রোদ্দুরে বৃষ্টি – প্রাক্তনকে ভালোবাসার কথা: আশেপাশে কেউ না থাকায় আমি সরাসরি ওকে বললাম, তুই এতো লোভী একটা লোক শ্রাবণ? তোর এতই লোভ যে, এই মেয়েটার পরিবারকেও রাস্তায় নামিয়ে ছেড়েছিস?
মূলগল্প
“প্রাক্তনের বিয়েতে নিজেই যখন সেধে সেধে বরযাত্রী হিসেবে গেলাম, তখন প্রাক্তনের মুখটা দেখার মতো হয়েছিলো। আমি হিয়া, একটা প্রাইভেট ব্যাংকে চাকরি করি। আমার প্রাক্তন শ্রাবণ আমাকে দেখে নিজের চোখকে বোধহয় বিশ্বাস করতে পারছিলো না, চোখমুখ কুঁচকে খানিকক্ষণ তাকিয়ে রইলো। আমি ওর দিকে তাকিয়ে মৃদু হাসলাম।”
“বরযাত্রী সেজে যখন ওর শ্বশুরবাড়িতে বউ আনতে গেলাম তখন গিয়ে দেখি যে, মেয়ের বাড়িতে তেমন কোনো আয়োজন করা হয়নি। খুব সামান্য আয়োজন, এটাকে বিয়ে বাড়ি কিছুতেই মনে হবে না। মানুষজন খুব একটা নেই, হাতে গোনা কয়েকজন হবে হয়তো! সবকিছু দেখে আমার খুব অবাক লাগছিলো। অথচ শ্রাবণের বাড়িতে ধুমধাম করে ওর বিয়ের আয়োজন করা হয়েছে, বড়লোক বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে বলে কথা।”
“আরও অবাক হলাম যখন দেখলাম বিয়ের কনে অর্থাৎ আমার প্রাক্তন শ্রাবণের হবু বউকে দেখে। মেয়েটা অত সুন্দরী নয়, চোখ ছোট, নাক খানিকটা চ্যাপ্টা! লাল শাড়ি পরে টুকটুকে বউ সেজে বসে আছে। বউকে ঘিরে বসে আছে বউয়ের মা-বাবা, দু’ভাই, আর গুটিকতক আত্মীয় স্বজন। ওরা আমাদের দেখে খানিক খুশি হবার ভান করলো। ওদের দেখে মনে হচ্ছে, এ মেয়েকে তাড়াতাড়ি শ্রাবণের ঘাড়ে চাপিয়ে দিতে পারলে এরা বেঁচে যায়!”
“সবকিছু দেখে আমি অবাক হচ্ছি আর ভাবছি এসব কি হচ্ছে? যে শ্রাবণ বছর চারেক আগে আমি দেখতে ফর্সা নই বলে আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো সে আজ আমার থেকেও বলেন শ্রীহীন একটা মেয়েকে কিভাবে বিয়ে করতে রাজি হলো? অবশ্য আমাকে ছাড়ার আরও অনেক কারণ ছিলো।
তার মধ্যে অন্যতম হলো-আমার পরিবার ওদের মতো এত বেশি টাকার মালিক ছিলো না। আমার পরিবার বিয়েতে ওকে যৌতুক হিসেবে বিশলাখ টাকা দিতে রাজি ছিলো না। এসব ভাবতে ভাবতে আমি হাঁটছিলাম আর এমন সময় দুজন মহিলার কথা আমার কানে এলো। শ্রাবণ এ শ্রীহীন মেয়েকে বিয়ে করার জন্য নাকি যৌতুক হিসেবে পনেরো লাখ টাকা চেয়েছে, মেয়ের পরিবার নিজেদের জায়গা-জমি বিক্রি করে এই শ্রীহীনা মেয়েটাকে তুলে দিচ্ছে শ্রাবণের হাতে। যার ফলে তারা বিয়েতে তেমন ধুমধাম আয়োজন করতে পারেননি।”
“বলা বাহুল্য, শ্রাবণ ছিলো আমার ক্লাসমেট। তাই আমাদের প্রেমের সম্পর্ক হওয়ার পরেও আমরা দুজন তুই তুই-ই বলতাম। একই এলাকা হওয়ায় আমাদের সম্পর্কের কথা প্রায় সবাই জানতো এবং বেস্ট জুটি বলতো। খুব ভালোবাসতাম ওকে। কিন্তু ওর লোভের কাছে আমার ভালোবাসাটাও ফিকে হয়ে গিয়েছে সময়ের সাথে সাথে। আর আজ ওর বিয়ের কাহিনী দেখে মনের কোণে ওর জন্য একটু একটু করে জমা হচ্ছে ঘৃণা আর ঘৃণা। আমি প্যান্ডেলে বরের সাজে বসে থাকা শ্রাবণের কাছে গেলাম।
আশেপাশে কেউ না থাকায় আমি সরাসরি ওকে বললাম, তুই এতো লোভী একটা লোক শ্রাবণ? তোর এতই লোভ যে, এই মেয়েটার পরিবারকেও রাস্তায় নামিয়ে ছেড়েছিস? আবার তুই-ই কলেজ লাইফে যৌতুকের বিরুদ্ধে আন্দোলন করতি? হাহ, হাস্যকর।”
“আমার কথা শুনে শ্রাবণের ফর্সা চেহারায় রাগ ফুটে উঠলো। নিচু স্বরে বললো, তোর এসব ডায়লগ এখানে ঝাড়ছিস কেন? তোর তো সেটুকু দেওয়ারও মুরোদ ছিলো না। দেখি, তোকে কে বিয়ে করে টাকা ছাড়া। একটা মাইয়্যারে বিয়ে করে নিয়ে যাবো আর বসায়া বসায়া খাওয়াবো নাকি? এটাকে যৌতুক বলবি না, এটা শ্বশুরবাড়ি প্রদত্ত উপহার। দেখি, কে তোরে উপহার ছাড়া বিয়ে করে! আমার মতো সুন্দর পুলিশ অফিসার ছেলে কই পাস? “
“শ্রাবণের এসব কথা শুনে রাগে আমার শরীর জ্বালা করতে লাগলো আমার। এমন সময় পেছন থেকে প্রথম বললো, হিয়া! ওদিকে কি করছো? বলেই আমার কাছে এগিয়ে এলো। আমাকে শ্রাবণের সাথে কথা বলতে দেখে শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে একটা হাসি দিলো। হ্যান্ডশেকের জন্য হাতটা বাড়িয়ে দিয়ে বললো, আসসালামু আলাইকুম! কংগ্রাচুলেশনস আপনার নতুন জীবনের জন্য।”
“শ্রাবণ অবাক হয়ে বললো, আপনাকে তো চিনলাম না? “
“প্রথম হেসে বললো, আমি হিয়ার হাজব্যান্ড। আমি কিন্তু আপনাকে চিনি, আপনি হিয়ার বন্ধু!”
“শ্রাবণ হতভম্ব হয়ে আমার দিকে তাকালো। তারপর বললো, ওহহ!”
“প্রথম আমাকে বললো, হিয়া চলো।”
“আমি প্রথমের দিকে তাকিয়ে বললাম, আপনি যান আমি আসছি।”
“প্রথম মিষ্টি হাসি দিয়ে বললো, ঠিক আছে। আমি গাড়িতে ওয়েট করছি, এসো!”
“প্রথম চলে যাওয়ার পর আমি শ্রাবণের দিকে তাকিয়ে বললাম, দেখলি তো কে আমাকে বিয়ে করেছে? তোর থেকে হাজারগুণ সুন্দর দেখতে একজন আর্মি অফিসার আমাকে বিয়ে করেছে। ইভেন আমাদের ধুমধাম করে বিয়ে হয়েছে, বিয়েতে যৌতুক হ্যাঁ তোর কথা অনুযায়ী বিয়েতে এক টাকার গিফট উনি বা উনার পরিবার নেননি। কারণ তোদের মতো ভিক্ষুক নন উনারা যে, টাকার বস্তার উপর বসেও বাড়ির বউকে খাওয়াতে পারবে না।
তুই যখন আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলি তার কিছুদিন পরেই এই মানুষটার সাথে আমার বিয়ে হয়। আমাকে পাগলের মতো ভালোবাসে। তোর সাথে আমার প্রেমের সম্পর্কের কথা জেনেও উনি তোর বিয়েতে আমাকে নিয়ে এসেছেন শুধু আমার কথায়। উনার মতো ভালো তুই কখনো ছিলিও না, আর হতেও পারবি না। শুধু একটা অনুরোধ, নিজের বিয়ে করা বউকে কখনো কষ্ট দিস না, পারলে ভালোবাসিস। আসি!”
“বলেই চলে এলাম। একবারও পিছনে ফিরে তাকাইনি। তাও জানি, শ্রাবণ মুখ হা করে অবাক হয়ে আমার দিকে তাকিয়ে আছে। আমি এগিয়ে গেলাম সামনে। কারণ আমার ভালো থাকার, ভালোবাসার মানবটি, আমার চোখে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ব্যক্তিটি গাড়িতে আমার জন্য অপেক্ষা করছে।”
“বৃষ্টি হচ্ছে প্রচন্ড। গাড়ি এগিয়ে চলেছে। যেদিন শ্রাবণ আমাকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলো সেদিন প্রচুর বৃষ্টি হয়েছিলো, সাথে আমার মনও ভিজেছিলো একরাশ কষ্টের বৃষ্টিতে। আর আজ আমার মন ভিজছে সৃষ্টিকর্তা প্রদত্ত প্রিয় মানুষটাকে পাওয়ার আনন্দের বৃষ্টিতে। রোদ্দুরের সোনাঝরা আলোর মতোন যেন বৃষ্টির প্রতিটি ফোঁটা ঝরছে আকাশ থেকে। ভালোবাসাময় রোদ্দুরের বৃষ্টি!”
“এজন্যই বোধহয় বলে, যে চলে যেতে চায় তাকে যেতে দেওয়া উচিৎ। কারণ সৃষ্টিকর্তা তোমার ভাগ্যে আরও ভালো কাউকে রেখেছেন।”
লেখাঃ ইশরাত জাহান ফারিয়া
সমাপ্ত
(পাঠক আপনাদের ভালোলাগার উদ্দেশ্যেই প্রতিনিয়ত আমাদের লেখা। আপনাদের একটি শেয়ার আমাদের লেখার স্পৃহা বহুগুণ বাড়িয়ে দেয়। আমাদের এই পর্বের “রোদ্দুরে বৃষ্টি”গল্পটি আপনাদের কেমন লাগলো তা কমেন্ট করে অবশ্যই জানাবেন। পরবর্তী গল্প পড়ার আমন্ত্রণ জানালাম। ধন্যবাদ।)
আরো পড়ুন – ধার্মিক আদর্শ বউয়ের বখাটে স্বামী – ১ম পর্ব