একজন পতিতার গল্প

একজন পতিতার গল্প – কষ্টের ভালোবাসার গল্প

একজন পতিতার গল্প – কষ্টের ভালোবাসার গল্প: রিমি, আজকে রাতে নতুন এক কাস্টমার আসছে। রেডি থাকিস। একদম খুশি করে দিবি আজ। লাস্ট কয়েকটা কাস্টমারকে খুশি করতে পারস নাই অভিযোগ করেছে।

  • জ্বি আপা চেষ্টা করমু। আসলে আগের কয়েকদিন শরীর ভালা ছিল না আপা। আজকে একটু ভালা লাগছে। একদম খুশি কইরা দিমু।
  • আচ্ছা এখন যা। কিছুক্ষণ পরেই কাস্টমার আসবে। রেডি হয়ে বসে থাক। খুব পয়সা মাল শুনেছি। তুই আজকে খুশি করে দিলে রেগুলার আসবে তোর কাছে।
  • জ্বি আপা।

এই বলে আমি রেডি হতে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর কাস্টমার আসবে। আমি আজকে নতুন এক পুরুষকে আমার শরীর বিলিয়ে দিব। এর আগেও অনেক জনের সাথে আমি বিছানায় শুয়েছি। কাস্টমার আসছে। শিউলি আপা কাস্টমারকে আমার রুমে এনে দিয়ে গেল।

  • আসেন শুরু করেন। কাপড় খুলমু?
  • দাঁড়া আগে তোর সাথে পরিচয় হয়ে নিই।
  • পরিচয় হওয়ার দরকার কি? আমার লগে শুইতে আইসেন শুইয়া যান। আসেন শুরু করেন। একদম খুশি কইরা দিমু আপনারে।
  • আচ্ছা আয়।

আমি নিজের শরীর লোকটিকে বিলিয়ে দিলাম। প্রতি রাতে কারো না কারো সাথে রাত কাটাতে হয় আমার। প্রতি রাতে লোকেরা আমাকে নিজেদের খাদ্য হিসেবে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খায়। কি আর করবো এই তো আমার কাজ। এই কাজ না করলে তো ওরা আমাকে মেরে ফেলবে। এর আগে অনেক চেষ্টা করেছি পালাবার জন্য। কিন্তু প্রতিবার ধরা পড়েছি। ভাগ্যের দোষ দিয়ে ২বছর ধরে রয়ে গেলাম এই পতিতালয়ে।

গ্রামের মেয়ে আমি। বাবা মার আদরের মেয়ে ছিলাম খুব। বাবার খুব ইচ্ছা ছিল আমাকে অনেক পড়ালেখা করাবে। কিন্তু বাবার ইচ্ছাটা হয়তো ইচ্ছায় রয়ে গেল। জানি না বাবা মার আমাকে মনে আছে নাকি ভুলে গেছে। শহরে এসেছি প্রায় ২বছর। এই ২বছরের তাদের কোনো খবর পায়নি।


পর্ব- ০২

আমার বাবা গ্রামে ছোটোখাটো একটা ব্যবসা করতো। বাবা মা আর আমার ছোট্ট একটা সংসার ভালোই যাচ্ছিল। বাবা মার চোখের মণি ছিলাম। পড়ালেখায়ও ভালো ছিলাম খুব। বাবার শখ ছিল আমাকে পড়ালেখা করিয়ে শহরে বড় ঘরে বিয়ে দিবে।

আমি যখন ক্লাস ৯ এ পড়ি তখন রুবায়েতের সাথে আমার পরিচয়। রুবায়েত আমাদের স্কুলে নতুন এসেছে। আমার ক্লাসেই সে ভর্তি হয়। শুনেছি রুবায়েত শহর থেকে এসেছে। রুবায়েতের বাবা আর আমার বাবা আগে থেকেই পরিচয় ছিল। রুবায়েতের সাথে আমার ভালোই বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল। আমি প্রায় রুবায়েতের বাসায় যেতাম। রুবায়েতও আমাদের বাসায় আসতো। কিন্তু রুবায়েতের বাবা আমার দিকে যেন কেমন দৃষ্টিতে যেন থাকিয়ে থাকতো। তবে আমার মনে খারাপ কোনোকিছু ছিল না। আর তখন বয়সও কম ছিল তাই পড়ালেখা আর খেলাধুলার দিকেই ঝোঁকটা বেশি ছিল।

আজ রুবায়েত স্কুলে আসেনি। তাই আমি রুবায়েতের বাসায় গেলাম। আমি তাদের বাসায় গিয়ে দেখি রুবায়েতরা বাসায় নাই। কিন্তু তাদের বাসায় চাচা ছিল। আমি রুবায়েতের বাবাকে চাচা ডাকি।

  • আসসালামুয়ালাইকুম। চাচা। রুবায়েত কই?
  • ওরা তো শহরে গিয়েছে কাল রাতে। আমাদের এক আত্মীয় হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়ে তাই ওইখানে গিয়েছে। আয় তুই বস।
  • না চাচা রুবায়েত যখন নেই তখন বসবো না।

আমি বাসা থেকে বের হয়ে যাব ওই সময় চাচা আমার হাত ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিল। আর গিয়ে দরজা বন্ধ করে দিল।

  • একি চাচা কি করছেন? দরজা বন্ধ করছেন কেন চাচা?
  • চুপ করে বসে থাক। অনেক দিনের অপেক্ষায় ছিলাম এই দিনের।
  • কোন দিনের চাচা? কি বলছেন এইসব?
  • তুই একদম চুপ করে থাকবি। আমি যা করবো মুখ বুঝে সহ্য করবি।

এই বলে চাচা আমি বিছানায় শুয়ে আমার কাপড় খুলতে লাগলো।

  • চাচা আমার কাপড় খুলছেন কেন? ছাড়ুন আমাকে চাচা।
  • একদম চুপ থাক।

আমি চিৎকার করতে যাব ওই সময় চাচা আমার মুখ চেপে ধরে। আমার মুখ কাপড় দিয়ে বেঁধে দেয় যেন আমি চিৎকার করতে না পারি। খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল। চাচা আমাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল। আমি আগে শুনেছি মানুষের নাকি ধর্ষণ হয়। কিন্তু ধর্ষণ জিনিসটা কি জানতাম না। আজকে আমি সেই ধর্ষণের শিকার হলাম। আগে শুনেছি ধর্ষণের পর নাকি মেরে ফেলে তাহলে আমাকেও কি মেরে ফেলবে!

চাচা আমাকে ভোগ করার পর আমার মুখ খুলে দিল।

  • চাচা একি করলেন আপনি? নিজের মেয়ের মত মেয়ের সাথে এইসব করতে পারলেন?
  • ধুর রাখতো তোর মেয়ে। তুই একটা খুব ভালো মাল। তোকে শহরে বিক্রি করতে পারলে অনেক টাকা ইনকাম হবে।

আমি আমি কান্না করতে লাগলাম। চাচা আমাকে দুইটা তাপ্পড় দিল।

  • এই মেয়ে একদম চুপ থাক। বাসায় কেউকে কিছু বলবি না। যদি বলস তাহলে তোর মা বাবাকে মেরে ফেলবো আমি।
  • না চাচা। আপনি এইটা করবেন না। আপনার দোহাই লাগে। আমি কেউকে বলবো না।
  • যদি বলোস দেখে নিস আমি কি করি!যা এখন বাসায় যা।

আমি খোঁড়াতে খোঁড়াতে বাসায় গেলাম। খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল। কিন্তু আমি তো বাসায় কেউরে কিছু বলতে পারবো না। বললে চাচা মা বাবারে মেরে ফেলবে।

  • কিরে রিমি খোঁড়াচ্ছিস কেন? (মা)
  • না মা তেমন কিছু না। খেলতে গিয়ে পড়ে গেছি।

আমি মাকে কিছু বলতে পারলাম না। আমার খুব যন্ত্রণা হচ্ছিল। আমি বাসায় বলে দিলে তো চাচা মেরে ফেলবে বলেছে। না থাক কথাটা আমার মধ্যেই রাখি।

  • আচ্ছা যা গোসল করে নে। গোসল করে খেতে আয়।
  • বাবা আসবে কখন?
  • তোর বাবা আজ বাইরে খাবে। তোর বাদশা চাচারা আর তোর বাবারা সবাই মিলে আজকে এক অনুষ্ঠানে যাবে।

বাদশা চাচা রুবায়েতের বাবা। উনির নাম শুনে মনে ভয়টা জেগে উঠলো। কিছুক্ষণ আগে আমার সাথে একি হলো!ভয়ে কেউকে বলতেও পারছি না। শরীরটা খুব যন্ত্রণা করছিল। কিন্তু মা কে বলা যাবে না শরীর যন্ত্রণার কথা। মা যদি বুঝে যায় তখন বিপদে পড়ে যাব।


পর্ব- ০৩

আমি ওইদিন রাতে বসে পড়তে ছিলাম। কিন্তু আমার মন কিছুতেই আমার পড়ায় ছিল না। আমি কেমন যেন একটা ঘোরের মধ্যে ছিলাম। কি হয়ে গেল আজকে আমার সাথে? আমি আজ ধর্ষণের শিকার হলাম। শুনেছি ধর্ষিতাদের সবাই অনেক অবহেলা করে। আমি কেউকে বলবো না আমাকে যে চাচা আজ ধর্ষণ করেছে। আমি এই সব কথা ভাবতেই লাগলাম। জানি না আমার ভাগ্যে কি আছে।

  • রিমি…….ও রিমি……(বাবা)

আমার কোনো উত্তর নেই। বাবার কাছে এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলল

  • কিরে মা কি এতো ভাবছিস?
  • বাবা তুমি আসছো? সকাল থেকে তোমারে দেখলাম না। কই ছিলা সারাদিন?
  • আমি ছিলাম তোর বাদশা চাচার সাথে। তুই বল কেমন আসোস তুই?

আমি বাবাকে জড়িয়ে ধরলাম।

  • বাবা ভালা আছি আমি। বহুত ভালা আছি। আমার জন্য দোয়া কইরো বাবা।
  • কি হয়েছে রে মা তোর? হঠাৎ বাপের জন্য এতো ভালোবাসা কই থেকে আইলো?
  • না বাবা কিছু না। তুমি হাত মুখ ধুইয়া কিছু খাইয়া নাও।

বাবা চলে গেল। আমি আবার নিজের পড়ার দিকে মনোযোগ দিতে চাইলাম। কিন্তু পারলাম না। সকালের দৃশ্য আমার চোখের সামনে বারবার ভেসে উঠছিল। কি হিংস্র মানুষটা। নিজের মেয়ের মতো মেয়ের সাথে এমন করতে পারলো!

এরপর দিন সকালে আমি স্কুলে যাওয়ার জন্য তৈরি হলাম। হঠাৎ আমার মনে পড়লো রেজিষ্ট্রেশনের জন্য তো আজকে টাকা নিয়ে যেতে বলেছে।

  • বাবা..ও বাবা…
  • তোর বাবা তো সকালে শহরে গেসে একটা কামে। সকাল সকালে বাবারে নিয়ে কি করবি?
  • মা আমার স্কুলে টাকা লাগবে।
  • এক কাম কর। তুই স্কুলে যাওয়ার পথে বাদশা চাচার কাছে থেকে টাকা লইয়া যাইস। কইবি তোর বাবা কইসে।

বাবার থেকে টাকা না থাকলে বা বাবা শহরে গেলে টাকার প্রয়োজন হলে বাদশা চাচার থেকেই টাকা নিই আমরা। কিন্তু কাল বাদশা চাচা আমার সাথে যা করলো এতে আমি উনির সামনে যাবো কেমনে? উনি যদি আবার আমার সাথে কিছু করে তখন!

  • মা। তুমি যাইয়া নিয়া আসো। আমি পারবো না।
  • আমি ঘরে মেলা কাজ আছে। তুই তোর বাদশা চাচার ঘরে গিয়া রুবায়েতের লগে একবারে স্কুলে যাইস গা।
  • মা রুবাইয়েতরা তো শহরে গেসে।
  • আমি তো কাল রাতেই রুবায়েতের মায়ের লগে কথা কইসি।

আমি আমার মার কথা শুনে আশ্চর্য হয়ে গেলাম। রুবায়েতরা তো শহরে গেসে। কাল বাদশা চাচা বলসিলো তারা কয়েকদিন শহরে থাকবো। কিন্তু কাল রাতেই তো মা রুবায়েতের মায়ের সাথে কথা বলসে। আমি কিছুই বুঝলাম না। আমার মাথায় সব ঘুরছিল কালকের ব্যাপার।

আমি স্কুল যাওয়ার পথে বাদশা চাচার ঘরে গেলাম ভয়ে ভয়ে। গিয়ে দেখি সবাই বাসাতেই আছে। রুবায়েত তখন স্কুলে যাওয়ার জন্য বের হচ্ছিল।

  • রুবায়েত চাচা কই রে?
  • বাবা তো বাসায় আছে। কেন বাবারে?
  • আচ্ছা তোরা কালকে কই গেসিলি?
  • কেন আমরা তো বাসাতেই ছিলাম।
  • তাহলে স্কুলে যাস নাই কেন?

আমার প্রশ্নটা শুনে রুবায়েত ঘাবড়ে গেল। সে আমার কথা এড়িয়ে গিয়ে চাচারে ডাকতে লাগলো।

  • বাবা….ও বাবা….রিমি আসছে। তোমার কাছে।

চাচা ঘর থেকে বেরিয়ে এলো। এসে আমার দিকে খুবই খারাপ ভাবে তাকিয়ে ছিল।

  • রুবায়েত তুই একটু ওইদিকে যা। কিরে রিমি? কালকে আমারে এতো ভালো লাগসে যে তুই সকালেই আমার কাছে চলে আসলি? আজকে আবার খেলবি নাকি আমার সাথে।
  • চাচা। দোহাই লাগে আপনার এইসব কথা কইবেন না।
  • কি জন্য আসছোস আমার কাছে ওইটা বল।
  • আমার টাকা লাগবো ২০০। বাবা শহরে গেসে মা বলসে আপনার থেকে নিয়ে যাইতে।

চাচা ঘরে গিয়ে টাকা নিয়ে আসলো। আমার হাতে টাকাটা দিল। দেখি ৫০০ টাকার নোট দিল একটা।

  • চাচা ভাংতি দিলে ভালো হয়তো।
  • বাকি টাকা তুই রাইখা দিস। কালকে আমারে যে মজা দিসিলি ওইটার ভাড়া।

চাচার কথা শুনে আমার চোখ থেকে পানি গড়িয়ে পরলো। একটা মানুষ কত খারাপ হলে নিজের মেয়ের মতো মেয়ের সাথে এইসব কথা বলতে পারে!


পর্ব- ০৪

আমি আর রুবায়েত স্কুলে চলে আসি। আমি এখন আগের মত রুবায়েতদের বাসায় যাই না। রুবাইয়েতের সাথে ও তেমন কথা হয় না। দেখতে দেখতে আমার বার্ষিক পরীক্ষা শেষ হলো। আমি তাই প্রায় সময় গ্রামের সমবয়সী মেয়েদের সাথে খেলতাম। একদিন আমি খেলতে যাচ্ছিলাম ওই সময় দেখি বাদশা চাচা ওই রাস্তা দিয়ে আসছিলো।
আমি উনিকে দেখে গাছের আড়ালে লুকিয়ে গেছি। ভেবেছি সে আমাকে দেখেনি। কিন্তু না আমার ধারণা ভুল ছিল গাছের আড়ালে আমার পেছনে এসে বাদশা চাচা দাঁড়িয়ে ছিল। এসে আমার কাঁধে হাত দিল আমি ভয়ে পিছনে ফিরে তাকিয়ে দেখি বাদশা চাচা।

  • চাচা কি চাই আপনার? আমার সম্মানটা তো শেষ করলেন আর কি চাই?
  • তোকে চাই।
  • মানে কি চাচা? আপনি যদি বাড়াবাড়ি করেন তাহলে আমি গ্রামের সর্দারের কাছে আপনার নামে নালিশ দিব।
  • ভয় দেখাচ্ছোস আমারে? যারে ইচ্ছা তারে নালিশ দে। সবাইরে টাকা দিয়া দিলে কেউ কিছু করতে পারবো না। আর একবার নালিশ দিয়া দেখ তোর মা বাপের অবস্থা আমি কি করি?
  • চাচা আমি কেউকে কিছু বলবো না। আপনি আমার মা বাবারে কিছু করিয়েন না।
  • আচ্ছা করমু না। এখন আয় আমার লগে।
  • কই যাবো?
  • আমার তোরে খাইতে ইচ্ছ করতেসে। অনেক দিন হইয়া গেসে তোরে খাই না।
  • চাচা।
  • এতো চাচা চাচা করিস না। আয় আমার লগে। নাহলে আমি এখন লোক নিয়া তোর মা বাবারে উঠায় আনমু।
  • না চাচা আসেন। আমি যাবো আপনার সাথে।

আমি চাচার সাথে চলে গেলাম। আমাদের গ্রামের শেষ প্রান্তে একটা ভাঙা বাড়ি আছে। ওই বাড়িতে আমাকে নিয়ে গেলো। বাড়িটা দেখেই আমার গা চমচম করতে লাগলো।

  • চাচা এই বাড়িতে যাইতে ভয় লাগে।
  • কিছু হইবো না। আজকে তোর সব ভয় আমি কাটাইয়া দিমু।

এই বলে চাচা আমার হাত টেনে ওই ঘরে নিয়ে গিয়ে ২য় বারের মত আমাকে ধর্ষণ করলো। এইবার যেন আরও হিংস্রভাবে আমাকে ধর্ষণ করলো। আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক শেষ করে চাচা বের হয়ে যেতে লাগলো।

  • চাচা আজকে আমারে এইভাবে ধর্ষণ না করলেও পারতেন।
  • কিসের ধর্ষণ? আমি তো আমার শরীরের জ্বালা মিটাইসি। আর হ্যাঁ ধর এই টাকাটা নে। শরীর ব্যাথার ঔষধ কিনা খাইয়া নিস।

আমি বাসায় চলে গেলাম। ওই রাতে আমার জ্বর আসলো। কয়েকদিন পর সুস্থ হয়ে গেলাম। এখন আমি তেমন বাসার বাইরে যাই না। সারাদিন বাসাতেই মন মরা হয়ে বসে থাকি। মা বাবা জিজ্ঞেস করে আমার কি হয়েছে আমি চুপ করে থাকি। কিছুই বলতে পারি না।

২মাস কেটে গেল আমার পিরিয়ড হয় না। আমি বাসায় এই ব্যাপারে জানাইনি। ভাবলাম ঠিক হয়ে যাবে। আমি প্রতিদিন স্কুলে যাওয়ার জন্যই বাসা থেকে বের হতাম। আর এমনিতে সারাদিন বাসাতেই থাকতাম। একদিন স্কুলে গেলাম হঠাৎ আমার খুব বমি শুরু হয়। আমি ওইদিন বাসায় চলে আসি।

  • কিরে রিমি কি হয়সে তোর?
  • কিছু না মা। বমি হয়সে।
  • গরম পড়তাসে খুব তাই হয়তো শরীর দূর্বল। কিছুক্ষণ বিশ্রাম নে।

শরীর খারাপ থাকার কারণে আমি কয়েকদিন স্কুলে যায়নি। আমার বমিটা প্রায় সব সময় হতো।

  • রিমি কি ব্যাপার তোর এখন প্রতিদিন বমি হয় কেন?
  • আমি কি জানি মা?
  • তোর বাবা আসুক আজকে তোরে ডাক্তারের কাছে নিয়া যামু আজকে।

বাবা আসার পর আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওয়া হলো। কিছু টেষ্ট করালো আমাকে। ডাক্তার বলল পরের দিন আবার যেতে। পরের দিন আবার গেলাম ডাক্তারের কাছে। সাথে আমার মাও গেল।

  • তুমি কি বিবাহিত? (ডাক্তার)
  • না তো। কেন ডাক্তার। (আমি)
  • তাহলে পেটে বাচ্চা কোথায় থেকে আসলো?

ডাক্তারের মুখে কথাটা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। তাহলে কি চাচা আমার সাথে যা করলো তাই জন্যই আমার পেটে বাচ্চা আসছে। আমি তখন আমার জ্ঞান হারিয়ে ফেললাম।


পর্ব- ০৫

আমার যখন জ্ঞান ফিরে তখন দেখি আমি আমার বাসায় শুয়ে আছি। আমার জ্ঞান ফিরতেই আমি হাউমাউ করে কান্না করতে শুরু করলাম।

  • মা আমাকে ক্ষমা করে দাও মা।
  • এই বাচ্চা কার রিমি?
  • মা…..
  • সত্যি করে বল কার সাথে তুই এই আকাম কুকাম করসোস?
  • মা আমারে মাফ কইরা দাও। এই বাচ্চারে আমি মাইরা ফেলবো। দরকার হইলে আমারে তোমরা মাইরা ফেল।
  • তোরে আমরা মারমু কেন? তোর লগে যারা এই কাম করসে তারে আমরা শাস্তি দিমু।
  • না মা। ওরে শাস্তি দিতে পারবা না। ওর নাম তোমাদেরকে বললে ওরা তোমাদেরকে মেরে ফেলবে মা।
  • তুই কি নিজের ইচ্ছায় এইসব করসিলি?
  • না মা। ও আমারে বাধ্য করসে। প্রথম বার জোর কইরা করসে। তারপর আমাকে বাধ্য করে করসে।
  • আচ্ছা শুন কথাটা ৫কান হবার আগে তোর এই পেটের বাচ্চা নষ্ট করতে হইবো।

আমার পেটে বাচ্চা আছে এই কথাটা শুনার পর বাবা কেমন যেন নিজেকে শক্ত করে বসে ছিল। কারো সাথে কোনো কথা বলছিল না। আমি বাবার কাছে গিয়ে বাবার পায়ে ধরে মাফ চাইলাম

  • বাবা আমাকে মাফ কইরা দাও। তোমরা আমাকে যা শাস্তি দিবা তা আমি মাথা পেতে নিব।
  • তোরে কেন আমরা শাস্তি দিমু? তোর লগে যারা এই কাম করসে তারে আমরা শাস্তি দিমু। শুধু নামটা কো।
  • বাবা তোমার দোহাই লাগে তার নাম জানতে চাইও না।
  • আচ্ছা। যা এখন বিশ্রাম নে। কাল তোর মায়ের লগে যাইয়া বাচ্চাটারে নষ্ট কইরা আসিস। আমি কাল তোর বাদশা চাচার লগে কথা কইয়া তোরে শহরে পাঠানোর ব্যবস্থা করমু। এই গ্রামে তোরে আর রাখমু না। তোরে শহরে পাঠাইয়া ভালো স্কুলে ভর্তি করামু। তুই ওইখানে পড়ালেখা করবি।

শহর…ছোটো বেলা থেকে ইচ্ছা ছিল শহরে গিয়ে থাকবো। শহরের বড় বড় গাড়িতে করে যাতায়াত করবো। বড় স্কুলে ভর্তি হব। স্কুল শেষ করে কলেজে উঠবো। হাজারো আশা ছিল। কিন্তু শহরে যে এতো হিংস্র পশুরাও থাকে তা আগে জানা ছিল না।

এরপর দিন আমাকে হসপিটালের নিয়ে যাওয়া হলো। আজ আমার পেটের বাচ্চাটাকে মেরে ফেলা হবে। বাচ্চাটার জন্য খুব কষ্ট হচ্ছিল। এই দুনিয়ার আলো দেখার আগে সে বিদায় নিচ্ছে।

আমি কয়েকদিন পর সুস্থ হয়ে গেলাম। বাদশা চাচা আর চাচী আসছে আমাকে দেখতে। চাচার দিকে তাকাতেই আমার ঘৃণা হচ্ছিল।

  • তুই এই কাম করবি আমরা ভাবতে পারি নাই রিমি।
    (চাচা)

চাচার মুখে এই কথা শুনে মনে হচ্ছিল একটা মানুষ কেমনে এতো বহুরূপী হতে পারে। নিজে কইরা আমার নাম দিচ্ছে

  • আমার মেয়ের কোনো দোষ নাই। (বাবা)
  • এক হাতে তালি বাজে না মনে রাইখো। (চাচা)
  • কি আর করার আমার মেয়ের ভাগ্যে হয়তো এইটাই লিখা ছিল।
  • এই মেয়েরে বেশি দিন ঘরে রাইখো না। বিয়া দিয়া দাও। আমার কাছে একটা ভালো সম্বন্ধ আছে।

আমি এখন কোনো ভাবে বিয়ে করবো না। আমি বিয়ে করতে চাই না।

  • বাবা আমি আমি এখন বিয়ে করবো না। (আমি)
  • তুই একদম চুপ থাক। দোষ কইরা আবার বড় বড় কথা কস। (বাদশা চাচার বৌ)
  • চাচী আমি কোনো দোষ করি নাই।
  • তুই চুপ থাক। বড়দের মুখে মুখে কথা কইবি না। তোর বাপ চাচা মিলা যা সিদ্ধান্ত লইবো তাই তুই মাইনা নিবি।
  • মা। তুমি ওদেরকে বুঝাও। আমি বিয়ে করবো না।
  • রিমি মা আমার হাতে কিছু নাই রে মা। তোর বাপ চাচা কি সিদ্ধান্ত নেই দেখ। ওরা তোর ভালোই চাইবো।
  • মা তুমিও আমার মতামতের কোনো গুরুত্ব দিলা না। ভালা। আমি মইরা গেলে বুঝবা।
  • রিমি মা। মরার কথা কইস না। তুই আমাদের বেঁচে থাকার একমাত্র আশা। (বাবা)

পর্ব- ০৬

  • বাবা তুমি আমাকে বিয়ে দিও না। (আমি)
  • না মা এখন তোরে বিয়ে দিমু না তুই ভালা কইরা পড়ালেখা কর। তোরে শহরে পাঠাইয়া আমি পড়ালেখা করামু। (বাবা)
  • এতো পড়ালেখা করাইয়া লাভ কি? বিয়ে দিয়া দিলে তো পরের ঘর করতে হয়বো। (চাচা)
  • বাদশা ভাই আমার মাইয়ারে আমি পড়ালেখা করাইয়া শহরের বড় ঘরে বিয়া দিমু। শুনসি শহরের মানুষ ঘরের বৌ রে চাকরি করতে দেই।
  • তুমি যা বুঝো। কিন্তু আমার হাতে একটা ভালা ঘর আছে তোমার মাইয়ার লাইজ্ঞা। পোলা শহরে থাকে। বিয়ের পর বৌ রেও শহরে নিয়া যাইবো।
  • কিন্তু আমার মাইয়ার নামে যে কলংক হইসে ওইটার কি হইবো? আমার মাইয়ারে নিয়া একটাই চিন্তা আমার মাইয়ার নামে যদি এইসব কথা যদি পাঁচ কান হয় তাহলে আমার মাইয়ার জীবন শেষ হইয়া যাইবো।
  • তুমি চিন্তা করিও না। তোমার মাইয়ার ব্যবস্থা আমি কইরা দিমু। আমি ওই পোলারে কইয়া দেখমু তোমার মাইয়ার কথা। যদি রাজি হয় তাহলে তোমারে জানামু।
  • বাবা আমি বিয়া করমু না। (আমি)
  • চিন্তা করিস না। আমি পোলারে কমু তোরে পড়ালেখা করাইতো। (চাচা)
  • পোলা যদি মাইয়ারে পড়ালেখা করাই তাহলে আমার কোনো আপত্তি নাই। (বাবা)

পড়ালেখা করালে আমার বিয়ে করতে কোনো আপত্তি নাই। কিন্তু চাচার পছন্দ মতো ছেলেকে কি বিয়ে করা ঠিক হবে!উনি তো আমার এতো বড় ক্ষতি করলো। জানি না আমার ভাগ্যে কি আছে। উনির সাথে আমার একটু একান্তে কথা বলা উচিত।

আমি পুরোপুরি সুস্থ হওয়ার পর চাচার বাসায় যাবো বলে ঠিক করলাম। কিন্তু আমার কি ঠিক হবে চাচার সাথে কথা বলা!উনির হিংস্রতার কথা মনে পড়লে ইচ্ছা করে ওই লোকটারে গলা টিপে মেরে ফেলি। কিন্তু না আমি সিদ্ধান্ত নিয়ে নিলাম আমাকে চাচার সাথে কথা বলতে হবে।

অনেক দিন হয়ে গেল গ্রামের কারো সাথে দেখা হয় না। গ্রামের সবাই জানে আমার জ্বর হইসে তাই বাসা থেকে বের হয় না।

  • মা…ও মা…
  • হো বল রিমি!
  • মা আমি একটু গ্রামের সবাইর সাথে দেখা করে আসি।
  • যা। কিন্তু কেউকে কইস না তোর পেটে বাচ্চা আসিল। কেউ যদি জিজ্ঞেস করে এতোদিন কই আসিলি তুই কইবি তোর জ্বর হইসিল।
  • ঠিক আছে মা।

আমি বাসা থেকে বের হয়ে আমার সহপাঠী জবার বাসায় যেতে ছিলাম। যাওয়ার পথে দেখি বাদশা চাচা দাড়িঁয়ে আছে। এইটাই সু্যোগ চাচার সাথে কথা বলার। আমি চাচার কাছে গেলাম।

  • চাচা…
  • কিরে রিমি মা তুই?

চাচার এমন আচরণে খুব অবাক হলাম। সে তো আমাকে দেখলে হিংস্র পশুর মতো আচরণ করে। কিন্তু আজ এতো সুন্দর করে কথা বলছে কেন!

  • চাচার আপনার সাথে আমার কিছু কথা ছিল।
  • কো মা রিমি।
  • চাচা আপনি আমার এতো বড় ক্ষতি কেন করলেন?
  • আমার ভুলের মাসুল করতেই তো তোরে এক ভালা পোলার হাতে তুইলা দিমু। তোরে আমি বিয়া দিমু। আমার নিজের টাকা দিয়া তোরে বিয়া দিমু।
  • কিন্তু আমি আপনার পছন্দ করা ছেলেরে বিয়ে করবো না।
  • রিমি মা জানি তুই আমার উপর রাগ কইরা আসোস। মা আমি আমার ভুল বুঝতে পারসি। তুই আমারে মাফ কইরা দে। আমি তোরে এই পোলার লগে বিয়া দিয়া নিজের ভুলের মাসুল করমু। তোর দোহাই লাগে তুই রাজি হইয়া যা। আমারে আমার ভুলের মাসুল করতে দে।
  • কিন্তু….
  • কোনো কিন্তু না। ওই পোলা তোরে বিয়া করতে রাজি হয়সে। আমি আজকে তোর বাপেরে কমু। কালকে পোলা তোরে দেখতে আসবো। সপ্তা খানেক পর ভালো একটা দিন দেখা তোরে বিয়া দিমু। আমি এখন যায়। তুই যেখানে যাইতে ছিলি যা। তোর বাপের কাছে যায় আমি। শুভ খবরটা দিয়া আসি।

আমি চাচার ব্যবহার দেখে রীতিমতো অবাক হলাম। এই লোক কি সত্যি নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে নাকি কোনো চাল চালছে!সব কিছু আমার মাথায় কেমন যেন ঘুরছিল। কিন্তু হঠাৎ এই লোকের এতো পরিবর্তন কেন? এইসব চিন্তা করতে করতে আমি আমার সহপাঠীর বাসায় চলে আসলাম।

  • কিরে এই যে রিমি!(জবা)
  • কেমন আছিস? (আমি)
  • ভালো। তোর শরীর ঠিক হইসে?
  • হ্যাঁ। তোর বাসার সবাই কেমন আছে?
  • ভালোই আছে। শুনসি তুই নাকি বিয়ে করতোসোস?
  • কে বলসে তোরে?
  • কেন বাদশা চাচা তো গ্রামের সবাইরে বলতেসে তোর নাকি শহরে বড় বাড়িতে বিয়ে হবে। উনি নাকি উনির টাকা দিয়ে তোরে বিয়ে দিবে?
  • জানি না আমি। মা বাবা জানে।

আমি জেনেও না জানার ভান করলাম।

  • জানোস বাদশা চাচা অনেক ভালো রে। তোরে নিজের টাকা দিয়া নিজে ছেলে ঠিক করে বিয়ে দিচ্ছে।

আমি জবার কথা শুনে মনে মনে বলছিলাম “তুই তো জানোস না লোকটা কত বড় লুইচ্চা। ”কিন্তু আজকে বাদশা চাচার ব্যবহার আমাকে খুব অবাক করলো। আল্লাহ হয়তো ওনারে বুঝ দিসে।

আমি জবার সাথে কথা শেষ করে বাসার দিকে রওনা দিলাম। বাসায় গিয়ে দেখি বাসায় কেমন যেন একটা আমেজ। সবার মুখে হাসি। বাদশা চাচার বৌ, বাদশা চাচা, রুবায়েত সবাই আমার বাসায়। আরও কিছু গ্রামের সহপাঠীরাও ছিল।

আমি বাসায় ঢুকতেই সবাই বলা শুরু করলো বিয়ের কন্যা আইসে। তাহলে কি আমার বিয়ের জন্য সব ঠিক হয়ে গেছে? আমার মনে এখনো সন্দেহ হচ্ছিল আমার কি বিয়েটা করা ঠিক হবে!

  • রিমি….মা তুই আইসোস?
  • জ্বী মা।
  • কালকে তোরে পোলা দেখতে আইবো। পোলা নাকি তোরে বিয়া করতে রাজি হইসে। রিমি জানোস আজকে খুব খুশি লাগতাসে। তোরে বিয়া দিয়া চিন্তা মুক্ত হমু। পোলা তোরে পড়ালেখাও করাইবো।
  • আচ্ছা মা।
  • আর শুন একটু সুন্দর কইরা সাইজা আয়।
  • এখন কেন সাজমু?
  • একটু সাইজা আয়। আমার পরীর মতো মেয়েরে একটু সাজা অবস্থায় দেখতে চাই।
  • আচ্ছা মা।

আমি সেজে আসলাম। বাবারা সবাই একসাথে বসে ছিল।

  • রিমি আইসে। (মা)
  • মাশাল্লাহ। রিমির মা দেখো আমাগো মাইয়ারে কত সুন্দর লাগতাসে। (বাবা)

সবাই আমাকে নিয়ে কথা বলতে ছিল। সবার আনন্দ দেখে খুব খুশি লাগছিল আমার। অনেকদিন পর মা বাবার মুখে হাসি দেখলাম। এতোদিন আমার চিন্তায় মা বাবা ভালো করে খাওয়া দাওয়া ও করে নাই। যাক আমার বিয়েটা নিয়ে আমার মা বাবা খুশি থাকলেই হলো।


পর্ব- ০৭

এরপর দিন ছেলে আমাকে দেখতে আসলো। আমাকে ছেলের সামনে নিয়ে যাওয়া হলো। কিন্তু ছেলের বয়স আমার থেকে অনেক বেশি। প্রায় ৪০-৪৫ বছরের মত বয়স হবে। আমার এই ছেলেকে মোটেও পছন্দ হয়নি। ছোটো বেলা থেকে আশা ছিল সালমান শাহ এর মতো ছেলেকে বিয়ে করবো। আমার জন্মের আগেই সালমান শাহ মারা গেলেও সালমান শাহকে অনেক ভালো লাগতো। কিন্তু এই ছেলে তো সালমান শাহ এর নখের যোগ্যও না। আর ছেলেটা কেমন ভাবে যেন তাকায়। আমার এই ধরনের চাহুনি মোটেও ভালো লাগে না।

  • কি বাবা ফয়সাল আমাদের রিমি মাকে কেমন লেগেছে? (চাচা)

ফয়সাল আমাকে দেখতে আসা ছেলেটার নাম।

  • জ্বি চাচা মাহশাল্লাহ খুব পছন্দ হয়সে। (ফয়সাল)
  • আলহাদুলিল্লাহ। আলহামদুলিল্লাহ। ইমাম মিষ্টি আনো। তোমার মেয়ে রিমিরে বাবা ফয়সাল পছন্দ করেছে।

ছেলের পছন্দ হয়েছে শুনে সবাই মহা খুশি। কিন্তু ছেলেকে সবার পছন্দ হলেই তো হবে না। আমার ও তো ছেলেকে পছন্দ হতে হবে। কিন্তু কেউ তো আমাকে একবার ও জিজ্ঞেস করলো না ছেলেরে আমার পছন্দ হয়েছে কিনা? জিজ্ঞাসা না করলে নাই। ছেলে চলে গেলে আমি নিজে থেকে বলবো ছেলেকে আমার পছন্দ হয় নাই।

  • তাহলে বিয়ের দিন তারিখ সব ঠিক কইরা ফেলি আজকে। (চাচা)
  • এতো তাড়াতাড়ি সব কিছু কইরা ফেলমু? আর পোলার বাপ মার লগে তো কথা কইতে হইবো আমাগো। (বাবা)
  • আরে এইসব নিয়ে চিন্তা কইরো না। মনে করো পোলার বাপ মা আমি। আর পোলার বাপ মা আইবো না। পোলার বাপ আমারে অনেক বিশ্বাস করে। আমি যার লগে বিয়া দিমু পোলার বাপ মা তাতেই খুশি।
  • আইচ্ছা। তাহলে বিয়ের দিন ঠিক করো তোমরা।
  • আগামী শুক্রবার বিয়ে পড়াইয়া দেই।
  • শুক্রবারের তো আর মাত্র ৪দিন আছে। এতো তাড়াতাড়ি কি আয়োজন করতে পারমু?
  • আরে পারবা সব পারবা। আমি আছি তো।

আগামী শুক্রবার বিয়ের দিন ঠিক করা হলো। কিন্তু আমার তো ছেলেকে মোটেও পছন্দ হয় নাই। ছেলে হয়তো দুপুরে খেয়ে যাবে। ছেলে যাওয়ার পরেই বলবো সবাইকে আমি যে এই ছেলেকে বিয়ে করবো না।

দুপুরে সবার খাওয়া শেষে সবাই বসে গল্প করছে। ছেলেও ছিল সাথে।

  • ইমাম শুনো। ফয়সাল বিয়ের দিন পর্যন্ত আমার বাসায় থাকবো। বিয়া কইরা রিমিরে একেবারে নিয়া যাইবো গা। (চাচা)
  • ঠিক আছে। (বাবা)
  • এই রুবায়েত শুন তোর ফয়সাল ভাইরে বাসায় নিয়া যা। আমি তোর ইমাম চাচার লগে কথা কইয়া আইতাসি।
  • আইচ্ছা বাবা। (রুবায়েত)

রুবায়েত ছেলেকে নিয়ে চলে গেল। এখনি সুযোগ সবাইকে বলার ওই ছেলেকে আমার পছন্দ না।

  • বাবা। আমি তোমাদেরকে কিছু বলতে চাই।
  • বল মা।
  • বাবা ওই ছেলেকে আমার পছন্দ হয় নাই। ছেলে পুরা বুড়া।
  • ইমাম তোমার মাইয়া এইসব কি কই? বিয়ার দিন তারিখ সব ঠিক হইয়া গেসে এখন তোমার মাইয়া কই পোলা পছন্দ হয় নাই। মেয়েরে বুঝাও ইমাম। এই পোলা হাত ছাড়া হইয়া গেলে তোমার মাইয়া আর জামাই পাইবো না। এমনিতে তোমার মাইয়ার একটা কলঙ্ক আছে। (চাচা)
  • রিমি মা। তুই এমন করিস না দইয়া কইরা। এই পোলা তোরে সুখে রাখবো। তোরে পড়ালেখা করাইবো। (বাবা)
  • বাবা তুমি বলাতে আমি কিন্তু বিয়েটা করতে রাজি হইসি।

বাবার কথা ফিরাতে পারলাম না। আর চাচার কথাও তো ঠিক আমার তো একটা কলঙ্ক আছে। তার উপর যদি এই বিয়ে ভেঙে যায় তাহলে আমাকে সারাজীবন আইবুড়ো হয়ে থাকতে হবে। কিন্তু বিয়েটা করতে আমার মোটেও ইচ্ছা নাই। বাবা মার মুখেই দিকে দেখে বিয়েটা করতে রাজি হলাম।

একটা একটা দিন করে বিয়ের দিন ঘনিয়ে আসলো। ঘরে বিয়ের আমেজ। সবাই অনেক খুশি কিন্তু আমি ছাড়া। আমাকে বিয়ের সাজে সাজানো হলো।

  • দেখো দেখো আমাগো রিমিরে কত সুন্দর লাগতাসে। নজর না লাগুক কারো। (বাবা)
  • তুমি তো ওরে নজর লাগাইয়া দিতাসো। (মা)
  • আইচ্ছা শুন বর পক্ষ বাইর হইয়া গেসে কিছুক্ষণের মধ্যে এইখানে আইয়া যাইবো। সব ঠিকঠাক আছে তো?
  • হো। সব ঠিকঠাক আছে।

কিছুক্ষণ পর ছেলে চলে আসলো। আমাকে বিয়ের আসরে নিয়ে গেল। আমাদের বিয়ে পড়ানো হলো। এই বার বিদায়ের পালা। আমার বুকটা ফেটে যাচ্ছিল। মা বাবাকে ছেড়ে এই প্রথম বার এতো দূরে যাচ্ছি।

  • মা আমি যাচ্ছি। তোমরা ভালো থাইকো। আর তোমরা আমারে দেখতে যাইও।
  • ঠিক আছে মা।

বাবার মুখের দিকে দেখা যাচ্ছিল না। যেন বাবার রুহটাকে কেউ নিয়ে চলে যাচ্ছে। বাবা মার মুখের দিকে দেখে ইচ্ছা করছিল সারাজীবন ওদের সাথে থেকে যাই। কিন্তু এইটা তো এখন সম্ভব না। আমি এখন অন্যের বৌ। মেয়েদেরকে বিয়ের পর শ্বশুড়বাড়িতে যেতে হয় এইটাই তো নিয়ম।

আমাকে শহরে ছেলের বাসায় নিয়ে আসা হলো। কিন্তু একি ঘরে তো কেউ নাই। বাবার মুখে শুনেছিলাম ছেলের মা বাবা নাকি বাসায় আছে। কিন্তু কেউ ছিল না।

  • আপনার মা বাবা কই? (আমি)
  • আম্মা আব্বা তো একটু আমার বড় বোনের বাসায় গেসে। কিছুদিন পর চইলা আসবে তুমি চিন্তা কইরো না। (ফয়সাল)

আজ আমাদের বাসর। আমি ঘরে বসে আছি। কিছুক্ষণ পর ফয়সাল আসলো। সে আমার পাশে এসে বসলো। সে আমার হাত ধরতে যাবে ওই সময় আমি উঠলাম।

  • আচ্ছা আপনি কি জানেন আমি ধর্ষিতা? আমার পেটে বাচ্চাও আসছিল।
  • হ্যাঁ, জানি। আর এও জানি তোমাকে বাদশা চাচা ধর্ষণ করসে।
  • আপনাকে কে বললো?
  • বাদশা চাচা বলসে। তুমি এইসব নিয়ে চিন্তা করো না। আমি তোমার পাশে আছি।

ছেলেটা কি আসলে ভালো। নাকি ভালো হওয়ার অভিনয় করছে? কোনো ছেলেকে একটা ধর্ষিতা মেয়েকে বিয়ে করতে রাজি হতে পারে!আমার মনে নানান ধরনের প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছিলো।

আমাদের বিয়ে হয়েছে প্রায় ৩মাস হতে চললো। ফয়সাল ভালোই ব্যবহার করতো আমার সাথে। ফয়সালকে আমার আস্তে আস্তে ভালো লাগতে শুরু করে। ফয়সাল সারাদিন বাসার বাইরে থাকতো। আর রাতে আসলে আমার সাথে সময় কাটাতো। আমি এতোদিনে ছেলেটাকে যা বুঝলাম ছেলেটা খারাপ না। এর মধ্যে আমি আমার বাড়ি থেকেও ঘুরে এসেছি। আমার মা বাবাও একবার আমাকে দেখতে এসেছে। ফয়সালের সাথে সংসার ভালোই যাচ্ছিল।

কে যেন এসেছে। দরজায় ঠোকা দিচ্ছে। কিন্তু এই সময় কে হতে পারে। ফয়সাল তো এখন আসার কথা না। আর এইখানে তেমন কেউ আসে না। অনেকক্ষণ ধরে দরজায় ঠোকা দিচ্ছে। আমি ভয়ে ভয়ে দরজা খুলতে গেলাম। দরজা খুলে যা দেখি তার জন্য আমি মোটেও প্রস্তুত ছিলাম না।


পর্ব- ০৮

আমি দরজা খুলে দেখলাম বাদশা চাচা দাঁড়িয়ে আছে। বাদশা চাচার সাথে ফয়সাল আর কিছু লোক।

  • চাচা…আসসালামুয়ালাইকুম। ভালো আছেন?
  • হো। ভালা আছি।

চাচা কেমন ভাবে যেন আমাকে উত্তর দিল। আমি ফয়সালের দিকে তাকিয়ে বললাম

  • কি গো!আপনি এখন এসে গেছেন যে? কাজ থেকে ছুটি নিসেন নাকি? আর লোকগুলো কারা?
  • ওরা তোরে নিতে আসছে?
  • আমাকে নিতে আসছে মানে?
  • হো। তোরে ওদের কাছে বিক্রি করে দিসি।
  • আমি আপনার বিয়ে করা বৌ। আপনি আমারে কেন বিক্রি করসেন মানে কি? বিয়ে করা বৌ রে কি কেউ বিক্রি করে নাকি?
  • হো করে। যে বিয়ে হয়সে টাকার লোভে সে বিয়ে তে বিক্রি হয়।
  • টাকার লোভে মানে?
  • তোরে আমরা বিক্রি করে দিসি ২লাখ টাকা দিয়ে। ২লাখ টাকার মধ্যে ৫০হাজার আমার আর ১লাখ ৫০ হাজার বাদশা চাচার। তোর জায়গা আজকে থেকে পতিতালয়ে।

আমি ফয়সালের কথা শুনে রীতিমতো অবাক হচ্ছিলাম। তাহলে কি চাচা বিয়ের আগে আমার সাথে অভিনয় করসে? আমার বিয়েটা শুধু একটা অভিনয় ছিল আমাকে শহরে আনার জন্য? ফয়সালের এতোদিনের কথা শুনে তো একবারও মনে হয় নাই ফয়সাল আমার সাথে এমন করতে পারে। আমি এখন কি করবো!আমি এখন অসহায়। এখন এইখানে চিৎকার করলেও কেউ শুনবে না। আশেপাশে তেমন কেউ নাই। যারা আছে সবাই চাকরি করে। আমি ফয়সালের পায়ে পড়ে গেলাম।

  • আমাকে বিক্রি করিয়ে না দোয়া কইরা। আমি আপনাদেরকে যেইখান থেকে পারি সেইখান থেকে ২লাখ টাকা আইনা দিমু। আমাকে বিক্রি করিয়েন না দোহাই লাগে।
  • পা ছাড়। তোরে বিক্রি করতে হইবো।
  • এই তোমরা ওরে লইয়া যাও। (চাচা)
  • চাচা আমাকে মাফ কইরা দেন। আমি ওদের সাথে যামু না। আমার মা বাবা কষ্ট পাইবো অনেক।
  • এতো কিছু শুনার জন্য আসি নাই। এই তোমরা ওরে লইয়া যাও।
  • আমি যামু না।
  • সোজা আঙুলে ঘি না উঠলে আঙুল বেকাইতে হয়। তোরে সোজা করার ঔষধ আমরা জানি। এই তোরা খাড়ায় আসোস কেরে? ঘুমের ঔষধটা মাইরা দে।

তারা একটা ইঞ্জেকশন বের করে আমার হাতে ঢুকিয়ে দিল। তারপর আমার আর কিছু মনে ছিল না।

আমার যখন জ্ঞান ফিরলো তখন নিজেকে একটা ঘরে আবিষ্কার করলাম। আমার সামনে একটা মেয়ে বসে আছে। আমার জ্ঞান ফিরেছে দেখে সে বাইরে চলে গেল। আমি চিৎকার করতে লাগলাম

  • এইখানে কে আছো? আমাকে এইখানে আনা হয়েছে কেন? আমাকে ছেড়ে দাও।

একটা মহিলা রুমে ঢুকছে। মহিলাটা একটা শাড়ি পড়ে আছে। শাড়ি হয়তো নামে পড়েছে কামে না। সারা শরীর স্পষ্ট বুঝা যাচ্ছে মহিলাটার। আমি বুঝলাম আমাকে পতিতালয়ে আনা হয়েছে।

  • এইখানে আমি আছি। আমি শিউলি। যা বলার আমাকে বল।
  • আমাকে যাইতে দেন এইখান থেকে।
  • যাইতে দিব বললেই হয় নাকি?
  • আপনারা আমাকে এইখানে কেন আনসেন?
  • তোরে বিক্রি কইরা দিসে বাদশা আর ফয়সাল মিলা। বাদশা আর ফয়সাল আমাদেরকে ১বছর পর পর নতুন মেয়ে এনে দেই বিভিন্ন ধরনের গ্রাম থেকে। এই বছর তোরে আনসে।
  • আপনার দোহাই লাগে আমাকে ছাইড়া দেন।
  • ছাড়া তো যাইবো না। তুই আমাদের লগে মিলেমিশে থাক। ২বেলা ২মুটো খাইতে দিমু। আর রাতের বেলা কাস্টমারের লগে ফুরতি করবি।
  • আমি পারমু না কিছু করতে।
  • তোর মতো এইখানে সবাই বলসে পারবে না। কিন্তু এখন ওরা ভালোই টাকা কামাই। এই মনির কাস্টমারে নিয়ে আয়। আজকে আমাদের নতুন মাল আসে।
  • কাস্টমার মানে?
  • কাস্টমার মানে আজকে রাতে তোর সঙ্গী। খুশি কইরা দিস বুঝসোস আজকে!

এই বলে শিউলি রুম থেকে চলে গেল। একটা লোক রুমে এসে দরজা বন্ধ করে দিল।

  • খবরদার আমার কাছে আইবেন না। আইলে কিন্তু খারাপ হইয়া যাইবো।
  • কাছে যাবো না তুই বললেই হবে নাকি? তোরে আজকে রাতের জন্য ৫হাজার টাকা দিয়া কিনসি। শিউলি আপা বলসে নতুন মাল নাকি তুই?
  • আপনার দোহাই লাগে ছাইড়া দেন।

লোকটা আমার কথা না শুনে আমার কাছে এসে আমাকে শুইয়ে আমাকে ভোগ করতে শুরু করলো। আমি প্রচন্ড যন্ত্রণা পাচ্ছিলাম। আমি লোকটাকে বার বার বলছিলাম আমাকে ছাড়তে। কিন্তু কে শুনে কার কথা।

এইভাবে প্রতি রাতে ধর্ষণ করা হয় আমাকে। ২বছর কেটে গেল এই নরকের আছি আমি। এই ২বছরে আরও ২টা নতুন মেয়ে এসেছে এইখানে। ২জন থেকে ১জন আমাদের গ্রামের। তাকেও বিয়ে দেওয়ার নাম করে বাদশা চাচা শহরে এনেছিল। বিয়ের কয়েকমাস পরেই তাকে এইখানে নিয়ে এসেছে।

এই ২বছর বাবা মার সাথে কোনো যোগাযোগ হয়নি। জানি না বাবা মা কেমন আছে। আমাদের গ্রামের মেয়েটার থেকে শুনেছি বাদশা চাচা নাকি গ্রামের সবাইকে বলেছে আমি ফয়সালের সাথে দেশের বাইরে চলে গেছি। ফয়সালের নাকি চাকরি হয়েছে দেশের বাইরে। মা বাবা হয়তো ভাবছে আমি সুখেই আছি। তাই তারাও হয়তো ভালোই আছে। কিন্তু তারা তো জানে না আমি কোন নরকের মধ্যে আছি। জানি না কখনো এই নরক থেকে মুক্তি পাবো আদোও কখনো পাবো কি না। হয়তো নাও পেতে পারি।


পর্ব- ০৯

আমার সাথে আমার মা বাবার কোনো যোগাযোগ ছিল না। আমি ওদেরকে যদি বলতাম আমার বাবা মার সাথে একটু কথা বলতে দিতে ওরা আমি দিত না। উল্টা আমার উপর নানা ধরনের নির্যাতন করতো।

আজ আরও একটা লোক এসেছে আমার সাথে রাত কাটাতে। সে ছিল পুরোপুরি মদ্যপান অবস্থায়। সে সকালে যখন চলে যাচ্ছিল তখন ভুলে তার মোবাইল ফেলে চলে যায়। আমি মোবাইলটা আমার বুকের মধ্যে লুকিয়ে রাখি। ভাবলাম আজকে আমি বাবা মার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করবো। বাবার তেমন কোনো ভালো ফোন নেই। ভাঙা একটা মোবাইল ছিল। বিয়ের পর ওই মোবাইল দিয়ে আমার সাথে বাবা মা কথা বলতো। গ্রামের মানুষ হিসেবে বাবা মা তেমন পড়ালেখা জানতো না তাই তারা তেমন একটা মোবাইল ব্যবহার করতে জানতো না। আমার বিয়ের পর আমার সাথে যোগাযোগ করার জন্যই মোবাইল কিনেছিল। কিন্তু জানি না এতোদিনে মোবাইলটা আদৌ আছে নাকি।

আমি সাহস করে দরজা বন্ধ করে বাবার নাম্বারে কল দিলাম। অনেকক্ষণ দিয়ে যাচ্ছি কেউ রিসিভ করছে না। এইদিকে হঠাৎ আমার দরজার বাইরে থেকে শিউলি আপার আওয়াজ।

  • ওই রিমি ঘরে কোনো মোবাইল আছে নাকি দেখ তো। দরজা খোল। মোবাইল পেয়ে থাকলে কেউকে কল দেওয়ার চেষ্টাও করবি না। যদি কল দেস তাহলে দেখিস তোর খবর আছে আজকে রাতে।

আমি চুপ করে থাকলাম। এইদিকে শিউলি আপা দরজা বাজাতে লাগলো। আমি বাবার মোবাইলে কল দিয়ে যাচ্ছি কেউ কল ধরছে না। আমি মোবাইল থেকে তাড়াতাড়ি নাম্বার ডিলিট করে মোবাইলটা বালিশের নিচে রেখে দিলাম। গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।

  • কিরে রিমি তোর দরজা খুলতে এতো দেরি হয়সে কেন?
  • আপা আসলে কালকে সারারাত ঘুমাইতে পারি নাই। তাই ঘুমাই গেসিলাম। খেয়াল ছিল না।
  • আচ্ছা মোবাইল পাইসোস এই রুমে কোনো।
  • না আমি তো পাই নাই। খুঁজে দেখি।
  • আচ্ছা। আমি দাঁড়ায় আসি। আমার সামনে খুঁজে দে আমাকে।

আমি একটু অভিনয় করে এইখানে ওইখানে খুঁজলাম। পরে বিছানার কাছে গিয়ে বালিশের নিচে থেকে মোবাইলটা বের করে দিলাম।

  • আপা ধরেন মোবাইল পাইসি। মোবাইলটা কার?
  • কালকে রাতে যে লোকটা তোর সাথে রাত কাটাইতে আসছে ওই লোকের ভুলে রেখে গেসে। এখন আসছে নিতে।

শিউলি আপা রুম থেকে বের হয়ে গেল। আমি পারলাম না বাবা মার সাথে যোগাযোগ করতে। আমি রুমে বসে বসে কান্না করতে লাগলাম। এই নরকে আর থাকতে পারছি না। প্রতিনিয়ত দম বন্ধ হয়ে আসছে। মাঝেরমধ্যে ইচ্ছা করে নিজেকে শেষ করে দিতে। কিন্তু জীবনের মায়ায় আর পারি না নিজেকে শেষ করতে।

আরও কয়েকটা মাস কেটে গেল এই নরকে আছি। প্রতিদিন নতুন নতুন লোক আমাকে ভোগ করছে।

  • রিমি..ও রিমি…কই তুই?

শিউলি আপা আমাকে ডাকছে। হয়তো নতুন কেউ এসেছে। আমি শিউলির আপার কাছে গেলাম। যা ভেবেছিলাম তাই। নতুন আরেকটা ছেলে দাঁড়িয়ে আছে। এতোদিন পর্যন্ত আমাকে যতগুলো লোক ভোগ করেছে সবাই বয়স কমসেকম ৩০এর উপরে হবে। কিন্তু আজকের ছেলেটার বয়স একটু কম। হয়তো ২২-২৫ বছরের মধ্যে বয়স হবে। ছেলেটাকে দেখে মনে হচ্ছে অনেকদিন খাওয়া দাওয়া করে নি। নেশাও করে হয়তো। কিন্তু ছেলেটার জামা কাপড় বেশ দামী। কোনো বড়লোক বাবার বিগড়ে যাওয়া সন্তান হয়তো।

  • রিমি। আসছোস?
  • জ্বি আপা।
  • ওরে তোর রুমে নিয়ে যা। তোর আজকের রাতের সঙ্গী।
  • আসেন।

আমি রুমে চলে গেলাম। আমার পিছু পিছু ছেলেটা আসলো। ছেলেটা রুমে ঢুকে বিছানায় বসলো। আমি দরজা বন্ধ করে নিজের কাপড় খুলতে যাচ্ছিলাম। ওই সময় ছেলেটা বলে উঠলো।

  • এই মেয়ে জামা খুলার দরকার নেই। আমি এইখানে তোমার সাথে কিছু করতে আসি নি। আমি একটু শান্তি পেতে এসেছি। বন্ধুদের থেকে শুনেছি রাতের বেলা পতিতালয়ে শান্তিতে ঘুমানো যায়। আর আমার এইসময় একটু শান্তি দরকার।

আমার জীবনে প্রথম ছেলে যে আমাকে একলা পেয়েও ভোগ করতে চাইছে না। জানি না ছেলেটার কি হয়েছে। ছেলেটা থেকে কি জিজ্ঞেস করা ঠিক হবে? আচ্ছা জিজ্ঞেস করেই দেখি।

  • জানেন আমি এই পতিতালয়ে ২বছর ধরে আছি। এই পর্যন্ত কোনো লোক আসে নি যে আমাকে ভোগ করতে আসেনি। সবাই ভোগ করতে এসেছে। আচ্ছা আপনার কি হয়েছে একটু বলবেন? দেখে তো মনে হচ্ছে বড় লোক ঘরের ছেলে।
  • হ্যাঁ আমি বড় লোক বাবার এক বিগড়ে যাওয়া ছেলে। আগে ভালোই ছিলাম। বাবা মার বাধ্য সন্তান ছিলাম। যখন থেকে ভার্সিটিতে উঠি তখন থেকে বাবা মার অবাধ্য হতে শুরু করি। বাবা মার সাথে অনেক অন্যায় করেছি। হয়তো তার শাস্তি এখন পাচ্ছি।
  • আপনার বিগড়ানোর কারণটা কি জানতে পারি?
  • তুমি শুনবে আমার বিগড়ানোর কারণ?
  • হ্যাঁ বলেন।
  • তাহলে শুনো……

পর্ব- ১০

  • আমি যখন স্কুলে ছিলাম তখন বাবা মার অনেক বাধ্য ছিলাম। বাবা মার নয়নের মণি ছিলাম। পড়ালেখায়ও ভালো ছিলাম খুব। এসএসসি এইচএসসি সব গুলোতে এ+ ছিল। তারপর একটা ভালো ভার্সিটিতে সুযোগ পাই। ভার্সিটিতে আমি যখন ২য় বর্ষে তখন এক পরীর আগমন ঘটে ভার্সিটিতে।
  • পরী মানে?
  • আরে পরী মানে বুঝো নি? মেয়ে আর কি!
  • তারপর?
  • সেই মেয়ের জন্য ভার্সিটির সবাই ছিল পাগল। কিন্তু আমি তেমন একটা মেয়েদের দিকে দূর্বল ছিলাম না। ভার্সিটির অনেক ছেলে মেয়েটাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। কিন্তু মেয়েটা কারো প্রস্তাবে রাজি হয়নি।
  • আপনার সাথে মেয়েটার কি সম্পর্ক?
  • আহা পুরো কথা শুনো।
  • আচ্ছা বলুন।
  • একদিন দেখি মেয়েটা আমাকে এফবিতে রিকুয়েষ্ট পাঠায়। আমি ছোট বোন হিসেবে রিকুয়েষ্ট একসেপ্ট করি। সে আমাকে ম্যাসেজ দিত প্রায়। তার সাথে কথা হতো। আমি যেহেতু ভার্সিটির ফার্স্ট বয় ছিলাম। সেহেতু ভার্সিটির ছোট ভাই বোনদের কোনো সাহায্য লাগলে আমার কাছেই আসতো।

মেয়েটাও আমার থেকে সাহায্য নিতো। মেয়েটা ছিল অনেক মায়াবতি। আমি আস্তে আস্তে তার উপর দুর্বল হতে থাকলাম। একদিন দেখি মেয়েটা আমাকে প্রেমের প্রস্তাব দেই। আমি তার কথা শুনে খুব অবাক হলাম। যেই মেয়েকে কলেজের প্রতিটা ছেলে প্রেমের প্রস্তাব দিয়েছে। এমনকি বয়সে তার ছোট ছেলেও মেয়েটাকে প্রপোজ করেছে কিন্তু মেয়েটা রাজি হয়নি। আমার মধ্যে কি এমন দেখলো যে মেয়েটা নিজে থেকেই আমাকে প্রপোজ করেছে?

  • আপনি কি মেয়েটার প্রেমের প্রস্তাবে রাজি হয়েছিলেন?
  • হ্যাঁ হয়েছিলাম। মেয়েটা এতোটাই মায়াবতী ছিল যে আমি রাজি না হয়ে পারলাম না। আস্তে আস্তে আমি মেয়েটার উপর আরও দূর্বল হতে থাকি। আমাদের প্রেম চলতে থাকে।
  • তো আপনার এখন এই অবস্থা কেন?
  • আমি আস্তে আস্তে পড়ালেখায় দূর্বল হতে থাকি। যেই ছেলে আমি ভার্সিটির ফার্স্ট ভয় ছিলাম সেই ছেলেই হয়ে গিয়েছিলাম সব থেকে লাস্ট বয়। আমার বাবা থেকে টাকা চুরি করে তাকে গিফট করতাম। আমি যেহেতু পড়ালেখা করতাম সেহেতু আমার হাত খরচের টাকা বাবা দিত। আমি কোনো চাকরি করতাম না। তাকে গিফট দেওয়াটা ছিল আমার এক্সটা একটা খরচ। সেই টাকা জোগাতেই বাবার থেকে টাক চুরি করা। মা আমার হাবভাব দেখে বুঝতে পেরেছিল আমি কোনো একটা অন্যায় করছি। একদিন মা আমাকে ধরে ফেলে আমার আর মেয়েটার সম্পর্কটা। জানো? ?

এই বলে ছেলেটা কান্না শুরু করলো। ছেলেটার দিকে দেখে মায়া হচ্ছিল খুব। এই প্রথম কোনো ছেলেকে এইভাবে কাঁদতে দেখছি।

  • আপনি কান্না করছেন কেন? শান্ত হোন। আপনাকে আর কিছু বলতে হবে না।
  • না আমি বলবো। তোমাকে কথাগুলো বলতে পেরে মনটা আস্তে আস্তে হালকা হচ্ছে।
  • আচ্ছা বলুন।
  • আমি ওইদিন আমার মায়ের গায়ে হাত তুলেছিলাম। শুধুমাত্র ঐ মেয়ের জন্য। আমার বাবা ব্যাপারটা জানতে পেরে আমাকে ঘর থেকে বের করে দেই। তারপর আমি আশ্রয় নেই ভার্সিটির হোস্টেলে। কয়েকটা টিউশন করতাম। ওইগুলো আমার খাওয়া পড়াতে চলে যেত। আস্তে আস্তে মেয়েটাও আমার অবহেলা করতে শুরু করে। সবসময় ব্যস্ততা দেখাতো আমাকে। আমিও কিছু বলিনি। ভেবেছিলাম সত্যি সে ব্যস্ত। অনেকদিন কেটে গেল। ভার্সিটির প্রায় সবাই ওর আমার সম্পর্কের কথা জানতো।

একদিন ভার্সিটির এক ছোট ভাই এসে আমাকে একটা ছবি দেখায় ছবিটিতে ছিল ওই মেয়েটা আর একটা ছেলে। ছেলেটা আমাদের ভার্সিটির সব থেকে বড় লোক বাবার ছেলে। প্রতিদিন গাড়ি করে ভার্সিটিতে আসতো। আমি নিজের চোখকে বিশ্বাস করতে পারলাম ন।

যেই মেয়েটাকে আমি এতো ভালোবাসতাম সেই মেয়ে আমার সাথে ব্যস্ততা অজুহাত দেখিয়ে অন্য ছেলের সাথে ঘুরে বেড়াচ্ছে। আমি মেয়েটাকে কল করে আমার সাথে দেখা কর‍তে বললাম। মেয়েটাকে আমি আমাকে অবহেলার কারণ জিজ্ঞেস করলে সে বলে আমার সাথে আর সম্পর্ক রাখতে চাই না। সে এতোদিন আমার টাকা আর আমার মেধাকে ভালোবেসেছিল আমাকে কোনোদিন ভালোবাসে নি।

আমার মেধা আর আমার টাকা এখন কিছুই আমার কাছে নেই তাই সে আমাকে ছেড়ে চলে গেছে। আমি ওইদিন মেয়েটার কথা শুনে অবাক হচ্ছিলাম। ওই আমার বলার মত কিছুই ছিল না। আমি ওইদিন চলে আসলাম মেয়েটার সামনে থেকে। কিন্তু মেয়েটার স্মৃতিগুলো আমাকে প্রতিনিয়ত মেয়েটার কথা মনে করিয়ে দিচ্ছিল। আমি কোনো উপায় খুঁজে না পেয়ে নিজেকে শান্তিতে রাখার জন্য নেশা করা শুরু করি। তারপর কিছুদিন আগে আমার কিছু ফ্রেন্ড বলে পতিতালয়ে নাকি অনেক শান্তি তাই আমার এই পতিতালয়ে আসা।

ছেলেটার কথা শুনে আমার ছেলেটার উপর খুব মায়া হচ্ছিল। কিন্তু আমি নিরুপায়। ছেলেটাকে কোনোভাবে আমি সাহায্য করতে পারবো না।

  • আপনি মন খারাপ করবেন না। আল্লাহ আপনার জন্য ভালো কিছু রেখেছে। আপনি এই নেশা ছেড়ে দিয়ে আল্লাহর কাছে নামায পড়ে প্রার্থনা করুন।
  • জানো তোমাকে কথা গুলো বলতে পেরে নিজের মনে অনেক শান্তি লাগছে। আচ্ছা তোমার এই পতিতালয়ে আসার কারণ কি? পতিতালয়দ কেউ নিজের ইচ্ছায় কোনোদিন এসেছে আমি শুনিনি। তোমার জীবনের কাহিনি আমাকে বলো। আমি শুনতে চাই।

ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখি সকাল ৬টা বাজছে। সকাল ৬ঃ৩০ এর মধ্যে কাস্টমারদেরকে চলে যেতে হয়।

  • সকাল হয়ে গেছে আমার জীবনের কাহিনি না হয় অন্যদিন শুনবেন।
  • ঠিক আছে। তবে অন্যদিন না। আমি আজ রাতে আবার আসবো।

ছেলেটা চলে গেলো। ছেলেটার কথাগুলো শুনে খুব মায়া হলো। পৃথিবীতে সবাই দুঃখী। কিন্তু একেক জনের দুঃখের কারণটা শুধু ভিন্ন।


পর্ব- ১১

আমি সারাদিন ছেলেটার কথা ভাবতে ছিলাম। ছেলেটা হয়তো আসলেই দুঃখী। গ্রামের শুনেছিলাম শহরের ছেলে মেয়েগুলো নাকি অনেক মডার্ণ। ২/৩ জনের সাথে প্রেম করা নাকি তাদের স্বভাব। কিন্তু সবাই কিন্তু একই না। কিছু মানুষ হয়তো ওই ছেলেটার মতো সৎ। আর কিছু মানুষ হয়তো ওই মেয়ের মতো ধোকাবাজ। কিন্তু দিন দিন ভালো মানুষ থেকে খারাপ মানুষের সংখ্যা বেশি। কাল সারারাত ছেলেটার সাথে কথা হলো কিন্তু ছেলেটার নাম জানা হলো না। আজকে আসলে জেনে নিব।

সারাদিন কেটে গেল। রাত হয়ে আসলো। এখন শুধু ছেলেটার অপেক্ষা। ছেলেটা হয়তো আসলেই অসহায়। আজকে আসলে ছেলেটাকে বলবো তার মা বাবা থেকে মাফ চাইতে। রাত ঘনিয়ে আসলো। প্রায় রাত বারোটা। রাত ১১টার পর থেকেই পতিতালয়ে কাস্টমার আসা শুরু করে। আমি ছেলেটার জন্য অপেক্ষা করছিলাম। হঠাৎ শিউলি আপার ডাক।

  • রিমি কই রে তুই?
  • এই তো আপা বলেন।
  • তোর কালকে রাতের কাস্টমারটা আবার আসছে।

আমি তাকিয়ে দেখলাম ছেলেটা এসেছে।

  • কালকে তুই ওরে কি যাদু করসিলি রে যার জন্য পোলাটা আবার আসছে?
  • জানি না আপা।
  • আচ্ছা যা উনিরে লইয়া রুমে যা।

আমি ছেলেটাকে নিয়ে রুমে চলে আসছি। রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিলাম।

  • কেমন আছেন?
  • ভালো। তুমি কেমন আছো রিমি?
  • আমি ভালো আছি। আপনি আমার নাম জানলেন কীভাবে?
  • ওই তোমার আপাটা তোমাকে তোমার নামে ডাকলো তখন শুনলাম।
  • আচ্ছা। আপনার নামটা কি জানতে পারি? আপনার নামটা জানা হয়লো না কালকে।
  • আমার নাম মতিউর।
  • আচ্ছা।
  • আচ্ছা চলো কালকের মতো একটু গল্প করি।
  • কি গল্প করবেন?
  • তুমি এই পতিতালয়ে কেমনে আসলে? ওই গল্প বলো।
  • আমাকে এই পতিতালয়ে আমার আমার জামাই দিয়ে গেসে।
  • তোমার জামাই মানে?
  • হ্যাঁ, আমার জামাই। মা বাবার চোখের মণি ছিলাম আমি আপনার মতো। পড়ালেখায়ও ভালো ছিলাম। কিন্তু আমার গ্রামের এক চাচা আমাকে ২বার ধর্ষণ করে। আমার পেটে বাচ্চাও আসছিল। বাচ্চাটা নষ্ট করে দিই। ওই চাচা আমাকে ফয়সাল নামের এক ছেলের কাছে বিয়ে দেই। ফয়সাল আমার সাথে ৩মাস সংসার করে। তারপর একদিন চাচা আর ফয়সাল মিলে আমাকে এইখানে পাঠায় দেই।
  • তুমিও দেখছি আমার থেকে বড় দুঃখী।
  • আমার কথা বাদ দেন। আমার দুঃখ কখনো শেষ হবে না। আপনাকে একটা উপদেশ দিব রাখবেন?
  • হ্যাঁ। বলো।
  • আপনি আপনার মা বাবার কাছে মাফ চান। ওদেরকে বলেন আপনি ওই মেয়েরে ছেড়ে দিসেন। আর আপনি আপনার পড়ালেখা শেষ করে ওদের পছন্দ মতো মেয়েকে বিয়ে করে ফেলেন।
  • আচ্ছা। আমি মাফ চাইবো। কিন্তু তোমাকে আগে এই নরক থেকে মুক্তি দিব।

ছেলেটার কথাটা শুনে আমি খুব অবাক হলাম। ছেলেটা আমাকে মুক্তি দিবে নাকি ফয়সাল আর চাচার মতো আমাকে অন্য জায়গায় চড়া দামে বিক্রি করে দিবে?

  • আপনি কি আমাকে সত্যি মুক্তি দিবেন নাকি কৌতুহল করছেন?
  • তোমার সাথে কৌতুহল কেন করবো? আমি সত্যি বলছি।
  • কিন্তু কীভাবে?
  • সেটায় আমাকে ভাবতে হবে। কাল আমি আসলে তখন তোমাকে জানাবো।
  • জানেন এই জীবনে এতো প্রতারণার শিকার হয়েছি যে মানুষকে বিশ্বাস করতে ভয় হয় খুব।
  • আমাকেও হয়তো তোমার বিশ্বাস করতে ভয় হচ্ছে। কিন্তু আমি তোমার সাথে প্রতারণা করবো না। এই বিশ্বাস তুমি আমার উপর রাখতে পারো।
  • আচ্ছা ঠিক আছে। সময় বলে দিবে আপনি বিশ্বাসী নাকি প্রতারক!
  • আমাকে বিশ্বাস করতে এখনো ভয় আছে তোমার?
  • জীবনে এতোই প্রতারিত হয়েছি যে বিশ্বাস করতে তো একটু ভয় হবেই। আচ্ছা সকাল হয়ে আসলো। আপনি যেতে পারেন।
  • হুম যাচ্ছি। রাতে আবার আসবো।
  • প্রতিদিন আসলে শিউলি আপা হয়তো সন্দেহ করতে পারে।
  • তুমি চিন্তা করো না। আমি তোমার শিউলি আপার সাথে কথা বলে নিব।

মতিউর ছেলেটা গিয়ে শিউলি আপাকে গিয়ে বলতে লাগলো।

  • এই যে শুনেন। আমার আপনার এই মেয়েকে খুব ভালো লেগেছে। আমি এখন থেকে প্রতিদিন আসবো।
  • প্রতিদিন আসলে তো আরও এক্সট্রা টাকা দিতে হবে।
  • আমার সমস্যা নাই। আমি দিব।

ছেলেটা বলেছিল সে টিউশনের খরচ দিয়ে তার দিন চালায়। টিউশনের টাকা তার খাইতে পড়তে খরচ হয়ে যায়। তাহলে প্রতিরাতে পতিতালয়ে আসার টাকা সে কোথায় থেকে পাবে। কেমন যেন একটা সন্দেহ হলো মনের মধ্যে।


পর্ব- ১২

মতিউর যাওয়ার সময় আমাকে দিকে তাকিয়ে কেমন যেন একটা হাসি দিয়ে গেল। হাসিটা দেখে মনে হচ্ছিল ওর মনে এমন কিছু চলছে যা আমি জানি না। বুঝতেও পারছি না। আমি রুমে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর শিউলি আপা রুমে আসলো।

  • রিমি।
  • জ্বি আপা।
  • শুন ছেলেটারে ভালো করে সময় দিস। ছেলেটার যদি তোকে বেশি পছন্দ হয়ে যায় তাহলে তোকে এইখান থেকে কিনে নিয়ে যাবে চওড়া দামে। আমাদের এইখানে এমনিতে দিন দিন মেয়ের সংখ্যা বেড়ে যাচ্ছে। তোকে কিনে নিয়ে গেলে একজন কমবে। তোর জায়গায় আরেকটা জবরদস্ত নতুন মেয়ে আনতে বলবো ফয়সাল আর বাদশাকে। জানোস ফয়সালের বৌয়ের নাকি মেয়ে হয়সে।
  • ফয়সালের বিয়ে হয়সে?
  • হো। জানোস না তুই? ওর তো বিয়ে হয়সে প্রায় ৫বছর। আরও খুশির খবর কি জানোস?
  • কি?
  • ফয়সাল বলসে ওর মেয়ে বড় হয়লে আমাদের এই পতিতালয়ে পাঠায়া দিব।
  • হুম।
  • আচ্ছা শুন তুই গোসল করে নে। আজকে থেকে আরও বেশি করে সেজে থাকবি। পোলাটারে একদম হাতের মুটোয় নিয়ে আসবি।

শিউলি আপা চলে গেল। আমি শিউলি আপার কথাগুলো শুনে খুব অবাক হলাম। ফয়সালের আরেকটা বৌ আছে!আচ্ছা মনে পড়সে। ওই মেয়েটা হয়তো ওর বৌ।

আমি একদিন তার ঘরে একটা ছবি পাই। ছবিটাতে একটা মেয়ের সাথে ফয়সালের ছবি ছিল। আমি ফয়সালকে জিজ্ঞেস করেছিলাম মেয়েটা কে!ফয়সাল বলসিল ওর বড় বোন। মানুষটা কত শয়তান!তার বৌ থাকা সত্ত্বেও আবার বিয়ে করসে। এই লোক শুধু আমাকে বিয়ে করে নাই হয়তো। আরও অনেক মেয়ের জীবন হয়তো নষ্ট করসে। লোকটা এতোটাই নিষ্ঠুর যে নিজের সদ্য জন্ম নেওয়া মেয়েরেও নাকি বড় হয়লে এইখানে পাঠাবে। ছিঃ ছিঃ। এই ছেলেটার প্রতি আমি বিয়ের পর দিন দিন দূর্বল হচ্ছিলাম। লোকটা আমাকে একটুও বুঝতে দিল না যে ওর আরও একটা বৌ আছে। লোকটা অনেক ভালো নাটক করতে পারে।

আমি গোসল করে বের হয়ে আয়নার দিকে তাকিয়ে তাকিয়ে নিজের মুছতে ছিলাম। কিন্তু দরজার দিকে তাকিয়ে দেখলাম কে যেন আমাকে আড়াল থেকে দেখছে। আমি কে বলে চিৎকার দিতে হঠাৎ করে মনে সে সরে গিয়েছে। আমি দরজার কাছে গিয়ে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখি কেউ নাই।

আমার ভাবলাম কেউ হয়তো দেখছে আমি কি করছি। দেখতে দেখতে রাত হয়ে গেল। এখন শুধু মতিউরের অপেক্ষা। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম রাত ১১ঃ১৫। কাল তো মতিউর ১২টার পর এসেছিল। আজও হয়তো ১২টার পরই আসবে। হঠাৎ শিউলি আপার ডাক।

  • রিমি আয় তোর কাস্টমার এসে গেছে রে।
  • আপা রুমে পাঠায়া দেন।

আমি আয়নার দিকে তাকিয়ে টিপ লাগাচ্ছিলাম। মতিউর রুমের মধ্যে ঢুকে দরজা লাগিয়ে আমার কাছে আসতে লাগলো। আমি তার থেকে দূরে যাচ্ছিলাম পিছনের দিকে। সে আমার দিকে এগুতে থাকলো। হঠাৎ আমি দেওয়ালের সাথে ঠুকে লেগে গেলাম। মতিউর আমার একদম কাছে এসে বলতে লাগলো।

  • তোমাকে আজ অপূর্ব লাগছে। কপালে কালো টিপ। ঠোঁটে গোলাপি লিপস্টিক। সত্যি অপূর্ব।
  • হয়েছে। আর প্রশংসা করতে হবে না। এখন সরুন।
  • এই মেয়ে শুনো। আমি তোমাকে রাতের জন্য কিনে নিয়েছি। তাই আমার যা ইচ্ছা তোমাকে আমি বলবো। আমি যা বলবো তোমাকে তা করতে হবে।
  • আপনিও আমার সাথে ওইসব করবেন?
  • হ্যাঁ করবো। সমস্যা আছে কোনো?
  • আপনারা ছেলেরা সবাই একই। পতিতালয়ে সবাই আসেন আমাদের মত পতিতা-দের ভোগ করতে। শুধু শুধু ২রাত অভিনয় কেন করেছিলেন? ?

আমার চোখ থেকে পানি পড়তে শুরু করলো।

  • এই মেয়ে কান্না করছো কেন? আমি তো দুষ্টামি করেছি। আমার যদি তোমার সাথে ওইসব করার ইচ্ছা থাকতো তাহলে আমি প্রথম দিনই করতাম। আর আমার জীবনের গল্প তোমাকে বলতাম না। তোমার জীবনের গল্পও আমি শুনতাম না। তোমাকে এইখান থেকে বের করার কথাও বলতাম না। তোমাকে নিয়ে সারারাত ফুর্তি করতে পারতাম।
  • হুম।
  • আচ্ছা শুনো। আমি যে তোমাকে বের করবো বলেছিলাম আমি সারাদিন ভাবলাম কিন্তু কোনো উপায় বের করতে পারলাম না।
  • আমার কাছে একটা উপায় আছে।
  • কি উপায়?
  • আগে বলুন আপনি যে প্রতিরাতে এইখানে আসেন!এইখানে তো টাকা লাগে। আপনি বলেছিলেন আপনি টিউশন করে যে টাকা পান ওইটা আপনার খাইতে পড়তে চলে যায়। কিন্তু এইখানে আসার টাকা কই পান?
  • ওইটা তোমাকে জানতে হবে না। আগে তুমি বলো কি উপায় আছে তোমার কাছে? তোমাকে এইখান থেকে বের করার উপায় বলো।
  • শিউলি আপা বলসে আপনাকে ভালো করে খুশি করতে আপনি যদি আমাকে কিনে নিয়ে যান বেশি টাকা দিয়ে তাহলে উনি নাকি আমার জায়গায় নতুন মেয়ে আনবে। কিন্তু আপনি এতো টাকা পাবেন কই? এই ছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই। আচ্ছা থাক লাগবে না। আমাকে এইখান থেকে আপনাকে বের করতে হবে না। আমি এইখানেই থাকি। আর আপনার আমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছা করলে আপনি মাঝের মধ্যে এইখানে আসিয়েন।
  • এই মেয়ে চুপ একদম। আমি যখন তোমাকে এইখান থেকে বের করে নিয়ে যাব বলেছি তার মানে আমি তোমাকে নিয়েই যাব।
  • কিন্তু টাকা?
  • সে আমি ম্যানেজ করে নিব। তুমি চিন্তা করো না। আমি কালকে রাতেই এসে তোমাকে নিয়ে যাব।
  • না না। এতো তাড়াতাড়ি নিয়ে গেলে শিউলি আপা সন্দেহ করবে। আরও কিছু দিন যাক তারপর না হয় নিয়ে যাইয়েন।
  • আচ্ছা। কিন্তু আমি প্রতিদিন তোমার সাথে দেখা করতে আসবো যতদিন না তোমাকে এইখান থেকে নিয়ে যেতে পারবো ততদিন।

মতিউরের সাথে কথা বলতে বলতে সকাল হয়ে গেল। মতিউর চলে গেল। এই কয়েকটা দিন একটু শান্তি আছি। কিন্তু মতিউর ছেলেটাও কেমন যেন রহস্যময়। কিছু বুঝতে পারছি না ছেলেটা কি চাই! আমাকে এইখান থেকে বের করে তার লাভ কি ওইটাও বুঝলাম না।

আমি গোসল করে বের হলাম সকালে। আয়নার দিকে তাকিয়ে চুল মুছতে ছিলাম। দেখলাম আগের দিনের মতো কে যেন আমাকে আবার দেখে আছে। আমি চুপ করে দরজার কাছে যেতে লাগলাম। কিন্তু গিয়ে দেখি কেউ নেই।

কে হতে পারে সে? যে আমাকে প্রতিদিন দেখে থাকে দরজার আড়ালে? আমি কি আবার কোনো ফাঁদে পড়তে যাচ্ছি?


পর্ব- ১৩

আমার জীবনে দুঃখ যেন একটা নিত্যদিনের সঙ্গী। একটা দুঃখ কাটতে না কাটতেই আরেকটা শুরু। এতোদিন ছিল এইখানে থাকার চিন্তা আর এখন তো চিন্তা হচ্ছে কে হতে পারে যে আমাকে প্রতিদিন আড়াল থেকে দেখছে? কেউ কি আমার দিকে নজর রাখছে আমি কি করছি। খোদা জানে কী হয় আমার ভাগ্যে।

প্রতিরাতে মতিউর আমার সাথে দেখা করতে আসতো। সারারাত আমরা গল্প করতাম। এইদিকে আমাকে দিকেও কে যেন প্রতিনিয়ত নজর রাখছে। অনেকদিন হয়ে গেল ঘটনাটা ঘটছে আমার সাথে। আজকে মতিউরকে কথাটা জানাবো। রাত হলো মতিউরও এলো।

  • জানেন?
  • কি বলো!
  • আমাকে প্রতিদিন কে যেন নজর রাখছে।
  • কেমন নজর?
  • আমি প্রতিদিন সকালে যখন গোসল করে বের হয় তখন কে যেন আমার দিকে নজর রাখে। আমাকে আড়াল থেকে দেখে।
  • তুমি গিয়ে দেখো নি সে কে?
  • দেখার চেষ্টা করেছি কিন্তু পারিনি।
  • তুমি কি প্রতিদিন একই সময় গোসল করো?
  • হ্যাঁ। প্রায় একই সময়ে।
  • তাহলে কালকে ওই সময় গোসল করবে না। আরও পরে করবে।
  • আরও পরে করে কি হবে?
  • তুমি তোমার রুমের আড়ালে লুকিয়ে থাকবে দরজার পাশে। তারপর সে যখন আসবে তুমি তাড়াতাড়ি দরজার আড়াল থেকে বের হয়ে তাকে ধরে ফেলবে।
  • ঠিক আছে। কিন্তু বুদ্ধিটা কি কাজে দিবে?
  • হ্যাঁ। দিতে পারে। তুমি চেষ্টা করে দেখো।

সকাল হলো মতিউরও চলে গেলো। এখন পালা আমার গোসল করার সময় হওয়ার পালা। আমি মতিউরের কথা মতো রুমের মধ্যে দরজার আড়ালে লুকিয়ে থাকলাম।

কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পর মনে হলো কে যেন আসলো। আমি আড়ালে থেকে বের হচ্ছিলাম আস্তে আস্তে। আমি দরজার বাইরে তাকাতেই দেখতে পেলাম একটা ছেলে চলে যাচ্ছে। আমি তার কলার ধরে আমার দিকে ফিরালাম। কিন্তু একি!

  • মোহন তুই?
  • এই চুপ চুপ।
  • করবো না চুপ। তুই আমাকে আড়াল থেকে প্রতিদিন দেখিস?
  • হ্যাঁ।
  • কিন্তু কেন?
  • আগে রুমে আয়। তারপর বলছি। এইখানে কেউ দেখলে বিপদ হয়ে যাবে।

মোহন আমাদের পতিতালয়ের একটা ছেলে। এইখানে মেয়েদেরকে পাহারা দেই। সে প্রায় আমার থেকে ৩/৪ বছরের বড়। এইখানে আসার পরে সে আমাকে একটু বুঝতো। আমাকে এইখান থেকে বের করার জন্য সে আমাকে অনেক ভাবে সাহায্য করেছে। কিন্তু প্রতিবার ব্যার্থ হয়েছি। কিন্তু ও কেন আমাকে আড়াল থেকে আমাকে দেখবে?

মোহন আমাকে টেনে রুমের মধ্যে নিয়ে আসলো। এনে দরজা বন্ধ করে দিলো।

  • কিরে তুই দরজা বন্ধ করছিস কেন?
  • রিমি শুন তোকে আমি কিছু কথা বলতে চাই।
  • হ্যাঁ বল।
  • তোকে যখন আমি প্রথমবার এইখানে দেখেছি তখন তোর প্রতি কেমন যেন একটা ভালো লাগা জন্মেছিল। তোকে আমি গত দুই বছর ধরে চিনি। তোকে ভালো লাগতো বলেই আমি তোকে সাহায্য করতে চেয়েছিলাম। তোকে এইখান থেকে বের করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু প্রতিবার আমি ব্যার্থ হয়েছি। জানিস আমি না তোকে ভালোবাসি। এতোদিন তুই এইখানে ছিলি তোর সাথে আমার দেখা হতো।

কিন্তু ইদানীং একটা ছেলে আসছে তোর সাথে রাত কাটাতে। শিউলি আপা বলসে ছেলেটা যদি তোকে কিনে নিয়ে যেতে চাই তোকে তার কাছে বিক্রি করে দিবে। কিন্তু তোকে যে আমি অনেক ভালোবাসি। তোকে প্রতিদিন একবার না দেখলে আমার দিন যায় না। প্রতিদিন তোকে আড়াল থেকে দেখতাম।

তুই যখন গোসল করে বের হয়ে আয়নায় দাঁড়িয়ে নিজের চুল মুছোস তোকে অপূর্ব লাগে তখন। আমি ভেবেছিলাম একদিন তোকে দেখতে এসে সুযোগ করে তোর রুমে ঢুকে তোকে সব বলবো। কিন্তু সে সাহস আমার হয়নি। তুই ওই ছেলের সাথে যাস না। আমি তোকে এইখান থেকে বের করে নিয়ে যাব। তোকে আমি বিয়ে করবো যদি তুই রাজি থাকোস।

আমি মোহনের কথাগুলো শুনছিলাম। কিছু বলার মত খুঁজে পাচ্ছিলাম না। হঠাৎ করে দরজার বাইরে থেকে শিউলি আপার ডাক।

  • রিমি। রুমের মধ্যে কি করোস দরজা বন্ধ করে? দরজা খোল একটা খুশির খবর আছে।

শিউলির আপার ডাক শুনে আমি আর মোহন ভয় পেয়ে গেলাম। শিউলি আপা আমাকে আর মোহনকে একসাথে দেখে ফেললে বিপদ হয়ে যাবে।

  • মোহন তুই খাটের নিচে লুকিয়ে যা। শিউলি আপা দেখলে বিপদ হয়ে যাবে।

মোহন গিয়ে খাটের নিচে লুকিয়ে গেল। শিউলি আপা ডাকছে বাইরে থেকে।

  • কিরে রিমি দরজা খুলতে এতো দেরি কেন? তাড়াতাড়ি খোল। কি করছিস রে তুই ভেতরে?
  • আপা আমি বাথরুমে গোসল করি। কিছুক্ষণ পর খুলমু দরজা।
  • আচ্ছা আমি আমার রুমে যাইতেসি। তুই বের হয়ে আমার রুমে আসিস।
  • ঠিক আছে আপা।

শিউলি আপা চলে গেল।

  • এই মোহন বাইর হো। শিউলি আপা চলে গেছে। তুই রুম থেকে বের হো তাড়াতাড়ি।

মোহন খাটের নিচে থেকে বের হলো।

  • যা বাইর হো এখন। আমি গোসল কইরা শিউলি আপার কাছে যামু তাড়াতাড়ি। নাহলে বিপদ হইয়া যাইবো।
  • কিন্তু আমাকে তো তুই কিছু বললি না।
  • তোর হেয়ালি করা কথা গুলা বাদ দিয়ে বের হো এইখান থেকে।

আমি দরজা খুলে মোহনের হাত ধরে মোহনকে রুম থেকে বের করে দিলাম। আমি গোসল করতে ঢুকলাম। কি এমন খুশির সংবাদ আছে যা শিউলি আপা বলল? অন্য কেউ আমাকে কিনে নিয়ে যাবে না তো? শিউলি আপা তো উঠেপড়ে লাগেছে আমাকে এইখান থেকে বের করার জন্য।

পর্ব- ১৪

আমি গোসল করে বের হয়ে শিউলি আপার কাছে গেলাম। শিউলি আপা রুমে বসে ছিল। কার সাথে যেন আপা কথা বলছে। আমি আড়াল থেকে শুনছিলাম। শিউলি আপা বলছে।

  • তাহলে আপনারা মেয়ে নিতে কখন আসবেন? আজকে আসলে ভালো হয়। মেয়ে তো রেডি সেই জবরদস্ত মাল। আপনাদেরকে একদম খুশি করে দিবে। আমার পতিতালয়ের বেশির ভাগ কাস্টমার তার কাছে যায়। টাকা দিবেন আর কি ৩লাখ। না ৩লাখ থেকে এক টাকাও কম হবে না। আচ্ছা তাহলে আপনারা কালকে আসেন। মেয়ে আজকে রেডি থাকবে।

আমি বাইরে থেকে দাঁড়িয়ে শিউলি আপার কথা শুনছিলাম। কথা শুনে বুঝতে পারলাম শিউলি আপা কেউকে বিক্রি করার কথা বলছে। আমাকে বিক্রি করার কথা বলছে না তো শিউলি আপা? কিন্তু আমাকে তো মতিউর কিনার কথা। আমার মনে ভয় কাজ করতে ছিল। আমি কি করতে পারি। ভেবেছিলাম এই বার হয়তো আমার জীবন থেকে দুঃখটা ঘুছে যাবে। কিন্তু না। দুঃখ যেন আবার নতুন করে শুরু হবে।

আমার ইচ্ছা করছিল এইখান থেকে পালিয়ে যায়। কিন্তু সে পথও আমার কাছে নেই। কি করবো কিছু বুঝতে পারছি না। জানি না এখন শিউলি আপার রুমে ঢুকলে শিউলি আপা কি বলবে!আমি ভয়ে ভয়ে শিউলি আপার রুমে ঢুললাম।

  • আপা আসবো?
  • হ্যাঁ। আয়। আয়।
  • আপা কি কথা বলবেন বলসেন?
  • জানোস তোর জন্য একটা কাস্টমার পাইসি। তোরে এইখান থেকে নিয়ে যাবে। আমাকে ৩লাখ দিতে রাজি হয়সে তোর বাবদে। কালকে তোরে এইখান থেকে নিয়ে যাবে। তোরে ওইখানে কাজের লোক হয়ে থাকতে হবে। তোকে যে কিনে নিয়ে যাবে তার ঘরে কাজ করতে হবে। এই লোকের ২টা মেয়ে আছে। বৌও আছে। লোকটার যখন ইচ্ছা করবে তোর সাথে ফুর্তি করবে। আর শুন সাবধানে থাকবি। লোকটার বৌ যেন কিছু বুঝতে না পারে।

আমি এতোক্ষণ যা ভেবেছিলাম তাই। শিউলি আপা আমাকে অন্য জায়গায় বিক্রি করার ব্যবস্থা করছে। আমাকে কিছু একটা ব্যবস্থা করতে হবে ওই লোকটার সাথে না যাওয়ার জন্য। মোহনের সাহায্য নিতে হবে। আর রাতে মতিউর আসলে ওরেও বলে দেখবো।

  • কিরে রিমি চুপ করে আসোস কেন?
  • না আপা তেমন কিছু না। এইখানে গত ২বছর আপনাদের সাথে আছি। হঠাৎ এইখান থেকে চলে যাব একটু মন তো খারাপ করবেই। আপা আমাকে বিক্রি না করলে হয় না?
  • তোরে বিক্রি না করলে আমি টাকা পাবো কই? নতুন মেয়ে আনার জন্য টাকা লাগবে। ওই বাদশা নাকি নতুন এক মেয়ে পাইসে। মেয়েটার লগে বাদশা ৩বার ওইগুলা করসে। মেয়েটা নাকি তোর থেকেও বেশি জবরদস্ত তোরে বিক্রি করা লাগবে। জানি তোর খারাপ লাগবে এইখান থেকে গেলে। কয়েকদিন পর সব ঠিক হইয়া যাইবো। চিন্তা করিস না তুই। এখন যা এইখান থেকে আমি একটু বিশ্রাম নি।

আমি শিউলি আপার রুম থেকে বের হয়ে গেলাম। রুম থেকে বের হয়ে মোহনকে খুঁজতেছিলাম।

  • এই ময়না মোহন কই রে? (ময়না আমাদের পতিতালয়ের একজন পতিতা আমার মতো)
  • মোহন তো বাইরে গেসে একটু। কি একটা কামে। মোহনরে দিয়া কি কাম তোর?
  • কিছু না। ও আসলে কইস আমি ওরে ডাকসি।
  • আচ্ছা তাসিন শুনসি তোরে নাকি বিক্রি কইরা দিব?
  • হুম। কে কইসে তোরে?
  • এইতো এইখানে কয়েকজন বলাবলি করতেছিল শুনলাম। লোকটা নাকি অনেক বড় লোক। তোরে লোকটার দাসী হিসেবে রাখবে। বৌও আছে নাকি লোকটার।
  • হুম।
  • আমারেও যদি তোর মত এমন কারও কাছে বিক্রি করে দিত ভালো হয়তো। অন্তত প্রতিদিন ভিন্ন ভিন্ন বেটার লগে তো শুইতে হয়তো না।
  • আমার জায়াগায় তুই যাবি?
  • দূর এইটা কখনো সম্ভব নাকি?
  • হো খুব সম্ভব। আমি শিউলি আপার লগে কথা কমু।
  • না থাকরে বাবা। শিউলি আপা আবার আমারে কথা শুনাইবো।
  • আচ্ছা আমি যায় এখন। মোহন আসলে ওরে একটু আমার কাছে পাঠাইস।
  • ঠিক আছে।

আমি রুমে চলে গেলাম। এখন শুধু রাত হবার বাকি। মতিউরকে বললে সে কিছু একটা ব্যবস্থা করে দিবে। যে যা চাই তা পাই না। ময়না চাই আমার জায়গায় ওইখাবে যাইতে। কিন্তু আমি চাই এইখানে থেকে মতিউর কখন আমাকে কিনে নিয়ে যাবে সে অপেক্ষা করতে। কারও ইচ্ছা তো আর পূরণ হবে না।

দুপুরের খাবার খেয়ে আমি রুমে দরজা বন্ধ করে একটু শুইয়ে ছিলাম। ওই সময় আমাকে দরজায় কে যেন ঠোকা দিচ্ছে।

  • কে বাইরে? কে ঠোকা দিচ্ছে?

বাইরে থেকে কোনো আওয়াজ নেই। আমি উঠে দরজা খুলে দেখলাম মোহন।

  • রিমি তুই নাকি আমাকে ডাকসোস?
  • হ্যাঁ। ভেতরে আয়। বাইরে থেকে কেউ দেখলে বিপদ হয়ে যাবে।

মোহনকে রুমের ভেতরে ঢুকিয়ে আমি দরজা আটকে দিলাম।

  • মোহন শুন। আমাকে নাকি কালকে বিক্রি করে দিবে। তুই কিছু একটা ব্যবস্থা কর। আমি এইখান থেকে যাবো না।
  • কেন তুই এইখান থেকে যাবি না কেন?
  • কেন তোকে বলা যাবে না। তুই কিছু একটা ব্যবস্থা কর। আমাকে যেন এইখান থেকে যেতে না হয়।
  • কি করবো বল তুই?
  • আচ্ছা শুন কালকে আমার জায়গায় ময়নাকে পাঠাইতে পারবি ওদের সাথে?
  • ময়না কি যাবে?
  • হ্যাঁ যাবে। ও আমাকে বলসে।
  • আচ্ছা ঠিক আছে। আমি করতে পারি দেখি। আর শুন তুই কিন্তু আমার কথার উত্তরটা এখনো দেস নাই।
  • মোহন আমার রাগ তুলিস না। এইসব ভালোবাসা আমার পক্ষে হইবো না। তুই যা এখন এইখান থেকে।
  • আচ্ছা যাচ্ছি। তবুও তুই একটু ভেবে দেখিস আমার ব্যাপারটা।
  • তোরে যাইতে বলসি যা। কেউ দেখলে সমস্যা হইবো।

পর্ব- ১৫ ও ১৬

মোহন বাইরে চলে গেল। আমি রুমের দরজা বন্ধ করে ভাবতেছিলাম কি করতে পারি!কালকে আমার ওইখানে যাওয়া যেকোনো ভাবে আটকাতে হবে। এতোদিন ছিলাম শিউলি আপার দাসী। আবার নতুন কারো দাসী হতে পারবো না। এই খান থেকে পালানোও আমার পক্ষে সম্ভব না।

এইবার পালানোর সময় ধরা পড়লে শিউলি আপা আর তার ছেলেরা আমাকে মেরেই ফেলবে। আগের বার যখন পালিয়ে যেতে চেয়েছিলাম তখন আমার অবস্থা শিউলি আপা যা করেছে তা ভাবতেই ভয় লাগে। একটা মেয়ে হয়ে কেমনে যে একটা মেয়েকে এমন নরক যন্ত্রণা দিতে পারে। আমি কি পারবো ওদের শাস্তি দিতে!

প্রায় ৭/৮ মাস আগে আমি দোকানে যাওয়ার নাম করে এইখান থেকে বের হয়ে ছিলাম। তখন পতিতালয়েত কয়েকটা ছেলে নতুন একটা মেয়েকে তুলে আনতে গিয়েছিল। তাই শিউলি আপা আমাকে বাধ্য হয়ে দোকানে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছিল।

আমি দোকানে না গিয়ে ভাবলাম দোকানের টাকা গুলো দিয়ে বাসে করে বাড়িতে চলে যাব। আমি রাস্তার মোড়ে যেই বাসে উঠতে যাচ্ছিলাম ওই সময় পেছন থেকে সুমন আমাকে টেনে ধরে। সুমন আমাদের পতিতালয়ের একটা ছেলে। আমি সুমনক দেখে অবাক হয়ে যায়। কারণ সে গিয়েছিল নতুন মেয়ে আনতে। পরে জানতে পারি তারা নতুন মেয়েকে আনার সময় গাড়ি থেকে আমাকে দেখে ফেলে।

সে আমাকে ধরে শিউলি আপার কাছে নিয়ে যায়। শিউলি আপা ওইদিন আমাকে লোহার শিক গরম করে আমার গায়ে ছ্যাঁকা দেয়। কি যে যন্ত্রণা। এখনো তার দাগটা আছে। শুধু তাই নয়। আমাকে ৩দিন খেতে দেই নি। যেই দিন রাতে পালাতে চেয়েছিলাম সেইদিন রাতে আমার পর পর ২টা লোকের সাথে রাত কাটাতে হয়।

এইসব কথা মনে পড়লেই গা টা শিউরে ওঠে। ওইদিনের পর থেকে আর পালানোর চেষ্টা করিনি। কিন্তু মতিউর এইখানে আসার পর কেমন যেন একটা মনে বিশ্বাস ছিল আমি এইখান থেকে বের হতে পারবো। কিন্তু সেও এখন আর সম্ভব নয়। কাল হয়তো আমাকে চলে যেতে হবে।

দেখতে দেখতে রাত প্রায় ১০টা। আমরা রাতের খাবার খেয়ে বসেছিলাম। এখন মতিউর আসার অপেক্ষা। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করলাম। ১০টা পার হয়ে ১১টা হলো। ভাবলাম ১২টার দিকে আসবে। প্রায় ১২টা হতে চলল। এমন সময় শিউলি আপার ডাক।

  • রিমি। এইদিকে আয়।

আমি ভাবলাম মতিউর আসছে তাই আমাকে ডাকছে। আমি গেলাম ওইখানে।

  • জ্বি আপা।
  • তোর নতুন কাস্টমার। আজকে এইখানে তোর শেষ রাত। তোর পুরানা কাস্টমারটার জন্য অনেক অপেক্ষা করসি সে আসে নাই। আজকেই পর থেকে তোর প্রতিদিন আর নতুন নতুন মানুষের সাথে শুয়া লাগবে না। যা উনিরে রুমে নিয়া যা।

নতুন কাস্টমার!মতিউর যে ওইদিন আমাকে বলেছিল সে প্রতিদিন আসবে। তাহলে সে কই। আজ সে আসলো না কেন? তার কি কিছু হয়েছে নাকি সে আমাকে এইখান থেকে বের করার স্বপ্ন দেখিয়ে নিজেই পালিয়ে গেছে। আজ আরেক নতুন কাস্টমার। অনেক দিন ওইসব করি নি। ওইসব করতে করতে এখন বিরক্ত লাগে এতোদিন মতিউর ছিল তাই শরীরের শান্তিও ছিল। কিন্তু আজ আরেকটা নতুন কাস্টমার।

  • কিরে রিমি কি এতো ভাবছিস?
  • জ্বি আপা কিছু না।
  • যা কাস্টমারকে রুমে নিয়ে যা। আমি বুঝতেসি তুই তোর পুরানা কাস্টমারের কথা ভাবতোসোস।
  • না আপা।
  • আচ্ছা যা উনিরে রুমে নিয়ে যা।

আমি কাস্টমারকে নিয়ে রুমে চলে আসলাম। রুমের এসে দরজা বন্ধ করে খাটে বসে পড়লাম। আমার কিছুই ভালো লাগছে না। আজকে রাতে আবার ভোগ করবে আমাকে।

  • ওই মেয়ে। তাড়াতাড়ি কাপড় খোল। আমার আর তর সইতেসে না।
  • আমারে মাফ কইরা দেন। আমি করতে পারমু না এইসব।
  • চুপ থাক একদম। তোরে আমি কিনে নিসি আজকে রাতের জন্য। আজকে রাতের জন্য তুই আমার। তোকে আজ আমি ভালো করে ভোগ করবো।

আমি খাটের উপর বসে রইলাম। লোকটা নিজের জামা কাপড় খুলতে লাগলো।

  • এই মেয়ে কাপড় খুলছিস না কেন?

আমি চুপ করে থাকি।

  • আচ্ছা আমি আমার গুলা খুলে নি। তারপর তোরগুলো খুলতেসি।

লোকটা জোর করে আমার জামা আমার জামা কাপড় খুলে আমাকে ভোগ করতে লাগলো। কি যে যন্ত্রণা হচ্ছিল। অনেক দিন পর করছি তাই যন্ত্রণা যেন আরও বেশি হচ্ছিল। আমার ইচ্ছা করছে লোকটার যৌনাঙ্গ কেটে কুত্তাকে খাওয়াই। লোকটাকে যত বলছিলাম আস্তে আস্তে করতে লোকটা যেন আরও বেশি করে করছে। আমাকে ছিঁড়ে ছিঁড়ে খাচ্ছিল লোকটা। সারারাত সে আমাকে ভোগ করলো।

সকাল হয়ে গেল। আমার মনের ভয়টা আরও বাড়তে লাগলো। কিছুক্ষণ পরেই আমাকে নিয়ে যেতে আসবে। মোহনেরও কোনো পাত্তা নেই। সে বলেছিল সে কিছু একটা করবে। এইদিকে কাল রাতেও মতিউর আসে নি। সবাই কি তাহলে এখন আমার কথা ভুলে গেছে। আমি গোসল করে বের হয়ে কান্না করতে ছিলাম রুমের দরজা বন্ধ করে। এমন সময় কে যেন আমার ঘরের দরজা ঠোকা দিচ্ছে। আমি দরজা খুলতে দেখি ময়না দাঁড়িয়ে আছে।

  • এই রিমি শিউলি আপা বলসে রেডি হয়ে থাকতে। তোকে নিয়ে যাওয়ার জন্য আসছে।
  • হুম।
  • কিরে তুই কান্না করছিস?
  • না তো।
  • আমাকে শিখাচ্ছোস তুই? আমি জানি তুই কান্না করতে ছিলি। তোর চোখ মুখ দেখে বুঝা যাচ্ছে। কান্না করিস না বোন। আমাদের পতিতাদের জীবন এমনই। কোনোদিন শান্তি আসবে না। যা বোন রেডি হয়ে নে।

আমি রেডি হয়ে। কাপড় ঘুছালাম। সামান্য সেজে বসে রইলাম। তাহলে আজকে আমাকে যেতেই হবে। কোনো উপায় নেই। থাক ভাগ্যে যা আছে তাই হবে।

  • রিমি তুই কই? এইখানে আয়।

শিউলি আপা ডাকছে। আমি গিয়ে দেখলাম একটা লোক দাঁড়িয়ে আছে। হয়তো সেই আমাকে নিয়ে যাবে। শিউলি আপা আর তার ছেলেরা সবাই দাঁড়িয়ে ছিল। মোহনও ছিল। মোহনের দিকে দেখে রাগ হচ্ছিল। সে আমাকে কথা দিয়ে রাখলো না।

পর্ব- ১৬

আমাকে যে আজকে নিয়ে যাবে মোহনের মুখে কোনো দুঃখ ছিল না। সে হয়তো ওইদিন আবেগের বসে বলেছিল আমাকে ভালোবাসে। থাক আমার ভাগ্যে যাই আছে তাই হবে।

  • আরমান ভাই ও রিমি। আপনার দাসী।
  • আমি ওরে নিয়ে যাবো না।
  • কেন ভাই? আপনি তো ওরেই যেতে এসেছেন।
  • না আমি এই মেয়েকে নিয়ে যাব না।
  • কেন নিয়ে যাবেন না ওইটা তো বলেন।
  • ওইটা বলতে পারবো না। আপনাদের এইখানে ময়না কে?
  • এই ময়না এইদিকে আয়।

ময়না আসলো অন্য রুম থেকে।

  • এইটা ময়না।
  • আমি ওরে নিয়ে যাব।
  • কিন্তু রিমি?
  • রিমিকে নিয়ে যাব না।
  • আচ্ছা। তাহলে আপনার যাকে পছন্দ হয় তাকে নিয়ে যান। আপনার কথা মতো হবেই। কিন্তু টাকা এক পয়সাও কম হবে না।
  • দরকার হলে টাকা বেশি দিব। কিন্তু আমি রিমিকে নিয়ে যাব না। ময়নাকে নিয়ে যাব।

আমি লোকটার কথা শুনে রীতিমতো অবাক হলাম। খুশিও হয়েছিলাম। কিন্তু লোকটা ময়নাকে চিনে কেমনে? আর সে আমাকেও নিয়ে যেতে অস্বীকার কেন করছে? এইটা মোহনের কাজ না তো?

আমি মোহনের দিকে দেখলাম মোহনও আমার দিকে তাকিয়ে আছে। সে আমার দিকে দেখে মিটিমিটি হাসছে। আমার বুঝতে আর বাকি রইলো না এইটা মোহনের কাজ। আমার মাথা থেকে যেন অনেক বড় বোঝা নেমে গেছে। এখন শুধু এইখান থেকে বের হবার পালা। কিন্তু উপায়টা আমাকে বের করতে হবে।

ওরা ময়নাকে নিয়ে চলে গেল। রিমি আপা অনেক খুশি। কারণ সে ৩লাখ টাকার জায়গায় ৩লাখ ৫০হাজার টাকা পেয়েছে ময়নার বাবদে। মোহনের থেকে জানতে হবে সে কি এমন করেছে যার জন্য তারা আমাকে নিয়ে যাইনি।

  • এই যা তোরা সবাই রুমে গিয়ে বিশ্রাম কর। আজকে আমরা বিরিয়ানি পার্টি করমু। এই সুমন মোহন দোকান থেকে বিরিয়ানি কিনে আন।
  • আপা আমি যামু না। আমার শরীর ভালা লাগতেসে না। (মোহন)
  • আচ্ছা যা সুমন তুই নিয়ে আয়।

আমি রুমে গিয়ে বসে রইলাম। খুব খুশি লাগছে। আজকে দেখি মতিউর আসে নাকি। মতিউর আসলে ওরে বলবো আমাকে এইখান থেকে তাড়াতাড়ি নিয়ে যেতে।

কিছুক্ষণ পর রুমের মধ্যে কেউ ঢুকছে। দেখি মোহন। সে আমার রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল।

  • ওই আজকে কি কামটা তুই করসিলি?
  • আর কে করতে পারবে বল!
  • আচ্ছা কিভাবে করলি একটু বল।
  • আমি কাল শিউলি আপার রুমে ঢুকে শিউলি আপার মোবাইল থেকে ওই লোকটার নাম্বার নিই। তারপর আমি আজকে সকালে লোকটাকে কল করি।
  • কল করে কি এমন বলসিলি যে তারা আমাকে নিয়ে যেতে অস্বীকার করলো?
  • উনিকে আমি কল দিয়ে বলি তোর মধ্যে ভেজাল আছে।
  • ভেজাল মানে আবার কি ভেজাল আছে আমার মধ্যে?
  • আমি ওদেরকে বলি তুই মানুষকে রাতে আনন্দ দিতে পারোস না। তাই তোকে শিউলি আপা বিক্রি করে দিতে চাইতেসে। আর বলসি তুই অনেক চালাক। এইখান থেকে কয়েকবার পালানোর চেষ্টা করসোস। তুই ওইখানে গেলে ওইখান থেকে পালাই যাবি আর তোর অনেক গুলা প্রেমিক আছে। ওদের সাথে তুই যেকোনো সময় পালাইয়া যাবি। আর অনেক অবাধ্য মেয়ে তুই।
  • ওরা জানোততে চাই নাই তুই কে?
  • হ্যাঁ ওইটা আবার জানতে চাইবে না?
  • কি বলসোস তুই?
  • আমি বলসি আমি তার এক শুভাকাঙ্ক্ষী। তোর সাথে আমি কয়েকবার রাত কাটাইসি। তুই একদম মজা দিতে পারোস না।
  • ময়নার কথা উনি কেমনে জানসে?
  • উনি আমাকে বলল উনি নাকি শিউলিকে এডভান্স দিয়ে দিসে। এখন উনি যদি মানা করে দেই তাহলে শিউলি আর টাকা ফেরত দিবে না।
  • তারপর?
  • তুই কালকে আমাকে বলসিলি মনে আছে ময়না চাই এইখান থেকে চলে যেতে?
  • হ্যাঁ।
  • আমি ওদেরকে বলি এইখানে ময়না নামের একটা জবরদস্ত মেয়ে আছে। মেয়েটার সাথে আমি প্রায় রাত কাটাই। মেয়েটা অনেক ভালো সার্ভিস দেই। তারপর ওরা ময়নাকে নিয়ে যেতে রাজি হয়।
  • তুই কি সত্যি ময়নার লগে রাত কাটায়সোস?
  • দূর বোকা মেয়ে। আমি তো শুধু ওদেরকে রাজি করাবার জন্যই বলসি।
  • ও।
  • আমি ময়নার সাথে রাত কাটাইলে কোনো সমস্যা আছে নাকি তোর?
  • দূর কিসের সমস্যা থাকবে বল?
  • বুঝি বুঝি তুই আমার প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছোস।
  • আন্দাজে কোনো কথা বলবি না। আচ্ছা শুন তোর সাথে আমার জরুরি কথা আছে।
  • কি কথা?
  • প্রতিরাতে আমার সাথে যেই ছেলেটা রাত কাটাইতে আসে সেই ছেলেটা কালকে রাতে আসে নাই।
  • আসে নাই ভালোই হইসে। নাহলে ওই তোকে কিনে নিয়ে যাবে তোকে আমার থেকে আলাদা করে ফেলবে।
  • আরে কথা ওইটা না। ছেলেটা আমাকে বের করে আমার বাড়িতে দিয়ে আসবে বলসে।
  • সত্যি?
  • হো।
  • আচ্ছা ওই ছেলে তোকে এইখান থেকে বের করার পর তুই আমাকে বিয়ে করবি? আমি তোকে অনেক ভালোবাসি রে?
  • সত্যি ভালোবাসসোস নাকি হেয়ালি করোস?
  • সত্যি রে আমি তোকে অনেক ভালোবাসি।

আমি তখন মোহনকে জড়িয়ে ধরি। মোহন হয়তো এই পৃথিবীতে একমাত্র ছেলে যে আমাকে এতো বুঝে। মোহনকে বিশ্বাস করতে আমার কোনো বাঁধা নেই। আমি যেন এখন মোহনকেই বিশ্বাস করতে পারি। মোহন কোনোদিন আমার কোনো ক্ষতি করেনি। বরং আমার উপকার করতে চেয়েছে প্রত্যেকবার। এই প্রথম মোহন আমাকে উপকার করতে গিয়ে সফল হয়েছে। মোহনের সাথে আমি বসে বসে অনেকক্ষণ গল্প করলাম। মোহনের সাথে কথা বলতে ভালোই লাগছিল।

এমন সময় আমার দরজায় কে যেন ঠোকা দিচ্ছে।

  • এই রিমি আর মোহন দরজা খোল। অনেক হয়সে তোদের চালাকি। তলে তলে প্রেম করোস। আজকে তোরা বের হো। দেখ কি করি আমি তোদেরকে। তাড়াতাড়ি দরজা খোল। আজকে তোদের একদিন কি আমার একদিন। তোদের সব কথা আমি শুনসি।

আমি আর মোহন ধরা পড়ে গেলাম। শিউলি আপা আজকে হয়তো আমরা দুইজনকে মেরেই ফেলবে। আমরা কি করবো কিছু বুঝতে পারছিলাম না। আমাদের ভালোবাসাটা কি তাহলে পূর্ণতা পাওয়ার আগেই শেষ হয়ে যাবে?


পর্ব- ১৭

আমি আর মোহন একে অপরের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছি। জানি না এখন দরজা খুললে কি হবে!আমরা দুইজন একসাথে গিয়ে দরজা খুললাম। দরজার বাইরে শিউলি আপা আর তার ছেলেরা দাঁড়িয়ে আছে।

  • আমি এতোদিন দুধ কলা দিয়ে কাল সাপ পুষছিলাম। তোরা সবাই বেইমান। আমি জানতাম রিমি একদিন এমন কিছু করবে। তার উপর আমার বিশ্বাস নাই। তাই তাকে আজকে বিক্রি করে দিতে চেয়েছিলাম। কিন্তু মোহন তুই আমার সাথে এইভাবে বিশ্বাসঘাতকতা করবি আমি কল্পনাও করতে পারি নাই। আজকে তোদেরকে আমি জন্মের শিক্ষা দিব।
  • আপা কিছু কইরেন না। দোহাই লাগে। আমাদের মাফ কইরা দেন। আমরা একে অপরকে ভালোবাসি অনেক।
  • তোর ভালোবাসা আজকে আমি বের করবো মোহন। আজকে তোকে আমি মেরেই ফেলবো।
  • আপা দোহাই লাগে ওরে কিছু কইরেন না।
  • তুই চুপ থাক একদম রিমি। আজকে তোদের প্রেম আমি বের করতেসি।

শিউলি আপা আমাকে মোহনকে বের করে বাইরে নিয়ে গেল। বাইরে তার ছেলেরা লাঠি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। তারা মোহনকে ধরে অধুরা পিটাতে লাগলো।

  • আপা আপনার পায়ে পড়ি মোহনকে আর মাইরেন না। যা করার আমাকে করেন। দরকার হইলে আমাকে মারেন। মোহনের কোনো দোষ নাই। সব দোষ আমার।
  • হো। আমি জানি সব দোষ তোর। কিন্তু তোরে তো এতো সহজে মারা যাইবো না। তোরে আমি বিক্রি করে টাকা পামু। তোরে আমি মারমু না। তোরে আমি আজকে একটা জন্মের শিক্ষা দিমু।
  • আপা আপনার দোহাই লাগে।
  • পা ছাড় কাল নাগিনী। তুই কাস্টমারকেও বস করে ফেলসোস। তুই ওই মতিউর নামের ছেলেটারে বলসোস তোরে এইখান থেকে নিয়ে যেতে। আজকে থেকে ওই ছেলেরও এইখানে আসা বন্ধ করমু।

তারা মোহনকে পিটাতেই লাগলো। বেচারা ছেলেটা আমার জন্যই এতো পিটা খাচ্ছে। আমার কোনো উপায় ছিল না তাকে বাঁচানোর জন্য।

  • শিউলি আপা অনেক মারসি। আরও মারলে মরে যাবে তখন আমরা সবাই ফেসে যাবো।
  • আচ্ছা এক কাম কর তোরা। ওরে রাস্তার ধারে রেখে আয়। কোনো গাড়ির নিচে হয়তো পড়ে মরে যাবে।

ওরা মোহনকে নিয়ে বাইরে চলে গেল। শিউলি আপা আমাকে রুমে নিয়ে গিয়ে ভাঙা কাচের টুকরো দিয়ে আমার সারা শরীর এঁকে দিল। কি যে যন্ত্রণা। আল্লাহ এই নরক থেকে কি আমার আর কখনো মুক্তি হবে না? আল্লাহ কি আমার দিকে কখনো মুখ তুলে চাইবে না? যখনই কোনো মুক্তির পথ খুঁজে পাই। তখন ধরা পড়ে যায়। জীবনে কি এমন পাপ করেছিলাম যে যার জন্য আল্লাহ আমাকে এই শাস্তি দিচ্ছে।

  • আপা যন্ত্রণা হচ্ছে খুব। ছেড়ে দেন। দইয়া কইরা।
  • তুই আমার সাথে একবার না দুইবার না অনেক বার বিশ্বাসঘাতকতা করসোস। তোরে ইচ্ছা করতেসে মেরে ফেলতে। কিন্তু তুই তো সোনার ডিম দেওয়া হাঁস। তোরে মারা যাইবো না।
  • ছিঃ ছিঃ। তুই কেমনে পারোস নিজে একটা মেয়ে হয়ে আরেকটা মেয়েকে এইভাবে শাস্তি দিতে।
  • ওই তুই আমাকে তুই করে বলসোস?
  • হ্যাঁ বলসি। এখন কি করবি? মেরে ফেলবি? মেরে ফেল। এই নরকে থাকার চেয়ে মরে যাওয়া অনেক ভালো।
  • রিমি তুই কিন্তু তোর সেলিনা পাড় করে ফেলতোসোস।
  • আমি না তুই তোর সেলিনা পাড় করতোসোস। তোর একদিন শাস্তি হবে শিউলি। এতোদিন বড় আপা হিসেবে সম্মান করসিলাম। কিন্তু তোর মত শয়তানের জন্য কোনো সম্মান নাই। তোদের মতো শয়তানদের এইদিন বিনাশ হবে মনে রাখিস।
  • আজকে থেকে তোর খাওয়া দাওয়া বন্ধ। যতদিন না তোকে আমি বিক্রি করতে পারছি ততদিন আমার শান্তি নাই। তোকে আমি বিক্রি কইমু কয়েকদিনের মধ্যে। এই বাকি মেয়েরা শুনে রাখ। তোরা যদি রিমির মত দুঃসাহস দেখানোর চেষ্টা করস। তাহলে দেখে নিস তোদের অবস্থা আমি ওর থেকে খারাপ করবো।
  • তুই আমার কিছুই করতে পারবি না। সাহস থাকলে আমাকে মেরে ফেল শিউলি।
  • রিমি তুই চুপ থাক।
  • থাকমু না চুপ। এতোদিন তোর নির্যাতন গুলো মুখ বুঝে সহ্য করসি। আর না। আজকে রাতে কোনো বেটা পাঠাইয়া দেখ আমার রুমে ওই বেটার যৌনাঙ্গ কাইটা তোরে রান্না কইরা খাওয়ামু। তোর যদি এতো টাকা কামানোর ইচ্ছা তাহলে নিজে ১৪বেটার লগে শুইয়া টাকা কামা। আমাদের মত মেয়েদেরকে কষ্ট দেস কেন?

শিউলি কিছু না বলে রুম থেকে চলে গেল। এই প্রথম আমি কারো সাথে এইভাবে কথা বলেছি। এই শিউলির শাস্তি আমি দিব। এই শিউলির সাথে যারা আমাকে এইখানে পাঠিয়েছে তাদেরকেও শাস্তি আমি দিবো। আমি এই রিমি যদি বেঁচে থাকি তাহলে আমি নিজে একাই ওদের শিক্ষা দিবো। এইটা আজকে আমার নিজের প্রতি প্রতিজ্ঞা।

রাত ঘনিয়ে আসলো। জানি না আজকে রাতে আমার ভাগ্যে কি আছে। আমি একটা খাতা কলম নিয়ে একটা চিরকুট লিখলাম। এইটা আমি আজকে কেউ আসলে দিব। যদি মতিউর আসে আজকে তাহলে ওকে দিব। কিন্তু আমার এমন ভাবে দিতে হবে যাতে কেউ না দেখে। কিন্তু শিউলি তো ওকে আমার কাছে আসতে দিবে না। কিন্তু লিখে রাখতে ক্ষতি কি?

আমি রুমে শুয়ে থাকলাম। এমন সময় আমার রুমের দিকে কে যেন আসছে। কিন্তু একি এতো মতিউর। কিন্তু মতিউরকে দিল কে? আমি মতিউরের কাছে গিয়ে তার পকেটে চিরকুটটা ঢুকিয়ে দিলাম।

  • আপনাকে এইখানে আসতে দিল কে?
  • আমি আসতে দিসি। তোর এই পরিণতি আমি দেখাইতে আনসি। দেখেন ওর কি অবস্থা করসি। আজকের পর থেকে এই পতিতালয়ে আসার দুঃসাহস করবেন না। নাহলে ওর প্রেমিক মোহনের যেই অবস্থা করসি আপনারও সেই অবস্থা করমু। আপনি এখন যাইতে পারেন।

মতিউর কোনো কথা বলল না। শুধু আমার দিকে অপলক দেখে থাকলো। তার চোখের কোণে পানি ঝলমল করছে। সে হয়তো আমাকে দেখেই কষ্ট পাচ্ছে।

কয়েকদিন কেটে গেল। এখন আমাকে আগের মতোই প্রতিরাতে নতুন লোকের সাথে ঘুমাতে হয়। রাত কাটাতে হয়। প্রতিরাতে আগের মতো ওই লোকগুলোর ভোগের সামগ্রী হতে হয়। গত ৫দিন আমাকে কিছু খেতে দেইনি ওই শিউলি। পানি খেয়ে আছি এই কয়েকদিন। এইদিকে নিজের ক্ষিদায় মরে যাচ্ছি। অন্যদিকে আমি মানুষের ক্ষিদা মিটাচ্ছি। মরে যেতে ইচ্ছা করছে। আল্লাহ তুমি আমাকে তুলে নাও।

আজকেও গতরাত গুলোর মতো নতুন লোক এসেছে।

  • ওই আমার কাছে আসবি না। যা তোর শিউলি আপার কাছে।
  • এই তুমি আমাকে কিছু করো না। আমাকে মতিউর পাঠিয়েছে।
  • সত্যি?
  • এই আসতে বলো। বাইরে থেকে শুনবে কেউ। ওরা তোমার উপর কড়া নজর রেখেছে।

পর্ব- ১৮

  • মতিউর আপনাকে এইখানে কেন পাঠিয়েছে?
  • মতিউর এই প্যাকেটটা দিয়েছে। বেশি কিছু বলো না। বাইরে থেকে কেউ শুনে যাবে তুমি প্যাকেটটা খুলে দেখো এইখানে কি আছে। আমি তোমাকে কিছু করবো না। আমি ওইখানে নিচে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়ছি। সকালে উঠে চলে যাব। এখন এইখান থেকে চলে গেলে ওরা সন্দেহ করবে।

ছেলেটা গিয়ে ঘুমিয়ে পড়লো। আমি প্যাকেটটা খুলে দেখলাম। প্যাকেটটাতে ছিল একটা ঔষধের বোতল। সঙ্গে একটা চিরকুট।

রিমি,

আমি মতিউর। ওইদিন আমি তোমার কাছে গিয়েছিলাম তুমি দেখেছো। কিন্তু ওইদিন তোমার অবস্থা দেখে নিজের বাকশক্তি হারিয়ে ফেলেছিলাম। ওইদিনের আগের দিন আমার খুব জ্বর উঠেছিল তাই আমি আসতে পারিনি। ওইদিন না আসাটাই হয়তো আমার জীবনের সব থেকে বড় ভুল ছিল। তোমাকে যে এই প্যাকেটটা দিয়েছে এইটা আমার বন্ধু রাকিব। ও তোমার কিছু করবে না। আর শুনো প্যাকেটের সাথে যে ঔষধের বোতলটা আছে ওইটা ঘুমের ঔষধ। তুমি একদিন সুযোগ বুঝে সবার খাবারের মধ্যে ঘুমের ঔষধ দিয়ে দিবে। সবাই যখন ঘুমিয়ে পড়বে তখন তুমি নিচের দেওয়া নাম্বারটা থেকে কল দিবে কারও মোবাইল থেকে। নাম্বারটা আমার। তুমি কল দিলে আমি তখন তোমাকে নিতে পতিতালয়ের সামনে চলে যাব। আর শুনো তুমি তোমার নিজের খেয়াল রেখো। তোমাকে এইখান থেকে বের করে সব শয়তানদের শাস্তি তুমি আর মিলে দিব।

ইতি
মতিউর।

মতিউরের চিঠিটা পেয়ে খুব খুশি লাগছিল। আমি চিঠিটা পড়ে ছিঁড়ে ফেলে দিলাম। কেউ দেখলে বিপদ হয়ে যাবে। আমিও মতিউরের জন্য একটা চিঠি লিখতে বসলাম।

মতিউর,

শুনেন আপনাকে কিছু কথা বলার ছিল। এইখানে একটা ছেলে ছিল মোহন। সে আমাকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসতো। আমি যেইদিন তার ভালোবাসার প্রস্তাব গ্রহণ করি সেইদিন আমরা ধরা পড়ে যাই। ছেলেটা ওইদিন আমার জন্য অনেক মার খেয়েছে। এইটা মোহনের নাম্বার। আপনার যদি সম্ভব হয় আপনি ওকে কল করে জিজ্ঞেস করিয়েন ও কেমন আছে। আর শুনেন আমি ঔষধটা আমার কাছে রাখছি। আমি সুযোগ বুঝের ওদের খাবারে দিয়ে দিব। আর আমি আপনাকে কল দিব। আমাকে এইখান থেকে বের করলেই সব রহস্য শেষ হবে না। আরও অনেক গুলো রহস্য আমাদের খুঁজে বের করতে হবে। আপনি এতোদিন যখন আমাকে সাহায্য করেছেন সেহেতু আমার জীবনের খুশির মুখ দেখা পর্যন্ত আশা করি আমার সাথে থাকবেন।

ইতি
রিমি।

প্রতিবার যখন আমার জীবনে খুশির মূহুর্ত আসতে যাবে ততবার আমার জীবনে আমার কালো অন্ধকার ছায়া নেমে আসে। জানি না শেষমেষ ভাগ্যে কি আছে। আল্লাহ তায়ালা কখনো তার বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না।

সকাল হয়ে গেলো ছেলেটা ঘুম থেকে উঠে গেছে। ছেলেটা রুম থেকে বের হতে যাবে আমি ওইসময় ছেলেটাকে চিরকুটটা দিয়ে বললাম মতিউরকে দিতে।

আমি জানি না ওদের খাবারে ঔষধটা মিশাতে পারবো কিনা। কিন্তু আমার তো মিশাতেই হবে। আমি গোসল করে বসে রইলাম। এমন সময় শিউলি আমাকে ডাকছে।

  • রিমি এইখানে আয়।
  • আমি পারবো না। তুই বল কি বলবি?
  • রিমি তুই কিন্তু দিন দিন তোর সেলিনা ছাড়াই যাচ্ছোস।

আমি শিউলির সামনে গেলাম।

  • আমি আমার সেলিনা ছাড়াচ্ছি না। তোকে বিনাশ করার সময় চলে এসেছে শিউলি।
  • হা হা হা। আমার বিনাশ? এতো কিছু করে তো আমার হাতের নাগাল থেকে বের হতে পারলি না। আবার আমার বিনাশ করবি?
  • হ্যাঁ করবো। এই রিমি এতো সহজে হার মানার মেয়ে না। যতদিন না পর্যন্ত আমার মৃত্যু হচ্ছে ততদিন আমার চেষ্টা বন্ধ হবে না এইখান থেকে বের হবার।
  • দেখা যাক তুই কি করতে পারোস।
  • তোকে একদিন আফসোস করতে হবে শিউলি।
  • আফসোস করার মতো মেয়ে আমি শিউলি না।
  • আচ্ছা কি জন্য ডাকসোস বল।
  • আমার পা টা টিপে দে।
  • পারবো না।
  • পারবি না সত্যি?
  • হ্যাঁ।

শিউলি উঠে আমার চুল ধরে আমার মাথা দেওয়ালে পেতে অনেক জোরে ঠুকালো।

  • আমাকে মেরেই ফেল শিউলি। বাঁচিয়ে রেখেছিস কেন?
  • তোকে তো মারা যাবে না।
  • আমাকে না মারলে মনে করবি তুই মরবি।
  • রিমি তুই কিন্তু তোর সেলিনা ছাড়িয়ে যাচ্ছিস।
  • বললাম তো মেরে ফেল আমাকে।
  • আজকে থেকে তোর খাওয়া দাওয়া আগামী ৩দিনের জন্য বন্ধ।

শিউলি আমাকে খেতে দিবে না। না দেক আমার সমস্যা নাই। কিন্তু আমাকে কোনোভাবে রান্না ঘরে গিয়ে ঔষধটা মিশাতে হবে। আজ না কাল যেতে যাব আমি রান্না ঘরে।

আমি পরের দিনই গেলাম রান্না ঘরে। তখন সবাই গোসল করতে গিয়েছিল। আমি রান্না ঘরের আড়াল থেকে দেখলাম কেউ নেই ঘরে। এইটাই সুযোগ। আমি ভেতরে ঢুকলাম। সব রান্নাতে একটু করে করে ঔষধটা দিয়ে দিলাম। আমি সব ঔষধ খাবারে দিয়ে দিলাম। জানালা দিয়ে বোতলটা বাইরে ফেলে দিলাম। কেউ দেখলে বিপদ হয়ে যাবে। আমি রান্না ঘর থেকে বের হতে যাব এমন সময় দেখি একটা মেয়ে আসছে রান্না ঘরের দিকে।

  • কিরে তুই এইখানে কি করছিস শিউলি?
  • কিছু না। পানি খেতে এসেছিলাম। রুমে খাওয়ার পানি শেষ হয়ে গিয়েছিল।
  • আচ্ছা। আজ অনেক ভালো ভালো রান্না হয়েছে।
  • তো আমি কি করবো? আমার খাওয়া তো বন্ধ আগামী তিনদিন।
  • বোন তোর জন্য অনেক কষ্ট লাগে রে। তুই শিউলি আপার সাথে বেয়াদবি না করলে পারতি। আমার জায়গায় তুই থাকলে তুই এই এখই কাজটাই করতি। আচ্ছা আমি যাই রে। একটু ঘুমাই গিয়ে।

আমি রুমে চলে আসলাম। এখন শুধু তারা খাবার গুলো খাওয়ার পালা। তারপর আমি মতিউরকে কল করবো নাম্বারটা ওইদিন মুখস্থ করে রেখেছিলাম চিরকুটটা ছিঁড়ে ফেলার আগে।


পর্ব- ১৯

  • এই সবাইকে খেতে দে।

শিউলির আওয়াজ। শিউলি সবাইকে খেতে বলছে। এখন হয়তো সেও খাবে। দুপুরে খেয়ে শিউলি এমনিতে ঘুমায়। দরজার মধ্যে ২টা ছেলে বসে থাকে সব সময় তারা মেয়েদেরকে পাহারা দেয়। আর এই পতিতালয়ের মেয়েদের কিছু লাগলে ওরাই এনে দেয়। জানি না খাবারটার খাওয়ার পর ওদের চোখ লেগে আসবে কি না!

কিছুক্ষণ কেটে গেল। সবার খাওয়া শেষ। এখন শুধু অপেক্ষা ঔষধের কাজ করার। আমি রুম থেকে বের হয়ে শিউলির রুমের দিকে গেলাম। গিয়ে দেখি শিউলি ঘুমাচ্ছে। এখন দেখে আসি ছেলেগুলো ঘুমিয়েছে নাকি। আমি আস্তে আস্তে দরজার পাশে গেলাম। কারণ তারা যদি জেগে থাকে আমার পায়ের আওয়াজ পেলে তারা সমস্যা করতে পারবে।

কিন্তু একি!দরজার বাইরে তো ছেলেগুলো নেই। তাহলে ছেলেগুলো কোথায়? আর বাকি মেয়েদের কি অবস্থা কে জানে!সবাই হয়তো ঘুমাচ্ছে। আমি সবার রুমে গিয়ে দেখলাম গিয়ে দেখি সবাই ঘুমাচ্ছে। কিন্তু ছেলেগুলো কোথায়? আমি পুরো ঘর খুঁজলাম ছেলেগুলোকে পেলাম না। ছেলেগুলো যেইখাবে যাবে যাক। আমি শিউলির ঘরে গিয়ে শিউলির মোবাইল থেকে মতিউরকে একটা কল দি।

আমি শিউলির রুমে ঢুকলাম। ঢুকে দেখি তার রুমের একটা কোণায় চেয়ারে ছেলে দুইটাই ঘুমাচ্ছে। হয়তো এরা শিউলির সাথে কথা বলতে এসেছিল এইভাবেই ঘুমিয়ে পড়েছে। আমি শিউলির মোবাইল নিয়ে মতিউরের নাম্বারটা ডায়াল করলাম। কিছুক্ষণ রিং পড়ার পর সে কল রিসিভ করলো।

  • হ্যালো….মতিউর?
  • না আমি মতিউর না। মতিউরের বন্ধু রাকিব বলছি।
  • এইটা তো মতিউরের নাম্বার!
  • হ্যাঁ, এইটা মতিউরের নাম্বার। কিন্তু….
  • কিন্তু কি?
  • মতিউর আজ হঠাৎ খুব অসুস্থ হয়ে পড়েছে। তাকে হসপিটালে ভর্তি করানো হয়েছে।
  • আচ্ছা কোন হসপিটালে?
  • তুমি চিনবে? আর তুমি কি আসতে পারবে? ওইখান থেকে বের হতে পারবে?
  • আমি ওদেরকে ঘুমের ঔষধ খাইয়ে দিয়েছি। ওরা সবাই ঘুমাচ্ছে। এই সুযোগে আমি বের হবো ভেবেছিলাম। কিন্তু আমি তো এইখানে পথঘাট চিনি না। মতিউর বলেছিল আমাকে নিতে আসবে।
  • আচ্ছা। আমি আসছি তোমাকে নিতে। কিন্তু তুমি ওইখান থেকে এখন বের হয়ে যাও। আর তোমার রুমের দরজা বন্ধ করে আসো। তোমার খাটে একটা কোল বালিশ দিয়ে তার উপর কাথা দিয়ে আসো। যেন ওরা রাতের আগে বুঝতে না পারে তুমি ওইখানে নেই। আর শিউলির মোবাইল থেকে আমার সাথে কথা শেষ করে নাম্বারটা ডিলিট করে দিও।
  • আচ্ছা।

আমি আমার রুমে গিয়ে রাকিবের কথা মতো কোল বালিশের উপরে কাথা দিয়ে কিছু কাপড় নিয়ে বের হয়ে গেলাম।

আমি রাস্তার মোড়ে দাঁড়িয়ে আছি। এখন অপেক্ষা রাকিবের আসার। অনেকদিন পর বাইরের পরিবেশের মুখ দেখলাম। ওই জানোয়ারগুলোর হাত থেকে বেরিয়ে এসেছি কিন্তু শুধু বেরিয়ে আসলে তো হবে না। ওই জানোয়ারগুলোর শাস্তি তো আছেই। আমি ওদের উপযুক্ত শাস্তি দিব।

রাকিব চলে এসেছে।

  • আপনি চলে এসেছেন?
  • হ্যাঁ। চলো আমার সাথে।

আমি রাকিবের সাথে চলে গেলাম। যা দেখলাম মতিউর আসলেই অনেক অসুস্থ।

  • রিমি তুমি এসেছো? জানো এতোদিন তোমাকে নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। এখন আমার চিন্তার অবসান হয়েছে। তোমাকে তোমার বাবা মায়ের কাছে দিয়ে আসলেই আমার মুক্তি। তোমাকে আজকে রাকিব তোমার বাপের বাড়িতে দিয়ে আসবে।
  • না আমি যাবো না।
  • কেন?
  • শুধু আপনার চিন্তার অবসান হলেই তো হবে না। আমার চিন্তারও অবসান হতে হবে।
  • তোমার কি চিন্তা আবার?
  • আপনাকে আপনার বাবা মায়ের কাছে দিয়ে আসা। আর ওই শিউলি, বাদশা আর ফয়সালের উপযুক্ত শাস্তি দেওয়াও এখনো বাকি আছে।
  • আচ্ছা। হ্যাঁ। কিন্তু তোমার মোহন?
  • মোহনের কথা তো আমি জানি না। তাকে দেখেছি অনেকদিন হয়ে গেলো। তার সাথে কোনো যোগাযোগও নেই।
  • তোমার সাথে না থাকলে কি হবে? আমার সাথে তো মোহনের যোগাযোগ আছে।
  • সত্যি ওর সাথে আপনার যোগাযোগ আছে?
  • হ্যাঁ দাঁড়াও ওকে কল দিচ্ছি।

মতিউর মোহনকে কল দিয়ে বলল হসপিটালে আসতে। কিছুক্ষণ পরেই মোহন আসলো। মোহনকে অনেকদিন পর দেখলাম। কি অবস্থা হয়েছে ছেলেটার।

  • মোহন কেমন আছিস রে?

মোহন কিছু না বলে আমাকে এসে জড়িয়ে ধরলো।

  • রিমি জানিস? তোকে এতোদিন কত মনে পড়েছে আমার? আমি প্রতিরাতে তোর জন্য চোখের জল ফেলতাম। একদিন মতিউর আমাকে কল দিয়ে বলে তোকে ওইখান থেকে বের করার ব্যবস্থা উনি করেছে। ওই দিনের পর থেকে মনে একটি শান্তি এসেছে। আমার ভালোবাসাটা হয়তো সত্যি ছিল তাই তোকে আমি ফিরে পেয়েছি।
  • হয়েছে ছাড় এখন।
  • তোকে তো ছাড়তে ইচ্ছে করছে না রে।
  • ছাড় বলছি এইখানে সবাই আছে।

মোহনের সাথে আমি অনেকক্ষণ গল্প করলাম। ওই রাতে আমরা সবাই হসপিটালে ছিলাম। জানি না এখন পতিতালয়ের কি অবস্থা!এতোক্ষণে সবাই জেনে গেছে হয়তো আমি আর পতিতালয়ে নেই। সবাই হয়তো আমাকে খুঁজছে। শিউলি এখন হয়তো ক্ষ্যাপা রাক্ষসীর রূপ ধারণ করেছে।

সকাল হয়ে গেল। আমি, মোহন, মতিউর আর রাকিব মিলে বসে গল্প করতে ছিলাম। ওই সময় হসপিটালের যেই রুমে আমরা ছিলাম ওইখানে কেউ একজন আসলো। আমি তাকে ঠিক চিনতে পারলাম না।

  • তুমি এইখানে কি করছো? (মতিউর)

পর্ব- ২০ (অন্তিম পর্ব)

  • রাকিব এই মেয়েকে চলে যেতে বল। (মতিউর)
  • আমাকে মাফ করে দাও মতিউর। (মেয়েটা)
  • তোমাকে আমি মাফ করবো? তুমি অনেক বড় অন্যায় করেছো আমার সাথে সেলিনা। তোমাকে আমি মাফ করতে পারবো না।

মেয়েটা কে আমি ঠিক চিনলাম না। কিন্তু মেয়েটা মতিউরের কাছে এইভাবে মাফ চাইছে কেন? আর মতিউরও তার সাথে এইভাবে কথা বলছে কেন? কিছুই আমার মাথায় ঢুকছে না। মতিউরকে এখন জিজ্ঞেস করা কি ঠিক হবে? না মতিউরকে জিজ্ঞাসা করবো না। রাকিবকে জিজ্ঞাসা করি। আমি রাকিবের পাশে গেলাম।

  • রাকিব মেয়েটা কে?
  • মেয়েটা সেলিনা। মতিউরের প্রাক্তন প্রেমিকা। যার জন্য মতিউর নিজের ঘর ছেড়েছে। মা বাবা ছেড়েছে।
  • তাহলে সে এই মেয়ে যার কথা মতিউর আমাকে বলেছিল!
  • মতিউর কি তোমাকে ওর কথা বলেছে?
  • হ্যাঁ।

আমি ভাবতে লাগলাম তাহলে এই সেই মেয়ে। কিন্তু মেয়েটার কি এইভাবে এতো অপমান করা ঠিক হচ্ছে? না আমি একটা মেয়ে হয়ে একটা মেয়েকে এইভাবে অপমান হতে দেখতে পারবো না। আমার মতিউরকে আটকাতে হবে।

  • মতিউর আপনি ওকে মাফ করে দেন। (আমি)
  • না এই মেয়ে অনেক খারাপ। এই মেয়ের জন্য আমি আমার মা বাবা ছেড়েছি। কি করি নি এই মেয়ের জন্য? কিন্তু এই মেয়ে আমাকে ছেড়ে অন্য ছেলের সাথে চলে গেছে। (মতিউর)
  • মতিউর তুমি আমাকে ভুল বুঝছো। (সেলিনা)
  • একদম চুপ করো তুমি তোমার কোনো কথা আমি শুনতে চাই না।

মতিউর কোনোভাবেই সেলিনার কথা শুনতে চাই না।

  • সেলিনা আপনি বলেন আপনি কেন ওর সাথে এমন করেছেন?
  • আপনি কে? আপনাকে ঠিক চিনলাম না।
  • আমি রিমি। এক পতিতা।
  • পতিতা মানে?
  • হুম পতিতা। আমার পরিচয় না হয় পরে দিব। আপনি বলেন আপনি কেন মতিউরের সাথে এমন করেছেন?
  • তাহলে শুনেন। মতিউরের সাথে রিলেশন থাকাকালীন যেই ছেলেটার সাথে রিলেশন হয়েছিল সেটা আমি বাধ্য হয়ে করেছিলাম।
  • বাধ্য হয়ে মানে?
  • হ্যাঁ বাধ্য হয়ে। ভার্সিটির বাকি ছেলেদের মতো ওই ছেলেটাও আমাকে প্রপোজ করেছিল। কিন্তু রাজি হয়নি। সে বলেছিল আমি যদি তার সাথে রিলেশন না করি তাহলে সে মতিউরকে মেরে ফেলবে। আমি মতিউরকে সত্যি ভালোবাসতাম। আমি কখনো চাইনি মতিউরের কোনো ক্ষতি হোক। আমি যদি মতিউরকে না ছাড়তাম তাহলে ওই ছেলে মতিউরকে মেরে ফেলতো। আমার জন্য মতিউরের মৃত্যু হোক আমি কখনো চাই না। তাই আমি মতিউরকে ছেড়ে দিলাম। তখন যদি আমি মতিউরকে এইসব কথা বলতাম তাহলে বড় ধরনের সমস্যা হয়ে যেত। তারা হয়তো মতিউরকে তখনি মেরে ফেলতো। ছেলেটার সাথে আমার রিলেশন হওয়ার পর ছেলেটা আমাকে ব্ল্যাকমেইল করে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করে। তারপর আমাকে ছেড়ে দেই। আজ আমি মতিউরের এক বন্ধু থেকে জানতে পারি মতিউর হসপিটালে তাই আমি চলে আসলাম মতিউরকে দেখতে।

সেলিনার কথাগুলো শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেলাম। একটা মেয়ে তার ভালোবাসার মানুষের জীবনের বাঁচাতে নিজের মান সম্মানও দিতে পারে। সেলিনা যখন এই সব কথা বলছিল তখন মতিউরও এই সব কথা শুনেছিল।

  • সেলিনা তুমি আমাকে ক্ষমা করে দাও আমি তোমাকে অনেক অপমান করেছি।

এইদিকে সেলিনা আর মতিউরের ভাবও হয়ে গেল। এখন আমাদের সবাইকে মিলে সব অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে।

  • আপনাদের সবার তো ভাব হয়ে গেল। এখন আমাদের অপরাধীদের শাস্তি দিতে হবে।
  • হ্যাঁ সেটা তো দিতেই হবে। আমাকে হসপিটাল থেকে ছেড়ে দিলে সবার আগে আমরা ওই পতিতালয়ের শিউলিকে শাস্তি দিব।
  • হ্যাঁ। তারপর আমরা বাদশা আর ফয়সালকে খুঁজে বের করে ওদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দিব। তারপর আমরা ওই পতিতালয়ের সব মেয়েকে তাদের বাসায় পৌঁছে দিব।
  • হ্যাঁ।

এরপর দিন মতিউরকে হসপিটাল থেকে বাসায় নিয়ে আসা হলো। আমরা সবাই মিলে গেলাম ওই পতিতালয়ে। আমাদের সাথে পুলিশও ছিল। আমরা পতিতালয়ে যাওয়ার পর শিউলি আমাদেরকে দেখে অবাক হয়ে গেল।

  • রিমি তুই?
  • হ্যাঁ আমি শিউলি। তোর দিন শেষ। অনেক কষ্ট দিয়েছিস আমাদের মত গ্রামের মেয়েদেরকে। এখন জেলখানায় যা।
  • রিমি আমাকে মাফ করে দে।
  • মাফ? মাফ করার মতো কাজ তুই করোস নাই শিউলি। বাদশা আর ফয়সাল কই বল?
  • না বলবো না।
  • বলবি না? তুই যদি বলোস তোর শাস্তি কিছু হলে কম হবে। শিউলি বল।
  • ওরা খালিশপুর গ্রামে আছে। নতুন একটা মেয়ে আনতে গেসে।

শিউলি আর তার ছেলেদেকে পুলিশ ধরে নিয়ে গেল। এখন আমরা খালিশপুরে দিকে রওনা দিলাম। ওইখানে সবার থেকে জিজ্ঞেস করে বাদশা আর ফয়সালের কাছে পৌঁছে গেলাম। ওইখানে আরেকটা গরিবের মেয়েকে ফয়সাল আর বাদশা বিয়ের নাম দিয়ে তাদের ফাঁদে ফেলছিল। ফয়সাল আর বাদশাকে আমরা পুলিশের কাছে তুলে দিলাম।

এখন বাকি সেলিনার সেই ধর্ষকের শাস্তি। কয়েকদিন পরেই আমরা সেই ছেলের নামে ধর্ষণের মামলা করলাম। ছেলেটারও উপযুক্ত শাস্তি হবে।

হ্যাঁ আমরা জিতে গিয়েছি। সব শয়তানদেরকে আমরা শাস্তি দিলাম। এখন বাকি যে যার বাড়ি ফিরে যাওয়ার। আমরা দায়িত্ব নিয়ে পতিতালয়ের সব মেয়েদেরকে তাদের নিজ নিজ বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম। ময়নাকেও আমরা উদ্ধার করে তার নিজের বাড়িতে পাঠিয়ে দিলাম।

মতিউর আর বাড়িতে ফিরে গেল। আমিও আমার বাড়িতে ফিরে গেলাম। আমাকে দেখে আমার মা বাবা বাকরুদ্ধ হয়ে গেল খুশিতে।

  • মা তুই ফিরে এসেছিস?
  • হ্যাঁ বাবা।
  • তোকে ওইখানে কে পাঠিয়েছে আমরা সব জানি। কিন্তু আমাদের কোনো উপায় ছিল না গো মা। তোর বাদশা চাচার বাসার সবাই সব কিছু জানতো। ওরাও এইগুলোর সাথে জড়িয়ে। তারা আমাদের উপর অনেক নির্যাতন করেছে মা।
  • বাবা তুমি চিন্তা করো না। ওদের সবার শাস্তি হবেই।
  • ও কে মা?
  • ও মোহন। বাবা আমরা বিয়ে করতে চাই। ও আর আমার এক বন্ধুর সাহায্যে আমরা ওইখান থেকে বের হতে পেরেছি বাবা।
  • ঠিক আছে তুই যা চাস তাই হবে।

আমার আর মোহনের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করা হলো। এইদিকে মতিউর আর সেলিনারও বিয়ের দিন ঠিক করা হলো। কিন্তু সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো আমাদের চারজনের বিয়েই একসাথে একই দিনে ঠিক করা হলো।

প্রায় ৩বছর পর আমি আমার সুখেই মুখ দেখলাম। আমাদের বিয়ে হলো। আমাদের সংসারও চলল।

আজ ২বছর হতে চলল আমাদের বিয়ের। কিছু দিন আগে আমার একটা মেয়ে হলো। মতিউর আর সেলিনার একটা মেয়ে হলো। এতোদিন পর আল্লাহ আমাদের উপর মুখ ফিরে তাকালো। আল্লাহ কোনোদিন তার বান্দাদেরকে নিরাশ করেন না। আমার এতোদিনের প্রার্থনা সব পূর্ণ হলো।

সমাপ্ত

গল্পটি ভালো লাগলে শেয়ার করতে ভুলবেন না, জীবনের কিছু কঠিন অধ্যায় অন্যকেও জানার সুযোগ করে দিন।

আরো পড়ুন – স্যার যখন বর

Leave a Comment

Your email address will not be published. Required fields are marked *