ করি। তোমার কলেজে আমার এক ফ্রেন্ড প্রফেসর। ওকে নিয়ে সব ক্লাসে নাম জিজ্ঞাসা করি তোমার এমনকি আইডি দেখাই। তুমি হয়তো ভুল ক্রমে তোমার এই আইডির কথা কিছু জনকে বলেছো ওরা আমায় তোমার আসল নাম বললো,”
আরিয়ান কিছুটা থেমে আবারো বলতে শুরু করলো আর সোনালী কেঁদেই যাচ্ছে।
- আজ দেখলাম তুমি নিউ মার্কেটের সামনে দাঁড়িয়ে বাদাম খাচ্ছো তাই ফোন দিলাম আমার লোককে, ও আসলো তোমায় নিয়ে এইখানে চলে আসলো। প্ল্যান করছো ভালো কথা মাথায় একটু বুদ্ধি তো রাখতে পারতে।”
- আমার ভুল হয়ে গেছে আমি ক্ষমা চাচ্ছি প্লিজ আমায় ক্ষমা করে দিন। আপনি চাইলে আমি লাইভে গিয়ে সবাইকে সত্য কথা বলে দিবো তবু প্লিজ আমায় ছেড়ে দিন।”
- তা আর হচ্ছে না স্টুপিড গার্ল। তোমার জন্য আমার সাতটা দিন কেমন কেটেছে শুধু আমি জানি। তুমি আমার চরিত্র নিয়ে কথা বলেছো তাহলে তো তোমায় আমার আসল চরিত্র দেখাতে হবে। তাই আজ এখন এই মুহূর্ত আমাকে বিয়ে করবে বুঝতে পেরেছো?”
- আচ্ছা বিয়ে হলে কি আপনি আপনার সম্মান ফিরে পাবেন বলুন তাহলে কেনো এমন অন্যায় কথা বলছেন?”
- তা নিয়ে তোমায় ভাবতে হবে না। আমি প্ল্যান অলরেডি করে ফেলেছি। আমাদের বিয়ে হলে পরে বলবো আমরা এইসব মজা করেছি দেখার জন্য যে কার কেমন বিশ্বাস লেখক আরিয়ানের উপর। আরিয়ানকে কে কি ভাবে তা দেখার জন্যই এমন নাটক করেছি আমরা।”
সোনালী কান্না করছে আরিয়ান টিস্যু দিয়ে বললো, - চোখের পানি গুলো বাঁচিয়ে রাখো। কান্না এখনও শেষ হয় নি। আজ মাত্র শুরু। তোমাকে বুঝাবো মিথ্যা অপবাদের শাস্তি কেমন হতে পারে।”
সোনালী ভয়ে ভয়ে ঢোক গিলতে শুরু করলো। আরিয়ান সোনালীর এমন মুখ দেখে হাসতে হাসতে চলে গেলো।
সোনালী বসে বসে ইতির চোদ্দ গোষ্ঠীর নাম উদ্ধার করছে। - আজ এই শাকচুন্নির জন্য আমার নিজেকে কুরবানী দিতে হচ্ছে। কেনো যে এই ডায়নীর কথা শুনতে গেলাম। আমার তিনটা বফের কি হবে এখন এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ। ভাবিয়া করিও কাজ করিয়া ভাবিও না একবার বিষ পান করিয়ে কষ্ট তো পরে ভুগতে হবে তাই না। এখন মন চাচ্ছে ওই পেত্নীর সাথে ওই উজবুকের বিয়ে দিয়ে দেই। ওই কুত্তির কথা শুনে এখন আমি পইরা গেছি ভেজালের ঘাড়ে এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ।”
- স্যার আমার মেয়ের কোনো খুঁজ পেয়েছেন?”
- দেখুন আমরা চেষ্টা করছি। আমরা তো কোনো জীন পরী না যে যখন যা বলবো দেখতে পারবো আমরাও আপনাদের মতো মানুষ। আমরা আমাদের সর্ব প্রচেষ্টা করছি।”
সোনালীর বাবা পুলিশের এমন কথা শুনে বাসায় ফিরে গেলো। সোনালীর বাবা একজন মধ্যবিত্ত শ্রেণীর লোক। তার সামর্থ্য অনুযায়ী সব কিছু করছেন ওনি। তার এক মাত্র মেয়েকে খুঁজার জন্য কোনো কিছুই বাদ রাখছেন না তিনি। - এক কথা কতবার বললো তোকে ভালোই ভালো বলছি সাইন করে দে।”
আরিয়ান সোনালীকে মারছে। সোনালীর সামনে বিয়ের পেপার রাখা হয়েছিল সোনালী তা ছিড়ে ফেলছে তাই রাগের বশে মারতে লাগলো। হৃদয়কে ফোন দিয়ে আরেকটি পেপার বানিয়ে এনে সোনালীর সামনে রাখলো। - রাগ উঠাবে না। ভালোই ভালো সাইন করে নিজের বাসায় যাও পরের বেবস্থা আমি করছি। যদি না শুনো তাহলে তোমার আর তোমার পরিবারের বেবস্থা এই আরিয়ান নিবে মনে রেখো।”
সোনালী কোনো উপায় না পেয়ে সাইন করে দিলো। আজ থেকে সোনালী আরিয়ানের বউ। আরিয়ান ডেভিল হাসি দিয়ে বললো,
- আজ থেকে বুঝবে মিথ্যা অপবাদ দেওয়ার কারণে তোমার জীবনে কি ঘটতে চলেছে হাহাহা।”
ঘর কাপানো হাঁসি দিলো আরিয়ান। সোনালী ভয়ে চুপসে রইলো। আরিয়ান হৃদয়ের কাছে গিয়ে বললো, - যাহ ওকে বাসায় দিয়ে আয়। আর তোকে কি বলেছি মনে আছে তো? ওর বাবা মাকে কি বলতে হবে?”
- ইয়েস ব্রো সব মনে আছে। ব্রো তোর মাথায় এত বুদ্ধি কোথায় রাখিস আমাকেও কিছু ধার দিস তো মাঝে মাঝে।”
- ওকে দিবো নে। আর মিসেস চৌধুরী বাসায় এখন বিয়ের কথা বলতে হবে না। হৃদয় যা বলবে চুপচাপ শুনবে। আর আমাদের ফুলশয্যা তার কথা ভেবো না আমি নিজেই ঠিক করে নিবো হাহাহাহা।”
আরিয়ানের এমন কথা শুনে ভীষন লজ্জা পেলো সোনালী। কাদতে কাদতে চোখ একদম ফুলে গেছে সোনালীর কিন্তু আরিয়ানের কথায় লজ্জা পেয়ে মুখ লাল করে ফেলেছে এখন।
পর্ব ৪
আরিয়ানের এমন কথা শুনে ভীষন লজ্জা পেলো সোনালী। কাদতে কাদতে চোখ একদম ফুলে গেছে সোনালীর কিন্তু আরিয়ানের কথায় লজ্জা পেয়ে মুখ লাল করে ফেলেছে এখন।
হৃদয় ড্রাইভ করছে পাশের সিটে চুপ করে বসে আছে সোনালী।
- ভাবী, আপনার কি শরীল খারাপ?”
সোনালী আশে পাশে দেখে পরে বললো, - আপনি কি আমায় বলছেন?”
- আপনি ছাড়া এইখানে কি আর কেউ আছে?”
- তাহলে আমায় ভাবী ডাকলেন কেনো? আমি আপনার বা আপনার ওই সাইকো বজ্জাত অ্যানাকোন্ডা ভাইয়ের কিছু হই না ওকে।”
- ভাবী আপনি নিজেই সাপের গর্তে পা দিয়েছেন এখন তো ছোবল খেতেই হবে তাই না?”
হৃদয়ের কথা শুনে সোনালী কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে বললো, - ভাইয়া এইখানে আমার একটুও দোষ নাই সব দোষ আমার এক ফ্রেন্ডের। ও আপনার ভাইকে বাঁশ দিতে গিয়ে ভুল ক্রমে আমায় দিয়ে ফেলছে। প্লিজ আমাকে বাঁচান আপনি চাইলে আমার ওই ফ্রেন্ডের সাথে আপনার ভাইয়ের বিয়ে দিবো পাক্কা প্রমিজ।”
সোনালী কথা শুনে হৃদয় হাসতে লাগলো। - বাহ ভাবী আপনি তো খুব মজার মানুষ। অন্য কাওকে না আপনাকেই লাগবে আমার ভাবী হিসেবে।”
- যেমন বড় ভাই ছোট ভাই কি আর সাদু সন্ন্যাসী হবে নাকি। আমি পড়লাম এক মহা সমস্যায় এখন যে কি হবে?”
- বেশি চিন্তা করবেন না। ব্রো ম্যাজিকের মত সব সমস্যা দুর করে দিয়েছে।”
- কিভাবে ম্যাজিক করলো শুনি?”
- আপনি বাসায় গিয়ে আপনার পরিবারকে বলবেন যারা আপনার কিডন্যাপ করেছে তাদের উত্তম মধ্যম দিয়ে আরিয়ান চৌধুরী আপনাকে বাঁচিয়েছে। আর কিছু ভালো ভালো সুনাম করবেন।”
হৃদয়ের এমন কথায় সোনালী টাস্কি খেয়ে বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আছে। - এইসব ভিলেন মার্কা বুদ্ধি ওই ছাগলের মাথায় কিভাবে আসে?”
- আমার সামনে আমার ভাইকে গালি দিচ্ছেন এইটা যদি ভাইয়াকে বলি আপনার কি হবে বুঝতে পেরেছেন?”
- সরি সরি আর বলবো না প্লিজ বলবেন না।”
- প্রথমবার বলে ক্ষমা করলাম কিন্তু পরবর্তীতে আর ক্ষমা হবে না।”
- হুম।”
হৃদয় ড্রাইভ করছে আর টুকটাক কথা বলছে সোনালীকে। বাসায় কি কি বলতে হবে সব বুঝাচ্ছে। সোনালী হৃদয়ের কথা শুনে মনে মনে বললো,
- যাহ বাবা ভালোই হলো বাসায় আর এইসব বিয়ে টিয়ের কথা বলতে হবে না। এখন আপাতত এদের কথাই শুনি পরে না হয় অন্য কোনো প্ল্যান করে এই আরিয়ান নামক ভেজালটাকে সরাবো।”
হৃদয় সোনালীকে বাসায় পৌঁছে দিয়ে সোনালীর বাবাকে কিছু কথা বলে চলে গেলো। যাওয়ার আগে সোনালীকে চোখ টিপ দিয়ে ইশারা দিলো যেনো ভালো করে সব বুঝিয়ে বলে। সোনালীও আরিয়ানের প্রচুর সুনাম করলো। সোনালীর বাবা মা নিয়ের মেয়েকে সুস্থ্য নিরাপদ দেখতে পেয়ে আর কিছু জিজ্ঞাসা করলো না।
সোনালী বসে বসে ‘ মৌরি মরিয়ম ‘ আপুর লেখা ‘প্রেমাতল’ বইটি পড়ছে। যারা ভ্রমণ প্রেমী তাদের কাছে বইটি দারুন লাগবে বেশি। সোনালী বইটি পড়ে বার বার মুগ্ধ হচ্ছে।
- আমাকেও যদি কেউ এইভাবে ঘুরতে নিয়ে যেতো? আমার তো অনেক দিনের ইচ্ছা পুরো দেশ ঘুরা কিন্তু এমন কেউ নেই যে ঘুরতে যাবো।”
মন খারাপ করে আছে সোনালী ঠিক তখন ওর ফোনে কল আসলো। সোনালী দেখলো ইতি ফোন দিয়েছে। প্রচুর রাগ নিয়ে ফোন ধরেই প্রথম দিলো এক ঝাড়ি।
- শালী তোর জন্য আমার জীবন তেজপাতা হয়ে গিয়েছে। তোর ওই বলদ মার্কা প্ল্যানের জন্য আমার ক্রাশ খাওয়া জীবন বিসর্জন দিতে হয়েছে। তোকে সামনে পাইলে আমি জাপানিজ কুড়াল দিয়ে কুচি কুচি করে কেটে হলুদ, মরিচ, লবণ লাগিয়ে তীব্র রৌদ্রে ভাজা ভাজা করে শুকিয়ে পাশের বাসার শায়লা আন্টির টমি কে দিবো খাওয়ার জন্য।”
- এই ওয়েট ওয়েট আগে বল কি হয়েছে তোর? আন্টি যে বললো তোকে লেখক আরিয়ান বাঁচিয়েছে তাহলে তুই এমন কথা বলছিস কেনো?”
সোনালী এখন চুপ বোনে গেলো কেননা আরিয়ান তাকে বারন করেছে এইসব কিছু না বলার জন্য। - ওই কি হলো চুপ কেনো বল আমায়?”
- কিছু হয় নি আমার পরে কথা বলবো এখন রাখি।”
- রাখার আগে দরজাটা খুল আমি বাহিরে দাঁড়িয়ে আছি।”
- হোয়াট? তুই এত রাতে বাহিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো?”
- বেশি কথা না বলে দরজা খুল বাহিরে অনেক কুকুর দাঁড়িয়ে আছে জানিস তো আমি খুব ভয় পাই পরে বলছি।”
সোনালী দৌড়ে এসে দরজা খুলে দেখলো ইতি দাঁড়িয়ে আছে। - তাড়াতাড়ি আয় ভিতরে।”
ইতি বাসায় ঢুকে প্রশ্ন করতে লাগলো কি কি হয়েছে।
প্রথম সোনালী কিছু বলতে চায়নি কিন্তু ইতির জোরাজোরিতে সব বলতে বাধ্য হলো। সোনালীর কথা শুনে ইতি মাথায় হাত দিয়ে বললো, - সত্যিই তো আমাদের প্ল্যানটা বাচ্চাদের প্ল্যানের থেকেও খারাপ ছিলো। এইরকম বাজে প্ল্যান কিভাবে করলাম আমি।”
- তোরে মন চাচ্ছে একটা লাত্থি মেরে জানালা দিয়ে বাহিরে ফেলে দেই। তুই ওই প্ল্যানের কথা ভাবছিস আর এইদিকে যে আমার জীবন তেজপাতা হয়ে গেছে সেইটা ভাবছিস না হারামী। তোর মত ফ্রেন্ড থাকতে আমার কাল নাগিনী শত্রুর দরকার নাই।”
- ধ্যাত। বিয়ে হয়েছে ভালো হয়েছে। আরিয়ান দেখতে কি কিউট, হ্যান্ডসাম তার মত স্বামী পেয়েছিস ভাগ্য ভালো তোর।”
- এমন ভাগ্য লাগবে না আমার। ওনি আমার প্রতি রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য বিয়ে করেছে যেদিন রিভেঞ্জ নেওয়া শেষ আমাকে দু মিনিটে টাটা বায় বায় দিবে।”
- তাহলে তো খেলা এইখানেই শেষ। আরিয়ান কিছুদিন ওর প্রতিশোধ নিয়ে ভাববে যখন ওর এই প্রতিশোধের খেলা শেষ হয়ে যাবে তখন তোকে মুক্তি দিয়ে দিবে। এখন আপাতত ওর কথা শোন চিন্তা করিস না আমি আছি না।”
- সেইটাই তো ভয়ের।”
ইতি সোনালীর পিঠে থাপ্পড় মেরে বললো,
- চল কিছু খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ি। আগামীকাল এক জায়গায় যেতে হবে।”
- কোথায় যাবি?”
- গেলেই বুঝবি।”
- আমি যাবো না কোথাও এমনি আমার মন ভালো না।”
- মা আমার, খেতে চল ক্ষুদা লাগছে প্রচুর।”
- রাক্ষসী। অন্যের বাড়িতে এসেও খাওয়া খাওয়া করতে হয়।”
- ওই ভুলে যাবি না আন্টি বলেছে আমিও ওনার মেয়ে সো কথা কম বল।”
- হুহহহ।”
সোনালী আর ইতি রাতে খাবার খেয়ে শুয়ে পড়লো।
আরিয়ান সিগারেট খাচ্ছে আর সোনালীর ছবি দেখছে। ছবিটা সোনালীকে যখন বিয়ে করেছিল তখন তুলেছিলো। সিগারেট ছবির কাছে নিয়ে ছবিটা পুড়তে লাগলো।
- এইভাবে তিলে তিলে কষ্ট দিবো তোমায় সোনালী। একটু একটু করে তোমার সব সুখ কেড়ে নিবো। এই আরিয়ান তার শত্রুদের কখনো ভুলে না আর তোমার মত শত্রুকে তো কোনোদিন ভুলবে না। তুমি আমার এতদিনের তৈরি করা সুনাম মর্যাদা এক নিমিষেই নষ্ট করে দেওয়ার চেষ্টা করেছো তোমাকে তো আমি ছেড়ে দিবো না। আগামীকাল থেকে তোমার শাস্তি শুরু।”
সোনালীর ছবিটা অনেকটা পুড়িয়ে ফেলেছে আরিয়ান। মনে তার এখন এক প্রকার শান্তি বিরাজ করছে।
সকালে।
ইতি জোর করে সোনালীকে নিয়ে এক জায়গায় যাওয়ার জন্য রওনা দিলো। কিছুটা পথ যেতেই দেখলো আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে সাথে হৃদয়। আরিয়ানকে দেখে সোনালী ভয়ে চুপসে গেল। ইতি তো কাপছে আরিয়ানকে দেখে। আরিয়ান অবাক করে দিয়ে সোনালীকে হাত ধরে টেনে গাড়িতে বসালো। ইতি ওইখানেই দাঁড়িয়ে আছে ঠিক তখন হৃদয় এসে ইতির হাত ধরে বললো,
- তুমি এইখানে দাঁড়িয়ে আছো কেনো? তুমিও তো সমান দোষী ভাবীর সাথে।”
- এখন কি লেখক আরিয়ান আরেকটা বিয়ে করবে?”
পর্ব ৫
- এখন কি লেখক আরিয়ান আরেকটা বিয়ে করবে?”
ইতির এমন প্রশ্ন শুনে হৃদয় ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো। - আপনার কি আমার ভাইকে ইমরান হাশমি মনে হয়।”
- সত্যি বলতে আপনাকে দেখে ইমরান হাশমির যমজ ভাই মনে হয়।”
ইতি হৃদয়ের ঝগড়ার মাঝেই আরিয়ান সোনালীকে নিয়ে চলে যায়। - ওই লেখক ভাইয়া শুনুন সোনালী কিন্তু জানালার পাশের সিট ছাড়া বসতে পারে না আর ড্রাইভ ধীরে ধীরে করবেন সোনালী কিন্তু ভয় পাবে।”
ইতি জোড়ে জোড়ে চিৎকার করে বলছে। হৃদয় হাত দিয়ে কান চেপে ধরে বললো, - এইটা কণ্ঠ নাকি বিমানের শব্দ বুঝতে পারলাম না। বাই দা ওয়ে তোমার ফ্রেন্ডকে ধরে নিয়ে যাচ্ছে আর তুমি এইসব ফানি কথা বলছো আচ্ছা তোমার ফ্রেন্ডের জন্য তোমার দয়া মায়া হয় না যদি ব্রো কিছু করে ফেলে তোমার ফ্রেন্ডের?”
- দয়া মায়া আছে বলেই তো বললাম সাবধানে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাছাড়া লেখক ভাইয়া সোনালীর বর এতে ভয় পাওয়ার কি আছে?”
- যখন জানো ব্রো ভাবীকে বিয়ে করেছে তাহলে তো এইটাও জানো কি পরিস্থিতির জন্য বিয়ে করেছে?”
ইতি এইবার ভয় পেলো। এতক্ষণ তো ভালোভাবেই সব বললো কিন্তু এখন তো হৃদয়ের কথায় ভয়ে হাত পা কাপছে ওর। - তোমার কি কোনো অসুখ আছে?”
- আগে ছিলো না কিন্তু আজ থেকে শুরু হবে। প্লিজ আমায় নিয়ে চলুন আমার সোনালীর কাছে।”
- ভাইয়া কোথায় গিয়েছে তাতো আমি জানি না। বাট তুমি চাইলে খুঁজতে পারি।”
- হুম চলেন তাড়াতাড়ি।”
ইতি হৃদয়ের হাত ধরে টানতে লাগলো তখন হৃদয় এক হাতে শার্ট থেকে চশমা খুলে চোখে দিয়ে বললো, - গাড়ি ভাইয়া নিয়ে গেছে আমাদের রিক্সা করে যেতে হবে।”
- কেনো আপনাদের কি একটাই গাড়ি আর কোনো গাড়ি নেই।”
- হুম আছে কিন্তু ওইগুলো আসতে আসতে ওরা চলে যাবে পরে খুঁজা সম্ভব হবে না।”
- ওহহ আচ্ছা তাহলে চলুন রিক্সা চড়েই যাই।”
হৃদয় রিক্সা ডাকলো ইতি তাড়াতাড়ি রিক্সায় উঠে পড়লো। হৃদয় অন্য পাশ ফিরে মুখ ধরে হাসছে আর মনে মনে বলছে। - কি বোকা মেয়ে রে বাবা রিক্সা দিয়ে কি গাড়ির নজর রাখা যাবে। যা বললাম তাই বিশ্বাস করে নিলো একদিক দিতে ভালোই হয়েছে আমার বেশি কিছু বুঝাতে হলো না।”
- কি ভাবছেন আপনি?”
- ভাবছি এইভাবে বসে বসে থেকে কি লাভ চলো বাদাম খেতে খেতে ওদের খুঁজি।”
- ওয়াও গুড আইডিয়া। দাড়ান আমি কিনে আনছি।”
- তুমি বসো আমি নিয়ে আসছি।”
রিক্সা থেকে নেমে হৃদয় বাদাম কিনতে গেলো। বাদাম কিনে রিক্সায় বসে দুইজন বাদাম খাচ্ছে আর কথা বলছে। - ভাইয়া আমায় কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
- কে তোমার ভাইয়া? এইখানে তো তোমার ভাইয়া নেই।”
- আপনিই তো আমার ভাইয়া।”
সোনালীর মুখে এমন কথা শুনে খুব জোরে ব্রেক মারলো আরিয়ান। কিছুক্ষণ চোখ বন্ধ করে শান্ত গলায় বললো,
- অনেক কষ্টে রাগ কন্ট্রোল করে রেখেছি। বেশি বকবক করলে রাগ কিন্তু আর কন্ট্রোল করতে পারবো না।”
- আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
-জাহান্নামের চৌরাস্তায়।”
-আমি এক্ষুনি মরতে চাই না। আমার অনেক সখ নাতি নাতনীদের বিয়ে খাবো আবার ওদের নাতি নাতনীদেরও বিয়ে খাবো। আপনি যদি মরতে চান তাহলে মরতে পারেন। আমি গাড়ি থেকে নেমে যাই পরে আমি আপনার পরিবার আর পুলিশকে সব বুঝিয়ে বলে দিবো ওকে।”
সোনালী যেই লক খুলতে যাবে ঠিক তখনি আরিয়ান সোনালীর হাত ধরে ফেলে। খুব শক্তভাবে হাত ধরে।
- আমি ব্যাথা পাচ্ছি হাতে।”
আরিয়ান কিছু বলছে না সোনালীর হাত ধরে মুচরাতে লাগল সোনালী ব্যাথায় কাদতেঁ লাগলো।
- এইটা তো কিছুই না মিসেস চৌধুরী। এখন চুপচাপ বসে থাকো যদি আমাকে রাগাও তাহলে এই জঙ্গলে একা রেখে চলে যাবো।”
সোনালী ভয়ে আর কথা বললো না। আরিয়ান জঙ্গলের রাস্তা দিয়ে যাচ্ছে। জঙ্গলের ভেতর একটা হাফ বিল্ডিং বাড়ি বেশি বড় না। আরিয়ান গাড়ি থেকে নেমে সোনালীর হাত ধরে টানতে টানতে ভিতরে নিয়ে গেলো। বাড়িটার ছিলো দুইটা রুম একটা বারান্দা আর একটি বাথরুম। দেখে মনে হচ্ছে আজই সব পরিষ্কার করা হয়েছে। - আপনি আমায় এইখানে নিয়ে আসলেন কেনো?”
- তোমার সাথে রোমান্স করবো তাই।”
- আমি তো বলেছি আমার ভুল হয়েছে তাহলে কেনো ক্ষমা করছেন না আমায়?”
- সব ভুলের ক্ষমা হয় না জানো না।”
- কি করলে আমায় ক্ষমা করবেন আপনি?”
- এখন আপাতত এই শাড়িটা পরে আসো পরে বলছি।”
সোনালীর হাতে শাড়ির প্যাকেট হাতে নিয়ে বললো, - আপনি কি প্ল্যান করেই এইখানে আমায় নিয়ে এসেছেন। এইসব শাড়ি আপনি আগেই কিনে রেখেছেন কিন্তু কেনো?”
- আমি এত প্রশ্ন করা পছন্দ করি না। তাই চুপচাপ শাড়িটা পরে আসো নাকি এখনকার মুভিতে দেখা হয় হিরোইন শাড়ি পড়তে পারে না হিরো ইউ টিউব দেখে দেখে শাড়ি পরিয়ে দেয় আমাকেও কি তেমন কিছু করতে হবে নাকি? সমস্যা নেই যদি বলো আমি পারবো।”
- আপনি তো খুব অসভ্য লোক। আমি পারি শাড়ি পড়তে। দুই বছর কি আর এমনি এমনি পার্লারের কাজ করেছি নাকি হুহহ।”
- ওয়াও গুড। যাও তাড়াতাড়ি আসবে ওকে।”
সোনালী অন্য রুমে চলে গেলো। আরিয়ান খাটের নিচ থেকে একটা বোতল বের করে খাটের উপরে বসে রইলো আর মুখে সেই দুষ্ঠু হাসি। - সেই কখন থেকে খুঁজছি ওদেরকে কোথায় গিয়েছে ওরা? নাকি আপনার ভাই আমার নিস্পাপ বাচ্চাটাকে খুন করে ফেলেছে।”
- আমার ভাইকে কি তোমার খুনি মনে হয়? বাই দা ওয়ে নিষ্পাপ বাচ্চা তোমার কবে হলো? আগে তো বললে না যে তুমি ম্যারিড?”
- ধ্যাত। নিষ্পাপ বাচ্চা হলো আমার সোনালী। আর আপনার ভাইয়ের গল্প পড়েছি আমি গল্প পড়ে বুঝতে পেরেছি ওনি কেমন মানুষ। কিছুদিন আগে ওনার একটা গল্প ছিলো ‘সমাপ্তি’ ওইখানে তো নিজের বউকে খুন করে ফেলে। আপনার ভাই তো খুন ছাড়া গল্প লিখতেই পারে না তাহলে কি ভয় হবে না।”
- আরেহ ওইগুলো গল্প। গল্প মানেই কল্পনা ওইগুলো সাথে বাস্তব মিলাতে এসো না।”
- আমার বেষ্টু কোথায় একটু পর বাসায় যেতে হবে যদি ওকে ওর আব্বু আম্মু না পায় চিন্তা করবে।”
- চিন্তা করার কি আছে তুমি ফোন দিয়ে বলো আজ তুমি আর ভাবী তোমাদের বাসায় থাকবে।”
- মা মানে?”
- আজ তোমার আর তোমার ফ্রেন্ডের বাসায় যাওয়া হবে না।”
- মম মম মম কি কি কি বলছেন?”
- যা বলছি ঠিকই বলছি। চুপচাপ চলো আমার সাথে আর চিন্তা করো না তোমার ফ্রেন্ডের কাছেই নিয়ে যাবো। দোষ তো ভাবী একা করে নাই তুমিও করেছো তাহলে শাস্তি কেনো শুধু ভাবী একা পাবে তুমিও পাবে শাস্তি।”
ইতির মুখ তখন ভয়ে একাকার হয়ে গেছিলো না পারছে চিৎকার দিতে না পারছে এইখানে বসে থাকতে না পারছে চলে যেতে।
সোনালী গোল্ডেন কালার একটি শাড়ি পরেছে। কোনো মেকআপ নেই। চুলগুলো বেনুণী করা। লম্বা কানের দুল। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। আরিয়ান কিছুক্ষণ এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে সোনালীর দিকে। কিছুক্ষণ বসে থেকে দাঁড়ালো আরিয়ান। সোনালীর সামনে যেতে লাগলো। সোনালী তখনও ওইভাবে দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ান সোনালীর কাছে গিয়ে সোনালীর হাত ধরে টেনে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে কানের কাছে গিয়ে বললো,
- আর কারো সামনে শাড়ী পড়বে না ওকে। তোমার এই নিষ্পাপ মুখ দেখে তোমাকে শাস্তি দেওয়ার কথা ভুলে যাই কিন্তু যখন নিজেকে দেখি তখন তোমাকে শাস্তি না দেওয়ার জন্য বড্ড কষ্ট পাই ডার্লিং।”
কথা বলতে বলতে সোনালীর গায়ে রঙ দেওয়া পানি ঢাললো। পানির সাথে শরীর চুলকানো ওষুধ দিয়েছিলো আরিয়ান। সোনালীর মাথায় বোতলের সব রঙ দেওয়া পানি ঢেলে দেয় আরিয়ান। মুহুর্তের মধ্যে সোনালী পাগলের মত ছুটাছুটি করা শুরু করে দেয় তা দেখে আরিয়ান জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে।
পর্ব ৬
কথা বলতে বলতে সোনালীর গায়ে রঙ দেওয়া পানি ঢাললো। পানির সাথে শরীর চুলকানো ওষুধ দিয়েছিলো আরিয়ান। সোনালীর মাথায় বোতলের সব রঙ দেওয়া পানি ঢেলে দেয় আরিয়ান। মুহুর্তের মধ্যে সোনালী পাগলের মত ছুটাছুটি করা শুরু করে দেয় তা দেখে আরিয়ান জোড়ে জোড়ে হাসতে থাকে।
সোনালী কিছুক্ষণ দৌঁড়াতে দৌঁড়াতে বাথরুমের ভিতরে ঢুকে পড়ে। আরিয়ান বাহিরে দাঁড়িয়ে কান্নার আওয়াজ শুনতে পাচ্ছে।
- পানি ঢালতে থাকো তাহলে কমবে হাহাহা।”
সোনালী পানি ছেড়ে দিয়ে প্রায় আধা ঘন্টার বেশি বাথরুমে বসে আছে। আরিয়ান কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে চলে আসে রুমে। কিছুক্ষণ ফোন ঘাঁটাঘাঁটি করে আবারো যায় বাথরুমের কাছে।
- সোনালী আমার কথা কি শুনতে পাচ্ছো তুমি?”
কোনো সাড়া শব্দ নেই শুধু পানির শব্দ ছাড়া। - তোমার দোষের শাস্তি পাচ্ছো তুমি। দোষ করার আগে মনে ছিলো না কার পিছনে লেগেছো এখন বুঝো।”
আরিয়ান কিছুক্ষণ ডাকাডাকি করলো কিন্তু সোনালী কোনো রেসপন্স পেলো না। হটাৎ পিছন থেকে হৃদয় এসে বললো,
- ব্রো কি হয়েছে? এইভাবে দাঁড়িয়ে আছিস কেনো? ভাবী কোথায়?”
- ও ওয়াশরুমে গিয়েছে।”
- বাব্বাহ বউ পাগল হয়ে গেছিস। বউ ওয়াশরুমে আর তুই পাহারা দিচ্ছিস বাহ ব্রো বাহ।”
- আরেহ ও প্রায় চল্লিশ মিনিট ধরে ওয়াশরুমে এখনও আসছে না সেই কখন থেকে ডাকছি কিন্তু কিছু বলছে না।”
- হোয়াট? সোনালী এতক্ষণ ধরে বাথরুমে।”
ইতি চেঁচিয়ে উঠলো। বাথরুমের দরজার সামনে দাঁড়িয়ে বললো,
- বাবু দেখ আমি এসেছি ভয় পাস না দরজাটা খুল বেবি।”
ইতিও বেশ কিছুক্ষণ ডাকার পরও সোনালী দরজা খুললো না। হৃদয় এইবার ভয় পেয়ে বললো, - ব্রো দরজা ভাঙতে হবে।”
- কিন্তু সোনালী যে ভিতরে?”
হৃদয় এইবার ইতিকে ধমক দিয়ে বললো, - ভাবী যদি ভিতরে না থাকতো তাহলে কি আর দরজা ভাঙতে হতো। পাগল ছাগলের মত কথা বার্তা।”
ইতি সাইডে দাঁড়িয়ে পড়লো। আরিয়ান ও হৃদয় দরজা ভাঙার চেষ্টা করছে। অবশেষে তারা সফল হলো। ইতি সোনালীকে দেখে ভয়ে চিৎকার করে উঠলো। - সোনালী বেবি চোখ খুল আর তোর শরীলে এইসব কি হয়েছে?”
সোনালীর পুরো শরীর লাল হয়ে আছে। আসলে এইসব চুলকানির ওষুধ দেওয়ার পর যদি সাথে সাথে পানি দেওয়া হয় তাহলে শরীল লাল হয়ে যায়। আরিয়ান আবার রঙের পানিতে মিশিয়ে দিয়েছে। - কি করেছেন আপনি সোনালীর সাথে বলুন?”
আরিয়ান ইতিকে পাশ কাটিয়ে সোনালীকে কোলে নিয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসে। ফ্লোরে শুইয়ে দিয়ে সোনালীর পরে আসা জামাগুলো ইতির হাতে দিয়ে বললো, - তুমি এই জামা কাপড় ওকে পড়িয়ে দেও। অনেক্ষণ ধরে ভিজে আছে। আমি আর হৃদয় পাশের রুমে আছি।”
আরিয়ান আর হৃদয় চলে যায়। ইতি একা একা সোনালীর ভেজা শাড়ি এইসব ছাড়িয়ে সোনালীর আগের জামা কাপড় পড়িয়ে দিয়ে আরিয়ান ও হৃদয় কে ডাক দেয়। আরিয়ান আবারো সোনালীকে কোলে নিয়ে খাটে শুইয়ে দিয়ে কম্বল দিয়ে অন্য পাশে গিয়ে বললো, - জানি তোমার প্রশ্ন কি? তোমার ফ্রেন্ডের সাথে কি হয়েছে এইসব তো তাহলে শুনো।”
আরিয়ান সব কথা বললো তখন ইতি কাঁদতে কাঁদতে বললো,
- সব দোষ আমার। আজ আমার জন্যই সোনালী কষ্ট পাচ্ছে। ওইদিন ওর ইচ্ছার বিরুদ্ধে গিয়ে ওকে দিয়ে আমি এইসব কাজ করিয়েছি। শাস্তি তো আমার পাওয়া উচিত।”
- ব্রো দোষ যেই করুক তাই বলে তুই এমন কিছু করবি আমি বুঝতে পারেনি।”
- তুই তো খুব ভালো করেই জানিস মিথ্যাকে আমি ঘৃনা করি। আর এই দুই মেয়ে আমার নামে মিথ্যা অপবাদ দিয়েছে তা কি করে মানবো। হুম জানি ওষুধের পরিমাণ বেশি দিয়ে ফেলেছি আমি। তখন আমার কোনো হুস ছিলো না।”
ইতি তখন বললো,
- হুম মানলাম দোষ আমরা করেছি কিন্তু আপনিও তো করেছেন দোষ আমাদের সাথে।”
- কি করেছি আমি?”
- ওই দিন রাস্তায় সবার সামনে চড় মেরেছেন আপনি সোনালীকে মনে নাই আপনার?”
- ওর দোষ ছিল তার জন্যইতো মেরেছি।”
- ওইদিন ওর কোনো দোষ ছিল না। শুনুন কি হয়েছিল ওইদিন।”
রাস্তায়।
সোনালী ও ইতি হেঁটে হেঁটে যাচ্ছে তখন কিছু ছেলে ওদের দুজনকে বিরক্ত করছে। সোনালী ও ইতি গিয়ে ছেলেদের কড়া জবাব দিয়ে আসে। তখন একটি ছেলে সোনালীর ব্যাগে একটি ফুল আটকিয়ে দেয়। যেহেতু পরিস্থিতির ভালো না তাই ইতি সোনালীকে টেনে নিয়ে আসে। রাস্তায় না দেখেই যখন সোনালী ফুল ছুড়ে মারে যা আরিয়ানের উপর পরে। সোনালী তখন বলছিলো।
- এইসব কুকুররা কোনোদিন ঠিক হবে না। ওদের ঠিক করার জন্য একটা ভালো আইন দরকার।”
আরিয়ান ভেবেছিলো এইসব তাকে বলা হচ্ছে তাই রেগে গিয়ে সবার সামনে থাপ্পড় মারে সোনালীকে।
সেইদিন ওদের ঝগড়া হয় এইসব নিয়ে।
বর্তমান।
আরিয়ান তো ইতির কথা শুনে সোনালীর দিকে তাকিয়ে আছে। না জেনে শুনেই ভুল করেছে ও। কিন্তু এই ভুলের জন্য সোনালী ও ইতি যা করেছে তা একদম ঠিক না।
হৃদয় ফোন দিয়ে ডক্টর আনলো। যেহেতু জঙ্গলের ভিতর তাই ডক্টর আসতে দেরি হলো। সোনালীর এলার্জির প্রবলেম ছিলো তাই রিয়্যাকশন বেশি হয়ে গেছে। এইসব লাল দাগ গুলো যেতে সময় লাগবে জানিয়েছে ডক্টর।
ইতি ওর বাসায় ফোন দিয়ে বললো আজও ও সোনালীর বাসায় থাকবে আর সোনালীর বাসায় ফোন দিয়ে বললো আজ সোনালী ওদের বাসায় থাকবে।
সোনালীর রাতে জ্ঞান ফিরেনি। ডক্টর ঘুমের ওষুধ দিয়েছে। ইতি সোনালীর সাথে শুয়ে আছে। অন্য রুমে হৃদয় ও আরিয়ান শুয়ে আছে। হৃদয় খাবার এনে ইতিকে ডেকেছিল কিন্তু ইতি খায়নি।
রাত দুটো।
- আমি তো ক্ষুদা সহ্য করতে পারি না। এখন পেটের ভিতর তেলাপোকা দৌড়াদৌড়ি করছে কি করবো আমি।”
ইতি ধীরে ধীরে হেঁটে রুমের বাহিরে গেলো দেখলো আরিয়ানের রুম লক করা। ইতি বারান্দায় গিয়ে দেখলো খাবারের প্যাকেট ওইখানে রাখা হয়েছে। ইতি ফ্লোরে বসে খেতে লাগলো। - স্মাইল প্লিজ।”
ইতি খাবার মুখে দিয়েই কাশতে লাগলো। হৃদয় পানির বোতল হাতে দিয়ে বললো, - আগেই বলেছিলাম খাওয়ার জন্য কিন্তু খেলে না এখন এসেছো চুরি করে খাওয়ার জন্য চুন্নি।”
- আমি জানতাম আপনি এইভাবে বলবেন তাইতো খেতে চাইনি। আমি না খেয়ে থাকতে পারি না তার জন্য আর কি খাচ্ছিলাম যদি জানতাম তাহলে জীবনেও খেতাম না।”
ইতি কাঁদতে কাঁদতে বললো তখন হৃদয় বললো, - আচ্ছা তোমাদের মেয়েদের চোখে কি কান্না ছাড়া আর কিছু নেই। কিছু হতে না হতে চোখের পানি নাকের পানি এক করে ফেলো। আমার মনে হয় মহান আল্লাহ তায়ালা তোমাদের চোখে সাগর দিয়ে রেখেছে।”
- খাবারের সময় কথা বলতে নেই।”
- ওকে বলবো না খাও।”
ইতি খেতে লাগলো আবারো। খাওয়া শেষ করে পেটে হাত দিয়ে বললো,
-এইবার শান্তি হয়েছে তোর? বাব্বাহ সেই কখন থেকে শুধু কেঁদেই যাচ্ছিস খাওয়ার জন্য এই খেলাম এখন শান্তি তো?”
হৃদয় ইতির কথা শুনে ইতির পেটের দিকে তাকিয়ে বললো, - কয়মাস?”
- আরেহ বেশিদিন না মাত্র এক মাস হলো।”
- ওহহ একমাস হয়েছে। শুনো এই সময় কেয়ারফুল থাকবে। আমাকে আগে বললে তো তোমাকে এইভাবে নিয়ে আসতাম না। বাই দা ওয়ে কি করে বাচ্চার আব্বু?”
হৃদয়ের কথা শুনে ইতি জোড়ে জোড়ে কাশতে থাকে। - এই নেও পানি এই সময় এইভাবে কাশতে নেই। বাচ্চার ক্ষতি হতে পারে।”
- রাখেন আপনার পানি। কার বাচ্চা কিসের বাচ্চা?”
- তোমার বাচ্চা।”
- হোয়াট? ওই মিয়া আমি নিজেই বাচ্চা আর আপনি বলছেন আমার বাচ্চার কথা, বলি চোখে কি আরশোলা ঢুকেছে?”
- তুমিই না একটু আগে, কথা বললে তোমার পেট ধরে তখন আমি জিজ্ঞেস করলাম কত মাস তুমি বললে একমাস।”
- আরেহ গাধা এতক্ষণ ধরে আমার পেট বলছিলো কিছু খা কিছু খা তাই খেয়ে ওকে স্বান্তনা দিলাম। আর মাস বলতে আমার জামাটার বয়স এক মাস চলছে।”
হৃদয় ইতির কথা শুনে মাথায় হাত দিয়ে অন্য হাতে বোতল থেকে পানি মাথায় দিতে থাকলো।
হটাৎ করেই আরিয়ানের চিৎকার শুনে ইতি ও হৃদয় দৌড় দিলো।
পর্ব ৭ (রোমান্টিক পর্ব )
হটাৎ করেই আরিয়ানের চিৎকার শুনে ইতি ও হৃদয় দৌড় দিলো।
ইতি ও হৃদয় গিয়ে দেখলো সোনালী খাটে নেই ফ্লোরে শুয়ে আছে।
- লেখক ভাইয়া সোনালী ফ্লোরে কেনো?”
- আমি এসে দেখি ও খাটে নেই ফ্লোরে শুয়ে আছে তাইতো চিৎকার দিলাম।”
ইতি আর আরিয়ান সোনালীর দিকে তাকিয়ে আছে আর হৃদয় হেসেই যাচ্ছে। হৃদয় হাসতে হাসতে সোনালীর কাছে বসে পরলো। হাঁসি থামাতে পারছে না হৃদয় তাই পেট ধরে বসে আছে।
হাঁসির শব্দ শুনে সোনালীর ঘুম ভেংগে যায়। ঘুম থেকে উঠে দেখে ইতি আর আরিয়ান দাঁড়িয়ে হৃদয় ওর পাশে বসে হাসছে।
- তুই কখন আসলি এইখানে? আমার কি হয়েছে এইভাবে শুয়ে আছি কেনো?”
ইতিকে জিজ্ঞাসা করলো সোনালী।
আরিয়ান খুব কষ্ট হাসি থামিয়ে রেখেছিলো কিন্তু সোনালীর কথা শুনে এখন আর হাঁসি থামাতে না পেরে হেঁসে দিলো। সোনালী আরিয়ানের হাঁসির দিকে তাকিয়ে আছে। - মারাত্মক হাঁসি। হাসলে যে এই ভিলেনটাকে এত সুন্দর লাগে জানতাম না তো। এই হাসিটা যেকোনো মেয়ে দেখলে আমি সিউর ক্রাশ খাবে।”
সোনালী আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো আর মনে মনে বললো, সোনালী যখন উঠতে যাবে। - আহহ। আমার শরীল এমন লাল হয়ে আছে কেনো? শরীলে খুব ব্যাথা পাচ্ছি কেনো আমি?”
- তোকে এই লেখক ভাইয়া চুলকানির ওষুধ লাগিয়ে দিয়েছিল তার জন্য এই অবস্থা তোর।”
সোনালী আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে মনে মনে বললো, - এই মানুষটার বাহিরে যত সুন্দর মন থেকে তার তিনগুণ খারাপ। বাজে লোক একটা। আমি তো এইটার প্রতিশোধ নিয়েই ছাড়বো।”
ইতি আর আরিয়ান মিলে সোনালীকে খাটে শুইয়ে দেয়। হৃদয় কিছুক্ষন গল্প করে চলে যায়। সোনালী ও ইতি জেগে জেগে কথা বলছে। অন্যরুমে আরিয়ান ও হৃদয় শুয়ে আছে। - হৃদয় ভাইয়া কিন্তু খুব ভালো আর মিশুক তাই না ইতি?”
- ঘোড়ার ডিম। জানিস আজ সারাদিন আমার সাথে ঝগড়া করছে আস্ত একটা বজ্জাত। লেখক ভাইয়ার মত।”
- লেখক আরিয়ানের থেকে অনেক ভালো হৃদয় ভাইয়া। একটু আকটু ওই আরিয়ানের মত স্বভাব কজ ছোট থেকে তো একসাথে আছে।”
- ওই বজ্জাত গুলার কথা বাদ দে এখন বল তোর শরীল কেমন?”
- হুম মোটামুটি ভালোই আছি। আমার জন্য আজ তোরও সমস্যা হচ্ছে তাই না? বাসায় না জানি কি হচ্ছে সবার।”
সোনালী চিন্তিত সুরে বললো তখন ইতি বললো, - বাসার সব আমি ম্যানেজ করে ফেলেছি। আর তোর জন্য আমি শাস্তি পাচ্ছি না। ওই আকাম দুইজন করছি তাই শাস্তি পাচ্ছি।”
- দেখিস আমি ওই আরিয়ান নাকি চারিয়ান ওকে ঠিক দেখে নিবো জানে না কার পিছনে লেগেছে ও।”
- আগে দোয়া কর যেনো আমরা বেঁচে যাই পরে না হয় ওদের কথা ভাববো। শুয়ে পড় সকাল হতে এখনও তিন ঘণ্টা বাকি।”
- হুম।”
ইতি সোনালীকে জড়িয়ে ধরে শুয়ে আছে।
অন্যদিকে।
হৃদয় এক পা আরিয়ানের উপর রেখে শুয়ে আছে। আরিয়ানও তার এক পা হৃদয়ের উপর। হৃদয় তখন বললো,
- ব্রো তোর মনে কি ভাবির জন্য কোনো ফিলিংস নাই। নাকি শুধু প্রতিশোধের জন্য এমন করছিস?”
- আমি জানি না। ওর প্রতি মাঝে মাঝে আমার এক অন্যরকম অনুভুতি সৃষ্টি হয় কিন্তু প্রতিশোধটা বেশি।”
- প্রতিশোধ ছাড়া আর কিছু হবে নাকি তোর? সব সময় তো খুন ছাড়া গল্প লিখতে পারিস না তাহলে মনে কেমনে রোমান্টিক কিছু থাকবে। কত করে বলছি একটা রোমান্টিক গল্প লেখ কিন্তু না যখনই একটু রোমান্টিক মুড হয় তখনই তোর গুলি, ছুরি এইগুলো দিয়ে শেষ করে ফেলিস। আস্ত আনরোমান্টিক তুই।”
- হয়তো ভালোবাসার কেউ আসে নাই তাই রোমান্টিকতার ছোঁয়া পাই নি।”
- হো বুঝছি ঘুমা এখন।”
- তুইও ঘুমা।”
সকাল সাড়ে নয়টা। আরিয়ান হৃদয় শুয়ে আছে। সোনালী দেখলো ইতিও ঘুমিয়ে আছে তাই না ডেকে ও রুম থেকে বের হয়ে বারান্দায় এসে বসে রইলো।
- শরীলটা বড্ড খারাপ লাগছে। কেউ কারো সাথে এমন কিভাবে করে একটুও কি কষ্ট হয় নি। মানছি আমি দোষ করেছি এর জন্য তো ক্ষমা আমি চেয়েছি তাই বলে এমন করবে। গল্প যেমন লিখে বাস্তবে তার একশো গুন খারাপ।”
- আমি জানি আমি খারাপ মাইক লাগিয়ে বলতে হবে না।”
সোনালী পিছন ফিরে দেখলো আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। আরিয়ানকে দেখে সোনালীর খুব লজ্জা লাগছে কেননা আরিয়ান সেন্টু গেঞ্জি পরে আছে আর প্যান্ট।
- আপনি এইভাবে এসেছেন কেনো?”
আরিয়ান একটা বোতল বের করে পানি পান করে বললো, - কিভাবে এসেছি আমি?”
- ওই যে সেন্টু গেঞ্জি পরে চলে আসছেন।”
- আর বলো না কি গরম তাই এইটা পরেই ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। বাই দা ওয়ে তোমার শরীল এখন কেমন?”
- শরীলের কথা আপনাকে জানতে হবে না। আপনি যেমন চেয়েছিলেন তেমন হয়েছে।”
- অ্যাকচুয়ালি আমি বুঝতে পারেনি ওষুধের পরিমাণ এতটা বেশি হয়ে যাবে।”
- তার মানে লেখক আরিয়ান চৌধুরী ক্ষমা চাচ্ছে আমার কাছে?”
- আমি কি একবারও বলেছি আমি ক্ষমা চাচ্ছি?”
- নাহ বলেন নি বাট ভুল তো স্বীকার করেছেন।”
- ভুল স্বীকার করা আর ক্ষমা চাওয়া এক নয়।”
- এইসব কথা আপনার কাছ থেকেই মানায়।”
সোনালী চলে যেতে নিলে আরিয়ান সোনালীর হাত ধরে ফেলে। - আমাকে টাচ্ করার অধিকার কে দিয়েছে আপনাকে?”
- তুমি আমার বিয়ে করা বউ তোমাকে টাচ্ করার সম্পূর্ণ অধিকার আমার আছে।”
- আমি মানি না এই বিয়ে।”
- মানা না মানা তোমার ইচ্ছা। আমি বিয়ে করেছি তাই আমার বউয়ের সাথে যা ইচ্ছা আমি করবো তুমি বলার কে?”
- মামার বাড়ির আবদার পেয়েছেন নাকি?”
- উহু স্বামী হওয়ার আবদার।”
কথাটা বলেই সোনালীর হাত টান দিয়ে সোনালীকে বুকের সাথে মিশিয়ে নেয় আরিয়ান। সোনালীর চুলে নাক ডুবিয়ে বলতে থাকে। - একটু আগে হাত ধরেছিলাম তার জন্য কত কিছু বলেছো এখন যে কাছে টেনে নিলাম কিছু বলো?”
- এইটা কিন্তু ঠিক হচ্ছে না মিস্টার আরিয়ান।”
- তোমার সাথে আমার সম্পর্ক বৈধ সম্পর্ক সো যাই হবে অবশ্যই ঠিক হবে।”
- বিয়েটা আমার বিরুদ্ধে হয়েছে।”
- যেভাবেই হোক হয়েছে তো?”
আরিয়ান সোনালীর চুলে নাক ডুবিয়ে যখন ঘাড়ের কাছে থুতনি রাখতে যাবে ঠিক তখনি হৃদয় এসে বললো, - ব্রো কোথায় তুই?”
হৃদয় সামনে এমন একটি দৃশ্য দেখে সাথে সাথে উল্টো ঘুরে বললো, - আমি কিছু দেখি নি।”
সোনালী যতই আরিয়ানকে ঘৃনা করুক এমন এক পরিস্থিতিতে যদি কারো সামনে পরে অবশ্যই লজ্জা পাওয়ার কথা। আরিয়ান সোনালী ছেড়ে দিলো সেও কিছুটা লজ্জা পেয়েছে। সোনালী তখন কিছুটা দূরে সরে গিয়ে মাটির দিকে তাকিয়ে বিড়বিড় করে বললো,
- হে আল্লাহ মাটি ফাঁক করো আমি ঢুকে পরি কি লজ্জা।”
- ব্রো রোমান্স করবি ভালো কথা বাট জায়গা বুঝে শুনে তো করবি।”
- আরেহ ওইটা রোমান্স না ওইটা ছিলো!”
- এত জবাবদিহিতা করতে হবে না। তুই তোর বউয়ের সাথে রোমান্স করবি এত কথা কিসের? শুন এখন কিন্তু ওদের বাসায় দিয়ে আসতে হবে। তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে পর।”
হৃদয় আর পিছনে না ফিরেই চলে গেলো। আরিয়ান বোকার মতো দাঁড়িয়ে থেকে সোনালীকে বললো, - এইখানে যা আছে তোমার নিয়ে নেও এক্ষুনি বের হতে হবে আর নাস্তা রেস্টুরেন্টে করবো।”
সোনালী শুধু মাথা নাড়ালো। আরিয়ান চলে গেলো। অন্যদিকে ইতি বসে বসে ফোনে গেমস খেলছিলো কিন্তু হটাৎ করেই ফোনের চার্জ শেষ হয়ে গেলো। তাই সোনালীকে ডাকতে গিয়ে ধাক্কা খেলো হৃদয়ের সাথে। - এই কোন খাম্বারে এইভাবে কাক তাড়ুয়ার মতো দাঁড়িয়ে আছে?”
- নিজের চোখ নেই আবার অন্যজনকে বলে খাম্বা, কাক তাড়ুয়া।”
ইতি মাথায় হাত দিয়ে চোখ ছোট করে বলে। - আমি জানতাম এমন অপদার্থের মত কাজ এই আপনি বলদ ছাড়া আর কেউ করবে না।”
হৃদয় যতই হাসি খুশি থাকুক রাগটা তার খুব বেশি। একদম আরিয়ানের মত। ইতি তাকে বলদ বলায় রেগে গিয়ে ইতিকে দেওয়ালের সাথে মিশে ধরে।
পর্ব ৮
হৃদয় যতই হাসি খুশি থাকুক রাগটা তার খুব বেশি। একদম আরিয়ানের মত। ইতি তাকে বলদ বলায় রেগে গিয়ে ইতিকে দেওয়ালের সাথে মিশে ধরে।
ইতির দম বন্ধ হয়ে আসছে। হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো হৃদয় ওর দিকে তাকিয়ে আছে।
- ছাড়েন বাসায় যাবো।”
- আমাকে কি যেনো বলছিলে আমি বলদ?”
হৃদয় দাতে দাঁত চেপে ধরে বললো, ইতি তখন বললো, - হুম উহু হুম উহু।”
- হুম উহু কি করছো এইসব?”
- সরি বলছি ভাইয়া। এখন ছাড়েন।”
- এইবারের মত ছেড়ে দিলাম। ভবিষ্যতে কিছু বললে ভেবে চিন্তে বলবে ওকে?”
- হুম।”
হৃদয় ছেড়ে দেয় ইতিকে। ইতি ছাড়া পেয়ে কিছুক্ষণ শ্বাস নিয়ে বিড়বিড় করে বললো, - একটুর জন্য তো মরেই যাচ্ছিলাম।”
সোনালী আরিয়ান হৃদয় ও ইতি ওই বাড়ি থেকে বের হয়ে গেলো। সোনালী ও ইতি পিছনে বসে আছে সামনের সিটে দুই ভাই। আরিয়ান ড্রাইভ করছে।
- ব্রো আজ রাতে ইম্পর্টেন্ট এক মিটিং আছে।”
- হুম জানি আমি।”
হৃদয় ও আরিয়ান অফিসের ব্যাপারে কথা বলছে। ইতি সোনালী বোরিং হয়ে ওদের কথা শুনতে লাগলো। এতটাই বোরিং লাগছিলো তাই সোনালী বললো, - আপনারা গাড়ি থামান আমরা অন্য কোনো গাড়ি দেখে নিবো।”
আরিয়ান গাড়ির জানালার দিকে তাকিয়ে সোনালীকে বললো, - কেনো সুখে থাকতে ভুতে কিলায় নাকি তোমাকে?”
- এইভাবে বোরিং হয়ে যেতে ভালো লাগছে না।”
- তাহলে কি এখন আমার তোমার জন্য নাচতে হবে নাকি?”
- ওয়াও গ্রেট প্লিজ একটু নাচেন আমারও খুব দেখতে ইচ্ছা করছে আপনার নাচ। প্লিজ প্লিজ প্লিজ।”
আরিয়ান সোনালীকে ধমক দিয়ে বললো, - আসো তোমাকে এইখানে দাঁড় করিয়ে আমি তোমাকে নাগিন ড্যান্স করাই। এইসব মাথা পাগল গুলো আমার কপালেই আসে।”
সোনালী মুখ ফুলিয়ে বাহিরের দিকে তাকিয়ে রয়েছে। তখন ইতি আমতা আমতা করে বললো, - লেখক ভাইয়া।”
- কিইইইইই।”
- থাক বলবো না।”
- কেনো বলবে না?”
- আপনি যেভাবে উত্তর দিলেন প্রশ্ন করার শখ মিটে গেছে।”
- ওকে বলো কি বলবে?”
- আমি তো আপনার অনেক বড় ফ্যান ছিলাম।”
- এখন নাই?”
- আছি। আগে শুনেন কি বলছি আমি?”
- বলতে থাকো।”
- লেখক ভাইয়া আপনার কিছুদিন আগে একটি বই বের হয়েছিল নামটা মনে হয় ‘ভয়ানক সেই রাত ‘ আমি ওই বইটা কিনতে পারে নি এখন যদি আমায় ওই বইয়ের ব্যাপারে কিছু বলতেন তাহলে খুশি হতাম।”
হৃদয় ইতির কথা শুনে বললো, - এই বইটা ছিল ভাইয়ার লেখা ভয়ানক একটা বই। ভাইয়ার সব গল্প বা বই ভয়ংকর হয় কিন্তু এইটার থিম একদম অন্য রকম।”
- কি রকম?”
- নায়ক নায়িকা ছিলো মধ্যবিত্ত। প্রেম করেই বিয়ে হয় ওদের। বাট এই প্রেম বিয়ের মাঝে অনেক কিছুই ঘটে ওদের যা ভয়ানক। আর সবচেয়ে ভয়ানক বিষয় বাবা তার সন্তানকে টুকরো টুকরো করে কেটে হত্যা করে। ওই সময় আমার চোখের পানি আমি ধরে রাখতে পারি নাই। এতটা কষ্ট হয়ে ছিলো। আমি এই গল্পের জন্য তো ব্রো কে কত বকা ঝকা দিয়েছি।”
ইতি আর সোনালী আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে আছে। সোনালী ভাবছে। - এই মানুষটার মন মানসিকতা কতটা খারাপ এখন বুঝতে পারছি আমি। এমন ভয়ংকর উপন্যাস কিভাবে লিখে ওনি আমার তো শুনেই হাত পা কাপছে।”
ইতি তখন আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো, - লেখক ভাইয়া আমি যদি পুলিশ হতাম এই ধরনের কলিজা কাপা বই লেখার জন্য আপনাকে থানায় নিয়ে যেতাম।”
আরিয়ান ইতির কথায় হাসতে লাগলো। - এইটুকু শুনেই এই কথা পুরো বই পড়লে হয়তো আমাকে রাক্ষস ভাববে। ওকে আমার তরফ থেকে তোমাদের দু জনকে দুইটা বই গিফট করা হবে।”
- হুম।”
সোনালীর মনে প্রশ্ন জাগতে শুরু করলো
- এত বড় লোক মানুষ তাহলে বই লেখার সময় কিভাবে পায়? আর ওনি বই লিখেও বা কেনো?”
সোনালী তার মনের কথা বলেই দিলো। - আচ্ছা আপনি বই কেনো লিখেন?”
হৃদয় কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিয়ান বললো, - আমার শখ তাই লিখি তোমার কোনো প্রবলেম আছে?”
- উহু।”
একটা রেস্টুরেন্টের ধারে নামে ওরা চারজন। রেস্টুরেন্ট থেকে খাবার খেয়ে আরিয়ান ওদের দু জনের বাসার মেইন রাস্তায় নামিয়ে দিয়ে চলে যায়। এইভাবে চলে যায় পনেরো দিন। পনেরো দিন আরিয়ানের অত্যাচার, মারাত্মক হাঁসি, কড়া কড়া কথা শুনতে শুনতে সোনালী প্রায় পাগল হওয়ার অবস্থা। হটাৎ করেই ইতি ফোন দিয়ে সোনালী কে বললো,
- আজ পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে আর পছন্দ করে ফেলেছে।”
- ওয়াও কনগ্রাচুলেট বাবু।”
- আমাকে মিট করতে বলছে ও।”
লজ্জামাখা কণ্ঠে বললো ইতি। - বাব্বাহ ও হয়ে গেছে। এখন বল তোর ও কেমন দেখতে?”
- হুম ভালো।”
- ওই তুই কবে থেকে লজ্জা পেতে শিখলি রে?”
- ওর সামনে যেতে আমার লজ্জা করছে কি করবো বল?”
- এক দিনেই এত কিছু বেবি তুমি তো গেছো হাহাহা।”
- আসলে ওকে প্রতিদিন দেখতাম আমার বাড়ির পাশে রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকতো। ও কিছু বলেনি কোনোদিন কিন্তু হটাৎ আজ ওর ফ্যামিলি নিয়ে আসছে।”
- ওওও তারমানে তোর ওই পথিক ক্রাশ?”
- হুম।”
- বাহ বলতে হবে ছেলেটার গুন আছে। তোকে বিরক্ত না করে একদম বিয়ের প্রস্তাব দিয়ে দিছে। শোন যখন বলছে মিট করার জন্য তাহলে যা।”
- আমি একা যাবো কিভাবে তুইও যাবি আমার সাথে।”
- ওই তোদের মাঝে আমি কাবাব মে হাড্ডি হতে চাই না। তাছাড়া নিউ দুলাভাই কি ভাববে?”
- ওকে বলেছি আমি আমার বেস্ট ফ্রেন্ড কে নিয়ে আসবো তা শুনে ও খুব খুশি হয়েছে।”
- তবুও কেমন দেখা যায় না।”
- তুই আসবি এইটাই ফাইনাল। তোকে আমি ঠিকানা দিচ্ছি সময় মত চলে আসবি ব্যাস।”
ফোন কেটে ম্যাসেজে ঠিকানা দিয়ে তার হবু বরের সাথে কথা বলতে লাগলো।
সোনালী ইতির কথা শুনে খুব খুশি হলো। - আমারও তো খুব ইচ্ছা ছিল আমার জীবনে এমন কেউ আসবে যার সাথে আমার কথা বলতে লজ্জা করবে যার কথা মনে হলে লজ্জায় আমার মুখ লাল হয়ে যাবে যে আমায় খুব ভালোবাসবে। কিন্তু এমন কিছু না হয়ে ভিলেন আসলো আমার জীবনে।”
সোনালীর ফোনে আবার কল আসলো। আরিয়ান ফোন দিয়েছে এক রাশ বিরক্তি নিয়ে ফোন রিসিভ করলো তখন সোনালী কিছু বলার আগেই আরিয়ান বললো, - আগামীকাল তোমার সাথে আমার দরকারি একটা কথা আছে রেডি হয়ে মেইন রাস্তায় চলে এসো।”
- আগামীকাল পারবো না আপনার সাথে যেতে।”
- কেনো?”
- ইতির সাথে এক জায়গায় যেতে হবে আমাকে।”
- আমি বলছি তুমি আমার সাথে দেখা করবে মানে দেখা করবে এইটাই ফাইনাল ওকে।”
সোনালীকে কিছু বলতে না দিয়েই ফোন কেটে দিলো আরিয়ান। সোনালী রাগে কিছু বাজে ভাষায় বকা দিলো আরিয়ানকে। - এই প্যারাটা কবে যে আমার জীবন থেকে বিদায় নিবে আল্লাহ জানে। আগে জানলে জীবনেও এই বজ্জাতের নামে মিথ্যা অপবাদ দিতাম না। শালা আমার জীবনটা তেজ পাতা বানিয়ে দিচ্ছে।”
- আপু আপু তোমাকে সেই কখন থেকে খুঁজছি।”
একটি দশ বছরের মেয়ে আসলো নাম তার তিরা। সোনালী খুব ভালোবাসে মেয়েটাকে। পাশের বাসার আন্টির মেয়ে। তিরার সাথে অনেক সময় কাটায় সোনালী। সোনালী তিরা কে দেখে বললো, - কেনো আজ এত খুঁজেছিস কেনো আমায়?”
- তুমি ভুলে গেছো আজ আমার পুতুলের বিয়ে হবে। তোমাকে না কিছুদিন আগে বলেছি। আজ বিয়ে তাই গান গাইবে তুমি।”
- আজকাল যে সমস্যায় আছি সব ভুলে যাই।”
- এখন তো চলো।”
- কার পুতুলের সাথে বিয়ে দিচ্ছিস?”
- আলিশার পুতুলের কাছে বিয়ে দিচ্ছি। চলোতো তাড়াতাড়ি।”
তিরা সোনালীকে টেনে নিয়ে গেলো। সোনালী দেখলো বেলুন দিয়ে তিরার রুম সাজানো। ছোট্ট একটা কার্ড লেখা আজ তিরু মনির বিয়ে। পুতুল কে লাল শাড়ি পড়িয়ে রেখেছে। সোনালী তখন ভাবলো। - কবে যে পুতুল খেলেছি এখন আর মনে পড়ছে না। ইসসসসসস ছোট থাকতেই কত ভালো ছিলাম। কেনো যে বড় হলাম। খুব মিস করছি পুতুল খেলা।”
- আপু দেখো ছেলের বাড়ির লোকজন এসে পড়েছে গান বলো এখন।”
সোনালী তিরার দিকে তাকিয়ে হেসে বললো,
— হুম বলছি।”
তিরা বুড়ির পুতুলের বিয়ে,
তাই, বুড়ির নেইতো ঘুম!
বুড়ির ঘরে বাজে ঢোল,
টাক ডুম টাক ডুম।
আজ পুতুলের গায়ে হলুদ,
কাল পুতুলের বিয়ে।
বুড়ির পুতুল নিয়ে যাবে,
টোপর মাথায় দিয়ে।
খাওয়া হলো, দাওয়া হলো,
সবাই বললো চল!
সখের পুতুল যাবে চলে,
বুড়ির চোখে জল।
মনটা তার বড়ই খারাপ,
শূন্য বুড়ির ঘর।
পুতুলকে কি রাখবে সুখে,
পুতুলের প্রিয় বর?
দিন যে বুড়ির আর কাটেনা,
একলা প্রহর গুনে।
অনেকদিন হয় নি কথা,
প্রিয় পুতুলের সনে।
পুতুলকে বিদায় দিচ্ছে তিরা আর কান্না করছে মনে হচ্ছে ওর মেয়ে সত্যি সত্যিই অন্য ঘরে দিয়ে দিচ্ছে। আলিশা তখন বললো,
- কাদিস না তো আমি বলছিনা তোর কাছে থাকবে পনেরো দিন আমার কাছে থাকবে পনেরো দিন।”
আলিশার কথা শুনে তিরা হাসলো। ওদের এমন বন্ধুত্ব দেখে সোনালীও হাসলো আর ইতির কথা ভাবতে লাগলো যে কিছুদিন পর তার বেস্ট ফ্রেন্ড অন্যের হয়ে যাবে। দরকার হলে আগের মত আসতে পারবে না। এইসব ভেবেই গভীর নিঃশ্বাস ফেললো সোনালী।
পর্ব ৯
আলিশার কথা শুনে তিরা হাসলো। ওদের এমন বন্ধুত্ব দেখে সোনালীও হাসলো আর ইতির কথা ভাবতে লাগলো যে কিছুদিন পর তার বেস্ট ফ্রেন্ড অন্যের হয়ে যাবে। দরকার হলে আগের মত আসতে পারবে না। এইসব ভেবেই গভীর নিঃশ্বাস ফেললো সোনালী।
পরের দিন।
সোনালী রেডি হয়ে ইতির দেওয়া ঠিকানায় যাওয়ার জন্য রেডি হলো। মেইন রাস্তার মোড়ে আসতেই দেখে আরিয়ান গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে।
- এই অশুভটা এইখানে কি করছে? ওনি জানলো কিভাবে আমি এইসব বের হবো।”
সোনালী ধীরে ধীরে পিছন চলে যাচ্ছে যেনো আরিয়ান না দেখে। সোনালী উল্টো ঘুরতেই আরিয়ান বলে। - এই আরিয়ানের চোখে ধুলো দিতে পারবে না।”
- ধরা খেয়ে ফেলেছি।”
জিব কেটে বললো সোনালী। আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো।
- প্লিজ আজকের দিনের জন্য যেতে দিন। ইতি ওয়েট করছে আমার জন্য।”
- নো।”
- প্লিজ।”
- ওকে আগে আমার সাথে চলো তোমায় এক জায়গায় নিয়ে যাবো পরে না হয় তুমি ইতির কাছে যেও।”
- নাহ আমার এক্ষুনি যেতে হবে।”
- কি এমন দরকার যে আর্জেন্ট যেতে হবে?”
- ও আজ ওর হবু স্বামীর সাথে মিট করতে যাচ্ছে। আমাকেও যেতে বলছে।”
- ছিঃ মিসেস চৌধুরী ছিঃ তোমার কি কমন সেন্স নেই। তুমি নতুন হবু বউ আর স্বামীর মধ্যে কাবাব মে হাড্ডি হতে যাচ্ছো লজ্জা থাকা দরকার তোমার।”
- ওরা আমায় জোর করছে বলেই যাচ্ছি। আমি আপনার মত না যে পারমিশন ছাড়াই কাজ করবো।”
- আমি কারো পারমিশনের দরকার মনে করি না আমার লাইফে। আর শুনো তোমায় আজ এক জায়গায় নিয়ে যাবো। ওইখানে কাজ শেষ হলে যেতে পারবে ইতির কাছে।”
সোনালী বুঝতে পারলো এখন হাজার কিছু করলেও আরিয়ান তাকে যেতে দিবে না তাই বাধ্য হয়ে আরিয়ানের গাড়িতে বসে পড়লো।
কিছুক্ষণ ড্রাইভ করার পর সোনালী বললো, - কোন দরকারে আমায় নিয়ে যাচ্ছেন?”
- গেলেই দেখতে পাবে।”
- তবুও জানাটা দরকার আমার।”
- আমার ফ্রেন্ডের ব্রেকআপ হয়ে গেছে। এখন সে পাগলের মত তাই তোমাকে নিয়ে যাচ্ছি ওর কাছে।
- হোয়াট? কি বলছেন আপনি? আমি কি করবো ওইখানে গিয়ে? আপনার বন্ধুর গার্লফ্রেন্ডকে নিয়ে যান আমায় নিচ্ছেন কেনো আজব লোক তো আপনি।”
- ওর সেবা করার জন্য। কিছুদিন ওর গার্লফ্রেন্ড হয়ে থাকার জন্য। যখন সুস্থ্য হয়ে যাবে পরে তোমাকেও মুক্ত করে দিবো।”
সোনালী এইবার সত্যিই খুব রেগে গেলো। জোরে চিৎকার করে বললো, - আমি আপনার মত মাথা খারাপের সাথে কোথাও যাবো না। আমি এক্ষুনি বাসায় যাবো। আমাকে মুক্তি দিন আপনার থেকে।”
- তোমার কোনো মুক্তি নেই যতদিন বেঁচে থাকো আমার সাথেই থাকতে হবে তোমার।”
- মরে যাবো তবুও আপনার সাথে থাকবো না।”
সোনালী গাড়ি থেকে নামার চেষ্টা করছে কিন্তু লক করা থাকায় পারছে না। রাগের বসে গাড়িতে থাকা এক বোতল পানি ঢেলে দিলো আরিয়ানের উপর। আরিয়ান গাড়ি ব্রেক করে সোনালীর দিকে তাকালো।
আরিয়ানের পুরো মুখ ভেজা পানি বেয়ে পড়ছে। অন্য রকম লাগছে আজ সোনালীর আরিয়ানকে দেখে কিন্তু মনে এখন ভয় করছে যদি কিছু করে বশে।
আরিয়ান সোনালীর দিকে তাকিয়ে সোনালীর মুখের কাছে মুখ আনলো। আরিয়ান তার ঠোঁট সোনালীর ঠোঁটে মিশিয়ে দিলো। সোনালী বড় বড় চোখ করে তাকিয়ে আরিয়ানকে কিল ঘুসি দিতে লাগলো।
- বাহ খুব টেস্টি তো। কোন ব্র্যান্ডের লিপস্টিক ব্যবহার করো?”
সোনালী আরিয়ানের কথা শোনে আরিয়ানকে সজোরে থাপ্পড় মারে আরিয়ান গালে হাত দিয়ে সোনালীর দিকে তাকিয়ে রইলো।
- মানছি আমি আপনার বিয়ে করা বউ কিন্তু আমি আপনাকে এখনও স্বামীর অধিকার দেয়নি তাহলে কোন সাহসে আপনি আমাকে কিস করলেন। আপনার সাথে কথা বলতে লজ্জা হচ্ছে আমার। আপনি আমার জীবনটা তেজপাতা করে দিচ্ছেন প্লিজ মুক্তি দেন আমায়।”
সোনালী কাঁদতে থাকে আরিয়ান কিছু না বলে গাড়ি ড্রাইভ করতে লাগলো। গাড়িতে বসে কেউ আর কারো সাথে টু শব্দ পর্যন্ত করলো না।
ইতি বসে আছে তার হবু বর নাহিদের সামনে। নাহিদ তাকে প্রশ্ন করলো।
- তুমি কি সত্যিই রাজি এই বিয়েতে?”
ইতি মাথা নিচু করে বললো, - হুম।”
- আলহামদুলিল্লাহ। এখন বলো তুমি কি নিজের পছন্দ থেকে রাজি হয়েছো নাকি পরিবার বলাতে রাজি?”
- দুটোই।”
- তোমার কি আগে কোনো রিলেশন ছিল?”
- উহু।”
- কি বলছো এইসব বিশ্বাস হচ্ছে না। তোমার আগে রিলেশন ছিল না কথাটা মনে হচ্ছে আমাকে ভয় পেয়ে বলছো।”
- সত্যিই বলছি কোনো রিলেশন ছিল না আর যদি থাকতো তাহলে তো আর এই বিয়ে হতো না।”
- হুম তাও ঠিক। এখন বলো রিলেশন ছিল না কিন্তু পছন্দ তো ছিলো?”
- হুম।”
- কে সেই ব্যাক্তি?”
- আমি প্রচুর ক্রাশ খেতাম তাই প্রতিদিনই আমার অনেক অনেক জনকে পছন্দ হতো।”
নাহিন ইতির কথা হাসলো। ইতি তখন জিব কেটে বললো, - হ্যায় হ্যায় কি বললাম এখন যদি বিয়ে না হয় আমার।”
- টেনশন করো না এইটার জন্য বিয়ে ভেঙ্গে যাবে না। তুমি সত্যি কথা বলেছো এইটাই অনেক বাই দা ওয়ে তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড না আসার কথা কোথাও ওনি?”
- আমিও তাই ভাবছি কোথাও ও। ফোন দিচ্ছি বাট রিসিভ করছে না কোনো সমস্যা হলো না তো আবার?”
- আমার মনে হয় ওনি আমাদের মাঝে আসতে লজ্জা পাচ্ছে তাই হয়তো আসে নাই আর তোমার ফোনও রিসিভ করছে না।”
- তাই হবে, ও যে লজ্জাবতী মেয়ে।”
- হুম। এখন বলো কি খাবে?”
- নাহ কিছু খাবো না।”
- বাহ বিয়ে না হতেই স্বামীর টাকা আয় করছো।”
নাহিদের কথা শুনে আবারো লজ্জায় লজ্জাবতী হয়ে গেলো ইতি। - এত লজ্জা পেতে হবে না প্রিয় আর তোমাকে খাওয়ানোর জন্য টাকা শেষ হবে না বলো কি খাবে?”
- আপনি অর্ডার করুন আজ না হয় আপনার পছন্দের কিছু খাই।”
- ওকে আজ আমার পছন্দের কিন্তু পরে তোমার।”
- হুম।”
নাহিদ খাবার অর্ডার করলো। ইতি ও নাহিদ কথা বলছে আর খাচ্ছে।
আরিয়ান বড় এক বাড়ির সামনে এসে গাড়ি থামালো। সোনালীর পা জমে আছে। ওর বার বার মনে পড়ছে বাংলাদেশের বউ বন্ধক ছবিটার কথা। আরিয়ান কি তাকে এইখানে রেখে চলে যাবে? আরিয়ান কি তার কষ্ট বুঝবে না? সোনালী ভয়ে ভয়ে গাড়ি থেকে নামলো কিন্তু সামনে এগুতে চাচ্ছে না।
- দাঁড়িয়ে আছো কেনো চলো?”
- আমি যাবো না।”
- কেনো?”
- আমার পা ব্যাথা করছে আপনি যান আমি এইখানে বসে আছি।”
সোনালী ভয়ে মিথ্যা কথা বলে ফেললো। আরিয়ান সোনালীকে এক নজর দেখে আচমকাই সোনালীকে কোলে তুলে নিলো। - এই কি করছেন নামান আমাকে আমি পরে যাবো আমি।”
- একদম চুপ। তুমি বলেছো তোমায় কিস করার অধিকার নেই কিন্তু কোলে তোলার অধিকার তো আছে।”
- আমি কি বলেছি সেই কথা?”
- কিন্তু এইটাও তো বলো নাই। এখন চুপ থাকো।”
- আচ্ছা আপনার বন্ধু কেমন?”
- খুব বাজে ছেলে একজন।”
- প্লিজ আমি বাসায় যাবো।”
আরিয়ান সোনালীর দিকে রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকালো সোনালী চুপ করে থাকলো।
আরিয়ান ওই বড় বাড়ির ভেতর প্রবেশ করলো। আরিয়ানকে সবাই সালাম দিচ্ছে সোনালী এত এত মানুষ দেখে ভীষণ লজ্জা পাচ্ছে কারণ ও আরিয়ানের কোলে।
- সবাই দেখছে নামান আমাকে আর আমার পায়ে ব্যাথা নেই মিথ্যা বলেছিলাম আপনাকে।”
- জানি আমি।”
- কিভাবে?”
- আরিয়ানের চোখকে ফাঁকি দেওয়া যে সম্ভব না।”
সোনালী অবাক হলো। আরিয়ান তার মিথ্যা জানার পরও কোলে নিয়ে এতটা পথ হেঁটে এসেছে। আরিয়ান সোজা একটা রুমের ভিতর প্রবেশ করলো। একজন বয়স্ক মহিলা শুয়ে আছে পাশে দু জন মেয়ে দেখে মনে হচ্ছে নার্স। আরিয়ান ওই মহিলার সামনে এসে সোনালীকে নামিয়ে মহিলার কাছে গিয়ে বললো,
- কেমন আছো দাদী?”
- আরেহ আমার দাদু ভাই এসেছে। খুব ভালো আছি দাদু ভাই।”
সোনালীর দিকে তাকিয়ে বললো, - ও কি সেই লীলাবতী?”
- হুম।”
- মাশাআল্লাহ। আয় তো বোন আমার কাছে আয়।”
সোনালী অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান তো তাকে বলেছে তার এক বন্ধুর কাছে নিয়ে যাচ্ছে তাহলে কি আরিয়ান তাকে মিথ্যা বলেছে। আরিয়ান তখন সোনালীকে ইশারা করলো যেনো বয়স্ক মহিলাটার কাছে গিয়ে বসে। সোনালী মহিলাটার কাছে গিয়ে বসলো। তখন ওই মহিলা সোনালীকে দেখে বললো, - কেমন আছো গো সুন্দরী?”
সোনালী হাসলো। - হুম ভালো আছি গো বিশ্ব সুন্দরী। তুমি কেমন আছো?”
- তোকে কাছে পেয়ে অনেক অনেক খুশি হয়েছি কই ছিলি এতদিন তুই? কি মিষ্টি দেখতে রে তুই। আমার দাদু ভাইয়ের পছন্দ আছে।”
আরিয়ানের দাদী ও সোনালী কথা বলতে বলতে অনেক আপন হয়ে যায়। সোনালীর খুব ভালো লাগলো আরিয়ানের দাদীকে। এক ঘন্টা থাকার পর আরিয়ান বললো, - দাদী এখন ওর যেতে হবে নাহলে ওর বাসায় সমস্যা হবে।”
- এক্ষুনি চলে যাবে।”
মন খারাপ করে বললো তখন সোনালী বললো,
- আমি আবার আসবো তুমি কষ্ট পেও না এখন তো তোমার সাথে আমার প্রতিদিনই কথা হবে।”
সোনালী যখন দাদীর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে দরজার কাছে যাচ্ছিলো তখন হৃদয় এসে বললো, - আরেহ ভাবী আপনি কখন এসেছেন আর কেমন আছেন?”
- হুম ভাইয়া ভালো। আপনি কেমন আছেন? আর এক ঘণ্টার মত হলো এসেছি।”
- আমিও ভালো আছি। ভাবী আপনার সেই ঝগড়ুটে ফ্রেন্ড আসলো না আজ?”
- ওওওও ইতি ওর তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে আজ ওর হবু বরের সাথে মিট করতে গিয়েছে।”
- ওহহ। ওকে ভাবী আমি আসছি আমার একটা দরকারি কাজ আছে।”
হৃদয় কেমন যেনো হয়ে গেলো। আরিয়ান সোনালীকে নিয়ে আবারো ড্রাইভ করতে লাগলো সোনালী ও আরিয়ান আর কোনো কথা বললো না। গাড়ি এসে থামলো সোনালীর বাড়ির সেই মেইন রাস্তার সামনে। সোনালী গাড়ি থেকে নেমে নিজের বাসায় চলে গেলো।
পর্ব ১০
পরের দিন খাবার টেবিলে খাবার খাচ্ছে সোনালী তখন ওর আব্বু বললো,
- মা তোমার সাথে আমি আর তোমার আম্মু খুব ফ্রেন্ডলী ভাবে কথা বলি। তুমি আমাদের এক মাত্র মেয়ে। আমরা চাই না তুমি খারাপ থাকো তাই তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করছি সত্যি কথাটা বলবে মা আর আমরা জানি তুমি মিথ্যা বলবে না।”
- আব্বু কি বলতে চাচ্ছো বলো আমি সত্যি কথাই বলবো তাছাড়া তোমরা আমার জন্য ভালোটাই করবে বলো কি বলবে?”
- মা তোমার কি কোনো রিলেশন আছে?”
সোনালী এমন কথা শুনে হেঁচকি ওঠা শুরু করলো। সোনালীর মা এক গ্লাস পানি সোনালীর হাতে দিয়ে বললো,
–” খেয়ে নে ঠিক হয়ে যাবে।”
সোনালী এক চুমুকেই সবটুকু পানি পান করলো তখন সোনালীর আম্মু বললো,
- কি রে তোর হটাৎ হেঁচকি উঠলো কেনো? তোর আব্বু কি বলেছে উত্তর দে?”
- নাহ আসলে হটাৎ এমন বিভ্রান্ত মুলুক প্রশ্ন করলে তো তাই নিজেকে সামলাতে না পেরে এমন অঘটন ঘটে গেছে।”
সোনালীর কথা শুনে হাসতে লাগলো সোনালীর আব্বু। - মা তুমি তো এখন বড় হয়ে গেছো তোমার জন্য অনেক অনেক পাত্র পক্ষ আসছে জানো তো তোমার বেস্ট ফ্রেন্ড ইতির কিন্তু বিয়ে ঠিক তাই আমরাও চাচ্ছি তোমাকে বিয়ে দিতে।”
- আমি তো ছোট।”
সোনালীর মা তখন বললো, - তোর থেকে ছোট তাদের বিয়ে হয়ে গেছে এমনকি তাদের সন্তানকেও স্কুলে ভর্তি করিয়েছে দিছে আর এইদিকে তুই এখনও মায়ের হাতে খাওয়া দাওয়া করিস।”
- মা তুমি কিন্তু আমায় অপমান করার চেষ্টা করছো?”
সোনালী ওর মায়ের দিকে চোখ ছোট ছোট করে বললো তখন ওর মা বললো, - অপমান করার চেষ্টা করছি না বরং অপমানই করছি।”
- দেখছো আব্বু আম্মু কিন্তু সিরিয়াল দেখে দেখে নাটক করা শিখে গেছে এখন উঠতে বসতে আমায় অপমান করে।”
মা মেয়ের এমন মিষ্টি ঝগড়া কিছুক্ষণ চলতে লাগলো। সোনালী আব্বু বললো, - ওই থামো তো তুমি আমার মায়ের সাথে সব সময় লেগেই থাকো অসভ্য মহিলা। আচ্ছা মা এখন বলো তোমাকে কি বলেছি তার উত্তর দেও?”
সোনালীর আম্মু কিছুক্ষণ ওনার স্বামীর দিকে তাকিয়ে রইলো কিছু বললো না। - নাহ আব্বু আমার তেমন কোনো সম্পর্ক নেই।”
- আলহামদুলিললাহ। শুনো সোনালীর মা আমাকে আরেকটু খাসির মাংস দেও তো খুশিতে আমার ডুগডুগি বাজাতে ইচ্ছা করছে।”
- আমি তো অসভ্য মহিলা। তাহলে এখন এই অসভ্য মহিলার কাছ থেকে তরকারি চাইতে লজ্জা করছে না। যাও নিজের কাজ নিজে করো অসভ্য পুরুষ কোথাকার।”
সোনালী ও তার আব্বু বুঝতে পারলো যে অসভ্য মহিলা বলার রিভেঞ্জ নিয়েছেন ওনি। সোনালীর আব্বু আর কিছু না বলে নিজেই তরকারি নিয়ে খেতে লাগলো।
আরিয়ান আর হৃদয় নাস্তা করছে। আরিয়ান টুকটাক কথা বলছে অফিস বিষয়ের। হৃদয় কথা শুনছে কিন্তু কিছু বলছে না মাঝে মধ্যে হুম হুম করছে।
- আজ এই বাঁচাল লোকের কি হলো?”
- হুম।”
অন্যমনস্ক হয়ে বললো হৃদয়। - তোর কি কোনো সমস্যা হয়েছে?”
আরিয়ান হৃদয়কে আস্তে ধাক্কা দিয়ে বললো হৃদয় হুসে এসে বললো, - হুম কি যেনো বলছিলি ব্রো?”
- তুই তো এইভাবে চুপ করে থাকার ছেলে না তাহলে আজ হটাৎ কি হলো তোর? মন খারাপ?”
- তেমন কিছু না ব্রো ওই একটু আকটু শরীলটা খারাপ।”
- কেনো কি হয়েছে তোর?”
আরিয়ান হৃদয়ের শরীলে হাত দিলো দেখলো জ্বর এসেছে কি না।
- জ্বর তো আসে নাই তাহলে কি হয়েছে? দাড়া আমি এক্ষুনি ডক্টর রায়হান কে ফোন দিচ্ছি।”
- আরেহ ব্রো তেমন কিছু হয় নাই আমার বলছিনা। মাথাটা একটু ঘুরছে ঘুমালে ঠিক হয়ে যাবো?”
- সত্যি তো?”
- হুম।”
- ওকে আজ তোর অফিসে যেতে হবে না তুই বাসায় থেকে রেস্ট নে আর শরীল বেশি খারাপ হলে আমায় বলবি আর অবশ্যই ডক্টর কে ফোন দিবি।”
- হুম। তুই কি এখন অফিসে যাবি?”
- নাহ আগে দাদীর কাছে যেতে হবে কি যেনো দরকার আছে পরে ওইখান থেকে অফিস যাবো।”
- ওকে সাবধানে থাকিস।”
- তুইও।”
আরিয়ান চলে গেলো হৃদয় খাবার না খেয়েই নিজের রুমে চলে গেলো। ফোনটা হাতে নিয়ে ইতির পিক দেখতে লাগলো।
- আচ্ছা তোমার বিয়ে ঠিক হয়েছে তাহলে আমার খারাপ লাগছে কেনো? মনে হচ্ছে কেউ আমার সব চেয়ে দামী জিনিস কেরে নিচ্ছে। তোমাকে তো আমি চিনি মাত্র কিছুদিন তাহলে এমন হচ্ছে কেনো? তোমার সাথে তো আমার ভালো করে কথাও হয়নি ঝগড়া ছাড়া।”
হৃদয় ছবির সাথে কথা বলছে। সোনালী ও ইতিকে যেদিন তোলে নিয়ে গিয়েছিল সেইদিন এই পিক গুলো তোলা হয়েছে। হৃদয়ের খুব কষ্ট হলে ও গিটারের সুর বাজায় তাহলে ওর কষ্ট কিছুটা কমে। তাই হৃদয় তার গিটার হাতে নিয়ে রুমের জানালার কাছে গিয়ে বসলো।
জানি তুমি, আসবেনা ফিরে
বাসবেনা ভালো আমাকে
জানি তুমি, ভেঙেছ হৃদয়
সেই আশাতে, দুঃখ চেপে রয়
এ হৃদয়ের এতো কাছে
ছিলে তুমি মনে কি পরে?
ফোনের ইতির পিক আর হাতে গিটার নিয়ে দেবদাসের মত গান গাইছে হৃদয়। মনটা তার খুব খারাপ।
- হয়তো মনের অজান্তেই তোকে চেয়ে ছিলাম কিন্তু বুঝিনি তুই অনেক দামী। এতদিন কতই না রোমান্টিক গল্প পড়েছি কিন্তু আসল ভালোবাসাটা অপলব্দি করতে পারি নাই তোকে দেখার পর তোকে হারিয়ে সেটা বুঝলাম।”
কলেজে কেম্পাসে বসে আছে ইতি আর সোনালী। ইতি তো সেই রেগে আছে সোনালীর উপর। সোনালী যখন সব বুঝিয়ে বললো তখন ইতির রাগটা কমলো।
- এখন বল ছেলেটাকে তোর কেমন লাগলো?”
–” খুব ভালো লেগেছে ভাবতে পারি নাই আমি কোনোদিন কাওকে মন থেকে পছন্দ করবো।” - হুম এখন তো আমাকে ভুলে যাবি বর পেয়ে।”
- তোকে ভুলে যাওয়া আমার পক্ষে কোনোদিন সম্ভব না নিজেকে ভুলে যাবো কিন্তু তোকে না।”
- হইছে দেখা যাবে নে। এখন বল তোর হবু বরের নাম কি?”
- ওর নাম নাহিদ। জানিস ওর কথাগুলো কি যে ভালো লাগে মনে হয় ওর কথায় জাদু আছে।”
নাহিদ নামটা শুনে সোনালী কেমন যেনো হয়ে উঠলো। - ওই গোল্ডেন কি হইছে তোর?”
- দুলাভাইয়ের কি কোনো পিক আছে তোর কাছে?”
- ওহহ সরি পিক নিতে ভুলে গেছি। ওকে অন্য একদিন নিয়ে নিবো নে এখন বল তুই এমন হাইপার হচ্ছিস কেনো?”
- নাহ তেমন কিছু না। নাহিদ নামের একজন লোক আমার পরিচিত ছিল আমি ভাবছি সেই লোক কিনা?”
- হাহাহা এক নামের কি একজন লোকেই নাকি?”
- তা না। আচ্ছা বাদ দে এইসব। চল বাসায় যাই।”
- হুম চল।”
আরিয়ান বিশ মিনিট আগে একটি গল্প আপলোড দিয়েছে। পোষ্ট দেওয়ার সাথে সাথে রিয়েক্ট আর কমেন্টের বন্যা চলছে। সোনালী দেখলো আজ আরিয়ান নায়কার নাম সোনালী দিয়েছে। গল্পের নাম ‘ অবশেষে তুই আমার’। মেয়েরা তো হিরোর উপর ক্রাশ খাচ্ছে। ছেলেরা তো হিরোইনের উপর। কিছুক্ষণের মধ্যে তো তাদের নাম চেঞ্জ করে হিরো আর হিরোইনের নাম দিয়েছে। আরিয়ানের গ্রুপে আবার রিভিউ পোষ্ট হচ্ছে। সোনালী দেখেই যাচ্ছে। সোনালীর কাছেও খুব ভালো লাগলো গল্পটা ওর খুব ইচ্ছে হলো একটা কমেন্ট করার জন্য কিন্তু করছে না। মনকে বুঝিয়ে জাস্ট লিখলো।
- নেক্সট যদিও বা এত ভালো লাগেনি গল্পটা।”
কতটা লিখে দুই মিনিট আরিয়ানের প্রোফাইল ঘাটতে লাগলো। - বজ্জাত চাল কুমড়া এখনও সিঙ্গেল দিয়ে আছে বলি তুই যে আমার জোর করে বিয়ে করেছিস এখন কি আমি পানিতে ভেসে যাবো ম্যারিড দে আন্ডা বাচ্চার বাপ।”
ভুলক্রমে আরিয়ানকে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠিয়ে দেয় সোনালী কিন্তু সোনালী দেখতে পেলো না। নোটিফিকেশন আসলো দেখলো চারটা মেয়ে কমেন্ট লিখছে সাথে অ্যাংরি রিয়েক্ট। - এত সুন্দর একটা গল্প লিখেছে আর তুমি নেক্সট লিখছো আবার বলছো বেশি ভালো হয় নি তাহলে আসছে কেনো গল্প পড়তে। নিজে একটা লিখে দেখাও তো গল্প আবার আসে অন্য জনকে বলতে বেশি ভালো হয় নাই। ভালো একটা কমেন্ট তো করতে পারো আজব পাবলিক।
- গল্প ভালো না লাগলে তো আর নেক্সট লিখতেন না তাই না? গল্প ভালো না হলে অবশ্যই পরের পর্ব পড়তে ইচ্ছুক হবে না এখন আবার দেখছি নামও চেঞ্জ করে ফেলছেন। এই কমেন্ট না করলে কি হতো না পাগল লোকজন*
- এত বড় কমেন্ট করার জন্য আপনাকে সু স্বাগতম আফা। দোয়া করে এইসব আর লেখবেন না আমাদের ক্রাশের আইডিতে। আপনার মতো মেয়ে গল্পের গ বুঝে না তার দ্বারা গল্প পড়া মানায় না।”
সাথে ব্যাঙের ঈমোজি। - আরেহ বইনা গল্প যেহেতু লেখছে পরের পর্ব তো দিবো এই জন্য এত কষ্ট করে লেখার কি দরকার? আর শুনো বইন তুমি একটা গল্প লিখো দেখি তো কেমন লেখতে পারো? *
সোনালী এইসব কমেন্ট দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো ও শুধু আরিয়ানের উপর প্রতিশোধ নেওয়ার জন্য সুন্দর গল্পকে অসুন্দর বলেছে এই জন্য মেয়েরা তাকে ধুয়ে দিচ্ছে। সোনালী আর দেরি না করে কমেন্ট ডিলেট দিয়ে দিলো। কিন্তু কমেন্ট ডিলেট দিতে দেরি হয়ে গেছে ওই মেয়েগুলো স্কিনশট নিয়ে রেখেছে আর গ্রুপে পোষ্ট করছে। সোনালীকে ভাইরাল করে দিচ্ছে। সোনালীর আইডিতে এসে, ইনবক্স এসে সবাই বকছে সোনালীকে। সোনালী রাগে নিজের মাথার চুল নিজেই চিরছে কেনো এমন করলো ও। হটাৎ দেখলো আরিয়ান তার ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট একসেপ্ট করেছে সোনালী অবাক হলো ও কবে ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পাঠাইছি। কিছুক্ষন ভেবে মনে মনে একটা শয়তানি হাসি দিলো। রাতে সোনালী তার রিলেশনশিপ স্ট্যাটাস দিলো আরিয়ানের সাথে। সকালে উঠে যা দেখলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না।
পর্ব ১১
সকালে উঠে যা দেখলো তার জন্য সে মোটেও প্রস্তুত ছিলো না সোনালী।
মেয়েদের কমেন্টের ভিড় জমে আছে। কতজন কত ভাবেই না বকছে সোনালীকে। কারো কারো কমেন্ট ছিলো।
- গতকাল রাতে দেখলাম কমেন্ট এখন দেখি রিলেশনশিপ বলি মাইয়া তোমার মাথা ঠিক আছে তো? –
- বিশ্বাস করেন এই পোষ্ট দেখে আমি পাবনা হসপিটালে ফোন দিচ্ছি। আপনারা কি ভাবছেন আমি যাবার জন্য আসলে না এই পাগল মেয়েকে পাঠানোর জন্য। –
- বইন তুমি কবে পাবনা থেকে পালিয়ে এসেছো? –
- আমি সিউর এই মাইয়ার মাথা খারাপ। তাই তো বলি গতকাল এমন পাগলের মত কমেন্ট করলো কেনো? –
- এই মেয়ের পরিবারের কাছে আবেদন করছি যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আপনার মেয়েকে বাড়ি থেকে ঝাড়ু মেরে বের করুন তানাহলে কিছুদিন পর আপনাদের আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। –
এমন অনেক অনেক কমেন্ট। ছেলেদেরও কমেন্টও কম যায় না। - সবাই এক আরিয়ান নিয়েই পড়ে আছে এইদিকে যে হাজার হাজার আরিয়ান গার্লফ্রেন্ডের জন্য মেয়ে খুঁজছে তার খবর কেউ রাখে না। ওই কে আছিস আমায় গোলাপী কালারের বিষ দে খাইয়া এই জীবন ত্যাগ করি। –
- এই মেয়ে রিলেশন স্ট্যাটাস দিলেই কি লেখক আরিয়ানকে পাবে শুধু শুধু বকার ভাগীদার হচ্ছো তার চেয়ে আমার সাথে রিলেশনশিপ দিতে আমি কিছু মনে করতাম না। –
- আমাদের মত হতভাগাদের কেউ দেখে না সবাই খালি আরিয়ান আরিয়ান করে। –
- আমার সাথে প্রেম করলে আমি মাইন্ড করবো না। –
এমন আরও অনেক অনেক কমেন্ট। সোনালী মাথায় হাত দিয়ে কমেন্ট পড়ছে। ও ভাবতে পারে নাই এমন কিছু হবে। সোনালী রিলেশন স্ট্যাটাস ডিলেট দিতে গিয়ে দেখলো আরিয়ান ভাব ওয়ালা ইমোজি দিয়ে কমেন্ট করেছে। এমন ভাব দেখে সোনালীর রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে। - একটু লেখে বলে তার এত ভাব। ভাব দেখলে আর বাঁচি না। দাঁড়া আজ এই মিথ্যা বিয়েই আমি সবার সামনে আনবো।”
সোনালীকে হৃদয় মাঝে মাঝে ফোন দেয়। সোনালী কল লিস্ট খুঁজে হৃদয়ের নাম্বার বের করলো। - আসসালামু আলাইকুম কেমন আছেন ভাইয়া।”
- আরেহ ভাবী, ওলাইকুম আসসালাম। আলহামদুলিল্লাহ ভালো আছি আপনি?”
- আলহামদুলিল্লাহ আমিও ভালো আছি ভাইয়া। ভাইয়া একটা কথা বলবো?”
- জ্বি বলুন ভাবী?”
- আপনার কাছে কি আমার আর আপনার ভাইয়ের বিয়ের পিক গুলো আছে?”
- হুম আছে। কিন্তু কেনো?”
- যদি আমাকে একটু দিতেন খুব ভালো হতো।”
- হুম দিচ্ছি ভাবী। হোয়াটস অ্যাপে দিচ্ছি দেখুন ভাবী।”
- অনেক অনেক ধন্যবাদ ভাইয়া আপনাকে।”
- মোস্ট ওয়েলকাম। আচ্ছা ভাবী আপনার ফ্রেন্ড ইতির বিয়ে কবে?”
কথাটা বলতে হৃদয়ের গলা ধরে যাচ্ছে তবুও কষ্ট করে বললো, - সামনের মাসের তিন তারিখ ভাইয়া।”
- ওহহ ওকে ভাবী।”
- কিছু কি বলবেন?”
- হুম না ভাবী রাখছি ভালো থাকবেন।”
- আপনিও।”
হৃদয় ফোন কেটে দিলো। সোনালী পিকগুলো সেভ করে ফেসবুক আপলোড দিলো। সবার চোখ এখন ছানাবড়া। কেউ কেউ বলছে ।
-এইগুলো আগের বারের মত মিথ্যা-
কেউ বা বলছে ।
-এ হতে পারে না-
সোনালী এত সুন্দর জবাব দিতে পেরে খুশি হয়ে বাগানে চলে গেলো।
সোনালীর বাগানের জায়গাটা খুব কম কিন্তু তবুও খুব সুন্দর। বিভিন্ন ধরনের গাছ আছে বাগানে। নয়নতারা, অপরাজিতা, কাঠ টগর, নন্দিনী, পানিকা ফুল, দোলন চাঁপা, কামিনী, মর্নিং গ্লোরি, পর্তুলিকা, গোলাপ, জবা আরো বিভিন্ন ধরনের ফুল গাছ। সোনালীর মন একদম ভরে গেছে এত এত ফুল দেখে। কিন্তু সোনালী মর্নিং গ্লোরি গাছের দিকে তাকিয়ে বললো,
–” এখন তো সকাল না তাহলে এই ফুল ফুটলো কেনো? খুব সুন্দর করে ফোটে আছে। দেখতে কিন্তু বেশ লাগছে।”
- সোনালী তুই তাড়াতাড়ি একটু আমার রুমে আসতো!”
- হুম যাও আসছি।”
সোনালী ওর মায়ের কাছে গিয়ে বসলো। সোনালীর মা মেয়েকে দেখে বললো,
- আজ এত খুশি কেনো?”
- বাগানের ফুল দেখে ইসসসসসস মনটা ফ্রেশ হয়ে গেছে।”
- যেহেতু মন ফ্রেশ তাই তাড়াতাড়ি এই শাড়িটি পরে আয় তোকে আজ পাত্র পক্ষ দেখতে আসবে।”
কথাটা শুনে সোনালীর মুখের হাসি নিমিষেই উধাও হয়ে গেলো। - কি বলছো এইসব তুমি?”
- ঠিক বলছি তাড়াতাড়ি রেডি হয়ে আয় এক্ষুনি চলে আসবে ওরা।”
- হটাৎ করেই পাত্র পক্ষ আসবে কেনো বাসায়?”
- হটাৎ করে কই আমাদের জানিয়েই তো আসছে।”
- কই আমি তো জানি না কিছু।”
- আমাদের সময় বিয়ের তারিখ পর্যন্ত বলতো না যখন গায়ে হলুদ হতো তখন বুঝতাম আগামীকাল বিয়ে। তাই তো লজ্জা পেয়ে আর কারো সাথে কথা বলি নাই আর এখনকার যুগের মেয়ে মাকে বলছে ও কেনো জানে না। লজ্জা সরম সব শেষ এখন।”
সোনালী কিছু বলতে যাবে তার আগেই ইতি এসে বললো, - আরেহ মাদার ইন্ডিয়ার ফ্রেন্ড আমি আছি না দেখো তোমার মেয়েকে তুড়ি বাজিয়ে সাজিয়ে দিবো।”
- এই জন্যই তো তোকে ডেকে এনেছি নে সাজা ওরা এক্ষুনি চলে আসবে।”
- ওকে।”
সোনালীকে টেনে ইতি সোনালীর রুমে নিয়ে গেলো।
সোনালী তখন বললো,
- ওই তোর কি মাথা খারাপ? জানিস না আমার বিয়ে হয়ে গেছে একটা মেয়ের আর কতবার বিয়ে হবে?”
- আরেহ গাঁধী ওইটা তো মিথ্যা বিয়ে। রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য করা হয়েছে। আর শুন এই বিয়েটা হলে তুই ওই লেখক ভাইয়ার কাছ থেকে মুক্তি পাবি। তখন আর ওনি তোকে তোলে নিয়ে যেতে পারবে না এমনকি অত্যাচারও না।”
- সত্যি!”
- হুম।”
- তবুও যদি ওনি পুলিশ নিয়ে এসে বলে আমি তার বিয়ে করা বউ তখন কি করবো আমি?”
- গাঁধী, ওনি এই কথা বলবে না। ওনি তো আর তোকে আসল বিয়ে করে নাই যে ভিলেন হয়ে আসবে। যখন শুনবে তোর বিয়ে ঠিক তখন হয়তো মনটা নরম হবে তোকে আর বিরক্ত করবে না।”
- তাহলে শাড়িটা পরে ফেলি কেমন?”
- আর শুন দেখতে আসলেই বিয়ে হয়ে যায় না।”
- তাহলে দেখতে আসার কোনো মানেই হয় না।”
- দেখতে আসলে তো আমাদেরই ভালো শালী। ওরা টাকা দিবে আর আমরা বইমেলায় বই কিনতে পারবো হিহিহিহি।”
- ওয়াও গ্রেট। এখন থেকে দেখতে আসলে আর বারণ করবো না। দেখতে আসলে তো বই কিনার টাকা হয়ে যাবে। জানিস কত গুলো বই যে সিলেক্ট করে রেখেছি।”
— ” আমিও। পরে মিলিয়ে দেখবো কোনো বই বাদ রইলো কি না এখন শাড়িটা পরে ফেল।” - ওকে বেফী।”
সোনালী কালো কালারের এক শাড়ি পড়লো। গয়না, চুড়ি সব ম্যাচিং করে পড়ছে। হালকা সাজ ঠোঁটে হালকা গোলাপি কালারের লিপস্টিক চুল গুলো খোঁপা করে বাঁধা। ফর্সা গায়ে কালো শাড়িটা একদম খুব মানান সই। ইতি তো সোনালীর দিকে তাকিয়ে আছে।
- তোকে দেখে তো আমি আহত হয়ে গেছি দুলাভাই যে নিহত হবে আমি সিউর।”
- ওই কথা বলবি না হাজার হোক আমার দশটা না পাঁচটা না একটাই মাত্র স্বামী হবে এমন কথা ভুলেও আনবি না।”
- ওকে। আয় কয়েকটা সেলফি তুলি।”
দুই বান্ধবী মিলে পিক তুললো। সোনালী আম্মু এসে বললো পাত্র পক্ষ চলে এসেছে।
পাত্র পক্ষের সামনে বসে আছে সোনালী। একবারও সামনে তাকিয়ে দেখছে না কে বসে আছে।
- কি রে বোন একবার তো আমাদের দিকে তাকিয়ে দেখ।”
সোনালী চমকে উঠে মুখ উঠতেই দেখলো ওর সামনে আরিয়ানের দাদী, আরিয়ান আর হৃদয় বসে আছে। দাদী আর হৃদয় মিটমিট করে হাসছে কিন্তু আরিয়ানকে দেখে বুঝা যাচ্ছে বেশ রেগে আছে।
সোনালী ওর আব্বু আম্মুর দিকে তাকিয়ে চুপ করে রইলো। আরিয়ানের দাদী তখন বললো,
- মেয়ে আমাদের বেশ পছন্দ হয়েছে এখন তোমরা বলো তোমাদের কি আমার নাতিকে পছন্দ হইছে।”
- ছেলে অপছন্দ হওয়ার কোনো কারণ নেই বড়আম্মা আপনি যে আমাদের মেয়ে কে পছন্দ করেছেন এইটাই তো আমরা বিশ্বাস করতে পারছি না কি বলো সোনালীর আব্বু।”
- হুম। ছেলে আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে।”
- বিয়ের তারিখ তাহলে ঠিক করে ফেলি কি বলো তোমরা?”
সোনালীর আব্বু আম্মু আগের কথা জানে না তাই সোনালীর আম্মু বললো, - বড়আম্মা আমাদের উচিৎ ছেলে ও মেয়ে কে আলাদা একটু কথা বলতে দেওয়া।”
- আমিও তাই ভাবছি। আরিয়ান যা তুই সোনালীর সাথে একটু আলাদা কথা বল আর তোদের মতামত দে।”
- হুম।”
সোনালী আরিয়ানকে নিয়ে তার রুমে গেলো। বেচারা হৃদয় চুপচাপ বসে আছে বড়দের মাঝে।
সোনালীর রুম আরিয়ানের রুমের মত এত বড় না কিন্তু খুব সুন্দর করে সাজানো। পুরো রুম জোরে পুতুলের ছড়াছড়ি। একটা পুতুল হলো সোনালীর থেকেও বড়।
- এই বাচ্চাদের রুম কার?”
- এইটা আমার রুম বাচ্চাদের না ওকে।”
সোনালী আঙ্গুল ঘুরিয়ে বললো আরিয়ান তখন সোনালীর আঙ্গুল ধরে হাত টান দিয়ে নিজের কাছে মিশিয়ে বললো, - তোমার তো দেখছি বিয়ে করার খুব শখ।”
- তো কি হয়েছে?”
- তুমি তো জানতে না যে পাত্র পক্ষ আমরা তাহলে অন্য কেউ ভেবেই রাজি হয়ে গেছো?”
সোনালী চুপ ওতো অন্য কেউ ভেবেই রাজি হয়েছিল। - কি হলো চুপ কেনো?”
- আপনি তো সংসার করার জন্য আমাকে বিয়ে করেন নাই রিভেঞ্জ নেওয়ার জন্য করেছেন তাহলে আমি কেনো আমার বাবা মা কে কষ্ট দিবো তাই রাজি হয়েছি।”
- তোমাকে বলেছিনা যতদিন বেঁচে থাকো এই আরিয়ানের সাথেই থাকতে হবে। আর আজ ফেসবুকে এইসব কি করেছো।”
- না করে উপায় কি সবাই যে হারে আমাকে গালি দিচ্ছিলো এইটা ছাড়া তো উপায় ছিলো না।”
- বুঝেছি হিংসা হয়। নিজের স্বামীকে তো আর ভাগ করতে পারো না তাই এমন করে ফেলেছ।”
- বয়েই গেছে আমার।”
- মিথ্যা বলা আমি পছন্দ করি না। আমি জানি তুমি কেনো এইসব করেছো।”
- এখন হাত ছাড়েন।”
আরিয়ান সোনালীর কথা না শুনে সোনালীকে আরো কাছে টেনে নিয়ে কথা বলতে লাগলো।
হৃদয় কিছুক্ষণ বসে থেকে বোরিং হয়ে গেছে। তাই বাসাটা ঘুরে দেখবে বলে ওদের কাছ চলে আসে।
একটা রুমের কাছে এসে হৃদয় অবাক হলো। একটা মেয়ে কোমরে ওরনা বেঁধে টুলের উপর দাঁড়িয়ে কিছু একটা করছে। সম্ভবত এক পায়ে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছে।
মেয়েটাই যেই পা উঠাবে তখন টুল কাথ হয়ে মেয়েটি পরে যেতে নিয়েই হৃদয় ধরে ফেলে। হৃদয় ইতিকে দেখে সারপ্রাইজ হয়ে যায়।
পর্ব ১২
মেয়েটাই যেই পা উঠাবে তখন টুল কাথ হয়ে মেয়েটি পরে যেতে নিয়েই হৃদয় ধরে ফেলে। হৃদয় ইতিকে দেখে সারপ্রাইজ হয়ে যায়।
ইতি চোখ বন্ধ করে আছে। এলোমেলো চুলগুলো মুখের সামনে এসে পড়লো। কপাল ভাঁজ করে রেখেছে। হৃদয় তাকিয়ে দেখছে। ইতি যখন বুঝতে পারলো ও হাওয়ায় ভাসছে তখন এক চোখ বন্ধ করে অন্য চোখ খুলে দেখলো কি ঘটেছে যখন দেখলো ও হৃদয়ের কোলে তখন বললো,
- আপনারা জেনে গেছেন আজ সোনালীকে দেখতে আসবে?”
হৃদয় কিছু বলছে না অপলোকভাবে তাকিয়ে আছে। - এই যেএএএএএএএএএ শুনছেন আমারররররররর কথাআআআআআআআ।”
হৃদয় এত জোরে চিৎকার শুনে মনের অজান্তেই হাত ছেড়ে দিয়ে কানে ধরে আর ইতি মেঝেতে পরে যায়। - ও মা গো আমার কোমড় শেষ। বজ্জাত, অ্যানাকোন্ডা, হাতির দাঁত, জিরাফ, নাইজেরিয়ান, লাল মহিষ, বিলাতি ইন্দুর, পঁচা নদীর মরা মাছ, পঁচা কুমড়া, ফাজিল, অসভ্য ছেলে, শয়তানের জমজ ভাই, হাবলা মাছ, বট গাছে থাকা ভুত, জলহস্তী, বিড়ালের এক্স জামাই, শয়তান ছেলে, মুখ পোড়া হনুমান, ধলা চিকা, ইবলিশ শয়তান, পচা লাউ, পচা ডিম, গোলাপি মহিষ, লাল বাঁদর, ছাল ছাড়া মোরগ, হাড্ডি ছাড়া ছাগল, বোল ছাড়া মোরগ, নীল খাটাশ, লাল খবিশ, অস্ট্রেলিয়ান জিরাফ, বট গাছে থাকা মিশকা ভূত, দেশী ছাগল, ভেড়া, হনুমান, বিড়ালের বড় ভাই, আমার কোমড় ভেঙে দিলো রেএএএএএএএ এখন আমার হবু বর কি আমায় বিয়ে করবে এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ এ্যাঁ।”
ইতির কথা গুলো হৃদয়ের মাথার উপর দিয়ে গেলো। এতক্ষণ রেডিওর মতো যা বলছে ইতি হৃদয় কিছুই বুঝতে পারলো না।
- আচ্ছা তুমি এতক্ষণ কি বললে ওইসব?”
হৃদয়ের এমন কথা শুনে রাগে ফুঁসতে থাকে ইতি। ফ্লোর থেকে উঠে কোমরে হাত দিয়ে কিছুটা বাঁকা হয়ে দাঁড়িয়ে বললো, - ওইগুলো আমার স্পেশাল গালি। আপনাকে তো আরো কিছু বলতে ইচ্ছে করছে নির্ঘাত আমি ভালো মানুষ তাই সামান্য কিছু বললাম।”
- গালির পরিমাণ সামান্য ছিলো?”
- তা নয় তো কি? আমার জীবনে এত কম বকা শুধু আপনাকেই দিয়েছি। যে আমার বকার লিস্ট শুনেছে সে বলতে পারে এই ইতির বকার লিস্ট কত লম্বা।”
- কত লম্বা?”
ইতি দুই হাত অনেকটা দূরে নিয়ে বললো,
- এতততততততত লম্বাআআআআআ।”
- এতততত লম্বাআআআ।”
- হুম। আপনার কপাল ভালো যান বাতাসা বিলান এখন।”
- হুম।”
হৃদয় অন্যদিকে ঘুরে বুকে থু থু দিতে লাগলো। - ওই আপনারা কেমনে জানেন আজ সোনালীকে পাত্র পক্ষ দেখতে আসছে?”
- পাত্র পক্ষই তো আমরা আর পাত্র হলেন শয়ং আমার ব্রো আরিয়ান।”
- সোনালী বেবি তুমি তো গেছো এইবার। এই লেখক ভাইয়ার হাত থেকে তোমার মুক্তি নেই।”
- শুনলাম তোমার নাকি বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে?”
- হুম। আগামী মাসেই বিয়ে। আপনাকে অগ্রিম দাওয়াত দিলাম চলে আসবেন কিন্তু!”
হৃদয় শুকনো হাঁসি দিয়ে বললো, - আমি না থাকলে তো আর বিয়েই হবে না।”
- আপনি না থাকলে বিয়ে হবে না কেনো?”
- আরেহ তুমি দাওয়াত দিছো। তুমি তো চাও আমি যাই তাই বললাম।”
- ওহহহহহ।”
- হুম।”
বিছানার পাশ থেকে ইতির ফোন বাজছে হৃদয় ফোন হাতে নিয়ে দেখলো নিক নেম ‘ লাইফ লাইন ‘। ফোন ইতির হাতে দিয়ে বললো, - কারেন্টের লাইন ফোন দিয়েছে তোমার।”
ইতি হৃদয়ের দিকে কড়া চোখে তাকালো হৃদয় হাসলো। ইতি ফোন রিসিভ করতে যাবে তখন হৃদয় বললো, - সাবধানে কথা বলো পরে আবার শক খেও না কারেন্টের লাইনের সাথে কথা বলে।”
হৃদয় ইতিকে চোখ টিপ দিয়ে চলে যায়। ইতি হৃদয়কে ভেংচি কেটে নাহিদের সাথে কথা বলতে ব্যাস্ত। - জানো সোনালী এই শাড়িতে তোমায় কিন্তু একদম হহহহহহহহ।!”
- ছিঃ ছিঃ ছিঃ কি বাজে ভাষা ইউজ করছেন। লজ্জা নাই আপনার। কিভাবে উচ্চারণ করেন এমন কথা।”
আরিয়ানের মুখে হাত দিয়ে সোনালী কথা বলতে লাগলো। আরিয়ান সোনালীর হাতে কামর দিলো। - আহ্হ।”
- তোমরা মেয়েরা না বুঝো কম বকবক করো বেশি। আমি হট না হুর বলতে চাইলাম। বাই দা ওয়ে তোমার মাইন্ড কি খারাপ গো! সব সময় ভালো কথা শোনার আগে নেগেটিভ ভাবো। আচ্ছা তুমি কি সব সময় এমন পজিটিভ কে নেগেটিভ ভেবে মাথায় রাখো?”
সোনালী এখন লজ্জার থেকেও যদি বড় লজ্জা থাকে সে পেয়ে গেছে। মনে মনে বললো, - আমার মত বোকা পৃথিবীতে দুটো আছে বলে আমি মনে করি না। সব সময় ভাবী কি হবে আর হয় কি সত্যিই তো আমার মাইন্ড এত খারাপ কেনো?”
- ওই হ্যালো এত না ভেবে আসো সেলফি তুলি।”
- আপনার মত জিরাফের সাথে পিক তুললে লোকে বলবে বাপ বেটি দাঁড়িয়ে পিক তুলছে।”
সোনালী বুঝাতে চেয়েছিল লম্বার কথা কিন্তু আরিয়ান বুঝলো বয়সের কথা। দিলো থাপ্পড় সোনালীকে। - ওই তুমি আমার থেকে মাত্র সাত বছরের ছোট। স্বামী স্ত্রীর এইটা পারফেক্ট। এইসব ফালতু কথা বললে এমন মার মারবো যেনো জীবনে কথা বলতে না পারে।”
সোনালী গালে হাত দিয়ে বললো, - আমি তো জাস্ট মজা করছিলাম আর আপনি এত জোড়ে থাপ্পড় দিলেন ওইটা হাত নাকি হাতুড়ি এক থাপ্পড়ে দাঁত সব নড়ে উঠেছে। আপনার মনে আমার জন্য কি একটু মায়া নেই। শুধু কি ওই মিথ্যা অপবাদ করার জন্যই আমার সাথে এমন করছেন?”
সোনালীর কান্না দেখে আজ খুব কষ্ট হচ্ছে আরিয়ানের। তাই হটাৎ করেই সোনালীর গালে চুমু খেয়ে সোজা হাঁটা শুরু করলো। সোনালী কান্না থামিয়ে আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইলো। - তুমি সারাদিন ওই বাড়িতে কি করো? তোমার কি নিজের বাড়ি নেই?”
নাহিদ ইতির সাথে মিসবিহেভ করছে। ইতি নাহিদকে বললো, - আজ সোনালীকে দেখতে এসেছিল তাই আন্টি আমায় আসতে বলেছে। আপনি তো জানেন সোনালী আমার বেস্ট।!”
- আমি কি এত কথা শুনতে চেয়েছি তোমার কাছে? এখন তুমি আমার বাগদত্তা আমি যা বলবো তাই করবে ওকে।”
- আমি তো খারাপ কিছু করেনি।”
- তুমি কি আমার কথা বুঝতে পারছো না।”
দাঁতে দাঁত চেপে বলতে লাগলো নাহিদ। ইতির কোনো কথাই শুনতে ইচ্ছুক না নাহিদ।
- হুম আমি বাসায় যাচ্ছি।”
- ফ্রেন্ডকে পাত্র পক্ষ দেখতে এসেছে এইখানে তোমার আসা তো কোনো দরকার নেই নাকি নিজেও আরেকটা খুঁজছো?”
- নাহিদ!”
- একদম বকবক করবে না বাসায় যাও এক্ষুনি আমি ত্রিশ মিনিট পর ফোন দিবো তোমাকে যেনো তখন বাসায় দেখি।”
নাহিদ ফোন কেটে দিল ইতি কিছুক্ষণ কান্না করে ব্যাগ নিয়ে সোনালীর মাকে বলে চলে যায়। সোনালী মা কিছু জিজ্ঞাস করলে বলে বাড়িতে কিছু প্রবলেম হয়েছে তাই চলে যাচ্ছে।
ইতি যাওয়ার আগে হৃদয়ের সাথে দেখা হয়। হৃদয় ইতির মুখ দেখে বুঝতে পারে ইতি কাঁদছিল। হৃদয় কিছু বলার আগেই ইতি চলে যায়।
আরিয়ান তিন মাস পর বিয়ের ডেট ঠিক করতে বলেছে। আরিয়ানের কথা অনুযায়ী এক সপ্তাহ পর এনগেজমেন্ট হবে আর তিনমাস পর বিয়ে। আরিয়ানের দাদী বিয়েটা আরো একটু আগে নিতে চাইছিল কিন্তু ভয়ে কিছু বলেনি। আরিয়ানের দাদিও খুব ভয় পায় আরিয়ানকে।
আরিয়ানের বাবা মা নেই হৃদয়ের মা বাবার ডিভোর্স হয়ে গেছে তাই হৃদয় ওদের কারো সাথে কথা বলে না আরিয়ানের কাছেই থাকে। দাদী ওদের দুজনকে দেখে আসছে সেই ছোট থেকেই। ওরা দুইজন খুব ভালোবেসে ওদের দাদীকে।
আরিয়ান হৃদয় আর ওর দাদী চলে যায়। সোনালী ইতির কথা ওর মার কাছ থেকে জানতে পেরে ইতিকে ফোন দিয়ে দেখে ও ব্যাস্ত। অনেকবার কল দেয় ফলাফল ওই একটাই।
- মাইয়া দেখি এখন খুব বিজি জামাই পাইয়া আমারে তো ভুইল্লা গেছে এক্কে বারে।”
- কে এত কল দিচ্ছে তোমায়?
- সোনালী ফোন দিচ্ছে।”
- তোমার ফ্রেন্ড এত ফোন দেয় কেনো?”
- ও আমার বেষ্ট ফ্রেন্ড নাহিদ।”
- বিয়ের পর এইসব ফ্রেন্ড বেষ্ট ফ্রেন্ড কোনো কিছুই থাকবে না ওকে।”
ইতি আর সহ্য করতে না পেরে রাগে ফোন কেটে দিয়ে মাথার উপরে বালিশ রেখে শুয়ে পড়ে আর হুমায়ন আহমেদ স্যারের একটি উক্তি মনে পড়ে তার।
“গভীর প্রেম মানুষকে পুতুল বানিয় দেয়। প্রেমিক প্রেমিকার হাতের পুতুল হয় কিংবা প্রেমিকা হয় প্রেমিকের পুতুল। দুজন একসঙ্গে কখনও পুতুল হয় না। কে পুতুল হবে আর কে হবে সূত্রধর তা নির্ভর করে মানসিক ক্ষমতার উপর। মানসিক ক্ষমতা যার বেশি তার হাতেই পুতুলের সুতা”। - আমি এখন সেই পুতুল।”
রাতে সোনালী আরিয়ানের সেই গল্পটি পড়ছে ‘ অবশেষে তুমি আমার ‘
গল্পের একটা লাইনে এসে সোনালী বার বার পড়তে থাকে।
“বেশি সুন্দরী মেয়েদের কারো প্রেমে পড়তে নেই কেননা তার পিছনেই তো প্রেমে পড়ার মানুষের অভাব থাকে না। প্রেম হয় রাগ, লজ্জা, অপমান, ঘৃনা, কেয়ারিং, শাসন তাই কে কি দেখে প্রেম করবে তা সম্পূর্ণ তার মন ঠিক করে দেয়।”
কথাগুলো সোনালীর মনকে বার বার মুগ্ধ করছে। ওর মনে হচ্ছে আরিয়ান কিছু মিশিয়ে এই কথাগুলো লিখেছে। বার বার ওই লেখায় মুগ্ধ হয়ে পড়ছে সোনালী।
ট্রিং।
- এত রাত করে জেগে আছো কেনো?”
আরিয়ানের ম্যাসেজ দেখে সোনালী উত্তর দিলো। - এত সুন্দর কিভাবে লিখেন বলবেন একটু? যত পড়ি ততই মুগ্ধ হচ্ছি কি যাদু আপনার লেখায়?”
- লেখার জাদু দেখলে মনের জাদু দেখলে না।”
- আপনার আবার মনের জাদু আছে? আমি তো জানি শুধু থাপ্পড় দেওয়ার এক্সট্রা শক্তি আছে আপনার।”
- ঘুমাও এখন।”
- কি করবেন আপনি?”
- সিগারেট ধরিয়ে বইয়ের কিছু কাজ আছে ওইটা কমপ্লিট করবো। গুড নাইট।”
আরিয়ান সাথে সাথেই অফলাইন। - আনরোমান্টিক কোথাকার।”
পর্ব ১৩
আরিয়ান সাথে সাথেই অফলাইন।
- আনরোমান্টিক কোথাকার।”
সোনালী ফোন অফ করে শুয়ে পড়লো।
পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে নামাজ পড়ে মায়ের কাজে সাহায্য করছে ইতি। - বাহ বাহ আজ সূর্য কোন দিক উঠেছে?”
- কেনো? এমন ভাবে বলছো কেনো?”
- কোনোদিন তো রান্না ঘরে পা ফেলিস না তাই বললাম আর কি!”
- কিছুদিন পর বিয়ে হলে তো রান্না ঘরেই যেতেই হবে তাই আগে থেকেই সব শিখে যাচ্ছি।”
- বাবাহ এখন থেকেই সব ভেবে রেখেছিস গুড।”
- আমি জানি আমি গুড গার্ল এইভাবে বলতে হবে না হিহিহিহি।”
- ফাজিল মেয়ে একটা হাহাহা।”
ইতির ফোনে একটার পর একটা ম্যাসেজ আসছে। ইতি কে ওর মা রান্না ঘর থেকে বের করে দিয়েছে। কিছুদিন পর বিয়ে এখন রান্না ঘরে রান্না করবে। আদরের মেয়ে কে না রাঁধতে দিয়ে রান্না ঘর থেকে পাঠিয়ে দিলো।
ইতি হাত পরিষ্কার করে ফোন হাতে নিয়ে দেখে অনেক বড় একটা ম্যাসেজ এসেছে নাম্বার অচেনা।
“কেমন আছো প্রিয়তম। আগেই ক্ষমা চাচ্ছি তোমাকে অনেক খারাপ কথা বলার জন্য। জানি তুমি আমার উপর রেগে আছো। রাগ করাটা স্বাভাবিক আমি জানি তবুও বলবো ক্ষমা করে দাও। জানো ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের’ একটি উক্তি হলো ‘ভালোবাসা অর্থে আত্মসমর্পণ করা নহে, ভালোবাসা অর্থে ভাল বাসা, অর্থাৎ অন্যকে ভালো বাসস্থান দেওয়া, অন্যকে মনের সর্ব্বাপেক্ষা ভালো জায়গায় স্থাপন করা। ‘ তাই তো আমিও মনের মাঝে না লুকিয়ে বলে দিলাম তোমায় ভালোবাসি খুব খুব খুব। যেমন একদিন পানি না খেলে তুমি কিছুটা অসুস্থ্য বোধ করো আমি ঠিক তোমার কথা এক মিনিট না ভাবতে পেরে অসুস্থ্য হয়ে পড়ি।
আমি জানি তুমি বিরিয়ানি খেতে খুব ভালোবাসো। একদিন তোমার সামনে বিরিয়ানি রান্না করা হলো পরিবেশন করা হলো কিন্তু তোমায় দেওয়া হলো না তখন তোমার মন যেভাবে ভেঙ্গে যাবে ঠিক তেমন ভাবেই আমার সাথে রাগ করে থাকলে আমার মনটা ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যাবে। জানি তুমি আমার ম্যাসেজ পড়ে মিটমিট করে হাসছো আর ভাবছো এই কি সব লেখছে। আমি আগেই বলছি আমি রোমান্টিক কথা বার্তা বলতে পারি না। শুধু এই টুকুই বলবো খুব খুব খুব ভালোবাসি তোমায়। হৃদয়ের ক্যানভাসে তোমারি রং দিয়ে আঁকা এক ছবি, সেই ছবিটি বলে শুধু তোমায় ভালোবাসি।”
ইতি ম্যাসেজ পড়ে কিছুক্ষণ বিছানার এইদিক সেইদিক হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খেতে লাগলো। তখন আবারো ম্যাসেজ আসলো।
- হলুদ শাড়ি, ছাড়া চুলে দেখতে চাই তোমাকে। যদি কষ্ট করে একটু আসতে — এই ঠিকানায় সন্ধ্যা সাতটায় তাহলে এই অধম খুব খুব খুশি হতো।”
ইতি মনে করেছে তাকে এইসব নাহিদ বলছে। তাই ও রাজি হয়ে গেলো।
আরিয়ান গান শুনছে। ও কোনোদিন রোমান্টিক গান শুনতো না “মেরি হাত মে তেরা হাত হো সারি জান্নাতে ম্যারা সাথ হো” এই গানটা খুব ভালো লাগছে আজ আরিয়ানের কাছে। হৃদয় আরিয়ানকে ডাক দিলো কিন্তু আরিয়ান ভাবনায় মুগ্ধ। হৃদয় আরিয়ানের কাধে হাত রেখে বললো,
- আনরোমান্টিক বয় এখন রোমান্টিক গান শুনে ব্যাপার কি ব্রো?”
- আসলে রোমান্টিক একটা উপন্যাস লিখবো তাই রোমান্টিক গান শুনছি।”
- আমার কাছে মিথ্যা বলবি না ওকে। তুই যে ভাবির প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছিস সেইটা আমি বুঝতে পারছি।”
- কচু বুঝো তুমি। এখন বল কিসের জন্য এসেছিস?”
-তানিয়া আপু ফোন দিচ্ছে তোমায় রিসিভ করছো না কেনো তাইতো আমায় ফোন দিয়ে বললো, ‘ দেখ তো তোর ভাই খুনের গল্প লেখতে লেখতে নিজেই খুন হলো কি না? ‘ তাই এসেছিলাম। কিন্তু এখন তো দেখি জল অন্য দিকে যাচ্ছে।”
আরিয়ানকে চোখ টিপ দিলো হৃদয়। তানিয়া হলো আরিয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড। তানিয়াও বই লিখে।
- তুই যা আমি ফোন দিচ্ছি তানুকে।”
- ওকে। ব্রো আজ আমার বাসায় ফিরতে রাত হবে।”
- প্রেমিকার সাথে দেখা করতে যাচ্ছিস বুঝি?”
- হুম।”
লজ্জা পেয়ে বললো হৃদয়। আরিয়ান হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
- কবে পরলি প্রেমে? নাম কি মেয়ের? কোথায় দেখা কিভাবে কি বললি না তো কিছু?”
- ভাবির বেস্ট ফ্রেন্ড ইতি।”
- হোয়াট? ওর না বিয়ে ঠিক।”
- বিয়ে ঠিক কিন্তু হয়নি। ব্রো আমি ওকে ছাড়া বাঁচব না। কিভাবে যেনো ভালোবেসে ফেলেছি প্লিজ ব্রো বকিস না।”
- ও যদি রাজি থাকে তাহলে সমস্যা নেই।”
- ওকে রাজি করাতে হবে।”
- কিভাবে রাজি করাবি?”
- আজ থেকে ওকে বিরক্ত করা শুরু করবো দেখবি এক সময় ভালোবেসে ফেলবে।”
- হাহাহা। এইটা মুভি না রে ভাই বাস্তব। তুই বিরক্ত করবি আর ও তোকে ছেড়ে দিবে? আমি যত দুর ইতিকে চিনেছি তোকে মারতে মারতে শেষ করে ফেলবে। দুনিয়াতে কি মেয়ের অভাব পড়ছে তোর যে ওই মিথ্যাবাদীদের মধ্যে পছন্দ করিস?”
- আবার শুরু হয়ে গেলো তাই না? তুই যখন ভাবি কে জোর করে বিয়ে করেছিস আমি কি কিছু বলছি তোরে আরো সাহায্য করেছি আর তুই কি না আমাকে বারণ করছিস?”
- ওকে যা তোর যা ইচ্ছে কর কিন্তু মনে রাখবি বেশি উড়তে দিবি না। উড়াড় আগেই পাকা ভেঙ্গে দিবি।”
- আবারো তোর ওই রোমান্সের মধ্য ছুরি চালিয়ে দেওয়া শুরু হয়ে গেলো।”
- হাহাহা যা বেস্ট অফ লাক।”
সোনালী আজ অর্ডার করে আরিয়ানের লেখা সব বই কিনে আনলো। সারাদিনে দুইটা বই পড়ে শেষ করলো।
- এত ভয়ংকর গল্প কেউ লিখে। গল্প পড়ে মনে হলো গল্পের হিরো না লেখক নিজেই খুন করতে এক নাম্বার। আল্লাহ এই লোকের গল্প পড়ে আমার হাত পা কাপছে বিয়ের পর তো এই লোকের সাথেই আমার থাকতে হবে তখন যদি আমার ঘাড় ত্যারামির জন্য আমার পেটেও চাকু ঢুকিয়ে দেয় তাহলে তো আমি শেষ। আম্মু কে গিয়ে বলি আমি বিয়ে করবো না এই লোককে। আরেহ কি বলছি তখন বাঁচার চান্স থাকতে পারে কিন্তু এখন বিয়ে ক্যান্সেল করলে বাঁচার আর চান্স থাকবে না। কি যে করি এখন আমি?”
সোনালী গালে হাত দিয়ে চিন্তা করছে। - ওই আরু বেঁচে আছিস নাকি মইরা ভুত হইছিস?”
- ওই ফাটা বাঁশ চিল্লা চিল্লি কম কর এখন বল কিসের জন্য ফোন দিছস?”
- আরেহ চুল তোর সাথে বলতো কতদিন পর কথা হচ্ছে আমার?”
- চার পাঁচদিন পর মনে হয়।”
- হালার নাতি হালা তিনমাস পর কথা হইতাছে।”
- মাঝে মাঝে মনে হয় তুই মেয়ে না ছেলে। শালী তুই আসবি কবে?”
- আসতে রে ভাই মন চায় না।”
দুঃখ প্রকাশ করলো তানিয়া। আরিয়ান তখন জোরে জোরে হাসতে লাগলো।
- আংকেল বিয়ের কথা বলে তাই আসতে মন চায় না তাই না?”
- ওই বিয়ে বিয়ে শুনতে শুনতে মাথা খারাপ হয়ে গেছে তাই তো ছয় মাস ধরে ইন্ডিয়া পরে আছি।”
- বিয়ে করে নে। বয়স তো আর কম হলো না। তোর ছোট ছোট মেয়েদের বিয়ে হয়ে গেছে তাদের আন্ডা বাচ্চা হয়ে নানী দাদীও হয়ে গেছে আর তুই এখনও বুড়ি অবিবাহিত রয়ে গেলি।”
- ওই রাখ তো তোর বিয়ে বিয়ে এখন শুন যার জন্য ফোন দিলাম।”
- আমি শুনতে না চাইলেও যে আপনি বলবেন তা আমি জানি সো বলে ফেলুন।”
- আজ মানহার সাথে দেখা হয়েছিল।”
- তোকে বলেছিনা না ওই বেইমানির নাম আমার কাছে বলবি না। সকাল সকাল মুড নষ্ট করে দিলি। রাখি বায়।”
আরিয়ানের রাগে ফোন কেটে দিলো। তানিয়া মুখে হাসির রেখা টেনে বললো, - আমিও তো এইটাই চাই আরু। কলেজ লাইফ থেকে তোকে পছন্দ করি। শুধু মাত্র তোর জন্য এখনো বিয়ে করে নি। ২৬ বছর বয়স হওয়া সত্বেও তোর অপেক্ষা করে আছি আমি। কিন্তু কি তুই ভার্সিটি লাইফে আমার ভালোবাসা না বুঝে ওই মানহা কে পছন্দ করে ফেলেছিস সেইটা তো এই তানিয়া মেনে নিতে পারে না। তাই তো তোদের মাঝে ভাঙন ধরানোর জন্য কত কষ্টই না করেছি আর আমি সফল হয়েও গেছি। আমি ছাড়া তোর মাঝে আর কেউ থাকবে না আরু হাহাহা।”
ক্লাস এইট থেকে আরিয়ানের সাথে তানিয়ার পরিচয়। আরিয়ানের মেয়ে ফ্রেন্ড বলতে এক মাত্র তানিয়া। ওদের ফ্রেন্ডশিপ দেখে সবাই বলতো ওরা রিলেশন করে। যখন আরিয়ান আর তানিয়া কলেজ ভর্তি হয় তখন সবাই বলতো ওদের রোমিও জুলিয়েট। তানিয়া আরিয়ান এইসব শুনে হাঁসতো। ধীরে ধীরে তানিয়াও পছন্দ করতে শুরু করে আরিয়ানকে। যখন ভার্সিটি ভর্তি হয় দুইজন এক সাথেই। ভাগ্য ক্রমে ওদের সাবজেক্ট একটাই আসে। অনার্স তৃতীয় বর্ষে যখন ওরা তখন অন্য ডিপার্টমেন্টের একটি মেয়ে নাম মানহা ওর সাথে পরিচয় হয় আরিয়ানের। পরিচয়ের মাধ্যম ছিলো তানিয়া। ধীরে ধীরে আরিয়ান মানহা কে পছন্দ করতো আর সব কথা তানিয়া কে বলতো। তানিয়ার ষড়যন্ত্রে এখন ওরা আলাদা। এই জন্য আরিয়ান ভালোবাসা নামক শব্দটাকে ঘৃনা করতে শুরু করেছে।
ইতিকে ম্যাসেজ হৃদয় দিয়েছিলো। ইতি নাহিদ ভেবে হলুদ শাড়ি, চুল ছাড়া, হালকা সাজে, হাত ভর্তি চুড়ি পরে হৃদয়ের দেওয়া ঠিকানায় চলে গেলো।
ক্যান্ডের লাইট ডিনারে মোমবাতির আলো-আধারি পরিবেশ, সেই সাথে রোমান্টিক মিউজিক। আহা কি মনোরম পরিবেশে সুন্দর এক কেক নিয়ে বসে আছে হৃদয় তার প্রাণ প্রিয় প্রিয়তমার জন্য। গোলাপের তোড়া দিয়ে সাজিয়েছে। রাস্তা জুড়ে ফুলের পাপড়ি। ইতি দুর থেকে দেখলো কেউ বসে আছে মুখ বুঝা যাচ্ছে না। ইতি ফুলের পাপড়িতে পা দিয়ে খুশি মনে হেঁটে যাচ্ছে। হৃদয়কে না দেখেই বললো,
- আপনি যে এত রোমান্টিক আমার জানা ছিলো না। এত কিছু না করলেও পারতেন। আর উত্তর হলো লাভ ইউ টু।”
ইতি লজ্জায় লাল হয়ে আছে। হৃদয় ইতিকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটাতে লাগলো। হৃদয়ের মুখ থেকে বের হয়ে আসলো। - হলুদিয়া পাখি।” (মিথ্যা অপবাদ – Sad love story bangla)
পর্ব ১৪
ইতি লজ্জায় লাল হয়ে আছে। হৃদয় ইতিকে দেখে চোখের তৃষ্ণা মিটাতে লাগলো। হৃদয়ের মুখ থেকে বের হয়ে আসলো।
- হলুদিয়া পাখি।”
“একটা প্রেমের গান লিখেছি
আর তাতে তোর নাম লিখেছি
মাঝরাতে বদনাম হয়েছে মন।
এত ভেবে
কি হবে? ভেবে কি করেছে কে
কবে? ভাবছি না আর, যা হবে
হবার। এত দিন বলিনি, তুমি
জানতো আমি এমনি……
ভালবাসি! ”
তোমাকে আমার খুব পছন্দ হয়েছে।
এখন তুমি আমাকে পছন্দ না করলেও
আমি পাঁচতলা থেকে লাফ দিবো
না, বিষ খেয়েও মরবো না। একদম জোর করে বিয়ে করে ফেলবো। তুমি আমার কথা শুনে রেগে বোম হচ্ছো তাতে আমার কিছুই যায় আসে না। তোমার বিয়ে ঠিক জানি আমি কিন্তু এখনও তো বিয়ে হয়ে যায়নি তোমার। আর আমি ছাড়া অন্য কারো সাথেও হবে না। বাসায় গিয়ে বলবে তুমি ওই ছেলেকে বিয়ে করতে ইচ্ছুক না তুমি আমায় ভালোবাসো ওকে।”
ইতি অবাক হয়ে শুনছে হৃদয়ের কথা। ইতির কাছে মনে হচ্ছে ও হলো ভিন্ন গ্রহের কোনো প্রাণী। কথা বলার শক্তি নেই এখন তার। চুপ করে হৃদয়ের কথা শুনছে ও। হৃদয় একটু থেমে আবারো বলতে শুরু করলো।
” গতকাল থেকে প্রপোজ করার বই দশটা পড়েছি। বন্ধুদের কাছ থেকে কিছু শিখেছি। গুগল থেকে অনেক নিয়ম শিখেছি। রোমান্টিক অনেক মুভি দেখেছি তবুও কেনো যেনো মনের মাঝে এক রাশ ভয় জন্ম নিয়েছে কিভাবে তোমাকে মনের কথা বলবো আমি। আচ্ছা প্রপোজ করার জন্য কি হাঁটু গেড়ে বসতে হয়? হাঁটু ভাঁজ করে বসার মধ্যে প্রপোজ করার কি সম্পর্ক? আচ্ছা এইসব বাদ আমি তোমাকে সোজাসুজি ভাবেই বলছি, যদি জোনাকি হতাম উড়ে যেতাম তোমার কাছে,
মিট মিট করে জোলতাম তোমার চারপাশে।
নীরবে বসতাম তোমার পাশে,
আর বলতাম আই লাভ ইউ। লাভ ইউ সো মাচ।”
হৃদয় ইতির অনুমতি ছাড়াই ইতির হাত ধরে ফেললো। এমনিতেই ইতি খুব রেগে আছে আর ওর হাত ধরার জন্য ঠাস করে থাপ্পড় বসিয়ে দেয় হৃদয়ের গালে।
- আপনার সাহস কি করে হয় আমাকে এইখানে ডেকে আনার আর এইসব কথা বলার? আপনি তো জানেন আমি এখন অন্যজনের বাগতত্তা তাহলে কোন সাহসে আমাকে এইসব কথা বলছেন। আমি আগেই বুঝেছি আপনার নজর খারাপ। আমার দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকেন সব সময়। আপনাকে তো এখন আমার পুলিশে দেওয়ার ইচ্ছা করছে।”
হৃদয় থাপ্পড় খেয়ে দুই হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রেখেছে। এখন আবার খারাপ লোক বলছে তাকে। ইতির হাত ধরে জোরে টান দিয়ে ঘুরিয়ে ইতির কানের কাছে মুখ এনে বলে। - ভালোবাসি বলেছি আর তুমি তা খারাপ ভাবছো। আমাকে এতটা খারাপ ভাবো তুমি? কিন্তু আমি খুশি হয়েছি যে, তোমার মনে আমার জন্য একটু হলেও ফিলিংস আসে হোক তা খারাপ। আছে তো?”
হৃদয় ইতির হাত জোরে চেপে ধরায় ইতির চুড়ি ভেঙ্গে যায়। - আমি হাতে ব্যাথা পাচ্ছি ছাড়েন আমায়।”
- তোমাকে ছাড়ার কোনো প্রশ্নই আসে না জান।”
হৃদয়ের হটাৎ খেয়াল হলো ইতির হাত থেকে তরল কিছু বের হচ্ছে তাই হাত সামনে আনলো আর দেখলো কাচের চুড়ি ভেঙ্গে হাতে বিধে গেছে আর রক্ত বের হচ্ছে। হৃদয় ইতির দিকে তাকিয়ে দেখলো ও কান্না করছে।
- আমার সাথে আসো।”
ইতি দাঁড়িয়ে আছে চুপচাপ। হৃদয় অনেকবার ডাকা সত্বেও এক ইঞ্চি নড়লো না। তাই হৃদয় ইতিকে কোলে তুলে নিলো ইতি তবুও কিছু বললো না। - তোমাকে দেখে মনে হয় না এত ওজন তুমি।”
ইতি চুপ করে রইলো। হৃদয় গাড়িতে উঠিয়ে ড্রাইভ করে হসপিটালে চলে গেলো।
সেই কখন থেকে সোনালী কান্না করছে। ওর আম্মু আব্বু কত কিছু বলছে কিন্তু ও শুনছে না এমনকি কান্নার কারণও বলছে না। হটাৎ মেয়ের এমন কান্না দেখে ভয় পেয়ে যায় তারা।
- কি গো সোনালীর আব্বু মেয়ে এইভাবে কান্না করছে কেনো?”
ফিসফিসিয়ে বললো সোনালী আম্মু। - ও কি এই বিয়েতে রাজি না?”
- তোমার মেয়ের মনের খবর আমি কিভাবে জানবো হুহহ?”
- নাকি আরিয়ান বাবার সাথে ঝগড়া হয়েছে?”
- হতে পারে। তোমার মেয়ে যে ঝগড়ুতে।”
সোনালী আব্বু তার বউয়ের দিকে রাগী চোখে তাকালো। সোনালীর আম্মু হেসে দিয়ে বললো, - আরিয়ানকে ফোন দেও আর জিজ্ঞাসা করো কিছু কি হয়েছে নাকি?”
- এতদিন পর মনের মতো একটা কথা বলেছো।”
আরিয়ানের কাছে ফোন দিলো সোনালীর আব্বু। আরিয়ান তখন ডায়রি পড়ছিল ওর আর মানহার ভালো মুহূর্তের। ফোনের শব্দে চোখটা সরিয়ে নিলো ডাইরি থেকে। চোখের পানি মুছে ফোন হাতে নিয়ে সোনালীর আব্বুর নাম্বার দেখে কিছুটা ভয় পেলো।
- আসসালামু আলাইকুম আংকেল।”
- অলাইকুম আসসালাম বাবা। কেমন আছো তুমি?”
- জ্বি আংকেল আপনাদের দোয়ায় আলহামদুলিল্লাহ ভালো। আপনারা?”
- আছি বাবা কোনো রকম।”
- কেনো আংকেল কি হয়েছে?”
- সোনালী সেই কখন থেকে কান্না করছে। কিন্তু কেনো কান্না করছে বলছে না। তোমাদের মাঝে কি কিছু হয়েছে বাবা?”
- কই না আংকেল কিছু তো হয়নি।”
- তাহলে কি হলো মেয়েটার?”
সোনালীর আব্বু এখন আরো চিন্তায় পড়ে গেলো। আরিয়ান তখন বললো, - আংকেল আসছি আমি।”
- আচ্ছা বাবা।”
ইতির চিকিৎসা করার পর ইতিকে কোলে নিয়ে আবারো গাড়িতে বসিয়ে দেয় হৃদয়।
- এখন থেকে তোমাকে কোলে নিয়েই ব্যায়াম করবো ভাবছি।”
- আমি বাসায় যাবো।”
- বাহ এখনো বিয়ে হলো না আর তুমি বাসায় যেতে চাচ্ছো কি ফাস্ট গো তুমি।”
- বাজে কথা বলা বন্ধ করুন।”
- আগামীকাল দেখা হচ্ছে তো।”
- নাহ।”
- কেনো?”
- আপনার কথা নাহিদকে বলবো আমি। পরে দেখবেন আপনার কি করে।”
- হাহাহা হাসালে জানেমন। তোমার ওই নাহিদের মত কত নাহিদ যে আমাদের পিছনে ঘুরে আর তুমি ওই নাহিদকে দিয়ে আমায় শায়েস্তা করবে ওয়েট দাঁড়াও কিছুক্ষণ হেসে নেই হাহাহাহা।”
- আমার ওজন কত বলতে পারবেন?”
- ৫৬ কেজি।”
- আপনি জানলেন কিভাবে?”
- তোমাকে ভাবতে হবে না। তোমার হবু স্বামীর এই বডি এমনি এমনি হয়ে যায় নাই।”
হৃদয় ঝুঁকে বললো কথাটা। ইতি কিছুটা সরে গিয়ে বললো, - ঝুঁকে কাজ করবেন না সরে যান বলছি।”
- ওয়েট দাঁড়াও।”
হৃদয় গাড়ি থেকে একটি পাথরের রিং বের করলো। ইতির হাত ধরে নাহিদের দেওয়া রিং অন্য আঙ্গুলে পড়িয়ে দিয়ে ওর রিং ইতির আঙ্গুলে পড়িয়ে কিস করলো আঙ্গুলে।
- ছিঃ ছিঃ কি করছেন কি আপনি?”
ইতি রিং খুলতে নিলে হৃদয় বললো, - যদি আঙুল হারাতে না চাও তাহলে রিং খুলবে না।”
ইতি ভয়ে রিং আর না খুলে গাড়িতে হেলান দিয়ে বসে রইলো।
আরিয়ান সোনালীর বাসায় আসলো। সোনালীকে বার বার জিজ্ঞাসা করছে কিন্তু সোনালী কেঁদেই যাচ্ছে। সোনালীর আব্বু আম্মু সোনালীর কাছেই বসে আছে। আরিয়ানের এখন খুব রাগ হচ্ছে এতবার বলছে কি হয়েছে কিন্তু সোনালী কান্নার জন্য বলতে পারছে না। এখন সোনালীর আব্বু আম্মু না থাকলে থাপ্পড় মেরে জিজ্ঞেস করতো কি হয়েছে কিন্তু পারছে না। কিছুক্ষণ রাগ ধমে রেখে পানি খাওয়ার নাম করে গ্লাস হাতে নিয়ে ফেলে দিলো।
- সরি আন্টি। সোনালীর কান্নার জন্য হাত থেকে গ্লাসটা পরে গেলো।”
- আরেহ বাবা সমস্যা নাই তোমার যত ইচ্ছা ভাঙতে পারো।”
- ধন্যবাদ আন্টি। জানো সোনালী আমার কারো কান্না দেখতে একদম ভালো লাগে না খুব রাগ উঠে তখন মন চায় সব ভেঙ্গে ফেলি।”
সোনালীর আব্বু আম্মু না বুঝলেও সোনালী বুঝে ফেললো আরিয়ানের কথা তখন বললো, - আমি আমি ওনার ‘ভয়ানক সেই রাত’ আর ‘তোমার চোখের জল’ এই দুইটা গল্প পড়ে কাঁদছি।”
সোনালীর কান্নার এই রহস্যর কথা কেউ কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। বই পড়ে কেউ এত কাঁদতে পারে হয়তো কারো জানা ছিল না।
আরিয়ান বললো, - বই পড়ে তুমি এই মরা কান্না করছিলে। আমরা তো ভাবছি ছ্যাঁকা খেয়ে বেঁকা হয়ে কান্না করছো।”
আরিয়ানের কথা শুনে সোনালীর আব্বু আম্মু হাসলো। ওনারা ওদের আলাদা কথা বলতে দিয়ে চলে গেলো। - আপনি এত খারাপ গল্প কিভাবে লিখেন আপনার কি মন নেই। এত ভয়ানক মন কেনো আপনার?”
সোনালীর কান্না থামছেই না। আরিয়ান তখন বললো, - মন থাকলে হয়তো বলতে পারতাম মন খারাপ নাকি ভালো এখন তো মন নাই আমার।”
- কেনো মন কি কুকুরে নিয়ে পালিয়ে গেছে?”
- একজন পাষাণী নিয়ে গেছে।”
সোনালী আরিয়ানের দিকে তাকালো। আরিয়ান অন্যদিকে ফিরে বললো,
- খেয়ে দেয়ে ঘুমিয়ে পরো। পরে মাথা ব্যাথা করবে।”
আরিয়ান রুম থেকে বের হয়ে যায়। সোনালীর কাছে আজ আরিয়ানকে অন্য রকম লাগলো। কেমন যেনো মনমরা। আরিয়ান সোনালীর আব্বু আম্মুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে চলে গেলো।
ইতি বাসায় আসলো। ফ্রেশ হয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিলো। আজ সারাদিন নাহিদ তাকে ফোন দেয় নি। তাই ও নিজেই নাহিদকে ফোন দিলো।
-আমি ব্যাস্ত আছি পরে কথা বলবো।”
কিছু বলার আগেই নাহিদ ফোন কেটে দিলো। দীর্ঘশ্বাস ফেলে ইতি শুয়ে পড়লো।
পরের দিন ইতি আর সোনালী কেউ কলেজ যেতে পারলো না। ইতির জ্বর আর সোনালীর মামাতো বোনের এক মাত্র মেয়ের প্রথম জন্ম বার্ষিকী।
পর্ব ১৫
পরের দিন ইতি আর সোনালী কেউ কলেজ যেতে পারলো না। ইতির জ্বর আর সোনালীর মামাতো বোনের এক মাত্র মেয়ের প্রথম জন্ম বার্ষিকী।
সোনালী ওর মামার বাড়ি চলে গেলো। কোমরে আঁচল গুজে সোনালীর মামাতো বোন কাজ করছে। এক মাত্র মেয়ের জন্মদিন। বাড়ির সবাই হাসি খুশি থাকা সত্বেও সোনালীর মামাতো বোনের মুখে কোনো হাঁসি নেই। সবাই তার কারণ জানে কিন্তু বলতে চায় না। সোনালী ওর মামাতো বোনকে দেখে দৌড়ে গিয়ে জড়িয়ে ধরলো।
- আপুউউউউউউউউ কেমন আছো তুমি?”
- ভালো তুই?”
- তোমাকে দেখে ভালো মনে হচ্ছে না আমার।”
- আমার আবার কি হলো?”
- তুমি ওই শয়তান লোকের কথা ভেবে কষ্ট পাচ্ছো তাই না?”
–” ওর কথা আর মুখে আনবি না। আজ আমার মেয়ের ভালো একটা দিন ওর নাম বলে খারাপ করিস না।” - মানহাপু প্লিজ রাগ করো না। তোমার মুখে হাঁসি নেই বলে ওই বাজে লোকের নাম বলতে হচ্ছে।”
- হুম বুঝছি এখন যা মাওয়া মার কাছে।”
- যাচ্ছি আমার কিউটি পাইকে দেখতে।”
মানহা হলো সোনালীর মামাতো বোন। ছয় বছরের বড় মানহা। কিন্তু সোনালীর সাথে তার বেশ জমে। তিন বছর আগে বিয়ে হয়েছিলো মানহার পারিবারিক ভাবে কিন্তু দুই বছর সংসার করার পর ওদের সম্পর্কের সমাধি ঘটে। - আমার বাবুটার আজ বার্থডে কি সুন্দর লাগছে তোকে। তুই একদম তোর মায়ের মত হয়েছিস। বেশ হয়েছে তোর ওই শয়তান বাবার মত হলি না। আমার একটা ছেলে থাকলে তোকে ছেলের বউ করে নিয়ে যেতাম। দেখ এখনো তোর আন্টির বিয়ে হলো না।”
সোনালী এইসব কথা বলছে আর হাসছে। এক বছরের মাওয়া কি বুঝলো কে জানে সেও মিটমিট করে হাসতে লাগলো।
ইতির জ্বর খুব বেড়েছে। ডক্টর এসে মেডিসিন দিয়ে গেলো। নাহিদকে বার বার ফোন দিচ্ছে কিন্তু ও বিজি বলে রেখে দিচ্ছে। ইতির খুব রাগ হলো নাহিদের উপর।
- এই লোকটা কি আধো আমায় ভালোবাসে? সারাদিন কি এত ব্যস্ত সে? আমার অসুস্থতার কথা শুনেও আসলো না আমায় দেখতে। এই লোকের সাথে কি আমার বিয়ে হলে আমি সুখী হতে পারবো?”
ইতি দরজা বন্ধ করে শুয়ে ছিল। জানালা দিয়ে কিছু পড়ার শব্দে ইতি তাকিয়ে দেখলো হৃদয় দাঁড়িয়ে আছে ক্যাবলা কান্তের মতো হাসছে।
- আপনি আপনি এইখানে কিভাবে আসলেন?”
- কেনো পাইপ বেয়ে।”
- মাথা খারাপ আপনার আজব?”
হৃদয় ইতির কাছে এসে বসলো। ইতির কপালে হাত দিয়ে বললো, - আমার জন্য তোমার খুব কষ্ট হচ্ছে তাই না?”
- আপনি জানলেন কিভাবে আমার জ্বর এসেছে?”
- ভাবী বললো, গতকাল তোমার সাথে একটু বেশীই করেছি আমি।”
হৃদয় কান্না কান্না ভাব নিয়ে বললো, ইতির খুব কষ্ট হচ্ছে হৃদয়ের মুখ দেখে। নাহিদকে বার বার ফোন দিচ্ছে কিন্তু ও ব্যাস্ত আর হৃদয়কে কিছু না বলা সত্বেও হৃদয় কত কষ্ট করে এসেছে। - সরি আর এমন করবো না তোমার সাথে।”
ইতির মাথা হৃদয় তার বুকে নিয়ে বললো, ইতির ভালোই লাগছে হৃদয়ের বুকে মাথা রাখতে কিন্তু কিছু একটা সংকোচ হওয়ায় মাথা সরিয়ে নিয়ে বললো, - আপনি প্লিজ চলে যান। আমি এখন অন্য জনের হবু বউ। আমার পক্ষে আপনার সাথে রিলেশন করা সম্ভব না।”
- এইসব কথা পরে ভাবা যাবে তুমি এখন বিশ্রাম করো। ওয়েট!”
হৃদয় আবারো জানালার পাশে ছোট বারান্দায় দাঁড়িয়ে কিছু একটা তুলতে লাগলো।
- কি তুলছেন?”
- সসসসস।”
হৃদয় এক দড়ি টেনে তুলছে। দড়ির শেষ মাথায় একটা ঝুড়ি দেখেই বুঝা যাচ্ছে ফলের ঝুড়ি। - এত ফল কে খাবে?”
- তুমি। আর শুনো অনেক চকোলেট এনেছি খেয়ে নিও। বায়?”
- কিভাবে যাবেন আপনি এখন?”
- যেভাবে এসেছিলাম সেইভাবেই।”
- পরে হাত পা ভাঙলে বলবেন ইতির জন্য ভেঙেছে।”
ইতি মুখ ফুলিয়ে বললো, হৃদয় ইতির নাক চেপে ধরে বললো, - তোমাকে না জ্বালিয়ে কিচ্ছু হবে না। আসছি নিজের যত্ন নিও।”
- হুহহহ।”
হৃদয় পাইপ বেয়ে আবারো নিচে চলে গেলো। ইতি হৃদয়ের এমন কাণ্ড দেখে হাসলো। ওর মনে এখন হৃদয়ের জন্য আলাদা কিছু অনুভব করতে লাগলো। - সোনালী তোর হবু বর কে তো দেখালি না এখনো?”
মাওয়া কে নিয়ে খেলায় ব্যাস্ত ছিল সোনালী। মানহার কথা শুনে পিছনে তাকিয়ে বললো, - ওই সাদা ভাল্লুককে দেখতে চাও তুমি?”
- হাহাহা সাদা ভাল্লুক কি কিউট নাম রে।”
- কিউট না ছাই আস্ত একটা অসভ্য ছেলে।”
- হিহিহিহি দেখেই বুঝা যাচ্ছে তোদের প্রেম জমে ক্ষীর হয়ে গেছে।”
- ওই আনরোমান্টিক মানুষের সাথে প্রেম তাও আবার আমি জীবনে ভাবা যায়।”
মানহা সোনালীর কথা শুনে হাসছে। - ওকে দেখি তোর ওই আনরোমান্টিক মানুষটাকে।”
- এই নেও দেখো।”
সোনালী ফোন দিলো মানহার হাতে। মানহা ফোনের স্কিনে তাকিয়ে আরিয়ানকে দেখে চোখ দিয়ে টপটপ করে পানি পড়ছে।
- আপু কান্না করছিস কেনো কি হয়েছে?”
- ও তোর হবু বর?”
- হুম চিনিস নাকি?”
- নাহ আমি চিনবো কিভাবে?
- কান্না করছিস কেনো?”
মানহা কিছুক্ষণ চুপ করে রইলো। সোনালী বার বার জিজ্ঞাসা করার পর বললো, - নাহিদ মাওয়ার জন্য কিছু গিফট পাঠিয়েছে।”
- ওই বাজে লোক তোমাকে আর বাবুকে মানতে নারাজ আবার গিফট দিয়েছে কেনো? আপু তুমি চুপ করে আর থেকো না পুলিশের কাছে গিয়ে মামলা করো।”
- কিছু করতে হবে না। আমি ওর জিনিস ফিরিয়ে দিয়েছি আর খবরদার বাসায় এই কথা কাওকে বলবি না ওকে।”
- হুম।”
- এই তো আমার গুড বোন। আমি এখন আসি কাজ আছে তুই মাওয়াকে দেখ।”
- আচ্ছা।”
মানহা তাড়াতাড়ি করে সোনালীর কাছ থেকে চলে আসলো। অন্য একটি রুমে দরজা বন্ধ করে কাঁদতে লাগলো মানহা। যাকে সে এতটা ভালোবাসতো আজ সেই লোকটাই তার বোনের হবু স্বামী। - নাহিদ সে তো খুব বিজি তার কি আমাদের কথা মনে আছে যে গিফট পাঠাবে। নিজের বোনকে কিভাবে বলবো যে তোর হবু বর আমার প্রাত্তন ছিলো। খুব ভালোবাসতাম তাকে কিন্তু সে আমার সাথে বিশ্বাঘাতকতা করেছে। আমি চাই না এইসব বলে তোকে কষ্ট দেওয়ার জন্য। তোর চোখে আমি ওর জন্য ভালোবাসা দেখেছি।”
সোনালী মাওয়ার জন্মদিন পালন করে নিজের বাসায় চলে আসে। এইভাবে আরো পাঁচদিন কেটে যায়। ইতি এখন সুস্থ্য। হৃদয় আর ইতির এখন প্রচুর কথা হয়। ইতি বুঝতে পারে ও নাহিদকে না হৃদয়কে ভালোবাসে। কথাটা ও আব্বু আম্মুকে বলতে হবে।
- আব্বু তোমার সাথে আমার কিছু কথা ছিলো?”
ইতি ভয়ে ভয়ে বললো, - হুম বলো?”
- আমি এই বিয়ে করতে ইচ্ছুক না আব্বু।”
- হটাৎ এমন কেনো মনে হলো তোমার?”
- আব্বু নাহিদের সাথে আমার মিল হয় না। ও সারাদিন ব্যাস্ত থাকে আমাকে সময় দিতে পারে না। এখন এক প্রকার বিরক্ত লাগে ওকে।”
- কথাটা তোমার আরো আগে বলা দরকার ছিল আমাকে।”
- সরি আব্বু। প্লিজ আব্বু বিয়ে তো এখনও অনেক দেরি আছে। প্লিজ আব্বু ওদের বারণ করে দাও।”
- তুমি যাও দেখছি আমি।”
- ওকে আব্বু।”
ইতি চলে যায়। ইতির আব্বু কিছুক্ষণ ভেবে নাহিদের বাসায় বারণ করে দেয় এই বিয়ে হবে না।
নাহিদ এই কথা শুনে রেগে বোম হয়ে আছে। ওকে রিজেক্ট করা ও মানতে পারলো না। ইতিকে ফোন দিলো। - আসসালামু আলাইকুম।”
- বিয়ে কেন্সেল করার কারণ কি?”
- সালামের উত্তর দিয়া ওয়াজিব। সালামের জবাব দিন।”
- তোমার ওই ঘ্যানঘ্যান শেষ হলে আমার উত্তর দেও। আমার হাতে এত বেশি সময় নেই।”
- আপনার ব্যাবহারের জন্য।”
- তুমি আমার ব্যাবহার নিয়ে কথা বলছো সাহস তো খুব বেশি হয়ে গেছে তোমার। নাকি এখন অন্য কেউ আসছে তোমার লাইফে?”
- ঠিকই বলেছেন আপনি। আমার লাইফে এখন অন্যজন এসেছে তাকে আমি খুব ভালোবাসি।”
- ভালোবাসা মাই ফুট। আমাকে রিজেক্ট করার জন্য তোমাকে সুখে থাকতে দিবো না। শুধু অপেক্ষা করো।”
- দেখা যাবে। আপনার সময় শেষ এখন। খুব বিজি মানুষ পাঁচ মিনিট কথা বলার জন্য হয়তো খুব বেশি লস হয়ে যাচ্ছে তাই রাখছি ভালো থাকবেন ভাইয়া।”
ইতি ভাইয়া বলে ফোন কেটে দিলো। নাহিদ এখন রাগে গজগজ করতে লাগলো। ইতিকে খুন করতে মন চাচ্ছে ওর। - আমাকে আজ পর্যন্ত দুইটা মেয়ে ছাড়া আর কেউ রিজেক্ট করতে পারে নাই। মানহা ওকে তো স্কুল লাইফ থেকেই পছন্দ করতাম কিন্তু ও রিজেক্ট করলো। শুনলাম ভার্সিটি লাইফে গিয়ে কাওকে পছন্দ করেছে তাই তো যে ছেলেকে পছন্দ করেছে তার গার্লফ্রেন্ডের সাথে হাত মিলিয়ে ওদের আলাদা করলাম। মানহা কে বিয়ে করলাম প্রেগনেট অবস্থায় ওকে ওর বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম আজ পর্যন্ত যোগাযোগ করলাম না। এই নাহিদকে কেউ রিজেক্ট করলে নাহিদ তাকে ছেড়ে দেয় না তুমিও ছার পাবে না ইতি।”
ইতি সোনালী কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিল তখন।
পর্ব ১৬
ইতি সোনালী কলেজ থেকে বাসায় ফিরছিল তখন ওদের সামনে নাহিদ দাঁড়িয়ে আছে। ইতি নাহিদকে দেখে দাঁড়িয়ে পরে।
- কি রে দাঁড়িয়ে পরলি কেনো?”
- নাহিদ দাঁড়িয়ে আছে।”
ইতি সোনালীকে নাহিদের ব্যাপারে সব কিছু বলে দিয়েছে। এটাও বলে যে তাদের বিয়ে ক্যান্সেল হয়ে গেছে। হৃদয়ের কথাও বলে।
সোনালী ইতির দৃষ্টি অনুযায়ী তাকিয়ে নাহিদকে দেখে অনেক বড় শক খায়। - এই বাজে লোকটা তোর হবু বর ছিলো?”
- হুম। কেনো চিনিস?”
- খুব ভালোভাবেই চিনি।”
- কিভাবে?”
- পরে বলবো এখন বাসায় যাই চল।”
- হুম।”
ইতি সোনালী অন্য রাস্তা দিয়ে যেতে নিলে নাহিদ ইতির পথ আটকায়। নাহিদ এখনও সোনালীকে দেখেনি ভালো করে। - তোমার সাহস কি করে হয় আমাকে রিজেক্ট করার?”
- রিজেক্ট করার মানুষকে তো রিজেক্ট করতেই হবে তাই না?”
নাহিদ সোনালীর কথা শুনে সোনালীর দিকে তাকিয়ে বললো, - তুমি এইখানে?”
- কেনো আশা করেন নি বুঝি?”
- তারমানে তুমিই ইতির কাছে আমার বদনাম করেছো এই জন্য ইতি বিয়ে ক্যান্সেল করে দিয়েছে।”
- হাহাহা। আপনার মত মানুষের বদনাম করতে হয় না। আপনার সাথে কিছুদিন কথা বা থাকলেই বুঝা যায়।”
- তাই নাকি? কিন্তু তোমার বোন বুঝলো না কিছু।”
- ও বুঝেও আপনার সাথে সংসার করেছে দুই বছর। আপনি তো বিয়ের আগে থেকেই অনেক অনেক সম্পর্কে জড়িত ছিলেন এমনকি বিয়ের পরেও। আপনার মত খারাপ লোক আমি আর দুটি দেখি নাই। আপনাকে দেখলেই তো আমার আপনাকে খুন করতে মন চায়।”
- বিশ্বাস করো ওইদিন তোমাকে ছেড়ে দিয়ে জীবনে খুব বড় ভুল করেছি আমি। জানো তোমাকে ওইদিন।”
- স্টপপপপপ। আপনার লজ্জা করে না। বিয়ের আগে কত খারাপ কাজ করেছেন বিয়ের পর বউ রেখে অন্য মেয়েদের সাথে ফিজিক্যাল রিলেশন করেছেন এমনকি আমাকেও ছার দিতে চান নি। ওইদিন মানহা আপু না থাকলে হয়তো আমি আপনার ভোগের বস্তু হতাম। আপনাকে দেখলে আমার বমি আছে। মন চায় পায়ের জুতো খুলে আপনার গালে মারি।”
নাহিদ রাস্তায় সোনালীর হাত চেপে ধরে। - যদি লজ্জা থাকতো তাহলে তোমার সামনে বা ইতি রানীর সামনে আসতাম না। তুমি তো জানোই শালীকা আমার লজ্জা খুব কম।”
সোনালীর দিকে খারাপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো নাহিদ। ইতি ওদের কথা অনেক কিছু বুঝতে পেরেছে। ইতি নাহিদকে থাপ্পড় মারতে নিলে অন্য হাতে ইতির হাত ধরে ফেলে নাহিদ। - তোমাকে তো পরে দেখে নিচ্ছি ইতি রাণী। আগে তো প্রথম শিকার কে ভালো করে দেখে নেই।”
- যদি দেখা শেষ হয় তাহলে তোর পিছনে তাকিয়ে দেখ কুত্তা।”
নাহিদ পিছনে তাকিয়ে দেখলো আরিয়ান দাঁড়িয়ে আছে। নাহিদ আরিয়ানকে খুব ভালো করেই চিনে তাই সোনালীর হাত ছেড়ে দিয়ে ওইখান থেকে চলে যায়। আরিয়ানের চোখে যেনো আগুন জ্বলছে। নাহিদের দিকে তাকিয়ে আছে ও। - বাহ লেখক দুলাভাই আসতেই ওই শয়তান চলে গেলো। একদম হিরোর মতো এন্ট্রি নিয়েছে লেখক দুলাভাই।”
ইতির কথা শুনে আরিয়ান সোজা গাড়ির দিকে হাঁটা শুরু করে। - ইতি ওই লোকটা কে?”
হৃদয় এসে জিজ্ঞাসা করলো ইতিকে। - ওর সাথে আমার বিয়ে ঠিক হয়েছিল। আব্বু বিয়ে ভেঙ্গে দেওয়ায় আমাদের বিরক্ত করতে এসেছে।”
- তাহলে ওই লোক ভাবির হাত ধরলো কেনো?”
- আমি কিছু জানি না বাট ওদের কথা শুনে মনে হলো ওরা একজন আরেকজনকে আগে থেকেই চিনে।”
- ওহহ। চিন্তা করো না ওর ব্যবস্থা আমি করবো তোমরা বাসায় যাও।”
- হুম। তোমরা এইদিকে কি করছিলে?”
- আজ ভাইয়ার এইখানে একটা পোগ্রাম ছিলো বই নিয়ে তার জন্য এসেছিলাম।”
- ওহহ ওকে। আমরা যাচ্ছি।”
- হুম।”
সোনালী ইতি চলে যায়। সোনালী বাসায় গিয়ে গোসল করে খাটের উপর বসে থাকে। ওইসব কথা মনে হলে এখনও ওর হাত পা কেপে উঠে। খুব ভয়ানক ছিলো সেই দিনটা।
অতীতে।
তিন বছর আগে।
নাহিদ ও মানহার বিয়ে। পারিবারিক ভাবে হলেও সবাই জানে নাহিদ মানহার রিলেশন আছে। তখন সোনালী ইন্টার দ্বিতীয় বর্ষের স্টুডেন্ট ছিলো। বোনের বিয়ে এসেছে কতই না আনন্দ করেছিলো। সেইদিন থেকেই নাহিদের চোখে পড়েছিল ও।
- দুলাভাই পুরো টাকা না দিলে আপুর কাছে যেতে দিবো না।”
- তোমার কাছে যেতে পারলেই হবে তোমার আপুর কাছে যেতে হবে না।”
ওইদিন সবাই স্বাভাবিক ভাবেই নিলো এইকথা।
বিয়ের পরের দিন সোনালী সহ বউয়ের বাড়ির আত্মীয় স্বজন সবাই বরের বাড়ি যেতে হয়। সোনালী মানহার কাছে গিয়ে বসলো। - আপু তুমি কি এই বিয়েতে খুশি না?
- খুশি হবো না কেনো? বিয়ে তো আমার ইচ্ছাতেই হচ্ছে।”
- মুখ, চোখ শুকিয়ে আছে তো তাই বলছি।”
- আরেহ বিয়ের সময় তো মুখ এমনই থাকে যখন তোর বিয়ে হবে তখন বুঝবি।”
- বলছে তোমাকে। আমার বিয়ের সময় আমি নাগিন ড্যান্স করবো তোমার মত কান্না করে মেকআপ নষ্ট করবো না হিহিহিহি।”
সোনালী মানহা কথা বলছিল তখন নাহিদ এসে বললো, - বাহ শালীকা কত ফাস্ট তুমি। ভালোই হলো আমার বউয়ের সাথে শালী ফ্রি পেলাম।”
- হিহিহিহি। এই শালীকা ফ্রী তে পাওয়া সম্ভব না দুলাভাই। আপনি রোমান্স করুন আমি আসি।”
সোনালী দৌড়ে চলে গেলো। নাহিদ মানহার কাছে গিয়ে বসলো আর বললো, - তোমার বোন কিন্তু দেখতে সেই। আগে জানলে ওকেই বিয়ে করতাম।”
- বাজে কথা বলা বন্ধ করো।”
- তোমার তো এখন আমার কথা ভালো লাগবে না।”
নাহিদও রাগ দেখিয়ে চলে যায়।
একমাস পরে।
মানহা ঘুরতে এসেছো ওর বাবার বাড়ি। নাহিদ সোনালীর আম্মুকে বলে সোনালীকে আসতে বলে। সোনালীর খারাপ লাগে নাহিদের কথা কিন্তু মায়ের কথায় মানহাদের বাড়িতে আসলো। - হ্যায় শালীকা কি খবর?”
- আলহামদুলিল্লাহ দুলাভাই। আপনার?”
- তুমি কথা বলো না তাহলে ভালো থাকি কিভাবে বলো?”
- মানহাপু কোথায় দুলাভাই?”
- আমি এনেছি তোমাকে তোমার আপু না সো আমার সাথেই কথা বলো।”
সোনালী না চাওয়া সত্বেও নাহিদের সাথে কথা বলতে লাগলো আর ওর বাজে কথা শুনতে লাগলো।
এইভাবে অনেক দিন চলে যায়। সোনালী নাহিদকে ইগনোর করতে শুরু করেছে। ওর কাছে নাহিদের কথা, দৃষ্টি ভালো লাগে না। ভয়ে কাওকে বলতে পারছে না।
একদিন সোনালীর আম্মু আব্বু মানহাদের বাসায় যায়। নাহিদ এসেছে শুনে সোনালী গ্রুপ স্টাডির কথা বলে আর যায়নি।
ক্রিং ক্রিং ক্রিং।
সোনালী সোফায় শুয়ে ফোনে গান শুনছিল। কলিং বেলের শব্দে ওরনা গায়ে দিয়ে জাদুর কাঠি দিয়ে চুল বেঁধে দরজা খুলে নাহিদকে দেখতে পেলো।
- আসসালামু আলাইকুম দুলাভাই। আপনি এইখানে আব্বু আম্মু তো বাসায় নেই।”
- হুম জানি আমি।”
- তাহলে এইখানে কেনো এসেছেন?”
- বাহিরে দাঁড় করিয়েই কি কথা বলবে নাকি বাসার ভিতরে যেতে বলবে?”
সোনালী চেয়েছিলো সোজা না করে দিতে যে, বাসায় কেউ নেই এখন আসা যাবে না কিন্তু পারলো না। এইসব বললে পরে মানুষ কি বলবে বিশেষ করে ওর মানহা আপু। - জ্বি দুলাভাই আসেন।”
নাহিদ ভিতরে ঢুকে সোনালীর দিকে তাকিয়ে রইলো সোনালী নাহিদের দিকে তাকিয়ে বললো, - কি খাবেন দুলাভাই? আমি কিন্তু রান্না পারি না বেশি।”
- তোমাকে খাবো।”
- মানে?”
- মজা করছি। কিছু খাবো না চলো গল্প করি। বাই দা ওয়ে তুমি কি ঘুমিয়ে ছিলে?”
- নাহ গান শুনছিলাম শুয়ে শুয়ে।”
- ওহহ এই জন্যই মুখ এমন দেখাচ্ছে।”
নাহিদ সোনালীর গালে হাত দিলো। সোনালী ঝটকা মেরে নাহিদের হাত সরিয়ে দিয়ে বললো, - দুলাভাই বাসায় কেউ নেই তার উপর আমার শরীরটা খারাপ লাগছে যদি কিছু মনে না করেন একটা কথা বলবো?”
- হুম বলো?”
- আপনি এখন চলে যান।”
সোনালী নাহিদের ছোঁয়ায় অসস্তি বোধ করলো। নাহিদ বুঝতে পারলো তাই হাসলো। - আমি জানি তুমি আমার সম্পর্কে অনেকটা বুঝে গিয়েছ। তাই আমায় ইগনোর করছো। সমস্যা নেই আমার এত লজ্জা নেই সরাসরিই বলছি, তোমাকে আমার ভালো লেগেছে। আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।”
- আপনি কিন্তু এখন বাড়াবাড়ি করছেন। আমি মানহা আপুকে বলে দিবো।”
- বলে দিলে দেও সমস্যা নেই। তোমার মানহা আপুকে এখন আমি ভয় পাই না।”
সোনালীর ফোনে কল আসলো দেখলো ওর মা দিয়েছে। - হুম আম্মু বলো?”
- নাহিদ নাকি তোকে আনতে গিয়েছে?”
- আম্মু আমি তো বলেছি আমি যাবো না তাহলে কেনো আবার ওনি এসেছেন।”
- ভালোভাবে কথা বল নাহিদ শুনলে কি ভাববে। ও গিয়েছে তোর মানহা আপুর বাচ্চা হবে সেই সু-খবর দেওয়ার জন্য।”
- কিইইই আমি আন্টি হতে যাচ্ছি।”
- হুম। তাড়াতাড়ি চলে আয়।”
- ওকে আম্মু।”
সোনালী ফোন কেটে দিয়ে দেখলো নাহিদ হাসছে।
- এখন কি বলবে তোমার বোনকে আমার কথা?”
সোনালী নাহিদের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো। কোনো উপায় না পেয়ে বাসা থেকে বের হয়ে গেলো পিছু পিছু নাহিদও। সোনালী আলাদা গাড়ি নিয়ে চলে গেলো নাহিদ সেই গাড়ির সাথে যেতে লাগলো।
সাত মাস পর।
আজ মানহার সাত মাসের অনুষ্ঠান। নাহিদ মানহা কে মানহার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অনুষ্ঠানের দিন মানহা সোনালীকে শাড়ি পরতে বলেছে। সোনালী একটা রুমে শাড়ি পরে সাজছিল তখন নাহিদ এসে দরজা বন্ধ করে সোনালীকে জড়িয়ে ধরতে নিলেই।
পর্ব ১৭
আজ মানহার সাত মাসের অনুষ্ঠান। নাহিদ মানহা কে মানহার বাবার বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়। অনুষ্ঠানের দিন মানহা সোনালীকে শাড়ি পরতে বলেছে। সোনালী একটা রুমে শাড়ি পরে সাজছিল তখন নাহিদ এসে দরজা বন্ধ করে সোনালীকে জড়িয়ে ধরতে নিলেই।
- কি করছেন কি আপনি?”
সোনালী দূরে সরে গিয়ে বললো, - জান পাখি আজ তো তোমায় দেখে চোখ এড়ানো দায়। দূরে যেও না জান।”
- আমি এখন মানুষ ডাকবো। যদি নিজের ভালো চান তাহলে চলে যান।”
- তুমি কি ভুলে গেছো আমি মানুষকে ভয় পাই না। ওকে যাও শুধু একদিন কেউ জানবে না। এতে আমিও খুশি তোমার বোনও খুশি।”
সোনালী এখন রাগ সামলাতে না পেরে সজোরে থাপ্পড় মারে নাহিদকে। থাপ্পড় খেয়ে নাহিদ নিচে পরে যায়। নাহিদের পুরো মুখ লাল হয়ে আছে রাগে। সোনালী দৌড় মারতে নিলে নাহিদ সোনালীর শাড়ি ধরে টান দেয় সোনালী ফ্লোরে পরে যায়। - সবাই সবার কাজে ব্যাস্ত এখন কে বাঁচাবে তোমায় শালীকা?”
নাহিদ সোনালীর কাছে আসতে নিলে সোনালী পা দিয়ে লাত্থি মারে নাহিদকে। নাহিদ এইবার প্রচণ্ড ব্যাথা পেয়ে চিৎকার দেয়। - কি হয়েছে এইখানে সোনালী তুই ঠিক আছিস?”
দরজার ওপাশ থেকে মানহা চিৎকার করতে থাকে। সোনালী মানহার কণ্ঠ শুনে তাড়াতাড়ি উঠতে যেতেই নাহিদ গ্লাস ছুড়ে মারে সোনালীর সামনে। ভয় পেয়ে সোনালী ভাঙ্গা কাচের কাছে হাত দিয়ে ফেলে। - আহহহ।”
- সোনালী কি হয়েছে বোন তোর? দরজাটা খুলে দে বোন তাড়াতাড়ি সোনালী।”
- আপু।”
সোনালী কাঁদতে কাঁদতে আবার খুব কষ্টে উপরে উঠে। নাহিদ তখন আবারো সোনালীর পথ আটকিয়ে সোনালীকে ধাক্কা মেরে ভাঙ্গা কাচের উপরে ফেলে দেয়। - আহাসাসা।”
ভিতরের চিৎকার শুনে মানহা তার আশে পাশের সবাইকে ডাকতে থাকে। এই অবস্থায় মানহার চিৎকারে সবাই ওর সামনে আসে আর জিজ্ঞাসা করে কি হয়েছে।? - সোনালী চিৎকার করছে ভিতরে আমি অনেকক্ষন ধরে ডাকছি কিন্তু ও দরজা খুলছে না প্লিজ তোমরা কেউ দরজাটা ভেঙ্গে ফেলো দেখো সোনালীর কি হয়েছে?”
সবাই কিছুক্ষণ সোনালীকে ডাকছে কিন্তু ভিতর থেকে চিৎকার আর কিছু ভাঙার আওয়াজ আসছে। মানহার বাবা, সোনালীর বাবা, আরো অনেক মানুষ মিলে দরজাটা ভেঙ্গে দেখে সোনালীর পুরো শরীর রক্তে লাল হয়ে আছে। নাহিদও অনেক ব্যাথা পেয়েছে। নাহিদ সোনালীর কাছে যাওয়ার চেষ্টা করছে। এমন দৃশ্য দেখে সবাই অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে। নাহিদ তার আশে পাশে এত মানুষ দেখে সোনালীকে ছেড়ে মানহার কাছে গিয়ে বললো, - তোমার সাথে আমি আর সংসার করবো না ডিভোর্স চাই আমি।”
মানহা তার সমস্ত শক্তি দিয়ে নাহিদকে চড় মারে। - তোমার মত বাজে লোকের সাথে আমি নিজেই তো সংসার করবো না। বিয়ের পর তোমার যে কতগুলো রিলেশন ছিল কি ভেবেছিলে আমি জানি না? সব জানি আমি কিন্তু পরিবারের মান সম্মানের কথা ভেবে সংসার করে এসেছি। কিন্তু আজ তুমি আমার ছোট বোনটার সাথে যা করতে চেয়েছিলে এখন কি করে এত বড় মুখ করে বলছো ‘ তোমার সাথে আমি সংসার করবো না ‘ সামান্যতম লজ্জাবোধ নাই তোমার।”
- মুখের বলি দেখি খুব ভালোভাবেই ফুটেছে তোমার। সব দোষ তোমার বোনের। ওকে তো আমি অনেক সুযোগ দিয়েছিলাম কিন্তু ও বুঝলো না তাই তো বাধ্য হয়ে আজ।”
নাহিদ কিছু বলতে পারলো না। সোনালীর আব্বু আর মানহার আব্বু ধরে মারছে। পরিবারের মেয়ের কথা ভেবে তারা আর থানা পুলিশ করেনি। নাহিদকে গলা ধাক্কা দিয়ে বাসা থেকে বের করে দেয়। মানহা তখন অনেকটা দুর্বল হয়ে পড়ে। এইভাবেই চলে যায় অনেকদিন। মানহা তার বাবার বাড়িতে থাকা শুরু করে দেয়। কিছুদিন পর বাচ্চা হয়। পরে ডিভোর্স।
বর্তমান।
সোনালী সেইদিন ঘটে যাওয়া দিনগুলোর কথা ভেবে কান্না পাচ্ছে। সেদিন যদি ওর সাথে খারাপ কিছু হয়ে যেতো তাহলে আজ সে এই সমাজে মুখ দেখাতে পারতো না।
আট দিন চলে যায়। নাহিদ এখন আর বিরক্ত করে না ওদের। ইতি সোনালীর মন খারাপ দেখে কয়েকটা দিন সোনালীর সাথে থাকবে বলে ঠিক করেছে। শুক্রবারে সকাল সকাল সোনালীর বাসায় চলে আসে। - তুই এখন কোনো দরকার?”
- ব্যাগটা ধর আমি কিছুদিন এইখানে থাকবো।”
সোনালী ব্যাগের দিকে তাকালো ইয়া বড় লাগেজ। সোনালী বললো, - আজ কোনো বড় ভাই নাই তার জন্য বেঁচে গেলাম আমি।”
- কেনো?”
- তোর এত বড় লাগেজ দেখে বলছি। কিছুদিন থাকবি বলে পাঁচ বছরের জিনিস নিয়ে এসেছিস আর সারা জীবন থাকলে হয়তো তোর পাঁচটা রুম লাগতো শুধু ব্যাগ রাখার জন্য।”
- বাতাসা বিলাতে ভুলবি না এখন চল।”
ইতি আর সোনালী যেতে নিলে আবারো কলিং বেলের শব্দ। সোনালী গিয়ে দরজা খুলে দেখে মানহা দাঁড়িয়ে আছে মাওয়া কে কোলে নিয়ে।
- আপুউউউউউ তুমি এখন আমি তো ভাবতেই পারছি না। আমার কিউটিও এসেছে আসো তাড়াতাড়ি।”
সোনালী মাওয়া কোলে নিয়ে মানহা কে ভিতরে আসতে বললো, ইতি মানহাকে দেখে বললো, - সোনালী ওনি কে?”
- ইতি ও হচ্ছে মানহাপু তোকে যার কথা সব সময় বলতাম।”
ইতি তো মানহার কথা শুনে দৌড়ে এসে মানহা কে জড়িয়ে ধরে বললো, - আপু তোমার কথা কত শুনেছি সোনালীর কাছে। জানো কত দেখার ইচ্ছা ছিল আজ পূর্ণ হলো। সোনালী বলেছে তুমি নাকি ঘুরাঘুরি পছন্দ করো না। আমি তো ভাবতাম তুমি বোরিং একজন মানুষ কিন্তু কি কিউট গো তুমি।”
- হাহাহা। তুমি ইতি তাই না?”
–” হুম চিনলে কিভাবে?” - সোনালীর কাছে তোমার সব কথাই শুনেছি। আমি তোমার মুখ দেখেই বুঝতে পারছি এই সেই মিষ্টি মেয়ে ইতি।”
- তুমি আমাকে পর পর দেখছো কেনো?”
- পর পর কই দেখলাম?”
- এই যে তুমি তুমি বলছো তাই বললাম।”
- ওকে আজ থেকে তুই খুশি তো?”
- অনেককককককক। ওই সোনালী দে তো এখন এই পিচ্ছুটাকে আমার কোলে।”
সোনালী ইতি মানহা সোনালীর রুমে চলে যায়। মাওয়া ইতির কোলে। মানহাকে দেখে সোনালীর আব্বু আম্মু খুব খুশি হলো। বিয়ের পর একবার এসেছিলো মানহা তারপর আসা হয় নি। সবাই ফ্রেশ হয়ে আড্ডা দিচ্ছে। ইতি জানতো মানহার ডিভোর্সের কথা কিন্তু নাহিদ যে তার স্বামী সেইটা জানতো না। সোনালী তখন বললো, - আপু ওই বাজে লোকটা ইতিকে বিয়ে করতে চাইছিল?”
- কে?”
- নাহিদ।”
সোনালী সব কথা খুলে বললো, ইতিকেও সব ঘটনা বললো, - ছিঃ আর কত খারাপ হবে নাহিদ। ও কতকত মেয়ের জীবন নষ্ট করছে ওকে তো শাস্তি দিতেই হবে।”
মানহার কথায় সোনালী ও ইতি সায় দিলো। তিনজন খুব ভালো আড্ডা দিচ্ছে নানান বিষয়ে কথা বলছে।
অন্যদিকে।
- ব্রো আজ ইতি ভাবির বাসায়।”
ল্যাপটপে কাজ করতে করতে বললো তখন আরিয়ান। - তো কি হয়েছে?”
- তুই তো এখন ওই বাড়ির হবু জামাই চল এই সুযোগে যাওয়া যাক।”
- বাজে কথা বলা বন্ধ কর আর কাজ কর।”
- তুই যে কিভাবে আমার ভাই হলি বুঝলাম না। দাদী কি বলেছে শুনিস নাই। যত বেশি বউয়ের আশে পাশে থাকবি ততবেশি জীবনে উন্নত করতে পারবি।”
- এমন বাজে কথা দাদী কোনোদিন বলবে না। বলতে পারলে তুই বলবি সো দাদীর নামে মিথ্যা কথা বলবি না।”
- হুহহ। ওহহ ব্রো একটা ইম্পর্টেন্ট কথা বলতে ভুলে গেছি।”
- তোরও ইম্পর্টেন্ট কথা আছে জানতাম না তো।”
- ব্রো মজা করবি না। তোর এই ভাই সুপার হিরো ভুলে যাবি না।”
- ইম্পর্টেন্ট কথাটা কি?”
- ওই যে ইতির রিজেক্ট করা হবু বর নাহিদ যে ভাবির হাত ধরেছিল তাকে শায়েস্তা করার জন্য একটা প্ল্যান করেছিলাম।”
আরিয়ান কাজ রেখে হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে বললো, - হোয়াট? কি বলছিস জানিস ও কে?”
- হুম। সব খবরই জানি আমি। এক নম্বরের বদ ছেলে। হাজারটা মেয়ের সাথে রিলেশন। বিয়ে করেছিল এক বছর হলো ডিভোর্স এখনো মেয়েদের সাথে রিলেশন আছে। তাছাড়া ইতির কাছে শুনেছি ভাবির সাথেও নাকি বাজে বিহেভ করেছে। “
- হোয়াট ডিভোর্স হয়ে গেছে মানে?”
- আরেহ ওই রকম বাজে লোকের সংসার কোন মেয়ে করবে তাই হয়তো চলে গেছে।”
- তোকে এইসব কথা কে বলেছে?”
- ইতি বলছে। আরো বলেছে ওই ছেলের সাথে নাকি ভাবির পরিবারের একটা সম্পর্ক ছিল যা এখন নেই।”
- ধ্যাত। কিসব আবল তাবল বলছিস। চল এখন।”
- কোথায়?”
- সোনালীর বাসায়।”
- তোর মন হলো আকাশের রং কখন যে কি রূপ ধারণ করে বুঝা মুশকিল।”
আরিয়ান হৃদয়ের দিকে চোখ রাঙাতেই হৃদয় বললো, - আমি কি না করেছি নাকি? চল।”
- জানো আপু ওইদিন নাহিদের সামনে আরিয়ান আসতেই নাহিদ ভয় পেয়ে চলে যায়।”
- এই নাহিদ কতবার মার খেয়েছে ওর হাতে সেই ভয় মরার আগ পর্যন্ত থাকবে নাহিদের।”
মানহা মনে মনে বলছে। তখন ইতি বললো, - লেখক দুলাভাই কে দেখে ভয় পাবে না তো কি করবে যেসব আত্মা কাপানো গল্প লিখে সবাই ভয় পাবে।”
- তোরা চুপ কর তো এখন। মাওয়া কে ঘুমুতে দে দেখ তোদের কথা কি মনোযোগ দিয়ে শুনছে বুড়ি মেয়েটা।”
- আম আম আম্মু মাম আম্ম আম্মু।”
এখনো কথা বলতে পারে না। শুধু আম্মু বলা শিখেছে। কিন্তু যেভাবে কথা শুনছে মনে হচ্ছে সব বুঝে ও। মানহা মাওয়া কে ঘুম পাড়ানোর চেষ্টা করছে তখন আবারো কলিং বেলের শব্দ। - আজ এত কলিং বেল বাজছে কেনো? এখন আবার কে এসেছে?”
- মনে হচ্ছে আন্টি দরজা খুলে ফেলেছে। চল গিয়ে দেখি কে এসেছে।”
- যেই আসুক আমরা আড্ডা দেই।”
- আরেহ চল।”
ইতি সোনালীকে টেনে নিয়ে গেলো কেননা ইতি জানতো হৃদয় আর আরিয়ান আসবে। হৃদয় তাকে সব বলেছে।
সোনালীর আব্বু আম্মু কিছু কথা বললো, আরিয়ান তাদের সাথে কথা বলে বুঝলো না ওদের পরিবারের এক মেয়ের সাথে নাহিদের বিয়ে হয়েছে। ওর চরিত্রের কথা জানার পর ওদের ডিভোর্স হয়ে যায়। সোনালীর সাথে যা করেছে সব বললো, ইতি তখন মাওয়া কে কোলে নিয়ে ওদের সামনে যায় তখন সোনালীর আম্মু বললো, - এই যে বাবুটাকে দেখছো ওর মায়ের সাথে এমন ঘটেছে।”
আরিয়ান বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে এক ধ্যানে তাকিয়ে রইলো। বাচ্চাটার চোখ গুলো খুব চিনা চিনা লাগছে তার।
- এই তোদের জন্য এই মেয়েকে ঘুম পাড়াতে পারবো না আমি।”
মানহা জানতো না আরিয়ান এসেছে। রুম থেকে বের হতেই সামনে আরিয়ানকে দেখে কথা বন্ধ করে দিলো। আরিয়ান মানহার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সোনালীকে বললো,
পর্ব ১৮
মানহা জানতো না আরিয়ান এসেছে। রুম থেকে বের হতেই সামনে আরিয়ানকে দেখে কথা বন্ধ করে দিলো। আরিয়ান মানহার দিকে কিছুক্ষন তাকিয়ে থেকে সোনালীকে বললো,
- ওনি কে?”
মানহা আরিয়ানের কথা শুনে খুব অবাক হলো। মানহা আরিয়ানের চোখের দিকে তাকিয়ে দেখলো শান্ত চোখ তার, যে চোখে এক সময় ছিল তার জন্য কত ভালোবাসা কিন্তু সেই চোখে আজ ভালোবাসা নাকি ঘৃনা বুঝা যাচ্ছে না। - ও আমার কাজিন মানহা।”
- বাচ্চাটা ওনার তাই তো?”
- হুম।”
-ইতি মাওয়াকে আমার কাছে দে ও ঘুমাবে এখন।”
ইতির কাছ থেকে মাওয়াকে নিয়ে চলে গেলো মানহা। আরিয়ান মানহার যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে সোনালীকে বললো, - আমি এখন আসি। অনেক কাজ আছে।”
- বাবা রাতের খাবারটুকু খেয়ে যাও।”
- অন্য একদিন আন্টি আজ প্রচুর কাজ আছে।”
আরিয়ান হৃদয় চলে যায়। দরজার আড়ালে থেকে মানহা আরিয়ানকে দেখে। আরিয়ান যাবার সময় আশে পাশে তাকিয়ে কিছু খুঁজছিল। মানহা জানে আরিয়ান তাকে খুঁজছিল কিন্তু সে তো দেখা দিবে না। আরিয়ান এখন তার বোনের হবু বর সে পারবে না সোনালীকে কষ্ট দিতে। তাছাড়া আরিয়ান তার ভালোবাসার সাথে খেলেছে। ওর মনে আরিয়ানের জন্য যতই ভালোবাসা থাকুক তা সে প্রকাশ করবে না।
আরিয়ান অন্ধকারে বসে আছে। হাতে সিগারেট অনেকদিন পর আজ সে তার প্রথম ভালোবাসার মানুষকে দেখতে পেয়েছে কিন্তু ও চায়নি মানহার জীবন এমন হোক। মানহার কষ্টের কথা ভেবে তার চোখ লাল হয়ে উঠলো। নাহিদকে সে ছাড়বে না। ফোন বের করে কাওকে যেনো ফোন দিলো।
- একজনের নাম বলছি সাথে ঠিকানা। আগামীকাল তাকে আমার সামনে দেখতে চাই। যা যা বলছি মন দিয়ে শুনে।”
আরিয়ান কিছুক্ষণ কথা বলে ফোন কাটলো তখন তার মনে আরেকটি প্রশ্ন উদয় হলো, তানিয়া তাকে বলেছে সে ইন্ডিয়াতে মানহাকে দেখেছে কিন্তু সোনালীর পরিবারের কাছে যা শুনলো মানহা কোনোদিন ইন্ডিয়া যায়নি তাহলে তানিয়া তাকে এমন কথা কেনো বললো? মনের ভিতর এমন প্রশ্ন আসায় ফোন দিলো তানিয়াকে। - বাহ আজ দেখছি মেঘ না চাইতেই বৃষ্টি। এত বড় লেখক আমায় কেনো ফোন দিলো এখন তো নিজেকে সেলিব্রিটি মনে হচ্ছে আমার।”
- তুই নিজেও তো সেলিব্রিটি লেখিকা এখন মজা নিচ্ছিস আমার সাথে বাই দা ওয়ে কি করছিস?”
- আরেহ বলিস না নতুন বই নিয়ে খুব ঝামেলায় আছি।”
- কেনো কি হয়েছে?”
- আমার নতুন বইয়ের নাম তো জানিস ‘ ছদ্মবেশী বন্ধু ‘ এইখানে একটা চরিত্রের নাম বদল করে নিজের নাম দিতে বড্ড ইচ্ছা করছে তাই আবারো নতুন করে সব সাজাচ্ছি।”
- বাহ হিরোইন থেকে ভিলেন হওয়ার ইচ্ছা জাগলো কবে থেকে?”
- অনেকদিন ধরেই।”
- বুঝলাম আচ্ছা তুই ওইদিন ফোন দিয়ে বলছিলি না তুই মানহা কে দেখেছিস?”
তানিয়ার মুখ এখন চুপসে গেলো। ফোনের ওপাশ থেকে আমতা আমতা করে বললো, - হুম হিন্ডিয়াতে দেখেছি। হটাৎ এমন প্রশ্ন?”
- আজ মানহাকে দেখেছি।”
আরিয়ান শান্ত গলায় বললো তানিয়া বিচলিত হয়ে বললো, - তোদের মাঝে এখনও সম্পর্ক আছে?”
- নাহ।”
- তাহলে?”
- তোকে বলা হয় নি আমার বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। আমার হবু স্ত্রীর কাজিন মানহা। নাহিদ ওর সাথে বেইমানি করেছে।”
- ত তোর বিয়ে মানে? কক কবে কি ঠিক?”
- হটাৎ করেই সব হয়ে গেছে ভেবেছিলাম তোকে বিয়ের দুইদিন আগে বলবো সারপ্রাইজ দিবো তোকে কিন্তু হলো না।”
- হুম। আর আমি মনে হয় হিন্দিয়াতে অন্য কাওকে দেখে মানহা ভেবেছিলাম সরি আমি।”
- আরেহ সরি বলার কি আছে? ভুল তো হতেই পারে বাই দা ওয়ে মানহার খুব সুন্দর মেয়ে হয়েছে। কিন্তু নাহিদের চরিত্র দিন দিন খারাপ হচ্ছে ওকে তো শাস্তি দিতেই হবে। আচ্ছা বায় পরে কথা হবে।”
- হুম।”
আরিয়ান ফোন কেটে দিয়ে আরেকটি সিগারেট ধরালো।
তানিয়া নাহিদ কে ফোন দিলো। - হ্যায় ডার্লিং কি খবর?”
- বাজে কথা বলা বন্ধ করে ব্যাগ পত্র গুছিয়ে কিছুদিনের জন্য কোথায় লুকিয়ে থাক।”
- কেনো কি হয়েছে?”
- আরিয়ান তোর সম্পর্কে সব জেনে গেছে।”
- হোয়াট কিভাবে?”
তানিয়া আরিয়ান তাকে যা বলেছে সব বললো, - তারমানে সোনালীর সাথে আরিয়ানের বিয়ে?”
- সোনালী কে?”
- মানহার কাজিন। এই জন্যইতো ওইদিন আমি সোনালীর হাত ধরায় আরিয়ান ক্ষেপে গিয়েছিলো।”
- পরিস্তিতি খুব খারাপ দেখছি। আমাকেই বাংলাদেশ আসতে হবে। যেভাবে মানহাকে বিদায় করেছি সোনালীকে সেইভাবেই বিদায় জানাতে হবে। আর তুই কিছুদিনের জন্য কোথাও চলে যা তানাহলে অকালে প্রাণ হারাতে হবে।”
- ওকে। তুই তাড়াতাড়ি চলে আয়। আর শুন আমার কিন্তু সোনালীকে চাই চাই।”
- নিজেকে আগে বাঁচা পরে সোনালীকে পাওয়ার চেষ্টা করিস। বায় আমি টিকিট কাটার ব্যাবস্থা করি।”
- ওকে।”
- আমার এত দিনের স্বপ্ন কেউ এইভাবে উড়ে এসে জুড়ে বসবে কোনো দিন ভাবতে পারেনি। এই মানহাদের পরিবারের মেয়েগুলো বড্ড খারাপ তারা দুনিয়াতে আর কোনো ছেলে পায় না আমার ভালোবাসার মানুষের কাছেই আসে। বলি তোরা তোদের মত কাওকে খুঁজে নে আমাকে রাগাতে আছিস কেনো? আমি যদি বেশি রেগে যাই না তোদের বংশে আর কোনো মেয়ের জন্ম নিতে পারবে না। আর ওই সোনালীকে তো আমি দেখে নিবো। মানহা তোর বড্ড শক তোর বোনকে আমার আরিয়ানের সাথে বিয়ে দেওয়া তাই না? তুই তো পারলি না এখন বোনকে ছেড়ে দিয়েছিস তোর এই প্ল্যানের কারণে তোর মেয়েকে বিদায় করবো এই দুনিয়া থেকে। তোরা বার বার আমার নিষ্পাপ আরিয়ানের দিকে নজর দিচ্ছিস তোদের চোখ তো আমি কালো কাপড়ে মুড়িয়ে পৃথিবী থেকে বিদায় দিবো আসছি আমি। আরিয়ান তোকেও শাস্তি পেতে হবে। আমার কথা না ভেবে তুই অন্য মেয়ের কথা ভাবছিস তোকে তো আমি ছেড়ে দিবো না জাস্ট বিয়েটা হোক পরে তোকে বুঝাবো তানিয়া কি করতে পারে।”
তানিয়া তার রুমে হাঁটছে দুই হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রেখেছে। সে পারছে উড়ে গিয়ে সোনালী ও মানহা কে মারতে।
পরেরদিন সকালে।
নাহিদকে কোথায় পাওয়া যাচ্ছে না। আরিয়ানের মাথা রেগে আগুন। হৃদয় আইস ব্যাগ আরিয়ানের মাথায় ধরে রেখেছে।
- নাহিদ কোথায় গিয়েছে কবে গিয়েছে কেউ জানে না? গতকাল রাতেই তো সব ঠিক ছিলো সকাল হতে না হতেই নাহিদ পালায় কিভাবে?”
- ব্রো শান্ত হো দেখবি ওকে খুঁজে পাওয়া যাবে তুই আগে শান্ত হো।”
- ওকে খুন না করা পর্যন্ত তো আমি শান্ত হবো না।”
- ব্রো মাথা ঠাণ্ডা রাখ জানিস না রেগে গেলি তো হেরে গেলি। ওই ছেলে তো আর বাংলাদেশ থেকে বিতারিত হবে না তুই একদিন না একদিন ঠিকই পাবি।”
আরিয়ান কিছুক্ষণ ভাবলো। হটাৎ কোথাও একটা ফোন দিয়ে কিসব বললো, কথা বলা শেষ হলে হৃদয়কে বললো, - সোনালী ইতিকে বল রেডি থাকতে ওদের নিয়ে ঘুরতে যাবো।”
- আমি কি ঠিক শুনছি?””
- আর শুন যদি ওদের মধ্য কেউ যেতে চায় তাহলে বলবি চলে আসতে আমি আসছি।”
- হুম।”
আরিয়ান চলে যায়। হৃদয় তো কিছুক্ষন লুঙ্গি ড্যান্স করে ইতিকে ফোন দিলো। - ব্যাগ পত্র গুছিয়ে রাখো।”
- কেনো?”
- হানিমুনে যেতে হবে না?”
- ছিঃ ছিঃ ছিঃ তুমি কি খারাপ গো।”
- শুনো ব্রো আমাদের ঘুরতে নিয়ে যাবে। সো তোমরা যারা যারা যাবে রেডি হয়ে পরো।”
- এই তোমাদের দুই ভাইয়ের মাথার নাট বল্টু কি ঢিলা হয়ে গেছে? যখন বলবে তখনই রেডি হয়ে তোমাদের সাথে যাবো বলি তোমাদের মত কি আমরা ফ্রী থাকি সব সময় আমাদের পরিবারকে বলতে হবে না? ওরা পারমিশন দিলে তো যাবো।”
- বাসায় বলো তুমি ভাবির সাথে ঘুরতে যাচ্ছো কিছুদিনের জন্য। ভাবির হবু বর মানে তোমার লেখক দুলাভাই ট্রিট দিচ্ছে আরো কিছু বানিয়ে রেডি হয়ে পরো। আমি আর ভাইয়া রাতে এসে নিয়ে যাবো। লং ড্রাইভে যাবো।”
- ধ্যাত। দেখছি।”
আরিয়ান ফোন দিয়ে সোনালীর আব্বু আম্মুকে বলে ওনারা রাজি হয়ে যায়। ইতি, সোনালী, সোনালীর আব্বু আম্মু অনেক বুঝিয়ে সুঝিয়ে মানহা কে রাজি করায়। মানহা যেতে চায়নি কত কত অজুহাত দিয়েছে কিন্তু লাভ হয় নি। অতঃপর রাতে আরিয়ান হৃদয় এসে ওদের তিনজনকে নিয়ে যায় সাথে মাওয়াও ছিলো।
আরিয়ান ড্রাইভ করছে পাশের সিটে হৃদয়। ইতি হৃদয় বকবক করেই যাচ্ছে। সোনালী ওদের বকবক শুনে বললো,
- তোদের জুটি ধারণ মিল হয়েছে। দুই বকবক একসাথেই আছিস। আল্লাহ জানে তোদের আন্ডা বাচ্চারা কেমন হয়? তোদের মতই বকবক করবে নাকি তোদের থেকেও বেশি সেই চিন্তা করে মাথার চুল সব পেকে যাচ্ছে।”
মানহা সোনালীর কথা শুনে হেঁসে বললো, - আপনি যে কেমন তা আমরা জানি। আপনি নিজেই তো বকবক করেন এখন অন্যদের নিয়ে চিন্তা করছেন।”
- তোমার কাছ থেকেই তো শিখেছি। তুমি তো আগে কত কথা বলতে আর কথায় কথায় ছন্দ মিলাতে খুব হাস্যকর ছিলো আর এখন বোরিং এর ডিব্বা।”
আরিয়ান গাড়ির গ্লাসের দিকে তাকিয়ে মানহার দিকে তাকালো। দুইজনের চোখ এক হয়ে গেলো। মানহা সাথে সাথে চোখ ফিরিয়ে নিলো। আরিয়ান আবারো সামনের দিকে তাকিয়ে ড্রাইভ করতে লাগলো।
সোনালী ইতি অনেক জোরাজোরি করাতে মানহা গাইতে বাধ্য হলো। মাওয়া কে কোলে শুইয়ে রেখে মানহা গান গাওয়া শুরু করলো।
প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও। তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিশুতে যাই
তোমাকে, ও। তোমাকে।
জেনেও তোমার আঁখি চুপ করে থাকে।
রোজ দুইফোঁটা যেন আরও ভালো লাগে
গানে, অভিসারে, চাই শুধু বারে-বারে
তোমাকে, ও। তোমাকে।
যেদিন কানে-কানে সব বলবো তোমাকে
বুকের মাঝে জাপ্টে জড়িয়ে ধরবো তোমাকে।
পথ চেয়ে রই, দেরি করোনা যতই
আর ভোলা যাবেনা জীবনে কখনোই,
তোমাকে, ও। তোমাকে।
তুমি হাসলে আমার ঠোঁটে হাসি
তুমি আসলে জোনাকি রাশি-রাশি
রাখি আগলে তোমায় অনুরাগে
বলো কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি?
সব চিঠি সব কল্পনা জুড়ে
রং মিশে যায় রুক্ষ দুপুরে
সেই রং দিয়ে তোমাকে আঁকি
আর কিভাবে বোঝাই ভালোবাসি।।
প্রাণ দিতে চাই, মন দিতে চাই
সবটুকু ধ্যান সারাক্ষন দিতে চাই
তোমাকে, ও। তোমাকে।
স্বপ্ন সাজাই, নিজেকে হারাই
দুটি নয়নে রোজ নিশুতে যাই
তোমাকে, ও। তোমাকে।
পর্ব ১৯
আরিয়ান চুপচাপ ড্রাইভ করেই যাচ্ছে। মনে হচ্ছে কোনো রোবট। সোনালী তখন বিরক্তি প্রকাশ করে বললো,
- এই লেখক আমরা কোথায় যাচ্ছি?”
- ভদ্র ভাবে কথা বলো।”
- মাননীয় লেখক সাহেব আমরা কোথায় যাচ্ছি যদি সুন্দর করিয়া উত্তর দিতেন তাহলে খুবই উপকৃত হইতাম।”
- সাধু চলিত সব ভাষায় কথা বলো বাহ ধারণ টেলেন্ট তো তোমার।”
- হুম মিশ্র প্রতিক্রিয়া টেলেন্ট। এখন বলুন কোথায় যাচ্ছি আমরা?”
- সিলেট।”
- ওয়াও আচ্ছা সিলেটের কোন কোন জায়গায় যাবো আমরা?”
- কোথায় কোথায় যেতে চাও তুমি?”
- ওয়েট লিস্ট করে বলছি।”
সোনালী চোখ বন্ধ করে এক দমে বলতে শুরু করলো।
- হযরত শাহ্ পরাণ (রাঃ) এর মাজার, কুলুমছড়া, লাক্কাতুরা চা বাগান, মালনীছড়া চা বাগান, হযরত শাহজালাল (রঃ) মাজার, জাফলং, লোভাছড়া, রাতারগুল, পান্তুমাই জলপ্রপাত আরো আছে কিন্তু মনে পড়ছে না।”
আরিয়ান গাড়ি থামিয়ে সোনালীর দিকে তাকিয়ে খুব ভালো করে সোনালীর মুখ দেখে বললো,
- এক কথায় বললেই তো হয় যে, তুমি সিলেটের আনাচে কানাচে যত জায়গা আছে সব ঘুরতে চাও।”
ইতি তখন লাফিয়ে উঠে বললো, - দেখ সোনালী লেখক দুলাভাই তোর মনের কথা কিভাবে বুঝে ফেলে এইটাকেই বলে রিয়েল ভালোবাসা। যে ভালোবাসায় মুখ ফোটে কিছু বলতে হয় না মনের মিল থাকলে এমনি হয়ে যায়।”
আরিয়ান ইতির কথা শুনে একবার মানহা আরেকবার সোনালীর দিকে তাকালো। সোনালী লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রেখেছে আর মানহা জানালার দিকে তাকিয়ে আছে। আরিয়ান মানহা কে আর না দেখে সোনালীর লজ্জা মাখা মুখ দেখতে থাকে তখন হৃদয় কেশে উঠল।
–” হুহ হূহ তোরা তো দেখছি ভারতীয় বাংলা ছবির মত শুভ দৃষ্টি করা শুরু করে দিয়েছিস। শুন, এখনো অনেক সময় আছে ভাবীকে দেখার জন্য এখন বরং গাড়ি চালা।”
- লেখক দুলাভাই আপনি তো এখন সোনালীর স্বামী সো পরেও দেখতে পারবেন সমস্যা নাই। এখন ভালো করে গাড়ি চালান কেননা আমার নাতি নাতনীদের নাতি নাতনী না দেখে মরতে চাই না আমি।”
সোনালী আস্তে করে থাপ্পড় মারলো ইতিকে। আরিয়ান আবারো ড্রাইভ করতে লাগলো। মানহা তখন ইতিকে বললো, - ওদের তো বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে কিন্তু বিয়ে তো হয় নি।”
- আপু তুমি জানো না ওদের বিয়ে হয়ে গেছে। লেখক দুলাভাই সোনালীকে অনেক আগেই বিয়ে করে ফেলেছে কিন্তু কাওকে জানায় নি। আমরা চারজন জানতাম আজ তুমি জানলে।”
- ওয়াও গুড। তো মিস্টার আরিয়ান সেই উপলক্ষে কি আমাদের এই ট্রিট দিচ্ছেন?”
মানহার মুখে আপনি ডাক শুনে আরিয়ানের বুক কেপে উঠলো বাট প্রকাশ করলো না। ড্রাইভ করতে করতেই বললো, - আপনার ধারণা ঠিক। ইতি অনেক দিন ধরে ট্রিট চাচ্ছে। সোনালীর ঘুরতে যেতে ইচ্ছা করছে বিভিন্ন উপন্যাস পড়ে তাই আমিও ভাবলাম সবাই যেহেতু একসাথে আছি এখন আমিও ফ্রী তাহলে ঘুরতে যাওয়াটা মন্দ হয় না।”
সোনালী তখন বললো,
- আমি উপন্যাস পড়ে ঘুরতে চাই কে বলেছে আপনাকে?”
- ফেসবুকে প্রতিদিন যা পোষ্ট করো কি ভেবেছিলে আমি দেখি না। তোমার সব পোষ্টেই আমি ফোলো করি যদিও বা রিয়েক্ট কমেন্ট করি না কিন্তু ফলো করি হাজার হোক তুমি আমার ওনলি ওয়ান বউ।”
ইতি হৃদয় জোরে জোরে হাসা শুরু করলো। আরিয়ান মানহা কে শুনিয়ে শুনিয়ে কথা বলতে লাগলো। মানহা মনে মনে ভাবছে।
- ভালো হয়েছে আরিয়ান সোনালীকে মেনে নিয়েছে। আমি জানি আরিয়ানও সোনালী কে পছন্দ করে এখন আমি ওদের মাঝে আশায় আরিয়ান বুঝতে পারছে না। হতে পারে আমার জীবনের খারাপ মুহূর্ত শুনে ওর মনে আমার জন্য ভালোবাসার পাশাপাশি মায়া সৃষ্টি হচ্ছে তার জন্য সোনালীকে ওর অ্যাকসেপ্ট করতে দ্বিধাবোধ করছে। আরিয়ানকে বুঝাতে হবে আমার। আমি খুব ভালো আছি আমার মেয়েকে নিয়ে সে যেনো সোনালীকে নিয়ে খুশি থাকে। ওর সাথে আমার কথা বলতে হবে।”
- নাহিদ তুই এখন কোথায়?”
- আমি সিলেট আছি। তুই তো জানিস সিলেট আমার লুকানোর অনেক জায়গা আছে। বাসায় মাঝে মাঝে ঝগড়া হলে তো আমি সিলেট চলে যেতাম সেইটা তো তোরা সবাই জানতি।”
- আরেহ গাধা এই কথা তো আরিয়ানও জানে এখন যদি ও ওইখানে চলে যায়।”
- আরিয়ানের কি এই কথা আর মনে আছে? কলেজ ভার্সিটিতে লাইফের কথা বিশেষ করে আমার সাথে ওইগুলো এখন আর ওর মনে নেই।”
- আরিয়ান যে কথা একবার শুনে বা জানে তা সে ভুলে যায় না জানিস না?”
- আরিয়ান জানে আমি সিলেট আসি কিন্তু কোথায় থাকি তা তো জানে না? আমার মন বলে ও সিলেট আসবে না।”
- তবুও সাবধানে থাকিস। বাহিরে একদম বের হবি না। আমি পরশু আসছি বায়। এখন আরিয়ানকে ফোন দেওয়া যাবে না ও যদি কিছু আঁচ করতে পারে।”
- শালা ছোট থেকেই গোয়েন্দা।”
- রাখ ফোন তুই।”
- হুম।”
সিলেট পৌঁছাতে তাদের সারা রাত লাগলো। মাঝে রাস্তায় অনেকবার গাড়ি থামিয়েছে তারা। গ্রান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ এই রিসোর্টে এসে উঠে তারা। আরিয়ান হৃদয় একটি রুম বুক করে। সোনালী, ইতি ও মানহার জন্য একটি রুম বুক করা হয়।
গ্র্যান্ড সুলতান টি রিসোর্ট এন্ড গলফ একটি পাঁচ তারকা মানের রিসোর্ট। সিলেট বিভাগের প্রথম পাঁচ তারকা মানের বিলাসবহুল এই রিসোর্টে বিনোদনের জন্য আধুনিক সকল সুযোগ সুবিধা রয়েছে। গ্রান্ড সুলতান রিসোর্ট মৌলভীবাজারজেলার শ্রীমঙ্গল উপজেলায় অবস্থিত। সবুজ প্রকৃতি ও চা বাগানে ঘেরা শ্রীমঙ্গলের প্রায় ১৩.২ একর জায়গার ওপর এই রিসোর্টটি গড়ে তোলা হয়েছে। সোনালী, ইতি ও মাওয়া শুয়ে পড়েছে। সোনালী ইতি খুব ক্লান্ত। মানহা লাগেজ থেকে জামা কাপড় বের করে খুব সুন্দর করে সাজিয়ে রেখেছে।
- সোনালীর আড়ালে আরিয়ানের সাথে কথা বলতে হবে। আরিয়ানকে বুঝাতে হবে ওর দয়া আমার লাগবে না। আমি আমার মেয়েকে নিয়ে খুব ভালো আছি। ও যেনো সোনালীকে নিয়ে ভালো থাকে। আরিয়ান যদি এখন আমার জন্য ওর বিয়ে করা বউকে দূরে ঠেলে দেয় তাহলে সেটা সোনালীর সাথে অন্যায় করা হবে। আমি জীবনে ওর প্রথম ভালোবাসা ছিলাম তেমন প্রথম ভালোবাসাই থাকতে চাই। আমি চাই সোনালী আরিয়ানের শেষ ভালোবাসা হোক। আমার জায়গা যেমন সোনালী নিতে পারবে না ঠিক তেমনি আমিও সোনালীর জায়গা নিতে পারবো না। কেননা, কেউ কোনোদিন কারো জায়গা নিতে পারে না নতুন জায়গা তৈরি করে। তাছাড়া আরিয়ান আমাকে মিথ্যা অপবাদ দিয়ে ওর জীবন থেকে বের করে দিয়েছে। আমি এখন আর ওর জীবনে যেতে চাই না।”
মানহা আরিয়ানের সাথে কিভাবে কথা বলবে তা নিয়ে ভাবছে। সারা রাত জেগে থাকা সত্বেও ঘুম আসছে না তার। মনের ভিতর কেমন যেনো ভয় ভয় করছে তার। সোনালী যদি তাদের সত্যিটা জানতে পারে তাহলে কি আরিয়ানকে মেনে নিবে? নাকি দূরে চলে যাবে? সোনালীর তো জানা উচিত এইসব কথা।
মানহা রুম থেকে বের হয়ে রিসোর্ট ঘুরে ঘুরে দেখতে লাগলো। হটাৎ অনেক বড় আর সুন্দর লাইব্রেরী দেখে লাইব্রেরীর ভিতর চলে গেলো।
মানহা একটা ভালোবাসার উপন্যাস পড়ছে কারণ, সে জানতে চায় মানুষের জীবনে ভালোবাসার প্রকারভেদ আছে কি না? একটা মানুষ কি একজন কে ভালোবাসা সত্বেও অন্যজনকে ভালোবাসতে পারে কি না?”
- দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ, পঞ্চম প্রেম বলে কিছু নেই। মানুষ যখন প্রেমে পড়ে তখন প্রতিটি প্রেমেই প্রথম হয়। উক্তিটি হলো হুমায়ূন আজাদ স্যারের। তারমানে ভালোবাসা কেউ কারো স্থান নিতে পারে না সবাই সবার স্থান থেকে একই জায়গায় স্থির থাকে।”
- আপনার প্রথম ভালবাসা সর্বদা বেঁচে থাকবে এবং চিরকাল আপনার হৃদয়ে বাস করবে। আপনি যতই ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করুন না কেন, তা কখনই আপনার হৃদয় থেকে দূরে যাবে না। এই জন্যই তো আমি আপনার প্রথম ভালোবাসা ছিলাম না। তাই খুব সহজে ভুলে গেছেন।”
মানহা চোখ তুলে তাকিয়ে দেখে ওর সামনে আরিয়ান বসে আছে। ওর সামনে ‘প্রথম ভালোবাসা’ নামক এক উপন্যাস। সোনালী আরিয়ানকে দেখে ‘থ’ মেরে যায়। ও আশা করে নাই আরিয়ান এইখানে থাকবে।
- তুমি এইখানে?”
- বাহ আপনি থেকে তুমি? গুড ভেরী গুড। শুনুন আপনার সাথে আমার কিছু জরুরি কথা আছে। তাই আপনাকে এইখানে সাথে করে নিয়ে এসেছে।”
- আমারও কথা আছে আপনার সাথে।”
- বলুন কি কথা আপনার?”
- আপনি প্লিজ আমার জন্য আমার বোনকে কষ্ট দিবেন না। ও খুব ভালোবাসে আপনাকে।”
- আপনার মাথা কি ঠিক আছে? আমি কেনো আমার বউকে কষ্ট দিবো আজব তো। শুনুন আমি আমার বউ নিয়ে খুব খুশি। এইটা ঠিক আমি আপনাকে ভালবাসতাম কিন্তু কি জানেন বিশ্বাসঘাতকের কোনো জায়গা এই আরিয়ানের জীবনে নেই। এখন যার জন্য আপনাকে এইখানে নিয়ে এসেছি মন দিয়ে শুনুন।”
মানহা আরিয়ানের কথায় লজ্জা পেলো। ও ভাবতে পারে নাই আরিয়ান এতটা বদলে গিয়েছে। যে ছেলের মুখে সব সময় মধুর কথা ছিল সেই ছেলের কথা আজ তার কাছে বিষাক্ত লাগছে। দূরত্ব অনেক দুরত্ব সৃষ্টি হয়েছে তাদের জীবনে। - হুম বলেন?”
- নাহিদ এইখানেই আছে।”
আরিয়ান শান্ত গলায় বললো মানহা চেঁচিয়ে উঠে বললো, - হোয়াট?”
পর্ব ২০
আরিয়ান শান্ত গলায় বললো মানহা চেঁচিয়ে উঠে বললো,
- হোয়াট?”
- হুম। কেনো আপনি তো ওকে ভালোবাসতেন এমনকি বিয়েও করেছেন তাহলে জানেন না ওর অভ্যাসের কথা?”
- আমি ওর পার্সোনাল ব্যাপারে কিছু জানি না।”
- হাহাহাহা। কি বলেন কি আপনি? রিলেশন করে বিয়ে করেছেন আর ওর অভ্যাসের কথা জানেন না? হাসালেন আপনি আমাকে।”
- আপনার সাথে আমি এইসব নিয়ে কথা বলতে ইচ্ছুক না। যদি কোনো দরকারি কথা থাকে বলতে পারেন।”
- হুম শুনুন মনোযোগ দিয়ে, আমি চাই না সোনালী আমার অতীতের খারাপ সময়গুলোর কথা জানুক। ও যেনো না জানতে পারে ওকে? আমরা ঘুরতে যাওয়ার ছলে নাহিদকে খুঁজব তাই আপনার অন্ধ চোখ গুলো দয়া করে খুলে রাখবেন। আমার সাথে বেশি কথা বলবেন না। সোনালীর সামনে এমন কিছু বলবেন না যেনো ওর মনে সন্দেহ হয়।”
- হুম।”
- কথাগুলো মাথায় খুব সুন্দর ভাবে বুঝে নিন। আমি আসছি।”
- হুম।”
আরিয়ান চলে যায়। মানহা টেবিলের নিচের দিকে তাকিয়ে কাঁদতে থাকে। আরিয়ানের কথাগুলো তাকে বার বার কষ্ট দিচ্ছে। আরিয়ান যে তাকে কতটা ঘৃনা করে সে বুঝতে পেরেছে।
- আরিয়ান তুমি আমায় এত ঘৃনা করো। একবারও তো জানতে চাওনি কেনো আমি তোমাকে রিজেক্ট করেছি কেনো তোমার সাথে ব্রেকআপ করেছি? আমি ভেবেছিলাম তোমার আমার প্রতি বিশ্বাস আছে তুমি আমার মুখের কথা বিশ্বাস করবে না তুমি বুঝবে আমায় কিন্তু কি হলো তুমিও আমাকে ভুল বুঝেছো। আমি তো তখন ওদের হাতের পুতুল ছিলাম যা বলেছে তাই করেছি আমি।”
মানহা কাঁদতে থাকে। ওর সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো কিছুতেই ভুলতে পারে না ও।
সোনালী ঘুম থেকে উঠে দেখে ইতি ও মাওয়া শুয়ে আছে। মানহা নেই। সোনালী আশে পাশে তাকিয়ে মানহা কে না দেখে মাওয়ার দিকে তাকালো দেখলো মাওয়ার ডায়পার ভিজে আছে। সোনালী ব্যাগ থেকে নতুন ডায়পার পরিয়ে দিলো মাওয়াকে। মাওয়া এখনও ঘুমে আচ্ছন্ন।
- কি নিষ্পাপ মুখখানা তোর। কি কিউট লাগছে উম্মাহ। তোকে দেখলে একদম নিজের বুকের কাছে মিশে নিতে মন চায়। আমার বাবুটা।”
সোনালী ঘুমানো মাওয়াকে নিয়ে কিছুক্ষণ বকবক করে ইতিকে না ডেকে ফ্রেশ হয়ে আরিয়ানের সাথে কথা বলতে গেলো।
আরিয়ান তখন অন্য একটা কাজে রুমে ছিলো না। হৃদয় কম্বল দিয়ে সারা শরীল ঢেকে শুয়ে আছে। সোনালী রুমে গিয়ে দেখলো কেউ একজন শুয়ে আছে। - হৃদয় ভাইয়া তো এখনও শুয়ে থাকার কথা না। সারারাত ড্রাইভ করেছে তাই হয়তো ওনি শুয়ে আছে। যাই একটু মজা করি।”
মনে মনে শয়তানি বুদ্ধি আঁটলো সোনালী। জগ নিয়ে কম্বলের উপর থেকেই পানি ঢাললো সোনালী। হৃদয় ঘুম থেকে ধড়ফড়িয়ে উঠে পড়লো।
- এই কে রেএএএএএএ?”
সোনালী আরিয়ানের কন্ঠ না পেয়ে সামনে তাকিয়ে হৃদয়কে দেখে হাত থেকে জগ ফ্লোরে ফেলে দিলো। সোনালীর হাত পা কাপছে ভয়ে নয় বরং লজ্জায়। হৃদয় সোনালীকে এই অবস্থায় দেখে ভেজা কম্বল আবারো মাথায় দিয়ে শুয়ে পড়লো। সোনালী দৌড় দিতে গিয়ে দরজার কাছে আসতেই আরিয়ানের সাথে ধাক্কা খেলো। - ওই তুমি কি অন্ধ চোখে দেখতে পাও না?”
- ঠিকই বলেছেন আমি অন্ধ।”
সোনালী তাড়াহুড়া করে যেতে চাচ্ছে কিন্তু আরিয়ান সোনালীর হাত ধরে রেখেছে। - কৈ মাছের মত এইভাবে লাফাচ্ছে কেনো কি হয়েছে?”
- আমি আমার রুমে যাবো।”
- কি বলেছি আমি? আগে উত্তর দেও কি হয়েছে?”
- হৃদয় হৃদয় ভাইয়া হৃদয় ভাইয়া।”
সোনালী লজ্জায় কিছু বলতে পারছে না। আরিয়ান তখন ভ্রু নাচিয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
- কি করেছে হৃদয়?”
- ভাইয়া আমার দিয়ে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা কর ভাবীকে।”
আরিয়ান হৃদয়ের দিকে তাকিয়ে দেখলো, তোয়ালে দিয়ে হৃদয় মাথা পরিষ্কার করছে। মুখ, চুল, গলা ভিজে একাকার। সোনালী হৃদয়কে ওইভাবে দেখে আরো লজ্জায় মাথা নিচু করে রেখেছে। - তোর এই অবস্থা কিভাবে হলো? নাকি ইতি ভেবে সোনালীর সাথে তুই।?”
- ছিঃ ছিঃ কি বলছেন কি আপনি ছিঃ।”
হৃদয় জোরে জোরে হাসতে লাগলো। আরিয়ানও মুখ চেপে হাসছে। - ব্রো, ভাবী আমাকে তুই ভেবে গোসল করিয়ে দিয়েছে। জগ ভর্তি পানি সব আমার মাথায় ঢালছে ভাবী। দেখ ভাবী তোর কি খেয়াল রাখে। এই হালকা শীতে আরো শীত লাগার জন্য কত ভালো প্ল্যান। কিন্তু ভাবির এই প্ল্যানে আমি হলাম হাতিয়ার।”
- দেখ তোর ভাবীকে রোমান্স শিখাচ্ছি আমি। নতুন নতুন একটু আকটু ভুল হতেই পারে নো প্রবলেম। এখন তুই যা আমি আরো একটু রোমান্স শিখাই তোর ভাবীকে।”
- ওক্কে ব্রো।”
হৃদয় রুম থেকে বের হয়ে যায়। আরিয়ান সোনালীকে টেনে নিয়ে দেওয়ালের সাথে মিশিয়ে সোনালীর কানে ফিসফিস করে বলে।
- তোমার তো দেখছি রোমান্স করার খুব শক। আমাকে বলতে পারতে আমি তোমার ইচ্ছা পূরণ করতাম। শুধু শুধু আমার ভাইটাকে ঠান্ডায় গোসল করালে।”
- আমি তো আপনার সাথে একটু মজা করতে চেয়েছিলাম। হৃদয় ভাইয়া ছিলো তাতো আমি জানতাম না।”
- ভাবী! সরি আমি কিছু দেখিনি।”
হৃদয় সোনালীকে ডাকতে ডাকতে ভিতরে ঢুকে পড়ে। আরিয়ান সোনালী কাছাকাছি থাকায় বেচারা লজ্জা পেয়ে পিছন ফিরে তাকালো।
- কাবাব মে হাড্ডি হতে খুব ভালো লাগে তাই না?”
- সরি ব্রো, আসলে আমি ভাবির কাছে জানতে আসছিলাম ইতি কোথায়? তোরা তো রোমান্স করবি আমি কেনো বাদ যাবো।”
- ইতি রুমে ঘুমাচ্ছে।”
- মানহা আপু আছে রুমে? পরে দেখা যাবে আমিও ভুল ক্রমে ইতি ভেবে মানহা আপুকে জড়িয়ে ধরবো।”
- নাহ মানহাপু নেই। মাওয়া আর ইতি শুয়ে আছে।”
- ধন্যবাদ ভাবী। আর বেস্ট অফ লাক।”
হৃদয় চোখ টিপ দিয়ে চলে যায়। আরিয়ান হৃদয় যাওয়ার সাথে সাথে দরজা লক করে আবারো সোনালীর কাছে যায়।
- এইভাবে দরজা বন্ধ করলেন কেনো?”
- বউয়ের সাথে রোমান্স করবো তাই।”
- এখনও তো সময় হয় নি।”
- বাহ লজ্জায় দেখছি রংধনু হয়ে যাচ্ছো।”
- একটা কথা বলবো?”
- হুম।”
- আমিও গল্প লেখতে চাই। কিভাবে লিখবো একটু শিখিয়ে দিবেন।”
আরিয়ান কিছুক্ষণ ভাবলো। ভেবে চিন্তে বললো, - আসো আমি আর তুমি একটা যৌথ গল্প লেখি। তাহলে প্রথম গল্পতেই তুমি সেলিব্রিটি হয়ে যাবে। তোমার ইচ্ছাও পূরণ হবে সাথে আমার সন্দেহও।”
- আপনার সন্দেহ মানে?”
- তুমি বুঝবে না। সিলেট ঘুরতে এসেছি ভালো কথা কিন্তু সাবধানে চলবে। একা একা কোথায় যাবে না। মনে রেখো আশে পাশে তোমার হাজারো শত্রু আছে ওকে?”
-হুম। এখন যাই আমি।” - আমি কি তোমাকে যেতে বলেছি?”
- উহু।”
- তো যেতে চাচ্ছো কেনো?”
- আপনার কাছে থাকলে আমার যেনো কেমন কেমন লাগে।”
- কেমন কেমন?”
- নাম বলতে পারলে তো আগেই বলতাম নাম তাই না?”
- তা অবশ্যই ঠিক।”
আরিয়ান সোনালীর কোমর জড়িয়ে ধরে সোনালীকে তার কাছে নিয়ে আসে। তাদের মাঝে এক ইঞ্চিও জায়গা নেই। আরিয়ানের নিঃশ্বাস সোনালীর মুখে এসে পড়ছে। আরিয়ান সোনালীর কানের কাছে মুখ নিয়ে সোনালীর কানে কামোর দিয়ে বললো,
- ভালোবাসা মানে পরস্পরকে বুঝতে পারা। আমি যে মানুষটিকে ভালোবাসব তাকে যদি না বুঝতে পারি তাহলে এই প্রেমের কোনো অর্থ আছে বলে মনে হয় না। তুমি ভাবছো এইসব কথা তোমায় কেনো বলছি তোমাকে তো আমি ভালোবাসি না তাই না তাহলে শুনো তুমি তো গল্প লেখতে চাও আমার সাথে ভাবছি রোমান্টিক গল্প লিখবো যার জন্য রোমাঞ্চ অনুভব থাকাটা আমাদের দরকার।”
- কানে কামোর দিয়ে এই কথা বলতে হয়?”
- এইটা কামোর না লাভ বাইট। রোমান্টিক গল্প লেখার জন্য দরকার আছে।”
- ছিঃ তাহলে আমি লেখবো না।”
- তাহলে বললে কেনো গল্প লেখার কথা।”
- ইচ্ছা ছিল তাই।
- ইচ্ছাটা ধরে রেখো ভালো হবে।”
- আপনি কোনোদিন প্রেমে পড়েন নি লেখক সাহেব?”
আরিয়ান হাসলো। মনে হচ্ছে সোনালী তাকে কোনো জোকস শুনাচ্ছে। - আমি হাসার কিছু বলেছি বলে মনে হয় না আমার।”
- হুম একবার প্রেম করেছে দ্বিতীয় বার প্রেমে পড়েছি। জানি না ভাগ্য কি লেখা আছে আমার। প্রেম করা নাকি প্রেমে পড়া?”
- আপনার কথার আগা মাথা না বুঝা আমার নিষ্পাপ মুন্ডু।”
- এত ছোট মাথায় আবার পাকা কথা ঢুকবে না। বড় হও বুঝতে পারবে।”
- হহ্হ্হ। আমি যাই।”
- আমি শাওয়ার নিতে যাচ্ছি ততক্ষণ এইখানে বসে থাকো। রুমের বাহিরে পা রাখলে ওই পা কেটে হাতে ধরিয়ে দিবো মাইন্ড ইট।”
সোনালী ভয়ে ঢোক গিললো আর মাথায় সম্মতি জানালো ও বসে থাকবে। - আমি পরে যাবো কি করছো তুমি আমাকে নিচে নামাও।”
- আমি এক্সারসাইজ করছি বেশি কথা বলবে না।”
- এক্সারসাইজ করার জন্য আমাকে পেয়েছো তুমি? নামাও বলছি মানহা আপু বা সোনালী এক্ষুনি চলে আসবে।”
- আসবে না ওরা। ওই তুমি কি জানো?”
- কি জানবো আমি?”
- চিকন মেয়েরা বিয়ের পর মোটা হবে সেই আশা নিয়ে বিয়ে করে।”
- তোমাকে এইসব বাজে কথা কে বলেছে?”
- নাহ ফেসবুকে তো প্রায় দেখি তাই জানতে ইচ্ছা হলো।”
- তুমি আমাকে কোল থেকে নামাও আমি বাথরুম থেকে ঝাড়ু এনে তোমাকে শিখাচ্ছি।”
- এই জন্যই তো নামাবো না।”
ইতি জোর করে নামতে চাচ্ছে। হৃদয় কোলে নিয়েই ঘুরছে তখনি মাওয়া ঘুম থেকে উঠে কাঁদতে শুরু করে দিলো।
হৃদয় ইতিকে নামিয়ে মাওয়ার কাছে গিয়ে বসলো। মাওয়া কে কোলে নিয়ে আদর করতে থাকলো।
- এত সুন্দর মেয়েকে রেখে কিভাবে থাকতে পারে কোনো বাবা? একটুও কষ্ট হয় না তার? কি নিষ্পাপ মুখ দেখেই তো আদর করতে মন চায়। আর নাহিদ ভাইয়া কি না এখনো তার বাচ্চাকে দেখলো না। কি পাষাণ মন তার।”
- ওই খারাপ লোকের কথা বাদ দেও। আমিও তো ওই লোকটার ভালো কথায় নিজেকে কন্ট্রোল করার ক্ষমতা শেষ করে দিয়েছিলাম। তুমি না থাকলে তো আমিও মানহা আপুর মত ওই লোকটাকে বিয়ে করে নিজের পুরো জীবন শেষ করে দিতাম।”
হৃদয় ইতি মাওয়াকে আদর করছে। ইতি মাওয়ার জন্য খাবার বানিয়ে মাওয়া কে খাওয়াতে লাগলো।
মানহা রিসোর্টের সুইমিং পুলের ধারে বসে আছে। হৃদয় রুমে ঢুকার কারণে সে আর যায়নি রুমে। ও বুঝতে পেরেছে রুমে ইতি আছে ওদের বিরক্ত করা ঠিক না। মাওয়াকে ওরা দেখে রাখতে পারবে। হৃদয় যখন ওদের রুম থেকে বের হয়েছিল তখন আরিয়ান এসে দরজা লক করার সময় মানহা আরিয়ানকে দেখতে পায়। মানহা তখনি বুঝতে পেরেছে সোনালী রুমের ভিতর। ওদের বিরক্ত করা ঠিক না তাই একা একা সুইমিং পুলের ধারে বসে আছে সে।
- এক্সকিউজ মী!”
মানহা পিছনে তাকিয়ে একজনকে দেখে চমকে গিয়ে বললো, - তুমি?”
পর্ব ২১
মানহা পিছনে তাকিয়ে একজনকে দেখে চমকে গিয়ে বললো,
- তুমি?”
- আমারও তো একই প্রশ্ন তুমি এইখানে?”
- বোনের সাথে ঘুরতে এসেছিলাম। তুমি এইখানে কেনো নাকি ভাবির সাথে ঘুরতে এসেছো হুম?”
- মানহা বিয়ে, বউ এইসব কথা বলে আমার মত বাচ্চা ছেলেটাকে লজ্জা দিও না। তুমি জানোই আমি কোনোদিন বিয়ে করবো না।”
- এখনও সেই একই কথায় আছো দেখছি।”
- বাদ দেও তো এখন এইসব। নাহিদ কেমন আছে?”
নাহিদের নাম শুনে মানহা কিছুক্ষণ নিরব থেকে পরে বললো, - আমাদের ডিভোর্স হয়ে গেছে আয়ান।”
- আমি তো সেইদিনই বলেছিলাম তোমাকে নাহিদকে বিয়ে না করতে। কিন্তু তুমি আমার কথা না শুনে তোমার সিদ্ধান্তে অনড় ছিলে। আরিয়ানের সাথেও ব্রেকআপ করেছিলে শুধু মাত্র নাহিদের জন্য।”
- তুমিও কি এখন আমাকেই দোষারোপ করবে আয়ান?”
- তোমাকে দোষারোপ করার সামর্থ্য আমার নেই। শুধু এইটুকুই জানি অনেক বড় ভুল করেছো তুমি। আরিয়ানকে রিজেক্ট করে এখন সেই ভুলের শাস্তি পাচ্ছো।”
আয়ানের কথা মানহা কাঁদতে থাকে। আয়ান বিচলিত হয়ে পরে। - সরি, এতদিন পর দেখা হলো তবুও তোমাকে কষ্ট দিয়ে ফেললাম।”
- তুমি আমায় কষ্ট দেও নি। আমি আমার পাপের সাজা পাচ্ছি। আর ওইদিন আরিয়ানকে আমি নিজ থেকে রিজেক্ট করি নাই।”
- আমি তো তোমাকে জবাবদিহিতা করতে বলিনি মানহা। চলো কিছু খাওয়া যাক মনে হচ্ছে তুমি এখনও কিছু খাও নি।”
- হুম চলো। আয়ান তুমি কি এখনো মেয়েদের তুমি করে বলো?”
- হুম। বেস্ট ফ্রেন্ডের তুমি বাকিদের আপনি।”
- তুমি এখনও সেই অদ্ভুদ মানুষটাই রয়ে গেলে। আমাদের গ্রুপের একমাত্র অদ্ভুদ এলিয়েন মানুষ তুমি।”
আয়ান মুচকি হেসে বললো, - তুমি তো জানোই মেয়েদের সাথে কথা বলতে আমার লজ্জা করে। ভার্সিটিতে তুমি আর তানিয়া ছাড়া আর কোনো মেয়ের সাথে কথা বলতাম না।”
তানিয়ার নাম শুনে মানহা আয়ানকে বললো, - আয়ান তোমাকে কিছু কথা বলার ছিল তানিয়ার ব্যাপারে?”
- হুম বলো?”
- চলো অন্য কোথায় গিয়ে বসি।”
- হুম।”
কালো গাড়ি খুব জোড়ে চালিয়ে ভার্সিটির গেইট দিয়ে প্রবেশ করছে আরিয়ান। সাথের সিটে বসে বসে শিস বাজাচ্ছে নাহিদ। আরিয়ান গাড়ি থেকে নামতেই একটা মেয়ে সবার সামনে আরিয়ানের হাত ধরে টেনে নিয়ে যাচ্ছে।
- তানু কি হয়েছে তোর? এইভাবে রেগে আছিস কেনো?”
তানিয়া কিছু বলছে না। আরিয়ানকে টেনে মাঠের মধ্যে নিয়ে আসে। - কি হয়েছে বলবি তো আগে?”
- এই ছেলে আজ সবার সামনে আমায় প্রপোজ করেছে। তুই যদি এই ছেলের শাস্তি আজ না দিবি তাহলে কোনোদিন কথা বলবি না আমার সাথে।”
আরিয়ান জানে তানিয়ার রাগ উঠলে যখন সে যেটা বলে তাই করতে হয়। তাই আরিয়ান ছেলেটির সামনে গিয়ে অনেক মানুষের সামনে চড় মারে ছেলেটিকে। - আমি এক কথা কতবার বলবো? এর আগেও অনেকজন কে বলেছি কেউ তানিয়াকে বিরক্ত করবে না তবুও সেই একই কাজ। আজ শেষ বারের মতো বলছি এই রকম নালিশ যদি আরো কারো নামে আসে তাহলে জীবন নিয়ে বাঁচতে পারবে না।”
আরিয়ানের চড়া কথায় তানিয়া খুশিতে মাঠ ভর্তি মানুষের সামনে জড়িয়ে ধরে। খুশিতে সে পাগল হয়ে যাওয়ার উপক্রম। - আমি জানতাম তুই আমার অপমান সহ্য করবি না তাইতো সেই কখন থেকে ছেলেটাকে এইখানে দাঁড় করিয়ে রেখেছি তোর অপেক্ষায়। লাভ ইউ দোস্ত।”
- সুন্দরী মেয়েদের প্রপোজ করবে এই জন্য এতটা কঠোর হওয়া ঠিক না। বাই দা ওয়ে নাহিদ না আমার সাথে ছিলো কোথায় ও?”
হাতে রুমাল পেচিয়ে তানিয়াকে জিজ্ঞাসা করলো আরিয়ান। তানিয়া তখন বিরক্তি ভাব নিয়ে বললো, - ওর খবর জানিস না আস্ত বদ ছেলে দেখ কোথায় কোন মেয়ের পিছনে লেগেছে।”
- এই ছেলে একদিন মেয়েদের হাতে সেই লেবেলের মার খাবে দেখিস তুই।”
- প্রতিদিনই তো খাচ্ছে আবার কি খাবে।”
- এমন লুইচ্ছা মার্কা ফ্রেন্ড যে কেনো আমাদের কপালে জুটলো আল্লাহ!”
- ওর কাজ ও করুক গিয়া। শুন আমরা অনেকদিন ধরে কোথাও ঘুরতে যেতে পারছি না তাই ভাবছি কিছুদিনের জন্য কোথাও ঘুরতে যাবো।”
- চল স্যারকে বলে আসি আমরা ট্যুরে যাবো। ট্যুরের অর্ধেক খরচ আমার।”
- ভালো হবে। সবাই একসাথে ঘুরা হবে। আচ্ছা শুধু কি আমাদের ডিপার্টমেন্টের এরাই যাবে নাকি অন্য ডিপার্টমেন্টের এরাও যাবে?”
- বলা হবে সব ডিপার্টমেন্টের এখন যারা যাবে তারা তো যাবেই।”
- হুম চল।”
আরিয়ান তানিয়া বারান্দা দিয়ে যেতে নিলে আরিয়ান একটি ছেলের সাথে ধাক্কা খায়। ছেলেটির হাতে থাকা সব বই নিচে পরে যায়। ছেলেটি তখন বই গুলো কুড়িয়ে আরিয়ানকে দেখে বলে।
- দেখে চলতে পারিস না। এমনি এসে ধাক্কা দিয়ে বই ফেলে দিলি এখন বই গুলো তুলতেও সাহায্য করছিস না এমনকি সরিও বলছিস না।”
- ওই বই পোকা চুপ থাক তুই? সারাদিন শুধু পড়া আর পড়া। বলি এত পরে কি করবি তুই মহা পণ্ডিত হয়ে যাবি নাকি আজব প্রাণী একটা।”
- তানিয়া তুমি জানো না আমি বই পড়তে খুব ভালোবাসি। তোমাদের মতো ঘুরাঘুরি করতে আমার ভালো লাগে না।”
- তানিয়া অফ যা। শুন আয়ান আমরা ট্যুরে যাচ্ছি তুই কি যাবি? জানি তোর ঘুরতে ভালো লাগে না তবুও আমাদের দায়িত্ব তোকে বলা বলে দিলাম এখন তোর উইশ।”
- নাহ রে যাবো না আমার প্রচুর পড়ার চাপ আছে। এইবার তোরা যা অন্য বারে আমি যাবো।”
তানিয়া তখন বললো, - ভাই তুই আর এই কথা বলিস না তো। তাহলে ভাই আমাদের ট্যুরের অপমান হবে। তুই তো সব সময় ওই এক ডায়লগ বলিস।”
- তানিয়া চল এই এলিয়েনের সাথে কথা বললে আরো মাথা নস্ট হয়ে যাবে। শালার মন বলে কিছু নেই আছে শুধু পড়া আর পড়া।”
- হুম চল।”
আরিয়ান ও তানিয়া স্যারের সাথে কথা বলে সব ঠিক করে আসলো। দুইজন কথা বলতে বলতে যাচ্ছে তখনি আরিয়ান দাঁড়িয়ে যায়।
- কি হয়েছে?”
- এই মাত্র এই রাস্তা দিয়ে নাহিদ গিয়েছে?”
- যৌতিশি হয়ে গেলি নাকি?”
- নাহিদের পারফিউমের ঘ্রাণ পাচ্ছিস না?”
তানিয়া কিছুক্ষণ শুকতে লাগলো। - আরেহ হতে পারে অন্য কেউ দিয়েছে।”
- শুন এমন বাজে পারফিউম এক মাত্র নাহিদ ইউজ করে। পৃথিবীতে আর কেউ না ওকে।”
- কথাটা মন্দ না আরু। চল ঘ্রাণ শুকে খুঁজি ওইটাকে পরে কেউ মেরে রাস্তায় ফেলে দিবে।”
- হাহাহা চল।”
আয়ান লাইব্রেরী রুমে বসে বসে পড়ছে। তখনি একটা মেয়ে এসে আয়ানকে ডাক দিলো।
- মানহা তুমি আজ দেরি করে আসলে কেনো?”
- আর বলো না রাস্তায় কি জ্যাম।”
- ওহহ। বসে পরো আজ প্রথম ক্লাস হবে না আমাদের তাই বসে বসে ম্যাথ করছি। তুমি ক্লাস করবে না?”
- আমাদেরও আজ ক্লাস হবে না বলে গিয়েছে ডিপার্টমেন্টের প্রধান। ওই ব্যাপার কি গো জানো কিছু?”
- মনে হয় ট্যুরে যাওয়া নিয়ে মিটিং হচ্ছে।”
- ওয়াও ট্যুরে নিয়ে যাবে?”
- তুমি যেতে চাও?”
- অবশ্যই।”
- ওকে যাও।”
- তুমি যাবে না?”
- উহু।”
- কেনো যাবে না?”
- পড়ার চাপ অনেক।”
- সারাদিন পড়ো তবুও বলছো পড়ার চাপ বলি তোমার মাথায় কি পড়া ছাড়া আর কিছু ঢুকে না।”
মানহা কথাটা জোড়ে বললো, আয়ান ওর আশে পাশে দেখে মানহা কে ফিসফিস করে বলছে। - আস্তে আস্তে কথা বলো দেখো মেয়েরা কিভাবে তাকিয়ে আছে আমার কিন্তু ভীষণ লজ্জা করছে।”
আয়ানের কথায় মানহা কপালে হাত রেখে বললো, - এই সন্ন্যাসীকে নিয়ে যে আমি কি করবো। শুনো তোমার যেতে হবে আমার সাথে। তুমি তো জানো তুমি ছাড়া আমার কোনো ভালো ফ্রেন্ড নাই। যদিও বা আমরা দুজন আলাদা ডিপার্টমেন্টে তবুও আমাদের ফ্রেন্ডশীপটা খুব ভালো।”
- কেনো তোমার ডিপার্টমেন্টের তোমার কোনো ফ্রেন্ড নাই?”
- আছে বাট কেউ তোমার মত অদ্ভুত মানুষ না। তোমার কোনো ফ্রেন্ড নাই?”
- হুম তিনজন আছে।”
- কই তুমি তো এই ছয় মাসে তোমার কোনো ফ্রেন্ডের কথা বলো নাই আমাকে এমনকি মিট পর্যন্ত করাও নি।”
- ওই যে আমি অদ্ভুত প্রাণী তাই তো এমন।”
মানহা মুখ বাঁকা করে রইলো। মানহা যখন প্রথম বর্ষে ভর্তি হয় তখন সে ভার্সিটি শুধু পরীক্ষার সময় আসতো। সেকেন্ড ইয়ারে উঠার পর পরীক্ষা ছাড়াও মাঝে মধ্যে আসতো আর যখনই লাইব্রেরীতে আসতো দেখতো একটা ছেলে বই পড়ছে। সাথে নাই কোনো বন্ধু। কারো সাথে কথা বলতো না। মাঝে মাঝে মানহা কথা বলতে চাইলে বইয়ের দিকে তাকিয়েই উত্তর দিতো। মানহার বেশ ভালো লাগতো তার জন্য প্রতিদিন আসা শুরু করলো ভার্সিটিতে। আয়ানও ধীরে ধীরে কথা বলতে থাকে মানহার সাথে। ছয় মাস ধরে তাদের ফ্রেন্ডশিপ চলছে। আয়ান খুব অদ্ভুত ধরনের মানুষ। পড়ালেখা ছাড়া বেশি কথা বলে না। মানহা তার বাসার সব কথা বলতো। রাস্তায় কি হয়েছে সব বলতো আয়ান শুধু শুনতো মাঝে মাঝে মুচকি হাঁসতো।
- তোমাকে কোথায় যেনো দেখেছি?”
- সরি, আপনার সাথে আমার আগেও কোথাও দেখা হয়েছে বলে মনে হচ্ছে না।”
- এই দেখা সেই দেখা নয় গো প্রিয়তমা। এই দেখা মনের দেখা।”
- আপনি কি পাবনা থেকে পালিয়ে এসেছেন মিস্টার?”
- শুধু মাত্র তোমার জন্য। পড়েনা চোখের পলক কি তোমার রূপের জলক।”
- তোকে চড় মারিবো নাকি উষ্টা মারবো বাঁচাতে আসবে না তো কেউ।”
নাহিদ এতক্ষণ একটা মেয়ের সাথে কথা বলছিলো। মেয়েটাকে বিরক্ত করার পর যখন গান গাইছিল তখন পিছন থেকে আরিয়ান গাওয়া শুরু করে। নাহিদ আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে মেয়েটার দিকে তাকিয়ে বলে। - আবার দেখা হবে বেবি উম্মাহ যাও।”
নাহিদ মাথায় হাত দিয়ে চুল গুলো কিছুটা নাড়িয়ে আরিয়ানের সামনে যায়।
- তুই কোনোদিন ঠিক হবি না তাই না?”
- আমি তো ঠিকই আছি কিন্তু তুই ব্যাটা ঠিক নাই। তোর কপালে বউ জুটবে না দেখিস।”
- সেইটা দেখা যাবে এখন চল।”
- হুম চল আমিও চলি। দেখবি চলতে চলতে একদিন আরো সামনে পৌঁছে যাবো।”
- শালা মাতাল কয় বোতল শেষ করছিস?”
- বেশি না। তোর ভয়ে তো দুই গ্লাস খেয়ে চলে আসছি।”
- এইসব ফ্রেন্ড শুধু আমার কপালেই জুটে। একজন বইপোকা, একজন আনরোমান্টিক আরেকটা তো মাতাল। শালার কপাল খারাপ থাকলে যা হয় এই আর কি!”
তানিয়ার কথায় আরিয়ান নাহিদ হাসতে থাকে। তিনজন মিলে ট্যুরে কি কি করবে তা ঠিক করতে লাগলো।
ট্যুরে যাবে সবাই বাসে করে। আয়ানকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে মানহা। সবাইকে বলা হয়েছে ভার্সিটির মাঠে এসে অপেক্ষা করতে। মানহা বাসা থেকে বের হয়ে বাসে উঠে ভার্সিটিতে যাচ্ছে ঠিক তখনই।
পর্ব ২২
ট্যুরে যাবে সবাই বাসে করে। আয়ানকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে মানহা। সবাইকে বলা হয়েছে ভার্সিটির মাঠে এসে অপেক্ষা করতে। মানহা বাসা থেকে বের হয়ে বাসে উঠে ভার্সিটিতে যাচ্ছে ঠিক তখনই তার ওরনা বাতাসের বেগে পিছনে ছুটতে লাগলো। হাত দিয়ে বার বার ঠিক করতে লাগলো কিন্তু অবাধ্য বাতাস তা হতে দিচ্ছে না।
- এই যে মিস যদি ওরনা সামলাতে না পারেন তাহলে ওরনা পড়েন কেনো?”
মানহা না দেখেই বলা শুরু করলো। - সামলাতে না পারলে তো পড়তাম না তাই না?”
- কোথায় সামলাতে পারছেন? দেখুন ওরনা এখনও আমার মুখ ঢেকে রেখেছে।”
মানহা তার পিছনের সিটে তাকালো। জানালা দিয়ে ওরনা পাশের জানালা দিয়ে একটা ছেলের মাথা মুখ ঢেকে রেখেছে। - ওরনা তাহলে আপনি ধরে টানছিলেন তাই না?”
- কি আজিব তো আপনি? দেখতেই পারছেন ওরনা আমার উপরে এসে বার বার পড়ছে এখন বলছেন আমি আপনার ওরনা ধরে টানছি।”
- শুনুন মিষ্টার আমার ওরনা যদি সত্যিই উড়তো তাহলে অবশ্যই ওরনা বাহিরে থাকতো আপনার মুখে না ওকে।”
- বাহ চালাক তো খুব!”
- কেনো বোকা ভেবেছেন নাকি?”
- কি ঝগড়ুতে মেয়ে গো বাবা। বাই দা ওয়ে এত মানুষের ভিড়ে যাতায়াত করতে কষ্ট হয় না আপনার?”
- উহু। কেনো আপনার কষ্ট হয়?”
- রাস্তায় গাড়ি খারাপ হওয়ায় এইসব থার্ড ক্লাস বাসে উঠেছি। যদি জানতাম তাহলে জীবনেও বসতাম না।”
- ইহহহ আসছে আমার বড়লোক্স মানুষ।”
- ঝগড়ুতে নাম্বার ওয়ান।”
- শুনুন একবার ঝগড়ুতে বলেছেন কিছু বলি নাই যদি আরেকবার বলেন তাহলে খুন করে গুম করে ফেলবো।”
- বাহ কি সাহস।”
ছেলেটি এক টানে মানহার ওরনা ধরে টান দিয়ে হাতে পেঁচিয়ে ফেলে। - বাসে বসে একটা মেয়ের ওরনা টান দিতে লজ্জা করে না অসভ্য ছেলে।”
- লজ্জা কি গো খায় না মাথায় দেয় যদি একটু বুঝিয়ে বলতেন খুবই উপকৃত হতাম।”
- আজব লোক।”
মানহা রাগে আর পিছনে ফিরলো না। চুল গুলো সামনে এনে ছেড়ে দিলো। বাতাসে এখন তার চুলগুলোও উড়ছে।
- ওরনার মতো চুলগুলো বড় থাকলে এখন হয়তো চুলগুলোও আমার হাতের মুঠোয় থাকতো।”
মানহা চুপচাপ কথাগুলো হজম করছে। পাবলিক প্লেসে কিছু হোক তা সে চায় না। অনেক কষ্টে নিজেকে কন্ট্রোল করতে লাগলো সে।
বাস থেকে ভার্সিটির সামনে নামলো। সামনে কিছুটা যেতেই ডাক দিলো সেই ছেলেটা। - এই যে মিস।!”
- ওই আপনি কি আমায় ফলো করছেন?”
মানহা আঙ্গুল সামনে নিয়ে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলো। ছেলেটা মানহার হাতের আঙ্গুল ধরে বললো,
- আজ পর্যন্ত কেউ এই আরিয়ানের দিকে উচু গলায় কথা বলে নাই আর তুমি কি না আমায় আঙ্গুল দেখিয়ে কথা বলছো। ফাস্ট টাইম বলে ক্ষমা করে দিলাম।”
- আমি কোনো ভুল করেনি যে আপনি আমায় ক্ষমা করবেন। ভুল তো করেছেন আপনি?”
- তোমার মতো ঝগড়ুতে মেয়ের সাথে কথা বলার কোনো ইচ্ছা নাই। নেও তোমার ওরনা। আর শুনো দুষ্টুমি করার জন্য সরি। একা একা বসে থাকতে থাকতে বোরিং ফিল করছিলাম তাই একটু মজা করেছি কিন্তু তুমি তো মজার ‘ম’ ই বুঝো না।”
আরিয়ান মানহার হাতে ওরনা দিয়ে ভার্সিটির ভিতরে যেতে লাগলো। মানহা আরিয়ানের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে থেকে সেও ভিতরে চলে গেলো। - বাহ আজ বইপোকা ট্যুরে যাচ্ছে। নাহিদ রে সূর্য কোন দিকে আজ উঠেছে?”
তানিয়া আয়ানকে দেখে নাহিদকে সাথে নিয়ে মজা করতে লাগলো। আশে পাশের অনেকেই আয়ানকে বাসে বসে থাকতে দেখে অবাক। - তানু ডার্লিং আমি মনে হয় স্বপ্ন দেখছি রে। আগামীকাল দুই বোতল শেষ করেছি তার জন্য হয়তো প্রভাব এখনও কাটে নাই মাথায় পানি ঢাল আমার।”
- ওই মজা নিবি না একদম। আমি আমার এক ফ্রেন্ডের কথায় এসেছি।”
তানিয়া আয়ানের পাশের সিটে বসে পরলো। কিছুক্ষণ আয়ানকে দেখে পরে বললো,
- তোর মতো সন্ন্যাসীর ফ্রেন্ড কে হলো রে? আমরা তিনজন ভালো মানুষ বলে তোকে দলে নিয়েছি। আর কেউ তো নেওয়ার কথা না।”
- যে নিয়েছে সে অন্য রকম তোমাদের মতো না। ও আমাকে কোনোদিন অপমান করে নাই তোমাদের মত।”
- দেখ তানু ডার্লিং এই বইপোকা আমাদের যাতা বলছে।”
- নাহিদ বাদ দে তো এইসব। দেখ এখনও আরু আসে নাই। ওর গাড়ি নষ্ট হয়ে গেছে বেচারা নাকি বাসে করে আসছে। ওয়েট আমি দেখে আসছি।”
তানিয়া বাস থেকে নেমে আরিয়ানকে খুঁজতে লাগলো। আশে পাশে ভালো করে না দেখেই হাঁটতে থাকে তানিয়া। - এই কি করছো দেখে তো যাবে।”
মানহা এসে তানিয়ার হাত ধরে। তানিয়া দাঁড়িয়ে যায়। কাদা মাটি সামনে দেখে তানিয়া মানহার দিকে তাকিয়ে বলে।
- ভাগ্যিস তুমি আমায় আটকিয়ে দিলে তানাহলে তো আমার আজ ট্যুরে যাওয়া হতো না। থ্যাংক ইউ।”
- স্বাগতম। আমিও তো যাচ্ছি।”
- ওয়াও চলো তাহলে পরিচিত হওয়া যাক।”
তানিয়া হাত বাড়িয়ে দিল। মানহাও খুশি হয়ে হাত বাড়িয়ে দিলো। কথা বলে বুঝতে পারলো ওরা একই ব্যাচের শুধু ডিপার্টমেন্ট আলাদা। তানিয়া আরিয়ানকে আর না খুঁজে মানহা কে নিয়ে বাসে উঠে বসে। আয়ান মানহা কে হাত দিয়ে ইশারা করে। - এই যে আমার সেই ফ্রেন্ড মানহা।”
তানিয়া তো অবাক মানহা আয়ানের ফ্রেন্ড। মানহাও খুব অবাক হলো। নাহিদের সাথে পরিচয় হতে নিলে মানহা বড় সরো একটা শক খায় কেননা এই নাহিদ তাকে স্কুল লাইফে জ্বালিয়ে পুড়িয়েছে। প্রতিদিন স্কুলের সামনে কোচিং সেন্টারের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতো আর বিরক্ত করতো। নাহিদের জন্যই সে বেশি ভার্সিটিতে আসতো না। আজ সেই নাহিদেই তার বেস্ট ফ্রেন্ড আয়ান আর শুধু ফ্রেন্ড তানিয়ার বেস্ট ফ্রেন্ড। নাহিদ মানহা কে দেখে না চিনার ভাব করলো।
- হায় আমি নাহিদ।”
- আসসালামু আলাইকুম ভাইয়া। আমার নাম মানহা।”
মানহার এমন অপমানজনক কথায় লজ্জা পেয়ে আর কথা বললো না নাহিদ। তানিয়া তো হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছে।
আয়ানের সাথে মানহা বসেছে। নাহিদ তানিয়া একসাথে। সামনের সিট আরিয়ানের জন্য রাখা। বেশ কিছুক্ষণ পর আরিয়ান আসলো। মানহা ও আরিয়ান দুইজন দুইজনকে দেখে অবাক। আয়ান তাদের ফ্রেন্ডশিপের কথা বললো, তানিয়া তার অন্যমনস্ক ঘটনার কথা বললো, আরিয়ান তার ঝগড়া করার কথা বললো, নাহিদ চুপ করেই রইলো। মানহা কে যে ও কি বিরক্ত করেছে তা যদি আরিয়ান জানে এক্ষুনি খুন করবে।
নাহিদ একবার মানহা কে কিডন্যাপ করার কথাও ভেবেছিলো। এই কথা যদি মানহা বলে তাহলে নাহিদ শেষ সেই ভয়ে সে চুপ করেই রইলো।
আড্ডা মজা করেই তারা পৌঁছালো বাংলার তাজমহলে। বাংলার তাজমহল বলতে ভারতের আগ্রার তাজমহল নয়। বাংলাদেশেই গড়ে তোলা একটি ভ্রমণ প্রেমী মানুষদের জন্য সুন্দর স্থান। ঢাকা থেকে ১০ মাইল পূর্বে সোনারগাঁয়ের জামপুর ইউনিয়নের পেরাব গ্রামে অবস্থিত এটি। এটি তৈরি করতে প্রায় ৫ বছর সময় লাগে এবং এটি ব্যক্তি-মালিকানাধীন। এটি প্রায় ১৮ বিঘা জমির উপর অবস্থিত। আশেপাশে আরও ৫২ বিঘা জমি আছে পর্যটনের জন্য। এখানে দেখা যাবে চারপাশের সুন্দর আর মনোরম পরিবেশ, হাজার হাজার নাম না জানা পাখির কিচিরমিচির করা বিকেল আপনার মন ভালো করে দিবে। তাজমহলের নির্মাণ কাজের জন্য ব্যবহার করা হয়েছে বিদেশী উপকরণ যেমন ১৭২টি কৃত্রিম ডায়মন্ড, ব্যবহার করা হয়েছে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি। নির্মাণ কাজে ৬ জন টেকনিশিয়ানদের নিয়োগ দেওয়া হয়। ভারতের তাজমহলকে অনুসরণ করা হয়েছে বলে নির্মাতাকে ভারতে যেতে হয়েছে অনেকবার।
তাজমহলের আশেপাশে ফুলের বাগান আর নিরিবিলিতে বসার স্থান রয়েছে অনেক। তাজমহলটির ভেতরের মূল মহল দারুণ সব পাথর দিয়ে মোড়ানো আর টাইলস করা। মহলের ভেতরে আহসানউল্লাহ্ মনি ও তার স্ত্রী রাজিয়া দু’জনের কবরের স্থান সংরক্ষিত আছে। “বাংলার তাজমহল” এ আগ্রার তাজমহলের মতোই চার কোণে চারটি বড় মিনার রয়েছে।
তাজমহলের ভেতরে আরও রয়েছে “রাজমনি ফিল্ম সিটি স্টুডিও”। তাজমহলের বাইরে রয়েছে “রাজমনি ফিল্ম সিটি রেস্তোরাঁ”, আরও বিভিন্ন খাবারের দোকান, হোটেল, আবাসিক ভবন, জামদানি শাড়ির দোকান, হস্তশিল্প সামগ্রী, মাটির গহনা সহ আরও অন্যান্য পণ্য সামগ্রীর দোকান। এর আশেপাশে রয়েছে বিভিন্ন পিকনিক স্পট।
আরিয়ানের বেশ পছন্দের একটি স্থান হলো বাংলার তাজমহল।
তানিয়া ছবি তুলতে ব্যাস্ত। নাহিদ সে তো আছে সেই মেয়ে নিয়ে। কত কত গার্লফ্রেন্ড নিয়ে এসেছে সে। আয়ান ও তো তাজমহলের সামনে সিড়িতে বসে পড়ছে। মানহা অনেক্ষণ ধরে ডাকছে কিন্তু সে শুনছে না। আরিয়ান তখন মানহার পিছন থেকে এসে ভয় দেখালো।
- ভাওউউউ।”
- মোটেও ভয় পায় নি আমি।”
- তোমার মত ঝগড়ুতে মেয়েরা ভয় কমেই পায়।”
- খবরদার আমাকে মোটেও ঝগড়ুতে বলবেন না।”
- স্টপ আর শুনতে চাচ্ছি না। চলো আমরা ঘুরাঘুরি করি।”
- হুম চলেন এইভাবে থাকতে থাকতে মনে হচ্ছে ঘুরতে আসাটা ভুল হয়েছে।”
- যার সাথে এসেছো সে তো একটা এলিয়েন। ওর সাথে মানুষ যায় কোথাও?”
–” আমারও তাই মনে হচ্ছে। চলুন এখন।”
পাশাপাশি হাঁটছে দুইজন। মাঝে মাঝে মানহা সেলফি নিচ্ছে। হাঁটতে হাঁটতে তাদের মাঝে বেশ কথা হয়। অনেকটা ফ্রী হয়ে যায় তারা। আরিয়ান ফুল গাছ থেকে একটা ফুল এনে মানহার চুলে লাগিয়ে দিয়ে বললো,
- এইবার ঠিক হয়েছে। বড় চুল খুলা রাখলে ভালো লাগে সাথে যদি বেলী ফুল থাকে না অফ কি জোস। এখন যেহেতু বেলী ফুলের মালা পাবো না তাই এইসব ফুল দিয়েই কাজ সারতে হয় বুঝেছ মায়াবতী।”
- বাহ আপনি তো দেখছি খুব সুন্দর করে গুছিয়ে কথা বলতে পারেন। এখন দেখছি ভালো নিকনেমও দিতে পারেন। তাহলে তানিয়া যে বললো আপনি আনরোমান্টিক আমি তো আপনার মাঝে আনরোমান্টিকতার কোনো স্পর্শ পাচ্ছি না সব রোমান্টিকতার ছোঁয়া পাচ্ছি।”
- এতদিন তো তোমার সাথে পরিচয় হয় নি তাই রোমান্টিকতার ভাব আমার মাঝে আসে নাই। আজ দেখা হলো আজ চলে এসেছে।”
- বাহ বাহ।”
আরিয়ানের মনে মানহার প্রতি অন্য অনুভূতি সৃষ্টি হলো যা এতদিন কারো প্রতি হয়নী। মানহারও যে খারাপ লেগেছে তা কিন্তু না। ওরো আরিয়ানের সাথে কথা বলে বেশ লাগলো।
ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্ব থেকে অন্য কিছুতে পরিণত হলো। একদিন তানিয়া নাহিদ ও আয়ানের সামনে আরিয়ান মানহা কে প্রপোজ করে। মানহাও অ্যাকসেপ্ট করে সেই প্রপোজ। সেইদিন থেকে মানহা হলো তানিয়ার চোখের বালি। মানহা কে সেইদিন থেকেই ঘৃনা করতে শুরু করে। তাই একদিন নাহিদের বাসায় গিয়ে তানিয়া।
পর্ব ২৩
(১৮+ এলার্ট)
ধীরে ধীরে তাদের সম্পর্ক বন্ধুত্ব থেকে অন্য কিছুতে পরিণত হলো। একদিন তানিয়া নাহিদ ও আয়ানের সামনে আরিয়ান মানহা কে প্রপোজ করে। মানহাও অ্যাকসেপ্ট করে সেই প্রপোজ। সেইদিন থেকে মানহা হলো তানিয়ার চোখের বালি। মানহা কে সেইদিন থেকেই ঘৃনা করতে শুরু করে। তাই একদিন নাহিদের বাসায় গিয়ে তানিয়া নাহিদ কে বললো,
- মানহার এত বড় সাহস ও কিনা আমার আরুর দিকে নজর দিয়েছে আমি তো ওকে খুন করে ফেলবো।”
- তুই যে আরিয়ানকে ভালোবাসিস এতদিন বললি না কেনো আরিয়ানকে?”
- সময় আসলে ঠিকই বলতাম। কিন্তু মাঝ পথে এই মানহা কেনো আসলো?”
- এখন কি করবি তুই?”
- মানহা কে রাস্তা থেকে সরাতে হবে।”
- তোকে একটা কথা বলা হয় নাই। মানহা কে আমি একটা সময় পছন্দ করতাম কিন্তু ওই মেয়ে আমায় রিজেক্ট করেছে।”
- তুই বিয়ে করবি মানহাকে!”
- শুন ওকে পছন্দ করতাম এই বলে বিয়ে অসম্ভব।”
- শুন বিয়ে কি তুই সারাজীবনের জন্য করবি নাকি পরে ডিভোর্স দিয়ে দিবি।”
- বিয়ে কোনো পুতুল খেলা না তানু, তাছাড়া মানহা জীবনেও রাজি হবে না।”
- আমি যখন যা চাই তাই হয়। এখন বল তুই কি আমায় সাহায্য করবি কিনা?”
- মানহাকে শাস্তি দেওয়ার জন্য সব কিছু করতে পারবো আমি।”
- তাহলে প্ল্যান শুন।”
- হুম।”
আরিয়ান পিছন থেকে মানহার দুই হাত তার হাতের মুঠোয় ধরে রেখেছে। মানহার চুল বার বার আরিয়ানের মুখে এসে পড়ছে। ওয়াচ টাওয়ারের একদম উপরে দাঁড়িয়ে আছে তারা। উপরের দিকটায় তারা দুজন ছাড়া আর কেউ নেই। এত উপর থেকে সব কিছু একদম পিচ্ছি পিচ্ছি লাগছে। মানহা ভয়ে চোখ বন্ধ করে রেখেছে।
- আমি থাকতে এত ভয় কিসের তোমার?”
- আমি উচুঁ জায়গা থেকে নিচে তাকাতে পারি বড্ড ভয় করে আমার।”
- আমার মায়াবতী তো ভীতু না। আজ তার আরিয়ান তার পাশে আছে তাহলে কিসের এত ভয়?”
- আমি জানি না কিছু। নিচের দিকে তাকালেই আমার আত্মা শুকিয়ে যায়। মনে হয় আমি পরে যাচ্ছি।”
- এই পাগলী আমি আছি না। ভয় কিসের হুম? চোখ খুলে দেখো।”
- পারবো না ভয় করছে।”
- আমার কথা শুনবে না তুমি?”
- এই তুমিই আমাকে কোনো একদিন হার্ট অ্যাটাক করিয়ে মারবে বলে দিলাম আমি।”
- হাহাহা। যা বলছি তাই করো এখন।”
মানহা চোখ খুলে সামনে তাকিয়ে ভয়ে পিছন ফিরে আরিয়ানকে জড়িয়ে ধরে। আরিয়ান মানহার চুলে হাত বুলিয়ে দিয়ে মানহা কে উল্টো ঘুরিয়ে ধীরে ধীরে চোখ খুলতে বলে। মানহা আবারো চোখ খুললো। ভয়ে সে আরিয়ানের হাত খামচে ধরলো। - আহহ মেরে ফেলতে চাও নাকি?”
- আমি মনে হয় এলিয়েন যার পাহাড়ে উঠার কোনো ইচ্ছা নাই।”
- আকাশের দিকে তাকাও।”
মানহা আকাশের দিকে তাকালো। আকাশটা গাঢ় নীল হয়ে আছে তার মাঝে সাদা মেঘ। মানহা আকাশ দেখে খুশিতে নাচতে লাগলো। - আজকের আকাশটা এতো সুন্দর কেনো?”
- আজকের আকাশে তোমার আমার ভালোবাসা জড়িয়ে আছে তাই।”
মানহা বাঁকা চোখে তাকিয়ে বললো, - সব সময় ফাইযলামি তাই না?”
- মোটেও না।”
আরিয়ান মানহার মাথা তার বুকে নিয়ে বললো, - কান পেতে শুনো তো কিছু বুঝতে পারছো নাকি?”
- ধুক ধুক শব্দ হচ্ছে।”
- আরেহ পাগলী এইটা হার্ট বিট। তোমাকে এত কাছে পেয়ে স্পন্ধন বেড়ে যাচ্ছে।”
মানহা মুচকি হাসলো। আরিয়ান তখন মানহার মুচকি হাসি দেখে বললো, - ‘Dorothy Dix’ ঠিক বলেছেন ‘মহিলাদের অস্ত্রাগারে হাসির মতো আর কোনো বড় অস্ত্র নেই যার আগে সকল পুরুষ এতটা অসহায় হয়ে পরে’ তোমার ওই হাসিই আমাকে খুন করতে পারে।”
- হিহিহিহি।”
–” আর হেসো না গো পাখি।”
আরিয়ানের কথায় মানহা খিলখিল করে হাসতে থাকে। আরিয়ান তাকিয়ে থাকে মানহার দিকে।
এইভাবে চলতে থাকে অনেক মাস। নাহিদ ও তানিয়া কিছুই করতে পারছে না। হটাৎ একদিন তানিয়া নাহিদকে নিয়ে আরেকটা প্ল্যান করে।
- শুন আগামীকাল আমি মানহা কে একা আমার বাসায় আসতে বলবো। আরিয়ানের বার্থ ডে উপলক্ষে প্ল্যান করবো বলে ওকে নিয়ে আসবো। আমি ওর খাবারে ঘুমের ওষুধ আর নেশার ওষুধ মিশিয়ে দিবো পরে তোর আর ওর কিছু পিক তুলবো। মানহা কে এমন ভাবে ফাঁসাবো না মানহা নিজেই আরিয়ানের থেকে দূরে সরে যাবে।”
- তাহলে আর বিয়ে কেনো করবো? কালকেই না হয় ওর সাথে আমি।”
- চুপ একদম চুপ। ওইসব কিছুই হবে না আর বিয়ে তো তোকে করতে হবে। আরিয়ান জানবে মানহা ওর সাথে বিশ্বাঘাতকতা করেছে। মানহা জানবে ওর ভিডিও আছে। সব শুধু প্ল্যান। তোর মাথায় যদি খারাপ উদ্দেশ্য থাকে তাহলে ঝেড়ে ফেলে দে এক্ষুনি ওকে।”
- হুহহ ওকে।”
ওদের প্ল্যান মতো পরেরদিন মানহাকে নিয়ে আসে বাসায়। খাবারে কিছু একটা মিশিয়ে দেয় তানিয়া। মানহা প্রথম নেশার ঘোরে পাগলামি করে আর সেই পাগলামির সুযোগ নেয় তানিয়া। তানিয়ার কাজ শেষ হলে নাহিদকে বাসায় পাঠিয়ে দেয় তানিয়া। নাহিদ যে কি রকম ছেলে তানিয়া জানে তাই রীকস নিতে চায় না ও। ।
আরিয়ানের বার্থ ডে আরিয়ান মানহার ম্যাসেজের জন্য ওয়েট করছে কিন্তু মানহার কোনো খবর নেই। আরিয়ান মানহার ফোনে কল দিল কিন্তু বন্ধ। মানহার বাসায় যাওয়াটা ঠিক হবে না ভেবে সেই রাত আরিয়ানের ভালো ঘুম হলো না।
সকালে মানহার ঘুম ভেংগে যায় নিজেকে তানিয়ার বাসায় দেখে অবাক হয়।
- তাহলে তোর ঘুম ভাঙলো।”
- তানু কি হয়েছে আমার। আমি তোর বাসায় ছিলাম রাতে?”
- এখনও কিছু হয় নাই তোর কিন্তু হবে!”
- মানে?”
- ছিঃ তুই এত খারাপ। গতকাল নাহিদের সাথে কি করেছিস তুই?”
- কি করেছি আমি।”
- তোর সামনে পিক গুলো রাখা দেখ।”
মানহা পিক গুলো দেখে আকাশ থেকে পড়ল মনে হয়।
- এইগুলো কখন কিভাবে হলো? আমি কিছু জানি না তানু।”
মানহা কান্না করতে থাকে। তানিয়া তখন আবারো বলা শুরু করে। - ছিঃ ছিঃ মানহা আরিয়ানকে এইভাবে ঠকানো ঠিক হয় নাই তোর। আরিয়ানের সাথে রিলেশন করে নাহিদের সাথে তুই ছিঃ বলতেও লজ্জা হয় আমার।”
- আমি এইসব কিছু জানি না তানু ট্রাস্ট মী।”
- ছিঃ ছিঃ বেবি তুমি এতটা মিথ্যাবাদী আমার জানা ছিলো না।”
নাহিদ বাহির থেকে এসে বললো, মানহা রাগে নাহিদের কলার চেপে ধরে। - তুমি এইসব করেছো আমার সাথে তাই না? তোমাকে আমি পুলিশে দিবো। আরিয়ান কে সব বলে দিবো আমি।”
- তাহলে ভিডিও আমি ভাইরাল করে দিবো। আরিয়ানের ফোনে দিবো। তোমার ফ্যামিলির কাছে পাঠাবো। পরে কি আরিয়ান তোমায় মেনে নিবে বেবি? তোমার ফ্যামিলি কি মানুষের সামনে মুখ দেখাতে পারবে?”
মানহা নাহিদকে ছেড়ে দিয়ে আবারো কাঁদতে থাকে। তানিয়া তখন মানহা কে বললো,
- একটা সমাধান আছে যার ফলে তোর ভিডিও ভাইরাল করবে না নাহিদ।”
- কি সমাধান?”
- তুই নাহিদকে বিয়ে কর তাহলে তোর সব সমস্যা সমাধান হবে।”
- অসম্ভব।”
- তানু তাহলে আমি ভিডিও ভাইরাল করে দিবো।”
- ও যদি ওর সমস্যা না বুঝে আমার কি তাতে? তুই ভাইরাল করে দে নাহিদ।”
- এইবার বুঝতে পারছি তুই আর নাহিদ মিলে আমার এত বড় সর্বনাশ করেছিস। ছিঃ তানু তোকে বেস্ট ফ্রেন্ড ভাবতেও আমার লজ্জা করছে। এই জন্য তুই গতকাল আমাকে এইখানে নিয়ে এসেছিস?”
- বাহ তুই তো খুব চালাক মানহা। হুম সব প্লেন আমার। তুই আমার আরিয়ানকে কেরে নিচ্ছিস তোকে কি করে ছার দেই বল।”
- আরিয়ান তোর মানে?”
- আমি আরিয়ানকে ভালোবাসি। কিন্তু তোর জন্য আরিয়ান আমার ভালোবাসা বুঝতে পারছে না তাই তোকে রাস্তা থেকে সরানোর জন্যই এই প্ল্যান আমার।”
- তানু ডার্লিং ওতো রাজি হচ্ছে না তাহলে কি আমি ভিডিওটা ভাইরাল করে দিবো?”
- নাহ তুমি এই কাজ করবে না। আমি রাজি তোমাকে বিয়ে করতে। আমার সর্বনাশ যেহেতু করে ফেলেছো আমি চাই না আমার এই শাস্তি আমার পরিবার বা আরিয়ান পাক। আমি রাজি তোমরা যা বলবে তাই করবো।”
- তাহলে চল আমাদের সাথে। আরিয়ানের বার্থ ডে উপলক্ষে তুই আজ আরিয়ানকে ব্রেকআপ করার গিফট করবি। বেচারা বড্ড সারপ্রাইজ হবে হাহাহা।”
তানিয়া ও নাহিদ হাসতে থাকে। তানিয়া একটা শাড়ি মানহার হাতে দিয়ে পড়তে বলে। তিনজন যায় আরিয়ানের বার্থ ডে পার্টিতে।
গতকাল রাতেই তানিয়া সব কিছু রেডি করে রাখে। বার্থ ডে পার্টিতে আরিয়ান, আয়ান, নাহিদ, তানিয়া ও মানহা থাকবে আর আরিয়ানের রিলেটিভ। আরিয়ানের রিলেটিভ বলতে হৃদয় ওই থাকবে।
মানহা কে দেখে আরিয়ান দৌড়ে মানহার কাছে যায়।
- ওই কোথায় ছিলে তুমি? জানো সারারাত ঘুম হয় নি আমার। তোমার চোখ মুখ এই অবস্থা কেনো?”
- তেমন কিছু না। চলো কেক কাটা যাক।”
- নাহ আগে বলো কি হয়েছে?”
- আরিয়ান শুনো তোমাকে কিছু কথা বলতে চাই। আমি তোমাকে ভালো ভালো ভালোবাসি না আমি নাহিদকে ভালোবাসি। আর আমরা কিছুদিনের মধ্যেই বিয়ে করতে চাই।”
মানহার কথা শুনে আরিয়ান মানহাকে সজোরে থাপ্পড় মারে। থাপ্পড় খেয়ে মানহা নিচে পরে যায়। তানিয়া তখন আরিয়ানকে ধরে আর চোখে ইশারা করে নাহিদকে। নাহিদ গিয়ে মানহাকে জড়িয়ে ধরে। - আরিয়ান তুই আমার হবু স্ত্রীর উপর হাত তুলতে পারিস না।”
- নাহিদ তুই আমার সামনে থেকে চলে যা তানাহলে তুই যে আমার ফ্রেন্ড তা কিন্তু আমি ভুলে যাবো।”
নাহিদ মানহার কানের কাছে ফিসফিস করে বলে। - শুনো আরিয়ানের হাতে মার খাওয়ার কোনো ইচ্ছা আমার নাই। তুমি পরিস্থিতি সামাল দেও। খবরদার আরিয়ান যেনো কিছু বুঝতে না পারে।”
নাহিদ চলে যায়। মানহা তখন আরিয়ানের সামনে গিয়ে সবার সামনে আরিয়ানকে চড় মারে। আরিয়ান গালে হাত দিয়ে মানহার দিকে তাকিয়ে থাকে। - শুনো রিলেশন সবাই করে এই জন্য কি বিয়ে করতে হয়? তোমার অনেক টাকা ছিলো তাই তোমার সাথে রিলেশন করি কিন্তু আমি নাহিদকেই বেশি ভালোবাসি। কিছুদিনের মধ্যেই আমরা বিয়ে করবো। এসে খেয়ে যেও বিয়ে। আর শুনো আমার লাইফে একদম আসবে না। তোমার মত অশুভকে আমি আমার লাইফে দেখতে চাই না ওকে।”
মানহার খুব কষ্ট হচ্ছে কথাগুলো বলতে কিন্তু তবুও বলতে হচ্ছে। আরিয়ানের চোখ দিয়ে পানি গড়িয়ে পড়ছে। আয়ান তখন মানহাকে এসে বললো, - তুমি ভুল বলছো। আরিয়ানের মত ছেলে হয় না। আরিয়ান যদি ভুল করে থাকে তাহলে নিজেরা কথা বলে ঠিক করে নাও। দূরে সরে যাওয়া কোনো সমাধান না মানহা।”
তানিয়া এইবার আয়ানের উপর ক্ষেপে গেলো। নাহিদকে ইশারা দিয়ে বললো আয়ানকে এইখান থেকে সরানোর জন্য। - শুন আয়ান তুই কোনোদিন প্রেম করিসনি তাই বুঝবি না। এইখান থেকে যা আমাদের সমাধান আমরা খুঁজতে পারবো।”
আয়ান চলে যায়। মানহা আরিয়ানকে অনেক কটু কথা শুনায়। আরিয়ান রেগে গিয়ে মানহার বাহু শক্ত করে ধরে বললো, - আমার সাথে এমন না করলেও পারতে তুমি? আজ থেকে এই আরিয়ানের জীবনে কোনো মেয়ে থাকবে না। মেয়ে মানেই বিশ্বাসঘতক। আমার সাথে এমন মিথ্যা অবিনয় না করলেও পারতে। আজ থেকে যদি আমি কাওকে ঘৃনা করি সেইটা একমাত্র তুমি। আমাকে অশুভ বলেছো না তুমি? আসল অশুভ তো তুমি। আজ থেকে তোমার ওই অশুভ মুখ আমি দেখতে চাই না। আর নাহিদ তুই আজ থেকে আমার কেউ না। আমার আশে পাশে যেনো তোকে আর না দেখি।”
আরিয়ান চলে যায় পিছনে হৃদয়। সব কিছুই হৃদয়ের মাথার উপর দিয়ে যাচ্ছে। আরিয়ান চলে যাওয়ার পর মানহা বসে পড়ে কাঁদতে থাকে। তানিয়া তখন মানহাকে বলে, ।
- খুব ভালো অভিনয় করতে পারিস রে তুই? দেখ আরিয়ান কেমন চলে গেলো। এই তানিয়া যা চায় তা ভালোভাবে না পেলে এইভাবেই আদায় করে নেয়।”
- কেনো করলে তোমরা আমার সাথে এমন। এই #মিথ্যা_অপবাদ নিয়ে বেঁচে থাকা সম্ভব না আমার পক্ষে। আরিয়ান আমায় ভুল বুঝলো। আমার ভালোবাসার প্রতি কোনো বিশ্বাস কি ওর নেই?”
- থাম তো তোর ওই সিনেমাটিক কথা শুনতে ইচ্ছুক না আমি। নাহিদ যা কিছু করবে এখন তুই কর আমি গিয়ে আরিয়ানকে বুঝিতে আসি। হাজার হোক হবু বর বলে কথা।”
তানিয়া চলে যায়। নাহিদ মানহাকে বাসায় পৌঁছে দিতে চেয়েছিলো কিন্তু মানহা যায়নি। ও নিজেই একা চলে যায়। কিছুদিন পর ওদের বিয়ে হয়। বিয়ের পর মানহা জানতে পারে ওর সাথে ওইসব কিছুই হয়নাই সব তানিয়ার প্ল্যান ছিল। সব জানা সত্বেও মানহা চুপ করে থাকে কেননা তার আর কিছুই করার নেই। সব শেষ এখন তার। নাহিদ এখন তার স্বামী। ওইদিনের পর থেকে আরিয়ানের সাথে মানহার আর যোগাযোগ ছিলো না। কিন্তু বর্তমানে সোনালীর মাধ্যমে তাদের আবারো যোগাযোগ হলো।
মানহা এতক্ষণ আয়ানকে তার সাথে ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলো বলছিলো। নাহিদের সাথে কেনো ডিভোর্স হলো সব বললো, তার মেয়ে মাওয়ার কথা বললো, আরিয়ান এখন তার বোনের স্বামী সব কিছু বললো, আয়ানের রাগে চোখ লাল হয়ে আছে। - তুমি এখন বলছো এই কথা? তোমার ভুলের জন্য আজ আরিয়ান তোমাকে ভুল বুঝে আছে। আমি আরিয়ানকে সব বলে দিবো।”
- প্লিজ আরিয়ানকে কিছু বলো না। তোমাকে বিশ্বাস করে সব কিছু বলেছি আমি প্লিজ সেই বিশ্বাসের দাম দিও।”
আয়ান কিছুক্ষণ নিজেকে কন্ট্রোল করে মানহাকে বললো, - তোমার মেয়ে অনেক্ষণ ধরে একা আছে চলো দেখে আসি।”
- হুম চলো।”
মানহা ও আয়ান রিসোর্টের ভিতরে চলে যায়।
অন্যদিকে আরিয়ান শাওয়ার নিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলো। সোনালী আরিয়ানকে দেখে ভ্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছে।
পর্ব ২৪
অন্যদিকে আরিয়ান শাওয়ার নিয়ে ওয়াশ রুম থেকে বের হলো। সোনালী আরিয়ানকে দেখে ভ্যাবলা কান্তের মতো তাকিয়ে আছে।
- আমি জানি আমি সুন্দর এইভাবে তাকিয়ে থাকার কি আছে?”
আরিয়ান জাস্ট তোয়ালে পরে আছে। ভেজা চুলগুলো হাত দিয়ে ঝেড়ে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
- সুন্দর না ছাই। আপনার লজ্জা করে না একটা মেয়ের সামনে এইভাবে অর্ধেক জামা কাপড় পড়ে আসতে।”
- শুনো আমি পাশের বাড়ির কোনো মেয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি না আমি আমার বিয়ে করা বউয়ের সামনে দাঁড়িয়ে আছি ওকে।”
- বিশ্বাস করেন রাসেল ভাই আমি কোনোদিন নিলজ্য মানুষ দেখেনি শুধু মাত্র লেখক আরিয়ানকে ছাড়া।”
- অপমান করছো নাকি সুনাম করছো?”
- আপনার মতো মানুষের সুনাম তাও আবার আমি কিভাবে ভাবলেন আপনি?”
- কেনো ভাবলে কি আমি ফাস টাকা পাবো?”
- প্লিজ দয়া করে ওই লাল মুরগির কথা বলবেন না। ওইটার নাম শুনলে আমার গা জ্বলে।”
- তাহলে তো আরো বেশি করে বলতে হবে।”
- আমি যাই বরং।”
- কেনো?”
- আমার লজ্জা করছে।”
- লজ্জা নারীর ভূষণ বাট এখন আপাতত আমি লজ্জার কিছু দেখছি বলে মনে হচ্ছে না!”
- আপনার লজ্জা নাই সেটা খুব ভালোই বুঝতে পারছি। যদি থাকতো তাহলে আমার সামনে এইভাবে আসতে পারতেন না।”
- আরিয়ান পারে না এমন কোনো কাজ আছে?”
- আপনি সব পারেন?”
- অফকোর্স।”
- তাহলে প্লিজ দয়া করে একটা ডিম পারুন। আপনি যদি এক বছর ধরে ডিম পারেন তাহলে খুব তাড়াতাড়ি আমরা বড়লোক হয়ে যাবো।”
- কথা খুব ভালোই শিখেছো।”
- কেনো বড় যেহেতু হয়েছি কথা ঠিকই বলবোউউউউউ।!”
সোনালী আর কিছু বলতে পারলো না। আরিয়ান সোনালীর ঠোঁট জোড়া দখল করে নিলো। সোনালীর চিন্তার বাহিরে এমন একটা কাজ হবে সোনালী স্বপ্নেও ভাবতে পারে নাই। প্রায় কয়েক মিনিট পর।
- ওয়াক থু থু কি করছেন ছিঃ ওয়াক।”
- ওই তুমি বমি করছো কেনো? নাকি আমি বাবা হতে যাচ্ছি?”
আরিয়ান চোখ টিপ দিয়ে বললো, - অসভ্য ছেলে কোথাকার। লজ্জা শরম সব জলে ভাসিয়ে দিয়েছেন নাকি?”
- তুমি কি লিপস্টিক ব্যবহার করো?”
- আমি লিপস্টিক দেই না।”
- মিষ্টি কেনো লাগলো?”
- সকালে মিষ্টি খেয়ে এসেছি তাই হয়তো লেগেছে।!”
সোনালী নিজের মুখে নিজেই হাত দিলো। আরিয়ান সোনালীর মুখ দেখে হাসতে থাকে। সোনালী বুঝতে পারলো আরিয়ান তাকে লজ্জা দেওয়ার জন্যই এমন কথা বলেছে। কাঁদো কাঁদো মুখ নিয়ে আরিয়ানের দিকে তাকিয়ে রইলো। - এইভাবে তাকিয়ে থেকে কোনো লাভ নেই। এরপর আরো যদি বেশি বকবক করো তাহলে কয়েক মিনিটের বদল অনেক মিনিট হবে বলে দিলাম।”
সোনালী আরিয়ানের কথা শুনে লজ্জা পেয়ে দৌড় দিলো। আরিয়ান সোনালীর দৌড় দেখে আবারো হাসিতে মগ্ন হতে থাকলো। - আজ তানিয়া আসবে। এইদিকে আমি আসামির মত এক জায়গায় বসে থাকি। একটু ঘুরতে পর্যন্ত যেতে পারি না। কতদিন হলো গার্লফ্রেন্ড ছাড়া আমি। একটা মানুষ কি এইভাবে বাঁচতে পারে? নাহ আজ বাহিরে না গেলে নয়। আরিয়ান সিলেট আসবে না আমি পাক্কা সিউর।”
নাহিদ এতক্ষণ হাতে গড়ি পরে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজে নিজেই কথা বলছিল। ও সিলেট আসা পর্যন্ত এখনও রুমের বাহিরে যাইনি। ওয়েটারকে বলে সব যাবতীয় কাজ রুমে বসেই করেছে সে। কিন্তু এখন আর রুম বন্ধী হয়ে থাকতে পারছে না সে। রুম থেকে বের হয়ে কিছুক্ষন ঘুরাঘুরি করছিলো সে। - কত ভালো লাগছে। রুমের ভিতর এইভাবে কি একা থাকা যায়।”
নাহিদ কথা বলতে বলতে এদিক ওদিক দেখছে তখনি সোনালীকে দেখে চমকে গেলো।
- ও মাই গড সোনালী এইখানে কেনো? তাহলে কি আরিয়ানও এইখানে? একটু পর তানিয়ার ফ্লাইট এক্ষুনি খবর দিতে হবে।”
নাহিদ তাড়াহুড়া করে আবারো নিজের রুমে চলে গেল যেনো সোনালী তাকে দেখতে না পায়। তানিয়াকে ফোন দিলো। - আমি আসছি বলছিনা। এত ফোন দিচ্ছিস কেনো?”
- আরিয়ান মনে হয় সিলেটে এসেছে।”
- হোয়াট?”
- সোনালীকে মাত্র দেখলাম। সোনালীকে একা আসতে দিবে না আরিয়ান তাহলে আরিয়ানও এসেছে।”
- ও মাই গড। এমন বোকার মত কাজ কিভাবে করিস তুই? আগেই বলেছি ও আরিয়ান। তোকে খুঁজে বের করা আরিয়ানের কাছে কোনো ব্যাপার না। তুই অন্য কোনো জায়গা ফেলি না এই সিলেট ছাড়া?”
- অভ্যাসের কারণে চলে এসেছি। এখন কি আমি জায়গা চেঞ্জ করবো?”
- পাগল তুই? আরিয়ান যেহেতু ওইখানে গিয়েছে তারমানে সব ব্যবস্থা করেই গিয়েছে। শুন আমি কিন্তু ইন্ডিয়া থেকে এয়ারপোর্ট গিয়ে সোজা সিলেট যাবো। তুই কিন্তু এক বারের জন্যও রুম থেকে বের হবি না ওকে।”
- ওকে।”
তানিয়া ফোন কেটে দিয়ে দেওয়ালে হাত বারী দেয়।
- সব সময় কোনো না কোনো সমস্যা হয়েই যাচ্ছে। দোষ আমারই আমি যে কেনো আরিয়ানকে একা রেখে ইন্ডিয়া এসে পড়ে রয়েছি। নিজের প্রতিই এখন খুব রাগ হচ্ছে আমার। সোনালী মেয়েটাকে তো খুন করবো আমি।”
তানিয়া রাগে ফুঁসতে থাকে। নাহিদ ভয়ে রুম থেকে বের হয় না।
হৃদয় আয়ানকে দেখে অবাক। আয়ানকে জড়িয়ে ধরে হৃদয় বললো,
- ভাইয়া তুমি এইখানে? আর কতদিন পর দেখা। ওইদিনের পর থেকে তো তোমার সাথে যোগাযোগ নাই বললেই চলে।”
- আরিয়ান যোগাযোগ রাখে নাই তার জন্য আমাদের যোগাযোগ নেই।”
- ব্রো তো তোমার কথা আমাকে অনেক বলেছে তাহলে কেনো সে যোগাযোগ রাখবে না?”
- সেইটা তোর ব্রো ই বলতে পারবে।”
ইতির সাথে আয়ানের পরিচয় করিয়ে দিলো মানহা। মানহা ও আরিয়ান হৃদয়কে আগেই বলে রেখেছিলো যে, মানহা কে যে তারা আগে চিনতো সেই কথা যেনো ইতি বা সোনালী কেউ জানতে না পারে তাই হৃদয় কিছু বলেনি। আরিয়ান কোনো একটা দরকারি কাজে বের হয়ে গেছে। আয়ানের সাথে সোনালীরও পরিচয় হলো
- আসসালামু আলাইকুম ভাবী। কেমন আছেন?”
- আলহামদুলিল্লাহ ভালো ভাইয়া। আপনি?”
- এইতো ভালো আছি।”
আয়ান সোনালীকে ভাবী আবার আপনি করে ডাকাতে সোনালীর লজ্জা লাগলো। এত্ত বড় ছেলে কিনা তাকে আপনি আপনি করছে। কিন্তু সোনালী বেশ অবাক হলো মানহার সাথে আয়ানের পরিচয় থাকাতে। কেননা আয়ানের
সাথে কথা বলে বুঝলো আয়ান আরিয়ানের বেস্ট ফ্রেন্ড ছিল। তারা একই স্কুল, কলেজ, ভার্সিটি একসাথে পড়েছে তাহলে কিভাবে আয়ানের সাথে মানহার পরিচয়। - একটা প্রশ্ন করবো যদি কিছু না মনে করো আপু?”
- কি মনে করবো বল তুই।”
- আয়ান ভাইয়ার সাথে তোমার পরিচয় কিভাবে আমার জানতে ইচ্ছে করছে খুব।”
সোনালীর প্রশ্ন শুনে ইতিও বলতে লাগলো একই প্রশ্ন। মানহা আয়ানের দিকে তাকিয়ে সোনালীকে বললো, - আমরা একই ভার্সিটিতে পড়েছি সেই জন্যই পরিচয়।”
- তাহলে তো তোমার সাথে লেখক সাহেবেরও পরিচয় থাকার কথা তাই না?”
আয়ান কথা ঘুরানোর জন্য বললো, - আমি আর মানহা দুইজন আলাদা ডিপার্টমেন্টে ছিলাম। মানহার সাথে আমার বই পড়া নিয়ে পরিচয়। দুইজন লাইব্রেরিতে এসে বই পড়তে পড়তে আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড হয়ে যাই। আমার কথা তো জানেন আমি খুব কম কথা বলি তাই আরিয়ান বা আমার অন্য ফ্রেন্ডের মানহার কথা বা মানহার কথা আমার অন্য ফ্রেন্ডের সাথে বলতাম না তাই ওরা কেউ কারো সাথে পরিচিত হতে পারলো না।”
আয়ানের কথা শুনে মানহা চিন্তা মুক্ত হলো। সোনালী আর কিছু জিজ্ঞাসা না করলেও মনের মাঝে কিছু একটা সন্দেহ করে। কেননা ওরা জানে নাহিদের সাথে মানহার রিলেশন করে বিয়ে হয়েছে। কিন্তু এইখানে কেউ নাহিদের কথাটা বলছে না। মনে সন্দেহ নিয়েও মুখে হাসির রেখা টেনে সবাই একসাথে গল্প করতে লাগলো।
মাওয়াকে বেশ ভালো লাগলো আয়ানের। মাওয়াকে মাঝে রেখে বেশ মজা করতে লাগলো। হৃদয় তখন বললো,
- আমাদের সেই গোমড়া মুখো ভাইয়া আজ এত হাসি খুশি কিভাবে হলো হুম?”
- তোদের সাথে অনেকদিন পর দেখা হলো তো তাই অনেক খুশি হয়েছি।”
আরিয়ান রুমের দরজায় কড়া দিচ্ছে। হৃদয় গিয়ে দরজা খুললো। আরিয়ান রুমের ভিতর প্রবেশ করে কিছু না দেখেই বললো, - তুই কবে থেকে কন্যা রাশি হলি বলবি আমায়? সারাদিন গার্লফ্রেন্ড আর ভাবী পাইলে গল্প করতে বসে পড়িস।”
- কেমন আছিস আরু?”
আরিয়ান এতদিন পর আয়ানকে দেখলো প্রথম খুশি হলেও পরবর্তীতে রাগে ঘৃনা তার চোখ ভরপুর। সোনালীর সামনে কিছু বলতে চায় না বলে আয়ানকে জড়িয়ে ধরলো। - ভালো রে তুই?”
- ভালো। এতদিন যোগাযোগ রাখলি না কেনো জানিস তোকে কত ম্যাসেজ, ফোন দিয়েছি পরে ওই নাম্বার অফ। ফেসবুক থেকে তোর অনেক খবর জেনেছি তোর আইডিতে কত ম্যাসেজ কিন্তু সীন পর্যন্ত করতি না সেই জন্যই তো রাগে আর তোর সামনে আসি নাই আমি।”
- সব ওই ব্যাস্ততার জন্য এমন হয়েছে। ভুলে যা সব।”
–” ওকে।” - আমি ফ্রেশ হয়ে আমার রুমে তোর জন্য ওয়েট করছি কিছু কথা ছিল পার্সোনাল।”
আয়ানকে বলে আরিয়ান চলে যায়। সোনালী তখন মুখ বাঁকা করে বলতে থাকে। - তোর সাথে আমার ইম্পর্টেন্ট কথা আছে পার্সোনাল। বলি কোন মহারাজ ওনি? একটু বন্ধুর সাথে ভালো করে কথা বলতে পারে না নিরামিষ মানুষ কোথাকার। এমনিতেই তো বন্ধুকে ইগনোর করেছে এখন আবার সরি টুকু বললো না। মাঝে মাঝে মন চায় ওনার গল্পের মতো ওনাকে খুন করে দেই।”
সোনালীর এমন বাচ্চামো কথায় সবাই হাসতে থাকে। আয়ান আরিয়ানের রুমে যায়। আরিয়ান দরজা অফ আয়ানের দিকে তাকিয়ে বলে। - আমার সাথে এমন প্রতারণা না করলেও পারতি তুই।”
- কি করেছি আমি?”
পর্ব ২৫
- আমার সাথে এমন প্রতারণা না করলেও পারতি তুই।”
- কি করেছি আমি?”
- তুই নাহিদের সাথে হাত মিলিয়ে মানহাকে নাহিদের হাতে তুলে দিয়েছিস তাই না?”
- তোকে এইসব বাজে কথা কে বলেছে?”
- তানু বলেছে। তুই আর নাহিদ আমার সাথে এমন বিশ্বাসঘতকতা কেনো করলি?”
আরিয়ান আয়ানের শার্টের কলার চেপে ধরে। আয়ান আরিয়ানের হাত সরিয়ে আরিয়ানকে বলে। - তুই যে বাচ্চাদের মত কাজ কর্ম করবি আমি কোনোদিন ভাবতেও পারি নাই। আচ্ছা কেউ যদি তোকে বলে, তোর কান ঈগল পাখি নিয়ে গেছে তুই কি তখন নিজের কান আছে নাকি নাই কোনো চিন্তা না করে ঈগল পাখির পিছনে দৌড়াবি?”
- মানে?”
- তোর উচিত ছিল সত্যতা যাচাই করা। কিন্তু তুই তানিয়ার কথা শুনে আমায় অবিশ্বাস করলি? এই ছিলো তোর বন্ধুত্ব?”
- তানু আমায় মিথ্যা কেনো বলবে?”
- তুই নিজেই খুঁজে বের কর। যেদিন তোর ভুল বুঝতে পারবি সেদিন তুই একজনের আসল মুখোশও জানতে পারবি।”
আয়ান চলে যায়। আরিয়ান তখন ভাবতে থেকে। - তাহলে কি আমার সন্দেহই ঠিক। তানু সব কিছু করছে? প্রমাণ ছাড়া তো কিছু বিশ্বাস করা ঠিক না। কি করতে হবে এখন? পেয়েছি কি করতে হবে আমার।”
আরিয়ান ফোন নিয়ে কিছুক্ষণ লেখালেখি করলো। আইডিতে পোষ্ট দিলো। পোষ্ট দেওয়ার সাথে সাথে মিনিটে তার হাজারো রিয়েক্ট। সবাই অবাক হচ্ছে রাইটারের নাম দেখে। রাইটার নাম হলো ‘ আরিয়ান সোনালীর যৌথ গল্প’ - এখন দেখবো তানুর রিয়্যাক্ট কেমন হয়? ওকে আমার অনেকদিন আগে থেকেই সন্দেহ হয়েছিল কিন্তু বেস্ট ফ্রেন্ড ভেবে তা কখনো প্রকাশ করি নাই। কিন্তু আজ দেখি কি করে ও।”
আরিয়ান আধা ঘন্টা ধরে অপেক্ষা করলো কিন্তু তানিয়ার কোনো খবর নেই। তানিয়ার ফোনে কল দিলো নাম্বার অফ।
সোনালী তো গল্প পড়ে অবাক। ও তো কিছুই লেখেনি তাহলে আরিয়ান কেনো তার নাম দিলো? যাই হোক খুশিতে ওর ড্যান্স করতে ইচ্ছা করছে। কিছুদিন আগে যে মেয়েগুলো ওকে বকা দিচ্ছিল আজ তারাই আপু আপু আপু বলে ম্যাসেজ দিচ্ছে। নিজেকে সেলিব্রিটি মনে হচ্ছে তার।
আয়ান রাগে গজগজ করছে। নিরব জায়গায় বসে ‘ইন এ রিলেশশিপ’ লেখিকা ‘ মোর্শেদা হোসেন রুবি’ আপুর দ্বিতীয় উপন্যাসটি পড়ছে। মানহা মাওয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটছিলো। আয়ানকে এইভাবে বসে থাকতে দেখে ওর কাছে যায়।
- তুমি না সন্ন্যাসী থাকবে তাহলে এই বই পড়ছো কেনো?”
- কেনো বই পড়লে কি সন্ন্যাসী থাকা যাবে না? আমি তো আগে থেকেই বই প্রেমী তুমি জানো না?”
- হ্যাঁ জানি বাট তুমি এমন ধরনের বই পড় না।”
- তুমি কি বইয়ের নাম দেখে এমন বলছো?”
- হ্যাঁ।”
- আরেহ বোকা বইয়ের নাম দেখে অনেকে অনেক কিছুই ভাববে কিন্তু বইটা খুব ভালো। তুমি জানো না এই আপু সব সময় ইসলামিক গল্প লিখে ওনার গল্পে কখনই এমন কিছু থাকে না যা মানুষদের খারাপ কিছু শিখাবে।”
-তাহলে তুমি এই আপুর গল্প পড় তাহলে?” - হ্যাঁ। তুমি তো জানোই আমি সব সময় ইসলামিক বিষয়ে অনেক কিছু জানার জন্য fb তে আসি। তখন একজন ছেলের প্রোফাইলে তোমার নামের একটি বই দেখে আমি অবাক। তখন ওই বইয়ের নাম সার্চ দিয়ে আপুর আইডি খুঁজি। আইডি খুঁজে বেশ কিছু গল্প পড়ি। এখন তো আপুর সব গল্পই আমার পছন্দ।”
- বাহ তাহলে তো আমার মাধ্যমেই তোমার আপুকে চিনা।”
- তা অবশ্য ঠিক।”
–” দেও তো আমি একটু পড়ি।”
আয়ান মাওয়াকে কোলে নিতে গিয়ে মানহা ভেবেছিলো আয়ান হাত বাড়িয়েছে তাই ও মাওয়াকে ছেড়ে দেয়। আয়ান মাওয়াকে ধরার আগেই পরে যেতে নিলে দুজনেই তাড়াহুড়া করে মাওয়াকে ধরে আর মাথায় বারী খায়। - সরি সরি আমি বুঝতে পারিনি যে তুমি মাওয়াকে ছেড়ে দিবে। সরি আমি।”
- সরি তো আমি বলবো। তোমার কোনো দোষ নেই।”
আয়ান মাওয়াকে কোলে নিলো। মানহার হাতে বইটি দিয়ে মানহাকে বললো, - ব্যাথা পাওনি তো?”
- উহু।”
- ওকে। তুমি পড় আমি মাওয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটছি।”
- ওকে।”
আয়ান মাওয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটতে থাকে। মানহা বইটা হাতে নিয়ে খুব মনোযোগ দিয়ে পড়তে থাকে। মানহার অবাধ্য চুলগুলো বার বার সামনে এসে মানহার পড়ার বিরক্ত করছে। হাত দিয়ে নিজের চুল সরিয়ে আবারো পড়তে থাকে। আয়ান মানহার দিকে তাকিয়ে এতক্ষণ সব কিছু দেখছিলো। আশে পাশে তাকিয়ে কোনো কিছু না পেয়ে পকেটে রাখা কলমটি বের করে। মাওয়া সবে দাঁড়াতে পারে তাই ওকে দাঁড় করিয়ে মানহার পিছনে দাঁড়িয়ে সব চুল একত্রে বাঁধতে থাকে। - এই কি করছো তুমি?”
- তোমার প্রবলেম সলভ করছি চুপ থাকো।”
অনেক্ষণ ধরে চুল বাঁধার চেষ্টা করছে কিন্তু বার বার অসফল হচ্ছে। মানহা মুখ চেপে হাসছে কিন্তু কিছু বলছে না। - ধ্যাত কি ঝামেলা চুল বাঁধা। তোমরা মেয়েরা যে কিভাবে এত্ত বড় চুল সামলাও আল্লাহ জানে।”
আয়ানের কথায় মানহা এইবার জোরে হাসতে থাকে। - দেও আমি চুল বাঁধছি তুমি পারবে না।”
- আমিই বাঁধবো চুল ওকে।”
বহু কষ্ট পেচিয়ে পেঁচিয়ে মানহার চুল কোপা করে কলম দিয়ে গুজে দিলো।
- বাহ কি ভালো পদ্ধতি। প্রেম না করেও এত ভালো পদ্ধতি আর চুল বাঁধা শিখলে কিভাবে?”
আয়ান হাসলো উত্তর না দিয়ে মাওয়াকে কোলে নিয়ে একটা বড় ফুল তুলে আনলো। মানহার কোপায় ফুলটা গুজে দিয়ে বললো, - এইবার পড়তে থাকো। তোমার চুলগুলো আর বিরক্ত করবে না।”
–” ওকে।”
মানহা বেশ মনোযোগ দিয়ে বইটা পড়তে লাগলো। আয়ান সুযোগ পেলেই তাকিয়ে থাকে মানহার দিকে তখন মাওয়া আয়ানের চুল ধরে টান দেয়।
- বেশ দুষ্টু দেখছি আমার মামুনি।”
মাওয়া খিলখিল করে হাসতে থাকে আর আবারো আয়ানের চুল ধরে টান দেয়। খুব ভালো লাগছে আয়ানের সেও যেনো ছোট বাচ্চা হয়ে গেছে। - বাবুউউউউউউউউউউউউ দেখখখখখখখ লেখকককককক ভাইয়াআআআআআআ তোকেএএএএএ কিভাবেএএএএএ ক্রেডিটটটটটটট দিয়েছেএএএএএএ।”
ইতির কথায় হৃদয় আর সোনালীর কানে হাত। হৃদয় বেশ বিরক্তি সুরে বললো, - আমাদের চোখ আছে। আমরা অনেক আগেই দেখেছি এইভাবে ষাঁড়ের মত কে চেঁচাতে বলেছে তোমাকে?”
হৃদয়ের কথায় ইতি সেই লেবেলের রেগে গিয়ে হাতে থাকা ফোনটা ছুড়ে মারে। - আমি ষাঁড়ের মত চিল্লাচ্ছি তাই না? ওকে যাও ব্রেকআপ। তোমার মত হনুমানের সাথে আর কোনো রিলেশন নেই আমার। পঁচা ডিম ছুড়ে মারা উচিত তোমার ওই লিপস্টিক ওয়ালা ঠোঁটে।”
- আমি মেয়ে না যে লিপস্টিক দিবো। আমার ঠোঁট এমনিতেই লাল সো এমন আজব কথা বলবে না।”
- একশোবার বলবো, হাজারবার বলবো তোমার কি তাতে? তুমি জানো আমরা লিপস্টিক দিলেও তোমার ঠোঁটের মত লাল হয় না আমাদের ঠোঁট। হাফ লেডিস কোথাকার।”
- নাহ কালকেই আমি ঠোঁট সার্জারি করবো। পরে আমার ঠোঁট দেখে হাজারো মেয়ে আমার পিছনে ঘুরবে।”
- হুহহ হুহহ যাও যাও কে ধরে রেখেছে তোমার।”
অবশেষে মহাবিশ্বের তৃতীয় যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলো। সোনালী আপ্রাণ চেষ্টা করা সত্বেও ওদের ঝগড়া থামাতে পারছে না। হৃদয় ইতি ঝগড়ার জন্য ইতি যে ফোন ছুড়ে মেরেছিল সেইটা তাদের মাথায় নেই। ইতির যখন মনে হলো তখন চুপ করে মুখে হাত দিয়ে রাখলো। হৃদয় ইতির এই চুপ করা দেখে ইতির দিকে তাকিয়ে বললো,
- দম শেষ হয়ে গেছে বুঝি? আগেই বলেছি হৃদয়ের সাথে লাগতে এসো না ঠিকই তো হেরে গেলে।”
- তোমার ফোন কই?”
- তুমিই তো একটু আগে গল্প পড়ার জন্য নিলেএএএএএ। মানে তুমি যে আমার দিকে একটা ফোন ছুড়ে মারছিলে ওইটা আমার ফোন ছিলো?”
ইতি মাথা দিয়ে হ্যাঁ বললো, হৃদয় রুমের ভিতর ফোন খুঁজতে লাগলো। সোনালী তখন বললো, - পায়ের নিচে তাকাও। এমন ভাবে ঝগড়া করছিলে দেখো ফোনের কি অবস্থা করেছো?”
ফোনের কাঁচ ভেঙ্গে গুড়া হয়ে গেছে। ওরা ঝগড়া করার সময় ফোনের উপরে লাত্থি মারছিল। ইতি তো তার হিল জুতো দিয়ে বার বার ফোনের উপরে দাঁড়িয়েছিল। হৃদয় ইতির দিকে তাকাতেই ইতি ভেনিস হয়ে গেলো। ইতি এমন দৌড় দিলো হৃদয় বুঝতেও পারলো না। বুঝতে পেরে সেও দৌড় দিলো। এইদিকে সোনালী হাসতে হাসতে বিছানার উপর গড়াগড়ি খাচ্ছে।
- আয়ান আমি প্রথম ইউশাকে মেয়ে ভাবছিলাম। আসলেই আমি খুব বোকা কোনটা মেয়ের নাম কোনটা ছেলের নাম তা বুঝতে পারি না।”
- হাহাহা। শুধু তুমি না অনেকেই ভেবেছে তাবশী আর ইউশা দুই বান্ধবী বা বোন।”
- হ্যাঁ। কিন্তু আমার একজনকে খুব ভালো লেগেছে?”
–” কাকে?” - বারীরা ফুফিকে খুব ভালো লেগেছে।”
- আমারও।”
- আচ্ছা চলো কিছু খাওয়া যাক। আরিয়ান তো কোথায় এখনও ঘুরতে নিয়ে গেলো না আমাদের।”
- জানো তানু আমার নামেও খারাপ কথা বলেছে আরিয়ানকে।”
- কি বলছো কি তুমি?”
আয়ান সব বললো যা আরিয়ান তাকে বলেছে। মানহা এখন রাগে লাল হয়ে আছে।
- ছিঃ তানিয়া এত খারাপ নিজের প্ল্যান সাকসেস করার জন্য বন্ধুদেরও ছাড়লো না। মানলাম আমি তার কিছুদিনের ফ্রেন্ড ছিলাম কিন্তু তুমি তো সেই কত বছরের ফ্রেন্ড তবুও তোমার সাথে এমন করলো। ওকে একটা শাস্তি দেওয়া দরকার।”
- আমি আরিয়ানকে বলে এসেছি। আমার মনে হয় এখন যা করার আরিয়ান নিজেই করবে। আমিও চাই আরিয়ান নিজেই সব জানুক। আমাদের কাছে শুনলে হয়তো তানিয়ার মিথ্যা কথায় আবারো ভুল বুঝবে তার থেকে ভালো নিজেই সব খুঁজে বের করুক।”
- হুম আমিও তাই চাই।”
তানিয়া বাংলাদেশ এসে নতুন সিম কিনে নাহিদকে ফোন দিলো সে বাংলাদেশে পৌঁছে গিয়েছে। রাত বারোটা এখন তার পক্ষে সিলেট যাওয়া সম্ভব নয়। রাতের জন্য একটা রুম বুক করলো সে। বিশ্রাম করে আরিয়ানের আইডিতে যেতেই সে অবাক।
- এই সোনালী মেয়েটা আমার রাতের ঘুম নষ্ট করে দিয়েছে আমিও তার পুরো লাইফ নষ্ট করে দিবো যেমন মানহারটা করেছি। মানহা আরিয়ান, আরিয়ান মানহা ওয়াও বাংলাদেশ আসতে না আসতেই কি ভালো প্ল্যান চলে আসলো। হাহাহা এক ঢিলে দুই পাখি শিকার করবো আমি হাহাহা।”
তানিয়া খুব সুন্দর একটা কমেন্ট করলো। আরিয়ান তানিয়ার কমেন্ট দেখে বুঝতে পারছে না তানিয়া কি ভেবে কমেন্ট করেছে। - কোথায় তুই?”
আরিয়ানের এমন একটা ম্যাসেজ দেখে চমকে উঠে তানিয়া। তবুও আড়াল থাকার জন্য লিখে। - ইন্ডিয়া। হটাৎ এই প্রশ্ন কেনো?”
পর্ব ২৬
আরিয়ানের এমন একটা ম্যাসেজ দেখে চমকে উঠে তানিয়া। তবুও আড়াল থাকার জন্য লিখে।
- ইন্ডিয়া। হটাৎ এই প্রশ্ন কেনো?”
- তোর লোকেশন বলছে তুই বাংলাদেশ আছিস। মিথ্যা বলছিস কেনো? তাছাড়া তোর সিম অফ।”
আরিয়ানের কথায় তানিয়া জিভ কাটে। - ইসসসসসস ভুলেই গিয়েছিলাম। কি করবো এখন কি উত্তর দিবো আমি?”
- কি হলো কিছু বলছিস না কেনো?”
- হুম বলছি। তোকে আর সোনালীকে সারপ্রাইজ দেওয়ার জন্য না বলে চলে এসেছি।”
- হটাৎ সারপ্রাইজ? কোনো কারণ আছে নাকি?”
- আরু তোর হটাৎ কি হলো? আমি দেশে এসেছি বলে তুই খুশি হলি না? ওকে যা আমি চলে যাবো। বুঝতে পারিনি যে বিয়ের কথা চললে বেস্ট ফ্রেন্ড তখন বেস্ট ফ্রেন্ড থাকে না।”
- শুরু হয়ে গেলো ইমোশনাল ব্লেকমেইল?”
- হিহিহি। আসছি আগামীকাল সিলেট রেডি থাকিস তোরা।”
- তুই কিভাবে জানলি আমরা সিলেট আছি?”
- ও মাই গড। যেখানে বাঘের ভয় সেখানে রাত হয়। কি যে বলছি আমি।”
- ওই কি হলো লেখছিস না কেনো কিছু?”
- অবাক হচ্ছি যে তোরা সিলেট। আমি তো এমনি সিলেটের কথা বলেছি কিন্তু তোরা যে ওইখানে তা শুনে আমি সারপ্রাইজড হয়ে গেছি।”
- আচ্ছা বাদ দে। আগামীকাল সকালে রওনা দিয়ে দিস তোর জন্য আলাদা রুম বুক করে রাখছি আমি।”
- ওকে ডিয়ার উম্মাহ।”
আরিয়ান ফোন অফ করে শুয়ে রইলো। কিছুতেই সে কিছু মিলাতে পারছে না। তানিয়াকে সন্দেহ করা সত্বেও কিছু বলতে পারছে না।
রাত চলে গিয়ে সকাল হলো। সকাল পেরিয়ে সন্ধ্যা। আরিয়ান তানিয়াকে নিয়ে সোনালী, ইতি, হৃদয়, মানহা ও আয়ানের সামনে নিয়ে যায়। মানহা ও আয়ান তানিয়াকে দেখে অবাক সাথে তানিয়াও। - ওরা এইখানে কেনো আরু?”
মানহা ও আয়ানকে দেখে বললো তানিয়া। সোনালী অবাক হয়ে বললো, - আপনি চিনেন মানহা আপুকে?”
তানিয়া কিছু বলতে যাবে তার আগেই আরিয়ান বললো,
- এত কথা কেনো বলো? শুনো ও আমার বেস্ট ফ্রেন্ড। তোমার সাথে দেখা করতে এসেছে ইন্ডিয়া থেকে। তানিয়া ও হলো সোনালী আমার হবু স্ত্রী।”
- শুধু কি হবু স্ত্রী আরিয়ান? সোনালী কিন্তু তোমার রিয়েল স্ত্রী এখন।”
মানহা তানিয়াকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলছে। তানিয়া মানহার কথা শুনে রাগে হাত মুষ্টি বদ্ধ করে রেখেছে। আয়ানের কাছে অনেক ভালো লাগছে। মাওয়াকে কোলে নিয়ে বললো, - জোর করে কিন্তু ভালোবাসা পাওয়া বোকামি ছাড়া কিছু নয়। এই যে আমি প্রথম প্রথম মাওয়াকে জোর কোলে নিয়ে ভালোবাসতে চেয়েছিলাম কিন্তু মাওয়া আমায় ভয় পেয়ে চলে গিয়েছে কিন্তু দেখো এখন মাওয়াই আমার কোলে থাকতে ভীষণ পছন্দ করে। তাই জোর করে কিছু পাওয়া বা আদায় করা কোনো ভালো মানুষের কাজ না।”
মানহা মুচকি হাসছে। তার কারণ আয়ান কি সুন্দরভাবে তানিয়াকে কথা শুনাচ্ছে। মাওয়া প্রথম থেকেই আয়ানের কোলে যেতো কিন্তু এখন কথাগুলো তানিয়াকে অপমান করার জন্য বলছে সে, তা মানহা খুব ভালোভাবেই বুঝতে পেরেছে। - গাইস আমি খুব ক্লান্ত। আমি বিশ্রাম করে পরে ভালো করে কথা বলবো বায়।”
তানিয়া আয়ানের দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে চলে যায়। আয়ান মুখ ভেংচি কেটে মাওয়ার সাথে খেলতে থাকে।
তানিয়া রুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে হাতে থাকা ফোনটা বিছানায় ছুড়ে মারে। - সবগুলো এক জায়গায়। আয়ানের এত বড় সাহস আমাকে অপমান করা। আয়ানের বাচ্চা তোকে তো আমি এক্ষুনি খুন করবো। মানহার মেয়েকে পেয়ে বড্ড কথা ফুটেছে তোর মুখে তাই না? ওয়েট আমি এসে পড়েছি তোর কথা বলা কিভাবে বন্ধ করতে হয় আমার জানা আছে।”
তানিয়া নাহিদকে ফোন দিলো। - ওই কোথায় তুই? সেই কখন থেকে ওয়েট করছি তোর জন্য।”
- চিন্তা করিস না আমি আরিয়ানের সাথে আছি। তুই রুম থেকে বের হবি না যখন আমি বলবো তখন বের হবি ওকে।”
- ওকে বাট কি করবি এখন তুই?”
- আমার মনে হয় ওরা কেউ সোনালীকে আরিয়ান আর মানহার ব্যাপারে কিছু বলেনি। আমি এইটাকে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবো। তোর কাছে আরিয়ান আর মানহার একসাথে কোনো পিক আছে?”
- এত বছরের পিক সিউর বলতে পারছি না।”
- তুই খুঁজতে থাক যদি পেয়ে যাস আমাকে সেন্ড করিস।”
- ওকে।”
তানিয়া ফোন কাটে। নাহিদ কিছুক্ষণ ফোনে খুঁজলো কিন্তু কোনো পিক না পেয়ে ওর আইডিতে ঢুকে। কেননা তখন তো তারা অনেক পিক আপলোড দিতো। খুঁজতে খুঁজতে একসময় কয়েকটা পিক পায় কিন্তু সেই পিক গুলোতে ওরা সবাই একসাথে। নাহিদ পিক ক্রপ করে ওদের দুইজনের পিক তানিয়াকে সেন্ড করে।
- আমার এত বুদ্ধি যে কই রাখি। মাথা তো নয় যেনো বুদ্ধির গোডাউন। এখন একটু মদ যদি খুঁজে পেতাম আহা।”
নিজের বুদ্ধির নিজেই বাহ বাহ দিতে লাগলো নাহিদ। তানিয়া পিক গুলো পেয়ে মুখে শয়তানি হাসি হাসলো।
পরেরদিন।
সবার সাথেই খুব ভালো ব্যবহার করলো তানিয়া। রুমে গিয়ে ফোন হতে নিয়ে একটা ফেক আইডি খুলে সোনালীর কমেন্ট বক্সে
বললো, - আপু আপনার সাথে আমার খুবই জরুরি কিছু কথা আছে। প্লিজ আমার ম্যাসেজটা দেখে রিপ্লাই দিবেন।”
বিশ মিনিট পর সোনালী তার আইডিতে গিয়ে এমন ম্যাসেজ দেখে বললো,
–” জ্বি আপু বলেন?” - আমরা কি ইনবক্স এ কথা বলতে পারি?”
- হুম কেনো নয়?”
তানিয়া ইনবক্সে গিয়ে মানহা ও আরিয়ানের সম্পর্কের কথা একে একে সব বলে দেয়। - মিথ্যা কথা বলবেন না। আপু আর লেখক সাহেবের যদি রিলেশন থাকতো তাহলে আপু অন্য জায়গায় কেনো বিয়ে করলো। আমরা জানি যার সাথে আপুর বিয়ে হয়েছে তার সাথেই আপুর রিলেশন ছিলো। তাছাড়া যদি ওদের রিলেশন থাকতো আপু বা লেখক সাহেব নিশ্চয় আমায় বলতো।”
- আপনি প্রমাণ চান?”
- হ্যাঁ আছে কোনো প্রমাণ আপনার কাছে?”
- প্রমাণ ছাড়া আমি কোনো কথা বলি না। দেখুন পিক গুলো।”
সোনালী পিক গুলো দেখে চমকে উঠে।
- ওদের রিলেশন ছিলো তাহলে আপু বা ওনি ওরা আমাকে লুকাবে কেনো? আমার বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনি ফেক আমি বুঝতে পারছি।”
- ওকে আপনার হবু বরের একজন ফ্রেন্ড গতকাল ইন্ডিয়া থেকে এসেছে তাই না? । ওর সাথে একদম একা গিয়ে কথা বলুন। ও তো আপনাকে মিথ্যা বলবে না তাই না। আর খবরদার ওর সাথে দেখা করার কথা আপনার বোনকে বলবেন না তাহলে দেখবেন ও কথা বলতে দিবে না।”
- ওকে আমি একটু পরেই ওনার সাথে কথা বলবো তখন আপনার এইসব মিথ্যা কথার জন্য আপনাকেও শাস্তি দিবো বায়।”
সোনালী ফোন কেটে একা একা বসে আছে। হৃদয় ইতি ঘুরতে গিয়েছে। মানহা আয়ানের সাথে নাকি কি দরকারি কথা বলতে গিয়েছে। আরিয়ান সে তো তার মতোই। কোথায় কখন যায় কখন আসে এক মাত্র সে ছাড়া কেউ জানে না। ইতি হৃদয় তাকে বলেছিলাম যাওয়ার জন্য কিন্তু ও যায়নি। - ঘুরতে আসলাম না ছাই। জীবনেও এই লোকের সাথে কোথাও যাবো না। ঘুরাঘুরির নাম করে অত্যাচার করা হচ্ছে। আমি একটু গিয়ে মানহা আপুর কাছে যাই।”
আয়ান ও মানহা কথা বলছে তানিয়াকে নিয়ে। - ওই ডাইনি এখন আমার বোনের সংসার নষ্ট করতে এসেছে। কি করবো এখন আমরা?”
- চিন্তা করো না। সোনালীকে তানিয়ার আশে পাশে বেশি দেওয়া যাবে না। তুমি একলা ছিলে তাই তানিয়া ওর প্ল্যান সাকসেস করতে পেরেছে কিন্তু এখন সোনালীর সাথে তুমি আছো আমি আছি কেউ ওর কোনো ক্ষতি করতে পারবে না।”
- কার ক্ষতি করতে পারবে না ভাইয়া?”
- সোনালী তুই এইখানে?”
- একা একা ভালো লাগছিলো না তাই চলে আসলাম। দেখলাম রুমের দরজা খুলা তাই ভিতরে চলে আসলাম। কিন্তু ভাইয়া কি বলছিলো কার ক্ষতি? কিসের ক্ষতি? কে করবে?”
- তেমন কিছু না। এইসব বাদ দে জানিস না তোর এই ভাইয়া আগে থেকেই মাথা মোটা কি বলতে কি বলে সে নিজেও জানে না অন্যদেরও জানতে দেয় না।”
- জ্বি ভাবী মানহা ঠিক বলেছ। আপনি চিন্তা করবেন না।”
- হুম। আচ্ছা আমি একটু তানিয়া আপুর সাথে দেখা করে আসি। কি করছে কে জানে রুমে একা একা।”
সোনালী যেতে নিলেই মানহা সোনালীর হাত চেপে ধরে। - ওই মেয়ের আশে পাশে একদম যাবি না।?”
- কেনো?”
- আমি বলছি তাই যাবি না। ও ভালো না।”
- তোমার সাথে তো ওর পরিচয় নেই তাহলে জানলে কিভাবে ও ভালো না?”
মানহা আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ান তখন বললো, - আমি বলেছি। কজ তানিয়া কিন্তু আমার ফ্রেন্ড ছিল। ওর সব কথাই জানি আমি। আমিই মানহাকে তানিয়ার কথা বলেছি।”
- হুম।”
সোনালীর কাছে সন্দেহ যেনো আরো গাঢ় হলো। - সোনালী তুই মাওয়াকে নিয়ে হাঁটতে থাক ভালো লাগবে।”
- ওকে।
সোনালী মাওয়াকে কোলে নিয়ে হাঁটতে থাকে। সোনালী যাওয়ার পর মানহা খুব জোড়ে নিঃশ্বাস ফেলে।
- একটুর জন্য ধরা খাই নি। সরি আয়ান আমার জন্য তোমাকে মিথ্যা বলতে হচ্ছে।”
- ভালোর জন্য মিথ্যা কথা বলা একটা কেনো হাজার বার বলবো। আর প্লিজ কথায় কথায় সরি বলবে না আমার সামনে ওকে।”
- ওকে।”
সোনালী হাঁটছে কিন্তু মনে তার প্রশ্ন। তানিয়ার রুমের সামনে দিয়ে যেতে নিলেই তানিয়ার রুম দেখে দাঁড়িয়ে যায় ও।
- কিছু তো ব্যাপার আছেই। আমাকে জানতে হবে সব। সরি আপু তোমার কথা রাখতে না পারার জন্য।”
সোনালী তানিয়ার রুমের দরজায় দাড়িয়ে বেল বাজায়। তানিয়া তাড়াতাড়ি দরজা খুলে অবাক হওয়ার ভান করলো। - ওমা তুমি এইখানে? কিছু বলবে?”
- আপু আপনার সাথে কিছু কথা আছে।”
- হ্যাঁ ভিতরে আসো।”
সোনালী মাওয়াকে নিয়ে ভিতরে ঢুকে। তানিয়া দরজা বন্ধ করে মাওয়াকে দেখিয়ে বলে।
— মানহার মেয়ে কিন্তু মানহার মতই হয়েছে। নাহিদের কিছুই পায়নি ও।” - আপনি চিনেন ওদের?”
- কেনো চিনবো না। এক সময় তো আমরা বেস্ট ফ্রেন্ড ছিলাম। আয়ানের মাধ্যমেই আমাদের পরিচয় হয়। সেই থেকে তো আমরা ফ্রেন্ড ছিলাম তবে মাঝে একটা ঝড় আসে তার জন্য এখন কেউ কারো সাথে যোগাযোগ রাখা হয় না।”
সোনালী যেনো এখন ১০০০ ভল্টের শক খায়। - কি হয়েছে ছিলো আপনাদের মাঝে?”
- কেনো তুমি জানো না?”
- উহু।”
- মানে আরিয়ান বা মানহা কিছু বলে নাই তোমাকে?”
তানিয়া অবাক হওয়ার ভাব করলো। সোনালী মাথা নাড়িয়ে না করলো। - তোমাকে বলা কি ঠিক হবে তাহলে?”
- প্লিজ আপু বলুন প্লিজ প্লিজ।”
- আরিয়ান আর মানহার তো রিলেশন ছিলো। ভার্সিটিতে তো সবাই জানতো তাদের প্রেমের কথা। কিন্তু মাঝ পথে মানহা নাহিদের সাথে রিলেশন করে ওদের রিলেশন ভেঙ্গে যায়। কিছুদিন আগে শুনলাম আরিয়ান নাকি বিয়ে করছে তোমাকে। খুশি হয়েছিলাম আমি কিন্তু পরে যখন সব জানতে পারলাম তাই তো দেরি না করে চলে আসলাম তোমাকে সব বলতে।”
- কি জেনেছেন আপনি?”
সোনালী গলা ধরে গিয়েছে। বোনের কাছ থেকে এমন কিছুই সে আশা করেনি।
- আরিয়ান তোমাকে না মানহাকে বিয়ে করতে সিলেট এসেছে। দেখো ওর ফ্রেন্ড আয়ানকেও নিয়ে এসেছে। মানহা আর আয়ান প্ল্যান করছে তোমাকে যদি বাঁচিয়ে রাখে তাহলে তুমি আবারো আরিয়ান আর মানহার জীবনে প্রবলেম করতে পারো। তুমি তো এখন আরিয়ানের বিয়ে করা বউ এইটা নিয়ে ওরা প্ল্যান করছে তোমাকে কিভাবে সরাবে। তোমাকে বাঁচানোর জন্যই আমি এসেছি তাই ওরা আমায় তোমার আশে পাশে থাকতে বারণ করেছে। দেখো বোন হয়ে কিভাবে বোনকে হত্যা করবে সেই প্ল্যান করছে ওরা।”
সোনালী কেঁদে ওঠে। তানিয়া মুখের কোনায় হাসি রেখে আবারো বলতে থাকে। - আরিয়ান কিন্তু তোমাকে মারার প্ল্যান জানে না। আরিয়ান মানহাকে এইখানে এনেছে বিয়ে করার জন্য আর তোমাকে সরি বলবে কিন্তু মানহা তোমাকে বাঁচতে দিবে না কেননা তোমার জন্যই নাকি ওর সুখের সংসারে আগুন লেগেছে। তোমার জন্যই নাকি মাওয়া বাবা ছাড়া বড় হচ্ছে সেই জন্যই ও তোমার আশে পাশে থাকে যেনো তোমার ক্ষতি ও করতে পারে।”
- আপু আমার সাথে এমন করবে আমি তো বিশ্বাসেই করতে পারছি না। এই জন্যইতো আপু আমাদের বাসায় আগে আসতো না কিন্তু আমার বিয়ের কথা শুনে চলে এসেছে এমনকি থাকার জন্যও। কোথায় ঘুরার কথা বললে আপুকে নেওয়া সম্ভব হতো না কিন্তু এইখানে আসার কথা বলাতে আপু রাজি হয়ে গেছে। আমাকে মারার জন্য এত প্ল্যান না করলেও পারতো আপু। ও যদি বলতো লেখক সাহেবকে ও ভালোবাসে আমি ওদের জীবন থেকে চলে আসতাম। তাই বলে ও এমন করবে। ওকে আমি নিজের বড় বোনের থেকে কম কিছু ভাবিনি।”
- কান্না করো না। তোমার এই বিশ্বাসের সুযোগ তো ওরা নিয়েছে। তুমি মাওয়াকে আমার কাছে দিয়ে যাও ওদের সাথে মোকাবেলা করো। তোমার হাতে এখনও সময় আছে।”
–” নাহ মাওয়া আমার কাছেই থাকুক। ও তো ভুল কিছু করে নাই। শিশু ও।” - আরেহ তুমি ভুল ভাবছো ওরা কিন্তু মাওয়াকেও হত্যা করতে চায় কারণ ওরা ওদের লাইফে কোনো আবর্জনা চায় না। তুমি মাওয়াকে আমার কাছে দিয়ে যাও। আমি জানি তুমি মাওয়াকে খুব ভালোবাসো।”
- ছিঃ আপু মাওয়াকেও মারতে চায়। মা হয়ে কিভাবে? এখন ওকে আপু বলতেও লজ্জা করছে আমার। ওকে আপু আপনি ওর খেয়াল রাখবেন আমি ওদের জবাব দিয়ে এসে মাওয়াকে নিয়ে চলে যাবো আর কোনোদিন ওদের সামনে যাবো না।”
- হুম।”
সোনালী একা চলে যায় মাওয়াকে রেখে। তানিয়া আগে থেকেই নাহিদকে বলে গাড়ি এনে রেখেছে। সোনালী রুম থেকে বেরিয়ে পড়তেই ও মাওয়াকে নিয়ে বের হয়ে যায়।
- আমি জানি আরিয়ান আমার সব কথা জেনে গিয়েছে। ও কোনোদিন আমায় বিয়ে করবে না। সোনালী ও মানহার জন্য আমার পুরো লাইফ শেষ। মাওয়াকে নিয়ে যাওয়ার কারণ হলো, আয়ানের বড় বড় কথার জবাব, মানহার কলিজা ছিড়ে নেওয়া, দুইজনের মধ্যে ঝগড়া, সোনালী যতদিন বেঁচে থাকবে মনে কষ্ট নিয়েই বেঁচে থাকবে, আরিয়ান সোনালীকে কোনোদিন বিয়ে করবে না যে মেয়ে বোনকে অবিশ্বাস করে তার সন্তান অন্য জনের হাতে তুলে দেয় সে মেয়েকে আরিয়ান কোনোদিন বিশ্বাস করবে না। হাহাহা।”
- এই আমার মেয়ে কিন্তু দেখতে খুব কিউট একটু খুলে দে আমার।”
- এত মেয়ে মেয়ে না করে ড্রাইভ কর। আরিয়ান চলে আসতে পারে। আর তোর জন্যই আরিয়ান সব জেনে গেছে। তোকে কে বলেছে মদ খেয়ে ওই মেয়েকে সব বলে দেওয়া।”
- আমি কি জানি আরিয়ান ওই মেয়েকে ভাড়া করে এনেছে আমি তো জাস্ট একটু।!”
- চুপ একদম চুপ।”
আরিয়ান একজন সুন্দরী মেয়ে এনে ক্লাবে পাঠিয়ে দেয়। আরিয়ানের লোকেরা নাহিদকে দেখেছে। তাই সেইদিন টাকা দিয়ে ওই হোটেলের ওয়েটারকে দিয়ে রাতে নাহিদকে ক্লাবে পাঠায়। আরিয়ান জানে নাহিদের সামনে মদ আর সুন্দরী মেয়ের কথা বললে ও গলে যায়। প্রচুর মদ খাওয়ানোর পর সব স্বীকার করে নাহিদ। আরিয়ান তখন ওইখানে না থাকায় ফোনে সব রেকর্ড করে মেয়েটি। নাহিদকে তখন একটা রুমে বন্ধ করে দেওয়া হয় আরিয়ান না আসা পর্যন্ত। নাহিদের যখন জ্ঞান ফিরে সব মনে হয় তখন তানিয়াকে ফোন দিয়ে সব বলে। তানিয়া তখন ওর রুম থেকে চুপি চুপি বের হয়ে ওই ওয়েটারকে আরো টাকা দিয়ে নাহিদকে রুম থেকে বের করে নিরাপদ জায়গায় রাখে। সব কিছু ঘটে তানিয়া যেদিন সিলেট আসে সেই দিন রাতে অর্থাৎ গতকাল। আরিয়ান সব জানা সত্বেও তানিয়ার সামনে কিছু বলেনি। তানিয়া যেনো পালাতে না পারে সেই জন্যই আরিয়ান তানিয়ার সাথে ভালো ব্যবহার করেছে। তানিয়া জানে আরিয়ান কি করবে তাদের দুইজনের সাথে। কথায় আছে না ঝড় শুরু হওয়ার আগে পরিবেশ একদম শান্ত থাকে ঠিক তেমনি আরিয়ান যখন তার প্রতিশোধ নিবে তার আগে সব কিছু শান্ত রাখে। - আরিয়ান তুই তানিয়াকে কাচা খেলোয়াড় কিভাবে ভাবলি? তোর থেকে কিন্তু আমিও কম যাই না হাহাহা।”
- ঠাসসসসস। তোর আমার উপর রাগ তার জন্য তুই আমার মেয়েকে ওই ডাইনির হাতে কেনো দিয়ে আসলি। আয়ান প্লিজ তাড়াতাড়ি চলো।”
আয়ান মানহা দৌড়ে তানিয়ার রুমের কাছে গিয়ে দেখে বাইরে থেকে রুম অফ। - আমার মেয়েকে না পেলে তোকে আমি ছাড়বো না সোনালী।”
পর্ব ২৭ (শেষ পর্ব)
- আমার মেয়েকে না পেলে তোকে আমি ছাড়বো না সোনালী।”
আরিয়ান যখন সব কিছু জানলো রাগে তার চোখ লাল হয়ে গেলো। যে ওয়েটারকে দিয়ে তানিয়া এমন করেছে তাকে মেরে রক্তাক্ত করে পুলিশের কাছে দিয়ে আসলো। - সোনালী তুই যে এমন বোকার মত কাজ করবি কোনোদিন ভাবতে পারেনি। তুই কি না মাওয়াকে ওই খারাপ মেয়ের হাতে দিয়ে আসলি ছিঃ সোনালী।”
- আমি বুঝতে পারি নি ইতি। তানিয়া আপু যে এতটা খারাপ। ওই তো আমাকে মানহা আপু, আয়ান ভাইয়া আর লেখক সাহেবের নামে মিথ্যা কথা বলে আমাকে রাগিয়ে দিয়েছে। আমি কিছু বুঝার আগেই ও মাওয়াকে নিয়ে চলে গেছে।”
মানহা পাগলের মতো আচরণ করছে। মেয়ের চিন্তায় বার বার জ্ঞান হারাচ্ছে। আয়ান তাকে সান্তনা দিচ্ছে।
- তানিয়া যদি আমার মেয়েকে মেরে ফেলে তাহলে আমি কি নিয়ে বাঁচবো। সোনালী তুই কি-না ওই একদিনের পরিচয় হওয়া মেয়ের কথায় তোর বোনকে অবিশ্বাস করলি। তোর জন্য আমি কি-না করেছি বল তুই। আর তুই আমাকে এইভাবে অবিশ্বাস করলি।”
আরিয়ান সোনালীর দিকে অগ্নি দৃষ্টিতে তাকিয়ে মানহাকে বললো, - তুমি চিন্তা করো না তোমার মেয়েকে আমি খুঁজে আনবো। ওরা সিলেট থেকে বের হতে পারবে না আমি লোক লাগিয়ে দিয়েছি। দোষ কিন্তু আমারই আমি সব কিছু জানা সত্বেও ওদের এখনও বাঁচিয়ে রেখেছি। আমার ওদের সাথে সাথেই খুন করা উচিৎ ছিল।”
সোনালী নিজের ভুল বুঝতে পেরে ক্ষমা চাচ্ছে সবার কাছে বিশেষ করে মানহার কাছে। - আপু প্লিজ ক্ষমা করে দাও। আমি কিন্তু মাওয়াকে ওর হাতে দিতে চাই নি ও আমায় ভুল বুঝিয়ে মাওয়াকে নিয়ে গেছে। প্লিজ আপু ক্ষমা করো আমায়।”
- ভুল তোর না আমার উচিত ছিল তোকে আগে থেকেই সব বলে দেওয়া। আমি সব বলিনি কজ তোর চোখে আমি আরিয়ানের জন্য ভালোবাসা দেখেছি আমি চাই না তুই আমার কথা কষ্ট পাস তাই তোকে আমি কিছু বলেনি।”
- নাহিদ তোকে যে আমি বিষ আনতে বলেছিলাম এনেছিস তুই?”
- নাহ।”
- নাহিদ আমি কিন্তু এখন ফাইযলামি মুডে নাই দে বলছি।”
- আমার মেয়েটাকে খুন করিস না তুই। আমি খারাপ জানি আমি কিন্তু আমার মেয়েটা তো কোনো দোষ করে নাই ছেড়ে দে ওকে। আমি ওকে নিয়ে অন্য কোথাও চলে যাবো। তুই তো মানহা সোনালী ওদের কষ্ট দিতে চাচ্ছিস তা কিন্তু তারা পাবে। বাবা হই আমি ওর প্লিজ ছেড়ে দে ওকে।”
- বাহ এতদিন কই ছিলো তোর মেয়ে? একবারের জন্যও তো খুঁজ নিস নি তাহলে এখন দরদ দেখাচ্ছিস কেনো?”
- আমি কোনো ভালোবাসা কি বুঝি নি। জানিস আমার মেয়েটাকে যখন খুলে নিয়েছি ও যখন তোকে ভয় পেয়ে আমার শার্ট ধরে রেখে আমার বুকে মাথা রেখেছে কেমন যেনো খুব শান্তি লাগছে। এত শান্তি আমি কোথাও পাইনি। বাবা যতই খারাপ হোক সন্তানের ক্ষতি সে করতে পারবে না।”
- ওই তোর এইসব আজে বাজে কথা বলা বন্ধ কর। এক্ষুনি এই মেয়েকে গলা টিপে হত্যা করবো।”
তানিয়া মাওয়ার গলা টিপতে যায়। নাহিদ তানিয়া বাঁধা দেয়। - ঠাস।তোকে বলেছি তুই আমার মেয়ের কাছ থেকে দূরে থাক। আমার মেয়ের কিছু হতে দিবো না আমি।”
তানিয়া আর নাহিদের মাঝে ঝগড়া সৃষ্টি হলো।
আরিয়ানের ফোনে কল আসলো।
- কোথায় ওরা? মাওয়া কেমন আছে?”
- স্যার, নাহিদ নামের লোকটি মারা গেছেন।”
- হোয়াট? কিভাবে মারা গেছে ও?”
- স্যার, তানিয়া বলে মেয়েটি নাহিদ নামের লোকটিকে কালা পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে নিচে ফেলে দিয়েছে। আমার জানা মতে, ওনি এখন আর বেঁচে নেই।”
- তানিয়া কোথায়?”
- ওনাকে আমরা আটকে রেখেছি।”
- আর বাচ্চাটি?”
- বাচ্চাটি আমাদের কাছেই আছে। কিন্তু দেখে মনে হচ্ছে বাচ্চাটিকে খুব মেরেছে এই খারাপ মহিলা।”
- আমরা আসছি। তানিয়াকে আটকে রেখো।”
- ওকে স্যার।”
ফোন রেখে আরিয়ান মানহার দিকে তাকিয়ে বলে। - মাওয়া সুস্থ্য আছে। সবাই চলো।”
- কোথায়ও?”
আরিয়ান প্রশ্নের উত্তর না দিয়েই বের হয়ে যায়। ওর পিছনে সবাই চলে যায়।
কালাপাহাড় সিলেট তথা দেশের এ অঞ্চলের সর্বোচ্চ পাহাড়চূড়া। উচ্চতা প্রায় ১১০০ ফিট। স্থানীয়রা এই পাহাড়কে বলে ‘লংলা পাহাড়’। এর এক পাশে কুলাউড়া, অন্য পাশে জুড়ি উপজেলা ও ভারত সীমান্ত দিয়ে ঘেরা এই পাহাড় বেশ দুর্গমও বটে।
চা বাগানের রাস্তা শেষে পাহাড়ি পথ ধরে বেগুনছড়া পুঞ্জির উদ্দেশে তারা যেতে লাগলো।
ঘণ্টাখানেক পর অবশেষে ওরা এসে পৌঁছলাম কালা পাহাড়ের চূড়ায়। তানিয়াকে কয়েকজন ধরে রেখেছে। মিস্টার রাজীবের কোলে মাওয়া ঘুমিয়ে আছে। মানহা দৌঁড়ে গিয়ে মাওয়াকে কোলে নিয়ে চুমু দিতে থাকে। সোনালী গিয়ে তানিয়াকে কষে একটা থাপ্পড় মারে।
- ছিঃ তোমার মত নিচ মেয়ে আমি খুব কম দেখেছি। তোমাকে তো মন চাচ্ছে এক্ষুনি এই পাহাড় থেকে ধাক্কা মেরে ফেলে দেই।”
- তুমি এইদিকে আসো সোনালী। ওর ব্যাবস্থা আমি করবো।”
আরিয়ানের কথায় সোনালী চলে আসে। আরিয়ান তানিয়ার সামনে যায়। কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থেকে আচমকাই চড় বসিয়ে দেয় তানিয়ার গালে।
- তোকে এতদিন আমি নিজের কাছের একজন ভেবে এসেছি আর তুই কি-না আমার পিছনেই ছুরি দিচ্ছিস। আমার সব কিছু কেরে নিতে চেয়েছিস তুই। সব কিছু জানা সত্বেও তোকে কিছু বলেনি আমি কিন্তু কি হলো তুই তো তোর ওই নাগিন রূপ কখনো ছাড়তে পারবি না সেই জন্যই সুযোগটি নিতে চাইলি না।”
ইতি আরিয়ানের কথা মাঝে বলে উঠলো। - লেখক দুলাভাই এই মেয়েটা কিন্তু প্যাকাটি, কটকটি, রাণী মনি মল্লিকা, নাগিনের শীর্ষা, ইয়ামিনি সবাইকে হার মানাবে। খল নায়িকা হিসেবে পুরস্কার কিন্তু ওই পাবে আমি সিউর।”
আরিয়ান রাগী চোখে ইতির দিকে তাকিয়ে থাকে। হৃদয় ইতির মুখ চেপে ধরে বলে।
- অফ যাও তানাহলে পরের থাপ্পড় কিন্তু তোমার গালে এসে পড়বে।”
- তুমি আমাকে মারবে?”
- উহু। তোমার লেখক দুলাভাই মারবে।”
ভয় পেয়ে ইতি মুখে আঙ্গুল দিয়ে রাখে।
- তোর গায়ে কোনোদিন আমি হাত তুলতে পারতাম না। প্রথম তোকে এইভাবেই পুলিশের হাতে তুলে দিতে চেয়েছিলাম কিন্তু তুই এই ছোট বাচ্চার সাথে যা করতে চেয়েছিস তোকে তো কোনো ভাবেই ক্ষমা করা যায় না।”
আরিয়ান আরো কয়কটা থাপ্পড় মারে তানিয়াকে। থাপ্পড় খেয়ে তানিয়া পরে যায় আরিয়ান আবারো তাকে উঠিয়ে মারতে থাকে।
মানহা আরিয়ানের হাত ধরে ফেললো। - ওকে ছেড়ে দাও। পুলিশ যা করার ওকে আর ওর বন্ধুকে করবে।”
- নাহিদ মারা গেছে মানহা।”
মানহা যেনো নিজের কানকে বিশ্বাস করাতে পারছে না। যত যাই হোক দুই বছর সংসার করেছে ও। ওর মেয়ের বাবা ছিলো ও। স্বামী যতই খারাপ হোক না কোনো স্ত্রী তার স্বামীর মৃত্যু চায় না।
-নাহিদ তো ওর সব খারাপ কাজের সঙ্গী ছিলো তাহলে ওকে কেনো খুন করলো ও?”
আরিয়ান তানিয়ার দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞাসা করলো
- বল কেনো নাহিদকে মেরেছিস?”
- আমি নিজ ইচ্ছাতে মারতে চাইনি। কিন্তু ও আমার সাথে বেইমানি করে। নাহিদ ওর মেয়েকে বাঁচাতে চেয়েছিলো তার জন্য ওকে আমি মেরে ফেলি। মাওয়াকে আমার কোল থেকে কেড়ে নিতে চেয়েছিলো নাহিদ তাই ওকে সরাতে গিয়ে ধাক্কা মারি আমি কিন্তু আমি খেয়াল করিনি ও একদম পাহাড়ের কিনারায় ছিলো। ও তাল সামলাতে না পেরে পরে যায়।”
মানহা মাওয়াকে কোলে নিয়ে কাঁদতে থাকে। আয়ান মানহার কাছে আসে।
- এতদিন পর ও ওর সন্তানের মর্ম বুঝেছিল কিন্তু ওর পাপ এতই বেশি ছিল তাই প্রকৃতি ওর বিচার করেছে। হুম কষ্ট হচ্ছে আমার নাহিদের জন্য। কিন্তু এই বলেই মনকে সান্তনা দেওয়া উচিত নাহিদ ওর পাপের সাজা পেয়েছে।”
পুলিশ আসে তানিয়াকে নিয়ে চলে যায়। তানিয়ার শাস্তি যে মৃত্যুদণ্ড হবে সবাই জানে।
আরিয়ান, আয়ান, হৃদয়, সোনালী, ইতি ও মানহা একত্রে বসে আছে। সবাই চুপচাপ। সোনালী ভয়ে আছে। তবুও কাপা কাপা গলায় বললো,
-আমি জানি লেখক সাহেব আর আপু দুজনকে দুজন খুব ভালোবাসে তাই আমি চাই ওনার আর আপুর এই ভালোবাসা একটা পবিত্র সম্পর্ক জড়িত হোক।”
সোনালী এমন কথায় মানহা ও আরিয়ান দুজনেই তাকিয়ে আছে সোনালীর দিকে। আয়ান চুপ করে মানহার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। আয়ান জানতে চাচ্ছে মানহার মতামত।
- সোনালী তুই কি পাগল হয়ে গেছিস? আরিয়ান এখন তোর স্বামী। এমন বাজে কথা বলা বন্ধ কর।”
- নাহ আপু আমি বাজে কথা বলছিনা। তুই কিন্তু লেখক সাহেবের প্রথম ভালোবাসা ছিলি। কোনো একটা #মিথ্যা_অপবাদে তোদের সম্পর্ক শেষ হয়ে যায় আমি চাই তোরা আবারো নিজেদের জীবন নতুন করে শুরু কর। চিন্তা করিস না আমি ওনাকে ডিভোর্স দিয়ে দিবো যেনো তোদের পরবর্তীতে কোনো সমস্যা না হয়।”
ডিভোর্সের কথা শুনে আরিয়ানের বুক কেঁপে উঠলো। মনে হচ্ছে কেউ তার বুকে হাজার হাজার তীর বিঁধে দিচ্ছে। - থাপ্পড় মেরে সব দাঁত ফেলে দিবো যদি আরেকবার ডিভোর্সের কথা বলো তুমি।”
না চাওয়া সত্বেও বলে ফেললো আরিয়ান। কথা বলা শেষে মানহার দিকে তাকালো। মানহার মুখে হাঁসি। মানহা তখন সোনালীর কাছে গিয়ে সোনালীর হাত দুটি নিজের হাতে চেপে ধরে বললো,
- তুই জানিস প্রথম ভালোবাসা যদি শেষ ভালোবাসা না হয় তাহলে ভালোবাসা কি বুঝা যায় না। প্রথম ভালোবাসা অনেকেই বাসে কিন্তু শেষ ভালোবাসা কয়জন বাসে? প্রথম ভালোবাসা আর শেষ ভালোবাসার পার্থক্য কি জানিস?”
সোনালী উত্তর দিলো। - উহু।”
মানহা আয়ানের দিকে তাকালো। আয়ানের চোখে এখনো প্রশ্ন প্রকাশ পাচ্ছে। মাওয়ার দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলো। - প্রথম ভালোবাসা ও শেষ ভালোবাসার সব চেয়ে বড় পার্থক্য হলো, দিন শেষে সব সময় শেষ ভালোবাসা বিজোয়ী হয়। আমার আরিয়ানের ভালোবাসাটা ছিলো ভালোলাগা হতে পারে ভালোবাসাও। কিন্তু সেই ভালোবাসার জোর শক্তি খুব কম ছিল তাই আমরা আলাদা হয়ে গেছি। কিন্তু তোর আর আরিয়ানের ভালোবাসার জোর কিন্তু অনেক তাই বিপদ আসার পরও তোরা আলাদা হতে পারলি না। তোদের ভালোবাসার জোড় আছে বলেই তোরা একসাথে এখনও আছিস। যেদিন আমি আরিয়ানকে ছেড়ে এসেছিলাম ওইদিন আরিয়ানের চোখে অশ্রু ছাড়াও আমি রাগ, ঘৃনা দেখেছিলাম কিন্তু যখন তুই ওকে ছেড়ে যাওয়ার কথা বলছিস ওর চোখে আমি অশ্রু আর ভয় দেখতে পাচ্ছি। ভয়টা হলো তোকে হারানোর ভয় পাগলী। আরিয়ান খুব ভালো। হুম এখন একটু নিরব ও কড়া স্বভাবের মানুষ হয়ে গেছে তুই তোর ভালোবাসা দিয়ে সেটা মেনে নিতে পারবি তোর কষ্ট হবে না বরং খুব ভালো লাগবে তখন। ভালোবাসার মানুষকে এইভাবে হারিয়ে ফেলিস না বোন আমার।”
- কিন্তু আপু তুমিও তো ওনাকে খুব ভালোবাসো।”
- দুর পাগলী। আমার ভালোবাসাটা এখন এক তরপা। তাছাড়া আমি আরিয়ানকে না দেখে, ওর সাথে যোগাযোগ না রেখে এতটা বছর থাকতে পেরেছি। একবারও ওর কোনো যোগাযোগ নেই নি এমনকি ওর কথা আবার বেশি মনেও পড়তো না। কিন্তু তোরা দুইজন দুইজনকে ছাড়া এক মুহূর্তও থাকতে পারবি না আমি জানি। তাছাড়া এই এত বছরে আমার আরিয়ানের কথা যতবার মনে হয় নি তার হাজার বার অন্য একজনের কথা মনে পড়েছে আর আমি জানি সে আমাকে খুব ভালোবাসে তার জন্য সে এখনও বিয়ে করেনি। আমাকেই খুঁজে বেরুচ্ছে সে এখনো।”
মানহার কথায় সবাই অবাক হয়ে জিজ্ঞাসা করলো।
—কে সে?”
-আয়ান।”
আয়ান এখন ‘থ’ মেরে আছে। হৃদয় তখন বললো,
- কিন্তু আমার জানামতে ভাইয়া তো কোনোদিন বিয়ে করবে না বলে ভেবে রেখেছে তাহলে কিভাবে?”
মানহা আয়ানের দিকে তাকালো। - আমি গতকাল ওর ব্যাগ থেকে একটা ডাইরি পাই যাতে আমার সাথে দেখা হওয়া থেকে সব ছিলো। প্রথম প্রথম বন্ধু ভেবেই এসেছে ও। কিন্তু যখন আমার আর আরিয়ানের সম্পর্কের কথা শুনলো তখন থেকে ও বুঝতে পেরেছে ও আমায় ভালোবাসে কিন্তু একবারও মুখ ফোটে বলেনি। আমাকে এতদিন ধরে খুঁজে এসেছে ও। আমি ছাড়া ওর জীবনে অন্য কোনো মেয়েকে ও বসাতে পারবে না সেই জন্য এখনও সে বিয়ে করেনি। কেউ জিজ্ঞাসা করলে বলে, জীবনে বিয়ে করবে না। ও ভেবেছে আমি আর কোনোদিন ওর হবো না। এখন আরিয়ান যদি আমায় ভালোবাসতো তাহলে কোনো দিনেই সোনালীকে বিয়ে করতে পারতো না।”
মানহা কথা বলা শেষ করে নিরবে কাঁদতে থাকে। আয়ান মানহার নিরব মুখের দিকে তাকিয়ে আছে। পরিবেশটা খুব শান্ত ও নিরব। হৃদয় তখন ইতিকে ফিসফিসিয়ে বললো,
- যখন কথা বলা দরকার তখন বলো না আর যখন কথা বলার দরকার নাই ঠিক তখনি মুখ দিয়ে যেনো খই ফোটে।”
- কি বলবো এখন আমি?”
- শুনো তুমি এমন একটা কথা বলো যেনো সব ঠিক হয়ে যায়।”
- চুল কি সেই কথা?”
হৃদয় রাগী দৃষ্টিতে তাকালো ইতি তখন হুট করেই বললো, - ইসসসসসস আরিয়ান আর আয়ান ভাইয়া যে কি বোকা। এখন যে প্রপোজ করতে হবে সেই কথা বুঝতে পারছে না।”
ইতির এমন কথা শুনেই ওরা চারজন অস্বস্তি বোধ করলো। হৃদয় নিজের কপালে কয়েকটা থাপ্পড় দিয়ে বললো, - এমন গাঁধী মেয়ে আমার কপালেই জুটতে হলো কেনো? আল্লাহ!”
ইতি রাগ দেখিয়ে চলে যায়। পিছন পিছন হৃদয়ও চলে যায়। আয়ান যে মানহাকে ভালোবাসে খুব ভালো ভাবেই বুঝতে পারলো আরিয়ান কিন্তু মানহা কি আয়ানকে ভালোবাসে তা এখনও বুঝতে পারে নাই তাই ওদের আলাদা একটু কথা বলার জন্য সময় দিতে চায় আরিয়ান। তাই সোনালীকে বললো,
- সোনালী তোমার সাথে ইম্পর্টেন্ট কথা আছে আমার চলো।”
আরিয়ানের পিছন পিছন সোনালী চলে যায়।
মানহা আয়ান দাঁড়িয়ে আছে। মাওয়া ঘুমিয়ে আছে বিছানায়। দুইজন চুপ করে আছে। নিরবতা ভেঙ্গে আয়ান বললো, - সরি।”
- হটাৎ সরি কেনো?”
- তোমার পারমিশন ছাড়া তোমাকে পছন্দ ও ভালোবাসার জন্য।”
আয়ানের এমন বোকা বোকা কথা শুনে হাসলো মানহা। - আমিও তো এমন বোকা বোকা কথার মানুষটিকে পারমিশন ছাড়াই ভালোবেসে ফেলেছি। এখন কি আমাকেও সরি বলতে হবে?”
- তুমিও আমায় ভালোবেসে ফেলেছো? কিন্তু কিভাবে?”
–” কিভাবে বলতে পারবো না শুধু জানি যেভাবেই হোক ভালোবেসে ফেলেছি।”
আয়ান আনন্দে, খুশিতে মানহাকে জড়িয়ে ধরে। যখন হুস ফিরল তখন ছেড়ে দিয়ে আবারো বললো, - সরি।”
- এই লোকটাকে নিয়ে কি যে করি, কথায় কথায় সরি বলাটা যেনো ওনার বাক্য হয়ে গেছে।”
আয়ান মাথা চুলকিয়ে হাসলো। তখনি মাওয়ার কান্নার শব্দ। দুইজনেই ব্যাকুল হয়ে মাওয়াকে কোলে নিতে গিয়ে মাথায় বারী খেলো ও একজনের হাতে আরেকজনের হাত পড়লো। মানহা মাওয়াকে রেখে উঠে পড়লো। আয়ান মাওয়াকে কোলে নিয়ে বললো, - আজ থেকে আমার মেয়ের আশে পাশে কোনো শত্রু এলাও করবো না আমি। নিজের জীবন দিয়ে হলেও আমার মেয়েকে বাঁচাবো আমি। মানুষের কু নজর থেকে রক্ষা করবো আমি আমার মেয়েকে। কোনো বিপদ ছুঁতে দিবো না আমি। সমাজের কোনো বিপদেই স্পর্শ করতে দিবো না আমার মেয়েকে।”
আয়ানের প্রতি মানহার আবারো শ্রদ্ধা বোধ বেড়ে গেলো। - আমার মেয়ে খুব ভালো ভাগ্য যে তোমার মত একজন বাবা পাবে ও।”
মানহা আয়ান মাওয়াকে আগলে রেখে দুইজন দুজনের দিকে তাকিয়ে সুখের হাঁসি হাসলো। - আমি গাঁধী তাই না?”
-একদম না। কে বলেছে তুমি গাঁধী?” - কথা ঘুরাবে না?”
- আরেহ বোকা মেয়ে বুঝো না কেনো ওইসব বলে তোমাকে রাগিয়ে দিয়ে আমরা চলে এসেছি। আমি দেখেছি ব্রো আর ভাবীও আলাদা চলে গিয়েছে। এখন ওদের দুই কাপলকে আলাদা সময় দেওয়া উচিত তার জন্যই এইভাবে চলে আসা বুঝছো।”
ইতির মাথায় টুকা দিয়ে বললো হৃদয়। ইতি মাথায় হাত বুলিয়ে বললো, - হ্যাঁ বুঝছি তাই বলে এত জোড়ে টুকা দিতে হবে?”
- ব্যাথা পেয়েছো বেশি দেও আমি এক্ষুনি সারিয়ে দিচ্ছি।”
ইতির কপালে ভালোবাসার পরশ একে দিলো হৃদয়। ইতি লজ্জা পেয়ে হৃদয়ের বুকে মুখ লুকালো। হৃদয় ইতিকে জড়িয়ে ধরে বললো, - আমি যে এই দুষ্টু ও বোকা মেয়েটাকে খুব ভালোবাসি। জানি সেও খুব ভালোবাসে কিন্তু মুখে প্রকাশ করতে চায় না।”
মন খারাপের ভান করে বললো হৃদয়। - এই তো প্রকাশ করছি আমিও খুব ভালোবাসি এই ফাজিল ছেলেটাকে খুব খুব খুব।”
হৃদয় এত শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো ইতিকে। ইতির কাছে মনে হচ্ছে এই বুকে সে অনেক অনেক বছর এইভাবেই মুখ গুজে বাঁচতে পারবে। খুব শান্তি এই বুকে। - তোমার সাহস তো কম না আমাকে ডিভোর্স দেওয়ার কথা বলো?”
- আপনার মত ভয়ানক মানুষের বউ যদি এমন না হয় তাহলে কি করে আপনাকে সামলাবে বলেন শুনি?”
- বাহ এখন আমার সাথেই পাঙা নিতে চাচ্ছো। সাহস অনেক বেশি হয়ে গিয়েছে তাই না?”
- একদমেই না। আপনার সাথে সংসার করার জন্য আরো অনেক সাহস দরকার আমার।”
- কেনো?”
- যে ভয়ংকর গল্প লিখেন। গল্প পড়লে তো হার্ট অ্যাটাক হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয় আমার।”
- তাহলে কি ধরনের গল্প লেখা উচিত আমার?”
- রোমান্টিক, ইসলামিক, অ্যাডভেঞ্চার এই রকম। আর মাঝে মাঝে থ্রিলার লিখতে পারেন।”
- রোমান্টিক গল্প লিখতে হলে আগে তো নিজেকে রোমান্টিক স্বামী হতে হবে তাই না?”
- একদমেই। এই না না।”
সোনালীর কোমরে হাত রেখে সোনালীকে নিজের কাছে মিশিয়ে সোনালীর ঠোঁট জোড়া দখল করলো আরিয়ান। - ঠিক আছে এখন?”
- জানি না।”
লজ্জা পেলো সোনালী। আরিয়ান সোনালীকে কোলে তুলে নিয়ে বললো,
- ওরে আমার লজ্জাবতীরে। জানো কি? প্রেম মানে হৃদয়ের টান,
প্রেম মানে একটু অভিমান,
২টি পাখির ১টি নীর,
১টি নদীর ২টি তির
২টি মনের ১টি আশা তার নাম ভালবাসা।
- যতো ভালবাসা পেয়েছি, তোমার কাছ থেকে। দুষ্টু এই মন চায়, আরো বেশি পেতে। কি জানি, তোমার মধ্যে কি আছে। কেনো যে এ মন চায়, তোমাকে আরো বেশি করে কাছে পেতে। আই লাভ ইউ লেখক সাহেব। ”
- লাভ ইউ টু লেখক সাহেবের ওনলি ওয়ান বউ।”
অটুট থাকুক তাদের ভালোবাসা। এমন মিথ্যা অপবাদের জন্য হারিয়ে না যায় সত্যিকারের ভালোবাসার মানুষ গুলো। ভালোবাসা হলো হৃদয়ের বন্ধন সেই বন্ধন যেনো মিথ্যা অপবাদের কারণে ছিন্ন না হয়।
লেখা – ফারজানা আফরোজ
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “মিথ্যা অপবাদ – Sad love story bangla”গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ূন – জীবন থেকে নেওয়া – সত্য ঘটনা অবলম্বনে